সুন্নাত ও বিদয়াত , হাদীস বর্ণনা, ঈমান, কিয়াস ও তাকদীর
সুন্নাত ও বিদয়াত , হাদীস বর্ণনা, ঈমান, কিয়াস ও তাকদীর >> সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ০, অধ্যায় (১-১০)= ১০ টি। হাদীস (১-৯২) =৯২ টি
১. অধ্যায়ঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর সুন্নাতের অনুসরণ
২. অধ্যায়ঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর হাদীসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তার বিরুদ্ধবাদীর প্রতি কঠোর মনোভাব পোষণ
৩. অধ্যায়ঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর হাদীস বর্ণনায় সতর্কতা অবলম্বন করা
৪. অধ্যায়ঃ স্বেচ্ছায় রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর প্রতি মিথ্যা আরোপের ভয়ানক পরিণতি
৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি সজ্ঞানে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর নামে মিথ্যা বর্ণনা করে
৬. অধ্যায়ঃ হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ি রাশিদ্বীনের সুন্নাতের অনুসরণ
৭. অধ্যায়ঃ বিদআত ও ঝগড়াঝাটি হতে বেঁচে থাকা
৮. অধ্যায়ঃ কিয়াস ও মনগড়া মতামত হতে বেঁচে থাকা।
৯. অধ্যায়ঃ ঈমানের বিবরণ
১০. অধ্যায়ঃ তাকদীর [রাঃআ:] ভাগ্যলিপির বর্ণনা
১ অধ্যায়ঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর সুন্নাতের অনুসরণ
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ১ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে যা আদেশ দেই, তোমরা তা গ্রহণ করো এবং যে বিষয়ে তোমাদেরকে নিষেধ করি তা থেকে বিরত থাকো। {১}
{১} বোখারী ৭২৮৮, মুসলিম ১৩৩৭, তিরমিজি ২৬৭৯, আহমদ ৭৩২০, ৭৪৪৯, ৮৪৫০, ৯২২৯, ৯৪৮৮, ৯৫৭৭, ২৭২৫৮, ৯৮৯০, ২৭৩১২, ১০২২৯, ইবনি মাজাহ ২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ইরওয়াউল গালীল ১৫৫, ৩১৪; সহীহাহ ৮৫০। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ২ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ আমি যে সম্পর্কে তোমাদের বলিনি, সে সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করো না। কারণ, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণ তাহাদের নবিগণের নিকট অধিক প্রশ্নের কারণে এবং তাঁদের সাথে মতবিরোধের কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতএব আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ের নির্দেশ দিলে তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করো এবং কোন বিষয়ে আমি তোমাদের নিষেধ করলে তা থেকে তোমরা বিরত থাকো। {২}
{২} বোখারী ৭২৮৮, মুসলিম ১৩৩৭, তিরমিজি ২৬৭৯, আহমদ ৭৩২০, ৭৪৪৯, ৮৪৫০, ৯২২৯, ৯৪৮৮, ৯৫৭, ২৭২৫৮, ৯৮৯০, ২৭৩১২, ১০২২৯, মাজাহ ১। তাহকিক আলবানীঃ সহিহ। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করে সে আল্লাহ্রই আনুগত্য করে এবং যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যাচরণ করে সে আল্লাহ্রই অবাধ্যাচরণ করে। {৩}
{৩} বোখারী ২৯৫৭, মুসলিম ১৮৩৫, নাসায়ী ৪১৯৩, ৫৫১০, আহমদ ৭৩৮৬, ৭৬০০, ২৭৩৫০, ৮৩০০, ৮৭৮৮, ৯১২১, ৯৭৩৯, ১০২৫৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ইরওয়াউল গালীল ৩৯৪। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৪ – আবু জাফার [মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হুসাইন বিন আলী বিন আবু তালিব] হইতে বর্ণিতঃ
ইবনি উমার [রাঃআ:] রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর নিকট কোন হাদীস শুনলে, তাতে তিনি নিজের পক্ষ থেকে কম-বেশি করিতেন না। {৪}
{৪} আহমদ ৫৫২১, দারিমী ৩১৮। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৫ – আবুদ-দারদা’ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাদের নিকট বের হয়ে আসেন, তখন আমরা দারিদ্র্য সম্পর্কে আলাপরত ছিলাম এবং আমরা সে বিষয়ে শংকিত ছিলাম। তিনি বলেন, তোমরা দারিদ্র্যকে ভয় করছো? সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! অবশ্যই তোমাদের উপর পৃথিবী প্রবল বেগে প্রবাহিত হইবে [প্রভাব বিস্তার করিবে], এমনকি পৃথিবী তোমাদের অন্তর কেবল তার দিকেই আকৃষ্ট করে ফেলবে। আল্লাহ্র শপথ! আমি তোমাদেরকে পরিচ্ছন্ন অবস্থায় ছেড়ে গেলাম, যার রাত-দিন ঔজ্জ্বল্যে সমান। আবুদ-দারদা’ [রাঃআ:] বলেন, আল্লাহ্র শপথ! রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] সত্যই বলেছেন। আল্লাহ্র শপথ! তিনি আমাদের পরিচ্ছন্ন অবস্থায়ই ছেড়ে গেছেন, যার রাত ও দিন ঔজ্জ্বল্যে সমান।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৬ – কুর্রাহ বিন ইয়াস বিন হিলাল [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ আমার উম্মাতের একটি দল অব্যাহতভাবে কিয়ামত পর্যন্ত সাহায্যপ্রাপ্ত হতে থাকিবে এবং যারা তাহাদের অপদস্থ করিতে চায় তারা তাহাদের কোন ক্ষতি করিতে সক্ষম হইবে না। {৬}
{৬} তিরমিজি ২১৯২, আহমদ ১৫১৬৯, ১৯৮৫৪, সহীহাহ ১/৩/১৩৫ । সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৭ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা আল্লাহ্র নির্দেশের উপর স্থির থাকিবে। তাহাদের বিরোধীরা তাহাদের ক্ষতি করিতে সক্ষম হইবেনা। {৭}
{৭} আহমদ ৮০৭৫, ৮২৭৯, ৮৭১১। সহীহাহ ১৯৬২, ফাযায়িলিশ শাম ৬ ।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
৮ – আবু ইনাবাহ [উতবাহ] আল-খাওলানী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর সাথে দু’ কিবলার দিকেই সলাত আদায় করিয়াছেন। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ আল্লাহ্ সর্বদা এক দ্বীনের মধ্যে একটি গাছ রোপণ করিতে থাকিবেন [এমন লোক সৃষ্টি করিতে থাকিবেন] যাদের তিনি তাহাঁর আনুগত্যে নিয়োজিত রাখবেন। {৮}
{৮} আহমদ ১৭৩৩৩ তাহকিক আলবানীঃ হাসান। তাখরিজ আলবানীঃ সহীহাহ্ ২৪৪২।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৯ – শুআয়ব বিন মুহাম্মাদ হইতে বর্ণিতঃ
মুআবিয়াহ [রাঃআ:] ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে বলেন, তোমাদের আলীমগণ কোথায়, তোমাদের আলীমগণ কোথায়? আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা লোকেদের উপর বিজয়ী থাকিবে। তারা তাহাদের লাঞ্চিত করিতে উদ্যত বা সাহায্য করিতে আগ্রহী কারো পরোয়া করিবে না। {৯}
{৯} বোখারী ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৪৬০; মুসলিম ১০৩৭, আহমদ ১৬৪০০, ১৬৪৩৮, ১৬৪৬৭, ২৭৫৮০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ১১৬৫, ১৯৫৮, ১৯৭১। উক্ত হাদিসের রাবী হাজ্জাজ বিন আরতাহ সম্পর্কে ইবনি মাঈন বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু নির্ভরযোগ্য নয় এবং তিনি আমর থেকে তাদলীস করিয়াছেন। আবু হাতীম আর রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু দুর্বলদের থেকে তাদলীস করিয়াছেন। আলী ইবনিল মাদিনী বলেন আমি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছি। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০ – সাওবান [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ কিয়ামাত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একটি দল সত্যের উপর স্থির থাকিবে এবং সাহায্যপ্রাপ্ত হতে থাকিবে। মহামহিম আল্লাহ্র নির্দেশ [কিয়ামাত] আসা পর্যন্ত তাহাদের বিরুদ্ধবাদীরা তাহাদের কোন ক্ষতি করিতে পারবে না। {১০}
{১০} মুসলিম ১৯২০, ২৮৮৯, তিরমিজি ২১৭৬, ২২২৯; আবু দাউদ ৪২৫২, আহমদ ২১৮৮৮, ২১৮৯৭, ২১৯৪৬; দারিমী ২০৯। তাহকিক আলবানীঃ সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী সাঈদ বিন বাশীর সম্পর্কে আহমদ বিন হাম্বল বলেন তিনি দুর্বল, ইবনি আলী তার সম্পর্কে বলেন, আমি তার হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা দেখি না তবে তিনি কখনো কখনো হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। বাযযার বলেন, তিনি সালিহ তার হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই।শু’বাহ ইবনিল হাজ্জাজ বলেন, তিনি হাদিসের ব্যাপারে সত্যবাদী। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস।
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ১১- জাবির বিন আবদুল্লাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমরা নবি [সাঃআ:] এর নিকট উপস্থিত থাকা অবস্থায় তিনি একটি সরল রেখা টানলেন এবং তাহাঁর ডান দিকে দুটি সরল রেখা টানলেন এবং বাম দিকেও দুটি সরল রেখা টানলেন। অতঃপর তিনি মধ্যবর্তী রেখার উপর তাহাঁর হাত রেখে বলেনঃ এটা আল্লাহ্র রাস্তা। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলওয়াত করেন
وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلاَ تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ
‘এবং এ পথই আমার সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথেরই অনুসরণ করো এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, অন্যথায় তা তোমাদেরকে তাহাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। [সূরাহ আনআম ৬:১৫৪] {১১}
{১১} আহমদ ১৪৮৫৩ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: যিলূলুল জান্নাহ ১৬। উক্ত হাদিসের রাবী মিজালিদ বিন সাঈদ সম্পর্কে ইমাম বোখারী ও ইয়াকুব বিন সুফিয়ান বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইমাম নাসাঈ তাঁকে সিকাহ বলেছেন। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান তাঁকে দইফ বা দুর্বল বলেছেন। ইবনি মাঈন বলেন, তার থেকে দলিল গ্রহন করা যাবে না অন্যত্রে তিনি বলেন, দইফ বা দুর্বল। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২. অধ্যায়ঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর হাদীসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তার বিরুদ্ধবাদীর প্রতি কঠোর মনোভাব পোষণ
১২ -আল-মিকদাম বিন মাদীকারিব আল-কিনদী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, অচিরেই কোন ব্যক্তি তার আসনে হেলান দেয়া অবস্থায় বসে থাকিবে এবং তার সামনে আমার হাদীস থেকে বর্ণনা করা হইবে, তখন সে বলবে, আমাদের ও তোমাদের মাঝে মহামহিম আল্লাহ্র কিতাবই যথেষ্ট। আমরা তাতে যা হালাল পাব তাকেই হালাল মানবো এবং তাতে যা হারাম পাবো তাকেই হারাম মানবো। [মহানবি বলেন] সাবধান! নিশ্চয়ই রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] যা হারাম করিয়াছেন তা আল্লাহ্ যা হারাম করিয়াছেন তার অনুরূপ। {১২}
{১২} তিরমিজি ২৬৬৪, আবু দাউদ ৪৬০৪, দারিমী ৫৮৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: তাখরীজুল মিশকাত ১৬৩। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ১৩ – আবু রাফি’ [রাঃআ:] {রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর মুক্ত করা দাস} হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ আমি যেন তোমাদের কাউকে এরূপ না পাই যে, সে তার আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকিবে এবং [এই অবস্থায়] আমার প্রদত্ত কোন আদেশ বা আমার প্রদত্ত কোন নিষেধাজ্ঞা তার নিকট পৌঁছলে সে বলবে, আমি কিছু জানিনা, আমরা আল্লাহ্র কিতাবে যা পাবো তার অনুসরণ করবো। {১৩}
{১৩} তিরমিজি ২৬৬৩, আবু দাউদ ৪৬০৫, আহমদ ২৩২৪৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: তাখরীজুল মিশকাত ১৬২। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪ – আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ যদি কেউ আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করে যা তাতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। {১৪}
{১৪} বোখারী ২৬৯৭, মুসলিম ১৭১৮, আবু দাউদ ৪৬০৬, আহমদ ২৩৯২৯, ২৪৬০৪, ২৪৯৪৪, ২৫৫০২, ২৫৬৫৯, ২৫৭৯৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: গয়াতুল মারাম ৫, ইরওয়াউল গালীল ৮৮। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ১৫ – আবদুল্লাহ ইবনিয-যুবায়র [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
এক আনসার ব্যক্তি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর সামনে যুবায়র [রাঃআ:]-এর সাথে হাররার পানি নালা নিয়ে বিবাদ করে, যার দ্বারা তারা খেজুর বাগানে পানি সেচ করিতেন। আনসারী বলিল, তুমি পানি ছেড়ে দাও যাতে তা প্রবাহিত হতে পারে। কিন্তু যুবায়র [রাঃআ:] তা অস্বীকার করেন। তাই তারা বিবাদ করিতে করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর নিকট উপস্থিত হন। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, হে যুবায়র! তোমার বাগানে পানি সিঞ্চন করো, অতঃপর তোমার প্রতিবেশির দিকে তা পাঠিয়ে দাও। এতে আনসারী অসন্তুষ্ট হয়ে বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার ফুপাতো ভাই তো [তাই এরূপ ফয়সালা দিলেন]। এ কথায় রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর মুখ বিবর্ণ হয়ে গেলো। তিনি বলেন, হে যুবায়র! তোমার বাগানে পানি সিঞ্চন করো, অতঃপর তা প্রতিরোধ করে রাখো, যাবত না তা আইল বরাবর হয়। রাবী আবদুল্লাহ্ [রাঃআ:] বলেন, যুবায়র [রাঃআ:] বলিলেন, আল্লাহ্র শপথ! আমার মতে এ আয়াত উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নাযিল হয় [অনুবাদ] : “কিন্তু না। তোমার প্রভুর শপথ! তারা মু’মিন হইবে না, যতক্ষণ তারা তাহাদের বিবাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার প্রদত্ত সিদ্ধান্তে তাহাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তারা তা মেনে নেয়”। [সূরাহ নিসা ৪ : ৬৫] {১৫}
{১৫} বোখারী ২৩৬০, মুসলিম ২৩৫৭, তিরমিজি ১৩৬৩, ৩০২৭; নাসায়ী ৫৪০৭, ৫৪১৬; আবু দাউদ ৩৬৩৭, আহমদ ১৪২২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬ – ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্র বাঁদীদেরকে আল্লাহ্র মাসজিদে সলাত আদায় করিতে [যেতে] বাধা দিও না। ইবনি উমার [রাঃআ:]-এর এক পুত্র বলিল, আমরা অবশ্যই তাহাদেরকে বাধা দিবো। রাবী বলেন, এতে তিনি ভীষণ অসন্তুষ্ট হন এবং বলেন, আমি তোমার নিকট রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর হাদীস বর্ণনা করছি, আর তুমি বলছ আমরা অবশ্যই তাহাদের বাধা দিবো! {১৬}
{১৬} বোখারী ৮৬৫, ৮৭৩, ৮৯৯, ৯০০, ৫২৩৮; মুসলিম ৪৪২/১-৪৪৭/৭, তিরমিজি ৫৭০, নাসায়ী ৭০৬, আবু দাউদ ৫৬৬-৬৮, আহমদ ৪৬৪১, ৪৯১৩, ৫০২৫, ৫০৮২, ৫১৮৯, ৫৪৪৫, ৪৬০৮, ৬০৬৬, ৬২১৬, ৬২৬০, ৬২৮২, ৬৩৫১, ৬৪০৮; দারিমী ৪৪২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ইরওয়াহ ৫১৫, গায়াতুল মারাম ২০৬। তাখরীজুল মুখতারাহ ১৮৩ তালাক, ইবনি খুযাইমাহ ১৬৮৪। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ১৭ – আবদুল্লাহ বিন মুগাফ্ফাল [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তার পাশে তার এক ভ্রাতুষ্পুত্র বসা ছিল। সে কংকর নিক্ষেপ করলে তিনি তাকে নিষেধ করেন এবং বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এটা করিতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি আরো বলেন, এতে না শিকার ধরা যায়, না শত্রুকে আহত করা যায়, বরং তা দাঁত ভেঙ্গে দেয় এবং চোখ ফুঁড়ে দেয়। রাবী বলেন, তার ভাইপো পুনরায় কংকর নিক্ষেপ করলে আবদুল্লাহ্ বিন মুগাফ্ফাল [রাঃআ:] বলেন, আমি তোমাকে হাদীস শুনাচ্ছি যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এরূপ করিতে নিষেধ করিয়াছেন, তারপরেও তুমি কংকর নিক্ষেপ করলে! আমি তোমার সাথে কখনও কথা বলবো না। {১৭}
{১৭} বোখারী ৪৮৪২, ৫৪৭৯, ৬২২০; মুসলিম ১৯৫৪/১-৩, নাসায়ী ৪৮১৫, আবু দাউদ ৫২৭০, আহমদ ১৬৩৫২, ২০০১৭, ২০০২৮, ২০০৩৮, ২০০৫০; দারিমী ৪৩৯, ৪৪০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: গয়াতুল মারাম ৫১। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮ – উবাদাহ ইবনিস-সামিত আনসারী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর সহাবী ও তাহাঁর মুখপাত্র উবাদাহ ইবনিস-সামিত [রাঃআ:] মুয়াবিয়াহ [রাঃআ:]-এর সাথে রোম [বায়যান্টাইন] যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি লোকদের লক্ষ্য করিলেন যে, তারা সোনার টুকরা স্বর্ণ মুদ্রার সাথে এবং রূপার টুকরা রৌপ্য মুদ্রার সাথে ক্রয়-বিক্রয় [বিনিময়] করছে। তিনি বলেন, হে লোক সকল! তোমরা তো [এরূপ বিনিময়ে] সুদ খাচ্ছো। আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ তোমরা সোনার বিনিময়ে সোনা বিক্রয় করো না, তবে পরিমাণে সমান সমান হলে, বাড়তি না হলে এবং লেনদেন বাকীতে না হলে করিতে পারো। তখন মুআবিয়াহ [রাঃআ:] তাকে বলেন, হে আবুল ওয়ালীদ! আমি তো এরূপ লেনদেনে সুদের কিছু দেখছি না, যদি না লেনদেন বাকীতে হয়। উবাদাহ [রাঃআ:] বলেন, আমি তোমার নিকট রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর হাদীস বর্ণনা করছি। আর তুমি আমার নিকট তোমার অভিমত ব্যক্ত করছো। আল্লাহ্ যদি আমাকে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেন তাহলে আমি এমন এলাকায় বসবাস করবো না, যেখানে আমার উপর তোমার কর্তৃত্ব চলে। অতএব তিনি [যুদ্ধ থেকে] প্রত্যাবর্তন করে মদিনায় পৌঁছলে উমার ইবনিল খাত্তাব [রাঃআ:] তাকে বলেন, হে আবুল ওয়ালীদ! আপনি কেন ফিরে এসেছেন? তখন তিনি তার নিকট সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করেন এবং সেখানে তার বসবাস না করার কথাও ব্যক্ত করেন। উমার[রাঃআ:] বলেন, হে আবুল ওয়ালীদ! আপনি আপনার এলাকায় ফিরে যান। কেননা যে এলাকায় আপনি ও আপনার মত মানুষ থাকিবে না সেখানে আল্লাহ্ গযব নাযিল করবেন। তিনি মুআবিয়াহ [রাঃআ:]-কে লিখে পাঠান, উবাদাহ [রাঃআ:]-এর উপর তোমার কোন কর্তৃত্ব চলবে না এবং তিনি যা বলেন জনসাধারণকে তদানুযায়ী পরিচালনা করো। কারণ এটাই আদেশ। {১৮}
{১৮} মুসলিম ১৫৮৭/১-২, তিরমিজি ১২৪০, নাসায়ী ৪৫৬০-৬৪, ৪৫৬৬; আবু দাউদ ৩৩৪৯, আহমদ ২২১৭৫, ২২২১৭, ২২২২০; দারিমী ২৫৭৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ১৯ – আবদুল্লাহ্ বিন মাসুদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমি তোমার নিকট রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর হাদীস বর্ণনা করলে তোমরা তার যুহ্দ [সাধনা], ধার্মিকতা ও তাকওয়ার কথা স্মরণে রেখে তা মেনে নাও [এবং নিজের মত খাটানো ত্যাগ করো]। {১৯}
{১৯} আহমদ ৩৬৩৭, ৩৯৩০, দারিমী ৫৯১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: জঈফ মুনকাতি। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল মুনকাতি
২০ – আলী বিন আবু তালিব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমি তোমাদের নিকট রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর হাদীস বর্ণনা করলে তোমরা মনে রাখবে যে, তিনি ছিলেন সর্বাধিক ধার্মিক, হিদায়াতপ্রাপ্ত ও আল্লাহ্ভীরু। {২০}
{২০} আহমদ ৯৮৮, ১০৪২, ১০৮৩, ১০৯৫; দারিমী ৫৯২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২১ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেন, আমি এমন লোকের পরিচয় তুলে ধরছি যার নিকট তোমাদের কেউ আমার হাদীস বর্ণনা করিবে, আর সে তার আসনে হেলান দেয়া অবস্থায় বলবে, কুরআন পাঠ করো। কোন উত্তম কথা বলা হলে [মনে করিবে যে] আমিই তা বলেছি। {২১}
{২১} আহমদ ৫৮৮৩, ৯৮৯৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: মুনকার। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: জামি সগীর ৬১৭৫, যঈফা ১০৮৪ জঈফ জিদ্দান। উক্ত হাদিসের রাবী ১. মুহাম্মাদ ইবনিল ফুদাইল সম্পর্কে ইবনি মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ। আবু মুর’আহ বলেন তিনি সত্যবাদী। ইমাম নাসাঈ বলেন কোন সমস্যা নেই। ২. আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ বিন আবু সাঈদ আল মাকবুরী সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান বলেন, আমি তার মজলিসে বসে জানতে পেরেছি যে, তার মাঝে মিথ্যাবাদিতা রয়েছে। আহমদ বিন হাম্বল বলেন তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ইবনি মাঈন বলেন তিনি সিকাহ নন। ইমাম বুখারি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। আবু বুর’আহ তাঁকে দুর্বল সাব্যস্ত করিয়াছেন। আমর ইবনিল ফাল্লাস তাঁকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন।হাদিসের তাহকিকঃ মুনকার
২২ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তিকে [ইবনি আব্বাসকে] বলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! আমি তোমার নিকট রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর হাদীস বর্ণনা করলে তুমি তার বিপরীতে কোন দৃষ্টান্ত পেশ করো না। {২২}
{২২} হাসান। হাদিসটি ইমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বরননবা করিয়াছেন। উক্ত হাদিসে আব্বাদ বিন আদাম সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩. অধ্যায়ঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর হাদীস বর্ণনায় সতর্কতা অবলম্বন করা
২৩ – আমর বিন মায়মূন হইতে বর্ণিতঃ
প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে ইবনি মসঊদ [রাঃআ:]-এর নিকট উপস্থিত হতে আমার ভুল হতো না। কিন্তু আমি কখনও তাঁকে “রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন” এভাবে কিছু বলিতে শুনিনি। এক রাতে তিনি বলেন, “রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন”। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি মাথা নিচু করিলেন। রাবী বলেন, আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন যে, তার জামার বোতাম খোলা, তার চক্ষুদ্বয় অশ্রু বিগলিত এবং এর শিরাগুলো ফুলে গেছে। অতঃপর তিনি বলেন, তিনি [সাঃআ:] এই বলেছেন অথবা এর অধিক বা কম বলেছেন অথবা এর কাছাকাছি বা এর অনুরূপ বলেছেন [অর্থাৎ তিনি যা বলেছেন তা আমার হুবহু মনে নেই]। {২৩}
{২৩} আহমদ ৪৩০৯, ২৭০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪ – মুহাম্মদ বিন সীরীন হইতে বর্ণিতঃ
আনাস বিন মালিক [রাঃআ:] রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর হাদীস বর্ণনাকালে ভীত-শংকিত হতেন এবং বলিতেন, অথবা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] অনুরূপ বলেছেন। {২৪}
{২৪} দারিমী ২৭৬।তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৫ – আবদুর রহমান বিন আবু লাইলা হইতে বর্ণিতঃ
আমরা যায়দ বিন আরকাম [রাঃআ:] কে বললাম, আমাদের নিকট রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর হাদীস বর্ণনা করুন। তিনি বলেন, আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং [অনেক কিছুই] ভুলে গেছি। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর হাদীস বর্ণনা করা খুবই কঠিন দায়িত্ব। {২৫}
{২৫} আহমদ ১৮৮১৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৬ – ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
[আবদুল্লাহ বিন আবু সাফার] বলেন, আমি [আমির বিন শুরাহীল] আশ-শাবীকে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, আমি ইবনি উমার [রাঃআ:] এর সাথে একটি বছর যাবত উঠাবসা করেছি, কিন্তু আমি তাকে কখনও রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর বরাতে কিছুই বর্ণনা করিতে শুনিনি। {২৬}
{২৬} দারিমী ২৭২।তাহকিক আলবানীঃ সহিহ। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ২৭ – তাঊস বিন কায়সান হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] কে বলিতে শুনিয়াছি, আমরা হাদীস মুখস্থ করতাম। তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর কাছেই হাদীস মুখস্থ করা হতো। কিন্তু এখন তোমরা প্রতিটি কষ্টকর ও আরামদায়ক স্থানে [পর্যালোচনা ব্যতীত] উঠতে শুরু করেছ। তোমাদের জন্য আফসোস হয়। {২৭}
{২৭} সহিহ।মুসান্নিফ [গ্রন্থকার] হাদিসটি এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ২৮ – কারাযাহ বিন কাব হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনিল খাত্তাব [রাঃআ:], আমাদেরকে কূফার উদ্দেশ্যে পাঠালেন। তিনি আমাদের বিদায় দিতে আমাদের সাথে সিরার নামক স্থান পর্যন্ত হেঁটে আসেন। তিনি বলেন, তোমরা কি জানো আমি কেন তোমাদের সাথে চলে এসেছি? রাবী বলেন, আমরা বললাম, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর সাহচর্যের কর্তব্য এবং আনসারদের প্রতি কর্তব্যের কারণে। উমার [রাঃআ:] বলেন, আমি তোমাদের নিকট একটি বিশেষ কথা বলার উদ্দেশ্যে তোমাদের সঙ্গে চলে এসেছি। আমি আশা করি তোমাদের সাথে আমার চলে আসার প্রতি খেয়াল রেখে তোমরা তা মনে রাখবে। তোমরা এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছো, যাদের বক্ষস্থলে ফুটন্ত হাঁড়ির মত কুরআনের আওয়াজ হইবে। তারা তোমাদেরকে দেখে তোমাদের প্রতি তাহাদের আনুগত্যের গর্দান এগিয়ে দিবে এবং বলবে, মুহাম্মাদ [সাঃআ:-এর সাহাবীগণ এসেছেন। তোমরা তাহাদের নিকট রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর কম সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করিবে। তাহলে আমি তোমাদের সাথে আছি। {২৮}
{২৮} সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: হাকিমের ইসরাদ। উক্ত হাদিসে মুজালিদ বিন সাঈদ সম্পর্কে ইমাম বোখারী ও ইয়াকুব বিন সুফইয়ান বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান বলেন, তিনি দইফ বা দুর্বল। ইবনি মাঈন বলেন তার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহন করা যাবে না। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৯ – সাদ বিন [আবু ওয়াক্কাস] মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
[সায়িব] বলেন, আমি মদিনা থেকে মক্কা পর্যন্ত সাদ বিন [আবু ওয়াক্কাস] মালিক [রাঃআ:]-এর সাহচর্যে ছিলাম। কিন্তু আমি তাকে নবি [সাঃআ:]-এর একটি হাদীসও বর্ণনা করিতে শুনিনি। {২৯}
{২৯} বোখারী ২৮২৪, দারিমী ২৭৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪. অধ্যায়ঃ স্বেচ্ছায় রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর প্রতি মিথ্যা আরোপের ভয়ানক পরিণতি
৩০ – আবদুল্লাহ বিন মাসুদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, সে যেন জাহান্নামকে তার আবাস বানালো। {৩০}
{৩০} তিরমিজি ২২৫৭, ২৬৫৯। তাহকিক আলবানীঃ সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: মুতাওয়াতির হাদীস, রওযুন নাসীর ৭০৭, ৮৮৫, সহীহাহ ১৩৮৩। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩১ – আলী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, তোমরা আমার প্রতি মিথ্যারোপ করো না। কেননা আমার প্রতি মিথ্যারোপ জাহান্নামে প্রবেশ করাবে। {৩১}
{৩১} বোখারী ১০৬, মুসলিম ১, তিরমিজি ২৬৬০, আহমদ ৫৮৫, ৬৩০ ১০০৩, ১০৭৮, ১২৯৪। তাহকিক আলবানীঃ সহিহ। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩২ – আনাস বিন মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করে, সে যেন তার আবাস জাহান্নামে নির্ধারণ করলো। {৩২}
{৩২} বোখারী ১০৮, মুসলিম ২, তিরমিজি ২৬৬১, আহমদ ১১৫৩১, ১১৭০০, ১১৭৪৪, ১২২৯১, ১২৩৫৩, ১২৩৮৯, ১২৬৮৭, ১২৭৭৭, ১২৯১৯, ১৩৫৪৯, ১৩৫৫৮, ১৩৫৬৮; দারিমী ২৩৫-৩৬, ২৩৮। তাহকিক আলবানীঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানীঃ রওযুন নাসীর ৭০৭, বোখারী মুসলিম। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩৩ – জাবির [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করলো, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করলো। {৩৩}
{৩৩} আহমদ ১৩৮৪৩, দারিমী ২৩১। তাহকিক আলবানীঃ সহিহ। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩৪ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার নামে মনগড়া কথা রচনা করলো, যা আমি বলিনি, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করলো। {৩৪}
{৩৪} বোখারী ১১০, মুসলিম ৩, আহমদ ৮০৬৭, ৮৫৫৮, ৯০৬১, ৯০৮৬, ৯৭১৩, ১০১৩৫, ১০৩৫০। মিশকাত ৫৯৪০।বোখারী ১১০, মুসলিম ৩, আহমদ ৮০৬৭, ৮৫৫৮, ৯০৬১, ৯০৮৬, ৯৭১৩, ১০১৩৫, ১০৩৫০। তাহকিক আলবানীঃ হাসান সহিহ। তাখরিজ আলবানীঃ মিশকাত ৫৯৪০। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ বিন আমর সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান বলেন, তিনি সালিহ। ইবনি হিব্বান বলেন তিনি কখনো কখনো হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ইবনি আদী বলেন, তার হাদিস বর্ণনায় সমস্যা নেই। ইমাম নাসাঈ তাঁকে সিকাহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৩৫ – আবু কাতাদাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে এই মিম্বারের উপর বলিতে শুনিয়াছি: তোমারা আমার থেকে অধিক হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে সাবধান হও। কেউ আমার সম্পর্কে বলিতে চাইলে সে যেন হক কথা বা সত্য কথাই বলে। যে ব্যক্তি আমার নামে এমন কথা বলে যা আমি বলিনি, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করলো। {৩৫}
{৩৫} আহমদ ২২০৩২, দারিমী ২৩৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: হাসান। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ১৭৫৩। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে ইয়াহ-ইয়া ইবনি মাঈন ও আজালী বলেন, তিনি সিকাহ। আহমদ বিন হাম্বাল বলেন, তিনি হাসানুল হাদিস। আলী ইবনিল মাদীনী বলেন তিনি সালিহ।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩৬ – আবদুল্লাহ ইবনিয-যুবায়র [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমি [আমার পিতা] যুবায়র ইবনিল আওওয়াম [রাঃআ:]-কে বললাম, আমি যেমন বিন মাসুদ [রাঃআ:] ও অমুক অমুক সহাবীকে হাদীস বর্ণনা করিতে শুনি তদ্রূপ আপনাকে কেন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর হাদীস বর্ণনা করিতে শুনি না? তিনি বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর থেকে কখনও আমি তাহাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি। কিন্তু আমি তাঁকে একটি কথা বলিতে শুনিয়াছি: যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্ধারণ করলো। {৩৬}
{৩৬} বোখারী ১০৭, আবু দাউদ ৩৬৫১, আহমদ ১৪১৬, ১৪৩১; দারিমী ২৩৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। সুন্নাত ও বিদয়াত – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৩৭ – আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করলো, সে যেন জাহান্নামে তার আবাস নির্ধারণ করলো। {৩৭}
{৩৭} মুসলিম ৩০০৪, আহমদ ১০৯৫১, ১১০১১, ১১০৩২, ১১১৪২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ।
৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি সজ্ঞানে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর নামে মিথ্যা বর্ণনা করে
৩৮ – আলী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেন, যে ব্যক্তি আমার নামে হাদীস বর্ণনা করলো, অথচ সে মনে করে যে, সে মিথ্যা বলেছে, সেও মিথ্যাবাদীদের একজন। {৩৮}
{৩৮} তিরমিজি ২৬৬২, আহমদ ৯০৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ।উক্ত হাদিসের রাবী ইবনি আবু লায়লা সম্পর্কে ইয়া’কুব বিন সুফিয়ান বলেন, তিনি সিকাহ। শু’বাহ ইবনিল হাজ্জাজ বলেন আমি তার চেয়ে দুর্বল স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন ব্যাক্তি আর কাউকে দেখিনি। ইয়াহ-ইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান বলেন, তিনি দইফ বা দুর্বল। আহমদ বিন হাম্বাল বলেন, তার স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল। ইবনি মাঈন বলেন সমস্যা নেই।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩৯ – সামুরাহ বিন জুনদুব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞাতসারে আমার নামে মিথ্যা বর্ণনা করলো, সেও মিথ্যাবাদীদের একজন। {৩৯}
{৩৯} তিরমিজি ২৬৬২, আহমদ ১৯৬৫০, ১৯৭০৯, ১৯৭১২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৪০ – আলী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেন, যে ব্যক্তি আমার নামে কোন মিথ্যা হাদীস বর্ণনা করলো, সে অন্যতম মিথ্যাবাদী। {৪০}
{৪০} তিরমিজি ২৫৬২, আহমদ ৯০৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: মুসলিম। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ ইবনিল ফুদাইল সম্পর্কে ইবনি মাঈন ও আলী ইবনি মাদীনী বলেন, তিনি সিকাহ। আবু যুর’আহ বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইমাম নাসাঈ বলেন কোন সমস্যা নেই। ইবনি হিব্বান তার সিকাহ হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করিয়াছেন।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪১ – মুগীরাহ বিন শুবাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজ ধারণা মতে আমার বরাতে কোন [মিথ্যা] হাদীস বর্ণনা করলো সে অন্যতম মিথ্যাবাদী। {৪১}
{৪১} তিরমিজি ২৬৬২, আহমদ ১৭৭৩৭, ১৭৭৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬. অধ্যায়ঃ হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ি রাশিদ্বীনের সুন্নাতের অনুসরণ
৪২ -ইরবাদ বিন সারিয়াহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
একদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় আমাদের নাসীহাত করেন, যাতে অন্তরসমুহ ভীত হলো এবং চোখগুলো অশ্রু বর্ষণ করলো। তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি তো বিদায় গ্রহণকারীর উপদেশ দিলেন। অতএব আমাদের নিকট থেকে একটি প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করুন [একটি সুনির্দিষ্ট আদেশ দিন]। তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহ্ভীতি অবলম্বন করো, শ্রবণ করো ও আনুগত্য করো [নেতৃ-আদেশ], যদিও সে কাফ্রী গোলাম হয়। আমার পরে অচিরেই তোমরা মারাত্মক মতভেদ লক্ষ্য করিবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের সুন্নাত অবশ্যই অবলম্বন করিবে, তা দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে ধরবে। অবশ্যই তোমরা বিদআত কাজ পরিহার করিবে। কারন প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা। {৪২}
{৪২} তিরমিজি ২৬৭৬, আবু দাউদ ৪৬০৭, আহমদ ১৬৬৯২, দারিমী ৯৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ইরওয়াহ ২৪৫৫, মিশকাত ১৬৫, ফিলাল ২৪-২৬, সালাতুত তারাবীহ ৮৮-৮৯।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩ – ইরবাদ বিন সারিয়াহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাদেরকে এমন হৃদয়গ্রাহী নাসীহত করেন যে, তাতে [আমাদের] চোখগুলো অশ্রু ঝরালো এবং অন্তরসমূহ প্রকম্পিত হলো। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! এতো যেন নিশ্চয়ই বিদায়ী ভাষণ। অতএব আপনি আমাদের থেকে কি প্রতিশ্রুতি নিবেন [আদেশ দিবেন]? তিনি বলেন, আমি তোমাদের আলোকিত দ্বীনের উপর রেখে যাচ্ছি, তার রাত তার দিনের মতই [উজ্জ্বল]। আমার পরে নিজেকে ধ্বংসকারীই কেবল এ দ্বীন ছেড়ে বিপথগামী হইবে। তোমাদের মধ্যে যে বেঁচে থাকিবে সে অচিরেই অনেক মতবিরোধ দেখিতে পাবে। অতএব তোমাদের উপর তোমাদের নিকট পরিচিত আমার আদর্শ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের আদর্শ অনুসরণ করা অবশ্য কর্তব্য। তোমরা তা শক্তভাবে দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকিবে। তোমরা অবশ্যই আনুগত্য করিবে, যদি হাবশী গোলামও [তোমাদের নেতা নিযুক্ত] হয়। কেননা মুমিন ব্যক্তি হচ্ছে নাসারন্ধ্রে লাগাম পরানো উটতুল্য। লাগাম ধরে যে দিকেই টানা হয়, সে দিকেই যেতে বাধ্য হয়। {৪৩}
{৪৩} সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ৯৩৭, ফিলাল।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস।
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৪৪- ইরবাদ বিন সারিয়াহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাদের ফাজ্রের সলাত আদায় করালেন, অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে আমাদের উদ্দেশ্যে মর্মস্পর্শী ওয়ায করেন …. অবশিষ্ট বিবরণ পূর্ববৎ [৪৩ নং হাদীসের অনুরূপ]। {৪৪}
{৪৪} তিরমিজি ২৬৭৬, আবু দাউদ ৪৬০৭, আহমদ ১৬৬৯২, দারিমী ৯৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ফিলাল ৩২।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭. অধ্যায়ঃ বিদআত ও ঝগড়াঝাটি হতে বেঁচে থাকা
৪৫ – জাবির বিন আব্দুল্লাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] যখন ভাষণ দিতেন তখন তাহাঁর চোখ দুটি লাল হয়ে যেতো, কন্ঠস্বর জোরালো হতো, তাহাঁর ক্রোধ বৃদ্ধি পেতো, যেন তিনি কোন সেনাবাহিনীকে সতর্ক করছেন। তিনি বলিতেনঃ তোমরা সকাল ও সন্ধ্যায় আক্রান্ত হতে পারো [অথবা তোমাদের সকাল-সন্ধ্যা কল্যাণময় হোক]। তিনি আরো বলিতেনঃ আমার প্রেরণ ও কিয়ামাত এ দুটি আঙ্গুলের অবস্থানের মত পরস্পর নিকটবর্তী। তিনি তাহাঁর তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল মিলিয়ে দেখান। অতঃপর তিনি বলেন, সবচেয়ে উত্তম নির্দেশ হলো আল্লাহ্র কিতাব এবং সর্বোত্তম পথ হলো মুহাম্মদ [সাঃআ:] প্রদর্শিত পথ। দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু উদ্ভাবন সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট কাজ। প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা। তিনি আরো বলেন, কোন ব্যক্তি ধন-সম্পদ রেখে [মারা] গেলে তা তার পরিবারবর্গের এবং কোন ব্যক্তি দেনা অথবা অসহায় সন্তান রেখে [মারা] গেলে তার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব আমার এবং তার সন্তানের লালন-পালনের দায়িত্বভারও আমার যিম্মায়। {৪৫}
{৪৫} মুসলিম ৮৬৭, নাসায়ী ১৫৭৮, ১৯৬২; আবু দাউদ ২৯৫৪, আহমদ ১৩৭৪৪, ১৩৯২৪, ১৪০২২, ১৪২১৯, ১৪৫৬৬; দারিমী ২০৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ইরওয়াহ ৬০৮।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬ – আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, বস্তুত বিষয় দুটিঃ কালাম ও হিদায়াত। অতএব সর্বোত্তম কালাম [কথা] হলো আল্লাহ্র কালাম এবং সর্বোত্তম হিদায়াত [পথ নির্দেশ] হলো মুহাম্মাদ [সাঃআ:] এর হিদায়াত। শোন! তোমরা নতুনভাবে উদ্ভাবিত নিকৃষ্ট বিষয় সম্পর্কে সতর্ক থাকিবে। কেননা নিকৃষ্ট কাজ হলো দ্বীনের মাঝে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়। প্রতিটি নতুন নিকৃষ্ট উদ্ভাবন হচ্ছে বিদআত এবং প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা। সাবধান! [শয়তান] যেন তোমাদের অন্তরে দীর্ঘায়ুর আকাঙ্খা সৃষ্টি করিতে না পারে, অন্যথায় তা তোমাদের অন্তরাত্মাকে শক্ত করে দিবে। সাবধান! নিশ্চয় যা কিছু আসার তা নিকটবর্তী এবং যা দূরবর্তী তা আসার নয়। জেনে রাখো! অবশ্যই সেই ব্যক্তি দুর্ভাগা যে তার মায়ের পেট থেকেই দুর্ভাগা। খোশনসীব সেই ব্যক্তি যে অপরকে দেখে নাসীহাত গ্রহণ করে। সাবধান! ঈমানদার ব্যক্তিকে হত্যা করা [বা তার সাথে সশস্ত্র সংঘাত করা] কুফরী এবং তাকে গালমন্দ করা পাপ। কোন মুসলিমের পক্ষে তার মুসলিম ভাইকে তিন দিনের অধিক [কথা না বলে] ত্যাগ করা হালাল নয়। সাবধান! তোমরা মিথ্যাচারিতা থেকে দূরে থাকো। কেননা মিথ্যাচারিতা দ্বারা না সফলতা অর্জন করা যায়, না অর্থহীন অপলাপ থেকে বাঁচা যায়। নিজ সন্তানের সাথে ওয়াদা করে তা পূরণ না করা কোন লোকের জন্যই শোভনীয় নয়। কেননা মিথ্যা [মানুষকে] পাপাচারের দিকে চালিত করে এবং পাপাচার জাহান্নামের দিকে চালিত করে। পক্ষান্তরে সততা [মানুষকে] পুণ্যের পথে চালিত করে এবং পুণ্য জান্নাতের দিকে চালিত করে। সত্যবাদী সম্পর্কে বলা হয়, সে সত্য বলেছে ও পুণ্যের কাজ করেছে। আর মিথ্যাবাদী সম্পর্কে বলা হয়, সে মিথ্যা বলেছে ও পাপাচার করেছে। জেনে রাখো! কোন ব্যক্তি মিথ্যা বলিতে বলিতে অবশেষে আল্লাহ্র নিকট ডাহা মিথ্যাবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। {৪৬}
– উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: জঈফ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: জামি সগীর ২০৬৩ জঈফ, ফিলুল জান্নাহ ২৫।উক্ত হাদিসের রাবী ১. মুহাম্মাদ বিন উবায়দ বিন মায়মুন আল মাদানী আবু উবায়দ সম্পর্কে ইবনি হিব্বান তার সিকাহ হওয়া ব্যাপারে আলোচনা করলেও অন্যত্রে বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। ২. উবাইদ বিন মায়মুন সম্পর্কে আবু হাতিম আর রাযী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত।{৪৬} বোখারী ৬০৯৪, মুসলিম ২৬০৬, ২৬০৭/১-৩; তিরমিজি ১৯৭১, আবু দাউদ ৪৯৮৯, আহমদ ৩৬৩১, ৩৭১৯, ৩৮৩৫, ৪০১২, ৪০৮৪, ৮০৯৪, ২৭৮৪০, ৪১৭৬; দারিমী ২৭১৫।হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৪৭ – আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এ আয়াত তিলাওয়াত করিলেন [অনুবাদ]: “তিনি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করিয়াছেন যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন, এগুলো কিতাবের মূল অংশ, আর অন্যগুলো রূপক। যাদের অন্তরে সত্য লঙ্ঘন প্রবণতা আছে শুধু তারাই বিশৃঙ্খলা ও ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রূপক তার অনুসরণ করে। আল্লাহ্ ব্যতীত আর কেউ তার ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা সুগভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা বলে, আমরা এর প্রতি ঈমান আনলাম, সমস্তই আমার রবের নিকট থেকে আগত। বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ ব্যতীত অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না”-[সূ-রাহ আলে-ইমরান ২:৭]। অতঃপর তিনি বলেন, হে আয়িশাহ! যখন তুমি তাহাদেরকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বাদানুবাদ করিতে দেখবে, তখন মনে করিবে যে, এরা সেই লোক যাদের আল্লাহ্ অপদস্থ করেন। তোমরা তাহাদের পরিহার করো। {৪৭}
{৪৭} বোখারী ৪৫৪৭, মুসলিম ২৬৬৫, তিরমিজি ২৯৯৪, আবু দাউদ ৪৫৯৮, আহমদ ২৩৬৯০, ২৪৪০৮, ২৪৪৮৩, ২৫৬৬৫; দারিমী ১৪৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: যিললুল জান্নাহ ৫। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৮ – আবু উমামাহ [সাদী বিন আজলান] [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, আমার পরে হিদায়াতপ্রাপ্ত লোক তখনই পথভ্রষ্ট হইবে, যখন তারা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হইবে। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন
بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ
“বরং এরা তো এক বিতর্ককারী সম্প্রদায়।” [সূরাহ যুখরুফ ৪৩:৫৮] {৪৮}
{৪৮} তিরমিজি ৩২৫৩ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: হাসান। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ তাগীব ১৩৭। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ ইবনিল ফুদাইল সম্পর্কে ইবনি মাঈন ও আলী ইবনিল মাদিনী বলেন, তিনি সিকাহ। আবু যুর’আহ বলেন তিনি সত্যবাদী। ইমাম নাসাঈ বলেন কোন সমস্যা নেই। ইবনি হিব্বান তার সিকাহ হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করিয়াছেন।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৪৯ – হুযায়ফাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, আল্লাহ্ বিদআতী ব্যক্তির সওম, সলাত, যাকাত বা দান-খয়রাত, হাজ্জ, উমরাহ, জিহাদ, ফিদ্য়া, ন্যায়বিচার ইত্যাদি কিছুই কবূল করবেন না। সে ইসলাম থেকে এমনভাবে খারিজ হয়ে যায় যেভাবে আটা থেকে চুল টেনে বের করা হয়। {৪৯}
{৪৯} মাউযূ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: জামি সগীর ৬৩৬০ মাওযু, জঈফ তারগীব তারহীব ৪০, যঈফা পৃঃ ৬৮৪-হাঃ ১৪৯৩। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ বিন মিহসান সম্পর্কে ইয়াহইয়া ইবনি মাঈন তাঁকে মিথ্যুক বলেছেন। ইমাম বোখারী বলেন মুনকারুল হাদিস। আবু হাতীম আর-রাযী তাঁকে মাজহুল ও মিথ্যুক বলেছেন। ইবনি আদী বলেন তিনি একাধিক হাদিস বানোয়াটভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনি হিব্বান বলেন তিনি সিকাহ হাদিসের বিপরীতে হাদিস বানিয়ে বর্ণনা করেন।হাদিসের তাহকিকঃ জাল হাদিস।
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৫০ – আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা বিদআতী ব্যক্তির নেক আমাল কবুল করবেন না, যতক্ষণ না সে তার বিদআত পরিহার করে। {৫০}
{৫০} জঈফ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: জামি সগীর ২৯ জঈফ, যঈফা ১৪৯২ মুনকার, জিলালি জান্নাত ৩৮ জঈফ। উক্ত হাদিসের রাবী ১. আবু যায়দ সম্পর্কে আবু যুররাহ আর-রাবী বলেন, আমি তাঁকে চিনি না। ইমাম যাহাবী বলেন তিনি মাজহুল। ২. আবুল মুগীরাহ সম্পর্কে আবু যুররাহ আর-রাবী বলেন, আমি তাঁকে চিনি না। ইমাম যাহাবী বলেন তাকে কেউ চিনে না।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৫১ – আনাস বিন মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যাকে বাতিল মনে করে পরিহার করলো তার জন্য জান্নাতের এক প্রান্তে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। যে ব্যক্তি সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া ত্যাগ করলো তার জন্য জান্নাতের মধ্যখানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। যে ব্যক্তি তার চরিত্র সুন্দর করলো তার জন্য জান্নাতের উচ্চতর স্থানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। {৫১}
{৫১} তিরমিজি ১৯৯৩ তাহকিক আলবানীঃ সনদ জঈফ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ২৭৩, যঈফাহ ১০৫৬। উক্ত হাদিসের রাবী সালামাহ বিন ওরদান সম্পর্কে আহমদ বিন হাম্বাল বলেন তিনি হাদীস বর্ণনায় দুর্বল ও মুনকার। আবু হাতিম আর রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। আবু দাউদ আস সাজিসতানী ও আল আজালী তাকে দুর্বল বলেছেন।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৮. অধ্যায়ঃ কিয়াস ও মনগড়া মতামত হতে বেঁচে থাকা।
৫২ – আবদুল্লাহ বিন আম্র [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, আল্লাহ্ তাআলা মানুষের অন্তর থেকে ইল্মকে বিলুপ্ত করার মাধ্যমে তা কেড়ে নিবেন না, বরং তিনি আলিমদেরকে [দুনিয়া থেকে] তুলে নেয়ার মাধ্যমে ইল্মকেও তুলে নিবেন। অতএব যখন কোন আলিম অবশিষ্ট থাকিবে না তখন জনগণ অজ্ঞ ও মূর্খদেরকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করিবে এবং তাহাদের কাছে [দ্বীনী বিষয়ে] জিজ্ঞেস করা হলে তারা [সেই বিষয়ে] কোন ইল্ম না থাকা সত্ত্বেও সিদ্ধান্ত দিবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হইবে এবং জনগণকেও পথভ্রষ্ট করিবে। {৫২}
{৫২} বোখারী ১০০, ৭৩০৭; মুসলিম ২৬৭৩/১-২, তিরমিজি ২৬৫২, আহমদ ৬৪৭৫, ৬৭৪৮; দারিমী ২৩৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: রওযুন নাযীর ৫৭৯।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫৩ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, দলীল-প্রমাণ ও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ব্যতীত কাউকে সিদ্ধান্ত [ফাতাওয়া] দেয়া হলে তার পাপের বোঝা ফাতাওয়া প্রদানকারীর উপর বর্তাবে। {৫৩}
{৫৩} আবু দাউদ ৩৬৫৭, আহমদ ৮০৬৭, ৮৫৫৮; দারিমী ১৫৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: হাসান। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: মিশকাত ২৪২। উক্ত হাদিসের রাবী আবু উসমান মুসলিম বিন ইয়াসার সম্পর্কে ইবনি হিব্বান ও ইমাম যাহাবী সিকাহ বলেছেন।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৫৪ – আবদুল্লাহ বিন আম্র [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, অত্যাবশ্যকীয় ইল্ম [জ্ঞান] তিন প্রকার, এ ছাড়া অবশিষ্টগুলো অতিরিক্তঃ আল কুরআনের বিধান সম্পর্কিত [মুহকাম] আয়াতসমূহ অথবা প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ [হাদীস] অথবা ইনসাফভিত্তিক ফারায়েজের জ্ঞান [ওয়ারিসী স্বত্ব ন্যায়সঙ্গতভাবে বন্টনের জ্ঞান]। {৫৪}
{৫৪} আবু দাউদ ২৮৮৫ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: জঈফ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: মিশকাত ২৩৯।উক্ত হাদিসের রাবীঃ১. রিশদীন বিন সা’দ সম্পর্কে আহমদ বিন হাম্বল তাকে দুর্বল বলেছেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন তার থেকে কোন হাদিস লিপিবদ্ধ করেন নি। আমর ইবনিল ফাল্লাস ও আবু যুরআহ আর-রাযী তাকে দুর্বল বলেছেন। আবু হাতীম আর-রাযী মুনকারুল হাদীস ও তার মাঝে অমনোযোগিতার কথা উল্লেখ করিয়াছেন।২. [আব্দুর রহমান বিন যিয়াদ] ইবনি আনউম আল ইফরিকী সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান বলেন, তার থেকে হাদিস গ্রহন বর্জনীয়। ইবনি মাহদী বলেন তার থেকে হাদিস গ্রহন করা উচিত নয়। আহমদ বিন হাম্বাল বলেন আমি তার থেকে হাদিস লিপিবদ্ধ করি নি।৩. আব্দুর রহমান বিন রাফি সম্পর্কে ইমাম বোখারী ও আবু হাতিম আর রাযী এবং ইমাম যাহাবী বলেন, মুনকারুল হাদিস।আস-সাজী বলেন তার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৫৫ – মুআয বিন জাবাল [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাকে ইয়ামানে পাঠানোর সময় বলেন, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান আছে কেবল সেই বিষয়ে তুমি সিদ্ধান্ত বা রায় প্রদান করিবে। কোন বিষয় তোমার জন্য কঠিন হলে [অজ্ঞাত থাকলে] তুমি অপেক্ষা করিবে, যতক্ষণ না তোমার নিকট স্পষ্ট হয় [বা তোমাকে বলে দেয়া হয়] অথবা তুমি লিখিতভাবে সে সম্পর্কে আমাকে জানাবে। {৫৫}
{৫৫} নাই তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: মউযূ । তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: যঈফাহ ২/২৭৫-২৭৬।উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ বিন সাঈদ বিন হাসসান সম্পর্কে আহমদ বিন হাম্বল বলেন, তার হাদিস বানোয়াট। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেছেন মুনকারুল হাদিস। আমর ইবনি ফাল্লাস বলেন, তিনি একাধিক হাদিস বানিয়ে বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম বোখারী তার হাদিস প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। ইমাম নাসাঈ তাকে মিথ্যুক বলেছেন এবং তার হাদিস প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। ইবনি নুমাইর বলেন তিনি বানিয়ে হাদিস বর্ণনা করেন।হাদিসের তাহকিকঃ জাল হাদিস
৫৬ – আবদুল্লাহ্ বিন আম্র ইবনিল আস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ বানী ইসরাঈলের যাবতীয় কাজকর্ম যথার্থভাবেই হচ্ছিল, যতক্ষণ তাহাদের মধ্যে যথার্থ সন্তান জন্মেছে। অতঃপর তাহাদের মধ্যে বিজাতীয় বা লুন্ঠনকৃত নারীর সন্তান যুক্ত হলে তারা নিজেদের মত অনুযায়ী রায় প্রদান করে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হয় এবং অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করে। {৫৬}
{৫৬} জঈফ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: জামি সগীর ৪৭৬০ জঈফ, যঈফা ৪৩৩৬ জঈফ। উক্ত হাদিসের রাবী [আব্দুর রহমান] ইবনি আবু রিজাল সম্পর্কে আবু হাতীম আর-রাযী বলেন, তিনি সালিহ। ইবনি হিব্বান বলেন তিনি হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। দারাকুতনী বলেন, তিনি সিকাহ। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, কোন সমস্যা নেই।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৯. অধ্যায়ঃ ঈমানের বিবরণ
৫৭ -আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, ঈমানের ষাট বা সত্তরের অধিক স্তর আছে। তার সাধারন বা নিম্নতর স্তর হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। সর্বোচ্চ স্তর হলো কালিমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু [আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নাই] বলা এবং লজ্জাশীলতাও ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। {৫৭}
{৫৭} বোখারী ৯, মুসলিম ৩৫/১-২, তিরমিজি ২৬১৪, নাসায়ী ৫০০৪-৬, আবু দাউদ ৪৬৭৬, আহমদ ৭০৯৭, ৯৪১৭। তাহকিক আলবানীঃ সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ১৭৬৯, ইবনি আবী শাইরাহ ২১/৬৭। উক্ত হাদিসের রাবী ১. সুহায়ল বিন আবু সালিহ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাঈদ বলেন, তিনি সিকাহ। সুফইয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, সাবত। আহমদ বিন হাম্বল বলেন তার বর্ণিত হাদিস সহিহ নয়। ইমাম নাসাঈ বলেন কোন সমস্যা নেই। ইবনি আদী বলেন তার খবর মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য। ইবনি হিব্বান বলেন তিনি সিকাহ তবে অন্যত্রে বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন।২. আবু খালিদ আল আহমার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু তার হাদিস দলীল যোগ্য নয়। আলী বিন মাদীনী বলেন, তিনি সিকাহ। আবু হাতীম আর-রাযী তিনি সত্যবাদী। ইমাম নাসাঈ বলেন কোন সমস্যা নেই। ইবনি আদী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সালেহ কিন্তু হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ ও ভুল করেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৫৮ – আবদুল্লাহ বিন উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] এক ব্যক্তিকে লজ্জাশীলতা সম্পর্কে তার ভাইকে নাসীহাত [তিরস্কার] করিতে শুনলেন। তখন তিনি বলেন, নিশ্চয় লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি শাখা। {৫৮}
{৫৮} বোখারী ২৪, ৬১১৮; মুসলিম ৩৬, তিরমিজি ২৬১৫, নাসায়ী ৫০৩৩, আবু দাউদ ৪৭৯৫, আহমদ ৫১৬১, ৬৩০৫; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৬৭৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: রওযুন নাযীর ৫১৩, ৭৪৩।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫৯ – আবদুল্লাহ [বিন মাসুদ] [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যার অন্তরে সরিষার দানা [সামান্যতম] পরিমানও অহংকার আছে, সে [প্রথম পর্যায়েই] জান্নাতে প্রবেশ করিবে না এবং যার অন্তরে সরিষার দানা [সামান্যতম] পরিমাণ ঈমান আছে সে জাহান্নামে [স্থায়ীভাবে] প্রবেশ করিবে না। {৫৯}
{৫৯} মুসলিম ৯১, তিরমিজি ১৯৯৮-৯৯, আবু দাউদ ৪০৯১, আহমদ ৩৭৭৯, ৩৯০৩, ৩৯৩৭, ৪২৯৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ইসলালুল মাসজিদ ১১৫। উক্ত হাদিসের রাবী সাঈদ বিন মাসলামাহ সম্পর্কে ইবনি হিব্বান বলেন, সিকাহ তবে তিনি অন্যত্র বলেন, তিনি হাদীস বর্ণনায় ভুল করেন। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ বলেন কোন সমস্যা নেই। ইমাম বোখারী বলেন মুনকারুল হাদিস ও তার হাদিসের ব্যাপারে দুর্বলতা রয়েছে। আবু হাতিম আর রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য রাবী নন। ইমাম নাসাঈ বলেন তিনি যইফ বা দুর্বল। ইবনি আদী বলেন তাকে প্রত্যাখ্যান করা যায় না আবার নির্ভর করাও যায় না। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬০ – আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যখন আল্লাহ্ তাআলা [কিয়ামাতের দিন] মুমিনদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন এবং তারা নিরাপদ হয়ে যাবে, তখন ঈমানদারগণ তাহাদের জাহান্নামী ভাইদের ব্যাপারে তাহাদের প্রতিপালকের সাথে এত প্রচন্ড তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হইবে যে, তারা দুনিয়াতে অবস্থানকালে তাহাদের কেউ তার বন্ধুর পক্ষে ততটা প্রচন্ড বিতর্কে লিপ্ত হয়নি। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ ভাইয়েরা তো আমাদের সাথে সলাত আদায় করতো, সওম রাখতো এবং হাজ্জ করতো। অথচ আপনি তাহাদেরকে জাহান্নামে দাখিল করিয়াছেন। তখন আল্লাহ্ তাআলা বলবেনঃ তোমরা যাও এবং তাহাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা চিনতে পারো, তাহাদেরকে বের করে নিয়ে এসো। অতএব তারা তাহাদের কাছে যাবে এবং তাহাদের আকৃতি দেখে তাহাদের চিনতে পারবে। জাহান্নামের আগুন তাহাদের দৈহিক গঠনাকৃতি ভক্ষন [নষ্ট] করিবে না। আগুন তাহাদের কারো পদদ্বয়ের জংঘার অর্ধাংশ পর্যন্ত এবং কারো পদদ্বয়ের গোছা পর্যন্ত স্পর্শ করিবে। তারা তাহাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে এনে বলবে, হে আমাদের প্রভু! আপনি আমাদেরকে যাদের বের করে আনার নির্দেশ দিয়েছেন আমরা তাহাদের বের করে এনেছি। অতঃপর আল্লাহ্ বলবেনঃ যাদের অন্তরে এক দীনার পরিমাণ ঈমান আছে, অতঃপর যাদের অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণ ঈমান আছে, অতঃপর যাদের অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান আছে, তোমরা তাহাদেরকেও বের করে নিয়ে এসো। আবু সাঈদ [রাঃআ:] বলেন, যার এ কথা বিশ্বাস না হয় সে যেন তিলাওয়াত করে
إِنَّ اللَّهَ لاَ يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ وَإِنْ تَكُ حَسَنَةً يُضَاعِفْهَا وَيُؤْتِ مِنْ لَدُنْهُ أَجْرًا عَظِيمًا
“আল্লাহ্ অণু পরিমাণও যুল্ম করেন না। কোন উত্তম কাজ হলে আল্লাহ্ তা দ্বিগুন করেন এবং আল্লাহ্ তাহাঁর পক্ষ থেকে মহা পুরস্কার প্রদান করেন”- [সূরাহ নিসা ৪-৪০]। {৬০}
{৬০} বোখারী ২২, ৬৫৬০, ৭৪৪০; মুসলিম ১৮৩, ১৮৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ৩০৫৪, যিললুল জান্নাহ ৭৫৭।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৬১ – জুনদুব বিন আবদুল্লাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমরা নবি [সাঃআ:] এর সাথে ছিলাম। আমরা ছিলাম শক্তিশালী এবং সক্ষম যুবক। আমরা কুরআন শেখার পূর্বে ঈমান শিখেছি, অতঃপর কুরআন শিখেছি এবং তার দ্বারা আমাদের ঈমান বেড়ে যায়। {৬১}
{৬১} সহিহ।হাদিসটি ইমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬২ – ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, এ উম্মাতের দুটি শ্রেণীর জন্য ইসলামে কোন অংশ নেই- মুরজিয়া ও কাদারিয়া সম্প্রদায়। {৬২}
{৬২} তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: জঈফ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: জঈফ মিশকাত ১০৫, যিললুল জান্নাহ ৩২৪/৩২৫। উক্ত হাদিসের রাবী ১. মুহাম্মাহ ইবনি ফুদায়ল সম্পর্কে ইবনি মাঈন ও আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, তিনি সিকাহ। আবু যুর’আহ বলেন তিনি সত্যবাদী। ইমাম নাসাঈ বলেন কোন সমস্যা নেই। ইবনি হিব্বান তার সিকাহ হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করিয়াছেন। ২. আলী বিন নিযার সম্পর্কে ইয়াকুব বিন সুফিইয়ান তাকে দুর্বল বলেছেন। আল আযদী তাকে খুবই দুর্বল বলেছেন। ইমাম যাহাবী তাকে দইফ বা দুর্বল বলেছেন।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৬৩ – উমার [ইবনিল খাত্তাব] [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমরা নবি [সাঃআ:]-এর কাছে উপবিষ্ট থাকা অবস্থায় ধবধবে সাদা পোশাক পরিহিত ও মাথায় গাঢ় কালো চুলবিশিষ্ট এক ব্যক্তি এসে হাজির হন। তার চেহারায় সফরের কোন ছাপ দেখা যাচ্ছিল না এবং আমাদের কেউই তাকে চিনে না। রাবী বলেন, তিনি নবি [সাঃআ:]-এর সামনে বসলেন, তার হাঁটুদ্বয় মহানবি [সাঃআ:]-এর হাঁটুদ্বয়ের সাথে সাথে লাগিয়ে এবং তার দুহাত তাহাঁর দু উরুর উপর রেখে, তারপর জিজ্ঞেস করেন, হে মুহাম্মাদ! ইসলাম কী? তিনি বলেন, এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আমি আল্লাহ্র রসূল, সলাত আদায় করা, যাকাত দেয়া, রমাযানের সওম পালন করা এবং আল্লাহ্র ঘরের হাজ্জ করা। তিনি [আগন্তুক] বলেন, আপনি সত্য কথা বলেছেন। আমরা তার এ কথায় অবাক হলাম যে, তিনিই জিজ্ঞেস করিলেন এবং তিনিই তা সত্যায়ন করিলেন। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করেন, হে মুহাম্মাদ! ঈমান কী? তিনি বলেন, তুমি ঈমান আনবে আল্লাহ্র উপর, তাহাঁর মালায়িকার, তাহাঁর রসূলগণের, তাহাঁর কিতাবসমূহে, আখিরাতের দিনে এবং তাকদীরে ও তার ভালো-মন্দে। আগন্তুক বলেন, আপনি সত্য কথা বলেছেন। আমরা এবারও তার কথায় অবাক হলাম যে, তিনিই প্রশ্ন করছেন এবং তিনিই তা সত্যায়ন করছেন। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, হে মুহাম্মাদ! ইহসান কী? তিনি বলেন, তুমি এমনভাবে আল্লাহ্র ইবাদাত করো যেন তুমি তাঁকে দেখছো, যদি তুমি তাঁকে না দেখো নিশ্চয় তিনি তোমাকে দেখছেন। তিনি বলেন, মুহূর্তটি [কিয়ামাত] কখন আসবে? তিনি বলেন, এ সম্পর্কে উত্তরদাতা প্রশ্নকর্তার চেয়ে অধিক কিছু জানে না। তিনি বলেন, তাহলে এর আলামত কী? তিনি বলেন, ক্রীতদাসী তার মনিবকে প্রসব করিবে। ওয়াকী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, অর্থাৎ অনারবদের ঔরসে আরবরা জন্মগ্রহণ করিবে। তুমি দেখিতে পাবে নগ্নদেহ, নগ্নপদ ও অভাবগ্রস্থ মেষ চারকরা সুউচ্চ ইমারতের মালিক হয়ে অহংকারে ফেটে পড়বে। উমার [রাঃআ:] বলেন, এ ঘটনার তিন দিন পর নবি [সাঃআ:] আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বলেন, লোকটি কে, তুমি কি তা জানো? আমি বললাম, আল্লাহ্ ও তাহাঁর রসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বলেন, ইনি হলেন জিবরীল [আ:], দ্বীনের বিষয়াদি শিক্ষা দেয়ার জন্য তোমাদের নিকট এসেছেন। {৬৩}
{৬৩} মুসলিম ৮, তিরমিজি ২৬১০, নাসায়ী ৪৯৯০, ৪৬৯৫; আহমদ ১৮৫, ৩৬৯, ৩৭৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ফিলাল ১২০-১২৭ ইরওয়াহ ৩৩-৩৪।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬৪ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
একদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] লোকবেষ্টিত থাকা অবস্থায় এক ব্যক্তি তাহাঁর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! ঈমান কী? তিনি বলেন, তুমি ঈমান আনবে আল্লাহ্র উপর, তাহাঁর মালায়িকাহ, তাহাঁর কিতাবসমূহে, তাহাঁর রসূলগণের, তাহাঁর সাথে সাক্ষাতে এবং তুমি আরো ঈমান আনবে পুনরুত্থান দিবসে। সে বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! ইসলাম কী? তিনি বলেন, তুমি আল্লাহ্র ইবাদাত করিবে, তাহাঁর সাথে কোন কিছু শারীক করিবে না, ফার্দ সলাত আদায় করিবে, ফার্দ যাকাত প্রদান করিবে এবং রমাদানের সওম পালন করিবে। সে বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! ইহসান কী? তিনি বলেন, তুমি এমনভাবে আল্লাহ্র ইবাদাত করো যেন তুমি তাঁকে দেখছো। যদি তুমি তাঁকে দেখিতে সক্ষম না হও, তবে তিনি নিশ্চয় তোমাকে দেখছেন। সে বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! তিনি বলেন, মুহূর্তটি [কিয়ামাত] কখন আসবে? তিনি বলেন, এ বিষয়ে উত্তরদাতা প্রশ্নকারীর চাইতে অধিক কিছু জানে না। তবে আমি তোমাকে তার কতিপয় শর্ত [আলামত] সম্পর্কে বলছি। ক্রীতদাসী যখন তার মনিবকে প্রসব করিবে। সেটা কিয়ামাতের শর্তাবলীর অন্তর্ভুক্ত। যখন মেষ চারকরা সুউচ্চ দালান-কোঠার [মালিক হয়ে] অহংকারে ফেটে পড়বে এটাও তার শর্তাবলীর অন্তর্ভুক্ত। পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ জানে না। তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তিলাওয়াত করেন [অনুবাদ]: “কিয়ামাতের জ্ঞান কেবল আল্লাহ্র নিকট রয়েছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা জরায়ুতে আছে। কেউ জানে না আগামীকাল [বা ভবিষ্যতে] সে কী উপার্জন করিবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মরবে। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত”-[সূরাহ লোকমানঃ ৩৪]। {৬৪}
{৬৪} বোখারী ৫০, ৪৭৭৭; মুসলিম ৯-১০, নাসায়ী ৪৯৯১, আহমদ ৯২১৭।তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৬৫ – আলী বিন আবু তালিব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, ঈমান হলো অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকারোক্তি এবং দ্বীনের রোকনসমূহের [অপরিহার্য বিধানসমূহ] বাস্তবায়ন। আবুস-সালত [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ সানাদ কোন পাগলের নিকট পাঠ করা হলে সেও নিরাময় লাভ করিবে। {৬৫}
{৬৫} মউযূ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: যঈফাহ ২২৭০। উক্ত হাদিসের রাবী আবুস সালাম বিন সালিহ আবুস সালত আল হারাবী সম্পর্কে আবু হাতিম আর রাযী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু যার’আহ আর রাযী বলেন, আমি তার থেকে কোন হাদিস বর্ণনা করিনি। আহমদ বিন হাম্বল বলেন, মুনকারুল হাদিস। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি দাবিত। ইবনি মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ ও সত্যবাদী।হাদিসের তাহকিকঃ জাল হাদিস
৬৬ -আনাস বিন মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্র রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, তোমাদের কেউ [পূর্ণ] মুমিন হইবে না, যাবত না সে তার ভাইয়ের জন্য [বা তার প্রতিবেশির জন্য] তাই পছন্দ করিবে, যা সে তার নিজের জন্য পছন্দ করে। {৬৬}
{৬৬} বোখারী ১৩, মুসলিম ৪৫, তিরমিজি ২৫১৫, নাসায়ী ৫০১৬, ৫০১৭, ৫০৩৯; আহমদ ১২৩৯০, ১২৭৩৪, ১৩২১৭, ১৩৪৬২, ১৩৫৪৭, ১৩৬৬৮; দারিমী ২৭৪০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ৭৩, রওযুন নাযীর ১২৯।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬৭ -আনাস বিন মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, আমি তোমাদের কারো কাছে তার সন্তান-সন্ততি, তার পিতা-মাতা ও সকল মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হওয়া পর্যন্ত সে [পূর্ণ] মুমিন হতে পারবে না। {৬৭}
{৬৭} বোখারী ১৫, মুসলিম ৪৪/১-২, নাসায়ী ৫০১৩-১৪, আহমদ ১২৭৩৯, ১৩৪৯৯, ১৩৫৪৭; দারিমী ২৭৪১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি:। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৬৮ -আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, সেই সত্ত্বার শপথ, যাঁহার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না এবং তোমরা পরস্পরকে মহব্বত না করা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন একটি বিষয় নির্দেশ করবো না, যা করলে তোমরা পরস্পরকে মহব্বত করিবে? তোমাদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও। {৬৮}
{৬৮} মুসলিম ৫৪, তিরমিজি ২৬৮৮, আহমদ ৮৮৪১, ৯৪১৬, ২৭৩১৪, ১০২৭২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ইরওয়াহ ৭৭৭।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬৯ -আবদুল্লাহ [বিন মাসুদ] [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, মুসলিমকে গালি দেয়া গর্হিত কাজ এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফরী। {৬৯}
{৬৯} বোখারী ৪৮, মুসলিম ৬৪, তিরমিজি ১৯৮৩, ২৬৩৪-৩৫; নাসায়ী ৪১০৫-১৩, আহমদ ৩৬৩৯, ৩৮৯৩, ৩৯৪৭, ৪১১৫, ৪১৬৭, ৪২৫০, ৪৩৩২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ জামি ৩৫৯৫।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭০ -আনাস বিন মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যে ব্যাক্তি এক আল্লাহ্র প্রতি নিষ্ঠাবান অবস্থায়, তাহাঁর ইবাদাতরত অবস্থায় যাঁহার কোন শারীক নাই, সলাত আদায় করে এবং যাকাত প্রদান করে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হলো, সে এমন অবস্থায় মারা গেল যে, আল্লাহ্ তার প্রতি সন্তুষ্ট।আনাস [রাঃআ:] বলেন, এটা হলো আল্লাহ্র সেই দ্বীন, যা নিয়ে রসূলগণ এসেছেন এবং তাহাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তা মানুষের নিকট পৌঁছিয়েছেন ফিতনা-ফাসাদ এবং মনগড়া মতবিরোধ সৃষ্টির পূর্বেই। এর সমর্থন রয়েছে কুরআনের শেষের দিকে অবতীর্ণ আয়াতে, মহান আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
فَإِنْ تَابُوا
“যদি তারা তাওবাহ করে, সলাত আদায় করে এবং যাকাত দেয়”- [সূরাহ তাওবাহ ৯:৫]। আনাস [রাঃআ:] বলেন, তারা তাওবা করার পর মূর্তিগুলো ও সেগুলোর পূজা ত্যাগ করে। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,
فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلاَةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ
“যদি তারা তাওবাহ করে, সলাত আদায় করে এবং যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই”- [সূরাহ তওবা ৯:১১]। {৭০}
{৭০} জঈফ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: তালীকুরগীব ১/২৩। উক্ত হাদিসের রাবী ১. আবু জা’ফার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আলী বিন মাদীনী তাকে সিকাহ বলেছেন। আবু হাতিম তাকে সত্যবাদী বলেছেন। আহমদ বিন হাম্বল বলেন, হাদিস বর্ণনায় তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, মুগীরাহ কতৃক হাদিস সংমিশ্রণ করিয়াছেন। ২. রাবী বিন আনাস সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী ও আজালী বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমাস্যা নেই। ইবনি হিব্বান বলেন তিনি সিকাহ। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি শিয়া মতাবলম্বী হওয়ার হাদীস বর্ণনায় বাড়াবাড়ি করিয়াছেন।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস।
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৭১ -আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, আমি লোকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নাই, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ্র রসূল এবং তারা সলাত আদায় করে এবং যাকাত দেয়। {৭১}
{৭১} বোখারী ১৪০০, ২৯৪৬, ৬৯২৪, ৭২৮৫; মুসলিম ২০, ২১/১-৩; তিরমিজি ২৬০৬-৭, নাসায়ী ২৪৪৩, ৩০৯০-৯৩, ৩০৯৫, ৩৯৭০-৭৮; আবু দাউদ ২৬৪০, আহমদ ৬৮, ১১৮, ৩৩৭, ২৭৩৮০, ৮৩৩৯, ৮৬৮৭, ৯১৯০, ২৭২১৪, ৯৮০২, ২৭২৮৪, ১০১৪০, ১০৪৪১, ১০৪৫৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ মুতাওয়াত্বির। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ৪০৭। উক্ত হাদিসের রাবী আবু জা’ফার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, মুগীরাহ থেকে হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করিয়াছেন। আহমদ বিন হাম্বল বলেন, হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নন। বু হাতিম আর-রাযী ও আলী ইবনিল মাদীনী এবং ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মুতওয়াতির
৭২ -মুআয বিন জাবাল [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, আমাকে মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, নিশ্চয় আমি আল্লাহ্র রসূল এবং তারা সলাত আদায় করে ও যাকাত দেয়। {৭২}
{৭২} আহমদ ২১৬১৭ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ মুতাওয়াত্বির। উক্ত হাদিসের রাবী শাহর বিন হাওশাব সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও ইয়াকুব বিন সুফইয়ান এবং আল আজালী বলেন, তিনি সিকাহ। শু’বাহ ইবনিল হাজ্জাজ তাকে বর্জন করিয়াছেন। আহমদ বিন হাম্বল ও আবু হাতিম আর রাযী বলেন কোন সমস্যা নেই।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মুতওয়াতির
৭৩ -ইবনি আব্বাস ও জাবির বিন আহদুল্লাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তারা বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, আমার উম্মাতের দু শ্রেণীর লোকের ইসলামে কোন অংশ নেই- মুরজিয়া ও কাদারিয়া সম্প্রদায়।
জঈফ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: মিশকাত ১০৫, যিললুল জান্নাহ ৩৩৪, ৩৩৫, ৯৪৮।হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৭৪ -আবু হুরাইরা ও ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তারা বলেন, ঈমান বাড়ে ও কমে।
খুবই দুর্বল। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: যঈফাহ ১১২৩।হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৭৫ -আবুদ-দারদা’ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
ঈমান বাড়ে ও কমে। {৭৩}
{৭৩} দুর্বল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১০. অধ্যায়ঃ তাকদীর [রাঃআ:] ভাগ্যলিপির বর্ণনা
৭৬ আবদুল্লাহ বিন মাসুদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাদের কাছে বর্ণনা করিয়াছেন, আর তিনি ছিলেন সত্যবাদী ও সত্যবাদী বলে সমর্থিতঃ তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি কার্যক্রম এভাবে অগ্রসর হয় যে, তার মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত [শুক্ররূপে] জমা রাখা হয়, তারপর অনুরূপ সময়ে তা জমাট রক্ত পিন্ডের রূপ ধারণ করে, তারপর অনুরূপ সময়ে তা মাংসপিন্ডের রূপ ধারণ করে, তারপর আল্লাহ্ তাআলা তার নিকট একজন ফেরেশ্তা পাঠান। তাকে চারটি বিষয় লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। অতএব তিনি [আল্লাহ্] বলেন, তার কার্যকলাপ, আয়ুষ্কাল, তার রিয্ক এবং সে দুর্ভাগা না ভাগ্যবান তা লিখে দাও। সেই সত্তার শপথ যাঁহার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয় তোমাদের কেউ অবশ্যই জান্নাতীদের কাজ করিতে থাকে, এমনকি তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত পরিমাণ দূরত্ব থাকে, তখন তার দিকে তার তাকদীরের লেখা অগ্রসর হয় এবং সে জাহান্নামীদের কাজ করে, ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবার তোমাদের কেউ অবশ্যই জাহান্নামীদের কাজ করিতে থাকে, এমনকি তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাত দূরত্ব থাকে, তখন তার দিকে তার তাকদীরের লেখা অগ্রসর হয় এবং সে জান্নাতীদের কাজ করে, ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। {৭৪}
{৭৪}বোখারী ৩২০৮, ৩৩৩২, ৬৫৯৪, ৭৪৫৪; মুসলিম ২৬৪৩, তিরমিজি ২১৩৭, আবু দাউদ ৪৭০৮, আহমদ ৩৬১৭, ৩৯২৪, ৪০৮০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: যিললুল জান্নাহ ১৭৫, ১৭৬, ইরওয়াহ ২১৪৩। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ ইবনিল ফুদায়ল সম্পর্কে ইবনি মাঈন ও আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, তিনি সিকাহ। আবু যুর’আহ বলেন তিনি সত্যবাদী। ইমাম নাসাঈ বলেন কোন সমস্যা নেই। ইবনি হিব্বান তার সিকাহ হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করিয়াছেন।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৭৭ -উবাই বিন কাব, আবদুল্লাহ বিন মাসুদ, হুযায়ফাহ ও যায়দ বিন সাবিত [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
[ইবনিল দায়লামী] বলেন, আমার মনে এই তাকদীর সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ দানা বাঁধে। তাই আমি এই ভেবে শংকিত হই যে, তা আমার দ্বীন ও অন্যান্য কার্যক্রম নষ্ট করে দেয় কিনা। তাই আমি উবাই বিন কাব [রাঃআ:]-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আবুল মুনযির! আমার মনে এই তাকদীর সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ দানা বেঁধেছে, তাই আমি এই ভেবে শংকিত হই যে, তা আমার দ্বীন ও অন্যান্য কার্যক্রমকে নষ্ট করে দেয় কিনা। অতএব এ সম্পর্কে আমাকে কিছু বলুন। আশা করি আল্লাহ্ তা দ্বারা আমার উপকার করবেন। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তাআলা ঊর্ধলোকের ও ইহলোকের সকলকে শাস্তি দিতে চাইলে তিনি অবশ্যই তাহাদের শাস্তি দিতে পারেন। তথাপি তিনি তাহাদের প্রতি যুলমকারী নন। আর তিনি তাহাদেরকে দয়া করিতে চাইলে তাহাঁর দয়া তাহাদের জন্য তাহাদের কাজকর্মের চেয়ে কল্যাণময়। যদি তোমাদের নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ বা উহূদ পাহাড়ের মত সোনা থাকতো এবং তুমি তা আল্লাহ্র রাস্তায় খরচ করিতে থাকো, তবে তোমার সেই দান কবুল হইবে না, যাবত না তুমি তাকদীরের উপর ঈমান আনো। অতএব তুমি জেনে রাখো! যা কিছু তোমার উপর আপতিত হয়েছে তা তোমার উপর আপতিত হতে কখনো ভুল হতো না এবং যা তোমার উপর আপতিত হওয়ার ছিল না তা ভুলেও কখনো তোমার উপর আপতিত হইবে না। তুমি যদি এর বিপরীত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাও তবে তুমি জাহান্নামে যাবে। আমি মনে করি তুমি আমার ভাই আবদুল্লাহ বিন মাসুদ [রাঃআ:]-এর নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তোমার কোন ক্ষতি হইবেনা। [ইবনিদ দাইলামী বলেন], অতঃপর আমি আবদুল্লাহ বিন মাসুদ [রাঃআ:]-এর নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও উবাই [রাঃআ:]-এর অনুরূপ বলিলেন। তিনি আরো বলিলেন, তুমি হুযাইফাহ [রাঃআ:]-এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তোমার ক্ষতি নেই। অতঃপর আমি হুযাইফাহ [রাঃআ:]-এর কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও তাহাদের দুজনের অনুরূপ বলেন। তিনি আরও বলেন, তুমি যায়দ বিন সাবিত [রাঃআ:]-এর নিকট গিয়ে তাকেও জিজ্ঞেস করো। অতএব আমি যায়দ বিন সাবিত [রাঃআ:]-এর নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ আল্লাহ্ তাআলা ঊর্ধলোক ও ইহলোকের সকল অধিবাসীকে শাস্তি দিতে চাইলে অবশ্যই তাহাদের শাস্তি দিতে পারবেন এবং তিনি তাহাদের প্রতি যুলমকারী নন। আর তিনি তাহাদের প্রতি দয়া করিতে চাইলে তাহাঁর দয়া তাহাদের সমস্ত সৎ কাজের চাইতেও তাহাদের জন্য অধিক কল্যাণকর। তোমার নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ সোনা থাকলেও এবং তুমি তা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করলেও তিনি তা কবূল করবেন না, যাবত না তুমি সম্পূর্ণরূপে তাকদীরের উপর ঈমান আনো। অতএব তুমি জেনে রাখো! তোমার উপর যা কিছু আপতিত হওয়ার আছে তা তোমার উপর আপতিত হয়েছে, তা কখনো ভুলেও এড়িয়ে যেত না এবং যা তোমার উপর আপতিত হওয়ার ছিল না, তা তোমার উপর ভুলেও কখনো আপতিত হত না। তুমি যদি এর বিপরীত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাও তাহলে তুমি জাহান্নামে যাবে। {৭৫}
{৭৫} আবু দাউদ ৪৬৯৯, আহমদ ২১০৭৯, ২১১০২, ২১১৪৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ফিললুল জান্নাহ ১৪৫, মিশকাত ১১৫, তাখরীজুত তাহরীয়াহু ৪৪৭।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭৮ -আলী বিন আবু তালিব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমরা নবি [সাঃআ:]-এর নিকট বসা ছিলাম। তাহাঁর হাতে ছিল এক টুকরা কাঠ। তা দিয়ে তিনি মাটির উপর রেখা টানলেন, অতঃপর মাথা তুলে বলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার জান্নাতে তার একটি আসন অথবা জাহান্নামে তার নিকট আসন নির্ধারিত করা হয়নি। বলা হলো, হে আল্লাহ্র রসূল! তাহলে আমরা কি ভরসা করব না? তিনি বলেন, না, তোমরা সৎ কাজ করিতে থাকো এবং [এর উপর] ভরসা করো না। কারণ যাকে যার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজসাধ্য করা হয়েছে। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন
فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى * وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى * فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى * وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى * وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى * فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى
“সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দিব সহজ পথ। আর কেউ কার্পণ্য করলে, নিজেকে অমুখাপেক্ষী মনে করলে আমি তার জন্য সুগম করে দিব কঠোর পথ।”[সূরাহ লায়ল ৯২ : ৫-১০]। {৭৬}
{৭৬} বোখারী ১৩৬২, ৪৯৪৫-৪৯, ৬২১৭, ৬৬০৫, ৭৫৫২; মুসলিম ২৬৪৭/১-২, তিরমিজি ২১৩৬, ৩৩৪৪; আবু দাউদ ৪৬৯৪, আহমদ ৬২২, ১০৭০, ১১১৩, ১১৮৫, ১৩৫২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: যিললুল জান্নাহ ১৭১, রওযুন নাযীর ৭০১।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৭৯ -আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চাইতে উত্তম এবং আল্লাহ্র নিকট অধিক প্রিয়। অবশ্য উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। তুমি তোমার জন্য উপকারী জিনিসের আকাঙ্ক্ষা করো এবং আল্লাহ্র সাহায্য চাও এবং কখনো অক্ষমতা প্রকাশ করো না। তোমার কোন ক্ষতি হলে বলো না, যদি আমি এভাবে করতাম, বরং তুমি বল, আল্লাহ্ যা নির্ধারণ করিয়াছেন এবং তিনি যা চান তাই করেন। কেননা “লাও” [যদি] শব্দটি শয়তানের তৎপরতার দ্বার খুলে দেয়। {৭৭}
{৭৭} মুসলিম ২৬৬৪, আহমদ ৮৫৭৩, ৮৬১১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: হাসান। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ফিযাল ৩৫৬।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৮০ -আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেন, আদম [আ:] মূসা [আ:]-এর সাথে [আত্মার জগতে] বিতর্ক করেন। মূসা [আ:] তাঁকে বলেন, হে আদম! আপনি আমাদের পিতা। আপনি আমাদের হতাশ করিয়াছেন এবং আপনার ভুলের মাশুল স্বরূপ আমাদেরকে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করিয়াছেন। আদম [আ:] তাঁকে বলেন, হে মূসা! আল্লাহ্ তোমাকে তাহাঁর প্রত্যক্ষ কালামের জন্য মনোনীত করিয়াছেন এবং স্বহস্তে তোমাকে তাওরাত কিতাব লিখে দিয়েছেন। তুমি কি আমাকে এমন একটি ব্যাপারে দোষারোপ করছো, যা আল্লাহ্ তাআলা আমাকে সৃষ্টি করার চল্লিশ বছর পূর্বে আমার জন্য নির্ধারিত করেন? অতএব আদম [আ:] বিতর্কে মূসা [আ:]-এর উপর বিজয়ী হন, আদম [আ:] মূসা [আ:]-এর সাথে বিতর্কে বিজয়ী হন, আদম [আ:] মূসা [আ:]-এর সাথে বিতর্কে বিজয়ী হন। কথাটি তিনি তিনবার বলেন। {৭৮}
{৭৮} বোখারী ৩৪০৯, ৪৭৩৮; মুসলিম ২৬৫২/১-৪, তিরমিজি ২১৩৪, আবু দাউদ ৪৭০১, আহমদ ৭৩৪০, ৭৫৩৪, ৭৫৭৯, ৭৭৯৬, ২৭৩৭৫, ৮৮৫১, ৮৫২৫, ৯৫০০, ৯৬৬৪; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৬৬০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ফিলাল ১৪৫।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮১ -আলী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, কোন বান্দাহ চারটি বিষয়ের উপর ঈমান না আনা পর্যন্ত মুমিন হইবে না। একমাত্র আল্লাহ্র উপর ঈমান আনবে, যাঁহার কোন শরীক নেই, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ্র রসূল, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান এবং তাকদীরের ভালমন্দে। {৭৯}
{৭৯} তিরমিজি ২১৪৫ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: মিশকাত ১০৪ ফিলাল ১৩০, তাখরিজ মুখতারাহ্ ৪১৬-৪২০।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮২ -উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে আনসার সম্প্রদায়ের এক বালকের জানাযাহ পড়ার জন্য ডাকা হলো। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! তার জন্য সুসংবাদ, সে জান্নাতের চড়ুই পাখিদের মধ্যে এক চড়ুই যে পাপ কাজ করেনি এবং তা তাকে স্পর্শও করেনি। তিনি বলেন, হে আয়িশাহ! এর ব্যতিক্রমও কি হতে পারে? নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা একদল লোককে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন। তারা তাহাদের পিতাহাদের মেরুদন্ডে অবচেতন থাকতেই তিনি তাহাদেরকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন। তিনি জাহান্নামের জন্যও একদল সৃষ্টি করিয়াছেন। তারা তাহাদের পিতাহাদের মেরুদন্ডে অবচেতন থাকতেই তিনি তাহাদের জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন। {৮০}
{৮০} মুসলিম ২৬৬২/১-২, নাসায়ী ১৯৪৭, আবু দাউদ ৪৭১৩, আহমদ ২৩৬১২, ২৫২১৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ্ ৪/৪৪৮, ফিলাল ২৫১, আহ্কাম ৮১। উক্ত হাদিসের রাবী তালহাহ বিন ইয়াহইয়া বিন তালহাহ বিন উবাইদুল্লাহ সম্পর্কে আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন কোন সমস্যা নেই। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি সালিহ। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ। আহমদ বিন হাম্বল বলেন তিনি সিকাহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৮৩ -আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কুরায়শ মুশরিকরা নবি [সাঃআ:] এর সঙ্গে তাকদীরের ব্যাপারে ঝগড়া করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হয়। তখন এ আয়াত নাযিল হয়
يَوْمَ يُسْحَبُونَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ ذُوقُوا مَسَّ سَقَرَ * إِنَّا كُلَّ شَىْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ
“যেদিন তাহাদেরকে উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হইবে জাহান্নামের দিকে, [সেদিন বলা হইবে] জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদন করো। আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে।” [সূরা আল ক্বামার ৫৪ : ৪৮, ৪৯] {৮১}
{৮১} মুসলিম ২৬৫৬, তিরমিজি ২১৫৭, ৩২৯০; আহমদ ৯৪৪৩, ৯৮০৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ফিলাল ৩৪৭। উক্ত হাদিসের রাবী যিয়াদ বিন ইসমাঈল আল মাখযুমী সম্পর্কে আলী ইবনিল মাদীনী বলেন তিনি মা’রুফ। ইমাম নাসাঈ বলেন কোন সমস্যা নেই। ইবনি হিব্বান বলেন তিনি সিকাহ। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন তিনি দইফ বা দুর্বল। আবু হাতীম আর-রাযী তার থেকে হাদিস গ্রহন করিয়াছেন।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮৪ -আবদুল্লাহ বিন উবায়দুল্লাহ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আয়িশা [রাঃআ:]-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তার সঙ্গে তাকদীর সম্পর্কে কিছু আলোচনা করেন। আয়িশা [রাঃআ:] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তাকদীর সম্পর্কে কিছু বলবে, কিয়ামতের দিন তাকে ঐ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হইবে। আর যে ব্যক্তি এ বিষয়ে কিছু বলবে না তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেসও করা হইবে না। {৮২}
{৮২} নাই তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: জঈফ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: মিশকাত ১১৪। উক্ত হাদিসের রাবী ১. ইয়াহইয়া বিন উসমান সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন এবং ইমাম বোখারী বলেন, মুনকারুল হাদীস। ইমাম নাসাঈ বলেন তিনি সিকাহ নন। আল উকাইলী বলেন তিনি দইফ বা দুর্বল। ২. ইয়াহইয়া বিন আব্দুল্লাহ বিন আবু মুলাইকাহ সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বলেন তিনি হাদীস বর্ণনায় দুর্বল।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৮৫-আবদুল্লাহ বিন আম্র ইবনিল আস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তাহাঁর সহাবীদের নিকট বের হয়ে এলেন। তখন তারা তাকদীর সম্পর্কে বাদানুবাদ করছিল। ফলে রাগে তাহাঁর চেহারা লাল বর্ণ ধারণ করে, যেন ডালিমের দানা তাহাঁর মুখমন্ডলে ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তোমাদের কি এ কাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে অথবা এর জন্য কি তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে? তোমরাও কুরআনের কতকাংশকে কতকাংশের বিরুদ্ধে পেশ করছো। এ কারণেই তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণ ধ্বংস হয়েছে। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ বিন আমর [রাঃআ:] বলিলেন, আমি এই মজলিসে উপস্থিত না থাকায় যে লজ্জা পেলাম, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর আর কোন মজলিসে আমি উপস্থিত না হওয়ায় এতটা লজ্জা পাইনি। {৮৩}
{৮৩} আহমদ ৬৮৩০, ৬৮০৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: মিশকাত ৯৮, ৯৯, ২৩৭, ফিলাল ৪০৬।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮৬ -[আবদুল্লাহ] বিন উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, ছোঁয়াচে বলিতে কোন রোগ নেই, অশুভ লক্ষণ বলিতে কিছুই নেই এবং হামাহ [পেঁচার ডাক] বলিতে কিছুই নেই। তখন তার সামনে এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার কী মত যে, চর্মরোগে আক্রান্ত একটি উট সুস্থ উটের সংস্পর্শে এসে সকল উটকে আক্রান্ত করে? তিনি বলেন, এটাই তোমাদের তাকদীর। আচ্ছা প্রথম উটটিকে কে সংক্রামিত করেছিল? {৮৪}
তাহকীকঃ এটাই তোমাদের তাকদীর এ ব্যতীত সহিহ।{৮৪} আহমদ ৪৭৬১, ৬৩৬৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: এটাই তোমাদের তাকদীর এ কথা ব্যতীত সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ৭৮২, যঈফাহ ৪৮০৮। উক্ত হাদিসের রাবী ইয়াহইয়া বিন আবু হাইইয়াহ আবু জানবিল কালবী সম্পর্কে ইয়াযিদ বিন হারুন বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদিস বর্ণনায় তাদলীস করেন। আহমদ বিন হাম্বল ও ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তার মাঝে কোন সমস্যা নেই কিন্তু হাদিস বর্ণনায় তাদলীস করেন। ইবনি মাঈন অন্যত্র বলেন, তিনি দুর্বল।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৮৭ -শাবী [আমির বিন শুরাহীল] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আদী বিন হাতিম [রাঃআ:] কূফায় এলে আমরা কূফার একদল ফকীহ তাহাঁর সাথে সাক্ষাত করি। আমরা তাকে বললাম, আপনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর নিকট যা শুনেছেন, তা আমাদের কাছে বর্ণনা করুন। তিনি বলেন, আমি নবি [সাঃআ:] এর নিকট এলে তিনি বলেন, হে আদী বিন হাতিম! তুমি ইসলাম গ্রহণ করো, শান্তি পাবে। আমি বললাম, ইসলাম কী? তিনি বলেন, তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নেই, আমি আল্লাহ্র রসূল এবং তুমি তাকদীরের ভাল-মন্দ, স্বাদ-তিক্ততা সবকিছুর উপর ঈমান আনবে। {৮৫}
{৮৫} আহমদ ১৭৭৯৬, ১৮৮৮৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: খুবই দুর্বল। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: যিললুল জান্নাহ ১৩৫। উক্ত হাদিসের রাবী আব্দুল আলা বিন আবুল মুসাবির সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন তিনি মিথ্যুক। আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, তিনি দইফ বা দুর্বল। ইমাম বোখারী বলেন মুনকারুল হাদিস। ইবনি আম্মার বলেন তিনি দুর্বল ও তার থেকে দলীল গ্রহণযোগ্য নয়। আবু যুয়াআহ আর-রাযী বলেন, তিনি খুবই দুর্বল। আবু হাতিম বলেন তিনি দুর্বল এবং তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য।হাদিসের তাহকিকঃ খুবই দুর্বল
৮৮ -আবু মূসা আল-আশআরী[রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, অন্তর হলো পালকতুল্য, উন্মুক্ত মাঠে বাতাস তাকে যেদিকে ইচ্ছা উল্টাতে-পাল্টাতে থাকে। {৮৬}
{৮৬} আহমদ ২৭৮৫৯, ১৯২৫৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ফিলাল ২২৭-২২৮, মিশকাত ১০৩। উক্ত হাদিসের রাবী ইয়াযীদ [বিন আবান] আর-রিকাশী সম্পর্কে আহমদ বিন হাম্বল বলেন, মুনকারুল হাদিস। শু’বাহ ইবনিল হাজ্জাজ বলেন, তার থেকে হাদীস বর্ণনার চেয়ে রাস্তা কেটে বসে যাওয়া আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। আমর ইবনিল ফাল্লাস বলেন, হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়। ইয়া’কুব বিন সুফইয়ান বলেন, তার মাঝে দুর্বলতা রয়েছে। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন কোন সমস্যা নেই। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ নং ৮৯ -জাবির [বিন আবদুল্লাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আনসার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি নবি [সাঃআ:] এর নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার একটি দাসী আছে। আমি কি তার সাথে [সঙ্গমকালে] আযল করিতে পারি? তিনি বলেন, তার জন্য যা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অবশ্যই সে লাভ করিবে। পরে আবার সেই আনসারই তাহাঁর নিকট এসে বলেন, দাসীটি গর্ভধারণ করেছে। নবি [সাঃআ:] বলেন, যার জন্য যা নির্ধারিত হয়েছে তা অবশ্যই ঘটবে। {৮৭}
{৮৭} আবু দাউদ ২১৭৩, আহমদ ১৩৯৩৬, ১৩৯৫৩, ১৪৭২০ ১৪৭৫৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: ফিলাল ৩৬২, সহীহাহ ৩/৩২২।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯০-সাওবান [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, কেবল সৎ কর্মই আয়ু বৃদ্ধি করে এবং দুআ ব্যতীত অন্য কিছুতে তাকদীর রদ হয় না। মানুষের অসৎ কর্মই তাকে রিয্ক বঞ্চিত করে। {৮৮}
তাহকীক আলবানীঃ [আরবী] কথাটি ছাড়া হাসান।{৮৮} আহমদ ২১৮৮১, ২১৯০৭, ২১৯৩২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: وَإِنَّ الرَّجُلَ কথাটি ছাড়া হাসান। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ১৫৪। উক্ত হাদিসের রাবী আব্দুল্লাহ বিন আবুল জা’দ সম্পর্কে ইবনি হিব্বান বলেন তিনি সিকাহ। ইবনিল কাত্তান বলেন তিনি অপরিচিত। কেউ বলেছেন তার নাম সালিম ইবনি আবুল জা’দ। আর কেউ বলেছেন আব্দুল্লাহ ইবনিল আবুল জা’দ। যদি সে প্রথমজন হয় তাহলে বর্ণনাটি মুঙ্কাতি’, কেননা সালিম সাওবান হতে শুনেন নি। আর যদি দ্বিতীয়জন হয় তাহলে অপরিচিত। যেমনটি ইবনি কাত্তান বলেছেন। যদিও ইবনি হিব্বান তাকে সিকাহ বলেছেন। ইমাম যাহাবী আল-মীযান গ্রন্থে সেদিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহকে যদিও যদিও সিকাহ বলা হয়েছে কিন্তু তার মাঝে জাহালত রয়েছে।হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
৯১ -সুরাকাহ বিন জুশুম [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! কার্যকলাপ কি তাই যা পূর্বেই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং তদানুযায়ী তাকদীরে নির্ধারিত হয়েছে, না ভবিষ্যতে যা করা হইবে তা? তিনি বলেন, বরং তাই যা পূর্বেই লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে এবং তদানুযায়ী তাকদীর নির্দিষ্ট হয়েছে। যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য তা সহজসাধ্য করা হয়েছে।
সহিহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯২ -জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, এ উম্মাতের তারা মাজুসী [অগ্নিপূজক] যারা আল্লাহ্র নির্ধারিত তাকদীরকে অস্বীকার করে। এরা রোগাক্রান্ত হলে তোমরা তাহাদের দেখিতে যেও না। তারা মারা গেলে তোমরা তাহাদের জানাযায় হাজির হয়ো না। এদের সাথে তোমাদের সাক্ষাত হলে তোমরা এদের সালাম দিওনা।
তাহকীকঃ সালাম অংশ কথাটি ছাড়া হাসান।{৯০} সালাম অংশ কথাটি ছাড়া হাসান। তাখরিজ নাসিরুদ্দিন আলবানি: মিশকাত ১০৭, ফিলাল ৩২৮।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
Leave a Reply