ক্রীতদাস, গোলাম, মনিব ও ফিত্‌না-ফাসাদের সময় উপাসনা

ক্রীতদাস, গোলাম, মনিব ও ফিত্‌না-ফাসাদের সময় উপাসনা

ক্রীতদাস, গোলাম, মনিব ও ফিত্‌না-ফাসাদের সময় উপাসনা >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

ক্রীতদাস, গোলাম, মনিব ও ফিত্‌না-ফাসাদের সময় উপাসনা

পরিচ্ছেদ – ২৩৬: ক্রীতদাস মুক্ত করার মাহাত্ম্য
পরিচ্ছেদ – ২৩৭: গোলামের সাথে সদ্ব্যবহার করার ফযীলত
পরিচ্ছেদ – ২৩৮: আল্লাহর হক এবং নিজ মনিবের হক আদায়কারী গোলামের মাহাত্ম্য
পরিচ্ছেদ- ২৩৯: ফিত্‌না-ফাসাদের সময় উপাসনা করার ফযীলত

পরিচ্ছেদ – ২৩৬: ক্রীতদাস মুক্ত করার মাহাত্ম্য

১৩৬৬. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ক্রীতদাস মুক্ত করিবে, আল্লাহ ঐ ক্রীতদাসের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে তার একেকটি অঙ্গকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে মুক্ত করিবেন। এমনকি তার গুপ্তাঙ্গের বিনিময়ে তার গুপ্তাঙ্গও (মুক্ত করে দেবেন) ।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৫১৭, ৬৭১৫, মুসলিম ১৫০৯, তিরমিজী ১৫৪১, আহমাদ ৯১৫৪, ৯২৫৬, ৯২৭৮, ৯৪৮১, ১০৪২২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৬৭. আবু যার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! কোন্‌ আমল সবার চেয়ে উত্তম?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।” আমি বললাম, ‘কি ধরনের ক্রীতদাস মুক্ত করা উত্তম?’ তিনি বললেন, “যে ক্রীতদাস তার মালিকের কাছে সর্বাধিক আকর্ষণীয় এবং সবার চেয়ে বেশি মূল্যবান।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৫১৮, মুসলিম ৮৪, নাসাঈ ৩১২৯, ইবনু মাজাহ ২৫২৩, আহমাদ ২০৮২৪, ২০৯৩৮, ২০৯৮৯, দারেমী ২৭৩৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ২৩৭: গোলামের সাথে সদ্ব্যবহার করার ফযীলত

১৩৬৮. মা’রূর ইবনে সুওয়াইদ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি আবু যার রাঃআঃ-কে দেখলাম যে, তাঁর পরনে জোড়া পোশাক রয়েছে এবং তাঁর গোলামের পরনেও অনুরূপ জোড়া পোশাক বিদ্যমান! আমি তাঁকে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি ঘটনা উল্লেখ করে বললেন যে, ‘তিনি আল্লাহর রসূলের যুগে তাঁর এক গোলামকে গালি দিয়েছিলেন এবং তাকে তার মায়ের সম্বন্ধ ধরে হেয় প্রতিপন্ন করেছিলেন। এ কথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেছিলেন, “(হে আবু যার!) নিশ্চয় তুমি এমন লোক; যার মধ্যে জাহেলিয়াত (ইসলামের পূর্ব যুগের অভ্যাস) রয়েছে! ওরা তোমাদের ভাই স্বরূপ এবং তোমাদের সেবক। আল্লাহ ওদেরকে তোমাদের মালিকানাধীন করিয়াছেন। সুতরাং যে ব্যক্তির ভাইকে আল্লাহ তার মালিকানাধীন করিয়াছেন, সে ব্যক্তি যেন তাকে (দাসকে) তাই খাওয়ায়; যা সে নিজে খায় এবং তাই পরায় যা সে নিজে পরে। আর তোমরা ওদেরকে এমন কাজের ভার দিয়ো না, যা করতে ওরা সক্ষম নয়। পরন্তু যদি তোমরা এমন দুঃসাধ্য কাজের ভার দিয়েই ফেল, তাহলে তোমরা ওদের সহযোগিতা কর।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৩০, ২৫৪৫, ৬০৫০, মুসলিম ১৬৬১, তিরমিজী ১৯৪৫, আবু দাঊদ ৫১৫৭, ৫১৫৮, ইবনু মাজাহ ৩৬৯০, আহমাদ ২০৯০০, ২০৯২১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৬৯. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যখন তোমাদের কোন ব্যক্তির খাদেম (দাস-দাসী) তার নিকট খাবার নিয়ে আসে, তখন যদি তাকে নিজ সঙ্গে (খেতে) না বসায়, তাহলে সে যেন তাকে (কমপক্ষে তার হাতে) এক খাবল বা দু’ খাবল অথবা এক গ্রাস বা দু’ গ্রাস (ঐ খাবার থেকে) তুলে দেয়। কেননা, সে (খাদেম) তা পাক (করার যাবতীয় কষ্ট বরণ) করেছে।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৫৫৭, ৫৪৬০, মুসলিম ১৬৬৩, তিরমিজী ১৮৫৩, ইবনু মাজাহ ৩২৮৯, ৩২৯০, আহমাদ ৭২৯৩, ৭৪৬২, ৭৬৬৯, ৭৭৪৬, ৭৯২১, ৯০১৬, ৯০৫২, ৯৭৭৫, দারেমী ২০৭৩, ২০৭৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ২৩৮: আল্লাহর হক এবং নিজ মনিবের হক আদায়কারী গোলামের মাহাত্ম্য

১৩৭০. ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “নিঃসন্দেহে কোন গোলাম যখন তার মনিবের কল্যাণকামী হয় ও আল্লাহর বন্দেগী (যথারীতি) করে, তখন তার দ্বিগুণ সওয়াব অর্জিত হয়।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৫৪৬, ২৫৫০, মুসলিম ১৬৬৪, আবু দাঊদ ৫১৬৯, আহমাদ ৪৬৫৯, ৪৬৯২, ৫৭৫০, ৬২৩৭, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৩৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৭১. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “(আল্লাহ ও নিজ মনিবের) হক আদায়কারী অধীনস্থ দাসের দ্বিগুণ নেকী অর্জিত হয়।” (আবু হুরাইরা বলেন,) ‘সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আবু হুরাইরার জীবন আছে! যদি আল্লাহর পথে জিহাদ, হজ্জ ও আমার মায়ের সেবা না থাকত, তাহলে আমি পরাধীন গোলাম রূপে মৃত্যুবরণ করা পছন্দ করতাম।’

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৫৪৮, মুসলিম ১৬৬৫, আহমাদ ৭৩৮০, ৭৮৬৪, ৮১৭২, ৮৩৩২, ৮৯৭১, ৯০১৫, ৯৪৯৭, ৯৫৩০, ৯৬৬৭, ৯৯২৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৭২. আবু মুসা আশ‘আরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে অধীনস্থ গোলাম তার প্রতিপালক (আল্লাহর) ইবাদত সুন্দরভাবে করে এবং তার মালিকের অবশ্যপালনীয় হক যথারীতি আদায় করে। তার মঙ্গল কামনা করে ও আনুগত্য করে, তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৯৭, ২৫৪৪, ২৫৪৭, ২৫৫১, ৩০১১, ৩৪৪৬, ৫০৮৩, মুসলিম ১৫৪, ২৮১১, তিরমিজী ১১১৬, নাসাঈ ৩৩৪৪, ৩৩৪৫, আবু দাঊদ ৩০৫৩, ইবনু মাজাহ ১৯৫৬, আহমাদ ১৯০৩৮, ১৯০৭০, ১৯১০৫, ১৯১৯৩৭, ১৯১৫৯, ১৯২১৩, দারেমী ২২৪৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৭৩. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তিন প্রকার লোকের জন্য দ্বিগুণ সওয়াব হয়। (১) কিতাবধারী (ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের) কোন ব্যক্তি তার নিজের নবীর প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং পরে মুহাম্মাদের উপর ঈমান আনে। (২) সেই অধীনস্থ গোলাম, যে আল্লাহর হক ও তার মনিবের হক যথারীতি আদায় করে। (৩) সেই ব্যক্তি যার একটি দাসী আছে। তাকে সে আদব-কায়দা শিখায় এবং উৎকৃষ্টরূপে তাকে আদব শিক্ষা দেয়, তাকে বিদ্যা শিখায় এবং সুন্দর-রূপে তার শিক্ষা সুসম্পন্ন করে, অতঃপর তাকে স্বাধীন করে দিয়ে বিবাহ করে নেয়, এর জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব।”

(বুখারী ও মুসলিম) (সহীহুল বুখারী শরীফ ৯৭, ২৫৪৪, ২৫৪৭, ২৫৫১, ৩০১১, ৩৪৪৬, ৫০৮৩, মুসলিম ১৫৪, ২৮১১, তিরমিজী ১১১৬, নাসাঈ ৩৩৪৪, ৩৩৪৫, আবু দাঊদ ৩০৫৩, ইবনু মাজাহ ১৯৫৬, আহমাদ ১৯০৩৮, ১৯০৭০, ১৯১০৫, ১৯১৯৩৭, ১৯১৫৯, ১৯২১৩, দারেমী ২২৪৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ- ২৩৯: ফিত্‌না-ফাসাদের সময় উপাসনা করার ফযীলত

১৩৭৪. মালেক ইবনে য়্যাসার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “ফিতনা-ফাসাদের সময় ইবাদত-বন্দেগী করা, আমার দিকে ‘হিজরত’ করার সমতুল্য।”

(মুসলিম ২৯৪৮, তিরমিজী ২২০১, ইবনু মাজাহ ৩৯৮৫, আহমাদ ১৯৭৮৭, ১৯৮০০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ২৪০: ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেনের ক্ষেত্রে উদারতা দেখানো, উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ ও প্রাপ্য তলব করা, ওজন ও মাপে বেশি দেওয়ার মাহাত্ম্য, ওজন ও মাপে নেওয়ার সময় বেশী নেওয়া এবং দেওয়ায় সময় কম দেওয়া নিষিদ্ধ এবং ধনী ঋণদাতায় অভাবী ঋণগ্রহীতাকে (যথেষ্ট সময় পর্যন্ত) অবকাশ দেওয়া ও তার ঋণ মকুব করার ফযীলত

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

অর্থাৎ, তোমরা যে কোন সৎকাজ কর না কেন, আল্লাহ তা সম্যকরূপে অবগত। (সূরা বাক্বারাহ ২৪৫ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেন,

অর্থাৎ, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা মাপ ও ওজনকে পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন কর এবং লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ো না। (হুদ ৮৫ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

অর্থাৎ, ধ্বংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়, যারা লোকের নিকট হইতে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে। এবং যখন তাদের জন্য মেপে অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। এক মহা দিবসে; যেদিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ বিশ্ব-জাহানের প্রতিপালকের সম্মুখে। (মুত্বাফফিফীন ১-৬ আয়াত)

১৩৭৫. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

একটি লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে রূঢ়ভাবে তাঁর কাছে পাওনা তলব করল। তখন সাহাবীগণ তাকে ভৎর্সনা করতে চাইলেন। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেন, “ওকে ছেড়ে দাও। কারণ হক (পাওনা)দারের কথা বলার অধিকার আছে।” তারপর বললেন, “ওকে ঠিক সেই বয়সের (উট) দিয়ে দাও যে বয়সের (উট) ওর ছিল।” তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! তার চেয়ে উত্তম (উট) বৈ পাচ্ছি না।’ তিনি বললেন, “ওকে (ওটিই) দিয়ে দাও, কেননা, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে ব্যক্তি উত্তমভাবে ঋণ পরিশোধ করে থাকে।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৩০৫, ২৩০৬, ২৩৯০, ২৩৯২, ২৩৯৩, ২৪০১, ২৬০৬, ২৬০৯, মুসলিম ১৬০১, তিরমিজী ১৩১৬, নাসাঈ ৫৬১৮, ৪৬৯৩, ইবনু মাজাহ ২৪২৩, আহমাদ ৮৬৮০, ৮৮৬২, ৯১২৪, ৯১৮৯, ৯৫৭০, ৯৮১৪, ১০২৩১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৭৬. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি দয়া করুন, যে ব্যক্তি উদার; যখন সে ক্রয় করে, যখন সে বিক্রয় করে এবং যখন সে পাওনা তলব করে।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২০৭৬, তিরমিজী ১৩২০, ইবনু মাজাহ ২২০৩, আহমাদ ১৪২৪৮, মুওয়াত্তা মালিক ১৩৯৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৭৭. আবু কাতাদাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “যাকে এ কথা আনন্দ দেয় যে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিনের অস্থিরতা ও বিপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন, তাহলে সে যেন পরিশোধে অসমর্থ ঋণগ্রহীতা ব্যক্তিকে অবকাশ দান করে অথবা তার ঋণ মকুব করে দেয়।”

(মুসলিম ১৫৬৩, আহমাদ ২২০৫৩, ২২১১৭, দারেমী ২৫৮৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৭৮. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “(প্রাচীনকালে) একটি লোক লোকদের ঋণ দিত এবং তার চাকরকে বলত যে, ‘যখন তুমি কোন পরিশোধে অসমর্থ ঋণগ্রহীতা ব্যক্তির কাছে যাবে, তাকে ক্ষমা করে দেবে। হয়তো (এর প্রতিদানে) আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। সুতরাং সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করলে (অর্থাৎ, মারা গেলে) আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।” (বুখারী ও মুসলিম)

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২০৭৮, ৩৪৮০, মুসলিম ১৫৬২, নাসাঈ ৪৬৯৪, ৪৬৯৫, আহমাদ ৭৫২৫, ৮১৮৭, ৮২৬২, ৮৫১৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৭৯. আবু মাসঊদ বদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে একটি লোকের হিসাব নেওয়া হয়েছিল। তার একটি মাত্র সৎকর্ম ব্যতিরেকে আর কোন ভাল কাজ পাওয়া যায়নি। সেটি হল এই যে, সে লোক সমাজে মিলে-মিশে থাকত। সে ছিল সচ্ছল (বিত্তশালী) ব্যক্তি। নিজ চাকরদেরকে গরীব ঋণগ্রস্তদের ঋণ মকুব করার নির্দেশ দিত। (এসব দেখে) আল্লাহ আয্‌যা অজাল্ল বললেন, ‘আমি তো ওর চাইতে বেশি ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকারী। (হে ফিরিশ্‌তাবর্গ!) তোমরা ওকে মাফ করে দাও।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৩৯১, মুসলিম ১৫৬১, তিরমিজী ১৩০৭, ২৬৭১, ইবনু মাজাহ ২৪২০, আহমাদ ১৬৬১৬, ১৬৬৩৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৮০. হুযাইফা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এক এমন বান্দাকে—যাকে তিনি ধনৈশ্বর্য দ্বারা সমৃদ্ধ করিয়াছেন; তাঁর কাছে হাজির করা হল। তিনি (আল্লাহ) তাকে বললেন, ‘তুমি দুনিয়াতে কি আমল করেছ?’ বর্ণনাকারী বলেন, অথচ আল্লাহর কাছে তারা (লোকেরা) কোন কথা গোপন রাখতে পারে না। সে বলল, ‘প্রভু! তুমি আমাকে ধনৈশ্বর্য দিয়েছিলে। আমি জনগণের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছি। আর উদারতা ছিল আমার বিশেষ অভ্যাস, ধনীর সাথে নমনীয় ব্যবহার দেখাতাম এবং গরীবদেরকে (সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত) অবকাশ দিতাম।’ মহান আল্লাহ বললেন, ‘আমি তোমার চাইতে এ ব্যাপারে অধিক হকদার। (হে ফিরিশ্‌তাবর্গ!) তোমরা আমার (এই) বান্দাকে ক্ষমা করে দাও।’ উক্ববাহ ইবনে আমের রাঃআঃ ও আবু মাসঊদ আনসারী রাঃআঃ বলেন, ‘আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রমুখাৎ এরূপই শুনেছি।’ (মুসলিম)

(মুসলিম ১৫৬০, সহীহুল বুখারী শরীফ ২০৭৭, ইবনু মাজাহ ২৪২০, আহমাদ ২২৭৪২, ২২৮৪৩, ২২৮৭৫, ২২৯৫৩, দারেমী ২৫৪৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৮১. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি পরিশোধে অক্ষম কোন ঋণগ্রহীতাকে (তার সচ্ছলতা আসা অবধি) অবকাশ দেবে বা তাকে ক্ষমা করে দেবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিনে নিজ আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন, যেদিন তার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না।”

(তিরমিজী ১৩০৬, ইবনু মাজাহ ২৪১৭, আহমাদ ৮৪৯৪) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

১৩৮২. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার তাঁর (জাবেরের) নিকট থেকে একটি উট ক্রয় করলেন। সুতরাং তিনি তার মূল্য পরিশোধ করার সময় (স্বর্ণ-রৌপ্য প্রাপ্য অপেক্ষা) ওজনে বেশি দিলেন।

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬২০৪, মুসলিম ৭১৫, ১৫৯৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৮৩. আবু সাফওয়ান সুআইদ ইবনে ক্বাইস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ও মাখরামাহ আব্দী ‘হাজার’ নামক জায়গা থেকে কিছু কাপড় (বিক্রির উদ্দেশ্যে) আমদানি করেছিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে পায়জামার দর-দাম করতে লাগলেন। আমার নিকটে একজন কয়াল (মাপনদার) ছিল, যে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে (স্বর্ণ-রৌপ্য) ওজন করে দিত। সুতরাং তিনি কয়ালকে বললেন, “ওজন কর ও একটু ঝুঁকিয়ে ওজন কর।”

(আবু দাঊদ ৩৩৩৬, তিরমিজী ১৩০৫, নাসাঈ ৪৫৯২, ইবনু মাজাহ ২২২০, ৩৫৭৯, আহমাদ ১৮৬১৯, দারেমী ২৫৮৫ ) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

Comments

Leave a Reply