দাঁতন করা ও যাকাতের অপরিহার্যতা ফযীলত

দাঁতন করা ও যাকাতের অপরিহার্যতা ফযীলত

দাঁতন করা ও যাকাতের অপরিহার্যতা ফযীলত  >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর ২ টি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

দাঁতন করা ও যাকাতের অপরিহার্যতা ফযীলত

পরিচ্ছেদ – ২১৫ঃ দাঁতন করার মাহাত্ম্য ও প্রকৃতিগত আচরণসমূহ
পরিচ্ছেদ – ২১৬ঃ যাকাতের অপরিহার্যতা এবং তার ফযীলত

পরিচ্ছেদ – ২১৫ঃ দাঁতন করার মাহাত্ম্য ও প্রকৃতিগত আচরণসমূহ

১২০৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, “যদি আমি আমার উম্মতের উপর বা লোকদের উপর কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রতিটি নামাযের সাথে দাঁতন করার আদেশ দিতাম।”

(সহীহুল বুখারী ৮৮৭, মুসলিম ২৫২, তিরমিজি ২২, নাসায়ী ৭, ৫৩৪, আবু দাউদ ৪৬, ইবনু মাজাহ ২৮৭, আহমাদ ৯৭০, ৭২৯৪, ৭৩৬৪, ৭৪৫৭, ৭৪৯৪, ৮৯২৮, ৮৯৪১, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৭, ১৪৮, দারেমী ৬৮৩, ১৪৮৪) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২০৫. হুযাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন ঘুম থেকে উঠতেন, তখন তিনি দাঁতন দিয়ে দাঁত মেজে নিতেন।’

(সহীহুল বুখারী ২৪৬, ৮৮৯, ১১২৬, মুসলিম ২৫৫, নাসায়ী ২, ১৬২১-১৬২৪, আবু দাউদ ১৬৫৫, ইবনু মাজাহ ২২৯৪৮, দারেমী ৬৮৫) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২০৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর জন্য দাঁতন ও ওযূর পানি প্রস্তুত করে রাখতাম। অতঃপর আল্লাহর যখন রাতে তাঁকে জাগাবার ইচ্ছা হত, তখন তিনি জেগে উঠতেন। সুতরাং দাঁতন করতেন এবং ওযূ করে নামাজ পড়তেন।’

(সহীহুল বুখারী ১৯৬৯, তিরমিজি ৪৪৫, মুসলিম ৭৪৬, নাসায়ী ১৩১৪, ১৬০১) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২০৭. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, ‘তোমাদেরকে দাঁতন করার জন্য বেশি তাকীদ করেছি।’

(সহীহুল বুখারী ৮৮৮, নাসায়ী ৬, আহমাদ ১২০৫০, ১৩১৮৬, ৬৮১) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২০৮. শুরাইহ ইবনে হানি (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি আয়েশা (রাদি.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘নবী (সাঃআঃ) নিজ বাড়িতে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কী কাজ করতেন?’ তিনি বললেন, ‘দাঁতন করতেন।’

(মুসলিম ২৫৩, নাসায়ী ৮, আবু দাউদ ৫১, ইবনু মাজাহ ২৯৩, আহমাদ ২৪২৭৪, ২৪৯৫৮, ২৫০২০, ২৫০৫৪, ২৫৪৬৬, ২৭৬০১) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২০৯. আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘একদা আমি নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলাম, তখন দাঁতনের একটি দিক তাঁর জিভের উপর রাখা ছিল।’

(বুখারী ও মুসলিম, এ শব্দগুলি মুসলিমের) (সহীহুল বুখারী ২৪৪, মুসলিম ২৫৪, নাসায়ী ৩ আবু দাউদ ৪৯) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২১০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) বলেছেন, “দাঁতন মুখ পবিত্র রাখার ও প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের উপকরণ।”

(নাসায়ী ৫ আহমাদ ২৩৬৮৩, ২৩৮১১, ২৪৪০৪, ২৪৬০৯, ২৫৪৮৩, দারেমী ৬৮৪) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২১১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) বলেছেন, “প্রকৃতিগত আচরণ (নবীগণের তরীকা) পাঁচটি অথবা পাঁচটি কাজ প্রকৃতিগত আচরণ, (১) খাত্‌না (লিঙ্গত্বক ছেদন) করা। (২) লজ্জাস্থানের লোম কেটে পরিষ্কার করা। (৩) নখ কাটা। (৪) বগলের লোম ছিঁড়া। (৫) গোঁফ ছেঁটে ফেলা।”

(বুখারী ও মুসলিম) (সহীহুল বুখারী ৫৮৮৯, ৫৮৯১, ৬২৯৭, মুসলিম ২৫৭, তিরমিজি ২৭৫৬, নাসায়ী ১০, ১১, ৫২২৫, আবু দাউদ ৪১৯৮, ইবনু মাজাহ ২৯২, আহমাদ ৭০৯২, ৭২২০, ৭৭৫৪, ৯০৬৬, ৯৯৬৫, মুওয়াজ মালিক ১৭০৯) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২১২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, “দশটি কাজ প্রকৃতিগত আচরণ; (১) গোঁফ ছেঁটে ফেলা। (২) দাড়ি বাড়ানো। (৩) দাঁতন করা। (৪) নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা। (৫) নখ কাটা। (৬) আঙ্গুলের জোড়সমূহ ধোয়া। (৭) বগলের লোম তুলে ফেলা। (৮) গুপ্তাঙ্গের লোম পরিষ্কার করা। (৯) পানি দ্বারা ইস্তেঞ্জা (শৌচকর্ম) করা।” বর্ণনাকারী বলেন, ১০নং আচরণটি ভুলে গেছি, তবে মনে হয়, তা কুল্লি করা হবে। বর্ণনাকারী অকী’ বলেন, ‘ইন্তিকাসুল মা’ মানে পানি দিয়ে ইস্তেঞ্জা করা।

(মুসলিম ২৬১, তিরমিজি ২৭৫৭, নাসায়ী ৫০৪০-৫০৪২, আবু দাউদ ৫৩, ইবনু মাজাহ ২৯৬, আহমাদ ২৪৫৩৯) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২১৩. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) বলেছেন, “তোমরা গোঁফ কেটে ফেল এবং দাড়ি লম্বা কর।”

(সহীহুল বুখারী ৫৮৯৩, তিরমিজি ২৭৬৩, ২৭৬৪, মুসলিম ২৫৯, নাসায়ী ১২, ১৫, ৫০৪৫, ৫০৪৬, ৫২২৬, আবু দাউদ ৪১৯৯, আহমাদ ৪৬৪০) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

পরিচ্ছেদ – ২১৬ঃ যাকাতের অপরিহার্যতা এবং তার ফযীলত

১২১৪. ইবনে উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, “পাঁচটি ভিত্তির উপর দ্বীনে ইসলাম স্থাপিত। (১) এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রসূল। (২) নামাজ প্রতিষ্ঠা করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) বায়তুল্লাহর (কা‘বা গৃহে)র হজ্জ করা। এবং (৫) রমযানের রোযা পালন করা।”

(সহীহুল বুখারী ৮, মুসলিম ১৬, তিরমিজি ২৬০৯, ৫০০১, আবু দাউদ ৪৭৮৩, ৫৬৩৯, ৫৯৭৯, ৬২৬৫) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২১৫. ত্বালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন নাজ্‌দ (রিয়ায এলাকার) অধিবাসীদের একজন আলুলায়িত কেশী রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট উপস্থিত হল। আমরা তার ভন্‌ভন্‌ শব্দ শুনছিলাম, আর তার কথাও বুঝতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে আসল এবং (তখন বুঝলাম,) সে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। (উত্তরে) রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেন, “(ইসলাম হল,) দিবা-রাত্রিতে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ (প্রতিষ্ঠা করা)।” সে বলল, ‘তা ছাড়া আমার উপর অন্য নামাজ আছে কি?’ তিনি বললেন, “না, কিন্তু যা কিছু তুমি নফল হিসাবে পড়বে।” রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আবার বললেন, “এবং রমযান মাসের রোযা।” লোকটি বলল, ‘তা ছাড়া আমার উপর অন্য রোযা আছে কি?’ তিনি বললেন, “না, তবে তুমি যা নফল হিসাবে করবে।” বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে যাকাতের কথা বললেন। সে বলল, ‘তাছাড়া আমার উপর অন্য দান আছে কি?’ তিনি বললেন, “না, তবে তুমি যা নফল হিসাবে করবে।” তারপর লোকটি পিঠ ফিরিয়ে এ কথা বলতে বলতে যেতে লাগল, ‘আল্লাহর কসম! আমি এর চাইতে বেশী কিছু করব না এবং এর চেয়ে কমও করব না।’ তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেন, “লোকটি সত্য বলে থাকলে পরিত্রাণ পেয়ে গেল।”

(বুখারী ও মুসলিম) (সহীহুল বুখারী ৪৬, ১৮৯১, ২৬৭৮, ৬৯৫৬, মুসলিম ১১, নাসায়ী ৪৫৮, ২০৯০, ৫০২৮, আবু দাউদ ৩৯১, ৩২৫২, আহমাদ ১৩৯৩, মুওয়াত্তা মালিক ৪২০, দারেমী ১৫৭৮)হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২১৬. ইবনে আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) মু‘আয (রাদি.)-কে ইয়ামান পাঠাবার সময়ে (তাঁর উদ্দেশ্যে) বললেন, “তাদের (ইয়ামানবাসীদেরকে সর্বপ্রথম) এই সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, আর আমি আল্লাহর রসূল। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তাদের উপর রাতদিনে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ ফরয করেছেন। অতঃপর যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন; যা তাদের মধ্যে যারা (নিসাব পরিমাণ) মালের অধিকারী তাদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্র ও অভাবী মানুষদের মাঝে তা বণ্টন করে দেওয়া হবে।”

(সহীহুল বুখারী ১৩৯৫, ১৪৫৮, ১৪৯৬, ২৪৪৮, ৪৩৪৭, ৭৩৭১, ৭৩৭২, মুসলিম ১৯, তিরমিজি ৬২৫, ২০১৪, নাসায়ী ২৪৩৫, আবু দাউদ ১৫৮৪, ইবনু মাজাহ ১৭৮৩, আহমাদ ২০৭২, দারেমী ১৬১৪) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২১৭. ইবনে উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, “মানুষের বিরুদ্ধে ততক্ষণ সংগ্রাম করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা এই সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল। আর নামাজ কায়েম করবে ও (ধনের) যাকাত আদায় করবে। যখন তারা এগুলি বাস্তবায়ন করবে, তখন ইসলামী হক (অর্থদণ্ড ইত্যাদি) ছাড়া তারা নিজেদের জান-মাল আমার নিকট হতে সুরক্ষিত করে নেবে। আর (অন্তরের গভীরে কুফরি বা পাপ লুকানো থাকলে) তাদের হিসাব আল্লাহর জিম্মায়।”

(সহীহুল বুখারী ২৫, মুসলিম ২২) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২১৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন আল্লাহর রসূল (সাঃআঃ) মারা গেলেন এবং আবু বাকার (রাদি.) খলীফা নিযুক্ত হলেন। আর আরববাসীদের মধ্যে যার কাফের (মুরতাদ) হবার ছিল সে কাফের (মুরতাদ) হয়ে গেল, (এবং যারা সম্পূর্ণ ধর্মত্যাগ করেনি; বরং যাকাত দিতে অস্বীকার করছে মাত্র, তাদের বিরুদ্ধে আবু বাক্‌র (রাদি.) সশস্ত্র সংগ্রামের সংকল্প প্রকাশ করলেন) তখন উমার (রাদি.) বললেন, ‘ঐ (যাকাত দিতে নারাজ) লোকদের বিরুদ্ধে কেমন করে যুদ্ধ করবেন অথচ রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন যে, “লোকেরা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই) না বলা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। অতএব যে ব্যক্তি তা বলবে, সে ইসলামী অধিকার (অর্থদণ্ড ইত্যাদি) ছাড়া তার জান-মাল আমার নিকট থেকে নিরাপদ করে নেবে। আর তার (অন্তরের গভীরে কুফ্‌রি বা পাপ লুকানো থাকলে) হিসাব আল্লাহর যিম্মায়”? আবু বাক্‌র (রাদি.) বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! যে ব্যক্তি নামাজ ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, তার বিরুদ্ধে আমি লড়াই করব। কারণ, যাকাত মালের উপর আরোপিত হক। আল্লাহর শপথ! আল্লাহর রসূল (সাঃআঃ)-কে যে রশি আদায় করত, তা যদি আমাকে না দেয়, তাহলে তা না দেওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আমি জিহাদ করবই।’ উমার (রাদি.) বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! অচিরেই আমি দেখলাম যে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ আবু বাক্‌র (রাদি.)-এর হৃদয়কে যুদ্ধের জন্য প্রশস্ত করেছেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁর সিদ্ধান্তই যথার্থ।’

(সহীহুল বুখারী ১৪০০, ১৪৫৭, ৬৯২৪, ৭২৮৫, মুসলিম ২০, তিরমিজি ২৬০৭, নাসায়ী ২৪৪৩, ৩০৯১-৩০৯৪, ৩৯৬৯-৩৯৭১, ৩৯৭৩, ৩৮৭৫, আবু দাউদ ১৫৫৬, আহমাদ ৬৮, ১১৮, ২৪১, ৩৩৭, ৯১৯০, ১০৪৫৯) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২১৯. আবু আইয়ুব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একটি লোক নবী (সাঃআঃ)-কে বলল, ‘আমাকে এমন একটি আমল বলুন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ তিনি বললেন, “আল্লাহর বন্দেগী করবে, আর তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থির করবে না। নামাজ কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখবে।”

(সহীহুল বুখারী ১৩৯৬, ৫৯৮৩, মুসলিম ১৩, নাসায়ী ৪৬৮, আহমাদ ২৩০২৭, ২৩০৩৮)হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২২০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক বেদুঈন নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন এক আমলের কথা বলে দিন, যার উপর আমল করলে, আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব।’ তিনি বললেন, “আল্লাহর ইবাদত করবে ও তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থির করবে না। নামাজ কায়েম করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে ও রমযানের রোযা পালন করবে।” সে বলল, ‘সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন আছে, আমি এর চেয়ে বেশী করব না।’ তারপর যখন সে লোকটা পিঠ ফিরে চলতে লাগল, তখন নবী (সাঃআঃ) বললেন, “যে ব্যক্তি জান্নাতবাসীদের কোন লোক দেখতে আগ্রহী, সে যেন এই লোকটিকে দেখে।”

(সহীহুল বুখারী ১৩৯৭, মুসলিম ১৪, আহমাদ ৮৩১০) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২২১. জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘নবী (সাঃআঃ)-এর হাতে নামাজ কায়েম করার, যাকাত আদায় করার ও প্রতিটি মুসলমানের মঙ্গল কামনা করার বায়আত করেছি।’

(সহীহুল বুখারী ৫৭, ৫৮, ৫২৪, ১৪০১, ২১৫৭, ২৭১৪, ২৭১৫, ৭২০৪, ৫৬, তিরমিজি ১৯২৫, নাসায়ী ৪১৫৬, ৪১৫৭, ৪১৭৪, ৪১৭৫, ৪১৭৭, ৪১৮৯, আহমাদ ১৮৬৭১, ১৮৭০০, ১৮৭৩৪ম ১৮৭৪৩, ১৮৭৬০, দারেমী ২৫৪০) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১২২২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, “প্রত্যেক সোনা ও চাঁদির অধিকারী ব্যক্তি যে তার হক (যাকাত) আদায় করে না, যখন কিয়ামতের দিন আসবে, তখন তার জন্য ঐ সমুদয় সোনা-চাঁদিকে আগুনে দিয়ে বহু পাত তৈরি করা হবে। অতঃপর সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তার পাঁজর, কপাল ও পিঠে দাগা হবে। যখনই সে পাত ঠাণ্ডা হয়ে যাবে, তখনই তা পুনরায় গরম করে অনুরূপ দাগার শাস্তি সেই দিনে চলতেই থাকবে, যার পরিমাণ হবে ৫০ হাজার বছরের সমান; যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দাদের মাঝে বিচার-নিষ্পত্তি শেষ করা হয়েছে। অতঃপর সে তার পথ দেখতে পাবে; হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে।”

জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আর উটের ব্যাপারে কি হবে?’ তিনি বললেন, “প্রত্যেক উটের মালিকও; যে তার হক (যাকাত) আদায় করবে না—আর তার অন্যতম হক এই যে, পানি পান করাবার দিন তাকে দোহন করা (এবং সে দুধ লোকদের দান করা)- যখন কিয়ামতের দিন আসবে, তখন তাকে এক সমতল প্রশস্ত প্রান্তরে উপুড় করে ফেলা হবে। আর তার উট সকল পূর্ণ সংখ্যায় উপস্থিত হবে; ওদের মধ্যে একটি বাচ্চাকেও অনুপস্থিত দেখবে না। অতঃপর সেই উটদল তাদের খুর দ্বারা তাকে দলবে এবং মুখ দ্বারা তাকে কামড়াতে থাকবে। এইভাবে যখনই তাদের শেষ দল তাকে দলে অতিক্রম করে যাবে, তখনই পুনরায় প্রথম দলটি উপস্থিত হবে। তার এই শাস্তি সেদিন হবে, যার পরিমাণ হবে ৫০ হাজার বছরের সমান; যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দাদের মাঝে বিচার-নিষ্পত্তি শেষ করা হয়েছে। অতঃপর সে তার শেষ পরিণাম দর্শন করবে; জান্নাতের অথবা জাহান্নামের।”

জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! গরু-ছাগলের ব্যাপারে কি হবে?’ তিনি বললেন, “আর প্রত্যেক গরু-ছাগলের মালিককেও; যে তার হক আদায় করবে না, যখন কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে, তখন তাদের সামনে তাকে এক সমতল প্রশস্ত ময়দানে উপুড় করে ফেলা হবে; যাদের একটিকেও সে অনুপস্থিত দেখবে না এবং তাদের কেউই শিং-বাঁকা, শিং-বিহীন ও শিং-ভাঙ্গা থাকবে না। প্রত্যেকেই তার শিং দ্বারা তাকে আঘাত করতে থাকবে এবং খুর দ্বারা দলতে থাকবে। তাদের শেষ দলটি যখনই (ঢুস মেরে ও দলে) পার হয়ে যাবে তখনই প্রথম দলটি পুনরায় এসে উপস্থিত হবে। এই শাস্তি সেদিন হবে যার পরিমাণ ৫০ হাজার বছরের সমান; যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দাদের মাঝে বিচার-নিষ্পত্তি শেষ করা হয়েছে। অতঃপর সে তার রাস্তা ধরবে; জান্নাতের দিকে, নতুবা জাহান্নামের দিকে।”

জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আর ঘোড়া সম্পর্কে কি হবে?’ তিনি বললেন, “ঘোড়া হল তিন প্রকারের; ঘোড়া কারো পক্ষে পাপের বোঝা, কারো পক্ষে পর্দাস্বরূপ এবং কারো জন্য সওয়াবের বিষয়। যে ঘোড়া তার মালিকের পক্ষে পাপের বোঝা তা হল সেই ব্যক্তির ঘোড়া, যে লোক প্রদর্শন, গর্বপ্রকাশ এবং মুসলিমদের প্রতি শত্রুতার উদ্দেশ্যে পালন করেছে। এ ঘোড়া হল তার মালিকের জন্য পাপের বোঝা।

যে ঘোড়া তার মালিকের পক্ষে পর্দাস্বরূপ, তা হল সেই ব্যক্তির ঘোড়া, যাকে সে আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের জন্য) প্রস্তুত রেখেছে। অতঃপর সে তার পিঠ ও গর্দানে আল্লাহর হক ভুলে যায়নি। তার যথার্থ প্রতিপালন করে জিহাদ করেছে। এ ঘোড়া হল তার মালিকের পক্ষে (দোযখ হতে অথবা ইজ্জত-সম্মানের জন্য) পর্দাস্বরূপ।

আর যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য সওয়াবের বিষয়, তা হল সেই ঘোড়া যাকে তার মালিক মুসলিমদের (প্রতিরক্ষার) উদ্দেশ্যে কোন চারণভূমি বা বাগানে প্রস্তুত রেখেছে। তখন সে ঘোড়া ঐ চারণভূমি বা বাগানের যা কিছু খাবে, তার খাওয়া ঐ (ঘাস-পাতা) পরিমাণ সওয়াব মালিকের জন্য লিপিবদ্ধ হবে। অনুরূপ লেখা হবে তার লাদ ও পেশাব পরিমাণ সওয়াব। সে ঘোড়া যখনই তার রশি ছিড়ে একটি অথবা দু’টি ময়দান অতিক্রম করবে, তখনই তার পদক্ষেপ ও লাদ পরিমাণ সওয়াব তার মালিকের জন্য লিখিত হবে। অনুরূপ তার মালিক যদি তাকে কোন নদীর কিনারায় নিয়ে যায়, অতঃপর সে সেই নদী হতে পানি পান করে অথচ মালিকের পান করানোর ইচ্ছা থাকে না, তবুও আল্লাহ তা‘আলা তার পান করা পানির সমপরিমাণ সওয়াব মালিকের জন্য লিপিবদ্ধ করে দেবেন।”

জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আর গাধা সম্পর্কে কি হবে?’ তিনি বললেন, “গাধার ব্যাপারে এই ব্যাপকার্থক একক আয়াতটি ছাড়া আমার উপর অন্য কিছু অবতীর্ণ হয়নি,

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি অণুপরিমাণ সৎকর্ম করবে সে তাও (কিয়ামতে) প্রত্যক্ষ করবে এবং যে ব্যক্তি অণু-পরিমাণ অসৎকার্য করবে সে তাও (সেদিন) প্রত্যক্ষ করবে।” (সূরা যিলযাল ৭-৮ আয়াত)

(সহীহুল বুখারী ১৪০২, ১৪০৩, ২৩৭১, ২৮৫৩, ৪৫৬৫, ৪৬৫৯, ৬৯৫৮, তিরমিজি ১৫৩৬, নাসায়ী ২৪৪৮, ২৪৮২, ৩৫৬২, ৩৫৬৩, ৩৫৮২, আবু দাউদ ১৬৫৮, ইবনু মাজাহ ১৭৮৬, ২৭৮৮, আহমাদ ৭৫০৯, ৭৬৬৩, ৭৬৯৮, ৮৪৪৭, ৮৭৫৪, ৯১৯১, ৯৯৭১, ১০৪৭৪, ২৭৪০১, ২৭৪৩৩, মুওয়াত্তা মালিক ৫৯৬, ৯৭৫) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

Comments

Leave a Reply