জামাত সহকারে নামাযের ফযীলত

জামাত সহকারে নামাযের ফযীলত

পরিচ্ছেদ – ১৯১: জামাত সহকারে নামাযের ফযীলত

1/1071 عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم،  قَالَ: «صَلَاةُ الْجَمَاعَةِ أَفْضَلُ مِنْ صَلاَةِ الْفَذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً». متفقٌ عَلَيْهِ

১/১০৭১। ইবনি উমার [রাঃআঃমা] হইতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেন, “একাকীর নামায অপেক্ষা জামাতের নামায সাতাশ গুণ উত্তম।” [বুখারী-মুসলিম] [1]

2/1072 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم «صَلاةُ الرَّجُلِ فِي جَمَاعَةٍ تُضَعَّفُ عَلَى صَلاتِهِ فِي بَيْتهِ وَفِي سُوقِهِ خَمْساً وَعِشْرِينَ ضِعْفَاً، وَذَلِكَ أَنَّهُ إِذَا تَوَضَّأ فَأَحْسَنَ الوُضُوءَ، ثُمَّ خَرَجَ إِلَى المَسْجِدِ، لاَ يُخرِجُهُ إِلاَّ الصَّلاةُ، لَمْ يَخْطُ خَطْوَةً إِلاَّ رُفِعَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ، وَحُطَّتْ عَنهُ بِهَا خَطِيئَةٌ، فَإِذَا صَلَّى لَمْ تَزَلِ المَلائِكَةُ تُصَلِّي عَلَيْهِ مَا دَامَ فِي مُصَلاَّهُ، مَا لَمْ يُحْدِثْ، تَقُولُ:  اَللهم صَلِّ عَلَيهِ،  اَللهم ارْحَمْهُ، وَلاَ يَزَالُ فِي صَلاَةٍ مَا انْتَظَرَ الصَّلاَةَ». متفقٌ عَلَيهِ، وهذا لفظ البخاري

২/১০৭২। আবূ হুরায়রা রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ  সাঃআঃ বলেছেন, “জামাতের সাথে কারো নামায পড়া, তার ঘরে ও বাজারে একা নামায পড়ার চাইতে ২৫ গুণ বেশি শ্রেষ্ঠ। তা এই জন্য যে, যখন কোনো ব্যক্তি ওযু করে এবং উত্তমরূপে ওযু সম্পাদন করে। অতঃপর মসজিদ অভিমুখে যাত্রা করে। আর একমাত্র নামাযই তাকে [ঘর থেকে] বের করে [অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকে না], তখন তার [পথে চলার সময়] প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গোনাহ মাফ করা হয়। তারপর সে নামাযান্তে নামায পড়ার জায়গায় যতক্ষণ ওযু সহকারে অবস্থান করে, ফেরেশতাবর্গ তার জন্য দো‘আ করেন; তাঁরা বলেন, ‘হে আল্লাহ! ওর প্রতি অনুগ্রহ কর। হে আল্লাহ! তুমি ওকে রহম কর।’ আর সে ব্যক্তি ততক্ষণ নামাযের মধ্যেই থাকে, যতক্ষণ সে নামাযের প্রতীক্ষা করে।”[বুখারী ও মুসলিম, এ শব্দগুলি বুখারীর][2]

3/1073 وَعَنْه، قَالَ: أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم  رَجُلٌ أَعْمَى، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، لَيسَ لِي قَائِدٌ يَقُودُنِي إِلَى الْمَسْجِدِ، فَسَأَلَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُرَخِّصَ لَهُ فَيُصَلِّي فِي بَيْتِهِ، فَرَخَّصَ لَهُ، فَلَّمَا وَلَّى دَعَاهُ، فَقَالَ لَهُ: «هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ بِالصَّلاَةِ ؟»  قَالَ: نَعَمْ . قَالَ: «فَأَجِبْ». رواه مُسلِم

৩/১০৭৩। উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, একটি অন্ধ লোক নবী সাঃআঃ-এর নিকট এসে নিবেদন করিল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার কোন পরিচালক নেই, যে আমাকে মসজিদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে।’ সুতরাং সে নিজ বাড়িতে নামায পড়ার জন্য আল্লাহর রসূল সাঃআঃ-এর নিকট অনুমতি চাইল। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। কিন্তু যখন সে পিঠ ঘুরিয়ে রওনা দিল, তখন তিনি তাকে ডেকে বলিলেন, “তুমি কি আহ্বান [আযান] শুনতে পাও?” সে বলিল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বলিলেন, “তাহলে তুমি সাড়া দাও।” [অর্থাৎ মসজিদেই এসে নামায পড়।] [মুসলিম] [3]

4/1074 وَعَنْ عَبدِ الله- وَقِيلَ: عَمْرِو بنِ قَيسٍ – المَعرُوفِ بِابْنِ أُمِّ مَكْتُومٍ الْمُؤَذِّنِ رضي الله عنه أَنَّه قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ المَدينَةَ كَثِيرةُ الهَوَامِّ وَالسِّبَاعِ . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«تَسْمَعُ حَيَّ عَلَى الصَّلاةِ حَيَّ عَلَى الفَلاحِ، فَحَيَّهلاً»  رَوَاهُ أبُو دَاوُدَ بإسناد حسن

৪/১০৭৪। আব্দুল্লাহ [মতান্তরে] আমর ইবনি ক্বায়স ওরফে ইবনি উম্মে মাকতূম মুয়াজ্জিন রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, একদা তিনি বলিলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! মদিনায় সরীসৃপ [সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি বিষাক্ত জন্তু] ও হিংস্র পশু অনেক আছে। [তাই আমাকে নিজ বাড়িতেই নামায পড়ার অনুমতি দিন]।’ আল্লাহর রসূল সাঃআঃ জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কি ‘হাইয়্যা আলাস স্বালাহ ও হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ [আযান] শুনতে পাও? [যদি শুনতে পাও], তাহলে মসজিদে এসো।” [আবূ দাউদ হাসান সূত্রে][4]    

5/1075 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِحَطَبٍ فَيُحْتَطَبَ، ثُمَّ آمُرَ بِالصَّلاَةِ فَيُؤذَّنَ لهَاَ، ثُمَّ آمُرَ رَجُلاً فَيَؤُمَّ النَّاسَ، ثُمَّ أُخَالِفَ إِلَى رِجَالٍ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهمْ».  متفقٌ عَلَيهِ

৫/১০৭৫। আবূ হুরায়রা রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ  সাঃআঃ বলেছেন, “সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন আছে। আমার ইচ্ছা হচ্ছে যে, জ্বালানী কাঠ জমা করার আদেশ দিই। তারপর নামাযের জন্য আযান দেওয়ার আদেশ দিই। তারপর কোন লোককে লোকদের ইমামতি করিতে আদেশ দিই। তারপর আমি স্বয়ং সেই সব [পুরুষ] লোকদের কাছে যাই [যারা মসজিদে নামায পড়তে আসেনি] এবং তাহাদেরকেসহ তাহাদের ঘর-বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিই।” [বুখারী ও মুসলিম][5]

[এ দ্বারা প্রমাণ হয় যে, নামায জামাতসহ পড়া ওয়াজিব; যদি কোন শরয়ী ওজর না থাকে।]

6/1076 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه قَالَ: مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَلْقَى اللهَ تَعَالَى غَداً مُسْلِماً، فَلْيُحَافِظْ عَلَى هَؤُلاَءِ الصَّلَوَاتِ حَيْثُ يُنَادَى بِهِنَّ، فَإِنَّ اللهَ شَرَعَ لِنَبِيِّكُمْ صلى الله عليه وسلم سُنَنَ الهُدَى، وَإنَّهُنَّ مِنْ سُنَنِ الهُدَى، وَلَوْ أنَّكُمْ صَلَّيْتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ كَمَا يُصَلِّي هَذَا المُتَخَلِّفُ فِي بَيْتِهِ لَتَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ، وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّة نَبِيِّكُم لَضَلَلْتُمْ، وَلَقَدْ رَأيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا إِلاَّ مُنَافِقٌ مَعْلُومُ النِّفَاقِ، وَلَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يُؤتَى بهِ، يُهَادَى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتَّى يُقَامَ فِي الصَّفِّ . رَوَاهُ مُسلِم

وفي رواية لَهُ قَالَ: إِنّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَّمَنَا سُنَنَ الهُدَى ؛ وَإِنَّ مِنْ سُنَنِ الهُدَى الصَّلاَةَ في المَسْجِدِ الَّذِي يُؤَذَّنُ فِيهِ .

৬/১০৭৬। আব্দুল্লাহ ইবনি মাস‘ঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যাকে এ কথা আনন্দ দেয় যে, সে কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে মুসলিম হয়ে সাক্ষাৎ করিবে, তার উচিত, সে যেন এই নামাযসমূহ আদায়ের প্রতি যত্ন রাখে, যেখানে তার জন্য আযান দেওয়া হয় [অর্থাৎ মসজিদে]; কেননা, মহান আল্লাহ তোমাদের নবী সাঃআঃ-এর নিমিত্তে হিদায়েতের পন্থা নির্ধারণ করিয়াছেন। আর নিশ্চয় এই নামাযসমূহ হিদায়েতের অন্যতম পন্থা ও উপায়। যদি তোমরা [ফরয] নামায নিজেদের ঘরেই পড়, যেমন এই পিছিয়ে থাকা লোক নিজ ঘরে নামায পড়ে, তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর তরীকা পরিহার করিবে। আর [মনে রেখো,] যদি তোমরা তোমাদের নবীর তরীকা পরিহার কর, তাহলে নিঃসন্দেহে তোমরা পথহারা হয়ে যাবে। আমি আমাদের লোকদের এই পরিস্থিতি দেখেছি যে, নামায [জামাতসহ পড়া] থেকে কেবল সেই মুনাফিক [কপট মুসলিম] পিছিয়ে থাকে, যে প্রকাশ্য মুনাফিক। আর [দেখেছি যে, পীড়িত] ব্যক্তিকে দু’জনের উপর ভর দিয়ে নিয়ে এসে [নামাযের] সারিতে দাঁড় করানো হতো।’ [মুসলিম] [6]

মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, ইবনি মাসঊদ রাঃআঃ বলেন, ‘আমাদেরকে আল্লাহর রসূল সাঃআঃ হিদায়েতের [সৎপথ প্রাপ্তির] পন্থা বলে দিয়েছেন। আর হিদায়েতের অন্যতম পন্থা, সেই মসজিদে নামায পড়া, যেখানে আযান দেওয়া হয়।’

7/1077 وَعَنْ أَبِي الدَّردَاءِ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم  يَقُوْلُ: «مَا مِنْ ثَلاثَةٍ فِي قَرْيةٍ، وَلاَ بَدْوٍ، لاَ تُقَامُ فِيهِمُ الصَّلاَةُ إلاَّ قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِم الشَّيْطَانُ . فَعَلَيْكُمْ بِالجَمَاعَةِ، فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ مِنَ الغَنَمِ القَاصِيَة». رَوَاهُ أبُو دَاوُدَ بإسناد حسن ৭/১০৭৭। আবূ দরদা রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ  সাঃআঃ-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, “যে কোন গ্রাম বা মরু-অঞ্চলে তিনজন লোক বাস করলে এবং সেখানে [জামাতে] নামায কায়েম না করা হলে শয়তান তাহাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করে ফেলে। সুতরাং তোমরা জামাতবদ্ধ হও; কেননা ছাগ পালের মধ্য হইতে নেকড়ে সেই ছাগলটিকে ধরে খায়, যে [পাল থেকে] দূরে দূরে থাকে।” [আবূ দাউদ-হাসান সূত্রে][7]


[1] সহীহুল বুখারী ৬৪৫, মুসলিম ৬৫০, তিরমিযী ২১৫, নাসায়ী ৮৩৭, ইবনু মাজাহ ৭৮৯, আহমাদ ৪৬৫৬, ৫৩১০, ৫৭৪৫, ৫৮৮৫, ৬৪১৯, মুওয়াত্তা মালিক ২৯০

[2] সহীহুল বুখারী ৬৪৭, ৬৫৯, ১৭৬, ৪৪৫, ৪৭৭, ৬৪৭, ৬৪৯, ২১১৯, ৩২২৯, ৪৭১৭, মুসলিম ৬৪৯, তিরমিযী ২১৫, ২১৬, নাসায়ী ৭৩৩, ৭৩৮, আবূ দাউদ ৪৬৯, ৪৭০, ৪৭১, ৫৫৬, ইবনু মাজাহ ৭৮৭, আহমাদ ৭১৪৫, ৭৩৬৭, ৭৩৮২, ৭৪৯৮, ৭৫৩০, ৭৫৫৭, ৭৫৫৯, ৭৮৩২, মুওয়াত্তা মালিক ২৯১, ৩৮২, ৩৮৩, ৩৮৫, দারেমী ১২৭৬

[3] মুসলিম ৬৫৩, নাসায়ী ৮৫০

[4] আবূ দাউদ ৫৫৩, ৫৫২, নাসায়ী ৮৫১, ইবনু মাজাহ ৭৯২

[5] সহীহুল বুখারী ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম ৬৫১, তিরমিযী ২১৭, নাসায়ী ৮৪৮, আবূ দাউদ, ৭২৬০, ৭৮৫৬, ২৭৩৬৬, ২৭৪৭৫, মুওয়াত্তা মালিক ২৯৯, দারেমী ১২১২, ১২৭৪

[6] মুসলিম ৬৫৪, আবূ দাউদ ৫৫০, ইবনু মাজাহ ৭৭৭, আহমাদ ৩৫৫৪, ৩৬১৬, ৩৯২৬, ৩৯৬৯, ৪২৩০, ৪৩৪২, দারেমী ১২৭৭

[7] আবূ দাউদ ৫৪৭, নাসায়ী ৮৪৭, আহমাদ ২১২০৩, ২৬৯৬৭, ২৬৯৬৮


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply