আহার করা -বিস্মিল্লাহ এবং আলহামদু লিল্লাহ বলা
এক ধার থেকে আহার করা ও উপদেশ – রিয়াদুস সালেহীন >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
আহার করা -বিস্মিল্লাহ এবং আলহামদু লিল্লাহ বলা
পরিচ্ছদঃ ১০০- শুরুতে বিস্মিল্লাহ এবং শেষে আল-হামদু লিল্লাহ বলা
পরিচ্ছদঃ ১০১- কোন খাবারের দোষত্রুটি বর্ণনা না করা এবং তার প্রশংসা করা উত্তম
পরিচ্ছদঃ ১০২- নফল রোযাদারের সামনে খাবার এসে গেলে যখন সে রোযা ভাঙ্গতে প্রস্তুত নয়, তখন সে কী বলবে?
পরিচ্ছদঃ ১০৩- নিমন্ত্রিত ব্যক্তির কেউ সাথী হলে সে নিমন্ত্রণদাতাকে কী বলবে?
পরিচ্ছদঃ ১০৪- নিজের সামনে এক ধার থেকে আহার করা ও বে-নিয়ম আহারকারীকে উপদেশ ও আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়া প্রসঙ্গে
পরিচ্ছদঃ ১০৫- একপাত্রে দলবদ্ধভাবে খাবার সময় সাথীদের অনুমতি ছাড়া খেজুর বা অনুরূপ কোন ফল জোড়া জোড়া খাওয়া নিষেধ।
পরিচ্ছদঃ ১০৬- খাওয়া সত্ত্বেও পরিতৃপ্ত না হলে কী বলা ও করা উচিত?
পরিচ্ছদঃ ১০৭- খাবার বাসনের এক ধার থেকে খাওয়ার নির্দেশ এবং তার মাঝখান থেকে খাওয়া নিষেধ
পরিচ্ছদঃ ১০৮- ঠেস দিয়ে বসে আহার করা অপছন্দনীয়
পরিচ্ছদঃ ১০৯- তিন আঙ্গুল দ্বারা খাবার খাওয়া মুস্তাহাব
পরিচ্ছদঃ ১১০- কোন সীমিত খাবারে অনেক মানুষের হাত পড়লে বরকত হয়
পরিচ্ছদঃ ১০০- শুরুতে বিস্মিল্লাহ এবং শেষে আল-হামদু লিল্লাহ বলা
৭৩২. উমার ইবনে আবু সালামাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (একদা খাবার সময়) রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাকে বললেন, ‘‘(শুরুতে)
سَمِّ اللهَ
‘বিসমিল্লাহ’ বল, ডান হাত দ্বারা আহার কর এবং তোমার নিকট (সামনে) থেকে খাও।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৩৭৬, ৫৩৭৭, ৫৩৭৮, মুসলিম ২০২২, আবু দাঊদ ৩৭৭৭, ইবনু মাজাহ ৩২৬৭, আহমাদ ১৫৮৯৫, ১৫৯০২, মুওয়াত্তা মালেক ১৩৩৮, দারেমী ২০১৯, ২০৪৫)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৭৩৩. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন আহার করিবে, সে যেন শুরুতে আল্লাহ তা‘আলার নাম নেয়। যদি শুরুতে আল্লাহর নাম নিতে ভুলে যায়, তাহলে সে যেন বলে
بِسمِ اللهِ أوَّلَهُ وَآخِرَهُ
‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু অ আখেরাহ।’’
[আবু দাঊদ ৩৭৬৭, তিরমিজী ১৮৫৮, ইবনু মাজাহ ৩২৬৪, আহমাদ ২৫২০৫, ২৫৫৫৮, ২৫৭৬০, দারেমী ২০২০) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৭৩৪. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছি যে, ‘‘কোন ব্যক্তি যখন নিজ বাড়ি প্রবেশের সময় ও আহারের সময় আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে; অর্থাৎ
سَمِّ اللهَ
(‘বিসমিল্লাহ’ বলে) তখন শয়তান তার অনুচরদেরকে বলে, ‘আজ না তোমরা এ ঘরে রাত্রি যাপন করতে পারবে, আর না খাবার পাবে।’ অন্যথা যখন সে প্রবেশ কালে আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে না (অর্থাৎ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না), তখন শয়তান বলে, ‘তোমরা রাত্রি যাপন করার স্থান পেলে।’ আর যখন আহার কালেও আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে না (অর্থাৎ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না), তখন সে তার চেলাদেরকে বলে, ‘তোমরা রাত্রিযাপন স্থল ও নৈশভোজ উভয়ই পেয়ে গেলে।’’
[মুসলিম ২০১৮, আবু দাঊদ ৩৭৬৫, ইবনু মাজাহ ৩৮৮৭, আহমাদ ১৪৩১৯, ১৪৬৮৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৭৩৫. হুযাইফাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
আমরা যখন আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর সঙ্গে আহারে বসতাম, তখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ খাবারে হাত রেখে শুরু না করা পর্যন্ত আমরা তাতে হাত রাখতাম না (এবং আহার শুরু করতাম না)। একদা আমরা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর সঙ্গে খাবারে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ একটি বাচ্চা মেয়ে এমনভাবে এল, যেন তাকে (পিছন থেকে) ধাক্কা দেওয়া হচ্ছিল এবং সে নিজ হাত খাবারে দিতে উদ্যত হয়েছিল, এমন অবস্থায় রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তার হাত ধরে নিলেন। তারপর এক বেদুঈনও (তদ্রূপ দ্রুত বেগে) এল, যেন তাকে ধাক্কা মারা হচ্ছিল (সেও খাবারে হাত রাখতে উদ্যত হলে) রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তার হাতও ধরে নিলেন এবং বললেন, ‘‘যে খাবারে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, শয়তান সে খাদ্যকে হালাল মনে করে। আর এ মেয়েটিকে শয়তানই নিয়ে এসেছে, যাতে ওর বদৌলতে নিজের জন্য খাদ্য হালাল করতে পারে। কিন্তু আমি তার হাত ধরে ফেললাম। তারপর সে বেদুঈনকে নিয়ে এল, যাতে ওর দ্বারা খাদ্য হালাল করতে পারে। কিন্তু আমি ওর হাতও ধরে নিলাম। সেই মহান সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ আছে, শয়তানের হাত ঐ দু’জনের হাতের সঙ্গে আমার হাতে (ধরা পড়েছিল)।’’ অতঃপর তিনি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আহার করলেন।
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩২৮০, মুসলিম ২০১৭, তিরমিজী ১৮১২, ২৮৫৭, আবু দাঊদ ৩৭৩১, ৩৭৩৩, ইবনু মাজাহ ৩৪১০, আহমাদ ১৩৮১৬, ১৩৮৭১, ১৪০২৫, ১৪৫৯৭, ১৪৭১৭, মুওয়াত্তা মালেক ১৭২৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৭৩৬. উমাইয়্যাহ্ ইবনু মাখ্শী সাহাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বসা ছিলেন এবং এক ব্যক্তি আল্লাহর নাম না নিয়েই খাবার খাচ্ছিলো। তার খাওয়া শেষ হইতে আর কেবল এক লোকমা বাকি। এই শেষ লোকমাটি মুখে দেওয়ার সময় সে বললো, ‘‘বিস্মিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’’ (আমি আল্লাহর নাম নিচ্ছি খাওয়ার শুরু এবং শেষভাগে)। এতে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ হেসে দিলেন। তিনি বললেনঃ তার সাথে শাইতান বরাবর খাবার খেয়ে যাচ্ছিল। সে আল্লাহর নাম নেয়ার সাথে সাথেই শাইতানের পেটে যা কিছু ছিল, বমি করে সবকিছু ফেলে দিল। (আবু দাউদ, নাসাঈ)
[আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি দুর্বল, কারণ এর মধ্যে মুসান্না ইবনু আব্দুর রহমান খুযা‘ঈ নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন তিনি মাজহূল যেমনটি ইবনুল মাদীনী বলেছেন। উল্লেখ্য এ ভাষায় হাদীসটি দুর্বল হলেও সহীহ্ হাদীসের মধ্যে আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূল (সাঃআঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন খাবে তখন সে যেন আল্লাহর নাম নেই (বিসমিল্লাহ্ বলে)। যদি প্রথমে আল্লাহর নাম উল্লেখ করতে ভুলে যায় তাহলে সে যেন বলেঃ বিসমিল্লাহি আওয়ালুহু অআখেরুহু। [‘‘সহীহ্ আবী দাঊদ’’ (৩৭৬৭), ‘‘সহীহ্ ইবনু মাজাহ্’’ (৩২৬৪) ও ‘‘ইরওয়াউল গালীল’’ (১৯৬৫)]) হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস
৭৩৭. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ছয়জন সাহাবীর সাথে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ খাদ্য আহার করছিলেন। এমন সময় এক বেদুঈন হাযির হল এবং সে দু’গ্রাসেই সমস্ত খাদ্য খেয়ে ফেলল। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ (এ সব দেখে) বললেন, ‘‘শোনো! যদি এ ব্যক্তি (শুরুতে) ‘বিসমিল্লাহ’ বলত, তাহলে এই খাবারই তোমাদের সবার জন্য যথেষ্ট হত।’’
[আবু দাঊদ ১৮৫৮, ৩৭৬৭, ইবনু মাজাহ ৩২৬৪, আহমাদ ২৪৫৮২, ২৫২০৫, ২৫৫৫৮, ২৫৭৬০, দারেমী ২০২০) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৭৩৮. আবু উমামাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ যখন দস্তরখানা গুটাতেন, তখন এই দো‘আ পড়তেনঃ-
“আলহামদু লিল্লা-হি হামদান কাসীরান ত্বাইয়্যিবাম মুবা-রাকান ফীহি গায়রা মাকফিইয়্যিন অলা মুওয়াদ্দাইন অলা মুস্তাগনান আনহু রাব্বানা।” অর্থাৎ আল্লাহর জন্য অগণিত পবিত্র ও বরকতপূর্ণ প্রশংসা। অকুণ্ঠ, নিরবচ্ছিন্ন, প্রয়োজন-সাপেক্ষ প্রশংসা। হে আমাদের প্রভু!
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৪৫৮, ৫৪৫৯, তিরমিজী ৩৪৫৬, আবু দাঊদ ৩৮৪৯, ইবনু মাজাহ ৩২৮৪, আহমাদ ২১৬৬৪, ২১৬৯৬, ২১৭৫৩, ২১৭৯৮, দারেমী ২০২৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৭৩৯. মু‘আয ইবনে আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আহার শেষে এই দো‘আ পড়বেঃ-
الحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أطْعَمَنِي هَذَا، وَرَزَقنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব্আমানী হা-যা অরাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী অলা ক্বুউওয়াহ।’ (অর্থাৎ সেই আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা যিনি আমাকে এ খাওয়ালেন এবং জীবিকা দান করলেন, আমার কোন চেষ্টা ও সামর্থ্য ছাড়াই) সে ব্যক্তির পূর্বের সমস্ত (ছোট) পাপ মোচন করে দেওয়া হবে।’’
[ আবু দাঊদ ৪২০৩, দারেমী ২৬৯০) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
পরিচ্ছদঃ ১০১- কোন খাবারের দোষত্রুটি বর্ণনা না করা এবং তার প্রশংসা করা উত্তম
৭৪০. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কখনো কোন খাবারের দোষ বর্ণনা করেননি। ভাল লাগলে তিনি তা খেয়েছেন এবং খারাপ লাগলে তিনি তা ত্যাগ করিয়াছেন।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৫০৯,৩৫৬৩, মুসলিম ২০৬৪, তিরমিজী ২০৩১, দাউদ ৩৭৬৩, ইবনু মাজাহ ৩২৫৯, আহমাদ ৯২২৩, ৯৭৯১, ৯৮৫৫, ৯৮৮২, ১০০৪৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৭৪১. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ নিজ পরিবারের কাছে তরকারি চাইলেন। তারা বলল, ‘আমাদের নিকট সির্কা ছাড়া আর কিছুই নেই।’ তিনি তাই চাইলেন এবং (তা দিয়ে) আহার করতে থাকলেন ও বলতে থাকলেন, ‘‘সির্কা কতই না চমৎকার তরকারি। সির্কা কতই না ভাল ব্যঞ্জন।’’
[মুসলিম ২৫০২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ১০২- নফল রোযাদারের সামনে খাবার এসে গেলে যখন সে রোযা ভাঙ্গতে প্রস্তুত নয়, তখন সে কী বলবে?
৭৪২. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কাউকে খাবারের দাওয়াত দেওয়া হয়, তখন সে যেন তা (কোন আপত্তিকর ব্যাপার না থাকলে সাদরে) গ্রহণ করে। আর সে যদি রোযা অবস্থায় থাকে, তাহলে (দাওয়াতকারীর জন্য) দো‘আ করে। আর যদি রোযা অবস্থায় না থাকে, তাহলে যেন আহার করে .
[মুসলিম ১৪৩১, তিরমিজী ৭৮০, আবু দাঊদ ২৪৬০, আহমাদ ৭৬৯১, ৯৯৭৬, ১০২০৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ১০৩- নিমন্ত্রিত ব্যক্তির কেউ সাথী হলে সে নিমন্ত্রণদাতাকে কী বলবে?
৭৪৩. nআবু মাস‘ঊদ বদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একটি লোক নবী সাঃআঃকে খাবারের জন্য দাওয়াত দিল, যা সে পাঁচ জনের জন্য প্রস্তুত করেছিল, যার পঞ্চম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। (রাস্তায়) এক (অনাহূত) ব্যক্তি তাঁদের অনুগামী হল। যখন তাঁরা বাড়ির দরজায় পৌঁছলেন, তখন নবী সাঃআঃ (আমন্ত্রণকারীকে) বললেন, ‘‘এ ব্যক্তি আমাদের সাথে চলে এসেছে। তুমি চাইলে ওকে অনুমতি দিতে পার, না চাইলে ও ফিরে যাবে।’’ কিন্তু সে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! বরং আমি তাকে অনুমতি দিলাম।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২০৮১, ২৪৫৬, ৫৪৩৪, ৫৪৬১, মুসলিম ২০৩৬, তিরমিজী ১০৯৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ১০৪- নিজের সামনে এক ধার থেকে আহার করা ও বে-নিয়ম আহারকারীকে উপদেশ ও আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়া প্রসঙ্গে
৭৪৪. উমার ইবনে আবী সালামাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বাল্যকালে নবী সাঃআঃ এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। একদা খাবার পাত্রে আমার হাত ছুটাছুটি করছিল। নবী সাঃআঃ আমাকে বললেন, ‘‘ওহে কিশোর!
سَمِّ اللهَ
‘বিসমিল্লাহ’ বলে ডান হাতে খাও এবং তোমার সামনে এক তরফ থেকে খাও।’’
[বুখারী ও মুসলিম) (৭৩২-এর অনুরূপ) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৭৪৫. সালামা ইবনে আকওয়া রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকটে একটি লোক তার বাম হাত দ্বারা আহার করল। (এ দেখে) তিনি বললেন, ‘‘তুমি ডান হাত দ্বারা খাও।’’ সে বলল, ‘আমি পারবো না!’ তিনি বদ-দো‘আ দিয়ে বললেন, ‘‘তুমি যেন না পারো।’’ ওর অহংকারই ওকে (কথা মানতে) বাধা দিয়েছিল। সুতরাং তারপর থেকে সে আর তার হাত মুখে তুলতে পারেনি।
[মুসলিম ২০২১, আহমাদ ১৬০৫৮, ১৬০৬৪, ১৬০৯০, দারেমী ২০৩২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ১০৫- একপাত্রে দলবদ্ধভাবে খাবার সময় সাথীদের অনুমতি ছাড়া খেজুর বা অনুরূপ কোন ফল জোড়া জোড়া খাওয়া নিষেধ।
৭৪৬. জাবালাহ ইবনে সুহাইম হইতে বর্ণিতঃ
ইবনে যুবাইরের খেলাফতকালে আমরা দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়েছিলাম। সুতরাং আমাদেরকে খেজুর দেওয়া হত। আর ‘আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃআঃ আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করতেন, যখন আমরা তা আহার করতাম। তিনি বলতেন, ‘তোমরা জোড়া জোড়া খেজুর এক সাথে খাবে না। কেননা, নবী সাঃআঃ জোড়া খেজুর (দুটো খেজুর এক সঙ্গে) খেতে বারণ করিয়াছেন।’ তারপর বললেন, ‘তবে যদি তার সঙ্গী ভাইয়ের কাছে সে অনুমতি গ্রহণ করে (তবে তা স্বতন্ত্র ব্যাপার)।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২৪৫৫, ২৪৮৯, ২৪৯০, ৫৪৪৬, মুসলিম ২০৪৫, তিরমিজী ১৮১৪, আবু দাঊদ ৩৮৩৪, ইবনু মাজাহ ৩৩৩১, আহমাদ ৪৪৯৯, ৫০১৭, ৫০৪৩, ৫২২৪, ৫৪১২, ৫৫০৮, ৫৭৬৮, ৬১১৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ১০৬- খাওয়া সত্ত্বেও পরিতৃপ্ত না হলে কী বলা ও করা উচিত?
৭৪৭. অহশী ইবনে হার্ব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
সাহাবাগণ নিবেদন করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা খাই, কিন্তু যেন পেট ভরে না।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে হয়তো তোমরা আলাদা আলাদা খাও।’’ তারা বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা জামা‘আতবদ্ধভাবে
سَمِّ اللهَ
‘বিসমিল্লাহ’ বলে আহার করো, তাহলে তাতে তোমাদের জন্য বরকত দান করা হবে।’’
[আবু দাঊদ ৩৭৬৪, ইবনু মাজাহ ৩২৮৬, আহমাদ ১৫৬৪৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ১০৭- খাবার বাসনের এক ধার থেকে খাওয়ার নির্দেশ এবং তার মাঝখান থেকে খাওয়া নিষেধ
৭৪৮. ইবনে আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যেহেতু খাবারের মাঝখানে বরকত নাযিল হয়, সেহেতু তোমরা ওর দুই ধার থেকে খাও, আর ওর মাঝখান থেকে খেয়ো না।’’ (আবু দাঊদ, তিরমিজী হাসান সহীহ)
[তিরমিজী ১৮০৫, আবু দাঊদ ৩৭৭২,ইবনু মাজাহ ৩২৭৭) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৭৪৯. আব্দুল্লাহ ইবনে বুস্র রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ এর একটি পাত্র ছিল যাকে ‘গার্রা’ বলা হত, সেটাকে চারজন মানুষ ধরে তুলতো। একদা চাশ্তের সময়ে যখন চাশ্তের নামায পড়ার পর ঐ (বিশাল) পাত্রটি আনা হল—অর্থাৎ তাতে ‘সারীদ’ (মাংস ও খন্ড খন্ড রুটি সংমিশ্রণে প্রস্তুত সুস্বাদু খাদ্য) রাখার পর, তখন লোকেরা তাতে জমায়েত হল। লোকের পরিমাণ যখন বেশি হল, তখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ হাঁটুর ভরে বসে পড়লেন। (এরূপ দেখে) জনৈক বেদুঈন বলল, ‘এ কেমন বসা?’ আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বললেন, ‘‘নিশ্চিতরূপে আল্লাহ আমাকে ভদ্র (বিনয়ী) বান্দা করিয়াছেন এবং উদ্ধত ও হঠকারী করেননি।’’ তারপর রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘তোমরা পাত্রের এক ধার থেকে খেতে থাক। আর ওর শীর্ষভাগ ছেড়ে দাও, ওখানে বরকত অবতীর্ণ হবে।’’
[আবু দাঊদ ৩৭৭৩, ইবনু মাজাহ ৩২৬৩, ৩২৭৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ১০৮- ঠেস দিয়ে বসে আহার করা অপছন্দনীয়
৭৫০. আবু জুহাইফা অহাব ইবনে আব্দুল্লাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আমি হেলান দিয়ে বসে আহার করি না।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৩৯৮, ৫৩৯৯, তিরমিজী ১৮৩০, আবু দাঊদ ৩৭৬৯, ইবনু মাজাহ ৩২৬২, আহমাদ ১৮২৭৯,১৮২৮৯, দারেমী ২০৭১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৭৫১. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে উঁচু হয়ে বসে খেজুর খেতে দেখেছি।’
হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ১০৯- তিন আঙ্গুল দ্বারা খাবার খাওয়া মুস্তাহাব
৭৫২. ইবনে আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন আহার করে, সে যেন তার আঙ্গুলগুলি না মুছে; যতক্ষণ না সে তা নিজে চেটে খায় কিংবা অন্য (শিশু প্রভৃতি)কে দিয়ে চাঁটিয়ে নেয়।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৪৫৬, মুসলিম ২০৩১, আবু দাঊদ ৩৮৪৭, ইবনু মাজাহ ৩২৬৯, আহমাদ ২৬৬৩, ৩২২৪, ২৭৭৭৩, দারেমী ২০২৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৭৫৩. কা‘ব ইবনে মালেক রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে তিন আঙ্গুল দ্বারা (রুটি, খেজুর ইত্যাদি) খেতে দেখেছি। অতঃপর যখন তিনি খাবার শেষ করলেন, তখন সেগুলিকে চাটলেন।
[মুসলিম ২০৩২, আবু দাঊদ ৩৮৪৮, আহমাদ ১৫৩৩৭, ২৬৬২৬, দারেমী ২০৩৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৭৫৪. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ খাবারান্তে আঙ্গুল ও থালা চেটে খাবার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘‘তোমরা জান না যে, তোমাদের কোন্ খাদ্যে বরকত নিহিত আছে।’’
[মুসলিম ২০৩৩, ইবনু মাজাহ ৩২৭০, আহমাদ ১৩৮০৯, ১৩৯৭৯, ১৪১৪২, ১৪২১৮, ১৪৫২১, ১৪৮০২, ১৪৮১৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৭৫৫. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
‘‘যখন কারো খাদ্য গ্রাস (বা দানা পাত্রের বাইরে) পড়ে যাবে, তখন সে যেন তা থেকে নোংরা দূর করে খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য তা ছেড়ে না দেয়। আর রুমালে হাত মুছে ফেলার পূর্বে যেন আঙ্গুলগুলি চেটে নেয়। কেননা, সে জানে না যে, তার কোন্ খাদ্যাংশে বরকত নিহিত আছে।’’
[মুসলিম) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৭৫৬.উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘শয়তান তোমাদের সমস্ত কাজ কর্মে তোমাদের নিকট উপস্থিত হয়; এমনকি তোমাদের খাবারের সময়েও উপস্থিত হয়। সুতরাং যখন কারো খাবার লুকমা (থালার বাইরে) পড়ে যায়, তখন সে যেন তা তুলে তা থেকে নোংরা পরিষ্কার করে খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য তা ফেলে না রাখে। আর আহারান্তে আঙ্গুলগুলি চেটে নেয়। কারণ, তার জানা নেই যে, তার কোন্ খাবারে বরকত নিহিত আছে।
[মুসলিম ২০৩৪, তিরমিজী ১৮০১, আহমাদ ৮২৯৪, ৯১০৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৭৫৭. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল সাঃআঃ যখন আহার করতেন তখন নিজ তিনটি আঙ্গুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, ‘‘কারো খাবারের লুকমা নিচে পড়ে গেলে, সে যেন তা তুলে পরিষ্কার করে খেয়ে ফেলে এবং শয়তানের জন্য ফেলে না রাখে।’’ আর তিনি আমাদেরকে খাদ্যপাত্র (বা বাসন) চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘‘তোমরা জান না যে, তোমাদের কোন্ খাবারে বরকত নিহিত আছে।’’
[মুসলিম ২০৩৪, তিরমিজী ১৮০১, আবু দাঊদ ৩৮৪৫, আহমাদ ১২৪০৪, ১৩৬৭৫, দারেমী ১৯৪২, ২০২৫, ২০২৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৭৫৮. ‘ঈদ ইবন হারেস হইতে বর্ণিতঃ
তিনি জাবের রাঃআঃ-কে আগুনে স্পর্শ করা বস্তু খাওয়ার পর ওযূ করা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, ‘না। (ওযূ করতে হবে না।) নবী সাঃআঃ এর যুগে তো আমরা এরূপ খাদ্য খুব কমই পেতাম। আর যখন আমরা তা পেতাম, তখন আমাদের তো হাতের চেটো, হাতের নলা ও পা ছাড়া কোন রুমাল ছিল না। (আমরা এগুলিতে মুছে ফেলতাম।) তারপর (নতুন) ওযূ না করেই আমরা নামায আদায় করতাম।
হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ১১০- কোন সীমিত খাবারে অনেক মানুষের হাত পড়লে বরকত হয়
৭৫৯. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘দু’জনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৩৯২, মুসলিম ২০৫৮, তিরমিজী ১৮২০, আহমাদ ৭২৭৮, ৯০২৪, মুওয়াত্তা মালেক ১৭২৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৭৬০. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছি যে, ‘‘একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট এবং দু’জনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট, আর চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট।’’
[মুসলিম ২০৫৯, তিরমিজী ১৮২০, ইবনু মাজাহ ৩২৫৪, আহমাদ ১৩৮১১, ১৩৯৮০, ১৪৬৮৪, দারেমী ২০৪৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply