জাবির [রাদি.]-এর দীর্ঘ হাদীস এবং আবুল ইয়াসার-এর ঘটনা

জাবির [রাদি.]-এর দীর্ঘ হাদীস এবং আবুল ইয়াসার-এর ঘটনা

জাবির [রাদি.]-এর দীর্ঘ হাদীস এবং আবুল ইয়াসার-এর ঘটনা >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

১৮. অধ্যায়ঃ জাবির [রাদি.]-এর দীর্ঘ হাদীস এবং আবুল ইয়াসার-এর ঘটনা

৭৪০২ উবাদাহ্ ইবনি ওয়ালীদ ইবনি উবাদাহ্ ইবনি সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন আমি এবং আমার পিতা আনসারী সহাবাগণের ইন্তিকালের পূর্বে আনসারী সহাবাদের এ এলাকায় ইল্‌মে দ্বীন শিক্ষা করার উদ্দেশে বের হলাম। প্রথমে আমাদের যার সাথে দেখা হলো, তিনি হলেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সহাবা আবুল ইয়াসার [রাদি.]। এক বোঝা কিতাব নিয়ে তাহাঁর সাথে ছিলেন এক গোলাম। তখন আবুল ইয়াসার [রাদি.]-এর শরীরে ছিল একটি চাদর এবং একটি মুআফিরী কাপড়। অনুরূপভাবে তাহাঁর গোলামের গায়েও একটি চাদর এবং একটি মুআফিরী কাপড় বিদ্যমান ছিল। অতঃপর আমার আব্বা তাঁকে বলিলেন, হে চাচাজান! আপনার চেহারায় যে ক্রোধের নিদর্শন লক্ষ্য করছি। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ; কারণ, বানী হারাম গোত্রের অমুকের পুত্র অমুকের কাছে আমি মাল পাওনা আছি। তাগাদার উদ্দেশে আমি তার বাড়ীতে গেছি। অতঃপর আমি সালাম দিয়ে বললাম, অমুক কোথায়, সে বাড়ী আছে কি? গৃহের ভিতর হইতে তারা বলিল, সে গৃহে নেই। এমতাবস্থায় তার এক শিশু ছেলে বাইরে আমার কাছে এলো। আমি তাকে বললাম, তোমার বাবা কোথায়? সে বলিল, আপনার আওয়াজ শুনে আমার আম্মার খাটের ভেতর পালিয়ে রয়েছে। আমি তাকে বললাম, আমার কাছে এসো। অবশ্যই আমি জানি তুমি কোথায় রয়েছো। অতঃপর সে বেরিয়ে আসলো। আমি তাকে বললাম, আমার থেকে আত্মগোপন করার বিষয়ে কিসে তোমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। সে বলিল, আল্লাহর শপথ? আমি আপনাকে যা বলব, তা মিথ্যা বলব না। আল্লাহর শপথ, আপনি তো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সহাবা, তাই এ বিষয়টিকে আমি ভয়ানক মনে করেছি যে, আমি আপনার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলব অথবা প্রতিশ্রুতি করে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করব। আল্লাহর শপথ! আমি একজন অভাবগ্রস্ত লোক। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ করে বলছো? সে বলিল, হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ করে বলছি। আমি আবারো বললাম, আল্লাহর শপথ করে বলছ? সে বলিল, হ্যাঁ আল্লাহর শপথ করে বলছি। অতঃপর এতদসংশ্লিষ্ট দলীল আনা হলো এবং আবুল ইয়াসার স্বীয় হাতে সেটা মুছে দিলেন। তারপর তিনি বলিলেন, আমার ঋণ পরিশোধ করার টাকা যদি তোমার হস্তগত হয় তবে তুমি তা পরিশোধ করিবে। অন্যথায় তুমি আমার পক্ষ থেকে এ ঋণ হইতে মুক্ত। অতঃপর আবুল ইয়াসার [রাদি.] দুটি আঙ্গুল তার চক্ষুদ্বয়ের উপর রেখে বলিলেন, আমার উভয় চোখের দৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছে, আমার উভয় কান শ্রবণ করেছে এবং হৃদয় ধমণীর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলিলেন, আমার অন্তর তা সংরক্ষণ করেছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্তকে সুযোগ দেয় বা ক্ষমা করে দেয় আল্লাহ তাআলা তাকে তাহাঁর স্বীয় ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭২৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৯৪]

৭৪০৩ উবাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি তাকে [আবুল ইয়াসারকে] বললাম, হে চাচাজান! যদি আপনি আপনার গোলামের শরীর হইতে চাদরটি নিয়ে তাকে আপনার মুআফিরী কাপড়টি পড়িয়ে দেন অথবা তার মুআফিরী কাপড়টি নিয়ে আপনি যদি তাকে আপনার চাদরটি পড়িয়ে দেন তবে তো আপনার এক জোড়া কাপড় এবং তারও এক জোড়া কাপড় হয়ে যায়। এ কথা শুনে তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলিলেন, হে আল্লাহ! আপনি এ বাচ্চার মধ্যে বারাকাত দিন। এরপর বলিলেন, হে ভাতিজা! আমার এ দুচোখ দেখেছে, আমার এ দুকান শুনেছে এবং অন্তরের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলিলেন, আমার এ অন্তর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে সংরক্ষণ করেছে। তিনি বলেছেন, তোমরা যা খাও, তাদেরকেও তা খাওয়াও, তোমরা যা পড়ো তাদেরকেও তা পড়াও অধিকন্তু তিনি বলিলেন, কিয়ামাতের দিন তা আমার সাওয়াব নিয়ে যাওয়ার তুলনায় দুনিয়াতে তাকে পার্থিব বস্তু দান করা অধিকতর সহজসাধ্য।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭২৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৯৪]

৭৪০৪ উবাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

অতঃপর আমরা [উবাদাহ্ এবং তার পিতা] সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে জাবির ইবনি আবদুল্লহ [রাদি.]-এর কাছে আসলাম। তখন তিনি তাহাঁর মাসজিদে ছিলেন এবং মাত্র একটি কাপড় গায়ে দিয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। এটা দেখে আমি লোকদের উপর দিয়ে একেবারে সামনে তাহাঁর ও কিব্লার মাঝখানে গিয়ে বসলাম। অতঃপর আমি বললাম, আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করুন। আপনি একটি মাত্র কাপড় পরিহিত অবস্থায় নামাজ আদায় করছেন। অথচ আপনার পাশেই আপনার চাদর রয়েছে। এ কথা শুনে তিনি আঙ্গুলগুলো প্রশস্ত করতঃ তাদেরকে কামানের মতো বাঁকা করে আমার বুকের দিকে ইঙ্গিত করে বলিলেন, আমার ইচ্ছা ছিল যে, তোমার ন্যায় কোন নির্বোধ লোক আমার কাছে এসে আমি যা করছি তা প্রত্যক্ষ করিবে। অতঃপর সেও অনুরূপ আচরণ করিবে।

শুনো, একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইবনি ত্বাব নামের খেজুর গাছের একটি ডাল হাতে আমাদের এ মাসজিদে আসলেন এবং মাসজিদের পশ্চিম দিকে কফ দেখিতে পেয়ে তিনি ডাল দ্বারা ঘষে তা পরিষ্কার করিলেন। এরপর তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেনঃ তোমাদের কে চায় যে, আল্লাহ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন? জাবির [রাদি.] বলেন, এতে আমরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। তারপর তিনি পুনরায় বললেনঃ তোমাদের কেউ পছন্দ করিবে কি যে, আল্লাহ তাআলা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন? তিনি বলেন, এবারও আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেলাম, তৎপর পুনরায় তিনি বললেনঃ তোমাদের কে চায় যে তার থেকে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর মুখ ফিরিয়ে নেন? জবাবে আমরা বললাম, না! হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ এমনটি কখনোই প্রত্যাশা করে না। এরপর তিনি বলিলেন, তোমাদের কেউ যখন সলাতে দাঁড়ায়, তখন আল্লাহ তাআলা তার মুখোমুখী থাকেন। সুতরাং মুসল্লী যেন সম্মুখের দিকে কিংবা ডান দিকে থু-থু না ফেলে; বরং সে যেন বাম দিকে বাম পায়ের নীচে থু-থু ফেলে আর যদি তড়িৎ কফ চলে আসে তবে সে যেন কাপড়ের উপর এভাবে থু-থু ফেলে এবং পরে যেন এক অংশকে অন্য অংশের উপর এভাবে গুটিয়ে নেয়। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমার নিকট সুগন্ধি নিয়ে আসো। তখন আমাদের গোত্রের একজন যুবক দ্রুতগতিতে উঠে দৌড়িয়ে তার গৃহে গেল এবং হাতের তালুতে করে সুগন্ধি নিয়ে এলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার থেকে সুগন্ধি নিয়ে ডালের মাথায় মেখে কফের দাগ ছিল সেটাতে তা লাগিয়ে দিলেন।

জাবির [রাদি.] বলেন, এখান হইতেই তোমরা তোমাদের মাসজিদে সুগন্ধি মাখতে শিখেছো।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭২৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৯৪]

৭৪০৫ জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একবার আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে বুওয়াত্ প্রান্তরের যুদ্ধের উদ্দেশে রওনা হলাম। তিনি মাজ্দী ইবনি আম্‌র আল জুহানী কাফিরকে খোঁজ করছিলেন। এ সফরে একটি উটে আমাদের পাঁচজন, ছয়জন, সাতজন ব্যক্তি পালাক্রমে আরোহণ করত। তারপর এক আনসারী ব্যক্তির আরোহণের পালা আসলে সে তার উটটিকে বসিয়ে এর উপর আরোহণ করিল এং তাকে চালাল। চলমান অবস্থায় উটটি তার উপর কিছু ধূলাবালি উড়াল। ফলে সে রাগতস্বরে বলে উঠল, আল্লাহ তোমার প্রতি অভিসম্পাত করুন। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, এ লোকটি কে যে তার উষ্ট্রের প্রতি অভিসম্পাত করিল? সে বলিল, আমি, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি এর থেকে নেমে যাও। আর অভিশপ্ত উটটি আমাদের সঙ্গে থাকতে পারবে না। তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপর এবং নিজের ধন-সম্পদের উপরও বদদুআ করো না। এমন যেন না হয় যে, তোমরা এমন মুহূর্তে বদদুআ করিবে যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া হয় এবং তা কবুল হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭২৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৯৪]

৭৪০৬ জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে আমরা আবার রওনা হলাম, সন্ধ্যা হলে আমরা আরবের এক কুপের কাছাকাছি পৌঁছলাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃকে আছে, [নেকীর উদ্দেশে] যে আমাদের আগে গিয়ে হাওযটি পরিচ্ছন্ন করিবে এবং নিজেও পান করিবে আর আমাদেরকেও পান করাবে। জাবির [রাদি.] বলেন, আমি দাঁড়িয়ে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি যাওয়ার জন্য প্রস্তু আছি। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, জাবিরের সাথে আর কে যাবে? তখন জাব্বার ইবনি সাখর [রাদি.] দাঁড়ালেন। তারপর আমরা দুজন কূয়ার কিনারায় গেলাম এবং এক বা দুবালতি কূয়াতে ছাড়লাম। এরপর আমরা কূয়াটি মাটি দ্বারা লেপন করলাম। পরে আমরা কূয়া হইতে পানি উঠতো শুরু করলাম এবং পানি দ্বারা হাওযটি কানায় কানায় ভরে দিলাম। অতঃপর সর্বপ্রথম রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের সামনে এলেন এবং বলিলেন, তোমরা কি আমাকে অনুমতি দাও? আমরা বললাম, নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রসূল! অতঃপর তিনি তাহাঁর উষ্ট্রী ছাড়লেন পানি পানের জন্য। উষ্ট্রী পানি পান করিল। অতঃপর তিনি তাহাঁর উষ্ট্রীকে টান দিলে সেটা পানি পান বন্ধ করিল এবং পেশাব করিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পরে সেটাকে অন্যত্র নিয়ে গেলেন এবং বসালেন। তারপর আবার তিনি হাওযের কাছে এসে ওযূ করিলেন, পরে আমিও উঠে গিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ওযূর স্থান হইতে ওযূ করলাম। জাব্বার ইবনি সাখর [রাদি.] শৌচকার্যের জন্য বের হলেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায়ের উদ্দেশে দাঁড়ালেন। আমার গায়ে ছিল একটি চাদর। আমি তার উভয় আঁচল বিপরীত দিকে দেয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তা সংকুলান হলো না। তবে সেটাতে কতগুলো রেশমের একগুচ্ছে পশম ছিল। তাই সেটাকে আমি উল্টো করলাম ও এর দুপাশ বিপরীতভাবে দুকাঁধের উপর রাখলাম এবং গর্দানের সাথে সেটাকে বাঁধলাম। এরপর আমি এসে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে আমাকে তাহাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। অতঃপর জব্বার ইবনি সাখর [রাদি.] এসে ওযূ করিলেন এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বাম পাশে দাঁড়ালেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের দুজনের হাত ধরে আমাদেরকে পশ্চাৎদিকে সরিয়ে দিলেন এবং আমাদেরকে তাহাঁর পেছনে দাঁড় করালেন। এ সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার প্রতি তীক্ষ্ণভাবে তাকাতে শুরু করিলেন, কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না, পরিশেষে আমি বুঝতে পারলাম। তখন তিনি আমাকে নিজ হাত দ্বারা ইঙ্গিত করে বলিলেন, তুমি তোমার কোমর বেঁধে নাও। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায়ের পর বলিলেন, হে জাবির! আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি উপস্থিত। তিনি বলিলেন, চাদর যদি ছোট হয় তবে সেটাকে তোমার কোমরে বেঁধে নিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭২৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৯৪]

৭৪০৭ জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আবার চলতে শুরু করলাম। তখন জীবিকা হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেই একটি করে খেজুর পেত, তা সে চুষত এবং পরে আবার সেটা কাপড়ের মধ্যে রেখে দিত। তখন আমরা আমাদের ধনুকের দ্বারা গাছের পাতা পাড়তাম এবং সেটা খেতাম। ফলে আমাদের চোয়ালে ঘা হয়ে গেল। এ সময় একদিন এক লোক খেজুর ভাগাভাগি করিল এবং ভাগাভাগির প্রাক্কালে এক লোককে দিতে ভুলে গেল। আমরা তাকে উঠিয়ে নিয়ে চললাম এবং তার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে বললাম, তাকে তার অংশের খেজুর দেয়া হয়নি। পরিশেষে তাকেও খেজুর দেয়া হলে সে তা নিয়ে চলে গেল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭২৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৯৪]

৭৪০৮ জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে পুনরায় আমরা পথ অতিক্রম করিতে লাগলাম। এমন সময় আমরা এক প্রশস্ত উপত্যকায় অবস্থান নিলাম। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] শৌচকার্যের জন্য গমন করিলেন, আমিও পানির পাত্র নিয়ে তাহাঁর পশ্চাদ্ধাবন করলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দৃষ্টিপাত করিলেন; কিন্তু আড়াল করার মতো কিছুই পেলেন না। হঠাৎ পাহাড়ের এক প্রান্তে দুটি গাছ দেখিতে পেলেন। তাই তিনি এর একটির সন্নিকটে গেলেন এবং এর একটি ডাল ধরে বলিলেন, আল্লাহর আদেশে তুমি আমার অনুগত হয়ে যাও। তখন ডালটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আনুগত্য স্বীকার [ঝুঁকে পড়ল] করে নিল, লাগাম পরিহিত ঐ উটের মতো যা তার চালকের অনুসরণ করে। তারপর তিনি দ্বিতীয় গাছটির কাছে এসে এর একটি ডাল ধরে বলিলেন, আল্লাহর হুকুমে তুমি আমার অনুগত হয়ে যাও। এটিও অনুরুপ তাহাঁর আনুগত্য স্বীকার করে নিল। অতঃপর তিনি যখন উভয় বৃক্ষের মাঝখানে পৌঁছলেন, তখন তিনি ডাল দুটো এক সাথে মিলিয়ে বলিলেন, আল্লাহর হুকুমে তোমরা আমার সম্মুখে সমবেত হয়ে যাও, মিলে যাও। তারা উভয়েই মিলে গেল। জাবির [রাদি.] বলেন, অতঃপর আমি এ ভয়ে দৌড়িয়ে চলে এলাম যে, না জানি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার সন্নিকটে হবার বিষয়টি জেনে ফেলেন এবং আরো দূরে চলে যান। ইবনি আব্বাদ [রাদি.] …….. –এর স্থলে ……. উল্লেখ করিয়াছেন। অর্থাৎ “দূরে সরে যান”। অতঃপর আমি বসে মনে মনে কিছু বলছিলাম। এমতাবস্থায় দৃষ্টি উঠিয়েই আমি দেখলাম যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সম্মুখ দিক হইতে এগিয়ে আসছেন। উভয় বৃক্ষই তখন পৃথক হয়ে প্রত্যেকটি স্বীয় কাণ্ডের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। এরপর আমি দেখলাম যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মাথা দ্বারা ডানে ও বামে ইঙ্গিত করিলেন। এ স্থলে বর্ণনাকারী আবু ইসমাঈলও তার মাথা দ্বারা ইঙ্গিত করিয়াছেন। তারপর তিনি সম্মুখে এগিয়ে এসে আমার পর্যন্ত পৌঁছে আমাকে বলিলেন, হে জাবির! তুমি তো আমার অবস্থানের স্থান দেখেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ; হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! তখন তিনি বলিলেন, তুমি ঐ গাছ দুটির কাছে গমন কর এবং তাদের প্রত্যেকটির একটি করে ডাল কেটে নিয়ে এসো। এরপর তুমি আমার এ স্থানে পৌঁছে একটি ডাল ডান দিকে এবং অপরটি বাম দিকে রেখে দিবে। জাবির [রাদি.] বলেন, আমি উঠলাম এবং একটি পাথর হাতে নিয়ে সেটাকে ভেঙ্গে ধারালো করলাম। ফলে তা ভীষণ ধারালো হলো। অতঃপর আমি গাছ দুটির কাছে আসলাম এবং প্রত্যেকটি বৃক্ষ হইতে এক একটি করে ডাল কাটলাম। তারপর ডাল দুটো হেঁচড়িয়ে নিয়ে আমি রওনা হলাম এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অবস্থান স্থলে পৌঁছে একটি ডাল আমার ডান পাশে এবং অন্য ডালটি আমার বাম পাশে রেখে দিলাম। তারপর আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে দেখা করে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যা বলেছেন আমি তা পূরণ করেছি। তবে এর কারণ কি? উত্তরে তিনি বলিলেন, দুটি কবরের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম কালে আমি দেখেছি, তাদের কবরে শাস্তি হচ্ছে। আমি তাদের জন্য সুপারিশ করার ইচ্ছা করছি। সম্ভবতঃ তাদের এ আযাবকে কমিয়ে দিবে, যতক্ষণ পর্যন্ত এ ডাল দুটো সতেজ থাকিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭২৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৯৪]

৭৪০৯ জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

অতঃপর আমরা সেনা ছাউনীতে আসলাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হে জাবির! ওযূ করার জন্য ঘোষণা দাও। আমি ঘোষণা করলাম, হে লোক সকল! ওযূ করো, ওযূ করো, ওযূ করো। তারপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! কাফেলার কাছে এক ফোটা পানিও নেই। কাফেলায় এক আনসারী সহাবা ছিলেন। তিনি কাঠের ডালে ঝুলন্ত একটি মশকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জন্য পানি ঠাণ্ডা করার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। জাবির [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, তুমি অমুকের ছেলে অমুক আনসারীর নিকট যাও এবং দেখো তার মশকে কিছু পানি আছে কিনা? আমি তার কাছে গেলাম এবং দেখলাম, মশকের তলাতে শুধু এ ফোটা পানি রয়েছে। সেটা যদি আমি পাত্রে ঢালতে যাই তবে শুষ্ক মশকই সেটা খেয়ে নিঃশেষ করে দিবে। এ দেখে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! মশকের মুখে এক ফোটা পানি ছাড়া আর কোন পানিই মশকের অভ্যন্তরে নেই। সেটাও যদি পাত্রে ঢালা হয় তবে মশকের শুষ্কতাই তা চোষে শেষ করে দিবে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, যাও সেটা নিয়ে এসো। জাবির [রাদি.] বলেন, সেটা আমি নিয়ে আসলাম। তিনি সেটা হইতে নিয়ে কি যেন পাঠ করিতে শুরু করিলেন। আমি তা উপলদ্ধি করিতে পারছিলাম না এবং সঙ্গে সঙ্গে নিজ হাত দ্বারা সেটা টিপতে শুরু করিলেন। এরপর তিনি মশকটি আমার হাতে দিয়ে বলিলেন, হে জাবির! একটি বড় পাত্র নিয়ে আসর ঘোষণা দাও। আমি ঘোষণা করলাম, হে কাফেলা! একটি বড় পাত্র, একটি বড় পাত্র; অতঃপর বহন করতঃ আমার নিকট একটি বড় পাত্র নিয়ে আসা হলো। আমি তা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সম্মুখে নিয়ে রাখলাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজ হাত উক্ত পাত্রের উপর বুলালেন এবং স্বীয় হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁকা করে হাত প্রশস্ত করতঃ পাত্রের অভ্যন্তরে রাখলেন এবং বলিলেন, হে জাবির! ঐ মশকটি নিয়ে এসো এবং বিসমিল্লাহ বলে তার পানি আমার হাতের উপর ঢালো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নির্দেশ অনুযায়ী বিসমিল্লাহ বলে আমি সেটার পানি ঢাললাম। অমনি দেখিতে পেলাম যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আঙ্গুলসমূহের মধ্য হইতে পানি উথলিয়ে উঠছে। পরিশেষে পাত্রও উথলিয়ে উঠল এবং পাত্রে পানি চক্কর থেতে শুরু করিল। এমনকি পাত্র পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। তখন আবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হে জাবির! ঘোষণা দাও, যার যার পানির প্রয়োজন আছে। জাবির [রাদি.] বলেন, লোকজন সবাই আসলো, পানি পান করলো এবং আত্মতৃপ্ত হলো। তিনি বলেন, তারপর আমি বললাম, পানির দরকার রয়েছে, এমন কোন লোক অবশিষ্ট রয়েছে কি? অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পাত্র হইতে নিজ হাত উঠিয়ে নিলেন তখনও পাত্র পানিতে পরিপূর্ণ হয়েই রইল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭২৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৯৪]

৭৪১০ জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

অতঃপর লোকেরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে ক্ষুধা নিবারণের ব্যাপারে অভিযোগ করিলেন। এ কথা শুনে তিনি বলিলেন, শীঘ্রই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে খাদ্য প্রদান করবেন। অতঃপর আমরা সমুদ্র উপকূলে আসলাম। সমুদ্রের ঢেউ উঠলে একটি মাছ আমাদের সামনে নিপতিত হল। আমরা সমুদ্র তীরে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করতঃ সেটা রান্না করলাম, ভূনা করলাম এবং তৃপ্ত সহকারে ভক্ষণ করলাম। জাবির [রাদি.] বলেন, আমি এবং অমুক অমুক পাঁচ লোক চোখের গোলাকৃতির মাঝে প্রবেশ করলে আমাদেরকে কেউ দেখছিল না। অতঃপর আমরা তার পাঁজরের বাঁকা হাড়সমূহের একটি হাড় আমরা হাতে নিলাম এবং সেটাকে ধনুকের মতো বানিয়ে বৃহৎ যীন পরিহিত অবস্থায় কাফেলার সর্ববৃহৎ উষ্ট্রীতে আরোহণ করতঃ কাফেলার বৃহদাকায় এক লোককে এর তলদেশ দিয়ে প্রবেশ করার জন্য আমরা আহ্বান জানালাম। সে এর নীচ দিয়ে মাথা না ঝুঁকিয়ে প্রবেশ করে বেরিয়ে আসলো।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭২৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৯৪]

Comments

One response to “জাবির [রাদি.]-এর দীর্ঘ হাদীস এবং আবুল ইয়াসার-এর ঘটনা”

Leave a Reply