দাজ্জাল এর বর্ণনা , তার পরিচয় এবং তার সাথে যা থাকিবে
দাজ্জাল এর বর্ণনা , তার পরিচয় এবং তার সাথে যা থাকিবে >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
২০. অধ্যায়ঃ দাজ্জাল এর বর্ণনা , তার পরিচয় এবং তার সাথে যা থাকিবে
৭২৫১. ইবনি উমর [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মানুষের মধ্যে দাজ্জালের আলাপ-আলোচনা করে বলিলেন, আল্লাহ তাআলা অন্ধ নন। কিন্তু সতর্ক হও! দাজ্জালের ডান চোখ কানা হইবে। আর তা আঙ্গুরের মতো ফোলা হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০৯৫, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৪৯]
৭২৫২. আবু রাবী ও আবু কামিল, মুহাম্মাদ ইবনি আব্বাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইবনি উমর [রাযি:]-এর সানাদ হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] হইতে অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৫০]
৭২৫৩. আনাস ইবনি মালিক [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সকল নবীই তার উম্মাতকে কানা মিথ্যাবাদী [দাজ্জাল] সম্পর্কে সাবধান করিয়াছেন। সাবধান! দাজ্জাল কানা হইবে। তোমাদের রব কানা নন। দাজ্জালের দুচোখের মধ্যস্থলে …
ك ف ر
কাফির
অর্থাৎ …[আর-বী] [কাফির] লেখা থাকিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০৯৭, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৫১]
৭২৫৪. আনাস ইবনি মালিক [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেন, দাজ্জালের দুচোখের মধ্যস্থলে….
ك ف ر
কাফির
অর্থাৎ কাফির লেখা থাকিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০৯৮, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৫২]
৭২৫৫. আনাস ইবনি মালিক [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দাজ্জালের চোখ ফোলা হইবে। তার উভয় চোখের মধ্যস্থলে কাফির লেখা থাকিবে। অতঃপর তিনি এক একটি হরফ উচ্চারণ করে বলিলেন, …
ك ف ر
কাফির
আর প্রত্যেক মুসলিম মাত্রই এ লেখা পাঠ করিতে পারবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০৯৯, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৫৩]
৭২৫৬. হুযাইফাহ্ [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দাজ্জালের বামচোখ কানা হইবে। তার দেহে ঘন পশম হইবে। তার সাথে থাকিবে জান্নাত ও জাহান্নামের চিত্র। প্রকৃতপক্ষে তার জাহান্নাম জান্নাত হইবে এবং তার জান্নাত জাহান্নাম বলে গণ্য হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১০০, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৫৪]
৭২৫৭. হুযাইফাহ্ [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দাজ্জালের সাথে কি থাকিবে, এ সম্পর্কে আমি নিশ্চিত অবগত আছি। তার সাথে প্রবাহমান দুটি নহর থাকিবে। একটি দৃশ্যত ধবধবে সাদা পানি বিশিষ্ট এবং অপরটি দৃশ্যত লেলিহান অগ্নির মতো হইবে। যদি কেউ সুযোগ পায় তবে সে যেন ঐ নহরে প্রবেশ করে যাকে দৃশ্যত অগ্নি মনে হইবে এবং চক্ষু বন্ধ করতঃ মাথা অবনমিত করে সে যেন সেটা থেকে পানি পান করে। সেটা হইবে ঠান্ডা পানি। দাজ্জালের চক্ষু লেপা হইবে এবং তার চোখের উপর নখের মতো পুরু চামড়া থাকিবে এবং উভয় চোখের মাঝখানে পৃথক-পৃথকভাবে কাফির লেখা থাকিবে। শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল মূমিন ব্যক্তি এ লেখা পাঠ করিতে পারবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১০১, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৫৫]
৭২৫৮. হুযাইফাহ্ [রাযি:]-এর সূত্রে নবী [সা:] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, দাজ্জালের সাথে পানি ও আগুন থাকিবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার অগ্নিই হইবে সুশীতল পানি এবং তার পানিই হইবে অগ্নি। সুতরাং নিজেকে ধ্বংস করো না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১০২, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৫৬]
৭২৫৯. আবু মাসউদ [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ
আমিও রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে এ কথা শ্রবণ করেছি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১০২, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৫৬]
৭২৬০. উকবাহ ইবনি আমর ও আবু মাসঊদ আনসারী [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ
রিবঈ ইবনি হিরাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি উক্বাহ ইবনি আমির আবু মাসঊদ আনসারী [রাদি.]-এর সাথে হুযাইফাহ্ ইবনি ইয়ামান [রাযি:]-এর নিকট গেলাম। তারপর উকবাহ্ [রাযি:] হুযাইফাহ্ [রাযি:]-কে বলিলেন, আপনি দাজ্জাল বিষয়ে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে যা যা শুনেছেন তা আমাদেরকেও শুনান। তিনি বলিলেন, দাজ্জাল যখন আবির্ভূত হইবে তখন তার সাথে পানি ও আগুন থাকিবে। কিন্তু মানুষ যেটাকে বাহ্যত পানি দেখবে সেটা হইবে দাহনশীল অগ্নি। আর যেটাকে মানুষ বাহ্যত অগ্নি দেখবে সেটা হইবে সুমিষ্ট ঠান্ডা পানি। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ সময়কাল পায় সে যেন দৃশ্যত যাকে অগ্নি দেখা যাচ্ছে তাতেই প্রবেশ করে। কেননা প্রকৃতপক্ষে সেটা হইবে সুমিষ্ট পানি।
তারপর হুযাইফার সমর্থন করে উকবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমিও রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে এ হাদীস শুনেছি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১০৩, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৫৭]
৭২৬১. রিবঈ ইবনি হিরাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা হুযাইফাহ্ ও আবু মাসউদ [রাযি:] একত্রিত হলেন। তখন হুযাইফাহ্ [রাযি:] বলিলেন, দাজ্জালের সঙ্গে যা থাকিবে এ সম্পর্কে আমি তাত্থেকে সর্বাধিক জ্ঞাত। তার সঙ্গে একটি পানির ঝর্ণা এবং একটি আগুনের নহর থাকিবে। যেটাকে বাহ্যত অগ্নি মনে হইবে সেটাই হইবে পানি। আর যেটাকে বাহ্যত পানি মনে হইবে সেটাই হইবে অগ্নি। তোমাদের কেউ যদি এ সময়কাল পায় এবং সে পানি পান করার ইচ্ছা করে তবে সে যেন যা দৃশ্যত অগ্নি মনে হইবে তা থেকে পান করে। কেননা এখানেই সে পানি পাবে।
বর্ণনাকারী আবু মাসউদ [রাযি:] বলেন, আমিও এমনটিই নবী [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১০৪, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৫৮]
৭২৬২. আবু হুরাইরাহ্ [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি দাজ্জাল বিষয়ে তোমাদেরকে কি এমন একটি হাদীস বলব না, যা কোন নবী তাহাঁর কাওমকে অদ্যাবধি বলেননি? শুনো, দাজ্জাল কানা হইবে এবং তার সাথে জান্নাত ও জাহান্নাম নামে দুটি প্রতারণার বস্তু থাকিবে। সে যাকে জান্নাত বলবে, সেটি আসলে হইবে জাহান্নাম। দেখো, দাজ্জাল সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে ভীতি-প্রদর্শন করছি, যেমন নূহ [আঃ] তাহাঁর কাওমকে সতর্ক করেছিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১০৫, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৫৯]
৭২৬৩. নাও্ওয়াস ইবনি সামআন [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা সকালে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করিলেন। আলোচনার সময় তিনি তার ব্যক্তিত্বকে তুচ্ছ করে তুলে ধরেন। পরে অনেক গুরুত্ব সহকারে উপস্থিত করেন যাতে তাকে আমরা ঐ বৃক্ষরাজির নির্দিষ্ট এলাকায় [আবাসস্থল সম্পর্কে] ধারণা করিতে লাগলাম। এরপর আমরা সন্ধ্যায় আবার তাহাঁর কাছে গেলাম। তিনি আমাদের মধ্যে এর প্রভাব দেখিতে পেয়ে বলিলেন, তোমাদের ব্যাপার কি? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! আপনি সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করিয়াছেন এবং এতে আপনি কখনো ব্যক্তিত্বকে তুচ্ছ করে তুলে ধরেছেন, আবার কখনো তার ব্যক্তিত্বকে বড় করে তুলে ধরেছেন। ফলে আমরা মনে করেছি যে, দাজ্জাল বুঝি এ বাগার মধ্যেই বিদ্যমান। এ কথা শুনে তিনি বলিলেন, দাজ্জাল নয়, বরং তোমাদের ব্যাপারে অন্য কিছুর আমি অধিক ভয় করছি। তবে শোন, আমি তোমাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যদি দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হয় তবে আমি নিজেই তাকে প্রতিহত করব। তোমাদের প্রয়োজন হইবেনা। আর যদি আমি তোমাদের মাঝে না থাকাবস্থায় দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হয়, তবে প্রত্যেক মুমিন লোক নিজের পক্ষ হইতে তাকে প্রতিহত করিবে। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আল্লাহ তাআলাই হলেন আমার পক্ষ হইতে তত্ত্বাবধানকারী। দাজ্জাল যুবক এবং ঘন চুল বিশিষ্ট হইবে, চোখ আঙ্গুরের ন্যায় হইবে। আমি তাকে কাফির আবদুল উয্যা ইবনি কাতান-এর মতো মনে করছি। তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সূরাহ্ আল-কাহ্ফ-এর প্রথমোক্ত আয়াতসমূহ পাঠ করে। সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ হইতে আবির্ভুত হইবে। সে ডানে-বামে দুর্যোগ সৃষ্টি করিবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা অটল থাকিবে। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! সে পৃথিবীতে কয়দিন অবস্থান করিবে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, চল্লিশদিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হইবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হইবে। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! যেদিন এক বছরের সমান হইবে, সেটাতে এক দিনের নামাজই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হইবে? উত্তরে তিনি বলিলেন, না, বরং তোমরা এদিন হিসাব করে তোমাদের দিনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে নিবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! দুনিয়াতে দাজ্জালের অগ্রসরতা কি রকম বৃদ্ধি পাবে? তিনি বলিলেন, বাতাসের প্রবাহ মেঘমালাকে যে রকম হাঁকিয়ে নিয়ে যায়। সে এক কাওমের কাছে এসে তাদেরকে কুফরির দিকে ডাকবে। তারা তার উপর ঈমান আনবে এবং তার আহবানে সাড়া দিবে। অতঃপর সে আকাশমন্ডলীকে আদেশ করিবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষন করিবে এবং ভূমিকে নির্দেশ দিবে, ফলে ভূমি গাছ-পালা ও শস্য উৎপন্ন করিবে। তারপর সন্ধ্যায় তাদের গবাদি পশুগুলো পূর্বের চেয়ে বেশি লম্বা কুজ, প্রশস্ত স্তন এবং পেটভর্তি অবস্থায় তাদের কাছে ফিরে আসবে। তারপর দাজ্জাল অপর এক কাওমের কাছে আসবে এবং তাদেরকে কুফ্রীর প্রতি ডাকবে। তারা তার কথাকে উপেক্ষা করিবে। ফলে সে তাদের নিকট হইতে প্রত্যাবর্তন করিবে। অমনি তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ কিছুই থাকিবে না। তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে সেটাকে সম্বোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও। তখন জমিনের ধন-ভান্ডার বের হয়ে তার চতুষ্পার্শে একত্রিত হইতে থাকিবে, যেমন মধু মক্ষিকা তাদের সর্দারের চারপাশে সমবেত হয়। অতঃপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্থলের ন্যায় দুটুকরো করে ফেলবে। তারপর সে আবার তাকে আহ্বান করিবে। যুবক আলোকময় হাস্যোজ্জল চেহারায় তার সম্মুখে এগিয়ে আসবে। এ সময় আল্লাহ রব্বুল আলামীন ঈসা ইবনি মারইয়াম [আঃ]-কে প্রেরণ করবেন। তিনি দু ফেরেশ্তার কাঁধের উপর ভর করে ওয়ারস ও জাফরান রং-এর জোড়া কাপড় পরিহিত অবস্থায় দামেশ্ক নগরীর পূর্ব দিকের উজ্জ্বল মিনারে অবতরণ করবেন। যখন তিনি তাহাঁর মাথা ঝুঁকাবেন তখন ফোঁটা ফোঁটা ঘাম তাহাঁর শরীর থেকে গড়িয়ে পড়বে। তিনি যে কোন কাফিরের কাছে যাবেন সে তাহাঁর শ্বাসের বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাহাঁর দৃষ্টি যতদূর পর্যন্ত যাবে তাহাঁর শ্বাসও ততদূর পর্যন্ত পৌছবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করিতে থাকিবেন। অবশেষে তাকে বাবে লুদ নামক স্থানে গিয়ে পাকড়াও করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর ঈসা [আঃ] ঐ সম্প্রদায়ের নিকট যাবেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করিয়াছেন। ঈসা [আঃ] তাদের কাছে গিয়ে তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে জান্নাতে তাদের স্থানমূহের ব্যাপারে খবর দিবেন। এমন সময় আল্লাহ তাআলা ঈসা [আঃ] এর প্রতি এই মর্মে ওয়াহী অবতীর্ণ করবেন যে, আমি আমার এমন বান্দাদের অবির্ভাব ঘটিয়েছি, যাদের সঙ্গে কারোই যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। অতঃপর তুমি আমার মুমিন বান্দাদেরকে নিয়ে তুর পাহাড়ে চলে যাও। তখন আল্লাহ তাআলা ইয়াজূজ-মাজূজ কাওমকে পাঠাবেন। তারা ছাড়া পেয়ে পৃথিবীর সব প্রান্তে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তাদের প্রথম দলটি “বুহাইরায়ে তাবারিয়া”র [ভূমধ্যসাগর] উপকূলে এসে এর সমুদয় পানি পান করে নিঃশেষ করে দিবে। তারপর তাদের সর্বশেষ দলটি এ স্থান দিয়ে যাত্রাকালে বলবে, এ সমুদ্রে কোন সময় পানি ছিল কি? তারা আল্লাহর নবী ঈসা [আঃ] এবং তাহাঁর সাথীদেরকে অবরোধ করে রাখবে। ফলে তাদের নিকট একটি বলদের মাথা বর্তমানে তোমাদের নিকট একশ দীনারের মূল্যের চেয়েও অধিক মূল্যবান প্রতিপন্ন হইবে। তখন আল্লাহর নবী ঈসা [আঃ] এবং তাহাঁর সঙ্গীগণ আল্লহর নিকট প্রার্থনা করবেন। ফলে আল্লাহ তাআলা ইয়াজুজ-মাজুজ সম্প্রদায়ের প্রতি আযাব পাঠাবেন। তাদের ঘাড়ে এক প্রকার পোকা হইবে। এতে একজন মানুষের মৃত্যুর মতো তারাও সবাই মরে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তারপর ঈসা [আঃ] ও তাহাঁর সঙ্গীগণ পাহাড় হইতে জমিনে বেরিয়ে আসবেন। কিন্তু তারা অর্ধ হাত জায়গাও এমন পাবেন না যেথায় তাদের পঁচা লাশ ও লাশের দুর্গন্ধ নেই। অতঃপর ঈসা [আঃ]এবং তাহাঁর সঙ্গীগণ পুনরায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। তখন আল্লাহ তাআলা উটের ঘাড়ের মতো লম্বা এক ধরনের পাখি পাঠাবেন। তারা তাদেরকে বহন করে আল্লাহর ইচ্ছানুসারে কোন স্থানে নিয়ে ফেলবে। এরপর আল্লাহ এমন মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যার ফলে কাঁচা-পাকা কোন গৃহই আর অবশিষ্ট থাকিবে না। এতে জমিন বিধৌত হয়ে উদ্ভিদ শূন্য মৃত্তিকায় পরিণত হইবে। অতঃপর পুনরায় জমিনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হইবে যে, হে জমিন! তুমি আবার শস্য উৎপন্ন করো এবং তোমার বারাকাত ফিরিয়ে দাও। সেদিন একদল মানুষ একটি ডালিম ভক্ষণ করিবে এবং এর বাকলের নীচে লোকেরা ছায়া গ্রহণ করিবে। দুধের মধ্যে বারাকাত হইবে। ফলে দুগ্ধবতী একটি উটই একদল মানুষের জন্য যথেষ্ট হইবে, দুগ্ধবতী একটি গাভী একগোত্রীয় মানুষের জন্য যথেষ্ট হইবে এবং যথেষ্ট হইবে দুগ্ধবতী একটি বকরী এক দাদার সন্তানদের [একটি ছোট গোত্রের] জন্য। এ সময় আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত আরামদায়ক একটি বায়ু প্রেরণ করবেন। এ বায়ু সকল মুমিন লোকদের বগলে গিয়ে লাগবে এবং সমস্ত মুমিন মুসলিমদের রূহ্ কবয করে নিয়ে যাবে। তখন একমাত্র মন্দ লোকেরাই এ পৃথিবীতে বাকী থাকিবে। তারা গাধার ন্যায় পরস্পর একে অন্যের সাথে প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত হইবে। এদের উপরই কিয়ামত সংঘটিত হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১০৬, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৬০]
৭২৬৪. আবদুর রহমান ইবনি ইয়াযীদ ইবনি জাবির [রাযি:] থেকে এক সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
কিন্তু এতে “এখানেও এক সময় পানি ছিল” এ কথার পর বর্ধিত এ কথাও উল্লেখ রয়েছে যে, এরপর তারা অগ্রসর হইতে থাকিবে। পরিশেষে যেতে যেতে তারা জাবালে খামার নামক স্থানে গিয়ে পৌছবে। এ হলো, বাইতুল মুকাদ্দাসের একটি পর্বত। এখানে পৌছে তারা বলবে, আমরা তো পৃথিবীবাসীদেরকে নিঃশেষ করে দিয়েছি। এসো, আকাশমন্ডলীর সত্তাকেও নিঃশেষ করে দেই। এ বলেই তারা আকাশের পানে তীর ছুঁড়তে থাকিবে। আল্লাহ তাআলা তীর রক্তে রঞ্জিত করে তাদের প্রতি আবার ফিরিয়ে দিবেন। বর্ণনাকারী ইবনি হুজ্রের বর্ণনায় এ কথাও বর্ধিত আছে যে, আল্লাহ বলবেন, আমি আমার এমন বান্দাদের আবির্ভাব ঘটিয়েছি, যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার শক্তি কারো নেই।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১০৭, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৬১]
Leave a Reply