ফিতনা, জামাত, বিনম্র, অহংকার, মার্জনা, কষ্ট ও শরীয়ত
ফিতনা, জামাত, বিনম্র, অহংকার, মার্জনা, কষ্ট ও শরীয়ত >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর কয়েকটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
ফিতনা, জামাত, বিনম্র, অহংকার, মার্জনা, কষ্ট ও শরীয়ত
পরিচ্ছেদ -৬৯ঃ ধর্মীয় ব্যাপারে ফিতনা এর আশঙ্কা হলে – রিয়াদুস সালেহীন
পরিচ্ছেদ -৭০ঃ মানুষের সাথে মিলামিশা, জুম‘আহ, জামাআত – রিয়াদুস সা.
পরিচ্ছেদ -৭১ঃ মুমিনদের জন্য বিনয়ী ও বিনম্র হওয়ার গুরুত্ব – রিয়াদুস সালেহীন
পরিচ্ছেদ -৭২ঃ অহংকার প্রদর্শন ও গর্ববোধ করা অবৈধ – রিয়াদুস সালেহীন
পরিচ্ছেদ -৭৩ঃ সচ্চরিত্রতা এর মাহাত্ম্য – রিয়াদুস সালেহীন হাদিস সংকলিত
পরিচ্ছেদ -৭৪ঃ সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব – রিয়াদুস সা.
পরিচ্ছেদ -৭৫ঃ মার্জনা করা এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চলার বিবরণ – রিয়াদুস সা.
পরিচ্ছেদ -৭৬ঃ কষ্ট সহ্য করার মাহাত্ম্য – রিয়াদুস সালেহীন হাদিস থেকে সংকলিত
পরিচ্ছদঃ ৭৭ -শরীয়তের নির্দেশাবলী লংঘন করতে দেখলে ক্রোধান্বিত হওয়া এবং আল্লাহর দ্বীনের সংরক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতার বিবরণ
পরিচ্ছদঃ ৬৯ -যুগের মানুষ খারাপ হলে অথবা ধর্মীয় ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কা হলে অথবা হারাম ও সন্দিহান জিনিসে পতিত হওয়ার ভয় হলে অথবা অনুরূপ কোন কারণে নির্জনতা অবলম্বন করা উত্তম
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَفِرُّوٓاْ إِلَى ٱللَّهِۖ إِنِّي لَكُم مِّنۡهُ نَذِيرٞ مُّبِينٞ ٥٠ ﴾ [الذاريات: ٥٠]
অর্থাৎ “সুতরাং তোমরা আল্লাহর দিকে পলায়ন কর; নিশ্চয় আমি তাঁর পক্ষ হইতে তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী।” (সূরা যারিয়াহ ৫০ আয়াত)
৬০২. সা‘দ ইবনে আবী অক্কাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
আমি আল্লাহর রসূল সাঃআঃকে বলতে শুনেছি, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ঐ বান্দাকে ভালোবাসেন, যে পরহেযগার (সংযমশীল), অমুখাপেক্ষী ও আত্মগোপনকারী।’’
[মুসলিম ২৯৬৫, আহমাদ ১৪৪৪, ১৫৩২). হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬০৩. আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! কোন্ ব্যক্তি সর্বোত্তম?’ তিনি সাঃআঃ বললেন, ‘‘ঐ মু’মিন যে আল্লাহর পথে তার জান ও মাল দিয়ে যুদ্ধ করে।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি সাঃআঃ বললেন, ‘‘তারপর ঐ ব্যক্তি যে কোন গিরিপথে নির্জনে নিজ প্রতিপালকের ইবাদত করে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে আল্লাহকে ভয় করে এবং লোকদেরকে নিজের মন্দ আচরণ থেকে নিরাপদে রাখে।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২৭৮৬, ৬৪৯৪, মুসলিম ১৮৮৮, তিরমিজী ১৬৬০, নাসাঈ ৩১০৫, আবু দাঊদ ২৪৮৫, ইবনু মাজাহ ৩৯৭৮, আহমাদ ১০৭৪১, ১০৯২৯, ১১১৪১, ১১৪২৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬০৪. উক্ত রাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘সত্বর এমন এক সময় আসবে যে, ছাগল-ভেড়াই মুসলিমের সর্বোত্তম মাল হবে; যা নিয়ে সে ফিতনা থেকে তার দ্বীনকে বাঁচানোর জন্য পাহাড়-চূড়ায় এবং বৃষ্টিবহুল (অর্থাৎ, তৃণবহুল) স্থানে পলায়ন করিবে।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ১৯, ৩৩০০, ৩৬০০, ৬৪৯৫, ৭০৮৮, নাসাঈ ৫০৩৬, আবু দাঊদ ৪২৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৯৮০, আহমাদ ১০৬৪৯, ১০৮৬১, ১০৯৯৮, ১১১৪৮, ১১৪২৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬০৫. আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যিনি বকরী চরাননি।’’ তাঁর সাহাবীগণ বললেন, ‘আর আপনিও?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ! আমিও কয়েক ক্বীরাত্বের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের বকরী চরাতাম।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২২৬২, ইবনু মাজাহ ২১৪৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬০৬. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম জীবন সেই ব্যক্তির, যে আল্লাহর পথে তার ঘোড়ার লাগাম ধরে আছে। যখনই সে যুদ্ধের ভয়ানক শব্দ শোনে, তখনই সেখানে তার পিঠে চড়ে দ্রুতগতিতে পৌঁছে যায়। দ্রুতগতিতে পৌঁছে সে হত্যা অথবা মৃত্যুর সম্ভাব্য জায়গাগুলো খোঁজ করে। অথবা সর্বোত্তম জীবন সেই ব্যক্তির, যে কতিপয় ছাগল-ভেড়া নিয়ে কোন পাহাড়-চূড়ায় কিংবা কোন উপত্যকার মাঝে বসবাস করে। সেখানে সে তার নিকট মৃত্যু আসা পর্যন্ত নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদত করে। লোকদের মধ্যে এ ব্যক্তি উত্তম অবস্থায় রয়েছে।’’
[মুসলিম ১৮৮৯, ইবনু মাজাহ ৩৯৭৭, আহমাদ ৮৮৯৭, ৯৪৩০, ১০৪০০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদঃ ৭০ – মানুষের সাথে মিলামিশা, জুম‘আহ, জামা‘আত, ঈদ ও যিকিরের মজলিস (জালসায় ও দ্বীনী মজলিসে) লোকদের সাথে উপস্থিত হওয়া, রোগীকে সাক্ষাৎ করে কুশল জিজ্ঞাসা করা, জানাযায় অংশগ্রহণ করা, অভাবীদের সাথে সমবেদনা প্রকাশ করা, অজ্ঞকে পথ প্রদর্শন করা এবং অনুরূপ অন্যান্য কল্যাণময় কাজের জন্য মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখা তার জন্য মুস্তাহাব, যে ভাল কাজের নির্দেশ এবং মন্দ কাজ থেকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আর অপরকে কষ্ট দেওয়া থেকে সে নিজেকে বিরত রাখে এবং অপরের পক্ষ থেকে কষ্ট পৌঁছলে ধৈর্য ধারণ করে।
[ইমাম নাওয়াবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,) জেনে রাখো যে, লোকদের সাথে মিলামিশার যে পদ্ধতি আমি বর্ণনা করেছি সেটাই স্বীকৃত; যা রসূলল্লাহ সাঃআঃ এবং বাকী নবীদের পদ্ধতি ছিল। অনুরূপ পদ্ধতি ছিল খুলাফায়ে রাশেদীন এবং তাঁদের পরে সাহাবা ও তাবেঈনদের এবং তাঁদের পরে মুসলিমদের উলামা ও সজ্জনদের। এই অভিমত অধিকাংশ তাবেঈন ও তাঁদের পরবর্তীদেরও। ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ এবং অধিকাংশ ফিক্হবিদও এই মত পোষণ করিয়াছেন। (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমা‘ঈন) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ﴾ [المائدة: ٢]
অর্থাৎ “কল্যাণকর ও সংযমশীলতার পথে একে অপরের সহযোগিতা কর।” (সূরা মায়েদা ২ আয়াত)
এ মর্মে আর অনেক বিদিত আয়াত রয়েছে।[১]
পরিচ্ছদঃ ৭১ -মু’মিনদের জন্য বিনয়ী ও বিনম্র হওয়ার গুরুত্ব
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥ ﴾ [الشعراء: ٢١٥]
অর্থাৎ “তুমি তোমার অনুসারী বিশ্বাসীদের প্রতি সদয় হও।” (সূরা শু‘আরা ২১৫ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَن يَرۡتَدَّ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَسَوۡفَ يَأۡتِي ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ﴾ [المائدة: ٥٤]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দ্বীন থেকে ফিরে গেলে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনয়ন করিবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন ও যারা তাঁকে ভালবাসবে, তারা হবে মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর।” (সূরা মাইদাহ ৫৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن ذَكَرٖ وَأُنثَىٰ وَجَعَلۡنَٰكُمۡ شُعُوبٗا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓاْۚ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ﴾ [الحجرات: ١٣]
অর্থাৎ “হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হইতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হইতে পার। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক আল্লাহ-ভীরু।” (সূরা হুজরাত ১৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿فَلَا تُزَكُّوٓاْ أَنفُسَكُمۡۖ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَنِ ٱتَّقَىٰٓ﴾ [النجم: ٣٢]
অর্থাৎ “তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। তিনই সম্যক জানেন আল্লাহভীরু কে।” (সূরা নাজ্ম ৩২আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ وَنَادَىٰٓ أَصۡحَٰبُ ٱلۡأَعۡرَافِ رِجَالٗا يَعۡرِفُونَهُم بِسِيمَىٰهُمۡ قَالُواْ مَآ أَغۡنَىٰ عَنكُمۡ جَمۡعُكُمۡ وَمَا كُنتُمۡ تَسۡتَكۡبِرُونَ ٤٨ أَهَٰٓؤُلَآءِ ٱلَّذِينَ أَقۡسَمۡتُمۡ لَا يَنَالُهُمُ ٱللَّهُ بِرَحۡمَةٍۚ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡكُمۡ وَلَآ أَنتُمۡ تَحۡزَنُونَ ٤٩ ﴾ [الاعراف: ٤٨، ٤٩]
অর্থাৎ “আ‘রাফবাসিগণ কিছু লোককে তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনতে পেরে তাদেরকে আহবান করে বলবে, তোমাদের দল ও তোমাদের অহংকার কোন কাজে আসল না। দেখ এদেরই সম্বন্ধে কি তোমরা শপথ করে বলতে যে, আল্লাহ এদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করিবেন না। এদেরকেই বলা হবে, তোমরা বেহেশ্তে প্রবেশ কর, তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না।” (সূরা আ’রাফ ৪৮-৪৯ আয়াত)
৬০৭. ‘ইয়ায ইবনে হিমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট অহী পাঠালেন যে, তোমরা পরস্পরে নম্র ব্যবহার অবলম্বন কর। যাতে কেউ যেন কারো প্রতি গর্ব না করে এবং কেউ যেন কারো প্রতি যুলুম না করে।’’
[মুসলিম ২৮৬৫, আবু দাঊদ ৪৮৯৫, ইবনু মাজাহ ৪১৭৯, আহমাদ ১৭০৩০, ১৭৮৭৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬০৮. আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘সাদকা করলে মাল কমে যায় না এবং ক্ষমা করলে আল্লাহ বান্দার সম্মান বাড়িয়ে দেন। আর যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে (মর্যাদায়) উচ্চ করেন।’’
[মুসলিম ২৫৮৮, তিরমিজী ২০২৯, আহমাদ ৭১৬৫, ৮৭৮২, ৯৩৬০, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৮৫, দারেমী ১৬৭৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬০৯. আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
কতিপয় শিশুর পাশ দিয়ে গেলেন অতঃপর তিনি তাদেরকে সালাম দিলেন এবং বললেন, ‘নবী সাঃআঃ এ রকমই করতেন।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬২৪৭, মুসলিম ২১৬৮, তিরমিজী ২৬৯৬, আবু দাঊদ ৫২০২, ইবনু মাজাহ ৩৭০০, আহমাদ ১১৯২৮, ১২৩১৩, ১২৪৮৫, ১২৬১০, ২৬৩৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬১০. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘মদীনার ক্রীতদাসীদের মধ্যে এক ক্রীতদাসী নবী সাঃআঃ এর হাত ধরে নিত, তারপর সে (নিজের প্রয়োজনে) তার ইচ্ছামত তাঁকে নিয়ে যেত।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০৭২, ৪৯৭৮, ৬৬৫৭, মুসলিম ২৮৫৩, তিরমিজী ২৬০৫, ইবনু মাজাহ ৪১১৬, আহমাদ ১৮২৫৩)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬১১. আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘নবী সাঃআঃ ঘরে কী কাজ করতেন?’ তিনি বললেন, ‘গৃহস্থালি কাজ করতেন; অর্থাৎ স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করতেন। অতঃপর নামাযের (সময়) হলে তিনি নামাযের জন্য বেরিয়ে যেতেন।’ (বুখারী)
* (এই গৃহস্থালি কাজের ব্যাখ্যায় মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, ‘তিনি নিজের জুতা পরিষ্কার করতেন, কাপড় সিলাই করতেন, দুধ দোহাতেন এবং নিজের খিদমত নিজে করতেন।’ তাছাড়া এ কথা বিদিত যে, তাঁর একাধিক দাস-দাসীও ছিল।)
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৭৬, ৫৩৬৩, ৬০৩৯, তিরমিজী ২৪৫৮৯, আহমাদ ২৩৭০৬, ২৪৪২৭, ২৫১৮২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬১২. আবু রিফাআহ তামীম ইবনে উসাইদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট গেলাম তখন তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসুল! আমি একজন বিদেশী মানুষ নিজের দ্বীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছি, আমি জানি না আমার দ্বীন কী?’ (এ কথা শুনে) আল্লাহর রসূল সাঃআঃ আমার দিকে ফিরলেন এবং খুতবা দেওয়া বর্জন করলেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি আমার নিকটে এলেন। অতঃপর একটি চেয়ার আনা হল। তিনি তার উপর বসে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে আমাকে শিখাতে লাগলেন। অতঃপর তিনি খুতবায় ফিরে এসে তার শেষাংশটুকু পুরা করলেন।
[মুসলিম ৮৭৬, নাসাঈ ৫৩৭৭, আহমাদ ২০২২৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬১৩. আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাঃআঃ যখন আহার করতেন তখন স্বীয় তিনটি আঙ্গুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, ‘‘কারো খাবারের লুকমা নিচে পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে পরিষ্কার করে খেয়ে ফেলে এবং শয়তানের জন্য ফেলে না রাখে।’’ আর তিনি আমাদেরকে খাদ্যপাত্র (বা বাসন) ভালভাবে চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘‘তোমরা জান না যে, তোমাদের কোন্ খাবারে বরকত নিহিত আছে।’’
[মুসলিম ২০৩৪, তিরমিজী ১৮০৩, আবু দাঊদ ৩৮৪৫, আহমাদ ১২৪০৪, ১৩৬৭৫, দারেমী ১৯৪২, ২০২৫, ২০২৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬১৪. আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যিনি বকরী চরাননি। তাঁর সাহাবীগণ বললেন, আর আপনিও? তিনি বললেন, হ্যাঁ! আমি কয়েক ক্বীরাত্বের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের বকরী চরাতাম।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২২৬২, ইবনু মাজাহ ২১৪৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬১৫. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যদি আমাকে ছাগলাদির পা অথবা বাহু খাওয়ানোর জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়, তাহলে আমি নিশ্চয় তা কবুল করব। আর যদি আমাকে পা অথবা বাহু উপঢৌকন দেওয়া হয়, তাহলে আমি নিশ্চয় তা সাদরে গ্রহণ করব।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২৫৬৮, ৫১৭৮, আহমাদ ৯২০১, ৯৮৫৫, ৯৮৮৩, ১০২৭৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬১৬. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর আয্ববা নামক উটনীটি প্রতিযোগিতায় কোনদিন হারত না অথবা তাকে অতিক্রম করে কেউ যেতে পারত না। একবার এক বেদুঈন তার একটি সওয়ারী উঁটে সওয়ার হয়ে আসলে সেটি তার আগে চলে গেল। মুসলিমদের কাছে তা কষ্টদায়ক মনে হল। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এ কথা জানতে পারলে বললেন, ‘‘আল্লাহর বিধান হল, দুনিয়ার কোনো জিনিস উন্নত হলে, তিনি তাকে অবনত করেন।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮৭১, ২৮৭২, ৬৫০১, নাসাঈ ৩৫৮৮, আবু দাঊদ ৪৮০২, আহমাদ ১১৫৯৯, ১৩২৪৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ৭২ -অহংকার প্রদর্শন ও গর্ববোধ করা অবৈধ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿تِلۡكَ ٱلدَّارُ ٱلۡأٓخِرَةُ نَجۡعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوّٗا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فَسَادٗاۚ وَٱلۡعَٰقِبَةُ لِلۡمُتَّقِينَ٨٣﴾ [القصص: ٨٣]
অর্থাৎ “এ আখেরাতের আবাস; যা আমি নির্ধারিত করি তাদেরই জন্য যারা এ পৃথিবীতে উদ্ধত হইতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর মুত্তাকীদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম।” (সূরা ক্বাসাস ৮৩ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ وَلَا تَمۡشِ فِي ٱلۡأَرۡضِ مَرَحًاۖ ﴾ [الاسراء: ٣٧]
অর্থাৎ “ভূ-পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনোই পদভারে ভূ-পৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত-প্রমাণ হইতে পারবে না।” (সূরা ইসরা ৩৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَلَا تُصَعِّرۡ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمۡشِ فِي ٱلۡأَرۡضِ مَرَحًاۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخۡتَالٖ فَخُورٖ ١٨ ﴾ [لقمان: ١٨]
অর্থাৎ “মানুষের জন্য নিজের গাল ফুলায়ো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; কারণ আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে ভালবাসেন না।” (সূরা লুকমান ১৮ আয়াত)
‘গাল ফুলায়ো না’ অর্থাৎ অহংকারের সাথে চেহারা বিকৃত করো না।
মহান আল্লাহ কারূন সম্বন্ধে বলেন,
﴿ إِنَّ قَٰرُونَ كَانَ مِن قَوۡمِ مُوسَىٰ فَبَغَىٰ عَلَيۡهِمۡۖ وَءَاتَيۡنَٰهُ مِنَ ٱلۡكُنُوزِ مَآ إِنَّ مَفَاتِحَهُۥ لَتَنُوٓأُ بِٱلۡعُصۡبَةِ أُوْلِي ٱلۡقُوَّةِ إِذۡ قَالَ لَهُۥ قَوۡمُهُۥ لَا تَفۡرَحۡۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡفَرِحِينَ ٧٦ وَٱبۡتَغِ فِيمَآ ءَاتَىٰكَ ٱللَّهُ ٱلدَّارَ ٱلۡأٓخِرَةَۖ وَلَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ ٱلدُّنۡيَاۖ وَأَحۡسِن كَمَآ أَحۡسَنَ ٱللَّهُ إِلَيۡكَۖ وَلَا تَبۡغِ ٱلۡفَسَادَ فِي ٱلۡأَرۡضِۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ٧٧ قَالَ إِنَّمَآ أُوتِيتُهُۥ عَلَىٰ عِلۡمٍ عِندِيٓۚ أَوَ لَمۡ يَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ قَدۡ أَهۡلَكَ مِن قَبۡلِهِۦ مِنَ ٱلۡقُرُونِ مَنۡ هُوَ أَشَدُّ مِنۡهُ قُوَّةٗ وَأَكۡثَرُ جَمۡعٗاۚ وَلَا يُسَۡٔلُ عَن ذُنُوبِهِمُ ٱلۡمُجۡرِمُونَ ٧٨ فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوۡمِهِۦ فِي زِينَتِهِۦۖ قَالَ ٱلَّذِينَ يُرِيدُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا يَٰلَيۡتَ لَنَا مِثۡلَ مَآ ُوتِيَ قَٰرُونُ إِنَّهُۥ لَذُو حَظٍّ عَظِيمٖ ٧٩ وَقَالَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ وَيۡلَكُمۡ ثَوَابُ ٱللَّهِ خَيۡرٞ لِّمَنۡ ءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗاۚ وَلَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ٱلصَّٰبِرُونَ ٨٠ فَخَسَفۡنَا بِهِۦ وَبِدَارِهِ ٱلۡأَرۡضَ فَمَا كَانَ لَهُۥ مِن فِئَةٖ يَنصُرُونَهُۥ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَمَا كَانَ مِنَ ٱلۡمُنتَصِرِينَ ٨١ ﴾ [القصص: ٧٦، ٨١]
অর্থাৎ “কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি যুলুম করেছিল। আমি তাকে ধনভান্ডার দান করেছিলাম যার চাবিগুলি বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ কর, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, দম্ভ করো না, আল্লাহ দাম্ভিকদেরকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন তার মাধ্যমে পরলোকের কল্যাণ অনুসন্ধান কর। আর তুমি তোমার ইহলোকের অংশ ভুলে যেয়ো না। তুমি (পরের প্রতি) অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেয়ো না। আল্লাহ অবশ্যই বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালবাসেন না। সে বলল, ‘এ সম্পদ আমি আমার জ্ঞানবলে প্রাপ্ত হয়েছি।’ সে কি জানত না আল্লাহ তার পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করিয়াছেন যারা তার থেকেও শক্তিতে ছিল প্রবল, সম্পদে ছিল প্রাচুর্যশালী? আর অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাও করা হবে না। কারূন তার সম্প্রদায়ের সম্মুখে জাঁকজমক সহকারে বাহির হল। যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলল, আহা! কারূনকে যা দেওয়া হয়েছে সেরূপ যদি আমাদেরও থাকত; প্রকৃতই সে মহা ভাগ্যবান। আর যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলল, ধিক্ তোমাদের! যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ। আর ধৈর্যশীল ব্যতীত তা অন্য কেউ পায় না। অতঃপর আমি কারূনকে ও তার প্রাসাদকে মাটিতে ধসিয়ে দিলাম। তার স্বপক্ষে এমন কোন দল ছিল না যে আল্লাহর শাস্তির বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না।” (সূরা ক্বাস্বাস ৭৬-৮১ আয়াত)
৬১৭. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’’ একটি লোক বলল, ‘মানুষ তো ভালবাসে যে, তার পোশাক সুন্দর হোক ও তার জুতো সুন্দর হোক, (তাহলে)?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্যকে ভালবাসেন। (সুন্দর পোশাক ও সুন্দর জুতো ব্যবহার অহংকার নয়, বরং) অহংকার হল, সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা।’’
[মুসলিম ৯১, তিরমিজী ১৯৯৮, ১৯৯৯, আবু দাঊদ ৪০৯১, ইবনু মাজাহ ৫৯, ৪১৭৩, আহমাদ ৩৭৭৯, ৩৯০৩, ৩৯৩৭, ৪২৯৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬১৮. সালামাহ ইবনে আকওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট তার বাম হাত দ্বারা খেল। তিনি বললেন, ‘‘তোমার ডান হাত দ্বারা খাও।’’ সে বলল, ‘আমি অপারগ।’ তিনি সাঃআঃ বললেন, ‘‘তুমি (যেন ডান হাতে খেতে) না পারো।’’ রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর কথা মানতে তাকে অহংকারই বাধা দিয়েছিল। বর্ণনাকারী বলেন, ‘(তারপর) থেকে সে তার ডান হাত মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি।’
[মুসলিম ২০২১, আহমাদ ১৬০৫৮, ১৬০৬৪, ১৬০৯৫, দারেমী ২০৩২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬১৯. হারেসাহ ইবনে অহাব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছি, ‘‘আমি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি? (তারা হল) প্রত্যেক রূঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় দাম্ভিক ব্যক্তি।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৯১৮, ৬০৭২, ৬৬৫৭, মুসলিম ২৮৫৩, তিরমিজী ২৬০৫, ইবনু মাজাহ ৪১১৬, আহমাদ ১৮২৫৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬২০. আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘জান্নাত এবং জাহান্নাম পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া করল। জাহান্নাম বলল, ‘আমার মধ্যে বড় বড় উদ্ধত এবং অহংকারীরা বসবাস করিবে।’ আর জান্নাত বলল, ‘আমার মধ্যে দুর্বল এবং মিসকীনরা বসবাস করিবে।’ অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যে মীমাংসা করলেন যে, ‘হে জান্নাত! তুমি আমার অনুগ্রহ, আমি তোমার দ্বারা যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। এবং হে জাহান্নাম! তুমি আমার শাস্তি, আমি তোমার দ্বারা যাকে ইচ্ছা তাকে শাস্তি দেব। আর তোমাদের দুটোকেই পরিপূর্ণ করা আমার দায়িত্ব।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৮৪৯, ৪৮৫০, ৭৪৪৯, মুসলিম ২৮৪৭, ২৮৪৬, তিরমিজী ২৫৫৭, ২৫৬১, আহমাদ ৭৬৬১, ২৭৩৮১, ২৮২২৪, ১০২১০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬২১. আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তির দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকিয়ে দেখবেন না, যে অহংকারের সাথে তার লুঙ্গি (প্যাণ্ট্, পায়জামা মাটিতে) ছেঁচড়াবে।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৭৮৮, মুসলিম ২০৮৭, আহমাদ ৮৭৭৮, ৮৯১০, ৯০৫০, ৯২৭০, ৯৫৪৫, ২৭২৫৩, ৯৮৫১, ১০১৬৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৯৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬২২. . উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তিন প্রকার লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করিবেন না এবং তাদের দিকে (অনুগ্রহের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, (১) ব্যভিচারী বৃদ্ধ, (২) মিথ্যাবাদী বাদশাহ এবং (৩) অহংকারী গরীব।’’
[মুসলিম ১০৭, আহমাদ ৭৩৯৩, ৯৩১১, ৯৮৬৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬২৩. সাবেক রাবী হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘সম্মান আমার লুঙ্গি এবং গর্ব আমার চাদর। (অর্থাৎ খাস আমার গুণ।) সুতরাং যে ব্যক্তি আমার কাছ থেকে এর মধ্য থেকে যে কোন একটি টেনে নিতে চাইবে, আমি তাকে শাস্তি দেব।’’
[মুসলিম ২৬২০, আবু দাঊদ ৪০৯০, ইবনু মাজাহ ৪১৭৪, আহমাদ ৭৩৩৫, ৮৬৭৭, ৯০৯৫, ৯২২৪, ৯৪১০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬২৪. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘একদা (পূর্ববর্তী উম্মতের) এক ব্যক্তি একজোড়া পোশাক পরে, গর্বভরে, মাথা আঁচড়ে অহংকারের সাথে চলা-ফেরা করছিল। ইত্যবসরে আল্লাহ তার (পায়ের নীচের মাটিকে) ধসিয়ে দিলেন। সুতরাং সে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত মাটির গভীরে নেমে যেতেই থাকবে।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৭৮৯, মুসলিম ২০৮৮, আহমাদ ৭৫৭৪, ২৭৩৯৪, ৮৮২২, ৯০৮২, ৯৫৭৬, ১০০১০, ১০০৭৭, ১০৪৮৮, দারেমী ৪৩৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬২৫. সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া’ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি অহংকারবশত নিজকে বড় মনে করে লোকজনকে উপেক্ষা করে চলতে থাকে। পরিশেষে অহংকারী ও উদ্ধতদের মধ্যে তার নাম লিখা হয়, তারপর সে অহংকারী ও উদ্ধত লোকদের বিপদে পতিত হয়।
[তিরমিযি) হাদীসটি যঈফ। সিলসিলাহ যয়ীফাহ ১৯১৪নং) হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস
পরিচ্ছদঃ ৭৩ -সচ্চরিত্রতার মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অর্থাৎ “তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।” (সূরা ক্বালাম ৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ “সেই ধর্মভীরুদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৪ আয়াত)
৬২৬
আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ সব মানুষের চাইতে বেশি সুন্দর চরিত্রের ছিলেন।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬২০৩, ৬১২৯, মুসলিম ২১৫০, তিরমিজী ৩৩৩, ১৯৬৯, আবু দাঊদ ৬৫৮, ৪৯৬৯, ইবনু মাজাহ ৩৭২০, ৩৭৪০, আহমাদ ১১৭২, ১১৭৮৯, ১২২১৫, ১২৩৪২, ১২৪৩৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬২৭. সাবেক রাবী হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর করতল অপেক্ষা অধিকতর কোমল কোনো পুরু বা পাতলা রেশম আমি স্পর্শ করিনি। আর তাঁর শরীরের সুগন্ধ অপেক্ষা অধিকতর সুগন্ধ কোন বস্তু আমি কখনো শুঁকিনি। আর আমি দশ বছর পর্যন্ত রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর খিদমত করেছি। তিনি কখনোও আমার জন্য ‘উঃ’ শব্দ বলেননি। কোন কাজ করে বসলে তিনি এ কথা জিজ্ঞেস করেননি যে, ‘তুমি এ কাজ কেন করলে?’ এবং কোন কাজ না করলে তিনি বলেননি যে, ‘তা কেন করলে না?’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৫৪৭, ৩৫৪৮, ৩৫৫০, ৩৫৬১, ৩৫৮৯৪, ৫৮৯৫, ৫৯০০, ৫৯০৩, ৫৯০৪, ৫৯০৫, ৫৯০৬, ৫৯১২, ৫৯০৭, মুসলিম ২৩৩৮, ২৩৪১, ২৩৪৭, তিরমিজী ১৮৫৪, ৩৬২৩, নাসাঈ ৫০৫৩, ৫০৮৬, ৫০৮৭, ৫২৩৪, ৫২৩৫, আবু দাঊদ ৪১৮৫, ৪১৮৬, ইবনু মাজাহ ৩৬২৯, ৩৬৩৪, আহমাদ ১২৩৭৩, ১১৫৫৪, ১১৫৭৭, ১১৬৪২, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৩৪, ১৭০৭, দারেমী ৬১৬২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬২৮. সা‘ব ইবনে জাস্সামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে (শিকার করা) এক জংলী গাধা উপঢৌকন দিলাম। কিন্তু তিনি তা আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর তিনি আমার চেহারায় (বিষণ্ণতার চিহ্ন) দেখে বললেন, ‘‘আমরা ইহরামের অবস্থায় আছি, তাই আমরা এটি তোমাকে ফিরিয়ে দিলাম।’’ (বুখারী ও মুসলিম) (যেহেতু ইহরাম অবস্থায় শিকার করা ও তার গোশ্ত খাওয়া নিষিদ্ধ।)
[সহীহুল বুখারী শরীফ ১৮২৫, ২৫৭৩, ২৫৯৬, মুসলিম ১১৯৩, ১১৯৪, তিরমিজী ৮৪৯, নাসাঈ ২৮১৯, ২৮২০, ২৮২৩, ইবনু মাজাহ ৩০৯০, আহমাদ ১৫৯৮৭, ১৫৯৮৮, ১৬২২১, ১৬২৩৫, ২৭৮১২, মুওয়াত্তা মালিক ৭৯৩, দারেমী ১৮২৮, ১৮৩০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬২৯. নাওয়াস ইবনে সাম‘আন রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে পুণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, ‘‘পুণ্য হল সচ্চরিত্রতার নাম। আর পাপ হল তাই, যা তোমার অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং তা লোকে জেনে ফেলুক এ কথা তুমি অপছন্দ কর।’’
[মুসলিম ২৫৫৩, তিরমিজী ২৩৮৯, আহমাদ ১৭১৭৯, দারেমী ২৭৮৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৩০. আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল সাঃআঃ (প্রকৃতিগতভাবে কথা ও কাজে) অশ্লীল ছিলেন না এবং (ইচ্ছাকৃতভাবেও) অশ্লীল ছিলেন না। আর তিনি বলতেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম, যে তোমাদের মধ্যে সুন্দরতম চরিত্রের অধিকারী।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৭৫৮, ৩৫৫৯, ৩৭৬০, ৩৮০৬, ৩৮০৮, ৪৯৯৯, ৬০২৯, ৬০৩৫, মুসলিম ২৩২১, ২৪৬৪, তিরমিজী ১৯৭৫, ৩৮১০, আহমাদ ৫৪৬৮, ৬৬৯৬, ২৭৬৭০, ৬৭৭৪, ৬৭৯৮, ৬৯৯৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৩১. আবু দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘কিয়ামতের দিন (নেকী) ওজন করার দাঁড়ি-পাল্লায় সচ্চরিত্রতার চেয়ে কোনো বস্তুই অধিক ভারী হবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীল ও চোয়াড়কে অপছন্দ করেন।’’ (তিরমিজী, হাসান সূত্রে)
[তিরমিজী ২০০২, আবু দাঊদ ৪৭৯৯, আহমাদ ২৬৯৭১, ২৬৯৮৪, ২৭০০৫) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৬৩২. আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, ‘কোন্ আমল মানুষকে বেশি জান্নাতে নিয়ে যাবে?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহভীতি ও সচ্চরিত্র।’’ আর তাঁকে (এটাও) জিজ্ঞাসা করা হল যে, ‘কোন্ আমল মানুষকে বেশি জাহান্নামে নিয়ে যাবে?’ তিনি বললেন, ‘‘মুখ ও যৌনাঙ্গ (অর্থাৎ উভয় দ্বারা সংঘটিত পাপ)।’’ (তিরমিজী হাসান সহীহ সূত্রে)
[তিরমিজী ২০০৪, ইবনু মাজাহ ৪২৪৬, আহমাদ ৭৮৪৭, ৮৮৫২, ৯৪০৩) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৬৩৩. সাবেক রাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মু’মিনদের মধ্যে সে ব্যক্তি পূর্ণ মু’মিন, যে তাদের মধ্যে চরিত্রের দিক দিয়ে সুন্দরতম। আর তোমাদের উত্তম ব্যক্তি তারা, যারা তাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম।’’ (তিরমিজী হাসান সহীহ সূত্রে)
[তিরমিজী ১১৬২, আহমাদ ৭৩৫৪, ৯৭৫৬, ১০৪৩৬, দারেমী ২৭৯২)হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৬৩৪. আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছি, ‘‘অবশ্যই মু’মিন তার সদাচারিতার কারণে দিনে (নফল) রোযাদার এবং রাতে (নফল) ইবাদতকারীর মর্যাদা পেয়ে থাকে।’’
[আবু দাঊদ ৪৭৯৮, আহমাদ ২৩৮৩৪, ২৪০৭৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৩৫.আবু উমামাহ বাহেলী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের শেষ সীমায় একটি ঘর দেওয়ার জন্য জামিন হচ্ছি, যে সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও কলহ-বিবাদ বর্জন করে। সেই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে উপহাসছলেও মিথ্যা বলা বর্জন করে। আর সেই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যার চরিত্র সুন্দর।’’
[আবু দাঊদ ৪৮০০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৩৬. জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে আমার প্রিয়তম এবং কিয়ামতের দিন অবস্থানে আমার নিকটতম ব্যক্তিদের কিছু সেই লোক হবে যারা তোমাদের মধ্যে চরিত্রে শ্রেষ্ঠতম। আর তোমাদের মধ্যে আমার নিকট ঘৃণ্যতম এবং কিয়ামতের দিন অবস্থানে আমার নিকট থেকে দূরতম হবে তারা; যারা অনর্থক অত্যধিক আবোল-তাবোল বলে ও বাজে বকে এমন বাচাল ও বখাটে লোক; আলস্যভরে বা কায়দা করে টেনে টেনে কথা বলে। আর অনুরূপ অহংকারীরা।’’
[তিরমিজী ২০১৮) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
পরিচ্ছদঃ ৭৪ -সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱلۡكَٰظِمِينَ ٱلۡغَيۡظَ وَٱلۡعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ﴾ [ال عمران: ١٣٤]
অর্থাৎ “(সেই ধর্মভীরুদের জন্য বেহেশত প্রস্তুত রাখা হয়েছে যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে,) ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৪ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ ١٩٩ ﴾ [الاعراف: ١٩٩]
অর্থাৎ “তুমি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল।” (সূরা আ’রাফ ১৯৯ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلَا تَسۡتَوِي ٱلۡحَسَنَةُ وَلَا ٱلسَّيِّئَةُۚ ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ فَإِذَا ٱلَّذِي بَيۡنَكَ وَبَيۡنَهُۥ عَدَٰوَةٞ كَأَنَّهُۥ وَلِيٌّ حَمِيمٞ ٣٤ وَمَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ٱلَّذِينَ صَبَرُواْ وَمَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٖ ٣٥ ﴾ [فصلت: ٣٤، ٣٥]
অর্থাৎ “ভাল ও মন্দ সমান হইতে পারে না। উৎকৃষ্ট দ্বারা মন্দ প্রতিহত কর; তাহলে যাদের সাথে তোমার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। এ চরিত্রের অধিকারী কেবল তারাই হয় যারা ধৈর্যশীল, এ চরিত্রের অধিকারী তারাই হয়, যারা মহাভাগ্যবান। যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৩৪-৩৬ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلَمَن صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَٰلِكَ لَمِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ ٤٣ ﴾ [الشورا: ٤٣]
অর্থাৎ “অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।” (সূরা শূরা ৪৩ আয়াত)
৬৩৭. ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আশাজ্জ্ আব্দুল কায়েসকে বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় তোমার মধ্যে এমন দু’টি স্বভাব রয়েছে যা আল্লাহ পছন্দ করেন; সহনশীলতা ও চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করা।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৩, মুসলিম ১৭, তিরমিজী ১৫৯৯, ২৬১১, নাসাঈ ৫০৩১, ৫৫৪৮, ৫৬৪৩, ৫৬৯২, আবু দাঊদ ৩৬৯০, ৩৬৯২, ৩৬৯৬, ৪৬৭৭, আহমাদ ২০১০, ২৪৭২, ২৬৪৫, ২৭৬৪, ৩১৫৬, ৩৩৯৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৩৮. আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা কোমল; তিনি প্রত্যেকটি ব্যাপারে কোমলতা ও নম্রতাকে ভালবাসেন।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৯২৭, ২৯৩৫, ৬০২৪, ৬০৩০, ৬২৫৬, ৬৩৯৫, ৬৪০১, মুসলিম ২১৬৫, তিরমিজী ২৭০১, ইবনু মাজাহ ৩৬৯৮, আহমাদ ২৩৫৭০, ২৪০৩২, ২৪২৩০, ২৪৫০৮, ২৫০১৫, ২৫৩৯৩, দারেমী ২৭৯৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৩৯. উক্ত বর্ণনাকারিণী হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ নম্র, তিনি নম্রতাকে ভালবাসেন। তিনি নম্রতার উপরে যা দেন তা তিনি কঠোরতা এবং অন্য কোন জিনিসের উপর দেন না।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৯২৭, মুসলিম ২৫৯৩, তিরমিজী ২৭০১, আহমাদ ২৩৫৭০, ২৪০৩২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৪০. সাবেক রাবী হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘নম্রতা যে জিনিসেই থাকে, তাকে তা সুন্দর বানিয়ে দেয় এবং তা যে জিনিস থেকেই বের করে নেওয়া হয়, তাকে তা অসুন্দর বানিয়ে দেয়।’’
[মুসলিম ২৫৯৪, আবু দাঊদ ২৪৭৮, ৪৮০৮, আহমাদ ২৩৭৮৬, ২৪২৮৭, ২৪৪১৭৪, ২৪৮৫৮, ২৫১৮১, ২৫৩৩৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৪১. আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
এক বেদুঈন মসজিদের ভিতরে প্রস্রাব করে দিল। সুতরাং লোকেরা তাকে ধমক দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল। নবী সাঃআঃ বললেন, ‘‘ওকে ছেড়ে দাও এবং প্রস্রাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কেননা তোমাদেরকে সহজ নীতি অবলম্বন করার জন্য পাঠানো হয়েছে, কঠোর নীতি অবলম্বন করার জন্য পাঠানো হয়নি।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২২০, ৬১২৮, তিরমিজী ১৪৭, নাসাঈ ৫৬, ৩৩০, আবু দাঊদ ৩৮০, ইবনু মাজাহ ৫২৯, আহমাদ ৭২১৪, ৭৭৪০, ১০১৫৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৪২. আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমরা সহজ কর, কঠিন করো না এবং (লোকদেরকে) সুসংবাদ দাও। তাদের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি করো না।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৯, ৬১২৫, মুসলিম ১৭৩৪, আহমাদ ১১৯২৪, ১২৭৬৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৪৩. জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছি, ‘‘যাকে নম্রতা থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাকে সমস্ত মঙ্গল থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া হয়।’’
[মুসলিম ২৫৯২, আবু দাঊদ ৪৮০৯, ইবনু মাজাহ ৩৬৮৭, আহমাদ ২৭৮২৯, ১৮৭৬৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৪৪. আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নবী সাঃআঃকে বলল, ‘আপনি আমাকে কিছু অসিয়ত করুন!’ তিনি সাঃআঃ বললেন, ‘‘তুমি রাগান্বিত হয়ো না।’’ সে ব্যক্তি এ কথাটি কয়েকবার বলল। তিনি (প্রত্যেক বারেই একই কথা) বললেন, ‘‘তুমি রাগান্বিত হয়ো না।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬১১৬, তিরমিজী ২০২০, আহমাদ ২৭৩১১, ৯৬৮২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৪৫. আবু ইয়া’লা শাদ্দাদ ইবনে আওস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ প্রতিটি কাজকে উত্তমরূপে (অথবা অনুগ্রহের সাথে) সম্পাদন করাটাকে ফরয করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা যখন (কাউকে) হত্যা করিবে, তখন ভালভাবে হত্যা করো এবং যখন (পশু) জবাই করিবে, তখন ভালভালে জবাই করো। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, সে যেন নিজ ছুরি ধারাল করে নেয় এবং যবেহযোগ্য পশুকে আরাম দেয়।’’ (অর্থাৎ জবাই-এর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে।)
[মুসলিম ১৯৫৫, তিরমিজী ১৪০৯, নাসাঈ ৪৪০৫, ৪৪১১, ৪৪১২, ৪৪১৩, ৪৪১৪, আবু দাঊদ ২৮১৫, ইবনু মাজাহ ৩১৭০, আহমাদ ১৬৬৬৪, ১৬৬৭৯, ১৫৬৮৯, দারেমী ১৯৭০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৪৬. আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ
‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে যখনই দু’টি কাজের মধ্যে স্বাধীনতা দেওয়া হত, তখনই তিনি সে দু’টির মধ্যে সহজ কাজটি গ্রহণ করতেন; যদি সে কাজটি গর্হিত না হত। কিন্তু তা গর্হিত কাজ হলে তিনি তা থেকে সকলের চেয়ে বেশি দূরে থাকতেন। আর রসুলুল্লাহ সাঃআঃ নিজের জন্য কখনই কোন বিষয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। কিন্তু (কেউ) আল্লাহর হারামকৃত কাজ করে ফেললে তিনি কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য প্রতিশোধ নিতেন।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৫৬০, ৬১২৬, ৬৭৮৬, ৬৮৫৩, মুসলিম ২৩২৭, আবু দাঊদ ৪৭৮৫, আহমাদ ২৩৫১৪, ২৪০২৮, ২৪২৯৯, ২৪৩০৯, ২৪৩২৫, ২৪৭৬০, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৭১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৪৭. ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আমি কি তোমাদেরকে সে সমস্ত লোক সম্পর্কে বলব না, যারা জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম অথবা যাদের জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম? এ (আগুন) প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম হবে, যে মানুষের নিকটবর্তী, নম্র, সহজ ও সরল।’’ (তিরমিজী, হাসান সূত্রে)
[তিরমিজী ২৪৮৮, আহমাদ ৩৯২৮) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
পরিচ্ছদঃ ৭৫ -মার্জনা করা এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চলার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অর্থাৎ “তুমি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল।” (সূরা আ’রাফ ১৯৯ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
অর্থাৎ “তুমি পরম সৌজন্যের সাথে তাদেরকে ক্ষমা কর।” (সূরা হিজ্র ৮৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ “তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-ত্রুটি মার্জনা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিন?” (সূরা নূর ২২ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অর্থাৎ “(সেই ধর্মভীরুদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে,) ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৪ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
অর্থাৎ “অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।” (সূরা শূরা ৪৩ আয়াত)
৬৪৮. আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি একদা নবী সাঃআঃকে বললেন, ‘আপনার উপর কি উহুদের দিনের চেয়েও কঠিন দিন এসেছে?’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমার কওম থেকে বহু কষ্ট পেয়েছি এবং সবচেয়ে বেশি কষ্ট আক্বাবার দিন পেয়েছি, যেদিন আমি নিজেকে ইবনে আব্দে ইয়ালীল ইবনে আব্দে কুলাল (ত্বায়েফের এক বড় সর্দার) এর উপর (ইসলামের দিকে আহবান করার জন্য) পেশ করেছিলাম। সে আমার দাওয়াত গ্রহণ করল না। সুতরাং আমি চিন্তিত হয়ে চলতে শুরু করলাম। তারপর ‘ক্বারনুস সা‘আলিব’ (বর্তমানে সাইল কাবীর) নামক স্থানে পৌঁছলে সেখানে কিছু স্বস্তি অনুভব করলাম। আমি (আকাশের দিকে) মাথা উঠিয়ে দেখতে পেলাম যে, একটা মেঘখন্ড আমার উপর ছায়া করে আছে। অতঃপর গভীর দৃষ্টিতে দেখলাম, তাতে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম রয়েছেন। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, ‘আপনার কওম আপনাকে যে কথা বলেছে এবং তারা আপনাকে যে জবাব দিয়েছে, তা সবই মহান আল্লাহ শুনেছেন। অতঃপর তিনি আপনার নিকট পর্বতমালার ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন, যেন আপনি তাঁকে তাদের (ত্বায়েফবাসীদের) ব্যাপারে যা ইচ্ছা আদেশ দেন।’ অতঃপর পর্বতমালার ফেরেশতা আমাকে আওয়াজ দিলেন এবং আমাকে সালাম দিয়ে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনার কওম আপনাকে যা বলেছে, তা (সবই) মহান আল্লাহ শুনেছেন। আমি হচ্ছি পর্বতমালার ফেরেশতা। আমার প্রভু আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন, যেন আপনি আমাকে তাদের ব্যাপারে (কোন) নির্দেশ দেন। সুতরাং আপনি কী চান? আপনি চাইলে, আমি (মক্কার) বড় বড় পাহাড় দু’টিকে তাদের উপর চাপিয়ে দেব।’ (এ কথা শুনে) নবী সাঃআঃ বললেন, ‘‘(এমন কাজ করিবেন না) বরং আমি আশা করছি যে, মহান আল্লাহ তাদের পৃষ্ঠদেশ থেকে এমন লোকের আবির্ভাব ঘটাবেন, যারা এক আল্লাহর উপাসনা করিবে এবং তাঁর সাথে কোন জিনিসকে শরীক করিবে না।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩২৩১, ৭৩৮৯, মুসলিম ১৭৯৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৪৯. উক্ত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ব্যতীত রসুলুল্লাহ সাঃআঃ কখনো কাউকে স্বহস্তে মারেননি, না কোন স্ত্রীকে না কোন দাস-দাসীকে। কারো দিক থেকে তিনি কোন কষ্ট পেলে কষ্টদাতার নিকট থেকে প্রতিশোধ নেননি। হ্যাঁ, যদি আল্লাহর হারামকৃত কোন জিনিস লংঘন করা হত (অর্থাৎ কেউ চুরি, ব্যভিচার ইত্যাদি কাজ করে ফেলত), তাহলে আল্লাহর জন্যই তিনি প্রতিশোধ নিতেন (শাস্তি দিতেন)।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৫৬০, ৬১২৬, ৬৭৮৬, ৬৮৫৩, মুসলিম ২৩২৭, ২৩২৮, আবু দাঊদ ৪৭৮৫, ৪৭৮৬, ইবনু মাজাহ ১৯৮৪, আহমাদ ২৩৫১৪, ২৪০২৮, ২৪২৯৯, ২৪৩০৯, ২৪৩২৫, ২৫৭৩০, ২৭৬৫৮, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৭১, দারেমী ২২১৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৫০. আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর সাথে পথ চলছিলাম। সে সময় তাঁর উপর মোটা পেড়ে একখানি নাজরানী চাদর ছিল। অতঃপর পথে এক বেদুঈনের সঙ্গে দেখা হল। সে তাঁর চাদর ধরে খুব জোরে টান দিল। আমি নবী সাঃআঃ এর কাঁধের এক পাশে দেখলাম যে, খুব জোরে টানার কারণে চাদরের পাড়ের দাগ পড়ে গেছে। পুনরায় সে বলল, ‘ওহে মুহাম্মাদ! তোমার নিকট আল্লাহর যে মাল আছে, তা থেকে আমাকে দেওয়ার আদেশ কর।’ তিনি তার দিকে মুখ ফিরিয়ে হাসলেন। অতঃপর তাকে (কিছু মাল) দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩১৪৯, ৫৮০৯, ৬০৮৮, মুসলিম ১০৫৭, ইবনু মাজাহ ৩৫৫৩, আহমাদ ১২১৩৯, ১২৭৮২, ১২৯২৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৫১. ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে নবীদের মধ্যে এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করতে দেখছি, তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে রক্তাক্ত করে দিয়েছে, আর তিনি তাঁর চেহারা থেকে রক্ত মুছছেন এবং বলছেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা করে দাও। কেননা তারা অজ্ঞ।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৪৭৭, ৬৯২৯, মুসলিম ১৭৯২, ইবনু মাজাহ ৪০২৫, আহমাদ ৩৬০০, ৪০৪৭, ৪০৯৬, ৪১৯১, ৪৩১৯, ৪৩৫৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৫২. আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘কুশ্তিগীর বীর সে নয়, যে প্রতিন্দ্বীকে চিৎপাত করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে বীর সেই, যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬১১৪, মুসলিম ২৬০৯, আহমাদ ৭১৭৮, ৭৫৮৪, ১০৩২৪, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৮১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ৭৬ -কষ্ট সহ্য করার মাহাত্ম্য
অর্থাৎ “(সেই ধর্মভীরুদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে,) ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৪ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
অর্থাৎ “অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।” (সূরা শূরা ৪৩ আয়াত)
এ ব্যাপারে পূর্বোক্ত পরিচ্ছেদের হাদীসসমূহ উল্লেখ্য। আরো একটি হাদীসঃ
৬৫৩. আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার কিছু আত্মীয় আছে, আমি তাদের সাথে আত্মীয়তা বজায় রাখি, আর তারা ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, আর তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। তারা কষ্ট দিলে আমি সহ্য করি, আর তারা আমার সাথে মূর্খের আচরণ করে।’ তিনি বললেন, ‘‘যদি তা-ই হয়, তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই নিক্ষেপ করছ (অর্থাৎ এ কাজে তারা গোনাহগার হয়।) এবং তোমার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্যকারী থাকবে; যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এর উপর অবিচল থাকবে।’’
[মুসলিম ২৫৫৮, আহমাদ ৭৯৩২, ২৭৪৯৯, ৯৯১৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ৭৭ -শরীয়তের নির্দেশাবলী লংঘন করতে দেখলে ক্রোধান্বিত হওয়া এবং আল্লাহর দ্বীনের সংরক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ حُرُمَٰتِ ٱللَّهِ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥ عِندَ رَبِّهِۦۗ﴾ [الحج: ٣٠]
অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর নিষিদ্ধ (স্থান বা) বিধানসমূহের সম্মান করলে তার প্রতিপালকের নিকট তার জন্য এটাই উত্তম।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩০ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ إِن تَنصُرُواْ ٱللَّهَ يَنصُرۡكُمۡ وَيُثَبِّتۡ أَقۡدَامَكُمۡ ٧ ﴾ [محمد: ٧]
অর্থাৎ “যদি তোমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্য কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করিবেন, এবং তোমাদের পা দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত রাখবেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ৭ আয়াত)
৬৫৪. আবু মাসঊদ উক্বাহ ইবনে আমর বাদরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নবী সাঃআঃ এর নিকট এসে বলল, ‘অমুক ব্যক্তি লম্বা নামায পড়ায়, তার জন্য আমি ফজরের নামায থেকে পিছনে থাকি।’ অতঃপর আমি নবী সাঃআঃকে কোন ভাষণে সেদিনকার থেকে বেশী রাগান্বিত হইতে দেখিনি। তিনি বললেন, ‘‘হে লোক সকল! তোমাদের মধ্যে কিছু লোক লোকদের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি করছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ লোকদের ইমামতি করিবে, সে যেন সংক্ষেপে নামায পড়ায়। কারণ তার পিছনে বৃদ্ধ, শিশু এবং এমনও লোক রয়েছে যার কোন প্রয়োজন আছে।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৯০, ৭০২, ৭০৪, ৬১১০, ৭১৫৯, মুসলিম ৪৬৬, ইবনু মাজাহ ৯৪৮, আহমাদ ২৭৪৪০, ১৬৬১৭, ২১৮৩৯, দারেমী ১২৫৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৫৫. আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ
একদা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ কোন এক সফর থেকে (বাড়ী) ফিরলেন। সে সময় আমি ঘরের সামনে তাকে একটি পর্দা ঝুলিয়ে রেখেছিলাম, যাতে অনেক ছবি ছিল। অতঃপর যখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তা দেখলেন তখন ছিঁড়ে ফেলে দিলেন। (রাগে) তাঁর চেহারা (লাল)বর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে আয়েশা! কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সর্বাধিক কঠিন শাস্তি তাদের হবে, যারা আল্লাহর সৃষ্ট জীবের মত আকৃতি (অঙ্কণ বা নির্মাণ) করে।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৯৫৪, ২৪৮, ২৫০, ২৬১, ২৬২, ২৬৩, ২৭৩, ২৯৫, ২৯৬, ৩০১, ৩০২, ২০২৮, ২০২৯, ২০৩১, ২০৪৬, ২৪৭৯, ৫৯২৫, ৫৯৫৬, ৬১০৯, ৭৩৩৯, মুসলিম ৩১৬, ৩১৯, ৩২১, তিরমিজী ১৩২, ১৭৫৫, ২৪৬৮, নাসাঈ ২৩২, ২৩৩, ২৩৫, ২৪৩, ২৪৪, ২৪৭, ২৪৮, ২৭৫, আবু দাঊদ ৭৭, ২৪২, ২৪৩, ইবনু মাজাহ ৩৭৬, ৬৩২, ৬৩৬, আহমাদ ২৩৪৯৪, ম২৩৫৬১, ২৩৬৪০, মুওয়াত্তা মালিক ১০০, ১২৮, ১৩৫, ৬৯৩, দারেমী ৭৪৮, ১০৩৩, ১০৩৭, ১০৫৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৫৬. আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ
, যে মাখযূমী মহিলাটি চুরি করেছিল তার ব্যাপারটি কুরায়েশদেরকে চিন্তান্বিত করে তুলেছিল। সুতরাং তারা বলল, ‘এ ব্যাপারে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর প্রিয় উসামাহ বিন যায়দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু ছাড়া আর কে সাহস করতে পারবে?’ ফলে উসামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর সাথে কথা বললেন। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘আল্লাহর নির্ধারিত দণ্ডবিধির ব্যাপারে তুমি সুপারিশ করছ?’’ অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা এ জন্যই ধ্বংস হয়েছে যে, তাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের মধ্যে কোন দুর্বল ব্যক্তি চুরি করত, তখন তারা তাকে শাস্তি প্রদান করত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা চুরি করত, তাহলে আমি তারও হাত কেটে দিতাম।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৪৭৫, ২৬৪৮, ৩৭৩৩, ৪৩০৪, ৬৭৮৭, ৬৭৮৮, ৬৮০০, মুসলিম ১৬৮৮, তিরমিজী ১৪৩০, নাসাঈ ৪৮৯৫, ৪৮৯৭, ৪৮৯৮, ৪৮১৯, ৪৯০০, ৪৯০১, ৪৯০২, ৪৯০৩, আবু দাঊদ ৪৩৭৩, ইবনু মাজাহ ২৫৪৭, আহমাদ ২২৯৬৮, ২৪৭৬৯, দারেমী ২৩০২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৬৫৭. আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ কিবলার (দিকের দেওয়ালে) থুথু দেখতে পেলেন এটা তাঁর প্রতি খুব ভারী মনে হল; এমনকি তাঁর চেহারায় সে চিহ্ন দেখা গেল। ফলে দাঁড়ালেন এবং তিনি তা নিজ হাত দ্বারা ঘষে তুলে ফেললেন। তারপর বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে কানে কানে (ফিসফিস করে কথা) বলে। আর তার প্রতিপালক তার ও কেবলার মধ্যস্থলে থাকেন। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন কেবলার দিকে থুথু না ফেলে; বরং তার বামে অথবা পদতলে ফেলে। অতঃপর তিনি তাঁর চাদরের এক প্রান্ত ধরে তাতে থুথু নিক্ষেপ করলেন। তারপর তিনি তার এক অংশকে আর এক অংশের সাথে রগড়ে দিয়ে বললেন, কিংবা এইরূপ করে।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৪০৫, ২৪১, ৪১২, ৪১৩, ৪১৭, ৫৩১, ৫৩২, ৮২২, ১২১৪, মুসলিম ৪৯৩, নাসাঈ ৩০৮, ৭২৮, আবু দাঊদ ৪৬০, ইবনু মাজাহ ৭৬২, ২০২৪, আহমাদ ১১৬৫১, ১২৩৯৮, ১২৫৪৭, ১২৫৭৯, ১২৬৫৩, ১২৮০৪, ১৩৪২৪, ১৩৪৭৭, ১৩৫৩৬, ১৩৬৮৫, দারেমী ৪১৩৯৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply