তাওবাহ, ইস্তিগফার পাপ করা ও অপবাদ দেয়া

তাওবাহ, ইস্তিগফার পাপ করা ও অপবাদ দেয়া

হত্যাকারীর তাওবাহ গ্রহণযোগ্য হওয়ার বর্ণনা; যদিও বহু হত্যা করে থাকে >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

১. অধ্যায়ঃ তাওবার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও তার মাধ্যমে মুক্তি লাভ করা
২. অধ্যায়ঃ ইস্তিগ্‌ফার ও তাওবার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হওয়া প্রসঙ্গে
৩. অধ্যায়ঃ সার্বক্ষণিক আল্লাহর যিকর ও পরকালের বিষয়ে চিন্তা করা ও আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থাকা এবং কোন কোন সময় তা ছেড়ে দেয়া ও দুনিয়াবী কাজে লিপ্ত থাকা জায়িয
৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার রহ্‌মাতের ব্যাপকতা যা তার গোস্বাকে অতিক্রম করেছে
৫. অধ্যায়ঃ বার বার পাপ করা ও তাওবাহ্‌ করার কারণেও তাওবাহ্‌ গৃহীত হওয়ার বর্ণনা
৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর আত্মমর্যাদা এবং অশ্লীল কাজ হারাম হওয়ার বর্ণনা
৭. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণী : “নিশ্চয়ই সৎকর্ম গুনাহসমুহকে দূর করে দেয় ।” [সূরাহ্ হূদ ১১ : ১১৪]
৮. অধ্যায়ঃ হত্যাকারীর তাওবাহ্‌ গ্রহণযোগ্য হওয়ার বর্ণনা; যদিও বহু হত্যা করে থাকে
৯. অধ্যায়ঃ কাব ইবনি মালিক [রাদি.] ও তাহাঁর দু সাথীর তাওবার বিবরণ
১০. অধ্যায়ঃ মিথ্যা অপবাদ দেয়া এবং অপবাদ রটনাকারীর তাওবাহ্‌ গৃহীত হওয়া
১১. অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মর্যাদা সন্দেহমুক্ত হওয়া

১. অধ্যায়ঃ তাওবার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও তার মাধ্যমে মুক্তি লাভ করা

৬৮৪৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সানাদে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহ রব্বুল আলামীন ইরশাদ করিয়াছেন : আমার উপর বান্দার ধারণা অনুযায়ী আমি তার সাথে আছি। সে যেখানেই আমাকে স্মরণ করে আমি তার সাথে আছি। আল্লাহর কসম, শূণ্য মাঠে তোমাদের কেউ হারানো প্রাণী পাওয়ার পর যে আনন্দিত হয় আল্লাহ তাআলা বান্দার তাওবার কারণে এর চেয়েও বেশি আনন্দিত হন। যদি কেউ একবিঘত সমান আমার দিকে অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে একহাত অগ্রসর হই। যদি কেউ একহাত সমান আমার প্রতি অগ্রসর হয়, তাহলে আমি একগজ সমান তার প্রতি অগ্রসর হই। যদি কেউ আমার দিকে পায়ে হেঁটে আসে তবে আমি তার দিকে দৌড়ে আসি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০০, ইসলামিক সেন্টার-৬৭৫৫]

৬৮৪৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কোন লোক হারানো প্রাণী পাওয়ার পর যে সমান আনন্দিত হয়, তোমাদের তাওবার কারণে আল্লাহ তাআলা এর চেয়েও বেশি খুশী হন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০১, ইসলামিক সেন্টার-৬৭৫৬]

৬৮৪৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সানাদে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৫৭]

৬৮৪৮. হারিস ইবনি সুওয়াইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ [রাদি.] অসুস্থ ছিলেন। তাহাঁর সেবা করার জন্য কোন এক সময় আমি তাহাঁর নিকট প্রবেশ করলাম। তখন তিনি আমাকে দুটি হাদীস বর্ণনা করিলেন। একটি নিজের পক্ষ হইতে এবং অন্যটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনেছি যে, আল্লাহ তাআলা তাহাঁর মুমিন বান্দার তাওবার কারণে ঐ ব্যক্তির চেয়েও অধিক আনন্দিত হন, যে লোক ছায়া-পানিহীন আশঙ্কাপূর্ণ বিজন মাঠে ঘুমিয়ে পড়ে এবং তার সাথে থাকে খাদ্য পানীয় সহ একটি সওয়ারী। এরপর ঘুম হইতে সজাগ হয়ে দেখে যে, সওয়ারী কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। তারপর সে সেটি খুঁজতে খুঁজতে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ল এবং বলে, আমি আমার পূর্বের জায়গায় গিয়ে চিরনিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে মারা যাব। [এ কথা বলে] সে মৃত্যুর জন্য বাহুতে মাথা রাখল। কিছুক্ষণ পর জাগ্রত হয়ে সে দেখল, পানাহার সামগ্রী বহনকারী সওয়ারীটি তার কাছে। [সওয়ারী এবং পানাহার সামগ্রী পেয়ে] লোকটি যে পরিমাণ আনন্দিত হয়, মুমিন বান্দার তাওবার কারণে আল্লাহ তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৫৮]

৬৮৪৯. আবু বাকর ইবনি আবু শাইবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] উক্ত সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তবে তাহাঁর হাদীসে আছে, মরুভুমির সে ব্যক্তির চেয়েও বেশি আনন্দিত হন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৫৯]

৬৮৫০. উমারাহ্‌ ইবনি উমায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি হারিস ইবনি সুওয়াইদকে এ কথা বলিতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ আমার কাছে দুটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। একটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এবং অপরটি তার নিজের তরফ থেকে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাহাঁর মুমিন বান্দার তাওবার কারণে বেশি খুশী হন। জারীর-এর হাদীসের অবিকল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৬০]

৬৮৫১. সিমাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা নুমান ইবনি বাশীর [রাদি.] খুত্‌বাহ্‌ দিতে গিয়ে বলিলেন, আল্লাহ তাহাঁর বান্দার তাওবার কারণে ঐ লোক হইতেও বেশি আনন্দিত হন যে তার একটি উটের উপর সহায় সম্বল বহন করে সফরে বের হয়েছে। আর অবশেষে এক জনমানবহীন মাঠে উপস্থিত হয়। এমতাবস্থায় দুপুর হয়ে যায়। তখন সে নেমে বৃক্ষের তলায় বিশ্রাম করিতে থাকে। সে গভীর ঘুমে নিমগ্ন হয় এবং তার উটটি চলে যায়। সে সজাগ হয়ে ঐ টিলায় দৌড়ে গেল, অতঃপর সে কোন কিছু দেখিতে পেল না। তারপর সে অপর টিলায় দৌড়ে উঠল কিন্তু সেখানেও কোন কিছু দেখিতে পেল না। তারপর সে তৃতীয় এক টিলার উপরে উঠে, কিন্তু সেকানেও কোন কিছু দেখিতে পেল না। অবশেষে হতাশ হয়ে সে বিশ্রামাগারে ফিরে গিয়ে সেখানে এসে বসে থাকে। এমন সময় হঠাৎ হাঁটতে হাঁটতে উটটি তার কাছে চলে আসে। অমনি সে তার হাতে এর লাগাম চেপে ধরে। আল্লাহ তার মুমিন বান্দার তাওবার কারণে ঐ উট প্রাপ্ত লোকের চেয়েও বেশি খুশী হন।

বর্ণনাকারী সিমাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, শাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, নুমান এ হাদীসটি নবী [সাঃআঃ] হইতে মারফূ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে আমি [সিমাক] নুমান [রাদি.]-কে হাদীসটি মারফূভাবে বর্ণনা করিতে শুনিনি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৬১]

৬৮৫২. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এ সম্বন্ধে তোমরা কী বললে যে, এক লোক যার নিকট পানাহারের কোন কিছু নেই, এমন মরুভূমিতে উট চলে যায় এবং এর লাগাম মাটিতে টেনে চলতে থাকে, অথচ এর উপর রয়েছে সে লোকের পানাহারের সামগ্রী। তারপর সে তা খোঁজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর এহেন মুহূর্তে উক্ত সওয়ারী কোন বৃক্ষের তলা দিয়ে যাওয়ার সময় যদি এর লাগাম ঐ গাছের কাণ্ডের সাথে আটকে যায়, আর আটকানো অবস্থায় যদি সে লোকটি সেটি পেয়ে যায়, তাহলে এ লোক কি পরিমাণ খুশী হইবে? সহাবাগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! সে অত্যন্ত খুশী হইবে। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ স্বীয় বান্দার তাওবার কারণে সওয়ারী প্রাপ্ত ঐ লোকের থেকেও আল্লাহ তাআলা অনেক বেশি খুশী হন।

জাফার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, উবাইদুল্লাহ ইবনি ইয়াদ তাহাঁর পিতা হইতে আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৬২]

৬৮৫৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তাওবাহ্‌ করে তখন আল্লাহ ঐ লোকের চেয়েও বেশি আনন্দিত হন, যে মরুভূমিতে নিজ সওয়ারীর উপর আরোহিত ছিল। তারপর সাওয়ারীটি তার হইতে হারিয়ে যায়। আর তার উপর ছিল তার খাদ্য ও পানীয়। এরপর নিরাশ হয়ে সে একটি গাছের ছায়ায় এসে আরাম করে এবং তার উটটি সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় হঠাৎ উটটি তার কাছে এসে দাঁড়ায়। অমনিই সে তার লাগাম ধরে ফেলে। এরপর সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার রব। আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে ভুল করে ফেলেছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৬৩]

৬৮৫৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দার তাওবার কারণে তোমাদের ঐ লোকের চেয়েও বেশি খুশী হন, যে সজাগ হয়ে তার ঐ উটটি ফিরে পায়, যা সে মরুভূমিতে হারিয়ে ফেলেছিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৬৪]

৬৮৫৫. আনাস [রাদি.]-এর সানাদে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৬৫]

২. অধ্যায়ঃ ইস্তিগফার ও তাওবার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হওয়া প্রসঙ্গে

৬৮৫৬. আইয়ূব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

যখন তাহাঁর মৃত্যু সমুপস্থিত তখন তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে শুনা একটি হাদীস আমি তোমাদের নিকট হইতে গোপন রেখেছিলাম। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনেছি যে, যদি তোমরা পাপ না করিতে তবে আল্লাহ তাআলা এমন মাখ্‌লূক বানাতেন যারা পাপ করতো এবং আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৬৬]

৬৮৫৭. আবু আইয়ূব আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি তোমাদের কোন পাপ না থাকতো যা আল্লাহ মাফ করে দেন, তবে অবশ্যই আল্লাহ এমন সম্প্রদায় বানাতেন যাদের পাপ হত এবং তিনি তা মাফ করে দিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৬৭]

৬৮৫৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে সত্তার হাতে আমার জীবন, আমি তাহাঁর কসম করে বলছি, তোমরা যদি পাপ না করিতে তবে অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে এমন সম্প্রদায় বানাতেন যারা পাপ করে ক্ষমা চাইতো এবং তিনি তাদের মাফ করে দিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৬৮]

৩. অধ্যায়ঃ সার্বক্ষণিক আল্লাহর যিকর ও পরকালের বিষয়ে চিন্তা করা ও আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থাকা এবং কোন কোন সময় তা ছেড়ে দেয়া ও দুনিয়াবী কাজে লিপ্ত থাকা জায়িয

৬৮৫৯. রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাতিব হান্‌যালাহ্‌ আল্‌ উসাইয়িদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আবু বাক্‌র সিদ্দীক [রাদি.] আমার সঙ্গে দেখা করিলেন এবং আমাকে প্রশ্ন করিলেন, হে হানযালাহ্‌! তুমি কেমন আছ? তিনি বলেন, জবাবে আমি বললাম, হানযালাহ্‌ তো মুনাফিক হয়ে গেছে। সে সময় তিনি বলিলেন, সুবহানাল্লাহ্‌ তুমি কি বলছ? হানযালাহ্‌ [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে থাকি, তিনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নামের কথা শুনিয়ে দেন, যেন আমরা উভয়টি চাক্ষুষ দেখছি। সুতরাং আমরা যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সন্নিকটে থেকে বের হয়ে আপনজন স্ত্রী-সন্তান এবং ধন-সম্পদের মধ্যে নিমগ্ন হয়ে যাই তখন আমরা এর অনেক বিষয় ভুলে যাই। আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমারও একই অবস্থা। নিশ্চয়ই আমরা এ বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎ করবো। তারপর আমি এবং আবু বকর [রাদি.] রওনা করলাম এবং এমনকি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে গেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! হানযালাহ্‌ মুনাফিক হয়ে গেছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তা কী? আমি বললাম, আমরা আপনার কাছে থাকি, আপনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নামের কথা মনে করিয়ে দেন, যেন আমরা তা  দেখিতে পাই। তারপর আমরা যখন আপনার নিকট হইতে বের হই এবং স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদের মধ্যে নিমগ্ন হই সে সময় আমরা এর অনেক বিষয় ভুলে যাই। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে সত্তার হাতে আমার জীবন আমি তাহাঁর কসম করে বলছি। আমার কাছে থাকাকালে তোমাদের যে অবস্থা হয়, যদি তোমরা সবসময় এ অবস্থায় অনড় থাকতে এবং সার্বক্ষণিক আল্লাহর যিকরে পড়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ফেরেশ্‌তাগণ তোমাদের বিছানায় ও রাস্তায় তোমাদের সাথে মুসাফাহা করত। কিন্তু হে হানযালাহ্‌! এক ঘণ্টা [আল্লাহর যিকরে] আর এক ঘন্টা [দুনিয়াবী কাজে ব্যয় করিবে] অর্থাৎ আস্তে আস্তে [চেষ্টা কর]। এ কথাটি তিনি [সাঃআঃ] তিনবার বলিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৬৯]

৬৮৬০. হানযালাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা এক সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে ছিলাম। তিনি আমাদেরকে ওয়ায করিলেন এবং জাহান্নামের কথা মনে করিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, তারপর আমি গৃহে আসলাম এবং সন্তান-সন্ততিদের সাথে খেল-তামাশা করলাম এবং স্ত্রীর সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করলাম। এরপর আমি বাড়ি থেকে রওনা করলাম। পথে আবু বকর [রাদি.]-এর সাথে দেখা করলাম। আমি তাহাঁর সাথে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করলাম। অতঃপর তিনি বলিলেন, আমিও তো এমনই করি, যেমন তুমি বললে। তারপর আমরা দুজনই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে দেখা করলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! হানযালাহ্‌ তো মুনাফিক হয়ে গেছে। তারপর তিনি বলিলেন, তা কী? তারপর আমি আমার সম্পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করলাম। এরপর আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, আমিও তো এমনই করি যেমন হানযালাহ্‌ করেছে। তিনি বলিলেন, হে হানযালাহ্‌! কিছু সময় আল্লাহর স্মরণের জন্য এবং কিছু সময় দুনিয়াবী কাজের জন্য। ওয়ায-নাসীহাতের মুহূর্তে তোমাদের মন যেমন থাকে, সবসময় যদি তা এ রকম থাকত তবে ফেরেশ্‌তাগণ অবশ্যই তোমাদের সাথে মুসাফাহা করত। এমনকি প্রকাশ্যে রাস্তায় তারা তোমাদের সালাম করত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৭০]

৬৮৬১. হান্‌যালাহ্‌ আত্‌ তামীমী আল উসাইয়িদী আল কাতিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে ছিলাম। তিনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নামের কথা মনে করিয়ে দিলেন। তারপর সুফ্‌ইয়ান [রাদি.] হাদীসটি পূর্বোক্ত হাদীসদ্বয়ের হুবহু বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৭১]

৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার রহ্‌মাতের ব্যাপকতা যা তার গোস্বাকে অতিক্রম করেছে

৬৮৬২। আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেন, যখন আল্লাহ তাআলা মাখলূক সৃষ্টি করিলেন তখন তিনি তাহাঁর কিতাবে লিপিবদ্ধ করিলেন এবং তা তাহাঁর নিকট আর্‌শের উপরে রয়েছে। [তিনি লিখেছেন] আমার গোস্বার উপর রহমাত বিজয়ী থাকিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৭২]

৬৮৬৩। আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সু্ত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমার গোস্বাকে আমার রহমাত অতিক্রম করেছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৭৩]

৬৮৬৪। আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহ যখন মাখলূক সৃষ্টি করিলেন তখন তিনি তাহাঁর কিতাবের মধ্যে নিজের কাছে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। [তাতে তিনি লিখে রেখেছেন] আমার গোস্বার উপর রহমাত বিজয়ী থাকিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৭৪]

৬৮৬৫। আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনেছি যে, আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রহ্‌মাতকে একশ ভাগ করে নিরানব্বই ভাগ নিজের কাছে আটকিয়ে রেখেছেন এবং একভাগ পৃথিবীতে অবতীর্ণ করিয়াছেন। রহ্‌মাতের এ অংশ হইতেই সৃষ্টজীব পরস্পর একে অন্যের প্রতি দয়া করে, এমনকি প্রাণী পর্যন্ত; যে স্বীয় ক্ষুরকে নিজ সন্তানাদির গায়ে লাগার ভয়ে তা তুলে নিয়ে থাকে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৭৫]

৬৮৬৬। আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা একশ ভাগ রহ্‌মাত সৃষ্টি করে একভাগ সৃষ্টির মধ্যে রেখে দিয়েছেন এবং নিরানব্বই ভাগ নিজের নিকট লুকায়িত রেখেছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৭৬]

৬৮৬৭। আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহর একশ ভাগ রহ্‌মাত আছে। তন্মধ্যে একভাগ রহ্‌মাত তিনি জিন, ইনসান, চুতষ্পদ জন্তু ও কীট-পতঙ্গের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। এ এক ভাগ রহ্‌মাতের কারণেই সৃষ্ট জীব পরস্পর একে অপরের প্রতি দয়া করে এবং এ এক ভাগ রাহ্‌মাতের মাধ্যমে বন্য পশু নিজ সন্তানের প্রতি দয়া ও অনুকম্পা প্রদর্শন করে। মহান আল্লাহ তাহাঁর একশ ভাগ রহ্‌মাতের নিরানব্বই ভাগ রহ্‌মাত নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। এর দ্বারা তিনি কিয়ামাতের দিন স্বীয় বান্দাদের প্রতি দয়া করবেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৭৭]

৬৮৬৮। সালমান আল ফারিসী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলার একশ ভাগ রহ্‌মাত আছে। তার মধ্যে একভাগ রহ্‌মাতের দ্বারাই সৃষ্ট জীব পরস্পর একে অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে। বাকী নিরানব্বই ভাগ রহ্‌মাত রাখা হয়েছে কিয়ামাত দিনের জন্য।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৭৮]

৬৮৬৯। মুতামির-এর পিতা হইতে বর্ণীতঃ

উপরোক্ত সূত্রে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৭৯]

৬৮৭০. সালমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আকাশমণ্ডলী ও জমিন সৃষ্টির সময়ে আল্লাহ তাআলা একশ রহ্‌মাত সৃষ্টি করিয়াছেন। প্রত্যেকটি রহ্‌মাত আকাশ ও জমিনের দূরত্বের সমপরিমাণ। এ একশ রহ্‌মাত হইতে একভাগ রহ্‌মাত দুনিয়ার জন্য নির্ধারণ করিয়াছেন। এর তাগিদেই মা তার সন্তানের প্রতি এতটুকু স্নেহপরায়ণা হয়ে থাকে এবং বন্য পশু-পাখি একে অপরের প্রতি অনুরক্ত হয়। যখন কিয়ামাত দিবস হইবে তখন আল্লাহ তাআলা এ রহমাত দ্বারা [একভাগকেও নিরানব্বই ভাগের সাথে মিলিয়ে একশ] পূর্ণ করবেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৭৯]

৬৮৭১. উমর ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক সময় কয়েকজন বন্দী রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট নিয়ে আসা হলো। বন্দীদের মধ্যে থেকে একজন নারী কেবলই অনুসন্ধানে রত ছিল। সে বন্দীদের মধ্যে কোন শিশুকে পাওয়া মাত্র তাকে কোলো নিয়ে পেটের সাথে জড়িয়ে ধরে তাকে দুগ্ধ পান করাত। এ দেখে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের প্রশ্ন করিলেন, এ মহিলাটি কি তার সন্তানদেরকে আগুনে ফেলতে রাজি হইবে? আমরা বললাম, না। আল্লাহর শপথ! সে কোন সময় তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করিতে পারবে না। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, সন্তানের উপর এ মহিলাটির দয়া হইতেও আল্লাহ বেশি দয়ালু।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৮০]

৬৮৭২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহর কাছে যে কি পরিমাণ শাস্তি রয়েছে, ঈমানদারগণ যদি তা জানত তবে কেউ তাহাঁর কাছে জান্নাতের প্রত্যাশা করত না। এমনিভাবে আল্লাহর কাছে যে পরিমাণ দয়া আছে, অবিশ্বাসীরা যদি তা জানত তবে কেউ তার জান্নাত থেকে নিরাশ হত না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৮১]

৬৮৭৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জনৈক লোক যে জীবনে কক্ষনো কোন প্রকার সাওয়াবের কাজ করেনি, যখন সে মারা যাবে তার পরিবার পরিজনকে ডেকে বলিল, মৃত্যুর পর তোমরা তাকে পুড়ে ফেলবে সেটার অর্ধেক স্থলভাগে বাতাসে উড়িয়ে দিবে এবং অর্ধেক পানিতে নিক্ষেপ করিবে। কারণ আল্লাহর কসম! আমাকে যদি আল্লাহ পুনঃ একত্রিত করিতে পারেন তাহলে তিনি আমাকে অবশ্যই এমন আযাব দিবেন, যা পৃথিবীর অন্য কাউকে কখনো দেননি। তারপর লোকটি যখন ইন্তিকাল করিল তখন তার পরিবারের লোকেরা তার নির্দেশ অনুযায়ী তদ্রূপ করিল। তখন আল্লাহ তাআলা স্থলভাগকে আদেশ দিলেন সে তার মধ্যস্থিত যা কিছু আছে [ছাই] একত্রিত করলো। এরপর পানিতে মিশ্রিত ভাগকে নির্দেশ দিলেন। সেও তার মধ্যস্থিত সব কিছু একত্রিত করে দিল। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে প্রশ্ন করিলেন, তুমি এমনটি কেন করলে? সে বলিল, হে আমার রব! আপনার ভয়ে। আপনি তো সর্বজ্ঞ। তখন আল্লাহ তাআলা সদয় হয়ে তাকে মাফ করে দিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৮২]

৬৮৭৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, এক লোক তার নিজের উপর সীমাহীন পাপ করেছে। এরপর যখন মৃত্যু সমুপস্থিত তখন সে তার সন্তান-সন্ততিদেরকে ওয়াসীয়াত করে বলিল, আমার ইন্তিকালের পর তোমরা আমাকে আগুনে পুড়িয়ে ছাইগুলোকে ভালোভাবে পিষবে। তারপর আমাকে সমুদ্রের মধ্যে বাতাসে ছেড়ে দিবে। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ যদি আমাকে পেয়ে যান, তবে নিশ্চিতই তিনি আমাকে এমন আযাব দিবেন, যা তিনি আর কাউকে দেননি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, সন্তানগণ তার সঙ্গে হুবহু তাই করিল। এরপর আল্লাহ তাআলা মাটিকে বলিলেন, তুমি তার যে ছাই ধারণ করছো তা একত্রিত করে দাও। ফলে সে সোজা হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। তখন আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, এ কর্ম করার কারণে কিসে তোমাকে উৎসাহিত করেছে? উত্তরে সে বলিল, [আরবী] অথবা [আরবী]–আপনার ভয়ে। এ কথার প্রেক্ষিতে আল্লাহ সদয় হয়ে তাকে মাফ করে দেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৮৩]

৬৮৭৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সূত্রে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, জনৈক মহিলা একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। সে বিড়ালটি বেঁধে রেখেছিল; অথচ তাকে কোন আহারও প্রদান করেনি এবং জমি থেকে কীট-পতঙ্গ বা ঘাসপাতা খাবার জন্য তাকে ছেড়েও দেয়নি। এমনিভাবে বিড়ালটির মৃত্যু হয়।

যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, উপরোল্লিখিত হাদীস দুটো এ কারণেই আলোচনা করা হয়েছে, যেন মানুষ আমল পরিত্যাগ করে আল্লাহর রহমাতের উপর ভরসা করে বসে না থাকে [পাপরাশিতে ডুবে না থাকে] এবং যেন মানুষ আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে [আযাবের ভয়ে] নিরাশ না হয়ে যায়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৮৩]

৬৮৭৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুলাহ [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনেছি যে, একজন গোলাম তার নিজের আত্মার প্রতি যুল্‌ম করেছিল অর্থাৎ সীমাহীন পাপ করেছিল। তারপর তিনি [আরবী] পর্যন্ত মামার-এর বর্ণিত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করিয়াছেন।

তবে বিড়ালের কাহিনী সম্পর্কিত মহিলার হাদীসটি বর্ণনা করেননি।

তবে যুবাইদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর হাদীসে রয়েছে, তারপর আল্লাহ তাআলা- যারা তার সর্বাঙ্গ গ্রাস করেছে তাদের বলিলেন, তার যে যে অংশে তোমরা খেয়ে ফেলেছো, তা সমন্বিত করে দাও।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৮৪]

৬৮৭৭. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করলে, [তিনি বলেছেন,] আগের যুগের এক লোক ছিল। আল্লাহ তাআলা তাকে অনেক সন্তান এবং অনেক প্রাচুর্য দিয়েছিলেন। সে তার সন্তান-সন্ততিদের বলিল, আমি যা তোমাদের আদেশ করব অবশ্যই তোমরা তা করিবে নচেৎ আমি অন্য কাউকে আমার ধন-সম্পদের উত্তরাধিকার করে দিব। আমি যখন মরে যাবো তখন তোমরা আমাকে আগুনে জ্বালিয়ে ফেলবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় যে, সে এও বলেছে যে, তারপর আমাকে পিষে বাতাসে উড়িয়ে দিবে। কারণ আল্লাহর কাছে আগে আমি কোন সাওয়াব পাঠাইনি। আল্লাহ তাআলা আমাকে সাজা দেয়ার উপর শক্তি রাখেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, এ বিষয়ে সে তার সন্তানদের থেকে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করিল। এরপর তারা তার পিতার ক্ষেত্রে তেমনি করিল। আমার রবের কসম! এরপর আল্লাহ তাআলা তাকে প্রশ্ন করিলেন, এ কর্ম করার বিষয়ে কিসে তোমাকে উৎসাহিত করেছে? সে বলিল, আপনার ভয়ে। এ কথা শুনে আল্লাহ তাকে আর কোন আযাব দেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৩০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৮৫]

৬৮৭৮. কাতাদাহ্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তারা সকলেই শুবার সানাদের ন্যয় উক্ত হাদীসটি শুবার হাদীসের অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন। শাইবান-এর হাদীসে رَاشَهُ اللَّهُ -এর স্থলে رَغَسَهُ -[আল্লাহ তাকে দান করিয়াছেন] বর্ণিত আছে।

আর আত তামিমির হাদিসের মধ্যেلَمْ أَبْتَهِرْ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرًا এর স্থলেلَمْ يَبْتَئِرْ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرًا বর্ণিত আছে। কাতাদাহ্ (রহঃ) এর ব্যাখ্যায় বলেন, সে আল্লাহর কাছে কোন বিষয়ই একত্রিত করেনি। শইবান এর হাদিসে আছে مَا ابْتَأَرَ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرًا আর আবূ আওয়ানার হাদিসে আছে مَا امْتَأَرَ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرًا বা অক্ষরের স্থলে মীম অক্ষর আছে।

(ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৩১, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৮৬)

৫. অধ্যায়ঃ বার বার পাপ করা ও তাওবাহ্‌ করার কারণেও তাওবাহ্‌ গৃহীত হওয়ার বর্ণনা

৬৮৭৯. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [সাঃআঃ] স্বীয় রব আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হইতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, জনৈক বান্দা পাপ করে বলিল, হে আমার রব! আমার পাপ মার্জনা করে দাও। তারপর আল্লাহ তাআলা বলিলেন, আমার বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে, যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে ধরেন। এ কথা বলার পর সে আবার পাপ করিল এবং বলিল, হে আমার রব। আমার পাপ ক্ষমা করে দাও। তারপর আল্লাহ তাআলা বলিলেন, আমার এক বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে শাস্তি দিতে পারেন। তারপর সে পুনরায় পাপ করে বলিল, হে আমার রব! আমার পাপ মাফ করে দাও। এ কথা শুনে আল্লাহ তাআলা পুনরায় বলেন, আমার বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন প্রভু আছে, যিনি বান্দার পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে পাকড়াও করেন। তারপর আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বান্দা! এখন যা ইচ্ছা তুমি আমল করো। আমি তোমার গুনাহ মাফ করে দিয়েছি। বর্ণনাকারী আবদুল আলা বলেন, “এখন যা ইচ্ছা তুমি আমল করো” কথাটি আল্লাহ তাআলা তৃতীয়বারের পর বলেছেন, না চতুর্থবারের পর বলেছেন, তা আমি জানি না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৩২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৮৭]

৬৮৮০. আবদুল আলা ইবনি হাম্মাদ আন্ নার্সী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উপরোক্ত সূত্রে অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৩২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৮৮]

৬৮৮১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এক লোক পাপ করিল এ মর্মে একটি হাদীস বর্ণনা করিতে শুনেছি। এরপর রাবী হাম্মাদ ইবনি সালামার অবিকল হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ হাদীসের মাঝে  أَذْنَبَ ذَنْبًا -কথাটি তিনবার বর্ণিত আছে এবং তৃতীয়বারের পর রয়েছে- আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। তাই এখন সে যা ইচ্ছা তা আমল করুক।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৩৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৮৯]

৬৮৮২. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেন, রাতে আল্লাহ তাআলা তার নিজ দয়ার হাত প্রসারিত করেন যেন দিবসের অপরাধী তার নিকট তাওবাহ্‌ করে এমনিভাবে দিনে তিনি তার নিজ হাত প্রশস্ত করেন যেন রাতের অপরাধী তার নিকট তাওবাহ্‌ করে। এমনিভাবে দৈনন্দিন চলতে থাকিবে পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৩৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৯০]

৬৮৮৩. শুবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

শুবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এ সূত্রে অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৩৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৯১]

৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর আত্মমর্যাদা এবং অশ্লীল কাজ হারাম হওয়ার বর্ণনা

৬৮৮৪. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহর তুলনায় আত্মপ্রশংসা বেশি পছন্দকারী কেউ নেই। এজন্যই তিনি নিজে নিজের প্রশংসা করিয়াছেন। এমনিভাবে আল্লাহর তুলনায় বেশি আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্নও কেউ নেই। এজন্যই প্রকাশ্য এবং গোপনীয় সকল প্রকার অশ্লীলতাকে তিনি হারাম ঘোষণা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৩৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৯২]

৬৮৮৫. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন আর কোন সত্তা নেই। এজন্যেই প্রকাশ্য-গোপনীয় সকল প্রকার অশ্লীলতাকে তিনি হারাম ঘোষণা করিয়াছেন এবং আল্লাহ তাআলা থেকে আত্মপ্রশংসা বেশি পছন্দকারীও আর কোন সত্তা নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৩৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৯৩]

৬৮৮৬. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন আর কেউ নেই। এ কারণেই প্রকাশ্য ও গোপনীয় সকল প্রকার অশ্লীলতাকে তিনি হারাম করে দিয়েছেন। এমনিভাবে আল্লাহ থেকে অধিক আত্মপ্রশংসা পছন্দকারীও কেউ নেই। এ কারণেই তিনি তাহাঁর স্বীয় সত্তার প্রশংসা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৩৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৯৪]

৬৮৮৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মপ্রশংসা পছন্দকারী কেউ নেই। এজন্যই তিনি তাহাঁর স্বীয় সত্তার প্রশংসা করিয়াছেন। এমনিভাবে আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্ম-মর্যাদাবোধ সম্পন্নও কোন লোক নেই। এজন্যই তিনি সকল প্রকার অশ্লীলতাকে হারাম করিয়াছেন। আল্লাহর চেয়ে বেশি পরিমাণে ওযর-আপত্তি গ্রহণকারীও আর কেউ নেই। এজন্যই তিনি কিতাব নাযিল করিয়াছেন এবং রসূল পাঠিয়েছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৩৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৯৫]

৬৮৮৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা স্বীয় আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করেন এবং মুমিনগণও স্বীয় আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করে। আল্লাহর আত্মমর্যাদায় আঘাত আসে যখন মুমিন আল্লাহ কর্তৃক হারাম কর্মে অগ্রসর হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৯৬]

৬৮৮৯. আসমা বিনতু আবু বকর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ বলিতে শুনেছি যে, আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন আর কেউ নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৯৬]

৬৮৯০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নবী [সাঃআঃ] থেকে হাজ্জাজের বর্ণনার অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। এ রিওয়ায়াতের মধ্যে আসমা [রাদি.]-এর কথা উল্লেখ নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৪১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৯৭]

৬৮৯১. আসমা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা হইতে বেশি আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন আর কেউ নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৪২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৯৮]

৬৮৯২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিন আত্মমর্যাদা হিফাযাত করে। আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৪৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৭৯৯]

৬৮৯৩. আলা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আলা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ সূ্ত্রে বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৩৪৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮০০]

৭. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণী : “নিশ্চয়ই সৎকর্ম গুনাহসমুহকে দূর করে দেয় ।” [সূরাহ্ হূদ ১১ : ১১৪]

৬৮৯৪. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

[তিনি বলেন,] এক লোক কোন মাহিলাকে চুম্বন করে। তারপর সে নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে এ বিষয়টি বর্ণনা করিল। রাবী বলেন, তখন আয়াত নাযিল হলোঃ

أَقِمِ الصَّلاَةَ طَرَفَىِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِينَ‏

“নামাজ প্রতিষ্ঠা করিবে দিনের দু প্রান্তে এবং রাতের কিয়দংশে। নিশ্চয়ই সৎকর্ম গুনাহসমূহকে দূর করে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে এটা তাদের জন্য এক উপদেশ”- [সুরা হূদ ১১ : ১১৪]। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর লোকটি বলিল, হে আল্লাহর রসূল! এ বিধান কি একমাত্র আমার জন্য? তিনি বলিলেন, আমার উম্মাতের যে কেউ এ আমল করিবে তার জন্যও [এ বিধান]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৪৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮০১]

৬৮৯৫. ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

জনৈক লোক নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিল, সে জনৈক মহিলাকে চুম্বন করেছে বা স্বীয় হাত দ্বারা ছুঁয়েছে কিংবা এ রকম কোন কিছু করেছে। এ বলে সে যেন এর কাফ্‌ফারার ব্যাপারে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট জানতে চাচ্ছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর আল্লাহ তাআলা উপরোক্ত আয়াত নাযিল করিলেন। অতঃপর তিনি ইয়াযীদের হাদীসের হুবহু বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৪৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮০২]

৬৮৯৬. সুলাইমান আত্ তাইমী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সানাদে উক্ত সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

জনৈক লোক যিনায় জড়িয়ে পড়া ব্যতীত এক মহিলার সঙ্গে কিছু অসৌজন্যমূলক আচরণ করিল। এরপর সে উমর ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-এর কাছে আসলো। উমর [রাদি.] তার এ কর্মটিকে মারাত্মক অন্যায় মনে করিলেন। অতঃপর সে আবু বকর [রাদি.]-এর নিকট আসলো। তিনিও কর্মটি কঠিন অপরাধ মনে করিলেন। পরিশেষে সে নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলো। তারপর বর্ণনাকারী হাদীসটি ইয়াযীদ এবং মুতামির [রাদি.]-এর হাদীসের অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৪৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮০৩]

৬৮৯৭. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক লোক নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! মাদীনার এক প্রান্তে এক মহিলাকে কাবু করার জন্যে চেষ্টা তদবীর করেছি। সহবাস ব্যতিরেকে তার সাথে আমি একান্তে মিলিত হয়েছি। আমিই সে লোক। আপনি আমার ব্যাপারে যা ইচ্ছা সিন্ধান্ত দিন। তখন উমর [রাদি.] তাকে বলিলেন, আল্লাহ তো তোমার অন্যায়কে লুক্কায়িত রেখেছেন। তুমিও যদি তোমার স্বীয় বিষয়টি গোপন রাখতে। রাবী বলেন, কিন্তু নবী [সাঃআঃ] তাকে আর কোন জবাব দেননি। এরপর লোকটি উঠে যেতে লাগল। এমতাবস্থায় নবী [সাঃআঃ] এক লোককে তার পিছনে পাঠালেন। যেন সে তাকে ডেকে আনে। অতঃপর তিনি তার সামনে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ

أَقِمِ الصَّلاَةَ طَرَفَىِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِينَ‏

“নামাজ প্রতিষ্ঠা করিবে দিনের দু প্রান্তে এবং রাতের কিয়দংশে। অবশ্যই নেককর্ম অসৎকর্মকে দূর করে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এ হলো তাদের জন্য এক উপদেশ।” তখন লোকেদের মধ্য হইতে জনৈক লোক বলিল, হে আল্লাহর নবী! এ বিধান কি তার জন্য নির্দিষ্ট? জবাবে তিনি বলিলেন, না; বরং সকল মানুষের জন্যই এ বিধান কার্যকর।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৪৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮০৪]

৬৮৯৮. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নবী [সাঃআঃ] হইতে আবু আহ্‌ওয়াস-এর অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, তবে এ হাদিসের মধ্যে আছে, তখন মুআয [রাদি.] জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! এ হুকুম কি শুধু তার জন্য, না আমাদের সবার জন্য সার্বিকভাবে প্রযোজ্য? জবাবে তিনি বলিলেন, না; বরং তোমাদের সবার জন্য সার্বিকভাবে প্রযোজ্য।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৪৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮০৫]

৬৮৯৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক লোক নবী [সাঃআঃ] এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি হদ্দ্‌ যোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। অতএব আপনি আমার উপর তা প্রয়োগ করুন। রাবী বলেন, তখন নামাজের সময় হলো এবং লোকটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে নামাজ আদায় করিল। নামাজ আদায় হয়ে গেলে লোকটি বলিল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমি হদ্দ্‌ যোগ্য অন্যায় করে ফেলেছি। তাই আপনি আল-কুরআনের বিধানানুসারে আমার উপর হদ্দ্‌ কার্যকর করুন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি কি আমাদের সাথে নামাজ আদায় করছিলে? লোকটি বলিল, হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমাকে মাফ করা হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮০৬]

৬৯০০. আবু উমামাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে বসা ছিলেন এবং আমরাও তাহাঁর সাথে বসে ছিলাম। তখন জনৈক লোক এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! হদ্দ্ যোগ্য অন্যায় করে ফেলেছি। অতএব আপনি আমার উপর হদ্দ্ কার্যকর করুন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নীরব থাকলেন। সে আবার বলিল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমি হদ্দ্ যোগ্য অন্যায় করে ফেলেছি। তাই আপনি আমার উপর হদ্দ্ কার্যকর করুন। এবারও রসূল [সাঃআঃ] নীরব থাকলেন। লোকটি তৃতীয়বার পুনরাবৃত্তি করিল। এমন সময় নামাজ শুরু হলো। নামাজ শেষ হয়ে গেলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফিলে এলেন। রাবী আবু উমামাহ [রাদি.] বলেন, লোকটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পশ্চাদ্ধাবন করিল। আবু উমামাহ্‌ [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লোকটিকে কি উত্তর দেন তা দেখার জন্য তিনি নামাজ শেষে ফিরে এলে আমিও তাহাঁর অনুসরণ করলাম। তারপর প্রশ্নকারী লোকটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট গিয়ে আবার বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার উপর হদ্দ্ হওয়ার মতো অপরাধ করে ফেলেছি। তাই আমার উপর হদ্দ্ কার্যকর করুন। আবু উমামাহ্‌ [রাদি.] বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ ঘর হইতে বের হবার সময় খেয়াল করেছো কি? তুমি কি ভালভাবে উযূ করোনি? সে বলিল, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, হে আল্লাহর রসূল! এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি আমাদের সাথে নামাজ আদায় করোনি? সে বলিল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন, আল্লাহ তাআলা তোমার হদ্দ্ মাফ করে দিয়েছেন। কিংবা বলিলেন, তোমার পাপ মাফ করে দিয়েছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮০৭]

৮. অধ্যায়ঃ হত্যাকারীর তাওবাহ গ্রহণযোগ্য হওয়ার বর্ণনা; যদিও বহু হত্যা করে থাকে

৬৯০১. আবু সাঈদ আল খুদ্‌রী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের আগেকার লোকেদের মধ্যে এক লোক ছিল। সে নিরানব্বই লোককে হত্যা করেছে। তারপর জিজ্ঞেস করিল, এ দুনিয়াতে সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান লোক কে? তাকে এক আলিম দেখিয়ে দেয়া হয়। সে তার নিকট এসে বলিল যে, সে নিরানব্বই লোককে হত্যা করেছে। এমতাবস্থায় তার জন্য কি তাওবাহ আছে? আলিম বলিল, না। তখন সে আলিমকেও হত্যা করে ফেলল। সুতরাং সে আলিমকে হত্যা করে একশ সম্পূর্ণ করিল। অতঃপর সে পুনরায় জিজ্ঞেস করিল, এ দুনিয়াতে সবচেয়ে জ্ঞানী কে? তখন তাকে জনৈক আলিম লোকের সন্ধান দেয়া হলো। সে আলিমকে বলিল যে, সে একশ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, তার জন্য কি তাওবাহ আছে? আলিম লোক বলিলেন, হ্যাঁ। এমন কে আছে যে ব্যক্তি তার মাঝে ও তার তাওবার মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করিবে? তুমি অমুক দেশে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদাতে নিমগ্ন আছে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদাতে লিপ্ত হও। নিজের ভূমিতে আর কক্ষনো প্রত্যাবর্তন করো না। কেননা এ দেশটি ভয়ঙ্কর খারাপ। তারপর সে চলতে লাগল। এমনকি যখন সে মাঝপথে পৌঁছে তখন তার মৃত্যু আসলো। এবার রহ্‌মাতের ফেরেশ্‌তা ও আযাবের ফেরেশ্‌তার মধ্যে তার ব্যাপারে বাক-বিতন্ডা দেখা গেল। রহ্‌মাতের ফেরেশ্‌তারা বলিলেন, সে আন্তরিকভাবে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাওবার উদ্দেশে এসেছে। আর আযাবের ফেরেশ্‌তারা বলিলেন, সে তো কক্ষনো কোন সৎ কাজ করেনি। এমতাবস্থায় মানুষের আকৃতিতে এক ফেরেশ্‌তা আসলেন। তাঁরা তাঁকে তাঁদের মাঝে মধ্যস্থতা বানালেন। তিনি উভয়কে বলিলেন, তোমরা উভয় স্থান পরিমাপ কর [নিজ ভূখণ্ড ও যাত্রাকৃত ভূখণ্ড]। এ দুটি ভূখণ্ডের মধ্যে যা সন্নিকটবর্তী হইবে সে অনুযায়ী তার ফায়সালা হইবে। তারপর উভয়ে পরিমাপ করে দেখলেন যে, সে ঐ ভূখণ্ডেরই বেশি নিকটবর্তী যেখানে পৌঁছার জন্যে সংকল্প করেছে। অতঃপর রহ্‌মাতের ফেরেশ্‌তা তার রূহ কবয করে নিলেন।

কাতাদাহ্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, যখন তার মৃত্যু এলো, তখন সে বুকের উপর ভর দিয়ে কিছু এগিয়ে গেল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮০৮]

৬৯০২. আবু সাঈদ আল খুদ্‌রী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি নিরানব্বই লোককে হত্যা করে বলাবলি করে বেড়াতে লাগল, তার কি তাওবাহ [র সুযোগ] আছে? অবশেষে সে এক বিশিষ্ট আলিমের নিকট এসে এ ব্যাপারে জানতে চায়। আলিম বলিল, তোমার জন্য তাওবাহ [র সুযোগ] নেই। তখন সে আলিমকে হত্যা করিল। তারপর সে পুনরায় লোকদের জিজ্ঞেস করিতে থাকলো। তারপর সে এক জনগদ হইতে অন্য জনগদের দিকে যাত্রা করলো যেখানে কিছু সৎ লোকের বসবাস ছিল। অতঃপর যখন সে রাস্তায় ভ্রমনরত ছিল তখন তার মৃত্যু এসে গেল। তখন সে বুকের উপর ভর করে সম্মুখে এগিয়ে গেল। তারপর সে মারা গেল। তখন রহ্‌মাতের ফেরেশ্‌তা ও আযাবের ফেরেশ্‌তা তার সম্পর্কে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লো। তখন দেখা গেল যে, সে সৎ লোকদের জনপদের দিকে এক বিঘত পরিমাণ বেশি নিকটবর্তী রয়েছে। তাই তাকে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হলো।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮০৯]

৬৯০৩. কাতাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এ সানাদে মুআয ইবনি মুআয-এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ হাদীসে বর্ণনা করেছে যে, তখন আল্লাহ এ ভূমির প্রতি আদেশ করিলেন যেন তা দূরবর্তী হয়ে যায় এবং ঐ ভূমির প্রতি আদেশ করিলেন যেন তা নিকটবর্তী হয়ে যায়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮১০]

৬৯০৪. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুসলিমের নিকট একজন খ্রীস্টান বা ইয়াহূদী দিয়ে বলবেন, এ হচ্ছে তোমার জন্যে জাহান্নামের অগ্নি হইতে মুক্তিপণ।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮১১]

৬৯০৫. আবু বুরদার পিতা আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেন, যখনই কোন মুসলিম মারা যায় তখন আল্লাহ তাআলা তার স্থানে একজন ইয়াহূদী বা খ্রীস্টান লোককে জাহান্নামে প্রবেশ করান। তারপর উমর ইবনি আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবু বুরদাহ্‌ [রাদি.]-কে যিনি ভিন্ন কোন মাবূদ নেই সে আল্লাহর শপথ দিয়ে তিনবার প্রশ্ন করিলেন যে, তার পিতা কি সত্যিই এ কথাটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে শুনে তাহাঁর কাছে বর্ণনা করিয়াছেন? তিনি শপথ করে বলিলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। এ কথাটি সাঈদ আমার কাছে বর্ণনা করেনি। রাবী বলেন, “উমর ইবনি আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাকে কসম দিয়েছেন সাঈদ এ কথা বলেননি এবং আওন-এর কথাটিও অস্বীকার করেননি।”

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮১২]

৬৯০৬. কাতাদাহ্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

এ সূত্রে আফ্‌ফান-এর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ হাদীসে রয়েছে আওন উতবার ছেলে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮১৩]

৬৯০৭. আবু বুরদাহ্ [রাদি.]-এর সূত্রে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, কিছু মুসলিম পাহাড়সম পাপ নিয়ে কিয়ামাতের মাঠে আসবে এবং আল্লাহ তাআলা তাদের পাপ মার্জনা করে দিবেন। আর তা ইয়াহূদী ও খ্রীস্টানদের উপর রেখে দিবেন। রাবী হাদীসের শেষের কথাটি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন।

রাবী আবু রাওহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, কার পক্ষ থেকে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে, তা আমি জানি না।

আবু বুরদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ হাদীসটি আমি উমর ইবনি আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর কাছে বর্ণনা করার পর তিনি আমাকে প্রশ্ন করিলেন, তোমার পিতা এ হাদীসটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে  শুনে তোমার কাছে বর্ণনা করেছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮১৪]

৬৯০৮. সাফ্‌ওয়ান ইবনি মুহরিয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক লোক ইবনি উমর [রাদি.]-কে প্রশ্ন করিলেন, নাজওয়া [আল্লাহ ও বান্দার গোপন কথা] সম্পর্কে আপনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে কিভাবে শুনেছেন? তিনি বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনেছি, কিয়ামাতের দিনে মুমিন ব্যক্তিকে তার প্রভূর নিকটবর্তী করা হইবে। তারপর আল্লাহ তাআলা তার উপর পর্দা ঢেলে দিবেন এবং তার পাপের ব্যাপারে তার থেকে জবানবন্দি নিবেন। তিনি প্রশ্ন করবেন, তুমি তোমার পাপ সম্বন্ধে জান কি? সে বলবে, হে রব! আমি জানি। এরপর তিনি বলবেন, তোমার এ পাপ দুনিয়ায় আমি লুক্কায়িত রেখেছিলাম। আজ তোমার এ পাপগুলোকে আমি মাফ করে দিলাম। এরপর তার নেকীর আমলনামা তার কাছে দেয়া হইবে। এরপর কাফির ও মুনাফিক লোকদেরকে উপস্থিত সকল মানুষের সম্মুখে ডেকে বলা হইবে, এরাই তারা যারা আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যারোপ করেছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৫৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮১৫]

৯. অধ্যায়ঃ কাব ইবনি মালিক [রাদি.] ও তাহাঁর দু সাথীর তাওবার বিবরণ

৬৯০৯. ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাবূকের যুদ্ধে শারীক হন। তাহাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সিরিয়ার আরব খ্রিস্টান ও রোমকরা।

ইবনি শিহাব বলেন, আমাকে আবদুর রহ্‌মান ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি কাব ইবনি মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] অবিহিত করিয়াছেন যে, প্রকৃতপক্ষে আবদুল্লাহ ইবনি কাব বলেছেন, কাব ইবনি মালিক [রাদি.] অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার সন্তানদের মাঝে তিনি ছিলেন তাহাঁর চালক। তিনি বলেন, আমি কাব ইবনি মালিক [রাদি.]-কে তাবূক যুদ্ধে রসূলের সাথে অংশগ্রহণ না করার ইতিবৃত্ত স্বীয় মুখে বর্ণনা করিতে শুনেছি। কাব ইবনি মালিক [রাদি.] বলেছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যত যুদ্ধ করিয়াছেন তাবূক যুদ্ধ ছাড়া এর সব কটির মাঝেই আমি তাহাঁর সাথে অংশগ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু বদর যুদ্ধে আমি তাহাঁর সাথে অংশগ্রহণ করিতে পারিনি। তবে যারা তাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি তাদের কাউকেও দোষারোপ করেননি। তখন তো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও মুসলিমগণ কেবলমাত্র কুরায়শ কাফিলার উদ্দেশে বের হয়েছিলেন। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা মুসলিম ও কাফিরদের অনির্ধারিত সময়ে একত্রিত করে দিলেন। আকাবার রাত্রে যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আমরা ইসলামের উপর অঙ্গীকার নিচ্ছিলাম, সে রাত্রে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। যদিও বদর যুদ্ধ মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশী প্রসিদ্ধ, তথাপি আকাবাহ্‌ রাত্রির পরিবর্তে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা আমার নিকট বেশি প্রিয় নয়। তাবূক যুদ্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে অংশগ্রহণ না করার খবর হচ্ছে এই যে, [যখন এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল] তখন আমি যেমন শক্তিশালী ও স্বচ্ছল ছিলাম, তেমন আর কখনো ছিলাম না। আল্লাহর শপথ! এর পূর্বে দুটি সওয়ারী কখনো একত্রে জমা করিতে পারিনি। কিন্তু এ যুদ্ধের সময় দুটি সওয়ারী একত্রিত করেছিলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ অভিযানে যান প্রচণ্ড গরমের মধ্যে। মরুভূমিতে দীর্ঘসফরে যাত্রা করিলেন। বহু সংখ্যক শত্রুর সম্মুখীন হইতে যাচ্ছিলেন। তাই তিনি বিষয়টি মুসলিমদের সামনে স্পষ্ট করে তুললেন, যাতে তারা যুদ্ধের জন্যে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে নিতে পারে। তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাদেরকে অবহিত করিয়াছেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে মুসলিমের সংখ্যা ছিল বেশি এবং তাদের নাম একত্র করেনি কোন সংরক্ষণকারী কিতাবে অর্থাৎ-রেজিস্ট্রারে।

কাব বলেন, সুতরাং যে লোক অনুপস্থিত থাকতে সংকল্প করে সে কমপক্ষে এ চিন্তা করিতে পারত যে, তার অনুপস্থিতির বিষয়টি গোপন থাকিবে, যতক্ষন না আল্লাহর তরফ থেকে তার ব্যাপারে ওয়াহী অবতীর্ণ হয়। এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, যখন গাছের ফল পাকছিল এবং বৃক্ষের ছায়া ছিল আনন্দদায়ক। আর আমিও ছিলাম এসবের প্রতি আকৃষ্ট। পরিশেষে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও মসুলমগণ যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করিলেন। আমিও তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দেশে বাড়ী হইতে সকালে বের হতাম, কিন্তু কোন কিছু সিদ্ধান্ত না করেই ফিরে আসতাম এবং মনে মনে বলতাম, আমি তো যুদ্ধে যেতে সক্ষম, যখনই সংকল্প করি। আমার ব্যাপারটি এভাবেই চলতে থাকল। এদিকে লোকজন সত্যিই প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে লাগল।

পরিশেষে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ভোরে রওনা হলেন এবং তাহাঁর সাথে মুসলিমগণও রওনা হয়ে গেল। কিন্তু আমি কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করিনি। পরদিন ভোরে আমি বের হলাম। তবে কোন প্রস্তুতি না নিয়েই ফিরে আসলাম। এভাবে আমার সময় দীর্ঘায়িত হইতে লাগল। এদিকে লোকজন দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয় আর মুজাহিদ্বীনের দল বহু দূরে চলে যায়। তখন আমি চিন্তা করলাম যে, আমিও রওনা হয়ে তাদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে যাই। হায় আফসোস! আমি যদি তা করতাম। তবে আমার ভাগ্যে তা নির্ধারিত হয়নি। অতএব রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুদ্ধে চলে যাওয়ার পর আমি যখন লোকালয়ে বের হতাম তখন এ সম্পর্কে আমাকে দুঃখ দিত যে, আমি অনুসরণীয় নমুনা দেখিতে পেতাম না, কেবলমাত্র এমন এক লোক যাদের উপর নিফাকের অভিযোগ রয়েছে অথবা সে সকল অক্ষম লোক যাদের আল্লাহ তাআলা মাযূর হিসেবে অবকাশ দিয়েছেন। এদিকে তাবূক পৌঁছার পূর্বে রাস্তায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার কথা মোটেই আলোচনা করেননি। কিন্তু তাবূক পৌঁছার পর লোকেদের মধ্যে বসা অবস্থায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, কাব ইবনি মালিক কি করছে? তখন বানূ সালামাহ্‌ গোত্রের এক লোক বলিল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! তার লালজোড়া চাদর এবং তার অহঙ্কার তাকে দূরে রেখেছে।

তখন মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] বলিলেন, তুমি অনেক খারাপ কথা বলিল। আল্লাহ শপথ, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমরা তো তাকে ভালই জানি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নীরব থাকলেন। ইতিমধ্যে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] শুভ্র পেশাক পরিহিত এক লোককে ধূলা উড়িয়ে আসতে দেখে বলিলেন, আবু খাইসামাই হইবে। দেখা গেল, তিনি আনসারী সহাবা আবু খাইসামাহ্‌ [রাদি.] আর তিনি সে লোক যিনি এক সা খেজুর সদাকাহ্‌ করেছিলেন যার জন্য মুনাফিকরা তার দূর্নাম রটনা করেছিল।

কাব ইবনি মালিক [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাবূক হইতে ফিরে [মাদীনাহ্‌ অভিমুখে] রওনা হওয়ার সংবাদ আমার নিকট পৌঁছার পর আমার উপর চিন্তার ছাপ পড়ে গেল। আমি মনে মনে মিথ্যা ওযর কল্পনা করিতে লাগলাম এবং এমন কথা ভাবতে লাগলাম যা বলে সকালে আমি তাহাঁর রাগ হইতে বাঁচতে পারি। আর এ বিষয়ে আমি বুদ্ধিমান আপনজনেরও সহযোগিতা নিতে লাগলাম। পরিশেষে যখন আমাকে বলা হলো যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পৌঁছেই যাচ্ছেন, তখন আমার অন্তর হইতে সকল বাতিল কল্পনা দূরে সরে গেল। এমনকি আমি বুঝতে পারলাম যে, কোন কিছুতেই আমি তাহাঁর কাছ থেকে মুক্তি পাব না। তাই আমি তাহাঁর নিকট সত্য বলারই ইচ্ছা করলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সকাল বেলা সফর থেকে আগমন করিলেন। তাহাঁর রীতি ছিল, সফর থেকে ফিরে প্রথমে তিনি মাসজিদে আসতেন এবং সেখানে দুরাকআত [নামাজ] আদায় করে মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যে বসতেন। এবারও যখন তিনি বসলেন, তখন যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তারা এসে অজুহাত দেয়া শুরু করিল এবং এর উপর কসম খেতে লাগল। এ সমস্ত লোক সংখ্যায় আশির বেশি ছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাদের প্রকাশ্য অজুহাত গ্রহণ করিলেন এবং তাদের হইতে বাইআত নিয়ে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাইলেন। আর তাদের অন্তর্নিহিত অবস্থা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলেন। পরিশেষে আমি উপস্থিত হয়ে সালাম করলাম। তখন তিনি ক্রুদ্ধ লোকের হাসির মতো মুচকি হাসলেন। তারপর তিনি বলিলেন, এসো। আমি এসে তাহাঁর সম্মুখে বসলাম। তখন তিনি আমাকে প্রশ্ন করিলেন, কিসে তোমাকে পিছনে ফেলে দিয়েছিল? তুমি কি সওয়ারী কিনে ছিলে না? তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আল্লাহর শপথ, আমি যদি আপনি ছাড়া কোন দুনিয়াদারী মানুষের নিকট বসতাম তবে আপনি দেখিতেন যে, অবশ্যই আমি কোন অজুহাত পেশ করে তার গোস্বা হইতে বের হতাম। কারণ আমাকে বাকশক্তির ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর শপথ! আমার দৃঢ় ধারণা, আজ যদি আমি মিথ্যা কথা বলি যাতে আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হন, তবে শীঘ্রই আল্লাহ তাআলা আপনাকে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট করবেন না। আর যদি আমি সত্য কথা বলি এবং এতে আপনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, তবে এতে আল্লাহর তরফ হইতে আমি কল্যাণজনক পরিণামের প্রত্যাশা রাখি। আল্লাহর শপথ! আমার কোন ওযর-আপত্তি ছিল না। আল্লাহর শপথ! আপনার [অভিযান] হইতে পিছনে থাকার সময়ের চেয়ে কোন সময় আমি অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ও অধিক ধন-সম্পদের অধিকারী ছিলাম না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বরলেন, নিশ্চয়ই এ লোক সত্য কথা বলেছে। এরপর তিনি বলিলেন, তুমি চলে যাও, যতক্ষণ না আল্লাহ তাআলা তোমার সম্বন্ধে কোন সিদ্ধান্ত দেন। তারপর আমি চলে গেলাম। তখন বানূ সালামাহ্‌ গোত্রের কিছু লোক দৌড়িয়ে আমার নিকটে এসে বলিল, আল্লাহর কসম! আমরা তো ইতিপূর্বে তোমাকে আর কোন অন্যায় করিতে দেখিনি। যারা পশ্চাতে রয়ে গিয়েছিল, তারা যেমন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে ওযর পেশ করেছে সেভাবে ওযর পেশ করিতে কি তুমি অক্ষম ছিলে? অতএব রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ইস্‌তিগফারই তোমার পাপের জন্য যথেষ্ট হত।

তিনি বলেন, আল্লাহর কসম। এভাবে তারা আমাকে এত ভর্ৎসনা করিতে লাগল যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আবার গিয়ে আমার স্বীয় উক্তি মিথ্যা প্রতিপন্ন করার ইচ্ছা হইতে লাগল। আমি লোকদের বললাম, আমার মতো আর কারো এমন অবস্থা হয়েছে কি? তারা বলিল, হ্যাঁ, আরো দু জন তোমার মতো করিয়াছেন। তুমি যা বলেছ তারাও অবিকল বলেছেন এবং তোমাকে যা বলা হয়েছে তাদেরও তাই বলা হয়েছে। আমি বললাম, তারা কারা? তারা বলিল, তাঁরা হলেন, মুরারাহ্‌ ইবনি রাবীআহ্‌ আমিরী এবং হিলাল ইবনি উমাইয়্যাহ্‌ আল ওয়াকিফী [রাদি.]। কাব বলেন, তাঁরা আমার কাছে এমন দু লোকের কথা বর্ণনা করিল, যাঁরা ছিলেন নেক্‌কার, বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী। এঁরা দুজনই ছিলেন নমুনা স্বরূপ। কাব [রাদি.] বলেন, যখন তারা ঐ দু লোকের কথা বর্ণনা করিল, তখন আমি স্বীয় অবস্থার উপর থেকে গেলাম।

এদিকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তাদের মধ্য থেকে শুধু আমাদের তিন জনের সাথে মুসলিমদের কথা বলিতে নিষেধ করে দিলেন। এরপর লোকেরা আমাদের পরিহার করিল অথবা বলেছেন, আমাদের সাথে তাদের ব্যবহার বদলে গেল। এমনকি পৃথিবীও যেন অপছন্দ করিতে লাগল, [মনে হলো] যে ভূমি আমি চিনতাম, এ যেন তা নেই। এমনি করে পঞ্চাশ রাত কাটালাম। আর আমার দু সাথী ছিলেন হীনবল, তাই তাঁরা নিজ নিজ গৃহে নীরবে বসে রইলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। আর আমি তাদের মাঝে কম বয়স্ক ও সবল ছিলাম। আমি রাস্তায় বের হতাম, সলাতে শারীক হতাম এবং বাজারেও হাঁটাহাঁটি করতাম। কিন্তু কেউ আমার সাথে কোন কথা বলত না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায়ের পর স্বীয় স্থানে বসাবস্থায় আমি তাহাঁর নিকট আসতাম, তাকে সালাম করতাম এবং মনে মনে ভাবতাম, তিনি সালামের জওয়াব প্রদান করে তাহাঁর ওষ্ঠযুগল নাড়িয়েছেন কি-না? তারপর আমি তাহাঁর কাছে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতাম এবং গোপন চাহনির মাধ্যমে আমি তাহাঁর দিকে লক্ষ্য করতাম। যখন আমি সলাতে নিমগ্ন হতাম তখন তিনি আমার প্রতি দৃষ্টি দিতেন। কিন্তু আমি যখন তাহাঁর দিকে তাকাতাম তখন তিনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন। আমার প্রতি মুসলিমের এ রূঢ় আচরণ যখন দীর্ঘায়িত হয়ে গেল তখন আমি গিয়ে আবু কাতাদাহ্‌ [রাদি.]-এর বাগানের দেয়াল টপকিয়ে তার কাছে গেলাম। তিনি ছিলেন আমার চাচাতো ভাই এবং আমার খুবই প্রিয় ব্যক্তি। উপরে উঠেই আমি তাঁকে সালাম করলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! তিনি আমার সালামের কোন জবাব দিলেন না। আমি তাঁকে বললাম, হে আবু কাতাদাহ্‌! আমি তোমাকে আল্লাহর শপথ করে জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি জান না যে, আমি আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ]-কে ভালবাসি? তিনি কোন জবাব দিলেন না। আমি আবার তাঁকে শপথ করে জিজ্ঞেস করলাম। এবারও তিনি কোন জবাব দিলেন না। তারপর পুনরায় আমি তাঁকে শপথ করে জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে তিনি বলিলেন, আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ]-ই ভাল জানেন। এ কথা শুনে আমার দুচোখ দিয়ে পানি ঝড়তে লাগল। পরিশেষে পিছন ফিরে আমি আবার প্রাচীর টপকিয়ে ফিরে এলাম।

তারপর আমি কোন একদিন মাদীনার বাজার দিয়ে হাঁটতেছিলাম, তখন মাদীনার বাজারে শাক-সবজি বিক্রির উদ্দেশে আগত সিরিয়ার কৃষকদের মাঝখান থেকে একজন বলিতে লাগল, এমন কোন লোক আছে কি, যে আমাকে কাব ইবনি মালিকের ঠিকানা বলিতে পারে? লোকেরা ইঙ্গিতে আমাকে দেখিয়ে দিলে সে আমার কাছে আসলো এবং গাস্‌সান সম্রাটের তরফ হইতে আমাকে একটি চিঠি দিল। আমি লেখাপড়া জানতাম। তাই আমি তা পড়লাম। এতে লেখা ছিল, “আমি জানতে পারলাম যে, তোমার সাথী মুহাম্মাদ তোমার প্রতি অন্যায় আচরণ করছে। অথচ আল্লাহ তাআলা তোমাকে নীচু গৃহে জন্ম দেননি এবং ধ্বংসাত্মক স্থানেও নয়। সুতরাং তুমি আমাদের কাছে চলে এসো। আমরা তোমার সাথে ভাল আচরণ করব।” এ চিঠি পড়া মাত্র আমি বললাম, এটাও এক রকমের পরীক্ষা। তখন এ চিঠিটি নিয়ে আমি চুলার কাছে গেলাম এবং আগুনে তা পুড়িয়ে দিলাম। চল্লিশ দিন অতিক্রান্ত হলো। এখনও এদিকে কোন ওয়াহী আসছে না। এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এক বার্তাবাহক আমার কাছে এসে বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আপনাকে আপনার সহধর্মিণী থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, আমি কি তাকে তালাক্‌ দিব, না অন্য কিছু করব? তিনি বলিলেন, না তালাক্‌ দিতে হইবে না। বরং তুমি তার হইতে আলাদা হয়ে যাও এবং তার সঙ্গে মিলন করো না। তিনি বলেন, আমার অপর সাথীদের কাছেও এমন খবর পাঠানো হলো। কাব [রাদি.] বলেন, তারপর আমি আমার সহধর্মিণীকে বললাম, তুমি তোমার পিতার বাড়ী চলে যাও এবং যে পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না দেন ততদিন সেখানেই অবস্থান করিবে। কাব [রাদি.] বলেন, এরপর হিলাল ইবনি উমাইয়্যাহ্‌ [রাদি.]-এর সহধর্মিণী রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]! হিলাল ইবনি উমাইয়্যাহ্‌ একজন বয়োঃবৃদ্ধ লোক। তাহাঁর কোন সেবক নেই। আমি যদি তাহাঁর সেবা করি, আপনি কি তাতে আপত্তি করেন? তিনি বলিলেন, না। কিন্তু সে তোমার সঙ্গে সহবাস করিতে পারবে না। এ কথা শুনে হিলাল [রাদি.]-এর সহধর্মিণী বলিলেন, আল্লাহ শপথ! কোন কাজের ব্যাপারেই তার মনে কোন স্পন্দন নেই এবং আল্লাহর কসম! ঐ ঘটনার পর হইতে অদ্যাবধি সে প্রতিদিন কেঁদে চলছে।

তিনি বলেন, আমার পরিবারের কেউ বলিলেন, আচ্ছা তুমিও যদি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে তোমার সহধর্মিণীর ব্যাপারে অনুমতি নিয়ে নিতে। তিনি তো হিলাল ইবনি উমাইয়্যার স্ত্রীকে তাহাঁর স্বামীর সেবার অনুমতি দিয়েছেন। আমি বললাম, না, আমি স্ত্রীর ব্যাপারে অনুমতি প্রার্থনা করব না। কারণ আমি যুবক মানুষ। আমি আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অনুমতি চাইলে না জানি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি বলেন। এ অবস্থায় আরো দশ রাত কাটালাম। এভাবে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন থেকে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলিতে বারণ করেছিলেন, তখন থেকে আমাদের পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হয়। কাব বলেন, পঞ্চাশতম রাত্রের ফাজ্‌রের নামাজ আমি আমার ঘরের ছাদের উপর আদায় করলাম। এরপর যখন আমি ঐ অবস্থায় বসা ছিলাম, যা আল্লাহ আমাদের ব্যাপারে আলোচনা করিয়াছেন, “অর্থাৎ- আমার মন সংকীর্ণ হয়ে গেছে এবং প্রশস্ত পৃথিবী আমার নিকট সংকুচিত হয়ে পড়েছে”, তখন আমি একজন ঘোষণাকারীর শব্দ শুনলাম, যিনি সালা পর্বতের চূড়ায় উঠে উচ্চ আওয়াজে বলছেন, হে কাব ইবনি মালিক! তোমার জন্যে সুসংবাদ। কাব বলেন, তখন আমি সাজ্‌দায় অবনত হলাম এবং আমি বুজতে পারলাম যে, প্রশস্ততা আগমন করেছে।

কাব বলেন, এদিকে ফাজ্‌রের নামাজের পর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লোকেদের নিকট ঘোষণা করিলেন যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওবাহ গ্রহণ করিয়াছেন। তখনই লোকেরা আমাদের সুখবর দেয়ার জন্যে ছুটে গেলেন এবং আমার সঙ্গীদ্বয়কে সুখবর পৌছানোর জন্যে কিছু লোক তাদের কাছে গেলেন। আর আমার দিকে একজন ঘোড়ার উপর আরোহণ হয়ে রওনা হলেন এবং আসলাম সম্প্রদায়ের আরেক লোকও রওনা হলেন। আর তিনি পাহাড়ের উপর উঠে ঘোষণা দিলেন। আর ঘোড়ার চেয়েও শব্দের গতি অতি দ্রুত ছিল। এরপর যার সুখবরের শব্দ আমি শুনেছিলাম- তিনি আমার কাছে আসলে আমি আমার পরিধেয় কাপড় দুটো সুখবরের উপঢৌকন স্বরূপ তাকে দিয়ে দিলাম। আল্লাহর শপথ! সেদিন ঐ দুটো কাপড় ছাড়া আমি আর কোন কাপড়ের মালিক ছিলাম না। অতএব আমি দুটো কাপড় ধার নিয়ে তা পড়লাম। তারপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে দেখা করার জন্যে আমি রওনা দিলাম। আমার তাওবাহ গ্রহণের মুবারকবাদ জানানোর জন্য লোকেরা দলে দলে আমার সাথে দেখা করিতে লাগল এবং বলিতে লাগল, আল্লাহর মার্জনা তোমার জন্য মুবারক হোক। এমতাবস্থায় আমি মাসজিদে ঢুকে দেখলাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদেই উপবিষ্ট আছেন এবং তাহাঁর পাশে লোকজন রয়েছে। তখন তাল্‌হাহ্‌ ইবনি উবাইদুল্লাহ [রাদি.] দণ্ডায়মান হলেন এবং দৌড়ে এসে আমার সঙ্গে মুসাফাহা করিলেন এবং তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন। আল্লাহর শপথ! মুহাজিরদের মাঝে তখন তিনি ছাড়া আর কেউ [আমাকে দেখে] দাঁড়াননি।

রাবী বলেন, কাব তালহার এ সদ্ব্যবহারের কথা ভুলে যাননি।

কাব ইবনি মালিক [রাদি.] বলেন, এরপর আমি যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে সালাম করলাম তখন তাহাঁর মুখায়ব আনন্দে উচ্ছাসিত ছিল। তিনি বলিলেন, তোমার মা তোমাকে জন্ম দেয়ার পর থেকে যতদিন অতিবাহিত হয়েছে, তার মধ্যে তোমার জন্যে এ মুবারক দিনটির সুখবর। কাব [রাদি.] বলেন, আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম, তা কি আপনার তরফ থেকে, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! না মহান আল্লাহর তরফ থেকে? তিনি বলিলেন, না, বরং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন আনন্দিত হইতেন, তখন তাহাঁর মুখায়ব এমন উজ্জ্বল হতো যেন তা এক টুকরো চাঁদ। কাব [রাদি.] বলেন, আমরা তাহাঁর মুখায়ব দেখেই তা উপলব্ধি করিতে পারতাম।

তিনি বলেন, আমি যখন তাহাঁর সম্মুখে বসলাম তখন বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমার তাওবার শুকরগুজার হিসেবে আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের জন্য সদাকাহ্‌ করে আমি সকল প্রকার ধন-সম্পদ থেকে মুক্ত হওয়ার মনস্থ করেছি। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ কিছু সম্পদ তোমার নিজের জন্যে রেখে দাও। এ-ই তোমার জন্য সবচেয়ে ভাল। আমি বললাম, তাহলে আমি খাইবারে প্রাপ্য অংশটুকু রেখে দিব। কাব [রাদি.] বলেন, তারপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! সত্য কথাই আল্লাহ আমাকে মুক্তি দিয়েছে; তাই যতদিন জীবন থাকে আমি শুধু সত্যই বলব। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আর কোন মুসিলম ব্যক্তিকে সত্য বলার জন্য এমন পুরস্কৃত করিয়াছেন বলে আমার জানা নেই। আল্লাহর শপথ! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে এ আলোচনা করার পর অদ্যাবধি স্বেচ্ছায় আমি কখনো মিথ্যা কথা বলিনি। আমার প্রত্যাশা, অবশিষ্ট জীবনেও আল্লাহ তাআলা আমাকে মিথ্যা থেকে রক্ষা করবেন। কাব [রাদি.] বলেন, আমার তাওবাহ কবূলযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা তখন নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেছিলেনঃ “আল্লাহ দয়াপরবেশ হলেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা তার অনুসরণ করেছিল সংকটকালে, এমনটি যখন তাদের এক দলের হৃদয়-বক্রের উপক্রম হয়েছিল। পরে আল্লাহ তাদেরকে মার্জনা করিলেন। তিনি তাদের প্রতি দয়াশীল এবং অপর তিন ব্যক্তি যাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিলম্বিত করা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না পৃথিবী বিশাল হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্যে সংকুচিত হয়েছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য অতিষ্ঠ হয়েছিল এবং তারা বুঝতে পেরেছিল যে, আল্লাহ ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই। পরে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ হলেন, যাতে তারা তাওবাহ করে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালূ। হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করে এবং সত্যবাদীদের শামিল হও”- [সুরা আত্‌ তাওবাহ ৯ : ১১৭-১১৯] arbi

কাব [রাদি.] বলেন, আল্লাহর শপথ! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে সেদিন সত্য কথা বলার জন্যে আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি যে নিআমাত দান করিয়াছেন, তেমন নিআমাত ইসলাম কবূলের পর আল্লাহ তাআলা আমার উপর আর কক্ষনো করেননি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট সেদিন আমি মিথ্যা বলিনি। যদি বলতাম তবে নিশ্চয়ই আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতাম, যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল মিথ্যাবাদীগণ। ওয়াহী নাযিলকালে আল্লাহ তাআলা মিথ্যাবাদীদের এমন কঠোর সমালোচনা করিয়াছেন, যা আর কাউকে করেননি। তিনি বলেছেন, “তোমরা তাদের কাছে ফিরে এলে তারা আল্লাহর কসম করিবে, যেন তোমরা তাদেরকে এড়িয়ে চলো। কাজেই তোমরা তাদেরকে এড়িয়ে চলবে তারা অপবিত্র, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান জাহান্নাম তাদের আবাসস্থল। তারা তোমাদের কাছে হলফ করিবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হও। তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেও আল্লাহ ফাসিক [সত্যত্যাগী] লোকেদের উপর সন্তুষ্ট হইবেন না।” [সুরা আত্‌ তাওবাহ ৯ : ৯৫-৯৬]। কাব [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট কসম করার পর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যাদের ওযর গ্রহণ করেছিলেন, যাদের বাইআত করেছিলেন এবং যাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন তাদের থেকে আমাদের তিনজনের ব্যাপারটিকে দেরী করা হয়েছিল। আল্লাহর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের ব্যাপারটিকে স্থগিত রেখেছিলেন। তাই আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “আর তিনি মাফ করিলেন অপর তিনজনকেও যাদের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল।” [আরবী] শব্দের অর্থ “যুদ্ধ হইতে আমাদের পশ্চাতে থাকা” নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, রসূল [সাঃআঃ] কর্তৃক “আমাদের বিষয়টিকে স্থগিত রাখা।” ঐ সকল লোকেদের চেয়ে যারা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে কসম করেছিল এবং ওযর উপস্থিত করেছিল; অতঃপর তা গৃহীত হয়েছিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮১৫]

৬৯১০. ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সানাদে ইউনুস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮১৬]

৬৯১১. আবদুর রহ্‌মান ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি কাব ইবনি মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উবাইদুল্লাহ ইবুন কাব ইবনি মালিক [রাদি.] যিনি [তার বাবা] কাব [রাদি.] অন্ধ হয়ে যাবার পর তাকে আনা নেয়া করিতেন। তিনি [উবাইদুল্লাহ] বলেছেন, তাবূক যুদ্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে অংশগ্রহণ না করে ঘরে বসে থাকার সম্পর্কে কাব ইবনি মালিক [রাদি.]-কে আমি এ কথা বলিতে শুনেছি। অতঃপর তিনি অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এতে অতিরিক্ত রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যেদিকে যুদ্ধ করার জন্যে যেতেন সাধারণতঃ তিনি আলোচনায় ঐ স্থানের কথা আলোচনা না করে অন্য জায়গার কথা আলোচনা করিতেন। তবে এ যুদ্ধের কথা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছিলেন।

যুহরীর ভ্রাতুষ্পুত্রের এ হাদীসের মধ্যে আবু খাইসামার কথা এবং নবী [সাঃআঃ]-এর সাথে তাহাঁর সাক্ষাতের কথা আলোচনা নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮১৬]

৬৯১২. উবাইদুল্লাহ ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কাব [রাদি.] চক্ষু রোগে আক্রান্ত হবার পর উবাইদুল্লাহ তাঁকে পরিচালন করিতেন। তিনি তাহাঁর কাওমের মাঝে সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান লোক ছিলেন এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সহাবাদের হাদীস বেশি হিফাযাতকারী ছিলেন। তিনি বলেনঃ যে তিনজন লোকের তাওবাহ গ্রহণ করেছিলেন, আমার পিতা কাব ইবনি মালিক [রাদি.] ঐ তিন লোকের অন্যতম ছিলেন। আমি তাঁকে বলিতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যত যুদ্ধ করিয়াছেন এর মধ্যে তিনি দুটি ছাড়া আর কোন যুদ্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে পেছনে থাকেননি। তারপর তিনি পূর্বের অনুরূপ ঘটনাটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এতে রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বহু সৈন্য সামন্ত নিয়ে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের সংখ্যা দশ হাজারের চেয়েও বেশি ছিল। কোন তালিকায় তাঁদের নাম লিখে রাখা ছিল না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮১৭]

১০. অধ্যায়ঃ মিথ্যা অপবাদ দেয়া এবং অপবাদ রটনাকারীর তাওবাহ গৃহীত হওয়া

৬৯১৩. হাব্বান ইবনি মূসা, ইসহাক্‌ ইবুন ইব্‌রাহীম আল হান্‌যালী, মুহাম্মাদ ইবনি রাফি ও আবদ ইবনি হুমায়দ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি], সাঈদ ইবনি মুসাইয়্যাব, উরওয়াহ্‌ ইবুন যুবায়র, আলকামাহ্‌ ইবনি ওয়াক্কাস এবং উবাইদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উত্‌বাহ্‌ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তাঁরা সকলেই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী আয়িশা [রাদি.]-এর ঐ কাহিনীটি বর্ণনা করিয়াছেন, অপবাদ রটনাকারীরা তাহাঁর সম্পর্কে যে অপবাদ দিয়েছিল। তারপর রটানো অপবাদ হইতে আল্লাহ তাঁকে নির্দোষ বর্ণনা করিলেন। রাবী যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, তাঁরা সবাই আমার কাছে হাদীসের এক এক অংশ বর্ণনা করিয়াছেন। তাঁদের কেউ কেউ অন্যের চেয়ে উক্ত হাদীসের কঠোর সংরক্ষণকারী ছিলেন এবং তা ভালভাবে বর্ণনা করিতে সক্ষম ছিলেন। তাঁরা আমার কাছে যা বর্ণনা করিয়াছেন, তাঁদের প্রত্যেকের বর্ণনা আমি যথাযথভাবে আয়ত্ব করে নিয়েছি। একজনের হাদীস অন্যের হাদীসকে সত্যায়িত করে। তাঁরা সকলেই উল্লেখ করিয়াছেন যে, নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী আয়িশাহ্ সিদ্দীকা [রাদি.] বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন সফরে যাওয়ার সংকল্প করিতেন তখন তিনি তাহাঁর স্ত্রীদের মধ্যে লটারী করিতেন। যাঁর নাম আসত তাঁকেই তিনি তাহাঁর সাথে সফরে নিতেন।

আয়িশা [রাদি.] বলেন, এক যুদ্ধ-সফরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লটারী করিলেন এবং এতে আমার নাম উঠল। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে সে যুদ্ধে শারীক হই। পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর এ যুদ্ধে আমি শারীক হয়েছিলাম। আরোহী অবস্থায় আমাকে ভিতরে রাখা হতো এবং অবতেরণের সময়ও হাওদার ভিতর থাকতাম। পরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুদ্ধ হইতে অব্যাহতির পর ফিরে এসে মাদীনার কাছাকাছি জায়গায় পৌঁছার পর এক রাতে তিনি রওনা হবার আদেশ দিলেন। লোকজন যখন রওনা হবার ব্যাপারে ঘোষণা দিল, তখন আমি দাঁড়িয়ে চলতে লাগলাম; এমনকি আমি সৈন্যদেরকে ছাড়িয়ে দূরে চলে গেলাম। এরপর আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজন [প্রস্রাব পায়খানা] সেরে আরোহীর নিকট এলাম এবং নিজ বক্ষে হাত দিয়ে দেখলাম, যিফারী পুতির প্রস্তুত আমার হারটি হারিয়ে গিয়েছে। তাই আগের স্থানে ফিরে গিয়ে আমি আমার হারটি সন্ধান করলাম। [এতে আমার দেরী হয়ে গেল।] এদিকে হাওদা বহনকারী লোকজন এসে দ্রব্য-সামগ্রী উঠিয়ে আমার বহনকারী উটের উপর রেখে দিল। তারা ধারণা করেছিল, আমি হাওদার ভিতরেই আছি।

আয়িশা [রাদি.] বলেন, তখনকার মহিলারা হালকা-পাতলা গঠনেরই হতো। না বেশি ভারী, না বেশি মোটা। কেননা তারা কম খানা খেত। তাই উঠানোর সময় হাওদার ওজন তাদের কাছে সাধারণ অবস্থা হইতে ব্যতিক্রম মনে হয়নি। অধিকন্তু তখন আমি অল্প বয়সী ছিলাম। পরিশেষে লোকেরা উট দাঁড় করিয়ে পথ চলতে শুরু করে দিল। সৈন্যদের রওনা হয়ে যাবার পর আমি আমার হার খুঁজে পেলাম। এরপর আমি আগের স্থানে ফিরে এসে দেখলাম, তথায় কোন জন-মানুষের শব্দ নেই আর সাড়া দেয়ার মতো কোন লোকও তথায় নেই। তখন আমি সংকল্প করলাম, আমি যেখানে বসা ছিলাম সেখানেই বসে থাকব এবং আমি ভাবলাম, লোকেরা যখন খুঁজে আমাকে পাবে না তখন নিশ্চয়ই তারা আমার খোঁজে আমার নিকট ফিরে আসবে। আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমি আমার সে স্থানে বসা অবস্থায় ঘুম এলো আর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সাফ্ওয়ান ইবনি মুয়াত্তাল আস্ সুলামী আয্ যাক্ওয়ানী নামক এক লোক ছিল। আরামের উদ্দেশ্যে সৈন্যদের পেছনে শেষ রাত্রে সে আগের জায়গায়ই রয়ে গিয়েছিল। পরে সে রওনা হয়ে প্রত্যূষে আমার স্থানে পৌঁছল। দূর থেকে সে একটি মানব দেহ দেখিতে পেয়ে আমার কাছে এলো এবং আমাকে দেখে সে চিনে ফেলল। কেননা পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে সে আমাকে দেখেছিল। আমাকে চিনে সে “ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলাইহি রাজিঊন” পড়লেন তাহাঁর “ইন্না- লিল্লা-হ …..” এর শব্দে আমার ঘুম ছুটে গেল। অকস্মাৎ আমি আমার চাদর দিয়ে স্বীয় মুখমণ্ডল আবৃত করে নিলাম। আল্লাহর শপথ! সে আমার সাথে কোন কথা বলেনি এবং “ইন্না- লিল্লা-হ …..” পাঠ ব্যতীত আর তার কোন কথাই আমি শুনিনি। এরপর সে তার উট বসিয়ে নিজ হাত বিছিয়ে দিলেন আমি তার উটের উপরে উঠলাম। আর সে পায়ে হেঁটে আমাকে সহ উট হাঁকিয়ে নিয়ে চলল। যেতে যেতে আমরা সৈন্য দলের কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। তখন তারা দ্বিপ্রহরের প্রচণ্ড রোদের মধ্যে সওয়ারী থেকে নেমে ভূমিতে অবস্থান করছিল। আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমার [অপবাদের] সম্পর্কে জড়িত হয়ে কতক লোক নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনেছে আর এ সম্পর্কে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তার নাম আবদুল্লাহ ইবনি উবাই ইবনি সালূল। পরিশেষে আমরা মাদীনায় পৌঁছলাম। মাদীনায় পৌঁছার পর এক মাস যাবৎ আমি অসুস্থ ছিলাম। এদিকে মাদীনার মানুষজন অপবাদ রটনাকারীদের কথা গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখিতে লাগল। এ সম্পর্কে আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। তবে এ অসুস্থ অবস্থায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর তরফ থেকে পূর্বের ন্যায় স্নেহ না পাওয়ার ফলে আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘরে ঢুকে কেবল সালাম করে বলিতেন, এই তুমি কেমন আছো? এ আচরণ আমাকে সন্দেহে ফেলে দিল। আমি সে [মন্দ] বিষয়টি সম্পর্কে জানতাম না। তারপর কিছুটা সুস্থ হবার পর আমি মানাসি প্রান্তরের দিকে বের হলাম। আমার সাথে মিসতাহ্-এর আম্মাও ছিল। তা আমাদের শৌচাগার ছিল। আমরা রাতে বের হতাম এবং রাতেই চলে আসতাম। এ হলো আমাদের গৃহের নিকট শোচাগার নির্মাণের পূর্ববর্তী সময়ের ঘটনা। তখন আগের দিনের আরব মানুষের মতো মাঠে গিয়ে আমরা শৌচকার্য সারতাম। আর আমরা ঘরের কোণে শৌচাগার তৈরি করা পছন্দ করতাম না। অতএব আমি এবং মিসতাহ্-এর মা যেতে লাগলাম। সে ছিল আবু রুহম ইবনি মুত্তালিব ইবনি আব্দ মান্নাফ-এর কন্যা এবং তার মা ছিল আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.]-এর খালা সাখ্র ইবুন আমির-এর মেয়ে। তাহাঁর সন্তানের নাম ছিল মিসতাহ্ ইবনি উসাসাহ্ ইবুন আব্বাদ ইবনি মুত্তালিব। মোটকথা, আমি ও বিনতু আবু রহ্ম [মিসতাহ্-এর মা] নিজ নিজ শৌচকার্য সেরে ঘরের দিকে রওনা হলাম। তখন মিসতাহ্-এর মা স্বীয় চাদরে পেঁচিয়ে হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। আর সে বলে উঠে মিস্তাহ ধ্বংস হোক। তখন আমি বললাম, তুমি অন্যায় কথা বলেছো। তুমি কি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী লোককে বকছ? সে বলিল, হে অবলা নারী! মিসতাহ্ কি বলেছে, তুমি কি শোননি? আমি বললাম, সে কি বলেছে? “আয়িশাহ্ [রাদি.] বলেন, তারপর সে অপবাদ রটনাকারীরা যা বলেছে, সে সম্পর্কে আমাকে সংবাদ দিল। এতে আমার অসুস্থতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেল। আমি যখন ঘরে ফিরে আসলাম, তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার ঘরে প্রবেশ করে আমাকে সালাম দিলেন এবং বলিলেন, এই তুমি কেমন আছো? তখন আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি আমাকে আমার বাবা-মায়ের বাড়ীতে যাওয়ার অনুমতি দিবেন? আয়িশা [রাদি.] বলেন, তখন আমি আমার বাবা-মায়ের ঘরে গিয়ে এ বিষয়টির খোঁজ করার সংকল্প করেছিলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি আমার মাতা-পিতার নিকট চলে আসলাম। তারপর আমি আমার মাকে বললাম, আম্মাজান! লোকেরা কী কথা বলছে? তিনি বলিলেন, মা! এদিকে কান দিয়ো না এবং একে মন্দ মনে করো না। আল্লাহর শপথ! কারো যদি কোন সুন্দরী সহধর্মিণী থাকে ও সে তাকে ভালবাসে আর ঐ মাহিলার কোন সতীনও থাকে তবে সতীনরা তার দোষচর্চা করিবে না এমন খুব কমই হয়। আয়িশা [রাদি.] বলেন, এ কথা শুনে আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ! লোকেরা এ কথা রটাতে শুরু করেছে? এরপর কেঁদে কেঁদে আমি সারা রাত কাটালাম। এমনকি সকালেও অশ্রু বন্ধ হলো না। আমি ঘুমোতে পারিনি। প্রভাতে আমি কাঁদছিলাম। এদিকে আমাকে তালাক দেয়ার ব্যাপারে পরামর্শ করার জন্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] এবং উসামাহ্ ইবনি যায়দ [রাদি.]-কে ডাকলেন। তখন ওয়াহী স্থগিত ছিল। তিনি বলেন, উসামাহ্ ইবনি যায়দ [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বিবীদের সতীত্ব এবং তাঁদের সাথে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর ভালবাসার ক্ষেত্রে যা জানতেন সে দিকেই তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে ইশারা করিলেন। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আয়িশাহ্ আপনার সহধর্মিণী, ভাল ছাড়া তাহাঁর সম্পর্কে কোন কথাই আমাদের জানা নেই। আর আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ তো আপনার উপর কোন সংকীর্ণতা চাপিয়ে দেননি। আয়িশা [রাদি.] ব্যতীতও অনেক স্ত্রীলোক রয়েছে। আপনি যদি দাসী [বারীরাহ্]-কে প্রশ্ন করেন তবে সে সত্য বলে দিবে। আয়িশা [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বারীরাহ্ [রাদি.]-কে ডেকে বলিলেন, হে বারীরাহ্! সন্দেহমূলক কোন কর্মে আয়িশাকে তুমি কখনো দেখেছ কি? বারীরাহ্ [রাদি.] তাঁকে বলিলেন, ঐ সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন, আমি যদি তাহাঁর মাঝে কোন কিছু দেখতাম তবে নিশ্চয়ই এর ত্রুটি আমি উল্লেখ করতাম। তবে সে একজন অল্প বয়সী কন্যা। পরিবারের জন্যে আটার খামীর রেখেই সে ঘুমিয়ে থাকতো আর বকরী এসে তা খেয়ে ফেলতো। এ ত্রুটি ছাড়া বেশি কোন ত্রুটি আয়িশার মাঝে আছে বলে আমার জানা নেই। তিনি বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিম্বারে দাঁড়িয়ে আবদুল্লাহ ইবনি উবাই ইবুন সালূল হইতে প্রতিশোধ আশা করিলেন। আয়িশা [রাদি.] বলেন, তিনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে মুসলিম সমাজ! আমার পরিবারের ব্যাপারে যে লোকের পক্ষ হইতে কষ্টদায়ক বাক্যের খবর আমার নিকট পৌঁছেছে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করার মতো কোন লোক এখানে আছে কি? আমি তো আমার স্ত্রীর ব্যাপারে উত্তম ছাড়া অন্য কোন কথা জানি না এবং যে লোকের ব্যাপারে তারা অপবাদ রটনা করছে তাকেও আমি সৎলোক বলে জানি। সে তো আমাকে ছাড়া আমার ঘরে কখনো প্রবেশ করতো না। এ কথা শুনে সাদ ইবনি মুআয আল আনসারী [রাদি.] দাঁড়ালেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমি আপনার তরফ হইতে প্রতিশোধ নিবো। অপবাদ রটনাকারী লোক যদি আওস গোত্রের হয় তবে আমি তার গর্দান উড়িয়ে দিব। আর যদি সে আমাদের ভ্রাতা খায্রাজ গোত্রের হয় তবে আপনি আমাদেরকে আদেশ দিন। আমরা আপনার আদেশ পালন করব। আয়িশা [রাদি.] বলেন, তখন খাযরাজ সর্দার সাদ ইবনি উবাদাহ্ [রাদি.] দাঁড়ালেন। তিনি একজন নেক্কার লোক ছিলেন। তবে তখন বংশীয় আত্মমর্যাদা তাঁকে মূর্খ বানিয়ে ফেলেছিল। তাই তিনি সাদ ইবনি মুআযকে বলিলেন, তুমি মিথ্যা বলছো। আল্লাহ শপথ! তুমি তাকে হত্যা করিবে না। তুমি তাকে হত্যা করিতে সক্ষম হইবে না। এ কথা শুনে সাদ ইবনি মুআয [রাদি.]-এর চাচাতো ভাই উসায়দ ইবনি হুযায়র [রাদি.] দাঁড়িয়ে সাদ ইবনি উবাদাহ্ [রাদি.]-কে বলিলেন, তুমি মিথ্যা বলছো। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়ই আমরা তাকে হত্যা করব। নিশ্চয়ই তুমি মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষে কথা বলছো। এ সময় আওস ও খাযরাজ দু গোত্রের লোকেরা একে অপরের উপর উত্তেজিত হয়ে উঠল। এমনকি তারা যুদ্ধের ইচ্ছা করে বসলো। অথচ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখনও তাদের সম্মুখে মিম্বারে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁদেরকে থামিয়ে শান্ত করিলেন। তারা নীরব থাকলো এবং তিনি নিজেও আর কোন কথা বলিলেন না। আয়িশা [রাদি.] বলেন, সেদিন আমি সারাক্ষণ কান্নাকাটি করলাম। অবিরত ধারায় আমার অশ্রুপাত হচ্ছিল। রাত্রে একটুও আমার ঘুম আসলো না। অতঃপর সামনের রাতেও আমি কেঁদে কাটালাম। এ রাতেও অঝোর ধারায় আমার অশ্রুপাত হলো এবং একটুকুও নিদ্রা যেতে পারলাম না। এ দেখে আমার আব্বা-আম্মা মনে করছিলেন যে, কান্নায় আমার কলিজা টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। আমি কাঁদতে ছিলাম, আমার আব্বা-আম্মা আমার নিকটে বসা ছিলেন। এমন সময় একজন আনসার মহিলা আমার কাছে আসার অনুমতি চাইলে আমি তাকে অনুমতি দিলাম। সে এসে বসে কাঁদতে লাগল। আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমাদের যখন এ অবস্থা এমন সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের কাছে প্রবেশ করিলেন এবং আমাদেরকে সালাম করে বসলেন। আয়িশা [রাদি.] বলেন, অথচ আমার সম্বন্ধে যা বলাবলি হচ্ছে তারপর থেকে তিনি কখনো আমার কাছে বসেননি। এমনিভাবে এক মাস অতিক্রান্ত হলো। আমার সম্পর্কে তাহাঁর কাছে কোন ওয়াহী আসলো না। আয়িশা [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বসে তাশাহুদ পড়লেন। এরপর বলিলেন, যা হোক হে আয়িশাহ্! তোমার ব্যাপারে আমার কাছে এমন এমন খবর পৌঁছেছে। যদি তুমি এ বিষয়ে নিষ্পাপ এবং পবিত্র হও, তবে শীঘ্রই আল্লাহ তাআলা তোমার পবিত্রতার বিষয়ে ঘোষণা করবেন। আর যদি তোমার দ্বারা কোন পাপ হয়েই থাকে তবে তুমি আল্লাহর কাছে মার্জনা প্রার্থনা এবং তাওবাহ্ করো। কেননা বান্দা পাপ স্বীকার করে তাওবাহ্ করলে আল্লাহ তার তাওবাহ্ গ্রহণ করেন। আয়িশা [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন তাহাঁর কথা সমাপ্ত করিলেন, তখন আমার অশ্রুধারা বন্ধ হয়ে গেল। এমনকি তারপর আর এক ফোটা অশ্রুও আমি অনুভব করলাম না। তারপর আমি আমার পিতাকে বললাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা বলিলেন, আমার তরফ হইতে তার উত্তর দিন। তিনিও বলিলেন, আল্লাহর শপথ! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কি উত্তর দিব, আমার তা অজানা। এরপর আমি আমার মাকে বললাম, আমার তরফ হইতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে উত্তর দিন। তিনি বলিলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কি উত্তর দিব, আমি তা জানি না। আমি বললাম, তখন আমি ছিলাম কম বয়সী কিশোরী। কুরআন মাজীদও অধিক পাঠ করিতে পারতাম না। এ অবস্থা দেখে আমিই তখন বললাম, আল্লাহ শপথ! আমি জানি, আপনারা এ অপবাদের কথা শুনেছেন, মনে তা গেঁথে গেছে এবং আপনারা তা বিশ্বাস করে নিয়েছেন। কাজেই এখন যদি আমি বলি, আমি নিষ্কলুষ তবে এ বিষয়ে আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আমি মেনে নেই, যে সম্পর্কে আল্লাহ জানেন যে, আমি নিষ্পাপ, তবে আপনারা তা বিশ্বাস করবেন। আল্লাহর শপথ! আমার ও আপনাদের জন্য [নবী] ইউসুফ [আঃ]-এর পিতার কথার দৃষ্টান্ত ছাড়া ভিন্ন কোন দৃষ্টান্ত আমার দৃষ্টিতে পড়ে না। তিনি বলেছিলেন, “কাজেই পরিপূর্ণ ধৈর্যই উত্তম, তোমরা যা বলছো সে ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহই আমার আশ্রয়স্থল।”

তিনি {আয়েশাহ [রাদি.]} বলেন, অতঃপর আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম এবং বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আয়িশা [রাদি.] বলেন, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তো ঐ সময়েও জানেন যে, নিশ্চয়ই আমি নিষ্পাপ এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আমার পবিত্রতা উন্মোচন করে দিবেন। কিন্তু আল্লাহর শপথ! আমি মনে করিনি যে, আল্লাহ তাআলা আমার এ ব্যাপারে ওয়াহী অবতীর্ণ করবেন, যা পড়া হইবে। কেননা আমার ব্যাপারে পড়ার মতো আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন আয়াত অবতীর্ণ করা হইবে আমার অবস্থা তার চেয়ে বেশি নিম্নমানের বলে আমি মনে করতাম। তবে আমি প্রত্যাশা করেছিলাম যে, স্বপ্নের মধ্যে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এমন কোন বিষয় দেখবেন যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দিবেন। আয়িশাহ্ সিদ্দীকা [রাদি.] বলেন, আল্লাহ শপথ! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখনো তাহাঁর জায়গা ছেড়ে যাননি এবং গৃহের লোকও কেউ বাইরে যায়নি। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা তাহাঁর নবীর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ করেন। ওয়াহী অবতীর্ণের প্রাক্কালে নবী [সাঃআঃ]-এর উপর যে যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা দেখা দিত তার অনুরূপ অবস্থা দেখা দিলো। এমনকি তাহাঁর প্রতি অবতীর্ণকৃত বাণীর ওযনের কারণে প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের দিনেও তাহাঁর শরীর হইতে মুক্তার মতো বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরে পড়তো। আয়িশা [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে এ যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা চলে গেলে তিনি হাসতে লাগলেন এবং প্রথমে যে কথাটি বলিলেন তা হলো : হে আয়িশাহ্! সুসংবাদ গ্রহণ করো। আল্লাহ তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করিয়াছেন। এ কথা শুনে আমার মা আমাকে বলিলেন, তুমি উঠে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-সে সম্মান প্রদর্শন করো। আমি বললাম, আমি তাহাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবো না এবং আল্লাহ ব্যতীত আর কারো প্রশংসা করবো না। তিনিই আমার পবিত্রতার ব্যাপারে আয়াত নাযিল করিয়াছেন। আয়িশা [রাদি.] বলেন, আল্লাহ তাআলা আমার পবিত্রতার ব্যাপারে দশটি আয়াত [সূরাহ্ আন্ নূর ২৪ : ১১-২১] অবতীর্ণ করিয়াছেন। “যারা অপবাদ রটনা করেছে তারা তো তোমাদেরই একটি দল, একে তোমরা তোমাদের জন্যে ক্ষতিকর মনে করো না; বরং এ তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর।” ….. আয়িশা [রাদি.] বলেন, আত্মীয়তার বন্ধন ও দারিদ্রের কারণে আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.] মিসতাহ্কে আর্থিক সাহায্য করিতেন। কিন্তু আয়িশাহ্ সম্বন্ধে সে যা বলেছিল সে কারণে আবু বকর [রাদি.] শপথ করে বসলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি আর কোন সময় মিসতাহ্কে আর্থিক সহযোগিতা দিব না। তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করিলেন : “তোমাদের মাঝে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন কসম না করে যে, তারা দান করিবে না আত্মীয়-স্বজনকে …..। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদের মাফ করেন”….. পর্যন্ত।

হাব্বান ইবনি মূসা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি মুবারক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, আল-কুরআনের মধ্যে এ আয়াতটিই অধিক আশাব্যঞ্জক।

তারপর আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ শপথ! আমি অবশ্যই ভালোবাসি যে, আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিন। এরপর মিসতাহ্ [রাদি.]-এর জন্যে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করিতেন তা পুনরায় খরচ করিতে শুরু করিলেন। আর বলিলেন, তাকে আমি এ অর্থ দেয়া কোন সময় বন্ধ করবো না।

আয়িশা [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর স্ত্রী যাইনাব বিন্ত জাহ্শ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি যাইনাবকে বলেছিলেন, তুমি আয়িশাহ্ সম্বন্ধে কি জানো বা দেখেছো? জবাবে তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার কান ও চোখকে হিফাযাত করেছি। আল্লাহর শপথ! তাহাঁর ব্যাপারে আমি উত্তম ব্যতীত কিছুই জানি না।

আয়িশা [রাদি.] বলেন, নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রীদের মাঝে তিনিই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ ভীতির মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে হিফাযাত করিয়াছেন। অথচ তাহাঁর বোন হামানাহ্ বিন্ত জাহ্শ তাহাঁর পক্ষাবলম্বন করে ঝগড়া করে, আর এভাবে সে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। রাবী যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ঐ লোকদের নিকট থেকে আমাদের কাছে যা পৌঁছেছে তা এ হাদীস।

তবে রাবী ইউনুসের হাদীসের মধ্যে রয়েছে, গোত্রীয় আত্মম্ভরিতা তাকে উত্তেজিত করে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮১৮]

৬৯১৪. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

ইউনুস এবং মামার-এর অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। বর্ণনাকারী ফুলায়হ্-এর হাদীসে রয়েছে, গোত্রীয় আত্মম্ভরিতা তাকে অজ্ঞতামূলক আচরণ করিতে উত্তেজিত করেছিল।

মামার তাহাঁর বর্ণনায় যেমন বলেছেন। আর সালিহ-এর হাদীসের মধ্যে ইউনুসের বর্ণনার মতো এতে রয়েছে [আরবী] অর্থাৎ- গোত্রীয় আত্মম্ভরিতা তাকে উত্তেজিত করলো।

সালিহ-এর হাদীসে এটাও রয়েছে যে, উরওয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আয়িশা [রাদি.] হাস্সান ইবনি সাবিত [রাদি.]-কে কটু বাক্য বলার বিষয়টিকে অপছন্দ করিতেন। তিনি বলিতেন, হাস্সান তো নিম্নোক্ত কবিতা রচনা করিয়াছেন,

“আমার পিতা-মাতা, আমার ইয্যত সবই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ইয্যত-সম্মানের জন্যে রক্ষাকবচ।”

এতে এটাও বর্ধিত রয়েছে যে, আয়িশা [রাদি.] বলেন, যে লোকের ব্যাপারে দোষারোপ করা হয়েছে তিনি বলিতেন, সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি কক্ষনো কোন মহিলার-আবরণ খুলিনি। অতঃপর তিনি আল্লাহর পথে শাহীদ হন।

ইয়াকূব ইবনি ইব্রাহীম-এর হাদীসে রয়েছে [আরবী]

কিন্তু আবদুর রায্যাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, [আরবী]

আব্দ ইবনি হুমায়দ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি আবদুর রায্যাককে [আবরী] শব্দের ব্যাখ্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, [আরবী] অর্থ কঠিন গরম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮১৯]

৬৯১৫. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমার সম্পর্কে মানুষেরা যখন কুৎসা রটাতে শুরু করিল, যা আমি জানি না, তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বক্তব্য দেয়ার জন্যে দাঁড়িয়ে তাশাহ্‌হুদ পড়লেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করিলেন। এরপর বলিলেন, অতঃপর যারা আমার সহধর্মিণী সম্পর্কে অপবাদ রটাচ্ছে তাদের ব্যাপারে তোমরা আমাকে পরামর্শ দাও। আল্লাহর শপথ! আমি আমার সহধর্মিণী সম্পর্কে খারাপ কোন কিছুই জানি না এবং তারা যার ব্যাপারে অপবাদ রটাচ্ছে তাহাঁর সম্পর্কেও খারাপ কিছু আমি জানি না। আমার অনুপস্থিতিতে সে আমার ঘরে কক্ষনো প্রবেশ করেনি এবং আমি যখন সফরে বের হয়েছি সেও তখন আমার সঙ্গে সফরে বের হয়েছে। অতঃপর বর্ণনাকারী সম্পূর্ণ ঘটনাসহ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। অবশ্য এতে বর্ধিত রয়েছে যে, একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার ঘরে প্রবেশ করে আমার বাঁদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন। তখন সে বলিল, আল্লাহর শপথ! আয়িশা [রাদি.]-এর মধ্যে আমি কোন ত্রুটি দেখিনি। তবে তিনি নিদ্রায় যেতেন, আর বকরী এসে মথিত আটা খেয়ে ফেলত। অথবা বলিলেন, খামীর খেয়ে ফেলত। বর্ণনাকারী হিশাম এতে সন্দেহ করিয়াছেন। তখন নবী [সাঃআঃ]-এর কোন সহাবা তাকে ধমক দিয়ে বলিলেন, তুমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট সত্য কথা বলো। এমনকি তাঁরা তার সম্মুখে ঘটনা উত্থাপন করিলেন।

তখন বারীরাহ্‌ বলিলেন, সুব্‌হানাল্লাহ! আল্লাহর শপথ! স্বর্ণকার খাঁটি স্বর্ণের টুকরা সম্পর্কে যেমন জানে আমিও আয়েশাহ সম্বন্ধে অনুরূপ জানি। যে লোক সম্পর্কে এ অপবাদ রটানো হচ্ছিল তার কাছে এ সংবাদ পৌঁছার পর তিনিও বলিলেন, সুব্‌হানাল্লাহ। আল্লাহর শপথ! আমি কক্ষনো কোন মহিলার আবরণ খুলিনি।

আয়িশা [রাদি.] বলেন, পরে তিনি আল্লাহর রাস্তায় শাহীদ হন।

এতে আরো বর্ধিত রয়েছে যে, অপবাদ রটনাকারীদের মাঝে ছিলেন মিসতাহ্‌, হামনাহ্‌, হাস্‌সান। আর মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনি উবাই সে ছিল ঐ লোক যে খুঁজে খুঁজে বের করে এসব জমা করত। সে এবং হামনাই এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮২০]

১১. অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মর্যাদা সন্দেহমুক্ত হওয়া

৬৯১৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উম্মু ওয়ালাদের [দাসীদের] সঙ্গে এক লোকের প্রতি অভিযোগ আসে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আলী [রাদি.]-কে বলিলেন, যাও, তার শীরোচ্ছেদ কর। আলী [রাদি.] তার কাছে গিয়ে দেখলেন, সে কূয়ার মধ্যে শরীর ঠাণ্ডা করছে। আলী [রাদি.] তাকে বলিলেন, বেরিয়ে এসো। সে আলী [রাদি.]-এর দিকে হাত এগিয়ে দিলো। তিনি তাকে বের করিলেন এবং দেখলেন, তার পুরুষাঙ্গ সম্পূর্ণ কাটা, তার লিঙ্গ নেই। তখন আলী [রাদি.] তাকে হত্যা করা হইতে বিরত থাকলেন। তারপর তিনি নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! সে তো লিঙ্গকাটা, তার যে লিঙ্গ নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৮২১]


Posted

in

by

Comments

One response to “তাওবাহ, ইস্তিগফার পাপ করা ও অপবাদ দেয়া”

Leave a Reply