উপবাস, রুক্ষ ও নীরস জীবন যাপন করা – রিয়াদুস সালেহীন
উপবাস, রুক্ষ ও নীরস জীবন যাপন করা – রিয়াদুস সালেহীন >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
পরিচ্ছেদ – ৫৬: উপবাস, রুক্ষ ও নীরস জীবন যাপন করা, পানাহার ও পোশাক ইত্যাদি মনোরঞ্জনমূলক বস্তুতে অল্পে তুষ্ট হওয়া এবং প্রবৃত্তির দাসত্ব বর্জন করার মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿۞فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ أَضَاعُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّبَعُواْ ٱلشَّهَوَٰتِۖ فَسَوۡفَ يَلۡقَوۡنَ غَيًّا ٥٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ وَلَا يُظۡلَمُونَ شَيۡٔٗا ٦٠ ﴾ [مريم: ٥٩، ٦٠]
অর্থাৎ “তাহাদের পর এল অপদার্থ পরবর্তীগণ, তারা নামায নষ্ট করল ও প্রবৃত্তিপরায়ণ হল; সুতরাং তারা অচিরেই অমঙ্গল প্রত্যক্ষ করিবে। কিন্তু তারা নয় যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে; তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করিবে; আর তাহাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না।” [সূরা মারয়্যাম ৫৯-৬০ আয়াত]
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوۡمِهِۦ فِي زِينَتِهِۦۖ قَالَ ٱلَّذِينَ يُرِيدُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا يَٰلَيۡتَ لَنَا مِثۡلَ مَآ ُوتِيَ قَٰرُونُ إِنَّهُۥ لَذُو حَظٍّ عَظِيمٖ ٧٩ وَقَالَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ وَيۡلَكُمۡ ثَوَابُ ٱللَّهِ خَيۡرٞ لِّمَنۡ ءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗاۚ ﴾ [القصص: ٧٩، ٨٠]
অর্থাৎ “কারূন তার সম্প্রদায়ের সম্মুখে জাঁকজমক সহকারে বাহির হল। যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলিল, আহা! কারূনকে যা দেওয়া হয়েছে সেরূপ যদি আমাদেরও থাকত; প্রকৃতই সে মহা ভাগ্যবান। আর যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলিল, ধিক্ তোমাদের! যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, তাহাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ। আর ধৈর্যশীল ব্যতীত তা অন্য কেউ পায় না।” [সূরা কাস্বাস ৭৯-৮০ আয়াত]
আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন,
﴿ ثُمَّ لَتُسَۡٔلُنَّ يَوۡمَئِذٍ عَنِ ٱلنَّعِيمِ ٨ ﴾ [التكاثر: ٨]
অর্থাৎ “এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা সুখ-সম্পদ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে।” [সূরা তাকাসুর ৮]
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ مَّن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡعَاجِلَةَ عَجَّلۡنَا لَهُۥ فِيهَا مَا نَشَآءُ لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلۡنَا لَهُۥ جَهَنَّمَ يَصۡلَىٰهَا مَذۡمُومٗا مَّدۡحُورٗا ١٨ ﴾ [الاسراء: ١٨]
অর্থাৎ “কেউ পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা সত্বর দিয়ে থাকি, পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি; সেখানে সে প্রবেশ করিবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে দূরীকৃত অবস্থায়।” [সূরা বানী ইস্রাঈল ১৮ আয়াত]
1/496 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: مَا شَبِعَ آلُ مُحَمَّدٍ ﷺ مِنْ خُبْزِ شَعِيرٍ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتَّى قُبِضَ . متفقٌ عَلَيْهِ .
وفي رواية: مَا شَبِعَ آلُ محَمّدٍ ﷺ مُنْذُ قَدِمَ المَدِينَةَ مِنْ طَعَامِ البُرِّ ثَلاثَ لَيَالٍ تِبَاعاً حَتَّى قُبِضَ .
১/৪৯৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহুআনহা বলেন, ‘মুহাম্মাদ সাঃআঃ এর পরিজন তাহাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ক্রমাগত দু’দিন যবের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খেতে পাননি।’ [বুখারী ও মুসলিম] [1]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘মুহাম্মাদ সাঃআঃ এর পরিজন মদীনায় আগমনের পর থেকে তাহাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ক্রমাগত তিনদিন পর্যন্ত গমের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খেতে পাননি।’
2/497 وَعَن عُروَةَ، عَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، أنَّهَا كَانَتْ تَقُولُ: وَاللهِ، يَا ابْنَ أُخْتِي، إنْ كُنَّا نَنْظُرُ إِلَى الهِلاَلِ، ثُمَّ الهِلالِ: ثَلاَثَةُ أَهلَّةٍ في شَهْرَيْنِ، وَمَا أُوقِدَ فِي أبْيَاتِ رَسُولِ اللهِ ﷺ نَارٌ. قُلْتُ: يَا خَالَةُ! فَمَا كَانَ يُعِيشُكُمْ ؟ قَالَت: الأَسْوَدَانِ التَّمْرُ وَالمَاءُ، إِلاَّ أنَّهُ قَدْ كَانَ لِرَسُولِ اللهِ ﷺ جِيرَانٌ مِنَ الأَنْصَارِ، وكَانَتْ لَهُمْ مَنَائِحُ وَكَانُوا يُرْسِلُونَ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ مِنْ ألْبَانِهَا فَيَسْقِينَا . متفقٌ عَلَيْهِ
২/৪৯৭। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু‘আনহা হইতে বর্ণিত, তিনি [একবার] উরওয়াহ রাঃআঃকে বলিলেন, ‘হে ভগিনীপুত্র! আমরা দু’মাসের মধ্যে তিনবার নয়া চাঁদ দেখতাম। কিন্তু এর মধ্যে আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর গৃহসমূহে [রান্নার] জন্য আগুন জ্বালানো হত না।’ উরওয়াহ বলিলেন, ‘খালা! তাহলে আপনারা কী খেয়ে জীবন কাটাতেন?’ তিনি বলিলেন, ‘কালো দু’টো জিনিস দিয়ে। অর্থাৎ শুকনো খেজুর আর পানিই [আমাদের খাদ্য হত]। অবশ্য রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর প্রতিবেশী কয়েকজন আনসারী সাহাবীর দুগ্ধবতী উটনী ও ছাগী ছিল। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর জন্য দুধ পাঠতেন, তখন তিনি আমাদেরকে তা পান করাতেন।’ [বুখারী ও মুসলিম] [2]
3/498 وَعَن أَبي سَعِيدٍ المَقبُرِيِّ، عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّهُ مَرَّ بِقَومٍ بَيْنَ أَيدِيهِمْ شَاةٌ مَصْلِيَّةٌ، فَدَعَوْهُ فَأبَى أَنْ يأْكُلَ . وَقَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مِنَ الدُّنْيَا وَلَمْ يَشْبَعْ مِنْ خُبْزِ الشَّعيرِ . رواه البخاري
৩/৪৯৮। আবূ সা‘ঈদ মাক্ববুরী বলেন, একদা আবু হুরায়রা রাঃআঃ একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদের সামনে ভুনা বকরী ছিল। তারা তাঁকে [খেতে] ডাকল। তিনি খেতে রাজী হলেন না এবং বলিলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন অথচ তিনি কোন দিন যবের রুটিও পেট পুরে খাননি।’ [বুখারী] [3]
4/499 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: لَمْ يَأكُلِ النَّبيُّ ﷺ عَلَى خِوَانٍ حَتَّى مَاتَ، وَمَا أكَلَ خُبْزاً مُرَقَّقاً حَتَّى مَاتَ . رواه البخاري . وفي رواية لَهُ: وَلاَ رَأى شَاةً سَمِيطاً بعَيْنِهِ قَطُّ .
৪/৪৯৯। আনাস ইবনি মালেক রাঃআঃ কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাঃআঃ কখনো [টেবিল জাতীয় উঁচু স্থানে] এর উপর খাবার রেখে আহার করেননি[4] এবং তিনি মৃত্যু পর্যন্ত পাতলা [চাপাতি] রুটি খাননি। বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, আর তিনি কখনোও ভুনা [গোটা] বকরী স্বচক্ষে দেখেননি। [বুখারী] [5]
5/500 وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: ذَكَرَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ رضي الله عنه، مَا أَصَابَ النَّاسُ مِنَ الدُّنْيَا، فَقَالَ: لَقَدْ رَأيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَظَلُّ الْيَوْمَ يَلْتَوِي مَا يَجِدُ مِنَ الدَّقَلِ مَا يَمْلأ بِهِ بَطْنَهُ. رواه مسلم
৫/৫০০। নু‘মান ইবনি বাশীর রাঃআঃ বলেন, উমার ইবনুল খাত্ত্বাব রাঃআঃ [পূর্বেকার তুলনায় বর্তমানে] লোকেরা যে দুনিয়ার [ধন-সম্পদ] অধিক জমা করে ফেলেছে, সে কথা উল্লেখ করে বলিলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে দেখেছি, তিনি সারা দিন ক্ষুধায় থাকার ফলে পেটের উপর ঝুঁকে থাকতেন [যেন ক্ষুধার জ্বালা কম অনুভব হয়]। তিনি পেট ভরার জন্য নিকৃষ্ট মানের খুরমাও পেতেন না।’ [মুসলিম] [6]
6/501 وَعَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه، قَالَ: مَا رَأى رَسُول اللهِ ﷺ النَّقِيَّ مِنْ حِينِ ابْتَعَثَهُ الله تَعَالَى حَتَّى قَبضَهُ الله تَعَالَى . فَقِيلَ لَهُ: هَلْ كَانَ لَكُمْ في عَهدِ رَسُول اللهِ ﷺ مَنَاخِلُ ؟ قَالَ: مَا رَأى رَسُول اللهِ ﷺ مُنْخُلاً مِنْ حِينَ ابْتَعَثَهُ اللهُ تَعَالَى حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ تَعَالَى، فَقِيلَ لَهُ: كَيْفَ كُنْتُمْ تَأكُلُونَ الشَّعِيرَ غَيْرَ مَنْخُولٍ ؟ قَالَ: كُنَّا نَطحَنُهُ وَنَنْفُخُهُ، فيَطيرُ مَا طَارَ، وَمَا بَقِيَ ثَرَّيْنَاهُ . رواه البخاري
৬/৫০১। সাহল ইবনি সা‘দ রাঃআঃ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে [রসূলরূপে] পাঠিয়েছেন, তখন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত [চালুনে চালা] ময়দা দেখেননি। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হল, ‘রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর যুগে কি আপনাদের আটা চালার চালুনি ছিল?’ তিনি বলিলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে [রসূলরূপে] পাঠানোর পর থেকে মৃত্যুবরণ পর্যন্ত তিনি আটা চালার চালুনি দেখেননি।’ তাঁকে বলা হল, ‘তাহলে আপনারা আচালা যবের আটা কিভাবে খেতেন?’ তিনি বলিলেন, ‘আমরা যব পিষে ফুঁক দিতাম, এতে যা উড়ার উড়ে যেত, আর যা অবশিষ্ট থাকত তা ভিজিয়ে খামীর বানাতাম।’ [বুখারী] [7]
7/502 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: خَرَجَ رَسُول اللهِ ﷺ ذَاتَ يَوْمٍ أَوْ لَيْلَةٍ، فَإذَا هُوَ بأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، فَقَالَ:«مَا أَخْرَجَكُمَا مِنْ بُيُوتِكُما هَذِهِ السَّاعَةَ ؟ » قَالاَ: الجُوعُ يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ: «وَأَنَا، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لأَخْرَجَنِي الَّذِي أَخْرَجَكُما، قُومَا»، فقَامَا مَعَهُ، فَأتَى رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ، فَإِذَا هُوَ لَيْسَ في بيْتِهِ، فَلَمَّا رَأَتْهُ المَرْأَةُ، قَالَت: مَرْحَبَاً وَأهلاً .فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللهِ ﷺ: «أيْنَ فُلاَنُ ؟ » قَالَت: ذَهَبَ يَسْتَعْذِبُ لنَا المَاءَ . إِذْ جَاءَ الأَنْصَارِيُّ، فَنَظَرَ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ وَصَاحِبَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: الحَمْدُ للهِ، مَا أَحَدٌ الْيَوْمَ أكْرَمَ أضْيَافاً مِنِّي، فَانْطَلَقَ فَجَاءَهُمْ بِعِذْقٍ فِيهِ بُسْرٌ وَتَمْرٌ وَرُطَبٌ، فَقَالَ: كُلُوا، وَأَخَذَ الْمُدْيَةَ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إيْاكَ وَالْحَلُوبَ » فَذَبَحَ لَهُمْ، فَأكَلُوا مِنَ الشَّاةِ وَمِنْ ذَلِكَ العِذْقِ وَشَرِبُوا . فَلَمَّا أنْ شَبِعُوا وَرَوُوا قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لأَبي بَكْر وَعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هَذَا النَّعِيمِ يَوْمَ القِيَامَةِ، أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُيُوتِكُمُ الْجُوعُ، ثُمَّ لَمْ تَرْجِعُوا حَتَّى أصَابَكُمْ هَذَا النَّعِيمُ ». رواه مسلم
৭/৫০২। আবু হুরায়রা রাঃআঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ কোন একদিন অথবা কোন এক রাতে [ঘর থেকে] বের হলেন, অতঃপর অকস্মাৎ আবূ বকর ও উমার [রাঃআঃমা]এর সঙ্গে তাহাঁর দেখা হল। তিনি বলিলেন, ‘‘এ সময় তোমরা বাড়ী থেকে কেন বের হয়েছ?’’ তাঁরা বলিলেন, ‘ক্ষুধার তাড়নায় হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বলিলেন, ‘‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। আমিও সেই কারণে বাড়ি থেকে বের হয়েছি, যে কারণে তোমরা বের হয়েছ। তোমরা ওঠো [এবং আমার সঙ্গে চল]।’’ অতঃপর তাঁরা দু’জনে তাহাঁর সঙ্গে চলতে লাগলেন। তারপর তিনি এক আনসারীর বাড়ী এলেন। আনসারী সে সময় বাড়ীতে ছিলেন না। যখন তাহাঁর স্ত্রী নবী সাঃআঃকে দেখলেন তখন অভ্যর্থনা ও সবাগত জানালেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁকে বলিলেন, ‘‘অমুক [আনসারী] কোথায়?’’ তিনি বলিলেন, ‘আমাদের জন্য মিঠা পানি আনতে গেছেন।’ এর মধ্যে আনসারী এসে গেলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ও তাহাঁর সঙ্গীদ্বয়কে দেখে বলিলেন, ‘আলহামদু লিল্লাহ, আজ আমার [বাড়ীর] চেয়ে সম্মানিত মেহমান কারো [বাড়ীতে] নেই।’ অতঃপর তিনি চলে গেলেন এবং খেজুরের একটা কাঁদি আনলেন, যাতে কাঁচা, শুকনো এবং পাকা [টাটকা] খেজুর ছিল। অতঃপর আনসারী বলিলেন, ‘আপনারা খান এবং তিনি নিজে ছুরি ধরলেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁকে বলিলেন, ‘‘দুধালো ছাগল জবাই করো না।’’ অতঃপর তিনি [ছাগল] জবাই করিলেন। তাঁরা ছাগলের [মাংস] খেলেন, ঐ খেজুর কাঁদি থেকে খেজুর খেলেন এবং পানি পান করিলেন। তারপর তাঁরা যখন [পানাহার করে] পরিতৃপ্ত হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আবূ বকর ও উমার [রাঃআঃমা]কে বলিলেন, ‘‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! নিশ্চয় তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ক্ষুধা তোমাদেরকে বাড়ী থেকে বের করেছিল, কিন্তু এখন এ নিয়ামত উপভোগ করে নিজেদের [বাড়ী] ফিরে যাচ্ছ।’’ [মুসলিম] [8]
উক্ত আনসারীর নাম ছিলঃ আবুল হাইসাম তাইয়িহান; যেমন তিরমিযীতে আছে। আর উক্ত জিজ্ঞাসাবাদ গণনার উদ্দেশ্যে করা হবে, ধমকি বা শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়।
8/503 وَعَن خَالِدِ بنِ عُمَيْرٍ العَدَوِيِّ، قَالَ: خَطَبَنَا عُتْبَةُ بنُ غَزْوَانَ، وَكَانَ أمِيراً عَلَى البَصْرَةِ، فَحَمِدَ الله وَأثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ الدُّنْيَا قَدْ آذَنَتْ بِصُرْمٍ، وَوَلَّتْ حَذَّاءَ، وَلَمْ يَبْقَ مِنْهَا إِلاَّ صُبَابَةٌ كَصُبَابَةِ الإنَاءِ يَتَصَابُّهَا صَاحِبُهَا، وَإِنَّكُمْ مُنْتَقِلُونَ مِنْهَا إِلَى دَارٍ لاَ زَوَالَ لَهَا، فَانْتَقِلُوا بِخَيرِ مَا بِحَضْرَتِكُمْ، فَإِنَّهُ قَدْ ذُكِرَ لَنَا أنَّ الحَجَرَ يُلْقَى مِنْ شَفِيرِ جَهَنَّمَ فَيَهْوِي فِيهَا سَبْعِينَ عَاماً، لاَ يُدْرِكُ لَهَا قَعْراً، وَاللهِ لَتُمْلأَنَّ أَفَعَجِبْتُمْ ؟! وَلَقدْ ذُكِرَ لَنَا أنَّ مَا بَيْنَ مِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الْجَنَّةِ مَسيرَةُ أرْبَعِينَ عَاماً، وَليَأتِيَنَّ عَلَيْهَا يَوْمٌ وَهُوَ كَظِيظٌ مِنَ الزِّحَامِ، وَلَقَدْ رَأيْتُنِي سَابعَ سَبْعَةٍ مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ، مَا لَنَا طَعَامٌ إِلاَّ وَرَقُ الشَّجَرِ، حَتَّى قَرِحَتْ أشْدَاقُنَا، فَالتَقَطْتُ بُرْدَةً فَشَقَقْتُهَا بَيْنِي وَبَيْنَ سَعْدِ بْنِ مَالِكٍ، فاتَّزَرْتُ بِنِصْفِهَا، وَاتَّزَرَ سَعْدٌ بِنِصْفِهَا، فَمَا أصْبَحَ اليَوْمَ مِنَّا أحَدٌ إِلاَّ أَصْبَحَ أمِيراً عَلَى مِصرٍ مِنَ الأَمْصَارِ، وَإنِّي أعُوذُ بِاللهِ أنْ أكُونَ فِي نَفْسِي عَظِيماً، وَعِنْدَ اللهِ صَغِيراً . رواه مسلم
৮/৫০৩। খালেদ ইবনি উমাইর আদাবী রাঃআঃ বলেন, একদা বাসরার গভর্নর উতবাহ ইবনি গাযওয়ান খুতবাহ দিলেন। তিনি [খুতবায় সর্বপ্রথমে] আল্লাহর প্রশংসা করিলেন, অতঃপর বলিলেন, ‘আম্মা বাদ! নিশ্চয় দুনিয়া তার ধ্বংসের কথা ঘোষণা করে দিয়েছে এবং সে মুখ ফিরিয়ে দ্রুতগতিতে পলায়মান আছে। এখন তার [বয়স] পাত্রের তলায় অবশিষ্ট পানীয়ের মত বাকী রয়ে গেছে, যা পাত্রের মালিক [সবশেষে] পান করে। [আর তোমরা এ দুনিয়া থেকে এমন [আখেরাতের] গৃহের দিকে প্রত্যাবর্তন করছ যার ক্ষয় নেই, সুতরাং তোমরা তোমাদের সামনের উত্তম জিনিস নিয়ে প্রত্যাবর্তন কর। কারণ, আমাদেরকে জানানো হয়েছে যে, জাহান্নামের উপর কিনারা থেকে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছে, তা ওর মধ্যে সত্তর বছর পর্যন্ত পড়তে থাকবে, তবুও তা তার গভীরতায় [শেষ প্রান্তে] পৌঁছতে পারবে না। আল্লাহর কসম! জাহান্নামকে [মানুষ দিয়ে] পরিপূর্ণ করে দেওয়া হবে। তোমরা এটা আশ্চর্য মনে করছ? আর আমাদেরকে এও জানানো হয়েছে যে, জান্নাতের দুয়ারের দু’টি চৌকাঠের মধ্যভাগের দূরত্ব চল্লিশ বছরের পথ। তার উপর এমন এক দিন আসবে যে, তাতে লোকের ভিড়ে পরিপূর্ণ থাকবে।
আমি [ইসলাম প্রচারের শুরুতে] রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর সঙ্গে সাত জনের মধ্যে একজন ছিলাম। [তখন আমাদের এ অবস্থা ছিল যে,] গাছের পাতা ছাড়া আমাদের অন্য কিছুই খাবার ছিল না। এমনকি [তা খেয়ে] আমাদের কশে ঘা হয়ে গেল। [সে সময়] আমি একখানি চাদর কুড়িয়ে পেলাম, অতঃপর তা আমি দু’টুকরো করে আমার এবং সা‘দ ইবনি খালেদের মধ্যে ভাগ করে নিলাম। তারপর আমি তার অর্ধেকটাকে লুঙ্গী বানিয়ে পরলাম এবং সা‘দও অর্ধেক লুঙ্গী বানিয়ে পরলেন। কিন্তু আজ আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই কোন না কোন শহরের শাসনকর্তা হয়ে আছে। আর আমি নিজের কাছে বড় এবং আল্লাহর কাছে ছোট হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ [মুসলিম] [9]
9/504 وَعَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه، قَالَ: أخْرَجَتْ لَنَا عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنهَا كِسَاءً وَإزاراً غَلِيظاً، قالَتْ: قُبِضَ رَسُولُ اللهِ ﷺ في هَذَيْنِ . متفقٌ عَلَيْهِ
৯/৫০৪। আবূ মূসা আশআরী রাঃআঃ বলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আমাদের জন্য একখানি চাদর এবং একখানি মোটা লুঙ্গী বের করে বলিলেন, ‘এ দু’টি [পরে থাকা অবস্থা]তেই রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ মৃত্যুবরণ করিয়াছেন।’ [বুখারী-মুসলিম] [10]
10/505 وَعَن سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله عنه، قَالَ: إنِّي لأَوَّلُ الْعَرَبِ رَمَى بِسَهْمٍ في سَبِيلِ اللهِ، وَلَقَدْ كُنَّا نَغْزُو مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ مَا لَنَا طَعَامٌ إِلاَّ وَرَقُ الْحُبْلَةِ، وَهذَا السَّمُرُ، حَتَّى إنْ كَانَ أحَدُنَا لَيَضَعُ كَمَا تَضَعُ الشَّاةُ مَا لَهُ خَلْطٌ . متفقٌ عَلَيْهِ
১০/৫০৫। সা‘দ ইবনি আবী অক্কাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমিই প্রথম ব্যক্তি যে আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করেছি। আমরা যখন আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর সাথে থেকে যুদ্ধ করি, তখন আমাদের অবস্থা এরূপ ছিল যে, হুবলাহ গাছের পাতা ও এই বাবলা ছাড়া আমাদের অন্য কিছুই খাবার ছিল না। এ জন্য আমাদের প্রত্যেকেই ছাগলের লাদির মত মলত্যাগ করিতেন; যার একটি আরেকটির সাথে মিশত না।’ [বুখারী ও মুসলিম] [11]
11/506 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُول اللهِ ﷺ: « اَللهم اجْعَلْ رِزْقَ آلِ مُحَمّدٍ قُوتاً ». متفقٌ عَلَيْهِ
১১/৫০৬। আবু হুরায়রা রাঃআঃ বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ দো‘আ করিতেন, ‘‘হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাঃআঃ এর পরিবার-পরিজনের জন্য প্রয়োজনীয় জীবিকা প্রদান কর।’’ [বুখারী ও মুসলিম] [12]
12/507 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: وَاللهِ الَّذِي لاَ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ، إنْ كُنْتُ لأَعْتَمِدُ بِكَبِدِي عَلَى الأَرْضِ مِنَ الجُوعِ، وَإنْ كُنْتُ لأَشُدُّ الحَجَرَ عَلَى بَطنِي مِنَ الْجُوعِ . وَلَقَدْ قَعَدْتُ يَوماً عَلَى طَرِيقِهِمُ الَّذِي يَخْرُجُونَ مِنْهُ، فَمَرَّ بِي النِّبيُّ ﷺ، فَتَبَسَّمَ حِيْنَ رَآنِي، وَعَرَفَ مَا فِي وَجْهِي وَمَا فِي نَفْسِي، ثُمَّ قَالَ: «أَبَا هِرٍّ » قُلْتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «الْحَقْ » وَمَضَى فَاتَّبَعْتُهُ، فَدَخَلَ فَاسْتَأذَنَ، فَأَذِنَ لِي فَدَخَلْتُ، فَوَجَدَ لَبَنَاً في قَدَحٍ، فَقَالَ: « مِنْ أَيْنَ هَذَا اللَّبَنُ ؟ » قَالُوا: أهْدَاهُ لَكَ فُلانٌ -أَو فُلانَةٌ- قَالَ: « أَبَا هِرٍّ » قُلتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «الْحَقْ إِلَى أهْلِ الصُّفَّةِ فَادْعُهُمْ لِي » قَالَ: وَأهْلُ الصُّفَّةِ أضْيَافُ الإِسْلاَمِ، لاَ يَأوُونَ علَى أهْلٍ وَلاَ مَالٍ وَلاَ عَلَى أحَدٍ، وَكَانَ إِذَا أتَتْهُ صَدَقَةٌ بَعَثَ بِهَا إلَيْهِمْ، وَلَمْ يَتَنَاوَلْ مِنْهَا شَيْئاً، وَإِذَا أتَتْهُ هَدِيَّةٌ أرْسَلَ إلَيْهِمْ، وَأصَابَ مِنْهَا، وأشْرَكَهُمْ فِيهَا . فَسَاءَنِي ذَلِكَ، فَقُلْتُ: وَمَا هَذَا اللَّبَنُ في أهْلِ الصُّفَّةِ ! كُنْتُ أحَقُّ أنْ أُصِيبَ مِنْ هَذَا اللَّبَنِ شَرْبَةً أتَقَوَّى بِهَا، فَإذَا جَاءُوا وَأمَرَنِي فَكُنْتُ أنَا أُعْطِيهِمْ ؛ وَمَا عَسَى أنْ يَبْلُغَنِي مِنْ هَذَا اللَّبَنِ . وَلَمْ يَكُنْ مِنْ طَاعَةِ اللهِ وَطَاعَةِ رَسُولِ اللهِ ﷺ بُدٌّ، فَأَتَيْتُهُمْ فَدَعَوْتُهُمْ، فَأقْبَلُوا وَاسْتَأذَنُوا، فَأَذِنَ لَهُمْ وَأخَذُوا مَجَالِسَهُمْ مِنَ الْبَيْتِ، قَالَ: «يَا أَبَا هِرٍّ » قُلْتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «خُذْ فَأعْطِهِمْ » قَالَ: فَأخَذْتُ القَدَحَ، فَجَعَلْتُ أُعْطِيهِ الرَّجُل فَيَشْرَبُ حَتَّى يَرْوَى، ثُمَّ يَرُدُّ عَلَيَّ الْقَدَحَ، فَأُعْطِيهِ الرَّجُلَ فَيَشْرَبُ حَتَّى يَرْوَى، ثُمَّ يَرُدُّ عَلَيَّ الْقَدَحَ، فَأُعْطِيهِ الرَّجُلَ فَيَشْرَبُ حَتَّى يَرْوَى، ثُمَّ يَرُدُّ عَلَيَّ الْقَدَحَ حَتَّى انْتَهَيْتُ إِلَى النَّبيِّ ﷺ، وَقَدْ رَوِيَ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ، فَأخَذَ الْقَدَحَ فَوَضَعَهُ عَلَى يَدِهِ، فَنَظَرَ إليَّ فَتَبَسَّمَ، فَقَالَ: «أَبَا هِرٍّ » قُلْتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: « بَقيتُ أنَا وَأنْتَ » قُلْتُ: صَدَقْتَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ:«اقْعُدْ فَاشْرَبْ » فَقَعَدْتُ فَشَرِبْتُ، فَقَالَ« اشْرَبْ » فَشَرِبْتُ، فَمَا زَالَ يَقُولُ: «اشْرَبْ » حَتَّى قُلْتُ: لاَ، وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ لاَ أجِدُ لَهُ مَسْلكاً ! قَالَ:« فَأرِنِي » فَأعْطَيْتُهُ الْقَدَحَ، فَحَمِدَ الله تَعَالَى، وَسَمَّى وَشَرِبَ الفَضْلَةَ . رواه البخاري
১২/৫০৭। আবু হুরায়রা রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সেই আল্লাহর কসম, যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই! আমি ক্ষুধার জ্বালায় মাটিতে কলিজা [পেট] লাগাতাম এবং পেটে পাথর বাঁধতাম। একদিন লোকেরা যে রাস্তায় বের হয়, সে রাস্তায় বসে গেলাম। কিছুক্ষণ পর নবী সাঃআঃ আমাকে অতিক্রম করা কালীন সময়ে দেখে মুচকি হাসলেন এবং আমার চেহারার অবস্থা ও মনের কথা বুঝে ফেলে বলিলেন, ‘‘আবূ হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বলিলেন, ‘‘আমার পিছন ধর।’’ সুতরাং তিনি চলতে লাগলেন এবং আমি তাহাঁর অনুসরণ করিতে লাগলাম। তিনি [নিজ ঘরে] প্রবেশ করিলেন। অতঃপর তিনি আমার জন্য অনুমতি চাইলেন। তারা আমার জন্য অনুমতি দিলে আমি প্রবেশ করলাম। ঘরে এক পিয়ালা দুধ [দেখিতে] পেলেন। তিনি বলিলেন, ‘‘এ দুধ কোত্থেকে এল?’’ তারা বলিল, ‘আপনার জন্য অমুক লোক বা মহিলা উপঢৌকন পাঠিয়েছে।’ তিনি বলিলেন, ‘‘আবূ হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বলিলেন, ‘‘আহলে সুফ্ফাদের ডেকে আন।’’ তাঁরা ইসলামের মেহমান ছিলেন, তাঁদের কোন আশ্রয় ছিল না। ছিল না কোন পরিবার ও ধন-সম্পদ বা অন্য কিছু। [সাদকাহ ও হাদিয়াতে তাঁদের জীবন কাটত।] তাহাঁর নিকট কোন সাদকাহ এলে তিনি সবটুকুই তাঁদের নিকট পাঠিয়ে দিতেন। তা থেকে তিনি কিছুই গ্রহণ করিতেন না। আর কোন হাদিয়া বা উপঢৌকন এলেও তাঁদের নিকট পাঠাতেন। কিন্তু তা থেকে কিছু গ্রহণ করিতেন এবং তাঁদেরকে তাতে শরীক করিতেন। [তিনি যখন তাঁদেরকে ডাকতে বলিলেন,] তখন আমাকে খারাপ লাগল। আমি [মনে মনে] বললাম, ‘এই টুকু দুধে আহলে সূফ্ফাদের কী হবে? আমিই তো বেশী হকদার যে, এই দুধ পান করে একটু শক্তিশালী হতাম। কিন্তু যখন তাঁরা আসবেন এবং তিনি আমাকে আদেশ করলে আমি তাঁদেরকে দুধ পরিবেশন করব। তারপর আমার ভাগে এই দুধের কতটুকুই বা জুটবে!’ অথচ আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের কথা মান্য করা ছাড়া অন্য কোন উপায়ও ছিল না। সুতরাং আমি তাঁদের নিকট এসে তাঁদেরকে ডাকলাম। তাঁরা এসে প্রবেশ অনুমতি নিয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করিলেন। তিনি বলিলেন, ‘‘আবূ হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বলিলেন, ‘‘পিয়ালা নাও এবং ওদেরকে দাও।’’ সুতরাং আমি পিয়ালাটি নিয়ে এক একজনকে দিতে লাগলাম। তিনি তৃপ্তিসহকারে পান করে আমাকে পিয়ালা ফেরৎ দিলেন। অতঃপর আর একজনকে দিলাম। তিনি তৃপ্তিসহকারে পান করে আমাকে পিয়ালা ফেরৎ দিলেন। অতঃপর আর একজনকে দিলাম। তিনি তৃপ্তিসহকারে পান করে আমাকে পিয়ালা ফেরৎ দিলেন। এইভাবে পরিশেষে নবী সাঃআঃ এর নিকট এসে উপস্থিত হলাম। সে পর্যন্ত তাঁদের সবাই পান করে পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন। অতঃপর তিনি পিয়ালাটি নিয়ে নিজের হাতে রাখলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলিলেন, ‘‘আবূ হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বলিলেন, ‘‘এখন বাকী আমি আর তুমি।’’ আমি বললাম, ‘ঠিকই বলেছেন হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বলিলেন, ‘‘বসো এবং পান কর।’’ আমি বসে পান করলাম। তিনি আবার বলিলেন, ‘‘পান কর।’’ সুতরাং আমি আবার পান করলাম। অতঃপর তিনি আমাকে পান করার কথা বলিতেই থাকলেন। পরিশেষে আমি বললাম, ‘না। [আর পারব না।] সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করিয়াছেন, এর জন্য আমার পেটে আর কোন জায়গা নেই!’ অতঃপর তিনি বলিলেন, ‘‘কৈ আমাকে দেখাও।’’ সুতরাং আমি তাঁকে পিয়ালা দিলে তিনি মহান আল্লাহর প্রশংসা করিলেন এবং ‘বিসমিল্লাহ’ বলে অবশিষ্ট দুধ পান করিলেন। [বুখারী] [13]
13/508 وَعَن مُحَمَّدِ بنِ سِيرِينَ، عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: لَقَدْ رَأيْتُنِي وَإنِّي لأَخِرُّ فِيمَا بَيْنَ مِنْبَرِ رَسُول اللهِ ﷺ إِلَى حُجْرَةِ عائِشَةَ رضي الله عنها مَغْشِيّاً عَلَيَّ، فَيَجِيءُ الجَائِي، فَيَضَعُ رِجْلَهُ عَلَى عُنُقِي، وَيَرَى أنِّي مَجْنُونٌ وَمَا بِي مِنْ جُنُونٍ، مَا بِي إِلاَّ الْجُوعُ . رواه البخاري
১৩/৫০৮। মুহাম্মাদ ইবনি সীরীন আবু হুরায়রা রাঃআঃ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমার এ অবস্থা ছিল যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর মিম্বর এবং আয়েশা রাদিয়াল্লাহুআনহার কক্ষের মধ্যস্থলে [ক্ষুধার জ্বালায়] বেহুশ হয়ে পড়ে থাকতাম। অতঃপর আগন্তুক আসত এবং আমাকে পাগল মনে করে সে তার পা আমার গর্দানের উপর রাখত, অথচ আমার মধ্যে কোন পাগলামি ছিল না। কেবলমাত্র ক্ষুধা ছিল। [যার তীব্রতায় আমি চৈতন্য হারিয়ে ফেলতাম!]’ [বুখারী] [14]
14/ 509 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: تُوُفِّي رَسُولُ اللهِ ﷺ وَدِرْعُهُ مَرْهُونَةٌ عِنْدَ يَهُودِي في ثَلاثِينَ صَاعاً مِنْ شَعِير . متفق عَلَيْهِ
৫০৯. ১৪/৫০৯। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাহাঁর বর্ম ত্রিশ সা’ [প্রায় ৭৫ কেজি] যবের বিনিময়ে এক ইয়াহুদীর নিকট বন্ধক রাখা ছিল।’ [বুখারী ও মুসলিম][15]
15/510 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: رَهَنَ النَّبِيُّ ﷺ دِرْعَهُ بِشَعِيرٍ، وَمَشَيْتُ إِلَى النَّبيِّ ﷺ بخُبْزِ شَعِيرٍ وَإهَالَةِ سَنِخَةٍ، وَلَقَدْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ:«مَا أصْبَحَ لآلِ مُحَمّدٍ صَاعٌ وَلاَ أمْسَى» وَإنَّهُمْ لَتِسْعَةُ أبيَات. رواه البخاري
১৫/৫১০। আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাঃআঃ যবের বিনিময়ে তাহাঁর বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন। আর আমি নবী সাঃআঃ এর কাছে যবের রুটি ও [নষ্ট হওয়া] দুর্গন্ধময় পুরানো চর্বি নিয়ে গেছি। আমি তাঁকে [নবী সাঃআঃকে] বলিতে শুনেছি যে, ‘‘মুহাম্মাদের পরিবারের কাছে কোন সকাল বা সন্ধ্যায় এক সা’ [প্রায় আড়াই কেজি কোন খাদ্যবস্তু] থাকে না।’’ [আনাস রাঃআঃ বলেন,] তখন তাঁরা মোট নয় ঘর [পরিবার] ছিলেন।’ [বুখারী] [16]
16/511 وَ عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: لَقَدْ رَأيْتُ سَبعِينَ مِنْ أهْلِ الصُّفَّةِ، مَا مِنهُمْ رَجُلٌ عَلَيْهِ رِدَاءٌ: إمَّا إزارٌ، وَإمَّا كِسَاءٌ، قَدْ رَبَطُوا في أعنَاقِهِمْ، فَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ نِصْفَ السَّاقَيْن، وَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ الكَعْبَيْنِ، فَيَجْمَعُهُ بِيَدِهِ كَراهِيَةَ أنْ تُرَى عَوْرَتُهُ . رواه البخاري
১৬/৫১১। আবু হুরায়রা রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি সত্তরজন [আহলে সুফ্ফাকে] এই অবস্থায় দেখেছি, তাহাদের কারো কাছে [গা ঢাকার] জন্য চাদর ছিল না, কারো কাছে লুঙ্গী ছিল এবং কারো কাছে চাদর, [এক সঙ্গে দু’টি বস্ত্রই কারো কাছে ছিল না] তারা তা গর্দানে বেঁধে নিতেন। অতঃপর সেই বস্ত্র কারো পায়ের অর্ধগোছা পর্যন্ত হত এবং কারো পায়ের গাঁট পর্যন্ত। সুতরাং তাঁরা তা হাত দিয়ে জমা করে ধরে রাখতেন, যেন লজ্জাস্থান দেখা না যায়।’ [বুখারী] [17]
17/512 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: كَانَ فِرَاشُ رَسُولِ اللهِ ﷺ مِنْ أُدْمٍ حَشْوُهُ لِيفٌ. رواه البخاري
১৭/৫১২। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর বিছানা চামড়ার তৈরী ছিল এবং তার ভিতরে ছিল খেজুর গাছের ছোবড়া।’ [বুখারী] [18]
18/513 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كُنَّا جُلُوساً مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ، إِذْ جَاءَ رَجُلٌ مِنَ الأنْصَارِ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، ثُمَّ أدْبَرَ الأَنْصَاريُّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يَا أخَا الأنْصَارِ، كَيْفَ أخِي سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ ؟ » فَقَالَ: صَالِحٌ، فَقَالَ رَسُول اللهِ ﷺ: «مَنْ يَعُودُهُ مِنْكُمْ ؟ » فَقَامَ وَقُمْنَا مَعَهُ، وَنَحْنُ بضْعَةَ عَشَرَ، مَا عَلَيْنَا نِعَالٌ، وَلاَ خِفَافٌ، وَلاَ قَلاَنِسُ، وَلاَ قُمُصٌ، نَمْشِي في تِلك السِّبَاخِ، حَتَّى جِئْنَاهُ، فَاسْتَأْخَرَ قَوْمُهُ مِنْ حَوْلِه حَتَّى دَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ وَأصْحَابُهُ الَّذِينَ مَعَهُ. رواه مسلم
১৮/৫১৩। ইবনি উমার রাঃআঃমা বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাথে ছিলাম, ইতোমধ্যে এক আনসারী এলেন এবং তাঁকে সালাম দিলেন। অতঃপর আনসারী ফিরে যেতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, ‘‘হে আনসারের ভাই! আমার ভাই সা‘দ ইবনি উবাদাহ কেমন আছে?’’ তিনি বলিলেন, ‘ভাল আছে।’ তারপর রাসূলুললাহ সাঃআঃ বলিলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কে তাকে [অসুস্থ সা‘দকে] দেখিতে যাবে?’’ সুতরাং তিনি উঠে দাড়ালেন এবং আমরাও উঠে দাঁড়ালাম। আমরা দশের কিছু বেশী ছিলাম। আমাদের দেহে জুতো, মোজা, টুপী এবং জামা কিছুই ছিল না। আমরা ঐ পাথুরে যমিনে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমরা সা‘দ রাঃআঃ-এর নিকট পৌঁছে গেলাম। তার গৃহবাসীরা তাহাঁর নিকট থেকে সরে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ও তাহাঁর সাহাবীগণ তাহাঁর নিকটবর্তী হলেন। [মুসলিম] [19]
19/514 وَعَن عِمْرَانَ بنِ الحُصَيْنِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، أنّه قَالَ: «خَيْرُكُمْ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ». قَالَ عِمْرَانُ: فَمَا أدْري قَالَ النَّبِيُّ ﷺ مَرَّتَيْنِ أَو ثَلاَثاً« ثُمَّ يَكُونُ بَعْدَهُمْ قَوْمٌ يَشْهَدُونَ وَلاَ يُسْتَشْهَدُونَ، وَيَخُونُونَ وَلاَ يُؤْتَمَنُونَ، وَيَنْذِرُونَ وَلاَ يُوفُونَ، وَيَظْهَرُ فِيهمُ السَّمَنُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১৯/৫১৪। ইমরান ইবনি হুসাইন রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম যুগ হল আমার সাহাবীদের যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী [তাবেয়ীদের] যুগ।’’ ইমরান বলেন, ‘নবী সাঃআঃ তাহাঁর যুগের পর উত্তম যুগ হিসাবে দুই যুগ উল্লেখ করিয়াছেন, না তিন যুগ তা আমার জানা [স্মরণ] নেই।’ ‘‘অতঃপর তোমাদের পর এমন এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সাক্ষ্য দেবে অথচ তাহাদেরকে সাক্ষী মানা হবে না। তারা খেয়ানত করিবে এবং তাহাদের নিকট আমানত রাখা যাবে না। তারা আল্লাহর নামে মানত করিবে কিন্তু তা পুরা করিবে না। আর তাহাদের দেহে স্থূলত্ব প্রকাশ পাবে।’’ [বুখারী-মুসলিম] [20]
20/515 وَعَن أَبي أُمَامَة رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ أَنْ تَبْذُلَ الفَضْلَ خَيرٌ لَكَ، وَأنْ تُمسِكَهُ شَرٌ لَكَ، ولاَ تُلاَمُ عَلَى كَفَافٍ، وَابْدأ بِمَنْ تَعُولُ ». رواه الترمذي، وقال:«حديث حسن صحيح »
২০/৫১৫। আবূ উমামাহ রাঃআঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘হে আদম সন্তান! উদ্বৃত্ত মাল [আল্লাহর পথে] খরচ করা তোমার জন্য মঙ্গল এবং তা আটকে রাখা তোমার জন্য অমঙ্গল। আর দরকার মত মালে নিন্দিত হবে না। প্রথমে তাহাদেরকে দাও, যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে।’’ [তিরমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে] [21]
21/516 وَعَن عُبيْدِ اللهِ بنِ مِحْصَنٍ الأَنصَارِيِّ الخَطمِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ أصْبَحَ مِنْكُمْ آمِناً في سِربِهِ، مُعَافَىً في جَسَدِهِ، عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ، فَكَأنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا بِحَذَافِيرِهَا». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
২১/৫১৬। উবাইদুল্লাহ ইবনি মিহসান আনসারী রাঃআঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ঘরে অথবা গোষ্ঠীর মধ্যে নিরাপদে ও সুস্থ শরীরে সকাল করেছে এবং তার কাছে একদিনের খাবার আছে, তাকে যেন পার্থিব সমস্ত সম্পদ দান করা হয়েছে।’’ [তিরমিযী, হাসান] [22]
22/517 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمْرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أن رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «قَدْ أفْلَحَ مَنْ أسْلَمَ، وَكَانَ رِزْقُهُ كَفَافاً، وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا آتَاهُ ». رواه مسلم
২২/৫১৭। আব্দুল্লাহ ইবনি আমর ইবনুল ‘আস রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘সে ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে পরিমিত রুযী দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তাকে তুষ্ট করিয়াছেন।’’ [মুসলিম] [23]
23/518 وَعَن أَبي مُحَمَّدٍ فَضَالَة بنِ عُبَيدٍ الأنصاريِّ رضي الله عنه: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «طُوبَى لِمَنْ هُدِيَ لِلإسْلاَمِ، وَكَانَ عَيْشُهُ كَفَافاً وَقَنِعَ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
২৩/৫১৮। আবূ মুহাম্মাদ ফাদ্বালা ইবনি উবাইদ আনসারী রাঃআঃ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছেন, ‘‘তার জন্য শুভ সংবাদ যাকে ইসলামের পথ দেখানো হয়েছে, পরিমিত জীবিকা দেওয়া হয়েছে এবং সে [যা পেয়েছে তাতে] পরিতুষ্ট আছে।’’ [তিরমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে] [24]
24/519 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَبِيتُ اللَّيَالِيَ الْمُتَتَابِعَةَ طَاوِياً، وَأهْلُهُ لاَ يَجِدُونَ عَشَاءً، وَكَانَ أكْثَرُ خُبْزِهِمْ خُبزَ الشَّعيرِ. رواه الترمذي، وقال:«حديث حسن صحيح»
২৪/৫১৯। ইবনি আব্বাস রাঃআঃ বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ একাধারে কয়েক রাত অনাহারে কাটাতেন এবং পরিবার-পরিজনরা রাতের খাবার পেতেন না। আর তাহাদের অধিকাংশ রুটি হত যবের।’ [তিরমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে] [25]
25/520 وعن فَضَالَةَ بنِ عُبَيدٍ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ إِذَا صَلَّى بِالنَّاسِ، يَخِرُّ رِجَالٌ مِنْ قَامَتِهِمْ في الصَّلاةِ مِنَ الخَصَاصَةِ ـ وَهُمْ أصْحَابُ الصُّفَّةِ ـ حَتَّى يَقُولَ الأعْرَابُ: هؤُلاَء مَجَانِينٌ . فَإذَا صلَّى رَسُول اللهِ ﷺ انْصَرَفَ إلَيْهِمْ، فَقَالَ: «لَوْ تَعْلَمُونَ مَا لَكُمْ عِنْدَ اللهِ تَعَالَى، لأَحْبَبْتُمْ أنْ تَزْدَادُوا فَاقَةً وَحَاجَةً ». رواه الترمذي، وقال: «حديث صحيح »
২৫/৫২০। ফাদ্বালাহ ইবনি ‘উবাইদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যখন লোকদের নামায পড়াতেন, তখন কিছু লোক ক্ষুধার কারণে [দুর্বলতায়] পড়ে যেতেন, আর তাঁরা ছিলেন আহলে সুফ্ফাহ। এমনকি মরুবাসী বেদুঈনরা বলত, ‘এরা পাগল।’ একদা যখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ নামায সেরে তাহাদের দিকে মুখ ফিরালেন, তখন বলিলেন, ‘‘তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে তোমরা এর চাইতেও অভাব ও দারিদ্র্য পছন্দ করিতে।’’ [তিরমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে] [26]
26/521 وَعَن أَبي كَرِيمَةَ المِقدَامِ بنِ مَعدِ يكَرِبَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «مَا مَلأَ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرّاً مِنْ بَطْنٍ، بِحَسْبِ ابنِ آدَمَ أُكُلاَتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ، فإنْ كانَ لاَ مَحالةَ فثُلُثٌ لِطَعَامِهِ، وَثُلُثٌ لِشَرابِهِ، وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
২৬/৫২১। আবূ কারীমা মিক্বদাদ ইবনি মা’দীকারিব রাঃআঃ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছি, ‘‘কোন মানুষ এমন কোন পাত্র পূর্ণ করেনি, যা পেট চাইতে মন্দ। মানুষের জন্য তার মেরুদণ্ড সোজা [শক্ত] রাখার জন্য কয়েক গ্রাসই যথেষ্ট। যদি অধিক খেতেই হয়, তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য হওয়া উচিত।’’ [তিরমিযী, হাসান সূত্রে] [27]
27/522 وَعَن أَبي أُمَامَةَ إِيَاسِ بنِ ثَعلَبَةَ الأَنْصَارِيِّ الحَارِثِي رضي الله عنه، قَالَ: ذَكَرَ أصْحَابُ رَسُولِ اللهِ ﷺ يَوماً عِنْدَهُ الدُّنْيَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «ألاَ تَسْمَعُونَ ؟ ألاَ تَسْمَعُونَ ؟ إنَّ البَذَاذَةَ مِنَ الإِيمَانِ، إنَّ البَذَاذَةَ مِنَ الإِيمَانِ » يَعْنِي: التَّقَحُّلَ . رواهُ أَبو داود
২৭/৫২২। আবূ উমামাহ ইয়াস ইবনি সা‘লাবাহ আনসারী হারেসী রাঃআঃ বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর সাহাবীগণ তাহাঁর নিকট দুনিয়ার কথা আলোচনা করিলেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, ‘‘তোমরা কি শুনতে পাও না? তোমরা কি শুনতে পাও না? আড়ম্বরহীনতা ঈমানের অঙ্গ। আড়ম্বরহীনতা ঈমানের অঙ্গ।’’ অর্থাৎ বিলাসহীনতা। [আবূ দাউদ] [28]
البذاذة হল সাদাসিধা বেশভূষা ব্যবহার করা এবং জাঁকজমক তথা আড়ম্বরপূর্ণ লেবাস বর্জন করা। আর التقحل হল শৌখিনতা ও বিলাসিতা বর্জন করার সাথে রুক্ষ-শুষ্ক দেহ অবলম্বন করা। [এ উভয়ই মু’মিনের গুণ।]
28/523 وَعَن أَبي عَبدِ اللهِ جَابِرِ بنِ عَبدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: بَعَثَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ، وَأمَّرَ عَلَيْنَا أَبَا عُبَيْدَةَ رضي الله عنه، نَتَلَقَّى عِيراً لِقُرَيْشٍ، وَزَوَّدَنَا جِرَاباً مِنْ تَمْرٍ لَمْ يَجِدْ لَنَا غَيْرَهُ، فَكَانَ أَبو عُبيدَةَ يُعْطِينَا تَمْرَةً تَمْرَةً، فَقِيلَ: كَيْفَ كُنْتُمْ تَصْنَعُونَ بِهَا ؟ قَالَ: نَمَصُّهَا كَمَا يَمَصُّ الصَّبي، ثُمَّ نَشْرَبُ عَلَيْهَا مِنَ الْمَاءِ، فَتَكْفِينَا يَوْمَنَا إِلَى اللَّيْلِ، وَكُنَّا نَضْرِبُ بِعِصيِّنَا الخَبَطَ، ثُمَّ نَبُلُّهُ بِالماءِ فَنَأكُلُهُ . قَالَ: وَانْطَلَقْنَا عَلَى سَاحِلِ الْبَحْرِ، فَرُفِعَ لَنَا عَلَى سَاحِلِ الْبَحْرِ كَهَيْئَةِ الكَثِيبِ الضَّخْمِ، فَأَتَيْنَاهُ فَإذَا هِيَ دَابَّةٌ تُدْعَى الْعَنْبَرَ، فَقَالَ أَبُو عُبَيْدَةَ: مَيْتَةٌ، ثُمَّ قَالَ: لاَ، بَلْ نَحْنُ رُسُلُ رَسُولِ اللهِ ﷺ، وَفِي سَبِيلِ اللهِ وَقَدِ اضْطُرِرْتُمْ فَكُلُوا، فَأقَمْنَا عَلَيْهِ شَهْراً، وَنَحْنُ ثَلاَثُمِئَةٍ حَتَّى سَمِنَّا، وَلَقَدْ رَأيْتُنَا نَغْتَرِفُ مِن وَقْبِ عَيْنِهِ بِالقِلاَلِ الدُّهْنَ وَنَقْطَعُ مِنْهُ الفِدَرَ كالثَّوْرِ أَوْ كَقَدْرِ الثَّوْرِ، وَلَقَدْ أَخَذَ مِنَّا أَبُو عُبَيْدَةَ ثَلاثَةَ عَشَرَ رَجُلاً فَأقْعَدَهُمْ في وَقْبِ عَيْنِهِ وَأخَذَ ضِلْعاً مِنْ أضْلاَعِهِ فَأقَامَهَا ثُمَّ رَحَلَ أعْظَمَ بَعِيرٍ مَعَنَا فَمَرَّ مِنْ تَحْتهَا وَتَزَوَّدْنَا مِنْ لَحْمِهِ وَشَائِقَ، فَلَمَّا قَدِمْنَا المَدِينَةَ أَتَيْنَا رَسُولَ اللهِ ﷺ فَذَكَرْنَا ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ:« هُوَ رِزْقٌ أخْرَجَهُ اللهُ لَكُمْ، فَهَلْ مَعَكُمْ مِنْ لَحْمِهِ شَيْءٌ فَتُطْعِمُونَا ؟ » فَأرْسَلْنَا إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ مِنْهُ فَأكَلَهُ . رواه مسلم
২৮/৫২৩। আবূ আব্দুল্লাহ জাবের ইবনি আব্দুল্লাহ রাঃআঃ বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদেরকে [এক অভিযানে] পাঠালেন এবং আবূ উবাইদাহ রাঃআঃ-কে আমাদের নেতা বানালেন। [আমাদেরকে পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল,] আমরা যেন কুরাইশের এক কাফেলার পশ্চাদ্ধাবন করি। তিনি আমাদেরকে পাথেয় সবরূপ এক থলি খেজুর দিলেন। আমাদেরকে দেওয়ার মত এ ছাড়া অন্য কিছু পেলেন না। সুতরাং আবূ উবাইদাহ রাঃআঃ আমাদেরকে একটি একটি করে খেজুর দিতেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘আপনারা সেটা দিয়ে কী করিতেন?’ তিনি বলিলেন, ‘আমরা তা বাচ্চার চুষার মত চুষতাম, তারপর পানি পান করতাম। সুতরাং এটা আমাদের জন্য সারাদিন রাত পর্যন্ত যথেষ্ট হত। আর আমরা লাঠি দ্বারা গাছের পাতা ঝরাতাম, তারপর তা পানিতে ভিজিয়ে খেতাম।
আমরা [একবার] সমুদ্র উপকূলে পথ চলছিলাম, অতঃপর সমুদ্রতীরে বালির বড় ঢিবির মত একটি জিনিস দেখিতে পেলাম। এরপর তার কাছাকাছি এসে দেখলাম যে, একটা বড় জন্তু, যাকে আম্বার [মাছ] বলা হয়।’ আবূ উবাইদাহ বলিলেন, ‘এটা তো মৃত [ফলে তা আমাদের জন্য অবৈধ]।’ পুনরায় তিনি বলিলেন, ‘না [অবৈধ নয়] বরং আমরা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর দূত এবং আল্লাহর পথে [বের হয়েছি] আর তোমরা [এখন] নিরুপায়, সেহেতু খাও।’
সুতরাং আমরা তিনশ’জন লোক একমাস তারই দ্বারা জীবনধারণ করলাম, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমরা মোটা হয়ে গেলাম। আমরা ঐ জন্তুর চোখের গর্ত থেকে ঘড়া ঘড়া তেল বের করতাম এবং বলদের মত মাংসের ফালি কাটতাম। একদা আবূ উবাইদাহ রাঃআঃ আমাদের মধ্য হতে তেরো জনকে নিয়ে ঐ মাছের একটি চোখের কোটরে বসিয়ে দিলেন। আর তার পাঁজরের একখানি হাড় নিয়ে দাঁড় করালেন। অতঃপর তিনি আমাদের সব চেয়ে বড় উটটার উপর হাওদা চাপিয়ে তার নীচে দিয়ে পার করে দিলেন। আমরা তার মাংস ফালি পাথেয় স্বরূপ সাথে নিলাম। অতঃপর যখন আমরা আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর নিকট এলাম এবং তাহাঁর কাছে ঐ মাছের কথা আলোচনা করলাম, তখন তিনি বলিলেন, ‘‘তা জীবিকা ছিল, যা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য বের করেছিলেন। আমাদেরকে খাওয়ানোর মত তোমাদের কাছে তার কিছু মাংস আছে কি?’’ [এ কথা শুনে] আমরা তাহাঁর নিকট কিছু মাংস পাঠালাম, সুতরাং তিনি তা ভক্ষণ করিলেন। [মুসলিম] [29]
29/524 وَعَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ كُمُّ قَمِيْصِ رَسُوْلِِ اللهِ ﷺ إِلىٰ الرُّسْغِ. رواه أبو داؤد والترمذي وقال: حديث حسن.
২৯/৫২৪। আসমা বিনতু ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর জামার হাতা ছিলো কব্জি পর্যন্ত। [তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন][30]
30/525 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: إنَّا كُنَّا يَوْمَ الْخَنْدَقِ نَحْفِرُ، فَعَرَضَتْ كُدْيَةٌ شَدِيدَةٌ، فَجَاؤُوا إِلَى النَّبِيِّ ﷺ، فَقَالَوا: هَذِهِ كُدْيَةٌ عَرَضَتْ في الخَنْدَقِ . فَقَالَ: «أنَا نَازِلٌ » ثُمَّ قَامَ، وَبَطْنُهُ مَعْصُوبٌ بِحَجَرٍ، وَلَبِثْنَا ثَلاَثَة أيّامٍ لاَ نَذُوقُ ذَوَاقاً فَأخَذَ النَّبِيُّ ﷺ المِعْوَلَ، فَضَرَبَ فَعَادَ كَثِيباً أهْيَلَ أَو أهْيَمَ، فَقُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، ائْذَنْ لِي إِلَى البَيْتِ، فَقُلتُ لامْرَأتِي: رَأيْتُ بالنَّبيِّ ﷺ شَيئاً مَا في ذَلِكَ صَبْرٌ فَعِنْدَكِ شَيْءٌ ؟ فَقَالَت: عِنْدي شَعِيرٌ وَعَنَاقٌ، فَذَبَحْتُ العَنَاقَ وَطَحَنْتُ الشَّعِيرَ حَتَّى جَعَلْنَا اللَّحْمَ في البُرْمَةِ، ثُمَّ جِئْتُ النَّبِيَّ ﷺ، وَالعَجِينُ قَدِ انْكَسَرَ، وَالبُرْمَةُ بَيْنَ الأثَافِيِّ قَدْ كَادَتْ تَنْضِجُ، فَقُلتُ: طُعَيْمٌ لِي، فَقُمْ أنْتَ يَا رَسُولَ اللهِ وَرَجُلٌ أَوْ رَجُلانِ، قَالَ: «كَمْ هُوَ » ؟ فَذَكَرْتُ لَهُ، فَقَالَ:«كَثِيرٌ طَيِّبٌ قُل لَهَا لاَ تَنْزَعِ البُرْمَةَ، وَلاَ الخُبْزَ مِنَ التَّنُّورِحَتَّى آتِي » فَقَالَ: «قُومُوا »، فَقَامَ المُهَاجِرُونَ وَالأنْصَارُ، فَدَخَلْتُ عَلَيْهَا فَقُلتُ: وَيْحَكِ قَدْ جَاءَ النبيُّ ﷺ وَالمُهَاجِرُونَ وَالأنْصَارُ وَمَن مَعَهُمْ ! قَالَت: هَلْ سَألَكَ ؟ قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «ادْخُلُوا وَلاَ تَضَاغَطُوا » فَجَعَلَ يَكْسرُ الخُبْزَ، وَيَجْعَلُ عَلَيْهِ اللَّحْمَ، وَيُخَمِّرُ البُرْمَةَ وَالتَّنُّورَ إِذَا أخَذَ مِنْهُ، وَيُقَرِّبُ إِلَى أصْحَابِهِ ثُمَّ يَنْزِعُ، فَلَمْ يَزَلْ يِكْسِرُ وَيَغْرِفُ حَتَّى شَبِعُوا، وَبَقِيَ مِنْهُ، فَقَالَ: «كُلِي هَذَا وَأهِدي، فَإنَّ النَّاسَ أصَابَتْهُمْ مَجَاعَةٌ ». متفقٌ عَلَيْهِ
وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ جَابِرٍ: لَمَّا حُفِرَ الخَنْدَقُ رَأيْتُ بِالنَّبِيِّ ﷺ خَمَصاً، فَانْكَفَأْتُ إِلَى امْرَأتِي، فَقُلتُ: هَلْ عِنْدَكِ شَيْءٌ ؟ فَإنّي رَأيْتُ بِرَسُولِ اللهِ ﷺ خَمَصاً شَديداً، فَأخْرَجَتْ إلَيَّ جِرَاباً فِيه صَاعٌ مِنْ شَعِيرٍ، وَلَنَا بَهِيمَةٌ دَاجِنٌ فَذَبَحْتُهَا، وَطَحَنتِ الشَّعِيرَ، فَفَرَغَتْ إِلَى فَرَاغي، وَقَطَعْتُهَا فِي بُرْمَتِهَا، ثُمَّ وَلَّيْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ، فَقَالَت: لاَ تَفْضَحْنِي بِرَسُولِ اللهِ ﷺ وَمَنْ مَعَهُ، فَجِئتُهُ فَسَارَرْتُهُ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، ذَبَحْنَا بَهِيمَةً لَنَا، وَطَحَنْتُ صَاعاً مِنْ شَعِيرٍ، فَتَعَالَ أنْتَ وَنَفَرٌ مَعَكَ، فَصَاحَ رَسُولُ اللهِ ﷺ، فَقَالَ: «يَا أهلَ الخَنْدَقِ: إنَّ جَابِراً قَدْ صَنَعَ سُؤْراً فَحَيَّهَلاً بِكُمْ» فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: «لاَ تُنْزِلُنَّ بُرْمَتَكُمْ وَلاَ تَخْبِزُنَّ عَجِينَكُمْ حَتَّى أجِيءَ » فَجِئْتُ، وَجَاءَ النَّبِيُّ ﷺ يَقْدُمُ النَّاسَ، حَتَّى جِئْتُ امْرَأتِي، فَقَالَتْ: بِكَ وَبِكَ ! فقُلْتُ: قَدْ فَعَلْتُ الَّذِي قُلْتِ . فَأخْرَجَتْ عَجِيناً، فَبسَقَ فِيهِ وَبَاركَ، ثُمَّ عَمَدَ إِلَى بُرْمَتِنا فَبصَقَ وَبَارَكَ، ثُمَّ قَالَ:« ادْعِي خَابزَةً فَلْتَخْبِزْ مَعَكِ، وَاقْدَحِي مِنْ بُرْمَتِكُمْ، وَلاَ تُنْزِلُوهَا » وَهُم ألْفٌ، فَأُقْسِمُ بِاللهِ لأَكَلُوا حَتَّى تَرَكُوهُ وَانْحَرَفُوا، وَإنَّ بُرْمَتَنَا لَتَغِطُّ كَمَا هِيَ، وَإنَّ عَجِينَنَا لَيُخْبَزُ كَمَا هُوَ .
৩০/৫২৫। জাবের রাঃআঃ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধের সময় আমরা পরিখা খনন করছিলাম। সেই সময় এক খন্ড কঠিন পাথর বেরিয়ে এলে [যা ভাঙ্গা যাচ্ছিল না] সকলেই নবী সাঃআঃ এর নিকট এসে বলিলেন, ‘খন্দকের মধ্যে এক খন্ড পাথর বেরিয়েছে [আমরা তা ভাঙ্গতে পারছি না]।’ এ কথা শুনে তিনি বলিলেন, ‘‘আমি নিজে খন্দকে অবতরণ করব।’’ অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন। সে সময়ে তাহাঁর পেটে একটি পাথর বাঁধা ছিল। আর আমরাও অনাহারে ছিলাম; তিনদিন কোন কিছুই খাইনি। নবী সাঃআঃ [এসে] একটি গাঁইতি হাতে নিয়ে পাথরের উপর আঘাত করিলেন, ফলে তৎক্ষণাৎ তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বালুকা রাশিতে পরিণত হল। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে বাড়ী যাওয়ার জন্য অনুমতি দিন।’ [তিনি অনুমতি দিলে বাড়ী পৌঁছে] আমার স্ত্রীকে বললাম, ‘নবী সাঃআঃ এর মধ্যে আমি এমন কিছু দেখেছি, যা আমি সহ্য করিতে পারছি না। তোমার নিকট কোন খাবার আছে কি?’ সে বলিল, ‘আমার নিকট কিছু যব ও একটি বকরীর বাচ্চা আছে।’
সুতরাং বকরীর বাচ্চাটি আমি যবেহ করলাম এবং সে যব পিষে দিল। অতঃপর গোশ্ত ডেকচিতে দিয়ে আমি নবী সাঃআঃ এর নিকট এলাম। সে সময় আটা খামির হচ্ছিল এবং ডেকচি চুলার ঝিঁকের উপর ছিল ও গোশ্ত প্রায় রান্না হয়ে এসেছিল। তখন আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার [বাড়ীতে] সামান্য কিছু খাবার আছে। ফলে একজন বা দু’জন সাথে নিয়ে আপনি উঠে আসুন।’ তিনি বলিলেন, ‘‘ কী পরিমাণ খাবার আছে?’’ আমি তাহাঁর নিকট সব খুলে বললে তিনি বলিলেন, ‘অনেক এবং উত্তম আছে।’ অতঃপর তিনি আমাকে বলিলেন, ‘‘তুমি তোমার স্ত্রীকে গিয়ে বল, সে যেন আমি না আসা পর্যন্ত ডেকচি চুলা থেকে না নামায় এবং রুটি তৈরী না করে।’’ তারপর [সকলের উদ্দেশ্যে] তিনি বলিলেন, ‘‘তোমরা উঠ! [জাবির তোমাদেরকে খাবারের দাওয়াত দিয়েছে।]’’ মুহাজির ও আনসারগণ উঠলেন [এবং চলতে লাগলেন]। অতঃপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট গিয়ে বললাম, ‘তোমার সর্বনাশ হোক! [এখন কী হবে?] নবী সাঃআঃ তো মুহাজির, আনসার এবং তাহাদের অন্য সাথীদের নিয়ে চলে আসছেন।’ তিনি [জাবেরের স্ত্রী] বলিলেন, ‘তিনি কি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ।’ [স্ত্রী বলিলেন, ‘তাহলে আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল অধিক জানেন। আমাদের কাছে যা আছে তা তো আপনি তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন।’ জাবের বলেন, তখন আমার কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা দূর হল। আমি বললাম, ‘তুমি ঠিকই বলেছ।’] তারপর নবী সাঃআঃ উপস্থিত হয়ে বলিলেন, ‘‘তোমরা সকলেই প্রবেশ কর এবং ভিড় করো না।’’ এ বলে তিনি রুটি টুকরো করে তার উপর গোশ্ছ দিয়ে সাহাবাদের মাঝে বিতরণ করিতে শুরু করিলেন। [এগুলো পরিবেশন করার সময়] তিনি ডেকচি ও চুলা ঢেকে রেখেছিলেন। এভাবে তিনি রুটি টুকরো করে হাত ভরে বিতরণ করিতে লাগলেন। এতে সকলে তৃপ্তি সহকারে খাবার পরেও কিছু বাকী রয়ে গেল। তিনি [জাবেরের স্ত্রীকে] বলিলেন, ‘‘এ তুমি খাও এবং অন্যকে উপহার দাও। কেননা, লোকদেরকে [ুধা পেয়েছে।’’ [বুখারী ও মুসলিম] [31]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, জাবের রাঃআঃ বলেন, যখন পরিখা খনন করা হল, তখন আমি নবী সাঃআঃকে ভুখা দেখলাম। অতঃপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট গিয়ে বললাম, ‘তোমার নিকট কোন [খাবার] জিনিস আছে কি? কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে প্রচন্ড ক্ষুধার্ত দেখলাম।’ সুতরাং সে একটি চামড়ার থলি বের করল, যাতে এক সা’ [আড়াই কিলো পরিমাণ] যব ছিল। আর আমাদের নিকট একটি গৃহপালিত ছাগলের বাচ্চা ছিল। আমি তা জবাই করলাম এবং আমার স্ত্রী যব পিষল। আমার [মাংস বানানোর কাজ সম্পন্ন করা পর্যন্ত] সেও যব পিষার কাজ সেরে নিল। পুনরায় আমি মাংস টুকরো টুকরো করে হাঁড়িতে রাখলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট যেতে লাগলাম। সে বলিল, ‘আপনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ও তাহাঁর সাথীদের কাছে আমাকে লাঞ্ছিত করিবেন না।’ সুতরাং আমি তাহাঁর নিকট এলাম এবং চুপি চুপি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা আমাদের একটি ছাগল জবাই করেছি এবং আমার স্ত্রী এক সা যব পিষেছে। সুতরাং আপনি আসুন এবং আপনার সাথে কিছু লোক।’ এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ চিৎকার করে বলিলেন, ‘‘হে পরিখা খননকারীরা! জাবের খাবার তৈরী করেছে, তোমরা এসো।’’ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাকে বলিলেন, ‘‘যে পর্যন্ত আমি না আসি, সে পর্যন্ত তুমি চুলা থেকে ডেকচি নামাবে না এবং আটার রুটি তৈরী করিবে না।’’ অতঃপর আমি এলাম এবং নবী @ও এলেন। তিনি লোকদের আগে আগে হাঁটতে লাগলেন। পরিশেষে আমি আমার স্ত্রীর নিকট এলাম [এবং তাকে সকলের আসার সংবাদ দিলাম]। সে আমাকে ভৎর্সনা করিতে লাগল। আমি বললাম, ‘[এতে আমার দোষ কি?] আমি তো তা-ই করেছি যা তুমি আমাকে বলেছিলে।’ [যাই হোক] সে খমীর বের করে দিল। তিনি তাতে থুতু মারলেন এবং বরকতের দো‘আ করিলেন। তারপর তিনি আমাদের ডেকচির নিকট গিয়ে তাতেও থুতু মারলেন এবং বরকতের দো‘আ করিলেন। আর তিনি [আমার স্ত্রীকে] বলিলেন, ‘‘একজন মহিলা ডাকো; সে তোমার সাথে রুটি তৈরী করুক এবং তুমি ডেচকি থেকে [মাংস] পাত্রে দিতে থাক, কিন্তু চুলা থেকে তা নামাবে না।’’
তাঁরা সংখ্যায় এক হাজার ছিলেন। জাবের বলেন, আমি আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি যে, ‘সকলেই খাবার খেলেন এমনকি শেষ পর্যন্ত তারা কিছু অবশিষ্ট রেখে চলে গেলেন। আর আমাদের ডেকচি আগের মত ফুটতেই থাকল এবং আমাদের আটা থেকে রুটি প্রস্তুত হতেই রইল।’
31/526 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ أَبُو طَلْحَةَ لأُمِّ سُلَيمٍ: قَدْ سَمِعْتُ صَوْتَ رَسُولِ اللهِ ﷺ ضَعِيفاً أعْرِفُ فِيهِ الجُوعَ، فَهَلْ عِنْدَكِ مِنْ شَيْءٍ ؟ فَقَالَتْ: نَعَمْ، فَأخْرَجَتْ أقْرَاصاً مِنْ شَعِيرٍ، ثُمَّ أخَذَتْ خِمَاراً لَهَا، فَلَفَّتِ الخُبْزَ بِبَعْضِهِ، ثُمَّ دَسَّتْهُ تَحْتَ ثَوْبِي وَرَدَّتْنِي بِبَعْضِهِ، ثُمَّ أرْسَلَتْني إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ، فَذَهَبتُ بِهِ، فَوَجَدْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، جَالِساً في المَسْجِدِ، وَمَعَهُ النَّاسُ، فَقُمْتُ عَلَيْهمْ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ: «أرْسَلَكَ أَبُو طَلْحَةَ ؟ » فَقُلتُ: نَعَمْ، فَقَالَ: «ألِطَعَامٍ ؟ » فَقُلتُ: نَعَمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «قُومُوا » فَانْطَلَقُوا وَانْطَلَقْتُ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ حَتَّى جِئْتُ أَبَا طَلْحَةَ فَأخْبَرْتُهُ، فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ: يَا أُمَّ سُلَيْمٍ، قَدْ جَاءَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بالنَّاسِ وَلَيْسَ عِنْدَنَا مَا نُطْعِمُهُمْ ؟ فَقَالَتْ: الله وَرَسُولُهُ أعْلَمُ . فَانْطَلَقَ أَبو طَلْحَةَ حَتَّى لَقِيَ رَسُولَ اللهِ ﷺ، فَأقْبَلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَعَهُ حَتَّى دَخَلاَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «هَلُمِّي مَا عِنْدَكِ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ » فَأتَتْ بِذَلِكَ الخُبْزِ، فَأمَرَ بِهِ رَسُولُ اللهِ ﷺ فَفُتَّ، وَعَصَرَتْ عَلَيْهِ أمُّ سُلَيْمٍ عُكّةً فَآدَمَتْهُ، ثُمَّ قَالَ فِيهِ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَا شَاءَ اللهُ أنْ يَقُولَ، ثُمَّ قَالَ: «ائْذَنْ لِعَشْرَةٍ » فأَذِنَ لَهُمْ فَأكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا، ثُمَّ قَالَ: «ائْذَنْ لِعَشْرَةٍ » فأذِنَ لَهُم حَتَّى أكَلَ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ وَشَبِعُوا وَالقَوْمُ سَبْعُونَ رَجُلاً أَو ثَمَانُونَ . متفقٌ عَلَيْهِ .
وفي رواية: فَمَا زَالَ يَدْخُلُ عَشرَةٌ، وَيخرجُ عَشرَةٌ حَتَّى لَمْ يَبْقَ مِنْهُمْ أحَدٌ إِلاَّ دَخَلَ، فَأكَلَ حَتَّى شَبِعَ، ثُمَّ هَيَّأهَا فَإذَا هِيَ مِثْلُهَا حِيْنَ أكَلُوا مِنْهَا .
وفي رواية: فَأَكَلُوا عَشرَةً عَشرةً، حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ بِثَمَانِينَ رَجُلاً، ثُمَّ أكَلَ النَّبِيُّ ﷺ بَعْدَ ذَلِكَ وَأهْلُ البَيْتِ، وَتَرَكُوا سُؤْراً .
وفي رواية: ثُمَّ أفْضَلُوا مَا بَلَغُوا جِيرَانَهُمْ .
وفي رواية عن أنس، قَالَ: جِئتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يوماً، فَوَجَدْتُهُ جَالِساً مَعَ أصْحَابِه، وَقَدْ عَصَبَ بَطْنَهُ، بِعِصَابَةٍ، فَقُلتُ لِبَعْضِ أصْحَابِهِ: لِمَ عَصَبَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بَطْنَهُ ؟ فَقَالَوا: مِنَ الجُوعِ، فَذَهَبْتُ إِلَى أَبي طَلْحَةَ، وَهُوَ زَوْجُ أُمِّ سُلَيْمٍ بِنْتِ مِلْحَانَ، فَقُلتُ: يَا أبتَاهُ، قَدْ رَأيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ عَصَبَ بَطْنَهُ بِعِصَابَةٍ، فَسَألْتُ بَعْضَ أصْحَابِهِ، فَقَالُوا: من الجُوعِ . فَدَخَلَ أَبُو طَلْحَةَ عَلَى أُمِّي، فَقَالَ: هَلْ مِنْ شَيءٍ ؟ قَالَت: نَعَمْ، عِنْدِي كِسَرٌ مِنْ خُبْزٍ وَتَمَرَاتٌ، فَإنْ جَاءنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ وَحْدَهُ أشْبَعْنَاهُ، وَإنْ جَاءَ آخَرُ مَعَهُ قَلَّ عَنْهُمْ … وَذَكَرَ تَمَامَ الْحَدِيثِ
৩১/৫২৬। আনাস ইবনি মালেক রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, [একদা আমার সৎবাপ] আবূ ত্বালহা [আমার মা] উম্মে সুলাইমকে বলিলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর কণ্ঠস্বরটা খুব ক্ষীণ শুনলাম। আমি বুঝতে পারলাম, তিনি ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমার নিকট কিছু আছে কি?’ উম্মে সুলাইম বলিলেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর তিনি কিছু যবের রুটি তার ওড়নার এক অংশ দিয়ে বেঁধে গোপনে আমার কাপড়ের নিচে গুঁজে দিলেন। আর অপর অংশ আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আমাকে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট পাঠালেন। আমি তা নিয়ে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে মসজিদে বসা অবস্থায় পেলাম। তাহাঁর সাথে কিছু লোক ছিল। আমি তাহাদের নিকটে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন তিনি আমাকে বলিলেন, ‘‘তোমাকে আবূ ত্বালহা পাঠিয়েছে?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বলিলেন, ‘‘কোন খাবারের জন্য নাকি?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাহাঁর [সাথীদেরকে] বলিলেন, ‘‘ওঠ।’’ সুতরাং তাঁরা রওনা হলেন। আমিও তাঁদের আগে আগে চলতে লাগলাম এবং আবূ ত্বালহার নিকট এসে খবর জানালাম। তখন আবূ ত্বালহা বলিলেন, ‘হে উম্মে সুলাইম! রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ কিছু লোক নিয়ে আসছেন। অথচ আমাদের নিকট সবাইকে খাওয়ানোর মত খাদ্য সামগ্রী নেই [এখন কী করা যায়]?’ উম্মে সুলাইম বলিলেন, ‘আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল ভাল জানেন।’ অতঃপর আবূ তালহা [আগে] গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাহাঁর সঙ্গে আগমন করিলেন এবং উভয়ে ঘরে প্রবেশ করিলেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, ‘হে উম্মে সুলাইম! তোমার নিকট যা কিছু আছে নিয়ে এসো।’ সুতরাং তিনি ঐ রুটিগুলো এনে হাজির করিলেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ সেগুলিকে টুকরা টুকরা করিতে আদেশ করিলেন। অতঃপর তার উপর উম্মে সুলাইম ঘিয়ের পাত্র ঢেলে তরকারি বানালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাতে আল্লাহর ইচ্ছায় কি কি বলে [ফুঁক] দিলেন। তারপর বলিলেন, ‘‘দশজনকে আসতে বল।’’ তখন দশজনকে আসতে বলা হল। তারা এসে পরিতৃপ্তি সহকারে খেয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর বলিলেন, ‘‘আরো দশজনকে আসতে বল।’’ তখন আরও দশজন এসে খেয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর বলিলেন, ‘‘আরো দশজনকে আসতে বল।’’ এভাবে আগত লোকদের সবাই তৃপ্তি সহকারে খাওয়া-দাওয়া করিলেন। আর আগত লোকদের সংখ্যা ছিল ৭০ কিংবা ৮০ জন। [বুখারী ও মুসলিম]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, দশজন করে প্রবেশ করিতে এবং বের হতে থাকল। এমনকি শেষ পর্যন্ত এমন কোন ব্যক্তি বাকী রইল না, যে প্রবেশ করে পরিতৃপ্তি সহকারে খায়নি। অতঃপর ঐ খাবার জমা করে দেখা গেল যে, খাওয়ার আগের মতই বাকী রয়েছে।
অন্য বর্ণনায় আছে, তারা দশ দশজন করে খাবার খেল। এইভাবে শেষ পর্যন্ত ৮০ জন লোককে তিনি খাওয়ালেন। সবশেষে নবী সাঃআঃ এবং গৃহবাসীরা খেলেন এবং তাঁরাও কিছু [খাবার] ছেড়ে দিলেন।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, অতঃপর তাঁরা এত খাবার অবশিষ্ট রাখলেন যে, তা প্রতিবেশীদের নিকট পৌঁছে দিলেন।
আরো অন্য এক বর্ণনায় আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট এলাম, তারপর দেখলাম যে, তিনি তাহাঁর সাথীদের সঙ্গে বসে আছেন। তখন তিনি তাহাঁর পেটে পটি বেঁধে ছিলেন। আমি তাহাঁর কিছু সাথীকে জিজ্ঞেস করলাম যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকেন তাহাঁর পেটে পট্টি বেঁধে আছেন।’ তাঁরা বলিলেন, ‘ক্ষুধার কারণে।’ অতঃপর আমি [আমার মা] উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহানের স্বামী আবূ ত্বালহার নিকট গেলাম এবং বললাম, ‘আব্বা! আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে পেটে পট্টি বাঁধা অবস্থায় দেখলাম। আমি তাহাঁর কিছু সাথীকে [এর কারণ] জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বলিলেন, ক্ষুধা।’ অতঃপর আবূ ত্বালহা আমার মায়ের নিকট গিয়ে বলিলেন, ‘তোমার কাছে কিছু আছে কি?’ মা বলিলেন, ‘হ্যাঁ, আমার কাছে কয়েক টুকরো রুটি এবং কিছু খেজুর আছে। যদি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদের নিকট একাই আসেন, তাহলে তাঁকে পরিতৃপ্তি সহকারে খাওয়াব; আর যদি তাহাঁর সাথে অন্য লোকও এসে যায়, তাহলে তাঁদের জন্য এ খাবার কম হয়ে যাবে।’ অতঃপর বাকী হাদীস পূর্বরূপ। [বুখারী ও মুসলিম] [32]
[1] সহীহুল বুখারী ৫৪১৬, ৫৪২৩, ৫৪৩৮, ৬৪৫৪, ৬৬৮৭, মুসলিম ২৯৭০, তিরমিযী ২৩৫৭, নাসায়ী ৪৪৩২, ইবনু মাজাহ ৩১৫৯, ৩৩১৩, ৩৩৪৪, ৩৩৪৬, আহমাদ ২৩৬৩১, ২৩৮৯৯, ২৪১৪৪, ২৪৪৪১, ২৪৪৪২, ২৪৫২৬, ২৪৬৯৮, ২৫১০১৩, ২৫২২৩, ২৫২৯৭, দারেমী ১৯৫৯
[2] সহীহুল বুখারী ২৫৬৭, ৬৪৫৮, ৬৪৫৯, মুসলিম ২৯৭২, তিরমিযী ২৪৭১, ইবনু মাজাহ ৪১৪৪, ৪১৪৫, আহমাদ ১৩৭১২, ১৩৮৯৯, ১৪০৪০, ২৪২৪৭, ২৪৯৬৩, ২৫৪৭৩, ২৫৫৪৬
[3] সহীহুল বুখারী ৫৪১৪
[4] অবশ্য অন্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, তিনি ঐ শ্রেণীর উঁচু স্থানে রেখে খাবার খেতেন। সুতরাং ঐভাবে খাওয়া অবৈধ নয়।
[5] সহীহুল বুখারী ৫৪২১, ৫৩৮৫, ৫৩৮৬, ৫৪১৫, ৬৪৫০, ৬৪৫৭, তিরমিযী ১৭১৮, ২৩৬৩, ইবনু মাজাহ ৩২৯২, ৩২৯৩, ৩৩৩৯, আহমাদ ১১৮৮৭, ১১৯১৬, ১১৯৬৫, ১৩১৯৮
[6] মুসলিম ২৯৭৭, ২৯৭৮, তিরমিযী ২৩৭২, ইবনু মাজাহ ৪১৪৬, আহমাদ ১৬০, ১৭৮৯২
[7] সহীহুল বুখারী ৫৪১৩, ৫৪১০, তিরমিযী ২৩৬৪, ইবনু মাজাহ ৩৩৩৫, আহমাদ ২২৩০৭
[8] মুসলিম ২০৩৮, তিরমিযী ২৩৬৯, ইবনু মাজাহ ৩১৮০
[9] মুসলিম ২৯৬৭, তিরমিযী ২৫৭৫, ইবনু মাজাহ ৪১৫৬, আহমাদ ১৭১২৩, ২০০৮৬
[10] সহীহুল বুখারী ৩১০৮, ৫৮১৮, মুসলিম ২০৮০, তিরমিযী ১৭৩৩, আবূ দাউদ ৪০৩৬, ইবনু মাজাহ ৩৫৫১, আহমাদ ২৩৫১৭, ২৪৪৭৬
[11] সহীহুল বুখারী ৭৫৫, ৭৫৮, ৭৭০, ৩৭২৮, ৫৪১২, ৬৪৫৩, মুসলিম ৪৫৩, ২৯৬৬, তিরমিযী ২৩৬৫, নাসায়ী ১০০২, ১০০৩, আবূ দাউদ ৮০৩, ইবনু মাজাহ ১৩১, আহমাদ ১৫১৩, ১৫৫১, ১৫৬০
[12] সহীহুল বুখারী ৫৪৬০, মুসলিম ১০৫৫, তিরমিযী ২৩৬১, ইবনু মাজাহ ৪১৩৯, আহমাদ ৭১৩৩, ৯৪৬১, ৯৮৭৭
[13] সহীহুল বুখারী ৫৩৭৫, ৬২৪৬, ৬৪৫২, তিরমিযী ২৪৭৭, আহমাদ ১০৩০১
[14] সহীহুল বুখারী ৭৩২৪, তিরমিযী ২৩৬৭
[15] সহীহুল বুখারী ২০৬৮, ২০৯৬, ২২০০, ২২৫১, ২২৫২, ২৩৮৬, ২৫০৯, ২৫১৩, ২৯১৬, ৪৪৬৭, মুসলিম ১৬০৩, নাসায়ী ৪৬০৯, ৪৬৫০, ইবনু মাজাহ ২৪৩৬, আহমাদ ২৩৬২৬, ২৪৭৪৬, ২৫৪০৩, ২৫৪৬৭
[16] সহীহুল বুখারী ২০৬৯, ২৫০৮, তিরমিযী ১২১৫, নাসায়ী ৪৫১০, ইবনু মাজাহ ২৪৩৭, ৪১৪৭, আহমাদ ১১৫৮২, ১১৯৫২, ১২৭৫৭, ১৩০২৩, ১৩০৮৫
[17] সহীহুল বুখারী ৪৪২
[18] সহীহুল বুখারী ৬৪৫৬, মুসলিম ২০৮২, তিরমিযী ১৭৬১, আবূ দাউদ ৪১৪৬, ৪১৪৭, ইবনু মাজাহ ৪১৫১, আহমাদ ২৩৬৮৯, ২৩৭৭২, ২৩৯৩০, ২৪২৪৭, ২৫২০১, ২৫২৪৫
[19] মুসলিম ৯২৫
[20] সহীহুল বুখারী ২৬৫১, ৩৬৫০, ৬৪২৮, ৬৬৯৫, মুসলিম ২৫৩৫, তিরমিযী ২২২১, ২২২২, নাসায়ী ৩৮০৯, আবূ দাউদ ৪৬৫৭, আহমাদ ১৯৩১৯, ১৯৩৩৪, ১৯৪০৫, ১৯৪৫১
[21] মুসলিম ১০৩৬, তিরমিযী ২৩৪৩, আহমাদ ২১৭৫২
[22] তিরমিযী ২৩৪৬, ইবনু মাজাহ ৪১৪১
[23] মুসলিম ১০৫৪, তিরমিযী ২৩৪৮, ইবনু মাজাহ ৪১৩৮, আহমাদ ৬৫৭২
[24] তিরমিযী ২৩৪৯, আহমাদ ২৩৪২৬
[25] তিরমিযী ২৩৬০, ইবনু মাজাহ ৩৩৪৭, আহমাদ ২৩০৩, ৩৫৩৫
[26] তিরমিযী ২৩৬৮, আহমাদ ২৩৪২০
[27] তিরমিযী ২৩৮০, ইবনু মাজাহ ৩৩৪৯, আহমাদ ১৬৭৩৫
[28] আবূ দাউদ ৪১৬১, ইবনু মাজাহ ৪১১৮
[29] মুসলিম ১৯৩৫, সহীহুল বুখারী ২৪৮৩, ৫২৪৩, তিরমিযী ২৪৭৫, নাসায়ী ৪৩৫১, ৪৩৫২, ৪৩৫৩, ৪৩৫৪, আবূ দাউদ ৩৮৪০, ইবনু মাজাহ ৪১৫৯, আহমাদ ১৩৮৪৪, ১৩৮৭৪, ১৩৯০৩, ১৩৯২৬, ১৪৬২৯, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৩০, দারেমী ২০১২
[30] আমি [আলবানী] বলছিঃ এর মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। দেখুন ‘‘সিলসিলাহ্ য‘ঈফা’’ [২৪৫৮]। এর সনদের মধ্যে শাহ্র ইবনু হাওশাব নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন তিনি মন্দ হেফ্য শক্তির কারণে দুর্বল। হাফেয ইবনু হাজার ‘‘আত্তাক্বরীব’’ গ্রন্থে বলেনঃ তিনি সত্যবাদী, বেশী বেশী মুরসাল এবং সন্দেহমূলক বর্ণনাকারী। আবূ হাতিম ও ইবনু আদী প্রমুখও বলেছেন তার হেফ্য শক্তিতে দুর্বলতা ছিল। [দেখুন ‘‘য‘ঈফা’’ হাদীস নং ৬৮৩৬]।
[31] সহীহুল বুখারী ৩০৭০, ৪১০১, ৪১০২, মুসলিম ২০৩৯, তিরমিযী ২৮৪২, আহমাদ ১৩৭৯৯, ১৩৮০৯, ১৪৬১০, দারেমী ৪২
[32] সহীহুল বুখারী ৪২২, ৩৫৭৮, ৫৩৮১, ৫৪৫০, ৫৬৮৮, মুসলিম ২০৪০, তিরমিযী ৩৬৩০, আহমাদ ১২০৮২, ১২৮৭০, ১৩০১৫, ১৩১৩৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৭২৫, দারেমী ৪৩
Leave a Reply