আল্লাহর প্রতি ভয় ও আশা রাখার বিবরণ – রিয়াদুস সালেহীন
আল্লাহর প্রতি ভয় ও আশা রাখার বিবরণ – রিয়াদুস সালেহীন >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
পরিচ্ছেদ – ৫৩: একই সাথে আল্লাহর প্রতি ভয় ও আশা রাখার বিবরণ
জ্ঞাতব্য যে, সুস্থ অবস্থায় বান্দার উচিত হল, অন্তরে আল্লাহর আযাবের ভয় এবং তাহাঁর রহমতের আশা রাখা। এ ক্ষেত্রে ভয় ও আশা উভয়ই সমান হবে। পক্ষান্তরে অসুস্থ অবস্থায় নিছকভাবে আশা রাখা উচিত। কুরআন ও সুন্নাহ এবং অন্যান্য স্পষ্ট উক্তিতে এ কথার ভূরি ভূরি প্রমাণ বর্তমান।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَلَا يَأۡمَنُ مَكۡرَ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡقَوۡمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ ﴾ [الاعراف: ٩٩]
অর্থাৎ “তারা কি আল্লাহর কৌশলের ভয় রাখে না? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ব্যতীত কেউই আল্লাহর কৌশলের হতে নিরাপদ বোধ করে না।” [সূরা আ‘রাফ ৯৯ আয়াত]
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّهُۥ لَا يَاْيَۡٔسُ مِن رَّوۡحِ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡقَوۡمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ﴾ [يوسف: ٨٧]
অর্থাৎ “অবিশ্বাসী [কাফের] সম্প্রদায় ব্যতীত কেউই আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয় না।” [সূরা ইউসুফ ৮৭ আয়াত]
অন্য জায়গায় তিনি বলেন,
﴿ يَوۡمَ تَبۡيَضُّ وُجُوهٞ وَتَسۡوَدُّ وُجُوهٞۚ ﴾ [ال عمران: ١٠٦]
অর্থাৎ “সেদিন কতকগুলো মুখমণ্ডল সাদা [উজ্জ্বল] হবে এবং কতকগুলো মুখমণ্ডল কালো হবে।” [আলে ‘ইমরান ১০৬ আয়াত]
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيعُ ٱلۡعِقَابِ وَإِنَّهُۥ لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ ١٦٧ ﴾ [الاعراف: ١٦٧]
অর্থাৎ “আর তোমার প্রতিপালক তো শাস্তিদানে সত্বর এবং তিনি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুও।” [সূরা আ‘রাফ ১৬৭ আয়াত]
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ لَفِي نَعِيمٖ ١٣ وَإِنَّ ٱلۡفُجَّارَ لَفِي جَحِيمٖ ١٤ ﴾ [الانفطار: ١٣، ١٤]
অর্থাৎ “পুণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে এবং পাপাচারীরা থাকবে [জাহীম] জাহান্নামে।” [সূরা ইনফিত্বার ১৩-১৪ আয়াত]
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَأَمَّا مَن ثَقُلَتۡ مَوَٰزِينُهُۥ ٦ فَهُوَ فِي عِيشَةٖ رَّاضِيَةٖ ٧ وَأَمَّا مَنۡ خَفَّتۡ مَوَٰزِينُهُۥ ٨ فَأُمُّهُۥ هَاوِيَةٞ ٩ ﴾ [القارعة: ٦، ٩]
অর্থাৎ “তখন যার [নেকীর] পাল্লা ভারী হবে, সে তো সন্তোষময় জীবনে [সুখে] থাকবে। কিন্তু যার পাল্লা হাল্কা হবে, তার স্থান হবে হাবিয়াহ।” [সূরা ক্বারিয়াহ ৬-৯ আয়াত]
এ প্রসঙ্গে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। আশা ও ভয় রাখার কথা কুরআন মাজীদের কোন কোন স্থানে মাত্র একটি আয়াতে, কোন স্থানে দু’টি আয়াতে এবং কোন স্থানে তিন বা ততোধিক আয়াতে একত্রে বিবৃত হয়েছে।
1/448 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «لَوْ يَعْلَمُ الْمُؤمِنُ مَا عِنْدَ الله مِنَ العُقُوبَةِ، مَا طَمِعَ بِجَنَّتِهِ أَحَدٌ، وَلَوْ يَعْلَمُ الكَافِرُ مَا عِنْدَ الله مِنَ الرَّحْمَةِ، مَا قَنَطَ مِنْ جَنَّتِهِ أحَدٌ ». رواه مسلم
১/৪৪৮। আবু হুরায়রা রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘যদি মু’মিন জানত যে, আল্লাহর নিকট কী শাস্তি রয়েছে, তাহলে কেউ তার জান্নাতের আশা করত না। আর যদি কাফের জানত যে, আল্লাহর নিকট কী করুণা রয়েছে, তাহলে কেউ তার জান্নাত থেকে নিরাশ হত না।’’ [মুসলিম] [1]
2/449 وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ:« إِذَا وُضِعَتِ الجنازةُ واحْتَمَلَهَا النَّاسُ أَوِ الرِّجَالُ عَلَى أعناقِهِمْ، فَإنْ كَانَتْ صَالِحَةً، قَالَتْ: قَدِّمُونِي قَدِّمُونِي، وَإنْ كَانَتْ غَيْرَ صَالِحَةٍ، قَالَتْ: يَا وَيْلَهَا! أَيْنَ تَذْهَبُونَ بِهَا؟ يَسْمَعُ صَوْتَهَا كُلُّ شَيْءٍ إِلاَّ الإنْسانُ، وَلَوْ سَمِعَهُ صَعِقَ». رواه البخاري
২/৪৪৯। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাঃআঃ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যখন জানাযা খাটে রাখা হয় এবং লোকেরা অথবা পুরুষরা কাঁধে বহন করিতে শুরু করে, তখন সে নেককার হলে বলিতে থাকে, ‘আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও। আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও।’ আর বদকার হলে সে বলিতে থাকে, ‘হায় ধ্বংস আমার! তোমরা এটিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?’ মানুষ ছাড়া সবাই তার শব্দ শুনতে পায়। মানুষ তা শুনলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলত। [বা মারা যেত।]’’ [বুখারী] [2]
3/450 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «الجَنَّةُ أقْرَبُ إِلى أحَدِكُمْ مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ، وَالنَّارُ مِثْلُ ذلك ». رواه البخاري
৩/৪৫০। ইবনি মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘জান্নাত তোমাদের কারো জুতোর ফিতার চাইতেও বেশী নিকটবর্তী, আর জাহান্নামও তদ্রূপ।’’ [বুখারী] [3]
[1] মুসলিম ২৭৫৫, তিরমিযী ৩৫৪২, আহমাদ ৮২১০, ২৭৫০৬, ৯৯১০
[2] সহীহুল বুখারী ১৩১৪, ১৩১৬, ১৩৮০, নাসায়ী ১৯০১, আহমাদ ১০৯৭৯, ১১১৫৮
[3] সহীহুল বুখারী ৬৪৮৮, আহমাদ ৩৬৫৮, ৩৯১৩, ৪২০৪
Leave a Reply