পিতা মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও তাদের বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক

পিতা মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও তাদের বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক

পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধব প্রমুখের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার মর্যাদা >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

১. অধ্যায়ঃ মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও উভয়ের মধ্যে কে তা পাওয়ার অধিক হাক্‌দার
২. অধ্যায়ঃ নফল নামাজ ও অন্য যে কোন নফল ইবাদতের উপর মাতা-পিতার খিদমাত অগ্রাধিকার প্রাপ্ত
৩. অধ্যায়ঃ ধ্বংস সে ব্যক্তির, যে পিতা-মাতা অথবা একজনকে বার্ধক্যে পেয়েও জান্নাত পেল না
৪. অধ্যায়ঃ পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধব প্রমুখের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার মর্যাদা
৫. অধ্যায়ঃ পাপ-পুণ্যের ব্যাখ্যা

১. অধ্যায়ঃ মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও উভয়ের মধ্যে কে তা পাওয়ার অধিক হাক্‌দার

৬৩৯৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাপেক্ষা হাক্দার ব্যক্তি কে? তিনি বলিলেন, তোমার মা। সে বলিল, এরপর কে? তিনি বলিলেন, এরপরেও তোমার মা। সে বলিল তারপর কে? তিনি বলিলেন, তারপরও তোমার মা। সে বলিল, এরপর কে? তিনি বলিলেন, এরপর তোমার পিতা। আর কুতাইবাহ্ বর্ণিত হাদিসে “আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাপেক্ষা যোগ্য কে” – এর উল্লেখ আছে।

তিনি [কুতাইবাহ্] তাহাঁর রিওয়ায়াতে “মানুষ” শব্দটি উল্লেখ করেন নি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭ম খণ্ড, ৬২৬৯; ইসলামিক সেন্টার- ৮ম খণ্ড, ৬৩১৮]

৬৩৯৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! [মানুষের মধ্যে] সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাধিক অধিকারী ব্যক্তি কে? তিনি বলিলেন, তোমার মা। তারপরও তোমার মা। তারপরও তোমার মা। তারপর তোমার পিতা। অতঃপর তোমার নিকটবর্তী জন। এরপর তোমার নিকটবর্তী জন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৭০; ইসলামিক সেন্টার- ৬৩১৯]

৬৩৯৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ] এর নিকট আগমন করলো। এরপর তিনি জারীর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। এতে তিনি অতিরিক্ত বলেছেন, এরপর সে বলিল, হ্যাঁ। তোমার পিতার শপথ! তুমি অবশ্যই অবগত হইবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৭১; ইসলামিক সেন্টার- ৬৩২০]

৬৩৯৭. ইবনি শুব্‌রুমাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

এ সানাদে উহায়ব বর্ণিত হাদীসে [সর্বাপেক্ষা সদ্ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য কে?] উল্লেখ রয়েছে।

আর মুহাম্মাদ ইবনি তালহার হাদীসে মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাপেক্ষা বেশী অধিকার কার রয়েছে। এরপর তিনি জারীর বর্ণিত হাদীসের মতোই উল্লেখ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৭২; ইসলামিক সেন্টার- ৬৩২১]

৬৩৯৮. আব্দুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ] এর নিকট আসলো। এরপর সে তাহাঁর নিকট জিহাদে অংশগ্রহণের অনুমতি চাইল। তখন তিনি বলিলেন, তোমার মাতা-পিতা কি জীবিত আছেন? সে বলিল, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তাহলে তাদের উভয়ের [খিদমাত করে] সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা কর।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৭৩; ইসলামিক সেন্টার- ৬৩২২]

৬৩৯৯. আবুল আব্বাস হইতে বর্ণীতঃ

আমি আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র ইবনিল আস [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি যে, এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ]-এর দরবারে আসলো! এরপর বর্ণনাকারী আগের মতো উল্লেখ করেন।

ঈমাম মুসলিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবুল আব্বাস-এর আসল নাম সায়িব ইবনি ফার্রুখ আল মাক্কী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৭৪; ইসলামিক সেন্টার- ৬৩২৩]

৬৪০০. আবু কুরায়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি], মুহাম্মাদ ইবনি হাতিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ও কাসিম ইবনি যাকারিয়্যা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হাবীব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

এ সানাদে হুবহু বর্ণনা করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৭৫; ইসলামিক সেন্টার- ৬৩২৪]

৬৪০১. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ]- এর দরবারে আগমন করলো। এরপর সে বলিল, আমি আপনার নিকট হিজরত ও জিহাদের জন্য বাইআত গ্রহণ করব। [এর দ্বারা] আমি আল্লাহর কাছে পুরস্কার ও বিনিময় আশা করি। তিনি বলিলেন, তোমার পিতা-মাতার মধ্যে কেউ জীবিত আছে কি? সে বলিল, হ্যাঁ, তারা দুজনেই জীবিত। তিনি আবার বলিলেন, সত্যিই কি! তুমি আল্লাহর নিকট প্রতিদান আকাঙ্খা করছ? সে বলিল, হ্যাঁ! তিনি বলিলেন, তাহলে তুমি তোমার পিতা-মাতার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের দুজনের সঙ্গে সদাচরণ কর।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৭৬; ইসলামিক সেন্টার- ৬৩২৫]

২. অধ্যায়ঃ নফল নামাজ ও অন্য যে কোন নফল ইবাদতের উপর মাতা-পিতার খিদমাত অগ্রাধিকার প্রাপ্ত

৬৪০২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, জুরায়জ [বানী ইসরাঈলের একজন আবিদ ব্যক্তি] তাহাঁর ইবাদাতখানায় ইবাদাতে নিমগ্ন থাকতেন। [একবার] তাহাঁর মাতা তাহাঁর কাছে আসলেন।

হুমায়দ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমাদের কাছে আবু রাফি এমন ভঙ্গিতে ব্যক্ত করেন, যেমনভাবে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর মায়ের ডাকের ভঙ্গিতে আবু হুরায়রা্ [রাদি.]-এর কাছে ব্যক্ত করিয়াছেন। কিভাবে তাহাঁর হাত তাহাঁর ভ্রুর উপর রাখছিলেন। এরপর তাহাঁর দিকে মাথা উঁচু করে তাকে ডাকছিলেন। বলিলেন, হে জুরায়জ! আমি তোমার মা, আমার সাথে কথা বলো। এ কথা এমন অবস্থায় বলছিলেন, যখন জুরায়জ সলাতে নিমগ্ন ছিলেন। তখন তিনি মনে মনে বলিতে লাগলেন, “হে আল্লাহ! [একদিকে] আমার মা আর [অপরদিকে] আমার নামাজ [আমি কী করি?]”। রাবী বলেন, অবশেষে তিনি তাহাঁর নামাজকে অগ্রাধিকার দিলেন এবং তাহাঁর মা ফিরে গেলেন। পরে তিনি দ্বিতীয়বার আসলেন এবং বলিলেন, হে জুরায়জ! আমি তোমার মা, তুমি আমার সঙ্গে কথা বলো। তিনি বলিলেন, ইয়া আল্লাহ! আমার মা, আমার নামাজ। তখন তিনি তাহাঁর সলাতে ব্যস্ত রইলেন। তখন তাহাঁর মা বলিলেন, “হে আল্লাহ! এ জুরায়জ আমারই ছেলে। আমি তার সঙ্গে কথা বলিতে চাচ্ছিলাম। সে আমার সাথে কথা বলিতে অস্বীকার করিল। হে আল্লাহ! তার মৃত্যু দিয়ো না, যে পর্যন্ত তাকে ব্যভিচারিণীর মুখ না দেখাও।”

তিনি [সাঃআঃ] বলেন, যদি তাহাঁর মাতা তাহাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোন বিপদের জন্য বদদুআ করিতেন তাহলে অবশ্যই সে বিপদে পতিত হত।

তিনি [সাঃআঃ] বলেন, এক মেষ রাখাল জুরায়জ-এর ইবাদাতখানার নিকটেই [মাঝে মাঝে] আশ্রয় নিত। তিনি বলেন, এরপর গ্রাম থেকে এক মহিলা বের হয়ে এলে। উক্ত রাখাল তার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। এতে মহিলাটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। তখন লোকেরা তাকে জিজ্ঞেস করলো, এ [সন্তান] কোথা থেকে? সে উত্তর দিল, এ ইবাদাতখানায় যে বাস করে, তার থেকে। তিনি বলেন, এরপর তারা শাবল-কোদাল ইত্যাদি নিয়ে এলো এবং চিৎকার করে ডাক দিল। তখন জুরায়জ সলাতে মশগুল ছিলেন। কাজেই তিনি তাদের সাথে কথা বলিলেন না। তিনি বলেন, এরপর তারা তাহাঁর ইবাদাতখানা ধ্বংস করিতে লাগল। তিনি এ অবস্থা দেখে নীচে নেমে এলেন। এরপর তারা বলিল, এ মহিলাকে জিজ্ঞেস করো [সে কী বলছে]। তিনি বলেন, তখন জুরায়জ মুচকি হেসে শিশুটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলিলেন, তোমার পিতা কে? তখন শিশুটি বলিল, আমার পিতা সে মেষ রাখাল। যখন তারা সে শিশুটির মুখে এ কথা শুনতে পেল তখন তারা বলিল, [হে দরবেশ] আমরা তোমার ইবাদাতখানার [গীর্জার] যতটুকু ভেঙ্গে ফেলেছি তা সোনা-রূপা দিয়ে পুনঃনির্মাণ করে দেব। তিনি বলিলেন, না; বরং তোমরা মাটি দ্বারাই পূর্বের ন্যায় তা নির্মাণ করে দাও। এরপর তিনি তাহাঁর ইবাদাতগাহে উঠে বসলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৭৭; ইসলামিক সেন্টার- ৬৩২৬]

৬৪০৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তিনজন ব্যতীত কেউ দোলনায় কথা বলেনি। তাঁদের মধ্যে একজন ঈসা ইবনি মারইয়াম [আঃ]। আরেকজন জুরায়জ সম্পর্কিত শিশুটি। জুরায়জ ছিলেন একজন ইবাদাতগুজার ব্যক্তি। তিনি একটি ইবাদাতখানা তৈরি করে সেখানে অবস্থান করিতেন। এক সময় তাহাঁর কাছে তাহাঁর মা আসলেন। তিনি সে সময় সলাতে নিমগ্ন ছিলেন। মা ডাকলেন, হে জুরায়জ! তখন তিনি [মনে মনে] বলিতে লাগলেন, হে আমার প্রতিপালক! [একদিকে] আমার মা আর [অন্যদিকে] আমার নামাজ। এরপর তিনি সলাতে মগ্ন থাকলেন। মা ফিরে গেলেন। পরের দিন তিনি আবার তার কাছে এলেন। তখনও তিনি নামাজ আদায় করছিলেন। তিনি বলিলেন, হে জুরায়জ! তখন তিনি [মনে মনে] বলিলেন, হে আমার প্রতিপালক! একদিকে আমার মা [আমাকে ডাকছেন] আর [অন্য দিকে] আমার নামাজ। এরপর তিনি সলাতে মশগুল রইলেন। মা ফিরে গেলেন। এরপরের দিন আবার এলেন। তখনও তিনি সলাতেই রত ছিলেন। এবারও [মা] বলিলেন, হে জুরায়জ! তখন তিনি [মনে মনে] বলিলেন, হে আমার প্রতিপালক! [একদিকে] আমার মা [আমাকে ডাকছেন]। [অন্যদিকে] আমার সালাত। এরপর তিনি সলাতেই লিপ্ত রইলেন। এবার তার মা বলিলেন, হে আল্লাহ! বদ্‌কার স্ত্রীলোকের সম্মুখীন করার আগ পর্যন্ত তুমি তার মৃত্যু দিয়ো না। এরপর বানু ইসরাঈলদের মধ্যে জুরায়জ ও তার ইবাদাত সম্পর্কে আলোচনা হইতে লাগল। [বানী ইসরাঈলের মধ্যে] সৌন্দর্য্য উপমেয় এক দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোক ছিল। সে বলিল, যদি তোমরা চাও তাহলে আমি তোমাদের সামনে তাকে [জুরায়জকে] ফিতনায় ফেলতে পারি। তিনি বলেন, এরপর সে জুরায়জের সামনে নিজেকে পেশ করে। কিন্তু জুরায়জ তার প্রতি ভ্রুক্ষেপও করেননি। অবশেষে সে এক মেষ রাখালের নিকট আসে। সে জুরায়েজের ইবাদাতখানায় মাঝে মধ্যে যাওয়া-আশা করত। সে তাকে নিজের দিকে প্রলুদ্ধ করিল। সে [রাখাল] তার উপর অনুরক্ত হলো। এতে সে গর্ভবতী হয়ে গেল। যখন সে সন্তান প্রসব করিল তখন বলে দিল যে, এ সন্তান জুরায়জের। লোকেরা [এ কথা শুনে] তাহাঁর কাছে এসে জড়ো হলো এবং তাঁকে নীচে নামতে বাধ্য করিল এবং তারা তার ইবাদাতখানা ভেঙ্গে ফেলল আর তাঁকে প্রহার করিতে লাগল। তখন তিনি [জুরায়জ] জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের ব্যাপার কী? তারা বলিল, তুমি তো এ দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোকের সাথে ব্যভিচার করেছো এবং তোমার পক্ষ থেকে সে সন্তান প্রসব করেছে। তখন তিনি বলিলেন, শিশুটি কোথায়? তারা শিশুটি নিয়ে এলো। এরপর তিনি বলিলেন, আমাকে একটু অবকাশ দাও, আমি নামাজ আদায় করে নেই। তারপর তিনি নামাজ আদায় করিলেন এবং নামাজ শেষে শিশুটির কাছে এলেন। এরপর তিনি শিশুটির পেটে টোকা দিয়ে বলিলেন, হে বৎস! তোমার পিতা কে? সে উত্তর করিল। অমুক রাখাল। বর্ণনাকারী বলেন, তখন লোকেরা জুরায়জের দিকে এগিয়ে আসলো এবং তাঁকে চুম্বন করিতে এবং তাহাঁর গায়ে হাত বুলাতে লাগল। এরপর বলিল, আমরা আপনার ইবাদাতখানা স্বর্ণ দ্বারা নির্মাণ করে দিব। তিনি বলিলেন, না বরং পুনরায় মাটি দিয়ে তৈরি করে দাও, যেমন ছিল। লোকেরা তাই করিল। [তৃতীয় জন] একদা এক শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল। তখন উত্তম পোষাকে সজ্জিত এক লোক একটি হৃষ্টপুষ্ট সওয়ারীর উপর আরোহণ করে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। তখন তার মা বলিল, “হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে এর মত বানিয়ে দাও। তখন শিশুটি মাতৃস্তন ছেড়ে তার প্রতি লক্ষ করে বলিল, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এর মত বানিও না।” এরপর সে আবার স্তনের দিকে ফিরে দুধ পান করিতে লাগল। রাবী বলেন, মনে হয় যেন আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে এখনো দেখছি যে, তিনি তাহাঁর শাহাদাত আঙ্গুলি নিজ মুখে দিয়ে তা চুষে সে শিশুটির দুধ পানের দৃশ্য দেখাচ্ছেন। এরপর তিনি বর্ণনা করিলেন যে, কিছু লোক একজন যুবতীকে নিয়ে যাচ্ছিল এবং তাকে তারা প্রহার করছিল এবং বলাবলি করছিল যে, তুই ব্যভিচার করেছিস, তুই চুরি করেছিস। আর সে বলছিল, আল্লাহর উপরই আমার ভরসা; আর তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক। তখন তার মা বলিল, হে আল্লাহ! তুমি আমার পুত্রকে এর [দাসীর] মত বানিও না। তখন শিশুটি দুধপান ছেড়ে তার [দাসীর] প্রতি লক্ষ্য করে বলিল, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এর [দাসীর] মত বানিয়ে দাও।” সে সময় মা ও পুত্রের মধ্যে কথোপকথন হলো। তখন মা বলিল, ঠাটা পড়ুক [এ কেমন কথা]। সুদর্শন এক ব্যক্তি যাচ্ছিল। তখন আমি বললাম, “হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে এর মত বানিও”। আর তুমি বললে, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এর মত বানিও না” এরপর লোকেরা এ দাসীকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন তারা তাঁকে প্রহার করছিল এবং বলছিল, তুই ব্যভিচার করেছিস এবং তুই চুরি করেছিস। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার পুত্রকে তার মত বানিও না। আর তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তার মতো বানাও। সে বলিল, সে আরোহী ব্যক্তি ছিল অত্যাচারী। তাই আমি বলেছি, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তার মত বানিও না। আর যে দাসীকে ওরা বলছিল, তুই যিনা করেছিস। আসলে সে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় নি এবং বলছিল, চুরি করেছিস, অথচ সে চুরি করেনি। তাই আমি বললাম, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তার মত বানিয়ে দাও”।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৭৮; ইসলামিক সেন্টার- ৬৩২৭]

৩. অধ্যায়ঃ ধ্বংস সে ব্যক্তির , যে পিতা-মাতা অথবা একজনকে বার্ধক্যে পেয়েও জান্নাত পেল না

৬৪০৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নাক ধূলিমলিন হোক, আবারও নাক ধূলিমলিন হোক, আবারও নাক ধূলিমলিন হোক। জিজ্ঞেস করা হল, কোন্‌ ব্যক্তির, হে আল্লাহর রসূল? তিনি বলিলেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে বার্ধক্যাবস্থায় পেল অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারল না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৭৯; ইসলামিক সেন্টার- ৬৩২৮]

৬৪০৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সে ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, আবার সে ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, আবার তার নাক ধূলিমলিন হোক। জিজ্ঞেস করা হলো, কার হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]। তিনি বলিলেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে কিংবা তাদের একজনকে বার্ধক্যজনিত অবস্থায় পেল, এরপরেও সে জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারল না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৮০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৩২৯]

৬৪০৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তার নাক ধূলিমলিন হোক- কথাটি তিনবার বলেছেন। এরপর তিনি উক্ত হাদীসের মতোই উল্লেখ করিয়াছেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৮১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৩৩০]

৪. অধ্যায়ঃ পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধব প্রমুখের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার মর্যাদা

৬৪০৭. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মাক্কায় এক রাস্তায় আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.]- এর সাথে এক বেদুঈনের সাক্ষাৎ হলো। আবদুল্লাহ [রাদি.] তাঁকে সালাম দিলেন এবং তিনি যে গাধার পিঠে আরোহণ করিতেন, সে গাধাটি তাকে আরোহনের জন্য দিয়ে দিলেন। তিনি তাহাঁর মাথার পাগড়ীটিও তাকে দান করিলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনি দীনার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাঁকে বলিলেন যে, আমরা তাকে বললাম, আল্লাহ আপনার কল্যাণ করুন। বেদুঈনরা তো অল্পতেই তুষ্ট হয়ে যায়। [এত দেয়ার প্রয়োজন কি ছিল?] তখন আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] বলিলেন, এ ব্যক্তির পিতা উমর ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]- এর বন্ধু ছিলেন। আর আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছি যে, কোন ব্যক্তির সর্বোত্তম নেকীর কাজ হচ্ছে তার পিতার বন্ধুর সঙ্গে সহমর্মিতার সম্পর্ক বজায় রাখা।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৮২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৩৩১]

৬৪০৮. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার হলো পিতার বন্ধুর সাথে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখা। [ইসলা

মিক ফাউন্ডেশন- ৬২৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৩৩২]

৬৪০৯. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

যখন তিনি মাক্কা্হ্ অভিমুখে রওনা হইতেন তখন তাহাঁর সাথে একটি গাধা থাকত। উটের সওয়ারীতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে ক্ষণিক স্বস্তি লাভের জন্য তাতে আরোহণ করিতেন। আর তাহাঁর সঙ্গে একটি পাগড়ী থাকত, যা দিয়ে তিনি মাথা বেঁধে নিতেন। কোন একসময় তিনি উক্ত গাধায় আরোহণ করে যাচ্ছিলেন, তখন তাহাঁর পাশ দিয়ে একজন বেদুঈন অতিক্রম করছিল। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি অমুক এর পুত্র অমুক নও? সে বলিল, হ্যাঁ। তখন তিনি তাকে গাধাটি দিয়ে দিলেন এবং বলিলেন, এতে আরোহণ কর। তিনি তাঁকে পাগড়ীটিও দান করিলেন এবং বলিলেন, এটি দ্বারা তোমার মাথা বেঁধে নাও। তখন তাহাঁর সঙ্গীদের কেউ কেউ তাঁকে বলিলেন, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। আপনি এ বেদুঈনকে গাধাটি দিয়ে দিলেন, যার উপর আরোহণ করে আপনি স্বস্তি লাভ করিতেন এবং পাগড়ীটিও দান করিলেন, যার দ্বারা আপনার মাথা বাঁধতেন। তখন তিনি বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি, সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার হলো কোন ব্যক্তির পিতার ইন্তি্কালের পর তার বন্ধু-বান্ধবের সাথে সদ্ব্যবহার বজায় রাখা। আর এ বেদুঈনের পিতা ছিলেন উমর [রাদি.]-এর অন্তরঙ্গ বন্ধু।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৩৩৩]

৫. অধ্যায়ঃ পাপ-পুণ্যের ব্যাখ্যা

৬৪১০. নাও্ওয়াস ইবনি সামআন আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- কে পূণ্য ও পাপ সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তখন তিনি জবাব দিলেন, পূণ্য হলো উন্নত চরিত্র। আর পাপ হলো যা তোমার অন্তরে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে এবং লোকে তা জানুক তা তুমি অপছন্দ করো।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৩৩৪]

৬৪১১. নাও্ওয়াস ইবনি সামআন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি মাদীনাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে এক বছর অবস্থান করি। আর একটি মাত্র কারণ আমাকে হিজরত থেকে বিরত রাখে। তা হলো দ্বীনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার সুযোগ। আমাদের কেউ যখন হিজরত করে আসত তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে কোন কিছুই জিজ্ঞেস করত না। তিনি বলেন, অতএব আমি তাঁকে পূণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উত্তর দিলেন, সদাচরণই পূণ্য আর যা তোমার অন্তরে সন্দেহের উদ্রেক করে এবং লোকে তা জানুক তা তুমি পছন্দ করো না, তাই পাপ।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৩৩৫]

Comments

Leave a Reply