আবু মূসা আশআরী ও আবু আমির আশআরী [রাদি.]-এর ফযিলত

আবু মূসা আশআরী ও আবু আমির আশআরী [রাদি.]-এর ফযিলত

আবু মূসা আশআরী ও আবু আমির আশআরী [রাদি.]-এর ফযিলত >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৩৮. অধ্যায়ঃ আবু মূসা আশআরী ও আবু আমির আশআরী [রাদি.]-এর ফযিলত

৬২৯৯. আবু মূসা আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর সেবায় ছিলাম। সে সময় তিনি মাক্কাহ ও মাদীনার মাঝামাঝি জিরানাহ নামধারী জায়গায় অবস্থান করছিলেন। তাহাঁর সাথে বিলালও [রাদি.] ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]এর নিকট এক আরব বেদুঈন এলো। সে বলিল হে মুহাম্মাদ! আপনি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছেন তা কি পূরণ করবেন না? তখন রাসূল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন, তুমি সুখবর গ্রহণ করো। তারপর সে তাঁকে [রাসূলুল্লাহ্কে] বলিল, আপনি তো অনেকবারই বলেছেন সুখবর গ্রহণ করো। তখন রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] রাগান্বিত আবু মূসা ও বিলালের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলিলেন. দেখ এ লোকটি সুখবর প্রত্যাখ্যান করেছে। অতএব তোমরা উভয়ে এগিয়ে এসো। তখন তাঁরা উভয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! আমরা এগিয়ে এসেছি, আপনার সুখবর গ্রহণ করেছি। তারপর রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] একটি পানি ভর্তি পাত্র আনালেন। তিনিতাহাঁর দু হাত ও মুখমন্ডল ধুইলেন এবং তাতে কুলি করিলেন। তারপর তিনি বলিলেন, তোমরা দুজনে এ থেকে পানি পান করো এবং তোমাদের মুখমন্ডলে ও বুকে জড়িয়ে দাও। আর তোমরা দুজনে সুখবর কবূল করো। তারা উভয়ে পেয়ালাটি গ্রহন করিলেন এবং রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর নির্দেশ মুতাবিক কাজ করিলেন। তখন উম্মুল মুমিনীন উম্মু সালামাহ [রাদি.] পর্দার অন্তরাল হইতে তাদেঁর উভয়কে ডেকে বলিলেন, তোমাদের মায়ের জন্য তোমাদের পেয়ালায় কিছু পানি রেখে দাও। তারপর তাঁরা অবশিষ্ট পানি হইতে তাঁকে অল্প পরিমাণ দিলেন।

[ই.ফা.৬১৮০, ইসলামিক সেন্টার- ৬২২৪]

৬৩০০. আব্দুল্লাহ ইবনি বাররাদ আবু আমির আশআরী ও আবু কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনি আলা[রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবু বুরদাহ [রাদি.] এর পিতার সানাদ হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] যখন হুনায়ন যুদ্ধ থেকে ফিরে আসেন তখন আবু আমির [রাদি.] কে একটি বাহিনীর পরিচালনায় দিয়ে আওতাস অভিযানে পাঠান। তিনি দুরায়দ ইবনি সিম্মার পরস্পর একত্রিত হলেন। দুরায়দ ইবনি সিম্মাহ মৃত্যুবরণ করলো এবং আল্লাহ তার বাহিনীকে বিজিত করিলেন। তারপর আবু মূসা [রাদি.] বলেন, তিনি [সাঃআঃ] আমাকে আবু আমিরের সাথে প্রেরণ করেছিলেন। আবু আমিরের হাঁটুতে তীরের আঘাত লেগেছিল। বানী জুশাম সম্প্রদায়ের এক লোক সে তীরটি নিক্ষেপ করেছিল। এ তীরটি তার হাঁটুতে বিদ্ধ হয়েছিল। তখন আমি তাহাঁর নিকট গেলাম এবং বললাম, চাচাজান! কে আপনাকে তীর বিদ্ধ করেছে? তখন আবু আমির-এর ইঙ্গিতে আবু মূসা [রাদি.] কে জানালেন, ঐ আমার ঘাতক, যাকে তুমি দেখিতে পাচ্ছ, সে আমাকে তীরবিদ্ধ করেছে। আবু মূসা [রাদি.]বলেন আমি তাকে আক্রমণ করে মারার ইচ্ছা পোষণ করলাম। আমি তার মুখোমুখি হলাম। সে আমাকে দেখামাত্র লুকিয়ে যাচ্ছিল। আমি তাকে আক্রমণ করে বলছিলাম, হে বেহায়া, বেপরোয়া! পালাচ্ছ কেন? তুমি কি আরবীয় নও? বীরত্ব আছে তো দাঁড়িয়ে যাও, ভাগছো কেন? তখন সে থামল। তারপর সে ও আমি পরস্পর মুখোমুখি হলাম। আমরা পরস্পরে দুবার পাল্টাপাল্টি আক্রমণ করলাম। আমি তাকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে ধরাশায়ী করলাম এবং শেষাবধি মেরে ফেললাম। তারপর আমি আমির [রাদি.]এর নিকট পত্যাবর্তন করে বললাম, আল্লাহ আপনার ঘাতককে মেরে ফেলেছেন। তখন আবু আমির [রাদি.] বলিলেন, এ তীরটি বের করে নাও। আমি তৎক্ষণাৎ তা বের করে ফেললাম। তখন তা থেকে পানি [রক্ত] বের হচ্ছিল। তারপর তিনি বলিলেন, হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর নিকট যাও এবং আমার পক্ষ থেকে তাঁকে সালাম পৌছে দিও। আর তাহাঁর নিকট গিয়ে আবেদন করিবে, আবু আমির আপনাকে তার জন্য মাগফিরাতের দুআ চেয়েছেন। তিনি [আবু মূসা] বলেন, উপস্থিত লোকদের সামনে আবু আমির আমাকে এ দায়িত্ব দিলেন এবং কতক সময় স্থির থাকলেন। তারপর তিনি জান্নাতবাসীদের মধ্যে গণ্য হলেন। আমি নবী[সাঃআঃ] এর নিকট গেলাম এবং তাহাঁর সেবায় উপস্থিত হলাম্ তখন তিনি চাটাইপাতা খাটের উপর ছিলেন এবং ঐ খাটের উপর চাদর ছিল না। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর পৃষ্ঠে ও পাঁজরে চাটাইয়ের চিহ্ন বসে গিয়েছিল। তারপর আমি তাহাঁর নিকট আমাদের ও আবু আমিরের সংবাদ দিলাম এবং আমি তাঁকে বললাম, তিনি [আবু আমির]বলেছেন. তাহাঁর জন্য আপনাকে মাগফিরাতের দুআ কামনা করিতে। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] পানি আনালেন এবং তা দ্বারা ওযূ করিলেন। তারপর দুহাত তুলে বলিলেন. হে আল্লাহ! উবায়দ আবু আমিরকে ক্ষমা করে দাও। তখন আমি তাহাঁর দু বগলের শুভ্রতা দেখছিলাম। পুনরায় তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! তাকে কিয়ামাতের দিন তোমার মাখলূকের মাঝে কিংবা মানুষের মধ্যে অনেকের উপরে জায়গা দিও। তখন আমি বললাম হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আমার জন্যও মাগফিরাতের দুআ করুন। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন,

اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَوْقَ كَثِيرٍ مِنْ خَلْقِكَ أَوْ مِنَ النَّاسِ

হে আল্লাহ! আব্দুল্লাহ ইবনি কায়সের গুনাহ মাফ করে দাও এবং তাকে কিয়ামাতের দিনে সম্মানজনক জান্নাতে প্রবেশ করাও।

আবু বুরদাহ [রাদি.] বলেন, একটি দুআ আবু আমিরের জন্য এবং অপরটি আবু মূসা আশআরীর জন্য।

[ই.ফা.৬১৮১, ইসলামিক সেন্টার- ৬২২৫]

Comments

Leave a Reply