আবু যার [রাদি.]-এর ফযিলত

আবু যার [রাদি.]-এর ফযিলত

আবু যার [রাদি.]-এর ফযিলত >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

২৮. অধ্যায়ঃ আবু যার [রাদি.]-এর ফযিলত

৬২৫৩.আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা আমাদের গিফার সম্প্রদায় হইতে বের হলাম। তারা হারাম মাসগুলোকে হালাল হিসেবে গ্রহণ করত। আমি আমার ভাই উনায়স এবং আমাদের মা সহ বের হলাম এবং আমাদের এক মামার নিকট গেলাম। মামা আমাদের অনেক সসম্মানে গ্রহণ করিলেন এবং আমাদের সঙ্গে ভদ্রতাসূচক আচরণ করিলেন। এতে তাহাঁর সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা আমাদের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হল। তারা বলিল, তুমি যখন তোমার পরিবার হইতে দূরে থাকে তখন উনায়স তোমার অনুপস্থিতিতে তাদের নিকট আসা-যাওয়া করে। তারপর আমাদের মামা আসলেন এবং তাঁকে যা বলা হয়েছে তিনি তা আমাদের কাছে বলে দিলেন। তখন আমি বললাম, আপনি আমাদের সঙ্গে অতীতে যে সদ্ব্যবহার করিয়াছেন তাকে নিঃশেষ করে দিলেন। তারপর আপনার সাথে আমাদের এক থাকার কোন সুযোগ নেই। অতঃপর আমরা আমাদের উটগুলোকে সন্নিকটে আনলাম এবং তাদের উপর আরোহিত হলাম। তখন আমাদের মামা তাহাঁর বস্ত্র দ্বারা নিজেকে আবৃত করে কাঁদতে শুরু করিলেন। আমরা রওনা হয়ে মক্কার নিকটবর্তী অবতরণ করলাম। উনায়স আমাদের পশুগুলো এবং সে পরিমাণ পশুর মাঝে বাজি ধরল। এরপর তারা উভয়ে এক গণকের নিকট গেল। গণক উনায়সকে শ্রেষ্ঠ বলে রায় দিল। তারপর উনায়স আমাদের উটগুলো এবং তার সমসংখ্যক উট নিয়ে আমাদের কাছ থেকে প্রত্যাবর্তন করিল।

আবু যার [রাদি.] বলিলেন, হে ভ্রাতুষ্পত্র! আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর সাথে দেখা করার তিন বছর আগে নামাজ আদায় করেছি। আমি [রাবী] বললাম, কার জন্যে? তিনি বলিলেন, আল্লাহর জন্যে। আমি [রাবী] বললাম, কোন্ দিকে মুখ ফিরাতেন? তিনি বলিলেন, আমার মহান আল্লাহ যেদিকে আমার মুখ ফিরিয়ে দিতেন সেদিকে মুখ ফিরাতাম। আমি ইশার নামাজ আদায় করিতে করিতে রাতের শেষাংশে ঘুমের ঘোরে ঢলে পড়তাম, যতক্ষণ না সূর্যের কিরণ এসে আমার উপর পড়ত।

তারপর উনায়স [রাদি.] বলিলেন, মক্কায় আমার একটু দরকার আছে। সুতরাং আপনি আমার সংসার দেখাশুনা করবেন। তারপর উনায়স [রাদি.] চলে গেল এবং মাক্কায় পৌঁছলো এবং সে দেরীতে আমার নিকট প্রত্যাবর্তন করিল। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, তুমি কী করলে? সে বলিল, আমি মাক্কায় কতিপয় জনৈক লোকের দেখা পেয়েছি যিনি আপনার দ্বীনের উপর অবিচল। তিনি মনে করেন যে, আল্লাহ তাঁকে [রসূল হিসেবে] পাঠিয়েছেন। আমি {আবু যার [রাদি.]} বললাম, ব্যক্তিরা তাহাঁর ব্যাপারে কী বলে। সে বলিল, তারা তাঁকে কবি, জ্যোতিষী ও যাদুকর বলে। উনায়স [রাদি.] নিজেও একজন কবি ছিল।

উনায়স [রাদি.] বলিল, আমি বহু গণকের কথা শুনেছি; কিন্তু সে লোকের কথা গণকের মতো নয়। আমি তাহাঁর বাক্যকে কবিদের রচনার সাথে মিলিয়ে দেখেছি; কিন্তু কোন কবির ভাষার সঙ্গে তার কোন সামঞ্জস্য নেই। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়ই তিনি সত্যবাদী এবং ওরা মিথ্যাবদী।

তিনি বলিলেন, আমি বললাম, তুমি আমার সংসার খোঁজ-খবর রাখবে এবং আমি গিয়ে একটু দেখে নেই। তিনি বলিলেন, আমি মক্কায় আসলাম এবং তাদের এক জীর্ণ লোককে উদ্দেশ্য করে বললাম, সে লোক কোথায়, যাকে তোমরা সাবী [বিধর্মী] বলে ডাক? সে আমার দিকে ইঙ্গিত করিল এবং বলিল, এ-ই সাবী। এরপর মক্কা পর্বতের ব্যক্তিরা ঢেলা ও হাড়সহ আমার উপর চড়াও হলো, এমনকি আমি অজ্ঞান হয়ে লুটে পড়লাম। তিনি বলিলেন, যখন আমি উঠলাম তখন লাল মূর্তির [অর্থাৎ- রক্তের ঢল] অবস্থায় উঠলাম। তিনি বলেন, তারপর আমি যমযম কূপের নিকট এসে আমার রক্ত ধুয়ে নিলাম। তারপর তার পানি পান করলাম। হে ভ্রাতুষ্পুত্র! আমি সেখানে ত্রিশ রাত-দিন অবস্থান করেছিলাম। সে সময় যমযমের পানি ব্যতীত আমার নিকট কোন খাবার ছিল না। এরপর আমি এমন মোটা হয়ে গেলাম যে, আমার পেটের চামড়ায় ভাঁজ পড়ে গেল। আমি আমার অন্তরে ক্ষুধার যাতনা বুঝতে পারিনি। তিনি বলিলেন, ইতোমধ্যে মাক্কাবাসীরা যখন এক উজ্জ্বল গভীর রাতে ঘুমিয়ে পড়ল, তখন কেউ বাইতুল্লাহ্র তাওয়াফ করছিল না। সে সময় তাদের মধ্য থেকে দুজন মহিলা ইসাফা ও নায়িলাকে ডাকছিল। তিনি বলরেন, তারা তাওয়াফ করিতে করিতে আমার নিকট এসে উপস্থিত হল। আমি বললাম, তাদের একজনকে অপরজনের সঙ্গে বিবাহে আবদ্ধ কর। তিনি বলিলেন, তবুও তারা তাদের কথা হইতে বিচ্ছিন্ন হলো না। তিনি বলেন, তারা আবার আমার সামনে দিয়ে আসলো। আমি অধৈর্য হয়ে বললাম, গুপ্তাঙ্গ কাষ্ঠের ন্যায়। এখানে আমি ইশারা ইঙ্গিত না করে স্পষ্টভাবেই বললাম। এতে তারা অভিসম্পাত করিতে করিতে ফিরে চলল আর বলিতে লাগল, যদি এখানে আমাদের লোকদের মাঝে কেউ থাকত [তাহলে এ দুষ্টকে উপযুক্ত শাস্তি দিত]! পথিমধ্যে উভয় নারীর সাথে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ও আবু বকর [রাদি.]-এর দেখা হলো। তখন তাঁরা উভয়ে উঁচুভূমি থেকে নীচে নামছিলেন। তিনি তাদের দুজনকেই প্রশ্ন করিলেন, কী হয়েছে তোমাদের? তাঁরা বলিল, কাবাহ্ ও তার পর্দার মধ্যস্থলে এ বিধর্মী আছে। তিনি প্রশ্ন করিলেন, সে তোমাদের কী বলেছে? তারা বলিল, সে এমন কথা বলেছে যাতে মুখ ভরে যায় [মুখে বলা ঠিক না]। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এসে তাহাঁর সাথীসহ হাজ্রে আসওয়াদ চুম্বন করিলেন এবং বাইতুল্লাহ্র তাওয়াফ করে নামাজ আদায় করিলেন। যখন তিনি তাহাঁর নামাজ আদায় শেষ করিলেন তখন আবু যার [রাদি.] বলিলেন, আমি প্রথম লোক, যে তাঁকে ইসলামী শারঈ নিয়মে সালাম জানিয়ে বললাম, আস্সালামু আলাইকা ইয়া রসূলুল্লাহ্! [আপনার প্রতি সালাম ও শান্তি বর্ষিত হোক]। অতঃপর তিনি জানতে চাইলেন, তুমি কে? তিনি বলিলেন, আমি গিফার সম্প্রদায়ের ব্যক্তি। তিনি বলিলেন, তারপর তিনি তাহাঁর হাত ঝুকালেন এবং তাহাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো কপালে রাখলেন। আমি ধারণা করলাম, গিফার সম্প্রদায়ের প্রতি আমার সম্পর্ককে তিনি পছন্দ করছেন না। তারপর আমি তাহাঁর হাত ধরতে চাইলাম। তাহাঁর সাথী আমাকে বাধা দিলেন। তিনি তাঁকে আমার তুলনায় বহু বেশী ভাল জানতেন। অতঃপর তিনি মাথা তুলে দেখলেন এবং আমাকে প্রশ্ন করিলেন, তুমি কতদিন যাবৎ এখানে অবস্থান করছ? আমি বললাম, আমি এখানে ত্রিশটি রাত্রদিন যাবৎ আছি। তিনি বলিলেন, তোমাকে কে খাদ্য দিত? আমি বললাম, যমযম কূপের পানি ব্যতীত আমার জন্য অন্য কোন খাদ্য ছিল না। এ পানি পান করেই আমি স্থূলদেহী হয়ে গেছি, এমনকি আমার পেটের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে এবং আমি কক্ষনো ক্ষুধার কোন দুর্বলতা বুঝতে পারিনি। তিনি বলিলেন, এ পানি অতিশয় বারাকাতময় ও প্রাচুর্যময় এবং তা অন্যান্য খাবারের মতো তা পেট পূর্ণ করে দেয়।

তারপর আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]! তাকে আজ রাতের খাবার খাওয়ানোর জন্য আমাকে অনুমতি দিন। এরপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ও আবু বকর [রাদি.] রওনা হলেন এবং আমিও তাঁদের সঙ্গে চললাম। আবু বকর [রাদি.] একটি দরজা খুললেন এবং আমাদের জন্য তিনি মুষ্টি ভরে তায়িফের কিশ্মিশ্ খেতে দিলেন। এটাই ছিল আমার প্রথম খাদ্য যা সেখানে আমি খেলাম। সেখানে যতক্ষণ থাকার তা থাকলাম। তারপর আমি রসূলুল্লা [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলাম। তিনি বলিলেন, আমাকে খেজুর সমৃদ্ধ একটি দেশের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আমার ধারণ সেটি ইয়াস্রিব [মাদীনার পুরনো নাম] ব্যতীত অন্য কোন জায়গা নয়। এরপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃতুমি কি আমার পক্ষ থেকে তোমার সম্প্রদায়ের নিকট আমার আহ্বান পৌঁছিয়ে দিবে? হয়ত তোমার ওয়াসীলায় আল্লাহ তাদের কল্যাণ দান করবেন এবং এদের হিদায়াতের জন্য তোমাকে পুরস্কৃত করবেন। তারপর আমি উনায়সের নিকট প্রত্যাবর্তন করলাম। সে বলিল, আপনি কী করিয়াছেন? আমি বললাম, আমি অবশ্যই ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছি। সে [উনায়স] বলিল, আপনার দ্বীন সম্পর্কে আমার কোন অভিযোগ নেই। আমিও ইসলাম কবূল করেছি এবং ঈমান এনেছি। তারপর আমরা দুজনে মায়ের নিকট আসলাম। তিনি বলিলেন, তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে আমার কোন অভিযোগ নেই। আমিও ইসলাম কবূল করলাম এবং ঈমান আনলাম। তারপর আমরা আরোহিত হয়ে আমাদের গিফার সম্প্রদায়ের নিকট আসলাম। তাদের অর্ধেক লোক ইসলাম কবূল করিল এবং ঈমা ইবনি রাহাযাহ্ গিফারী তাঁদের ইমামাত করেন।

তিনি ছিলেন তাঁদের নেতা। তাদের বাকী অর্ধেক বলিল, যখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] মাদীনায় আসবেন তখন আমরা ইসলাম কবূল করব। তারপরে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] মাদীনাতে আসলেন এবং তাঁদের [গিফার সম্প্রদায়ের] অবশিষ্ট অর্ধেক ব্যক্তি ইসলামে দীক্ষিত হলো। এরপর আসলাম সম্প্রদায়ের লোকেরা আসলো। তারা বলিল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আমাদের ভাইয়েরা [মিত্ররা] যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করিয়াছেন আমরাও তাঁদের ন্যায় ইসলাম গ্রহণ করলাম। এভাবে তাঁরাও ইসলামে দীক্ষিত হলো। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃগিফার সম্প্রদায়কে আল্লাহ তাআলা মাফ করুন এবং আসলাম গোত্রকে আল্লাহ তাআলা নিরাপত্তা প্রদান করুন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩৫, ইসলামিক সেন্টার-৬১৭৮]

{৩৮} ইসাফা ও নায়িলাহ্ নামধারী সাফা ও মারওয়াতে দুটি প্রতীমা ছিল। ইসাফা ছিল পুরুষ এবং নায়িলাহ্ সহধর্মিণী। মাক্কাবাসীদের মাঝে প্রসিদ্ধ ছিল যে, এরা উভয়ে হরমে যিনায় জড়িয়ে পড়েছিল বলে শাস্তি স্বরূপ ওদের বিকৃত করে পাথরের আকৃতিতে রূপ দেয়। কিন্তু তারা প্রতীমা হিসেবে এগুলোর আরাধনা করত।

৬২৫৪. হুমায়দ ইবনি হিলাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এ সূত্রে [রাবী] আবু যার [রাদি.]-এর কথা “আমি বললাম, তুমি এখানে অবস্থান করো, আমি গিয়ে সে ব্যক্তিকে দেখে নেই।” তারপরে বর্ধিত করে উল্লেখ করিয়াছেন যে, তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, কিন্তু মক্কাবাসীদের সম্বন্ধে সাবধান থাকিবেন। তারা তাহাঁর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে এবং তাহাঁর সাথে খারাপ আচরণ করে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩৬, ইসলামিক সেন্টার-৬১৭৯]

৬২৫৫.আবদুল্লাহ ইবনি সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু যার [রাদি.] বলিলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! নবী [সাঃআঃ]-এর আবির্ভাবের আগে আমি দু বছর নামাজ আদায় করেছি। বর্ণনাকারী বলিলেন, আমি বললাম, আপনি কোন্ দিকে মুখ ফিরাতেন। তিনি {আবু যার [রাদি.]} বলিলেন, আল্লাহ যেদিকে আমার মুখ ফিরিয়ে দিতেন সেদিকে। তারপর তিনি সুলাইমান ইবনি মুগীরাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণিত হাদীসের অবিকল রিওয়ায়াত করেন। আর তিনি হাদীসে বলেছেন, তারপর তারা দুজনে এক গণকের নিকট গেলেন। তিনি {আবু যার [রাদি.]} বলেন, আমার ভাই উনায়স এ গণকের প্রশংসা করিতে লাগল, পরিশেষে প্রতিপক্ষের উপর বিজয়ী হলো। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর আমরা তার জন্তুগুলো নিলাম এবং আমাদের জন্তুগুলোর সঙ্গে একত্রিত করে রাখলাম। তিনি তাহাঁর হাদীসে আরও বর্ননা করিয়াছেন, এরপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আসলেন এবং বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করিলেন। অতঃপর মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে দুরাকাআত নামাজ আদায় করিলেন। তিনি {আবু যার [রাদি.]} বলেন, আমি তাহাঁর [সাঃআঃ]-এর কাছে আসলাম এবং আমিই প্রথম লোক, সে তাঁকে ইসলামী বিধান অনুযায়ী সালাম করে। তিনি বলেন, আমি বললাম, আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]! [হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক] তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম [তোমার প্রতিও শান্তি বর্ষিত হোক]। তুমি কে? তার বর্ণিত হাদীসে আরও রয়েছে যে, এরপর তিনি বলিলেন, তুমি এখানে কতদিন ধরে আছ? আমি বললাম, পনের [দিন] ধরে অবস্থান করছি। এ হাদীসের আরও অতিরিক্ত রয়েছে, অতঃপর আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, তাঁকে এক রাতের আতিথেয়তার অনুমতি আমাকে দিন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩৭, ইসলামিক সেন্টার-৬১৮০]

৬২৫৬.ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যখন আবু যার [রাদি.]-এর নিকট সংবাদ আসলো যে, মাক্কায় নবী [সাঃআঃ]-এর আবির্ভাব হয়েছে, তখন তিনি তাহাঁর ভাইকে বলিলেন, তুমি সওয়ারীতে চড়ে সে [মাক্কাহ্] উপত্যকায় যাও এবং সে লোকের ব্যাপারে আমাকে অবহিত কর, যিনি মনে করেন যে, আসমান থেকে তাহাঁর নিকট ওয়াহী আসে। তাহাঁর কথা ভাল করে শুনবে এবং এরপর তুমি আমার নিকট আসবে। তখন অপর লোক [তাহাঁর ভাই] রওনা হয়ে মাক্কায় আসলো এবং তাহাঁর কথা শুনল। এরপর সে আবু যার [রাদি.]-এর নিকট প্রত্যাবর্তন করিল এবং সে বলিল, আমি তাঁকে দেখেছি যে, তিনি উত্তম চরিত্রের আদেশ দেন এবং এমন বাণী শুনান, যা কবিতার সাদৃশ্য নয়। তখন তিনি {আবু যার [রাদি.]} বলিলেন, আমি যা চেয়েছি তা তুমি পূরণ করিতে পারনি। এরপর তিনি পাথেয় ব্যবস্থা করিলেন এবং একটি পানি ভর্তি মশক নিলেন। পরিশেষে মাক্কায় পৌঁছে তিনি মাসজিদে আসলেন। আর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে সন্ধান করিলেন। কিন্তু তিনি তাঁকে চিনতে পারলেন না। আর তাহাঁর ব্যাপারে [কারও নিকট] প্রশ্ন করাও পছন্দ করিলেন না। পরিশেষে রাত হয়ে গেল। তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। তখন আলী [রাদি.] তাঁকে দেখলেন এবং তিনি বুঝতে পারলেন যে, ইনি একজন আগন্তুক, তখন তিনি তাঁকে দেখে তাহাঁর অনুকরণ করিলেন; কিন্তু কেউ কারও নিকট কিছু প্রশ্ন করিলেন না। এমনকি [এভাবে] সকাল হয়ে গেল। এরপর তিনি {আবু যার [রাদি.] তাহাঁর আসবাবপত্র ও মশক মাসজিদে রাখলেন এবং সেদিনটি সেখানে অতিবাহিত করিলেন। তিনি নবী [সাঃআঃ]-কে সাক্ষাৎ পেলেন না, এমনকি সন্ধ্যা হয়ে গেল। এরপর তিনি তার ঘুমানোর স্থানে ফিরে এলেন। আলী [রাদি.] তাহাঁর নিকট এলেন এবং বলিলেন, এখনও সময় আসেনি, যাতে সে লোকটির গন্তব্য সম্বন্ধে জানা যায়। তারপর তিনি তাঁকে দাঁড় করালেন এবং তাঁকে সাথে নিয়ে চললেন। তবে কেউ কারোর নিকট কোন বিষয়ে প্রশ্ন করিলেন না। এমনকি তৃতীয় দিন এসে গেল। এদিনও তেমনটি করিলেন। তারপর আলী [রাদি.] তাহাঁর সাথে তাঁকে দাঁড় করিয়ে বলিলেন, আপনি কি আমাকে জানাবেন, কিসে আপনাকে এ শহরে এনেছে? তিনি {আবু যার [রাদি.]} বলিলেন, আপনি যদি আমাকে পথ দেখানোর ওয়াদাবদ্ধ হন তাহলে আমি আপনার নিকট বলব। তিনি [ওয়াদা] করিলেন। তখন তিনি {আবু যার [রাদি.]} তাঁকে সব জানালেন। তারপর আলী [রাদি.] বলিলেন তিনি [সাঃআঃ] হক এবং তিনি আল্লাহর রসূল। সকাল হলে আপনি আমাকে অনুকরণ করবেন। যদি আমি এমন কিছু দেখিতে পাই যাতে আপনার ভয় আছে, তখন আমি দাঁড়িয়ে যাব, যেন আমি প্রস্রাব করছি। পুনরায় যখন আমি চলতে শুরু করব তখন আমাকে অনুসরণ করবেন। পরিশেষে আমার প্রবেশ দ্বারে আপনি প্রবেশ করবেন। তিনি তা-ই করিলেন। তিনি তাহাঁর পশ্চাতে চললেন, শেষ অবধি তিনি {আলী [রাদি.]} রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে উপস্থিত হলেন আর আবু যার [রাদি.]ও তাহাঁর সাথে উপস্থিত হলেন। অতঃপর তিনি তাহাঁর [সাঃ-এর] কথা শুনলেন এবং সেখানেই ইসলাম গ্রহণ করিলেন। তারপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন, তুমি তোমার সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের নিকট [দ্বীনের] সংবাদ পৌঁছে দাও। আমার আদেশ তোমার নিকট পৌঁছা পর্যন্ত [এ কাজ করিতে থাক]। তারপর তিনি {আবু যার [রাদি.]} বলিলেন, সে মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি তা মাক্কাবাসীদের মধ্যে চীৎকার করে প্রচার করব। এরপর তিনি বেরিয়ে পড়লেন এবং মাসজিদে ঢুকলেন। এরপর উচ্চৈঃস্বরে প্রচার করিলেন: … “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আল্লাহর রসূল।” এতে ব্যক্তিরা ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তাঁকে আঘাত করে ধরাশায়ী করে ফেলল। আব্বাস [রাদি.] সেখানে এলেন এবং তাহাঁর দিকে ঝুঁকে পড়লেন। তারপর তিনি {আব্বাস [রাদি.]} বলিলেন, তোমাদের জন্য আফসোস! তোমাদের কি অজানা যে, তিনি গিফার সম্প্রদায়ের ব্যক্তি? তোমাদের সিরিয়া দেশে বাণিজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা তাদের এলাকা দিয়ে। এরপর তিনি তাঁকে তাদের নিকট হইতে ছাড়িয়ে আনলেন। পরের দিন তিনি আবার আগের দিনের মতোই করিলেন। ব্যক্তিরা তাহাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তাঁকে বেদম প্রহার করিল। আব্বাস [রাদি.] তাহাঁর দিকে ঝুঁকে পড়লেন এবং তাঁকে তিনি মুক্ত করিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৩৮, ইসলামিক সেন্টার-৬১৮১]

Comments

Leave a Reply