খাযির [আঃ]-এর ফযীলত

খাযির [আঃ]-এর ফযীলত

খাযির [আঃ]-এর ফযীলত >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৪৬. অধ্যায়ঃ খাযির [আঃ]-এর ফযীলত

৬০৫৭. সাঈদ ইবনি জুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাওফ বিকালী বলেন যে, বনী ইসরাঈলের নবী মূসা খাযীর [আঃ]-এর সঙ্গী মূসা নন। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, আল্লাহর শত্রু মিথ্যারোপ করেছে। আমি উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে শুনেছি, তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন, মূসা [আঃ] বনী ইসরাঈলের মধ্যে বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্‌ লোক সর্বাধিক জ্ঞানী? তিনি জবাব দিলেন, “আমি সর্বাধিক জ্ঞানী।” আল্লাহ তাআলা [এ উত্তরে] তাহাঁর প্রতি অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ করিলেন। কেননা, মূসা [আঃ] জ্ঞানকে আল্লাহর প্রতি ন্যস্ত করেননি। তারপর আল্লাহ তাহাঁর প্রতি ওয়াহী প্রেরণ করিলেন যে, দুসাগরের মধ্যস্থলে আমার বান্দাদের মাঝে এক বান্দা আছে, যে তোমার তুলনায় বেশি জ্ঞানী। মূসা [আঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, হে প্রতিপালক! আমি কীভাবে তাহাঁর সন্ধান পাব? তাঁকে বলা হলো, থলের ভেতর একটি মাছ নাও। মাছটি যে খানে হারিয়ে যাবে সেখানেই তাঁকে পাবে। তাহাঁর পর তিনি রওনা হলেন। তাহাঁর সাথে তাহাঁর খাদিম ইউশা ইবনি নূনও চললেন এবং মূসা [আঃ] একটি মাছ ব্যাগে নিয়ে নিলেন। তিনি ও তাহাঁর খাদিম চলতে চলতে একটি চটানে উপস্থিত হলেন। এখানে মূসা [আঃ] শুয়ে পড়লেন। তাহাঁর সঙ্গীও শুয়ে পড়ল। মাছটি নড়েচড়ে ব্যাগ হইতে বের হয়ে সমুদ্রে ঝাপিয়ে পড়ল। এদিকে আল্লাহ তাআলা পানির গতিরোধ করে দিলেন। এমনকি একটি গর্তের মতো হয়ে গেল এবং মাছটির জন্য একটি সুড়ঙ্গের ন্যায় হয়ে গেল। মূসা [আঃ] ও তাহাঁর খাদিমের জন্য এটি একটি আশ্চর্যের বিষয় হলো। তারপর তাঁরা আবার দিবা-রাত্রি চললেন। মূসা [আঃ]- এর সঙ্গী সংবাদটি দিতে ভুলে গেল। যখন সকাল হলো মূসা [আঃ] তাহাঁর খাদিমকে বলিলেন, আমাদের নাশ্‌তা বের করো। আমরা তো এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আদেশকৃত জায়গা অতিক্রম করে না যাওয়া পর্যন্ত তাঁরা ক্লান্ত হননি। খাদিম বলিল, আপনি কি জানেন, যখনই আমরা বড় পাথরটার নিকট বিশ্রাম নিয়েছিলাম তখন আমি মাছের কথাটি ভুলে গেলাম? আর শাইতানই আমাকে আপনাকে বলার কথা ভুলিয়ে দিয়েছে এবং বিস্ময়করভাবে মাছটি সমুদ্রে তার নিজের পথ বের করে চলে গেছে। মূসা [আঃ] বলিলেন, এ স্থানটিই তো আমরা সন্ধান করছি। তারপর দুজনেই নিজ নিজ পায়ের চিহ্ন অনুকরণ করে বড় পাথর পর্যন্ত পোঁছলেন। সেখানে চাদরে আচ্ছাদিত জনৈক লোককে দেখিতে পেলেন। মূসা [আঃ] তাঁকে সালাম দিলেন। খাযির [আঃ] বলিলেন, তোমাদের এ ভূমিতে সালাম কোত্থেকে আসলো? মূসা [আঃ] বলিলেন, আমি মূসা। তিনি প্রশ্ন করিলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। খাযির বলিলেন, আল্লাহ তাহাঁর ইল্‌ম হইতে এমন এক ইল্‌ম তোমাকে দিয়েছেন যা আমি জানি না এবং আল্লাহ তাহাঁর ইল্‌ম হইতে এমন এক ইল্‌ম আমাকে দিয়েছেন যা তুমি জান না। মূসা [আঃ] বলিলেন, আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই যেন আপনার মতো ইল্‌ম আমাকে দান করেন। খাযির [আঃ] বলিলেন, তূমি আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করিতে পারবে না। আর কী করেই তুমি ধৈর্য ধারণ করিবে, যা সম্বন্ধে তুমি অজ্ঞাত? মূসা [আঃ] বলিলেন ইনশাআল্লহ্‌, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল অবস্থায় পাবেন। আর আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না। খাযির [আঃ] বলিলেন, আচ্ছা তুমি যদি আমার অনুকরণ করো তবে আমি নিজে কিছু বর্ণনা না করা পর্যন্ত কোন ব্যাপারে আমাকে জিজ্ঞেস করিবে না। মূসা [আঃ] বলিলেন, আচ্ছা। খাযির এবং মূসা [আঃ] দুজনে সমুদ্রের তীর ধরে পথ চলতে লাগলেন। সামনে দিয়ে একটি নৌকা আসলো। তারা নৌকাওয়ালাকে তাঁদের তুলে নিতে বলিলেন। তারা খাযির [আঃ]-কে চিনে ফেলল, তাই দুজনকেই বিনা ভাড়াই উঠিয়ে নিল। কিছুক্ষণ পর খাযির [আঃ] নৌকার একটি তক্তার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন এবং তা উঠিয়ে ফেললেন। [তা দেখে] মূসা [আঃ] বলিলেন, তারা তো এমন ব্যক্তি যে, আমাদের বিনা ভাড়ায় উঠিয়ে নিয়েছে; আর আপনি তাদের নৌকাটি ছিদ্র করে দিলেন যাতে নৌকা ডুবে যায়? আপনি তো সাংঘাতিক কাজ করিয়াছেন। খাযির [আঃ] বলিলেন, আমি কি তোমায় বলিনি যে, তুমি আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে সক্ষম হইবে না। মূসা [আ] বলিলেন, আপনি আমার এ ভুল মাফ করে দিবেন। আর আমাকে কঠিন অবস্থায় ফেলবেন না। তারপর নৌকার বাইরে এলেন এবং উভয়ে সমুদ্র তীর ধরে চলতে লাগলেন। হঠাৎ একটি বালকের সম্মুখীন হলেন, যে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলা করছিল। খাযির [আঃ] তাহাঁর মাথাটা হাত দিয়ে ধরে ছিঁড়ে ফেলে হত্যা করিলেন। মূসা [আঃ] তাঁকে বলিলেন, আপনি কোন প্রাণের বিনিময় ব্যতীত একটা নিষ্পাপ প্রাণকে শেষ করে দিলেন? আপনি তো বড়ই মন্দ কাজ করিলেন! খাযির [আঃ] বলিলেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, আমার সঙ্গে তুমি ধৈর্য ধারণ করিতে পারবে না এবং এ ভুল প্রথমটার তুলনায় আরো মারাত্মক। মূসা [আঃ] বলিলেন, হ্যাঁ! তারপর যদি আর কোন ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি তাহলে আমাকে সাথে রাখবেন না। নিঃসন্দেহে আপনার প্রতি আমার ত্রুটি চরমে পৌঁছেছে। তারপর দুজনেই পথ চলতে লাগলেন এবং একটি গ্রামে পৌঁছে গ্রামবাসীর নিকট খাদ্য কামনা করিলেন। তারা তাঁদের আতিথেয়তা করিতে আপত্তি জানালেন। তারপর তাঁরা একটি দেয়াল পেলেন, যেটি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে অর্থাৎ- ঝুঁকে পড়েছে। খাযির [আঃ] আপন হাতে সেটি ঠিক করে সোজা করে দিলেন। মূসা [আঃ] বলিলেন, আমরা এ গোত্রের নিকট আসলে তারা আমাদের মেহমানদারী করেনি এবং খেতে দেয়নি। আপনি চাইলে এদের কাছ থেকে মজুরি নিতে পারতেন। খাযির [আঃ] বলিলেন, এবার আমার ও তোমার মাঝে ব্যবধান সূচিত হলো। এখন আমি তোমাকে এসব মর্মার্থ বলছি, যে সবের উপর তুমি ধৈর্যধারণ করিতে সক্ষম হওনি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ মূসা [আঃ]-এর উপর রহম করুন, আমার ইচ্ছা হয় যে, যদি তিনি ধৈর্যধারণ করিতেন তাহলে আমাদের নিকট তাঁদের আরো ঘটনাসমূহের বর্ণনা দেয়া হতো। বর্ণনাকারী বলিলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ প্রথমটা মূসা [আঃ] ভুলবশত করেছিলেন। এ-ও বলেছেন, একটা চড়ুই পাখি এসে নৌকার কিনারে বসে সমুদ্রে চঞ্চু মারল। সে সময় খাযির [আঃ] মূসাকে বলিলেন, আমার ও তোমার জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের চেয়ে ততই কম, যতটি সমুদ্রের পানি হইতে এ চড়ুইটি কমিয়েছে।

সাঈদ ইবনি জুবায়র [রাদি.] বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] পড়তেনঃ [আরবী] [এদের সামনে একজন বাদশাহ ছিল, যে সকল ভাল নৌকা কেঁড়ে নিত] তিনি আরো পড়তেন, [আরবী] [আর সে বালকটি কাফির ছিল]।

[ই.ফে. ৫৯৪৮, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৮৭]

৬০৫৮. সাঈদ জুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে বলা হলো, নাওফ দাবী করে যে, মূসা [আঃ] যিনি জ্ঞান অনুসন্ধানে বেরিয়ে ছিলেন, তিনি বনী ইসরাঈলের মূসা নন। ইবনি আব্বাস [রযিঃ] বলেন, হে সাঈদ! তুমি কি তাকে এ কথা বলিতে শুনেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ! তিনি বলিলেন, নাওফ মিথ্যারোপ করেছে।

[ই.ফে. ৫৯৪৯, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৮৮]

৬০৫৯. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি, মূসা [আঃ] একদা তাহাঁর গোষ্ঠীর সম্মুখে আল্লাহ তাআলার নিআমাত এবং বালা-মুসীবাত মনে করিয়ে উপদেশ দিচ্ছিলেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলে ফেললেন, দুনিয়াতে আমার তুলনায় উত্তম এবং অধিক জ্ঞানী কোন লোক আছে বলে আমার জানা নেই। আল্লাহ মূসা [আঃ]-এর প্রতি ওয়াহী পাঠালেনঃ আমি জানি মূসার চাইতে উত্তম কে বা কার নিকট কল্যাণ রয়েছে। পৃথিবীতে অবশ্যই এক লোক রয়েছে যে, তোমার তুলনায় অধিক জ্ঞানী। মূসা [আঃ] বলিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাহাঁর পথ জানিয়ে দিন। তাঁকে বলা হলো, লবণাক্ত একটি মাছ সাথে নিয়ে যাও। এ মাছ যেখানে হারিয়ে যাবে সেখানেই সে ব্যক্তি আছে। মূসা [আঃ] এবং তাহাঁর খাদিম রওনা হলেন, পরিশেষে তাঁরা একটি বড় পাথরের নিকট পৌঁছালেন। সে সময় মূসা [আঃ] তাহাঁর সঙ্গীকে রেখে গোপনে চলে গেলেন। তারপর মাছটি ছটফট করে পানিতে নেমে গেল এবং পানিও ছিদ্রের মতো রয়ে গেল, মাছের রাস্তায় সংমিশ্রন হলো না। মূসা [আঃ]-এর খাদিম বলিলেন, হ্যাঁ, আমি আল্লাহর নবীর সঙ্গে মিলিত হয়ে তাঁকে এ বিবরণ দিব। তারপরে তিনি ভুলে গেলেন। তাঁরা যখন আরো সম্মুখে চলে গেলেন। তখন মূসা [আঃ] বলিলেন, আমার নাশ্তা দাও, এ সফরে তো আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। নবী [সাঃআঃ] বলেন, যতক্ষণ তাঁরা এ জায়গাটি ত্যাগ করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁদের ক্লান্তি আসেনি। তাহাঁর সাথীর যখন স্মরণে আসলো তখন বলিল, আপনি কি জানেন যখন আমরা পাথরের নিকট আশ্রয় নিয়েছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গেছি। আর শাইতানই আমাকে আপনার নিকট বলার কথা ভুলিয়ে দিয়েছে এবং অবাক করার মতো মাছটি সমুদ্রে তার রাস্তা করে নিয়েছে।

মূসা [আঃ] বলিলেন, এ-ই তো ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। সুতরাং তাঁরা পথ অনুসরণ করে প্রত্যাবর্তন করিলেন। তখন তাহাঁর খাদিম মাছের জায়গাটি তাঁকে দেখালো। মূসা [আঃ] বলিলেন, এ জায়গার বর্ণনাই আমাকে দেয়া হয়েছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তারপর মূসা [আঃ] সন্ধান করছিলেন, এমতাবস্থায় তিনি কাপড়ে ঢাকা খাযির [আঃ]-কে গলদেশের উপড় চীৎ হয়ে ঘুমানো দেখিতে পেলেন। কিংবা অন্য বর্ণনায়, গলদেশের উপর সোজাসজি। মূসা [আঃ] বলিলেন, আস্সালামু আলাইকুম। খাযির [আঃ] মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে বলিলেন, ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম, তুমি কে? মূসা [আঃ] বলিলেন, আমি মূসা। তিনি বলিলেন, কোন্ মূসা? মূসা [আঃ] উত্তর দিলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা। খাযির [আঃ] বলিলেন, তোমার এ মহান আগমন কিসের জন্য? মূসা [আঃ] বলিলেন, আমি এসেছি যেন আপনাকে যে জ্ঞান দান করা হয়েছে তা হইতে আপনি আমায় কিছু শিক্ষা দেন। খাযির [আঃ] বলিলেন, আমার সাথে তুমি ধৈর্য ধরতে পারবে না। আর এমন ব্যাপারে কেমন করে তুমি ধৈর্য ধরবে, যার ইল্‌ম তোমাকে দেয়া হয়নি। এরূপ বিষয় হইতে পারে যা করিতে আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তুমি যখন তা দেখবে তখন তুমি ধৈর্য ধারণ করিবে না। মূসা [আঃ] বলিলেন, ইনশাআল্লাহ্ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যেই পাবেন। আর আমি আপনার কোন আদেশ অমান্য করব না। খাযির [আঃ] বলিলেন, তুমি আমার অনুগামী হও তবে আমাকে কোন ব্যাপারে জিজ্ঞেস করো না, যতক্ষণ না আমি নিজেই এ ব্যাপারে বর্ণনা করি। তারপর উভয়ই চললেন, পরিশেষে একটি নৌকায় চড়লেন। তখন খাযির [আঃ] নৌকার একাংশ ভেঙ্গে ফেললেন। মূসা [আঃ] তাঁকে বলিলেন, আপনি কি নৌকাটি ভেঙ্গে ফেললেন, নৌকারোহীদের ডুবিয়ে ফেলার জন্যে? আপনি তো বড় মারাত্মক কাজ করিলেন। খাযির [আঃ] বলিলেন আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সাথে ধৈর্য ধরতে পারবে না? মূসা [আঃ] বলিলেন, আমি ভুলে গিয়েছি, আপনি আমাকে দোষী সাব্যস্ত করবেন না। আমার ব্যাপারটিকে আপনি কঠিন করবেন না। পুনরায় উভয়ে চলতে লাগলেন। এক স্থানে দেখিতে পেলেন বালকরা খেলায় লিপ্ত। খাযির [আঃ] অবলীলাক্রমে একটি শিশুর নিকট গিয়ে তাকে হত্যা করিলেন। এতে মূসা [আঃ] খুব ঘাবড়ে গিয়ে বলিলেন, আপনি প্রাণ বিনিময় ছাড়াই একটি নিষ্পাপ প্রাণকে হত্যা করিলেন? আপনি বড়ই নৃশংস কাজ করিয়াছেন। এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আল্লাহ রহ্মাত বর্ষণ করুন আমাদের ও মূসা [আঃ]-এর উপর তিনি যদি জলদি না করিতেন তাহলে অবাক হওয়ার আরো মতো অনেক ঘটনা দেখিতে পেতেন। তবে তিনি খাযির [আঃ]-এর সম্মুখে লজ্জিত হয়ে বলিলেন, তারপর যদি আমি আপনাকে আর কোন কিছু জিজ্ঞেস করি তবে আপনি আমায় সাথে রাখবেন না। সত্যিই আমার ব্যাপার খুবই আপত্তিকর হয়েছে। যদি মূসা [আঃ] ধৈর্য ধরতেন তাহলে আরো বিস্ময়কর ব্যাপার দেখিতে পেতেন। যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন নবীর বর্ণনা করিতেন, প্রথমে নিজেকে দিয়ে আরম্ভ করিতেন আর বলিতেন, আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন এবং আমার অমুক ভাইয়ের উপরও। এভাবে নিজেদের উপর আল্লাহর রহ্মাত কামনা করিতেন। অতঃপর দুজনে চললেন এবং মন্দ লোকদের একটি লোকালয়ে গিয়ে উঠলেন। তারা লোকদের অসংখ্য জায়গায় ঘুরে তাদের নিকট খাবার চাইলেন। তারা তাদের মেহমানদারী করিতে অস্বীকার করিল। তারপর তাঁরা ধ্বসে পড়ার উপক্রম একটা দেয়াল দেখিতে পেলেন। খাযির [আঃ] সেটি মেরামত করে দিলেন। মূসা [আঃ] বলিলেন, আপনি চাইলে এর বিনিময়ে মজুরি নিতে পারতেন।

খাযির [আঃ] বলিলেন, এখানেই আমার আর তোমার মাঝে সম্পর্কছেদ। খাযির [আঃ] মূসা [আঃ]-এর বস্ত্র ধরে বলিলেন, তুমি যেসব বিষয়ের উপর ধৈর্যহারা হয়ে পড়েছিলে সে সবের ঘটনা বলে দিচ্ছি। নৌকাটি ছিল কিছু গরীব লোকের যারা সমুদ্রে কাজ করত – আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়লেন। তারপর যখন এটাকে দখল করিতে লোক আসলো, তখন ছিদ্রযুক্ত [অচলাবস্থা] দেখে ছেড়ে দিল। অতঃপর নৌকাওয়ালারা একটা কাঠ দ্বারা নৌকাটি মেরামত করে নিলো। আর বালকটি সূচনালগ্নেই ছিল কাফির। তার মা-বাবা তাকে বড়ই আদর করত। সে বড় হলে ওদের দুজনকেই অবাধ্যতা ও কুফরির দিকে নিয়ে যেত। অতএব আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম, আল্লাহ যেন তাদেরকে এর বিনিময়ে আরো উত্তম পবিত্র স্বভাবের ও অধিক স্নেহভাজন ছেলে দান করেন। আর দেয়ালটি ছিল শহরের দুটো ইয়াতীম বালকের- আয়াতের শেষ পর্যন্ত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৪৯, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৮৯]

৬০৬০. আবু ইসহাক্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৫০, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৯০]

৬০৬১. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ]-[আরবী] এর স্থলে [আরবী] এরূপও পড়েছেন [দুটোর অর্থ একই]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৫১, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৯১]

৬০৬২. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি আব্বাস এবং কায়স ইবনি হিস্ন, মূসা [আঃ]-এর সঙ্গী সম্পর্কে তর্ক করিলেন। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, সঙ্গীটি খাযির [আঃ] ছিলেন। অতঃপর সেখনে উবাই ইবনি কাব [রাদি.] আসলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] তাঁকে বলিলেন, হে আবু তুফায়ল! এদিকে আসুন, আমি এবং সে তর্ক করছি- মূসা [আঃ]-এর সঙ্গীর সম্বন্ধে যার নিকট তিনি গিয়েছিলেন। আপনি কি এ সম্বন্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে কিছু জেনেছেন? উবাই ইবনি কাব [রাদি.] বলিলেন, আমি রসূল [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি, মূসা [আঃ] এক সমাবেশে কিছু বলেছিলেন, এমতাবস্থায় একটা লোক এসে জিজ্ঞেস করিল, আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী কোন লোক সম্বন্ধে কি আপনার জানা আছে? মূসা [আঃ] বলিলেন, না। তখন আল্লাহ ওয়াহী প্রেরণ করিলেন, আমার বান্দা খাযির তোমার তুলনায় অধিক জানেন। মূসা [আঃ] খাযির [আঃ]-এর সাথে দেখার করার উপায় জানতে চাইলেন। আল্লাহ তাআলা মাছকে নমুনা হিসাবে চিহ্নিত করিলেন এবং আদেশ করা হলো, যখন তুমি মাছটি হারিয়ে ফেলবে তখন ফিরবে আর তাহাঁর দর্শনও পাবে। মূসা [আঃ] আল্লাহর ইচ্ছা মতো চললেন। তারপর তাহাঁর সঙ্গীকে বলিলেন, আমাদের নাস্তা বের করো। খাদিম বলিল, আপনার কি জানা আছে যে, যখন আমরা সাখরাহ্ [পাথরের নিকট] পৌঁছলাম তখন মাছের কথা ভুলে গিয়েছি; আর শাইতানই আমাদের ভুলে দেয়ার কারণ। মূসা [আঃ] বলিলেন, এটাই তো আমরা প্রত্যাশা করতাম। সুতরাং দুজনেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে ফিরলেন এবং খাযির [আঃ]-কে পেলেন। পরবর্তী ঘটনা আল্লাহ তাআলা তাহাঁর গ্রন্থে বর্ণনা করিয়াছেন।

কিন্তু ইউনুস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, তারা সমুদ্রগামী মাছটির নিদর্শন অনুসরণ করে ফিরলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৫২, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৯২]

Comments

Leave a Reply