মুসা [আঃ]-এর ফযীলত

মুসা [আঃ]-এর ফযীলত

মুসা [আঃ]-এর ফযীলত >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৪২. অধ্যায়ঃ মুসা [আঃ]-এর ফযীলত

৬০৪০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলরা বস্ত্রবিহীন অবস্থায় গোসল করত। তারা পরস্পরের গুপ্তাঙ্গ দেখত। আর মূসা [আঃ] একাকী গোসল করিতেন। লোকেরা বলত, মূসা আমাদের সঙ্গে গোসল করে না। কেননা {মূসা [আঃ]-এর} অণ্ডকোষে রোগ আছে। বর্ণনাকারী বলেন, একদা মূসা [আঃ] পাথরের উপর কাপড় রেখে গোসল দিচ্ছিলেন। সে সময় পাথরটি তাহাঁর বস্ত্র নিয়ে ছুটতে লাগল। তখন মূসা [আঃ] “ও পাথর! আমার কাপড় দে”, “হে পাথর! আমার কাপড় দে” বলে পাথরটির পিছু পিছু দৌঁড়াতে লাগলেন, এতে বনী ইসরাঈল [প্রকাশ্যে] তাহাঁর গুপ্তাঙ্গ দেখে ফেলল এবং বলিল, আল্লাহর শপথ! মুসার তো কোন রোগ নেই।

তারপর পাথরটি থেমে গেল, যখন ভালভাবে তা দৃষ্টিপাত হলো। মূসা [আঃ] কাপড় নিলেন এবং পাথরটিকে মারতে শুরু করিলেন।

আবু হুরায়রা্‌ [রাদি.] বলেন, আল্লাহর কসম! এ পাথরটির গায়ে মূসা [আঃ]-এর ছয় থেকে সাতটি মারের চিহ্ন রয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৩৩, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৭১]

৬০৪১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মূসা [আঃ] অতি লজ্জাশীল লোক ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাকে কেউ বস্ত্রহীন অবস্থায় দেখেনি। বনী ইসরাঈলরা বলিতেছিল, মুসার অণ্ডকোষ রোগগ্রস্ত। একদা তিনি পানিতে গোসল করিতে গিয়ে কাপড়গুলো একটা পাথরের উপর রাখলেন। পাথরটি [কাপড়সহ] দৌঁড়ে পালাতে লাগলো। তিনি তার লাঠি হাতে পাথরটিকে মারতে মারতে এর পশ্চাতে ছুটলেন। বলিতে লাগলেন, [হে পাথর!] আমার কাপড়, হে পাথর! আমার কাপড়। পাথরটি বনী ইসরাঈলের এক জনসমাবেশে গিয়ে থামলো। এ প্রসঙ্গে এ আয়াত নাযিল হলোঃ

 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَكُونُوا كَالَّذِينَ آذَوْا مُوسَى فَبَرَّأَهُ اللَّهُ مِمَّا قَالُوا وَكَانَ عِنْدَ اللَّهِ وَجِيهًا

“হে মুমিনগণ! তোমরা তাদের ন্যায় হয়ো না যারা মূসা [আঃ]-কে অপবাদ দিয়েছে। তাদের দেয়া অপবাদ হইতে আল্লাহ তাঁকে পবিত্র করে দিয়েছেন এবং তিনি আল্লাহর নিকট ছিলেন সম্মানিত”-[সূরা আল আহ্‌যাব ২৩ : ৬৯]

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৩৪, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৭২]

৬০৪২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মালাকুল মাওতকে মূসা [আঃ]-এর নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। যখন ফেরেশ্‌তা তাহাঁর নিকট আসলেন তখন মূসা [আঃ] তাঁকে একটা চড় মারলেন। তাতে তাহাঁর একটা চোখ নষ্ট হয়ে গেল। তারপর তিনি আল্লাহর নিকট ফিরে গেলেন এবং বলিলেন, আপনি আমাকে এমন এক বান্দার নিকট পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহ তাআলা ফেরেশ্‌তার দৃষ্টি পুনর্বহাল করে দিয়ে বলিলেন, পুনরায় তাহাঁর কাছে যাও এবং তাঁকে বলো, সে যেন তাহাঁর হাত একটি বলদের পৃষ্ঠের উপর রাখে। এতে যতগুলো লোম তাহাঁর হাতের নীচে পড়বে প্রতিটি লোমের পরিবর্তে সে এক বছর হায়াত পাবে। মূসা[আঃ] বলিলেন, তারপর কী হইবে? আল্লাহ বলেন, তারপর মরণ। মূসা[আঃ] বলিলেন, তাহলে এখনই। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! আমাকে পবিত্র ভূমির এক ঢিলের কাছাকাছি করুন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি যদি সেখানে থাকতাম তাহলে পথের পাশে লাল বালির স্তূপের নিকট মূসা [আঃ]-এর কবর দেখিয়ে দিতাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৩৫, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৭৩]

৬০৪৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ একদা মালাকুল মাওত মূসা [আঃ]-এর নিকট এসে বলিল, মূসা! তোমার প্রতিপালকের নিকট চলো। বর্ণনাকারী বলেন, তখন তাহাঁর চোখের উপর মূসা [আঃ] তাকে একটা চপেটাঘাত করিলেন, এতে তাহাঁর চোখ নষ্ট হয়ে গেল। তারপর ফেরেশ্‌তা আল্লাহর নিকট ফিরে গিয়ে বলিলেন, আপনি আমাকে আপনার এমন এক বান্দার নিকট পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না এবং সে আমার চোখ নষ্ট করে দিয়েছে। আল্লাহ তাহাঁর চোখ ঠিক করে দিলেন এবং বলিলেন, আমার বান্দার নিকট আবার যাও এবং বলো, তুমি কি আরও দীর্ঘায়ু চাও? যদি তা চাও তবে তোমার হাত একটি বলদের পৃষ্ঠের উপর রাখো। এতে তোমার হাতের নিচে যতগুলো পশম পড়বে, তত বছর তুমি জীবিত থাকিবে। মূসা বলিলেন, তারপর কি? আল্লাহ বলিলেন, তারপর মৃত্যুবরণ করিবে। মূসা [আঃ] বলিলেন, তবে এখনই ভাল। হে আল্লাহ! আমাকে পবিত্র ভূমি একটি পাথরের ঢিলের দূরত্বে নিয়ে মৃত্যু দান করুন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহর কসম! যদি আমি সেখানে থাকতাম তবে পথের কিনারে লাল বালুকা স্তূপের পাশে তাহাঁর কবর তোমাদের দেখিয়ে দিতাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৩৬, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৭৪]

৬০৪৪. আবু ইসহাক, মামার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৩৬, ইসলামিক সেন্টার- নেই]

৬০৪৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন যে, এক ইয়াহূদী কিছু মাল বিক্রি করছিল, দাম দেয়া হলে সে তাতে মনতুষ্ট হলো না, কিংবা এটাকে খারাপ মনে করিল, সে বলিল, না হইবে না, তাহাঁর কসম যিনি মুসা [আঃ]-কে লোকদের জন্য মনোনীত করিয়াছেন। এ কথা এক আনসারী শুনতে পেয়ে ইয়াহূদীর গালে একটি চড় মারলেন এবং বলিলেন, তুই বলিস, মূসা [আঃ]-কে লোকদের মধ্য হইতে মনোনীত করিয়াছেন অথচ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিদ্যমান রয়েছেন। ঐ ইয়াহুদী রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিল, হে আবুল কাসিম! আমি যিম্মী এবং মুসলিম দেশের নিরাপত্তাপ্রাপ্ত মানুষ, আমাকে অমুক লোক চড় মেরেছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রশ্ন করিলেন, কেন তুমি তার গালে চড় দিলে? আনসারী বলিলেন, সে বলেছে যিনি মানুষের মধ্যে মূসা [আঃ]-কে মনোনীত করিয়াছেন অথচ আপনি আমাদের মাঝে বিদ্যমান। আবু হুরায়রা্‌ [রাদি.] বলেন, রসুলূল্লাহ [সাঃআঃ] খুব ক্রোধান্বিত হলেন। রাগের চিহ্ন তাহাঁর মুখমণ্ডলে ফুটে উঠল। আর বললেনঃ নবী দের মাঝে একজনকে অপর জনের উপর মর্যাদা দিও না। কারণ যখন কিয়ামাতের দিন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হইবে তখন আসমান ও জমিনের সবাই বেঁহুশ হয়ে পড়বে, কেবল আল্লাহ যাদের চাইবেন তাঁরা ব্যতীত। তারপরে দ্বিতীয়বার যখন ফুঁৎকার দেয়া হইবে তখন সর্বপ্রথম আমিই উত্থিত হব এবং দেখিতে পাব যে, মূসা [আঃ] আর্‌শ ধরে রয়েছেন। আমার জানা নেই যে, তূর পাহাড়ে তাহাঁর বেঁহুশ হওয়াটাই তাহাঁর এখনকার বেহুঁশ না হওয়ার কারণ, না আমার আগেই তাঁকে চেতনা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে? আর আমি এ কথাও বলি না যে, কোন পয়গম্বর ইউনুস ইবনি মাত্তা [আঃ]-এর তুলনায় অনেক মর্যাদাবান।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৩৭, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৭৫]

৬০৪৬. আবদুল আযীয ইবনি আবু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একই সূত্রে হুবহু হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৩৭, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৭৬]

৬০৪৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ইয়াহূদী ও এক মুসলিম পরস্পর গালাগালি করিল। মুসলিম বলিল, তাহাঁর কসম! যিনি সারা দুনিয়ার মাঝে মুহাম্মদ [সাঃআঃ] -কে নির্বাচিত করিয়াছেন। ইয়াহূদী বলিল, কসম তাহাঁর! যিনি মূসা [আঃ]-কে নির্বাচিত করিয়াছেন সারা দুনিয়ার মাঝে! বর্ণনাকারী বলেন, এমন সময় মুসলিম হাত তুলল এবং ইয়াহূদীর গালে চড় মারল। অতঃপর ইয়াহূদী রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট গেল এবং তার ও মুসলিমের ঘটনা বলিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা আমাকে মূসা [আঃ]-এর উপর মর্যাদা দিও না। কেননা মানুষেরা যখন বেঁহুশ হইবে। সর্বপ্রথম আমি হুঁশ ফিরে পাব, তখন দেখিতে পাব যে, মূসা [আঃ] আর্‌শের কিনারা ধরে রয়েছেন। জানি না, তিনি কি বেহুঁশ হয়ে আমার আগেই হুঁশ ফিরে পেয়েছেন, নাকি যারা বেঁহুশ হননি তিনি তাঁদের মাঝে রয়েছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৩৮, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৭৭]

৬০৪৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক মুসলিম ও ইয়াহূদী পরস্পর গালাগালি করিল-তারপর ইব্রাহীম ইবনি সাঈদ ইবনি শিহাব হইতে বর্ণিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৩৯, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৭৮]

৬০৪৯. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ইয়াহূদী রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলিল তার গালে চড় দেয়া হয়েছে- যুহরীর হাদীসের মর্মানুযায়ী হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন। কিন্তু তিনি শুধু এ কথাই বলেছেন যে, “জানি না তিনি অচেতন হয়ে আমার পূর্বেই হুঁশ ফিরে পেয়েছেন, না-কি তূরের অচেতনই তাহাঁর জন্য যথেষ্ট হয়েছে।”

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৭৯]

৬০৫০. আবু সাঈদ খুদ্‌রী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নবীদের মাঝে একের উপরে অন্যকে প্রাধান্য দিও না।


[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৪১, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৮০]

৬০৫১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে রাত্রে আমার মিরাজ হয়েছিল সে রাত্রে আমি মূসা [আঃ]-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। লাল বালুকা স্তুপের নিকট তাহাঁর কবরে তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৪২, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৮১]

৬০৫২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি মূসা [আঃ]-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন তিনি তাহাঁর কবরে নামাজ আদায় করছিলেন। ঈসার হাদীসে বর্ধিত আছে যে, “আমাকে যে রাত্রে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে রাত্রে আমি যাচ্ছিলাম।”

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৪৩, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৮২]

Comments

Leave a Reply