মুসলিম দের মর্যাদা, সুপারিশ, মীমাংসা ও দুর্বলের মাহাত্ম্য

মুসলিম দের মর্যাদা, সুপারিশ, মীমাংসা ও দুর্বলের মাহাত্ম্য

মুসলিম দে ওর মর্যাদা, সুপারিশ, মীমাংসা ও দুর্বলের মাহাত্ম্য >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর ৫ টি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

মুসলিম দে ওর মর্যাদা, সুপারিশ, মীমাংসা ও দুর্বলের মাহাত্ম্য

পরিচ্ছেদ -২৭ঃ মুসলিমদের মান মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা-প্রদর্শন
পরিচ্ছেদ -২৮ঃ মুসলিম দের প্রয়োজন পূরণ করার গুরুত্ব
পরিচ্ছেদ -২৯ঃ সুপারিশ করা
পরিচ্ছেদ -৩০ঃ বিবাদমান মানুষদের মধ্যে মীমাংসা
পরিচ্ছেদ -৩১ঃ দুর্বল, গরীব ও মুসলিমদের মাহাত্ম্য
পরিচ্ছদঃ ৩২ -দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য

পরিচ্ছদঃ ২৭ -মুসলিমদের মান-মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা-প্রদর্শন ও তাদের অধিকার-রক্ষা এবং তাদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্যের গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَمَن يُعَظِّمۡ حُرُمَٰتِ ٱللَّهِ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥ عِندَ رَبِّهِۦۗ ﴾ [الحج: ٣٠]

অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে তার প্রতিপালকের নিকট তার জন্য এটাই উত্তম।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩০ আয়াত)

আরো বলেন,

﴿وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ﴾ [الحج: ٣٢]

অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের সংযমশীলতারই বহিঃপ্রকাশ।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩২ আয়াত)

﴿ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥ ﴾ [الشعراء: ٢١٥]

তিনি বলেন,

অর্থাৎ “বিশ্বাসীদের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনমিত রাখ।” (হিজ্‌র ৮৮আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا وَمَنۡ أَحۡيَاهَا فَكَأَنَّمَآ أَحۡيَا ٱلنَّاسَ جَمِيعٗاۚ ﴾ [المائ‍دة: ٣٢]

অর্থাৎ “যে ব্যক্তি নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করার দণ্ডদান উদ্দেশ্য ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করল। আর কেউ কারো প্রাণরক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।” (সূরা মায়েদাহ ৩২ আয়াত)

২২৭. আবু মূসা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্য অট্টালিকার ন্যায়, যার এক অংশ অন্য অংশকে মজবূত করে রাখে।’’ তারপর তিনি (বুঝাবার জন্য) তাঁর এক হাতের আঙ্গুলগুলি অপর হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে ঢুকালেন।[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৮১, ১৪৩২, ২৪৪৫, ৬০২৭, ৬০২৮, ৭৪৭৬, মুসলিম ২৫৮৫, ২৬৮৭, তিরমিজী ১৯২৮, নাসাঈ ২৫৫৬, ২৫৬০, আবু দাঊদ ৫১৩১, আহমাদ ১৯০৮৭, ১৯১২৭, ১৯১৬৩, ১৯২০৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২২৮. আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি তীর সঙ্গে নিয়ে আমাদের কোনো মসজিদ অথবা কোনো বাজারের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করিবে, তার উচিত হবে, হাতের তালু দ্বারা তার ফলাকে ধরে নেওয়া। যাতে কোনো মুসলিম তার দ্বারা কোনো প্রকার কষ্ট না পায়।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৫২, ৭০৭৫, মুসলিম ২৬৫১, আবু দাঊদ ২৫২৭, ইবনু মাজাহ ৩৭৭৮. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২২৯. নু’মান ইবনু বাশীর রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মু’মিনদের একে অপরের প্রতি সম্প্রীতি, দয়া ও মায়া-মমতার উদাহরণ (একটি) দেহের মত। যখন দেহের কোন অঙ্গ পীড়িত হয়, তখন তার জন্য সারা দেহ অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০১১, মুসলিম ২৫৮৬, আহমাদ ১৭৮৯১, ১৭৯০৭, ১৯৯২৬, ১৭৯৪৯, ১৭৯৬৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৩০. আবু হুরাইরাহ্ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ হাসান ইবনু আলী রাঃআঃ-কে চুমু দিলেন। ঐ সময় তাঁর নিকট আক্বরা‘ ইবনু হাবেস বসা ছিলেন। আক্বরা‘ বললেন, ‘আমার দশটি ছেলে আছে, আমি তাদের কাউকেই কোনোদিন চুমু দেইনি।’ নবী সাঃআঃ তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হয় না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৯৯৭, মুসলিম ২৩১৮, তিরমিজী ১৯১১, আবু দাঊদ ৫২১৮, আহমাদ ৭০৮১, ৭২৪৭, ৭৫৯২, ১০২৯৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৩১. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কিছু বেদুঈন লোক রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট এসে বলল, ‘আপনারা কি আপনাদের শিশু-সন্তানদেরকে চুমু দিয়ে থাকেন?’ নবী সাঃআঃ বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ তারা বলল, ‘কিন্তু আল্লাহর কসম! আমরা চুমু দেই না।’ রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তর থেকে দয়া উঠিয়ে নেন, তবে আমি কি তার মালিক করে দিতে পারি?’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৯৯৮, মুসলিম ২৩১৭, ইবনু মাজাহ ৩৬৬৫, আহমাদ ২৩৭৭০, ২৩৮৮৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৩২. জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করিবে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করিবেন না।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০১৩, ৭৩৭৬, মুসলিম ২৩১৯, তিরমিজী ১৯২২, আহমাদ ১৮৭০৭, ১৮৭২১, ১৮৭৫৬, ১৮৭৭৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৩৩. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে নামায পড়ে, তখন সে যেন সংক্ষেপ করে। কারণ তাদের মাঝে দুর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধ লোক থাকে। আর যখন কেউ একাকী নামায পড়ে, তখন সে ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৭০৩, মুসলিম ৪৬৭, তিরমিজী ২৩৬, নাসাঈ ৮২৩, আবু দাঊদ ৭৯৪, ৭৯৫, আহমাদ ৭৬১১, ২৭৪৪০, ৮৮৬০, ৯৭৪৯, ৯৯৩৩, ১০১৪৪, ১০৫৫৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৩৪. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ কখনো কখনো (নফল) আমল করতে পছন্দ করা সত্ত্বেও এই ভয়ে ছেড়ে দিতেন যে, লোকেরা তা আমল করিবে এবং তার ফলে তাদের উপর তা ফরয করে দেওয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১১২৮, ১১৭৭, মুসলিম ৭১৮, আবু দাঊদ ১২৯২, ১২৯৩, আহমাদ ২৩৫৩৬, ২৪০৩০, ২৪০৩৮, ২৪৮২২, ২৪৮৩৫, ২৪৮৫৭, ২৪৯১৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৩৫. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ সাহাবীদেরকে দয়াপূর্বক ‘সওমে ওয়িসাল’ (বিনা ইফতারে একটানা রোযা) রাখতে নিষেধ করিয়াছেন। তাঁরা বললেন, ‘‘আপনি তো ‘সওমে ওয়িসাল’ রাখছেন?’’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদের মত নই। আমাকে তো আমার প্রতিপালক রাতে পানাহার করান।’’ বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৯৬৪, মুসলিম ১১০৫, আহমাদ ২৪০৬৫, ২৪১০৩, ২৪৪২৪, ২৫৫২৩, ২৫৬৭৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৩৬. আবু কাতাদাহ্ হারেস ইবনু রিব‘য়ী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আমি নামায পড়তে দাঁড়াই এবং আমার ইচ্ছা হয় তা দীর্ঘ করি। অতঃপর আমি শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনি। ফলে আমি তার মায়ের কষ্ট হওয়াটা অপছন্দ মনে করে নামায সংক্ষিপ্ত করি।’’ (বুখারী) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৭০৭, ৮৬৮, নাসাঈ ৮২৫, আবু দাঊদ ৭৮৯, ইবনু মাজাহ ৯৯১, আহমাদ ২৩০৯৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৩৭. জুন্দুব ইবনু আব্দিল্লাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের নামায (জামা‘আতে) পড়ল, সে আল্লাহর যিম্মাদারীতে চলে এল। সুতরাং আল্লাহ যেন তোমাদের কাছে তার যিম্মার কিছু দাবী না করেন। কারণ, যার কাছেই তিনি তাঁর যিম্মার কিছু দাবী করিবেন, তাকে পাকড়াও করিবেন। অতঃপর তিনি তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করিবেন।’’ (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ৬৫৭১, তিরমিজী ২২২, নাসাঈ ৮২৫, আহমাদ ১৮৩২৬, ১৮৩৩৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৩৮. ইবনু উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার উপর অত্যাচার করিবে না এবং তাকে অত্যাচারীর হাতে ছেড়ে দেবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করিবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূর্ণ করিবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কোনো এক বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বহু বিপদের একটি বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করিবে, আল্লাহ কিয়ামতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করিবেন।’’ বুখারী, মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৪৪২, মুসলিম ২৫৮০, তিরমিজী ১৪২৬, নাসাঈ ৪৮৯৩, আহমাদ ৫৩৩৪, ৫৬১৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৩৯. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার বিশ্বাসঘাতকতা করিবে না, তাকে মিথ্যা বলবে না (বা মিথ্যাবাদী ভাববে না), তার সাহায্য না করে তাকে অসহায় ছেড়ে দেবে না। এক মুসলিমের মর্যাদা, মাল ও খুন অপর মুসলিমের জন্য হারাম। তাকওয়া তথা আল্লাহ-সচেতনতা এখানে (অন্তরে) রয়েছে। কোনো মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ মনে করাটাই একটি মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’’ তিরমিজী, হাসান সূত্রে) [১]

[১] মুসলিম ২৫৬৪, তিরমিজী ১৯২৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৪০. রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা করো না, কেনা-বেচাতে জিনিসের মূল্য বাড়িয়ে একে অপরকে ধোঁকা দিয়ো না, একে অপরের প্রতি শত্রুতা রেখো না, এক অপর থেকে (ঘৃণাভরে) মুখ ফিরায়ো না এবং একে অপরের (জিনিস) কেনা-বেচার প্রস্তাবের উপর কেনা-বেচা করো না। আর হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা ভাই-ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি যুলুম করিবে না, তাকে তুচ্ছ ভাববে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেবে না। তাকওয়া তথা আল্লাহ-সচেতনতা এখানে (অন্তরে) রয়েছে। (তিনি নিজ বুকের দিকে ইঙ্গিত করে এ কথা তিনবার বললেন।) কোন মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ ভাবা একটি মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, মাল এবং তার মর্যাদা অপর মুসলিমের উপর হারাম।’’ (মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫১৪৪, ৬০৬৬, মুসলিম ২৫৬৪, ২৫৬৩, তিরমিজী ১১৩৪, ১৯৮৮, নাসাঈ ৩২৩৯, ৪৪৯৬, ৪৫০৬, ৪৫০৭, আবু দাঊদ ৩৪৩৮, ৩৪৪৩, ৪৯১৭, ইবনু মাজাহ ১৮৬৭, ২১৭২, ২১৭৪ আহমাদ ৭৬৭০, ৭৮১৫, ৮০৩৯, ২৭৩৩৪, ৮২৯৯, ২৭৪৮৮,মুওয়াত্তা মালেক ১৩৯১, ১৬৮৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৪১. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ (পূর্ণ) মু’মিন হইতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করিবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৩, মুসলিম ৪৫, তিরমিজী ২৫১৫, নাসাঈ ৫০১৬, ৫০১৭, ইবনু মাজাহ ৬৬, আহমাদ ১১৫৯১, ১২৩৫৪, ১২৩৭২, ১২৩৯০, ১২৭৩৪, ১২৯৯৪, দারেমী ২৭৪০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৪২. উক্ত সাহাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে অত্যাচারী হোক অথবা অত্যাচারিত।’’ তিনি (আনাস রাঃআঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! অত্যাচারিতকে সাহায্য করার বিষয়টি তো বুঝলাম; কিন্তু অত্যাচারীকে কিভাবে সাহায্য করব?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তাকে অত্যাচার করা হইতে বাধা দেবে, তাহলেই তাকে সাহায্য করা হবে।’’(বুখারী) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৯৫২, ২৪৪৩, ২৪৪৪, তিরমিজী ২২৫৫, আহমাদ ১১৫৩৮, ১২৬৬৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৪৩. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘মুসলিমের উপর মুসলিমের পাঁচটি অধিকার রয়েছেঃ

(১) সালামের জবাব দেওয়া

(২) রোগীকে দেখতে যাওয়া

(৩) জানাযায় অংশ গ্রহণ করা

(৪) দাওয়াত গ্রহণ করা এবং

(৫) কেউ হাঁচি দিলে তার জবাব দেওয়া।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘মুসলিমের উপর মুসলিমের অধিকার ছয়টিঃ তুমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তাকে সালাম দাও, সে তোমাকে দাওয়াত দিলে তার দাওয়াত গ্রহণ কর, সে তোমার কাছে উপদেশ চাইলে তুমি তাকে উপদেশ দাও, সে হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বললে তার জবাব দাও, সে অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাও এবং সে মারা গেলে তার জানাযায় অংশ গ্রহণ কর।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১২৪০, মুসলিম ২১৬২, তিরমিজী ২৭৩৭, নাসাঈ ১৯৩৮, আবু দাঊদ ৫০৩০, ইবনু মাজাহ ১৪৩৫, আহমাদ ২৭৫১১, ১০৫৮৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৪৪. আবু ‘উমারাহ বারা’ ইবনু আযেব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদেরকে সাতটি কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি কাজ করতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি রোগীকে দেখতে যেতে, জানাযায় অংশগ্রহণ করতে, কেউ হাঁচি দিলে তার জবাব দিতে, শপথকারীর শপথ রক্ষা করতে, নিপীড়িতদের সাহায্য করতে, সালামের প্রসার ঘটাতে এবং কেউ দাওয়াত দিলে তা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর তিনি আমাদেরকে সোনার আংটি পরতে, রূপার পাত্র ব্যবহার করতে, রেশমের জিনপোশ, কাস্‌সী, ইস্তাবরাক ও দীবাজ (সর্বপ্রকার রেশমী পোশাক) ব্যবহার করতে নিষেধ করিয়াছেন। (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১২৩৯, ২৪৪৫, ৫১৫৭, ৫৬৩৫, ৫৬৫০,৫৮৩৮, ৫৮৪৯, ৫৮৬৩, ৬২২২, ৬২৩৫, ৬৬৫৪, মুসলিম ২০৬৬, তিরমিজী ১৭৬০, ২৮০৯, নাসাঈ ১৯৩৯, ৩৭৭৮, ৫৩০৯, ইবনু মাজাহ ২১১৫, আহমাদ ১৮০৩৪, ১৮০৬১, ১৮১৭০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ২৮ -মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা জরুরী এবং বিনা প্রয়োজনে তা প্রচার করা নিষিদ্ধ

২৪৫. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘যে দুনিয়াতে কোনো বান্দার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’’ (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ২৫৯০, আহমাদ ২৭৪৮৪, ৮৯৯৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৪৬. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আমার সকল উম্মত মাফ পাবে, তবে পাপ-প্রকাশকারী ব্যতীত। আর এক প্রকার প্রকাশ এই যে, কোনো ব্যক্তি রাতে কোনো পাপকাজ করে, যা আল্লাহ গোপন রাখেন। কিন্তু সকাল হলে সে বলে বেড়ায়, ‘হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি।’ অথচ সে এমন অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করেছিল যে, আল্লাহ তার পাপ গুপ্ত রেখেছিলেন। কিন্তু সে সকালে উঠে তার উপর আল্লাহর আবৃত পর্দা খুলে ফেলে!’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০৬৯, মুসলিম ২৯৯০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৪৭. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘(কারো) দাসী যখন ব্যভিচার করে আর তা প্রমাণিত হয়ে যায়, তখন সে যেন তাকে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত বেত্রাঘাত করে এবং তিরস্কার না করে। অতঃপর দ্বিতীয়বার যদি ব্যভিচার করে, তাহলে সে যেন তাকে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত বেত্রাঘাত করে এবং তিরস্কার না করে। পুনরায় যদি ব্যভিচার করে, তাহলে যেন চুলের একটি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে দেয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২১৫২, ২১৫৪, ২২৩৩, ২২৩৪, ২৫৫৬, ৬৮৩৮, ৬৮৩৯, মুসলিম ১৭০৩, ১৭০৪, তিরমিজী ১৪৩৩, ১৪৪০, আবু দাঊদ ৪৪৬৯, ৪৪৭০, ইবনু মাজাহ ২৫৬৫, আহমাদ ৭৩৪৭, ৮৬৬৯, ৯১৭৪, ১০০৩৩, ১৬৫৯৫, মুওয়াত্তা মালেক ১৫৬৪, দারেমী ২৩২৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৪৮. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (একদা) নবী সাঃআঃ এর নিকট এক মাতালকে উপস্থিত করা হল। তিনি তাকে প্রহার করার আদেশ দিলেন। আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ বলেন, আমাদের মাঝে কেউ তাকে হাত দ্বারা, কেউ জুতা দ্বারা এবং কেউ বা কাপড় দ্বারা প্রহার করল। লোকটি যখন চলে গেল, তখন এক ব্যক্তি বলল, ‘আল্লাহ তোকে লাঞ্ছিত করুক।’ তখন রাসূল সাঃআঃ বললেন, ‘‘এরূপ বলো না; তার বিরুদ্ধে শয়তানের সাহায্যকারী হয়ো না।’’ (বুখারী) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৭৭৭, ৬৭৮১, আবু দাঊদ ৪৪৭৭, আহমাদ ৭৯২৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ২৯ -মুসলিমদের প্রয়োজন পূরণ করার গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱفۡعَلُواْ ٱلۡخَيۡرَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾ [الحج: ٧٧]

অর্থাৎ “উত্তম কাজ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।” (সূরা হাজ্জ ৭৭ আয়াত)

২৪৯. ইবনু উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার উপর অত্যাচার করিবে না এবং তাকে অত্যাচারীর হাতে ছেড়ে দেবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করিবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূর্ণ করিবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কোন এক বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বহু বিপদের একটি বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করিবে, আল্লাহ কিয়ামতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করিবেন।’’ (বুখারী, মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৪৪২, ৬৯৫১, মুসলিম ২৫৮০, তিরমিজী ১৪২৬, আবু দাঊদ ৪৮৯৩, আহমাদ ৭৯২৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৫০. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কোন পার্থিব দুর্ভোগ দূরীভূত করিবে, আল্লাহ তার কিয়ামতের দিনের দুর্ভোগসমূহের মধ্যে কোন একটি দুর্ভোগ দূর করিবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির প্রতি সহজ করিবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার প্রতি সহজ করিবেন। আর যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা তার মুসলিম ভাইয়ের সহযোগিতা করতে থাকে, আল্লাহও সে বান্দার সাহায্য করতে থাকেন।

যে ব্যক্তি এমন পথে চলে–যাতে সে (দ্বীনী) বিদ্যা অর্জন করে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। আর যখনই কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর কোনো এক ঘরে একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে ও নিজেদের মধ্যে তা অধ্যয়ন করে, তখনই (আল্লাহর পক্ষ থেকে) তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়, তাদেরকে (আল্লাহর) রহমত আচ্ছাদিত করে নেয়, ফেরেশতা তাদেরকে ঘিরে নেয় এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী (ফেরেশতা)দের মধ্যে তাদের কথা আলোচনা করেন। আর যাকে তার আমল পশ্চাদ্গামী করেছে (অর্থাৎ নেকীর কাজ করেনি) তার বংশ তাকে অগ্রগামী করতে পারবে না।’’ (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ২৬৯৯, ২৭০০, তিরমিজী ১৪২৫, ১৯৩, ২৬৪৬, ২৯৪৫, আবু দাঊদ ১৪৫৫, ৪৯৪৬, ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৩০ -সুপারিশ করা

২৫১. আবু মূসা আশ‘আরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

যখন নবী সাঃআঃ-এর নিকট কোন প্রয়োজন প্রার্থী আসত, তখন তিনি তাঁর সঙ্গীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতেন, ‘‘(এর জন্য) তোমরা সুপারিশ কর, তোমাদেরকে প্রতিদান দেওয়া হবে। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীর যবানে যা পছন্দ করেন, তা ফায়সালা করে দেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

অন্য এক বর্ণনায় আছে, যা ইচ্ছা করেন (তা ফায়সালা করে দেন)।

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৮১, ১৪৩২, ২৪৪৬, ৬০২৭, ৬০২৮, ৭৪৭৬, মুসলিম ২৫৮৫, ২৬২৭, তিরমিজী ১৯২৮, নাসাঈ ২৫৫৬, ২৫৬০, আবু দাঊদ ৫১৩১, আহমাদ ১৯০৮৭, ১৯১২৭, ১৯১৬৩, ১৯২০৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৫২. ইবনু আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বারীরাকে বললেন, ‘‘তুমি যদি তার কাছে ফিরে যেতে (তাহলে ভাল হত)!’’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে আদেশ দিচ্ছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘(না।) আমি (কেবলমাত্র) সুপারিশ করছি।’’ সে বলল, ‘(তাহলে) তার আমার কোন প্রয়োজন নেই।’ (বুখারী) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫২৮৩, ৫২৮০, ৫২৮১, ৫২৮২, তিরমিজী ১১৫৬, নাসাঈ ৫৪১৭, ২২৩১. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৩১ -(বিবাদমান) মানুষদের মধ্যে মীমাংসা (ও সন্ধি) করার গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ۞لَّا خَيۡرَ فِي كَثِيرٖ مِّن نَّجۡوَىٰهُمۡ إِلَّا مَنۡ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوۡ مَعۡرُوفٍ أَوۡ إِصۡلَٰحِۢ بَيۡنَ ٱلنَّاسِۚ ﴾ [النساء: ١١٤]

অর্থাৎ “তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোন কল্যাণ নেই, তবে যে (তার পরামর্শে) দান খয়রাত, সৎকাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের নির্দেশ দেয় (তাতে) কল্যাণ আছে।” (সুরা নিসা ১১৪ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ ﴾ [النساء: ١٢٨]

অর্থাৎ “বস্তুতঃ আপোস করা অতি উত্তম।” (ঐ ১২৮ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেছেন,

﴿ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَأَصۡلِحُواْ ذَاتَ بَيۡنِكُمۡۖ ﴾ [الانفال: ١]

অর্থাৎ “তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন কর।” (সূরা আনফাল ১ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَ أَخَوَيۡكُمۡۚ﴾ [الحجرات: ١٠]

অর্থাৎ “সকল বিশ্বাসীরা তো পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাই-এর মধ্যে সন্ধি স্থাপন কর।” (সূরা হুজুরাত ১০ আয়াত)

২৫৩. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন যাতে সূর্য উদয় হয় (অর্থাৎ প্রত্যেক দিন) মানুষের প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় একটি করে সাদকাহ রয়েছে। (আর সাদকাহ শুধু মাল খরচ করাকেই বলে না; বরং) দু’জন মানুষের মধ্যে তোমার মীমাংসা করে দেওয়াটাও সাদকাহ, কোনো মানুষকে নিজ সওয়ারীর উপর বসানো অথবা তার উপর তার সামান উঠিয়ে নিয়ে সাহায্য করাও সাদকাহ, ভাল কথা বলা সাদকাহ, নামাযের জন্য কৃত প্রত্যেক পদক্ষেপ সাদকাহ এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূরীভূত করাও সাদকাহ।’’ (বুখারী-মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৭০৭,২৮৯১, ২৯৮৯, মুসলিম ১০০৯, আহমাদ ২৭৪০০, ৮১৫৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৫৪. উম্মে কুলসুম বিন্‌তে উক্ববাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছি, ‘‘ঐ ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন করার জন্য (বানিয়ে) ভাল কথা পৌঁছে দেয় অথবা ভাল কথা বলে। (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৬৯২, মুসলিম ২৬০৫, তিরমিজী ১৯৩৮, আবু দাঊদ ৪৯২০, ৪৯২১, আহমাদ ২৬৭২৭, ২৬৭৩১

[2] বস্তুত মুসলিমের হাদীসে এ অংশটুকু উম্মে কুলসূম থেকে বর্ণিত হয় নি। এটি বরং ইমাম যুহরীর বাণী। [সম্পাদক]. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৫৫. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ দরজার নিকট দু’জন বিবাদকারীর উচ্চ আওয়ায শুনতে পেলেন। তাদের মধ্যে একজন অপরজনকে কিছু ঋণ কমাবার এবং নম্রতা প্রদর্শন করার জন্য অনুরোধ করছিল। আর ঋণদাতা বলছিল, ‘আল্লাহর কসম! আমি (এটা) করব না।’ অতঃপর রসুলুল্লাহ সাঃআঃ সে দু’জনের কাছে বেরিয়ে এসে বললেন, ‘‘সে ব্যক্তি কোথায়, যে আল্লাহর উপর কসম খাচ্ছিল যে, সে ভাল কাজ (ঋণ কম এবং নম্রতা) করিবে না?’’ সে বলল, ‘আমি, হে আল্লাহর রাসূল! (এখন) সে (ঋণ কম করা অথবা সময় নেওয়া) যা পছন্দ করিবে, আমি তাতেই রাজি।’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৭০৫, মুসলিম ১৫৫৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৫৬. আবুল আব্বাস সাহ্‌ল ইবনু সা‘দ সায়েদী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘আমর ইবনু ‘আউফ গোত্রের কিছু লোকের মাঝে কিছু ঝগড়া-বিবাদ ছিল। তাই রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁর সাথে কিছু লোককে নিয়ে তাদের মধ্যে আপোস-মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য সেখানে হাজির হলেন। সেখানে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আটকে গেলেন। অপর দিকে নামাযের সময় হয়ে গেল। সুতরাং বিলাল রাঃআঃ আবু বকর রাঃআঃ-এর নিকট এসে বললেন, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আটকে গেছেন। এদিকে নামাযেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি কি নামাযের লোকদের ইমামতি করিবেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি চাও।’

অতঃপর বিলাল রাঃআঃ নামাযের ইকামত দিলেন এবং আবু বকর রাঃআঃ এগিয়ে গিয়ে (তাহরীমার) তকবীর বললেন এবং লোকেরাও তকবীর বলল। ইতোমধ্যে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম করে (প্রথম) কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লোকেরা হাততালি দিতে শুরু করল। আবু বকর রাঃআঃ নামাযরত অবস্থায় কোনো দিকে তাকান না, কিন্তু লোকেদের অধিক মাত্রায় হাততালির কারণে তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ উপস্থিত হয়েছেন।

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁকে হাতের ইশারায় (নিজের জায়গায় থাকতে) নির্দেশ দিলেন। আবু বকর রাঃআঃ তাঁর হাত উপরে তুলে আল্লাহর প্রশংসা করলেন। তারপর কিবলার দিকে মুখ রেখে পিছনে ফিরে এসে কাতারে শামিল হলেন। অতঃপর রসুলুল্লাহ সাঃআঃ সামনে গিয়ে লোকদের ইমামতি করলেন এবং নামায শেষ করে লোকদের দিকে ফিরে বললেন, ‘‘হে লোক সকল! কি ব্যাপার যে, নামায অবস্থায় কিছু ঘটতে দেখে তোমরা হাততালি দিতে শুরু করলে? (জেনে রেখো, নামাযে) হাততালি দেওয়া তো মহিলাদের কর্তব্য।

নামায অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে সে যেন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে। কারণ, এটা শুনলে কেউ তার দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে পারবে না। হে আবু বকর! তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন ইমামতি করতে তোমার কিসের বাধা ছিল?’’ তিনি বললেন, ‘আবু কুহাফার ছেলের জন্য সঙ্গত ছিল না যে, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সামনে লোকদের ইমামতি করিবে।’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৮৪, ১২০১, ১২০৪, ১২১৮, ১২৩৪, ২৬৯০, ২৬৯৩, ৭১৯০, মুসলিম ৪২১, নাসাঈ ৭৮৪, ৭৯৩, ১১৮৩, ৫৪১৩। হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৩২ -দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ وَلَا تَعۡدُ عَيۡنَاكَ عَنۡهُمۡ تُرِيدُ زِينَةَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ ﴾ [الكهف: ٢٨]

অর্থাৎ “তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখ যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক হইতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না।” (সূরা কাহফ ২৮ আয়াত)

২৫৭. হারেসাহ ইবনু অহাব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আমি তোমাদেরকে জান্নাতীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি? (তারা হল) প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি এবং এমন ব্যক্তি যাকে দুর্বল মনে করা হয়। সে যদি আল্লাহর নামে কসম খায়, তাহলে তা তিনি নিশ্চয়ই পুরা করে দেন। আমি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি? (তারা হল) প্রত্যেক রূঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় দাম্ভিক ব্যক্তি।’’ (বুখারী, মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৯১৮, ৬০৭২, ৬৬৫৭, মুসলিম ২৮৫৩, তিরমিজী ২৬০৫, ইবনু মাজাহ ৪১১৬, আহমাদ ১৮২৫৩। হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৫৮. আবু আব্বাস সাহ্‌ল ইবনু সা‘দ সায়েদী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি নবী সাঃআঃ এর পাশ দিয়ে পার হয়ে গেল, তখন তিনি তাঁর নিকট উপবিষ্ট একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার মন্তব্য কী?’’ সে বলল, ‘এ ব্যক্তি তো এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক। আল্লাহর কসম! সে কোথাও বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে এবং কারো জন্য সুপারিশ করলে তা কবুল করা হবে।’ তখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ নীরব থাকলেন।

কিছুক্ষণের মধ্যে আর এক ব্যক্তি পার হয়ে গেল। তিনি ঐ (উপবিষ্ট) লোকটিকে বললেন, ‘‘এ লোকটির ব্যাপারে তোমার অভিমত কী?’’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ তো একজন দরিদ্র মুসলিম। সে এমন ব্যক্তি যে, সে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না, কারো জন্য সুপারিশ করলে তা কবুল করা হবে না এবং সে কোনো কথা বললে, তার কথা শ্রবণযোগ্য হবে না।’ তখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘এ ব্যক্তি দুনিয়া ভর্তি ঐরূপ লোকদের চাইতে বহু উত্তম।’’ (বুখারী, মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫০৯১, ৬৪৪৭,ইবনু মাজাহ ৪১২০ হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৫৯. আবু সাঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘জান্নাত ও জাহান্নামের বিবাদ হল। জাহান্নাম বলল, ‘আমার মধ্যে উদ্ধত ও অহংকারী লোকেরা।’ আর জান্নাত বলল, ‘আমার ভিতরে দুর্বল ও দরিদ্র ব্যক্তিদের বসবাস।’ অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যে ফায়সালা করলেন যে, ‘তুমি জান্নাত আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমি যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। আর তুমি জাহান্নাম আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেব। আর তোমাদের উভয়কেই পরিপূর্ণ করা আমার দায়িত্ব।’’ (মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৮৪৯, ৪৮৫০, ৭৪৪৯, মুসলিম ২৮৪৬,২৮৪৭, তিরমিজী ২৫৫৭, ২৫৬১, আহমাদ ৭৬৬১, ২৭৩৮১, ২৭২২৪, ১০২১০। হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৬০. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন মোটা-তাজা বৃহৎ মানুষ আসবে, আল্লাহর কাছে তার মাছির ডানার সমানও ওজন হবে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৭২৯, মুসলিম ২৭৮৫। হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৬১. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ

কালোবর্ণের একজন মহিলা অথবা যুবক মসজিদ ঝাড়ু দিত। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাকে (একদিন) দেখতে পেলেন না। সুতরাং তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সাহাবীগণ বললেন, ‘সে মারা গেছে।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা আমাকে সংবাদ দিলে না কেন?’’ তাঁরা যেন তার ব্যাপারটাকে নগণ্য ভেবেছিলেন। তিনি বললেন, ‘‘আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও।’’ সুতরাং তাঁরা তার কবরটি দেখিয়ে দিলেন এবং তিনি তার উপর জানাযা পড়লেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘নিশ্চয় এ কবরসমূহ কবরবাসীদের জন্য অন্ধকারময়। আর আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য আমার জানাযা পড়ার কারণে তা আলোময় করে দেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৩৩৭, ৪৫৮, ৪৬০, মুসলিম ৯৫৬, আবু দাঊদ ৩২০৩, ইবনু মাজাহ ১৫২৭, আহমাদ ৮৪২০, ৮৮০৪, ৯০১৯ হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৬২. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘বহু এমন লোকও আছে যার মাথা উষ্কখুষ্ক ধুলোভরা, যাদেরকে দরজা থেকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। (কিন্তু সে আল্লাহর নিকট এত প্রিয় যে) সে যদি আল্লাহর উপর কসম খায়, তাহলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন।’’ (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ২৬২২, ২৮৫৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৬৩. উসামাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়ালাম। অতঃপর দেখলাম যারা জান্নাতে প্রবেশ করেছে তাদের অধিকাংশ গরীব-মিসকীন মানুষ। আর ধনবানদেরকে (তখনও হিসাবের জন্য) আটকে রাখা হয়েছে। পক্ষান্তরে (অন্যান্য) জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর আমি জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম যে, যারা তাতে প্রবেশ করেছে তাদের বেশীর ভাগই নারীর দল। (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫১৯৬, ৬৫৪৭, মুসলিম ২৭৩৬, আহমাদ ২১২৭৫, ২১৩১৮. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৬৪. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, (নবজাত শিশুদের মধ্যে) দোলনায় তিনজনই মাত্র কথা বলেছে; মারয়্যামের পুত্র ঈসা, আর (বনী ইস্রাঈলের) জুরাইজের (পবিত্রতার সাক্ষী) শিশু। জুরাইজ ইবাদতগুযার মানুষ ছিল এবং সে একটি উপাসনালয় (আশ্রম) বানিয়েছিল। একদা সে সেখানে নামায পড়ছিল। এমন সময় তার মা তার নিকট এসে তাকে ডাকলে সে (মনে মনে) বলল, ‘হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায (দুটই গুরুত্বপূর্ণ; কোনটিকে প্রাধান্য দই, তার সুমতি দাও)।’

সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। আর তার মা ফিরে গেল। পরবর্তী দিনে সে নামাযে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় আবার তার মা এসে ডাক দিল, ‘জুরাইজ!’ সে (মনে মনে) বলল, ‘হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায (এখন কী করি?)’ সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। তার পরবর্তী দিনে সে নামাযে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় আবার তার মা এসে ডাক দিল, ‘জুরাইজ!’ সে (মনে মনে) বলল, ‘হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায (এখন কী করি?)’ সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। তখন (তিন তিন দিন সাড়া না পেয়ে তার মা তাকে বদদো‘আ দিয়ে) বলল, ‘হে আল্লাহ! বেশ্যাদের মুখ না দেখা পর্যন্ত তুমি ওর মরণ দিও না।’

বনী ইস্রাঈল জুরাইজ ও তার ইবাদতের কথা চর্চা করতে লাগল। এক বেশ্যা মহিলা ছিল, যার দৃষ্টান্তমূলক রূপ-সৌন্দর্য ছিল। সে বলল, ‘তোমরা চাইলে আমি ওকে ফিতনায় ফেলতে পারি।’ সুতরাং সে নিজেকে তার কাছে পেশ করল। কিন্তু জুরাইজ তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করল না। পরিশেষে সে এক রাখালের কাছে এল, যে জুরাইজের আশ্রমে আশ্রয় নিত। সে দেহ সমর্পণ করলে রাখাল তার সাথে ব্যভিচার করল এবং বেশ্যা তাতে গর্ভবতী হয়ে গেল। অতঃপর সে যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ করল, তখন (লোকেদের জিজ্ঞাসার উত্তরে) বলল, ‘এটি জুরাইজের সন্তান।’

সুতরাং লোকেরা জুরাইজের কাছে এসে তাকে আশ্রম হইতে বেরিয়ে আসতে বলল। (সে বেরিয়ে এলে) তারা তার আশ্রম ভেঙ্গে দিল এবং তাকে মারতে লাগল। জুরাইজ বলল, ‘ কী ব্যাপার তোমাদের? (এ শাস্তি কিসের?)’ লোকেরা বলল, ‘তুমি এই বেশ্যার সাথে ব্যভিচার করেছ এবং তার ফলে সে সন্তান জন্ম দিয়েছে।’ সে বলল, ‘সন্তানটি কোথায়?’ অতঃপর লোকেরা শিশুটিকে নিয়ে এলে সে বলল, ‘আমাকে নামায পড়তে দাও।’ সুতরাং সে নামায পড়ে শিশুটির কাছে এসে তার পেটে খোঁচা মেরে জিজ্ঞাসা করল, ‘ওহে শিশু! তোমার পিতা কে?’ সে জবাব দিল, ‘অমুক রাখাল।’

অতএব লোকেরা (তাদের ভুল বুঝে এবং এই অলোকিক ঘটনা দেখে) জুরাইজের কাছে এসে তাকে চুমা দিতে ও স্পর্শ করতে লাগল। তারা বলল, ‘আমরা তোমার আশ্রমকে স্বর্ণ দিয়ে বানিয়ে দেব।’ সে বলল, ‘না, মাটি দিয়েই তৈরী করে দাও, যেমন পূর্বে ছিল।’ সুতরাং তারা তাই করল। (তৃতীয় শিশুর ঘটনা হচ্ছে বনী ইস্রাঈলের) এক শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল। এমন সময় তার পাশ দিয়ে উৎকৃষ্ট সওয়ারীতে আরোহী এক সুদর্শন পুরুষ চলে গেল। তার মা দো‘আ করে বলল, ‘হে আল্লাহ! আমার ছেলেটিকে ওর মত করো।’ শিশুটি তখনি মায়ের দুধ ছেড়ে দিয়ে সেই আরোহীর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ আমাকে ওর মত করো না।’ তারপর মায়ের দুধের দিকে ফিরে দুধ চুষতে লাগল।

আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ নিজের তর্জনী আঙ্গুলকে নিজ মুখে চুষে শিশুটির দুধ পান দেখাতে লাগলেন। আমি যেন তা এখনো দেখতে পাচ্ছি। পুনরায় (তাদের) পাশ দিয়ে একটি দাসীকে লোকেরা মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা বলছিল, ‘তুই ব্যভিচার করেছিস, চুরি করেছিস!’ আর দাসীটি বলছিল, ‘হাসবিয়াল্লাহু অনি‘মাল অকীল।’ (আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ও তিনই উত্তম কর্মবিধায়ক।)

তা দেখে মহিলাটি দো‘আ করল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো না।’ ছেলেটি সাথে সাথে মায়ের দুধ ছেড়ে দাসীটির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো।’ অতঃপর মা-বেটায় কথোপকথন করল। মা বলল, ‘একটি সুন্দর আকৃতির লোক পার হলে আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো। তখন তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো না। আবার ওরা ঐ দাসীকে নিয়ে পার হলে আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো না। কিন্তু তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো! (এর কারণ কী?)’

শিশুটি বলল, ‘(তুমি বাহির দেখে বলেছ, আর আমি ভিতর দেখে বলেছি।) ঐ লোকটি স্বৈরাচারী, তাই আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো না। আর ঐ দাসীটির জন্য ওরা বলছে, তুই ব্যভিচার করেছিস, চুরি করেছিস, অথচ ও এ সব কিছুই করেনি। তাই আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো।’ (বুখারী) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৪৩৬, ২৪৮২, ৩৪৬৬, মুসলিম ২৫৫০, আহমাদ ৮০১০, ৮৭৬৮, ৯৩১৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

Comments

Leave a Reply