ফজর নামাজের পর জিকির সমূহ
ফজর নামাজের পর জিকির সমূহ >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পরিচ্ছেদ ১২১. নামাজের পর যিক্রসমূহ
পরিচ্ছেদ ১২২. ফরয নামাজের পরে দু’আসমূহের ধরণের বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ১২৩. ফরয নামাজের পরে যিকরসমূহের বিবরণ
পরিচ্ছেদ ১২৪. ফরয নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করার ফযীলত
পরিচ্ছেদ ১২৫. নামাজে রাসূল [সাঃআঃ] এর অনুসরণ করা আবশ্যক
পরিচ্ছেদ ১২৬. অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের বিবরণ
পরিচ্ছেদ ১২৭. সাজদাতে অক্ষম অসুস্থ ব্যক্তির বিধান
পরিচ্ছেদ ১২১. নামাজের পর যিক্রসমূহ
৩২১ – মুগীরাহ ইব্নু শু’বাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] প্রত্যেক ফার্য নামাজের পর বলিতেনঃ
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহু, লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া`আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদীর। আল্লাহুম্মা লা মানি’আ লিমা আ’তায়া, ওয়া লা মু’তিয়া লিমা মানা’তা, ওয়া লা ইয়ান্ফা’উ যাল জাদ্দি মিন্কাল জাদ্দু। “এক আল্লাহ্ ব্যাতীত কোন ইলাহ্ নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাহাঁরই, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাহাঁরই জন্য, তিনি সবকিছুর উপরই ক্ষমতাশীল। হে আল্লাহ্! আপনি যা প্রদান করিতে চান তা রোধ করার কেউ নেই, আর আপনি যা রোধ করেন তা প্রদান করার কেউ নেই। আপনার নিকট [সৎকাজ ভিন্ন] কোন সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসে না।” {৩৬০}
{৩৬০} বুখারী ৮৪৪, ১৪৭৭, ২৪০৮, ৫৯৭৫, ৬৩৩০, ৬৪৭৩, ৬৬১৫, ৭২৯২, মুসলিম ৫৯৩, নাসায়ি হাদিস ১৩৪১, ১৩৪২, ১৩৪৩, আবূ দাউদ ৩০৭৯, আহমাদ ১৭৫৭৩, ১৭৬৮১, ১৭৭৬৬, দারেমী ২৮৫১, ১৩৪৯। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১২২. ফরয নামাজের পরে দু’আসমূহের ধরণের বর্ণনা
৩২২ – সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসমস্ত বাক্য দিয়ে আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করিতেন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়াআ’উযুবিকা মিনাল জুবনি, ওয়াআ’উযুবিকা মিন আন উরাদ্দা ইলা আরযালিল`উমরি, ওয়াআ’উযুবিকা মিন ফিতনাতিদ্ দুনইয়া ওয়াআ’উযুবিকা মিন`আযাবিল কাবরি।” হে আল্লাহ! আমি কাপুরুষতা থেকে, আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি। আমি বার্ধক্যের অসহায়ত্ব থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি। আর আমি দুনিয়ার ফিত্না ও ক্ববরের`আযাব থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। {৩৬১}
{৩৬১} বুখারী ২৮২২, ৬৩৬৫, ৬৩৭০, ৬৩৭৪, ৬৩৯০, তিরমিজি ৩৫৬৭, নাসায়ি হাদিস ৫৪৪৫, ৫৪৪৭, ৫৪৮৩, আহমাদ ১৫৮৯, ১৬২৪, বুখারীর বর্ণনায় রয়েছে, শিক্ষক যেমন ছাত্রদের লেখা শিক্ষা দেন, সা’দ [রাঃআঃ] তেমনি তাহাঁর সন্তানদের এ বাক্যগুলো শিক্ষা দিতেন। নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
৩২৩ – সাওবান [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] নামাজ হতে সালাম ফিরাতেন তখন তিনবার
اسْتَغْفَرَ اللَّهَ
আস্তাগ্ফিরুল্লাহ [আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চাইছি] বলিতেন এবং আরো বলিতেন-
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ. تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
উচ্চারণঃ আলাহুম্মা আন্তাস সালামু ওয়া মিনকাস-সালামু, তাবারাক্তা ইয়া যাল-জালালি ওয়াল-ইকরাম। অর্থঃ আমি ক্ষমা চাই [তিন বার]। হে আল্লাহ! তুমি সালাম বা শান্তিময় এবং তোমার কাছ থেকেই শান্তি আসে। হে মহান, মহিমাময় ও মহানুভব। {৩৬২}
{৩৬২} মুসলিম ৫৯১, তিরমযী ৩০০, আবূ দাউদ ১৫১২, ইবনু মাজাহ ৯২৮, আহমাদ ২১৯০২, দারেমী ১৩৪৮, মুসলিমে হাদিসটির শেষে রয়েছে, ওয়ালিদ [রহঃ] বলেন, আমি আওযায়ীকে বললাম, ইস্তগফার কিভাবে করব? তিনি বলিলেন, তুমি [আরবি] [আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি] বলবে। নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১২৩. ফরয নামাজের পরে যিকরসমূহের বিবরণ
৩২৪ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হতে বর্ণনা করিয়াছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন- যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্তের [ফার্য] নামাজের পরে ৩৩ বার সুব্হানাল্লাহ, ৩৩ বার আল হ’মদুলিল্লাহ্ ও ৩৩ বার আল্লাহু আকবার বলবে- এটা মোট ৯৯ বার হলে একশো পূরণ করার জন্য বলবে-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহু, লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর। অর্থঃ এক মাত্র আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন স্রষ্টা নেই, তাহাঁর কোন শরীক নেই, আধিপত্য তাহাঁর, প্রশংসা তাহাঁর এবং তিনি সকল শক্তির অধিকারী। যে ব্যক্তি পাঠ করিবে তার পাপরাশি ক্ষমা করা হইবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়ে থাকে। অন্য বর্ণনায় আছে- “আল্লাহু আকবার” চৌত্রিশ বার বলবে। {৩৬৩}
{৩৬৩} মুসলিম ৫৯৭, আবূ দাউদ ১৫০৪, আহমাদ ৮৬১৬, ৯৮৯৭, মুওয়াত্তা মালেক ৪৮৮, ৩২৫, হাদিসটি সহিহ। আর তা কা’ব বিন উজরাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। বুলুগুল মারামের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “সুবুলুস সালামে” বলা হয়েছে, তা আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] এর হাদিস আর তা ভুল। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
৩২৫ – মু’আয বিন জাবাল [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন, তুমি অবশ্যই প্রত্যেক ফরয নামাজের পরে এ দুআটি বলিতে ছাড়বে না-
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
আল্লাহুম্মা আ-ইন্নী`আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি`ইবাদাতিকা। অর্থঃ হে আল্লাহ্ আমি তোমার নিকটে তোমার স্মরণের, তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতার ও তোমার উত্তম বন্দেগী করার সহযোগীতা চাই]। আহমাদ, আবূ দাউদ, আর নাসায়ি হাদিস-একটি মজবুত সানাদে। {৩৬৪}
{৩৬৪} আবূ দাউদ ১৫২২, নাসায়ি হাদিস ১৩০৩, আহমাদ ২১৬২১। উকবাহ বিন মুসলিম বলেন,`আব্দুর রহমান আল হুবলা’ সুনাবিহী [রঃ] আমার নিকট হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি [সুনাবিহী] মুয়ায [রাঃআঃ] থেকে হাদিস বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুয়াযকে বলেন, হে মুয়ায! আল্লাহর শপথ নিশ্চয় আমি তোমাকে ভালবাসি। তখন মুয়ায [রাঃআঃ] বলেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক হে আল্লাহর রসূল। আমিও আপনাকে ভালবাসি। আবূ দাউদ ও আহমাদের বর্ণনায় উক্ত হাদিসের শেষে রয়েছে, মুয়ায [রাঃআঃ] সুনাবিহীকে প্রত্যেক সালাতের শেষে উক্ত বর্ণিত দোয়া পাঠ করিতে ওসীয়ত করিলেন এবং সুনাবিহিও আবূ আব্দুর রহমানকে এ ব্যাপারে ওসীয়ত করিলেন। আহমাদ এর বর্ণনায় আরো রয়েছে, আবূ আব্দুর রহমান উকবাহ বিন মুসলিমকে উক্ত দোয়া পাঠ করিতে ওসীয়ত করিয়াছেন। এখান থেকে দোয়াটি প্রত্যেক সালাতের শেষে পাঠ করার মর্যাদা বুঝা যায়। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১২৪. ফরয নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করার ফযীলত
৩২৬ – আবূ উমামাহ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে কেউ আয়াতুল কুর্সী প্রত্যেক ফরয নামাজের পরে পাঠ করলে তার মৃত্যুই তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য বাধা হয়ে আছে। নাসায়ি হাদিস; ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। {৩৬৫} তাবারানী বৃদ্ধি করেছেনঃ এবং “কুল্হু আল্লাহু আহাদ”। {৩৬৬}
হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১২৫. নামাজে রাসূল [সাঃআঃ] এর অনুসরণ করা আবশ্যক
৩২৭ – মালিক বিন হুওয়াইরিস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন – রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ আদায় করিতে দেখেছ সেভাবে নামাজ আদায় করিবে। {৩৬৭}
{৩৬৭} বুখারী ৬২৮, ৬৩০, ৬৫৮, ৬৭৭, ৬৮৫, ৮০২, মুসলিম ৬৭৪, তিরমিজি ২০৫, ২৮৭, নাসায়ি হাদিস ৬৩৪, ৬৩৫, ১১৫৩, আবূ দাউদ ৫৮৯, ৮৪২, ৮৪৩, ৮৪৪, ইবনু মাজাহ ৯৭৯, আহমাদ ১৫১৭১, ২০০০৬, দারেমী ১২৫৩, নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১২৬. অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের বিবরণ
৩২৮ – ইমরান ইবনু হুসাইন [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করিবে, তা না পারলে বসে; যদি তাও না পার তাহলে শুয়ে। {৩৬৮}
{৩৬৮} বুখারী ১১১৫, ১১১৬, ১১১৭, তিরমিজি ৩৭১, নাসায়ি হাদিস ১৬৬০, আবূ দাউদ ৯৫১, ৯৫২ ইবনু মাজাহ ১২৩১, আহমাদ ১৯৩৮৬, ১৯৩৯৮, ১৯৪৭২, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১২৭. সাজদাতে অক্ষম অসুস্থ ব্যক্তির বিধান
৩২৯ – জাবির [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] জনৈক রোগীকে বালিশের উপর [সাজদাহ দিয়ে] নামাজ আদায় করিতে দেখে ওটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলিলেন, যদি পার যমীনে বা সমতল স্থানে নামাজ আদায় করিবে। তা না হলে এমনভাবে ইশারা ইঙ্গিতে নামাজ আদায় করিবে যাতে তোমার সাজদাহর ইশারা রুকুর ইশারা অপেক্ষা নীচু হয়। বায়হাকী এটি কাবি [শক্তিশালী] সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু আবূ হাতিম বর্ণনাটি মওকুফ হওয়াকে সঠিক বলে মন্তব্য করিয়াছেন। {৩৬৯}
{৩৬৯} হাদিসটি মারফূ’ হিসেবে সহিহ। বায়হাকী আল-মারিফাহ ৪৩৫৯, নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ মারফু
Leave a Reply