এ বিষয়ে আরও পড়ুন >> মুয়াত্তা মালিক >> সহীহ বুখারী >> সহীহ মুসলিম >> আবু দাউদ >> ইবনে মাজাহ >> তিরমিজি >> নাসাঈ >> মিশকাত >> রিয়াদুস সালেহীন >> বুলুগুল মারাম হাদীস শরীফ হতে
প্রতিদিন বারো রাকআত নফল নামাজ
উম্মু হাবীবা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দৈনিক বারো রাকআত নফল নামাজ আদায় করিবে এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একখানা ঘর নির্মান করা হইবে।
আবুদ দাউদ ১২৫০, সহিহ হাদিস
আবদুল্লা ইবনি শাক্বীক্ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন আমি আয়েশা (রাঃআঃ) কে রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) নফল নামাজ সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি আমার ঘরে যুহরের (ফরয নামাজের) পুর্বে চার রাকআত নামাজ আদায় করেন। অতঃপর বাইরে গিয়ে লোকদেরকে নিয়ে ফরয নামাজ আদায় করতেন। পুনরায় আমার ঘরে ফিরে এসে দু রাকআত নামাজ আদায় করেন। তিনি লোকদেরকে নিয়ে ইশার নামাজ আদায় করার পর আমার ঘরে এসে দু রাকআত নামাজ আদায় করেন। তিনি লোকদের নিয়ে ইশার নামাজ আদায়ের পর আমার ঘরে এসে দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন। এছাড়া তিনি রাতে বিতরসহ নয় রাকআত নামাজ আদায় করতেন। তিনি রাতে দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে এবং দীর্ঘক্ষন বসে নামাজ আদায় করতেন। যখন তিনি দাঁড়িয়ে ক্বিরাআত পড়তেন ঐ অবস্থায়ই রুকু ও সাজদাহ্ করতেন আর বসাবস্থায় ক্বিরাআত পড়লে বসাবস্থায় থেকেই রুকু ও সাজদাহ্ করতেন। যখন ফাজ্র উদয় হতো তিনি দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন। অতঃপর বের হয়ে লোকদেরকে নিয়ে ফাজ্রের নামাজ আদায় করতেন।
আবুদ দাউদ, ১২৫১ সহিহ
ফজরের পূর্বে দুই রাকআত সুন্নাত নামাজ
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইশার সালাত আদায় করিলেন অতঃপর আট রাকআত সালাত আদায় করেন এবং দুরাকআত আদায় করেন বসে। আর দুরাকআত সালাত আদায় করেন আযান ও ইক্বামাত–এর মাঝে। এ দুরাকআত তিনি কখনো পরিত্যাগ করিতেন না।
সহীহ বুখারী ১১৫৯
আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যুহরের পূর্বে চার রাকআত ও ফজরের পূর্বে দু রাকআত নামাজ কখনও ত্যাগ করতেন না।
আবুদ দাউদ ১২৫৩, সহিহ হাদিস
আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফাজরের পূর্বে দু রাকআত নামাজের চেয়ে অধিক দৃঢ় প্রত্যয় অন্য কোন নফল নামাজে রাখেননি।
আবুদ দাউদ ১২৫৪, সহিহ হাদিস
আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ফাজরের পুর্বে দু রাকআত নামাজ এতো সংক্ষেপে আদায় করতেন যে , আমি (মনে মনে ) বলতাম, তিনি কি এ দু রাকআতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করিয়াছেন?
আবুদ দাউদ ১২৫৫, সহিহ হাদিস
. আবু হুরাইরা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) ফাজরের দু রাকআত (সুন্নাতে)ক্বুল ইয়া- আয়্যুহাল কা-ফিরু-ন এবং ক্বুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ সূরাদ্বয় তিলাওয়াত করতেন।
আবুদ দাউদ ১২৫৬, সহিহ হাদিস
বিলাল (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
একদা তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে ফাজ্রের নামাজের সংবাদ দিতে আসলে আয়েশা (রাঃআঃ) বিলালকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করে তাকে তাতেই ব্যস্ত রাখলেন, এমতাবস্থায় আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর বিলাল (রাঃআঃ) এসে নাবী (সাঃআঃ)-কে বারবার সংবাদ দেয়া স্বত্বেও তিনি বাইরে আসলেন না। অতঃপর কিছুক্ষণ পর বাইরে এসে লোকদেরকে নিয়ে নামাজ আদায় করিলেন। তিনি তাঁকে জানালেন যে, আয়েশা (রাঃআঃ) তাকে কোন এক কাজে ব্যস্ত রেখেছিলেন এবং তিনি (সাঃআঃ)-ও বাইরে আসতে যথেষ্ট দেরী করিয়াছেন, এমতাবস্থায় আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। অতঃপর (বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে) নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি ফাজরের দু রাকআত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করেছি। বিলাল বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনিও আজ খুব ভোর করে ফেলেছেন। তিনি বললেনঃ আমি এর চেয়ে অধিক ভোর করলেও ঐ দুরাকআত আদায় করবো এবং তা উত্তম সুন্দরভাবে আদায় করবো।
আবুদ দাউদ ১২৫৭, সহিহ হাদিস
আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা ফাজরের দুরাকআত কখনো ত্যাগ করো না, যদিও তোমাদেরকে ঘোড়া পদদলিত করলেও।
আবুদ দাউদ ১২৫৮, দুর্বল হাদিস
১২৭৭. আমর ইবনি আনবাসাহ আস-সুলামী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম,হে আল্লাহর রসূল! রাতের কোন অংশ অধিক শ্রবণীয় (অর্থাৎ আল্লাহ দুআ বেশি কবুল করেন)? তিনি বলেনঃ রাতের শেষাংশ, এ সময় যতটুকু ইচ্ছা নামাজ আদায় করিবে। কেননা এ সময়ে মালায়িকাহ (ফেরেশতাগণ) এসে ফাজরের নামাজ শেষ হওয় পর্যন্ত উপস্থিত থাকেন এবং লিপিবদ্ধ করেন। অতঃপর সূর্য উঠা পর্যন্ত নামাজ হইতে বিরত থাকিবে, যতক্ষণ না তা এক কিংবা দুই তীর পরিমাণ উপরে উঠে। কারণ সূর্য উদিত হয় শাইত্বানের দুই শিংয়ের মধ্য দিয়ে। আর কাফিররা এ সময় তার পূজা করে থাকে। এরপর তীরের ছায়া ঠিকথাকা (দ্বি প্রহরের পূর্বে) পর্যন্ত যত ইচ্ছা নামাজ আদায় করিবে, এ সময়ের নামাজ সম্পর্কে ফেরেশতাগণ সাক্ষ্য দিয়ে থাকেন এবং তা লিপিবদ্ধ করেন। অতঃপর নামাজ হইতে বিরত থাকিবে, কেননা এ সময় জাহান্নাম উত্তপ্ত করা হয় এবং তার সমস্ত দরজা খুলে দেয়া হয়। যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়বে তখন যত ইচ্ছা নামাজ আদায় করিবে, কেননা আসরের নামাজ পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যকার নামাজ সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয় হয়। অতঃপর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত নামাজ হইতে বিরত থাকিবে, কেননা তা শাইত্বানের দুই শিংয়ের মধ্যে দিয়ে অস্ত যায় এবং এ সময় কাফিররা তার উপাসনা করে থাকে। অতঃপর বর্ণনাকারী এ বিষয়ে দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেন।
আল-আব্বাস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন,আবু উমামাহ (রাঃআঃ) হইতে আবু সাললাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমার কাছে অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তাতে আমি অনিচ্ছাকৃত কিছু ভুল করেছি, সেজন্যে আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাহাঁরই কাছে তাওবাহ করি।
সহীহঃ মুসলিম এ বাক্য বাদে জাওফুল লাইল। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৭৮. ইবনি উমার (রাঃআঃ) এর মুক্তদাস ইয়াসার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা ইবনি উমার (রাঃআঃ) আমাকে সুবহি সাদিকের পর নামাজ আদায় করতে দেখে বলিলেন, হে ইয়াসার! রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের নিকট আসলেন। ঠিক ঐ সময় আমরা এ নামাজ আদায় করছিলাম। তিনি বললেনঃ অবশ্যই তোমাদের উপস্থিতরা যেন অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয় যে সুবহি সাদিকের পর (ফজরের) দুরাকআত সুন্নাত ব্যতীত তোমরা অন্য কোন নামাজ আদায় করিবে না।
সহিহঃ মুসলিম। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
ফাজরের সুন্নাতের পর বিশ্রাম গ্রহণ
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ফজ্রের দুরাকআত সালাত আদায় করার পর ডান কাতে শয়ন করিতেন।
সহীহ বুখারী ১১৬০
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) (ফজ্রের সুন্নাত) সালাত আদায় করার পর আমি জেগে থাকলে, তিনি আমার সাথে কথাবার্তা বলিতেন, নতুবা সালাতের সময় হওয়া সম্পর্কে অবগত করানো পর্যন্ত শুয়ে থাকতেন।
সহীহ বুখারী ১১৬১
১২৬৩. আবু সালামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন,আয়েশা (রাঃআঃ) বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) ফাজ্রের দু রাকআত সুন্নাত আদায়ের পর আমি ঘুমিয়ে থাকলে তিনিও বিশ্রাম নিতেন। আর আমি জাগ্রত থাকলে তিনি আমার সাথে কথাবার্তা বলিতেন।
আবুদ দাউদ সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর শেষ রাতের নামাজ শেষ করার পর আমাকে জাগ্রত দেখলে আমার সাথে কথাবার্তা বলিতেন। যদি আমি ঘুমিয়ে থাকতাম তাহলে তিনি আমাকে জাগিয়ে দিয়ে দু রাকআত আদায় করতেন। অতঃপর মুয়ায্যিন আসা পর্যন্ত ডান কাতে শুয়ে থাকতেন। মুয়াযযিন এসে ফাজ্রের নামাজের সংবাদ দিলে তিনি সংক্ষেপে দু রাকআত আদায় করে নামাজের জন্য বের হইতেন।
আবুদ দাউদ ১২৬২ সহীহঃ কিন্তু হাদিসেরমুয়াযযিন আসার পর্যন্ত ডান কাতে শুয়ে থাকা কথাটি শায। মাহফূয হচ্ছেঃ তার পরে। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ ফাজরের পূর্বে দু রাকআত নামাজ আদায়ের পর যেন ডান কাতে শুয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়। মারওয়ান ইবনিল হাকাম তাকে বললো, আমাদের কেউ যতক্ষণ ডান কাতে শুয়ে বিশ্রাম গ্রহণের সময়টুকুতে মসজিদে রওয়ানা হলে তাকি যথেষ্ট হইবে না?উবায়দুল্লাহ বর্ণনা করেন যে, তিনি উত্তরে বলেন,না। তিনি বলেন, ইবনি উমারের কাছে এ হাদিস পৌঁছুলে তিনি বলেন, আবু হুরাইরা (রাঃআঃ) নিজের প্রতি বাড়াবাড়ি করিয়াছেন। তখন কেউ ইবনি উমার (রাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করলো, তিনি যা বলেছেন আপনি তার কিছু অস্বীকার করেন? তিনি বলেন, না, তবে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন, আর আমরা ভীরুতা ও নমনীয়তা প্রকাশ করছি। বর্ণনাকারী বলেন, ইবনি উমারের উক্তিতে আবু হুরাইরা (রাঃআঃ) বলিলেন, তারা ভুলে গেলে এবং আমি স্মরণে রাখলে আমার দোষ কোথায়?
১২৬১, সহিহ হাদিস
আবুদ দাউদ ১২৬৪. মুসলিম ইবনি আবু বাকরাহ (রাঃআঃ) হইতে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) এর সাথে ফাজ্রের নামাজের জন্য বের হতাম। তিনি কারোর নিকট দিয়ে যাবার সময় তাকে নামাজের জন্য আহ্বান করতেন অথবা তাহাঁর পা দিয়ে তাকে নাড়া দিতেন। {১২৬৭}
{১২৬৭} সুনান বায়হাকী (৩/৪৬) আবুল ফাযল হইতে। এর সানাদ দুর্বল। সানাদে আবুল ফাযল আনসারী সম্পর্কে হাফিযআত-তাক্বরীর গ্রন্থে বলেনঃ মাজহুল (অজ্ঞাত)। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ–২৯৪ ফাজরের সুন্নাত আদায়ের পূর্বে ঈমামকে জামাআতে পেলে
আবুদ দাউদ ১২৬৫. আবদুল্লা ইবনি সারজিস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা নাবী (সাঃআঃ) ফাজ্রের নামাজ আদায় করছিলেন এমন সময় এক ব্যক্তি আগমন করলো। সে প্রথমে দু রাকআত সুন্নাত আদায় করার পর নাবী (সাঃআঃ) এর সাথে নামাজে শরীক হলো। নামাজ শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হে অমুক! তোমার একাকী আদায়কৃত ঐ দু রাকআত নামাজ কিসের অথবা তুমি আমাদের সাথে যা আদায় করেছো?
সহীহঃ মুসলিম. নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
আবুদ দাউদ ১২৬৬. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ নামাজের ইক্বামাত দেয়া হলে উক্ত ফরয নামাজ ছাড়া অন্য কোন নামাজ আদায় করা যাবে না।
সহীহঃ মুসলিম। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২৯৫ ফাজরের সুন্নাত ছুটে গেলে তা কখন আদায় করিবে?
আবুদ দাউদ ১২৬৭. ক্বায়িস ইবনি আমর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফাজরের নামাজের পর এক ব্যাক্তিকে দু রাকআত আদায় করতে দেখে বলেনঃ ফজরের নামাজ তো দু রাকআত। সে বলিল, আমি তো ফজরের পূর্বে যে দু রাকাআত আদায় করিনি, সেটাই এখন আদায় করে নিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) নীরব থাকলেন।
নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
আবুদ দাউদ ১২৬৮. সুফয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনিআত্বা ইবনি আবু রাবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ হাদিস সাদ ইবনি সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সাদ এর দুই পুত্রআবদ রাব্বিহী ও ইয়াহইয়া এ হাদিস মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহাঁদের দাদা যায়িদ (রাঃআঃ) নাবী (সাঃআঃ) এর সাথে নামাজ আদায় করিয়াছেন এবং ঘটনাটি তার সাথে সংশ্লিষ্ট।
সহীহঃ পূর্বেরটির কারনে। এবং তার উক্তিঃ (তাহাঁদের দাদা যায়িদ) কথাটি ভুল। সঠিক হচ্ছেঃ (তাহাঁদের দাদা ক্বায়িস)। (১২৫৪-১২৬৮ নং) হাদিসসমূহ হইতে শিক্ষাঃ ১। সুন্নাত সমূহের মধ্যে ফাজরের দু রাকআত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২। ফজরের সুন্নাত সংক্ষেপে কিন্তু সুন্দরভাবে আদায় করতে হয়। ৩। এতে সূরাহ কাফিরুন ও ইখলাস পড়া সুন্নাত। ৪। ফাজরের ফারয্ নামাজের পূর্বে সুন্নাত পড়তে না পারলে ফারযের পরে আদায় করিবে। ৫। ফাজরের সুন্নাত বাড়িতে আদায় করা সুন্নাত। ৬। ফাজরের সুন্নাত আদায়ের পর কাত হয়ে বিশ্রাম নেয়া সুন্নাত।৭। ফাজরের সুন্নাত আদায়ের পর কারো সাথে কথা বলা জায়িজ আছে। ৮। কেউ মাসজিদে এসে ঈমামকে ফাজরের জামাআতে পেলে তখন সুন্নাত পড়বে না বরং জামাআতে শরীক হইবে। ছুটে যাওয়া সুন্নাত জামাআতের পরে আদায় করিবে। ৯। ফাজরের আজান শেষে নামাজের জন্য কাউকে জাগিয়ে দেয়া এবং কারো সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় নামাজের জন্য আহবান করা জায়িজ। ১০। ফাজরের নামাজ আদায়ের জন্য মাসজিদে আসার পূর্বে স্বীয় পরিবারকেও জাগিয়ে দিবে। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহ কঃ সহিহ হাদিস
যুহরের পূর্বে দুই/চার রাকআত সুন্নাত এবং পরে দুই/চার রাকআত সুন্নাত নামাজ
সহীহ বুখারী ১১৮০. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) হইতে আমি দশ রাকআত সালাত আমার স্মৃতিতে সংরক্ষণ করে রেখেছি। যুহরের পূর্বে দুরাকআত পরে দুরাকআত, মাগরিবের পরে দুরাকআত তাহাঁর ঘরে, ইশার পরে দুরাকআত তাহাঁর ঘরে এবং দুরাকআত সকালের (ফজ্রের) সালাতের পূর্বে। [ইবনু উমর (রাদি.) বলেন] আর সময়টি ছিল এমন, যখন নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট (সচরাচর) কোন লোককে প্রবেশ করিতে দেয়া হত না।
সহীহ বুখারী ১১৮১. উম্মুল মুমিনীন হাফ্সা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যখন মুআয্যিন আযান দিতেন এবং ফজর উদিত হত তখন নাবী (সাঃআঃ) দুরাকআত সালাত আদায় করিতেন।
সহীহ বুখারী ১১৮২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যুহরের পূর্বে চার রাকআত এবং (ফজ্রের পূর্বে) দুরাকআত সালাত ছাড়তেন না। ইবনু আবু আদী ও আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীস বর্ণনায় ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।
আবুদ দাউদ ১২৬৯. আনবাসাহ ইবনি আবু সুফয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এর স্ত্রী উম্মু হাবিবাহ (রাঃআঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে যুহরের পূর্বে চার রাকআত এবং পরে চার রাকআত নামাজ আদায় করিবে, তার জন্য জাহান্নাম হারাম করা হইবে।
নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
আবুদ দাউদ ১২৭০. আবু আইয়ূব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ যুহরের পূর্বে এক সালামে চার রাকআত নামাজ রহিয়াছে, এগুলোর জন্য আকাশের সকল দরজা খুলে দেয়া হয়।
নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
আসরের পূর্বে চার রাকআত সুন্নাত নামাজ
১২৭১.ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ এমন ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করেন, যে আসরের পূর্বে চার রাকআত নামাজ আদায় করে।
নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১২৭২.আলী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ)আসরের পূর্বে দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন।
হাসান, তবে (চার রাকআত) শব্দযোগে। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১২৭৩. ইবনি আব্বাস (রাঃআঃ) এর মুক্তদাস কুরাইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
একদা আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস ,আব্দুর রহমান ইবনি আযহার ও আল-মিসওয়ার ইবনি মাখরামাহ (রাঃআঃ) সকলেই তাকে নাবী (সাঃআঃ) এর স্ত্রীআয়েশা (রাঃআঃ) এর কাছে প্রেরণ করেন। (তারা তাকে বলিলেন), আমাদের পক্ষ হইতে আয়েশাকে সালাম জানাবে, তাঁকে আসরের পরে দু রাকআত নামাজ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করিবে এবং বলবে যে, আমাদের জানতে পেরেছি, আপনি ঐ দু রাকআত নামাজ আদায় করে থাকেন। অথচ আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তা পড়তে নিষেধ করিয়াছেন। (বর্ণনাকারী কুরাইব বলেন), অতঃপর আমি তাহাঁর কাছে যাই এবং তারা আমাকে যে সংবাদসহ পাঠিয়েছেন, তা পৌঁছাই। তিনি বলিলেন, এ বিষয়ে উম্মু সালামাহ (রাঃআঃ) কে জিজ্ঞেস করো। সুতরাং আমি তাহাঁদের নিকট ফিরে এসে তার বক্তব্য তাহাঁদেরকে জানাই। তারা আমাকে পুনরায় উম্মু সালামহ (রাঃআঃ) এর নিকট আয়েশার অনুরুপ সংবাদসহ পাঠালেন। উমু সালামাহ (রাঃআঃ) বলিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ দু রাকআতকে যে নিষেধ করিয়াছেন, তা আমিও শুনিয়াছি। কিন্তু পরবর্তীতে আমি তাকে এ দু রাকআত আদায় করতে দেখেছি। তবে তিনি এ দু রাকআত আদায় করিয়াছেন আসরের (ফারয) নামাজের পরে। অতঃপর তিনি যখন আমার কাছে আসেন, তখন আনসারের বনি হারাম গোত্রীয় কতিপয় মহিলা আমার কাছে উপস্থিত ছিল। তিনি সে সময় তা আদায় করিয়াছেন। আমি আমার এক দাসীকে তাহাঁর কাছে এ বলে প্রেরণ করি যে, তুমি তাহাঁর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! উম্মু সালামাহ (রাঃআঃ) এ দু রাকআত নামাজ সম্পর্কে আপনাকে নিষেধ করতে শুনেছেন। অথচ এখন তিনি দেখেছেন যে, আপনি তা নিজেই আদায় করিয়াছেন। এ সময় তিনি হাত দিয়ে ইশারা করলে তাহাঁর থেকে সরে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, দাসী তাই করলো। তিনি তাকে হাত দ্বারা ইঙ্গিত করায় সে সরে দাঁড়ালো। অতঃপর তিনি নামাজ শেষে বললেনঃ হে আবু উমাইয়্যার কন্যা! তুমি আমাকে আসরের পরে দু রাকআত নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছো। ইসলাম গ্রহনের উদ্দেশে আবদুল ক্বায়িস গোত্রীয় কতিপয় লোক আমার নিকট আসার কারনে আমি যুহরের দু রাকআত আদায় করতে পারিনি। এটা সেই দু রাকআত।
সহীহঃ মুসলিম ও বোখারি। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৭৪. আলী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) আসরের পর নামাজ আদায় করতে নিষেধ করিয়াছেন। অবশ্য সূর্য উঁচুতে থাকাবস্থায় আদায় করা যায়।
নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৭৫. আলী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফায্র ও আসর ব্যতীত প্রত্যেক ফরয নামাজের পরে দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন। {১২৭৮}
{১২৭৮} আহমাদ (হাঃ ১০১২) শায়খ আহমাদ শাকির বলেনঃ এর সানাদ সহিহ। ইবনি খুযাইমাহ (হাঃ ১১৯৬) সূফয়ান হইতে। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১২৭৬. ইবনি আব্বাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কতিপয় আল্লাহর প্রিয় লোক আমার কাছে সাক্ষ্য দেন,উমার ইবনিল খাত্তাব (রাঃআঃ) ছিলেন তাহাঁদের একজন। মুলতঃ আমার নিকট উমার (রাঃআঃ) ছিলেন তাহাঁদের মধ্যেকার অধিক আল্লাহর প্রিয়। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন ফায্রের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই এবংআসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই।
সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৭৯. আল-আসওয়াদ ও মাসরূক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
তারা উভয়ে বলেন, আমরা আয়েশা (রাঃআঃ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) যে দিনই আমার কাছে আসতেন, তখন তিনি আসরের পর দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন।
সহিহঃ বোখারি ও মুসলিম। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৮০. আয়িশা (রাঃআঃ) এর মুক্তদাস যাকওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাকে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নিজে আসরের পরে নামাজ আদায় করতেন, তবে লোকদেরকে নিষেধ করতেন এবং তিনি বিরতিহীনভাবে (বহুদিন) সওম পালন করতেন, কিন্ত অন্যদেরকে বিরতিহীনভাবে সওম পালনে নিষেধ করতেন। {১২৮৩}
{১২৮৩} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। সানাদে মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাক্ব একজন মুদাল্লিস এবং তিনি এটি আন্ আন শব্দে বর্ণনা করিয়াছেন। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
মাগরিবের পূর্বে দুই রাকআত নফল এবং পরে দুই রাকআত সুন্নাত নামাজ
সহীহ বুখারী ১১৮৩. আবদুল্লাহ মুযানী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ তোমরা মাগরিবের (ফরজের) পূর্বে (নফল) সালাত আদায় করিবে; লোকেরা এ আমলকে সুন্নাত হিসেবে গ্রহণ করিতে পারে, এটার কারণে তৃতীয়বারে তিনি বললেনঃ এ তার জন্য যে ইচ্ছে করে।
১২৮১
সহীহ বুখারী ১১৮৪. মার্সাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইয়াযানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি উক্বাহ ইবনু জুহানী (রাদি.)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে বললাম, আবু তামীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সম্পর্কে এ কথা বলে কি আমি আপনাকে বিস্মিত করে দিব না যে, তিনি মাগরিবের (ফরজ) সালাতের পূর্বে দু রাকআত (নফল) সালাত আদায় করে থাকেন। উক্বাহ (রাদি.) বলিলেন, (এতে বিস্ময়ের কী আছে?) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সময়ে তো আমরা তা আদায় করতাম। আমি প্রশ্ন করলাম, তা হলে এখন কিসে আপনাকে বাধা দিচ্ছে? তিনি বলিলেন, কর্মব্যাস্ততা।
১২৮২. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর যুগে মাগরিবের পূর্বে দু রাকআত নামাজ আদায় করেছি। মুখতার ইবনি ফুলফুল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আনাস (রাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করি, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আপনাদের নামাজ আদায় করতে দেখেছেন কি? তিনি বলিলেন, হাঁ, তিনি আমাদেরকে দেখেছেন। তবে তিনি আমাদেরকে এ বিষয় কোন আদেশ বা নিষেধ করেননি।
সহিহঃ মুসলিম, অনুরূপ বোখারি। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৮৩. আব্দুল্লাহ ইবনি মুগাফফাল (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যবর্তী সময়ে নামাজ রহিয়াছে। প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যবর্তী সময়ে নামাজ রহিয়াছে, যার ইচ্ছে হয় পড়তে পারে।
সহিহ ঃ বোখারি ও মুসলিম। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৮৪. তাঊস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবনি উমার (রাঃআঃ)-কে মাগরিবের পূর্বে দু রাকআত নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর যুগে আমি কাউকে এ নামাজ আদায় করতে দেখিনি। তবে আসরের পরে দু রাকআত নামাজ আদায়ের অনুমতি আছে। {১২৮৭}
{১২৮৭} আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এটি এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। এর সানাদ দুর্বল। নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৩০৪ মাগরিবের দু রাকআত (সুন্নাত) কোথায় আদায় করিবে
১৩০০. সাদ ইবনি ইসহাক্ব ইবনি কাব ইবনিউজরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাহাঁর দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, একদা নাবী (সাঃআঃ) বনীআবদুল আশহালের মাসজিদে এসে সেখানে মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর দেখলেন, নামাজ শেষে লোকেরা সেখানেই (সুন্নাত) নামাজ আদায় করছেন। তখন তিনি বললেনঃ এটাতো ঘরের নামাজ। {১৩০৩}
{১৩০৩} অনুঃ বাড়িতে নামাজ আদায়ে উৎসাহ দান, হাঃ ১৫৯৯ । নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৩০১. ইবনি আব্বাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মাগরিবের ফরয নামাজের পর দু রাকআত (সুন্নাত) নামাজের ক্বিরাআত এতো দীর্ঘ করতেন যে, মাসজিদের লোকজন চলে যেতো। {১৩০৪}
{১৩০৪} বায়হাক্বীসুনানুল কুবরা (২/১৯০), এবং তাবরীযীমিশকাত (১/৩৭১) । এর সানাদ দুর্বল । সানাদে সাঈদ ইবনি যুবাইর সূত্রে জাফার ইবনি আবু মুগীরাহ রহিয়াছে । ইবনি মুনদিহ বলেনঃ তিনি মজবুত নন । নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৩০২. সাঈদ ইবনি জুবাইর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) এর সূত্রে এ হাদিসের ভাবার্থ মুরসাল হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। {১৩০৫}
{১৩০৫} সুনান বায়হাকী (২/১৯০) আবু দাউদের সূত্রে । নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিসঅনুচ্ছেদ–৩০৫ ইশার ফার্য নামাজের পর নফল নামাজ
১৩০৩. শুরাইহ ইবনি হানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতেআয়েশা (রাঃআঃ) সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
তিনি (শুরাইহ) বলেন, আমি তাকে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নামাজ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)ইশার ফার্য নামাজ আদায়ের পর আমার ঘরে আসলে অবশ্যই চার কিংবা ছয় রাকআত নামাজ আদায় করতেন। একদা রাতে আমাদের এখানে বৃষ্টি হওয়ায় আমরা তাহাঁর জন্য চামড়া বিছিয়ে দেই। আমি যেন এখন চাক্ষুস দেখছি যে, খেজুর পাতার চালনির ছিদ্র দিয়ে পানি গড়ে পড়ছে। আমি তাঁকে কখনো কোন কাপড় দিয়ে মাটি হইতে রক্ষা করতে দেখিনি। {১৩০৩}
{১৩০৩} আহমাদ (৬/৫৮)। এর সানাদ দুর্বল । সানাদে বাশীর আল-ইজলী রহিয়াছে । ঈমাম যাহাবী বলেনঃ তাকে চেনা যায়নি ।, নফল নামাজ ও সুন্নাত নামাজ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৯/২৫. অধ্যায়ঃ নফল সালাত দুদুরাকআত করে আদায় করা।
সহীহ বুখারী ১১৬২. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের সব কাজে ইস্তিখারাহ [১] শিক্ষা দিতেন। যেমন পবিত্র কুরআনের সুরা সমূহ আমাদের শিখাতেন। তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করলে সে যেন ফরজ নয় এমন দুরাকআত সালাত আদায় করার পর এ দুআ পড়ে :
প্রভু হে ! আমি তোমার জ্ঞানের ওয়াসিলাহ্তে তোমার অনুমতি কামনা করছি; তোমার কুদরতের ওয়াসিলায় শক্তি চাচ্ছি আর তোমার অপার করুণা ভিক্ষা করছি। কারণ তুমিই সর্বশক্তিমান আর আমি দুর্বল। তুমিই জ্ঞানী আর আমি অজ্ঞ এবং তুমিই সর্বজ্ঞ। প্রভু হে ! তুমি যদি মনে কর যে, এই জিনিসটি আমার দ্বীন ও দুনিয়ায়, ইহকালে ও পরকালে সত্বর কিংবা বিলম্বে আমার পক্ষে মঙ্গলজনক হইবে তা হলে আমার জন্য তা নির্ধারিত করে দাও এবং তার প্রাপ্তি আমার জন্য সহজতর করে দাও। অতঃপর তুমি তাতে বরকত দাও। আর যদি তুমি মনে কর এই জিনিসটি আমার দ্বীন ও দুনিয়ায় ইহকালে ও পরকালে আমার জন্য ক্ষতিকর হইবে শীঘ্র কিংবা বিলম্বে তাহলে তুমি তাকে আমা হইতে দূর করে দাও এবং আমাকে তা হইতে দূরে রাখো ; অতঃপর তুমি আমার জন্য যা মঙ্গলজনক তা ব্যবস্হা কর সেটা যেখান থেকেই হোক না কেন এবং আমাকে তার প্রতি সন্তুষ্টচিত্ত করে তোল”।
তিনি ইরশাদ করেন তার প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করিবে।
(৬৩৮২, ৭৩৯০) (আ.প্র. ১০৮৮, ই.ফা. ১০৯৩). [১] সালাত ও দুআর মাধ্যমে উদ্দিষ্ট বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া।
তাহিয়্যাতুল মসজিদ এর নামাজ
সহীহ বুখারী ১১৬৩. আবু কাতাদা ইবনু রিবআ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুরাকআত সালাত (তাহিয়্যাতুল–মসজিদ ) আদায় করার পূর্বে বসবে না।
(৪৪৪). (আ.প্র. ১০৮৯, ই.ফা. ১০৯৪)
সহীহ বুখারী ১১৬৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের নিয়ে দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন, তারপর চলে গেলেন।
(৩৮০). (আ.প্র. ১০৯০, ই.ফা. ১০৯৫)
সহীহ বুখারী ১১৬৫. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সঙ্গে যুহরের পূর্বে দুরাকআত, যুহ্রের পরে দুরাকআত, জুমুআর পরে দুরাকআত, মাগরিবের পরে দুরাকআত এবং ইশার পরে দুরাকআত (সুন্নাত) সালাত আদায় করেছি। (৯৩৭)
(আ.প্র. ১০৯১, ই.ফা. ১০৯৬ )
সহীহ বুখারী ১১৬৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর খুতবা প্রদানকালে ইরশাদ করিলেন : তোমরা কেউ এমন সময় মসজিদে উপস্হিত হলে, যখন ইমাম (জুমুআর) খুতবা দিচ্ছেন, কিংবা মিম্বরে আরোহণের জন্য (হুজরাহ হইতে) বেরিয়ে পড়েছেন, তাহলে সে তখন যেন দুরাকআত সালাত আদায় করে নেয়।
(আ.প্র. ১০৯২, ই.ফা. ১০৯৭)
সহীহ বুখারী ১১৬৭. মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনু উমর (রাদি.)-এর বাড়িতে এসে তাঁকে খবর দিল, এইমাত্র আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কাবা শরীফে প্রবেশ করিলেন। ইবনু উমর (রাদি.) বলেন, আমি অগ্রসর হলাম। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কাবা ঘর হইতে বের হয়ে পড়েছেন। বিলাল (রাদি.) দরজার নিকট দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বললাম, হে বিলাল! রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কাবার ভিতরে সালাত আদায় করিয়াছেন কি? তিনি বলিলেন, হাঁ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন স্থানে? তিনি বলিলেন, দুস্তম্ভের মাঝখানে। [১] তারপর তিনি বেরিয়ে এসে কাবার সামনে দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন।(৩৯৭)
ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে দু রাকআত সলাতুয্ যুহা (চাশ্ত-এর সালাত)-এর আদেশ করিয়াছেন। ইতবান (ইবনু মালিক আনসারী ) (রাদি.) বলেন, একদা অনেকটা বেলা হলে নাবী (সাঃআঃ) আবু বকর এবং উমর (রাদি.) আমার এখানে আসলেন। আমরা তাহাঁর পিছনে কাতারে দাঁড়ালাম আর তিনি (আমাদের নিয়ে ) দুরাকআত সালাত (চাশ্ত) আদায় করিলেন।
(আ.প্র. ১০৯৩, ই.ফা. ১০৯৮). [১] কাবার অভ্যন্তরের সারিতে ছয়টি স্তম্ভ রয়েছে। সামনের সারিতে দুটি স্তম্ভ ডানে এবং একটি স্তম্ভ বামে রেখে দাঁড়ালে তা দরজা বরাবরে সামনের দুস্তম্ভের মাঝখানে হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দরজা বরাবর অগ্রসর হয়ে দেয়ালের কাছে সালাত আদায় করেছিলেন।
ফজরের (সুন্নাত) দুরাকআতের পর কথাবার্তা বলা।
সহীহ বুখারী ১১৬৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) (ফজরের) দুরাকআত (সুন্নাত) সালাত আদায় করিতেন। অতঃপর আমি জেগে থাকলে আমার সাথে কথাবার্তা বলিতেন, নইলে (ডান) কাতে শয়ন করিতেন। (বর্ণনাকারী আলী বলেন), আমি সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কেউ কেউ এ হাদীসে (দুরাকআত স্থলে) ফজরের দু রাকআত রিওয়ায়াত করে থাকেন। (এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?) সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, এটা তা-ই। (১১১৮)
(আ.প্র.১০৯৪, ই.ফা.১০৯৯)
ফজরের (সুন্নাত) দুরাকআতের হিফাযত করা আর যারা এ দুরাকআতকে নফল বলেছেন।
সহীহ বুখারী ১১৬৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) কোন নফল সালাতকে ফজরের দুরাকআত সুন্নাতের চেয়ে অধিক গুরুত্ব প্রদান করিতেন না।
(মুসলিম ৬/১৪, হাদীস ৭২৪). (আ.প্র.১০৯৫, ই.ফা.১১০০)
ফজরের (সুন্নাত) দুরাকআতে কতটুকু কিরআত পড়া প্রয়োজন।
সহীহ বুখারী ১১৭০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রাতে তের রাকআত সালাত আদায় করিতেন, অতঃপর সকালে আযান শোনার পর সংক্ষিপ্তভাবে দুরাকআত সালাত আদায় করিতেন।
(আ.প্র.১০৯৬, ই.ফা.১১০১)
সহীহ বুখারী ১১৭১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ফজরের সালাতের পূর্বের দুরাকআত (সুন্নাত) এত সংক্ষিপ্ত করিতেন এমনকি আমি (মনে মনে) বলতাম, তিনি কি (শুধু) উম্মুল কিতাব (সুরা ফাতিহা) তিলাওয়াত করিলেন?
(আ.প্র. ১০৯৭, ই.ফা. ১১০২)
ফরজ সালাতের পর নফল সালাত।
সহীহ বুখারী ১১৭২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে যুহরের পূর্বে দুরাকআত, যুহরের পর দুরাকআত, মাগরিবের পর দুরাকআত, ইশার পর দুরাকআত এবং জুমুআর পর দুরাকআত সালাত আদায় করেছি। তবে মাগরিব ও ইশার পরের সালাত তিনি তাহাঁর ঘরে আদায় করিতেন।
(আ.প্র. ১০৯৭, ই.ফা. ১১০৩)
সহীহ বুখারী ১১৭৩. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমার বোন (উম্মুল মুমিনীন) হাফসা (রাদি.) আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) ফজর হবার পর সংক্ষিপ্ত দুরাকআত সালাত আদায় করিতেন। (ইবনু উমর (রাদি.) বলেন,) এটি ছিল এমন একটি সময়, যখন আমরা কেউ নাবী (সাঃআঃ)-এর খিদমতে হাযির হতাম না। ইবনু আবু যিনাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, মূসা ইব্নু উক্বাহ (রাদি.) নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে ইশার পরে তাহাঁর পরিজনের মধ্যে কথাটি বর্ণনা করিয়াছেন।
(৬১৮; মুসলিম ৬/১৫, হাদীস ৭২৯) (আ.প্র. ১০৯৭ শেষাংশ, ই.ফা. ১১০৩ শেষাংশ)
ফর্জের পর নফল সালাত না আদায় করা।
সহীহ বুখারী ১১৭৪. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে আট রাকআত একত্রে (যুহর ও আসরের) এবং সাত রাকআত একত্রে (মাগরিব-ইশার) সালাত আদায় করেছি। সে ক্ষেত্রে সুন্নাত আদায় করা হয়নি। আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি বললাম, হে আবুশ্ শাসা ! আমার ধারণা, তিনি যুহর শেষ ওয়াক্তে এবং আসর প্রথম ওয়াক্তে আর ইশা প্রথম ওয়াক্তে ও মাগরিব শেষ ওয়াক্তে আদায় করেছিলেন। তিনি বলেছেন, আমিও তাই মনে করি।
সফরে যুহা সালাত আদায় করা।
সহীহ বুখারী ১১৭৫. মুওয়ার্রিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাদি.)-কে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি যুহা সালাত আদায় করে থাকেন? তিনি বলিলেন, না। আমি প্রশ্ন করলাম, আবু উমর (রাদি.) তা আদায় করিতেন কি? তিনি বলিলেন, না। আমি প্রশ্ন করলাম, আবু বকর (রাদি.)? তিনি বলিলেন, না। আমি প্রশ্ন করলাম, নাবী (সাঃআঃ)? তিনি বলিলেন, আমি তা মনে করি না।
সহীহ বুখারী ১১৭৬. আবদুর রহমান ইবনু আবু লায়লা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উম্মু হানী (রাদি.) ব্যতীত অন্য কেউ নাবী (সাঃআঃ)-কে চাশ্তের সালাত আদায় করিতে দেখেছেন, এমন আমাদের নিকট কেউ বর্ণনা করেননি। তিনি উম্মু হানী (রাদি.) অবশ্য বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) মক্কা বিজয়ের দিন (পূর্বাহ্নে) তাহাঁর ঘরে গিয়ে গোসল করিয়াছেন। (তিনি বলেছেন) যে, আমি আর কখনো (তাহাঁর) অনুরূপ সংক্ষিপ্ত সালাত দেখিনি। তবে কিরআত ছাড়া তিনি রুকু ও সিজদা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করেছিলেন।
যারা যুহা সালাত আদায় করেন না, তবে বিষয়টিকে প্রশস্ত মনে করেন (কারো ইচ্ছাধীন মনে করেন)।
সহীহ বুখারী ১১৭৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে যুহা-এর সালাত আদায় করিতে আমি দেখিনি। তবে আমি তা আদায় করে থাকি।
১৯/৩৩. অধ্যায়: মুকিম অবস্থায় যুহা সালাত আদায় করা।
ইতবান ইবন্ মালিক (রাদি.) বিষয়টি নাবী কারীম (সাঃআঃ) থেকে উল্লেখ করিয়াছেন।
সহীহ বুখারী ১১৭৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার খলীল ও বন্ধু [নাবী (সাঃআঃ)] আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যাত (বিশেষ আদেশ) করিয়াছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করব না। (তা হলঃ)
১. প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম পালন করা।
২. সালাতুয-যোহা (চাশত এর সালাত আদায় করা)।
৩. বিতর (সালাত) আদায় করে শয়ন করা।
সহীহ বুখারী ১১৭৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জনৈক স্থুল দেহ বিশিষ্ট আনসারী নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট আরয্ করিলেন, আমি আপনার সঙ্গে (জামাআতে) সালাত আদায় করিতে পারি না। তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর উদ্দেশে খাবার তৈরি করে তাঁকে দাওয়াত করে নিজ বাড়িতে নিয়ে এলেন এবং একটি চাটাই এর এক অংশে (কোমল ও পরিচ্ছন্ন করার উদ্দেশে) পানি ছিটিয়ে (তা বিছিয়ে) দিলেন। তখন তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] সে চাটাইয়ের উপরে দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন। ইবনু জারূদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করিলেন নাবী (সাঃআঃ) কি চাশ্ত-এর সালাত আদায় করিতেন? আনাস (রাদি.) বলিলেন, সেদিন বাদে অন্য সময়ে তাঁকে এ সালাত আদায় করিতে দেখিনি।
১৯/৩৬. অধ্যায় : নফল সালাত জামাআতের সাথে আদায় করা।
এ বিষয়ে আনাস ও আয়েশা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।
সহীহ বুখারী ১১৮৫. ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মাহমূদ ইবনু রাবী আনসারী (রাদি.) আমাকে জনিয়েছেন যে, (শিশুকালে তাহাঁর দেখা) নাবী (সাঃআঃ)-এর কথা তাহাঁর ভাল স্মরণ আছে এবং নাবী (সাঃআঃ) তাঁদের বাড়ির কুপ হইতে (পানি মুখে নিয়ে বরকতের জন্য) তার মুখমন্ডলে যে ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন সে কথাও তার ভাল মনে আছে।
সহীহ বুখারী ১১৮৬. মাহমূদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
ইতবান ইবনু মালিক আনসারী (রাদি.)-কে (যিনি ছিলেন বদর জিহাদে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে উপস্থিত বদরী সাহাবীগণের অন্যতম) বলিতে শুনেছেন যে, আমি আমার কাওম বনূ সালিমের সালাতে ইমামাত করতাম। আমার ও তাদের (কাওমের মসজিদের) মধ্যে ছিল একটি উপত্যকা। বৃষ্টি হলে উপত্যকা আমার মসজিদ গমনে বাধা সৃষ্টি করতো এবং এ উপত্যকা অতিক্রম করে তাদের মসজিদে যাওয়া আমার জন্য কষ্টকর হতো। তাই আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করলাম, (হে আল্লাহর রাসুল!) আমি আমার দৃষ্টিশক্তির কমতি অনুভব করছি (উপরন্তু) আমার ও আমার গোত্রের মধ্যকার উপত্যকাটি বৃষ্টি হলে প্লাবিত হয়ে যায়। তখন তা পার হওয়া আমার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই আমার একান্ত আশা যে আপনি শুভাগমন করে আমার ঘরের কোন স্থানে সালাত আদায় করবেন; আমি সে স্থানটিকে সালাতের স্থানরূপে নির্ধারিত করে নিব। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করেন, শীঘ্রই তা করবো। পরের দিন সূর্যের উত্তাপ যখন বেড়ে গেল, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এবং আবু বকর (রাদি.) আসলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (প্রবেশের) অনুমতি চাইলে আমি তাঁকে স্বাগত জানালাম, তিনি উপবেশন না করেই আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার ঘরের কোন জায়গায় আমার সালাত আদায় করা তুমি পছন্দ কর? যে স্থানে সালাত আদায় করা আমার মনঃপূত ছিল, তাঁকে আমি সে স্থানের দিকে ইঙ্গিত করে দিলাম আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দাঁড়িয়ে তাক্বীর বলিলেন, আমরা সারিবদ্ধভাবে তাহাঁর পিছনে দাঁড়ালাম। তিনি দুরাকআত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। তাহাঁর সালাম ফেরানোর সময় আমরাও সালাম ফিরালাম। অতঃপর তাহাঁর উদ্দেশে যে খাযীরা প্রস্তুত করা হচ্ছিল তা আহারের জন্য তাহাঁর প্রত্যাগমনে আমি বিলম্ব ঘটালাম। ইতিমধ্যে মহল্লার লোকেরা আমার বাড়িতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর অবস্থানের সংবাদ শুনতে পেয়ে তাঁদের কিছু লোক এসে গেলেন। এমন কি আমার ঘরে অনেক লোকের সমাগম ঘটলো। তাঁদের একজন বলিলেন, মালিক (ইবনু দুখায়শিন) করিল কী? তাকে দেখছি না যে? তাঁদের একজন জবাব দিলেন, সে মুনাফিক! আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলকে ভালবাসে না। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করিলেন : এমন কথা বলবে না। তুমি কি লক্ষ্য করছ না যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহু উচ্চারণ করেছে। সে ব্যক্তি বলিল, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলই অধিক অবগত। তবে আল্লাহর কসম! আমরা মুনাফিকদের সাথেই তার ভালবাসা ও আলাপ-আলোচনা দেখিতে পাই। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করিলেন : আল্লাহ তাআলা সে ব্যক্তিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহু উচ্চারণ করে। মাহমূদ (রাদি.) বলেন, এক যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একদল লোকের নিকট বর্ণনা করলাম তাঁদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সাহাবী আবু আইয়ুব (আনসারী) (রাদি.) ছিলেন। তিনি সে যুদ্ধে ওফাত পেয়েছিলেন। আর ইয়াযীদ ইবনু মুআবিয়া (রাদি.) রোমানদের দেশে তাদের আমীর ছিলেন। আবু আইয়ুব (রাদি.) আমার বর্ণিত হাদীসটি অস্বীকার করে বলিলেন, আল্লাহর কসম! তুমি যে কথা বলেছ তা যে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করিয়াছেন, তা আমি বিশ্বাস করিতে পারি না। ফলে তা আমার নিকট ভারী মনে হল। তখন আমি আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করলাম যে, যদি এ যুদ্ধ হইতে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত তিনি আমাকে নিরাপদ রাখেন, তাহলে আমি ইতবান ইবনু মালিক (রাদি.)-কে তাহাঁর কাউমের মসজিদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করবো, যদি তাঁকে জীবিত অবস্থায় পেয়ে যাই। অতঃপর আমি ফিরে চললাম এবং হজ্জ কিংবা উমরার নিয়্যাতে ইহরাম করলাম। অতঃপর সফর করিতে করিতে আমি মাদীনায় উপনীত হয়ে বনূ সালিম গোত্রে উপস্থিত হলাম। দেখিতে পেলাম ইতবান (রাদি.) যিনি তখন একজন বৃদ্ধ ও অন্ধ ব্যক্তি কাউমের সালাতে ইমামাত করছেন। তিনি সালাত সমাপ্ত করলে আমি তাঁকে সালাম দিলাম এবং আমার পরিচয় দিয়ে উক্ত হাদীস সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি প্রথমবারের মতই হাদীসটি আমাকে শুনালেন।
নফল সালাত ঘরের মধ্যে আদায় করা।
সহীহ বুখারী ১১৮৭. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা তোমাদের কিছু কিছু সালাত তোমাদের ঘরে আদায় করিবে, তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানাবে না। আবদুল ওহহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আইউব (রাদি.) হইতে হাদীস বর্ণনায় ওয়াহব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।
Leave a Reply