মেহমানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করার ফযিলত

মেহমানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করার ফযিলত

মেহমানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করার ফযিলত >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৩২. অধ্যায়ঃ মেহমানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করার ফযিলত

৫২৫৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিল, আমি চরম অনাহারে ভুগছি। তিনি তাহাঁর কোন এক সহধর্মিণীর নিকট লোক প্রেরণ করলে তিনি বলিলেন, যে স্রষ্টা আপনাকে সঠিক দীনসহ পাঠিয়েছেন তাহাঁর কসম! আমার নিকট পানি ব্যতীত আর কিছু নেই। তিনি অপর এক স্ত্রীর নিকট লোক প্রেরণ করলে তিনিও অনুরূপ কথা বলিলেন। এভাবে তাঁরা সবাই একই কথা বলিলেন যে, সে সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য দীনসহ প্রেরণ করিয়াছেন, আমার কাছে পানি ব্যতীত আর কিছু নেই। তখন তিনি বলিলেন, আজ রাত্রে লোকটির কে অতিথিপরায়ণ হইবে? আল্লাহ তার উপর দয়া করুন! তখন এক আন্সারী লোক উঠে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি। অতঃপর লোকটিকে নিয়ে আন্সারী নিজ বাড়িতে গেলেন এবং তাহাঁর সহধর্মিণীকে বলিলেন, তোমার নিকট কিছু আছে কি? সে বলিল না। তবে সন্তানদের জন্য অল্প কিছু খাবার আছে। তিনি বলিলেন, তুমি তাদের কিছু একটা দিয়ে ব্যস্ত রাখো। আর যখন অতিথি ঘরে ঢুকবে, তখন তুমি আলোটা নিভিয়ে দেবে। আর তাকে বুঝাবে যে, আমরাও খাবার খাচ্ছি। সে [মেহমান] যখন খাওয়া আরম্ভ করিবে তখন তুমি আলোর পাশে যেয়ে সেটা নিভিয়ে দেবে। রাবী বলেন, অতঃপর তারা বসে থাকলেন এবং অতিথি খেতে শুরু করলো। সকালে তিনি [আনসারী] নবী [সাঃআঃ] এর কাছে আসলে, তিনি বললেনঃআজ রাত্রে অতিথির সঙ্গে তোমাদের উভয়ের ব্যবহারে আল্লাহ খুশী হয়েছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ৫১৯৮]

৫২৫৫. আবু হুরাইরাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

এক আনসারী লোকের বাড়িতে এক অতিথি রাত কাটালেন। তাহাঁর কাছে তাহাঁর ও সন্তানদের জন্য অল্প কিছু খাদ্য ব্যতীত আর কিছু ছিল না। তিনি তার স্ত্রীকে বলিলেন, বাচ্চাদের ঘুমিয়ে দাও, আলোটা বন্ধ করে দাও এবং তোমার নিকট যা কিছু আছে তাই অতিথির জন্য পেশ করো। রাবী বলেন, এরপর এ আয়াতটি নাযিল হয় : “তারা তাদের উপর অপরকে প্রাধান্য দেয়, যদিও তারা অনাহারে থাকে”- [সূরা আল হাশ্র ৫৯ : ৯]

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮৭, ইসলামিক সেন্টার- ৫১৯৯]

৫২৫৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মেহমান হয়ে এক লোক তাহাঁর নিকট এলেন। কিন্তু তাহাঁর কাছে এমন কিছু ছিল না যা দিয়ে তিনি সে ব্যক্তির আপ্যায়ন করবেন। তখন তিনি বলিলেন, এর মেহমানদারী করার মতো কেউ কি আছে? আল্লাহ তার উপর দয়া করুক! এ সময় আবু তাল্হাহ্ নামক এক আনসারী লোক দাঁড়ালেন এবং লোকটিকে আপন গৃহে নিয়ে গেলেন। অতঃপর রাবী শেষ পর্যন্ত হাদীসটি জারীর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন। আর তিনি ওয়াকী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর মতো আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কথাও বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮৮, ইসলামিক সেন্টার- ৫২০০]

৫২৫৭. মিক্‌দাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, প্রচুর খাদ্য সংকটে আমার ও আমার দুসাথীর দৃষ্টিশক্তি ও শ্রুতিশক্তি কমে যায়। অতঃপর আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবীদের নিকটে নিজেদের উত্থাপন করিতে লাগলাম। কিন্তু তাঁদের কেউ আমাদের কথা শুনলেন না। সবশেষে আমরা নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আগমন করলে তিনি আমাদের সাথে নিয়ে তার পরিবারের নিকটে গেলেন। সেখানে তিনটি বকরী ছিল। নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা দুধ দোহন করিবে। এ দুধ আমরা বণ্টন করে পান করবো। তিনি বলেন, এরপর থেকে আমরা দুধ দোহন করতাম। আমাদের সবাই যার যার অংশ পান করতো। আর আমরা নবী [সাঃআঃ] এর জন্য তাহাঁর অংশ উঠিয়ে রাখতাম। মিকদাদ [রাদি.] বলেন, তিনি রাত্রে এসে এমনভাবে সালাম দিতেন যাতে নিদ্রারত লোক উঠে না যায় এবং জাগ্রত লোক শুনতে পায়। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি মাসজিদে এসে নামাজ আদায় করিতেন। প্রত্যাবর্তন করে দুধ পান করিতেন। একদা রাতে আমার নিকটে শাইতান আগমন করলো। আমি তো আমার অংশ পান করে ফেলেছিলাম। সে বলিল, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আনসারীদের নিকটে গেলে তারা তাঁকে উপঢৌকন দিবে এবং তাদের নিকটে তাহাঁর এ অল্প দুধের প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়ে যাবে। অতঃপর আমি এসে সেটুকুও পান করে ফেললাম। দুধ যখন উত্তমভাবে আমার পেটে ঢুকে গেলে আমি বুঝলাম, এ দুধ বের করার আর কোন উপায় নেই তখন শইতান আমার থেকে দূরে সরে গিয়ে বলিল, তোমার ধ্বংস হোক, তুমি একি করলে! তুমি মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর দুধ পান করে ফেলেছ? তিনি জাগ্রত হয়ে যখন তা পাবেন না, তখন তোমার উপর বদ-দুআ করবেন এতে তুমি সর্বনাশ হয়ে যাবে এবং তোমার ইহকাল ও পরকাল নিঃশেষ হয়ে যাবে। আমার শরীরে একটা চাদর ছিল। আমি যদি তা আমার পাদ্বয়ের উপর রাখি তাহলে আমার মাথা বের হয়ে পড়ে, আর যদি আমি তা আমার মাথার উপর রাখি তাহলে আমার পদদ্বয় বেরিয়ে পড়ে। কিছুতেই আমার ঘুম আসছিল না। আমার সাথীদ্বয় তো নিদ্রাচ্ছন্ন ছিল। তারা তো আমার মতো কাজ করেনি। তিনি বলেন অতঃপর নবী [সাঃআঃ] আগমন করে যেভাবে সালাম করিতেন সেভাবেই সালাম করিলেন। অতঃপর তিনি মাসজিদে এসে নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর দুধের নিকটে এসে ঢাকনা খুলে সেখানে কিছুই পেলেন না। এরপর তিনি নিজ মাথা আকাশের দিকে তুললেন। আমি তখন [মনে মনে] বললাম, এখনই হয়তো আমার উপর তিনি বদ্দুআ করবেন, আর আমি নিঃশেষ হয়ে যাবো। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! যে লোক আমার খাবারের ব্যবস্থা করে তুমি তার খাদ্যের ব্যবস্থা কর। আর যে আমাকে পান করায় তাকে তুমি পান করাও। মিকদাদ [রাদি.] বলেন, তখন আমি চাদরটি নিয়ে গায়ে বাঁধলাম এবং একটি ছুরি নিলাম, অতঃপর [এ ভেবে] বকরীগুলোর কাছে গেলাম যে, এদের মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি মোটাতাজা আমি সেটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জন্য জবেহ করবো। সেখানে গিয়ে দেখলাম, সেটি দুধে পরিপূর্ণ এবং অন্যান্য সব বকরীও দুধে স্বয়ংস্পূর্ণ। অতঃপর আমি মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর পরিবারের একটি বাসন নিয়ে এলাম যার মধ্যে তাঁরা দুধ দোহাতেন না। তিনি {মিকদাদ [রাদি.]} বলেন, আমি তার মধ্যেই দুধ দোহন করলাম, এমনকি বাসনের উপরের অংশ ফেনা ফেসে উঠলো। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট আগমন করলাম। তিনি বলিলেন, তোমরা কি রাত্রের দুধ পান করেছো? তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি পান করুন। তিনি পান করে আমাকে দিলেন। আমি যখন বুঝতে পারলাম যে, নবী [সাঃআঃ] পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন এবং আমি তাহাঁর নেক দুআ পেয়ে গেছি, তখন আমি খুশীতে হাসতে হাসতে মাটিতে নুয়ে পড়লে নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ হে মিকদাদ! এটা তোমার এক মন্দকাজ? তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার এ ঘটনা ঘটে গেছে। কিংবা তিনি বলেছেন, আমার দ্বারা এরূপ কাজ হয়ে গেছে। তখন নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ এটা একমাত্র আল্লাহ্‌র মেহেরবানী! তুমি কেন আমাকে জানালে না? আমরা আমাদের সঙ্গীদ্বয়কে জাগাতাম, তাহলে তারাও এর অংশ পেত। তিনি বলেন, আমি তখন বললাম, যে মহান স্রষ্টা আপনাকে সত্য দীনসহ প্রেরণ করিয়াছেন তাহাঁর কসম! আপনি যখন পেয়েছেন এবং আমি যখন আপনার সঙ্গে ভাগ পেয়েছি, তখন ভিন্ন কোন ব্যক্তি পাওয়া না পাওয়ার আমি তোয়াক্কা করি না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮৯, ইসলামিক সেন্টার- ৫২০১]

৫২৫৮. সুলাইমান ইবনি মুগীরাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উল্লেখিত সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত রয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯০, ইসলামিক সেন্টার- ৫২০২]

৫২৫৯. আবদুর রহমান ইবনি আবু বকর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা একশ ত্রিশ জন ব্যক্তি [এক সফরে] নবী [সাঃআঃ]-এর সাথে ছিলাম। নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমাদের মাঝে কারো নিকট খাবার আছে কি? দেখা গেল, এক লোকের নিকটে এক সা বা সমপরিমাণ খাদ্য রয়েছে। তা [মিশিয়ে] খামীর করা হলো। অতঃপর এলামেলো চুলে দীর্ঘাঙ্গ এক মুশ্রিক লোক কিছু ছাগল হাঁকিয়ে নিয়ে আসলো। নবী[সাঃআঃ] বললেনঃ এগুলো বিক্রি করে দিবে না উপঢৌকন হিসেবে দিবে? কিংবা উপঢৌকন শব্দের স্থলে তিনি দান করিবে বলেছিলেন। লোকটি বলিল, না; আমি বরং বিক্রি করবো। নবী [সাঃআঃ] তার নিকট থেকে একটি বকরী ক্রয় করিলেন। বকরীটা জবেহ করা হলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার কলিজা ভূনা করিতে নির্দেশ দিলেন। বর্ণনাকারী আবদুর রহমান [রাদি.] বলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! একশ ত্রিশজনের মাঝে একজনও এমন ছিলনা যাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এক টুকরো কলিজা দেননি। যারা সমবেত ছিল তাদেরকে তো তখনই দিয়েছেন। আর যারা উপস্থিত ছিল না তাদের জন্য পৃথকভাবে তুলে রেখেছেন।

বর্ণনাকারী বলেন, গোশ্ত দুটি বাসনে বণ্টন করে রাখলেন। আমরা সবাই তৃপ্তি সহকারে খেলাম। তরপরও বাসন দুটিতে গোশত অতিরিক্ত থাকলো। আমি তা উটের উপর বহন করে নিয়ে গেলাম। কিংবা তিনি [রাবী] যেভাবে রিওয়ায়াত করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯১, ইসলামিক সেন্টার- ৫২০৩]

৫২৬০. আবদুর রহমান ইবনি আবু বকর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আসহাবে সুফ্ফার মানুষজন দরিদ্র ছিলেন। তাই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার বললেনঃ যার কাছে দুজনের খাদ্য আছে সে যেন তৃতীয় এক জনকে নিয়ে যায়। আর যার নিকটে চার জনের খাদ্য রয়েছে, সে যেন পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ ব্যক্তিকে নিয়ে যায়। কিংবা রাবী যেভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। রাবী বলেন, আবু বকর [রাদি.] তিনজনকে সাথে নিয়ে আগমন করিলেন। আর আল্লাহ্‌র নবী [সাঃআঃ] দশজনকে নিয়ে রওনা হলেন। আমার পরিবারে আমরা ছিলাম তিনজন আমি, আমার আব্বা ও আমার আম্মা। রাবী বলেন, আমি জানি না, তিনি বলেছেন কি-না যে, আমার সহধর্মিণী আমাদের ও আবু বকরের গৃহে শারীক খাদিম। বর্ণনাকারী বলেন, আবু বকর [রাদি.] নবী [সাঃআঃ]-এর বাড়িতে রাতের খাবার খেলেন। অতঃপর তিনি প্রতীক্ষা করিলেন। পরিশেষে ইশার নামাজ আদায় করা হলো। নামাজ শেষে ফিরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিদ্রাচ্ছন্ন হওয়া পর্যন্ত তিনি প্রতীক্ষা করিলেন। অতঃপর আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় রাত্রির কিছু অংশ পার হইতে তিনি [বাড়িতে] প্রত্যাবর্তন করিলেন। তাহাঁর স্ত্রী তাঁকে বলিলেন, অতিথি রেখে দেরী করিলেন কেন? তিনি বলিলেন, কেন? তুমি কি তাঁদের রাত্রের খাবার খাওয়াওনি? তাহাঁর সহধর্মিণী বলিলেন, আপনি না ফেরা পর্যন্ত তাঁরা খাবার খেতে নারাজ। কয়েক বারই খাবার দেয়া হয়েছে কিন্তু মেহমানরা তাঁদের কথা হইতে ফিরে আসেনি। আবদুর রহমান [রাদি.] বলেন, আমি যেয়ে পালিয়ে রইলাম। তিনি বলিলেন, হে নির্বোধ! অতঃপর তিনি আমাকে বকাঝকা করিলেন। আর [মেহমানদের] বলিলেন, ভাল হলো না। আপনারা খাবার গ্রহণ করুন। তিনি আরও বলিলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি এ খাবার গ্রহণ করবো না। আবদুর রহমান [রাদি.] বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমরা যে লোকমাই মুখে দিচ্ছিলাম তার নীচে এর থেকে বহু পরিমাণে বৃদ্ধি পেলে আবু বকর [রাদি.] খাবারের প্রতি খেয়াল করে দেখলেন, তা যেমন ছিল তেমনি আছে বা তার চেয়েও বেশী হয়েছে। তিনি তাহাঁর স্ত্রীকে বলিলেন, হে উখ্ত [বোন] বানী ফিরাস! একি অবস্থা, তিনি বলিলেন, কিছু না। আমার চোখের প্রশান্তি এগুলো যা আগে ছিল তার থেকে তিন গুণ বর্ধিত হয়েছে। আবদুর রহমান বলেন, অতঃপর আবু বকর [রাদি.] কিছু খেয়ে বলিলেন, ওটা অর্থাৎ- শপথটা ছিল শাইতানের নিকট থেকে, তারপর আরও এক লোকমা খেলেন। অতঃপর সেগুলো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট নিয়ে চললেন। আমিও তার নিকটে সকাল পর্যন্ত ছিলাম। তিনি বলেন, আমাদের এবং কোন এক গোত্রের মধ্যে একটি অঙ্গীকারনামা ছিল। যার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আমরা [বারটি দল করে] বার জন ব্যক্তি নিযুক্ত করলাম। প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে অনেক ব্যক্তি ছিল। আল্লাহই ভাল জানেন, প্রত্যেক লোকের সাথে কতজন ব্যক্তি ছিল। তাদের প্রত্যেকের কাছে এ খাদ্য প্রেরণ করা হলো এবং তারা সকলেই সে খাবার খেলেন। কিংবা রাবী যেভাবে বর্ননা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯২, ইসলামিক সেন্টার- ৫২০৪]

৫২৬১. আবদুর রহমান ইবনি আবু বকর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার কিছু অতিথি আমাদের গৃহে আসলেন। [বর্ণনাকারী বলেন]। আমার আব্বা রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে কথোপকথন করিতেন। তাই তিনি যাওয়ার সময় বলিলেন, হে আবদুর রহমান! মেহমাদারীর সব কাজ সুন্দরভাবে শেষ করিবে। আবদুর রহমান বলেন, রাত হলে আমি অতিথিদের আহার নিয়ে আসলাম। কিন্তু তারা খেতে সম্মত হলেন না। তারা বলিলেন, যতক্ষণ গৃহের মালিক এসে আমাদের সঙ্গে না খাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা খাবো না। আমি তাঁদের বললাম, তিনি অত্যন্ত ক্ষিপ্ত লোক। আপনারা যদি খাওয়া-দাওয়া না করেন তাহলে আমার শঙ্কা হচ্ছে তার পক্ষ হইতে আমাকে হয়তো বকাঝকা শুনতে হইবে। তিনি বলেন, তাঁরা কেউ সম্মত হলোই না। আমার আব্বা এসে শুরুতেই তাঁদের সংবাদ নিলেন। তিনি বলিলেন, তোমরা কি অতিথিপরায়ণের কাজ শেষ করেছো? তাঁরা বললো, না। আল্লাহ্‌র শপথ! আমরা সমাপ্ত করিনি। তিনি বলিলেন, আমি কি আবদুর রহমানকে আদেশ দিয়ে যাইনি? আবদুর রহমান বলেন, আমি তাহাঁর চোখের পলক হইতে আড়ালে গিয়েছিলাম। তিনি বলিলেন, হে আবদুর রহমান! আমি আরও সরে গেলাম। তিনি আবার বলিলেন, ওরে নির্বোধ! আমি শপথ করে তোমাকে বলছি যদি তুমি আমার শব্দ শুনে থাকো তাহলে উপস্থিত হও। তিনি বলেন, তখন আমি উপস্থিত হয়ে বললাম, আল্লাহ্‌র শপথ! আমার কোন দোষ নেই। আপনার অতিথিদের প্রশ্ন করে দেখুন। আমি তাঁদের আহার নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু আপনি না ফেরা পর্যন্ত তাঁরা খেতে রাযী হলেন না। তখন তিনি [অতিথিদের] বলিলেন, আপনাদের কি হয়েছে? আপনারা কেন আমাদের পরিবেশন কবূল করেননি। আবদুর রহমান বলেন, তখন আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আজ রাতে খাবো না। অতিথিরাও শপথ করে বলিল, যতক্ষণ আপনি না খাবেন ততক্ষণ আমরাও খাব না। তখন আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, আজকের রাত্রের মতো এতো মন্দ রাত আমি আর দেখিনি। আফসোস, তোমরা কেন আমাদের আপ্যায়ন কবূল করিবে না? তিনি বলিলেন, প্রথমে যা হয়েছে তা শাইতানের তরফ হইতে হয়েছে। তোমরা খাবার নিয়ে আসো। রাবী বলেন, অতঃপর খাবার নিয়ে আসলে তিনি বিসমিল্লাহ্ পড়ে খাওয়া শুরু করিলেন। তাঁরাও খাওয়া শুরু করলো। আবদুর রহমান [রাদি.] বলেন, পরদিন সকালে তিনি নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে যেয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! তারা তো শপথ পূর্ণ করেছে। কিন্তু আমি শপথ ভেঙ্গে ফেলেছি। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ বরং তুমি সবচেয়ে বেশী সৎকর্মশীল এবং উত্তম ব্যক্তি। আবদুর রহমান বলেন, কাফ্ফারার কথা আমার নিকটে পৌঁছেনি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯৩, ইসলামিক সেন্টার- ৫২০৫]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply