নিহত শত্রু থেকে সম্পদ হত্যাকারী মুজাহিদের প্রাপ্য

নিহত শত্রু থেকে সম্পদ হত্যাকারী মুজাহিদের প্রাপ্য

নিহত শত্রু থেকে সম্পদ হত্যাকারী মুজাহিদের প্রাপ্য >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

১৩. অধ্যায়ঃ নিহত শত্রু থেকে সম্পদ হত্যাকারী মুজাহিদের প্রাপ্য

৪৪৫৮. আবু মুহাম্মদ আল-আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি ছিলেন আবু কাতাদার সহচর। তিনি বলেন, আবু কাতাদাহ বলেন, …… এরপর এতদসংক্রান্ত বিস্তৃত একটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪১৬, ইসলামিক সেন্টার-৪৪১৬ ]

৪৪৫৯. আবু কাতাদাহ [রাদি.]-এর আযাদকৃত দাস আবু মুহাম্মাদ হইতে বর্ণীতঃ

আবু কাতাদাহ [রাদি.] বলেন ……… অতঃপর পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪১৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪১৭]

৪৪৬০. আবু কাতাদাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হুনায়নের যুদ্ধের সময় আমরা রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে বের হলাম। আমরা যখন শত্রুদের মুখোমুখি হলাম তখন মুসলিমদের মধ্যে ছুটাছুটি আরম্ভ হলো। এ সময় আমি একজন মুশরিককে দেখিতে পেলাম যে, সে একজন মুসলিম এর উপর চড়াও করেছে। তখন আমি একটু ঘুরে এসে পিছন দিক দিয়ে তার কাঁধের উপর আঘাত করলাম। তখন সে আমার দিকে অগ্রসর হয়ে আমাকে এমনভাবে চেপে ধরলো যে, আমি এতে মৃত্যুর গন্ধ পেলাম। এরপর সে মৃত্যুমুখে ঢলে পরল এবং আমাকে ছেড়ে দিলো। এরপর আমি উমর ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর সঙ্গে একত্রিত হলাম। তিনি বলিলেন, লোকদের কি হয়েছে? আমি বললাম, এ আল্লাহর ব্যাপার [ইচ্ছে]। তারপর [পলায়নপর] লোকেরা ফিরে এলো। রসুলল্লাহ [সাঃআঃ] তখন [যুদ্ধক্ষেত্রে] বসেছিলেন। তিনি বলিলেন, যে মুসলিম সৈন্য অপর কোন শত্রু সৈন্যকে হত্যা করেছে এবং এতে তার প্রমান আছে, তাহলে তার সম্পদ তারই [হত্যাকারী মুজাহিদেরই প্রাপ্য]। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি দাঁড়ালাম এবং বললাম, আমার জন্য কেউ সাক্ষ্য দেবে? তারপর আমি বসে পড়লাম। তিনি আবারও সেরূপ কথা বলিলেন, আমি দাঁড়ালাম এবং বললাম কেউ আমার জন্য সাক্ষ্য দেবে? এবং আমি বসে পড়লাম। তিনি তৃতীয়বারও ঐরূপ বলেন। তা শুনে আমি [আবার] দন্ডায়মান হলাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তোমার কি হয়েছে? হে আবু কাতাদা্হ! আমি তাহাঁর কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তখন এক ব্যাক্তি বললো, হে আল্লাহর রসূল! তিনি [আবু কাতাদা্হ] সত্য বলেছেন। ঐ নিহত ব্যাক্তির [পরিত্যক্ত] সম্পদ আমার কাছে রক্ষিত আছে। আপনি তার হক আমাকে দেয়ার ব্যাপারে তাঁকে রাজি করিয়ে দিন। তখন আবু বাকর সিদ্দিক [রাদি.] বলিলেন, না, আল্লাহর কসম! তা হইতে পারে না। আল্লাহর সিংহসমূহের মধ্য হইতে কোনো এক সিংহ [যোদ্ধা] যিনি আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের পক্ষে যুদ্ধ করিয়াছেন, আর তার প্রাপ্য সম্পদ যিনি তোমাকে প্রদান করবেন এমন হইতে পারে। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ [আবু বাকর] ঠিকই বলেছেন। সুতরাং তিনি তাকে [আবু কাতাদাহকেই] তা প্রদানের নির্দেশ দিলেন এবং তিনি তা আমাকেই দিলেন। আবু কাতাদাহ [রাদি.] বলেন, আমি তা থেকে লৌহ বর্মটি বিক্রি করলাম এবং তা দিয়ে বানী সালামার মহল্লায় একটি ফলের বাগান খরিদ করলাম। এ ছিল আমার ইসলামী জীবনের প্রথম অর্জিত সম্পদ।

লায়স [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে যে, আবু বাকর [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর সিংহসমূহের মধ্য থেকে কোন এক সিংহকে বাদ দিয়ে তা কুরায়শের কোনো শৃগালকে [কাপুরুসকে] প্রদান করেন না।

লায়স [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এর বর্ণনায় রয়েছে এটিই আমার প্রথম সম্পদ যা আমি সংগ্রহ করেছি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪১৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪১৮ ]

৪৪৬১. আবদুর রাহমান ইবনি আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বদরের দিন যুদ্ধ সারিতে অবস্হান করছিলাম। এমন সময় আমি ডান ও বাম দিকে তাকিয়ে দেখি যে, আমি দুজন আনসারী বালকের মাঝখানে আছি। আমি আশা করেছিলাম, যদি আমি দুজন শক্তিশালী যুবকের মাঝে থাকতে পেতাম। এমন সময় তাদের একজন আমাকে ইঙ্গিতে বললো, হে আমার চাচা! আপনি কি আবু জাহেল কে চিনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। আর তাকে তোমার প্রয়োজন কী হে ভ্রাতুস্পুত্র! সে বলিল, আমি সংবাদ জেনেছি যে, সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে গালাগালি করে। সেই আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জীবন, যদি আমি তাকে দেখিতে পাই তবে অবশ্যই তাকে ছেড়ে দিব না, যতক্ষন না আমাদের দুজনের থেকে যার মৃত্যু পূর্বে হওয়া অবধারিত তার মৃত্যু হয়। বর্ণনাকারী বলেন, কিশোরের এ কথা শুনে আমি আশ্চর্যান্বিত হলাম। তারপর অপর কিশোর আমার দিকে ইঙ্গিত করে অনুরূপ কথা বলিল। পরে বেশি সময় অতিবাহিত হয়নি, হঠাৎ আমি দেখলাম, আবু জাহল লোকদের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। আমি তখন বালক দুজনকে বললাম, তোমরা কি দেখছ না এ ব্যাক্তিকে যার ব্যাপারে তোমরা জানতে চাচ্ছ। উভয়ে দৌড়ে গিয়ে তাদের তলোয়ার দ্বারা তাকে আঘাত করলো এবং হত্যা করে ফেললো। অতঃপর উভয়েই ফিরে এসে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে এই ঘটনার সংবাদ দিলো। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমাদের মধ্যে তাকে কে হত্যা করেছে? তাঁদের প্রত্যেকে বললো, আমি তাকে হত্যা করেছি। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ তোমাদের তলোয়ার কি পরিস্কার করে ফেলেছো? তাঁরা বলিল, না। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উভয়ের তলোয়ার পরীক্ষা করে দেখলেন। তারপর বলিলেন, তোমরা উভয়েই তাকে হত্যা করেছ। অতএব রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুআয ইবনি আমর ইবনি জামূহকে খুলে নেয়া সম্পদ প্রদানের নির্দেশ দেন। আর সে দুবালক হলো, মুআয ইবনি আমর ইবনি জামূহ এবং মুআয ইবনি আফরা [রাদি.]।

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪১৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪১৯ ]

৪৪৬২. আওফ ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হুমাইর গোত্রের এক ব্যাক্তি শত্রু পক্ষের এক ব্যাক্তিকে হত্যা করিল এবং তার যুদ্ধলব্ধ সম্পদ নিতে চাইল। কিন্তু তাদের সেনাপতি খালিদ ইবনি ওয়ালীদ [রাদি.] তাকে নিষেধ করিলেন। তারপর আওফ ইবনি মালিক [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এলেন এবং ঐ ঘটনার সংবাদ দিলেন। তখন তিনি খালিদ [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, কেন তুমি [নিহত ব্যাক্তির] সম্পদ তাকে প্রদান করলে না? খালিদ [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমি তার প্রচুর সম্পদ পেয়েছি। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তাকে তা দিয়ে দাও। তারপর খালিদ [রাদি.] আওফ [রাদি.]-এর কাছে দিয়ে গেলেন এবং আওফ [রাদি.] তার চাদর ধরে টান দিয়ে বলিলেন, আমি তো আগেই বলেছিলাম ব্যাপারটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে পৌছাবো। তাই কি হয়নি? অতএব রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা শুনতে পেলেন। এতে তিনি রাগাম্বিত হলেন। এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হে খালিদ! তুমি তাকে তা দেবে না! হে খালিদ! তুমি তাকে তা দেবে না ! তোমরা কি আমার নেতাদের পরিত্যাগ করিবে? নিশ্চয় তোমাদের এবং তাদের দৃষ্টান্ত এমন, যেমন কোন ব্যাক্তি উট কিংবা ছাগল চড়াতে মনস্থ করলো। এবং মাঠে নিয়ে চড়াল। তারপর পিপাসার সময় পানি পান করানোর জন্য জলাশয়ে নিয়ে গেল। পরিস্কার পানি পান করিতে শুরু করিল এবং ঘোলাটে পানি পরিত্যাগ করিল। অতঃপর এমনিভাবে পরিস্কারটা তোমাদের জন্য এবং অপরিষ্কারটা তোমাদের নেতাদের জন্য।

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪১৮, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪২০]

৪৪৬৩. আওফ ইবনি মালিক আশজাঈ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যায়দ ইবনি হারিসাহ [রাদি.]- এর সঙ্গে যারা মুতার যুদ্ধে গিয়েছিল, তন্মধ্যে আমিও ছিলাম। ইয়ামানের একজন সাহায্যকারীও আমার সাথি হলো। এরপর তিনি নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে তিনি হাদীসে বলেছেন যে, আওফ [রাদি.] বলেন, অতঃপর আমি বললাম, হে খালিদ! তুমি কি জাননা যে, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] শত্রু থেকে ছিনিয়ে নেয়া লব্ধ সম্পদ হত্যাকারী মুজাহিদ ব্যাক্তির প্রাপ্য বলে নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, কিন্তু এই সম্পদ আমার কাছে অধিক মনে হলো। [ তাই আমি নিষেধ করেছিলাম।]

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪১৯, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪২১]

৪৪৬৪. আবু সালামাহ ইবনি আকওয়া [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে হাওয়াযিন গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ছিলাম। একদা আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে সকালের খাওয়ায় শামিল ছিলাম। এমন সময় এক ব্যাক্তি লাল রঙের উটে চড়ে এসে উটটিকে বসাল এবং তার কোমর থেকে একটি চামড়ার রশি বের করে এর দ্বারা সেটিকে বাধঁলো। এরপর সে এসে লোকদের সাথে সকালের নাস্তা খেতে লাগল এবং এদিক-সেদিক তাকাতে লাগলো [সে ছিলো গুপ্তচর] আমাদের মধ্যে দুর্বলতাও ছিল। সওয়ারীও কম ছিল। আমাদের কেউ কেউ পায়ে হেটেঁ চলছিল। এমন সময় সে ব্যাক্তি দ্রুত গতিতে নিজের উটের কাছে এসে এর রশি খুললো। এরপর উটটিকে বসিয়ে এর উপর সওয়ার হয়ে হাঁকালো এবং উট তাকে নিয়ে ছুটলো। তখন এক ব্যাক্তি একটি ধুসর বর্ণের উটনীর উপর আরোহণ করে তার পশ্চাদ্ধাবন করিল।

সালামাহ [রাদি.] বলেন, আমি বের হয়ে দৌড় দিলাম। অতঃপর আরও অগ্রসর হয়ে আমি উটনীর লাগাম ধরে ফেললাম। এবং আমি তাকে বসালাম। যখন উটটি তার হাঁটু মাটিতে রাখল, তখন আমি তলোয়ার বের করে লোকটির মাথায় আঘাত করলাম। সে মাটিতে লুটিয়ে পরল। এরপর আমি উটটি টেনে নিয়ে এলাম। এর উপর ঐ ব্যাক্তির আসবাবপত্র ও অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই ছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লোক জনসহ আমাকে এগিয়ে নিলেন। তিনি বলিলেন, কে এই লোকটিকে হত্যা করেছে? লোকেরা বললো, ইবনি আকওয়া। তিনি বলিলেন, [নিহত ব্যাক্তির] থেকে খুলে আনা সমুদয় সম্পদ আকওয়ার পুত্র সালামার জন্য।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪২০, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪২২ ]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply