আল হেদায়া কিতাব – তাহারাত উযূ গোসল তায়াম্মুম এর মাসালা
আল হেদায়া কিতাব – তাহারাত উযূ গোসল তায়াম্মুম এর মাসালা >> আল হিদায়া এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> সালাত অধ্যায় (আযান জানাযা রমাযান ঈদ) >> যাকাত অধ্যায় (পশু সম্পদ উশর ফিতর) >> সিয়াম অধ্যায় (কাফফারা ইতিকাফ রোযা) >> হজ্জ অধ্যায় (ইহরাম শিকার তামাত্তু কিরান)
অধ্যায়ঃ তাহারাত
- পরিচ্ছেদঃ উযূ ভংগের কারণসমূহ
- পরিচ্ছেদঃ গোসল
- প্রথম অনুচ্ছেদঃ পানি
- দ্বিতীয় অনুচ্ছেদঃ তায়াম্মুম
- তৃতীয় অনুচ্ছেদঃ মোজার উপর মাসহ
- চতুর্থ অনুচ্ছেদঃ হায়য় ও ইসতিহাযা
- পণ্চম অনুচ্ছেদঃ বিভিন্ন নাজাসাত ও তা থেকে পবিত্রতা অর্জন
আল হেদায়া কিতাব – আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
হে ঈমানদারগণ, যখন তোমরা সালাতে দাঁড়াতে মনস্থ কর তখন নিজেদের মুখমণ্ডল ধৌত কর……আয়াতের শেষ পর্যন্ত।
আলোচ্য আয়াত থেকে প্রমাণ হলো যে, উযুতে তিনটি অংগ ধোয়া এবং মাথা মাসহ করা ফরয।
ধোয়া, [পানি] প্রবাহিত করা। আর [ভিজা হাত] লাগান। আর মুখমণ্ডলের সীমা। [কপালের উপরের] চুলের গোড়া থেকে চিবুকের নীচ পর্যন্ত এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত। কেননা, [মুখমণ্ডল] শব্দটি [মুখোমুখি হওয়া] থেকে উদ্ভূত্। আর এ পুরা অংশের দ্বারাই সামনা সামনি হওয়া সংগঠিত হয়। ( আল হেদায়া কিতাব )
কনুইদ্বয় ও গোড়ালিদ্বয় ধৌত করার বিধানের অন্তর্ভূক্ত। আমাদের তিন ইমামের মতে। যুফার [রঃআঃ] ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, সীমানা তার পূর্ববর্তী অংশের অন্তর্ভূক্ত হয় না, যেমন সাওম সম্পর্কিত বিধানে রাত্রি অন্তর্ভূক্ত নয়। আমাদের যুক্তি এই যে, এ সীমানার উদ্দেশ্য হচ্ছে তার পরবর্তী অংশকে বহির্ভূত করা। কারণ, যদি সীমানার উল্লেখ না থাকত তবে ধোয়ার হুকুম পুরো হাতকে শামিল করতো। পক্ষান্তরে সাওমের ক্ষেত্রে সীমানা উল্লেখের উদ্দেশ্য হল সে পর্যন্ত হুকুমের বিস্তার ঘটানো। কেননা শব্দটি সামান্য সময়ের বিরতির উপর ব্যবহার হয়। ( আল হেদায়া কিতাব )
বিশুদ্ধ মতে পায়ের গোড়ায় বের হয়ে থাকা হাড়। এ থেকে উদ্ভিন্ন স্তন তরুণীকে বলা হয়।
গ্রণ্থকার বলেন, মাথা মাসহ-এর ক্ষেত্রে মাথার এক চতুর্থাংশ পরিমাণ স্পর্শ করা ফরয। কেননা মুগীরা ইবন শুবা রাঃআঃ বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার বস্তির আবর্জনা ফেলার স্থানে এসে পেশাব করে ওজু করলেন। তখন তিনি মাথার সম্মুখভাগ এবং মোজা মাসহ করলেন।
যেহেতু আল-কুরআনের বক্তব্য এখানে পরিমাণের দিক থেকে অস্পষ্ট, সেহেতু আলোচ্য হাদীসটি তার ব্যাখ্যা রুপে যুক্ত করা হয়। এ হাদীসটি ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] কর্তৃক তিন চুলের দ্বারা নির্ধারণের বিপক্ষে প্রমাণ। তদ্রুপ ইমাম মালিক [রঃআঃ] কর্তৃক পূর্ণাঙ্গ মাসহ শর্ত করার বিপক্ষে প্রমাণ।
কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে যে, আমাদের ইমামদের মধ্যে কেউ কেউ ফরয মাসহর হাতের তিন আংগুল পরিমাণ করিয়াছেন।কেননা তা প্রকৃতপক্ষে যে অঙ্গ দ্বারা মাসহ করা হয়, তার সিংহভাগ।
আল হেদায়া কিতাব গ্রন্থকার বলেন, উযুর সুন্নত হলোঃ
আল হেদায়া কিতাব -০১. পাত্রে হাত প্রবেশ করানোর আগে উভয় হাত ধোয়া, যখন ওজুকারী তার নিদ্রা থেকে উঠে। কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেনঃ
তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জেগে ওঠে, তখন সে যেন তার হাত তিনবার না ধোয়া পর্যন্ত পাত্রে না ডুবায়। কেননা, সে জানে না, নিদ্রিত অবস্থায় তার হাত কোথায় ছিলো [অর্থাত্ কোন অংগ স্পর্শ করেছিল]। তাছাড়া হাত হলো তাহারাত সম্পাদনের উপকরণ। সুতরাং তার পবিত্রকরণের মাধ্যমে শুরু করাই সুন্নত। এ হাত ধৌত করার পরিমাণ কবজি পর্যন্ত। কেননা, তাহারাত সম্পাদনের জন্য অতটুকুই যথেষ্ট। ( আল হেদায়া কিতাব )
আল হেদায়া কিতাব -০২. ওজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ্ বলা। কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে বিসমিল্লাহ্ বলেনি তার ওজু হয়নি। এখানে উদ্দেশ্য হলো, ওজুর ফযীলত হাসিল হবে না। বিশুদ্ধ মত হল, ওজুতে বিসমিল্লাহ্ বলা মুস্তাহাব। যদিও [মূল পাঠে]তাকে সুন্নত বলিয়াছেন। এবং ইস্তিনজার আগে ও পরে বিসমিল্লাহ্ বলরে; এ-ই সঠিক মত।
আল হেদায়া কিতাব -০৩. মিসওয়াক করা। কেননা নবী [সাঃআঃ] সব সময় তা করতেন। মিসওয়াক না থাকলে আংগুল ব্যবহার করিবে। কেননা নবী [সাঃআঃ] এরুপ করিয়াছেন।
আল হেদায়া কিতাব -০৪. কুলি করা ও [০৫] নাকে পানি দেয়াঃ কেননা নবী [সাঃআঃ] সবসময় উভয়টি করিয়াছেন। এ দুটির পদ্ধতি এই যে, তিনবার কুলি করিবে এবং প্রতিবার নতুন পানি নিবে। একইভাবে নাকে পানি নিবে। নবী [সাঃআঃ]-এর ওজুতে এরূপ বর্ণনায় এসেছে।
আল হেদায়া কিতাব – ০৬. উভয় কান মাসহ করা। মাথা মাসহ এর [অবশিষ্ট] পানি দ্বারা তা সম্পাদন করা সুন্নত। ইমাম শাফিঈ ভিন্নমত পোষণ করেন। আমাদের দলীল হলো নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কর্ণদ্বয় মাথারই অংশ বিশেষ।এর উদ্দেশ্য হল শরীআতের হুকুম বর্ণনা করা, সৃষ্টিগত অবস্থা বর্ণনা করা নয়।
আল হেদায়া কিতাব – ০৭. দাড়ি খেলাল করা। কেননা হযরত জিবরীল নবী [সাঃআঃ]-কে তা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ কেউ বলিয়াছেন, এটি আবূ ইউসূফের মতে সুন্নত। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ [রঃআঃ]-এর মতে তা [সুন্নত নয়] বৈধ মাত্র। কেননা, সুন্নত হল এমন কাজ, যা দ্বারা ফরযকে তার স্থানে পূর্ণতা দান করা হয়। অথচ দাড়ির ভিতরের অংশ [মুখমণ্ডল ধৌত করা] ফরযের স্থান নয়।
আল হেদায়া কিতাব -০৮. আংগুল খেলাল করা। কেননা নবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, তোমরা তোমাদের আংগুলসমূহ খেলাল কর, যাতে জাহান্নামের আগুন তাতে প্রবেশ না করে। আর এ ভাষ্য যে, এ দ্বারা ফরযকে তার স্থানে পূর্ণতা দান করা হচ্ছে।
আল হেদায়া কিতাব -০৯. তিনবার পর্যন্ত পুনঃ ধৌত করা- কেননা নবী [সাঃআঃ] একেকবার করে ধৌত করিয়াছেন এবং বলিয়াছেন, এটা এমন ওজু, যা না হলে আল্লাহ নামাজ কবুলই করিবেন না। আবার দু দুবার করে ধৌত করিয়াছেন এবং বললেন, এটি ঐ ব্যক্তির ওজু, যাকে আল্লাহ দ্বিগুন বিনিময় দান করিবেন। এরপর তিন তিন বার ধৌত করে বললেন, এটা আমার ওজু এবং আমার পূর্ববর্তী নবীদের ওজু। যে এর বেশী বা কম করিবে, সে সীমালংঘন করল ও অন্যায় করল।
অবশ্য এই কঠোর হুশিঁয়ারি হচ্ছে তিনবার করে ধোয়াকে সুন্নত বলে বিশ্বাস না করার জন্য।
আল হেদায়া কিতাব -ওজুকারীর জন্য মুস্তাহাব হলোঃ
আল হেদায়া কিতাব -০১. পবিত্রতা অর্জনের নিয়্যত করা। আমাদের মতে ওজুতে নিয়্যত হলো সুন্নত। আর ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ]-এর মতে তা ফরয। কেননা, ওজু একটি ইবাদত, সুতরাং তায়াম্মুমের মতো ওজুও নিয়্যত ছাড়া শুদ্ধ হবে না। আমাদের দলীল এই যে, নিয়্যত ছাড়া ওজু ইবাদতরূপে গণ্য হবে না ঠিকই, তবে সালাতের প্রবেশ-মাধ্যমরূপে অবশ্যই বিবেচিত হবে। কেননা, পবিত্রতার উপকরণ[পানি]ব্যবহারে পবিত্রতা অর্জিত হবে। তায়াম্মুমের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা, নামাজ আদায়ের নিয়্যত ছাড়া অন্য অবস্থায় মাটি মূলত পবিত্রতা সৃষ্টিকারী নয়। তাছাড়া শব্দটি ইচ্ছা ও নিয়্যতের অর্থবহ।
আল হেদায়া কিতাব -০২. সম্পূর্ণ মাথা মাসহ্ করা। এটাই হচ্ছে সুন্নত। আর ইমাম শাফিঈ বলেন, সুন্নত হচ্ছে প্রত্যেকবার নতুন পানি নিয়ে তিনবার মাসহ করা। মাসহকে তিনি ধোয়ার অংগগুলোর উপর কিয়াস করেন। আমাদের দলীল এই যে, আনাস রাঃআঃ মুখ, হাত, পা তিন তিনবার করে ধুয়ে ওজু করলেন আর মাথা একবার মাসহ করলেন। তারপর তিনি বললেন, এ হলো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর ওজু। আর তিনবার মাসহ্ করার যে হাদীস বর্ণিত আছে, তা মূলত একবারের পানির ব্যবহারের উপর ধরা হয় এবং ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত মত অনুযায়ী তাও শরীআত সম্মত।
তাছাড়া ফরয হলো মাসহ্ করা। অথচ বারংবার মাসহ্ করলে তা ধোয়াতেই পরিণত হয়ে যাবে। সুতরাং তা সুন্নত হতে পারে না। অতএব মাথা মাসহ্ মূলতঃ মোজার উপর মাসহ্ করার সদৃশ। অংগ ধৌত করার বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা বারংবার তা দ্বারা ধোয়ার হুকুমের ক্ষতি হচ্ছে না।
আল হেদায়া কিতাব -০৩. তরতীবের সাথে ওজু করা, অর্থাত্ আল্লাহ যেভাবে বর্ণনা শুরু করিয়াছেন, সে ধারায় শুরু করা এবং
আল হেদায়া কিতাব -০৪. ডান দিক থেকে শুরু করা। আমাদের মতে ওজুতে তরতীব রক্ষা করা সুন্নত। আর ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ]-এর মতে তা করা ফরয। তাঁর দলীল এই যে, ওজুর আয়াত – এ অব্যয়টি রয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে বোঝায়। আর ভাষাবিদদের সর্বসম্মত মতে এ অব্যয়টি নিছক একত্রীকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। সুতরাং আয়াতের চাহিদা হচ্ছে সবকটি অংগের ধৌত কার্য পরবর্তী সম্পন্ন করা।
আর ডান দিক থেকে শুরু করা উত্তম। কেননা নবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, আল্লাহ সব বিষয়ে ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করেন। এমনকি জুতা পরিধান করা চুল আঁচড়ানোর ক্ষেত্রেও।
Leave a Reply