পর্বঃ ২১, দাসমুক্তি, অধ্যায়ঃ (১-৬)=৬টি
১. অধ্যায়ঃ দাসের প্রয়োজন পূরণের বর্ণনা
২.অধ্যায়ঃ প্রকৃতপক্ষে মুক্তিদাতা পাবে মুক্তদাসের ওয়ালা পরিত্যক্ত সম্পদ
৩. অধ্যায়ঃ ওয়ালা (আযাদ করা দাসের স্বত্বাধিকার) বিক্রি কিংবা হেবা করা নিষিদ্ধ
৪. অধ্যায়ঃ মুক্তদাস এর জন্য তার মুক্তিদাতা ব্যতীত অন্য কাউকে ওয়ালার মালিক বানানো হারাম
৫. অধ্যায়ঃ ক্রীতদাস আযাদ করার ফাযীলাত
৬. অধ্যায়ঃ পিতাকে আযাদ করার ফাযীলাত
১. অধ্যায়ঃ
দাসের প্রয়োজন পূরণের বর্ণনা
৩৬৬২
ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি শরীক (যৌথ মালিকানাধীন) ক্রীতদাসের বেলায় তার নিজের অংশটুকু মুক্ত করে দেয় এবং তার (মুক্তিদাতার) কাছে এ পরিমাণ ধন-সম্পদ থাকে যা উক্ত ক্রীতদাসের মুল্য সমান হয়- তবে ন্যায় সঙ্গতভাবে মূল্য নিরূপণ করবে এবং বাকী অংশীদারদের অংশের মূল্যও তাকে পরিশোধ করতে হবে। আর ক্রীতদাসটি পুরোপুরি ভাবে তার পক্ষ থেকেই মুক্ত করা হবে। তবে যদি সে ( পুরো অংশের মূল্য পরিশোধে ) সক্ষম না হয় তাহলে সে যতটুকু অংশ মুক্ত করেছে ততটুকু মুক্ত হয়ে যাবে। (ইঃফাঃ ৩৬২৮, ইঃসেঃ. ৩৬২৮)
৩৬৬৩
ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
কুতাইবাহ্ ইবনু সা’ঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুম্হ্ শাইবাহ ইবনু ফার্রূখ, আবূ রাবী’ , আবূ কামিল, ইবনু নুমায়র, মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না, ইসহাক্ ইবনু মানসূর, হারূন ইবনে সা’ঈদ আইলী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (র)… ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। মালিক (র) নাফি’( র) হতে বর্ণিত হাদীসের অর্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। (ইঃফাঃ ৩৬২৯, ইঃসেঃ. ৩৬২৯)
৩৬৬৪
আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ক্রীতদাসটি দু’জনের মালিকানাধীন তার একজন নিজের অংশ মুক্ত করে দিলে অপরজনের অংশেরও সে যিম্মাদার হবে (যদি সে বিত্তবান হয়)। (ইঃফাঃ ৩৬৩০,ইঃসেঃ ৩৬৩০)
৩৬৬৫
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যৌথ মালিকানাধীন ক্রীতদাসের বেলায় নিজের অংশ মুক্ত করে দিবে বাকী অংশ তার সম্পদ দ্বারাই মুক্ত করবে। আর যদি সে বিত্তশালী না হয় তাহলে সে ক্রীতদাসকে উপার্জনের মাধ্যমে মুক্ত হওয়ার চেষ্টায় নিযুক্ত করতে হবে। তবে তার উপর তার সামর্থ্যের বাইরে বোঝা চাপানো যাবে না। ( ইঃফাঃ ৩৬৩১, ইঃসেঃ. ৩৬৩১)
৩৬৬৬
সা’ঈদ ইবনু আবূ ‘আরূবাহ্ (র) হইতে বর্ণিতঃ
সা’ঈদ ইবনু আবূ ‘আরূবাহ্ (র) হতে সানাদে বর্ণিত। তবে তিনি তার বর্ণনায় এতটুকু বেশী উল্লেখ করেছেন যে, “যদি সে মুক্তিদাতা বিত্তবান না হয় তখন ঐ ক্রীতদাসের প্রচলিত মূল্য স্থির করতে হবে। এরপর সে (দাস) তার অবশিষ্টাংশ মুক্ত করার লক্ষ্যে উপার্জনে নিয়োজিত হবে। তবে এ ব্যাপারে তাকে (মুক্তিদাতাকে) সাধ্যাতীত কষ্টে ফেলা যাবে না। (ইঃফাঃ ৩৬৩২,ইঃসেঃ. ৩৬৩২)
৩৬৬৭
ওয়াহ্ব ইবনু জারীর (র) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি কাতাদাহ্ (র)- কে এ সানাদে ইবনু আবূ আরূবাহ্- এর হাদীসের মর্মানুযায়ী হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি তার বর্ণনায় উল্লেখ করেন, “ক্রীতদাসের ন্যায্য মূল্য নিরূপণ করতে হবে।“ (ইঃফাঃ ৩৬৩৩, ইঃসেঃ. ৩৬৩৩)
২.অধ্যায়ঃ
প্রকৃতপক্ষে মুক্তিদাতা পাবে মুক্তদাসের ওয়ালা পরিত্যক্ত সম্পদ
৩৬৬৮
‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
বর্ণিত। তিনি একবার একটি ক্রীতদাসী ক্রয় করে তাকে মুক্ত করে দিবেন বলে ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তখন সে ক্রীতদাসীর মনিবেরা তাকে জানালেন যে, আমরা আপনার এ শর্তে ক্রীতদাসটি বিক্রয় করতে পারি যে, আমরাই হব তার ওয়ালা’র [৬] অধিকারী। তিনি বলেনঃ এরপর বিষয়টি আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর কাছে উপস্থিত করলাম। তিনি বললেনঃ এ শর্ত তোমাকে ‘ওয়ালা’ থেকে বঞ্চিত করবে না। কেননা প্রকৃতপক্ষে মুক্তিদাতার জন্যই ‘ওয়ালার হক্ব’ নির্ধারিত। (ইঃফাঃ ৩৬৩৪, ইঃসেঃ. ৩৬৩৪)
[৬] (………) আরবী শব্দ। এর অর্থ অধিকারী হওয়া ,স্বত্ববান হওয়া ইত্যাদি। ইসলামী বিধানের পরিভাষায় ক্রীতদাস-দাসীর অর্জিত সম্পদ ইত্যাদির অভিভাবকত্বকে ‘ওয়ালা’ বলা হয়। ক্রীতদাস-দাসীর মৃত্যুর পর তার মনিব তার ‘ওয়ালা’- এর উত্তরাধিকারী । আর আযাদকৃত দাসের ‘ওয়ালা’-এর অধিকারী হয় মুক্তিদাতা।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সরাসরি
৩৬৬৯
‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বারীরাহ্ (রাঃ) তার লিখিত মুক্তিপণ পরিশোধের ব্যাপারে সাহায্যের জন্যে ‘আয়িশা (রাঃ)- এর কাছে এল। সে তার লিখিত মুক্তিপণের কিছুই আদায় করেনি। তখন ‘আয়িশা (রাঃ) তাকে বললেনঃ তুমি তোমার মুনিবের কাছে ফিরে যাও। যদি তারা এ শর্তে রাজি হয় যে, আমি তোমার লিখিত মুক্তিপণের যাবতীয় পাওনা আদায় করলে তোমার ওয়ালা আমার প্রাপ্য হবে, তবে তা আমি করতে পারি। বারীরা তার মনিবের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করল। কিন্তু তারা সে প্রস্তাব মেনে নিল না এবং বলে দিল, যদি তিনি সাওয়াবের আশায় তোমার লিখিত মুক্তিপণ আদায়ের দায়িত্ব নেন তাহলে নিতে পারেন, তবে তোমার ‘ওয়ালা” আমাদের জন্যই থাকবে। এরপর তিনি [‘আয়িশাহ (রাঃ)] বিষয়টি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর কাছে উঠালেন। তখন তিনি তাকে বললেনঃ তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দিতে পার, কেননা ‘ওয়ালা’ মুক্তিদাতারই প্রাপ্য। এরপর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেনঃ লোকদের কী হয়েছে তারা এমন কিছু শর্তারোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। যে ব্যক্তি এমন শর্তারোপ করবে যা আল্লাহর কিতাবে নেই- সে শর্তের কোন মূল্য নেই যদিও সে একশো বার শর্তারোপ করে। আল্লাহর শর্তই কেবল সঠিক ও নির্ভরযোগ্য। (ইঃফাঃ ৩৬৩৫, ইঃসেঃ. ৩৬৩৫)
৩৬৭০ .
‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ বারীরা (রাঃ) আমার কাছে এল। এরপর সে বলল, হে ‘আয়িশাহ্! আমি আমার মুনিবের কাছে লিখিত চুক্তি করেছি যে, বছরে এক ঊকিয়া (চল্লিশ দিরহামে এক উকিয়া) করে নয় বছরে সর্বমোট নয় উকিয়া পরিশোধ করব। এরপর লায়স (র) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। তবে এ বর্ণনায় এতটুকু বেশি উল্লেখ আছেঃ “তিনি (রসূলুল্লাহ সাঃ) বললেন, তাদের এ শর্ত করা তোমাকে ‘ওয়ালা’ প্রাপ্তি হতে বাধা দিবে না। তুমি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দিতে পার। ‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (র) এ হাদীসে উল্লেখ করেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে যান এবং আল্লাহর প্রশংসা ও তার মহিমা বর্ণনা করেন। (ইঃসেঃ. ৩৬৩৬,ইঃসেঃ ৩৬৩৬)
৩৬৭১ْ أَ
‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন বারীরা (রাঃ) আমার কাছে এল। এরপর সে বলল, আমার মনিব আমাকে প্রতি বছর একটি করে নয় বছরে নয়টি ঊকীয়্যাহ্ (চল্লিশ দিরহামে এক ঊকীয়্যাহ্) আদায় করার শর্তে আমাকে মুক্তি দানের ব্যাপারে লিখিত চুক্তি করেছে। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আমি [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] তাকে বললাম, তোমার মনিব যদি এ শর্তে রাজী হয় যে তোমার মুক্তিপণ এক সঙ্গে আদায় করে দিলে তোমার ‘ওয়ালা’ আমি পাব তাহলে আমি তোমাকে মুক্তির ব্যাপারে সাহায্য করতে চাই। তখন বারীরাহ্ (রাঃ) এ বিষয়টি তার মুনিবের কাছে উঠালে তাদের জন্য ‘ওয়ালা’ ব্যতিরেকে তারা তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। এরপর সে আমার [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর] কাছে এসে তাদের কথা বলল। তিনি বলেন, আমি তাকে ধমক দিয়ে বললামঃ তাহলে আল্লাহর কসম ! আমি রাজী নই। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বিষয়টি শুনলেন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। তাঁর কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। এরপর তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ্! তুমি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দাও এবং তাদের জন্যে ওয়ালা’র শর্ত করে দাও। তবে নিশ্চয়ই ‘ওয়ালা’ সে পাবে যে মুক্তি দান করে। আমি (‘আয়িশাহ্) তাই করলাম। রাবী বলেনঃ এরপর সন্ধ্যা বেলা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ভাষণ দিলেন। তিনি আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা ও তাঁর মহিমা ঘোষণা করলেন। এরপর বললেনঃ লোকের অবস্থা কেমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, তারা এমন সব শর্ত দেয় যা আল্লাহর কিতাবে নেই। স্মরণ রাখ, যে শর্ত আল্লাহর কিতাবে নেই, তা বাতিল বলে গণ্য, যদিও একশতবার শর্তারোপ করা হয়। আল্লাহর কিতাবের শর্তই যথার্থ সঠিক, আল্লাহর শর্তই সর্বাধিক সুদৃঢ়। তোমাদের মধ্যে কতক লোকের কী হয়েছে যে, তারা অপরকে বলে অমুককে মুক্ত করে দাও আর ‘ওয়ালা’ গ্রহন করব আমরা? অথচ ‘ওয়ালা’ তো আসলে তারই পাওনা যে মুক্ত করে। (ইঃফাঃ ৩৬৩৭ , ইঃসেঃ. ৩৬৩৭)
৩৬৭২
হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ (র) হইতে বর্ণিতঃ
অনুরূপ একই সনাদে বর্ণিত আছে। তবে জারীর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে- “তিনি বলেন, তার (বারীরার) স্বামী ছিল ক্রীতদাস। সে কারণে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দান করেছিলেন। (যখন সে মুক্ত হবে তখন ক্রীতদাস স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল রাখতে কিংবা তা নাকচ করে দিতে পারবে- এ ইখ্তিয়ার তাকে দেয়া হয়েছিল)। সে নিজের স্বার্থটাকেই সমর্থন করল (ক্রীতদাস স্বামীকে পছন্দ করল না)। যদি সে স্বাধীন হত তাহলে তিনি (রসূলুল্লাহ সাঃ) তাকে (বারীরাকে) ইখতিয়ার দিতেন না।” আর তাদের বর্ণিত হাদীসে (আরবি) (অতঃপর) শব্দটির উল্লেখ নেই। (ই.ফা ৩৬৩৮, ইঃসেঃ. ৩৬৩৮)
৩৬৭৩
‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বারীরার কল্যাণে তিনটি শরী’আতী বিধান পাওয়া গিয়েছিল-
১.তার মুনিবেরা তাকে বিক্রি করতে চেয়েছিল এবং তার ‘ওয়ালা’র উপর তাদের অধিকার লাভের শর্তারোপ করেছিল। আমি নবী (সাঃআঃ)- এর কাছে বিষয়টি উঠালাম। তিনি আমাকে বললেন, তাকে ক্রয় করে মুক্ত করে দাও। কেননা ‘ওয়ালা’- সেই পাবে যে আযাদ করে।
২.যখন তাকে (বারীরাকে) মুক্ত করে দেয়া হল তখন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে (তার ক্রীতদাস স্বামীকে রাখা, না রাখার) ইখ্তিয়ার দিয়েছিলেন। এরপর সে নিজের স্বার্থটাকেই সমর্থন করল। (তাঁর ক্রীতদাস স্বামীকে প্রত্যাখ্যান করল।)
৩.তিনি (‘’আয়িশাহ্ (রাঃ)) বলেন, লোকেরা বারীরাকে সদাকাহ্ খয়রাত করত এবং সে তা (সদাকাহ্কৃত জিনিস) থেকে আমাদেরকে কিছু হাদিয়া হিসেবে দিত। এরপর আমি নবী (সাঃআঃ)- এর কাছে বিষয়টি পেশ করলাম। তিনি বললেন, “তা তাঁর জন্য সদাকাহ্ এবং তোমাদের জন্য হাদিয়া। সুতরাং তোমরা তা খাও।” (ইঃফাঃ ৩৬৩৯, ইঃসেঃ. ৩৬৩৯)
ٌ ” .
‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি কিছু সংখ্যক আনসার মনিবদের কাছে থেকে বারীরাকে খরিদ করলেন। তবে তারা (সে সময়) ‘ওয়ালা’র শর্ত দিয়েছিল। তখন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ প্রকৃত পক্ষে ‘ওয়ালা’ তারই প্রাপ্য যে নি’আমাতের অধিকারী (মুক্তিদাতা)। আর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে ইখ্তিয়ার প্রদান করেছিলেন। তাঁর স্বামী ছিল ক্রীতদাস। একবার সে (বারীরাহ্) ‘আয়িশা (রাঃ)- এর কাছে কিছু পরিমান গোশ্ত হাদিয়া পাঠাল। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা যদি এই গোশ্ত থেকে আমার জন্যে কিছুটা রান্না করে আনতে……। তখন ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেনঃ এতো বারীরার জন্যে সদাকাহ্ হিসেবে এসেছে (আর আপনার জন্য সদাকাহ্ হারাম)। তিনি বললেনঃ তা তার জন্য সদাকাহ্ এবং আমার জন্যে হাদিয়া। (ইঃফাঃ ৩৬৪০, ইঃসেঃ. ৩৬৪০)
৩৬৭৫ .
‘’আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি মুক্ত করে দেয়ার উদ্দেশে বারীরাকে খরিদ করার ইচ্ছা করলেন। কিন্তু তারা (বারীরার মুনিবেরা) তার ‘ওয়ালা’ পাওয়ার শর্তারোপ করে বসল। তখন তিনি বিষয়টি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর কাছে উঠালেন। তিনি বললেনঃ তুমি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দাও। মূলত ‘ওয়ালা’ সে পাবে যে মুক্ত করে দেয়। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর জন্য কিছু গোশ্ত হাদিয়া রূপে পেশ করা হল। তখন তারা নবী (সাঃআঃ)- কে বললেনঃ এ গোশ্ত বারীরাকে সদাকাহ্ হিসেবে দেয়া হয়েছে। তিনি বললেনঃ এতো তার জন্য সদাকাহ্ এবং আমাদের জন্যে হাদিয়া। তাকে (বারীরাকে) তার (ক্রীতদাস) স্বামীর বিষয়ে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। আবদুর রহমান বললেন, তার স্বামী স্বাধীন ছিল। শু’বাহ্ (র) বলেনঃ আমি পুনরায় তাকে (‘আবদুর রহমানকে) তার (বারীরাহ) স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমার জানা নেই ( ইঃফাঃ ৩৬৪১, ইঃসেঃ. ৩৬৪১)
৩৬৭৬ .
শু’বাহ (র)- এর সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
শু’বাহ (র)- এর সূত্রে এ সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা ৩৬৪২, ইঃসেঃ ৩৬৪২)
৩৬৭৭ .
‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, বারীরার স্বামী ক্রীতদাস ছিল। (ইঃফাঃ ৩৬৪৩, ইঃসেঃ. ৩৬৪৩)
৩৬৭৮ .
‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ বারীরার ঘটনায় তিনটি বিধান জারী হয়েছেঃ
১. যখন সে মুক্তি লাভ করেছিল তখন স্বামীর (বৈবাহিক সূত্র বহাল রাখা, না রাখার ) ব্যাপারে তাকে ইখ্তিয়ার প্রদান করা হয়েছিল।
২. তাকে গোশ্ত সদাকাহ্ করা হয়েছিল। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের (‘আয়িশাহ্র) কাছে এলেন। তখন গোশতের হাঁড়ি চুলার উপর টগবগ করছিল। তিনি খাবার চাইলেন। তখন তাঁর সামনে রুটি এবং ঘর থেকে তরকারী পরিবেশন করা হল। তিনি বললেনঃ আমি কি লক্ষ্য করিনি যে, চুলার উপর হাঁড়ি আছে যার মধ্যে গোশ্ত রয়েছে। তারা বললেনঃ জ্বি হ্যাঁ, আল্লাহ্র রসূল! ওটা তো বারীরাকে সদাকাহ্ দেয়া গোশ্ত। আমরা তা থেকে আপনাকে খাওয়ানো পছন্দ করিনা। তখন তিনি বললেনঃ এতো তার জন্য সদাকাহ্ এবং তার পক্ষ থেকে তা আমাদের জন্য হাদিয়া।
৩. নবী (সাঃআঃ) তার (বারীরার) মুক্তির ব্যাপারে বললেনঃ আসলে ‘ওয়ালা’ সে-ই পাবে যে আযাদ করে। (ইঃফাঃ ৩৬৪৪, ইঃসেঃ. ৩৬৪৪)
৩৬৭৯
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার ‘আয়িশা (রাঃ) একটি ক্রীতদাসী খরিদ করে আযাদ করে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তার মুনিবেরা তাদের জন্য তার ‘ওয়ালা’ ব্যতিরেকে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। তিনি এ বিষয়টি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর কাছে উঠালেন। তখন তিনি বললেনঃ তুমি তাকে খরিদ করে মুক্তি দিয়ে দাও। তার (মুক্তি দেয়া) তোমাকে ‘ওয়ালা’ থেকে বাধাপ্রাপ্ত করবে না। কেননা ‘ওয়ালা’ তারই প্রাপ্য যে মুক্তি দান করে। (ইঃফাঃ ৩৬৪৫, ইঃসেঃ. ৩৬৪৫)
৩. অধ্যায়ঃ
ওয়ালা (আযাদ করা দাসের স্বত্বাধিকার) বিক্রি কিংবা হেবা করা নিষিদ্ধ
৩৬৮০
ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ‘ওয়ালা’ বিক্রি করা এবং তা হেবা (দান বা will) করা নিষিদ্ধ করেছেন।
ইব্রাহীম (র) বলেছেন, আমি মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (র)- কে বলতে শুনেছি যে, এ হাদীসের ব্যাপারে সকল মানুষ ‘আবদুল্লাহ ইবনু দীনারের পৌষ্য।” (ইঃফাঃ ৩৬৪৬, ইঃসেঃ. ৩৬৪৬)
৩৬৮১
ইবনু ‘উমার (রাযিঃ)- এর সূত্রে নাবী (সাঃ) হইতে বর্ণিতঃ
অনুরূপ বর্ণিত আছে। তবে সাকাফী (র) বর্ণিত হাদীসে ‘উবাইদুল্লাহ সূত্রে উল্লেখ নেই। এ বর্ণনায় বিক্রির কথা রয়েছে। তবে তিনি হেবার কথা উল্লেখ করেননি। (ইঃফাঃ ৩৬৪৭, ইঃসেঃ. ৩৬৪৭)
৪. অধ্যায়ঃ
মুক্তদাসের জন্য তার মুক্তিদাতা ব্যতীত অন্য কাউকে ওয়ালার মালিক বানানো হারাম
৩৬৮২
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাঃআঃ) লিখিত ফরমান জারি করলেন যে, প্রত্যেক গোত্রের উপর তার দ্বারা হত্যাকান্ডের ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হবে। এরপর তিনি লিখলেন, মুক্তদাসের অনুমতি ব্যতীত কোন মুসলিমের পক্ষে অপর মুসলিমের ক্রীতদাসের ওয়ালী হওয়া হালাল নয়। এরপর আমি জানতে পারলাম যে, তিনি তার লিখিত ফরমানে তাকে লা’নাত করেছেন যে ব্যক্তি এরূপ কাজ করবে। (ইঃফাঃ ৩৬৪৮, ইঃসেঃ. ৩৬৪৮)
৩৬৮৩
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (ক্রীতদাস) তার মুনিবের অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে মনিব বানাবে তার উপর আল্লাহর লা’নাত এবং তাঁর ফেরেশ্তাদেরও লা’নাত। তার ফরয কিংবা নফল কিছুই (আল্লাহর কাছে) ক্ববূল হবে না। (ইঃফাঃ ৩৬৪৯, ইঃসেঃ. ৩৬৪৯)
৩৬৮৪
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) সূত্রে নাবী (সাঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি তার মুনিবের অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে মাওলা বানাবে তার উপর আল্লাহর লা’নাত, ফেরেশ্তা ও সমগ্র মানব জাতির লা’নাত বর্ষিত হবে। কিয়ামাতের দিন তার কোন ফরয কিংবা নফল আল্লাহর নিকট কবূল হবে না। (ইঃফাঃ ৩৬৫০, ইঃসেঃ. ৩৬৫০)
৩৬৮৫ ”
আ’মাশ (র) হইতে বর্ণিতঃ
আ’মাশ (র) হতে এ সানাদে বর্ণিত- তবে তিনি এতে বলেছেনঃ “কোন লোক তার মুনীবের অনুমতি ব্যতিরেকে অন্যকে মাওলা বানাবে …।” (ইঃফাঃ ৩৬৫১, ইঃসেঃ. ৩৬৫১)
৩৬৮৬ .
ইব্রাহীম তাইমী (রাযিঃ) তাঁর পিতার সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) আমাদের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, যে ব্যক্তি মনে করে যে, এ পুস্তিকা ও আল্লাহর কিতাব ব্যতীত আমাদের কাছে এমন কিছু আছে যাকে আমরা অধ্যয়ন করি সে মিথ্যা বলছে। সে (বর্ণনাকারী) বললঃ সে সময় তার [‘আলী (রাঃ)] তরবারির খাপের মধ্যে একখানা পুস্তক ঝুলানো ছিল। এ পুস্তিকায় উটের দাঁতের বিবরণ ছিল এবং যখমের দিয়াত (ক্ষতিপূরণ) সম্পর্কে বিধান ছিল। এতে আরও উল্লেখ ছিল যে, নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মাদীনার ‘আয়র’ থেকে ‘সাওর’ পর্বত পর্যন্ত এলাকা হারাম (সংরক্ষিত স্থান)। যে ব্যক্তি এ এলাকায় বিদ’আত করবে অথবা কোন বিদ’আতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহর লা’নাত, তাঁর ফেরেশ্তাদের ও সমগ্র মানব জাতির লা’নাত বর্ষিত হবে। কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তার কোন ফরয কিংবা নফল ক্ববূল করবেন না। সকল মুসলিমের দায়িত্ব অভিন্ন। একজন সাধারণ মুসলিমও এ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবে। যে ব্যক্তি তার পিতাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পিতা বলে দাবী করবে অথবা যে ক্রীতদাস তার মনিবকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মাওলা বানায় তার উপর আল্লাহর লা’নাত, ফেরেশ্তা ও সমগ্র মানব জাতির লা’নাত বর্ষিত হবে। কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তার কোন ফরয কিংবা নফল (‘ইবাদাত) ক্ববূল করবেন না। (ইঃফাঃ ৩৬৫২, ইঃসেঃ. ৩৬৫২)
৫. অধ্যায়ঃ
ক্রীতদাস আযাদ করার ফাযীলাত
৩৬৮৭
আবূ হুরাইরাহ্ (র) (রাযিঃ)-এর সূত্রে নাবী (সাঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ক্রীতদাসকে আযাদ করবে আল্লাহ তার প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বদলে আযাদকারীর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নাম থেকে বাঁচাবেন। (ইঃফাঃ ৩৬৫৩, ইঃসেঃ. ৩৬৫৩)
৩৬৮৮
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ)- এর সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন ঈমানদার ক্রীতদাসকে আযাদ করে দিবে আল্লাহ তার প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বদলে মুক্তিদাতার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন- এমন কি তার লজ্জাস্থানের বিনিময়ে তার লজ্জাস্থানও। (ইঃফাঃ ৩৬৫৪, ইঃসেঃ. ৩৬৫৪)
৩৬৮৯
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)- কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন ঈমানদার ক্রীতদাস মুক্ত করবে আল্লাহ তার (শরীরের) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বদলে তার (শরীরের) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন- এমন কি তিনি তার(মুক্তদাসের) গুপ্তস্থানের পরিবর্তে তার (মুক্তিকারীর) গুপ্তস্থানও রক্ষা করবেন। (ইঃফাঃ ৩৬৫৫, ইঃসেঃ. ৩৬৫৫)
৩৬৯০
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, কোন মুসলিম অপর কোন মুসলিম ক্রীতদাসকে মুক্ত করলে আল্লাহ তার (মুক্ত দাসের) প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বদলে তার (মুক্তিদাতার) প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবেন। তিনি [বর্ণনাকারী সা’ঈদ ইবনু মারজানাহ্ (র)] বললেনঃ আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) থেকে এ হাদীস শোনার পরপরই ‘আলী ইবনু হুসায়ন (রাঃ)- এর কাছে গেলাম এবং তাঁর কাছে হাদীসটি পেশ করলাম। তখনই তিনি তাঁর একটি গোলাম (ক্রীতদাস) মুক্ত করে দিলেন যার বিনিময় মূল্য হিসেবে তিনি ইবনু জা’ফারকে দশ হাজার দিরহাম অথবা এক হাজার দীনার পরিশোধ করেছিলেন। (ইঃফাঃ ৩৬৫৬, ইঃসেঃ. ৩৬৫৬)
৬. অধ্যায়ঃ
পিতাকে আযাদ করার ফাযীলাত
৩৬৯১
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কোন সন্তান তার পিতার ঋণ (হক্ব) পরিশোধ করতে পারে না। তবে হ্যাঁ, সে যদি তার পিতাকে ক্রীতদাস হিসেবে দেখতে পায় এবং তখনি তাকে ক্রয় করে নিয়ে আযাদ করে দেয় (তাহলে ভিন্ন কথা)।
ইবনু আবী শাইবাহ্ (র)- এর বর্ণনায় (আরবী) ‘সন্তান তার পিতাকে’ শব্দটির উল্লেখ আছে। (ইঃফাঃ ৩৬৫৭, ইঃসেঃ. ৩৬৫৭)
৩৬৯২
সুহায়ল (র) হইতে বর্ণিতঃ
সুহায়ল (র) হতে এ সানাদে অনুরূপ বর্ণিত আছে। তারা তাদের বর্ণনায় (আরবী) ‘সন্তান তার পিতাকে’ কথাটি বলেছেন। (ইঃফাঃ ৩৬৫৮, ইঃসেঃ
Leave a Reply