সিয়ামের ফযিলত, নিয়্যাত ও সিয়াম ভঙ্গ করা
সিয়ামের ফযিলত >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
২৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণী –“আর যারা সিয়াম পালন করিতে সক্ষম তারা ফিদ্ইয়াহ্ হিসেবে একজন মিসকীনকে খাদ্য দিবে” – এ হুকুম মানসূখ হয়ে গেছে
২৬. অধ্যায়ঃ শাবান মাসে রামাদানের সিয়ামের ক্বাযা
২৭. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সিয়াম পালন করার বর্ণনা
২৮. অধ্যায়ঃ সিয়াম অবস্থায় আমন্ত্রণ গ্রহণ করার বর্ণনা
২৯. অধ্যায়ঃ সিয়াম পালনকারীর জিহ্বার হিফাযাত
৩০. অধ্যায়ঃ সিয়ামের ফযিলত
৩১. অধ্যায়ঃ আল্লাহ্র পথে [যুদ্ধক্ষেত্রে] সিয়াম পালন করিতে সক্ষম হলে এবং এতে কোনরূপ ক্ষতি হওয়ার বা শক্তিহীন হয়ে যুদ্ধ করিতে অক্ষম হয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকলে এ ধরনের সিয়ামের ফাযীলত
৩২. অধ্যায়ঃ দিনের বেলা সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পূর্ব পর্যন্ত নাফ্ল সিয়ামের নিয়্যাত করা যেতে পারে, নাফ্ল সিয়াম পালনকারীর জন্য কোনরূপ ওজর ছাড়াই সিয়াম ভঙ্গ করা জায়িয, তবে সিয়াম পূর্ণ করাই উত্তম।
৩৩. অধ্যায়ঃ ভুলে পানাহার করলে বা সঙ্গম করে বসলে তাতে সিয়াম ভঙ্গ হয় না
২৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণী –“আর যারা করিতে সক্ষম তারা ফিদ্ইয়াহ্ হিসেবে একজন মিসকীনকে খাদ্য দিবে” – এ হুকুম মানসূখ হয়ে গেছে
২৫৭৫. সালমাহ্ ইবনি আকওয়া [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, “যারা রোজা পালন করিতে সক্ষম [অথচ রোজা পালন করিতে চায় না] তারা ফিদইয়াহ্ হিসেবে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করিবে” যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল, কেউ যদি রামাদানে রোজা পালন করিতে না চাইতো সে রোজা ভাঙ্গত এবং তার পরিবর্তে ফিদইয়াহ্ আদায় করে দিত। অতঃপর এর পরবর্তি আয়াত অবতীর্ণ হলো এবং তা পূর্ববর্তী আয়াতের হুকুমকে মানসূখ [রহিত] করে দিল।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৫২, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৫১]
২৫৭৬. সালমাহ্ ইবনি আকওয়া [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যুগে রমজান মাসে আমাদের মধ্যে যার ইচ্ছা হত রোজা পালন করত আর যে চাইত ভঙ্গ করত এবং এর বিনিময়ে ফিদইয়াহ্ হিসেবে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করত। অবশেষে এ আয়াত নাযিল হল, “কাজেই আজ হইতে যে ব্যক্তিই এ মাসের সম্মুখিন হইবে তার জন্য এ পূর্ণ মাসের রোজা পালন করা একান্ত কর্তব্য।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৫৩, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৫২]
২৬. অধ্যায়ঃ শাবান মাস এ রামাদানের সিয়ামের ক্বাযা
২৫৭৭. আবু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]–কে বলিতে শুনেছি, “আমার রামাযান মাসের রোজা অবশিষ্ট থেকে যেত। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর খিদমতে ব্যস্ত থাকার কারণে আমি শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন সময়ে তা আদায় করার সুযোগ পেতাম না।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৫৪, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৫৩]
২৫৭৮. ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এ বর্ণনায় পার্থক্য এতটুকু যে, তিনি বলেছেন, আর রামাযানের সিয়ামের ক্বাযা আদায়ের ব্যাপারে শাবান পর্যন্ত বিলম্ব করার কারণ হল, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খিদমতে নিযুক্ত থাকা।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৫৫, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৫৪]
২৫৭৯. ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সানাদেও উপরের হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ হাদীসে তিনি আরো বলেছেন, আমার এরুপ দেরি করার কারণ ছিল নবী [সাঃআঃ]–এর খিদমতে ব্যস্ত থাকা।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৫৬, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৫৫]
২৫৮০. ইয়াহ্ইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ
উপরের হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তিনি এ বর্ণনায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর খিদমতে তার ব্যস্ত থাকার কথা উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৫৭, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৫৬]
২৫৮১. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাদের [রসূলের স্ত্রীগণের] মধ্যে কেউ যদি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সময়ে রোজা ভঙ্গ করত তাহলে সে শাবান মাস আসার পূর্বে কোন সময়ই রোযা করার সুযোগ পেত না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৫৮, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৫৭]
২৭. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে রোজা পালন করার বর্ণনা
২৫৮২. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, “কোন মৃত ব্যক্তির উপর ক্বাযা রোজা থাকলে তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে রোজা পূর্ণ করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৫৯, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৫৮]
২৫৮৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক মহিলা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিল, আমার মা মারা গেছেন। তার এক মাসের রোজা বাকি আছে। তিনি বলেন, মনে কর তার [তোমার মায়ের] উপর যদি কোন ঋণ থাকত তাহলে কি তুমি তা পরিশোধ করিতে? সে বলিল, হ্যাঁ। এবার তিনি বলিলেন, তাহলে আল্লাহর ঋণ [বা পাওনা] পরিশোধিত হবার সবচেয়ে বেশি হক্ব রয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৬০, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৫৯]
২৫৮৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ] –এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা মারা গেছেন এবং তাহাঁর এক মাসের রোজা বাকি আছে। আমি কি তার পক্ষ থেকে এটা আদায় করে দিব? তখন তিনি বলিলেন, যদি তোমার মায়ের উপর ঋণ থাকত তাহলে তুমি কি তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করে দিতে? সে বলিল, হ্যাঁ। এবার তিনি বলিলেন, তাহলে আল্লাহর ঋণ তো পরিশোধিত হবার সবচেয়ে বেশি দাবীদার।
সুলায়মান বলেন, হাকাম ও সালামাহ্ ইবনি কুহায়ল উভয়ই বলেছেন, যখন মুসলিম আল্ বাতীন এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন তখন আমরা উভয়ই সেখানে বসা ছিলাম। অতঃপর তারা উভয়ই বলেন, আমরা মুজাহিদকে এ হাদীসটি ইবনি আব্বাসের সুত্রে বর্ণনা করিতে শুনেছি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৬১, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৬০]
২৫৮৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] থেকে এ সুত্র হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ]-এর একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৬২, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৬১]
২৫৮৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক মহিলা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার মা তার মানতের সওম বাকি রেখেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে এটা পূর্ণ করবো?। তিনি বলিলেন, মনে কর তোমার মায়ের পক্ষ থেকে ঋণ বাকি ছিল। তুমি তা পরিশোধ করে দিলে। এতে কি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ হয়ে যেত? সে [মহিলা] বলিল, হ্যাঁ। এবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে সওম রেখে দাও।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৬৩, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৬২]
২৫৮৭. আবদুল্লাহ ইবনি বুরায়দাহ্ [রাদি.] থেকে পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় এক মহিলা তাহাঁর কাছে এসে বলিল, আমার মাকে একটি দাসী দান করেছিলাম, আমার মা মারা গেছেন। তখন তিনি বলিলেন, তুমি তোমার সাওয়াবের অধিকারী হয়ে গেছ এবং ঐ দাসী উত্তরাধিকার সূত্রে পুনরায় তোমার মালিকানাধীনে ফিরে আসবে। সে [মহিলা] আবার বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল! তাহাঁর এক মাসের রোজা বাকি আছে। আমি কি তাহাঁর পক্ষ থেকে এ রোজা পালন করিতে পারি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তাহাঁর পক্ষ থেকে তুমি রোজা পালন কর। আবার সে বলিল, তিনি কখনো হাজ্জ করেননি। আমি কি তাহাঁর পক্ষ থেকে হাজ্জ করব? তিনি বলিলেন, তার পক্ষ থেকে হাজ্জও কর।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৬৪, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৬৩]
২৫৮৮. আবদুল্লাহ ইবনি বুরায়দাহ্ [রাদি.] থেকে তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ] –এর কাছে বসা ছিলাম। …ইবনি মুসহিরের হাদীসের অনুরূপ। তবে এ সূত্রে দু মাসের রোজার কথা উল্লেখ আছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৬৫, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৬৪]
২৫৮৯. ইবনি বুরায়দাহ্ [রাদি.] থেকে তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একজন স্ত্রীলোক নবী [সাঃআঃ] এর নিকটে আসল। … উপরের হাদীসের অনুরূপ। তবে এ সূত্রে এক মাসের সিয়ামের কথা উল্লেখ আছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৬৬, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৬৫]
২৫৯০. সুফ্ইয়ান থেকে এ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রে দুমাসের সিয়ামের কথা উল্লেখ রয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৬৭, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৬৬]
২৫৯১. সুলায়মান ইবনি বুরায়দাহ্ [রাদি.] থেকে তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [বুরায়দাহ্] বলেন, এক মহিলা নবী [সাঃআঃ]- এর কাছে আসল। … পূর্বের হাদীসের অনুরূপ। তবে এ সূত্রে এক মাসের সিয়ামের কথা উল্লেখ আছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৬৮, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৬৭]
২৮. অধ্যায়ঃ রোজা অবস্থায় আমন্ত্রণ গ্রহণ করার বর্ণনা
২৫৯২. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ রোজা অবস্থায় আহার করার জন্য আমন্ত্রিত হয়, তখন সে যেন বলে, আমি রোজা পালনকারী।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৬৯, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৬৮]
২৯. অধ্যায়ঃ রোজা পালনকারী র জিহ্বার হিফাযাত
২৫৯৩. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
যখন তোমাদের কেউ কোনদিন রোজা অবস্থায় ভোরে উপনীত হয়, সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা ও জাহিলী আচরণ না করে। যদি কেউ তাকে গালাগালি করে বা তার সাথে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হইতে উদ্যত হয় তখন সে যেন বলে, আমি রোজা পালনকারী, আমি রোজা পালনকারী।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৭০, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৬৯]
৩০. অধ্যায়ঃ সিয়ামের ফযিলত
২৫৯৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ “মহান আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন, মানব সন্তানের যাবতীয় কাজ তার নিজের জন্য। কিন্ত রোজা, এটা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব।” সে মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতের মুঠায় মুহাম্মাদের জীবন! নিশ্চয়ই রোজা পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ্র কাছে কস্তুরীর সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৭১, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৭০]
২৫৯৫. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রোজা ঢাল স্বরূপ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৭২, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৭১]
২৫৯৬. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “মানব সন্তানের প্রতিটি নেক কাজের সওয়াব দশ গুন থেকে সাতশ গুন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়।” মহান আল্লাহ্ বলেন, “আদম সন্তানের যাবতীয় আমাল তার নিজের জন্য কিন্ত রোজা বিশেষ করে আমার জন্যই রাখা হয়। আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব।” সুতরাং যখন তোমাদের কারো রোজার দিন আসে সে যেন ঐ দিন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে এবং অনর্থক শোরগোল না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে বিবাদ করিতে চায়, সে যেন বলে, “আমি একজন রোজা পালনকারী”। সে মহান আল্লাহ্র শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন! রোজা পালনকারীদের মুখের দুর্গন্ধ ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ্র কাছে কস্তুরীর সুগন্ধির চেয়েও উত্তম হইবে। আর রোজা পালনকারীদের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। এর মাধ্যমে সে অনাবিল আনন্দ লাভ করে। একটি হল যখন সে ইফত্বার করে তখন ইফত্বারীর মাধ্যমে আনন্দ পায় আর দ্বিতীয়টি হলো যখন সে তার প্রভুর সাথে মিলিত হইবে তখন সে তার সিয়ামের জন্য আনন্দিত হইবে।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৭৩, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৭২]
২৫৯৭. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “মানব সন্তানের প্রতিটি নেক কাজের সাওয়াব দশ গুন থেকে সাতশ গুন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। মহান আল্লাহ্ বলেন, “কিন্তু রোজা আমারই জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিফল দান করব। বান্দা আমারই জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।” রোজা পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ আছে। একটি তার ইফত্বারের সময় এবং অপরটি তার প্রতিপালক আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাতের সময়। রোজা পালনকারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ্ তাআলার কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধময়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৭৪, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৭৩]
২৫৯৮. আবু হুরায়রাহ্ ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তাঁরা উভয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা বলেন, “রোজা আমারই জন্য এবং আমিই এর প্রতিফল দান করব।” রোজা পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। একটি হলো যখন সে ইফত্বার করে আনন্দিত হয়, অপরটি হলো যখন সে মহান আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাৎ করিবে তখন সে আনন্দিত হইবে। সে মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন! নিশ্চয়ই রোজা পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ্ তাআলার কাছে মিশ্কের সুগন্ধের চেয়েও তীব্র। {৮}
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৭৪]
{৮} ইফত্বারের সময় খুশির কারণ হলো, মহান আল্লাহ্ তাআলার অপার অনুগ্রহ সাহায্য এবং তাওফীকের কারণে এ রকম একটি ফাযীলত ও মর্যাদাপূর্ণ কাজ সম্পাদন করিতে পেরেছে, আর এ সময় দুনিয়ার যাবতীয় হালাল বস্তু আহার করা তার জন্য হালাল এবং এ সওম পূর্ণ হওয়ার কারণে সে পরকালীন সুখ-শান্তির আশাবাদী হলো।
২৫৯৯. যিরার ইবনি মুর্রাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] অর্থাৎ আবু সিমান থেকে এ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ
উপরের হাদীস অনুরূপ বর্ণিত আছে। তবে এতে আরো আছে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, যখন রোজা পালনকারী আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাৎ করিবে এবং তিনি তাকে প্রতিদান দিবেন তখন সে আনন্দিত হইবে। {৯}
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৭৬, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৭৫]
{৯} আল্লাহ্ তাআলার সাথে সাক্ষাতের সময় খুশি এজন্য যে, আল্লাহ্ তার অপার রহমত ও দয়ায় ইবাদাত কবূল করিয়াছেন এবং যে সাওয়াব ও প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি করেছিলেন তা পূর্ণ হয়ে গেল।
২৬০০. সাহ্ল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। ক্বিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে রোজা পালনকারী জান্নাতে প্রবেশ করিবে। আর রোজা পালনকারীগণ ছাড়া অন্য কেউ তাদের সাথে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করিতে পারবে না। ক্বিয়ামতের দিন রোজা পালনকারীদের ডেকে বলা হইবে, রোজা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। অতঃপর রোজা পালনকারীদের শেষ লোকটি প্রবেশ করার সাথে সাথে তা বন্ধ করে দেয়া হইবে। অতঃপর সে দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করিতে পারবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৭৭, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৭৬]
৩১. অধ্যায়ঃ আল্লাহ্র পথে [যুদ্ধক্ষেত্রে] রোজা পালন করিতে সক্ষম হলে এবং এতে কোনরূপ ক্ষতি হওয়ার বা শক্তিহীন হয়ে যুদ্ধ করিতে অক্ষম হয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকলে এ ধরনের সিয়ামের ফাযীলত
২৬০১. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে বান্দা আল্লাহ্র রাস্তায় [যুদ্ধের সময়] একদিন রোজা পালন করিবে আল্লাহ্ তাআলা তার চেহারাকে এ দিনের [সিয়ামের] বারাকাতে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের পথ দূরে রাখবেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৭৭]
২৬০২. সুহায়ল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
উপরের হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৭৮]
২৬০৩. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছি, যে বান্দা আল্লাহ্র রাস্তায় একদিন রোজা পালন করে, আল্লাহ্ তাআলা তার চেহারাকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের পথ দূরে রাখবেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৮০, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৭৯]
৩২. অধ্যায়ঃ দিনের বেলা সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পূর্ব পর্যন্ত নাফ্ল সিয়ামের নিয়্যাত করা যেতে পারে, নাফ্ল রোজা পালনকারীর জন্য কোনরূপ ওজর ছাড়াই রোজা ভঙ্গ করা জায়িয, তবে রোজা পূর্ণ করাই উত্তম।
২৬০৪. উম্মুল মুমিনীন আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, “হে আয়েশাহ! তোমাদের কাছে কি খাওয়ার মতো কিছু আছে?” আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাদের কাছে খাওয়ার মতো কিছুই নেই। তিনি বলিলেন, আমি রোজা পালনকারী। আয়িশা [রাদি.] বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বাইরে চলে গেলেন। পরে আমাদের জন্য হাদিয়্যাহ্ হিসেবে কিছু জিনিস আসলো এবং সাথে সাথে আমাদের কাছে কিছু সংখ্যক মেহমানও আসলো। তিনি আরও বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন ফিরে আসলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাদের কাছে উপঢৌকন হিসেবে কিছু জিনিস এসেছে এবং কয়েকজন মেহমানও এসেছে [তাই হাদিয়্যার বেশীর ভাগ তাদেরকে খাইয়ে দিয়েছি]। আমি তা থেকে কিছু অংশ আপনার জন্য লুকিয়ে রেখেছি। তিনি বলিলেন, তা কী? আমি বললাম, তা হলো হায়স [খেজুর, পনির ও আটার সমন্বয়ে তৈরি হালুয়া]। তিনি বলেন, তা নিয়ে এসো। অতঃপর আমি তা নিয়ে আসলাম। তিনি তা খেয়ে বলিলেন, আমি ভোরে রোজা পালন করেছিলাম। ত্বল্হাহ্ বলেন, আমি এ হাদীসটি মুজাহিদের কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি বলেন, এটা [এভাবে নাফল রোজা ভেঙে ফেলা] এমন ব্যক্তির সাথে তুল্য যে নিজের সম্পদ থেকে সদাক্বাহ্ বের করে। অতঃপর সে ইচ্ছা করলে তা দিতেও পারে আর রেখেও দিতে পারে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৮১, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৮০]
২৬০৫. উম্মুল মুমিনীন আয়েশাহ হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন নবী [সাঃআঃ] আমার কাছে এসে বলিলেন, তোমাদের কাছে কিছু আছে কি? আমরা বললাম, না। তিনি বলিলেন, তাহলে আমি রোজা পালন করলাম। আর একদিন তিনি আমাদের কাছে আসলেন। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাদেরকে হায়স [ঘি বা পনির মিশ্রিত খেজুর] হাদিয়াহ দেয়া হয়েছে। তিনি বলিলেন, আমাকে তা দেখাও; আবশ্য আমি সকালে সিয়ামের নিয়্যাত করেছি। অতঃপর তিনি তা খেলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৮২, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৮১]
৩৩. অধ্যায়ঃ ভুলে পানাহার করলে বা সঙ্গম করে বসলে তাতে রোজা ভঙ্গ হয় না
২৬০৬. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় ভুলে কিছু খেয়েছে বা পান করেছে সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে। কেননা আল্লাহ্ই তাকে খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৮২]
Leave a Reply