সাদকাহ প্রদানে উৎসাহ ও দানশীলতার ফাযীলাত
সাদকাহ প্রদানে উৎসাহ প্রদান >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
৯. অধ্যায়ঃ সদাক্বাহ্ প্রদানে উৎসাহ প্রদান
১০. অধ্যায়ঃ সম্পদ পুঞ্জিভুতকারী ও তাদের শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে
১১. অধ্যায়ঃ দানশীলতার ফাযীলাত
১২. অধ্যায়ঃ পরিবার-পরিজন ও দাস-দাসীদের ভরণ-পোষনের ফাযীলাত এবং তা না করার অপরাধ
১৩. অধ্যায়ঃ সর্বপ্রথম নিজের জন্য, অতঃপর ঘরের লোকের জন্য, অতঃপর আত্মীয়-স্বজনের জন্য ব্যয় করা
১৪. অধ্যায়ঃ নিকটাত্মীয়, স্বামী, সন্তান ও পিতামাতার জন্য ব্যয় করার ফাযীলাত যদিও তারা মুশরিক হয়
১৫. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে দান করে তার জন্য সাওয়াব পৌছানো
১৬. অধ্যায়ঃ সকল প্রকার সৎ কাজই সদাক্বাহ্
১৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়কারী ও ব্যয় করিতে কৃপণতাপ্রকাশকারী সম্পর্ক
১৮. অধ্যায়ঃ যে সময় সদাক্বাহ্ গ্রহণকারী পাওয়া যাবে না সে সময় আসার পূর্বে দান করার প্রতি উৎসাহিত করা প্রসঙ্গে
১৯. অধ্যায়ঃ হালাল উপার্জন থেকে সদাক্বাহ্ গ্রহণ এবং সদাক্বার মাল রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে
২০. অধ্যায়ঃ দানের জন্য উদ্বুদ্ধ করা যদিও তা এক টুকরা খেজুর বা ভালো কথা বলার মাধ্যমে হয়, সদাক্বাহ্ জাহান্নামের অগ্নি থেকে হিফাযাতকারী
২১. অধ্যায়ঃ সদাক্বাহ্ করার জন্য পারিশ্রমিকের বোঝা বহন করা, দানকারীর দান পরিমাণে কম করলে খোঁটা দেয়া বা তাকে হেয় মনে করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ
২২. অধ্যায়ঃ দুগ্ধবতী জন্তু বিনামূল্যে দান করার ফাযীলাত
২৩. অধ্যায়ঃ দানশীল ব্যক্তি ও কৃপণ ব্যক্তির উদাহরণ
২৪. অধ্যায়ঃ সদাক্বাহ্ যদি কোন ফাসিক্ব বা অনুরূপ কোন অসৎ ব্যক্তির হাতে পড়ে তাহলেও দাতা এর সাওয়াব পাবে
২৫. অধ্যায়ঃ আমানাতদার কোষাধ্যক্ষ ও স্ত্রী লোকের সদাক্বায় সাওয়াব হওয়া সম্পর্কে, স্ত্রী স্বামীর প্রকাশ্য অনুমতি সাপেক্ষে অথবা প্রচলিত প্রথামত স্বামীর সম্পদ থেকে দান করলে সে তার সাওয়াব পাবে
৯. অধ্যায়ঃ সাদকাহ প্রদানে উৎসাহ প্রদান
২১৯৪. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা দুপুরের পর আমি নবী [সাঃআঃ] এর সাথে মাদীনার কঙ্করময় মাঠ দিয়ে চলছিলাম এবং আমরা উহুদ পাহাড়ের দিকে তাকাচ্ছিলাম। রসূলুলাহ [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ “যদি এ উহুদ পাহাড় আমার জন্য স্বর্ণে পরিণত হয় তাহলে তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ঋণ পরিশোধ করার পরিমান অর্থ ছাড়া অতিরিক্ত একটি দীনারও আমার কাছে অবশিষ্ট থাক তা আমি পছন্দ করি না। তা আমার হস্তগত হলে আমি আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এভাবে বন্টন করে দিব। তিনি সামনের দিকে, ডানে এবং বামে হাতের ইংগিতে এক এক ভরা মুঠ দেখালেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরা আবার অগ্রসর হলাম। তিনি আবার বলিলেন, হে আবু যার! আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি হাজির আছি। তিনি বলিলেন, ক্বিয়ামাতের দিন অঢেল সম্পদের মালিকেরা কম সাওয়াব লাভ করিবে। তবে যারা সৎপাত্রে যথোচিতভাবে এভাবে দান করিবে তাদের সাওয়াব কোন অংশেই কম হইবে না। তিনি মুষ্টি ভরে পূর্বের ন্যায় ইংগিত করে দেখালেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা চলতে থাকলাম। কিছু দূর অগ্রসর হলে তিনি বলিলেন, হে আবু যার! তুমি এখানে অপেক্ষা কর এবং আমার ফিরে না আসা পর্যন্ত কোথাও যাবে না। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি চলে গেলেন এবং আমার দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেলেন। তারপর আমি কিছু গোলমাল ও শব্দ শুনতে পেয়ে মনে করলাম, বোধ হয় রসূলুলাহ [সাঃআঃ] শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। আমি তাঁকে খোঁজার জন্য মনস্থ করলাম। কিন্তু সাথে সাথে এ স্থান ত্যাগ না করার জন্য তার নির্দেশ আমার মনে পড়ে গেল। তাই আমি অপেক্ষা করিতে লাগলাম। অতঃপর তিনি ফিরে আসলে আমি যা কিছু শুনেছিলাম তা তাকে জানালাম। তিনি বলিলেন, তুমি যার শব্দ শুনেছ তিনি ছিলেন জিবরীল। তিনি আমার কাছে এসেছিলেন এবং আমাকে বলেছেন, “আপনার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন প্রকার শির্ক না করা অবস্থায় মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, যদি সে যিনা করে এবং চুরি করে [তবুও কি] তিনি বলিলেন, যদিও সে যিনা করে এবং চুরি করে তবুও।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৭৩, ইসলামিক সেন্টার- ২১৭৫]
২১৯৫. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন এক রাতে আমি বাইরে বের হলাম। হঠাত রসূলুলাহ [সাঃআঃ] -কে একাকী চলতে দেখলাম, তাহাঁর সাথে অন্য কোন লোক ছিল না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি ধারণা করলাম, তিনি বোধ হয় কাউকে সাথী করিতে পছন্দ করছেন না, তাই এভাবে একাকী চলছেন [অন্যথায় সাহাবিগণ তো কোন সময়েই তাকে একাকী বের হইতে দিতেন না]। আবু যার [রাদি.] বলেন, তাই আমি চাঁদের আলোকে বা ছায়ায় চলতে লাগলাম [যাতে তিনি আমাকে দেখিতে না পান]। তিনি পিছনের দিকে ফিরে আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করিলেন কে? আমি বললাম “আবু যার! আল্লাহ আমাকে আপনার খিদমাতে উৎসর্গকারী হিসেবে কবুল করুন”। তিনি বলিলেন, হে আবু যার! আমার সাথে এসো। আবু যার [রাদি.] বলেন, তারপর কিছু সময় তাহাঁর সাথে চলার পর তিনি বলিলেন, যারা এ পার্থিব জীবনে অগাধ সম্পদের মালিক তারা কিয়ামাতের দিন নিঃস্ব হইবে। তবে যাদেরকে আল্লাহ তাআলা সম্পদ দানের পর তারা নিজেদের সম্পদ ডানে, বামে, সামনে, পিছনে ছড়িয়ে দিবে এবং এর দ্বারা বিভিন্নমুখী পূন্যের কাজ করিবে তারা এর ব্যতিক্রম। [অর্থাৎ এরা ধনী হলেও পরকালে মর্যাদার দিক থেকে কোন প্রকার পিছিয়ে থাকিবে না।] আবু যার [রাদি.] বলেন, অতঃপর আমি কিছু সময় তাহাঁর সাথে হাঁটার পর তিনি আমাকে বলিলেন, এখানে তুমি বসে থাক। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আমাকে এমন একটি পরিষ্কার স্থানে বসালেন যার চতুষ্পার্শে পাথর ছিল। তিনি আমাকে বলিলেন, আমার ফিরে আসা পর্যন্ত তুমি এখানে বসে থাকিবে। আবু যার [রাদি.] আরও বলিলেন, অতঃপর তিনি পাথুরে মাঠের মধ্যে চলে গেলেন এবং এতদূরে গেলেন যে, আমি তাঁকে দেখিতে পাচ্ছিলাম না। সেখানে তিনি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবস্থান করিলেন। তারপর আমি তাঁকে আসতে আসতে এ কথা বলিতে শুনলাম, “যদিও চুরি করে, যদিও যিনা করে।” তিনি যখন ফিরে আসলেন আমি আর ধৈর্য ধরতে পারলাম না। তাই তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ হিসেবে কবুল করুন, ঐ পাথুরে স্থানে আপনি কার সাথে আলাপ করছিলেন? আমিতো আপনার কথার জবাব দানকারী কাউকে দেখিতে পাইনি! তিনি বলিলেন, জিবরীল [আঃ]। পাথুরে স্থানে আমার আগেই তিনি এসেছিলেন এবং আমাকে বলেছেন, “আপনি আপনার উম্মাতকে সুসংবাদ দিন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শির্ক না করা অবস্থায় মারা যাবে, সে জান্নাতে যাবে। “অতঃপর আমি বললাম, হে জিবরীল! যদি আমার সে উম্মাত চুরি করে এবং যিনা করে? তিনি এবারো বলিলেন, তবুও। তিনি বলেন, আমি পুনরায় বললামঃ যদিও সে চুরি করে এবং যিনায় লিপ্ত হয়? তিনি বলিলেন, হ্যা যদিও সে শরাব [মাদক দ্রব্য] পান করে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৭৪, ইসলামিক সেন্টার- ২১৭৬]
১০. অধ্যায়ঃ সম্পদ পুঞ্জিভুতকারী ও তাদের শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে
২১৯৬. আহনাফ ইবনি ক্বায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি মাদীনায় আসার পর একদা কুরায়শদের এক সমাবেশে বসা ছিলাম। সেখানে তাদের [গোত্রীয় নেতা] দলপতিও উপস্থিত ছিল। এমন সময় মোটা কাপড় পরিহিত সুঠাম দেহের অধিকারী ও রুক্ষ চেহারার এক ব্যক্তি আসল। এসে দাঁড়িয়ে বলিল, সম্পদ কুক্ষিগতকারীদের সুসংবাদ দাও যে, একটি পাথর জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে, তাদের কারো বুকের মাঝখানে রাখা হইবে। এমনকি তার কাঁধের হাড় ভেদ করে বেরিয়ে যাবে এবং কাঁধের হাড়ের উপর রাখা হলে তা স্তনের বোঁটা ভেদ করে বেরিয়ে যাবে এবং পাথরটি [আগুনের উত্তাপের ফলে] কাঁপতে থাকিবে। বর্ণনাকারী বলেন, উপস্থিত লোকেরা সবাই মাথা নত করে থাকল এবং তার বক্তব্যের প্রত্যুত্তরে কাউকে কিছু বলিতে দেখলাম না। অতঃপর সে পিছন ফিরে এসে একটি খুটির কাছে বসে পড়ল, আমিও তাকে অনুসরণ করলাম। অর্থাৎ তার কাছে এসে বসলাম। অতঃপর আমি বললাম যে, এরাতো তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছে বলে আমি দেখিতে পাচ্ছি। তিনি [উত্তরে] বলিলেন, এরা [দ্বীন সম্পর্কে] কিছুই বোঝে না বা জ্ঞান রাখে না। আমার বন্ধুবর আবুল ক্বাসিম [সাঃআঃ] একবার আমাকে ডাকলেন এবং আমি উপস্থিত হলাম। অতঃপর তিনি বলিলেন, “তুমি উহুদ পাহাড় দেখিতে পাচ্ছ? আমি তখন সূর্যের দিকে আমার দৃষ্টি নিবন্ধ করলাম এবং ধারণা করলাম তিনি হয়তো আমাকে কোন কাজে পাঠাবেন। আমি বললাম, হ্যাঁ দেখিতে পাচ্ছি। অতঃপর তিনি বলিলেন, আমি এটা চাই না যে, এ পাহাড় আমার জন্য সোনা হোক আর যদি এত অঢেল সম্পদের মালিক আমি হয়েও যাই তাহলে ঋন পরিশোধের জন্য, শুধু তিন দীনার রেখে বাকি সব খরচ করে দিব। অতঃপর এরা শুধু দুনিয়া সঞ্চয় করেছে, আর কিছুই বুঝছে না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাকে বললাম তুমি ও তোমার কুরায়শ গোত্রীয় ভাইদের কী হয়েছে; তুমি তাদের কাছে প্রয়োজনে কেন যাওনা, মেলামেশা কর না আর কেন বা কোন কিছু গ্রহন করো না? উত্তরে সে বললো, তোমার প্রভুর শপথ! আমি আল্লাহ তাহাঁর রাসূলের সাথে সাক্ষাতের পূর্বে [অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত] তাদের কাছে পার্থিব কোন কিছু চাই না এবং দ্বীন সম্পর্কেও কোন কিছু জিজ্ঞেস করব না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ২১৭৭]
২১৯৭. আহ্নাফ ইবনি ক্বায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি কুরায়শ গোত্রের কতিপয় লোকের সাথে বসা ছিলাম। এমন সময় আবু যার [রাদি.] সেখানে এসে বলিতে লাগলেন, অগাধ সম্পদ পুঞ্জিভুতকারীদেরকে এমন এক দাগের সুসংবাদ দাও যা পিঠে লাগানো হইবে এবং পার্শ্বদেশ ভেদ করে বের হইবে। আর ঘাড়ে লাগানো হইবে এবং তা কপাল ভেদ করে বের হইবে। অতঃপর তিনি এক পাশে গিয়ে বসলেন। আমি লোকদেরকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তারা [উত্তরে] বলিল, ইনি আবু যার [রাদি.]। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি তাহাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, একটু আগে আপনাকে যে কথাটি বলিতে শুনলাম তা কী কথা ছিল? তিনি [আবু যার] বলিলেন, আমি তো সে কথাই বলছিলাম যা আমি নবী [সাঃআঃ] -এর কাছ থেকে শুনেছি। রাবী বলেন, আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, এসব দান [অর্থাৎ আমীরগন গনীমাতের মালের যে অংশ মুসলিমদেরকে দিচ্ছে] এ সম্পর্কে আপনার মত কী? তিনি বলিলেন, তোমরা তা গ্রহন করিতে থাক, কেননা ব্যয়ভার বহনের জন্য এর দ্বারা এখন সাহায্য হচ্ছে। কিন্তু যখন এ দান বা গনিমাত তোমার দ্বীনের বিনিময়ে [মানে হলো দ্বীন ও ঈমান বিক্রি করা তোমাকে দ্বীনের পরিপন্থি কাজে ব্য্যবহারের চেষ্টা কল্পে হয়] তখন এ দান গ্রহন করো না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৭৬, ইসলামিক সেন্টার- ২১৭৮]
১১. অধ্যায়ঃ দানশীলতার ফযিলত
২১৯৮. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “হে আদম সন্তানেরা! তোমরা অকাতরে দান করিতে থাক, আমিও তোমাদের উপর ব্যয় করব”। নবী [সাঃআঃ] আরও বলেন, আল্লাহর ডান হাত প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ। রাত দিন অনবরত দান করলেও তা মোটেই কমছে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৭৭, ইসলামিক সেন্টার- ২১৭৯]
২১৯৯. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুলাহ [সাঃআঃ] থেকে কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তার একটি নিম্নরুপ। তিনি বলেন, রসূলুলাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আমাকে বলেছেন, খরচ কর, তোমার উপরও খরচ করা হইবে। রসূলুলাহ [সাঃআঃ] আরো বলেছেন, আল্লাহ তাআলার হাত আরো প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ। রাত দিন ব্যয় করা সত্বেও তা মোটেই কমছে না। একটু ভেবে দেখ! আসমান যমীন সৃষ্টি থেকে এ পর্যন্ত যে বিপুল পরিমান ব্যয় করিয়াছেন এতে তার হাত একটুও খালি হয়নি। তিনি বলেন, তাহাঁর [আল্লাহর] আরশ পানির উপর এবং তাহাঁর অপর হাতে রয়েছে মৃত্যু। যাকে ইচ্ছা করেন উপরে উঠান ও উন্নত করেন। আর যাকে চান নিচু করেন, অবনত করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ২১৮০]
১২. অধ্যায়ঃ পরিবার-পরিজন ও দাস-দাসীদের ভরণ পোষনের ফযিলত এবং তা না করার অপরাধ
২২০০. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুলাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি যে সব দীনার [বা স্বর্ণমুদ্রা] ব্যয় করে থাকে এর মধ্যে ঐ দীনারটি উত্তম যা সে তার পরিবার-পরিজনের উদ্দেশে খরচ করে। অনুরূপ ভাবে আল্লাহর পথে [অর্থাৎ জিহাদের উদ্দেশ্যে] তার আরোহনের জন্তুর জন্য সে যে দীনার ব্যয় করে তা উত্তম এবং আল্লাহর পথে তার সঙ্গী সাথীদের জন্য যে দীনার ব্যয় করে তা উত্তম।
আবু ক্বীলাবাহ্ বলেন, তিনি পরিবারের লোকজন দিয়ে শুরু করিয়াছেন। অতঃপর আবু ক্বিলাবাহ [রাদি.] আরো বলেন, ওই ব্যক্তির চেয়ে আর কে বেশী সাওয়াবের অধিকারী যে তার ছোট ছোট সন্তানদের জন্য খরচ করে এবং আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে তাদেরকে পবিত্র রাখেন, উপকৃত করেন এবং অভাব মুক্ত রাখেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ২১৮১]
২২০১. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুলাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ একটি দীনার তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করলে, একটি দীনার গোলাম আযাদ করার জন্য এবং একটি দীনার মিসকীনদেরকে দান করলে এবং আর একটি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করলে। এর মধ্যে [সাওয়াবের দিক থেকে] ওই দীনারটিই উত্তম যা তুমি পরিবারের লোকদের জন্য ব্যয় করলে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৮০, ইসলামিক সেন্টার- ২১৮২]
২২০২. খায়সামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি আবদুল্লাহ ইবনি আম্র [রাদি.] -এর সাথে বসা ছিলাম, এমন সময় তার কোষাধ্যক্ষ আসলেন। তিনি বলিলেন, তুমি কি গোলামদের খাবার ব্যবস্থা করেছ? তিনি বলিলেন, না। অতঃপর তিনি বলেন, তুমি গিয়ে তাদের খাবার দিয়ে আসো। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুলাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যাদের ভরণ-পোষণ করা, ব্যায়ভার বহন করা কর্তব্য তা না করে আটকে রাখাই কোন ব্যক্তির গুনাহগার হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৮১, ইসলামিক সেন্টার- ২১৮৩]
১৩. অধ্যায়ঃ সর্বপ্রথম নিজের জন্য, অতঃপর ঘরের লোকের জন্য, অতঃপর আত্মীয় স্বজন এর জন্য ব্যয় করা
২২০৩. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বনু উয্রাহ্ গোত্রের এক ব্যক্তি তার এক গোলামকে তার মৃত্যুর পর মুক্ত হওয়ার কথা দিলেন। অতঃপর এ সংবাদ রসূলুলাহ [সাঃআঃ] -এর কানে পৌছলে তিনি বলিলেন, এ ছাড়া তোমার কাছে কি আর কোন সম্পদ আছে? তিনি বলিলেন, না। নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, এমন কে আছ যে আমার কাছ থেকে এ গোলামটিকে ক্রয় করিবে? নুআয়ম ইবনি আবদুল্লাহ আল আদাবী [রাদি.] তাকে আটশ দিরহামে ক্রয় করিলেন। তারপর তিনি রসূলুলাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে এ দিরহামগুলো নিয়ে আসলেন। তিনি তা গোলামের মালিককে বুঝিয়ে দিয়ে বলিলেন, “এ অর্থ তুমি প্রথমে তোমার নিজের জন্য ব্যয় কর, তারপর যদি কিছু বাকি থাকে তাহলে তোমার পরিবারের লোকদের জন্য তা ব্যয় কর, অতঃপর তোমার নিকটাত্মীয়দের জন্য ব্যয় কর, এরপর ও যদি কিছু অবকাশ থাকে তাহলে তা এদিকে সেদিকে ব্যয় কর”। এ বলে তিনি সামনে ডানে ও বামে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৮২, ইসলামিক সেন্টার- ২১৮৪]
২২০৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আবু মাযকুর নামে আনসার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি ছিল। তার মৃত্যুর পর তার গোলাম আযাদ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তার নাম ছিল ইয়াকুব। হাদিসের অবশিষ্ট অংশ লায়স বর্ণিত হাদীসের সমার্থবোধক।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ২১৮৫]
১৪. অধ্যায়ঃ নিকটাত্মীয়, স্বামী , সন্তান ও পিতামাতার জন্য ব্যয় করার ফযিলত যদিও তারা মুশরিক হয়
২২০৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মাদীনায় আনসার সম্প্রদায়ের মধ্যে আবু ত্বলহাহ্ [রাদি.] প্রচুর সম্পদের মালিক ছিলেন। তাহাঁর সকল সম্পদের মধ্যে “বায়রুহা” নামক বাগানটি তাহাঁর সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ ছিল। এটি মাসজিদে নাবাবীর সামনেই অবস্থিত ছিল। রসূলুলাহ [সাঃআঃ] ওই বাগানে যেতেন এবং এর মিষ্টি পানি পান করিতেন।
আনাস [রাদি.] বলেন, যখন এ আয়াত- “তোমরা যতক্ষন তোমাদের নিজেদের প্রিয় জিনিস [আল্লাহর পথে] ব্যয় না করিবে- ততক্ষন কিছুতেই প্রকৃত পুণ্য লাভ করিতে পারবে না” [সূরাহ আল ইমরান ৩ঃ ৯২] অবতীর্ণ হল, আবু ত্বলহাহ্ [রাদি.] রসূলুলাহ [সাঃআঃ] -এর সামনে দাঁড়িয়ে বলিলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা তার কিতাবে বলেন, “তোমরা কিছুতেই প্রকৃত পুণ্য লাভ করিতে পারবে না যতক্ষন তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় না করিবে”। আর আমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ হল “বায়রাহা” নামক বাগানটি। আমি তা আল্লাহর পথে সাদকাহ [দান] করলাম। আমি এর থেকে কল্যাণ পেতে চাই এবং আল্লাহর কাছে এর সাওয়াব জমা হওয়ার আশা রাখি। কাজেই হে আল্লাহর রসূল! আপনি আপনার ইচ্ছামত তা ব্যয় করুন। রসূলুলাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, অত্যান্ত ভাল কথা; এটা তো খুব লাভজনক সম্পদ। এটা তো খুব লাভজনক সম্পদ। তোমার প্রিয়জন ও নিকটবর্তী আত্মীয়দের মাঝে তা বন্টন করে দাও। অতঃপর আবু ত্বলহাহ্ [রাদি.] এটা তাহাঁর আত্মীয়-স্বজন ও তাহাঁর চাচাতো ভাইদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ২১৮৬] arbi
২২০৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, “তোমাদের প্রিয় বস্তু [আল্লাহর পথে] ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কিছুতেই প্রকৃত সাওয়াব লাভ করিতে পারবেনা”- এ আয়াত যখন অবতীর্ণ হল আবু ত্বলহাহ্ [রাদি.] বলেন, এ তো মহা সুযোগ। আমাদের প্রতিপালক মহান আল্লাহ তাআলা নিজেই আমাদের কাছ থেকে মাল চাচ্ছেন। তাই হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে স্বাক্ষী রেখে আমার “বায়রাহা” নামক বাগানটি আল্লাহর জন্য দান করলাম। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি তোমার এ বাগান তোমার আত্মীয়- স্বজনদের মধ্যে বন্টন করে দাও। আনাস [রাদি.] বলেন, তিনি এটা হাস্সান বিন সাবিত ও উবাই ইবনি কাব [রাদি.] -এর মধ্যে বন্টন করে দিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ২১৮৭]
২২০৭. আব্দুল্লাহর স্ত্রী যায়নাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সময় একটি দাসী আযাদ করে দেন। অতঃপর আমি এ কথা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে জানালাম। তিনি বলিলেন, “যদি তুমি এ দাসীটি তোমার মামাদের দান করিতে তাহলে অনেক বেশী সাওয়াব পেতে।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ২১৮৮]
২২০৮. আব্দুল্লাহর স্ত্রী যায়নাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মহিলাদের উদ্দেশ্য করে বলিলেন, হে নারী সমাজ! তোমরা [দান] সাদকাহ কর যদিও তা তোমাদের গহনাপত্রের মাধ্যমে হয়। যায়নাব [রাদি.] বলেন, এ কথা শুনে আমি গিয়ে আমার স্বামী আবদুল্লাহকে বললাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে সাদকাহ করিতে বলেছেন। আর তুমি তো গরীব অভাবী মানুষ, তাই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস কর, তোমাকে দান করলে তা দান হিসেবে গণ্য হইবে কিনা? তা না হলে অপর কাউকে দান করব! রাবী বলেন, আমার স্বামী আবদুল্লাহ আমাকে বলিলেন, বরং তুমি যাও। অতঃপর আমিই গেলাম এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর দরজায় আনসার সম্প্রদায়ের অপর এক মহিলাকে একই উদ্দেশ্যে দাঁড়ানো দেখলাম। কারণ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হলেন অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও প্রভাবশালী লোক। অতঃপর বিলাল [রাদি.] বের হয়ে আসলে আমরা তাঁকে বললাম, আপনি গিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলুন, দুজন মহিলা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। তারা আপনার কাছে জানতে চাচ্ছে- যদি তারা তাদের নিজ স্বামীকে দান করে এবং তাদের ঘরেই প্রতিপালিত ইয়াতীমকে দান করে তাহলে কি তা আদায় হইবে? আর অনুরোধ হলো আমাদের পরিচয় তাঁকে জানাবেন না। রাবী বলেন, অতঃপর বিলাল [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, মহিলাদ্বয় কে কে? তিনি বলিলেন জনৈক আনসার গোত্রের এবং অপরজন যায়নাব? তিনি বলিলেন, আবদুল্লাহর স্ত্রী যায়নাব। অতঃপর তাঁকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তারা উভয়েই তাদের দানের জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব পাবে। এক-নিকটাত্নীয়দের সাথে সদ্ব্যবহারের জন্য। দুই-সাদকাহ করার জন্য।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৮৭, ইসলামিক সেন্টার- ২১৮৯]
২২০৯. আবদুল্লাহ [রাদি.] -এর স্ত্রী যায়নাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
…… পূর্বের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তাতে এও আছে- যায়নাব [রাদি.] বলেন, আমি মাসজিদের ভিতরে ছিলাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দেখে বলিলেন-“ “সাদকাহ দাও যদিও তা তোমার গহনাপত্রের মাধ্যম হয়।””
[ই.ফা.২১৮৮,ইসলামিক সেন্টার-২১৯০]
২২১০. যায়নাব বিনতে আবু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল [সাঃআঃ]! আবু সালামার সন্তানদের জন্য আমি যা খরচ করি তার বিনিময়ে আমি কি সাওয়াব পাব? আর আমি চাই না যে, তারা আমার হাত ছাড়া হয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ুক। কেননা তারা তো আমারই সন্তান। অতঃপর তিনি [উত্তরে ] বললেনঃ হ্যাঁ, তাদেরকে তুমি যা দান করিবে তার সাওয়াব পাবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৮৯, ইসলামিক সেন্টার- ২১৯১]
২২১১. হিশাম উরওয়াহ থেকে এ সুত্র হইতে বর্ণীতঃ
উপরের হাদিসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৯০, ইসলামিক সেন্টার- ২১৯২]
২২১২. আবু মাসঊদ আল বাদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ মুসলিম ব্যক্তি সাওয়াবের আশায় তার পরিবার-পরিজনের জন্য যা কিছু খরচ করিবে তা সবই তার জন্য সাদকাহ অর্থাৎ দান হিসেবে গণ্য হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৯১, ইসলামিক সেন্টার- ২১৯৩]
২২১৩. শুবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এ সুত্র হইতে বর্ণীতঃ
উপরের হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৯২, ইসলামিক সেন্টার- ২১৯৪]
২২১৪. আসমা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল [সাঃআঃ]! আমার আম্মা এসেছেন। তবে তিনি আমাদের দ্বীনের অনুসারী হইতে আগ্রহী নন বা ইসলাম গ্রহণে বিমুখ, এখন আমি কি তার সাথে সৌজন্যমূলক ব্যবহার করব? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৯৩, ইসলামিক সেন্টার- ২১৯৫]
২২১৫. আবু বাকরের কন্যা আসমা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার আম্মা আমার কাছে এসেছেন যে সময় কুরায়শদের সাথে সন্ধি বলবৎ ছিল আর তখন তিনি মুশরিকা ছিলেন। আসমা [রাদি.] বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বললাম, আমার মা আমার কাছে এসেছেন আশা নিয়ে। আমি কি আমার আম্মার সাথে সদ্ব্যবহার করব? উত্তরে তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি তোমার আম্মার সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ কর।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৯৪, ইসলামিক সেন্টার- ২১৯৬]
১৫. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে দান করে তার জন্য সাওয়াব পৌছানো
২২১৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ] এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল [সাঃআঃ]! আমার মা হঠাৎ করে মারা গেছেন এবং কোন ওয়াসিয়্যাত করিতে পারেননি। আমার মনে হয়, তিনি যদি কথা বলিতে পারতেন তাহলে ওয়াসিয়্যাত করে যেতেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে সাদকাহ করি তাহলে কি তিনি সাওয়াব পাবেন? উত্তরে তিনি বলিলেন, হ্যাঁ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৯৫, ইসলামিক সেন্টার- ২১৯৭]
২২১৭. যুহায়র ইবনি হারব, আবু কুরায়ব, আলী ইবনি হুজ্র ও হাকাম ইবনি মূসা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] … হইতে বর্ণীতঃ
বর্ণনাকারী হিশাম এ সানাদের মাধ্যমে উপরের হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
আর আবু উসামার হাদীসে “তিনি ওয়াসিয়্যাত করেননি”” বলা হয়েছে যেমনটি ইবনি বিশর এর বর্ণনায় রয়েছে। কিন্তু বাকী রাবীগণ এ কথা বর্ণনা করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ২১৯৮]
১৬. অধ্যায়ঃ সকল প্রকার সৎ কাজই সাদকাহ
২২১৮. হুজায়ফাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তবে কুতায়বাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -এর হাদীসে রয়েছে যে, “তোমাদের নবী [সাঃআঃ] বলেছেন”।” আর ইবনি শাইবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এর হাদীসে আছে যে, নবী [সাঃআঃ] বলেন, ““প্রতিটি ভাল কাজই সাদকাহ অর্থাৎ দান হিসেবে গণ্য।””
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৯৭, ইসলামিক সেন্টার- ২১৯৯]
২২১৯. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] -এর কিছু সংখ্যক সাহাবী তার কাছে এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! ধন সম্পদের মালিকরা তো সব সাওয়াব নিয়ে নিচ্ছে। কেননা আমরা যেভাবে সালাত আদায় করি তারাও সেভাবে আদায় করে। আমরা যেভাবে সিয়াম পালন করি তারাও সেভাবে সিয়াম পালন করে। কিন্তু তারা তাদের অতিরিক্ত সম্পদ দান করে সাওয়াব লাভ করছে অথচ আমাদের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ আল্লাহ তাআলা কি তোমাদেরকে এমন কিছু দান করেননি যা সাদকাহ করে তোমরা সাওয়াব পেতে পার? আর তা হলো প্রতেক তাসবীহ
سُبْحَانَ اللهِ
উচ্চারণঃ সুবহানাল্ল-হ, অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র
একটি সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর
الْحَمْدُ لِلَّهِ
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহ, অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর
একটি সাদকাহ, প্রত্যেক তাহমীদ [আলহামদু লিল্লাহ] বলা একটি সাদকাহ, প্রত্যেক
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু
বলা একটি সাদকাহ, প্রত্যেক ভাল কাজের আদেশ দেয়া এবং মন্দ কাজ করিতে দেখলে নিষেধ করা ও বাধা দেয়া একটি সাদকাহ। এমনকি তোমাদের শরীরের অংশে সাদকাহ রয়েছে। অর্থাৎ আপন স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও একটি সাদকাহ। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল [সাঃআঃ]! আমাদের কেউ তার কাম প্রবৃত্তিকে চরিতার্থ করিবে বৈধ পথে আর এতেও কি তার সাওয়াব হইবে? তিনি বলিলেন, তোমরা বল দেখি, যদি তোমাদের কেউ হারাম পথে নিজের চাহিদা মেটাতে বা যিনা করত তাহলে কি তার গুনাহ হত না? অনুরূপভাবে যখন সে হালাল বা বৈধ পথে কামাচার করিবে তাতে তার সাওয়াব হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৯৮, ইসলামিক সেন্টার- ২২০০]
২২২০. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক আদাম সন্তানকেই ৩৬০ টি গ্রন্থি বিশিষ্ট করে সৃষ্টি করিয়াছেন। অতএব যে ব্যক্তি ঐ সংখ্যা পরিমাণ আল্ল-হ-আকবার বলবে,
الْحَمْدُ لِلَّهِ
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহ, অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর
বলবে,
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু
লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ বলবে,
سُبْحَانَ اللهِ
উচ্চারণঃ সুবহানাল্ল-হ, অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র
বলবে,
আস্তাগফিরুল্ল-হ বলবে, মানুষের চলার পথ থেকে একটি পাথর বা একটি কাঁটা বা একটি হাড় সরাবে, সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে, সে ক্বিয়ামাতের দিন এমনভাবে চলাফেরা করিবে যে, সে নিজেকে ৩৬০ [গ্রন্থি] সংখ্যা পরিমাণ জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে অর্থাৎ বেঁচে থাকিবে। আবু তাওবাহ্ তাহাঁর বর্ণনায় এ কথাও উল্লেখ করিয়াছেন যে, সে এ অবস্থায় সন্ধ্যা করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৯৯, ইসলামিক সেন্টার- ২২০১]
২২২১. মুআবিয়াহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমার ভাই যায়দ এ সানাদে উপরের হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তিনি এখানে ““আও আমারা বিল মারূফ”” [সৎকাজের আদেশ দিবে] এ কথাটি ব্যতীত উল্লেখ করিয়াছেন এবং অন্য সূত্রে তিনি বলেছেন যে, “সে ঐ দিন ঐ অবস্থায় সন্ধ্যা করিবে। ”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২০০, ইসলামিক সেন্টার- ২২০২]
২২২২. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিটি মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর রাবী যায়দের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তাহাঁর হাদীসের মধ্যে ““সেদিন সে চলাফেরা করিবে”” কথাটি বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২০১, ইসলামিক সেন্টার- ২২০৩]
২২২৩. সাঈদ ইবনি আবু বুরদাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতার সূত্রে তাহাঁর দাদা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের উপর সাদকাহ করা ওয়াজিব। প্রশ্ন করা হলো, যদি সাদকাহ করার জন্য কিছু না পায় তবে? তিনি বলিলেন, তবে সে নিজ হাতে উপার্জন করিবে এবং নিজে উপকৃত হইবে ও সাদকাহ করিবে। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হল, যদি সে এতেও সক্ষম না হয় তবে কী হইবে? তিনি বলিলেন, তাহলে সে অসহায় আর্ত মানুষের সাহায্য করিবে। রাবী বলেন, আবার জিজ্ঞেস করা হল, যদি সে এতেও সক্ষম না হয়? তিনি বলিলেন, তাহলে সৎ কাজের কিংবা কল্যাণের আদেশ করিবে। আবারো জিজ্ঞেস করা হল, যদি সে তাও না করে? তিনি বলিলেন, তবে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকিবে। কেননা এটাও সাদকাহ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২০২, ইসলামিক সেন্টার- ২২০৪]
২২২৪. শুবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২০৩, ইসলামিক সেন্টার- নেই]
২২২৫. হাম্মাদ ইবনি মুনাব্বিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু হুরায়রাহ [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করিলেন। এর মধ্যে একটি হলো- রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরের প্রত্যেকটি গ্রন্থির উপর প্রতিদিনের সাদকাহ ধার্য রয়েছে। দুব্যক্তির মধ্যে ইনসাফ করে দেয়াও একটি সাদকাহ। কোন ব্যক্তিকে সওয়ারীর উপর আরোহণে সাহায্য করা অথবা তার মালামাল সওয়ারীর উপরে তুলে দেয়াও একটি সাদকাহ। তিনি আরো বলেন, সকল প্রকার ভাল কথাই এক একটি সাদকাহ, সালাত আদায়ের জন্য মাসজিদে যেতে যতটি পদক্ষেপ ফেলা হয় তার প্রতিটিই এক একটি সাদকাহ এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাও একটি সাদকাহ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২০৪, ইসলামিক সেন্টার- ২২০৫]
১৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়কারী ও ব্যয় করিতে কৃপণতাপ্রকাশকারী সম্পর্ক
২২২৬. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক বান্দা যখন সকালে ওঠে দুজন মালাক [ফেরেশতা] অবতীর্ণ হন। তাদের জনৈক বলেন, “হে আল্লাহ! খরচকারীর ধন আরো বাড়িয়ে দাও” এবং দ্বিতীয়জন বলেন, “হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দাও।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২০৫, ইসলামিক সেন্টার- ২২০৬]
১৮. অধ্যায়ঃ যে সময় সদাক্বাহ গ্রহণকারী পাওয়া যাবে না সে সময় আসার পূর্বে দান করার প্রতি উৎসাহিত করা প্রসঙ্গে
২২২৭. হারিসাহ্ ইবনি ওয়াহ্ব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ তোমরা সাদকাহ দাও, এমন এক সময় আসবে মানুষ তার সাদকাহ নিয়ে যাকে দিতে যাবে সে বলবে, যদি তুমি গতকাল আসতে তাহলে আমি এটা গ্রহণ করতাম। এখন আমার আর প্রয়োজন নেই। অতঃপর সে সাদকাহ নেয়ার মতো কোন লোক পাবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২০৬, ইসলামিক সেন্টার-২২০৭]
২২২৮. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে যখন কোন লোক তার স্বর্ণের সাদকাহ নিয়ে ঘুরতে থাকিবে কিন্তু নেয়ার মতো কোন লোক পাবে না। আর একজন পুরুষের পিছনে চল্লিশ জন করে নারীকে অনুসরণ করিতে দেখা যাবে। পুরুষের সংখ্যা কম এবং স্ত্রী লোকের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে তারা এদের কাছে আশ্রয় নিবে।
আর ইবনি বার্রাদের বর্ণনায় বলে হয়েছে-“তুমি দেখিতে পাবে কোন ব্যক্তিকে”।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২০৭, ইসলামিক সেন্টার-২২০৮]
২২২৯. আবু হূরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাত অনুষ্ঠিত হইবে না যে পর্যন্ত সম্পদের প্রাচুর্য না আসবে। এমনকি কোন ব্যক্তি সম্পদের যাকাত নিয়ে ঘুরবে কিন্তু নেয়ার মত লোক পাবে না। আরবের মাঠ ঘাট তখন চারণভূমি ও নদী-নালায় পরিনত হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২০৮, ইসলামিক সেন্টার-২২০৯]
২২৩০. আবু হূরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যতক্ষণ পর্যন্ত ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পেয়ে এর প্লাবণ সৃষ্টি না হইবে ততক্ষণ ক্বিয়ামাত সংঘটিত হইবে না। আর তখন মানুষের প্রাচুর্য এমন চরম রুপ লাভ করিবে যে, ধন-সম্পদের মালিকেরা এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়বে যে, তার যাকাত কে গ্রহণ করিবে ও এমন লোক কোথায় পাওয়া যাবে। সাদকাহ গ্রহণের জন্য কাউকে ডাকা হলে সে বলবে, আমার এর প্রয়োজন নেই।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২০৯, ইসলামিক সেন্টার-২২১০]
২২৩১. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জমিন তার বক্ষস্থিত সোনা রুপা স্তম্ভের ন্যায় কলিজার টুকরাসহ বমি করে দিবে। অতঃপর হত্যাকারী এসে বলবে, আমি তো এর জন্যই খুন করেছিলাম। আত্মীয়তা বন্ধন ছিন্নকারী এসে বলবে, এর জন্যই তো আমি আত্মীয়তা ছিন্ন করেছিলাম এবং তাদের হাক্ব নষ্ট করেছিলাম। আত্মীয়তা বন্ধন ছিন্নকারী এসে বলবে, এর জন্যই তো আমি আত্মীয়তা ছিন্ন করেছিলাম এবং তাদের হাক্ব নষ্ট করেছিলাম। চোর এসে বলবে, এসবের জন্যই তো আমার হাত কাটা হয়েছে। তারপর সকলেই একে ছেড়ে দিবে এবং কেউই এর থেকে কিছুই নিবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২১০, ইসলামিক সেন্টার-২২১১]
১৯. অধ্যায়ঃ হালাল উপার্জন থেকে সাদকাহ গ্রহণ এবং সদাক্বার মাল রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে
২২৩২. আবু হূরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পবিত্র অর্থাৎ হালাল দ্বারা সাদকাহ দেয়- আর আল্লাহ্ পবিত্র বা হালাল মাল ছাড়া গ্রহণ করেন না- করুণাময় আল্লাহ্ তার সাদকাহ ডান হাতে গ্রহণ করেন, যদিও তা একটি খেজুর হয়। অতঃপর এ সাদকাহ দয়াময় আল্লাহ্র হাতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। অবশেষে তা পাহাড়ের চেয়েও অনেক বড় হয়ে যাবে-যেমন তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বা উটের বাচ্চাকে লালন পালন করে এবং সে দিন দিন বড় হইতে থাকে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২১১, ইসলামিক সেন্টার-২২১২]
২২৩৩. আবু হূরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তি তার হালাল ও পবিত্র উপার্জিত একটি খেজুর দান করলে আল্লাহ্ তাআলা ডান হাতে তা গ্রহণ করেন এবং তোমাদের কেউ যেভাবে উটের বা ঘোড়ার বাচ্চা লালন পালন করে বড় করে থাকে, তিনিও সেভাবে এটা বাড়াতে থাকেন। অবশেষে তা পাহাড় অথবা এর চেয়েও অনেক বড় হয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২১২, ইসলামিক সেন্টার-২২১৩]
২২৩৪. সুহায়ল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ
উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
তবে [রাবীদের বর্ণনায় কিছুটা শাব্দিক পার্থক্য রয়েছে] রাওহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর হাদীসে রয়েছে বৈধ উপার্জন হইতে, অতঃপর খরচ করে সে তা তার প্রাপ্য স্থানে এবং সুলায়মানের হাদীসে “অতঃপর সে ব্যয় করে তা যথাস্থানে”।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২১৩, ইসলামিক সেন্টার-২২১৪]
২২৩৫. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ … উপরের হাদীসের অনুরূপ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২১৪, ইসলামিক সেন্টার-২২১৫]
২২৩৬. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ
“আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর প্রেরিত রসূলদের যে হুকুম দিয়েছেন মুমিনদেরকেও সে হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র ও হালাল জিনিস আহার কর এবং ভালো কাজ কর। আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে জ্ঞাত”। [সুরা আল মুমিনূন ২৩:৫১]
তিনি [আল্লাহ্] আরো বলেছেন, “তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোন! আমি তোমাদের যে সব পবিত্র জিনিস রিয্ক্ব হিসেবে দিয়েছি তা খাও”- [সুরা আল বাক্বারাহ্ ২:১৭২]। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করিলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধূসরিত রুক্ষ্ণ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে,
. ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ
“হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দুআ তিনি করে কবুল করিতে পারেন?”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২১৫, ইসলামিক সেন্টার-২২১৬]
২০. অধ্যায়ঃ দানের জন্য উদ্বুদ্ধ করা যদিও তা এক টুকরা খেজুর বা ভালো কথা বলার মাধ্যমে হয়, সাদকাহ জাহান্নামের অগ্নি থেকে হিফাযাতকারী
২২৩৭. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার সামর্থ্য রাখে সে যেন একটা খেজুর দিয়ে হলেও তাই করে। [অর্থাৎ দান যতই ক্ষুদ্র হোক তাঁকে খাটো করে দেখা যাবে না। সামান্য দানও কবূল হলে নাযাতের ওয়াসীলাহ্ হইতে পারে]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২১৬, ইসলামিক সেন্টার-২২১৭]
২২৩৮. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যকেকেই আল্লাহ্ তাআলার সাথে কথা বলিতে হইবে তা এমনভাবে যে, আল্লাহ্ ও বান্দার মধ্যে কোন দোভাষী থাকিবে না। সে ডান দিকে তাকালে তাহাঁর পৃথিবীতে করা যাবতীয় কাজ দেখিতে পাবে। আর বাম দিকে তাকালেও সে তার কৃতকর্ম [ছাড়া আর কিছু] দেখিতে পাবে না- যা তার মুখের কাছেই থাকিবে। সুতরাং এক টুকরো খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি লাভ কর।
ইবনি হুজ্র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] … খায়সামাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে অবিকল বর্ণিত হয়েছে। তবে তাহাঁর বর্ণনায় “একটি পবিত্র এবং ভালো কথার মাধ্যমে হলেও” কথাটি বর্ধিত বর্ণনা রয়েছে। ইসহাক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আম্র ইবনি মুর্রাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সুত্রে খায়সামাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২১৭, ইসলামিক সেন্টার-২২১৮]
২২৩৯. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জাহান্নামের শাস্তির কথা উল্লেখ করে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং চরম অস্বস্তির ভাব প্রকাশ করিলেন- “তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মরক্ষা কর”। তিনি পুনরায় মুখ ফিরিয়ে নিলেন ও এমন ভাব প্রকাশ করিলেন যাতে আমাদের মনে হচ্ছিল যে, তিনি তা দেখেছেন। অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মরক্ষা কর যদি তা এক টুকরা খেজুরের বিনিময়েও হয়। আর যার এ সামর্থ্যটুকু নেই সে যেন ভাল কথার মাধ্যমে তা করে”।
বর্ণনাকারী আবু কুরায়ব-এর বর্ণনায় [আরবী] যেন শব্দটির উল্লেখ নেই। তিনি বলেন, আবু মুআবিয়াহ্ আমার কাছে বলেন এবং আমাশ তার কাছে এ হাদীস বর্ণনা করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২১৮, ইসলামিক সেন্টার-২২১৯]
২২৪০. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জাহান্নামের কথা উল্লেখ করে [আল্লাহ্র কাছে] এর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করিলেন এবং তিনবার মুখ ফিরিয়ে অস্বস্তির ভাব প্রকাশ করিলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মরক্ষা কর যদি তা এক টুকরো খেজুরের মাধ্যমেও হয়। আর যদি তোমরা এতটুকু দান করিতেও সমর্থ না হও তাহলে ভাল কথার মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে বাঁচো।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২১৯, ইসলামিক সেন্টার-২২২০]
২২৪১. মুনযির ইবনি জারীর থেকে তাহাঁর পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমরা ভোরের দিকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় তাহাঁর কাছে পাদুকাবিহীন, বস্ত্রহীন, গলার চামড়ার আবা পরিহিত এবং নিজেদের তরবারি ঝুলন্ত অবস্থায় একদল লোক আসল। এদের অধিকাংশ কিংবা সকলেই মুযার গোত্রের লোক ছিল। অভাব অনটনে তাদের এ করুণ অবস্থা দেখে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মুখমণ্ডল পরিবর্তিত ও বিষন্ন হয়ে গেল। তিনি ভিতরে প্রবেশ করিলেন, অতঃপর বেরিয়ে আসলেন। তিনি বিলাল [রাদি.]-কে আযান দিতে নির্দেশ দিলেন। বিলাল [রাদি.] আযান ও ইক্বামাত দিলেন। নামাজ শেষ করে তিনি উপস্থিত মুসল্লীদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “হে মানব জাতি! তোমরা নিজেদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদের একটি মাত্র ব্যক্তি থেকে {আদম [আঃ]}! থেকে সৃষ্টি করিয়াছেন। … নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণকারী”- [সূরাহ্ আন্ নিসা ৪:১]। অতঃপর তিনি সূরাহ হাশ্রের শেষের দিকের এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তি যেন ভবিষ্যতের জন্য কী সঞ্চয় করেছে সেদিকে লক্ষ্য করে”-[সূরাহ্ আল হাশ্র ৫৯:১৮]। অতঃপর উপস্থিত লোকদের কেউ তার দীনার, কেউ দিরহাম, কেউ কাপড়, কেউ এক সাআটা ও কেউ এক সা খেজুর দান করিল। অবশেষে তিনি বলিলেন, অন্ততঃ এক টুকরা খেজুর হলেও নিয়ে আসো। বর্ণনাকারী বলেন, আনসার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি একটি বিরাট থলি নিয়ে আসলেন। এর ভারে তার হাত অবসাদ্গ্রস্ত হয়ে যাচ্ছিল কিংবা অবশ হয়ে গেল। রাবী আরো বলেন, অতঃপর লোকেরা সারিবদ্ধভাবে একের পর এক দান করিতে থাকল। ফলে খাদ্য ও কাপড়ের দুটি স্তূপ হয়ে গেল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চেহারা মুবারক খাঁটি সোনার ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে হাসতে লাগল। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন উত্তম প্রথা বা কাজের প্রচলন করে সে তার এ কাজের সাওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা তার এ কাজ দেখে তা করিবে সে এর বিনিময়েও সাওয়াব পাবে। তবে এতে তাদের সাওয়াব কোন অংশে কমানো হইবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে [ইসলামের পরিপন্থী] কোন খারাপ প্রথা বা কাজের প্রচলন করিবে, তাকে তার এ কাজের বোঝা [গুনাহ এবং শাস্তি] বহন করিতে হইবে। তারপর যারা তাকে অনুসরণ করে এ কাজ করিবে তাদের সমপরিমাণ বোঝাও তাকে বইতে হইবে। তবে এতে তাদের অপরাধ ও শাস্তি কোন অংশেই কমবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২২০, ইসলামিক সেন্টার- ২২২১]
২২৪২. মুন্যির ইবনি জারীর [রাদি.] থেকে তাহাঁর পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা দিনের প্রথম ভাগে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে ছিলাম … ইবনি জাফারের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। আর মুআয [রাদি.] হইতে বর্ণীত হাদীসে আরো আছে : [আরবী] “অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] যুহরের নামাজ আদায় করিলেন এবং ভাষণ দিলেন” উক্তিটি অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২২১, ইসলামিক সেন্টার-২২২২]
২২৪৩. মুন্যির ইবনি জারীর [রাদি.] থেকে তাহাঁর পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে বসা ছিলাম। এ সময় চামড়ার আবা পরিহিত একদল লোক আসলেন … পূর্বের হাদীসের অনুরূপ। এতে আরো আছে, অতঃপর তিনি যুহরের নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর ছোট একটি মিম্বারে উঠে আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা ও গুণগান করিলেন। অতঃপর বলিলেন, আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর কিতাবে নাযিল করিয়াছেন-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ
“হে মানব গোষ্ঠী! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় কর।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২২২, ইসলামিক সেন্টার-২২২৩]
২২৪৪. জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, পশমী কাপড় পরিহিত অবস্থায় গ্রাম থেকে কয়েক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে আসল। তিনি তাদের দুরবস্থা দেখেন। তারা অভাব অনটনে নিমজ্জিত আছে। হাদীসের অবশিষ্ঠ বর্ণনা পূর্বের হাদীসসমূহের অনুরূপ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২২৩, ইসলামিক সেন্টার-২২২৪]
২১. অধ্যায়ঃ সাদকাহ করা জন্য পারিশ্রমিকের বোঝা বহন করা, দানকারীর দান পরিমাণে কম করলে খোঁটা দেয়া বা তাকে হেয় মনে করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ
২২৪৫. আবু মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা বোঝা বহনকারী শ্রমিক ছিলাম, আমাদেরকে দান-খায়রাত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। অতঃপর আবু আক্বীল অর্ধ সা সাদকাহ করিল এবং আরেক ব্যক্তি এর চেয়ে কিছু বেশী নিয়ে আসল। মুনাফিক্বরা বলিতে লাগল আল্লাহ্র কাছে সামান্য দানের কোন মূল্য নেই এবং তিনি এর মুখাপেক্ষী নন। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি [আবু আক্বীল] শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশেই দান করিয়াছেন। অতঃপর এ আয়াত নাযিল হলো:
الَّذِينَ يَلْمِزُونَ الْمُطَّوِّعِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِينَ لاَ يَجِدُونَ إِلاَّ جُهْدَهُمْ
“যারা বিদ্রূপ করে স্বেচ্ছায় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাদকাহ প্রদানকারী মুমিনদেরকে, আর তাদেরকে যাদের পারিশ্রমিক ছাড়া কোন আয় বা সামর্থ্য নেই”- [সূরাহ আত্ ত্বওবাহ্ ৯:৭৯]। বিশ্রের বর্ণনায় [আরবী] শব্দটি নেই।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২২৪, ইসলামিক সেন্টার-২২২৫]
২২৪৬. শুবাহ্ [রাদি.] থেকে এ সুত্র হইতে বর্ণীতঃ
এ হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সাঈদ ইবনি রবী-এর বর্ণনায় আছে: আবু মাসঊদ [রাদি.] বলেন, আমরা পিঠে করে বোঝা বহন করতাম।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২২৫, ইসলামিক সেন্টার-২২২৬]
২২. অধ্যায়ঃ দুগ্ধবতী জন্তু বিনামূল্যে দান করার ফযিলত
২২৪৭. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
“যে ব্যক্তি কোন পরিবারকে এমন একটি উস্ট্রী দান করে যা সকাল ও সন্ধ্যা বড় একটি পাত্র ভর্তি দুধ দেয়, এর বিনিময়ে তার অনেক সাওয়াব হয়।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২২৬, ইসলামিক সেন্টার-২২২৭]
২২৪৮. আবু হুরায়ারাহ্ [রাদি.] নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি কিছু সংখ্যক কাজ ও অভ্যাস পরিত্যাগের নির্দেশ দান করিলেন। তিনি বলিলেন, যে ব্যক্তি মানীহাহ্ [অর্থাৎ দুগ্ধবতী জন্তু বিনামূল্যে দুধ পানের জন্য] দান করে, সকাল সন্ধ্যায় যখনই এর দুধ পান করা হয় তখনই সে একটি করে সদাকার সাওয়াব লাভ করে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২২৭, ইসলামিক সেন্টার-২২২৮]
২৩. অধ্যায়ঃ দানশীল ব্যক্তি ও কৃপণ ব্যক্তির উদাহরণ
২২৪৯. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [সাঃআঃ] বলেনঃ খরচকারী ও দান-খয়রাতকারী [এখানে বর্ণনাকারীর ভুল হয়ে গেছে সঠিক কথা হল- কৃপণ ও সদাক্বাক্বারির] উদাহরণ ঐ ব্যক্তির ন্যায় যার পরনে দুটি জামা অথবা দুটি বর্ম রয়েছে [বর্ম সম্পর্কে বর্ণনাকারী বলেন, যখন সদাক্বাকারী সাদকাহ দিতে ইচ্ছা করে] তখন ঐ বর্ম প্রশস্ত হয়ে যায় এবং তার সমস্ত শরীরে ছেয়ে যায়। আর যখন কৃপণ ব্যক্তি ব্যয় করিতে চায় তখন ঐ বর্ম তার জন্য সঙ্কীর্ণ হয়ে এবং বর্মের পরিধি স্ব-স্ব স্থানে কমে যায়। এমনকি তার সব গ্রন্থিগুলো আবৃত করে ফেলে এবং তার পায়ের চিহ্নগুলোও মুছে ফেলে। বর্ণনাকারী বলেন, আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] তার বর্ণিত হাদীসে বলেছেন, “অতঃপর নবী [সাঃআঃ] বলেন, সে তা প্রশস্ত করিতে চায় কিন্তু প্রশস্ত হয় না।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২২৮, ইসলামিক সেন্টার-২২২৯]
২২৫০. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কৃপণ ও দাতার উদাহরণ দিতে গিয়ে এমন দুব্যক্তির উল্লেখ করেন যাদের গায়ে রয়েছে দুটি লৌহবর্ম। এর কারণে তাদের দুহাত তাদের বুকের ও গলার হাঁসুলির সাথে লেগে গেছে। অতঃপর দাতা যখন দান করিতে চায় ঐ বর্ম প্রশস্ত হয়ে যায় এবং তার গ্রন্থগুলো আবৃত করে ফেলে। এমনকি তার পদচিহ্নকেও মুছে দেয়, আর কৃপণ ব্যক্তি যখন দান করিতে চায় তখন তার বর্ম সংকুচিত হয়ে কষে যায় এবং এর প্রতিটি কড়া নিজ নিজ স্থানে ফেঁসে যায়। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে তাহাঁর হাত দিয়ে জামার কলারের দিকে ইঙ্গিত করিতে দেখেছি। আর যদি তোমরা তাকে দেখিতে তাহলে সে বলত, প্রশস্ত করিতে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ঐ বর্ম প্রশস্ত হচ্ছিল না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২২৯, ইসলামিক সেন্টার-২২৩০]
২২৫১. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কৃপণ ও দানশীলদের উদাহরণ হচ্ছে এমন দুব্যক্তির মতো যাদের পরনে দুটো লৌহবর্ম রয়েছে। অতঃপর দানশীল ব্যক্তি যখন দান করার ইচ্ছা করিল তার বর্ম প্রশস্ত হয়ে গেল এমনকি তার পায়ের চিহ্ন পর্যন্ত মুছে ফেলতে লাগল। কিন্তু যখন কৃপণ ব্যক্তি দান করার ইচ্ছা করিল তখন তা সঙ্কীর্ণ হয়ে গেল এবং তার হাত গলার সাথে আটকে পড়ল আর প্রতিটি গ্রন্থি অপরটির সাথে কষে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ তারপর সে তা প্রশস্ত করার চেষ্টা করে কিন্তু তা করিতে সক্ষম হয় না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২৩০, ইসলামিক সেন্টার-২২৩১]
২৪. অধ্যায়ঃ সাদকাহ যদি কোন ফাসিক্ব বা অনুরূপ কোন অসৎ ব্যক্তির হাতে পড়ে তাহলেও দাতা এর সাওয়াব পাবে
২২৫২. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ এক ব্যক্তি বলিল, আমি আজ রাতে কিছু দান-খয়রাত করব। অতঃপর সে সাদকাহ নিয়ে বের হয়ে এক যিনাকারীকে তা অর্পণ করিল। ভোরে লোকেরা বলাবলি করিতে লাগল যে, আজ রাতে এক ব্যক্তি যিনাকারীকে দান-খয়রাত করেছে। অতঃপর সে ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহ্! সকল প্রশংসা তোমার জন্য। আমার প্রদত্ত সাদকাহ তো যিনাকারীর হাতে গিয়ে পড়েছে। এরপর সে [আবার] বলিল, আজ আমি আরো কিছু সাদকাহ করব। অতঃপর সে তা নিয়ে বের হয়ে এক ধনী লোকের হাতে অর্পণ করিল। লোকজন ভোরে আলাপ করিতে লাগল যে, আজ রাতে কে যেন এক ধনী লোককে সাদকাহ দিয়ে গেছে। সে বলিল, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা তোমার জন্য। আমার সাদকাহ তো ধনীর হাতে গিয়ে পড়েছে। তারপর সে পুনরায় বলিল, আমি আজ রাতে কিছু সাদকাহ দিব। সাদকাহ নিয়ে বের হয়ে সে এক চোরের হাতে অর্পণ করিল। অতঃপর সকালে লোকজন বলাবলি করিতে লাগল আজ রাতে কে যেন চোরকে সাদকাহ দিয়েছে। সে বলিল, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা তোমারাই। আমার প্রদত্ত সাদকাহ যিনাকারী, ধনী ও চোরের হাতে পড়ে গেছে। অতঃপর এক ব্যক্তি [মালাক বা সে যুগের কোন নবী] এসে তাকে বলিল, তোমার প্রদত্ত সকল সাদকাহই কবুল হয়েছে। যিনাকারীকে দেয়া সাদকাহ কবুল হওয়ার কারণ হলো- সম্ভবতঃ সে ঐ রাতে যিনা থেকে বিরত ছিল [কেননা সে পেটের জ্বালায় এ কাজ করত]। ধনী ব্যক্তিকে যে সাদকাহ দেয়া হয়েছিল তা কবূল হওয়ার কারণ হলো ধনী ব্যক্তি এতে লজ্জিত হয়ে হয়ত নাসীহাত গ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর দেয়া সম্পদ থেকে সেও দান করিবে বলে সঙ্কল্প করেছে। আর চোরকে দেয়া সাদকাহ কবূল হওয়ার কারণ হলো সম্ভবতঃ সে ঐ রাতে চুরি থেকে বিরত ছিল। কেননা সেও পেটের তাগিদে চুরি করত।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২৩১, ইসলামিক সেন্টার-২২৩২]
২৫. অধ্যায়ঃ আমানাতদার কোষাধ্যক্ষ ও স্ত্রী লোকের সদাক্বায় সাওয়াব হওয়া সম্পর্কে, স্ত্রী স্বামীর প্রকাশ্য অনুমতি সাপেক্ষে অথবা প্রচলিত প্রথামত স্বামীর সম্পদ থেকে দান করলে সে তার সাওয়াব পাবে
২২৫৩. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে মুসলিম আমানাতদার কোষাধ্যক্ষ নির্দেশ মুতাবিক যথাযথভাবে হুকুম পালন করে বা দান করে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রাপককে পূর্ণমাত্রায় দান করে, সেও জনৈক দাতা হিসেবে গণ্য, অর্থাৎ সেও মূল মালিকের সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২৩২, ইসলামিক সেন্টার-২২৩৩]
২২৫৪. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কোন স্ত্রীলোক ক্ষতির মনোভাব না নিয়ে স্বামীর ঘরের খাদ্যদ্রব্য দান করে, সে তার দানের সাওয়াব পাবে এবং তার স্বামীও তার উপার্জনের সাওয়াব পাবে। অনুরূপভাবে এ সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারীও মালিকের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। এতে একজনের দ্বারা অপরজনের প্রাপ্য সাওয়াব মোটেও কমবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২৩৩, ইসলামিক সেন্টার-২২৩৪]
২২৫৫. মানসূর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
উপরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রে “তার ঘরে খাদ্যশস্যের” পরিবর্তে তার “স্বামীর খাদ্যশস্যের” কথা উল্লেখ আছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২৩৪, ইসলামিক সেন্টার-২২৩৫]
২২৫৬. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোনরূপ ক্ষতির মনোভাব ছাড়া স্ত্রী যখন তার স্বামীর ঘর থেকে খরচ করে, স্বামী স্ত্রী উভয়েই এর সমান সাওয়াব লাভ করে। স্বামী সাওয়াব পায় তার উপার্জনের জন্য এবং স্ত্রী সাওয়াব পায় তার দানের জন্য। অনুরূপভাবে কোষাধ্যক্ষও সাওয়াব পাবে। তবে এদের সাওয়াব লাভের কারণে পরস্পরের সাওয়াবের কোন কমতি হইবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২৩৫, ইসলামিক সেন্টার- ২২৩৬]
২২৫৭. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
উপরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২২৩৬, ইসলামিক সেন্টার-২২৩৭]
Leave a Reply