নফল নামাজ নিজ গৃহে আদায় করা ও রাতের সালাত

নফল নামাজ নিজ গৃহে আদায় করা ও রাতের সালাত

নফল নামাজ নিজ গৃহে আদায় করা ও রাতের সালাত >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

২৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি রাত্র ঘুমিয়ে সকাল করিল তার প্রসঙ্গে আলোচনা ।
২৯. অধ্যায়ঃ নাফ্‌ল নামাজ নিজ গৃহে আদায় করা মুস্তাহাব, মাসজিদে আদায়ও জায়িয
৩০. অধ্যায়ঃ রাতের নামাজ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়মিত আমালের ফযীলাত
৩১. অধ্যায়ঃ সলাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে অথবা কুরআন পাঠ ও যিক্‌রে জিহবা জড়িয়ে যেতে লাগলে, ঘুমিয়ে পড়া কিংবা বিশ্রাম নেয়ার আদেশ, যাতে তা কেটে যায়

২৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি রাত্র ঘুমিয়ে সকাল করিল তার প্রসঙ্গে আলোচনা ।

১৭০২. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর কাছে বলা হল যে, সে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটায় [অর্থাৎ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে না ] এ কথা শুনে তিনি বললেনঃ ঐ লোকটি এমন যার কানে শাইত্বন পেশাব করে দিয়েছে অথবা বলেছেন, দু কানে।{৩৫}

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৮৭, ইসলামিক সেন্টার-১৬৯৮]

{৩৫} শাইত্বনের পেসাব দ্বারা শাইত্বন কর্তৃক ব্যক্তির বিপর্যয় বুঝানো হয়েছে । এ ক্ষেত্রে উপহাসচ্ছলে তাঁকে উজ্জীবিত করা উদ্দেশ্য । [মুসলিম শারহে নাবাবী-১ম খণ্ড ২৬৪পৃষ্টা]

১৭০৩. আলী ইবনি আবু ত্বলিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] একদিন রাতের বেলা তাহাঁর ও ফাত্বিমাহ্‌ [রাদি.]–এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি [তাহাজ্জুদের] নামাজ আদায় কর না? তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা সবাই তো আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি ইচ্ছা করলে আমাদেরকে জাগিয়ে দিতে পারেন। {আলী [রাদি.] বলেছেন} আমি এ কথা বললেঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফিরে গেলেন। যখন তিনি ফিরে যাচ্ছিলেন, আমি শুনলাম তখন তিনি উরুর উপরে সজোরে হাত চাপড়ে বলছেনঃ মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিতর্ক করিতে অভ্যস্ত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৮৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৯৫]

১৭০৪. আবু হুরায়রাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি এটি নবী [সাঃআঃ] পর্যন্ত পৌছিয়েছেন। তিনি [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন নিদ্রা যায় তখন শাইত্বন তাহাঁর মাথার শেষ প্রান্তে অর্থাৎ ঘাড়ে তিনটা গিরা দেয়। প্রত্যেকটা গিরাতে সে ফুঁক দিয়ে বলে, এখনো অনেক রাত আছে [ঘুমিয়ে থাক] তাই যখন সে ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তখন একটি গিরা খুলে যায়। এরপর সে ওযু করলে আরো একটি গিরাসহ মোট দুটি গিরা খুলে যায়। আর যখন সে [তাহাজ্জুদের ] নামাজ আদায় করে তখন সবগুলো গিরা খুলে যায়। এভাবে সে কর্মতৎপর ও প্রফুল্ল মনের অধিকারী হয়ে সকাল জেগে উঠে। অন্যথায় মানুষ বিমর্ষ ও অলস মন নিয়ে জেগে উঠে।

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৮৯, ইউ.সে. ১৬৯৬]

২৯. অধ্যায়ঃ নফল নামাজ নিজ গৃহে আদায় করা মুস্তাহাব, মাসজিদে আদায়ও জায়িয

১৭০৫. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা কিছু কিছু নামাজ বাড়ীতে আদায় করিবে। [বাড়ীতে কোন নামাজ না আদায় করে] বাড়ীকে তোমরা ক্ববর সদৃশ করে রেখো না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৯০,ইসলামিক সেন্টার- ১৬৯৭]

১৭০৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা বাড়ীতেও নামাজ আদায় কর। বাড়ী গুলোকে ক্ববর সদৃশ করে রেখো না।

[ই. ফ. ১৬৯১, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৯৮]

১৭০৭. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন মাসজিদে নামাজ আদায় করিবে তখন সে যেন বাড়ীতে আদায় করার জন্যও তার নামাজের কিছু অংশ রেখে দেয়। কেননা তার নামাজের কারণে আল্লাহ তাআলা তার বাড়ীতে বারাকাত ও কল্যাণ দান করে থাকেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৯২, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৯৯]

১৭০৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় আর যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় না এরূপ দুটি ঘরের তুলনা করা যায় জীবিত ও মৃতের সঙ্গে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৯৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৭০০]

১৭০৯. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের ঘরসমূহকে ক্ববর সদৃশ করে রেখো না [অর্থাৎ নফল নামাজ সমূহ বাড়ীতে আদায় করিবে, কারণ যে ঘরে সূরাহ্ বাক্বারাহ্ পাঠ করা হয় শাইত্বন সে ঘর থেকে পালিয়ে যায়]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৯৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৭০১]

১৭১০. যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, খেজুর পাতা অথবা চাটাই দিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি ছোট কামরা তৈরী করে তাতে নামাজ আদায় করিতে গেলেন। এ দেখে কিছু সংখ্যক লোক এসে তাহাঁর সাথে নামাজ আদায় করিলেন। যায়দ ইবনি সাবিত বলেনঃ অন্য এক রাতেও লোকজন এসে জমা হল। কিন্তু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [সে রাতে] দেরী করিলেন এবং এমনকি তিনি সে রাতে আসলেন না। তাই লোকজন উচ্চৈঃস্বরে তাঁকে ডাকাডাকি করিল এবং বাড়ীর দরজায় কঙ্কর ছুঁড়তে শুরু করিল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাগান্বিত হয়ে তাদের মাঝে এসে বললেনঃ তোমরা যখন ক্রমাগত এরূপ করছিলে তখন আমার ধারণা হল যে, এ নামাজ হয়ত তোমাদের জন্য ফরয করে দেয়া হইবে। অতএব তোমরা বাড়িতেই [নফল] আদায় করিবে। কেননা ফরয নামাজ ছাড়া অন্যসব নামাজ বাড়ীতে আদায় করা মানুষের জন্য সর্বোত্তম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৯৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৭০২]

১৭১১. যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক সময় নবী [সাঃআঃ] চাটাই দ্বারা ঘিরে মাসজিদের মধ্যে একটি কামরা বানালেন এবং কয়েক রাত পর্যন্ত সেখানে নামাজ আদায় করিলেন। তা দেখে কিছু লোক সেখানে সমবেত হল। এতটুকু বর্ণনা করার পর বর্ণনাকারী উপরে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিলেন। এর বর্ণনাতে এতটুকু অধিক বর্ণনা হয়েছে যে, এ সলাতে যদি তোমাদের জন্য ফরয করে দেয়া হত তাহলে তোমরা তা আদায় করিতে সক্ষম হইতে না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৭০৩]

৩১. অধ্যায়ঃ সলাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে অথবা কুরআন পাঠ ও যিক্‌রে জিহবা জড়িয়ে যেতে লাগলে, ঘুমিয়ে পড়া কিংবা বিশ্রাম নেয়ার আদেশ, যাতে তা কেটে যায়

১৭১৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে প্রবেশ করে দেখলেন মাসজিদের দুটি খুঁটির মাঝে রশি বেঁধে টানানো আছে। এ দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কিসের জন্য? সবাই বললঃ এটা যায়নাবের রশি। তিনি সালাত আদায় করিতে করিতে যখন ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়েন তখন এ রশিটা দিয়ে নিজেকে আটকে রাখেন। এ কখা শুনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এটি খুলে ফেল। তোমরা সানন্দ সাগ্রহ ও স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়ে সালাত আদায় করিবে। সালাত আদায় করিতে করিতে কেউ যখন ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়বে তখন বসে আদায় করিবে। যুহায়র বর্ণিত হাদীসে [আরবী] শব্দ আছে যার অর্থ হল সে যেন বসে পড়ে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭০১, ইসলামিক সেন্টার- ১৭০৮]

১৭১৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭০২, ইসলামিক সেন্টার- ১৭০৯]

১৭১৮. উরওয়াহ্ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী আয়িশা [রাদি.] তাঁকে বলেছেন যে, হাওলা বিনতু তুওয়াইত ইবনি হাবীব ইবনি আসাদ ইবনি আবদুল উয্‌যা একদিন তাহাঁর কাছে গেলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন তাহাঁর কাছে গেলেন। আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমি বললামঃ এ হল হাওলা বিনতু তুওয়াইত। লোকজন বলে থাকে যে, সে রাতে ঘুমায় না। অর্থাৎ সারারাত ইবাদাত-বন্দেগী করে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ কথায় বিস্মিত হয়ে বললেনঃ সে রাতেও ঘুমায় না? তোমরা নফল আমাল ততটুকু কর যতটুকু তোমাদের সাধ্য আছে। আল্লাহর ক্বসম, তিনি পুরস্কার দিতে ক্লান্ত হইবেন না। বরং তোমরাই [ইবাদাতে] ক্লান্ত হয়ে পড়বে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭০৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৭১০]

১৭১৯. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এমন সময় আমার কাছে আসলেন যখন আমার কাছে একজন মহিলা উপস্থিত ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এ কে? আমি বললামঃ এ সেই মহিলা যে রাতের বেলা না ঘুমিয়ে সালাত আদায় করে। [এ কথা শুনে] তিনি বললেনঃ তোমরা ততটুকু পরিমাণ আমাল করিবে যা স্থায়ীভাবে করিতে পারবে। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আল্লাহ তাআলা [তোমাদের আমালের] সওয়াব বা পুরস্কার দিতে অক্ষম হইবেন না। বরং তোমরাই আমাল করিতে অক্ষম হয়ে পড়বে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দ্বীনের ততটুকু আমাল অত্যধিক পছন্দনীয় ছিল আমালকারী যা স্থায়ীভাবে করিতে পারবে। আবু উসামাহ্ বর্ণিত হাদীসে উল্লেখিত আছে, উক্ত মহিলা ছিলেন বানী আসাদ গোত্রের একজন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭০৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৭১১]

১৭২০. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ সালাত আদায়কালে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে শুয়ে ঘুমিয়ে নিবে এবং তন্দ্রা বা ঘুম দূর হলে পরে আবার সালাত আদায় করিবে। কারণ, তোমরা কেউ হয়ত তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় সালাত আদায় করলে দুআ ও ক্ষমা প্রার্থনার স্থলে নিজেকে ভৎর্সনা [বদ্‌দুআ] করে ফেলবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭০৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৭১২]

১৭২১. হাম্মাম ইবনি মুনাব্‌বিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] আমার কাছে আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] থেকে কিছু সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তার মধ্যে একটি হাদীস হল, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে থেকে কেউ যদি রাতে সালাত আদায় করিতে ওঠে আর [ঘুমের প্রভাবে] তার কুরআন তিলাওয়াত আড়ষ্টতা আসে অর্থাৎ সে কি বলছে সে সম্পর্কে তার কোন চেতনা না থাকে তাহলে যেন সে শুয়ে [ঘুমিয়ে] পড়ে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭০৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৭১৩]


Posted

in

by

Comments

One response to “নফল নামাজ নিজ গৃহে আদায় করা ও রাতের সালাত”

Leave a Reply