ওযূ করার নিয়ম, ফযিলত, দুআ ও মিসওয়াকের বিবরণ

ওযূ করার নিয়ম, ফযিলত, দুআ ও ঢিলা ব্যবহার

ওযূ করার নিয়ম ও ওযূর পূর্ণতা  >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

১. অধ্যায়ঃ ওযূর ফযিলত
২. অধ্যায়ঃ নামাজ আদায়ের জন্যে পবিত্রতার আবশ্যকতা
৩. অধ্যায়ঃ ওযূ করার নিয়ম ও ওযূর পূর্ণতা
৪. অধ্যায়ঃ ওযূ এবং ওযূর পরপরই নামাজ আদায়ের ফযিলত
৫. অধ্যায়ঃ পাঁচ নামাজ, এক জুমুআহ্ থেকে আরেক জুমুআহ্ পর্যন্ত ; এক রমাযান থেকে অপর রমাযান পর্যন্ত তাদের মধ্যবর্তী সময়ের জন্যে কাফফারাহ্ হয়ে যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত কাবীরাহ গুনাহ থেকে বিরত থাকিবে
৬. অধ্যায়ঃ ওযূর শেষে মুস্তাহাব দুআ
৭. অধ্যায়ঃ নবী [সাঃআঃ] এর ওযু সম্পর্কে
৮. অধ্যায়ঃ নাক ঝাড়া ও ঢিলা ব্যবহারে বেজোড় সংখ্যা প্রসঙ্গে
৯. অধ্যায়ঃ উভয় পা পুরোপুরি ধোয়ার আবশ্যকতা
১০. অধ্যায়ঃ তাহারাতের সকল অঙ্গ পূর্ণভাবে ধোয়ার আবশ্যকতা
১১. অধ্যায়ঃ ওযূর পানির সঙ্গে গুনাহ ঝরে যাওয়া
১২. অধ্যায়ঃ ওযূতে মুখমন্ডলের নূর এবং হাত-পায়ের দীপ্তি বাড়িয়ে নেয়া মুস্তাহাব
১৩. অধ্যায়ঃ যে পর্যন্ত ওযূর পানি পৌঁছবে সে পর্যন্ত অলঙ্কার পরানো হইবে
১৪. অধ্যায়ঃ কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে ওযূ করার ফযীলত
১৫. অধ্যায়ঃ মিসওয়াকের বিবরণ

১. অধ্যায়ঃ ওযূর ফযিলত

৪২২. আবু মালিক আল আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক অংশ। আলহাম্‌দু লিল্লা-হ মিযানের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দিবে এবং “সুবহানাল্লা-হ ওয়াল হাম্‌দুলিল্লা-হ” আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দিবে। নামাজ হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি। সদাকাহ্ হচ্ছে দলীল। ধৈর্য হচ্ছে জ্যোতির্ময়। আর আল কুরআন হইবে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ। বস্তুতঃ সকল মানুষই প্রত্যেক ভোরে নিজেকে আমালের বিনিময়ে বিক্রি করে। তার আমাল দ্বারা সে নিজেকে [আল্লাহর আযাব থেকে] মুক্ত করে অথবা সে তার নিজের ধ্বংস সাধন করে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২য় খন্ড, ৪২৫; ইসলামিক সেন্টার- ৪৪১]

এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

২. অধ্যায়ঃ নামাজ আদায়ের জন্যে পবিত্রতার আবশ্যকতা

৪২৩. মুসআব ইবনি সা দ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] অসুস্থ ইবনি আমিরকে দেখিতে গিয়েছিলেন। তখন ইবনি আমির তাঁকে বলিলেন, হে ইবনি উমর! আপনি কি আমার জন্যে আল্লাহর কাছে দুআ করেন না? ইবনি উমর বলিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি যে, তাহারাত ব্যতিরেকে নামাজ কবূল হয় না। খিয়ানাতের সম্পদ থেকে সদাকাহ্‌ও কবূল হয় না। আর তুমি তো ছিলে বাস্‌রার শাসনকর্তা।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৬, ইসলামিক সেন্টার-৪৪২]

এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪২৪. শুবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

অন্য সূত্রে আবু বাক্‌র ইবনি আবু শাইবাহ্ [রাদি.] …. ইসমাঈল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে, সকলে সিমাক ইবনি হার্‌ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে নবী[সাঃআঃ] থেকে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৩]

এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪২৫. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] থেকে কতগুলো হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তার মধ্য থেকে একটি হাদীস তিনি এভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কারো ওযূ নষ্ট হলে পুনরায় ওযূ না করা পর্যন্ত তার নামাজ কবূল হয় না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৮, ইসলামিক সেন্টার-৪৪৪]

এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩. অধ্যায়ঃ ওযূ করার নিয়ম ও ওযূর পূর্ণতা

৪২৬. উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি ওযূর পানি চাইলেন। এরপর তিনি ওযূ করিতে আরম্ভ করিলেন। [বর্ণনাকারী বলেন], তিনি {উসমান [রাদি.]} তিনবার তাহাঁর হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন, এরপর কুলি করিলেন এবং নাক ঝাড়লেন। এরপর তিনবার তাহাঁর মুখমন্ডল ধুলেন এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরূপভাবে ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসাহ করিলেন। এরপর তাহাঁর ডান পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন – অতঃপর তদ্রুপভাবে বাম পা ধুলেন তারপর বলিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ]-কে আমার এ ওযূর করার ন্যায় ওযূ করিতে দেখেছি এবং ওযূ শেষে রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযূর ন্যায় ওযূ করিবে এবং একান্ত মনোযোগের সাথে দুরাকাআত নামাজ আদায় করিবে, সে ব্যক্তির পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হইবে।

ইবনি শিহাব বলেন, আমাদের আলিমগণ বলিতেন যে, নামাজের জন্য কারোর এ নিয়মের ওযূই হল পরিপূর্ণ ওযূ।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৯, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৫]

৪২৭. উসমান এর আযাদকৃত গোলাম হুমরান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি উসমান ইবনি আফফানকে দেখেছেন তিনি ওযূর জন্যে এক পাত্র পানি আনিয়ে দুহাতের উপর ঢেলে তিনবার ধুলেন। তারপর ডানহাত পানির পাত্রে প্রবেশ করিয়ে কুলি করিলেন এবং নাকে পানি দিলেন, এরপর তিনবার মুখমণ্ডল এবং তিনবার দুহাতের কনুই পর্যন্ত ধুইলেন। তারপর মাথা মাসাহ্ করিলেন। অতঃপর উভয় পা [গোড়ালি পর্যন্ত] তিনবার ধুয়ে বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযূর ন্যায় ওযূ করার পর এমনভাবে দুরাকআত নামাজ আদায় করিবে যাতে তার অন্তরে কোন কল্পনার উদয় হয়নি; তবে তার পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হইবে।

[ই.ফা.৪৩০, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৬]

৪. অধ্যায়ঃ ওযূ এবং ওযূর পরপরই নামাজ আদায়ের ফযিলত

৪২৮. উসমান ইবনি আফফান [রাদি.]-এর আযাদকৃত দাস হুমরান হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনি আফফান [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি যে, তিনি মাসজিদের বারান্দায় ছিলেন। এমন সময় আসর নামাজের জন্যে মুওয়াযযিন তাহাঁর নিকট আসলে তিনি ওযূর পানি চাইলেন এবং ওযূ করে বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তোমাদেরকে একটি হাদীস শুনাব, যদি আল্লাহর কিতাবে একটি আয়াত না থাকতো তাহলে আমি তোমাদেরকে হাদীসটি শুনাতাম না। [অতঃপর তিনি বলিলেন] আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছি, যে ব্যক্তি উত্তমরুপে ওযু করে নামাজ আদায় করিবে তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হইবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩১, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৭]

৪২৯. আবু কুরায়ব, আবু উসামাহ হইতে, অন্য সূত্রে যুহায়র ইবনি হারব ও আবু কুরায়ব ওয়াকী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে – অন্য সূত্রে ইবনি আবু উমর থেকে আবার সকলে হিশামের হইতে বর্ণীতঃ

উপরোক্ত সূত্রেও হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে আবু উসামার সূত্রে অতিরিক্ত বলা হয়েছে যে, অতঃপর তার ওযূকে সুন্দররুপে করে তারপর ফারয নামাজ আদায় করে।

[ই.ফা.৪৩২, ইসলামিক সেন্টার-৪৪৮]

৪৩০. হুমরান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উসমান [রাদি.] ওযূ শেষে বলিলেন যে, আল্লাহর কসম, আমি তোমাদেরকে একটি হাদীস শুনাব। আল্লাহর কসম, যদি আল্লাহর কিতাবের মধ্যে একটি আয়াত না থাকত তাহলে আমি তোমাদেরকে কখনই হাদীসটি শুনাতাম না। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছি যে, কোন ব্যক্তি যখন ওযূ করে এবং উত্তমরূপে ওযূ করে [অর্থাৎ ভালভাবে ওযূর স্থানগুলি ভিজায়] তারপর নামাজ আদায় করে তখন তার এ নামাজ ও পিছনের নামাজের মধ্যবর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। উরওয়াহ বলেন, আয়াতটি হলঃ

‏ إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى‏

“আমি যেসকল স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্যে কিতাবে তা সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়ার পরেও যারা তা গোপন রাখে , আল্লাহ তাদেরকে লানাত দেন এবং অভিশাপকারীরাও তাদেরকে অভিশাপ দেয়” –[সূরাহ আল-বাকারাহ ২:১৫৯]

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩৩, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৯]

৪৩১. আমর ইবনি সাঈদ ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি উসমান[রাদি.]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তিনি পানি আনার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছি যে, কোন মুসলিমের যখন কোন ফারয নামাজের ওয়াক্ত হয় আর সে উত্তমরুপে নামাজের ওযূ করে, নামাজের নিয়ম ও রুকুকে উত্তমরুপে আদায় করে তা হলে যতক্ষণ না সে কোন কাবীরাহ গুনাহে লিপ্ত হইবে তার এ নামাজ তার পিছনের সকল গুনাহের জন্যে কাফফারাহ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আর এ অবস্থা সর্বযুগেই বিদ্যমান।

[ই.ফা.৪৩৪, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫০]

৪৩২. হুমরান উসমানের আযাদকৃত দাস হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনি আফফান [রাদি.]-এর জন্যে উযূর পানি আনলাম। অতঃপর তিনি ওযূ করে বলিলেন, লোকেরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর অনেক হাদীস বর্ণনা করে থাকে। আমি ঐ হাদীসগুলোর ব্যাপারে অবগত নই। তবে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে আমার এ ওযূর মত ওযূ করিতে দেখেছি। তারপর বলেছেন, যে ব্যক্তি এভাবে ওযূ করিতে তার পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হইবে। আর তার নামাজ আদায় ও মাসজিদের দিকে যাওয়া অতিরিক্ত সাওয়াব বলে গণ্য হইবে।

ইবনি আবদাহ-এর বর্ণনায় [আরবী] কথাটি বাদ দিয়ে কেবল [আরবী] বলা হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩৫, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫১]

৪৩৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেনঃ একদিন উসমান একটি উঁচু স্থানে বসে ওযূ করে বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর ওযূ কিরুপ ছিল তা দেখাব না? এরপর তিনি প্রতিটি অঙ্গ তিনবার করে ধুলেন।

কুতাইবাহ আনাস সূত্রে এতটুকু কথা অতিরিক্ত বলেছেন যে, এ সময় তাহাঁর [উসমানের] কাছে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর অনেক সহাবা উপস্থিত ছিলেন [অর্থাৎ কেউ তাহাঁর বিরোধীতা করেননি]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫২]

৪৩৪. হুমরান ইবনি আবান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ আমি উসমান [রাদি.]-এর জন্যে ওযূর পানির ব্যবস্থা করতাম। এমন একটি দিনও অতিবাহিত হতো না যেদিন সামান্য পরিমান পানি হলেও তা দিয়ে গোসল করিতেন না। উসমান বলেছেন, একদিন আমরা যখন এ [ওয়াক্তের] নামাজ শেষ করলাম তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে বলিলেন। মিসআর বলেনঃ আমার মনে হয় তা ছিল আসরের নামাজ। তিনি বললেনঃ আমি স্থির করিতে পারছি না যে, তোমাদের একটি বিষয়ে কিছু বর্ণনা করব না নীরব থাকব। তখন আমরা বললাম , হে আল্লাহর রসূল! যদি তা কল্যানকর হয় তাহলে আমাদের বলুন। আর যদি অন্য কিছু হয়, তাহলে আল্লাহ এবং তাহাঁর রসূলই অধিক অবগত। তারপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ কোন মুসলিম যখন পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহ তার উপর যে পবিত্রতা অপরিহার্য করিয়াছেন তা পূর্ণাঙ্গরুপে আদায় করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তাহলে এসব নামাজ মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহর কাফফারাহ হয়ে যায়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫৩]

৪৩৫. উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উসমান [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ যেভাবে আদেশ করিয়াছেন সেভাবে ওযূকে পূর্ণ করে, তার পাঁচ ওয়াক্তের ফারয নামাজ আদায় করলে উক্ত নামাজসমূহ মধ্যবর্তী সময়ের [গুনাহের] কাফফারাহ হয়ে যায়।

ইবনি মুআযের হাদীসে এভাবেই বলা হয়েছে। কিন্তু গুনদার বর্ণিত হাদীসে বিশরের নেতৃত্বের কথা কিংবা ফারয নামাজের কথা উল্লেখ নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩৮, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫৪]

৪৩৬. উসমান [রাদি.]-এর আযাদকৃত গোলাম হুমরান হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেনঃ একদিন উসমান ইবনি আফফান খুব উত্তমরুপে ওযূ করে বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে ওযূ করিতে দেখেছি যে, সে অতি যত্ন করে ওযূ করিলেন। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি অনুরূপ ওযূ করে নামাজের জন্য মাসজিদের দিকে যায় এবং তাহাঁর মাসজিদে যাওয়া যদি নামাজ ব্যতীত অন্য কোন কারনে না হয় তবে তার অতীত জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হইবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩৯, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫৫]

৪৩৭. উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] –কে বলিতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নামাজ আদায়ের জন্য পরিপূর্ণভাবে ওযূ করে ফরয নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে [মাসজিদে] যায় এবং লোকদের সাথে, অথবা তিনি বলেছেনঃ জামাআতের সাথে, অথবা বলেছেন, মাসজিদের মধ্যে নামাজ আদায় করে, আল্লাহ্‌ তার গুনাহ্ সমূহকে মাফ করে দিবেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫৬]

৫. অধ্যায়ঃ পাঁচ নামাজ  এক জুমুআহ্ থেকে আরেক জুমুআহ্ পর্যন্ত ; এক রমাযান থেকে অপর রমাযান পর্যন্ত তাদের মধ্যবর্তী সময়ের জন্যে কাফফারাহ্ হয়ে যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত কাবীরাহ গুনাহ থেকে বিরত থাকিবে

৪৩৮. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং এক জুমুআহ থেকে অন্য জুমুআহ এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহের জন্য কাফফারাহ হয়ে যায় যদি সে কবীরাহ্‌ গুনাহইতে লিপ্ত না হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪১, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫৭]

৪৩৯. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং এক জুমুআহ্‌ থেকে আরেক জুমুআহ্‌ উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারাহ্‌ স্বরূপ।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪২, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫৮]

৪৪০. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমুআহ্‌ থেকে আরেক জুমুআহ্‌ এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযান, তার মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারাহ্‌ হয়ে যাবে যদি কবীরাহ্‌ গুনাহ হইতে বেঁচে থাকে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৩, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫৯]

৬. অধ্যায়ঃ ওযূর শেষে মুস্তাহাব দুআ

৪৪১. উকবাহ্‌ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার ওপর উট চড়ানোর দায়িত্ব ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রসূল [সাঃআঃ] কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তাহাঁর এ কথা শুনতে পেলাম, “যে মুসলিম সুন্দরভাবে ওযু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে আল্লাহ্‌র প্রতি নিবদ্ধ রেখে দু রাকআত নামাজ আদায় করে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। উকবাহ্‌ বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলামঃ বাহ! হা্দীসটি কত চমৎকার! তখন আমার সামনের একজন বলিতে লাগলেন, আগের কথাটি আরও উত্তম। আমি সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি উমর। তিনি আমাকে বলিলেন, তোমাকে দেখেছি, এ মাত্র এসেছো। রসূল [সাঃআঃ] এর আগে বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করে এ দুআ পড়বে-

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ

আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসূলুহূ”। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৪, ইসলামিক সেন্টার- ৪৬০]

৪৪২. উকবাহ্‌ ইবনি আমির আল জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ বর্ণনায় বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওযু করে পাঠ করিবে- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তাহাঁর কোন শারীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তাহাঁর বান্দা ও রসূল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৫, ইসলামিক সেন্টার- ৪৬১]

৭. অধ্যায়ঃ নবী [সা] এর ওযু সম্পর্কে

৪৪৩. আবদুল্লাহ ইবনি যায়দ ইবনি আসিম আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

যিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাহচর্য লাভ করেছিলেন। রাবী বলেন, তাঁকে বলা হলো যে, রসূল [সাঃআঃ] এর ওযু [কেমন ছিল] আমাদেরকে দেখিয়ে দিন। তখন তিনি পানির পাত্র আনালেন। তারপর তা থেকে দুহাতের ওপর পানি ঢেলে উভয় হাত তিনবার ধুলেন। তারপর পাত্রে হাত ঢুকিয়ে পানি বের করে এক আজলা পানি দ্বারা কুলি করিলেন ও নাকে পানি দিলেন। এরূপ তিনবার করিলেন। পুনরায় পানিতে হাত ঢুকিয়ে পানি নিয়ে তিনবার মুখমণ্ডল ধুলেন। আবার হাত ঢুকিয়ে পানি বের করে দুহাত কনুই পর্যন্ত দুবার করে ধুলেন। তারপর হাত ঢুকিয়ে পানি বের করে মাথার সামনে ও পিছনে দুহাত দিয়ে মাসাহ্‌ করিলেন- তারপর, উভয় পা গিরা পর্যন্ত ধুলেন, এরপর বললেনঃ এরূপ ছিল রসূল [সাঃআঃ] এর ওযু।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪৬২]

৪৪৪. কাসিম ইবনি যাকারিইয়্যা, খালিদ ইবনি মাখলাদ, সুলাইমান ইবনি বিলাল, আমর ইবনি ইয়াহ্‌ইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তবে তিনি “উভয় পায়ের গিরা পর্যন্ত” ধুয়েছেন এ কথাটি উল্লেখ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪৬৩]

৪৪৫. আমর ইবনি ইয়াহ্‌ইয়া [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উক্ত সনদ দ্বারা এভাবেও বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি তিনবার কুলি করিলেন এবং নাকে পানি ঢেলে ঝাড়লেন, এক হাতে পানি নিয়ে করিয়াছেন এ কথাটি তিনি বলেননি। অবশ্য এ বাক্যটির পরে নিম্নের বাক্যগুলো বর্ধিত করিয়াছেন; মাথা মাসাহ্‌ করার সময় হাত দুখানা মাথার সম্মুখভাগে রাখলেন এবং পরে তা টেনে মাথার পেছনভাগে নিয়ে গেলেন। অতঃপর আবার পূর্বের জায়গায় অর্থাৎ যেখান থেকে আরম্ভ করেছিলেন সেখানে নিয়ে আসলেন এবং পরে পা দুখানা ধুলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৮, ইসলামিক সেন্টার- ৪৬৪]

৪৪৬. আমর ইবনি ইয়াহ্‌ইয়া [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উহায়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বর্ণনা করিয়াছেন যে, আমর ইবনি ইয়াহ্‌ইয়া [রাদি.] থেকে পূর্ব বর্ণিত সানাদের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ হাদীসে রাবী বলেন যে, তিনি তিন আঁজলা পানি দ্বারা কুলি করিয়াছেন এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝেড়েছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, তিনি একবার মাত্র মাসাহ্‌ করিয়াছেন তবে হাতগুলো মাথার সম্মুখের দিক থেকে পেছনে টেনে নিয়েছেন। বাহয বলেছেন, উহায়ব এ হাদীসটি আমাকে লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন আর উহায়ব বলেছেনঃ এ হাদীসটি আমর ইবনি ইয়াহ্‌ইয়া আমাকে দুবার লিখিয়েছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৯, ইসলামিক সেন্টার- ৪৬৫]

৪৪৭. আবদুল্লাহ ইবনি যায়দ ইবনি আসিম আল মাযানী হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে এভাবে ওযু করিতে দেখেছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কুলি করিলেন, নাকে পানি দিয়ে ঝাড়লেন, অতঃপর মুখমণ্ডল তিনবার ধুলেন। ডান হাত এবং বাম হাত খানাও তিনবার ধুলেন। এরপর হাতের অবশিষ্ট পানি ছাড়া নতুন পানি দিয়ে মাথা মাসাহ্‌ করিলেন। অতঃপর পা দুখানা খুব ভালোভাবে ধুয়ে পরিস্কার করিলেন। আবু তাহির বলেনঃ ইবনি ওয়াহ্‌ব, আম্‌র ইবনি হারিস-এর উদ্ধৃতি দিয়ে আমাদের নিকট এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫০, ইসলামিক সেন্টার- ৪৬৬]

৮. অধ্যায়ঃ নাক ঝাড়া ও ঢিলা ব্যবহারে বেজোড় সংখ্যা প্রসঙ্গে

৪৪৮. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ঢিলা ব্যবহার করে, তখন যেন বেজোড় সংখ্যা ব্যবহার করে। আর তোমরা কেউ যখন ওযু করে তখন যেন নাকের ভেতর পানি প্রবেশ করায় এবং নাক ঝেড়ে সাফ করে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫১, ইসলামিক সেন্টার- ৪৬৭]

৪৪৯. হাম্মাম ইবনি মুনাব্বিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

এগুলো আবু হুরায়রা্[রাদি.] আমাদের কাছে মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। এরপর তিনি কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেন। তন্মধ্যে এও ছিল যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা যখন ওযু করিবে তখন উভয় নাকের ছিদ্রে পানি টেনে নিবে, এরপর ঝেড়ে ফেলবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫২, ইসলামিক সেন্টার- ৪৬৮]

৪৫০. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ওযু করিবে, সে যেন নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়ে, আর যে ঢিলা ব্যবহার করিবে, সে যেন বেজোড় সংখ্যক ব্যবহার করে।

[ই.ফা ৪৫৩, ইসলামিক সেন্টার- ৪৬৯]

৪৫১. আবু হুরাইরাহ্ ও আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অবশিষ্টাংশ অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫৪, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭০]

৪৫২. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে উঠবে সে যেন নাকে পানি দিয়ে তিনবার নাক ঝেড়ে নেয়। কেননা, শাইতান তার নাকের ভেতর রাত্রি যাপন করে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫৫, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭১]

৪৫৩. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঢিলা ব্যবহার করিবে তখন বেজোড় সংখ্যা নিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭২]

৯. অধ্যায়ঃ উভয় পা পুরোপুরি ধোয়ার আবশ্যকতা

৪৫৪. সালিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস-এর ইন্তেকালের দিন নবী [সাঃআঃ]- এর স্ত্রী আয়িশাহ্[রাদি.]- এর কাছে উপস্থিত হই। সে সময় আব্দুর রহমান ইবনি আবু বাকরও এলেন এবং আয়িশাহ্[রাদি.]- এর সামনে ওযু করিতে লাগলেন। তখন আয়িশাহ্[রাদি.] বললেনঃ হে আব্দুর রহমান! পূর্ণভাবে ওযু কর। কেননা আমি রসূল [সাঃআঃ] কে এ কথা বলিতে শুনেছি যে, পায়ের ঐ গোড়ালিগুলোর জন্য আগুনের শাস্তি রয়েছে [যেগুলো শুকনো থাকে]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৩]

৪৫৫. হারমালাহ্‌ ইবনি ইয়াহ্‌ইয়া, ইবনি ওয়াহ্‌ব, হাইওয়াহ্‌ মুহাম্মাদ ইবনি আব্দুর রহমান-এর মাধ্যমে শাদ্দাদ ইবনিল হাদ-এর আযাদকৃত গোলাম আবু আবদুল্লাহ হইতে বর্ণীতঃ

একদিন তিনি আয়িশাহ্[রাদি.]-এর নিকট গেলেন। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি আয়িশাহ্[রাদি.]- এর উদ্ধৃতি দিয়ে নবী [সাঃআঃ] থেকে পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫৮, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৪]

৪৫৬. সালিম মাওলা আল মাহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ও আব্দুর রহমান ইবনি আবু বাকর [রাদি.] সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস এর জানাযার উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমরা আয়িশাহ্[রাদি.]-এর ঘরের দরজার সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তিনি [সালিম] আয়িশাহ্[রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে অবিকল হাদীস বর্ণনা করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৫]

৪৫৭. শাদ্দাদ ইবনি হাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর আযাদকৃত গোলাম সালিম হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেনঃ একদা আমি আয়িশাহ্[রাদি.]-এর সাথে ছিলাম। অতঃপর তিনি আয়িশাহ্[রাদি.]-এর উদ্ধৃতি দিয়ে নবী[সাঃআঃ] থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৬০, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৬]

৪৫৮. আব্‌দুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক সময় আমরা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে মক্কা থেকে মাদীনায় ফিরে আসছিলাম। পথিমধ্যে আমরা যখন এক জায়গায় পানির কাছে পৌঁছলাম, তখন কিছু সংখ্যক লোক আস্‌রের সালাতের সময় তাড়াহুড়া করিল। এরা ওযুও করিল তাড়াহুড়া করে। আমরা যখন তাদের কাছে পৌছলাম, তখন তাদের পায়ের গোড়ালিসমূহ এমনভাবে প্রকাশ পাচ্ছে যে, তাতে পানি পৌঁছেনি। এ দেখে রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] বলিলেন, ওযু করার সময় পায়ের গোড়ালি যে সব স্থানে পানি পৌঁছেনি সেগুলোর জন্য জাহান্নাম। তাই তোমরা ভালভাবে ওযু করো।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৬১, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৭]

৪৫৯. আবু বক্‌র ইবনি আবু শাইবাহ্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সুফ্‌ইয়ান-এর সূত্রে এবং ইবনি আল মুসান্না ও ইবনি বাশ্‌শার শুবাহ্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে উভয়ে হইতে বর্ণীতঃ

উক্ত সানাদে মানসূর থেকে বর্ণনা করেন তবে শুবাহ্‌ বর্ণিত হাদীসে “পরিপূর্ণভাবে ওযূ করো” কথাটি নেই। এ হাদীসের সানাদে “আবু ইয়াহ্‌ইয়া” শব্দের সাথে “আল আরাজ” যুক্ত আছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৬২, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৮]

৪৬০. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কোন এক সফরে নবী[সাঃআঃ] আমাদের পিছনে পড়ে যান। অবশেষে তিনি আমাদের পেলেন যখন আস্‌রের সময় উপস্থিত এবং আমরা ওযূ করিতে গিয়ে পা মাসাহ করছি। তখন তিনি ঘোষণা দিলেন, ধ্বংস ঐ গোড়ালিগুলোর জন্যে, যে সব স্থানে পানি পৌঁছেনি; যেগুলোর ঠিকানা জাহান্নাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৬৩, ইসলামিক সেন্টার- ৪৭৯]

৪৬১. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে তার গোড়ালি ধোয়নি। তখন তিনি বলিলেন, ধ্বংস ঐ গোড়ালিগুলোর জন্য, যে সব স্থানে পানি পৌঁছেনি; যেগুলোর ঠিকানা জাহান্নাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৬৪, ইসলামিক সেন্টার- ৪৮০]

৪৬২. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি কয়েকজন লোককে দেখলেন, তারা পাত্র থেকে পানি নিয়ে ওযূ করছে। তখন তিনি বললেনঃ পরিপূর্ণরূপে ওযূ করো। কারণ, আমি আবুল কাসিম [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ ধ্বংস ঐ গোড়ালিগুলোর জন্যে, যে সব স্থানে পানি পৌঁছেনি; যেগুলোর ঠিকানা হইবে জাহান্নাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৬৫, ইসলামিক সেন্টার- ৪৮১]

৪৬৩. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] বলেছেনঃ ধ্বংস ঐ গোড়ালিগুলোর জন্যে, যে সব স্থানে পানি পৌঁছেনি; যেগুলোর ঠিকানা হইবে জাহান্নাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৬৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪৮২]

১০. অধ্যায়ঃ তাহারাতের সকল অঙ্গ পূর্ণভাবে ধোয়া র আবশ্যকতা

৪৬৪. উমর ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ওযূ করিতে তার পায়ের ওপর নখ পরিমাণ অংশ ছেড়ে দেয়। তা দেখে নবী[সাঃআঃ] বললেনঃ যাও, আবার ভালভাবে ওযূ করে আসো। লোকটি ফিরে গেল। তারপর [পুনরায়] ওযূ করে নামাজ আদায় করিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৬৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪৮৩]

১১. অধ্যায়ঃ ওযূর পানি র সঙ্গে গুনাহ ঝরে যাওয়া

৪৬৫. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলিম কিংবা মুমিন বান্দা [রাবীর সন্দেহ] ওযূর সময় যখন মুখমন্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত গুনাহ পানির সাথে অথবা [তিনি বলেছেন] পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় এবং যখন সে দুটি হাত ধৌত করে তখন তার দুহাতের স্পর্শের মাধ্যমে সব গুনাহ পানির অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝড়ে যায়। অতঃপর যখন সে পা দুটি ধৌত করে, তখন তার দুপা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত সব গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝড়ে যায়, এমনকি সে যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৬৮, ইসলামিক সেন্টার- ৪৮৪]

৪৬৬. উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওযূ করে এবং তা উত্তমরূপে করে, তার দেহ থেকে সমস্ত পাপ ঝড়ে যায়, এমনকি তার নখের ভিতর থেকেও [গুনাহ] বের হয়ে যায়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৬৯, ইসলামিক সেন্টার- ৪৮৫]

১২. অধ্যায়ঃ ওযূতে মুখমন্ডলের নূর এবং হাত-পায়ের দীপ্তি বাড়িয়ে নেয়া মুস্তাহাব

৪৬৭. নুআয়ম ইবনি আবদুল্লাহ আল মুজমির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, আমি আবু হুরায়রা্[রাদি.]-কে ওযূ করিতে দেখেছি। তিনি খুব ভালভাবে মুখমন্ডল ধুলেন, এরপর ডান হাত ধুলেন এবং বাহুর কিছু অংশ ধুলেন। পরে বাম হাত ও বাহুর কিছু অংশসহ ধুলেন। এরপর মাথা মাসাহ করিলেন। অতঃপর ডান পায়ের নালার কিছু অংশসহ ধুলেন, এরপর বাম পায়ের নালার কিছু অংশসহ একইভাবে ধুলেন। অতঃপর বলিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ]-কে এভাবে ওযূ করিতে দেখেছি। তিনি আরো বলিলেন, রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] বলেছেনঃ পূর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করার কারণে কিয়ামাতের দিন তোমাদের মুখমন্ডল, হাত ও পায়ের ওযূর স্থান জ্যোতির্ময় হইবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা সক্ষম তারা যেন নিজ নিজ মুখমন্ডল, হাত ও পায়ের জ্যোতি বাড়িয়ে নেয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭০, ইসলামিক সেন্টার- ৪৮৬]

৪৬৮. নুআয়ম ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি আবু হুরায়রা্[রাদি.]-কে ওযূ করিতে দেখলেন। ওযূ করিতে তিনি মুখমন্ডল ও হাত দুটি এমনভাবে ধুলেন যে, প্রায় কাঁধ পর্যন্ত ধুয়ে ফেললেন। এরপর পা দুটি এমনভাবে ধুলেন যে, পায়ের নালার কিছু অংশ ধুয়ে ফেললেন। এভাবে ওযূ করার পর বলিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ আমার উম্মাত ওযূর প্রভাবে কিয়ামাতের দিন দীপ্তিময় মুখমন্ডল ও হাত-পা নিয়ে উঠবে। কাজেই তোমরা যারা সক্ষম তারা অধিক বিস্মৃত দীপ্তিসহ উঠতে সে যেন চেষ্টা করে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭১, ইসলামিক সেন্টার- ৪৮৭]

৪৬৯. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] বলেন, আমার হাওযে কাওসার হইবে আদান [ইয়ামানের বন্দর নগরী] থেকে আইলা [আরবের উত্তরাঞ্চলীয় শহর]-এর যত দূরত্ব তার থেকেও বেশি দীর্ঘ। আর তা হইবে বরফের থেকেও সাদা এবং দুধ মধু থেকে মিষ্টি। আর তার পাত্রের সংখ্যা হইবে তারকারাজির চেয়েও অধিক। আমি কিছু সংখ্যক লোককে তা থেকে ফিরিয়ে দিতে থাকবো যেমনিভাবে লোকে তার হাওয থেকে অন্যের উট ফিরিয়ে দেয়। সহাবায়ে কিরাম আরয করিলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ! সেদিন কি আপনি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? তিনি বলিলেন, “হ্যাঁ, তোমাদের এমন চিহ্ন হইবে যা অন্য কোন উম্মাতের হইবে না। ওযূর বিনিময়ে তোমাদের মুখমন্ডল জ্যোতির্ময় ও হাত-পা দীপ্তিমান অবস্থায় তোমরা আমার কাছে আসবে”।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭২, ইসলামিক সেন্টার- ৪৮৮]

৪৭০. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মাতের কিছুলোক কিয়ামাতের দিন আমার কাছে হাওযে কাওসারে উপস্থিত হইবে। আর আমি তাদেরকে তা থেকে এমনভাবে বিতাড়িত করব, যেভাবে কোন ব্যক্তি তার উটের পাল থেকে অন্যের উটকে বিতাড়িত করে থাকে। [এ কথা শুনে] লোকেরা জিজ্ঞেস করলঃ আল্লাহর নবী! আপনি কি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? জবাবে তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তোমাদের এমন এক চিহ্ন হইবে যা অন্য কারোর হইবে না। ওযূর প্রভাবে তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত-পায়ের দীপ্তি ও উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়বে। উজ্জ্বল জ্যোতি বিচ্ছুরিত অবস্থায় তোমরা আমার নিকট আসবে। আর তোমাদের একদল লোককে জোর করে আমার থেকে ফিরিয়ে দেয়া হইবে। তাই তারা আমার কাছে পৌঁছাতে পারবে না। তখন আমি বলব, হে আমার প্রভু! এরাতো আমার লোক। এর জবাবে একজন ফেরেশতা আমাকে বলবে, আপনি জানেন না, আপনার অবর্তমানে [ইনতিকালের পরে] তারা কি কি নতুন কাজ [বিদআত] করেছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩, ইসলামিক সেন্টার- ৪৮৯]

৪৭১. হুযাইফাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার হাওয [হাওযে কাওসার] আইলা থেকে আদান-এর দূরত্ব পরিমাণ দীর্ঘ। সে মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! আমি তা থেকে কিছু মানুষকে এমনভাবে তাড়াবো যেমন কোন ব্যক্তি অপরিচিত উটকে তার পানির কূপ থেকে তাড়িয়ে দেয়। লোকেরা জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি সেদিন আমাদেরকে চিনতে পারবেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। ওযূর প্রভাবে তোমাদের চেহারা ও হাত-পা থেকে উজ্জ্বল জ্যোতি ছড়িয়ে পড়া অবস্থায় তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হইবে। এটা তোমাদের ছাড়া অন্য উম্মাতের জন্যে হইবে না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৪, ইসলামিক সেন্টার- ৪৯০]

৪৭২. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একবার রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] একটি কবরস্থানে এসে বলিলেন, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। হে কবরবাসী মুমিনগণ! ইন্‌শাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে এসে মিলব। আমার বড় ইচ্ছা হয় যে আমাদের ভাইদেরকে দেখি। সহাবায়ে কিরাম আরয করিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বলিলেন, তোমরা তো আমার সহাবা। আর যারা এখনো [পৃথিবীতে] আসেনি তারা আমাদের ভাই। সহাবায়ে কিরাম আরয করিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনার উম্মাতের মধ্যে যারা এখনো [পৃথিবীতে] আসেনি তাদেরকে আপনি কিভাবে চিনবেন? তিনি বলিলেন, “কেন, যদি কোন ব্যক্তি সাদা রঙের কপাল ও সাদা রঙের হাত-পা বিশিষ্ট ঘোড়া অনেকগুলো কালো ঘোড়ার মধ্যে মিশে যায় তবে সে কি তার ঘোড়াকে চিনে নিতে পারবে না? তাঁরা বলিলেন, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ! তিনি বলিলেন, তাঁরা [আমার উম্মাত] সেদিন এমন অবস্থা আসবে যে, ওযূর ফলে তাদের মুখমন্ডল, হাত-পা জ্যোতির্ময় হইবে। আর হাওযের পাড়ে আমি হব তাদের অগ্রনায়ক। জেনে রাখ, কিছু সংখ্যক লোককে সেদিন আমার হাওয থেকে তাড়িয়ে দেয়া হইবে যেমনিভাবে বেওয়ারিশ উটকে তাড়িয়ে দেয়া হইবে। আমি তাদেরকে ডাকব, এসো এসো। তখন বলা হইবে, “এরা আপনার পরে [আপনার দীনকে] পরিবর্তন করে দিয়েছিল”। তখন আমি বলব, “দূর হও, দূর হও”।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ৪৯১]

৪৭৩. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একবার রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ক্ববরস্থানে গেলেন ও বলিলেন, “মুমিনদের বাসস্থানে [ক্ববরস্থানে] তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর আমরা ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাথে এসে শামিল হব। অবশিষ্টাংশ ইসমাঈল ইবনি জাফার-এর বর্ণিত [পূর্বের] হাদীসের অনুরূপ। তবে মালিক-এর হাদীসের এতটুকু বেশি আছে, অবশ্যই কিছু লোককে এ হাওয থেকে তাড়িয়ে দেয়া হইবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪৯২]

১৩. অধ্যায়ঃ যে পর্যন্ত ওযূর পানি পৌঁছবে সে পর্যন্ত অলঙ্কার পরানো হইবে

৪৭৪. আবু হাযিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, একদিন আমি আবু হুরায়রা্[রাদি.]-এর পিছনে ছিলাম। [দেখলাম] তিনি সালাতের জন্যে ওযূ করছেন। তিনি হাতের বগল পর্যন্ত ধুলেন। তখন আমি বললাম, হে আবু হুরায়রা্[রাদি.]! এটা কেমন ধরনের ওযূ? তিনি অবাক হয়ে বলিলেন, হে বানী ফার্‌রূখ! যদি আমি জানতাম তোমরা এখানে আছো, তাহলে আমি এ ধরনের ওযূ করতাম না। আমি আমার বন্ধু {রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ]}-কে বলিতে শুনেছি, তিনি বলেছেন যে স্থান পর্যন্ত ওযূর পানি পৌঁছবে সে স্থান পর্যন্ত মুমিন ব্যক্তির উজ্জ্বলতা অথবা সৌন্দর্যও পৌঁছবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪৯৩]

১৪. অধ্যায়ঃ কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে ওযূ করার ফযীলত

৪৭৫. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের এমন কাজ জানাবো না, যা করলে আল্লাহ [বান্দার] পাপরাশি দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি বলুন। তিনি বললেনঃ অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে ওযূ করা, মাসজিদে আসার জন্যে বেশি পদচারণা করা এবং এক সালাতের পর আর এক সালাতের জন্যে প্রতীক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হল সীমান্ত প্রহরা। {৮০}

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ৪৯৪]

{৮০} রিবাত [সীমান্ত প্রহরী] অর্থঃ কোন জিনিস থেকে বন্ধ থাকা, অর্থাৎ ইতাআতের উপর নিজের আত্মাকে বন্ধ রাখা, তাতে যত কষ্টই হোক।

৪৭৬. মালিক ও শুবাহ্‌ [রাদি.], উভয়েই আলা ইবনি আবদুর রহমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে শুবাহ্‌র হাদীসের {আরবী} এর উল্লেখ নেই এবং মালিক [রাদি.]-এর হাদীসে {আরবী} দুবার উল্লেখ রয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ৪৯৫]

১৫. অধ্যায়ঃ মিসওয়াক এর  বিবরণ

৪৭৭. আবু হুরাইরাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিনদের জন্যে এবং যুহায়র-এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, আমার উম্মাতের জন্য যদি কষ্টসাধ্য না হতো, তাহলে অবশ্যই তাদেরকে প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০, ইসলামিক সেন্টার- ৪৯৬]

৪৭৮. মিকদাম-এর পিতা শুরায়হ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর ঘরে ঢুকে সর্বপ্রথম কোন্‌ কাজটি করিতেন? তিনি বলিলেন, সর্বপ্রথম মিসওয়াক করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১, ইসলামিক সেন্টার- ৪৯৭]

৪৭৯. আয়িশাহ্[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] [বাইরে থেকে এসে] বাড়িতে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম মিসওয়াক করিতেন।

[ই.ফা.৪৮২, ইসলামিক সেন্টার- ৪৯৮]

৪৮০. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলিলেন, আমি একবার নবী[সাঃআঃ]-এর কাছে গেলাম তখন মিসওয়াকের এক অংশ তাহাঁর জিহবার উপর ছিল।

[ই.ফা.৪৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ৪৯৯]

৪৮১. হুযাইফাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] যখন তাহাজ্জুদের জন্যে উঠতেন তখন মিসওয়াক দ্বারা ঘষে মুখ পরিষ্কার করিতেন।

[ই.ফা.৪৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ৫০০]

৪৮২. হুযাইফাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন রাতে উঠতেন এরপর অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। এ হাদীসে তাহাজ্জুদের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ৫০১]

৪৮৩. হুযাইফাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন রাতে উঠতেন তখন মিসওয়াক দ্বারা ঘষে মুখ পরিষ্কার করিতেন।

[ই.ফা.৪৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ৫০২]

৪৮৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একদা তিনি আল্লাহর নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে রাত কাটালেন। [তিনি দেখলেন] আল্লাহর নবী [সাঃআঃ] শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠলেন এবং বাইরে গিয়ে আকাশের দিকে তাকালেন এর পরে সুরা আ-লি ইমরানের এ আয়াতটি তিলওয়াত করলেনঃ আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্যে বহু নিদর্শন রয়েছে… অতএব আপনি অনুগ্রহ করে আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন পর্যন্ত পড়লেন-[সূরাহ আ-লি ইমরান ৩ঃ ১৯০-১৯১]। অতঃপর ঘরে ফিরে এসে মিসওয়াক ও ওযূ করিলেন। এরপর দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করিলেন। নামাজ শেষে শুয়ে পড়লেন। পুনরায় কিছুক্ষন পরে উঠে বাইরে গেলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে উক্ত আয়াতটি পাঠ করিলেন। অতঃপর ফিরে এসে [আবার] মিসওয়াক করে ওযূ করিলেন; অতঃপর ফাজ্‌রের নামাজ আদায় করিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৭, ইসলামিক সেন্টার- ৫০৩]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply