শাফাআত ও তাওহীদবাদীদের জাহান্নাম থেকে উদ্ধার লাভের প্রমাণ
শাফাআত ও তাওহীদবাদীদের জাহান্নাম থেকে উদ্ধার লাভের প্রমাণ >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিচে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায় পড়ুন
৮২. অধ্যায়ঃ শাফাআত ও তাওহীদবাদীদের জাহান্নাম থেকে উদ্ধার লাভের প্রমাণ
৮৩. অধ্যায়ঃ জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রাপ্ত সর্বশেষ ব্যক্তি
৮৪. অধ্যায়ঃ নিম্ন জান্নাতী , তথায় তার মর্যাদা
৮৫. অধ্যায়ঃ মহানবি [সাঃআ:]-এর বাণীঃ জান্নাতে প্রবেশের জন্য শাফাআত করিবে সকল মানুষের মধ্যে আমিই প্রথম এবং নবিগণের মধ্যে আমার অনুসারী সর্বাধিক হইবে
৮৬. অধ্যায়ঃ মহানবি [সাঃআ:] তাহাঁর উম্মাহ্র শাফাআতের জন্য তাহাঁর বিশেষ দুআ গোপন [সংরক্ষণ] রেখেছেন
৮৭. অধ্যায়ঃ উম্মাত এর জন্য নবি [সাঃআ:]-এর দুআ ও তাহাদের প্রতি মায়া মমতায় তাহাঁর ক্রন্দন
৮৮.অধ্যায়ঃ কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী জাহান্নামী , সে কোন শাফাআত পাবে না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দার সাথে আত্মীয়তাহাঁর সম্পর্কও তার উপকারে আসবে না।
৮৯. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণী “ তোমার নিকটাত্মীয় দেরকে সতর্ক করে দাও” [সূরাহ্ আশ্ শুআরা ২৬ : ২১৪]
৯০. অধ্যায়ঃ আবু তালিব-এর জন্য নবি [সাঃআ:]-এর শাফাআত এবং সে কারণে তার আযাব কম হওয়া
৮২. অধ্যায়ঃ শাফাআত ও তাওহীদবাদীদের জাহান্নাম থেকে উদ্ধার লাভের প্রমাণ
৩৪৫. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলেনঃ জান্নাতীদেরকে আল্লাহ তাআলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাহাঁর রহমাতেই তিনি যাকে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। তারপর [ফেরেশতাহাদেরকে] বলবেন : যার অন্তরে সরিষা দানা পরিমাণও ঈমান দেখিতে পাবে তাকেও জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে আনবে এবং তারা এমন কিছু লোককে সেখান থেকে বের করে আনবে, যারা আগুনে জ্বলে কালো হয়ে গেছে এবং হায়াত বা হায়া নামক নহরে নিক্ষেপ করিবে। তখন তারা এতে এমন সতেজ হয়ে উঠবে যেমনভাবে শস্য অঙ্কুর স্রোতবাহিত পলিতে সতেজ হয়ে উঠে। তোমরা কি দেখনি, কত সুন্দররূপে সে শস্যদানা কেমনভাবে হলদে মাথা মোড়ানো অবস্থায় অঙ্কুরিত হয়?
[ই.ফা. ৩৫৩; ই.সে. ৩৬৪]
৩৪৬. উহায়ব ও খালিদ উভয়ে আম্র ইবনি ইয়াহ্ইয়ার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
উপরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। নবি [সাঃআ:] বলেছেনঃ অতঃপর তাহাদেরকে [জাহান্নাম থেকে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত লোকদের] হায়াত নামক নহরে ফেলে দেয়া হইবে। খালিদের বর্ণনায় আছে, প্লাবনে সিক্ত মাটিতে বীজ যেমন অঙ্কুরিত হয়ে উঠে। উহায়বের বর্ণনায় রয়েছে : যেমন বীজ আপনা আপনি তরতাজা হয়ে ওঠে পানির স্রোতের কিনারায় কাদা মাটির মধ্যে।
[ই.ফা. ৩৫৪; ই.সে. ৩৬৫]
৩৪৭. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেনঃ জাহান্নামীদের মধ্যে যারা প্রকৃত জাহান্নামী তাহাদের মৃত্যুও ঘটবে না এবং তারা বেঁচেও থাকিবে না। তবে তন্মধ্যে তাহাদের এমন কতিপয় লোকও থাকিবে যারা গুনাহের দায়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এরপর আল্লাহ তাআলা [তাহাদের উপর পতিত আযাবের নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে] তাহাদেরকে কিছুকাল নির্জীব করে রেখে দিবেন। অবশেষে তারা পুড়ে কয়লার মতো হয়ে যাবে। এ সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে শাফাআতের অনুমতি হইবে। তখন এদেরকে দলে দলে নিয়ে আসা হইবে এবং জান্নাতের নহরগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া হইবে। পরে বলা হইবে, হে জান্নাতীরা! তোমরা এদের গায়ে পানি ঢেলে দাও। ফলতঃ স্রোতবাহিত পলিতে গজিয়ে উঠা শস্য দানার ন্যায় তারা সজীব হয়ে উঠবে। উপস্থিতদের মধ্যে একজন বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] যেন এককালে গ্রামে অবস্থান করিতেন।
[ই.ফা. ৩৫৫; ই.সে. ৩৬৬]
৩৪৮. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] থেকে ফী হামীলিস সাইলি কথাটি পর্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন। তবে পরবর্তী অংশটুকু উল্লেখ করেননি।
[ই.ফা. ৩৫৬; ই.সে. ৩৬৭]
৮৩. অধ্যায়ঃ জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রাপ্ত সর্বশেষ ব্যক্তি
৩৪৯. আবদুল্লাহ ইবনি মাসুদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেনঃ জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ও জান্নাতে সর্বশেষ প্রবেশকারী লোকটিকে আমি অবশ্যই জানি। সে হামাগুড়ি দিয়ে বা হেচঁড়িয়ে হেচঁড়িয়ে জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে। আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন : যাও জান্নাতে প্রবেশ করো। সে সেখানে আসবে। আর তার ধারণা হইবে যে, তাতো পূর্ণ হয়ে গেছে। সেখানে কোন স্থান নেই তাই সে ফিরে এসে বলবে, হে প্রভু! আমিতো তা পরিপূর্ণ পেয়েছি। আল্লাহ তাআলা আবার তাকে বলবেন : যাও জান্নাতে প্রবেশ করো। তিনি [সাঃআ:] বলেছেনঃ এ ব্যক্তি সেখানে আসলে তার ধারণা হইবে যে, তাতো পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। সে ফিরে এসে বলবে, হে প্রভু! আমিতো তা পূর্ণ পেয়েছি। আল্লাহ তাকে পুনরায় বলবেন : যাও জান্নাতে প্রবেশ করো। তোমাকে দুনিয়ার মতো এবং তার দশগুণ দেয়া হলো। অথবা তিনি বলেছেন, তোমাকে পৃথিবীর দশগুণ দেয়া হলো। অতঃপর সে বলবে, আপনি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন? অথবা সে বলবে, এ সময় আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে এমনভাবে হাসতে দেখেছি যে, তাহাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত প্রকাশ হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেনঃ এ হইবে সবচেয়ে নিম্নশ্রেণীর জান্নাতী।
[ই.ফা.৩৫৭; ই.সে. ৩৬৮]
৩৫০. আবদুল্লাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ বের হয়ে আসা লোকটিকে অবশ্যই আমি জানি। সে হেচঁড়িয়ে হেচঁড়িয়ে জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে। তারপর তাকে বলা হইবে, যাও জান্নাতে প্রবেশ করো। সে গিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করে লোকদেরকে দেখিতে পাবে যে, তারা পূর্বেই জান্নাতের সকল স্থান দখল করে রেখেছে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হইবে, তোমার কি পূর্বকালের কথা [জাহান্নামের] স্মরণ আছে? সে বলবে, হ্যাঁ! তাকে বলা হইবে : তুমি কামনা করো। সে তখন কামনা করিবে। তখন তাকে বলা হইবে, যাও, তোমার আশা পূর্ণ করলাম। সেই সাথে পৃথিবীর আরও দশগুণ বেশি প্রদান করলাম। লোকটি বলবে, আপনি সর্বশক্তিমান প্রভু! আর আপনি আমার সাথে তামাশা করছেন? সহাবা বলেন, এ কথাটি বলে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এত হাসলেন যে, তাহাঁর মাড়ির দাঁত প্রকাশিত হয়ে গেল।
[ই.ফা. ৩৫৮; ই.সে.৩৬৯]
৩৫১. ইবনি মাসুদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেনঃ সবার শেষে এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করিবে। সে একবার সম্মুখে হাঁটবে আবার একবার উপুড় হয়ে পড়ে যাবে। জাহান্নামের আগুন তাকে ঝাপটা দিবে। অগ্নিসীমা অতিক্রম করার পর সে তার দিকে ফিরে দেখবে এবং বলবে, সে সত্ত্বা কত মহিমাময় যিনি আমাকে তোমা হতে নাযাত দিয়েছেন। তিনি আমাকে এমন জিনিস দান করিয়াছেন যা পূর্বের বা পরের কাউকেও প্রদান করেননি। এরপর তার সামনে একটি গাছ উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে; [যা দেখে] সে বলবে, হে প্রতিপালক! আমাকে এ গাছটির নিকটবর্তী করে দিন, যেন আমি এর ছায়া গ্রহণ করিতে পারি এবং এর নীচে প্রবাহিত পানি থেকে পিপাসা নিবারণ করিতে পারি। আল্লাহ তাআলা বলবেন : হে আদাম সন্তান! যদি আমি তোমাকে তা দান করি, তবে হয়ত তুমি আবার অন্য একটির প্রার্থনা করে বসবে। তখন সে বলবে, না, হে প্রভু! এর অতিরিক্ত কিছু চাইব না, বলে সে আল্লাহ তাআলার নিকট কসম করিবে এবং আল্লাহও তার ওযর গ্রহণ করবেন। কারণ সে এমন সব জিনিস প্রত্যক্ষ করেছে যা দেখে সবর করা যায় না। অতএব আল্লাহ তাআলা তাকে এ গাছটির নিকটবর্তী করে দিবেন। আর সে তার ছায়া গ্রহণ করিবে ও পানি পান করিবে। তারপর আবার একটি গাছ উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে; যেটি প্রথমটি অপেক্ষা অধিক সুন্দর। তা দেখেই সে প্রার্থনা করিবে, হে পরওয়ারদিগার! আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করে দিন, যেন আমি তা থেকে পানি পান করিতে পারি এবং এর ছায়া গ্রহণ করিতে পারি। এরপর আর কিছুর প্রার্থনা করবো না। আল্লাহ উত্তর দিবেন : আদম সন্তান! তুমি না আমার কসম করে বলেছিলে, আর কোনটির প্রার্থনা জানাবে না। তিনি আরো বলবেন : যদি আমি তোমাকে তার নিকটবর্তী করে দেই তবে তুমি হয়ত আরো কিছুর জন্য প্রার্থনা করিবে। সে আর কিছু চাইবে না বলে কসম করিবে। আল্লাহ তাআলা তার এ ওযর কবূল করবেন। কারণ সে এমন সব জিনিস প্রত্যক্ষ করেছে যা দেখে সবর করা যায় না। অতঃপর তিনি তাকে এর নিকটবর্তী করে দিবেন। আর সে এর ছায়া গ্রহণ করিবে ও পানি পান করিবে। এরপর আবার জান্নাতের দরজার কাছে আরেকটি গাছ উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে, এটি পূর্বের দুটি গাছ অপেক্ষাও সুন্দর। তাই সে বলে উঠবে, হে প্রতিপালক! আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করে দিন, যেন আমি এর ছায়া গ্রহণ করিতে পারি ও পানি পান করিতে পারি। আমি আর কিছু প্রার্থনা করবো না। আল্লাহ বলবেন : হে আদাম সন্তান! তুমি আমার নিকট আর কিছু চাইবে না বলে কসম করনি? সে উত্তরে বলবে, অবশ্যই করেছি। হে প্রভু! তবে এটিই। আর কিছু চাইবো না। আল্লাহ তার ওযর গ্রহণ করবেন, কারণ সে এমন সব জিনিস প্রত্যক্ষ করছে যা দেখে সবর করা যায় না। তিনি তাকে এর নিকটবর্তী করে দিবেন। যখন তাকে নিকটবর্তী করে দেয়া হইবে! আর জান্নাতীদের কন্ঠস্বর তার কান ধ্বনিত হইবে, তখন সে বলবে, হে প্রতিপালক! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেন : হে আদাম সন্তান! তোমার কামনা কোথায় গিয়ে শেষ হইবে? আমি যদি তোমাকে পৃথিবী এবং তার সমপরিমাণ বস্তু দান করি তবে কি তুমি পরিতৃপ্ত হইবে? সে বলবে, হে প্রতিপালক! আপনি ঠাট্রা বিদ্রূপ করছেন। আপনি তো সারা জাহানের প্রতিপালক।
এ কথাটি বর্ণনা করিতে গিয়ে বর্ণনাকারী ইবনি মাসুদ [রাঃআ:] হেসে ফেললেন। আর বলিলেন, আমি কেন হাসছি তা তোমরা জিজ্ঞেস করিবে না? তারা বলিল, কেন হাসছেন? তখন তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-ও অনুরূপ হেসেছিলেন। সহাবাগণ জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রসূল! কেন হাসছেন? রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বললেনঃ এজন্য যে, ঐ ব্যক্তিটির এ উক্তি “আপনি আমার সাথে ঠাট্রা বিদ্রূপ করছেন, আপনিতো সারা জাহানের প্রতিপালক” শুনে আল্লাহ রব্বুল আলামীন হেসেছেন বলে আমি হাসলাম। যা হোক আল্লাহ তাকে বলবেন : তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না। মনে রেখ, আমি আমার সকল ইচ্ছার উপর ক্ষমতাবান।
[ই.ফা. ৩৫৯; ই.সে. ৩৭০]
৮৪. অধ্যায়ঃ নিম্ন জান্নাতী , তথায় তার মর্যাদা
৩৫২. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন : নিম্নতম জান্নাতী ঐ ব্যক্তি, যার মুখমন্ডলটি আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের দিক থেকে সরিয়ে জান্নাতের দিকে করে দিবেন। তার সামনে একটি ছায়াযুক্ত গাছ উদ্ভাসিত করা হইবে। সে ব্যক্তি প্রার্থনা জানাবে, হে প্রতিপ্রালক! আমাকে এ গাছ পর্যন্ত এগিয়ে দিন। আমি এ ছায়ায় অবস্থান করিতে চাই। ….. এভাবে তিনি ইবনি মাসুদ [রাঃআ:]-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে এ হাদীসে [আরবী] [অর্থাৎ হে আদাম সন্তান! তোমাকে আমা হতে কিসে দূরে রেখেছিল]-এর উল্লেখ নেই। অবশ্য এতটুকু বলেছেন যে, আল্লাহ তাকে বিভিন্ন নিআমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলবেন : এটি চাও। এভাবে যখন তার সকল আকাঙ্ক্ষা সমাপ্ত হয়ে যাবে তখন আল্লাহ বলবেন : যাও তোমাকে এসব সম্পদ প্রদান করলাম, সেই সাথে আরও দশগুণ দান করলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেনঃ তখন লোকটি [জান্নাতে] তার গৃহে প্রবেশ করিবে। তার সাথে ডাগর আঁখি বিশিষ্ট দুজন হুর তার পত্নী হিসেবে প্রবেশ করিবে। আর তারা বলবে, সকল প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য যিনি আপনাকে আমাদের জন্য এবং আমাদেরকে আপনার জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন। লোকটি বলবে, আমাকে যা দেয়া হয়েছে, এমন আর কাউকে দেয়া হয়নি।
[ই.ফা. ৩৬০; ই.সে. ৩৭১]
৩৫৩. মুগীরাহ ইবনি শুবাহ [রাঃআ:]-এর সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] হইতে বর্ণিত আছে যে, একবার মূসা [আ:] তাহাঁর প্রতিপালককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জান্নাতের সবচেয়ে নিম্ন স্তরের মর্যাদা লোক কে হইবে? তিনি [আল্লাহ] বললেনঃ সে হলো এমন এক ব্যক্তি যে জান্নাতীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আসবে। তাকে বলা হইবে, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে, হে প্রতিপালক! তা কিরূপে হইবে? জান্নাতীগণ তো নিজ নিজ আবাসের অধিকারী হয়ে গেছেন। তারা তাহাদের প্রাপ্য নিয়েছেন। তাকে বলা হইবে, পৃথিবীর কোন সম্রাটের সাম্রাজ্যের সমপরিমাণ সম্পদ নিয়ে তুমি সন্তুষ্ট হইবে? সে বলবে, হে প্রভূ! আমি খুশী। আল্লাহ বলবেন : তোমাকে উক্ত পরিমাণ সম্পদ দেয়া হলো। সাথে দেয়া হলো আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ। পঞ্চমবারে সে বলে উঠবে, আমি সন্তুষ্ট, হে আমার রব! তিনি [আল্লাহ] বলবেন : এটা তোমার জন্য এবং আরো দশগুণ দেয়া হলো। তাছাড়া তোমার জন্য রয়েছে এমন জিনিস যা দ্বারা মন তৃপ্ত হয় চোখ জুড়ায়। সে [লোকটি] বলবে, হে আমার প্রভু! আমি পরিতৃপ্ত। মুসা [আ:] বললেনঃ তাহাদের মধ্যে সর্বোচ্চ কে? আল্লাহ বলবেন : এরা তারাই, যাদের মর্যাদা আমি চূড়ান্তভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি। তিনি [আল্লাহ] বলবেন : ওরা তারাই যাদের জন্য আমি নিজ হস্তে তাহাদের মর্যাদা উন্নীত করেছি। আর তার উপর মোহর মেরে দিয়েছি। এমন জিনিস তাহাদের জন্য রেখেছি যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি, কারো অন্তরে কখনো কল্পনায়ও উদয় হয়নি। বর্ণনাকারী বলেন, কুরআন মাজীদের এ আয়াতটি এর সত্যায়ন করে :
فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ
“কেউ জানে না তাহাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর কী লুকায়িত রাখা হয়েছে তাহাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ” – [সূরাহ আস-সাজদাহ ৪১ : ১৭]।
[ই.ফা. ৩৬১, ই.সে. ৩৭২]
৩৫৪. মুগীরাহ ইবনি শুবাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মূসা [আ:] আল্লাহ তাআলাকে জান্নাতের সর্বনিম্ন ব্যক্তিটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন ….. এরপর বর্ণনাকারী পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ই.ফা. ৩৬২; ই.সে. ৩৭৩]
৩৫৫. আবু যার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন : জাহান্নাম হতে সবার শেষে উদ্ধারপ্রাপ্ত ও জান্নাতে সবার শেষে প্রবেশকারী লোকটিকে আমি অবশ্যই জানি। কিয়ামাতের দিন তাকে উপস্থিত করে ফেরেশতাহাদেরকে নির্দেশ দেয়া হইবে যে, এ ব্যক্তির সগীরা গুনাহগুলো তার সামনে পেশ কর, আর কবীরা গুনাহসমূহ [আলাদা] তুলে রাখ। সুতরাং ফেরেশতাগণ তার সম্মুখে সগীরা গুনাহগুলো উপস্থিত করবেন। আর ঐ ব্যক্তিকে [ধমকের সুরে] বলা হইবে, তুমি অমুক দিন এ পাপ কাজ করেছিলে? অমুক দিন সে কাজ করেছিলে? সে বলবে, হ্যাঁ। সে কোনটি অস্বীকার করিতে পারবে না। আর কবীরা গুনাহসমূহ পেশ করা হইবে কিনা বলে সে ভয় করিতে থাকিবে। অতঃপর তাকে বলা হইবে, তোমার এক একটি গুনাহের পরিবর্তে এক একটি নেকী দেয়া হলো। লোকটি বলবে, হে প্রতিপালক! আমি আরো অনেক অন্যায় কাজ করেছি, যেগুলো এখানে দেখছি না। অবশ্য রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে এমনভাবে হাসতে দেখেছি যে তাহাঁর মাড়ির দাঁতগুলো পর্যন্ত ভেসে উঠল।
[ই.ফা. ৩৬৩; ই.সে. ৩৭৪]
৩৫৬. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
এ সানাদে উক্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ই.ফা. ৩৬৪; ই.সে. ৩৭৫]
৩৫৭. আবু যুবায়র [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জাবির ইবনি আবদুল্লাহকে কুরআনে উল্লেখিত [আরবী] অর্থাৎ [পুলসিরাতের উপর দিয়ে] অতিক্রম করিতে হইবে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন, কিয়ামাতের দিন আমরা এরূপে আসব। তিনি মাথা উঁচু করে দেখালেন। এরপর একে একে প্রত্যেক জাতিকে তাহাদের নিজ নিজ দেব-দেবী ও উপাস্যের নামসহ ডাকা হইবে। তারপর আল্লাহ আমাদের [মুমিনদের] নিকট এসে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কার অপেক্ষায় রয়েছ? মুমিনগণ বলবে, আমাদের প্রতিপালকের অপেক্ষায় আছি। তিনি বলবেন, আমিই তো তোমাদের প্রতিপালক। তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে না দেখব [আমরা তা মানছি না]। এরপর আল্লাহ তখন এমনভাবে উদ্ভাসিত হইবেন যে, তিনি হাসছেন। অনন্তর তিনি তাহাদের নিয়ে চলবেন এবং মুমিনগণ তাহাঁর অনুসরণ করিবে। মুনাফিক কি মুমিন প্রত্যেক মানুষকেই নূর প্রদান করা হইবে। তারপর তারা এর অনুসরণ করিবে। জাহান্নামের পুলের উপর থাকিবে কাঁটাযুক্ত লৌহ শলাকা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সেগুলো পাকড়াও করিবে। মুনাফিকদের নূর নিভে যাবে। আর মুমিনগণ নাযাত পাবেন। প্রথম দল হইবে সত্তর হাজার লোকের, তাহাদের কোন হিসাবই নেয়া হইবে না। তাহাদের চেহারা হইবে পূর্ণিমা রাতের চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল। তারপর আরেক দল আসবে তাহাদের মুখমন্ডল হইবে আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের ন্যায় দীপ্ত। এভাবে পর্যায়ক্রমে সকলে পার হয়ে যাবে। তারপর শাফাআতের অনুমতি প্রদান করা হইবে। ফলে সকলেই শাফাআত করিবে। এমনকি যে ব্যক্তি
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” স্বীকার করেছে এবং যার অন্তরে সামান্য যব পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হইবে। পরে এদেরকে জান্নাতের আঙিনায় জমায়েত করা হইবে, আর জান্নাতীগণ তাহাদের গায়ে পানি সিঞ্চন করবেন, ফলে তারা এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে যেমনভাবে কোন উদ্ভিদ স্রোতবাহিত পানির ধারে সতেজ হয়ে উঠে। আগুনে পোড়া দাগসমূহ মুছে যাবে। এরপর তারা আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা জানাবে। আল্লাহ তাহাদের প্রার্থনা কবুল করবেন। তাহাদের প্রত্যেককে পৃথিবীর ন্যায় এবং তৎসহ আরো দশগুণ প্রতিদান দেয়া হইবে।
[ই.ফা. ৩৬৫; ই.সে. ৩৭৬]
৩৫৮. জাবির [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি দুই কানে নবি [সাঃআ:]-কে ইরশাদ করিতে শুনেছেন : আল্লাহ তাআলা কতিপয় লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
[ই.ফা. ৩৬৬; ই.সে. ৩৭৭]
৩৫৯. আবু রাবী হাম্মাদ ইবনি যায়দ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমর ইবনি দীনারকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআ:]-কে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] হতে হাদীস বর্ণনা করিতে শুনেছেন যে, আল্লাহ তাআলা কতিপয় মানুষকে শাফাআতের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। তখন তিনি বলিলেন, হ্যাঁ!
[ই.ফা. ৩৬৭; ই.সে. ৩৭৮]
৩৬০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ একদল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হইবে। এদের মুখমন্ডল ব্যতীত সারা দেহ জ্বলে পুড়ে গেছে। অবশেষে তারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে।
[ই.ফা. ৩৬৮; ই.সে. ৩৭৯]
৩৬১. ইয়াযীদ আল ফাকীর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, খারিজীদের একটি মত আমার মনকে দৃঢ়ভাবে কেড়ে নিয়েছিল। [কবীরা গুনাহকারী সর্বদা জাহান্নামে থাকিবে, কখনো বের হইবে না] [বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য লোকদের সাথে আলোচনা করাও আমাদের উদ্দেশ্য ছিল]। আমরা একবার একটি দলের সাথে হাজ্জে যাত্রা করি। আমরা মাদীনাহ দিয়ে যাচ্ছিলাম, দেখি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআ:] একটি খুঁটির পাশে বসে লোকদেরকে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর হাদীস বর্ণনা করছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি জাহান্নামীদের আলোচনা তুললেন। আমি বললাম, হে রসূলের সহাবা। আপনারা এ কি বলছেন? অথচ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
إِنَّكَ مَنْ تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ
“যাকে আপনি অগ্নিতে নিক্ষেপ করিলেন, তাকে তো আপনি নিশ্চয়ই হেয় করিলেন” – [সূরাহ আ-লি ইমরান ৩ : ১৯২]। আরো ইরশাদ করেন :
كُلَّمَا أَرَادُوا أَنْ يَخْرُجُوا مِنْهَا أُعِيدُوا فِيهَا
“যখনই তারা জাহান্নাম হতে বেরোবার চেষ্টা করিবে তখনই তাহাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হইবে” – [সূরাহ আস-সাজদাহ ৪১ : ২০]। এ বিষয়ে আপনারা কী বলছেন। জাবির [রাঃআ:] জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি কুরআন পাঠ কর? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তাহলে তুমি মুহাম্মাদ [এর সম্মানিত] আসন, যেথায় আল্লাহ তাঁকে [কিয়ামাত দিবসে] সমাসীন করবেন, সে আসনের কথা শুন নি? বললাম, হ্যাঁ। জাবির [রাঃআ:] বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর সে আসনটি হচ্ছে “মাকামে মাহমূদ” যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা যাকে জাহান্নাম থেকে বের করার বের করবেন। বর্ণনাকারী আরো বলেন, আলোচনাটি পুরোপুরি সংক্ষরণ করিতে পারিনি বলে আমার আশঙ্কা হয়। তবে তিনি অবশ্যই এ কথা ধারণা করিয়াছেন যে, কতিপয় মানুষ কিছুকাল জাহান্নামে অবস্থান করার পর তাহাদেরকে বের করা হইবে। জাহান্নাম দগ্ধীভূত হয়ে যখন রোদে পোড়া তিল গাছের ন্যায় কালো বর্ণ ধারণ করিবে, তখন তাহাদেরকে বের করে আনা হইবে। এরপর তারা জান্নাতের একটি নহরে নেমে গোসল করিবে। পরে সকলে কাগজের ন্যায় সাদা ধবধবে হয়ে সে নহর থেকে উঠে আসবে। ইয়াযীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ হাদীস নিয়ে আমরা আমাদের এলাকায় ফিরে এলাম এবং [সকলকে] বললাম, অকল্যাণ হোক তোমাদের! তোমরা কি মনে কর যে, এ বৃদ্ধ [জাবির] রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর উপর মিথ্যারোপ করিতে পারেন? পরিশেষে আমরা সকলেই [ঐ ভ্রান্ত বিশ্বাস] থেকে ফিরে আসি। আল্লাহর কসম মাত্র এক ব্যক্তি ছাড়া কেউ আমাদের এ সঠিক আকীদাহ পরিত্যাগ করেনি। আবু নুআয়ম এরূপই বর্ণনা করিয়াছেন।
[ই.ফা. ৩৬৯; ই.সে. ৩৮০]
৩৬২. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন : চার ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত করা হইবে। তন্মধ্যে একজন বারবার পশ্চাৎ দিকে ফিরে তাকাবে আর বলবে, হে আমার রব! যখন আমাকে এ জাহান্নাম থেকে বের করিয়াছেন, তখন আমাকে আর সেখানে ফিরিয়ে নিবেন না। আল্লাহ তাআলা এ লোকটিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দিবেন।
[ই.ফা. ৩৭০; ই.সে. ৩৮১]
৩৬৩. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন : হাশরের দিনে আল্লাহ তাআলা সকল মানুষকে একত্রিত করবেন। তখন সংকট মুক্তির জন্য ও সুপারিশ প্রার্থনার ব্যাপারে তারা তৎপর হইবে। এখানে বর্ণনাকারী ইবনি উবায়দ [আরবী] শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন। অর্থ অন্তরে উদয় হওয়া। তারা বলবে, আমরা যদি [কাউকে] আল্লাহর নিকট সুপারিশের জন্য অনুরোধ করতাম। যেন তিনি আমাদের এ [সংকটময়] স্থান থেকে মুক্তি দেন। সে মতে, তারা আদাম [আ:]-এর নিকট এসে বলবে, আপনি আদাম [আ:], আপনি মানুষের [আদি] পিতা, আল্লাহ তাআলা স্বহস্তে আপনাকে সৃষ্টি করিয়াছেন, আপনার দেহে আত্মা ফুঁকেছেন, আপনাকে সাজদাহ করার জন্য ফেরেশতাহাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, তাই তাঁরা আপনাকে সাজদাহও করিয়াছেন। সুতরাং আপনি আমাদের পক্ষ হতে প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করুন। যেন তিনি আমাদেরকে এ [সংকটময়] স্থান থেকে মুক্তি দেন। তিনি তাহাঁর কৃত ত্রুটির কথা স্মরণ করবেন এবং প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করিতে লজ্জাবোধ করবেন। তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা নূহ [আ:] এর নিকটে যাও। তিনি প্রথম রসূল। আল্লাহ তাআলা তাঁকেই সর্বপ্রথম রসূলরুপে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তখন সকল মানুষ নূহ [আ:]-এর নিকট এসে [অনুরোধ] করিবে। তিনিও তাহাঁর কৃত ত্রুটির কথা স্মরণ করবেন এবং প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করিতে লজ্জাবোধ করবেন। তিনি বলবেনঃ আমি এর যোগ্য নই। তোমরা ইবরাহীমের নিকট যাও। তাঁকে আল্লাহ তাআলা বন্ধুরূপে গ্রহণ করিয়াছেন। তখন সবাই ইবরাহীম [আ:]-এর নিকট আসবে। তিনি স্বীয় কৃত ত্রুটির কথা স্মরণ করবেন এবং প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করিতে লজ্জাবোধ করবেন এবং বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা মূসার নিকট যাও। আল্লাহ তাহাঁর সাথে কপোথোকথন করিয়াছেন। তাঁকে আল্লাহ তাওরাত প্রদান করিয়াছেন। তখন সবাই মূসা [আ:]-এর নিকট আসবে। তিনি তাহাঁর কৃত ত্রুটির কথা স্মরণ করবেন এবং প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করিতে লজ্জাবোধ করবেন এবং বলবেন, আমি এর উপযুক্ত নই। তোমরা ঈসা [আ:]-এর নিকট যাও, তিনি আল্লাহ প্রদত্ত কালিমা। তখন সবাই ঈসা [আ:]-এর নিকট আসবে। তিনি বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের যোগ্য নই, তবে তোমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর নিকট যাও। তিনি আল্লাহর এমন বান্দা যে, তাহাঁর পূর্বাপর সকল ত্রুটি ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, তখন সবাই আমার নিকট আসবে, আর আমি আল্লাহর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করবো। আমাকে অনুমতি দেয়া হইবে। তখন আমি তাঁকে দেখামাত্র সাজদাহবনত হয়ে যাবো। যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করবেন আমাকে এ অবস্থায় রেখে দিবেন; তারপর বলা হইবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন, বলুন, আপনার অনুরোধ শোনা হইবে, আপনি প্রার্থনা করুন তা পূর্ণ করা হইবে, আপনি শাফাআত করুন, আপনার শাফাআত কবূল করা হইবে। তারপর আমি মাথা তুলবো এবং আমার প্রতিপালকের এমন প্রশংসা করবো যা আমার রব আমাকে শিখিয়ে দিবেন। এরপর আমি সুপারিশ করবো। আমার জন্য [শাফাআতের] সীমা নির্ধারিত করে দেয়া হইবে। সে মতে, আমি তাহাদেরকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে এনে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। পুনরায় আমি শাফাআতের জন্য আসবো এবং সাজদাহবনত হব। যতক্ষণ আল্লাহ এ অবস্থায় আমাকে রাখতে ইচ্ছা করবেন, ততক্ষণ রেখে দিবেন। পরে বলা হইবে : হে মুহাম্মাদ! [মাথা] তুলুন, বলুন, আপনার অনুরোধ শোনা হইবে; প্রার্থনা করুন তা পূর্ণ করা হইবে; সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ কবূল করা হইবে। তারপর আমি মাথা তুলব এবং আমার প্রতিপালকের এমন প্রশংসা করব যা আমার রব আমাকে শিখিয়ে দিবেন। অতঃপর আমি শাফাআত করবো। আমার জন্য [শাফাআতের] সীমা নির্ধারিত করে দেয়া হইবে। সে মতে, আমি এদেরকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। বর্ণনাকারী বলেন, নিশ্চিতভাবে স্মরণ নেই, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তৃতীয় কিংবা চতুর্থবারে এ কথা উল্লেখ করেছিলেন যে, আমি বলব : হে আমার প্রতিপালক! কুরআন যাদেরকে বাধা দিয়েছে অর্থাৎ যার উপর জাহান্নামে সর্বদা থাকা অবধারিত হয়েছে। তারা ছাড়া জাহান্নামে আর কেউ অবশিষ্ট নেই। ইবনি উবায়দ বলেন, তাহাঁর বর্ণনায় কাতাদাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামে পড়ে থাকিবে।
[ই.ফা. ৩৭১; ই.সে. ৩৮২]
৩৬৪. আনাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন, কিয়ামাতের দিন মুমিনগণ [হাশরের ময়দানে] একত্রিত হইবে। বর্ণনাকারী বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এখানে [আরবী] [এ অবস্থাকে তারা খুব সঙ্কটময় মনে করিবে] শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন। তারপর বর্ণনাকারী পূর্বোল্লিখিত আবু আওয়ানার হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে এ হাদীসে বলা হয়েছে যে, এরপর আমি চতুর্থবার এসে বলব, হে প্রভু! আর কেউ অবশিষ্ট নেই, কেবল তারাই আছে যাদেরকে কুরআন আটকে রেখেছে।
[ই.ফা. ৩৭২; ই.সে. ৩৮৩]
৩৬৫. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন, কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাদের একত্রিত করবেন। ফলে তারা সেটাকে অতি সঙ্কটময় মনে করিবে। বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত হাদীসদ্বয়ের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ রিওয়ায়াতে চতুর্থবারের ব্যাপারে উল্লেখ করিয়াছেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ তারপর আমি বলবো, হে প্রতিপালক! আর কেউ অবশিষ্ট নেই। কেবল তারাই আছে যাদেরকে পবিত্র কুরআন আটকে রেখেছে। অর্থাৎ যাদের ব্যাপারে চিরকালের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে।
[ই.ফা. ৩৭৩; ই.সে. ৩৮৪]
৩৬৬. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ জাহান্নাম থেকে এমন ব্যক্তিকে বের করে আনা হইবে, যে লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ বলেছে এবং তার অন্তরে যব পরিমাণ কল্যাণ [ঈমান] রয়েছে। অতঃপর এমন ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হইবে যে লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ বলেছে এবং তার অন্তরে এক গম পরিমাণ কল্যাণ [ঈমান] আছে। তারপর এমন ব্যক্তিকে দোযখ থেকে বের করে আনা হইবে, যে লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ বলেছে এবং তার অন্তরে এক বিন্দু পরিমাণ ঈমান আছে।
ইবনি মিনহালের বর্ণনায় আছে- “ইয়াযীদ বলেছেন, আমি শুবার সাথে সাক্ষাত করে হাদীসটি তাঁকে বর্ণনা করি। শুবাহ বলিলেন, এ হাদীসটি কাতাদাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আমাদেরকে আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:]-এর সূত্রে নবি [সাঃআ:] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে শুবাহ যাররাতি এর স্থলে বলেছেন যুরাতুন [চানা বুট]। ইয়াযীদ বলেছেন, এটি আবু বাসতাম অর্থাৎ শুবার ভ্রান্তি।
[ই.ফা. ৩৭৪; ই.সে. ৩৮৫]
৩৬৭. মাবাদ ইবনি হিলাল আল আনাযী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:]-এর নিকট [আলোচনার উদ্দেশ্যে] যাত্রা করি এবং সুপারিশকারী হিসেবে সাবিতের সাহায্য নিলাম। [বর্ণনাকারী বলেন,] আমরা যখন আনাসের নিকট গিয়ে পৌছি, তখন তিনি সলাতুয্ যুহা [চাশ্ত] আদায় করছিলেন। সাবিত [রাঃআ:] আমাদের জন্য অনুমতি চাইলেন। তারপর আমরা আনাস [রাঃআ:]-এর মাজলিসে প্রবেশ করলাম। আনাস [রাঃআ:] সাবিতকে চৌকিতে তাহাঁর পাশে বসালেন। তারপর সাবিত [রাঃআ:] আনাস [রাঃআ:]-কে বলিলেন, হে আবু হামযাহ্! আপনার এ বাস্রার ভাইয়েরা আপনার নিকট থেকে শাফাআত বিষয়ক হাদীস জানতে চাচ্ছে। তখন আনাস [রাঃআ:] বলিলেন, মুহাম্মাদ [সাঃআ:] আমাদেরকে ইরশাদ করিয়াছেন, কিয়ামাতের দিনে মানুষ বিপর্যস্ত অবস্থায় এদিকে সেদিকে ছুটাছুটি করিতে থাকিবে। অবশেষে সবাই আদাম [আ:]-এর নিকট এসে বলবে, আপনার সন্তানদের জন্য সুপারিশ করুন। তিনি বলবেন, আমি এর উপযুক্ত নই, বরং তোমরা ইবরাহীমের নিকট যাও। কেননা তিনি আল্লাহর বন্ধু। সবাই ইবরাহীম [আ:]-এর নিকট আসলে তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, তবে তোমরা মুসার নিকট যাও। কেননা, তিনি আল্লাহর সাথে কথোপকথনকারী। তখন সকলে তাহাঁর নিকট আসবে। তিনি বলবেন, আমি তো এর উপযুক্ত নই, তবে তোমরা ঈসা [আ:]-এর নিকট যাও। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত রূহ্ ও তাহাঁর কালিমাহ্। এরপর তারা ঈসা [আ:]-এর নিকট আসবে। তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, তবে তোমরা মুহাম্মাদ [সাঃআ:]-এর নিকট যাও। এরপর তারা আমার নিকট আসবে। আমি বলব, আমিই এর জন্য যোগ্য আমি যাচ্ছি। অনন্তর আমি আমার পরওয়ারদিগারের অনুমতি প্রার্থনা করব। আমাকে অনুমতি দেয়া হইবে। আমি তাহাঁর সম্মুখে দাঁড়াব এবং এমন প্রশংসাসূচক বাক্যে তাহাঁর প্রশংসা করিতে থাকব যা এখন আমি তা করিতে সক্ষম নই; অবশ্য তখনই আল্লাহ্ আমাকে তা শিখিয়ে দিবেন। এরপর আমি সাজদায় লুটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হইবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠান। বলুন, আপনার কথা শুনা হইবে; প্রার্থনা করুন, কবূল করা হইবে; শাফাআত করুন, আপনার শাফাআত গ্রহণ করা হইবে। তখন আমি বলব, হে পরওয়ারদিগার, উম্মাতী, উম্মাতী, [“আমার উম্মাত, আমার উম্মাত”]। এরপর [আমাকে] বলা হইবে, চলুন, যার অন্তরে গম বা যব পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবেন তাকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে আনুন। আমি যাব [এবং তদনুসারে উদ্ধার করব]। পুনরায় আমার পরওয়ারদিগারের দরবারে ফিরে যাব এবং পুর্বানুরূপ প্রশংসাসূচক বাক্যে তাহাঁর প্রশংসা করব। এরপর আমি সাজদায় লুটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হইবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন, বলুন, আপনার কথা শুনা হইবে; প্রার্থনা করুন, কবূল করা হইবে; সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হইবে। তখন আমি বলব, হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী, উম্মাতী, [“আমার উম্মাত, আমার উম্মাত”]। বলা হবেঃ যান, যে ব্যক্তির অন্তরে একটি সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট থাকিবে তাকেও জাহান্নাম থেকে মুক্ত করুন। এরপর আমি যাব এবং তাহাদের উদ্ধার করে আনবো। পুনরায় আমি পরওয়ারদিগারের দরবারে ফিরে যাব এবং পুর্বানুরূপ প্রশংসাসূচক বাক্যে তাহাঁর প্রশংসা করব। এরপর আমি সাজদায় লুটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হইবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন, বলুন, আপনার কথা শুনা হইবে; প্রার্থনা করুন, কবূল করা হইবে; শাফাআত করুন, শাফাআত গৃহীত হইবে। আমি বলবঃ হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী, উম্মাতী, [“আমার উম্মাত, আমার উম্মাত”]। আমাকে বলা হইবে, যান, যে ব্যক্তির অন্তরে সরিষার দানার চেয়েও আরো কম পরিমাণ ঈমান পাবেন তাকেও জাহান্নাম থেকে মুক্ত করুন। এরপর আমি যাব এবং তাহাদের উদ্ধার করে আনব।
বর্ণনাকারী বলেন, আনাস [রাঃআ:] এ পর্যন্ত আমাদেরকে বলেছেন। এরপর আমরা সেখান থেকে বের হয়ে পথ চলতে শুরু করলাম। এভাবে আমরা যখন “জাব্বান” এলাকায় পৌঁছলাম, তখন নিজেরা বললাম, আমরা যদি হাসান বাস্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতাম এবং তাঁকে সালাম পেশ করতাম তবে কতই না ভাল হত। সে সময় তিনি আবু খলীফার ঘরে [হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ভয়ে] আত্মগোপন করেছিলেন। আমরা তাহাঁর বাড়িতে গেলাম এবং তাঁকে সালাম পেশ করলাম। আমরা তাঁকে বললাম, আবু সাঈদ! আমরা আপনার ভাই আবু হামযার দরবার থেকে আসছি। আজ তিনি আমাদেরকে শাফাআত সম্পর্কে এমন একটি হাদীস শুনিয়েছেন, যা আর কখনো শুনিনি। তিনি বলিলেন, আচ্ছা শোনাও তো? তখন আমরা তাঁকে হাদীসটি শুনালাম। তারপর তিনি বলিলেন, আরও বলো। আমরা বললাম, এর চেয়ে বেশি কিছু তো আনাস [রাঃআ:] বর্ণনা করেননি। তখন তিনি বলিলেন, অথচ আনাস [রাঃআ:] আমাদের নিকট আজ থেকে বিশ বছর পূর্বে যখন তিনি সুস্থ সবল ছিলেন তখন এ হাদীসটি শুনিয়েছেন। কিন্তু আজ তিনি তোমাদের নিকট কিছু ছেড়ে দিয়েছেন। জানি না, তিনি তা ভুলে গেছেন, না তোমরা এর উপর ভরসা করে আমালের ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করিবে আশংকায় তিনি তা বর্ণনা করাটা পছন্দ করেননি। আমরা বললাম, আমাদের তা বর্ণনা করুন। তিনি ঈষৎ হেসে উত্তর করিলেন “মানুষকে তাড়াহুড়া করার প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে”-[সূরাহ আল আম্বিয়াহ ২১ : ৩৭]। তোমাদেরকে তা বর্ণনা করব বলেই তো এর উল্লেখ করলাম। তারপর তিনি হাদীসটির অবশিষ্ট অংশ এরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলেছেন, এরপর আমি পুনরায় আমার পরওয়ারদিগারের কাছে ফিরে আসব এবং চতুর্থবারও উক্তরূপ প্রশংসাসূচক বাক্যে তাহাঁর প্রশংসা করব। এরপর আমি সাজদায় লুটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হইবে, হে মুহাম্মাদ! আপনার মাথা তুলুন, আপনি বলুন, আপনার কথা শুনা হইবে; প্রার্থনা করুন তা কবূল করা হইবে; সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হইবে। আমি বলব, হে পরওয়ারদিগার! আমাকে সেসব মানুষের জন্য অনুমতি দিন যারা “আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই” এ কথা স্বীকার করে। আল্লাহ্ বলবেন, না; এটা আপনার দায়িত্বে নয়। বরং আমার ইয্যত, প্রতিপত্তি, মহত্ত্ব ও পরাক্রমশীলতার কসম! আমি নিজেই অবশ্য ওদের জাহান্নাম হতে মুক্তি দিব-যারা এ কথার স্বীকৃতি দিয়েছে যে, “আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই”।
হাদীসটি শেষ করে বর্ণনাকারী বলেন, আমি এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হাসান আমাদেরকে হাদীসটি আনাস [রাঃআ:] থেকে শুনেছেন বলে বর্ণনা করিয়াছেন। অবশ্য আমার বিশ্বাস তিনি এ কথা বলেছেন যে, বিশ বছর পূর্বে যখন তিনি পূর্ণ সুস্থ সবল ছিলেন।
[ই.ফা. ৩৭৫; ই.সে. ৩৮৬]
৩৬৮. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর নিকট কিছু গোশ্ত আনা হলো। তাহাঁর নিকট রানের গোশ্ত পেশ করা হলো যা তাহাঁর নিকট খুবই পছন্দনীয় ছিল। এরপর তিনি তা থেকে এক কামড় গ্রহণ করিলেন। তারপর বলিলেন, কিয়ামাত দিবসে আমিই হবো সকল মানুষের সর্দার। তা কীভাবে তোমরা কি জানো? কিয়ামাত দিবসে যখন আল্লাহ্ তাআলা শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে একই মাঠে এমনভাবে জমায়েত করবেন যে, একজনের আহ্বান সকলে শুনতে পাবে, একজনের দৃষ্টি সকলকে দেখিতে পাবে। সূর্য নিকটবর্তী হইবে। মানুষ অসহনীয় ও চরম দুঃখ-কষ্ট ও পেরেশানীতে নিপতিত হইবে। নিজেরা পরস্পর বলাবলি করিবে কী দুর্দশায় তোমরা আছ, দেখছ না? কী অবস্থায় তোমরা পৌঁছেছো তা উপলব্ধি করছ না? এমন কাউকে দেখছ না যিনি তোমাদের পরওয়ারদিগারের নিকট তোমাদের জন্য সুপারিশ করবেন? তারপর একজন আরেকজনকে বলবে, তোমরা আদামের কাছে যাও। সুতরাং তারা আদামের কাছে আসবে এবং বলবে, হে আদাম! আপনি মানবকুলের পিতা, আল্লাহ্ স্বহস্তে আপনাকে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং আপনার দেহে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন। আপনাকে সাজদাহ্ করার জন্য ফেরেশতাহাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন; তাঁরা আপনাকে সাজদাহ্ করিয়াছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট শাফাআত করুন। আপনি দেখছেন না, আমরা যে কি কষ্টে আছি? আপনি দেখছেন না আমরা কষ্টের কোন্ সীমায় পৌঁছেছি? আদাম [আ:] উত্তরে বলবেন, আজ আমার পরওয়ারদিগার এতবেশী রাগ করিয়াছেন, যা পূর্বে কখনো করেননি, আর পরেও কখনো এরূপ রাগ করবেন না। তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের [ফল খেতে] নিষেধ করেছিলেন আর আমি সে নিষেধ লঙ্ঘন করে ফেলেছি, নাফসী, নাফসী-[আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান]। তোমরা অন্য কারোর নিকট গিয়ে চেষ্টা করো, তোমরা নূহের নিকট যাও। তখন তারা নূহ [আ:]-এর নিকট আসবে, বলবে, হে নূহ! আপনি পৃথিবীর প্রথম রসূল। আল্লাহ্ আপনাকে “চির কৃতজ্ঞ বান্দা” বলে উপাধি দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন্ অবস্থায় আছি? আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? নূহ [আ:] বলবেন, আজ আমার পরওয়ারদিগার এত রাগ করিয়াছেন যে, এমন রাগ পূর্বেও কখনো করেননি আর পরেও কখনো করবেন না। আমাকে তিনি একটি দুআ কবূলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর তা আমি আমার জাতির বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে ফেলেছি। নাফসী, নাফসী-[আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান]। তোমরা ইবরাহীম [আ:]-এর নিকট যাও। তখন তারা ইবরাহীম [আ:]-এর নিকট আসবে। বলবে, হে ইবরাহীম! আপনি আল্লাহর নবি, পৃথিবীবাসীদের মধ্য থেকে আপনি আল্লাহর খলীল ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন্ অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন্ পর্যায়ে পৌঁছেছে? ইবরাহীম [আ:] তাহাদেরকে বলবেন, আল্লাহ্ আজ এতই রাগ করে আছেন যে, পূর্বে এমন কখনো করেননি আর পরেও কখনো করবেন না। তিনি তাহাঁর কিছু অসত্য [বাহ্যত] কথনের বিষয় উল্লেখ করবেন। বলবেন, নাফসী, নাফসী-[আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান]। তোমরা অন্য কারো নিকট যাও। মূসার নিকট যাও। তারা মূসা [আ:]-এর নিকট আসবে, বলবে, হে মূসা! আপনি আল্লাহর রসূল, আপনাকে তিনি তাহাঁর রিসালাত ও কালাম দিয়ে মানুষের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগার নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন্ অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন্ পর্যায়ে পৌছেছে? মূসা [আ:] তাহাদের বলবেন : আজ আল্লাহ্ এতই রাগ করে আছেন যে, পূর্বে এমন রাগ কখনো করেননি, আর এমন রাগ পরেও কখনো করবেন না। আমি তাহাঁর হুকুমের পূর্বেই এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম। নাফসী, নাফসী-[আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান]। তোমরা ঈসা [আ:]-এর নিকট যাও। তারা ঈসা [আ:]-এর নিকট আসবে এবং বলবে, হে ঈসা! আপনি আল্লাহর রসূল, দোলনায় অবস্থানকালেই আপনি মানুষের সাথে বাক্যালাপ করিয়াছেন, আপনি আল্লাহর দেয়া বাণী, যা তিনি মারইয়ামের মধ্যে নিক্ষেপ করে দিয়েছিলেন, আপনি তাহাঁর দেয়া আত্মা। সুতরাং আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন্ পর্যায়ে পৌঁছেছে? ঈসা [আ:] তাহাদের বলবেন, আজ আল্লাহ তাআলা এতই রাগ করে আছেন যে, এরূপ রাগ না পূর্বে কখনো করিয়াছেন আর না পরে কখনো করবেন, তিনি কোন অপরাধের কথা উল্লেখ করবেন না। তিনি বলবেন, নাফসী, নাফসী-[আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান]। তোমরা অন্য কারো নিকট যাও। মুহাম্মাদ [সাঃআ:]-এর নিকট যাও। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলেন, তখন তারা আমার নিকট আসবে এবং বলবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রসূল, শেষ নবি, আল্লাহ্ আপনার পূর্বাপর সকল ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন্ পর্যায়ে পৌঁছেছে? তখন আমি সুপারিশের জন্য যাব এবং আরশের নীচে এসে পরওয়ারদিগারের উদ্দেশ্যে সাজদাহ্বনত হব। আল্লাহ্ আমার অন্তরকে খুলে দিবেন এবং সর্বোত্তম প্রশংসা ও হাম্দ জ্ঞাপনের শিক্ষা গ্রহণ করবেন, যা ইতোপূর্বে আর কাউকে খুলে দেননি। এরপর আল্লাহ্ বলবেন, হে মুহাম্মাদ! মাথা উত্তোলন করুন, প্রার্থনা করুন, আপনার প্রার্থনা কবূল করা হইবে। সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হইবে। অনন্তর আমি মাথা তুলব। বলব, হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী, উম্মাতী [আমার উম্মাত, আমার উম্মাত] [এদেরকে মুক্তি দান করুন] তারপর বলা হইবে, হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মাতের যাদের উপর কোন হিসাব নেই তাহাদেরকে জান্নাতের দরজার ডান দিক দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। তারা এছাড়াও অন্য দরজায় মানুষের সঙ্গে শারীক হইবে। কসম ঐ সত্ত্বার যাঁহার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, নিশ্চয় জান্নাতের দু চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব মক্কা ও হাজ্রের [বাহরাইনের একটি জনপদের] দূরত্বের মতো। অথবা বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ও বাস্রার দূরত্বের ন্যায়।
[ই.ফা. ৩৭৬; ই.সে. ৩৮৭]
৩৬৯. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, [একদা] রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর সম্মুখে রুটি ও গোশ্তের পাত্র রাখা হলো। তিনি রানের গোশ্ত তুলে নিলেন। বস্তুতঃ তিনি বকরীর গোশ্তের মধ্যে এ রানের গোশ্তই অধিক পছন্দ করিতেন। অতঃপর তিনি দাঁত দিয়ে তা একবার কেটে খেলেন। অতঃপর তিনি দাঁত দ্বারা আরো একবার গোশ্ত কেটে খেলেন। তারপর বলিলেন, আমি কিয়ামাতের দিবসে মানুষের সরদার হবো। তিনি যখন তাহাঁর সহাবাদেরকে দেখলেন, এ ব্যাপারে তাহাদের কেউই তাঁকে কিছুই জিজ্ঞেস করছে না, তখন তিনি বলিলেন, আমি কীভাবে সেদিন সকলের নেতা হবো-এ কথা তোমরা আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছ না? এবার জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল তা কীভাবে? তিনি বলিলেন, যেদিন সমস্ত মানুষ বিশ্ব প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হইবে। অতঃপর হাদীসের অবশিষ্টাংশ উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য ইবরাহীম [আ:]-এর সালামের ঘটনা প্রসঙ্গে এ বর্ণনায় আরো আছে, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলেন, ইবরাহীম [আ:] নক্ষত্র সম্বন্ধে বলেছিলেন এটাই আমার রব তাহাদের প্রতিমাগুলো ভাঙ্গার ব্যাপারে বলেছিলেন : এ সর্বনাশা কাজ তাহাদের বড়টাই করেছে এবং [তাহাদের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন] আমি অসুস্থ। তখন তিনি এসব কথা স্মরণ করবেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, সে মহান সত্তার শপথ, যাঁহার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! জান্নাতের দরজাসমূহের দু চৌকাঠের মাঝখানের দূরত্ব মাক্কাহ ও হাজার অথবা হাজার ও মাক্কার মাঝখানের দূরত্বের সমান।
বর্ণনাকারী বলেন, আমার জানা নেই, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] কোনটি আগে বলেছিলেন।
[ই.ফা. ৩৭৭; ই.সে. ৩৮৮]
৩৭০. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ তাআলা সকল মানুষকে একত্রিত করবেন। মুমিনগণ দাঁড়িয়ে থাকিবে। জান্নাত তাহাদের নিকটবর্তী করা হইবে। অবশেষে সবাই আদামের নিকট এসে বলবে, আমাদের জন্য জান্নাত খুলে দেয়ার প্রার্থনা করুন। আদাম [আ:] বলবেন, তোমাদের পিতা আদামের পদস্খলনের কারণেই তো তোমাদেরকে জান্নাত হতে বের করে দেয়া হয়েছিল। সুতরাং আমি এর যোগ্য নই। আমার পুত্র ইবরাহীমের নিকট যাও। তিনি আল্লাহর বন্ধু। {এরপর সবাই ইবরাহীম [আ:]-এর নিকট এলে} তিনি বলবেন, না, আমিও এর যোগ্য নই, আমি আল্লাহর বন্ধু ছিলাম বটে, তবে তা ছিল দূরে দূরে থেকে। তোমরা মূসার নিকট যাও। কারণ তিনি আল্লাহর সাথে বাক্যালাপ করিয়াছেন। সবাই মূসার নিকট আসবে। তিনি বলবেনঃ আমিও এর যোগ্য নই বরং তোমরা ঈসার নিকট যাও। তিনি আল্লাহর কালিমাহ্ ও রূহ্। [সবাই তাহাঁর নিকট আসলে] তিনি বলবেন : আমি তার উপযুক্ত নই। তখন সকলে মুহাম্মাদ [সাঃআ:]-এর নিকট আসবে। তিনি দুআর নিমিত্ত দাঁড়াবেন এবং তাঁকে অনুমতি প্রদান করা হইবে। আমানাত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক, পুল-সিরাতের ডানে-বামে এসে দাঁড়াবে। আর তোমাদের প্রথম দলটি এ সিরাতে, বিদ্যুৎ গতিতে পার হয়ে যাবে। সহাবা বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ হোক। আমাকে বলে দিন “বিদ্যুৎ গতির ন্যায়” কথাটির অর্থ কী? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, আকাশের বিদ্যুৎ চমক কি কখনো দেখনি? চোখের পলকে এখান থেকে সেখানে চলে যায় আবার ফিরে আসে। তারপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, এর পরবর্তী দলগুলো যথাক্রমে বায়ুর বেগে, পাখির গতিতে, তারপর লম্বা দৌড়ের গতিতে পার হয়ে যাবে। প্রত্যেকেই তার আমাল হিসেবে তা অতিক্রম করিবে। আর তোমাদের নবি সে অবস্থায় পুলসিরাতের উপর দাঁড়িয়ে এ দুআ করিতে থাকিবে, আল্লাহ্ এদেরেকে নিরাপদে পৌঁছিয়ে দিন, এদেরেকে নিরাপদে পৌঁছিয়ে দিন। এরূপে মানুষের আমাল মানুষকে চলতে অক্ষম করে দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তারা এ সিরাত অতিক্রম করিতে থাকিবে। শেষে এক ব্যক্তিকে দেখা যাবে সে নিতম্বের উপর ভর করে পথ অতিক্রম করছে। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] আরো ইরশাদ করেন, সিরাতের উভয় পাশে ঝুলানো থাকিবে কাঁটাযুক্ত লৌহ শলাকা। এরা আল্লাহর নির্দেশক্রমে চিহ্নিত পাপীদের পাকড়াও করিবে। তন্মধ্যে কাউকে তো ক্ষত-বিক্ষত করেই ছেড়ে দিবে; অতঃপর সে নাজাত পাবে। আর কতক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে জাহান্নামের গর্ভে নিক্ষিপ্ত হইবে।
আবু হুরাইরা [রাঃআ:] বলেন, শপথ সে সত্তার যাঁহার হাতে আবু হুরাইরার প্রাণ! জেনে রেখ, জাহান্নামের গভীরতা সত্তর খারীফ [অর্থাৎ-সত্তর হাজার বছরের পথের ন্যায়।]
[ই.ফা. ৩৭৮; ই.সে. ৩৮৯]
৮৫. অধ্যায়ঃ মহানবি [সাঃআ:]-এর বাণীঃ জান্নাতে প্রবেশের জন্য শাফাআত করিবে সকল মানুষের মধ্যে আমিই প্রথম এবং নবিগণের মধ্যে আমার অনুসারী সর্বাধিক হইবে
৩৭১. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন, আমি প্রথম ব্যক্তি যে লোকদের জান্নাতে প্রবেশ সম্পর্কে আল্লাহর নিকট শাফাআত করব। আমার অনুসারীর সংখ্যা সমস্ত নবিগণের অনুসারীদের চেয়ে বেশী।
[ই.ফা. ৩৭৯; ই.সে. ৩৯০]
৩৭২. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলেন, কিয়ামাত দিবসে আমার অনুসারীর সংখ্যা হইবে সমস্ত নবিগণের চেয়ে সর্বাধিক এবং আমিই সবার আগে জান্নাতের কড়া নাড়বো।
[ই.ফা. ৩৮০; ই.সে. ৩৯১]
৩৭৩. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন, জান্নাতে লোকদের প্রবেশ সম্পর্কে আমিই হবো সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং এত অধিক সংখ্যক মানুষ আমার প্রতি ঈমান এনেছে যা অন্য কোন নবির বেলায় হইবে না। নবিদের কেউ কেউ তো এমতাবস্থায়ও আসবেন যাঁহার প্রতি মাত্র এক ব্যক্তিই ঈমান এনেছে।
[ই.ফা. ৩৮১; ই.সে. ৩৯২]
৩৭৪. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন, কিয়ামাত দিবসে আমি জান্নাতের তোরণে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইবো। তখন দ্বাররক্ষী বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তর করবো, মুহাম্মাদ। দ্বাররক্ষী বলবেন, “আপনার জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আপনার পূর্বে অন্য কারোর জন্য দরজা খুলিনি।”
[ই.ফা. ৩৮২; ই.সে. ৩৯৩]
৮৬. অধ্যায়ঃ মহানবি [সাঃআ:] তাহাঁর উম্মাহ্র শাফাআতের জন্য তাহাঁর বিশেষ দুআ গোপন [সংরক্ষণ] রেখেছেন
৩৭৫. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলেন, প্রত্যেক নবির জন্যই বিশেষ একটি দুআ নির্ধারিত আছে যা তিনি করবেন [যা তাঁদের উম্মাতের জন্য গ্রহণ করা হইবে। কিন্তু তাহাঁর সে দুআ দুনিয়াতেই করে ফেলেছেন।] আমি আমার বিশেষ দুআটি কিয়ামাত দিবসে আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য গোপনে [সংরক্ষিত] রাখার সংকল্প নিয়েছি।
[ই.ফা. ৩৮৩; ই.সে. ৩৯৪]
৩৭৬. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নবির জন্য একটি বিশেষ দুআ আছে। [কিন্তু তাঁরা সে দুআর প্রয়োগ দুনিয়াতেই করে ফেলেছেন।] আমার বিশেষ দুআটি কিয়ামাত দিবসে আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য গোপনে সংরক্ষিত রাখব বলে ইচ্ছা করেছি ইনশা-আল্ল-হ।
[ই.ফা. ৩৮৪; ই.সে. ৩৯৫]
৩৭৭. আম্র ইবনি আবু সূফ্ইয়ান ইবনি আসীদ ইবনি জারিয়াহ আস্ সাকাফী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ই.ফা. ৩৮৫; ই.সে. ৩৯৬]
৩৭৮. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি একদিন কাব আল আহ্বারকে বলিলেন, রসূলল্লাহ [সাঃআ:] ইরশাদ করেছেনঃ প্রত্যেক নবির জন্য একটি বিশেষ দুআ আছে [তাহাঁর উম্মাতের জন্য]। কিন্তু তাঁরা দুনিয়াতেই তা করে ফেলেছেন। আমি আমার দুআটি কিয়ামাত দিবসে আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য গোপন করে রাখতে ইচ্ছে করেছি। কাব [রাঃআ:] আবু হুরাইরাকে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি কি এ হাদীস রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] থেকে শুনেছেন? আবু হুরাইরা [রাঃআ:] বললেনঃ হ্যাঁ।
[ই.ফা. ৩৮৬; ই.সে. ৩৯৭]
৩৭৯. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলেছেন, প্রত্যেক নবির জন্য একটি বিশেষ দুআ আছে যা কবূল হইবে। তন্মধ্যে সকলেই তাহাদের দুআ পৃথিবীতেই করে নিয়েছে। আর আমার দুআটি কিয়ামাত দিবসে আমার উম্মাতের জন্য গোপন রেখে দিয়েছি। আমার উম্মাতের যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে অথচ কোন প্রকার শির্ক করেনি সে ইনশাআল্লাহ আমার এ দুআ পাবে।
[ই.ফা. ৩৮৭; ই.সে. ৩৯৮]
৩৮০. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন, প্রত্যেক নবিকে একটি বিশেষ দুআর অনুমতি প্রদান করা হয়েছে; এর মাধ্যমে তিনি যে দুআ করবেন, আল্লাহ তা অবশ্যই কবূল করবেন। সকল নবি তাঁদের দুআ করে ফেলেছেন এবং তা কবূলও করা হয়েছে। আর আমি আমার দুআটি কিয়ামাত দিবসে আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য গোপনে রেখে দিয়েছি।
[ই.ফা. ৩৮৮; ই.সে. ৩৯৯]
৩৮১. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন, প্রত্যেক নবিকে তাহাঁর উম্মাতের ব্যাপারে একটি এমন দুআর অনুমতি দেয়া হয়েছে যা অবশ্যই কবূল করা হইবে। তা তাঁরা নিজের উম্মাতের জন্য করে ফেলেছেন। আমি ইনশাআল্লাহ সংকল্প করেছি, আমার দুআটি পরে কিয়ামাতের দিবসে আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য করবো।
[ই.ফা. ৩৮৯; ই.সে. ৪০০]
৩৮২. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন : প্রত্যেক নবির কাছে তাহাঁর উম্মাতের ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য একটি দুআর অনুমতি আছে। প্রত্যেকে আপন উম্মাতের কল্যাণের জন্য তা করিয়াছেন। আর আমি আমার দুআটি কিয়ামাত দিবসে আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য অবশিষ্ট রেখে দিয়েছি।
[ই.ফা. ৩৯০; ই.সে. ৪০১]
৩৮৩. যুহায়র ইবনি হার্ব, ইবনি আবু খালাফ, কাতাদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
এ সানাদের উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
[ই.ফা. ৩৯০; ই.সে. ৪০২]
৩৮৪. কাতাদাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে ওয়াকীর বর্ণনায় আছে আনসার [রাঃআ:] থেকে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে ওয়াকীর বর্ণনায় আছে আনাস [রাঃআ:] বলেন, নবি [সাঃআ:] বলেছেন, প্রত্যেক নবিকে একটি করে দুআ প্রদান করা হয়েছে।
[ই.ফা. ৩৯০; ই.সে. ৪০৩]
৩৮৫. আনাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
কাতাদাহ্-এর অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ই.ফা. ৩৯১; ই.সে. ৪০৪]
৩৮৬. মুহাম্মাদ ইবনি আহমদ ইবনি আবু খালাফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] ইরশাদ করেন, প্রত্যেক নবিকে একটি গ্রহণীয় বিশেষ দুআর অনুমতি দেয়া হয়েছে। সবাই তাঁদের দুআ আপন উম্মাতের কল্যাণের জন্য করে ফেলেছেন, তবে আমি আমার দুআটি কিয়ামাত দিবসে আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য গোপনে অবশিষ্ট রেখে দিয়েছি।
[ই.ফা. ৩৯২; ই.সে. ৪০৫]
৮৭. অধ্যায়ঃ উম্মাত এর জন্য নবি [সাঃআ:]-এর দুআ ও তাহাদের প্রতি মায়া মমতায় তাহাঁর ক্রন্দন
৩৮৭. আবদুল্লাহ ইবনি আম্র ইবনিল আস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] কুরআনে ইবরাহীম [আ:] এর দুআ সম্বলিত আয়াতঃ “হে আমার প্রতিপালক! এ সকল প্রতিমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করিবে সে আমার দলভুক্ত। আর যে আমার অবাধ্য হইবে তুমি তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু”-[সূরাহ ইবরাহীম ১৪ : ৩৬] তিলাওয়াত করেন। আর ঈসা [আ:] বলেছেনঃ “তুমি যদি তাহাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাহাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”-[সূরাহ আল মায়িদাহ্ ৫ : ১১৮] তারপর তিনি তাহাঁর উভয় হাত উঠালেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহ! আমার উম্মাত, আমার উম্মাত! আর কেঁদে ফেললেন। তখন মহান আল্লাহ বলিলেন, হে জিবরীল! মুহাম্মাদের নিকট যাও, তোমার রব তো সবই জানেন-তাঁকে জিজ্ঞেস কর, তিনি কাঁদছেন কেন? জিবরীল [আ:] এসে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-কে জিজ্ঞেস করিলেন। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] যা বলেছিলেন, তা তাঁকে অবহিত করিলেন। আর আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ। তখন আল্লাহ তাআলা বলিলেন, হে জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং তাঁকে বল, “নিশ্চয়ই আমি [আল্লাহ] আপনার উম্মাতের ব্যাপারে আপনাকে সন্তুষ্ট করে দিব, আপনাকে অসন্তুষ্ট করব না”।
[ই.ফা. ৩৯৩; ই.সে. ৪০৬]
৮৮.অধ্যায়ঃ কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী জাহান্নামী , সে কোন শাফাআত পাবে না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দার সাথে আত্মীয়তাহাঁর সম্পর্কও তার উপকারে আসবে না।
৩৮৮. আনাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-কে জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল। আমার পিতা কোথায় আছেন [ জান্নাতে না জাহান্নামে]? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, জাহান্নামে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি যখন চলে যেতে লাগল, তিনি ডাকলেন এবং বলিলেন, আমার পিতা এবং তোমার পিতা জাহান্নামে।
[ই.ফা. ৩৯৪; ই.সে. ৪০৭]
৮৯. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণী “ তোমার নিকটাত্মীয় দেরকে সতর্ক করে দাও” [সূরাহ্ আশ্ শুআরা ২৬ : ২১৪]
৩৮৯. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ “তোমার নিকটাত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও”। [সূরাহ্ আশ্ শুআরা ২৬ : ২১৪]। যখন রসূল্ললাহ [সাঃআ:] কুরায়শদের ডাকলেন। তারা একত্রিত হলো। তারপর তিনি তাহাদের সাধারণ ও বিশেষ সকলকে সম্বোধন করে বলিলেন, হে কাব ইবনি লুওয়াই- এর বংশধর! জাহান্নাম থেকে তাহাদের আত্মরক্ষা কর। ওহে মুর্রাহ্ ইবনি কাব-এর বংশধর! জাহান্নাম থেকে তোমরা আত্মরক্ষা কর। ওহে আব্দ শামস্ এর বংশধর! জাহান্নাম থেকে তোমরা আত্মরক্ষা কর। ওহে আব্দ মানাফ এর বংশধর। জাহান্নাম থেকে তোমরা নিজেদের বাঁচাও। ওহে হাশিমের বংশধর! জাহান্নাম থেকে তোমরা আত্মরক্ষা কর। ওহে আবদুল মুত্তালিব-এর বংশধর! জাহান্নাম থেকে তোমরা নিজেদের বাঁচাও। ওহে ফাতিমাহ্! জাহান্নাম থেকে তুমি নিজেকে বাঁচাও। কারণ, আল্লাহর [আযাব] থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা নেই। অবশ্য আমি তোমাদের সঙ্গে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করব।
[ই.ফা. ৩৯৫; ই.সে. ৪০৮]
৩৯০. আবদুল মালিক ইবনি উমার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন; তবে জারীর বর্ণিত হাদীসটি সম্পূর্ণ ও পরিপূর্ণ।
[ই.ফা. ৩৯৬; ই.সে. ৪০৯]
৩৯১. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন এ মর্মে আয়াত নাযিল হয়ঃ “তোমার নিকটাত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও”-[সূরাহ্ আশ্ শুআরা ২৬ : ২১৪]। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] সাফা পর্বতের উপর দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে ফাতিমাহ্ বিনতু মুহাম্মাদ! হে সাফিয়্যাহ বিনতু আবদুল মুত্তালিব! হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! আল্লাহর আযাব থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করার আমার কোন ক্ষমতা নেই। তোমরা আমার কাছে আমার সম্পদের যা খুশি চাও।
[ই.ফা. ৩৯৭; ই.সে. ৪১০]
৩৯২. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন এ মর্মে আয়াত অবতীর্ণ হলো [অর্থ] “তোমার নিকটাত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও”-[সূরাহ্ আশ্ শুআরা ২৬ : ২১৪]। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, হে কুরায়শগণ! আল্লাহর [আযাব] থেকে তোমরা নিজেদের কিনে নাও [বাঁচাও]। আল্লাহর [আযাব] থেকে তোমাদের রক্ষা করার কোন ক্ষমতা আমার নেই। ওহে আবদুল মুত্তালিব-এর বংশধর! তোমাদের আমি রক্ষা করিতে পারব না। হে আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব! তোমাকেও আমি রক্ষা কতে পারব না। হে সাফিয়্যাহ্ রসূলুল্লাহ্র ফুপু আমি আল্লাহর [আযাব] থেকে তোমার কোন উপকার করিতে পারব না। হে রসূলুল্লাহ্র কন্যা ফাতিমাহ্! তোমার যা ইচ্ছা চাও। আল্লাহর [আযাব] থেকে আমি তোমাকে রক্ষা করিতে পারবো না।
[ই.ফা. ৩৯৮; ই.সে. ৪১১]
৩৯৩. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] থেকে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ই.ফা. ৩৯৯; ই.সে. ৪১২]
৩৯৪. কাবীসাহ্ ইবনি মুখারিক ও যুহায়র ইবনি আম্র [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁরা বলেন, যখন এ মর্মে আয়াত নাযিল হয়, “তোমার নিকটাত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও” -[সূরাহ্ আশ্ শুআরা ২৬ : ২১৪]। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] পর্বতের বৃহদাকার পাথরের দিকে গেলেন এবং তার মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তর প্রস্তর খণ্ডে আরোহণ করিলেন। এরপর তিনি আহ্বান জানালেন, ওহে আব্দ মানাফ-এর বংশধর! আমি [ তোমাদের] সতর্ককারী। আমার ও তোমাদের উপমা হলো, এমন এক ব্যক্তির ন্যায়, যে শত্রুকে দেখিতে পেয়ে তার লোকদের রক্ষা করার জন্য অগ্রসর হলো, পরে সে আশঙ্কা করিল যে, শত্রু তার আগেই এসে যাবে। তখন সে ইয়া সাবাহ্ [ হায় মন্দ প্রভাত!] বলে চিৎকার শুরু করিল।
[ই.ফা. ৪০০; ই.সে. ৪১৩]
৩৯৫. যুহায়র ইবনি আম্র ও কাবীসাহ্ ইবনি মুখারিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ই.ফা. ৪০১; ই.সে. ৪১৪]
৩৯৬. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন এ মর্মে আয়াত নাযিল হয়, “তোমার নিকটাত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও”- [সূরাহ্ আশ্ শুআরা ২৬ : ২১৪] এবং তাহাদের মধ্য থেকে তোমার নিষ্ঠাবান সম্প্রদায়কেও।”{৭৯} তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বের হয়ে এলেন এবং সাফা পর্বতে উঠে উচ্চস্বরে ডাক দিলেনঃ হায়, মন্দ প্রভাত! সকলে বলাবলি করিতে লাগল, কে এ ব্যক্তি যে ডাক দিচ্ছে? লোকেরা বলিল, মুহাম্মাদ। তারপর সবাই তাহাঁর কাছে উপস্থিত হলো। তিনি [সাঃআ:] বলিলেন, হে অমুকের বংশধর! হে অমুকের বংশধর! হে আব্দ মানাফ-এর বংশধর! হে আবদুল মুত্তালিব-এর বংশধর! এতে সবাই তাহাঁর কাছে সমবেত হলো। নবিজী জিজ্ঞেস করলেনঃ দেখ, যদি আমি তোমাদের এ সংবাদ দেই যে, এ পর্বতের পাদদেশে অশ্বারোহী শত্রু সৈন্য এসে পড়েছে তবে কি তোমরা আমাকে বিশ্বাস করিবে? তারা উত্তরে বললঃ তোমাকে কখনো মিথ্যা বলিতে তো আমরা দেখিনি। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, আমি তোমাদের সতর্ক করছি সামনের কঠোর আযাব সম্পর্কে।
বর্ণনাকারী বলেন, আবু লাহাব তখন এই বলে উঠে গেল “তুমি ধ্বংস হও, তুমি এজন্যই কি আমাদের একত্রিত করেছিলে?” তখন এ সূরাহ অবতীর্ণ হয়ঃ “ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুই হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও ……সূরার শেষ পর্যন্ত।” [সূরাহ্ লাহাব ১১১ : ১-৫]
অবশ্য রাবী আমাশ [আরবি] এর পরিবর্তে [আরবি] পাঠ করেন।
[ই.ফা. ৪০২; ই.সে. ৪১৫]
{৭৯} ইমাম নাবাবী বলেনঃ [অত্র আয়াতটি] এটা কুরআনে অবতীর্ণ হয়েছিল। পরে তার তিলাওয়াত মানসুখ হয়ে গেছে। এখানে এ অংশটুকুর উল্লেখ আছে। তবে বোখারীর বর্ণনায় এটা নেই। [মুসলিম তাহকীক- ফুআদ আবদুল বাকী ১ম খণ্ড, ১৯৫ পৃষ্ঠা]
৩৯৭. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
উক্ত সানাদে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] একদিন সাফা পর্বতে আরোহণ করেন এবং বলেনঃ হায় মন্দ প্রভাত! [বাকী অংশ] আবু উসামার বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। অবশ্য তিনি [আরবী] আয়াতটি অবতরণের কথা উল্লেখ করেননি।
[ই.ফা. ৪০৩; ই.সে. ৪১৬]
৯০. অধ্যায়ঃ আবু তালিব-এর জন্য নবি [সাঃআ:]-এর শাফাআত এবং সে কারণে তার আযাব কম হওয়া
৩৯৮. আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি একদিন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-কে বলিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ [সাঃআ:]! আপনি কি আবু তালিবের কোন উপকার করিতে পেরেছেন? তিনি তো আপনার হিফাযাত করিতেন, আপনার পক্ষ হয়ে [অন্যের প্রতি] ক্রোধান্বিত হতেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] উত্তরে বললেনঃ হ্যাঁ, তিনি কেবল পায়ের গ্রন্থি পর্যন্ত জাহান্নামের আগুনে আছেন, আর যদি আমি না হতাম তবে জাহান্নামের অতল তলেই তিনি অবস্থান করিতেন।
[ই.ফা. ৪০৪; ই.সে. ৪১৭]
৩৯৯. আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ [সাঃআ:]! নিশ্চয়ই আবু তালিব তো আপনার হিফাযাত করিতেন, আপনাকে সাহায্য করিতেন এবং আপনার পক্ষ হয়ে [অন্যদের প্রতি] রাগ করিতেন। তার এ কর্ম তার কি কোন উপকারে এসেছে? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] উত্তরে বললেনঃ হ্যাঁ। আমি তাকে জাহান্নামের গভীরে পেয়েছিলাম, অতঃপর আমি সেখান থেকে [তার পায়ের] গ্রন্থি পর্যন্ত বের করে আগুনের উপরিভাগে নিয়ে এসেছি।
[ই.ফা. ৪০৫; ই.সে. ৪১৮]
৪০০. আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
ঐ সানাদে পূর্ব বর্ণিত আবু আওয়ানাহ্-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ই.ফা. ৪০৫; ই.সে. ৪১৯]
৪০১. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর কাছে তাহাঁর চাচা আবু তালিব-এর কথা আলোচিত হলে তিনি বলেন, হয়তো কিয়ামাত দিবসে তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কাজে আসবে বলে আশা করি। তাকে জাহান্নামের উপরিভাগে এমনভাবে রাখা হইবে যে, আগুন তার পায়ের গিরা পর্যন্ত পৌঁছবে; এতেই তার মগজ উথলাতে থাকিবে।
[ই.ফা. ৪০৬; ই.সে. ৪২০]
Leave a Reply