মিথ্যা কসম, যুলম ও খিয়ানাতকারী শাসক

মিথ্যা কসম, যুলম ও খিয়ানাতকারী শাসক

জনগণের সঙ্গে খিয়ানাতকারী শাসক জাহান্নামের যোগ্য >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৬১. অধ্যায়ঃ মিথ্যা কসম এর মাধ্যমে কোন মুসলিমের হাক তসরুফকারীর প্রতি জাহান্নামের হুমকী
৬২. অধ্যায়ঃ যুলম করে কারো সম্পদ আত্মসাৎ করিতে চাইলে তার রক্ত তার জন্য বৃথা যাবে, আর নিহত হলে জাহান্নামে যাবে আর যে ব্যক্তি স্বীয় সম্পদ রক্ষায় নিহত হয় সে শাহীদ
৬৩. অধ্যায়ঃ জনগণের সঙ্গে খিয়ানাতকারী শাসক জাহান্নামের যোগ্য

৬১. অধ্যায়ঃ মিথ্যা কসম এর মাধ্যমে কোন মুসলিমের হাক তসরুফকারীর প্রতি জাহান্নামের হুমকী

২৫০. আবু উমামাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেনঃ যে ব্যক্তি কসমের মাধ্যমে কোন মুসলিমের হাক্‌ বিনষ্ট করে তার জন্য আল্লাহ জাহান্নাম ওয়াজিব করে রেখেছেন এবং জান্নাত হারাম করে রেখেছেন। তখন জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল! অতি সামান্য বস্তু হলেও? রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ আরাক [বাবলা গাছের মত এক ধরনের কাঁটাযুক্ত] গাছের ডাল হলেও এ শাস্তি দেয়া হইবে। {৪৯}

[ই.ফা. ২৫২; ই.সে. ২৬১]

{৪৯} মুসলিমের হাক্‌ নষ্ট করা পাপের কাজ। তদুপরি মিথ্যা কসম খেয়ে কারো হাক্‌ নষ্ট করা মহাপাপ। যার শাস্তি জান্নাত হতে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করে। সে হাক্‌ ছোট হোক আর বড়ই হোক। শাস্তি ভোগ করিতেই হইবে। কেননা সে ইসলামের হাক্‌ উপলব্ধি করেনি এবং আল্লাহর নামের মর্যাদাও রক্ষা করেনি। ইমাম নাবাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা দুইভাবে করা যায়।

২৫১. আবু উমামাহ আল হারিসী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ই.ফা. ২৫৩; ই.সে. ২৬২]

২৫২. আবদুল্লাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] ইরশাদ করিয়াছেন, যে ব্যক্তি তার উপর অর্পিত চূড়ান্ত কসমের মাধ্যমে কোন মুসলিমের সম্পদ আত্মসাৎ করে অথচ সে মিথ্যাবাদী। এমন অবস্থায় আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটবে যে, তিনি তার প্রতি রেগে থাকিবেন। রাবী বলেন, আশআস ইবনি কায়স তথায় প্রবেশ করিলেন এবং জিজ্ঞেস করিলেন, আবু আবদুর রহমান [আবদুল্লাহ] তোমাদেরকে কি বর্ণনা করিলেন? তদুত্তরে সকলে উক্ত হাদীসটির কথা বলিলেন, তিনি বলিলেন, আবু আবদুর রহমান সত্যই বর্ণনা করিয়াছেন, ঘটনাটি আমাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছিল। ব্যাপার হলো ইয়ামানে জনৈক ব্যক্তির সাথে আমারও একখণ্ড ভূমি ছিল। এর মীমাংসা করার জন্য আমরা রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-এর খিদমাতে উপস্থিত হই, রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার দাবীর স্বপক্ষে তোমার নিকট কোন প্রমাণ আছে কি? আমি বললাম, না। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলিলেন, তা হলে বিবাদীর কসম নেয়া হইবে। আমি বললাম, এ ব্যক্তি তো কসম করিবেই। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলিলেন, যে ব্যক্তি তার উপর অর্পিত চূড়ান্ত কসমের মাধ্যমে কোন মুসলিমের সম্পদ গ্রাস করে অথচ সে মিথ্যাবাদী আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় তার সাক্ষাৎ ঘটবে যে, আল্লাহ তার প্রতি ক্রোধান্বিত থাকিবেন। এরপর এ আয়াত নাযিল হয়,

 إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً

“যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা এবং নিজেদের কসম তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে, পরকালে তাহাদের কোন অংশ নেই। কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তাহাদের সাথে কথা বলবেন না, তাহাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাহাদেরকি পরিশুদ্ধ করবেন না; তাহাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি”-[সূরাহ আ-লি ইমরান ৩ : ৭৭]।

[ই.ফা. ২৫৪; ই.সে. ২৬৩]

২৫৩. আবদুল্লাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

যে ব্যক্তি মিথ্যা কসমের মাধমে কোন সম্পদ আত্মসাৎ করিবে আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটবে এমন অবস্থায় যে, তিনি তার প্রতি রেগে থাকিবেন। পরে বর্ণনাকারী আমাশ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি [ইয়ামানের ভূমির স্থলে] এ কথা বলেন, জনৈক ব্যক্তির সাথে আমার সাথে একটি কূপ নিয়ে বিরোধ ছিল। আমরা এর মীমাংসার জন্য রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-এর কাছে উপস্থিত হই। তখন তিনি বলিলেন, তোমার দুজন সাক্ষী লাগবে অথবা বিবাদী থেকে কসম নেয়া হইবে।

[ই.ফা. ২৫৫; ই.সে. ২৬৪]

২৫৪. ইবনি মাসউদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনিয়াছি : যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের সম্পদ আত্মসাতের জন্য মিথ্যা কসম করিবে আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটবে এমন অবস্থায় যে, তিনি তার প্রতি রেগে থাকিবেন। আবদুল্লাহ [রাঃআ:] বলেন, তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] প্রমাণ হিসেবে এ আয়াত পাঠ করেন :

 إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً

“যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, [পরকালে তাহাদের কোন অংশ নেই। কিয়ামাতের দিনে আল্লাহ তাহাদের সাথে কথা বলবেন না, তাহাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাহাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না; তাহাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে]-[সূরাহ আ-লি ইমরান ৩ : ৭৭]।

[ই.ফা. ২৫৬; ই.সে. ২৬৫]

২৫৫. ওয়ায়িল [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

ওয়ায়িল [রাঃআ:] বলেন হাযরামাওতের জনৈক ব্যক্তি কিনদীর এক ব্যক্তিকে নিয়ে রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-এর কাছে উপস্থিত হয়। হাযরামাওতবাসী লোকটি বলিল, হে আল্লাহর রসূল! এ ব্যক্তি আমার একটি পৈতৃক ভূমি জোর করে দখল করে। কিনদী বলে উঠল না, এতো আমারই সম্পত্তি এবং আমারই দখলে আছে। এতে আমি চাষাবাদ করি, এতে কারোর কোন অধিকার নেই। তখন রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] হাযরামাওতবাসীকে বললেনঃ তোমার কোন সাক্ষী আছে? সে উত্তর দিল, না। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ তা হলে এ বিষয়ে বিবাদী কসম করিবে। হাযরামাওতবাসী বলিল, হে আল্লাহর রসূল! এতো অসৎ লোক, কসম করার বিষয়ে তার আদৌ পরোয়া নেই। আর সে কোন কিছুরই বাছ বিচার করে না। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলিলেন, এছাড়া তার কাছ থেকে তোমার নেয়ার আর কোন পথ নেই। এরপর কিনদী শপথ করিতে উদ্যোগ নিল। তখন রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেন, যদি সে [কিনদী] অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য শপথ করে তবে সে অবশ্যই আল্লাহর কাছে এমন অবস্থায় উপস্থিত হইবে যে, তিনি তাহাঁর মুখ ফিরিয়ে নিবেন।

[ই.ফা. ২৫৭; ই.সে. ২৬৬]

২৫৬. ওয়ায়িল ইবনি হুজ্‌র [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। ইত্যবসরে দুব্যক্তি তাহাঁর নিকট এসে একটি ভূমি সম্পর্কে বিচার প্রার্থনা করে। তন্মধ্যে একজন বলিল, হে আল্লাহর রসূল! জাহিলী যুগে এ ব্যক্তি আমার ভূমি জোর করে দখল করেছে। বর্ণনাকারী বলেন, বিচার প্রার্থনাকারী ছিল ইমরুল কায়স ইবনি আবিস আল কিনদী আর তার বিবাদী ছিল রাবিআহ ইবনি আব্‌দান। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলিলেন, তোমার সাক্ষী পেশ কর। লোকটি বলিল, আমার কোন সাক্ষী নেই। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ তা হলে বিবাদী থেকে কসম নেয়া হইবে। লোকটি বলিল, তবে তো সে মিথ্যা কসম করে সম্পত্তি আত্মসাৎ করিবে। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ এছাড়া তার কাছ থেকে তোমার নেয়ার আর কোন পথ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর বিবাদী যখন শপথ করার জন্য প্রস্তুত হলো, তখন রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ যে অন্যায়ভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎ করিবে সে আল্লাহর কাছে এমন অবস্থায় উপস্থিত হইবে যে, তিনি তার প্রতি রেগে থাকিবেন। রাবী ইসহাক্‌ তার বর্ণনায় [আরবী] [রাবীআহ্‌ ইবনি আইদান] উল্লেখ করেন। {৫০}

[ই.ফা. ২৫৮; ই.সে. ২৬৭]

{৫০} ইমাম নাবাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন : এ হাদীস হতে কতগুলো মাসআলা লক্ষ্য করা যায়-

[১] অধিকার দখলকারী বেশী হাক্‌দার হইবে, যার দখলে নেই তার থেকে। [২] বিবাদী অস্বীকার করিবে আর বাদীর নিকট কোন সাক্ষী থাকিবে না, তখন বিবাদী কসম খাবে। [৩] দখলের চাইতে সাক্ষী কার্যকরী বেশী। কাজেই যার নিকটে সাক্ষী থাকিবে তার সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়ার পর তাকেই অভিযুক্ত জিনিসটি প্রদান করা হইবে। কসমের প্রয়োজন হইবে না। [৪] বিবাদী যদি অসৎ ফাসিক হয় তাহলেও তার কসম গ্রহণ করা হইবে। এর সাথে বাদীর দাবী শেষ হয়ে যাবে। [৫] বাদী ও বিবাদী পরস্পর ঝগড়ার সময় যালিম, পাপী ইত্যাদি বললে, তার জন্য তাহাদের অভিযুক্ত করা হইবে না বা শাস্তি দেয়া হইবে না। [৬] যদি উত্তরাধিকারী দাবী করে মূল ব্যক্তির [যার মাধ্যম হতে সে উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয়েছে] পক্ষ হতে এবং বিচারক জানতে পারেন যে, মূল ব্যক্তি মারা গেছে, আর তার বাদী ছাড়া আর কেউ নেই। তখন বাদীকে উত্তরাধিকারী হিসেবে মীমাংসা করা সঠিক হইবে। কসম গ্রহণের কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি বিচারক জানতে না পারেন তাহলে উত্তরধিকারী প্রমাণের জন্য বাদীর নিকট কসম গ্রহণ করিতে হইবে। তারপর তার দাবী প্রাপ্যের ব্যাপারেও কসম গ্রহণ করিতে হইবে। [সংক্ষিপ্ত নাবাবী]

৬২. অধ্যায়ঃ যুলম করে কারো সম্পদ আত্মসাৎ করিতে চাইলে তার রক্ত তার জন্য বৃথা যাবে, আর নিহত হলে জাহান্নামে যাবে আর যে ব্যক্তি স্বীয় সম্পদ রক্ষায় নিহত হয় সে শাহীদ

২৫৭. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল! যদি কেউ আমার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে উদ্যত হয় তবে আমি কী করব? রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ তুমি তাকে তোমার সম্পদ নিতে দিবে না। লোকটি বলিল, যদি সে আমার সাথে এ নিয়ে মারামারি করে? রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলিলেন, তুমি তার সাথে মারামারি করিবে। লোকটি বলিল, আপনি কি বলেন যদি সে আমাকে হত্যা করে? রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলিলেন- তা হলে তুমি শাহীদ বলে গণ্য হইবে। {৫১‌} লোকটি বলিল, আপনি কি মনে করেন, যদি আমি তাকে হত্যা করি? রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ সে জাহান্নামী।

[ই.ফা. ২৫৯; ই.সে. ২৬৮]

{৫১} আর লোকটির উত্তরে মহানবি [সাঃআ:] বলিলেন : তাহলে তুমি শাহীদ বলে গণ্য হইবে। অর্থাৎ তমি শাহীদের সাওয়াব পাবে। যদিও দুনিয়ার নির্দেশাবলীতে শাহীদ হইবে না। কেননা শাহীদ তিন প্রকার-

[১] ঐ ব্যক্তি যে ইসলামের জন্য কাফিরের সাথে জিহাদ করে মারা যাবে। সে তো দুনিয়া ও আখিরাতে এ নির্দেশাবলীর দিক দিয়ে তাকে গোসল দিতে হইবে না। আর আখিরাতে সে শাহীদের দরজা পাবে।

[২] যে ব্যক্তি আখিরাতে সাওয়াবের দিক দিয়ে শাহীদ হইবে সে দুনিয়ার নির্দেশাবলীতে শাহীদ হইবে না। যেমন মহামারী বা পেটের অসুখে অথবা বাড়ী ধ্বসে বা নিজ মাল রক্ষা করিতে গিয়ে মারা যাবে। এদের উপর হাদীসে শাহীদ বলে উল্লেখ এসেছে। কিন্তু এদের গোসল দিতে হইবে এবং সালাতে জানাযাও পড়তে হইবে। আখিরাতে এরা শাহীদের সাওয়াব পাবে। তবে এটা জরুরী নয় যে, প্রথম প্রকারের শাহীদদের সমতুল্য হইবে।

[৩] ঐ ব্যক্তি যাকে দুনিয়ার নির্দেশাবলীর দিক দিয়ে শাহীদ বলা হইবে। তবে শাহাদাতের পুরাপুরি সাওয়াব পাবে না। যেমন ঐ ব্যক্তি যে গনীমাতের মাল খিয়ানাত করেছে। এ ধরনের লোকের সম্পর্কে বলা হয়েছে শাহীদ নয়। তবে যেহেতু কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেছে। দুনিয়ার নির্দেশাবলীর দিক দিয়ে শাহীদের মত তাকে গোসল দিতে হইবে না। জানাযার সলাত আদায় করিবে না। আখিরাতে সে পূর্ণ সাওয়াব পাবে না। প্রশ্ন শাহীদকে শাহীদ কেন বলা হয়? উত্তর শাহীদকে শাহীদ এজন্য বলা হয় যে, [আলামে বারযাখে] তারা জীবিত আছেন এবং তাহাদের রূহ্‌ [আত্মা] জান্নাতে উপস্থিত আছে। [অবশ্য শাহীদদের সালাতে জানাযা আদায় করা ও না করা নিয়ে মতভেদ রয়েছে]

ইবনি আম্মার বলেছেন : শাহীদকে এজন্য শাহীদ বলা হয়ে যে, শাহীদের জন্য মহান আল্লাহ এবং ফেরেশতাগণ শাহাদাত বা সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর কেউ কেউ বলেছেন : শাহীদের আত্মা বের হওয়ার সময় তার উচ্চ মর্যাদা দেখিতে পায়। এজন্য শাহীদ বলা হয়। আরও কেউ কেউ বলেছেন : শাহীদের রক্তও তাহাদের জন্য সাক্ষ্য হইবে। কেননা কিয়ামাদের দিন তাহাদের এমন অবস্থায় উঠানো হইবে যে, তাহাদের ক্ষতস্থান হতে তাজা রক্ত প্রবাহিত হতে থাকিবে। [সংক্ষিপ্ত নাবাবী]

২৫৮. উমার ইবনি আবদুর রহমানের আযাদকৃত গোলাম সাবিত [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি আমর ও আম্বাসাহ্‌ ইবনি আবু সুফ্‌ইয়ানের মধ্যে যখন কিছু সম্পদ নিয়ে ঝগড়া দেখা দেয়। আর তারা উভয়ে লড়াইয়ের জন্য উদ্যত হয়ে পড়ে। তখন খালিদ ইবনি আস আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র-এর নিকট গেলেন এবং বুঝাতে চেষ্টা করিলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র বলিলেন, তুমি কি জান না? রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তাহাঁর সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শাহীদ।

মুহাম্মাদ ইবনি হাতিম ও আহমদ ইবনি উসমান আস্‌ নাওফালী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. ইবনি জুরায়জ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে উল্লেখিত সানাদে অনুরূপ রিওয়ায়াত করিয়াছেন।

[ই.ফা. ২৬০; ই.সে. ২৬৯-২৭০]

৬৩. অধ্যায়ঃ জনগণের সঙ্গে খিয়ানাতকারী শাসক জাহান্নামের যোগ্য

২৫৯. হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

মাকিল ইবনি ইয়াসার-এর মৃত্যুশয্যায় উবাইদুল্লাহ ইবনি যিয়াদ তাহাঁর সাক্ষাতে যান। মাকিল তাকে বলিলেন, আজ তোমাকে রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] থেকে শোনা এমন একটি হাদীস শুনাব যা আমি আরো বেঁচে থাকব বলে জানলে তা কিছুতেই শুনাতাম না। আমি রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-কে এ কথা বলিতে শুনিয়াছি যে, আল্লাহ তাআলা যাকে জনগণের দায়িত্ব দিয়েছেন কিন্তু খিয়ানাতকারীরূপে যদি তার মৃত্যু হয় তবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।

[ই.ফা. ২৬১; ই.সে. ২৭১]

২৬০. হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মাকিল ইবনি ইয়াসারের অসুস্থ অবস্থায় উবাইদুল্লাহ ইবনি যিয়াদ তাহাঁর সাক্ষাতে গেলেন এবং কিছু জানতে চাইলেন। তখন মাকিল [রাঃআ:] বলেন, আজ তোমাকে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব যা আমি আগে তোমাকে বর্ণনা করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেন, আল্লাহ তাআলা যাকে জনগণের শাসনভার প্রদান করেন আর সে যদি খিয়ানাতকারীরূপে মৃত্যুবরণ করে, তবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন। উবাইদুল্লাহ বলিলেন, আপনি কি আজ পর্যন্ত এ হাদীস আমাকে বর্ণনা করেননি? তিনি বলিলেন, না কখনো বর্ণনা করিনি। অথবা রাবী এ কথা বলেছেন, না, বর্ণনা করিতে ইচ্ছুক ছিলাম না। {৫২}

[ই.ফা. ২৬২; ই.সে. ২৭২]

{৫২} মাকিল ইবনি ইয়াসার তাহাঁর মৃত্যুর সময় উবাইদুল্লাহ ইবনি যিয়াদকে উক্ত হাদীস বর্ণনা করে শুনালেন। তিনি জানতেন যে, উবাইদুল্লাহর এ হাদীস হয়ত কোন উপকারে আসবে না। তবুও তিনি বলিলেন, হাদীস গোপন করা ঠিক নয় মনে করে। আর সে মানুক আর নাই মানুক, ভাল কথা বলে দেয়া দরকার। মাকিল [রাঃআ:] তাহাঁর জীবদ্দশায় বলার প্রয়োজন এজন্য মনে করেননি যে, মানুষ উবাইদুল্লাহ র প্রতি ঘৃণা করে তাহাঁর ইতায়াত বা অনুসরণ পরিত্যাগ করে, সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়। আর উবাইদুল্লাহ ঐ হাদীসের কারণে তাকে কষ্ট দিতে পারেন। যেহেতু উবাইদুল্লাহ অত্যাচারী ছিলেন। তিনি প্রিয়নবি [সাঃআ:]-এর আত্মীয়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিতেন না। অন্যান্যরা তো দূরের কথা।

শাসক তার শাসিত জনগণের সাথে খিয়ানাতের অর্থ শাসককে দ্বীন ও দুনিয়ার সার্বিক কল্যাণ সাধনে সচেষ্ট থাকা অপরিহার্য। যে শাসক জনগণের দীনে আঘাত করে, শারীআতের সীমালঙ্ঘন করে, জনগণের জান ও মালের হিফাযাত না করে, অন্যায় অত্যাচার করে; অথবা জনগণের সাথে কোন প্রকার সুবিচার করে না; হাক্‌ নষ্ট করে, তাহলে সে দায়িত্বে খিয়ানাত করিল, সে জাহান্নামী হইবে। হ্যাঁ, যদি সে অত্যাচারকে বৈধ মনে করে, তাহলে চিরস্থায়ী জাহান্নামে বসবাস করিবে। অন্যান্য জান্নাতীদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না। [সংক্ষিপ্ত নাবাবী]

২৬১. হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমরা মাকিল ইবনি ইয়াসার [রাঃআ:]-এর অসুস্থতাকালে তাহাঁর কুশলাদি জানতে গিয়েছিলাম। এমন সময় উবাইদুল্লাহ ইবনি যিয়াদ তথায় উপস্থিত হন। মাকিল ইবনি ইয়াসার [রাঃআ:] তাকে বলিলেন, আজ তোমাকে একটি হাদীস শুনাব যা আমি রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] থেকে শুনিয়াছি …..। পরে তিনি উল্লেখিত হাদীসদ্বয়ের অনুরূপ বর্ণনা করেন।

[ই.ফা. ২৬৩; ই.সে. ২৭৩]

২৬২. আবু মালীহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

মাকিল ইবনি ইয়াসার-এর অসুস্থতাবস্থায় তাকে দেখিতে উবাইদুল্লাহ ইবনি যিয়াদ উপস্থিত হলে তাকে মাকিল বলেন, আজ আমি তোমাকে একটি হাদীস বলব, আমি মৃত্যুশয্যায় না থাকলে তা বর্ণনা করতাম না। আমি রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, মুসলিমদের দায়িত্বে নিযুক্ত কোন আমীর [শাসক] যদি তাহাদের কল্যাণ কামনা না করে এবং তাহাদের স্বার্থ রক্ষায় সর্বাত্মক প্রয়াস না চালায় তবে সে মুসলিমদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না।

[ই.ফা. ২৬৪; ই.সে. ২৭৪]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply