মুসনাদে আহমদ (মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক)
মুসনাদে আহমদ pdf Musnad Ahamed Ibn Humble >> মুসনাদে আহমদ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
১। আবু আবদুর রহমান আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বল বলেনঃ
আমাকে আমার পিতা আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বল বিন হিলাল বিন আসাদ তদীয় পুস্তক থেকে জানিয়েছেন এবং বলেছেনঃ আমাকে আবদুল্লাহ বিন নুমায়ের বলেছেন, আমাকে ইসমাঈল [অর্থাৎ খালিদের পিতা] কায়েস থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, একদিন আবু বাকর [রাদি.] জনসমক্ষে দাঁড়ালেন, আল্লাহর প্রশংসা করিলেন, অতঃপর বললেনঃ হে জনগণ! তোমাদের মধ্যে যে কোন ব্যক্তি এ আয়াত পাঠ করে থাকেঃ
অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ব্যাপারে সাবধান হও। তোমরা নিজেরা যখন হিদায়াত লাভ করিবে [সৎপথে চলবে] তখন যে ব্যক্তি বিপথগামী হয়েছে, সে তোমাদের কোন ক্ষতি করিতে পারবে না”। [মায়েদাঃ ১০৫]
কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছিঃ “লোকেরা যখন অন্যায় সংঘটিত হইতে দেখবে, অথচ তার প্রতিরোধ করিবে না, তখন অচিরেই আল্লাহ্ তাদের ওপর সর্বব্যাপী আযাব নাযিল করবেন।” [অর্থাৎ অন্যায়কারী ও অন্যায় সহ্যকারী-সকলেই সেই আযাবে নিপতিত হইবে।] {১}
{১}. হুমায়দী, ইবনে আবি শায়বাহ আবদ বিন হুমাইদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, বাযযার, মারওয়ায, আবু ইয়ালা, তাহাবী, ইবনে হিব্বান, বাইহাকী ও বাগাওয়ী নিজ নিজ হাদীস গ্রন্থে এবং আত্তাবারী তদীয় তাফসীরে এ হাদীসটি উদ্ধৃত করিয়াছেন। এর সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত। অত্র মুসনাদেও ১৬, ২৯, ৩০ ও ৫৩ নং হাদীসে এর পুনরাবৃত্তি লক্ষণীয়।
পরিচ্ছেদঃ
২। আলী [রাদি.] বলেনঃ
আমি যখন সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে কোন হাদীস শুনতাম, তখন তা দ্বারা আল্লাহ আমাকে যতটা ইচ্ছা উপকৃত করিতেন। আর যখন অন্য কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে শ্রুত কোন হাদীস আমাকে জানাতো, তখন আমি তারকাছ থেকে শপথ নিতাম [যে, সে সত্যই নিজ কানে হাদীসটি হুবহু শুনেছে কিনা] যখন সে শপথ করতো, কেবল তখনই আমি তাকে বিশ্বাস করতাম। আবু বাকর আমাকে একটা হাদীস শুনিয়েছেন এবং তিনি সত্যই বলেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি কোন গুনাহর কাজ করে, তার অব্যবহিত পর খুব ভালভাবে ওযূ করে, [মিসয়ারের বর্ণনা মুতাবিক, অতঃপর নামায পড়ে, সুফিয়ানের বর্ণনা মুতাবিক, অতঃপর দুরাকআত নামায পড়ে] অতঃপর মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায়, তখন অবশ্যই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।{১}
{১} তায়ালিসী, হুমাইদী, ইবনে আবী শাইবা, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনি মাজাহ, বাযযার, আবু ইয়ালা, আত-তাবারী, উকাইলী, মারওয়াযী, ইবনি হিব্বান, তাবারানী, তুম্মাম, আবু নাঈম, বাগাওয়ী ও ইবনে আবি হাতেম নিজ নিজ হাদীস গ্রন্থে এ হাদীসটি উদ্ধৃত করিয়াছেন। মুসনাদে আহমাদেও ৪৭ ও ৪৮ নং হাদীসে এর পুনরাবৃত্তি হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ
৩। বারা ইবন আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীত,
তিনি বলেন, একবার হযরত আবু বাকর আযিবের কাছ থেকে তেরো দিরহাম দিয়ে একটি জিন [উট বা ঘোড়ার পিঠে বসার কাঠ নির্মিত আসন] কিনলেন। অতঃপর আবু বাকর [রাদি.] আযিব [রাদি.] কে বলিলেন, বারাকে আদেশ দাও সে যেন জিনটি আমার বাড়িতে পৌছিয়ে দেয়। আযিব বললেনঃ না, আপনি যখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে সাথে নিয়ে [মদীনা অভিমুখে হিজরাত করিতে] বের হয়েছিলেন, তখনকার ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ আমাকে না বলা পর্যন্ত আমি বারাকে জিন পৌছে দিতে আদেশ দেব না। তখন আবু বাকর নিম্নরূপ বিবরণ দিলেনঃ
“আমরা রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে বের হলাম। পুরো একদিন ও একরাত বাহক জন্তুটিকে দ্রুত গতিতে চালাতে লাগলাম। যখন দুপুর হলো, চারদিকে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলাম, কোথাও একটু ছায়া পাওয়া যায় কিনা যার নিচে আমরা আশ্রয় নিতে পারি। একটু পরে একটা ছোট পাহাড় দেখেই সেদিকে ছুটে গেলাম। দেখলাম তার ছায়ার কিছু অংশ অবশিষ্ট আছে। তাই আমি সেই ছায়াটুকুতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থানের ব্যবস্থা করলাম এবং একটি পশুর চামড়া তাঁকে বিছিয়ে দিলাম। তারপর আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এখানে শুয়ে পড়ুন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ শুয়ে পড়লেন। এরপর আমি বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখিতে লাগলাম, আমাদের তালাশ করছে এমন কাউকে দেখা যায় কিনা।
সহসা দেখলাম, আমার কাছেই একজন রাখাল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে কিশোর, তুমি কার মেষপাল চরাও? সে বললোঃ কুরাইশের এক ব্যক্তির। সে ঐ ব্যক্তির নাম বললো এবং আমি তাকে চিনলাম। আমি বললামঃ তোমার মেষপালে কি দুধ আছে? সে বললোঃ আছে। আমি বললামঃ তুমি কি আমার জন্য একটু দুধ দুইয়ে দেবে? সে বললোঃ দেব। অতঃপর আমি তাকে একটা ছাগল বাঁধতে আদেশ দিলে সে একটা ছাগল বাঁধলো। তারপর আমি তার স্তন থেকে ধুলো মুছতে আদেশ দিলে সে তা মুছে ফেললো। তারপর আমি বললামঃ তোমার দুই হাতের তালুর ধুলো মুছে ফেল। সে মুছে ফেললো। আমার কাছে একটা পাত্র ছিল- যার মুখ ন্যাকড়া দিয়ে ঢাকা ছিল। রাখাল আমার জন্য বেশ খানিকটা দুধ দোহালো। অতঃপর আমি পেয়ালায় পানি ঢেলে তার তলা ঠাণ্ডা করলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম এবং তাকে জাগ্রত অবস্থায় পেলাম। বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দুধ পান করুন। তিনি পান করিলেন এবং তা দেখে আমি তৃপ্তি বোধ করলাম।
তারপর বললামঃ এখন কি রওনা হবার সময় হয়েছে? অতঃপর আমরা রওনা হলাম। তখনো কুরাইশের লোকেরা আমাদের তালাশ করছিল। তাদের মধ্য থেকে একজন ঘোড় সওয়ার সুরাকা ইবনে মালিক আমাদেরকে দেখে ফেললো। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, ঐ যে একজন সন্ধানকারী আমাদের সন্ধান পেয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ দুশ্চিন্তা করো না। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। সুরাকা আমাদের দিকে আরো এগিয়ে এল এবং এত কাছে এল যে, আমাদেরও তার মধ্যে একটা, দুইটা বা তিনটে বর্শার ব্যবধান ছিল। আমি আবার বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই যে সন্ধানকারীরা আমাদের সন্ধান পেয়ে গেছে। আমি কেঁদে ফেললাম। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ কাঁদছ কেন? আমি বললামঃ আল্লাহর কসম! আমি নিজের জন্য কাঁদছিনা। আমি শুধু আপনার জন্য কাঁদছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ সুরাকার বিরুদ্ধে এই বলে বদদেয়া করিলেন-اللهُمَّ اكْفِنَاهُ بِمَا شِئْتَ “হে আল্লাহ, তুমি যেভাবে চাও, ওকে প্রতিহত করিতে যথেষ্ট হয়ে যাও।”
সঙ্গে সঙ্গে তার ঘোড়ার পাগুলো কঠিন মাটিতে তার পেট পর্যন্ত দেবে গেল। সুরাকা তার পিঠের ওপর থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়লো। অতঃপর সে বললোঃ হে মুহাম্মাদ, আমি বুঝেছি, এটা তোমার কাজ। সুতরাং তুমি আল্লাহর কাছে দুআ কর। যেন আমি যে দুর্দশায় পতিত হয়েছি, তা থেকে তিনি আমাকে নিষ্কৃতি দেন। আল্লাহর কসম! আমার পেছনে অন্য যারা তোমার অনুসন্ধান করছে, তাদের কাউকে আমি তোমাদের খবর জানাবো না। এই যে আমার তীর ধনুক। এখান থেকে একটা তীর নিয়ে নাও। তুমি অমুক জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় আমার উট ও মেষপাল পাবে। সেখান থেকে যে কটা দরকার নিয়ে নিও। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ ওগুলোর আমার প্রয়োজন নেই।
এরপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ সুরাকার জন্য দুআ করিলেন। সে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেল এবং তার দলবলের কাছে ফিরে গেল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ চলতে লাগলেন। আমিও তার সাথে চলতে লাগলাম। অবশেষে মদীনায় পৌছলাম। মদীনাবাসী রাস্তায় নেমে এসে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে অভ্যর্থনা জানালো। রাস্তায় শিশু কিশোররা প্রবল ভীড় জমিয়ে ধ্বনি তুললোঃ “আল্লাহু আকবার, রাসূলুল্লাহ এসেছেন, মুহাম্মাদ এসেছেন”। এরপর মদীনাবাসী প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে গেল কে আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেহমানদারী করিবে তা নিয়ে। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন- আজকের রাতটা আবদুল মুত্তালিবের মামাবাড়ি বনু নাজ্জারদের বাড়িতে কাটিয়ে তাদেরকে সম্মানিত করবো। পরদিন সকালে যে দিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ পেলেন সেদিকে রওনা হলেন।
বারা বিন আযিব বলেনঃ আমাদের কাছে প্রথম হিজরাত করে যিনি এলেন, তিনি ছিলেন বনু আবদুদ্দারের মুসয়াব বিন উমাইর। তারপর বনু ফিহরের অন্ধ ইবনে উম্মে মাকতুম। তারপর বিশজন আরোহীসহ উমর ইবনিল খাত্তাব। আমরা উমরকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ কোথায়? তিনি বলিলেন, তিনি আমার পরে আসছেন। এরপরই রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ও আবু বাকর এলেন, তখন আমি কয়েকটি লম্বা সূরা মুখস্থ করে ফেলেছি। বর্ণনাকারী ইসরাইল বলেছেনঃ বারা ছিলেন বনু হারেসা নামক আনসার গোত্রের লোক।
{বুখারী, ৩৬১৫, মুসলিম, ২০০৯, ইবনি হিব্বান ২৬৮১, বুখারী এটিকে সহীহ সাব্যস্ত করিয়াছেন।}
পরিচ্ছেদঃ
৪। যায়িদ বিন ইউসাই হযরত আবু বকর [রাদি.] থেকে বর্ণনা করেন যে,
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁকে মক্কাবাসীর সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করিলেন। সেই সাথে তাকে এ ঘোষণা দিতেও আদেশ দেন যে, এ বছরের [৯ম হিজরীর অর্থাৎ বিদায় হজ্জের পূর্ববর্তী বছরের] পর আর কোন মুশরিক হজ্জ করিতে পারবে না। আর কোন নগ্ন ব্যক্তি পবিত্র কাবা ঘরের তাওয়াফ করিতে পারবে না। মুসলিম ব্যক্তি ব্যতীত কেউ জান্নাতে যাবে না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যার কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত নিরাপত্তার চুক্তি হয়েছে, তার চুক্তি সেই মেয়াদ পর্যন্ত বহাল থাকিবে। অতঃপর আল্লাহ ও তার রাসূলের মুশরিকদের সাথে কোন সম্পর্ক থাকিবে না। এই ঘোষণা দেয়ার জন্য হযরত আবু বকরের রওনা হয়ে যাওয়ার পর তিন দিন অতিবাহিত হলো। অতঃপর তিনি আলী [রাদি.] কে বলিলেন, তুমি গিয়ে আবু বাকরের সাথে মিলিত হও। তাকে আমার কাছে ফেরত পাঠাও এবং এ ঘোষণাগুলো তুমি নিজে দাও।
আলী [রাদি.] তাই করিলেন। অতঃপর আবু বাকর [রাদি.] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে এসেই কাঁদতে লাগলেন এবং বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার দ্বারা কি কিছু ঘটেছে? [অর্থাৎ কোন অন্যায় কাজ হয়েছে?] রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ তোমার দ্বারা ভালো কাজ ছাড়া কিছুই সংঘটিত হয়নি। তবে আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যে, এই কথাগুলো যেন আমি স্বয়ং অথবা আমার কোন লোক ব্যতীত আর কেউ ঘোষণা না করে।{১}
{১}. হাদীসটির সনদ দুর্বল। ঈমাম আহমাদ বলেছেনঃ এটি একটি দুর্বল হাদীস। ঈমাম ইবনে তাইমিয়া তাহাঁর গ্রন্থ মিনহাজের ৫ম খণ্ডের ৬৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ “আমার পক্ষ থেকে আলী ব্যতীত আর কেউ এ দায়িত্ব পালন করিবে না” এ উক্তি মিথ্যা।
পরিচ্ছেদঃ
৫। একবার আবু বাকর [রাদি.] তাহাঁর ভাষণে বলেন:
গত বছর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমার এই জায়গায় দাঁড়িয়ে নামায পড়িয়েছিলেন। এ কথা বলে আবু বাকর [রাদি.] কাঁদতে লাগলেন। তারপর বললেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট সুস্থতা কামনা কর। কেননা ইয়াকীনের [দৃঢ় বিশ্বাস বা মজবুত ঈমান] পর কেউ সুস্থতার চেয়ে উত্তম কোন জিনিস প্রাপ্ত হয়নি। [অর্থাৎ ঈমানের পর সুস্থতা আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত।] তোমরা সত্যবাদিতাকে আঁকড়ে ধর। কেননা তা পুণ্যের সাথে যুক্ত। এই দুটোই জান্নাতে যাওয়ার উপকরণ। তোমরা মিথ্যাচার থেকে সাবধান থাক। কেননা মিথ্যাচার পাপাচারের অন্তর্ভুক্ত। এই দুটোই জাহান্নামে যাওয়ার উপকরণ। তোমরা পরস্পরে হিংসা করো না, বিদ্বেষ পোষণ করো না, সম্পর্কচ্ছেদ করো না। একে অন্যের পেছনে লেগো না। বরঞ্চ আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক ভাই ভাই হয়ে থাক।{১}
{১}. ইবনি হিব্বান [৯৫২], ও আল হাকেম [১/৫২৯] কর্তৃক সহীহ বলে অভিহিত। আলবানী বলেছেনঃ সহীহ। [ইবনি মাজাহ-৩৮৪৯] অত্র হাদীস গ্রন্থে ১৭, ৩৪ ও ৪৪ নং হাদীস দ্রষ্টব্য।
পরিচ্ছেদঃ
৬। আবু বাকর [রাদি.] একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেনঃ
আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা উচ্চারণের সাথে সাথে আবু বাকর কেঁদে ফেললেন, অতঃপর শান্ত হলেন। তারপর বলিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে গত বছর ঠিক এই গ্রীষ্মে বলিতে শুনেছিঃ “তোমরা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষমা, সুস্থতা ও মজবুত ঈমান কামনা কর।”{১}
{১}. তিরমিযী বলেছেনঃ এটি একটি ভালো ও বিরল হাদীস। [তিরমিযী-৩৫৫৮] [অত্র গ্রন্থের ৫ নং হাদীস দ্রষ্টব্য।
পরিচ্ছেদঃ
৭। আবু বাকর [রাদি.] হইতে বর্ণীত।
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ দাঁত মাজা মুখ পবিত্র করে ও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে।
পরিচ্ছেদঃ
৮। আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] বলেছেন যে,
তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলেছিলেন আমাকে এমন একটি দুআ শিখিয়ে দিন, যা দ্বারা আমি নামাযের মধ্যে দুআ করিতে পারি। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, এই দুআটি পড়ঃ
اللهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি নিজের ওপর অনেক অত্যাচার করেছি। তুমি তোমার পক্ষ হইতে আমার গুনাহ মাফ করে দাও এবং আমার প্রতি করুণা কর। নিশ্চয়ই তুমিই ক্ষমাশীল ও দয়াশীল”। [হাদীস নং ২৮ দ্রষ্টব্য] অন্য বর্ণনায় “অনেক অত্যাচার” এর পরিবর্তে “বিরাট অত্যাচার” বলা হয়েছে। {১}
{১}. {ঈমাম বুখারী [৮৩৪] ঈমাম মুসলিম [২৭০৫] ইবনি খুযাইমা [৮৪৫] ও ইবনি হিব্বান [১৯৭৬] এ হাদীসকে সহীহ আখ্যায়িত করিয়াছেন}
পরিচ্ছেদঃ
৯। ফাতিমা [রাদি.] ও আব্বাস [রাদি.]
আবু বাকরের কাছে এলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিত্যক্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকার চাইলেন। তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাদাকের জমি ও খাইবারের জমির অংশ চাইছিলেন। আবু বকর [রাদি.] তাঁদেরকে বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছিঃ আমাদের সম্পত্তির কোন উত্তরাধিকারী হয় না। আমরা [নবীরা] যা রেখে যাই, তা সাদাকা। মুহাম্মাদের বংশধরগণ, স্বগোত্রীয়রা, আত্মীয়স্বজন ও সঙ্গী সাথীরা সবাই এ সম্পত্তি ভোগ করিবে। আল্লাহর কসম! আমি প্রতিটি ব্যাপারেই রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে যা করিতে দেখেছি, তা ছাড়া অন্য কিছু করবো না।{১}
{১}. বুখারী [৪০৩৫], মুসলিম [১৭৫৯], ও ইবনি হিব্বান [৪৮২৩] কর্তৃক সহীহ আখ্যায়িত] অত্র গ্রন্থের হাদীস নং ২৫, ৫৫ ও ৫৮ দ্রষ্টব্য
পরিচ্ছেদঃ
১০। আবু হুরাইরা [রাদি.] বলেন,
আমি এই মিম্বারে [অর্থাৎ মসজিদে নববীর মিম্বারে] দাঁড়িয়ে আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] কে বলিতে শুনেছিঃ “আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে গত বছর এই দিনে বলিতে শুনেছি … পর্যন্ত বলেই আবু বকর [রাদি.] অশ্রু বর্ষণ করিতে লাগলেন ও কাঁদতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছিঃ “আল্লাহর একত্বের বাণীর পর তোমাদেরকে সুস্থতার সমতুল্য আর কোন জিনিস দেয়া হয়নি। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে সুস্থতা প্রার্থনা কর।{১}
{১}. ইবনি হিব্বান এ হাদীসকে সহীহ আখ্যায়িত করিয়াছেন [৯৫০] [অত্র গ্রন্থে ৫ নং হাদীস দ্রষ্টব্য।
পরিচ্ছেদঃ
১১। আনাস [রাদি.] বলেন, আবু বাকর আস সিদ্দিক তাকে বলেছেনঃ
“আমি গুহার ভেতরে থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বললামঃ তাদের [কুরাইশদের] কেউ যদি তার পায়ের নিচের দিকে তাকায় তাহলে আমাদেরকে দেখিতে পাবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ হে আবু বাকর, যে দুজনের তৃতীয় সাথী আল্লাহ, তাদের সম্পর্কে তুমি কী ধারণা পোষণ করা? [অর্থাৎ এই গুহায় আল্লাহ আমাদের সাথী। তোমার দুশ্চিন্তার কোন প্রয়োজন নেই। – অনুবাদক]{১}
{১}. ঈমাম বুখারী [৩৬৫৩], ঈমাম মুসলিম [২৩৮১] এবং ইবনি হিব্বান, [৬২৭৮] একে সহীহ আখ্যায়িত করিয়াছেন।
পরিচ্ছেদঃ
১২। আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদেরকে বলেছেনঃ প্রাচ্যের খোরাসান নামক একটি জায়গা থেকে দাজ্জাল আবির্ভূত হইবে। এমন কিছু জনগোষ্ঠী তার অনুসরণ করিবে যাদের মুখমণ্ডল হাতুড়ি পিটিয়ে বানানো ঢাল সদৃশ।{১}
{১}. ঈমাম তিরমিযীর মতে এটি একটি ভালো ও বিরল [হাসান গরীব] হাদীস। আলবানীর মতে সহীহ। {তিরমিযী-২২৩৭, ইবনি মাজাহ-৪০৭২, অত্র গ্রন্থে ৩৩ নং হাদীস দ্রষ্টব্য।
পরিচ্ছেদঃ
১৩। আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ কোন কৃপণ, ছদ্মবেশধারী ধোঁকাবাজ, খিয়ানতকারী ও অসচ্চরিত্র ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না। সর্বপ্রথম যারা জান্নাতের দরজার কড়া নাড়বে তারা হইবে দাসদাসী যদি তারা আল্লাহর সাথে ও তাদের মনিবের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করে।
[ঈমাম তিরমিযীর মতে, এটি গরীব অর্থাৎ বিরল হাদীস।]{১} {১}. তিরমিযী-১৯৪৬, ১৯৬৩ এই গ্রন্থে ৩১ ও ৩২ নং হাদীস দ্রষ্টব্য।
পরিচ্ছেদঃ
১৪। আবুত তুফাইল [রাদি.] বলেনঃ
যখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ইন্তিকাল করিলেন, তখন ফাতিমা আবু বাকরের নিকট দূত পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী আপনি, না রাসূলের পরিবার? আবু বাকর আস সিদ্দিক জবাব দিলেনঃ রাসূলের পরিবার। ফাতিমার পক্ষ থেকে বলা হলোঃ তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অংশ কোথায়? আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছি যে, যখন আল্লাহ কোন নবীকে কোন খাবার খাওয়ান অতঃপর তার মৃত্যু ঘটান, তখন সেই খাবারকে [সম্পত্তি] তার পরবর্তীদের সম্পত্তিতে পরিণত করেন। তাই আমি স্থির করেছি, তার পরিত্যক্ত সম্পত্তিকে মুসলিমদের সম্পত্তিতে রূপান্তরিত করবো। তখন ফাতিমা [রাদি.] বললেনঃ বেশ, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে যা শুনেছেন, সে সম্পর্কে আপনিই সবচেয়ে ভালো জানেন।{১}
{১}. ইবনে কাছীরের মতে হাদীসের ভাষা বিরল ও দুর্বল। আলবানীর মতে এটি হাসান বা উত্তম। [আবু দাউদ ২৯৭৩] [এই গ্রন্থের ৯ নং হাদীস দ্রষ্টব্য]
পরিচ্ছেদঃ
১৫। আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] বলেনঃ
একদিন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ভোরে উঠলেন, ফজরের নামায পড়লেন। তারপর একই জায়গায় বসে রইলেন। দুপুরের আগে তিনি হাসলেন, তারপর আবার যথাস্থানে বসে রইলেন। অতঃপর একে একে জোহর, আছর ও মাগরিব পড়লেন। সব কিছুই নীরবে করিলেন। অতঃপর সর্বশেষ নামায ইশা পড়লেন। তারপর নিজ পরিবারের নিকট চলে গেলেন। এরপর লোকেরা আবু বাকরকে বললোঃ আপনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে জিজ্ঞেস করেন না কেন, তার কী হয়েছে? আজ তিনি যা করিলেন, তা তো আর কখনো করেন নি। অতঃপর আবু বাকর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে জিজ্ঞেস করিলেন।
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ হ্যাঁ, আমার সামনে দুনিয়া ও আখিরাতের ভবিষ্যতের দৃশ্য দেখানো হয়েছে। পূর্বের ও পরের সকলকে একই ময়দানে সমবেত করা হলো। লোকেরা আতংকিত হয়ে আদম [আঃ] এর নিকট উপস্থিত হলো। তখন ঘাম তাদেরকে প্রায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত করে ফেলেছে। সবাই বললোঃ হে আদম, আপনি তো মানব জাতির পিতা এবং আল্লাহ আপনাকে বিশেষভাবে মনোনীত করিয়াছেন। আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আদম [আঃ] বললেনঃ তোমরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন, আমিও তদ্ৰপ পরিস্থিতির সম্মুখীন। তোমরা তোমাদের পিতার পরবর্তী পিতা নূহের নিকট যাও। আল্লাহ বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ আদমকে, নূহকে, ইবরাহীমের বংশধরকে ও ইমরানের বংশধরকে সমগ্ৰ বিশ্ববাসীর ওপরে অগ্ৰাধিকার দিয়েছেন”।
অতঃপর তারা নূহ [আঃ] এর নিকট গেল। তাঁকে বললোঃ আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করুন। কেননা আল্লাহ আপনাকে বিশেষভাবে মনোনীত করিয়াছেন এবং আপনার দুআ কবুল করিয়াছেন। আপনার দুআর কারণে তিনি পৃথিবীতে কোন কাফির গৃহবাসীকে জ্যান্ত ছাড়েননি। নূহ [আঃ] বললেনঃ আমার দ্বারা ওটা হইবে না। তোমরা বরং ইবরাহীম [আঃ] এর কাছে যাও। কেননা আল্লাহ তাআলা তাকে খলীল তথা বন্ধুরূপে গ্ৰহণ করিয়াছেন। সবাই ইবরাহীম [আঃ] এর নিকট যাবে।
ইবরাহীম [আঃ] বলবেনঃ আমার কিছু করার নেই। তবে তোমরা মূসার নিকট যাও। কেননা আল্লাহ তাআলা তাহাঁর সাথে বিশেষভাবে কথোপকথন করিয়াছেন। মূসা [আঃ] বলবেনঃ আমার দ্বারা ওটা হইবে না। তোমরা বরং ঈসার [আঃ] এর নিকট যাও। তিনি তো অন্ধ ও কুণ্ঠরোগীকে আরোগ্য করিতেন এবং মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করিতেন। ঈসা [আঃ] বলবেনঃ ওটা আমার দ্বারা হইবে না। তোমরা বরং আদম সন্তানদের যিনি সরদার, তার কাছে যাও। কিয়ামতের দিন তিনিই সর্ব প্রথম জীবিত হয়ে কবর থেকে বেরিয়ে আসবেন। তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাও। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করবেন। অতঃপর মুহাম্মাদ সাঃআঃ রওয়ানা হইবেন। এই সময়ে জিবরীল [আঃ] তাহাঁর প্রতিপালকের নিকট আসবেন।
আল্লাহ তাঁকে বলবেন, মুহাম্মাদ সাঃআঃকে অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। জিবরীল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে রওয়ানা হইবেন। অতঃপর মুহাম্মাদ সাঃআঃ সিজদায় যাবেন এবং প্রায় এক জুমুআর সময় ব্যাপী সিজদায় থাকিবেন। তখন আল্লাহ বলবেনঃ হে মুহাম্মাদ! তোমার মাথা ওঠাও। বল, শ্রবণ করা হইবে। সুপারিশ কর, সুপারিশ গ্ৰহণ করা হইবে। তারপর তিনি মাথা ওঠাবেন। তারপর যখন তাহাঁর প্রতিপালকের দিকে তাকাবেন, আবার সিজদায় পড়বেন এবং আরেক জুমুআহ পরিমাণ থাকিবেন। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ তোমার মাথা ওঠাও, বল শ্রবণ করা হইবে, সুপারিশ কর, গ্ৰহণ করা হইবে। অতঃপর তিনি [পুনরায়] সিজদা করিতে উদ্যত হইবেন। তখন জিবরীল তাঁকে এমন দুআ শিক্ষা দেবেন, যা আর কোন মানুষকে কখনো দেননি।
অতঃপর [মুহাম্মাদ] বলবেনঃ হে আমার প্রতিপালক, আমাকে আদম সন্তানদের সরদাররূপে সৃষ্টি করিয়াছেন। এতে আমার কোন গর্ব নেই। আমাকে সর্ব প্রথম জীবিত করে কবর থেকে উঠিয়েছেন, এতেও কোন গর্ব নেই। এমনকি আমার নিকট হাউজ [কাউসার] আনা হইবে- যা বিস্তৃত থাকিবে সানয়া থেকে আইলা পর্যন্ত। তারপর বলা হবেঃ সিদ্দিকগণকে ডাক, তারা সুপারিশ করুক। পুনরায় বলা হবেঃ নবীগণকে ডাক, তারা সুপারিশ করুক। অতঃপর এক একজন নবী তাহাঁর দলসহ আসবেন। এক একজন নবী আসবেন পাঁচজন ছয়জন করে সাথী নিয়ে। এক একজন নবী আসবেন কোন সাথী ছাড়াই। পুনরায় বলা হবেঃ শহীদদেরকে ডাক, তারা যার যার জন্য ইচ্ছা সুপারিশ করুক। শহীদগণ যখন আসবেন ও সুপারিশ করবেন, তখন আল্লাহ বলবেনঃ আমি সকল দয়াবানের চেয়ে বড় দয়াবান। যারা আমার সাথে কাউকে শরীক করতো না তাদের সকলকে আমার জান্নাতে প্রবেশ করাও। অতঃপর তারা সবাই জান্নাতে প্ৰবেশ করিবে।
পুনরায় আল্লাহ বলবেনঃ জাহান্নামের ভেতরে খুঁজে দেখ, সেখানে এমন কেউ আছে কিনা যে, কখনো কোন সৎকাজ করেছে। তখন তারা [ফেরেশতারা] জাহান্নামে এক ব্যক্তিকে পাবে। আল্লাহ তাকে বলবেনঃ তুমি কি কখনো কোন ভালো কাজ করেছ? সে বলবেঃ না। তবে ক্রয় বিক্রয়ের সময় আমি মানুষের প্রতি উদারতা প্ৰদৰ্শন করতাম। তখন তোমরা [ফেরেশতারা] তেমনি তার প্রতি উদারতা দেখাও। ফেরেশতারা পুনরায় জাহান্নাম থেকে অপর এক ব্যক্তিকে বের করে আনবে। আল্লাহ তাকে বলবেনঃ তুমি কি কখনো ভাল কাজ করেছ? সে বলবেঃ না। তবে আমি আমার সন্তানদের বলেছি, আমি মারা গেলে তোমরা আমাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিও। অতঃপর আমাকে [আমার পোড়া লাশকে] চুৰ্ণ করো। যখন আমি সুরমার মত হয়ে যাবো, তখন আমাকে সমুদ্রের কাছে নিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিও। তাহলে আল্লাহর কসম! বিশ্ব প্ৰভু আমাকে শাস্তি দিতে পারবেন না।
তখন আল্লাহ বলবেনঃ তুমি এরূপ করেছিলে কেন? সে বলবেঃ আপনার ভয়ে। তখন আল্লাহ বলবেনঃ তাকাও সর্বশ্রেষ্ঠ রাজার রাজ্যের দিকে। তোমার জন্য অনুরূপ রাজ্য ও অদ্ৰপ আরো দশটি রাজ্য নির্ধারিত রহিয়াছে। সে বলবেঃ আপনি বিশ্ব সম্রাট হয়েও আমার সাথে ঠাট্টা করছেন? রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলবেনঃ দুপুরের পূর্বে আমি যে হেসেছিলাম, তা এই কারণেই।{১}
{১}. ইবনি হিব্বানের মতে, এটি সহীহ হাদীস [৬৪৭৬] ইসহাক থেকে এই মর্মে উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে যে, এটি একটি শ্ৰেষ্ঠ হাদীস।
পরিচ্ছেদঃ
১৬। একদিন আবু বাকর [রাদি.]
ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করিলেন, অতঃপর বললেনঃ হে জনমণ্ডলী, তোমরা নিশ্চয়ই এ আয়াতটি পড়ে থাকঃيَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ “হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ব্যাপারে সাবধান হও, তোমরা সৎপথে চললে বিপথগামীরা তোমাদের কোন ক্ষতি করিতে পারবে না।” [আয়াতের শেষ পর্যন্ত] তবে তোমরা এ আয়াতের ভুল অর্থ গ্রহণ করে থাক। আমি তো রাসূল সাঃআঃকে বলিতে শুনেছি যে, মানুষ যখন খারাপ কাজ সংঘটিত হইতে দেখে, অথচ তাকে পাল্টে দেয় না [প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের মাধ্যমে তা বন্ধ করেনা] তখন অচিরেই আল্লাহ তাদের ওপর তার সর্বব্যাপী আযাব নাযিল করেন। আবু বাকর [রাদি.] আরো বললেনঃ সাবধান, মিথ্যা বলোনা। মিথ্যা কথা ঈমানের পরিপন্থী।
[অত্র গ্রন্থের ১ নং হাদীস দ্রষ্টব্য]।
পরিচ্ছেদঃ
১৭। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর আবু বাকর [রাদি.] বললেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ গত বছর আমার এই জায়গায় দাঁড়িয়েছিলেন। অতঃপর আবু বকর [রাদি.] কাঁদলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ তোমরা সত্যবাদিতাকে আঁকড়ে ধর। কেননা সত্যবাদিতা সততার সাথী। এই দুটোই জান্নাতে যাওয়ার উপকরণ। সাবধান, মিথ্যা বলোনা। মিথ্যা পাপাচারের সাথী। আর এই দুটোই [মিথ্যা ও পাপাচার] জাহান্নামে যাওয়ার উপকরণ। আল্লাহর কাছে সুস্থতা চাও। কেননা কোন ব্যক্তি ঈমানের পরে সুস্থতার চেয়ে ভালো কোন নিয়ামত লাভ করেনি। তারপর বললেনঃ তোমরা একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। একে অপরের পেছনে লেগো না। হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করো না। আল্লাহর বান্দা ও ভাই ভাই হয়ে যাও।
[৫ নং হাদীস দ্রষ্টব্য]।
পরিচ্ছেদঃ
১৮। হুমাইদ বিন আবদুর রহমান হইতে বর্ণীত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যখন ইন্তিকাল করেন, তখন আবু বাকর [রাদি.] মদীনায় একটি দলের সাথে অবস্থান করছিলেন। তিনি এলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা খুললেন, তাঁকে চুমু খেলেন এবং বললেনঃ আপনার উপর আমার পিতামাতা উৎসর্গ হোক। জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় আপনি মহাপবিত্র। কাবার প্রভুর শপথ! মুহাম্মাদ সাঃআঃ মারা গেছেন। [অতঃপর বর্ণনাকারী পুরো হাদীস উল্লেখ করেন।] অতঃপর বলেনঃ এরপর আবু বাকর [রাদি.] ও উমর [রাদি.] দূতিয়ালীর ভঙ্গিতে রওনা হয়ে তাদের [যেসব মুহাজির ও আনসার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তরসূরী নিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা করছিলেন তাদের] কাছে উপনীত হলেন।
আবু বাকর [রাদি.] ভাষণ দিলেন। এই ভাষণে তিনি এমন একটি কথাও বলিতে বাদ রাখলেন না, যা আনসারদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে কিংবা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ উল্লেখ করিয়াছেন। তিনি বললেনঃ আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ সবাই যদি এক পথে চলে, আর আনসারগণ আরেক পথে চলে, তবে আমি আনসারদের পথে চলবো। হে সাদ, আপনি বসা থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যে বলেছিলেন, কুরাইশ এই [ইসলামী] রাষ্ট্রের শাসক, তা আপনি অবশ্যই জানেন। সৎ লোকেরা সৎ লোকদের অনুগত হয়। আর অসৎ লোকেরা অসৎ লোকদের অনুগত হয়। সাদ বললেনঃ আপনি সত্যই বলেছেন। আমরা উজীর [মন্ত্রণা দাতা] আর আপনারা শাসক। [অর্থাৎ আনসারগণ মন্ত্রী তথা পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করিবে, আর মুহাজিররা শাসকের ভূমিকা।]
পরিচ্ছেদঃ
১৯। আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] বলেনঃ
আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে জিজ্ঞাসা করলামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা যে আমল করি [ভাল হোক কি মন্দ] তা কি পূর্ব-নির্ধারিত [তাকদীদের লিখন] নাকি আমরা নতুনভাবে করি? রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, বরং তা পূর্ব-নির্ধারিত। আবু বাকর [রাদি.] বলেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! [যদি সবকিছু পূর্ব-নির্ধারিত হয়ে থাকে] তাহলে আমাদের আমলের কী প্রয়োজন? রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ প্ৰত্যেকের জন্য সে কাজটি সহজ করা হয় যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। [সুতরাং তোমরা আমল করিতে থাকো]।
টীকাঃ মূলত: তাকদীর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কথা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা আলীমুল গায়েব। অনাদিতেই তিনি জানেন কি হইবে আর কি হইবে না। সে অনুসারেই লাওহে মাহফুযে তিনি সব লিখে রেখেছেন। সুতরাং আল্লাহ তাআলা লিখে রেখেছেন বলে কেউ ভালো বা মন্দ কাজ করে না। বরং তার দ্বারা ঐ কাজটি যে সংঘটিত হইবে সে সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত। তাই তিনি লিখে রেখেছেন। যেমন একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার তার রুগীর সমস্ত অবস্থা জানেন বলে তার ডায়েরীতে লিখে রাখলেন, এ রুগী অমুক সময় অমুক অবস্থায় মারা যাবে এবং রুগী সেভাবেই মারা গেল। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারের লিখন তার মৃত্যুর কারণ নয়। মৃত্যুর কারণ হলো তার রোগ। অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা সব কিছু জানেন বলেই লিখে রেখেছেন। সুতরাং পরিণামের জন্য ব্যক্তির কর্মই দায়ী, আল্লাহর লিখন নয়।
পরিচ্ছেদঃ
২০। আয যুহরী বলেনঃ
মদীনার আনসারগণের মধ্য থেকে অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছেন যে, তাঁরা উসমান বিন আফফান [রাদি.] কে বলিতে শুনেছেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালে তাহাঁর কিছু সংখ্যক সাহাবী ভীষণ মর্মাহত হলেন, এমনকি তাদের কেউ কেউ নানা রকম দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হবার উপক্রম হলো। আমিও তাঁদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। এই সময় একদিন আমি যখন বসে আছি, তখন উমর [রাদি.] আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে সালাম দিলেন। কিন্তু তিনি যে আমার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং আমাকে সালাম করিয়াছেন তা আমি টের পাইনি। উমর [রাদি.] চলে গেলেন এবং আবু বাকরের [রাদি.] নিকট উপস্থিত হলেন। উমর [রাদি.] আবু বকর [রাদি.] কে বললেনঃ আমি উসমানের কাছ দিয়ে আসছিলাম এবং তাঁকে সালাম করলাম। কিন্তু তিনি আমার সালামের জবাব দিলেন না। এটা কি আপনার কাছে বিস্ময়কর লাগছে না?
অতঃপর আবু বাকরের শাসনকালে একদা আবু বাকর ও উমর আমার কাছে এলেন এবং উভয়ে আমাকে সালাম করিলেন। তারপর আবু বাকর [রাদি.] বললেনঃ আমার কাছে আপনার ভাই উমর এসেছিলেন। তিনি জানালেন যে, তিনি আপনার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাওয়ার সময় সালাম করেছিলেন। কিন্তু আপনি জবাব দেননি। এর কারণ কী? আমি বললামঃ আমি এটা করিনি? উমর [রাদি.] বললেনঃ অবশ্যই, আপনি করিয়াছেন। তবে হে বনী উমাইয়া, এ কাজটি [সালামের জবাব দেয়া] আপনাদেরকে ক্লান্ত ও বিরক্ত করে তুলেছে। আমি বললামঃ আল্লাহর শপথ! আমি টেরই পাইনি যে, আপনি আমার কাছ দিয়ে গিয়েছেন এবং সালাম করিয়াছেন। আবু বাকর [রাদি.] বললেনঃ উসমান সত্য কথা বলেছে।
আচ্ছা, [হে উসমান] কোন বিষয়ের ব্যস্ততা আপনাকে তা থেকে [সালামের জবাব দেয়া থেকে] বিরত রেখেছিল? [অর্থাৎ কোন দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগের কারণে কি আপনি ব্যাপারটা টের পাননি এবং সেদিকে লক্ষ্য করিতে পারেননি?]। আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ জিনিসটি কী? উসমান [রাদি.] বললেনঃ আল্লাহ তাআলা তাহাঁর নবীকে তুলে নিলেন আমরা তাঁকে এ কথা জিজ্ঞেস করার আগে যে, এই সমাজের মুক্তির উপায় কী? আবু বাকর [রাদি.] বললেনঃ আমি এ প্রশ্ন তাঁকে করেছি। উসমান বলেনঃ এ কথা শ্ৰবণ করা মাত্ৰই আমি তার কাছে উঠে গেলাম, অতঃপর তাঁকে বললামঃ আমার পিতামাতা আপনার ওপর উৎসর্গ হোক। আপনিই এ কথা জিজ্ঞাসা করার অধিকতর যোগ্য। আবু বাকর [রাদি.] বললেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে রাসূলুল্লাহ, এই জাতির মুক্তির উপায় কী? তিনি বললেনঃ যে কালেমা আমি আমার চাচার নিকট পেশ করলে তিনি তা প্ৰত্যাখ্যান করেছিলেন সেই কালেমা যে ব্যক্তি গ্ৰহণ করিবে, সেটিই তার মুক্তির পথ।”
[২৪ নং হাদীস দ্রষ্টব্য]
২১। ইয়াযীদ বিন আবু সুফিয়ান বলেনঃ
আবু বাকর [রাদি.] আমাকে সিরিয়ায় প্রেরণের সময় বললেনঃ হে ইয়াযীদ, তোমার তো কিছু আত্মীয়-স্বজন আছে। তোমাকে নিয়ে আমার সবচেয়ে বড় আশঙ্কা এই যে, তুমি হয়তো তাদেরকে কর্তৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্ৰাধিকার দেবে। অথচ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুসলিমদের কোন বিষয়ে দায়িত্বশীল হইবে, অতঃপর সে স্বজনগ্ৰীতির ভিত্তিতে কাউকে তাদের কর্মকর্তা নিয়োগ করিবে, তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ। আল্লাহ তার কাছ থেকে কোন সুপারিশ বা অব্যাহতির আবেদন গ্ৰহণ করিবে না। তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। আর যে ব্যক্তিকে আল্লাহর সীমানা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হলো এবং সে ঐ সীমানা অন্যায়ভাবে অতিক্রম করলো, তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ। [বৰ্ণনাকারী বলেন] অথবা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, তার নিরাপত্তার ব্যাপারে আল্লাহর কোন দায়-দায়িত্ব নেই।{১}
{১}. আল হাকেমের মতে হাদীসটি সহীহ, ৪/৯৩
২২। আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ আমাকে এমন ৭০ হাজার লোক দেয়া হয়েছে যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। তাদের সকলের মুখমণ্ডল পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত হইবে এবং তাদের মন এক ব্যক্তির মনের মত হইবে [অর্থাৎ তারা এক মনা ও একমত থাকিবে]। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট আরো বেশি চাইলাম। তখন তিনি আমাকে প্ৰতিজনের সাথে ৭০ হাজার জন করে বাড়িয়ে দিলেন। আবু বাকর [রাদি.] বলেনঃ আমার মনে হয়, এই বক্তব্য গ্রামবাসীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে এবং মরুভূমির আশপাশের লোকজন এ রকম হইবে।
পরিচ্ছেদঃ
২৩। ইবনে উমর [রাদি.] বলেন,
আমি আবু বাকর [রাদি.] কে বলিতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন খারাপ কাজ করে, সে দুনিয়াতে তার প্রতিফল পায়।{১}
{১}. [তিরমিযী-৩০৩৯]
২৪। উসমান [রাদি.] বলেছেন যে,
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যখন ইন্তিকাল করিলেন, তখন রাসূলের সাহাবীগণ খুব বেশি শোকাহত ও মর্মাহত হলেন। এমনকি তাদের অনেকে নানা ধরনের দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হবার উপক্রম করিলেন। আমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। এরপর শোয়াইব থেকে আবুল ইয়ামান কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটির বক্তব্য তুলে ধরলেন।
[হাদীস নং ২০ দ্রষ্টব্য]
পরিচ্ছেদঃ
২৪। উসমান [রাদি.] বলেছেন যে,
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যখন ইন্তিকাল করিলেন, তখন রাসূলের সাহাবীগণ খুব বেশি শোকাহত ও মর্মাহত হলেন। এমনকি তাদের অনেকে নানা ধরনের দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হবার উপক্রম করিলেন। আমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। এরপর শোয়াইব থেকে আবুল ইয়ামান কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটির বক্তব্য তুলে ধরলেন। [হাদীস নং ২০ দ্রষ্টব্য]
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
পরিচ্ছেদঃ
২৫। আয়িশা [রাদি.] জানানঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর ফাতিমা [রাদি.] আবু বাকর [রাদি.] কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিত্যক্ত সেই সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ ভাগ করে দিতে অনুরোধ করিলেন, যা আল্লাহ তাআলা তাকে দিয়েছেন। আবু বাকর [রাদি.] তাঁকে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ আমাদের [অর্থাৎ নবীদের] সম্পত্তির কোন উত্তরাধিকারী থাকে না। আমরা যে সম্পত্তি রেখে যাই, তা সাদাকা মাত্র। এতে ফাতিমা [রাদি.] রেগে গেলেন। অতঃপর আবু বকর [রাদি.] এর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করিলেন এবং ফাতিমার মৃত্যু অবধি তিনি এই সম্পর্কচ্ছেদ অব্যাহত রাখলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর ফাতিমা [রাদি.] ছয় মাস বেঁচে ছিলেন। ফাতিমা [রাদি.] আবু বাকরের নিকট খাইবার ও ফাদাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ও মদীনায় তাহাঁর সাদাকাস্বরূপ রেখে যাওয়া সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ চাইলেন। আবু বাকর [রাদি.] তা দিতে অস্বীকার করিলেন এবং বললেনঃ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যা কিছুই করিতেন, আমি তার কিছুই করিতে বাদ রাখবো না। বাদ রাখলে আমার আশঙ্কা যে, আমি বিপথগামী হয়ে যাবো।
অবশ্য মদীনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাদাকাস্বরূপ যে সম্পত্তি রেখে গিয়েছিলেন, উমর [রাদি.] সে সম্পত্তিকে আলী [রাদি.] ও আব্বাস [রাদি.] এর দায়িত্বে সমর্পণ করেন। পরে আলী [রাদি.] তার ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। আর খাইবার ও ফাদাকের সম্পত্তি উমর [রাদি.] নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে দেন এবং বলেনঃ এ দুটো সম্পত্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাদাকা। এ দুটো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের ও তাহাঁর স্থলাভিষিক্তের অধিকারভুক্ত ছিল। যিনি শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হইবেন, তিনিই এ দুটোর তত্ত্বাবধায়ক থাকিবেন। আজও পর্যন্ত এ দুটো সম্পত্তি সেইভাবেই রহিয়াছে।{১}
{১}. বুখারীর মতে হাদীসটি সহীহ, ৩০৯২, মুসলিমের মতেও সহীহ, ১৭৫৯] [অত্র গ্রন্থের ৯ নং হাদীস দ্রষ্টব্য] মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
পরিচ্ছেদঃ
২৬। আয়িশা [রাদি.] বলেন,
আবু বাকর [রাদি.] যখন মৃত্য শয্যায়, তখন তিনি [আয়িশা] নিম্নোক্ত কবিতা পাঠ করে আবু বাকরের উদাহরণ পেশ করিলেন:
“তিনি এমন শুভ্ৰ-উজ্জ্বল, যে তাহাঁর মুখমণ্ডলের দোহাই দিয়ে মেঘের কাছে বৃষ্টি কামনা করা হয়। তিনি ইয়াতীমদের আশ্রয়স্থল এবং বিধবাদের রক্ষক।”
এ কথা শুনেই আবু বাকর [রাদি.] বলে উঠলেন, “আল্লাহর কসম! এই পংক্তিতে যার উদাহরণ পেশ করা হয়েছে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ছাড়া আর কেউ নন।”
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ যঈফ [Daif] মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
২৭ – পরিচ্ছেদঃ
২৭। ইবনে জুরাইজ বলেনঃ
আমার পিতা জানিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর সাহাবায়ে কিরাম তাহাঁর কবর কোথায় খোঁড়া হইবে তা কিছুতেই স্থির করিতে পারছিলেন না। অবশেষে যখন আবু বাকর [রাদি.] বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছি, কোন নবীকেই কখনো যেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন সেখানে ছাড়া কবর দেয়া হয়না, তখন তাহাঁর বিছানা সরানো হলো এবং বিছানার নিচে তাহাঁর কবর খোঁড়া হলো।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
২৮ – পরিচ্ছেদঃ
২৮। হাদীস নং ৮ দ্রষ্টব্য।
{৮। আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] বলেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলেছিলেন আমাকে এমন একটি দুআ শিখিয়ে দিন, যা দ্বারা আমি নামাযের মধ্যে দুআ করিতে পারি। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, এই দুআটি পড়ঃ
اللهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি নিজের ওপর অনেক অত্যাচার করেছি। তুমি তোমার পক্ষ হইতে আমার গুনাহ মাফ করে দাও এবং আমার প্রতি করুণা কর। নিশ্চয়ই তুমিই ক্ষমাশীল ও দয়াশীল”। [হাদীস নং ২৮ দ্রষ্টব্য] অন্য বর্ণনায় “অনেক অত্যাচার” এর পরিবর্তে “বিরাট অত্যাচার” বলা হয়েছে।}
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
২৯ – পরিচ্ছেদঃ
২৯। হাদীস নং ১ দ্রষ্টব্য [এ হাদীসটিতে অন্যায়ের প্রতিরোধের পরিবর্তে অত্যাচারীর প্রতিরোধ উল্লেখ করা হয়েছে।]
{১। আবু আবদুর রহমান আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বল বলেনঃ আমাকে আমার পিতা আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বল বিন হিলাল বিন আসাদ তদীয় পুস্তক থেকে জানিয়েছেন এবং বলেছেনঃ আমাকে আবদুল্লাহ বিন নুমায়ের বলেছেন, আমাকে ইসমাঈল [অর্থাৎ খালিদের পিতা] কায়েস থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, একদিন আবু বাকর [রাদি.] জনসমক্ষে দাঁড়ালেন, আল্লাহর প্রশংসা করিলেন, অতঃপর বললেনঃ হে জনগণ! তোমাদের মধ্যে যে কোন ব্যক্তি এ আয়াত পাঠ করে থাকেঃ
অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ব্যাপারে সাবধান হও। তোমরা নিজেরা যখন হিদায়াত লাভ করিবে [সৎপথে চলবে] তখন যে ব্যক্তি বিপথগামী হয়েছে, সে তোমাদের কোন ক্ষতি করিতে পারবে না”। [মায়েদাঃ ১০৫]
কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছিঃ “লোকেরা যখন অন্যায় সংঘটিত হইতে দেখবে, অথচ তার প্রতিরোধ করিবে না, তখন অচিরেই আল্লাহ্ তাদের ওপর সর্বব্যাপী আযাব নাযিল করবেন।” [অর্থাৎ অন্যায়কারী ও অন্যায় সহ্যকারী-সকলেই সেই আযাবে নিপতিত হইবে।]}
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৩০ – পরিচ্ছেদঃ
৩০। হাদীস নং ২৯ দ্রষ্টব্য
দেখুন পূর্বের হাদীস।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৩১ -পরিচ্ছেদঃ
৩১। হাদীস নং ১৩ দ্রষ্টব্য
{১৩। আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ কোন কৃপণ, ছদ্মবেশধারী ধোঁকাবাজ, খিয়ানতকারী ও অসচ্চরিত্র ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না। সর্বপ্রথম যারা জান্নাতের দরজার কড়া নাড়বে তারা হইবে দাসদাসী যদি তারা আল্লাহর সাথে ও তাদের মনিবের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করে।}
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ যঈফ [Daif] মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৩২ – পরিচ্ছেদঃ
৩২। হাদীস নং ১৩ দ্রষ্টব্য
{১৩। আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ কোন কৃপণ, ছদ্মবেশধারী ধোঁকাবাজ, খিয়ানতকারী ও অসচ্চরিত্র ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না। সর্বপ্রথম যারা জান্নাতের দরজার কড়া নাড়বে তারা হইবে দাসদাসী যদি তারা আল্লাহর সাথে ও তাদের মনিবের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করে।}
পার্থক্যঃ ১৩ নং হাদীসে আছে “মনিবদের সাথে ন্যায়সংগত আচরণ করে”। এ হাদীসে আছে, “মনিবদের আনুগত্য করে”
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ যঈফ [Daif] মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৩৩ – পরিচ্ছেদঃ
৩৩। হাদীস নং ১২ দ্রষ্টব্য
{১২। আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদেরকে বলেছেনঃ প্রাচ্যের খোরাসান নামক একটি জায়গা থেকে দাজ্জাল আবির্ভূত হইবে। এমন কিছু জনগোষ্ঠী তার অনুসরণ করিবে যাদের মুখমণ্ডল হাতুড়ি পিটিয়ে বানানো ঢাল সদৃশ।}
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৩৪ -পরিচ্ছেদঃ
৩৪। হাদীস নং ৫ দ্রষ্টব্য
{৫। একবার আবু বাকর [রাদি.] তাহাঁর ভাষণে বলেন: গত বছর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমার এই জায়গায় দাঁড়িয়ে নামায পড়িয়েছিলেন। এ কথা বলে আবু বাকর [রাদি.] কাঁদতে লাগলেন। তারপর বললেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট সুস্থতা কামনা কর। কেননা ইয়াকীনের [দৃঢ় বিশ্বাস বা মজবুত ঈমান] পর কেউ সুস্থতার চেয়ে উত্তম কোন জিনিস প্রাপ্ত হয়নি। [অর্থাৎ ঈমানের পর সুস্থতা আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত।] তোমরা সত্যবাদিতাকে আঁকড়ে ধর। কেননা তা পুণ্যের সাথে যুক্ত। এই দুটোই জান্নাতে যাওয়ার উপকরণ। তোমরা মিথ্যাচার থেকে সাবধান থাক। কেননা মিথ্যাচার পাপাচারের অন্তর্ভুক্ত। এই দুটোই জাহান্নামে যাওয়ার উপকরণ। তোমরা পরস্পরে হিংসা করো না, বিদ্বেষ পোষণ করো না, সম্পর্কচ্ছেদ করো না। একে অন্যের পেছনে লেগো না। বরঞ্চ আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক ভাই ভাই হয়ে থাক।}
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৩৫ – পরিচ্ছেদঃ
৩৫। আবু বাকর [রাদি.] ও উমর [রাদি.] এই মর্মে সুসংবাদ প্ৰদান করিয়াছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ আল কুরআন যেরূপ তরতাজাভাবে নাযিল হয়েছে, ঠিক সেই রকম তরতাজাভাবে আল কুরআন পাঠ করা যাকে আনন্দ দেয়, সে যেন ইবনে উন্মে আবদ যেভাবে আল কুরআন পাঠ করে, সেইভাবে পাঠ করে।{১}
{১}. ইবনি হিব্বান [৭০৬৬] এর মতে হাদীসটি সহীহ] দ্রষ্টব্য হাদীস নং ৪২৫৫। মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ হাসান মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৩৬ – পরিচ্ছেদঃ
৩৬। দেখুন পূর্বের হাদীস।
{হাদীস নং ৩৫ ও ১৭৫ দ্রষ্টব্য।}
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ হাসান মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৩৭ – পরিচ্ছেদঃ
৩৭। একবার উসমান [রাদি.] বলিলেন,
কতই ভালো হতো, যদি শয়তান আমাদেরকে যে কু-প্ররোচনা দেয়, তা থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়, সে কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিজ্ঞাসা করে নিতাম। এ কথা শুনে আবু বাকর [রাদি.] বলিলেন, আমি এ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি জবাব দিলেন, যে কথাটি আমি আমার চাচাকে বলিতে অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তা তিনি বলেননি, সেই কথাটি বলাই শয়তানের প্ররোচনা থেকে তোমাদের মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায়। [অর্থাৎ বারংবার কালেমায়ে শাহাদাত উচ্চারণ বা স্মরণ করা-অনুবাদক] [দেখুন হাদীস নং ২০]
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৩৮ – পরিচ্ছেদঃ
৩৮। একবার আবু বাকর [রাদি.] জনগনের সামনে ভাষণ দেয়ার সময় বলিলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ পৃথিবীতে মানুষকে যত নিয়ামত দেয়া হয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে মজবুত ঈমান ও সুস্থতা। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে এই দুটো জিনিস চাও। [দেখুন হাদীস নং ৫]
[হাদীসটি এখানে অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত আকারে এসেছে। -অনুবাদক] মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৩৯ – পরিচ্ছেদঃ
৩৯। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য যখন লোকেরা কবর খননের সিদ্ধান্ত নিল, তখন আবু উবাইদা ইবনিল জাররাহ মক্কাবাসীর রীতি অনুযায়ী কবর খনন করিতেন, আর আবু তালহা মদীনাবাসীর জন্য লাহাদ পদ্ধতিতে কবর খনন করিতেন। আব্বাস দুই ব্যক্তিকে ডেকে এনে একজনকে বললেনঃ আবু উবায়দার কাছে যাও, অপরজনকে বললোঃ আবু তালহার নিকট যাও। হে আল্লাহ, তোমার রাসূলের জন্য যেটি ভালো হয়, সেটি বেছে নাও। এরপর যে ব্যক্তিকে আবু তালহার নিকট পাঠানো হয়েছিলো, সে আবু তালহাকে পেল এবং আবু তালহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য লাহদ তৈরি করলো। [২৩৫৭ নং হাদীসটিতে এর পুনরাবৃত্তি হয়েছে]
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৪০ – পরিচ্ছেদঃ
৪০। উকবা ইবনিল হারিস [রাদি.] বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের কিছুদিন পর আসরের নামায পড়ে আবু বাকর [রাদি.] এর সাথে বের হলাম। তাহাঁর পাশাপাশি আলী [রাদি.] হেঁটে যাচ্ছিলেন। কিছুদুর গিয়ে আলীর [রাদি.] ছেলে হাসানের সাথে তাহাঁর দেখা হলো। সঙ্গে সঙ্গে তিনি হাসানকে ঘাড়ে তুলে নিলেন আর নিম্নোক্ত পংক্তি আবৃত্তি করলেনঃ
“কী আশ্চর্য, আমার পিতার কসম। এতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত দেখিতে। আলীর [রাদি.] সাথে সাদৃশ্য নেই।” এ সময় আলী [রাদি.] হাসছিলেন।{১}
{১}. বুখারীর মতে হাদীসটি সহীহ, [৩৫৪২] আল হাকেমের মতেও সহীহ, ৩/১৬৮] মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৪১ -পরিচ্ছেদঃ
৪১। আবু বাকর [রাদি.] বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। সহসা মায়েয বিন মালিক এল এবং [ব্যভিচার করেছে বলে] স্বীকারোক্তি করলো। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাকে ফেরত পাঠালেন। তারপর সে পুনরায় এল এবং দ্বিতীয়বার স্বীকারোক্তি করলো। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ পুনরায় তাকে ফেরত পাঠালেন। তারপর সে পুনরায় এল এবং তৃতীয়বার স্বীকারোক্তি করলো। আমি মায়েযকে বললামঃ তুমি যদি চতুর্থবার স্বীকারোক্তি কর, তাহলে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তোমাকে রজম করবেন। [পাথর মেরে হত্যা করবেন।] এরপর সে চতুৰ্থবার স্বীকারোক্তি করলো। এবার রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাকে আটক করিলেন। তারপর [উপস্থিত সাহাবীদেরকে] মায়েযের চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। তারা বললোঃ [ওর সম্পর্কে] আমরা ভালো ছাড়া অন্য কিছু জানি না। [অর্থাৎ সাধারণভাবে ওর চরিত্র ভালো।]। এরপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাকে রজম করার আদেশ দিলেন।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৪২ – পরিচ্ছেদঃ
৪২। সালাসিল যুদ্ধে আবু বকরের [রাদি.] সঙ্গী রাফে আত্ তায়ী বলেনঃ
সাহাবায়ে কিরাম কর্তৃক আবু বাকরের [রাদি.] হাতে বাইয়াত গ্ৰহণ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি এর জবাবে আনসারগণ যা যা বলাবলি করেছিল, তিনি তাদেরকে যা যা বলেছিলেন, উমর ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] আনসারগণকে যা যা বলেছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রোগশয্যায় থাকাবস্থায় তাহাঁর আদেশে তিনি যে মুসলিমদের নামাযে ঈমামতি করেছিলেন, সে কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে উমর যে কথা বলেছিলেন, সে সব কথা সবিস্তারে উল্লেখ করিলেন। তারপর বলিলেন, এরপর লোকেরা আমার হাতে বাইয়াত করলো। [অর্থাৎ আমাকে খালীফা নিযুক্ত করলো] আমি এ দায়িত্ব এই আশঙ্কায় গ্রহণ করলাম যে, পাছে অরাজকতা ছড়িয়ে না পড়ে এবং সেই অরাজকতার পর ধর্মদ্রোহিতা ছড়িয়ে না পড়ে।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ হাসান মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৪৩ – পরিচ্ছেদঃ
৪৩। আবু বাকর [রাদি.] খালিদকে ইসলাম ত্যাগকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে বললেনঃ
আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছি, খালিদ বিন ওয়ালীদ আল্লাহর এক চমৎকার বান্দা, গোত্রের এক চমৎকার সদস্য এবং আল্লাহর তরবারিগুলোর অন্যতম তরবারী যাকে আল্লাহ কাফির ও মুনাফিকদের ওপর উত্তোলন করিয়াছেন।{১}
{১}. আল হাকেমের মতে, এটি সহীহ, [৩/২৯৮] মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৪৪ – পরিচ্ছেদঃ
৪৪। ৫ নং হাদীস দ্রষ্টব্য
৫। একবার আবু বাকর [রাদি.] তাহাঁর ভাষণে বলেনঃ গত বছর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমার এই জায়গায় দাঁড়িয়ে নামায পড়িয়েছিলেন। এ কথা বলে আবু বাকর [রাদি.] কাঁদতে লাগলেন। তারপর বললেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট সুস্থতা কামনা কর। কেননা ইয়াকীনের [দৃঢ় বিশ্বাস বা মজবুত ঈমান] পর কেউ সুস্থতার চেয়ে উত্তম কোন জিনিস প্রাপ্ত হয়নি। [অর্থাৎ ঈমানের পর সুস্থতা আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত।] তোমরা সত্যবাদিতাকে আঁকড়ে ধর। কেননা তা পুণ্যের সাথে যুক্ত। এই দুটোই জান্নাতে যাওয়ার উপকরণ। তোমরা মিথ্যাচার থেকে সাবধান থাক। কেননা মিথ্যাচার পাপাচারের অন্তর্ভুক্ত। এই দুটোই জাহান্নামে যাওয়ার উপকরণ। তোমরা পরস্পরে হিংসা করো না, বিদ্বেষ পোষণ করো না, সম্পর্কচ্ছেদ করো না। একে অন্যের পেছনে লেগো না। বরঞ্চ আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক ভাই ভাই হয়ে থাক।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৪৫ – পরিচ্ছেদঃ
৪৫। আয়িশা [রাদি.] বলেন,
যখন আবু বাকরের [রাদি.] মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এল, তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, আজকে কি বার? সবাই বললোঃ সোমবার। তিনি বললেনঃ আজকের মধ্যে যদি আমি মারা যাই তাহলে আগামী কাল পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করো না। [অর্থাৎ আমার কাফন দাফন আজই সম্পন্ন করো। অনুবাদক] কেননা যেদিনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটতম, [অর্থাৎ তার ইন্তিকালের দিনের নিকটতম] সেটিই আমার প্রিয়তম দিন।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ যঈফ [Daif] মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৪৬ – পরিচ্ছেদঃ
৪৬। হাদীস নং ৬৬ ও ৫ দ্রষ্টব্য
৫। একবার আবু বাকর [রাদি.] তাহাঁর ভাষণে বলেন: গত বছর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমার এই জায়গায় দাঁড়িয়ে নামায পড়িয়েছিলেন। এ কথা বলে আবু বাকর [রাদি.] কাঁদতে লাগলেন। তারপর বললেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট সুস্থতা কামনা কর। কেননা ইয়াকীনের [দৃঢ় বিশ্বাস বা মজবুত ঈমান] পর কেউ সুস্থতার চেয়ে উত্তম কোন জিনিস প্রাপ্ত হয়নি। [অর্থাৎ ঈমানের পর সুস্থতা আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত।] তোমরা সত্যবাদিতাকে আঁকড়ে ধর। কেননা তা পুণ্যের সাথে যুক্ত। এই দুটোই জান্নাতে যাওয়ার উপকরণ। তোমরা মিথ্যাচার থেকে সাবধান থাক। কেননা মিথ্যাচার পাপাচারের অন্তর্ভুক্ত। এই দুটোই জাহান্নামে যাওয়ার উপকরণ। তোমরা পরস্পরে হিংসা করো না, বিদ্বেষ পোষণ করো না, সম্পর্কচ্ছেদ করো না। একে অন্যের পেছনে লেগো না। বরঞ্চ আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক ভাই ভাই হয়ে থাক।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৪৭ – পরিচ্ছেদঃ
৪৭। ২ নং হাদীসের অনুরূপ।
সংযোজনঃ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ নিম্নোক্ত আয়াত দুটি পাঠ করলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন খারাপ কাজ করে অথবা নিজের ওপর যুলম করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে।” [সূরা আন-নিসা]
“যারা কোন অশ্লীল কাজকরা কিংবা নিজের ওপর যুলম করার পর আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের গুনাহর জন্য ক্ষমা চায়…।” [সূরা আলে ইমরান]
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৪৮ – পরিচ্ছেদঃ
৪৮। ২ নং হাদীসের অনুরূপ।
সংযোজনঃ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ নিম্নোক্ত দুটি আয়াতের একটি পাঠ করলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ করিবে, সে তার প্রতিফল পাবে।” [সূরা আননিসা] যারা কোন অশ্লীল কাজ অথবা নিজের ওপর যুলম করার পর আল্লাহকে স্মরণ করে ও নিজেদের গুনাহ মাফ চায়…।” [সূরা আলে ইমরান]
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৪৯ – পরিচ্ছেদঃ
৪৯। উমর [রাদি.] বলেন,
আবু বাকর [রাদি.] আমাদের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদের সামনে দাঁড়ালেন। তারপর বললেনঃ শুনে রাখ, মানুষকে দৃঢ় ঈমানের পর সুস্থতা ও নিরাপত্তার চেয়ে ভালো কোন জিনিস দেয়া হয়নি। শুনে রাখ, সত্যবাদিতা ও বদান্যতা জান্নাতে [নিয়ে যাবে]। শুনে রাখ, মিথ্যাচার ও পাপাচার জাহান্নামে [নিয়ে যাবে]।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৫০ – পরিচ্ছেদঃ
৫০। আবু ইসহাক বলেন,
আমি বারা [রাদি.] কে বলিতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যখন মক্কা থেকে মদীনায় গেলেন, তখন পিপাসা বোধ করিলেন। এ সময় তাঁরা জনৈক মেষ রাখালের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবু বাকর [রাদি.] বলেন, আমি একটা পাত্ৰ নিলাম এবং তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য খানিকটা দুধ দোহন করলাম। অতঃপর সেই দুধ নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলাম। তিনি তা পান করিলেন। এতে আমি আনন্দিত হলাম।
[হাদীস নং ৩ দ্রষ্টব্য] মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৫১ – পরিচ্ছেদঃ
৫১। আবু হুরাইরা [রাদি.] বলেন,
আবু বকর [রাদি.] বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাকে এমন একটা জিনিস শিখিয়ে দিন, যা আমি সকালে সন্ধ্যায় ও শোয়ার সময় বলবো। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ তুমি বল, হে আল্লাহ, আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, অদৃশ্য ও দৃশ্য সব কিছুর সম্বন্ধে জ্ঞাত। অথবা তিনি [এভাবে] বলেছেনঃ হে আল্লাহ, অদৃশ্য ও দৃশ্য সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞাত, আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। প্রতিটি জিনিসের প্রভু ও মালিক, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আমি আমার নফসের অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানের অনিষ্ট ও তার ধোকাবাজির জাল থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই।
[হাদীস নং ৫২ ও ৬৩ দ্রষ্টব্য, মুসনাদে আবু হুরাইরার হাদীস নং ৭৯৪৮ দ্রষ্টব্য] মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৫২ -পরিচ্ছেদঃ
৫২। দেখুন পূর্বের হাদীস।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৫৩ -পরিচ্ছেদঃ
৫৩। হাদীস নং ১ এর অনুরূপ।
১। আবু আবদুর রহমান আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বল বলেনঃ আমাকে আমার পিতা আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বল বিন হিলাল বিন আসাদ তদীয় পুস্তক থেকে জানিয়েছেন এবং বলেছেনঃ আমাকে আবদুল্লাহ বিন নুমায়ের বলেছেন, আমাকে ইসমাঈল [অর্থাৎ খালিদের পিতা] কায়েস থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, একদিন আবু বাকর [রাদি.] জনসমক্ষে দাঁড়ালেন, আল্লাহর প্রশংসা করিলেন, অতঃপর বললেনঃ হে জনগণ! তোমাদের মধ্যে যে কোন ব্যক্তি এ আয়াত পাঠ করে থাকেঃ
অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ব্যাপারে সাবধান হও। তোমরা নিজেরা যখন হিদায়াত লাভ করিবে [সৎপথে চলবে] তখন যে ব্যক্তি বিপথগামী হয়েছে, সে তোমাদের কোন ক্ষতি করিতে পারবে না”। [মায়েদাঃ ১০৫]
কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছিঃ “লোকেরা যখন অন্যায় সংঘটিত হইতে দেখবে, অথচ তার প্রতিরোধ করিবে না, তখন অচিরেই আল্লাহ্ তাদের ওপর সর্বব্যাপী আযাব নাযিল করবেন।” [অর্থাৎ অন্যায়কারী ও অন্যায় সহ্যকারী-সকলেই সেই আযাবে নিপতিত হইবে।]
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৫৪ -পরিচ্ছেদঃ
৫৪। আবু বারযা আসলামী [রাদি.] বলেন, এক ব্যক্তি আবু বকর [রাদি.] এর সাথে অত্যন্ত রূঢ় ও কর্কশ ভাষায় কথা বললো? আমি বললাম, আমি কি ওর গর্দান উড়িয়ে দেব না? [হত্যা করবো না?]। আবু বাকর তাকে ধমক দিয়ে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর এ অধিকার [অর্থাৎ এভাবে হত্যার অনুমতি দেয়ার অধিকার] আর কারো নেই।{১}
{১}. [আবু দাউদ-৪৩৬৩] [৬১ নং হাদীস দ্রষ্টব্য] মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৫৫ – পরিচ্ছেদঃ
৫৫। একবার ফাতিমা [রাদি.] আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] এর নিকট দূত পাঠিয়ে তাহাঁর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই সম্পত্তির উত্তরাধিকার চাইলেন, যা তাঁকে আল্লাহ মদীনায় ও ফাদাকে দিয়েছিলেন এবং খায়বারের এক পঞ্চমাংশের অবশিষ্টাংশ। আবু বাকর [রাদি.] জবাব দিলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, আমরা [নবীরা] উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করিনা। আমরা যে সম্পত্তি রেখে যাই তা সাদাকা। এই সম্পত্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় যে অবস্থায় ছিল, আমি তাকে কখনো সেই অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত করবো না এবং সাদাকার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যা করিয়াছেন, আমি অবশ্যই ঠিক তাই করবো।
এভাবে আবু বাকর উক্ত সম্পত্তি থেকে ফাতিমাকে কিছুই দিলেন না। এ জন্য ফাতিমা আবু বকরের [রাদি.] ওপর রাগান্বিত হলেন। আবু বাকর [রাদি.] বললেনঃ সেই আল্লাহর কসম যার হাতে আমার জীবন, আমার নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আপন জনের সাথে সম্পর্ক বহাল রাখা আমার নিজের আপনজন অপেক্ষা অধিক প্রিয়। তবে এই সম্পত্তির ব্যাপারে তোমাদের ও আমাদের মধ্যে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আমি ন্যায়নীতি থেকে বিচ্যুত হইনি এবং এই সম্পত্তির ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে যা করিতে দেখেছি, আমি তা করা থেকে বিরত হইনি।{১}
{১}. বুখারী-৪২৪০, মুসলিম-১৭৫৯, অত্র গ্রন্থের হাদীস নং ৯ দ্রষ্টব্য . মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৫৬ -পরিচ্ছেদঃ
৫৬। হাদীস নং ২ দ্রষ্টব্য।
২। আলী [রাদি.] বলেনঃ
আমি যখন সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে কোন হাদীস শুনতাম, তখন তা দ্বারা আল্লাহ আমাকে যতটা ইচ্ছা উপকৃত করিতেন। আর যখন অন্য কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে শ্রুত কোন হাদীস আমাকে জানাতো, তখন আমি তারকাছ থেকে শপথ নিতাম [যে, সে সত্যই নিজ কানে হাদীসটি হুবহু শুনেছে কিনা] যখন সে শপথ করতো, কেবল তখনই আমি তাকে বিশ্বাস করতাম। আবু বাকর আমাকে একটা হাদীস শুনিয়েছেন এবং তিনি সত্যই বলেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি কোন গুনাহর কাজ করে, তার অব্যবহিত পর খুব ভালভাবে ওযূ করে, [মিসয়ারের বর্ণনা মুতাবিক, অতঃপর নামায পড়ে, সুফিয়ানের বর্ণনা মুতাবিক, অতঃপর দুরাকআত নামায পড়ে] অতঃপর মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায়, তখন অবশ্যই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৫৭ – পরিচ্ছেদঃ
৫৭। যায়িদ বিন ছাবিত [রাদি.] বলেনঃ
ইয়ামামার শহীদরা যে জায়গায় শহীদ হয়েছিলেন, সেই জায়গায় আবু বাকর [রাদি.] আমার কাছে দূত পাঠিয়ে বললেনঃ হে যায়িদ বিন ছাবিত, তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক। তোমার বিরুদ্ধে আমাদের কারো কোন অভিযোগ নেই। তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ওহী লিখতে। সুতরাং কুরআনকে খুঁজে বের কর ও সংকলিত কর।{1}
{1}. বুখারী কর্তৃক সহীহ বলে স্বীকৃতি দান, ৪৯৮৬, ইবনি হিব্বান-৪৫০৭ অত্র গ্রন্থ হাদীস নং ৭৬ দ্রষ্টব্য} মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৫৮ – পরিচ্ছেদঃ
৫৮। হাদীস নং ৯ দ্রষ্টব্য
৯। ফাতিমা [রাদি.] ও আব্বাস [রাদি.] আবু বাকরের কাছে এলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিত্যক্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকার চাইলেন। তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাদাকের জমি ও খাইবারের জমির অংশ চাইছিলেন। আবু বকর [রাদি.] তাঁদেরকে বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছিঃ আমাদের সম্পত্তির কোন উত্তরাধিকারী হয় না। আমরা [নবীরা] যা রেখে যাই, তা সাদাকা। মুহাম্মাদের বংশধরগণ, স্বগোত্রীয়রা, আত্মীয়স্বজন ও সঙ্গী সাথীরা সবাই এ সম্পত্তি ভোগ করিবে। আল্লাহর কসম! আমি প্রতিটি ব্যাপারেই রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে যা করিতে দেখেছি, তা ছাড়া অন্য কিছু করবো না।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৫৯ – পরিচ্ছেদঃ
৫৯। ইবনে আবি মুলাইকা হইতে বর্ণীত।
আবু বাকর [রাদি.] কে বলা হলো, হে আল্লাহর খলীফা! আবু বাকর [রাদি.] বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খলীফা এবং আমি এতেই সন্তুষ্ট। [হাদীস নং ৬৪ দ্রষ্টব্য]
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ যঈফ [Daif] মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৬০ -পরিচ্ছেদঃ
৬০। একদিন ফাতিমা [রাদি.] আবু বাকর [রাদি.] কে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি যখন মারা যাবেন, তখন আপনার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী কে হইবে? তিনি বললেনঃ আমার সন্তান ও আমার পরিবার। ফাতিমা [রাদি.] বললেনঃ তাহলে আমাদের কী হলো যে, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হইতে পারছিনা? আবু বাকর [রাদি.] বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছি, নবীর সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তরিত হয় না। তবে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যাদের ব্যয়ভার বহন করিতেন। আমিও তাদের ব্যয়ভার বহন করবো এবং রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যাদের জন্য ব্যয় করিতেন, তাদের জন্য আমিও ব্যয় করবো। [হাদীস নং ৭৯ দ্রষ্টব্য]
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৬১ পরিচ্ছেদঃ
৬১। আবু বারযা আসলামী [রাদি.] বলেন,
আমরা আবু বাকর আস সিদ্দিকের [রাদি.] একটা কাজ উপলক্ষে তাহাঁর কাছে ছিলাম। তিনি মুসলিমদের এক ব্যক্তির ওপর রাগান্বিত হলেন। ঐ ব্যক্তির ওপর তার রাগ ভীষণ আকার ধারণ করলো। আমি তা দেখে বললামঃ হে রাসূলুল্লাহর খলীফা, আমি কি ঐ লোকটাকে হত্যা করবো? আমি হত্যা শব্দটা উচ্চারণ করা মাত্রই তিনি আলোচনার বিষয়টি পাল্টে ফেললেন এবং অন্য বিষয়ে যথা ব্যাকরণ সংক্রান্ত কোন বিষয়ে মনোনিবেশ করিলেন। এরপর আমরা যখন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজ নিজ কাজে চলে গেলাম, আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি তাহাঁর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বললেনঃ ওহে আবু বারযা, তুমি কি বলেছিলে?
আবু বারযা বললোঃ “আমি কী বলেছিলাম ভুলে গেছি। আপনি মনে করিয়ে দিন।” তিনি বললেনঃ তুমি কী বলেছিলে, তা তোমার মনে নেই? আমি বললামঃ আল্লাহর কসম! মনে নেই। তিনি বললেনঃ তুমি যখন দেখলে, আমি লোকটির ওপর রেগে গেছি, তখন তুমি বললেঃ হে রাসূলুল্লাহর খলীফা, আমি কি লোকটাকে হত্যা করবো? এটা কি তোমার মনে পড়ে না? তুমি কি সত্যই হত্যা করিতে চেয়েছিলে? আমি বললামঃ আল্লাহর কসম, হ্যাঁ। এখনও যদি আপনি হুকুম দেন, করবো। তিনি বললেনঃ ধিক তোমাকে। আল্লাহর কসম, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আর কারো এরূপ করার অধিকার নেই।
[দেখুন, হাদীস নং ৫৪] মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৬২ -পরিচ্ছেদঃ
৬২। হাদীস নং ৭ দ্রষ্টব্য
৭। আবু বাকর [রাদি.] হইতে বর্ণীত। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ দাঁত মাজা মুখ পবিত্র করে ও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৬৩ -পরিচ্ছেদঃ
৬৩। হাদীস নং ৫১ দ্রষ্টব্য
৫১। আবু হুরাইরা [রাদি.] বলেন, আবু বকর [রাদি.] বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাকে এমন একটা জিনিস শিখিয়ে দিন, যা আমি সকালে সন্ধ্যায় ও শোয়ার সময় বলবো। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ তুমি বল, হে আল্লাহ, আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, অদৃশ্য ও দৃশ্য সব কিছুর সম্বন্ধে জ্ঞাত। অথবা তিনি [এভাবে] বলেছেনঃ হে আল্লাহ, অদৃশ্য ও দৃশ্য সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞাত, আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। প্রতিটি জিনিসের প্রভু ও মালিক, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আমি আমার নফসের অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানের অনিষ্ট ও তার ধোকাবাজির জাল থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৬৪ – পরিচ্ছেদঃ
৬৪। হাদীস নং ৫৯ দ্রষ্টব্য
৫৯। ইবনে আবি মুলাইকা হইতে বর্ণীত। আবু বাকর [রাদি.] কে বলা হলো, হে আল্লাহর খলীফা! আবু বাকর [রাদি.] বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খলীফা এবং আমি এতেই সন্তুষ্ট।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ যঈফ [Daif] মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৬৫ -পরিচ্ছেদঃ
৬৫। ইবনে আবি মুলাইকা বলেন, কখনো কখনো আবু বাকর আস্ সিদ্দিক [রাদি.] এর হাত থেকে লাগাম পড়ে যেত। তখন তিনি তাহাঁর উটনীর উরুতে আঘাত করিতেন, আঘাত করে উটনীকে মাটিতে বসাতেন, তারপর লাগামটি তুলে নিতেন। একবার লোকেরা তাকে বললোঃ আপনি আমাদেরকে আদেশ করলেই তো পারতেন, আমরা আপনাকে লাগাম তুলে দিতাম। তিনি জবাব দিলেনঃ আমার বন্ধু রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাকে আদেশ করিয়াছেন যেন, মানুষের কাছে কিছু না চাই।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ হাসান মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৬৬ – পরিচ্ছেদঃ
৬৬। আবু উবাইদা [রাদি.] আবু বকর [রাদি.] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের এক বছর পর আবু বাকর একদিন ভাষণ দিলেন। তিনি বলিলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ গত বছর আমাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভাষণে বলেছিলেন যে, আল্লাহ আদম সন্তানকে সুস্থতা ও নিরাপত্তার চেয়ে উত্তম কিছু দেননি। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে সুস্থতা ও নিরাপত্তা চাও। আর তোমরা সত্যবাদিতা ও সততাকে আঁকড়ে ধর। কেননা এ দুটো জিনিস জান্নাতে [নিয়ে যায়]। আর মিথ্যাচার ও পাপাচারকে পরিত্যাগ কর। কেননা এ দুটো জাহান্নামে [নিয়ে যায়]। [৫ নং হাদীস দ্রষ্টব্য]
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৬৭- পরিচ্ছেদঃ
৬৭। আবু হুরাইরা [রাদি.] থেকে বৰ্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ মানুষ যতক্ষণ আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই বলে ঘোষণা না করিবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে লড়াই চালিয়ে যেতে আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে। যখন তারা এ ঘোষণা করিবে, তখন তারা আমার কাছ থেকে তাদের ধন ও প্ৰাণ রক্ষা করিতে পারবে। তবে কোন বিশেষ কারণে ধন ও প্ৰাণে কারো প্ৰাপ্য থাকলে সে কথা স্বতন্ত্র। তাদের হিসাব নিকাশ নেয়ার দায়িত্ব একমাত্র আল্লাহর। পরবর্তীকালে যখন ইসলাম পরিত্যাগের হিড়িক পড়লো [এবং কিছু লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করলো, আবু বাকর [রাদি.] তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন] তখন উমর [রাদি.] আবু বাকর [রাদি.] কে বললেনঃ আপনি ওদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন, অথচ আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে এরূপ এরূপ বলিতে শুনেছি।
[উমর [রাদি.] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরোক্ত উক্তির বরাত দিয়ে বলিতে চাইছিলেন যে, লোকেরা এখনো ইসলামকে পুরোপুরি পরিত্যাগ করিতে উদ্যত হয়নি, কেবল কিছু লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করেছেমাত্র। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উল্লেখিত উক্তির আলোকে এখনই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় সমাগত হয়নি। -অনুবাদক] আবু বাকর [রাদি.] বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবো না। [অর্থাৎ নামাযের মত যাকাত ত্যাগ করাও ইসলাম ত্যাগের সমার্থক] যারা এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য করিবে, আমি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবো। আবু হুরাইরা [রাদি.] বলেন, এরপর আমরা আবু বকরের সাথে [যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে] যুদ্ধ করেছি এবং এটিকে সঠিক মনে করেছি।{১}
{১}. বুখারী-৬৯২৪, মুসলিম-২০, মুসনাদ আহমাদ-১১৭, ২৩৯, ৩৩৫. মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৬৮ -পরিচ্ছেদঃ
৬৮। আবু বাকর বিন আবু যুহাইর বর্ণনা করেন যে,
আমি জানতে পেরেছি যে, আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আল্লাহতো বলেছেনঃ “তোমাদের এবং আহলে কিতাবদের লম্বা লম্বা আশা আকাঙ্ক্ষা কোন কাজে আসবে না। যে-ই খারাপ কাজ করিবে, সে-ই তার প্রতিফল ভোগ করিবে।” [সূরা আন নিসা-১২৩] এ আয়াতের পর আর আত্মশুদ্ধির উপায় কী থাকে? এ দ্বারা তো বুঝা যায়, যে কোন খারাপ কাজই আমরা করবো, তার শাস্তি আমাদের ভোগ করিতেই হইবে। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ হে আবু বাকর, আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন। আচ্ছা, তোমার কি কখনো রোগ-ব্যাধি হয় না? তুমি কি কখনো দুঃখ কষ্ট ভোগ কর না? তুমি কি কখনো দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগে আক্রান্ত হওনা? তুমি কি কখনো পেটের ব্যথায় আক্রান্ত হও না? আবু বকর [রাদি.] বললেনঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ ওটাইতো সেই কৰ্মফল, যা তোমাদেরকে দেয়া হয়।{১}
{১}. ইবনি হিব্বান-২৮৯৯, আল হাকেম-৩/৭৪, মুসনাদে আহমদ-৬৯, ৭০, ৭১. মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৬৯ – পরিচ্ছেদঃ
৬৯। আবু বাকর বিন আবু যুহাইর বলেন, আবু বাকর [রাদি.] বলিলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ, এ আয়াতের পর সংশোধনের উপায় কী? রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ হে আবু বাকর, আল্লাহ তোমার ওপর দয়া করুন, তুমি কি রোগাক্রান্ত হওনা? তুমি কি দুশ্চিন্তা ভোগ কর না? তুমি কি পেটের ব্যথায় আক্রান্ত হওনা? তুমি কি..? আবু বাকর বললেনঃ হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে এটা তো। ওটারই বিনিময়ে। [অর্থাৎ গুনাহর শাস্তি]
[দেখুন, হাদীস নং ৬৮]। মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৭০ -পরিচ্ছেদঃ
৭০। ৬৮ ও ৬৯ নং হাদীস দ্রষ্টব্য। {দেখুন পূর্বের হাদীস}
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৭১ -পরিচ্ছেদঃ
৭১। ৬৮ নং হাদীসের পুনরাবৃত্তি। {দেখুন পূর্বের হাদীসগুলো}
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৭২ -পরিচ্ছেদঃ
৭২। আনাস বিন মালিক [রাদি.] বলেন,
আবু বাকর [রাদি.] তাদের জন্য লেখেনঃ এগুলো হচ্ছে ফরয সাদাকা, যা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ মুসলিমদের ওপর ফারয করিয়াছেন, আর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে আল্লাহ তাআলা এর জন্য আদেশ দিয়েছেন। যে ব্যক্তি মুসলিমদের কাছ থেকে এগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণে চাইবে, তাকে যেন তা দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি এর চেয়ে বেশি চাইবে, তাকে যেন না দেয়া হয়। পঁচিশটির কম উটে যাকাতের হার এরূপ, প্রত্যেক পাঁচটি চরণশীল উটে দিতে হইবে একটি ছাগল। যখন উটের সংখ্যা ২৫-এ পৌছবে, তখন একটি বিনতুল মাখায [এক বছর বয়স্কা উটনী] দিতে হইবে ৩৫টি পর্যন্ত। বিনতুল মাখায না থাকলে একটি ইবনিল লাবুন [দুবছর বয়স্ক পুরুষ উট] দিতে হইবে। যখন ৩৬-এ পৌছবে, তখন ৪৫ পর্যন্ত একটি বিনতে লাবুন [দুবছর বয়স্কা উটনী] দিতে হইবে। যখন ৪৬-এ পৌছবে, ৪৬ থেকে ৬০ পর্যন্ত দিতে হইবে একটি হিক্কা অর্থাৎ গর্ভধারণের যোগ্য তিন বছর পূর্ণ হওয়া উটনী। যখন উটের সংখ্যা ৬১ তে পৌছবে। তখন ৬১ থেকে ৭৫ পর্যন্ত দিতে হইবে একটি জাযায়া তথা চার বছর পূর্ণ হওয়া উটনী। যখন উটের সংখ্যা ৭৬ হইবে, তখন ৯০ পর্যন্ত দুবছর পূর্ণ হওয়া দুটি উটনী [বিনতে লাবুন] দিতে হইবে। যখন ৯১ তে পৌছবে, তখন ১২০ পর্যন্ত দিতে হইবে দুটো হিক্কা। ১২০ এর ওপরে প্রত্যেক ৪০ টিতে একটি করে বিনতে লাবুন এবং প্রত্যেক ৫০ টিতে একটি করে হিক্কা দিতে হইবে।
সাদাকার ফরয হওয়া অংশ দিতে গিয়ে যখন উটের বয়সে গরমিল পাওয়া যায়, তখন জাযায়া ফরয হওয়া সত্ত্বেও যদি জাযায়া না থাকে এবং হিক্কা থাকে, তাহলে হিক্কাই গ্ৰহণ করা হইবে, তবে সেই সাথে সম্ভব হলে দুটো ছাগল অথবা বিশ দিরহাম দিতে হইবে। আর যার ওপর হিক্কা ফরয হয়, কিন্তু তার কাছে হিক্কা নেই, জাযায়া আছে, তার কাছ থেকে জাযায়াই গ্ৰহণ করা হইবে এবং সাদাকা আদায়কারী তাকে ২০ দিরহাম অথবা দুটো ছাগল দেবে। আর যার ওপর হিক্কা ফরয হয় কিন্তু তার কাছে হিক্কা নেই, বিনতে লাবুন আছে,তার কাছ থেকে বিনতে লাবুন গ্রহণ করা হইবে। তবে সেই সাথে সম্ভব হলে দুটো ছাগল কিংবা বিশ দিরহাম দিতে হইবে। আর যার ওপর বিনতে লাবুন ফরয হইবে, কিন্তু তার কাছে হিক্কা ছাড়া কিছু নেই। তার কাছ থেকে হিক্কা গ্ৰহণ করা হইবে, তবে সাদাকা আদায়কারী তাকে বিশ দিরহাম অথবা দুটো ছাগল দেবে। আর যার ওপর একটি বিনতে লাবুন ফরয হইবে, কিন্তু তার কাছে বিনতে লাবুন নেই, বিনতে মাখায [এক বছর পূর্ণ হওয়া উটনী] আছে, তার কাছ থেকে বিনতে মাখায গ্ৰহণ করা হইবে, তবে সে সেই সাথে সম্ভব হলে দুটো ছাগল অথবা বিশ দিরহাম দেবে। আর যার ওপর একটা বিনতে মাখায ফারয হয়, কিন্তু তার কাছে একটা পুরুষ ইবনে লাবুন ছাড়া কিছু নেই, তার কাছ থেকে ইবনে লাবুন গ্ৰহণ করা হইবে এবং তার সাথে আর কিছু দিতে হইবে না। আর যার কাছে মাত্র চারটি উট আছে, তার ওপর কোন যাকাত ফরয নয়। তবে তার মালিক ইচ্ছে করলে কিছু দিতে পারে।
ছাগলের যাকাত শুধু বিচরণরত ছাগলের ওপরই প্রযোজ্য। বিচরণরত ছাগলের সংখ্যা চল্লিশ হলে ১২০ পর্যন্ত একটা ছাগল দিতে হইবে। এর চেয়ে বেশি হলে ২০০ পর্যন্ত দুটো ছাগল দিতে হইবে। এর ওপর একটা বেশি হলেও তিনশো পর্যন্ত তিনটে ছাগল দিতে হইবে। আরো বেশি হলে প্ৰত্যেক একশোতে একটি করে ছাগল দিতে হইবে। অত্যধিক বুড়ো ও দৈহিক ত্রুটিযুক্ত ছাগল ও পাঠা গ্ৰহণ করা হইবে না।
তবে আদায়কারী যদি নিতে চায়, তবে নিতে পারে। যাকাত দেয়ার ভয়ে বিচ্ছিন্ন পশুকে একত্র করা বা একত্রিত পশুকে বিচ্ছিন্ন করা চলবে না। আর যে পশু দুই শরীকের মালিকানাধীন হইবে, সে পশুর যাকাত উভয় শরীক সমানভাবে পরস্পরের মধ্যে ধাৰ্য করিবে। আর যখন কোন ব্যক্তির বিচরণশীল ছাগল চল্লিশটির চেয়ে একটি কম হইবে, তখন তাতে কোন যাকাত দিতে হইবে না। তবে ছাগলের মালিক ইচ্ছা করলে কিছু [নফল সাদাকা হিসাবে] দিতে পারবে।
রূপার মধ্যে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ দিতে হয়। যদি রূপা একশো নব্বই দিরহামের বেশি না হয়, তাহলে তাতে কোন যাকাত দিতে হইবেনা। তবে যদি মালিক ইচ্ছা করে [নফল হিসাবে] কিছু দিতে পারে।{১}
{১} বুখারী, ইবনে খুযাইমা, ইবনি হিব্বান . মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৭৩ -পরিচ্ছেদঃ
৭৩। আবদুর রাযযাক বলেছেন, মক্কাবাসী বলেনঃ
ইবনে জুরাইজ নামায শিখেছেন আতা থেকে, আতা শিখেছেন ইবনে যুবাইর থেকে, ইবনে যুবাইর শিখেছেন আবু বাকর থেকে আর আবু বাকর শিখেছেন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ থেকে। ইবনে জুরাইজের চেয়ে উত্তম নামায আদায়কারী আর কাউকে আমি দেখিনি।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৭৪ -পরিচ্ছেদঃ
৭৪। উমর [রাদি.] বলেন,
হাফসা বিনতে উমর হুযাফা বা হুযাইফার ছেলে খুনাইস থেকে বিধবা হয়। খুনাইস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ও বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী ছিলেন। তিনি মদীনায় মারা যান। এরপর আমি উসমান বিন আফফানের সাথে দেখা করলাম এবং তার কাছে হাফসাকে পেশ করলাম। আমি বললাম, আপনি চাইলে আমি আপনার সাথে হাফসার বিয়ে দেই। উসমান বলিলেন, এ বিষয়ে ভেবে দেখবো। এরপর বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করলাম। তারপর তিনি আমার সাথে দেখা করিলেন। বলিলেন, এখন আমি বিয়ে করিতে ইচ্ছুক নই। উমর [রাদি.] বললেনঃ এরপর আমি আবু বাকরের সাথে দেখা করলাম। তাঁকে বললামঃ আপনি যদি ইচ্ছা করেন, হাফসা বিনতে উমরকে আপনার সাথে বিয়ে দেই। তিনি আমাকে কোন জবাবই দিলেন না। এতে তার ওপর আমার উসমানের চেয়ে বেশি রাগ হলো।
এরপর বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমার নিকট হাফসাকে বিয়ে করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে প্রস্তাব পাঠালেন। ফলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হাফসাকে বিয়ে দিলাম। এরপর আবু বাকর আমার সাথে দেখা করে বললেনঃ আপনি আমাকে হাফসার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি আপনাকে কোন জবাব দেইনি। এতে আপনি হয়তো আমার ওপর রাগ করিয়াছেন। আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, আপনি যখন আমার কাছে তার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখন তার জবাব দিতে না পারার একমাত্র কারণ ছিল এই যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে হাফসার কথা বলিতে শুনেছি। কিন্তু আমি রাসূলের গোপনীয়তা ফাঁস করিতে প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি যদি তাকে বিয়ে না করিতেন, তাহলে আমি করতাম।{১}
{১}. বুখারী, ইবনি হিব্বান }
৭৫ -পরিচ্ছেদঃ
৭৫। আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] হইতে বর্ণীত।
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ দুর্ব্যবহারকারী জান্নাতে যাবে না। এক ব্যক্তি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি কি আমাদেরকে বলেননি যে, এই উম্মাতে দাসদাসী ও ইয়াতীমের সংখ্যা অন্যান্য উম্মাতের চেয়ে বেশি হইবে? রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ হ্যাঁ, সুতরাং তোমরা তাদেরকে তোমাদের সন্তানদের মত সম্মান দাও এবং তোমরা যা খাও, তা তাদেরকে খাওয়াও। লোকেরা বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, দুনিয়ার জীবনে কী কী জিনিস আমাদের উপকার সাধন করে? তিনি বলিলেন, উত্তম একটি ঘোড়া, যাকে তুমি বেঁধে রাখবে এবং তার ওপর আরোহণ করে আল্লাহর পথে লড়াই করিবে এবং একজন দাস বা চাকর, যে তোমার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ ও তোমার রক্ষণাবেক্ষণ করিবে। এই দাস বা চাকর নামায পড়লে তোমার ভাই, নামায পড়লে তোমার ভাই।{১}
{১}. ইবনি মাজাহ. মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ যঈফ [Daif] মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৭৬ -পরিচ্ছেদঃ
৭৬। যায়িদ বিন ছাবিত জানিয়েছেন যে,
আবু বাকর [রাদি.] ইয়ামামার শহীদদের নিহত হওয়ার স্থানে তার নিকট দূত পাঠালেন। এর অব্যবহিত পর তাহাঁর নিকট উমর এলেন। তারপর আবু বাকর বলিলেন, আমার নিকট উমর এসেছিলেন। তিনি বলেছেন, ইয়ামামাবাসীর লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড মুসলিমদের মধ্য থেকে কুরআন পাঠকদেরকে [হাফিযদেরকে] নিপাত করেছে। আমার আশঙ্কা হয় যে, আরো বহু জায়গায় অনুরূপভাবে কুরআন পাঠকদেরকে হত্যা করা হইবে। এতে করে বহু কুরআন চলে যাবে। ফলে আল কুরআন সংরক্ষিত হইবে না। আমি মনে করি, আপনার আল কুরআন সংকলনের আদেশ দেয়া উচিত। আমি [আবু বাকর] উমরকে বললামঃ এমন কাজ আমি কিভাবে করবো, যা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ করেননি? উমর বললেনঃ আল্লাহর কসম! এটি একটি মহৎ কাজ। এরপর উমর ক্রমাগত আমার কাছে এসে এ ব্যাপারে তাকিদ দিতে লাগলেন। অবশেষে আল্লাহ এ বিষয়ে আমার বুককে উম্মুক্ত করে দিলেন [কুরআন সংকলনের যৌক্তিকতা উপলব্ধি করালেন] এবং উমর যা সমীচীন মনে করিয়াছেন, আমিও তা সমীচীন বলে উপলব্ধি করলাম।
যায়িদ [রাদি.] বলেনঃ এ সময় উমর [রাদি.] তার কাছে নীরবে বসেছিলেন। আবু বাকর আমাকে বললেনঃ তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক। তোমার মধ্যে আমরা আপত্তিকর কিছু পাইনি। তুমি তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ওহী লিপিবদ্ধ করিতে। অতএব তুমিই ওহী সংকলন কর। যায়িদ বলেনঃ আল্লাহর কসম! লোকেরা যদি আমাকে একটা পাহাড় স্থানান্তর করার দায়িত্ব অৰ্পণ করতো, তবে তাও আমার নিকট এই কাজের চেয়ে বেশি ভারী মনে হতো না, যার আদেশ তিনি আমাকে দিলেন। অর্থাৎ আল কুরআন সংকলনের। আমি শুধু বললামঃ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যা করেননি, তা আপনারা কিভাবে করছেন?* [হাদীস নং ৫৭ দ্রষ্টব্য]
*দ্রষ্টব্যঃ যায়িদ এই কথাটা সম্ভবত মনে মনে বলেছিলেন। কেননা প্রকাশ্যে বললে আনুগত্যের পরিপন্থী ও গুনাহর কাজ হতো, যা একজন সাহাবীর দ্বারা সংঘটিত হওয়ার কথা নয়। এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, সাহাবীদের বা মুসলিমদের সর্বসম্মত মত [ইজমা] দ্বারা এমন কাজ করা যায় যা ভালো কাজ বলে বিবেচিত হয়। যদিও রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তা করেননি বা করার আদেশ দেননি।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৭৭ -পরিচ্ছেদঃ
৭৭। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যখন ইন্তিকাল করিলেন এবং আবু বাকর [রাদি.] খালীফা হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রেখে যাওয়া কিছু জিনিসের ব্যাপারে আব্বাস [রাদি.] আলীর মুকাবিলায় দাবী তুললেন। [এই দাবী আবু বাকরের নিকট পেশ করা হলে] আবু বাকর [রাদি.] বললেনঃ যে জিনিস রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ রেখে গেছেন এবং হস্তান্তর করেন নি, আমিও তা হস্তান্তর করবো না। এরপর যখন উমর [রাদি.] খালীফা হলেন, তখন তারা উভয়ে উমারের নিকট পুনরায় একে অপরের মুকাবিলায় দাবী পেশ করিলেন।
উমর [রাদি.] বলিলেন, যে জিনিস আবু বাকর [রাদি.] হস্তান্তর করেননি, তা আমি হস্তান্তর করবো না। এরপর যখন উসমান [রাদি.] খালীফা হলেন, তখন তাঁরা উভয়ে তাহাঁর কাছে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাবী পেশ করিলেন। উসমান [রাদি.] নিরুত্তর হয়ে গেলেন এবং মাথা নিচু করিলেন। ইবনি আব্বাস বলেনঃ আমি শঙ্কিত হলাম যে, আব্বাসই হয়তো জিনিসটি নিয়ে নেবেন। আমি তৎক্ষণাত আব্বাসের ঘাড়ে হাত রাখলাম এবং বললাম, আব্বা, আমি আপনাকে আল্লাহর দোহাই দিচ্ছি, জিনিসটি আলীর নিকট সোপর্দ করুন। তখন তিনি তা আলীর হাতে সোপর্দ করিলেন।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৭৮ – পরিচ্ছেদঃ
৭৮। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইরসহ কুরাইশের ছয় থেকে সাতজন বৰ্ণনা করেন,
আমরা উমারের নিকট বসে ছিলাম। সহসা আলী ও আব্বাস উচ্চস্বরে কথা বলিতে বলিতে ঢুকলেন। উমর [রাদি.] বললেনঃ আব্বাস, চুপ করুন। আমি জানি, আপনি কী বলিতে চান। আপনি বলিতে চান, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমার ভাইয়ের ছেলে এবং অর্ধেক সম্পত্তি প্ৰাপ্য। আর হে আলী, আপনি কী বলিতে চান তাও আমি জানি। আপনি বলিতে চান যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেয়ে আমার স্ত্রী এবং অর্ধেক সম্পত্তি তার প্রাপ্য। অথচ এই সম্পত্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে ছিল। তিনি এর ব্যাপারে কী নীতি অবলম্বন করিয়াছেন তা আমরা দেখেছি। তার পরে আবু বাকর তার তত্ত্বাবধায়ক হয়েছেন এবং তিনিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসৃত নীতি অবলম্বন করিয়াছেন। আবু বাকরের পরে আমি এর তত্ত্বাবধায়ক হয়েছি। আমি আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, আমি এ সবের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ও আবু বাকরের অনুসৃত নীতিই অবলম্বন করবো।
তারপর বলিলেন, আবু বাকর আমাকে জানিয়েছেন এবং হলফ করে বলেছেন যে, তিনি সত্য জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছেনঃ নবীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী কেউ হয় না। তাহাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় শুধু দরিদ্র ও সহায়সম্বলহীন মুসলিমরা। আবু বাকর আমাকে আরো জানিয়েছেন এবং আল্লাহর নামে হলফ করে বলেছেন যে, তিনি সত্য জানিয়েছেন যে, কোন নবী ততক্ষণ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন না, যতক্ষণ তার উম্মাতের কোন ব্যক্তি তার ঈমামতি না করেন। আর এই সম্পত্তি এভাবেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছিল। এতে তিনি কী নীতি অবলম্বন করিয়াছেন তা আমরা দেখেছি। তোমরা উভয়ে চাইলে এগুলো তোমাদেরকে দিতে পারি যাতে তোমরা রাসূল সাঃআঃ ও আবু বাকরের নীতি অনুসারে তা ব্যবহার কর যতক্ষণ তা তোমাদের কাছে রাখি। ইবনে যুবাইর বলেনঃ এরপর তারা দুজনেই চলে গেলেন। তারপর পুনরায় এলেন। অতঃপর আব্বাস বলিলেন, এগুলি আলীর নিকট সমর্পণ করুন। আমি সানন্দে তাকে দেয়ার অনুমতি দিচ্ছি।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ/যঈফ {মিশ্রিত} মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৭৯ – পরিচ্ছেদঃ
৭৯। আবু হুরাইরা [রাদি.] বর্ণনা করেন যে,
ফাতিমা [রাদি.] আবু বাকর ও উমারের নিকট এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে তাহাঁর উত্তরাধিকার দাবী করিয়াছেন। তাঁরা দুজনেই জবাব দিয়েছিলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহসাঃআঃকে বলিতে শুনেছি যে, আমাদের [নবীদের] উত্তরাধিকারী কেউ হয় না।{১}
{১}. তিরমিযী, হাদীস নং ৬০ দ্রষ্টব্য . মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ হাসান মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
৮০ – পরিচ্ছেদঃ
৮০। কায়েস বিন হাযেম বৰ্ণনা করেন যে,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের এক মাস পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খালীফা আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] এর নিকট বসা ছিলাম। এরপর তিনি একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। এই সময় ঘোষণা করা হলোঃ “এক্ষুণি নামাযের জামায়াত অনুষ্ঠিত হইবে।” ওটাই ছিল প্রথম নামায, যা “এক্ষুণি নামাযের জামায়াত অনুষ্ঠিত হইবে” এই ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হচ্ছিল। লোকেরা সমবেত হলো। আবু বাকর মিম্বরে আরোহণ করিলেন- যা তার খুতবা দেয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এটাই ছিল, ইসলাম আগমনের পর তাহাঁর দেয়া প্রথম খুতবা। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করিলেন। তারপর বললেনঃ হে জনতা, আমি অবশ্যই চেয়েছিলাম যে, আমি ছাড়া অন্য কেউ এ দায়িত্ব গ্রহণ করুক। তোমরা যদি তোমাদের নবীর সুন্নাতের নিরিখে আমাকে পাকড়াও কর, তবে আমি এ দায়িত্ব পালনে সক্ষম হব না। তিনি তো শয়তান থেকে সুরক্ষিত ছিলেন। তাহাঁর নিকট আসমান থেকে ওহী নাযিল হতো।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ যঈফ [Daif] মুসনাদে আহমাদ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক [রাদি.] {আবু বকরের বর্ণিত হাদীস}
পরিচ্ছেদঃ
৮১। আবু বাকর আস সিদ্দিক [রাদি.] বলেছেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাকে সকালে, সন্ধ্যায় ও রাতে ঘুমানোর পূর্বে এই দুআ পড়ার আদেশ দিয়েছেনঃ হে আল্লাহ, আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, দৃশ্য ও অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, আপনি প্রতিটি জিনিসের অধিপতি ও সম্রাট, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আপনি এক ও অদ্বিতীয়, মুহাম্মাদ সাঃআঃ আপনার বান্দা ও রাসূল। আমি আপনার নিকট আমার নিজের অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানের অনিষ্ট ও তার ফাঁদ থেকে পানাহ চাই, আমি পানাহ চাই যেন আমি নিজের কোন ক্ষতি সাধন না করি এবং অন্য কোন মুসলিমের ওপরও কোন ক্ষতি চাপিয়ে না দিই।
পরিচ্ছেদঃ
৮২। হারিছা হইতে বর্ণীত।
সিরিয়া থেকে এক দল লোক উমারের [রাদি.] নিকট এল। তারা বললোঃ আমরা কিছু সম্পত্তি, কিছু ঘোড়া ও কিছু দাসদাসী পেয়েছি। আমরা চাই এগুলোতে যাকাত ও পবিত্রতার ব্যবস্থা করা হোক। উমর [রাদি.] বললেনঃ আমার দুজন সাথী {রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ও আবু বাকর [রাদি.]} ইতিপূর্বে এটা করেননি যে, আমি তা করবো। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করিলেন। তাদের মধ্যে আলীও [রাদি.] ছিলেন। আলী [রাদি.] বললেনঃ এগুলোতেও যাকাতের প্রচলন করা ভালো যদি তা নিয়মিত জিযিয়ায় পরিণত না হয়, যা আপনার পরবর্তীকালে তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হইবে।
[সম্ভবতঃ তারা সিরিয়ার খৃস্টান ছিল, তাই জিযিয়ায় পরিণত না করার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। ঘোড়া ও দাসদাসীতে যাকাত প্ৰচলিত ছিল না। উমারের এ পদক্ষেপ দ্বারা বুঝা গেল, যে সকল সম্পদে যাকাত ধার্য নেই, তাতে মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দিতে চাইলে ইসলামী রাষ্ট্র পরামর্শক্রমে যে কোন পরিমাণে ও যে কোন হারে যাকাত বা সাদাকা নিতে পারে। তবে তা অবশ্যই স্বেচ্ছায় দিতে ইচ্ছুক। এমন মালিকদের মধ্যেই সীমিত থাকিবে। -অনুবাদক]
পরিচ্ছেদঃ
৮২। হারিছা হইতে বর্ণীত।
সিরিয়া থেকে এক দল লোক উমারের [রাদি.] নিকট এল। তারা বললোঃ আমরা কিছু সম্পত্তি, কিছু ঘোড়া ও কিছু দাসদাসী পেয়েছি। আমরা চাই এগুলোতে যাকাত ও পবিত্রতার ব্যবস্থা করা হোক। উমর [রাদি.] বললেনঃ আমার দুজন সাথী {রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ও আবু বাকর [রাদি.]} ইতিপূর্বে এটা করেননি যে, আমি তা করবো। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করিলেন। তাদের মধ্যে আলীও [রাদি.] ছিলেন। আলী [রাদি.] বললেনঃ এগুলোতেও যাকাতের প্রচলন করা ভালো যদি তা নিয়মিত জিযিয়ায় পরিণত না হয়, যা আপনার পরবর্তীকালে তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হইবে।
[সম্ভবতঃ তারা সিরিয়ার খৃস্টান ছিল, তাই জিযিয়ায় পরিণত না করার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। ঘোড়া ও দাসদাসীতে যাকাত প্ৰচলিত ছিল না। উমারের এ পদক্ষেপ দ্বারা বুঝা গেল, যে সকল সম্পদে যাকাত ধার্য নেই, তাতে মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দিতে চাইলে ইসলামী রাষ্ট্র পরামর্শক্রমে যে কোন পরিমাণে ও যে কোন হারে যাকাত বা সাদাকা নিতে পারে। তবে তা অবশ্যই স্বেচ্ছায় দিতে ইচ্ছুক। এমন মালিকদের মধ্যেই সীমিত থাকিবে। -অনুবাদক]
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ
৮৩ – পরিচ্ছেদঃ
৮৩। আবু ওয়ায়েল থেকে হাকাম বৰ্ণনা করেন যে,
সুবাই বিন মাবাদ তাগলিব গোত্রীয় একজন মরুবাসী খৃষ্টান ছিলেন। তিনি ইসলাম গ্ৰহণ করিলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেনঃ কোন কাজ উত্তম? তাকে বলা হলোঃ আল্লাহর পথে জিহাদ। সে জিহাদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। অতঃপর তাকে বলা হলোঃ তুমি কি হজ্জ করেছ? তিনি বললেনঃ না। তাকে বলা হলোঃ হজ্জ কর ও উমরা কর, তারপর জিহাদ কর। তিনি হজ্জের জন্য রওনা হয়ে গেলেন। হাওয়াবেতে পৌঁছে তিনি হজ ও উমরা দুটোই [এক সাথে করা] শুরু করিলেন। যায়িদ বিন সূহান ও সালমান বিন রবীয়া তা দেখে বলিলেন, সে [সুবাই] তার উটের চেয়েও বিপথগামী অথবা সে তার উটনীর চেয়ে সুপথগামী নয়। এরপর সুবাই উমর [রাদি.] এর নিকট গেলেন এবং তাকে যায়িদ ও সালমান যা বলেছে তা জানালেন। উমর [রাদি.] বললেনঃ তুমি তোমার নবীর সুন্নাত অনুসরণ করেছ। হাকাম বলেনঃ আমি আবু ওয়ায়েলকে বললামঃ এ ঘটনাটি আপনাকে সুবাই নিজেই বলেছেন? হাকাম বললেনঃ হ্যাঁ।
{আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, নাসায়ী, অত্র গ্রন্থের ১৬৯, ২২৭, ২৫৪, ২৫৬ ও ৩৭৯ নং হাদীস দ্রষ্টব্য} মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ
৮৪ – পরিচ্ছেদঃ
৮৪। আমর ইবনে মাইমুন বলেছেনঃ
উমর [রাদি.] আমাদের সাথে একটি জামায়াতে ফজরের নামায পড়লেন, তারপর কিছুক্ষণ থামলেন, তারপর বললেনঃ মুশরিকরা সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত রওনা হতো না। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাদের বিপরীত করিয়াছেন। অতঃপর {উমর [রাদি.]} সূর্যোদয়ের পূর্বেই রওনা হলেন।{১}
{১}. বুখারী-১৬৮৪, দেখুন, এই গ্রন্থের ২০০, ২৭৫, ২৯৫, ৩৫৮, ৩৮৫ নং হাদীস। মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ
৮৫ – পরিচ্ছেদঃ
৮৫। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেছেন,
উমর [রাদি.] যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রবীণ সাহাবীদেরকে ডাকতেন, তখন সেই সাথে আমাকেও ডাকতেন। আর বলিতেন, ওঁরা যতক্ষণ কথা না বলেন, ততক্ষণ তুমি কথা বলো না। একদিন আমাকে ডেকে বললেনঃ লাইলাতুল কাদর সম্পর্কে [অর্থাৎ তার ফযীলতও মর্যাদা সম্পর্কে] রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যা বলেছেন, তা তো তোমরা জেনেছ। অতএব, তোমরা রমযানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কাদর তালাশ কর। যে কোন বেজোড় রাতে তোমরা তার সাক্ষাত পাবে।{১}
{১}. ইবনে খুযাইমা, অত্র গ্রন্থের ২৯৮ নং হাদীস দেখুন। মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ
৮৬ – পরিচ্ছেদঃ
৮৬। আসিম ইবনে আমর বাজালী [রাদি.] বলেন,
কয়েক ব্যক্তি উমর [রাদি.]কে বললোঃ আমরা আপনার কাছে তিনটে বিষয়ে জিজ্ঞেস করিতে এসেছি। কোন ব্যক্তির বাড়িতে নফল নামায পড়া, জানাবাতের [ফরয ও ওয়াজিব] গোসল করা ও স্ত্রীর ঋতুবতী থাকাকালে তার সাথে স্বামীর কতটুকু মেলামেশা বৈধ? উমর [রাদি.] বলিলেন, তোমরা কি জাদুকর? তোমরা এমন বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছ, যা সম্পর্কে আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে জিজ্ঞেস করার পর আজ পর্যন্ত আর কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেনি।
এরপর উমর [রাদি.] বললেনঃ মানুষ বাড়িতে যে নামায পড়ে তা জ্যোতি। বাড়িকে যে ব্যক্তি জ্যোতির্ময় করিতে চায় সে তা করুক। জানাবাতের গোসল সম্পর্কে তিনি বললেনঃ সে প্রথমে তার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে, তারপর ওযূ করিবে, তারপর মাথার ওপর তিনবার পানি ঢালবে। আর ঋতুবতী স্ত্রী সম্পর্কে বললেনঃ স্বামী তার পায়জামার ওপরের অংশ স্পর্শ করিতে পারে। [অর্থাৎ স্ত্রীর শরীরের ওপরের অংশ ব্যতীত স্পর্শ করা চলবেনা।{১}
{১}. ইবনে মাজা, ত্বহাবী, বায়হাকী। মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ যঈফ [Daif]
৮৭ – পরিচ্ছেদঃ
৮৭। ইবনে উমর [রাদি.] বলেছেন,
আমি ইরাকে সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসকে ওযূ করার সময় মোজার ওপর মাসিহ করিতে দেখে অসন্তোষ প্ৰকাশ করলাম। পরে যখন আমরা উমর ইবনিল খাত্তাবের নিকট সমবেত হলাম, তখন সাদ আমাকে বললেনঃ তুমি আমাকে মোজার ওপর মাসিহ করিতে দেখে তো অসন্তোষ প্রকাশ করেছ। এখন সে সম্পর্কে তোমার আব্বাকে জিজ্ঞেস করতো দেখি। আমি উমারের নিকট বিষয়টির উল্লেখ করলাম। তিনি বললেনঃ সাদ যখন তোমার নিকট কোন হাদীস বর্ণনা করে, তখন তা অগ্রাহ্য করো না। বস্তৃত রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ মোজার ওপর মাসিহ করিতেন।{১}
{১}. ইবনে খুযাইমা, দেখুন, অত্র গ্রন্থের হাদীস নং ২৩৭. মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ হাসান
৮৮ – পরিচ্ছেদঃ
৮৮। হাদীস নং ৮৭ এর অনুরূপ। দেখুন পূর্বের হাদীস। [বুখারী ও ইবনে খুযাইমা]।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ
৮৯ – পরিচ্ছেদঃ
৮৯। মাদান ইবনে আবি তালহা আল ইয়ামানী বর্ণনা করেনঃ
এক শুক্রবারে উমর ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] মিম্বারে দাঁড়ালেন, তারপর আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মৃতিচারণ করিলেন ও আবু বাকরের স্মৃতিচারণ করিলেন। তারপর বলিলেন, আমি এমন একটা স্বপ্ন দেখেছি যা আমার মৃত্যু আসন্ন হওয়া ছাড়া আর কোন দিকে ইঙ্গিত করে বলে আমার মনে হয় না। আমি দেখলাম, একটা মোরগ যেন আমাকে দুটো ঠোকর মারলো। বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি আমাকে বলিলেন যে, সেটি ছিল লাল মোরগ। আমি এ স্বপ্ন আবু বাকরের মেয়ে আসমা [রাদি.] নিকট বর্ণনা করলাম। তিনি বললেনঃ তোমাকে [উমরকে] জনৈক অনারব ব্যক্তি হত্যা করিবে। উমর বললেনঃ জনগণ আমাকে আদেশ দিচ্ছে, আমি যেন পরবর্তী খলীফা মনোনীত করি। অথচ আল্লাহ তাআলা তার দীনকে ও তার নবীর মাধ্যমে প্রেরিত খিলাফাতকে ধ্বংস করিতে চাননা।
আর কোন জিনিস যদি আমাকে তাড়া করে তবে তা হলো, এই ছয়জনের পরামর্শের ওপর ব্যাপারটা ন্যস্ত করা যাদের ওপর সন্তুষ্ট থাকা অবস্থায়ই আল্লাহর নবী ইন্তিকাল করিয়াছেন। এই ছয়জনের মধ্য থেকে যার হাতে তোমরা বাইয়াত করিবে [খালীফা মেনে নেবে] তার কথা শুনবে ও আনুগত্য করিবে। আমি জানি, এমন কিছু লোক এ বিষয় নিয়ে নিন্দায় মুখর হইবে, যাদের সাথে আমি ইসলামের স্বার্থে এই হাত দিয়ে যুদ্ধ করেছি। তারা আল্লাহর দুশমন, কাফির ও বিপথগামী। আল্লাহর কসম, আমার প্রতিপালক আমার নিকট যে সকল জিনিসের দায়িত্ব ন্যস্ত করিয়াছেন ও খিলাফত অর্পণ করিয়াছেন, সে সব জিনিসের মধ্য থেকে কালালার চেয়ে আমার নিকট অধিক গুরুত্বপূর্ণ কিছুই আমি রেখে যাচ্ছিনা।
আল্লাহর কসম, আল্লাহর নবীর সাহচর্যে আমি যতদিন থেকেছি, ততদিন তিনি সবচেয়ে কঠোরভাবে যে জিনিসের ব্যাপারে আমাকে তাকিদ দিয়েছেন, তা হচ্ছে কালালা [যে ব্যক্তি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যায়] এমনকি তিনি [এর ওপর গুরুত্ব দেয়ার জন্য] তার আঙ্গুল দিয়ে আমার বুকে টোকা দিলেন এবং বললেনঃ সূরা আন নিসার শেষভাগে নাযিলকৃত গ্ৰীষ্মের আয়াত তোমার জন্য যথেষ্ট। আর আমি যদি বেঁচে থাকি, তবে কালালা সম্পর্কে এমন ফায়সালা করবো। যা স্বাক্ষর ও নিরক্ষর নির্বিশেষে সকলেই জানতে পারবে। আমি সকল শহরের আমীরদের ব্যাপারে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে এ জন্যই পাঠিয়েছি যেন তাঁরা জনগণকে ইসলামী শিক্ষা দেন, তাদেরকে তাঁদের নবীর অনুসৃত সুন্নাত তথা রীতিনীতি জানিয়ে দেন এবং তাঁরা যেসব বিষয় অবগত নয়, তা যেন আমার কাছে তুলে ধরেন।
তারপর শোন, তোমরা দুটো গাছের ফল খেয়ে থাকে, যাকে আমি খারাপই মনে করি। তা হচ্ছে পিয়াজ ও রসুন। আল্লাহর কসম, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে দেখতাম, কোন ব্যক্তির মুখ থেকে পিয়াজ রসুনের গন্ধ পেলেই তার আদেশে তাকে হাত ধরে মসজিদ থেকে বের করে দেয়া হতো এবং বাকী পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হতো। তবে যে ব্যক্তির একান্তই পিয়াজ বা রসুন খাওয়া দরকার, সে যেন রান্না করে তার গন্ধ দূর করে খায়। উমর [রাদি.] জুমআর দিনে ভাষণ দিলেন এবং বুধবার শাহাদাতবরণ করিলেন।{১}
{১}. মুসলিম, ইবনে খুযাইমা, দেখুন এই গ্রন্থের হাদীস নং ১৭৯, ১৮৬ ও ৩৪১ . মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ
৯০ – পরিচ্ছেদঃ
৯০। আবদুল্লাহ ইবনে উমর [রাদি.] বর্ণনা করেন,
আমি, যুবাইর ও মিকদাদ বিন আসওয়াদ খাইবারে আমাদের জমি দেখিতে গেলাম। খাইবারে পৌছে আমরা পৃথক হয়ে নিজ নিজ জমিতে অবস্থান করলাম। রাতে আমি যখন বিছানায় ঘুমিয়ে আছি, তখন আমার ওপর আক্রমণ চালানো হলো এবং কনুই থেকে আমার দুই হাত ভেঙ্গে ফেলা হলো। পরদিন ভোরে আমার সাথীদ্বয় আমার কাছে এল, আমার অবস্থা দেখে চিৎকার করে উঠলো এবং আমার কাছে জিজ্ঞেস করলো, কে আপনার এ অবস্থা করেছে? আমি বললামঃ জানি না। অতঃপর উভয়ে আমার হাত দুটো ঠিক করে দিল। তারপর আমাকে সাথে নিয়ে উমর [রাদি.] এর নিকট গেল। উমর [রাদি.] বললেনঃ হে জনতা, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ খাইবারের ইহুদীদের সাথে এই মর্মে চুক্তি করেছিলেন যে, আমরা যখন চাইব তাদেরকে বহিষ্কার করবো। ইতিমধ্যে তারা আবদুল্লাহ ইবনে উমারের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে এবং তার দুহাত ভেঙ্গে দিয়েছে, যেমন তোমরা জানতে পেরেছ। ইতিপূর্বে তো তারা আনসারদের ওপরও অত্যাচার চালিয়েছে। তারা যে এদেরই লোক তাতে কোন সন্দেহ নেই। ওরা ছাড়া খাইবারে আমাদের আর কোন শত্রুনেই। অতএব খাইবারে তোমাদের [মুসলিমদের] যার কোন সম্পত্তি আছে, সে যেন তা নিজ দখলে নিয়ে নেয়। কেননা আমি অচিরেই ইহুদীদেরকে বহিষ্কার করিতে যাচ্ছি। অতঃপর তিনি তাদেরকে বহিষ্কার করেন।{১}
{১}. বুখারী . মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ হাসান
৯১ – পরিচ্ছেদঃ
৯১। আবু হুরাইরা [রাদি.] বর্ণনা করেন,
একদিন উমর [রাদি.] জুমুআর খুৎবা দিচ্ছিলেন। সহসা এক ব্যক্তি এল। উমর [রাদি.] বললেনঃ তোমরা নামাযে আসতে বিলম্ব কর কেন? সে বললোঃ আযান শোনা মাত্ৰই আমি ওযূ করেছি। উমর [রাদি.] বললেনঃ তাই? তোমরা কি শোননি যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, তোমাদের কেউ জুমুআর নামাযে যেতে চাইলে তার গোসল করা উচিত।{১}
{১}. বুখারী, মুসলিম, ইবনে খুযাইমা, দেখুন। এই গ্রন্থের হাদীস নং ৩১৯, ৩২০. মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ
৯২ – পরিচ্ছেদঃ
৯২। আবু উসমান বলেছেন,
আমরা যখন আযার বাইজানে, তখন আমাদের কাছে উমারের চিঠি এল। তিনি লিখলেনঃ হে উতবা ইবনে ফারকাদ, বিলাসিতা থেকে, মুশরিকদের বেশভূষা থেকে ও রেশম থেকে সাবধান। কেননা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদেরকে রেশম পরতে নিষেধ করিয়াছেন, তবে এটুকু পরিমাণ। এই বলে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদের দিকে তার [মধ্যম ও শাহাদাত] আঙ্গুলদ্বয় তুলে ধরলেন। ঈমাম মুসলিমের এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ দুই, তিন অথবা চার আঙ্গুলের অধিক পরিমাণ রেশমী কাপড় পরতে নিষেধ করিয়াছেন।{১}
{১}. বুখারী, মুসলিম, দেখুন। এই গ্রন্থে হাদীস নং ২৪২, ২৪৩, ৩০১, ৩৫৬, ৩৫৭. মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ
৯৩ – পরিচ্ছেদঃ
৯৩। আবু সিনান দুয়ালী [রাদি.] বলেন,
তিনি একদা উমর [রাদি.] এর নিকট গেলেন। তখন তাহাঁর কাছে প্রথম যুগের একদল মুহাজির ছিলেন। উমর ইরাকের একটি দুর্গ থেকে আনা একটি ব্যাগ আনলেন, যাতে একটা আংটি ছিল। উমর [রাদি.] এর এক ছেলে তা নিজের মুখে ঢুকালো। উমর [রাদি.] তৎক্ষণাত সেটি তার কাছ থেকে কেড়ে নিলেন। তারপর উমর [রাদি.] কাঁদতে লাগলেন। তখন তার কাছে উপস্থিত একজন বললো, আপনি কাঁদছেন কেন? আল্লাহ তো আপনাকে বিজয় ও প্রাচুর্য দিয়েছেন। আপনাকে আপনার শক্রর ওপর পরাক্রান্ত করিয়াছেন এবং আপনার চক্ষু ঠাণ্ডা করিয়াছেন। উমর [রাদি.] বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছি, আল্লাহ যখনই কাউকে সম্পদের প্রাচুর্য দেন, তখন তাদের মধ্যে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী শত্রুতা ও কলহ-কোন্দল ঢুকিয়ে দেন। আমি সেটিরই আশঙ্কা করছি।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ যঈফ [Daif]
৯৪ – পরিচ্ছেদঃ
৯৪। আবদুল্লাহ ইবনে উমর [রাদি.] স্বীয় পিতা উমর [রাদি.] থেকে বর্ণনা করেন।
আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কারো ওপর যদি গোসল ফারয বা ওয়াজিব হয় এবং সে গোসল করার আগে ঘুমাতে চায়, তা হলে সে কী করিবে? রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ তার উচিত নামাযের ওযূর মত ওযূ করা, তারপর ঘুমানো।{১}
{১}. তিরমিযী, ইবনে খুযাইমা, অত্র গ্রন্থের হাদীস নং ১০৫, ১৬৫, ২৩০, ২৩৫, ৩২৬, ২৬৩ ও ৩০৬ দ্রষ্টব্য. মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ হাসান
৯৫ – পরিচ্ছেদঃ
৯৫। আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণনা করেন,
আমি উমর ইবনিল খাত্তাবকে বলিতে শুনেছিঃ যখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই [মদীনার চিহ্নিত মুনাফিক নেতা] মারা গেল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে চলে গেলেন। তারপর যখন তার জানাযা পড়ার উদ্দেশ্যে তার লাশের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন, অমনি আমি ঘুরে গিয়ে তার বুক সোজা আড় হয়ে দাঁড়ালাম। বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল, আল্লাহর দুশমন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই অমুক দিন, তার আয়ুষ্কালের হাতে গণা কয়েকদিন বাকী থাকতেও এই এই কথা বলেছিল। সেই ব্যক্তিরও কি আপনি জানাযা পড়ছেন? [আমি এ কথা বারবার বলছিলাম]। আর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ মুচকি মুচকি হাসছিলেন।
আমি যখন অনেক বেশি বার কথাটা বললাম, তখন তিনি বলিলেন, হে উমর, তোমার প্রশ্নটা পরে করো। আমাকে যে ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে, সেটাই আমি প্রয়োগ করছি। আমাকে বলা হয়েছেঃ “তুমি তাদের জন্য ক্ষমা চাও বা না চাও। [কিছুই এসে যায় না], তুমি যদি তাদের জন্য ৭০ বার ক্ষমা চাও তবুও আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।” আমি যদি জানতাম যে, ৭০ বারের চেয়েও বেশিবার ক্ষমা চাইলে তাদেরকে ক্ষমা করা হইবে, তাহলে আরো বেশি বার ক্ষমা চাইতাম।
এরপর তিনি আবদুল্লাহ বিন উবাই এর জানাযা পড়ালেন এবং তার শবযাত্রায় সঙ্গী হলেন। তারপর তিনি তার কবরে তার শেষ কৃত্য সমাপন পর্যন্ত অবস্থান করিলেন। প্রকৃত ব্যাপার তো আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এসব কাজে আমার দুঃসাহসিক আপত্তি জান্নাতে দেখে বিস্ময়বোধের সৃষ্টি হচ্ছিল। আল্লাহর কসম, এর পর বেশি সময় অতিবাহিত হয়নি। সহসা আয়াত নাযিল হলোঃ ..“আপনি তাদের কারো জানাযা পড়বেন না এবং কবরে দাঁড়াবেন না। তারা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছিল এবং অবাধ্য থাকা অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেছিল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ স্বীয় ইন্তিকাল পর্যন্ত আর কখনো কোন মুনাফিকের জানাযা পড়েননি এবং তার কবরেও দাঁড়াননি।{১}
{১}. বুখারী, ইবনি হিব্বান
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ হাসান
৯৬ – পরিচ্ছেদঃ
৯৬। নাফে [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন,
আবদুল্লাহ ইবনে উমর [রাদি.] বলিতেন, যখন কোন পুরুষের নিকট মাত্র একটি কাপড় থাকে, তখন তা দিয়ে শরীরের নিম্নাংশ আচ্ছাদন করে নামায পড়া উচিত। আমি উমর ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] কে বলিতে শুনেছিঃ যখন একটি মাত্র কাপড় থাকে, তখন তা দিয়ে ইহুদীদের মত সমগ্র শরীর ঢেকনা। [অৰ্থাৎ নিম্নাংশ আগে পুরো আবৃত করা চাই। সমগ্র শরীর আবৃত করিতে গিয়ে নিম্নাংশ যদি অনাবৃত হয়ে পড়ে তবে তা না করা উচিত] নাফে [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ আমি যদি বলতাম যে, তিনি এ উক্তি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, তা হলেও আমি মিথুক হতাম না বলে আমি আশা করি।
{মুসনাদে ইবনে উমারে হাদীস নং ৬৩৫৬ দ্রষ্টব্য} মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ হাসান
৯৭- পরিচ্ছেদঃ
৯৭। উকবা বিন আমের [রাদি.] বলেন,
উমর [রাদি.] আমাকে বলেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী থাকা অবস্থায় মারা যায়, তাকে বলা হয়, ৮টি দরজার যেটি দিয়ে ইচ্ছা, জান্নাতে প্রবেশ কর।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ হাসান
৯৮ – পরিচ্ছেদঃ
৯৮। মুজাহিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ
এক ব্যক্তি নিজের তরবারী দিয়ে তার ছেলেকে আঘাত করলো এবং হত্যা করলো। এরপর ঘটনাটি উমর [রাদি.] এর নিকট উত্থাপিত হলো। তিনি বলিলেন, আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে একথা বলিতে না শুনতাম যে, কোন পিতাকে আপনি সন্তান হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হইবে না, তাহলে আমি তোমাকে স্থান ত্যাগ করার আগেই হত্যা করতাম।
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ হাসান
৯৯ – পরিচ্ছেদঃ
৯৯। আবেস বিন রাবীয়া [রাদি.] বর্ণনা করেন,
আমি উমর [রাদি.] কে দেখেছি, হাজরে আসওয়াদের দিকে তাকিয়ে বলছেন, “আল্লাহর কসম, আমি যদি না দেখতাম যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তোমাকে চুমো খাচ্ছেন, তবে তোমাকে চুমো খেতাম না। তারপর উমর [রাদি.] হাজরে আসওয়াদকে চুমো খেলেন।{১}
{১}. বুখারী, মুসলিম, ইবনি হিব্বান, দেখুন। এই গ্রন্থের হাদীস নং ১৭৬, ৩২৫. মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ
১০০ – পরিচ্ছেদঃ
১০০। আবদুল্লাহ ইবনিস সাদী জানিয়েছেন যে,
তিনি উমর [রাদি.] এর খিলাফতকালে তার কাছে এলে উমর [রাদি.] তাঁকে বললেনঃ আমাকে কি এ কথা বলা হয়নি যে, তুমি জনগণের বিভিন্ন [সেবামূলক] কাজ কর, তারপর তোমাকে তার পারিশ্রমিক দেয়া হলে তা অপছন্দ কর? [অর্থাৎ এ কথা কি সত্য?] আমি [আবদুল্লাহ ইবনিস সাদী] বললামঃ হ্যাঁ। উমর [রাদি.] বললেনঃ তাহলে তুমি কি চাও? আমি বললামঃ আমার প্রচুর ঘোড়া ও দাসদাসী আছে। আমি সচ্ছল, আমি চাই, আমার পারিশ্রমিক মুসলিমদের জন্য সাদাকা হয়ে যাক। উমর [রাদি.] বললেনঃ এরূপ করো না। কারণ তুমি যা চেয়েছে, আমিও তা করিতে চেয়েছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাকে কিছু দান করিতেন। তখন আমি বলতাম, এটি এমন কাউকে দিন, যে এর প্রতি আমার চেয়েও বেশি মুখাপেক্ষী। একবার তিনি আমাকে একটা সম্পত্তি দিলেন। আমি বললাম, এ সম্পত্তি আমার চেয়েও যার বেশি প্রয়োজন, তাকে দিন। রাসূলুল্লাল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ এটা নিয়ে নাও, এ দ্বারা আরো সম্পদ উৎপন্ন কর এবং সাদাকা কর। এই সম্পদ থেকে যা অযাচিতভাবেই তোমার হাতে আসে, তা নিয়ে নাও। আর যা আসেনা, তার প্রত্যাশী হয়োনা। [অর্থাৎ কখনো যদি কাজ করেও তার পারিশ্রমিক না জোটে, তবে তার জন্য পীড়াপীড়ি করো না। -অনুবাদক]{১}
{১}. [বুখারী, মুসলিম, ইবনে খুযাইমা, দেখুন অত্র গ্রন্থের ২৭৯ ও ২৮০ নং হাদীস] মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ
১০১ – পরিচ্ছেদঃ
১০১। রবীয়া ইবনে দাররাজ বলেছেন যে,
আলী ইবনে আবি তালেব [রাদি.] মক্কা যাওয়ার পথে আছরের পর দুরাকআত নামায পড়লেন। উমর [রাদি.] এটা দেখে তার ওপর রাগান্বিত হলেন এবং বললেনঃ আল্লাহর কসম, আমি জানি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাঃআঃ এটা নিষিদ্ধ করিয়াছেন। [দেখুন, হাদীস নং ১০৬]
মুসনাদে আহমদ pdf -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ যঈফ [Daif]
Leave a Reply