সংসারের প্রতি অনাসক্তি ও অন্তরের কোমলতা

সংসারের প্রতি অনাসক্তি ও অন্তরের কোমলতা

সংসারের প্রতি অনাসক্তি ও অন্তরের কোমলতা , এই পর্বের হাদীস =২৮ টি (১৮৬৫-১৮৯২) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-৫৩ঃ সংসারের প্রতি অনাসক্তি ও অন্তরের কোমলতা

০/০. সংসারের প্রতি অনাসক্তি ও অন্তরের কোমলতা
৫৩/১. ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতীত নিজেদের আত্মার প্রতি যুলমকারী লোকেদের বসবাস এলাকায় প্রবেশ করো না।
৫৩/২. বিধবা, দরিদ্র ও ইয়াতিমদের মঙ্গল সাধন।
৫৩/৩. মাসজিদ নির্মাণের মর্যাদা।
৫৩/৫. লোক দেখানো আমালের নিষিদ্ধতা।
৫৩/৬. বাক সংযত করা।
৫৩/৭. যে ব্যক্তি ন্যায় কাজের নির্দেশ দেয় অথচ সে নিজেই তা করে না এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে অথচ সে নিজেই তা করে, তার শাস্তি।
৫৩/৮. কারো পাপ প্রকাশ করা নিষিদ্ধ।
৫৩/৯. হাঁচি দিলে আলহামদুলিল্লাহ বলা এবং হাই তোলার অপছন্দনীয়তা।
৫৩/১১. ইঁদুর সম্পর্কে এবং তার রূপ পরিবর্তিত হয়েছে।
৫৩/১২. একই খালে মুমিন দুবার দংশিত হয় না।
৫৩/১৪. কারো এত বেশি প্রশংসা করা নিষিদ্ধ যাতে প্রশংসার কারণে তার নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
৫৩/১৫. অধিক বয়স্ককে অগ্রগণ্য করা।
৫৩/১৬. কথা বলায় স্পষ্টতা অবলম্বন করা এবং ইলম লিখে রাখার হুকুম।
৫৩/১৯. মাক্কাহ থেকে মদিনায় [নাবী [সাঃআঃ]-এর] হিজরাতের বর্ণনা।

০/০. সংসারের প্রতি অনাসক্তি ও অন্তরের কোমলতা

১৮৬৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে থাকে। দুটি ফিরে আসে, আর একটি তার সঙ্গে থেকে যায়। তার পরিবারবর্গ, তার মাল ও তার আমাল তার অনুসরণ করে থাকে। তার পরিবারবর্গ ও তার মাল ফিরে আসে, পক্ষান্তরে তার আমাল তার সঙ্গে থেকে যায়।

[বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৪২ হাদীস নং ৬৫১৪; মুসলিম পর্ব ৫৩/হাঃ ২৯৬০]. সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৬৬. মিস্ওয়ার ইবনি মাখরামাহ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

আম্‌র ইবনি আউফ আনসারী [রাদি.] যিনি বনী আমির ইবনি লুয়াইয়ের মিত্র ছিলেন এবং বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তিনি তাঁকে বলেছেন যে, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আবু উবাইদাহ ইবনি জাররাহ [রাদি.]-কে বাহরাইনের জিযিয়া আদায় করার জন্য পাঠালেন। আর রসূলূল্লাহ্ [সাঃআঃ] বাহরাইনবাসীদের সঙ্গে সন্ধি করেছিলেন এবং আলা ইবনি হাযরামী [রাদি.]-কে তাদের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। আবু উবাইদাহ [রাদি.] বাহরাইন হতে অর্থ সম্পদ নিয়ে এলেন। আনসারগণ আবু উবাইদাহর আগমন বার্তা শুনে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ফজরের সলাতে সবাই হাযির হন। যখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তাঁদের নিয়ে ফজরের সলাত আদায় করে ফিরলেন, তখন তারা তাঁর সামনে হাযির হলেন। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তাদের দেখে মুচকি হাসলেন এবং বললেন, আমার মনে হয় তোমরা শুনেছ, আবু উবাইদাহ [রাদি.] কিছু নিয়ে এসেছেন। তারা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের খুশী করে তার আকাঙ্ক্ষা রাখ। আল্লাহ্‌র কসম! আমি তোমাদের ব্যাপারে দারিদ্র্যের ভয় করি না। কিন্তু তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি যে, তোমাদের উপর দুনিয়া এরূপ প্রসারিত হয়ে পড়বে যেমন তোমাদের অগ্রবর্তীদের উপর প্রসারিত হয়েছিল। আর তোমরাও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, যেমন তারা আকৃষ্ট হয়েছিল। আর তা তোমাদের বিনাশ করবে, যেমন তাদের বিনাশ করেছে।

[বুখারী পর্ব ৫৮ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩১৫৮; মুসলিম ৫৩ হাঃ ২৯৬১]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৬৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কারো দৃষ্টি যদি এমন ব্যক্তির উপর নিপতিত হয়, যাকে সম্পদে ও দৈহিক গঠনে অধিক মর্যাদা দেয়া হয়েছে তবে সে যেন এমন ব্যক্তির দিকে তাকায়, যে তার চেয়ে হীন অবস্থায় রয়েছে।

[বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ৬৪৯০; মুসলিম]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৬৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে বলতে শুনেছেন, বনী ইসরাইলের মধ্যে তিনজন লোক ছিল। একজন শ্বেতরোগী, একজন মাথায় টাকওয়ালা আর একজন অন্ধ। মহান আল্লাহ তাদেরকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। কাজেই, তিনি তাদের নিকট একজন ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতা প্রথমে শ্বেত রোগীটির নিকট আসলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নিকট কোন জিনিস অধিক প্রিয়? সে জবাব দিল, সুন্দর রং ও সুন্দর চামড়া। কেননা, মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। ফেরেশতা তার শরীরের উপর হাত বুলিয়ে দিলেন। ফলে তার রোগ সেরে গেল। তাকে সুন্দর রং এবং সুন্দর চামড়া দান করা হল। অতঃপর ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ ধরনের সম্পদ তোমার নিকট অধিক প্রিয়? সে জবাব দিল উট অথবা সে বলল, গরু। এ ব্যাপারে বর্ণনাকারীর সন্দেহ রয়েছে যে শ্বতরোগী না টাকওয়ালা দুজনের একজন বলেছিল উট আর অপরজন বলেছিল গরু। অতএব তাকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী উটনী দেয়া হল। তখন ফেরেশ্তা বললেন, “এতে তোমার জন্য বরকত হোক।”

[বর্ণনাকারী বলেন] ফেরেশতা টাকওয়ালার নিকট গেলেন এবং বললেন, তোমার নিকট কী জিনিস পছন্দনীয়? সে বলল, সুন্দর চুল এবং আমার হতে যেন এ রোগ চলে যায়। মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। বর্ণনাকারী বলেন, ফেরেশতা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং তৎক্ষণাৎ মাথার টাক চলে গেল। তাকে সুন্দর চুল দেয়া হল। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ সম্পদ তোমার নিকট অধিক প্রিয়? সে জবাব দিল, গরু। অতঃপর তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দান করলেন। এবং ফেরেশতা দুআ করলেন, এতে তোমাকে বরকত দান করা হোক।

অতঃপর ফেরেশতা অন্ধের নিকট আসলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ জিনিস তোমার নিকট অধিক প্রিয়? সে বলল, আল্লাহ্ যেন আমার চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে দেন, যাতে আমি মানুষকে দেখতে পারি। নাবী [সাঃআঃ] বললেন, তখন ফেরেশতা তার চোখের উপর হাত বুলিয়ে দিলেন, তৎক্ষণাৎ আল্লাহ্ তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ সম্পদ তোমার নিকট অধিক প্রিয়? সে জবাব দিল ছাগল। তখন তিনি তাকে একটি গর্ভবতী ছাগী দিলেন। উপরে উল্লেখিত লোকদের পশুগুলো বাচ্চা দিল। ফলে একজনের উটে ময়দান ভরে গেল, অপরজনের গরুতে মাঠ পূর্ণ হয়ে গেল এবং আর একজনের ছাগলে উপত্যকা ভরে গেল।

অতঃপর ঐ ফেরেশতা তাঁর পূর্ববর্তী আকৃতি প্রকৃতি ধারণ করে শ্বেতরোগীর নিকট এসে বললেন, আমি একজন নিঃস্ব ব্যক্তি। আমার সফরের সম্বল শেষ হয়ে গেছে। আজ আমার গন্তব্য স্থানে পৌঁছার আল্লাহ্ ব্যতীত কোন উপায় নেই। আমি তোমার নিকট ঐ সত্তার নামে একটি উট চাচ্ছি, যিনি তোমাকে সুন্দর রং কোমল চামড়া এবং সম্পদ দান করেছেন। আমি এর উপর সাওয়ার হয়ে আমার গন্তব্যে পৌঁছাব। তখন লোকটি তাকে বলল, আমার উপর বহু দায়িত্ব রয়েছে। তখন ফেরেশতা তাকে বললেন, সম্ভবত আমি তোমাকে চিনি। তুমি কি এক সময় শ্বেতরোগী ছিলে না? মানুষ তোমাকে ঘৃণা করত। তুমি কি ফকীর ছিলে না? অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা তোমাকে দান করেছেন। তখন সে বলল, আমি তো এ সম্পদ আমার পূর্বপুরুষ হতে ওয়ারিশ সূত্রে পেয়েছি। ফেরেশতা বললেন, তুমি যদি মিথ্যাচারী হও, তবে আল্লাহ্ তোমাকে সেরূপ করে দিন, যেমন তুমি ছিলে।

অতঃপর ফেরেশতা মাথায় টাকওয়ালার নিকট তাঁর সেই বেশভূষা ও আকৃতিতে গেলেন এবং তাকে ঠিক তেমনই বললেন, যেরূপ তিনি শ্বেত রোগীকে বলেছিলেন। এও তাকে ঠিক অনুরূপ জবাব দিল যেমন জবাব দিয়েছিল শ্বেতরোগী। তখন ফেরেশতা বললেন, যদি তুমি মিথ্যাচারী হও, তবে আল্লাহ্ তোমাকে তেমন অবস্থায় করে দিন, যেমন তুমি ছিলে।

শেষে ফেরেশতা অন্ধ লোকটির নিকট তাঁর আকৃতিতে আসলেন এবং বললেন, আমি একজন নিঃস্ব লোক, মুসাফির মানুষ; আমার সফরের সকল সম্বল শেষ হয়ে গেছে। আজ বাড়ি পৌঁছার ব্যাপারে আল্লাহ্ ব্যতীত কোন গতি নেই। তাই আমি তোমার নিকট সেই সত্তার নামে একটি ছাগী প্রার্থনা করছি যিনি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন আর আমি এ ছাগীটি নিয়ে আমার এ সফরে বাড়ি পৌঁছতে পারব। সে বলল, প্রকৃতপক্ষেই আমি অন্ধ ছিলাম। আল্লাহ্ আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি ফকীর ছিলাম। আল্লাহ্ আমাকে সম্পদশালী করেছেন। এখন তুমি যা চাও নিয়ে যাও। আল্লাহ্‌র কসম। আল্লাহ্‌র জন্য তুমি যা কিছু নিবে, তার জন্যে আজ আমি তোমার নিকট কোন প্রশংসাই দাবী করব না। তখন ফেরেশতা বললেন, তোমার সম্পদ তুমি রেখে দাও। তোমাদের তিন জনের পরীক্ষা নেয়া হল মাত্র। আল্লাহ্ তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তোমার সাথীদ্বয়ের উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন।

[বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৫১ হাদীস নং ৩৪৬৪; মুসলিম ২৯৬৪]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৬৯. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

আমিই আরবের সর্বপ্রথম ব্যক্তি, আল্লাহ্‌র পথে যে তীর নিক্ষেপ করেছে। আমরা যুদ্ধকালীন এমন অবস্থায় দেখেছি নিজেদেরকে যে দুবলাহ গাছের পাতা ও বাবলা ব্যতীত খাবারের কিছুই ছিল না। কেউ কেউ বকরীর পায়খানার মত পায়খানা করতেন। যা ছিল সম্পূর্ণ শুকনো। অথচ এখন আবার বনূ আসাদ [গোত্র] এসে ইসলামের উপর চলার জন্য আমাকে তিরস্কার করছে। এখন আমি যেন শংকিত আমার সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ।

[বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৬৪৫৩; মুসলিম পর্ব ৫৩/হাঃ ২৯৬৬]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৭০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] দুআ করতেনঃহে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ -এর পরিবারকে প্রয়োজনীয় জীবিকা দান করুন।

[বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৬৪৬০; মুসলিম ১২/৪৩, হাঃ ১০৫৫]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৭১. আয়িশাহ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] মাদীনায় আসার পর থেকে ইন্তিকাল পর্যন্ত তাঁর পরিবারের লোকেরা একাধারে তিন রাত গমের রুটি পেট ভরে খাননি।

[বুখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৫৪১৬; মুসলিম পর্ব ৫৩/হাঃ ২৯৭০]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৭২. আয়িশাহ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর পরিবার একদিনে যখনই দুবেলা খানা খেয়েছেন একবেলা শুধু খুরমা খেয়েছেন।

[বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৬৪৫৫; মুসলিম ২৯৭১]। সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৭৩। আয়িশাহ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি একবার উরওয়াহ [রাদি.]-র উদ্দেশে বললেন, ভাগ্নে! আমরা [মাসের] নতুন চাঁদ দেখতাম, আবার নতুন চাঁদ দেখতাম। এভাবে দুমাসে তিনটি নতুন চাঁদ দেখতাম। কিন্তু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কোন ঘরেই আগুন জ্বালানো হত না।

[উরওয়াহ বলেন] আমি জিজ্ঞেস করলাম, খালা। আপনারা তাহলে বেঁচে থাকতেন কিভাবে? তিনি বললেন, দুটি কালো জিনিস অর্থাৎ খেজুর আর পানিই শুধু আমাদের বাঁচিয়ে রাখত। কয়েক ঘর আনসার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর প্রতিবেশী ছিল। তাঁদের কিছু দুগ্ধবতী উটনী ও বকরী ছিল। তাঁরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জন্য দুধ হাদিয়া পাঠাত। তিনি আমাদের তা পান করতে দিতেন।

[বুখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৫৬৭; মুসলিম ৫৩/১ হাঃ ২৯৭২]। সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৭৪। আয়িশাহ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ]-এর ইন্তিকাল হল। সে সময় আমরা পরিতৃপ্ত হয়ে খেজুর ও পানি খেলাম।

[বুখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৫৩৮৩; মুসলিম ২৯৭৫]। সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৭৫। আবু হুরাইরাহ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]এর পরিবার তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত একাধারে তিনদিন আহার করে পরিতৃপ্ত হননি।

[বুখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৫৩৭৪; মুসলিম ২৯৭৬]। সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩/১. ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতীত নিজেদের আত্মার প্রতি যুলমকারী লোকেদের বসবাস এলাকায় প্রবেশ করো না।

১৮৭৬। আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা এসব আযাবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের লোকালয়ে ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতীত প্রবেশ করবে না। কান্না না আসলে সেখানে প্রবেশ করো না, যেন তাদের উপর যা আপতিত হয়েছিল তা তোমাদের প্রতিও আসতে না পারে।

[বুখারী পর্ব ৮ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৪৩৩; মুসলিম ৫৩/১ হাঃ ২৯৮]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৭৭. আবদুল্লাহ ইবনু উমার [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সহাবীগণ রসূলুল্লাহ[সাঃআঃ] -এর সঙ্গে সামূদ জাতির আবাসস্থল হিজর নামক স্থানে অবতরণ করলেন আর তখন তারা এর কূপের পানি মশকে ভরে রাখলেন এবং এ পানি দ্বারা আটা গুলে নিলেন। রসূলুল্লাহ[সাঃআঃ] তাদেরকে হুকুম দিলেন, তারা ঐ কূপ হতে যে পানি ভরে রেখেছে, তা যেন ফেলে দেয় আর পানিতে গুলা আটা যেন উটগুলোকে খাওয়ায় আর তিনি তাদের আদেশ করলেন তারা যেন ঐ কূপ হতে মশক ভরে যেখান হতে [সালিহ [আ.]]-এর উটনীটি পানি পান করত।

[বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৩৩৭৯; মুসলিম ২৯৮০]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩/২. বিধবা, দরিদ্র ও ইয়াতিমদের মঙ্গল সাধন।

১৮৭৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বিধবা ও মিসকীন-এর জন্য [খাদ্য যোগাতে] সচেষ্ট ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় মুজাহিদের মত অথবা রাত জেগে ইবাদতকারী ও দিনভর সিয়াম পালনকারীর মত।

[বুখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৫৩৫৩; মুসলিম ৫৩/২, হাঃ ২৯৮২]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩/৩. মাসজিদ নির্মাণের মর্যাদা।

১৮৭৯. উবাইদুল্লাহ খাওলানী [রহ.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি উসমান ইবনি আফ্ফান [রাদি.]-কে বলতে শুনেছেন, তিনি যখন মাসজিদে নববী নির্মাণ করেছিলেন তখন লোকজনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেছিলেনঃতোমরা আমার উপর অনেক বাড়াবাড়ি করছ অথচ আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] -কে বলতে শুনেছিঃযে ব্যক্তি মাসজিদ নির্মাণ করে, বুকায়র [রহ.] বলেনঃ আমার মনে হয় রাবী আসিম [রহ.] তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে, আল্লাহ তাআলা তার জন্যে জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।

[বুখারী পর্ব ৮ অধ্যায় ৬৫ হাদীস নং ৪৫০; মুসলিম ৫/৪, হাঃ ৫৩৩]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩/৫. লোক দেখানো আমালের নিষিদ্ধতা।

১৮৮০. জুনদুব [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লোক শোনানো ইবাদাত করে আল্লাহ্ তাআলা এর বিনিময়ে লোক-শোনানো দেবেন। আর যে ব্যক্তি লোক-দেখানো ইবাদাত করবে আল্লাহ্ এর বিনিময়ে লোক দেখানো দেবেন।

[বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৩৬ হাদীস নং ৬৪৯৯; মুসলিম ৫৩/৫, হাঃ ২৯৮৬]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩/৬. বাক সংযত করা।

১৮৮১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয় বান্দা এমন কথা বলে যার পরিণাম সে চিন্তা করে না, অথচ এ কথার কারণে সে নিক্ষিপ্ত হবে জাহান্নামের এমন গভীরে যার দূরত্ব মাশরিক-এর দূরত্বের চেয়ে অধিক।

[বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৬৪৭৭; মুসলিম ৫৩/৬, হাঃ ২৯৮৮]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩/৭. যে ব্যক্তি ন্যায় কাজের নির্দেশ দেয় অথচ সে নিজেই তা করে না এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে অথচ সে নিজেই তা করে, তার শাস্তি।

১৮৮২. আবু ওয়াইল [রহ.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উসামাহ [রাদি.]-কে বলা হল, কত ভাল হত! যদি আপনি ঐ ব্যক্তির [উসমান [রাদি.]-এর নিকট যেতেন এবং তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতেন। উত্তরে তিনি বললেন, আপনারা মনে করছেন যে আমি তাঁর সঙ্গে আপনাদেরকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলব। অথচ আমি তাঁর সঙ্গে [দাঙ্গা দমনের ব্যাপারে] গোপনে আলোচনা করছি, যেন আমি একটি দ্বার খুলে না বসি। আমি দ্বার উন্মুক্তকারীর প্রথম ব্যক্তি হতে চাই না। আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট হতে কিছু শুনেছি, যার পরে আমি কোন ব্যক্তিকে- যিনি আমাদের আমীর নির্বাচিত হয়েছেন এ কারণে তিনি আমাদের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি এ কথা বলতে পারি না। লোকেরা তাঁকে বলল, আপনি তাঁকে কী বলতে শুনেছেন? উসামাহ [রাদি.] বললেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, ক্বিয়ামাতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন আগুনে পুড়ে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। এ সময় সে ঘুরতে থাকবে যেমন গাধা তার চাকা নিয়ে তার চারপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামবাসীরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, হে অমুক ব্যক্তি! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না আমাদেরকে সৎকাজের আদেশ করতে আর অন্যায়কাজ হতে নিষেধ করতে? সে বলবে, আমি তোমাদেরকে সৎকাজে আদেশ করতাম বটে, কিন্তু আমি তা করতাম না আর আমি তোমাদেরকে অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করতাম, অথচ আমিই তা করতাম।

[বুখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ৩২৬৭; মুসলিম ৫৩/৭ হাঃ ২৯৮৯]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩/৮. কারো পাপ প্রকাশ করা নিষিদ্ধ।

১৮৮৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলতে শুনেছি যে, আমার সকল উম্মাত মাফ পাবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়ই ধৃষ্টতা যে, কোন ব্যক্তি রাতে অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে ভোর হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এমন এমন কর্ম করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত অতিবাহিত করল যে, আল্লাহ তার কর্ম গোপন রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহ্‌র পর্দা খুলে ফেলল

। [বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৬০ হাদীস নং ৬০৬৯; মুসলিম ৫৩/৮, হাঃ ২৯৯০]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩/৯. হাঁচি দিলে আলহামদুলিল্লাহ বলা এবং হাই তোলার অপছন্দনীয়তা।

১৮৮৪. আনাস ইবনু মালিক [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একদিন নাবী [সাঃআঃ] -এর সামনে দু ব্যক্তি হাঁচি দিল। তখন নাবী [সাঃআঃ] একজনের জবাব দিলেন। অপরজনের জবাব দিলেন না। তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃএই ব্যক্তি আলহামদুলিল্লাহ বলেছে। আর ঐ ব্যক্তি আলহামদুলিল্লাহ বলেনি।

[তাই হাঁচির জবাব দেয়া হয়নি] [বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ১২৩ হাদীস নং ৬২২১; মুসলিম ৫৩/৯, হাঃ ২৯৯১]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৮৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, হাই তোলা শয়তানের পক্ষ হতে হয়ে থাকে। কাজেই তোমাদের কারো যখন হাই আসবে তখন যথাসম্ভব তা রোধ করবে।

[বুখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৩২৮৯; মুসলিম ৫৩/৯ হাঃ ২৯৯৪]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩/১১. ইঁদুর সম্পর্কে এবং তার রূপ পরিবর্তিত হয়েছে।

১৮৮৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, বনী ইসরাঈলের একদল লোক নিখোঁজ হয়েছিল। কেউ জানে না তাদের কী হলো আর আমি তাদেরকে ইঁদুর বলেই মনে করি। কেননা তাদের সামনে যখন উটের দুধ রাখা হয়, তারা তা পান করে না, আর তাদের সামনে ছাগী দুগ্ধ রাখা হয় তারা তা পান করে [আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] বলেন] আমি এ হাদীসটি কাবের নিকট বললাম, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন? আপনি কি এটা নাবী [সাঃআঃ]-কে বলতে শুনেছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি কয়েকবার আমাকে একথাটি জিজ্ঞেস করলেন। তখন আমি বললাম, আমি কি তাওরাত কিতাব পড়েছি?

[বুখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ৩৩০৫; মুসলিম ৫৩/১১ হাঃ ২৯৯৭]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩/১২. একই খালে মুমিন দুবার দংশিত হয় না।

১৮৮৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রকৃত মুমিন একই গর্ত থেকে দুবার দংশিত হয় না।

[বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৮৩ হাদীস নং ৬১৩৩; মুসলিম ৫৩/১২, হাঃ ২৯৯৮]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩/১৪. কারো এত বেশি প্রশংসা করা নিষিদ্ধ যাতে প্রশংসার কারণে তার নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

১৮৮৮. আবু বাকর [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনে এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির প্রশংসা করল। তখন রসূল [সাঃআঃ] বললেন, তোমার জন্য আফসোস! তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে, তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে। তিনি এ কথা কয়েকবার বললেন, অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের কেউ যদি তার ভাইয়ের প্রশংসা করতেই চায় তাহলে তার বলা উচিত, অমুককে আমি এরূপ মনে করি, তবে আল্লাহই তার সম্পর্কে অধিক জানেন। আর আল্লাহর প্রতি সোপর্দ না করে আমি কারো সাফাই পেশ করি না। তার সম্পর্কে ভালো কিছু জানা থাকলে বলবে, আমি তাকে এরূপ এরূপ মনে করি।

[বুখারী পর্ব ৫২ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ২৬৬২; মুসলিম ৫৩/১৩ হাঃ ৩০০০]. সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৮৯. আবু মূসা [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে অপর এক ব্যক্তির প্রশংসা করতে শুনে বললেন, তোমরা তাকে ধ্বংস করে দিলে কিংবা [রাবীর সন্দেহ] বলেছেন, তোমরা লোকটির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেললে।

[বুখারী পর্ব ৫২ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ২৬৬৩; মুসলিম ৫৩/১৩ হাঃ ৩০০১]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩/১৫. অধিক বয়স্ককে অগ্রগণ্য করা।

১৮৯০. ইবনু উমার [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আমি [স্বপ্নে] দেখলাম যে, আমি মিসওয়াক করছি। আমার নিকট দু ব্যক্তি এলেন। একজন অপরজন হতে বয়সে বড়। অতঃপর আমি তাদের মধ্যে কনিষ্ঠ ব্যক্তিকে মিসওয়াক দিতে গেলে আমাকে বলা হলো, বড়কে দাও। তখন আমি তাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে দিলাম।

[বুখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ৭৪ হাদীস নং ২৪৬; মুসলিম ৪২/৪, হাঃ ২২৭১]; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩/১৬. কথা বলায় স্পষ্টতা অবলম্বন করা এবং ইলম লিখে রাখার হুকুম।

১৮৯১. আয়িশাহ [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] এমনভাবে কথা বলতেন যে, কোন গণনাকারী গুণতে চাইলে তাঁর কথাগুলি গণনা করতে পারত।

[বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৬৭; মুসলিম ২৪৯৩; সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩/১৯. মাক্কাহ থেকে মদিনায় [নাবী [সাঃআঃ]-এর] হিজরাতের বর্ণনা।

১৮৯২. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আবু বকর [রাদি.] আমার পিতার কাছে আমাদের বাড়িতে আসলেন। তিনি আমার পিতার কাছ হতে একটি হাওদা কিনলেন এবং আমার পিতাকে বললেন, তোমার ছেলে বারাকে আমার সঙ্গে হাওদাটি বয়ে নিয়ে যেতে বল। আমি হাওদাটি বয়ে তাঁর সঙ্গে চললাম। আমার পিতাও ওটার মূল্য নেয়ার জন্য আমাদের সঙ্গী হলেন। আমার পিতা তাঁকে বললেন, হে আবু বকর! দয়া করে আপনি আমাদেরকে বলুন, আপনারা কী করেছিলেন যে রাতে আপনি নাবী [সাঃআঃ] -এর সাথী ছিলেন? তিনি বললেন, হাঁ। অবশ্যই আমরা সারা রাত পথ চলে পরদিন দিন দুপুর অবধি চললাম। যখন রাস্তাঘাট লোকশূন্য হয়ে পড়ল, রাস্তায় কোন মানুষের আনাগোনা ছিল না। হঠাৎ একটি লম্বা ও চওড়া পাথর আমাদের নযরে পড়লো, যার ছায়ায় সূর্যের তাপ প্রবেশ করছিল না। আমরা সেখানে গিয়ে নামলাম। আমি নাবী [সাঃআঃ] -এর জন্য নিজ হাতে একটি জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিলাম, যাতে সেখানে তিনি ঘুমাতে পারেন। আমি ওখানে একটি চামড়ার বিছানা পেতে দিলাম এবং বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]! আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি আপনার নিরাপত্তার জন্য পাহারায় থাকলাম। তিনি শুয়ে পড়লেন। আর আমি চারপাশের অবস্থা দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম, একজন মেষ রাখাল তার মেষপাল নিয়ে পাথরের দিকে ছুটে আসছে। সেও আমাদের মত পাথরের ছায়ায় আশ্রয় নিতে চায়। আমি বললাম, হে যুবক! তুমি কার রাখাল? সে মাদীনাহর কি মাক্কাহর এক লোকের নাম বলল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার মেষপালে কি দুধেল মেষ আছে? সে বলল, হাঁ আছে। আমি বললাম, তুমি কি দুহে দিবে? সে বলল, হাঁ। অতঃপর সে একটি বক্রী ধরে নিয়ে এল। আমি বললাম, এর স্তন ধূলা-বালি, পশম ও ময়লা হতে পরিষ্কার করে নাও। রাবী আবু ইসহাক [রহ.] বলেন, আমি বারাআ [রাদি.]-কে দেখলাম এক হাত অন্য হাতের উপর রেখে ঝাড়ছেন। অতঃপর ঐ যুবক একটি কাঠের বাটিতে কিছু দুধ দোহন করল। আমার সঙ্গেও একটি চামড়ার পাত্র ছিল। আমি নাবী [সাঃআঃ] এর উযূর পানি ও পান করার পানি রাখার জন্য নিয়েছিলাম। আমি দুধ নিয়ে নাবী [সাঃআঃ] -এর নিকট আসলাম। তাঁকে জাগানো ভাল মনে করলাম না। কিছুক্ষণ পর তিনি জেগে উঠলেন। আমি দুধ নিয়ে হাযির হলাম। আমি দুধের মধ্যে কিছু পানি ঢেলেছিলাম তাতে দুধের নীচ পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে গেল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আপনি দুধ পান করুন। তিনি পান করলেন, আমি তাতে সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] বললেন, এখন কি আমাদের যাত্রা শুরুর সময় হয়নি? আমি বললাম, হাঁ হয়েছে। পুনরায় শুরু হল আমাদের সফর। ততক্ষণে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। সুরাকা ইবনি মালিক আমাদের পিছন নিয়েছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমাদের অনুসরণে কে যেন আসছে। তিনি বললেন, চিন্তা করোনা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।

তখন নাবী [সাঃআঃ] তাঁর বিরুদ্ধে দুআ করলেন। তৎক্ষণাৎ আরোহীসহ ঘোড়া তার পেট পর্যন্ত মাটিতে দেবে গেল শক্ত মাটিতে। রাবী যুহায়র এ শব্দটি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন আমার ধারণা এ রকম শব্দ বলেছিলেন। সুরাকা বলল, আমার বিশ্বাস আপনারা আমার বিরুদ্ধে দুআ করেছেন। আমার জন্য আপনারা দুআ করে দিন। আল্লাহ্‌র কসম! আপনাদের খোঁজকারীদেরকে আমি ফিরিয়ে নিয়ে যাব। নাবী [সাঃআঃ] তার জন্য দুআ করলেন। সে বেঁচে গেল। ফিরে যাবার পথে যার সঙ্গে তার দেখা হত, সে বলত আমি সব দেখে এসেছি। যাকেই পেয়েছে, ফিরিয়ে দিয়েছে। আবু বাকর [রাদি.] বলেন, সে আমাদের সঙ্গে করা অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে। ১৮৯২.

[বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৬১৫; মুসলিম ৩৬/১০ হাঃ ২০০৯], সংসারের প্রতি অনাসক্তি – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

One response to “সংসারের প্রতি অনাসক্তি ও অন্তরের কোমলতা”

Leave a Reply