জান্নাত সম্পর্কে হাদিস । তার বিবরণ, আনন্দ ও তার বাসিন্দা

জান্নাত সম্পর্কে হাদিস । তার বিবরণ, আনন্দ ও তার বাসিন্দা

জান্নাত সম্পর্কে হাদিস । তার বিবরণ, আনন্দ ও তার বাসিন্দা ,এই পর্বের হাদীস =৩২ টি (১৭৯৭-১৮২৮) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-৫১ঃ জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা

০/০. জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা
৫১/১. জান্নাতে এক বৃক্ষ আছে যার ছায়ায় কোন আরোহী শত বছর চললেও তা অতিক্রম করিতে পারবে না।
৫১/২. জান্নাতবাসীদের উপর আল্লাহ্‌র রেজামন্দি ও সন্তুষ্টি এবং তিনি কখনও কোনদিন তাহাদের উপর রাগান্বিত হইবেন না।
৫১/৩. জান্নাতবাসীরা বিশেষ বাসস্থানের লোকেদের সেভাবে দেখবে যেমন তোমরা আকাশে তারকা দেখে থাক।
৫১/৬. যে দলটি জান্নাতে প্রথমে প্রবেশ করিবে তারা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় জ্বলজ্বল করিবে, তাহাদের ও তাহাদের স্ত্রীদের বর্ণনা।
৫১/৯. জান্নাতের তাঁবুসমূহ এবং ওগুলোতে বসবাসরতা বিশ্বাসীদের স্ত্রীগণ।
৫১/১১. কতক লোক জান্নাতে প্রবেশ করিবে যাদের অন্তর হইবে পাখীর অন্তরের মত।
৫১/১২. জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ, তার গভীরতা এবং এর ভিতরে শাস্তি।
৫১/১৩. অত্যাচারী ও উদ্ধতরা জাহান্নামের আগুনে এবং দুর্বল ও বিনীতরা জান্নাতে প্রবেশ করিবে।
৫১/১৪. পৃথিবীর ধ্বংস এবং পুনরুত্থান দিবসে মানুষের একত্র সমাবেশ।
৫১/১৫. পুনরুত্থান দিবসের বর্ণনা, আল্লাহ যেন আমাদেরকে তার ভয়-ভীতি থেকে রক্ষা করেন।
৫১/১৭. মৃত ব্যক্তিকে জান্নাতে বা জাহান্নামে তার স্থান দেখানো হয়, ক্ববরের শাস্তির প্রমাণ এবং তাত্থেকে আল্লাহ্‌র আশ্রয় প্রার্থনা।
৫১/১৮. [পুনরুত্থান দিবসে] হিসাবের প্রমাণ।

০/০. জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা

১৭৯৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জাহান্নাম প্রবৃত্তি দিয়ে বেষ্টিত। আর জান্নাত বেষ্টিত দুঃখ-ক্লেশ দিয়ে।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ৬৪৮৭; মুসলিম পর্ব ৫১ হাঃ ২৮২২, ২৮২৩] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৯৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরি করে রেখেছি, যা কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করিতে পার,

فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنِ

“কেউ জানে না, তাহাদের জন্য তাহাদের চোখ শীতলকারী কী জিনিস লুকানো আছে” [সূরাহ সাজদাহ ৩২/১৩]।

[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩২৪৪; মুসলিম ৫১ হাঃ ২৮২৪]জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১/১. জান্নাতে এক বৃক্ষ আছে যার ছায়ায় কোন আরোহী শত বছর চললেও তা অতিক্রম করিতে পারবে না।

১৭৯৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় একজন সওয়ারী একশত বছর চলতে থাকিবে, তবুও সে এ ছায়া অতিক্রম করিতে পারবে না।

{বোখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৪৮৮১; মুসলিম ৫১ অধ্যায় ১ হাঃ ২৮২৬] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮০০. সাহ্‌ল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ হইবে যার ছায়ার মাঝে একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করিতে পারবে, তবুও বৃক্ষের ছায়াকে অতিক্রম করিতে পারবে না।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫১ হাদীস নং ৬৫৫২; মুসলিম ৫১ অধ্যায় ১ হাঃ ২৮৫২] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮০১. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নিশ্চয়ই জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ হইবে যার ছায়ায় উৎকৃষ্ট, উৎফুল্ল ও দ্রুতগামী ঘোড়ার একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করিতে পারবে। তবুও তার ছায়া অতিক্রম করিতে পারবে না।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫১ হাদীস নং ৬৫৫৩; মুসলিম ৫১/১, হাঃ ২৮২৭, ২৮২৮] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১/২. জান্নাতবাসীদের উপর আল্লাহ্‌র রেজামন্দি ও সন্তুষ্টি এবং তিনি কখনও কোনদিন তাহাদের উপর রাগান্বিত হইবেন না।

১৮০২. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা জান্নাতীগণকে সম্বোধন করে বলবেন, হে জান্নাতীগণ! তারা জবাবে বলবে, হে আমাদের প্রভু! হাযির, আমরা আপনার সমীপে হাযির। এরপর আল্লাহ্ তাআলা বলবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা বলবে, আপনি আমাদেরকে এমন বস্তু দান করিয়াছেন যা আপনার মাখলুকাতের ভিতর থেকে কাউকেই দান করেননি। অতএব আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না? তখন তিনি বলবেন, আমি এর চেয়েও উত্তম কিছু তোমাদেরকে দান করব। তারা বলবে, প্রভু হে! এর চেয়েও উত্তম সে কোন্ বস্তু? আল্লাহ্ তাআলা বলবেন, তোমাদের ওপর আমি আমার সন্তুষ্টি অবধারিত করব। এরপর আমি আর কখনও তোমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হব না।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫১ হাদীস নং ৬৫৪৯; মুসলিম ৫১/২, হাঃ ২৮২৯] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১/৩. জান্নাতবাসীরা বিশেষ বাসস্থানের লোকেদের সেভাবে দেখবে যেমন তোমরা আকাশে তারকা দেখে থাক।

১৮০৩. সাহল বিন সাদ[রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন জান্নাতীরা জান্নাতে বালাখানাগুলো দেখিতে পাবে,যেমন তোমরা আকাশে তারকাগুলো দেখিতে পাও।[সানাদে অন্তর্ভুক্ত] রাবী আবদুল আযীয বলেন, আমার পিতা বলেছেন যে, আমি এ হাদীসটি নুমান ইবনি আবু আইয়্যাশকে বলেছি। অতঃপর তিনি বলেছেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অবশ্যই আবু সাঈদকে এ হাদীস বর্ণনা করিতে আমি শুনিয়াছি এবং এতে তিনি এটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন “যেরূপ অস্তমান তারকাকে আকাশের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে তোমরা দেখে থাক।”

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫১ হাদীস নং ৬৫৫৬; মুসলিম ৫১/৩, হাঃ ২৮৩০] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮০৪. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, অবশ্যই জান্নাতবাসীরা তাহাদের উপরের বালাখানার বাসিন্দাদের এমনভাবে দেখিতে পাবে, যেমন তোমরা আকাশের পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে উজ্জ্বল দীপ্তিমান নক্ষত্র দেখিতে পাও। এটা হইবে তাহাদের মধ্যে মর্যাদার পার্থক্যের কারণে। সহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! এ তো নাবীগনেরজায়গা। তাহাদের ব্যতীত অন্যরা সেখানে পৌঁছতে পারবে না। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যেসব লোক আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনবে এবং রসূলগণকে সত্য বলে স্বীকার করিবে।

[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩২৫৬; মুসলিম ৫১/৩ হাঃ ২৮৩১] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১/৬. যে দলটি জান্নাতে প্রথমে প্রবেশ করিবে তারা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় জ্বলজ্বল করিবে, তাহাদের ও তাহাদের স্ত্রীদের বর্ণনা।

১৮০৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করিবে তাহাদের মুখমণ্ডল হইবে পূর্ণিমার রাতের চন্দ্রের মত উজ্জ্বল। অতঃপর যে দল তাহাদের অনুগামী হইবে তাহাদের মুখমণ্ডল হইবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার ন্যায়। তারা পেশাব করিবে না, পায়খানা করিবে না। তাহাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হইবে না এবং তাহাদের নাক হইতে শ্লেষ্মাও বের হইবে না। তাহাদের চিরুণী হইবে স্বর্ণের তৈরী। তাহাদের ঘাম হইবে মিসকের মত সুগন্ধযুক্ত। তাহাদের ধনুচি হইবে সুগন্ধযুক্ত চন্দন কাষ্ঠের। বড় চক্ষু বিশিষ্ট হুরগণ হইবেন তাহাদের স্ত্রী। তাহাদের সকলের দেহের গঠন হইবে একই। তারা সবাই তাহাদের আদি পিতা আদাম [আ.]-এর আকৃতিতে হইবেন। উচ্চতায় তাহাদের দেহের দৈর্ঘ্য হইবে ষাট হাত।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩৩২৭; মুসলিমঃ-২৮২৪, জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১/৯. জান্নাতের তাঁবুসমূহ এবং ওগুলোতে বসবাসরতা বিশ্বাসীদের স্ত্রীগণ।

১৮০৬, আবু মূসা আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, গুণসম্পন্ন মোতির তাঁবু থাকিবে যার উচ্চতা ত্রিশ মাইল। এর প্রতিটি কোণে মুমিনদের জন্য এমন স্ত্রী থাকিবে যাদেরকে অন্যরা কখনো দেখেনি।

[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩২৪৩; মুসলিম ৫১/৯ হাঃ ২৮৩৮] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১/১১. কতক লোক জান্নাতে প্রবেশ করিবে যাদের অন্তর হইবে পাখীর অন্তরের মত।

১৮০৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, আল্লাহ তাআলা আদাম [আঃ]-কে সৃষ্টি করিলেন। তাহাঁর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। অতঃপর তিনি [আল্লাহ] তাঁকে [আদমকে] বলিলেন, যাও, ঐ ফেরেশতা দলের প্রতি সালাম কর এবং তাঁরা তোমার সালামের জওয়াব কিভাবে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কারণ এটাই হইতে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। অতঃপর আদাম [আঃ] [ফেরেশতাহাদের] বলিলেন,

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ

“আসসালামু আলাইকুম”। ফেরেশতামন্ডলী তার উত্তরে

السَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ

“আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলিলেন। ফেরেশতারা সালামের জওয়াবে “ওয়া রহমাতুল্লাহ” শব্দটি বাড়িয়ে বলিলেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা আদাম [আঃ]-এর আকৃতি বিশিষ্ট হইবেন। তবে আদাম সন্তানের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপে এসেছে।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩৩২৬; মুসলিম ৫১/১১ হাঃ ২৮৪১] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১/১২. জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ, তার গভীরতা এবং এর ভিতরে শাস্তি।

১৮০৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের একভাগ মাত্র। বলা হল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য দুনিয়ার আগুনই তো যথেষ্ট ছিল। তিনি বলিলেন, দুনিয়ার আগুনের উপর জাহান্নামের আগুনের তাপ আরো উনসত্তর গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, প্রত্যেক অংশে তার সমপরিমাণ উত্তাপ রয়েছে।

[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ৩২৬৫; মুসলিম ২৮৪৩ জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১/১৩. অত্যাচারী ও উদ্ধতরা জাহান্নামের আগুনে এবং দুর্বল ও বিনীতরা জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

১৮০৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর বিতর্ক করে। জাহান্নাম বলে দাম্ভিক ও পরাক্রমশালীদের দ্বারা আমাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জান্নাত বলে, আমার কী হলো? আমাতে কেবল মাত্র দুর্বল এবং নিরীহ ব্যক্তিরাই প্রবেশ করছে। তখন আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তাআলা জান্নাতকে বলবেন, তুমি আমার রহমত। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছে আমি অনুগ্রহ করব। আর তিনি জাহান্নামকে বলবেন, তুমি হলে আযাব। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছে শাস্তি দেব। জান্নাত ও জাহান্নাম প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে পূর্ণতা। তবে জাহান্নাম পূর্ণ হইবে না যতক্ষণ না তিনি তাহাঁর পা তাতে রাখবেন। তখন সে বলবে, বাস, বাস, বাস। তখন জাহান্নাম পূর্ণ হয়ে যাবে এবং এর এক অংশ অপর অংশের সঙ্গে মুড়িয়ে দেয়া হইবে। আল্লাহ্ তাহাঁর সৃষ্টির কারো প্রতি যুলম করবেন না। অবশ্য আল্লাহ্ তাআলা জান্নাতের জন্য অন্য মাখলূক সৃষ্টি করবেন।

[বোখারী পর্ব ৬৫ হাদীস নং ৪৮৫০; মুসলিম ৫১/১৩, হাঃ ২৮৪৬] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮১০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জাহান্নাম সর্বদাই বলিতে থাকিবে আরও কি আছে? এমন কি রাব্বুল ইযযত তাতে তাহাঁর পা রাখবেন। জাহান্নাম বলবে, বাস, বাস তোমার ইযযতের কসম! সেদিন তার একাংশ অপরাংশের সঙ্গে মিলিত হয়ে যাবে।

[বোখারী পর্ব ৮৩ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৬৬৬১; মুসলিম ৫১/১৩, হাঃ ২৮৪৮] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮১১. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেন, ক্বিয়ামাত দিবসে মৃত্যুকে একটি ধূসর রঙের মেষের আকারে আনা হইবে। তখন একজন সম্বোধনকারী ডাক দিয়ে বলবেন, হে জান্নাতবাসী! তখন তাঁরা ঘাড় মাথা উঁচু করে দেখিতে থাকিবে। সম্বোধনকারী বলবে, তোমরা কি একে চিন? তারা বলবেন হ্যাঁ, এ হল মৃত্যু। কেননা সকলেই তাকে দেখেছে। তারপর সম্বোধনকারী আবার ডেকে বলবেন, হে জাহান্নামবাসী! জাহান্নামীরা মাথা উঁচু করে দেখিতে থাকিবে, তখন সম্বোধনকারী বলবে তোমরা কি একে চিন? তারা বলবে, হ্যাঁ, এ তো মৃত্যু। কেননা তারা সকলেই তাকে দেখেছে। তারপর [সেটি] যবেহ করা হইবে। আর ঘোষক বলবেন, হে জান্নাতবাসী! স্থায়ীভাবে [এখানে] থাক। তোমাদের আর কোন মৃত্যু নেই। আর হে জাহান্নামবাসী! চিরদিন [এখানে] থাক। তোমাদের আর মৃত্যু নেই। এরপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] পাঠ করিলেন “তাহাদের সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিবস সম্বন্ধে যখন সকল ফয়সালা হয়ে যাবে অথচ এখন তারা গাফিল, তারা অসতর্ক দুনিয়াবাসী-অবিশ্বাসী।”

{বোখারী পর্ব ৬৫ সূরা [১৯] মারইয়াম অধ্যায় ১ হাদীস নং ৪৭৩০; মুসলিম ৫১/১৩, হাঃ ২৮৪৯} জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮১২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন জান্নাতীগণ জান্নাতে আর জাহান্নামীগণ জাহান্নামে চলে যাবে, তখন মৃত্যুকে উপস্থিত করা হইবে, এমন কি জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থানে রাখা হইবে। এরপর তাকে যবহ্ করে দেয়া হইবে এবং একজন ঘোষণাকারী এ মর্মে ঘোষণা দিবে যে, হে জান্নাতীগণ! [এখন আর] কোন মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামীগণ! [এখন আর কোন] মৃত্যু নেই। তখন জান্নাতীগণের আনন্দ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। আর জাহান্নামীদের বিষণ্নতাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫১ হাদীস নং ৬৫৪৮; মুসলিম ৫১/১৪, হাঃ ২৮৫০] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮১৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ কাফিরের দুকাঁধের মধ্যবর্তী স্থানের দূরত্ব একজন দ্রুতগামী অশ্বারোহীর তিন দিনের ভ্রমণের সমান হইবে।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫১ হাদীস নং ৬৫৫১; মুসলিম-২৮৫২, জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮১৪. হারিস ইবনি ওয়াহাব খুযাঈ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতী লোকদের পরিচয় বলব না? তারা দুর্বল এবং অসহায়; কিন্তু তাঁরা যদি কোন ব্যাপারে আল্লাহ্‌র নামে কসম করে বসেন, তাহলে তা পূরণ করে দেন। আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামী লোকদের পরিচয় বলব না? তারা রূঢ় স্বভাব, অধিক মোটা এবং অহংকারী তারাই জাহান্নামী।

{বোখারী পর্ব ৬৫ সূরা [৬৮] নূন ওয়াল ক্বলাম অধ্যায় ১ হাদীস নং ৪৯১৮; মুসলিম ৫১/১৩, হাঃ ২৮৫৩} জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮১৫. আবদুল্লাহ্ ইবনি যামআ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে খুতবাহ দিতে শুনেছেন, খুতবায় তিনি কওমে সামূদের প্রতি প্রেরিত উষ্ট্রী ও তার পা কাটার কথা উল্লেখ করিলেন। তারপর রসূল [সাঃআঃ] إِذْ انْبَعَ أَشْقَاهَا এর ব্যাখ্যায় বলিলেন, ঐ উষ্ট্রীটিকে হত্যা করার জন্য এক হতভাগ্য শক্তিশালী ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠল যে সে সমাজের মধ্যে আবু যামআর মত প্রভাবশালী ও অত্যন্ত শক্তিধর ছিল। এ খুতবায় তিনি মেয়েদের সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যে তার স্ত্রীকে ক্রীতদাসের মত মারপিট করে; কিন্তু ঐ দিনের শেষেই সে আবার তার সঙ্গে এক বিছানায় মিলিত হয়। তারপর তিনি বায়ু নিঃসরণের পর হাসি দেয়া সম্পর্কে বলিলেন, তোমাদের কেউ কেউ হাসে সে কাজটির জন্য যে কাজটি সে নিজেও করে।

{বোখারী পর্ব ৬৫ সূরা [৯১] আশ্শাম্স্ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৪৯৪২; মুসলিম ৫১/১৩, হাঃ ২৮৫৫} জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮১৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, আমি আম্‌র ইবনি আমির খুযআইকে তার বহির্গত নাড়ি-ভুঁড়ি নিয়ে জাহান্নামের আগুনে চলাফেলা করিতে দেখেছি। সেই প্রথম ব্যক্তি যে সাইবা উৎসর্গ করার প্রথা প্রচলন করে।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ৩৫২১; মুসলিম ২৮৫৬, জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১/১৪. পৃথিবীর ধ্বংস এবং পুনরুত্থান দিবসে মানুষের একত্র সমাবেশ।

১৮১৭. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মানুষকে হাশরের ময়দানে উঠানো হইবে খালি পা, উলঙ্গ ও খাতনাবিহীন অবস্থায়। আয়েশা [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]! তখন তো পুরুষ ও নারীগণ একে অপরের প্রতি দৃষ্টিপাত করিবে। তিনি বললেনঃএরূপ ইচ্ছে করার চেয়েও কঠিন হইবে তখনকার অবস্থা।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৪৫ হাদীস নং ৬৫২৭; মুসলিম ৫১/১৪, হাঃ ২৮৫৯] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮১৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আমাদের মাঝে খুতবা দিতে দাঁড়ালেন। এরপর বললেনঃনিশ্চয়ই তোমাদের হাশর করা হইবে খালি পা, উলঙ্গ ও খাতনাবিহীন অবস্থায়। আয়াতঃ“যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছি তেমনিভাবে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করব।” আর ক্বিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম ইব্রাহীম [আ.]-কে পোশাক পরিধান করানো হইবে। আমার উম্মাত থেকে কিছু লোককে আনা হইবে আর তাহাদেরকে আনা হইবে বামওয়ালাদের [বাম হাতে আমালনামা প্রাপ্ত] ভিতর থেকে। তখন আমি বলব, হে প্রভু! এরা তো আমার উম্মাত। এরপর আল্লাহ্ তাআলা বলবেনঃনিশ্চয়ই তুমি জান না তোমার পরে এরা কী করেছে। তখন আমি আরয করব, যেমন আরয করেছে নেক্কার বান্দা অর্থাৎ ঈসা [আ.] [আরবী] পর্যন্ত। অর্থাৎ যতদিন আমি ছিলাম আমি তাহাদের ওপর সাক্ষী ছিলাম” পর্যন্ত। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেনঃ এরপর জবাব দেয়া হইবে। এরা সর্বদাই দ্বীন থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শনের ওপর বিদ্যমান ছিল।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৪৫ হাদীস নং ৬৫২৬; মুসলিম ৫১/১৪, হাঃ ২৮৬০] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮১৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ক্বিয়ামাতের দিন মানুষের হাশর হইবে তিন প্রকারে। একদল তো হইবে আল্লাহ্ তাআলার প্রতি আশিক ও দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত বান্দাদের। দ্বিতীয় দল হইবে দুজন, তিনজন, চারজন বা দশজন এক উটের ওপর আরোহণকারী। আর অবশিষ্ট যারা থাকিবে অগ্নি তাহাদেরকে একত্রিত করে নেবে। যেখানে তারা থামবে আগুনও তাহাদের সঙ্গে সেখানে থামবে। তারা যেখানে রাত্রি যাপন করিবে আগুনও সেখানে তাহাদের সঙ্গে রাত্রি যাপন করিবে। তারা যেখানে সকাল করিবে আগুনও সেখানে তাহাদের সঙ্গে সকাল করিবে। যেখানে তাহাদের সন্ধ্যা হইবে আগুনেরও সেখানে সন্ধ্যা হইবে।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৪৫ হাদীস নং ৬৫২২; মুসলিম ৫১/১৪, হাঃ ২৮৬১] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১/১৫. পুনরুত্থান দিবসের বর্ণনা, আল্লাহ যেন আমাদেরকে তার ভয়-ভীতি থেকে রক্ষা করেন।

১৮২০. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

“যেদিন সব মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে।” [সূ-রাহ মুতাফ্ফিফীন ৮৩/৬] নাবী [সাঃআঃ] এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তির কানের লতা পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে।

{বোখারী পর্ব ৬৫ সূরা [৮৩] ওয়াইলুল লিল মুতাফ্ফিফীন অধ্যায় হাদীস নং ৪৯৩৮; মুসলিম ৫১/১৫, হাঃ ২৮৬২} জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮২১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন মানুষের ঘাম হইবে। এমনকি তাহাদের ঘাম যমীনে সত্তর হাত ছাড়িয়ে যাবে এবং তাহাদের মুখ পর্যন্ত ঘামে নিমজ্জিত হইবে; এমনকি কান পর্যন্ত।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৪৭ হাদীস নং ৬৫৩২; মুসলিম ৫১/১৫, হাঃ ২৮৬৩] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১/১৭. মৃত ব্যক্তিকে জান্নাতে বা জাহান্নামে তার স্থান দেখানো হয়, ক্ববরের শাস্তির প্রমাণ এবং তাত্থেকে আল্লাহ্‌র আশ্রয় প্রার্থনা।

১৮২২. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার অবস্থান স্থল উপস্থাপন করা হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তবে [অবস্থান স্থল] জান্নাতীদের মধ্যে দেখানো হয়। আর সে জাহান্নামী হলে, তাকে জাহান্নামীদের [অবস্থান স্থল দেখানো হয়] আর তাকে বলা হয়, এ হচ্ছে তোমার অবস্থান স্থল, ক্বিয়ামাত দিবসে আল্লাহ্ তোমাকে পুনরুত্থিত করা অবধি [এভাবে দেখানো হয়]।

[বোখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৮৯ হাদীস নং ১৩৭৯; মুসলিম ৫১/১৭, হাঃ ২৬৮৮] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮২৩. আবু আইয়ুব আনসারী [রা.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, [একবার] সূর্য ডুবে যাওয়ার পর নাবী [সাঃআঃ] বের হলেন। তখন তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে বলেনঃ ইয়াহূদীদের ক্ববরে আযাব দেয়া হচ্ছে।

[বোখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৮৭ হাদীস নং ১৩৭৫; মুসলিম ৫১/১৭, হাঃ ২৮৬৯] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮২৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার ক্ববরে রাখা হয় এবং তার সাথীরা এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে, সে তখনও তাহাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়।* এ সময় দুজন ফেরেশতা তার নিকট এসে তাকে বসান এবং তাঁরা বলেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মদ [সাঃআঃ] সম্পর্কে তুমি কী বলিতে? তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহ্‌র বান্দা এবং তাহাঁর রসূল । তখন তাঁকে বলা হইবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থান স্থলটির দিকে নযর কর, আল্লাহ্ তোমাকে তার বদলে জান্নাতের একটি অবস্থান স্থল দান করিয়াছেন। তখন সে দুটি স্থলের দিকেই দৃষ্টি করে দেখবে।

[বোখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৮৬ হাদীস নং ১৩৭৪; মুসলিম ২৮৭০] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮২৫. বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুমিন ব্যক্তিকে যখন তার ক্ববরে বসানো হয় তখন উপস্থিত করা হয় ফেরেশতাগণকে। অতঃপর [ফেরেশতাগণের প্রশ্নের উত্তরে] সে সাক্ষ্য প্রদান করে যে, “আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই আর মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আল্লাহ্‌র রসূল  ।

يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا بَالْقَوْلِ الثَّابِتِ

” এটা আল্লাহ্‌র কালামঃ[যার অর্থ] “আল্লাহ্ পার্থিব জীবনে ও আখিরাতে অবিচল রাখবেন সে সকল লোককে যারা ঈমান এনেছে, প্রতিষ্ঠিত বাণীতে” [ইব্রাহীম ২৭]।

[বোখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৮৬ হাদীস নং ১৩৬৯; মুসলিম ২৮৭১] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮২৬. আবু ত্বলহা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

বাদরের দিন আল্লাহ্‌র নাবী [সাঃআঃ]-এর নির্দেশে চব্বিশজন কুরাইশ সর্দারের লাশ বাদর প্রান্তরের একটি নোংরা আবর্জনাপূর্ণ কূপে নিক্ষেপ করা হল। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কোন দলের বিরুদ্ধে জয় লাভ করলে সে স্থানের পার্শ্বে তিন দিন অবস্থান করিতেন। বাদর প্রান্তরে অবস্থানের পর তৃতীয় দিনে তিনি তাহাঁর সাওয়ারী প্রস্তুত করার আদেশ দিলেন, সাওয়ারীর জিন শক্ত করে বাঁধা হল। এরপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] পদব্রজে অগ্রসর হলে সহাবাগণও তাহাঁর পেছনে পেছনে চললেন। তাঁরা বলেন, আমরা ভাবছিলাম, কোন প্রয়োজনে তিনি কোথাও যাচ্ছেন। অতঃপর তিনি ঐ কূপের কিনারে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং কূপে নিক্ষিপ্ত ঐ নিহত ব্যক্তিদের নাম ও তাহাদের পিতার নাম ধরে ডাকতে শুরু করিলেন, হে অমুকের পুত্র অমুক, হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমরা কি এখন অনুভব করিতে পারছ যে, আল্লাহ্ ও তাহাঁর রসূলের আনুগত্য তোমাদের জন্য পরম খুশীর বিষয় ছিল? আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন আমরা তো তা সত্য পেয়েছি, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তোমরাও তা সত্য পেয়েছ কি? বর্ণনাকারী বলেন, উমার [রাদি.] বলিলেন, হে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]! আপনি আত্মাহীন দেহগুলোর সঙ্গে কী কথা বলছেন? নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, ঐ মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, আমি যা বলছি তা তাহাদের চেয়ে তোমরা অধিক শুনতে পাচ্ছ না।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩৯৭৬; মুসলিম ৫১/১৭, হাঃ ২৮৭৫] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১/১৮. [পুনরুত্থান দিবসে] হিসাবের প্রমাণ।

১৮২৭. ইবনি আবু মুলায়কাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] -এর স্ত্রী আয়িশা [রাদি.] কোন কথা শুনে না বুঝলে বার বার প্রশ্ন করিতেন। একদা নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন,

فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا

“[কিয়ামতের দিন] যার কাছ থেকে হিসেব নেয়া হইবে তাকে শাস্তি দেয়া হইবে।” আয়েশা [রাদি.] বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ্ তাআলা কি ইরশাদ করেননি, [তার হিসাব-নিকাশ সহজেই নেয়া হইবে] [সূরাহ ইনশিক্বাক ৮৪/৮]। তখন তিনি বললেনঃ তা কেবল হিসেব প্রকাশ করা। কিন্তু যার হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে নেয়া হইবে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হইবে।

[বোখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ৩৬ হাদীস নং ১০৩; মুসলিম ৫১/১৮, হাঃ ২৮৭৬] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮২৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন আল্লাহ্ তাআলা কোন কাওমের উপর আযাব অবতীর্ণ করেন তখন সেখানে বসবাসরত সকলের উপরই সেই আযাব নিপতিত হয়। অবশ্য পরে [ক্বিয়ামাতের দিন] প্রত্যেককে তার আমাল অনুসারে উঠানো হইবে।

[বোখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ১৯ হাদীস নং ৭১০৮; মুসলিম ৫১/১৯, হাঃ ২৮৭৯] জান্নাত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

Comments

One response to “জান্নাত সম্পর্কে হাদিস । তার বিবরণ, আনন্দ ও তার বাসিন্দা”

Leave a Reply