ফাযায়েল হাদিস । নবী ও রাসুলদের বর্ণনা

ফাযায়েল হাদিস । নবী ও রাসুলদের বর্ণনা

ফাযায়েল হাদিস । নবী ও রাসুলদের বর্ণনা >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-৪৩ঃ ফাযায়েল

৪৩/৩. নাবী [সাঃআঃ]-এর মুজিযাসমূহ।
৪৩/৪. আল্লাহ তাআলার উপর তাহাঁর ভরসা এবং মানুষের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তাআলার তাঁকে হিফাযাত করণ।
৪৩/৫. “হিদায়াত ও ইল্ম” যা নিয়ে মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-কে পাঠানো হয়েছে তার দৃষ্টান্তের বর্ণনা।
৪৩/৬. উম্মাতের উপর মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর দয়াদ্রতা ও যা তাহাদের ক্ষতি সাধন করিবে তা থেকে স্পষ্ট সতর্কীকরণ।
৪৩/৭. তাহাঁর [সাঃআঃ] সর্বশেষ নাবী হওয়ার বর্ণনা।
৪৩/৯. নাবী [সাঃআঃ]-এর জন্য “হাওজ” এর প্রমাণ ও তার বৈশিষ্ট্য।
৪৩/১০. উহূদের যুদ্ধে নাবী [সাঃআঃ]-এর পক্ষে জিব্‌রীল ও মীকাঈল [আ.]-এর যুদ্ধ করার বর্ণনা।
৪৩/১১. নাবী [সাঃআঃ]-এর বীরত্ব ও যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালনের বর্ণনা।
৪৩/১২. নাবী [সাঃআঃ] রহমতের বায়ু অপেক্ষা মানুষদের মধ্যে অধিক দানশীল ছিলেন।
৪৩/১৩. রসূল [সাঃআঃ] ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বাপেক্ষা উত্তম চরিত্রের অধিকারী।
৪৩/১৪. রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট কোন কিছু চাওয়া হলে তিনি কখনও না বলেননি এবং তাহাঁর অত্যধিক দানের বর্ণনা।
৪৩/১৫. রসূল [সাঃআঃ]-এর শিশু ও অনাথদের প্রতি অত্যধিক দয়া এবং তাহাঁর বিনয় ও অন্যান্য সদ্ গুণাবলী।
৪৩/১৬. নাবী [সাঃআঃ] ছিলেন অত্যন্ত লাজুক স্বভাবের।
৪৩/১৮. নাবী [সাঃআঃ]-এর নারীদের প্রতি করুণা এবং উটের আরোহী মহিলা হলে উট চালককে ধীরে উট চালনার জন্য নাবী [সাঃআঃ]-এর নির্দেশ দান।
৪৩/২০. নাবী [সাঃআঃ]-এর পাপকর্ম থেকে দূরে থাকা, বৈধ কাজের মধ্যে সহজটিকে গ্রহণ করা এবং আল্লাহ তাআলার জন্য প্রতিশোধ নেয়া যখন তাহাঁর [আল্লাহ্‌র] হুকুমের অমর্যাদা করা হয়।
৪৩/২১. নাবী [সাঃআঃ]-এর সুঘ্রাণ, তাহাঁর কোমলতা ও তাহাঁর স্পর্শের কল্যাণময়তা।
৪৩/২২. নাবী [সাঃআঃ]-এর ঘামের সুগন্ধি এবং তদ্‌দ্বারা বারাকাত গ্রহণ।
৪৩/২৩. নাবী [সাঃআঃ]-এর উপর ওয়াহী নাযিল হওয়ার এমনকি শীতকালেও ঘর্মাক্ত হয়ে যাওয়া।
৪৩/২৫. নাবী [সাঃআঃ]-এর শারীরিক আকৃতি এবং তিনি মানুষদের মধ্যে সর্বোত্তম অবয়বের অধিকারী ছিলেন।
৪৩/২৬. নাবী [সাঃআঃ]-এর চুলের বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা।
৪৩/২৯. তাহাঁর বার্ধক্যের বর্ণনা।
৪৩/৩১. নাবী [সাঃআঃ]-এর বৈশিষ্ট্য এবং তাঁকে রসূল [সাঃআঃ] হিসাবে প্রেরণ এবং তাহাঁর বয়স।
৪৩/৩২. নাবী [সাঃআঃ]-এর ইন্তিকালের দিন তাহাঁর বয়স কত ছিল।
৪৩/৩৩. নাবী [সাঃআঃ] কত দিন মাক্কাহ ও মাদীনায় অবস্থান করেন?
৪৩/৩৪. নাবী [সাঃআঃ]-এর নামসমূহ।
৪৩/৩৫. নাবী [সাঃআঃ]-এর জ্ঞান ও অধিক আল্লাহ ভীতি।
৪৩/৩৬. নাবী [সাঃআঃ]র অনুসরণের অপরিহার্যতা।
৪৩/৩৭. রসূল [সাঃআঃ]-কে মর্যাদা দেয়া, তাঁকে বিনা প্রয়োজনে এবং বিষয়ের সাথে সম্পর্কহীন ও অবাস্তব ইত্যাদি প্রশ্ন করা পরিত্যাগ করা।
৪৩/৩৯. নাবী [সাঃআঃ]-এর প্রতি তাকানোর ফাযীলাত এবং সেজন্য আকাঙক্ষা করা।
৪৩/৪০. ঈসা [আ.]-এর মর্যাদা।
৪৩/৪১. ইব্রাহীম খালীল [আ.]-এর মর্যাদা।
৪৩/৪২. মূসা [আ.]-এর মর্যাদা।
৪৩/৪৩. ইউনুস [আ.]-এর বর্ণনা এবং নাবী [সাঃআঃ]-এর বাণীঃ আমি ইউনুস বিন মাত্তার চেয়ে উত্তম এ কথা কারো বলা উচিত নয়।
৪৩/৪৪. ইউসুফ [আ.]-এর মর্যাদা।
৪৩/৪৬. খাজির [আ.]-এর মর্যাদা।

৪৩/৩. নাবী [সাঃআঃ]-এর মুজিযাসমূহ।

১৪৬৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে দেখলাম, তখন আসরের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল। আর লোকজন উযূর পানি খুঁজতে লাগল কিন্তু পেল না। তারপর আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকট কিছু পানি আনা হল। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] সে পাত্রে তাহাঁর হাত রাখলেন এবং লোকজনকে তা থেকে উযূ করিতে বলিলেন। আনাস [রাদি.] বলেন, সে সময় আমি দেখলাম, তাহাঁর আঙ্গুলের নীচ থেকে পানি উপচে পড়ছে। এমনকি তাহাদের শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত তার দ্বারা উযূ করিল।

[বোখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ১৬৯; মুসলিম ৪৩/৩, হাঃ ২২৭৯] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৬৯. আবু হুমায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ] এর সাথে তাবূকের যুদ্ধে শরীক হয়েছি। যখন তিনি ওয়াদিউল কূরা নামক স্থানে পৌছলেন, তখন এক মহিলা তার নিজের বাগানে উপস্থিত ছিল। নাবী [সাঃআঃ] সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা এই বাগানের ফলগুলোর পরিমাণ আন্দাজ কর। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] নিজে দশ ওয়াসাক পরিমাণ আন্দাজ করিলেন। অতঃপর মহিলাকে বললেনঃ উৎপন্ন ফলের হিসাব রেখ। আমরা তাবূক পৌছলে, তিনি বললেনঃ সাবধান! আজ রাতে প্রবল ঝড় প্রবাহিত হইবে। কাজেই কেউ যেন দাঁড়িয়ে না থাকে এবং প্রত্যেকেই যেন তার উট বেঁধে রাখে। তখন আমরা নিজ নিজ উট বেঁধে নিলাম। প্রবল ঝড় হইতে লাগল। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেলে ঝড় তাকে ত্বাই নামক পর্বতে নিক্ষেপ করিল। আয়লা নগরীর শাসনকর্তা নাবী [সাঃআঃ] এর জন্যে একটি সাদা খচ্চর এবং একটি চাদর হাদিয়া দিলেন। আর নাবী [সাঃআঃ] তাকে সেখানকার শাসনকর্তারূপে বহাল থাকার লিখিত নির্দেশ দিলেন। [ফেরার পথে] ওয়াদিউল কুরা পৌঁছে সেই মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার বাগানে কি পরিমাণ ফল হয়েছে? মহিলা বলিল, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] এর অনুমিত পরিমাণ দশ ওয়াসাকই হয়েছে। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি দ্রুত মাদীনায় পৌছাতে ইচ্ছুক। তোমরা কেউ আমার সাথে দ্রুত যেতে চাইলে দ্রুত কর।

অতঃপর যখন তিনি মাদীনা দেখিতে পেলেন তখন বললেনঃ এটা ত্বাবাহ [মাদীনার অপর নাম]। এরপর যখন তিনি উহুদ পর্বত দেখিতে পেলেনঃ এই পর্বত আমাদেরকে ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি। আনসারদের সর্বোত্তম গোত্রটি সম্পর্কে আমি তোমাদের খবর দিব কি? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ বনু নাজ্জার গোত্র, অতঃপর বনু আবদুল আশহাল গোত্র, এরপর বনু সাইয়ীদা গোত্র অথবা বনু হারিস ইবনি খাযরাজ গোত্র। আনসারদের সকল গোত্রেই কল্যাণ রয়েছে।

{আবু হুমায়দ [রাদি.] বলেন,} আমরা সাদ ইবনি উবাদাহ [রাদি.]-এর নিকট গেলাম। তখন আবু উসায়দ [রাদি.] বলেন, আপনি কি শুনেননি যে, নাবী [সাঃআঃ] আনসারদের পরস্পরের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করিতে গিয়ে আমাদেরকে সকলের শেষ পর্যায়ে স্থান দিয়েছেন? তা শুনে সাদ [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বলেন, হে আল্লাহ রসূল  [সাঃআঃ]! আনসার গোত্রগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং আমাদেরকে সকলের শেষ স্তরে স্থান দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এটা কি তোমাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, তোমরাও শ্রেষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছ?

[বোখারী পর্ব ২৪ অধ্যায় ৫৪ হাদীস নং ১৪৮১ ও পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৩৭৯১; মুসলিম ৪৩/৩ হাঃ নং ১৩৯২] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৪. আল্লাহ তাআলার উপর তাহাঁর ভরসা এবং মানুষের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তাআলার তাঁকে হিফাযাত করণ।

১৪৭০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাজদের যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে যোগদান করেছি। কাঁটা গাছে ভরা উপত্যকায় প্রচণ্ড গরম লাগলে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি গাছের নিচে অবতরণ করে তার ছায়ায় আশ্রয় নিলেন এবং তরবারিখানা লটকিয়ে রাখেন। সাহাবীগণ সকলেই গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়ার জন্য ছড়িয়ে পড়লেন। আমরা এ অবস্থায় ছিলাম, হঠাৎ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে ডাকলেন। আমরা তাহাঁর নিকট গিয়ে দেখলাম, এক গ্রাম্য আরব তাহাঁর সামনে বসে আছে। তিনি বলিলেন, আমি ঘুমিয়েছিলাম। এমন সময় সে আমার কাছে এসে আমার তরবারিখানা নিয়ে উঁচিয়ে ধরল। এতে আমি জেগে গিয়ে দেখলাম, সে খোলা তরবারি হাতে আমার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে বলছে, এখন তোমাকে আমার থেকে কে রক্ষা করিবে? আমি বললাম, আল্লাহ। এতে সে তরবারিখানা খাপে ঢুকিয়ে বসে পড়ে। এ-ই সেই লোক। বর্ণনাকারী জাবির [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে কোন শাস্তি দিলেন না।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ৪১৩৯; মুসলিম ৪৩/৪ হাঃ ৮৪৩] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৫. “হিদায়াত ও ইল্ম” যা নিয়ে মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-কে পাঠানো হয়েছে তার দৃষ্টান্তের বর্ণনা।

১৪৭১. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা আমাকে যে হিদায়াত ও ইলম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হল যমীনের উপর পতিত প্রবল বর্ষণের ন্যায়। কোন কোন ভূমি থাকে উর্বর যা সে পানি শুষে নিয়ে প্রচুর পরিমাণে ঘাসপাতা এবং সবুজ তরুলতা উৎপাদন করে। আর কোন কোন ভূমি থাকে কঠিন যা পানি আটকে রাখে। পরে আল্লাহ তাআলা তা দিয়ে মানুষের উপকার করেন; তারা নিজেরা পান করে ও [পশুপালকে] পান করায় এবং তা দ্বারা চাষাবাদ করে। আবার কোন কোন জমি রয়েছে যা একেবারে মসৃণ ও সমতল ; তা না পানি আটকে রাখে, আর না কোন ঘাসপাতা উৎপাদন করে। এই হল সে ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং আল্লাহ্ তাআলা আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করিয়াছেন তাতে সে উপকৃত হয়। ফলে সে নিজে শিক্ষা করে এবং অপরকে শিখায়। আর সে ব্যক্তিরও দৃষ্টান্ত- যে সে দিকে মাথা তুলে দেখে না এবং আল্লাহ্‌র যে হিদায়ত নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তা গ্ণও করে না। অন্য বর্ণনায় আছেঃ তিনি হলেন এমন ভূমির মত যার উপর পানি জমে থাকে।

[বোখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৭৯; মুসলিম ৪৩/৫ হাঃ ২২৮২] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৬. উম্মাতের উপর মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর দয়াদ্রতা ও যা তাহাদের ক্ষতি সাধন করিবে তা থেকে স্পষ্ট সতর্কীকরণ।

১৪৭২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন যে, আমার ও লোকদের দৃষ্টান্ত এমন ব্যক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালালো আর যখন তার চতুর্দিক আলোকিত হয়ে গেল, তখন পতঙ্গ ও ঐ সমস্ত প্রাণী যেগুলো আগুনে পড়ে, তারা তাতে পড়তে লাগলো। তখন সে সেগুলোকে আগুন থেকে বাঁচাবার জন্য টানতে লাগলো। কিন্তু তারা আগুনে পুড়ে মরলো। তদ্রুপ আমি তোমাদের কোমর ধরে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করি অথচ তারা তাতেই প্রবেশ করছে।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ২৬ হাদীস নং ৬৪৮৩; মুসলিম ৪৩/৬, হাঃ ২২৮৪] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৭. তাহাঁর [সাঃআঃ] সর্বশেষ নাবী হওয়ার বর্ণনা।

১৪৭৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেন, আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নাবীগণের অবস্থা এমন, এক ব্যক্তি যেন একটি গৃহ নির্মাণ করিল, তাকে সুশোভিত ও সুসজ্জিত করিল, কিন্তু এক পাশে একটি ইটের জায়গা খালি রয়ে গেল। অতঃপর লোকজন এর চারপাশে ঘুরে আশ্চর্য হয়ে বলিতে লাগল ঐ শূন্যস্থানের ইটটি লাগানো হল না কেন? নাবী [সাঃআঃ] বলেন, আমিই সে ইট। আর আমিই সর্বশেষ নাবী [সাঃআঃ]।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৩৫৩৫; মুসলিম ৪৩/৭ হাঃ ২২৮৬] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৭৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন আমার ও অন্যান্য নাবীগণের অবস্থা এমন, যেন কেউ একটি গৃহ নির্মাণ করলো আর একটি ইটের স্থান শূন্য রেখে নির্মাণ কাজ শেষ করে গৃহটিকে সুসজ্জিত করে নিল। জনগণ মুগ্ধ হল এবং তারা বলাবলি করিতে লাগল, যদি একটি ইটের জায়গাটুকু খালি রাখা না হত।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৩৫৩৪; মুসলিম ৪৩/৭ হাঃ ২২৮৭] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৯. নাবী [সাঃআঃ]-এর জন্য “হাওজ” এর প্রমাণ ও তার বৈশিষ্ট্য।

১৪৭৫. জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ আমি তোমাদের আগে হাউযের ধারে পৌঁছব।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৮৯; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২২৮৯] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৭৬. সাহ্‌ল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি তোমাদের আগে হাউযের ধারে পৌঁছব। যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করিবে, সে হাউযের পানি পান করিবে। আর যে পান করিবে সে আর কখনও পিপাসার্ত হইবে না। নিঃসন্দেহে কিছু সম্প্রদায় আমার সামনে [হাউযে] উপস্থিত হইবে। আমি তাহাদেরকে চিনতে পারব আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। এরপর আমার এবং তাহাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেয়া হইবে।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৮৩; মুসলিম ৪৩/৯ হাঃ ২২৯১] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৭৭. আবু সাঈদ খুদ্রী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি তখন বলব যে এরা তো আমারই উম্মাত। তখন বলা হইবে, তুমি তো জান না তোমার পরে এরা কি সব নতুন নতুন কীর্তি করেছে। রসূল  [সাঃআঃ] বলেন তখন আমি বলব, দূর হও! আমার পরে যারা দ্বীনের মাঝে পরিবর্তন এনেছ তারা আল্লাহ্‌র রহমত থেকে দূর হও।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৮৪; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২২৯০, ২২৯১] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৭৮. আবদুল্লাহ্ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার হাউয [হাউয কাউসার] এক মাসের দূরত্ব সমান [বড়] হইবে। তার পানি দুধের চেয়ে শুভ্র, তার ঘ্রাণ মিশ্‌ক-এর চেয়ে সুগন্ধযুক্ত এবং তার পানপাত্রগুলি হইবে আকাশের তারকার মত অধিক। যে ব্যক্তি তা থেকে পান করিবে সে আর কখনও পিপাসার্ত হইবে না।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৭৯;] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৭৯. আসমা বিন্ত আবু বকর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আমি হাউযের ধারে থাকব। তোমাদের মাঝ থেকে যারা আমার কাছে আসবে আমি তাহাদেরকে দেখিতে পাব। কিছু লোককে আমার সামনে থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হইবে। তখন আমি বলব, হে প্রভু! এরা আমার লোক, এরা আমার উম্মাত। তখন বলা হইবে, তুমি কি জান তোমার পরে এরা কী সব করেছে? আল্লাহ্‌র কসম! এরা দ্বীন থেকে সর্বদাই পশ্চাদমুখী হয়েছিল। তখন ইবনি আবু মুলায়কা বলিলেন, হে আল্লাহ্! দ্বীন থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা থেকে অথবা দ্বীনের ব্যাপারে ফিত্নায় পতিত হওয়া থেকে আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৯৩; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২২৯৩] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৮০. উকবাহ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আট বছর পর নাবী [সাঃআঃ] উহুদের শহীদদের জন্য [কবরস্থানে] এমনভবে দুআ করিলেন যেমন কোন বিদায় গ্রহণকারী জীবিত ও মৃতদের জন্য দুআ করেন। তারপর তিনি [ফিরে এসে] মিম্বারে উঠে বলিলেন, আমি তোমাদের অগ্রে প্রেরিত এবং আমিই তোমাদের সাক্ষীদাতা। এরপর হাউযে কাউসারের ধারে তোমাদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটবে। আমার এ স্থান থেকেই আমি হাউযে কাউসার দেখিতে পাচ্ছি। তোমরা শির্‌কে জড়িয়ে যাবে আমি এ ভয় করি না। তবে আমার আশঙ্কা হয় যে, তোমরা দুনিয়ায় সুখ-শান্তি লাভে প্রতিযোগিতা করিবে।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৪০৪২; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২২৯৬] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৮১. আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি তোমাদের আগে হাউয-এর কাছে গিয়ে পৌঁছব। আর [ঐ সময়] তোমাদের কতিপয় লোককে নিঃসন্দেহে আমার সামনে উঠানো হইবে। আবার আমার সামনে থেকে তাহাদেরকে পৃথক করে নেয়া হইবে। তখন আমি আরয করব, প্রভু হে! এরা তো আমার উম্মাত। তখন বলা হইবে, তোমার পরে এরা কী কীর্তি করেছে তাতো তুমি জান না।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৭৬; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২২৯৭] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৮২. হারিসাহ ইবনি ওয়াহ্ব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে হাউযে কাউসারের আলোচনা করিতে শুনিয়াছি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেনঃ হাউযে কাউসার মাদীনাহ এবং সানআ নামক স্থানের মধ্যকার দূরত্বের মতো।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৯১; মুসলিম ৪৩/৯ হাঃ ২২৯৮] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৮৩. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

তখন মুসতাওরিদ তাঁকে বলিলেন যে, আল আওয়ানী যে বলেছেন তা কি তুমি শুননি? তিনি বলিলেন, না। মুসতাওরিদ বলিলেন, এর পাত্রগুলো তারকারাজির মত পরিলক্ষিত হইবে।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৯২; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২২৯৮] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৮৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

ইবনি উমার [রাদি.] সূত্রে নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তোমাদের সামনে আমার হাউয এর দূরত্ব হইবে এতটুকু যতটুকু দূরত্ব জাররা ও আযরুহ্ নামক স্থানদ্বয়ের মাঝে।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৭৭; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২২৯৯] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৮৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি নিশ্চয়ই [কিয়ামাতের দিন] আমার হাউয [কাউসার] হইতে কিছু লোকদেরকে এমনভাবে তাড়াব, যেমন অপরিচিত উট হাউয হইতে তাড়ানো হয়।

[বোখারী পর্ব ৪২ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ২৩৬৭; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২৩০২] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৮৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার হাউযের পরিমাণ হল ইয়ামানের আয়লা ও সানআ নামক স্থানদ্বয়ের দূরত্বের সমান আর তার পানপাত্র সমূহ আকাশের তারকারাজির সংখ্যাতুল্য।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৮০; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২৩০৩] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৮৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আনাস [রাদি.] সূত্রে নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমার সামনে আমার উম্মাতের কতিপয় লোক হাউযের কাছে আসবে। তাহাদেরকে আমি চিনে নিব। আমার সামনে থেকে তাহাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হইবে। তখন আমি বলব, এরা আমার উম্মাত। তখন আল্লাহ্ বলবেন, তুমি জান না তোমার পরে এরা কী সব নতুন নতুন কীর্তি করেছে।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৮২; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২৩০৪] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/১০. উহূদের যুদ্ধে নাবী [সাঃআঃ]-এর পক্ষে জিব্‌রীল ও মীকাঈল [আ.]-এর যুদ্ধ করার বর্ণনা।

১৪৮৮. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহুদের দিন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে আমি আরো দু ব্যক্তিকে দেখলাম, যারা সাদা পোশাকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পক্ষে তুমুল যুদ্ধ করছে। আমি তাহাদেরকে আগেও দেখিনি আর পরেও দেখিনি।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৪০৫৪; মুসলিম ৪৩/১০, হাঃ ২৩০৬] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/১১. নাবী [সাঃআঃ]-এর বীরত্ব ও যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালনের বর্ণনা।

১৪৮৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] সকল লোকের চেয়ে সুশ্রী ও সাহসী ছিলেন। এক রাতে মাদীনার লোকেরা ভীত হয়ে শব্দের দিকে বের হলো। তখন নাবী [সাঃআঃ] তাঁদের সামনে এলেন এমন অবস্থায় যে, তিনি শব্দের কারণ অন্বেষণ করে ফেলেছেন। তিনি আবু ত্বলহার জিনবিহীন ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার ছিলেন এবং তাহাঁর কাঁধে তরবারী ছিল। তিনি বলছিলেন, তোমরা ভীত হয়ো না। অতঃপর তিনি বলিলেন, আমি ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মত গতিশীল পেয়েছি, অথবা তিনি বলিলেন, এটি সমুদ্র।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৮২ হাদীস নং ২৯০৮; মুসলিম ৪৩/১১ হাঃ ২৩০৭] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/১২. নাবী [সাঃআঃ] রহমতের বায়ু অপেক্ষা মানুষদের মধ্যে অধিক দানশীল ছিলেন।

১৪৯০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রামাযানে তিনি আরো অধিক দানশীল হইতেন, যখন জিবরাঈল [আ.] তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতেন। আর রামাযানের প্রতি রাতেই জিবরাঈল [আ.] তাহাঁর সাথে সাক্ষাৎ করিতেন এবং তাঁরা একে অপরকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] রহমতের বায়ু অপেক্ষা অধিক দানশীল ছিলেন।

[বোখারী পর্ব ১ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৬; মুসলিম ৪৩/১২ হাঃ ৩২০৮] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/১৩. রসূল  [সাঃআঃ] ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বাপেক্ষা উত্তম চরিত্রের অধিকারী।

১৪৯১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি দশ বছর পর্যন্ত নাবী [সাঃআঃ]-এর খিদমত করেছি। কিন্তু তিনি কখনো আমার প্রতি উঃ শব্দ বলেননি। এ কথা জিজ্ঞেস করেননি, তুমি এ কাজ কেন করলে এবং কেন করলে না?

[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৬০৩৮; মুসলিম ৪৩/১৩, হাঃ ২৩০৯] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৯২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

যখন রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] মাদীনায় আগমন করিলেন, তখন আবু ত্বলহা [রাদি.] আমার হাতে ধরে আমাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-এর কাছে গেলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আনাস একজন হুঁশিয়ার ছেলে। সে যেন আপনার খেদমত করে। আনাস [রাদি.] বলেন, আমি মুকীম এবং সফরকালে তাহাঁর খেদমত করেছি। আল্লাহ্‌র কসম! যে কাজ আমি করে নিয়েছি এর জন্য তিনি আমাকে কোন দিন এ কথা বলেননি, এটা এরূপ কেন করেছ? আর যে কাজ আমি করিনি এর জন্যও এ কথা বলেননি, এটা এরূপ কেন করনি?

[বোখারী পর্ব ৮৭ অধ্যায় ২৭ হাদীস নং ৬৯১১; মুসলিম ৪৩/১৩ হাঃ ২৩০৯] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/১৪. রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকট কোন কিছু চাওয়া হলে তিনি কখনও না বলেননি এবং তাহাঁর অত্যধিক দানের বর্ণনা।

১৪৯৩. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এমন কোন জিনিসই চাওয়া হয়নি, যার উত্তরে তিনি না বলেছেন।

[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৬০৩৪; মুসলিম ৪৩/১৪ হাঃ ২৩১১] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৯৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছিলেন, যদি বাহরাইনের মাল এসে যায় তাহলে আমি তোমাকে এতো এতো দিব। কিন্তু নাবী [সাঃআঃ]-এর ওফাত পর্যন্ত বাহরাইনের মাল এসে পৌঁছায়নি। পরে যখন বাহরাইনের মাল পৌঁছল, আবু বকর [রাদি.]-এর আদেশে ঘোষণা করা হল, নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট যার অনুকূলে কোন প্রতিশ্রতি বা ঋণ রয়েছে সে যেন আমার নিকট আসে। আমি তার নিকট গিয়ে বললাম, নাবী [সাঃআঃ] আমাকে এতো এতো দিবেন বলেছিলেন। তখন আবু বকর [রাদি.] আমাকে এক অঞ্জলি ভরে দিলেন, আমি তা গণনা করলাম এতে পাঁচ শ ছিল। তারপর তিনি বলিলেন, এর দ্বিগুণ নিয়ে যাও।

[বোখারী পর্ব ৩৯ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ২২৯৬; মুসলিম ৪৩/১৪, হাঃ ২৩১৪] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/১৫. রসূল  [সাঃআঃ]-এর শিশু ও অনাথদের প্রতি অত্যধিক দয়া এবং তাহাঁর বিনয় ও অন্যান্য সদ্ গুণাবলী।

১৪৯৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে আবু সায়ফ্ কর্মকারের নিকট গেলাম। তিনি ছিলেন [নাবী-তনয়] ইব্রাহীম [রাদি.]-এর দুধ সম্পর্কীয় পিতা। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ইব্রাহীম [রাদি.]-কে তুলে নিয়ে চুমু খেলেন এবং নাকে-মুখে লাগালেন। অতঃপর [আরেক বার] আমরা তার [আবু সায়ফ্-এর] বাড়িতে গেলাম। তখন ইব্রাহীম [রাদি.] মুমূর্ষু অবস্থায়। এতে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর উভয় চক্ষু হইতে অশ্র ঝরতে লাগল। তখন আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আর আপনিও? [ক্রন্দন করছেন?] তখন তিনি বললেনঃ অশ্রু প্রবাহিত হয় আর হৃদয় হয় ব্যথিত। তবে আমরা মুখে তা-ই বলি যা আমাদের রব পছন্দ করেন।[১] আর হে ইব্রাহীম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা অবশ্যই শোকসন্তপ্ত।[২]

[বোখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৪৩ হাদীস নং ১৩০৩; মুসলিম ৪৩/১৫, হাঃ ২৩১৫] ১। হাদীসটি হইতে বিপদে অশ্র ঝরানো আর মহান আল্লাহর নাফরমানী প্রকাশক শব্দাবলী বাদ দিয়ে মুখে শোক প্রকাশ করার অনুমতি পাওয়া যায়, পক্ষান্তরে মহান আল্লাহর নাফরমানী হয় কিংবা তাক্বদীরের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশক শব্দাবলী পরিত্যাগ করার তাকীদ দেয়া হয়। ২। এ ধরনের বাকরীতি বিভিন্ন ভাষায় বিদ্যমান আছে। সুতরাং আরবীতে তো থাকিবেই। বিধায় মৃত ব্যক্তিকে সংশোধন করার দলীল হিসাবে নাবী [সাঃআঃ] এর বাণীটি ব্যবহার করার কোনই অবকাশ নেই। ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৯৬. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক বেদুঈন নাবী [সাঃআঃ] এর কাছে এসে বললো- আপনারা শিশুদের চুম্বন করে থাকেন, কিন্তু আমরা ওদের চুম্বন করি না। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ আল্লাহ যদি তোমার অন্তর থেকে রহমত উঠিয়ে নেন, তবে আমি কি তোমার উপর [তা ফিরিয়ে দেয়ার] অধিকার রাখি?

[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৫৯৯৮; মুসলিম ৪৩/১৫, হাঃ ২৩১৭] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৯৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার হাসান ইবনি আলীকে চুম্বন করেন। ঐ সময় তাহাঁর নিকট আক্‌রা ইবনি হাবিস তামীমী [রাদি.] বসা ছিলেন। আক্‌রা ইবনি হাবিস [রাদি.] বললেনঃ আমার দশটি পুত্র আছে, আমি তাহাদের কাউকেই কোন দিন চুম্বন করিনি। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর দিকে তাকালেন, তারপর বললেনঃ যে দয়া করে না, তাকে দয়া করা হয় না।

[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৫৯৯৭; মুসলিম ৪৩/১৫, হাঃ ২৩১৮] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৪৯৮. জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি [সৃষ্টির প্রতি] দয়া করে না, [স্রষ্টার পক্ষ থেকে] তার প্রতি দয়া করা হইবে না।

[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ২৭ হাদীস নং ৬০১৩; মুসলিম ৪৩/১৫, হাঃ ২৩১৯] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/১৬. নাবী [সাঃআঃ] ছিলেন অত্যন্ত লাজুক স্বভাবের।

১৪৯৯. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] গৃহবাসিনী পর্দানশীন কুমারীদের চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৬২; মুসলিম ৪৩/১৬ হাঃ ২৩২০] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫০০. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলিতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৫৯; মুসলিম ৪৩/১৬ হাঃ ২৩২১] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/১৮. নাবী [সাঃআঃ]-এর নারীদের প্রতি করুণা এবং উটের আরোহী মহিলা হলে উট চালককে ধীরে উট চালনার জন্য নাবী [সাঃআঃ]-এর নির্দেশ দান।

১৫০১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এক সফরে ছিলাম। তাহাঁর সঙ্গে তখন আনজাশাহ নামের এক কালো গোলাম ছিল। সে পুঁথি গাইছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃ] তাকে বললেনঃ ওহে আনজাশাহ! তোমার সর্বনাশ। তুমি উটটিকে কাঁচপাত্র সদৃশ সওয়ারীদের নিয়ে ধীরে চালাও।

[বোখারী, পর্ব ৭৮ : আদব-আচার, অধ্যায় ৯৫, হাদীস ৬১৬১; মুসলিম পর্ব ৪৩ : ফাযায়েল অধ্যায় ১৮, হাদীস ২৩২৩] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/২০. নাবী [সাঃআঃ]-এর পাপকর্ম থেকে দূরে থাকা, বৈধ কাজের মধ্যে সহজটিকে গ্রহণ করা এবং আল্লাহ তাআলার জন্য প্রতিশোধ নেয়া যখন তাহাঁর [আল্লাহ্‌র] হুকুমের অমর্যাদা করা হয়।

১৫০২. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ]-কে যখনই দুটি জিনিসের একটি গ্রহণের স্বাধীনতা দেয়া হত, তখন তিনি সহজটিই গ্রহণ করিতেন যদি তা গুনাহ না হত। গুনাহ হইতে তিনি অনেক দূরে অবস্থান করিতেন। নাবী [সাঃআঃ] নিজের ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহ্‌র সীমারেখা লঙ্ঘন করা হলে আল্লাহ্‌কে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রতিশোধ নিতেন।

[বোখারী, পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৬০; মুসলিম পর্ব ৪৩; ফাযায়েল অধ্যায় ২০;হাঃ ২৩২৭. ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/২১. নাবী [সাঃআঃ]-এর সুঘ্রাণ, তাহাঁর কোমলতা ও তাহাঁর স্পর্শের কল্যাণময়তা।

১৫০৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর হাতের তালুর চেয়ে মোলায়েম কোন নরম ও গরদকেও আমি স্পর্শ করি নি। আর নাবী [সাঃআঃ]-এর শরীরের সুঘ্রাণ অপেক্ষা অধিক সুঘ্রাণ আমি কখনো পাইনি।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৬১; মুসলিম পর্ব ৪৩;] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/২২. নাবী [সাঃআঃ]-এর ঘামের সুগন্ধি এবং তদ্‌দ্বারা বারাকাত গ্রহণ।

১৫০৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উম্মু সুলায়ম [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর জন্য চামড়ার বিছানা বিছিয়ে দিতেন এবং তিনি সেখানেই ঐ চামড়ার বিছানার উপর কায়লুলা করিতেন। এরপর তিনি যখন ঘুম থেকে উঠতেন, তখন তিনি তাহাঁর শরীরের কিছুটা ঘাম ও চুল সংগ্রহ করিতেন এবং তা একটা শিশির মধ্যে জমাতেন এবং পরে সুক্ক নামীয় সুগন্ধির মধ্যে মিশাতেন।

রাবী বর্ণনা করেন যে, আনাস ইবনি মালিক-এর ওফাতের সময় ঘনিয়ে আসলে, তিনি আমাকে অসিয়ত করলেনঃ যেন ঐ সুক্ক থেকে কিছুটা তাহাঁর সুগন্ধির মধ্যে মিশিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং তা তাহাঁর সুগন্ধির মধ্যে মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল।

[বোখারী পর্ব ৭৯ অধ্যায় ৪১ হাদীস নং ৬২৮১] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/২৩. নাবী [সাঃআঃ]-এর উপর ওয়াহী নাযিল হওয়ার এমনকি শীতকালেও ঘর্মাক্ত হয়ে যাওয়া।

১৫০৫. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

হারিস ইবনি হিশাম [রাদি.] আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! আপনার নিকট ওয়াহী কিরূপে আসে? আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বললেনঃ {কোন কোন সময় তা ঘণ্টা বাজার মত আমার নিকট আসে। আর এটি-ই আমার উপর সবচেয়ে বেদনাদায়ক হয় এবং তা শেষ হইতেই ফেরেশতা যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই, আবার কখনো ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই।} আয়েশা [রাদি.] বলেন, আমি তীব্র শীতের সময় ওয়াহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওয়াহী শেষ হলেই তাহাঁর ললাট হইতে ঘাম ঝরে পড়ত।

[বোখারী পর্ব ১ অধ্যায় ২ হাদীস নং ২; মুসলিম ৪৩/২৩, হাঃ ২৩৩৩] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/২৫. নাবী [সাঃআঃ]-এর শারীরিক আকৃতি এবং তিনি মানুষদের মধ্যে সর্বোত্তম অবয়বের অধিকারী ছিলেন।

১৫০৬. বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] মাঝারি গড়নের ছিলেন। তাহাঁর উভয় কাঁধের মধ্যস্থল প্রশস্ত ছিল। তাহাঁর মাথার চুল দু কানের লতি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আমি তাঁকে লাল ডোরাকাটা জোড় চাদর পরা অবস্থায় দেখেছি। তাহাঁর চেয়ে বেশি সুন্দর আমি কখনো কাউকে দেখিনি।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৫১; মুসলিম ৪৩/২৫ হাঃ ২৩৩৭] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫০৭. বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর চেহারা ছিল মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর এবং তিনি ছিলেন সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী। তিনি বেশি লম্বাও ছিলেন না এবং বেঁটেও ছিলেন না।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ৪৩ হাদীস নং ৩৫৪৯; মুসলিম ৪৩/২৫ হাঃ২৩৩৭] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/২৬. নাবী [সাঃআঃ]-এর চুলের বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা।

১৫০৮. ক্বাতাদাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-কে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চুল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চুল মধ্যম ধরনের ছিল- না একেবারে সোজা লম্বা, না অতি কোঁকড়ান। আর তা ছিল দুকান ও দুকাঁধের মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত।

[বোখারী পর্ব ৭৭ অধ্যায় ৬৮ হাদীস নং ৫৯০৫; মুসলিম ৪৩/২৬ হাঃ২৩৩৮] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫০৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ]-এর মাথার চুল [কখনও কখনও] কাঁধ পর্যন্ত লম্বা হতো।

[বোখারী পর্ব ৭৭ অধ্যায় ৬৮ হাদীস নং ৫৯০৩ ; মুসলিম ৪৩/২৬, হাঃ ২৩৩৮] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/২৯. তাহাঁর বার্ধক্যের বর্ণনা।

১৫১০. মুহাম্মাদ ইবনি সীরীন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নাবী [সাঃআঃ] কি খিযাব লাগিয়েছেন? তিনি বললেনঃ বার্ধক্য তাঁকে অতি সামান্যই পেয়েছিল।

[বোখারী পর্ব ৭৭ অধ্যায় ৬৬ হাদীস নং ৫৮৯৪; মুসলিম ৪৩/২৯ হাঃ ২৩৩৮] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫১১. আবু জুহাইসলামিক ফাউন্ডেশনহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে দেখেছি আর তাহাঁর নীচ ঠোঁটের নিম্নভাগে দাড়িতে সামান্য সাদা চুল দেখেছি।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৪৫; মুসলিম ৪৩/২৯ হাঃ ২৩৪২] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫১২. আবু জুহাইসলামিক ফাউন্ডেশনহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে দেখেছি। হাসান ইবনি আলী [রাদি.] ছিলেন তাহাঁরই সদৃশ।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৪৪; মুসলিম ৪৩/২৯ হাঃ২৩৪২] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস ৪৩/৩০. নাবী [সাঃআঃ]-এর নবুয়াতের মোহর, তার বর্ণনা এবং তা শরীরের কোন্ স্থানে ছিল তার প্রমাণ।

১৫১৩. সায়িব ইবনি ইয়াযীদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমার খালা আমাকে নিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! আমার ভাগিনা অসুস্থ। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং বরকতের দুআ করিলেন। অতঃপর উযূ করিলেন। আমি তাহাঁর উযুর [অবশিষ্ট] পানি পান করলাম। তারপর তাহাঁর পিছনে দাঁড়ালাম। তখন আমি তাহাঁর উভয় কাঁধের মধ্যস্থলে নুবূওয়াতের মোহর দেখিতে পেলাম। তা ছিল পর্দার ঘুণ্টির মত।

[বোখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ৪০ হাদীস নং ১৯০; মুসলিম ৪৩/৩০, হাঃ ২৩৪৫] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৩১. নাবী [সাঃআঃ]-এর বৈশিষ্ট্য এবং তাঁকে রসূল  [সাঃআঃ] হিসাবে প্রেরণ এবং তাহাঁর বয়স।

১৫১৪. রাবীআহ ইবনি আবু আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-কে নাবী [সাঃআঃ]-এর বর্ণনা দিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেছেন যে, নাবী [সাঃআঃ] লোকেদের মধ্যে মাঝারি গড়নের ছিলেন- বেশি লম্বাও ছিলেন না বা বেঁটেও ছিলে না। তাহাঁর শরীরের রং গোলাপী ধরনের ছিল, ধবধবে সাদাও নয় কিংবা তামাটে বর্ণেরও নয়। মাথার চুল কোঁকড়ানোও ছিল না, আবার একেবারে সোজাও ছিল না। চল্লিশ বছর বয়সে তাহাঁর উপর ওয়াহী নাযিল হওয়া শুরু হয়। প্রথম দশ বছর মাক্কায় অবস্থানকালে ওয়াহী যথারীতি নাযিল হইতে থাকে। অতঃপর দশ বছর মাদীনায় কাটান। অতঃপর তাহাঁর মৃত্যুর সময় তখন তাহাঁর মাথা ও দাড়িতে কুড়িটি সাদা চুলও ছিল না।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৪৭; মুসলিম ৪৩/৩১ হাঃ ২৩৩৮] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৩২. নাবী [সাঃআঃ]-এর ইন্তিকালের দিন তাহাঁর বয়স কত ছিল।

১৫১৫. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

যখন নাবী [সাঃআঃ]-এর মৃত্যু হয় তখন তাহাঁর বয়স হয়েছিল তেষট্টি বছর।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১৯ হাদীস নং ৩৫৩৬; মুসলিম ৪৩/৩২ হাঃ ২৩৪৯] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৩৩. নাবী [সাঃআঃ] কত দিন মাক্কাহ ও মাদীনায় অবস্থান করেন?

১৫১৬. ইবনি আব্বাস[রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] মাক্কায় তের বছর কাটান। তিনি তিষট্টি বছর বয়সে মারা যান।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১৪ হাদীস নং ৩৯০৩, ৩৮৫১; মুসলিম পর্ব ৪৩ হাদীস নং ২৩৪৯] [আ.প্র. ৩৬১৬, ই.ফা. ৩৬২০] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৩৪. নাবী [সাঃআঃ]-এর নামসমূহ।

১৫১৭. যুবায়র ইবনি মুতঈম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেন, আমার পাঁচটি [প্রসিদ্ধ] নাম রয়েছে, আমি মুহাম্মাদ, আমি আহ্মাদ, আমি আল-মাহী, আমার দ্বারা আল্লাহ্ কুফর ও র্শিককে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। আমি আল-হাশির, আমার চারপাশে মানব জাতিকে একত্রিত করা হইবে। আমি আল-আক্বিব [সর্বশেষ আগমনকারী]।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৩৫৩২; মুসলিম ৪৩/৩৪ হাঃ ২৩৫৪] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৩৫. নাবী [সাঃআঃ]-এর জ্ঞান ও অধিক আল্লাহ ভীতি।

১৫১৮. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার নাবী [সাঃআঃ] নিজে কোন কাজ করিলেন এবং অন্যদের তা করার অনুমতি দিলেন। তথাপি একদল লোক তা থেকে বিরত রইল। এ খবর নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট পৌঁছলে তিনি ভাষণ দিলেন এবং আল্লাহ্‌র প্রশংসার পর বললেনঃ কিছু লোকের কী হয়েছে, তারা এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে চায়, যা আমি নিজে করছি। আল্লাহ্‌র কসম! আমি আল্লাহ্‌র সম্পর্কে তাহাদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত এবং আমি তাঁকে তাহাদের চেয়ে অনেক অধিক ভয় করি।

[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৭২ হাদীস নং ৬১০১; মুসলিম ৪৩/৩৫, হাঃ ২৩৫৬] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৩৬. নাবী [সাঃআঃ]র অনুসরণের অপরিহার্যতা।

১৫১৯. আবদুল্লাহ ইবনি যুবাইর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক আনসারী নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনে যুবাইর [রাদি.]-এর সঙ্গে হাররার নালার পানির ব্যাপারে ঝগড়া করিল যে পানি দ্বারা খেজুর বাগান সিঞ্চন করত। আনসারী বলিল, নালার পানি ছেড়ে দিন, যাতে তা [প্রবাহিত থাকে] কিন্তু যুবাইর [রাদি.] তা দিতে অস্বীকার করেন। তারা দুজনে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকটে এ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হলে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] যুবাইর[রাদি.]-কে বলিলেন, হে যুবাইর! তোমার যমীনে [প্রথমে] সিঞ্চন করে নাও। এরপর তোমার প্রতিবেশীর দিকে পানি ছেড়ে দাও। এতে আনসারী অসন্তুষ্ট হয়ে বলিল, সে তো আপনার ফুফাতো ভাই। এতে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর চেহারায় অসন্তুষ্টির লক্ষণ প্রকাশ পেল। এরপর তিনি বলিলেন, হে যুবাইর! তুমি নিজের জমি সিঞ্চন কর। এরপর পানি আটকে রাখ, যাতে তা বাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে।

[বোখারী পর্ব ৪২ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ২৩৫৯; মুসলিম ৪৩/৩৬ হাঃ ২৩৫৭] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫২০. যুবাইর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমার ধারণা এ আয়াতটি এ সম্পর্কে নাযিল হয়েছেঃ

“তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হইবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাহাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার-ভার আপনার উপর অর্পণ না করে” [আন-নিসা ৬৫]। [আর-বী]

[বোখারী পর্ব ৪২ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ২৩৬০; মুসলিম ৪৩/৩৬ হাঃ ২৩৫৭] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৩৭. রসূল  [সাঃআঃ]-কে মর্যাদা দেয়া, তাঁকে বিনা প্রয়োজনে এবং বিষয়ের সাথে সম্পর্কহীন ও অবাস্তব ইত্যাদি প্রশ্ন করা পরিত্যাগ করা।

১৫২১. সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুসলিমদের সবচেয়ে বড় অপরাধী সেই ব্যক্তি যে এমন বিষয়ে প্রশ্ন করে যা পূর্বে হারাম ছিল না, কিন্তু তার প্রশ্নের কারণে তা হারাম হয়ে গেছে।

[বোখারী পর্ব ৯৬ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৭২৮৯; মুসলিম ৪৩/৩৭ হাঃ ২৩৫৮] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫২২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এমন একটি খুতবা দিলেন যেমনটি আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বলিলেন, “আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তবে তোমরা হাসতে খুব কমই এবং অধিক অধিক করে কাঁদতে”। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম [রাদি.] নিজ নিজ চেহারা আবৃত করে গুনগুন করে কাঁদতে শুরু করিলেন, এরপর এক ব্যক্তি [আবদুল্লাহ ইবনি হুযাইসলামিক ফাউন্ডেশনহ বা অন্য কেউ] বলিল, আমার পিতা কে? রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, “অমুক”।

তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ [আর-বী]

{বোখারী পর্ব ৬৫ সূরা [৫] আল-মায়িদাহ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৪৬২১; মুসলিম ৪৩/৩৭, হাঃ ২৩৫৯} ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫২৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

একবার লোকজন রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-কে নানা প্রশ্ন করিতে লাগল, এমনকি প্রশ্ন করিতে তাঁকে বিরক্ত করে ফেললো। এতে তিনি রাগ করিলেন এবং মিম্বারে আরোহণ করে বললেনঃ আজ তোমরা যত প্রশ্ন করিবে আমি তোমাদের সব প্রশ্নেরই বর্ণনা সহকারে জবাব দিব। এ সময় আমি ডানে ও বামে তাকাতে লাগলাম এবং দেখলাম যে, প্রতিটি লোকই নিজের কাপড় দিয়ে মাথা পেচিয়ে কাঁদছেন। এমন সময় একজন লোক, যাকে লোকের সঙ্গে বিবাদের সময় তার বাপের নাম নিয়ে ডাকা হতো না, সে প্রশ্ন করলোঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ হুযাইসলামিক ফাউন্ডেশনহ। তখন উমার [রাদি.] বলিতে লাগলেনঃ আমরা আল্লাহ্‌কে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-কে রসূল  হিসেবে গ্রহণ করেই সন্তুষ্ট। আমরা ফিত্‌না থেকে আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। তখন রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি ভাল মন্দের যে দৃশ্য আজ দেখলাম, তা আর কখনও দেখিনি। জান্নাত ও জাহান্নামের সূরত আমাকে এমন স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে যে, যেন এ দুটি এ দেয়ালের পেছনেই অবস্থিত।

[বোখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৩৫ হাদীস নং ৬৩৬২; মুসলিম ৪৩/৩৭, হাঃ ২৩৫৯] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫২৪. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা নাবী [সাঃআঃ]-কে কয়েকটি অপছন্দনীয় বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। প্রশ্নের সংখ্যা অধিক হয়ে যাওয়ায় তখন তিনি রেগে গিয়ে লোকদেরকে বললেনঃ তোমরা আমার নিকট যা ইচ্ছে প্রশ্ন কর। এক ব্যক্তি বলিল, আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফাহ। আর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হল শায়বার দাস সালিম। তখন উমার[রাদি.] আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর চেহারার অবস্থা দেখে বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! আমরা মহিমান্বিত আল্লাহর নিকট তাওবাহ করছি।

[বোখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ৯২; মুসলিম ৪৩/৩৭ হাঃ ২৩৬০] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৩৯. নাবী [সাঃআঃ]-এর প্রতি তাকানোর ফাযীলাত এবং সেজন্য আকাঙক্ষা করা।

১৫২৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, তোমাদের নিকট এমন যুগ আসবে যখন তোমাদের পরিবার-পরিজনরা, ধন-সম্পদের অধিকারী হওয়ার চেয়েও আমার সাক্ষাৎ পাওয়া তার নিকট অত্যন্ত প্রিয় বলে গণ্য করিবে।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৫৮৯; মুসলিম ৪৩/৩৯ হাদীস নং ২৫২৬] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৪০. ঈসা [আ.]-এর মর্যাদা।

১৫২৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি মারিয়ামের পুত্র ঈসার অধিক ঘনিষ্ঠ। আর নাবীগণ পরস্পর আল্লাতী ভাই। আমার ও তার মাঝখানে কোন নাবী নেই।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪৮ হাদীস নং ৩৪৪২; মুসলিম ৪৩/৪০ হাঃ ২৩৬৫] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫২৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, এমন কোন আদাম সন্তান নেই, যাকে জন্মের সময় শয়তান স্পর্শ করে না। জন্মের সময় শয়তানের স্পর্শের কারণেই সে চিৎকার করে কাঁদে। তবে মারইয়াম এবং তাহাঁর ছেলে [ঈসা] [আ.] এর ব্যতিক্রম। অতঃপর আবু হুরাইরাহ্ বলেন, {“হে আল্লাহ্! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট তাহাঁর এবং তাহাঁর বংশধরদের জন্য বিতাড়িত শয়তান হইতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।}

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪৪ হাদীস নং ৩৪৩১; মুসলিম ৪৩/৪০ হাঃ ২৩৬৬] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫২৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, ঈসা [আ.] এক লোককে চুরি করিতে দেখলেন, তখন তিনি বলিলেন, তুমি কি চুরি করেছ? সে বলিল, কক্ষণও নয়। সেই সত্তার কসম! যিনি ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই। তখন ঈসা [আ.] বলিলেন, আমি আল্লাহ্‌র উপর ঈমান এনেছি আর আমি আমার দুচোখ অবিশ্বাস করলাম।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪৮ হাদীস নং ৩৪৪৪; মুসলিম ৪৩/৪০ হাঃ ২৩৬৮] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৪১. ইব্রাহীম খালীল [আ.]-এর মর্যাদা।

১৫২৯. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, নাবী ইব্‌রাহীম [আ.] সূত্রধরদের অস্ত্র দিয়ে নিজের খাতনা করেছিলেন যখন তার বয়স ছিল আশি বছর।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩৩৫৬; মুসলিম ৪৩/৪১ হাঃ ২৩৭০] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৩০. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, ইব্‌রাহীম [আ.] তাহাঁর অন্তরের প্রশান্তির জন্য মৃতকে কিভাবে জীবিত করা হইবে, এ সম্পর্কে আল্লাহর নিকট জিজ্ঞেস করেছিলেন, একে যদি “শক” বলে অভিহিত করা হয় তবে এরূপ “শক” এর ব্যাপারে আমরা ইবরাহীম [আ.]-এর চেয়ে অধিক উপযোগী। যখন ইবরাহীম [আ.] বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দেখিয়ে দিন, আপনি কিভাবে মৃতকে জীবিত করেন। আল্লাহ বলিলেন, তুমি কি বিশ্বাস কর না? তিনি বলিলেন, হাঁ, তা সত্ত্বেও যাতে আমার অন্তর প্রশান্তি লাভ করে [আল-বাকারাহঃ ২৬০]। অতঃপর {নাবী [সাঃআঃ] লূত [আ.]-এর ঘটনা উল্লেখ করে বলিলেন।] আল্লাহ লূত [আ.]-এর প্রতি রহম করুন। তিনি একটি সুদৃঢ় খুঁটির আশ্রয় চেয়েছিলেন আর আমি যদি কারাগারে এত দীর্ঘ সময় থাকতাম যত দীর্ঘ সময় ইউসুফ [আ.] কারাগারে ছিলেন তবে তার [বাদশাহ্র] ডাকে সাড়া দিতাম।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৩৩৭২; মুসলিম ৪৩/৪১ হাঃ ১৫১] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৩১. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবরাহীম [আ.] তিনবার ছাড়া কখনও মিথ্যা বলেননি। তন্মধ্যে দুবার ছিল আল্লাহ্‌র ব্যাপারে। তার উক্তি “আমি অসুস্থ”-[সূরাহ আস্সাফফাত ৩৭/৮৯] এবং তাহাঁর অন্য এক উক্তি “বরং এ কাজ করেছে, এই তো তাহাদের বড়টি- [সূরাহ আম্বিয়া ২১/৬৩]। বর্ণনাকারী বলেন, একদা তিনি {ইবরাহীম [আ.]} এবং সারা অত্যাচারী শাসকগণের কোন এক শাসকের এলাকায় এসে পৌঁছলেন। তখন তাকে খবর দেয়া হল যে, এ এলাকায় এক ব্যক্তি এসেছে। তার সঙ্গে একজন সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা আছে। তখন সে তাহাঁর নিকট লোক পাঠাল। সে তাঁকে নারীটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিল, এ নারীটি কে? তিনি উত্তর দিলেন, মহিলাটি আমার বোন। অতঃপর তিনি সারার নিকট আসলেন এবং বলিলেন, হে সারা! তুমি আর আমি ব্যতীত পৃথিবীর উপর আর কোন মুমিন নেই। এ লোকটি আমাকে তোমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল। তখন আমি তাকে জানিয়েছি যে, তুমি আমার বোন। কাজেই তুমি আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করো না। অতঃপর সারাকে আনার জন্য লোক পাঠালো। তিনি যখন তার নিকট প্রবেশ করিলেন এবং রাজা তাহাঁর দিকে হাত বাড়ালো তখনই সে পাকড়াও হল। তখন অত্যাচারী রাজা সারাকে বলিল, আমার জন্য আল্লাহর নিকট দুআ কর, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। তখন সারা আল্লাহর নিকট দুআ করিলেন। ফলে সে মুক্তি পেয়ে গেল। অতঃপর দ্বিতীয়বার তাঁকে ধরতে চাইল। এবার সে পূর্বের মত বা তার চেয়ে কঠিনভাবে পাকড়াও হল। এবারও সে বলিল, আল্লাহর নিকট আমার জন্য দুআ কর। আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। আবারও তিনি দুআ করিলেন, ফলে সে মুক্তি পেয়ে গেল। অতঃপর রাজা তার এক দারোয়ানকে ডাকল। সে তাকে বলিল, তুমি তো আমার নিকট কোন মানুষ আননি। বরং এনেছ এক শয়তান। অতঃপর রাজা সারার খিদমতের জন্য হা-যারাকে দান করিল। অতঃপর তিনি [সারা] তাহাঁর [ইবরাহীম] নিকট আসলেন, তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। তখন তিনি হাত দ্বারা ইশারা করে সারাকে বলিলেন, কী ঘটেছে? তখন সারা বলিলেন, আল্লাহ কাফির বা ফাসিকের চক্রান্ত তারই বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর সে হা-যারাকে খিদমতের জন্য দান করেছে।

আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] বলেন, হে আকাশের পানির ছেলেরা! হা-যারাই তোমাদের আদি মাতা। [আর-বী]

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩৩৫৮; মুসলিম ৪৩/৪১ হাঃ ২৩৭১] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৪২. মূসা [আ.]-এর মর্যাদা।

১৫৩২. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বানী ইসরাঈলের লোকেরা নগ্ন হয়ে একে অপরকে দেখা অবস্থায় গোসল করতো। কিন্তু মূসা [আ.] একাকী গোসল করিতেন। এতে বানী ইসরাঈলের লোকেরা বলাবলি করছিল, আল্লাহ্‌র কসম, মুসা [আ.] কোষবৃদ্ধি রোগের কারণেই আমাদের সাথে গোসল করেন না। একবার মূসা [আ.] একটা পাথরের উপর কাপড় রেখে গোসল করছিলেন। পাথরটা তাহাঁর কাপড় নিয়ে পালাতে লাগল। তখন মূসা [আ.] পাথর! আমার কাপড় দাও,” “পাথর! আমার কাপড় দাও” বলে পেছনে পেছনে ছুটলেন। এদিকে বানী ইসরাঈল মূসার দিকে তাকাল। তখন তারা বলিল, আল্লাহ্‌র কসম মূসার কোন রোগ নেই। মূসা [আ.] পাথর থেকে কাপড় নিয়ে পরলেন এবং পাথরটাকে পিটাতে লাগলেন।

আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] বলেনঃ আল্লাহ্‌র কসম, পাথরটিতে ছয় কিংবা সাতটা পিটুনীর দাগ পড়ে গেল।

[বোখারী পর্ব ৫ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ২৭৮; মুসলিম ৪৩/৪২, হাঃ ৩৩৯] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৩৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মালাকুল মাওতকে মূসা [আ.]-এর নিকট পাঠানো হল। তিনি তাহাঁর নিকট আসলে, মূসা [আ.] তাঁকে চপেটাঘাত করিলেন। [যার ফলে তাহাঁর চোখ বেরিয়ে গেল।] তখন মালাকুল মাওত তাহাঁর প্রতিপালকের নিকট ফিরে গিয়ে বলিলেন, আমাকে এমন এক বান্দার কাছে পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। তখন আল্লাহ্ তাহাঁর চোখ ফিরিয়ে দিয়ে হুকুম করিলেন, আবার গিয়ে তাঁকে বল, তিনি একটি ষাঁড়ের পিঠে তাহাঁর হাত রাখবেন, তখন তাহাঁর হাত যতটুকু আবৃত করিবে, তার সম্পূর্ণ অংশের প্রতিটি পশমের বিনিময়ে তাঁকে এক বছর করে আয়ু দান করা হইবে। মূসা [আ.] এ শুনে বলিলেন, হে আমার রব! অতঃপর কী হইবে? আল্লাহ্ বললেনঃ অতঃপর মৃত্যু। মূসা [আ.] বলিলেন, তা হলে এখনই হোক। তখন তিনি একটি পাথর নিক্ষেপ করলে যতদূর যায় বাইতুল মাক্বদিসের ততটুকু নিকটবর্তী স্থানে তাঁকে পৌঁছে দেয়ার জন্য আল্লাহ্ তাআলার কাছে নিবেদন করিলেন। রাবী বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি সেখানে থাকলে অবশ্যই পথের পাশে লাল বালুর টিলার নিকটে তাহাঁর ক্ববর তোমাদের দেখিয়ে দিতাম।

[বোখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৬৮ হাদীস নং ১৩৩৯; মুসলিম ৪৩/৪২ হাঃ ২৩৭২] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৩৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, দু ব্যক্তি একে অপরকে গালি দিয়েছিল। তাহাদের একজন ছিল মুসলিম, অন্যজন ইয়াহূদী। মুসলিম লোকটি বলিল, তাহাঁর কসম, যিনি মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-কে সমস্ত জগতের মধ্যে ফাযীলাত প্রদান করিয়াছেন। আর ইয়াহূদী লোকটি বলিল, সে সত্তার কসম, যিনি মূসা [আ.]-কে সমস্ত জগতের মধ্যে ফাযীলাত দান করিয়াছেন। এ সময় মুসলিম ব্যক্তি নিজের হাত উঠিয়ে ইয়াহূদীর মুখে চড় মারল। এতে ইয়াহূদী ব্যক্তিটি নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে গিয়ে তার এবং মুসলিম ব্যক্তিটির মধ্যে যা ঘটেছিল, তা তাঁকে অবহিত করিল। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা আমাকে মূসা [আ.]-এর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিও না। কারণ কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে, তাহাদের সাথে আমিও বেহুঁশ হয়ে পড়ব। তারপর সকলের আগে আমার হুঁশ আসবে, তখন [দেখিতে পাব] মূসা [আ] আরশের একপাশ ধরে রয়েছেন। আমি জানি না, তিনি বেহুঁশ হয়ে আমার আগে হুঁশে এসেছেন অথবা আল্লাহ তাআলা যাঁদেরকে বেহুঁশ হওয়া হইতে রেহাই দিয়েছেন, তিনি তাঁদের মধ্যে ছিলেন।

[বোখারী পর্ব ৪৪ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৪১১; মুসলিম ৪৩ অধ্যায়, হাঃ ২৩৭৩] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৩৫. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] উপবিষ্ট ছিলেন, এমন সময় এক ইয়াহূদী এসে বলিল, হে আবুল কাসিম! আপনার এক সাহাবী আমার মুখে আঘাত করেছে। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, কে? সে বলিল, একজন আনসারী। তিনি বলিলেন, তাকে ডাক। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি ওকে মেরেছ? সে বলিল, আমি তাকে বাজারে শপথ করে বলিতে শুনেছিঃ শপথ তাহাঁর, যিনি মূসা [আ.]-কে সকল মানুষের উপর ফযীলত দিয়েছেন। আমি বললাম, হে খবীস! বল, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর উপরও কি? এতে আমার রাগ এসে গিয়েছিল, তাই আমি তার মুখের উপর আঘাত করি। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা নাবীদের একজনকে অপরজনের উপর ফযীলত দিও না। কারণ, কিয়ামতের দিন সকল মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর জমিন ফাটবে এবং যারাই উঠবে, আমিই হব তাহাদের মধ্যে প্রথম। তখন দেখিতে পাব মূসা [আ] আরশের একটি পায়া ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানি না, তিনিও বেহুঁশ লোকদের মধ্যে ছিলেন, না তাহাঁর পূর্বেকার [তুর পাহাড়ের] বেহুঁশীই তাহাঁর জন্য যথেষ্ট হয়েছে।

[বোখারী পর্ব ৪৪ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৪১২; মুসলিম ৪৩/৪২, হাঃ ২৩৭৪] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৪৩. ইউনুস [আ.]-এর বর্ণনা এবং নাবী [সাঃআঃ]-এর বাণীঃ আমি ইউনুস বিন মাত্তার চেয়ে উত্তম এ কথা কারো বলা উচিত নয়।

১৫৩৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, কোন বান্দার জন্যই এ কথা বলা সমীচীন নয় যে, আমি [মুহাম্মদ] ইউনুস ইবনি মাত্তার থেকে উত্তম।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৩৫ হাদীস নং ৩৪১৬; মুসলিম পর্ব ৪৩ হাঃ ২৩৭৩] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৩৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, কোন ব্যক্তির এ কথা বলা ঠিক হইবে না যে, আমি [নাবী] ইউনুস ইবনি মাত্তার চেয়ে উত্তম। নাবী [সাঃআঃ] এ কথা বলিতে গিয়ে ইউনুস [আ.]-এর পিতার নাম উল্লেখ করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ২৪ হাদীস নং ৩৩৯৫; মুসলিম অধ্যায় ৪৩ হাদীস ২৩৭৭] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৪৪. ইউসুফ [আ.]-এর মর্যাদা।

১৫৩৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]! মানুষের মাঝে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বলিলেন, তাহাদের মধ্যে যে সবচেয়ে অধিক মুত্তাকী। তখন তারা বলিল, আমরা তো আপনাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিনি। তিনি বলিলেন, তা হলে আল্লাহর নাবী ইউসুফ, যিনি আল্লাহর নাবীর পুত্র, আল্লাহর নাবীর পৌত্র এবং আল্লাহর খলীল-এর প্রপৌত্র। তারা বলিল, আমরা আপনাকে এ ব্যাপারেও জিজ্ঞেস করিনি। তিনি বলিলেন, তা হলে কি তোমরা আরবের মূল্যবান গোত্রসমূহ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছ? জাহিলী যুগে তাহাদের মধ্যে যারা সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিলেন, ইসলামেও তাঁরা সর্বোত্তম ব্যক্তি যদি তাঁরা ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন করেন।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩৩৫৩; মুসলিম ৪৩/৪৪ হাঃ ২৩৭৮] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩/৪৬. খাজির [আ.]-এর মর্যাদা।

১৫৩৯. সাঈদ ইবনি যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে বললাম, নাওফ আল-বাকালী দাবী করে যে, মূসা [আ.] {যিনি খাযির [আ.]-এর সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন তিনি} বনী ইসরাঈলের মূসা নন বরং তিনি অন্য এক মূসা। [একথা শুনে] তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র দুশমন মিথ্যা বলেছে। উবাঈ ইবনি কাব [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ] হইতে আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেনঃ মূসা [আ.] একদা বনী ইসলাঈলদের মধ্যে বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, সবচেয়ে জ্ঞানী কে? তিনি বলিলেন, আমি সবচেয়ে জ্ঞানী। মহান আল্লাহ্ তাঁকে সতর্ক করে দিলেন। কেননা তিনি ইল্‌মকে আল্লাহ্‌র নিকট সোপর্দ করেন নি। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাঁর নিকট এ ওয়াহী প্রেরণ করলেনঃ দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে আমার বান্দাদের মধ্যে এক বান্দা রয়েছে, যে তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী। তিনি বলেন, হে আমার প্রতিপালক! কিভাবে তার সাক্ষাৎ পাব? তখন তাঁকে বলা হল, থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে নাও। অতঃপর যেখানে সেটি হারিয়ে ফেলবে সেখানেই তাকে পাবে। অতঃপর তিনি ইউশা ইব্ন নূনকে সাথে নিয়ে যাত্রা করিলেন। তাঁরা থলের মধ্যে একটি মাছ নিলেন। পথিমধ্যে তাঁরা একটি বড় পাথরের নিকট এসে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। তারপর মাছটি থলে হইতে বেরিয়ে গেল এবং সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে চলে গেল। এ ব্যাপারটি মূসা [আ.] ও তাহাঁর খাদিম-এর জন্য ছিল আশ্চর্যের বিষয়। অতঃপর তাঁরা তাহাদের বাকীদিন ও রাতভর চলতে থাকলেন। পরে ভোরবেলা মূসা [আ.] তাহাঁর খাদিমকে বলিলেন, আমাদের নাশতা নিয়ে এস, আমরা আমাদের এ সফরে খুবই ক্লান্ত, আর মূসা [আ.]-কে যে স্থানের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, সে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে তিনি ক্লান্তি অনুভব করেন নি। তারপর তাহাঁর সাথী তাঁকে বলিল, আপনি কি লক্ষ্য করিয়াছেন, আমরা যখন পাথরের পাশে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? মূসা [আ.] বলিলেন, আমরা তো সেই স্থানটিরই খোঁজ করছিলাম। অতঃপর তাঁরা তাঁদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন। তাঁরা সেই পাথরের নিকট পৌঁছে দেখিতে গেলেন, এক ব্যক্তি [বর্ণনাকারী বলেন,] কাপড় মুড়ি দিয়ে আছেন। মূসা [আ.] তাঁকে সালাম দিলেন। তখন খাযির বলিলেন, এ দেশে সালাম কোথা হইতে আসল! তিনি বলিলেন, আমি মূসা। খাযির প্রশ্ন করিলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা [আ.]? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি আরো বলিলেন, “সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য আমি কি আপনাকে অনুসরণ করিতে পারি? খাযির বলিলেন, “তুমি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না। হে মূসা [আ.]! আল্লাহ্‌র ইল্‌মের মধ্যে আমি এমন এক ইলম নিয়ে আছি যা তিনি কেবল আমাকেই শিখিয়েছেন, যা তুমি জান না। আর তুমি এমন ইলমের অধিকারী, যা আল্লাহ তোমাকেই শিখিয়েছেন, তা আমি জানি না।” মূসা [আ.] বলিলেন, “আল্লাহ্ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার আদেশ অমান্য করব না। অতঃপর তাঁরা দুজন সমুদ্র তীর দিয়ে চলতে লাগলেন, তাঁদের কোন নৌকা ছিল না। ইতোমধ্যে তাঁদের নিকট দিয়ে একটি নৌকা যাচ্ছিল। তাঁরা নৌকাওয়ালাদের সাথে তাহাদের তুলে নেয়ার কথা বলিলেন। তারা খাযিরকে চিনতে পারল এবং ভাড়া ব্যতিরেকে তাঁদের নৌকায় তুলে নিল। তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার এক প্রান্তে বসে একবার কি দুবার সমুদ্রে তার ঠোঁট ডুবাল। খাযির বলিলেন, হে মূসা [আ.]! আমার এবং তোমার জ্ঞান [সব মিলেও] আল্লাহ্‌র জ্ঞানের তুলনায় চড়ুই পাখির ঠোঁটে যতটুকু পানি এসেছে তার চেয়েও কম। অতঃপর খাযির নৌকার তক্তাগুলোর মধ্য থেকে একটি খুলে ফেললেন। মূসা [আ.] বলিলেন, এরা আমাদের বিনা ভাড়ায় আরোহণ করিয়েছে, আর আপনি আরোহীদের ডুবিয়ে দেয়ার জন্য নৌকাটি ছিদ্র করে দিলেন? খাযির বলিলেন, “আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না?” মূসা [আ.] বলিলেন, আমার ত্রুটির জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অধিক কঠোর হইবেন না। বর্ণনাকারী বলেন, এটা মূসা [আ.]-এর প্রথমবারের ভুল। অতঃপর তাঁরা দুজন [নৌকা থেকে নেমে] চলতে লাগলেন। [পথে] একটি বালক অন্যান্য বালকের সাথে খেলা করছিল। খাযির তার মাথার উপর দিক দিয়ে ধরলেন এবং হাত দিয়ে তার মাথা ছিন্ন করে ফেললেন। মূসা [আ.] বলিলেন, আপনি হত্যার অপরাধ ছাড়াই একটি নিষ্পাপ জীবন নাশ করিলেন? খাযির বলিলেন “আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কখনো ধৈর্য ধরতে পারবে না?” ইব্ন উয়ায়না [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এটা ছিল পূর্বের চেয়ে অধিক জোরালো। তারপর আবারো চলতে লাগলেন; চলতে চলতে তারা এক গ্রামের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাহাদের নিকট খাদ্য চাইলেন কিন্তু তারা তাঁদের মেহমানদারী করিতে অস্বীকার করিল। অতঃপর সেখানে তাঁরা এক ধ্বসে যাওয়ার উপক্রম এমন একটি প্রাচীর দেখিতে পেলেন। খাযির তাহাঁর হাত দিয়ে সেটি দাঁড় করে দিলেন। মূসা [আ.] বলিলেন, আপনি ইচ্ছে করলে এর জন্য মজুরী নিতে পারতেন। তিনি বলিলেন, এখানেই তোমার আর আমার মধ্যে সম্পর্কের অবসান। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা মূসার ওপর রহম করুন। আমাদের কতই না মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হতো যদি তিনি সবর করিতেন, তাহলে আমাদের নিকট তাঁদের আরো ঘটনাবলী বর্ণনা করা হতো।

[বোখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ৪৪ হাদীস নং ১২২; মুসলিম ৪৩/৪৬, হাঃ ২৩৮০] ফাযায়েল -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

Comments

One response to “ফাযায়েল হাদিস । নবী ও রাসুলদের বর্ণনা”

Leave a Reply