মুক্তি বা ইতক । গোলাম আযাদ করার ফাযীলাত

মুক্তি বা ইতক । গোলাম আযাদ করার ফাযীলাত

মুক্তি বা ইতক । গোলাম আযাদ করার ফাযীলাত , এই পর্বের হাদীস =৭ টি (৯৫৮-৯৬৪) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-২০ঃ ইতক মুক্তি

২০/১. গোলামকে মুক্তিপণের অর্থ উপার্জনের সুযোগ দান ।
২০/২. ওয়ালার মালিক হইবে আযাদকারী ।
২০/৩. “ওয়ালা” বিক্রয় করা ও দান করা নিষিদ্ধ ।
২০/৪. আযাদকৃত গোলামের জন্য আযাদকারী মনিব ছাড়া অন্যকে মনিব গণ্য করা নিষিদ্ধ ।
২০/৫. গোলাম আযাদ করার ফাযীলাত ।

ইতক [মুক্তি]

৯৫৮. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, কেউ যদি কোন ক্রীতদাস হইতে নিজের অংশ মুক্ত করে আর ক্রীতদাসের মূল্য পরিমাণ অর্থ তার কাছে থাকে, তবে তার উপর দায়িত্ব হইবে ক্রীতদাসের ন্যায্য মূল্য নির্ণয় করা। তারপর সে শরীকদেরকে তাহাদের প্রাপ্য অংশ পরিশোধ করিবে এবং ক্রীতদাসটি তার পক্ষ হইতে মুক্ত হয়ে যাবে, কিন্তু [সে পরিমাণ অর্থ] না থাকলে তার পক্ষ হইতে ততটুকুই মুক্ত হইবে যতটুকু সে মুক্ত করেছে।

[বোখারী পর্ব ৪৯ : /৪, হাঃ ২৫২২; মুসলিম ২০, হাঃ ১৫০১] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

২০/১. গোলামকে মুক্তিপণের অর্থ উপার্জনের সুযোগ দান ।

৯৫৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, কেউ তার [শরীক] গোলাম হইতে অংশ আযাদ করে দিলে তার দায়িত্ব হয়ে পড়ে নিজস্ব অর্থে সেই গোলামকে পূর্ণ আযাদ করা। যদি তার প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকে, তাহলে গোলামের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করিতে হইবে। তারপর [অন্য শরীকদের অংশ পরিশোধের জন্য] তাকে উপার্জনে যেতে হইবে, তবে তার উপর অতিরিক্ত কষ্ট চাপানো যাবে না।

[বোখারী পর্ব ৪৭ : /৫, হাঃ ২৪৯২; মুসলিম ২০/১, হাঃ ১৫০৩] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

২০/২. ওয়ালার মালিক হইবে আযাদকারী ।

৯৬০. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

বারীরাহ [রাদি.] একবার তার মুকাতাবাতের ব্যাপারে সাহায্য চাইতে আসলেন। তখন পর্যন্ত তিনি মুকাতাবাতের অর্থ হইতে কিছুই আদায় করেননি। আয়েশা [রাদি.] তাকে বলিলেন, তুমি তোমার মালিকের কাছে ফিরে যাও। তারা সম্মত হলে আমি তোমার মুকাতাবাতের প্রাপ্য পরিশোধ করে দিব। আর তোমার ওয়ালার [অভিভাবকের] অধিকার আমার হইবে। বারীরাহ [রাদি.] কথাটি তার মালিকের কাছে পেশ করিলেন। কিন্তু তারা তা অস্বীকার করিল এবং বলিল, তিনি যদি তোমাকে মুক্ত করে সওয়াব পেতে চান, তবে করিতে পারেন। ওয়ালা আমাদেরই থাকিবে। আয়েশা [রাদি.] বিষয়টি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে পেশ করলে তিনি বলিলেন, তুমি খরিদ করে মুক্ত করে দাও। কেননা, যে মুক্ত করিবে, সেই ওয়ালার অধিকারী হইবে। [রাবী] বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] [সহাবীগণের সমাবেশে] দাঁড়িয়ে বলিলেন, মানুষের কী হল, এমন সব শর্ত তারা আরোপ করে, যা আল্লাহ্‌র কিতাবে নেই। যে এমন সব শর্তারোপ করিবে, যা আল্লাহ্‌র কিতাবে নেই, তা তার জন্য প্রযোজ্য হইবে না; যদিও সে শতবার শর্তারোপ করে। কেননা, আল্লাহ্‌র দেয়া শর্তই সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য।

[বোখারী পর্ব ৫০: /২, হাঃ ২৫৬১; মুসলিম ২০/২, হাঃ ১৫০৪] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৯৬১. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বারীরার মাধ্যমে [শারীআতের] তিনটি বিধান জানা গেছে। এক. তাকে আযাদ করা হলো, এরপর তাকে তার স্বামীর সাথে থাকা বা না থাকার ইখ্‌তিয়ার দেয়া হলো। দুই. আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] বলেন, আযাদকারী আযাদকৃত গোলামের পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিক হইবে। তিন. আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] ঘরে প্রবেশ করিলেন, দেখিতে পেলেন ডেগে গোশ্‌ত উথলে উঠছে। তাহাঁর কাছে রুটি ও ঘরের অন্য তরকারী উপস্থিত করা হলো। তখন তিনি বললেনঃ গোশ্‌তের পাত্র দেখছি না যে যার ভিতর গোশ্‌ত ছিল? লোকেরা জবাব দিল, হ্যাঁ, কিন্তু সে গোশ্‌ত বারীরাকে সদাকাহ হিসাবে দেয়া হয়েছে। আর আপনি তো সদাকাহ খান না? তিনি বললেনঃ তার জন্য সদাকাহ, আর আমাদের জন্য এটা হাদিয়া।

[বোখারী পর্ব ৬৮: /১৪, হাঃ ৫২৭৯; মুসলিম ২০/২, হাঃ ১৫০৪] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

২০/৩. “ওয়ালা” বিক্রয় করা ও দান করা নিষিদ্ধ ।

৯৬২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] ক্রীতদাসের অভিভাবকত্ব বিক্রি করিতে এবং তা দান করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৪৯: /১০, হাঃ ২৫৩৫; মুসলিম ২০/৩, হাঃ ১৫০৬] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

২০/৪. আযাদকৃত গোলামের জন্য আযাদকারী মনিব ছাড়া অন্যকে মনিব গণ্য করা নিষিদ্ধ ।

৯৬৩. ইবরাহীম তায়মী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার পিতা বর্ণনা করিয়াছেন যে, একদা আলী [রাদি.] পাকা ইটে নির্মিত একটি মিম্বরে আরোহণ করে আমাদের উদ্দেশ্যে খুত্‌বা পাঠ করিলেন। তাহাঁর সঙ্গে একটি তরবারী ছিল, যার মাঝে একটি সহীফা ঝুলন্ত ছিল। তিনি বলিলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমাদের নিকট আল্লাহ্‌র কিতাব এবং যা এ সহীফাতে লিপিবদ্ধ আছে এ ব্যতীত অন্য এমন কোন কিতাব নেই যা পাঠ করা যেতে পারে। অতঃপর তিনি তা খুললেন। তাতে উটের বয়স সম্পর্কে লেখা ছিল এবং লেখা ছিল যে, আয়র [পর্বত] থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত মাদীনাহ হারাম [পবিত্র এলাকা] বলে বিবেচিত হইবে। যে কেউ এখানে কোন অন্যায় করিবে তার উপর আল্লাহ্, ফেরেশতাকুল ও সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের অভিসম্পাত। আর আল্লাহ্ তাআলা তার ফারয ও নফল কোন ইবাদাতই কবূল করবেন না এবং তাতে আরও ছিল যে, এখানকার সকল মুসলিমের নিরাপত্তা একই পর্যায়ের। একজন নিম্ন পর্যায়ের ব্যক্তিও [অন্য কাউকে] নিরাপত্তা প্রদান করিতে পারবে। যদি কোন ব্যক্তি অপর একজন মুসলিমের প্রদত্ত নিরাপত্তাকে লঙ্ঘন করে, তাহলে তার উপর আল্লাহ্‌র, ফেরেশতাকূলের ও সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের লানাত [অভিসম্পাত]। আল্লাহ্ তাআলা তার ফার্‌য ও নফল কোন ইবাদাতই কবূল করবেন না। তাতে আরও ছিল, যদি কোন ব্যক্তি তার [আযাদকারী] মনিবের অনুমতি ব্যতীত অন্য কাউকে নিজের [গোলাম থাকাকালীন সময়ের] মনিব বলে উল্লেখ করে, তাহলে তার উপর আল্লাহ্‌র, ফেরেশতাকুলের ও সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের অভিসম্পাত। আর আল্লাহ্ তাআলা তার ফার্‌য, নফল কোন ইবাদাতই গ্রহণ করবেন না।

[বোখারী পর্ব ৯৬ : /৫, হাঃ ৭৩০০; মুসলিম ২০/৪, হাঃ ১৩৭০] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

২০/৫. গোলাম আযাদ করার ফাযীলাত ।

৯৬৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, কেউ কোন মুসলিম ক্রীতদাস মুক্ত করলে আল্লাহ্‌ সেই ক্রীতদাসের প্রত্যেক অঙ্গের বিনিময়ে তার এক একটি অঙ্গ [জাহান্নামের] আগুন হইতে মুক্ত করবেন। [বোখারী পর্ব ৪৯: /১, হাঃ ২৫১৭; মুসলিম ২০/৫, হাঃ ১৫০৯] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

Comments

One response to “মুক্তি বা ইতক । গোলাম আযাদ করার ফাযীলাত”

Leave a Reply