যাকাত অধ্যায় ও খারিজিদের পরিচয় হাদিস থেকে

যাকাত অধ্যায় ও খারিজিদের পরিচয়

যাকাত অধ্যায় ও খারিজিদের পরিচয় , এই পর্বের হাদীস =৮৫ টি (৫৬৭ – ৬০০) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-১২ঃ যাকাত

০/০. যাকাত
১২/২. মুসলিমের উপর গোলাম এবং ঘোড়ার যাকাত নেই।
১২/৩. অগ্রিম যাকাত আদায় করা ও যাকাত না দেয়ার বর্ণনা।
১২/৪. মুসলিমদের উপর যাকাতুল ফিত্‌র হিসাবে খেজুর ও যব প্রদান।
১২/৬. যাকাত অমান্যকারীর গুনাহ।
১২/৮. যে ব্যক্তি যাকাত আদায় করে না তার শাস্তির ভয়াবহতা।
১২/৯. সদাকাহ দেয়ার জন্য উৎসাহ দান।
১২/১০. যারা ধন-সম্পদ কুক্ষিগত করে তাহাদের শাস্তির ভয়াবহতা।
১২/১১. দান করার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও গোপনে দানকারীর জন্য সুসংবাদ।
১২/১৪. নিকটাত্মীয়, পরিবার, সন্তান-সন্ততির উপর খরচ করা ও সদাকাহ করার মর্যাদা যদিও তারা মুশরিক হয়।
১২/১৫. মৃত ব্যক্তির নামে খরচ করলে তার নিকট সওয়াব পৌঁছা।
১২/১৬. প্রত্যেক সৎ কাজকে সদাকাহ নামে অভিহিত করার বর্ণনা।
১২/১৭. দানকারী ও কৃপণতাকারী।
১২/১৮. সদাকাহ করার প্রতি উৎসাহ ঐ সময় আসার পূর্বে যখন সদাকাহ গ্রহীতা পাওয়া যাবে না।
১২/১৯. সৎ উপায়ে অর্জিত সম্পদ থেকে সদাকাহ গৃহীত হওয়া এবং তার বৃদ্ধি সাধন।
১২/২০. সদাকাহ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান যদিও তা খেজুরের একটু অংশ অথবা উত্তম কথা হয় এবং এটা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষাকারী ঢাল।
১২/২১. মুটে মজুর সদাকাহ করিতে পারে এবং অল্প পরিমাণ সদাকাহ্কারীকে দোষারোপ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
১২/২২. মানীহা এর ফাযীলাত [দুগ্ধপানের জন্য দুগ্ধবতী উট-ছাগল-ভেড়া সাময়িকভাবে দান]
১২/২৩. দানকারী ও কৃপণতাকারীর দৃষ্টান্ত।
১২/২৪. সদাকাহ প্রদানকারীর সওয়াব বহাল থাকিবে যদিও তা অযোগ্য লোকের হাতে পড়ে যায়।
১২/২৫. বিশ্বস্ত খাজাঞ্চীর এবং ঐ মহিলা যে সৎ উদ্দেশে তার স্বামীর গৃহ হইতে স্পষ্ট বা অস্পষ্ট অনুমতি সাপেক্ষে সদাকাহ করে, বিনষ্ট করার উদ্দেশে নয় তার প্রতিদান।
১২/২৭. যে ব্যক্তি এক সঙ্গে সদাকাহ ও উত্তম আমালসমূহ করিল।
১২/২৮. দান করার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও [সম্পদ] গণনা করা অপছন্দনীয় হওয়া।
১২/২৯. সদাকাহর প্রতি উৎসাহ প্রদান যদিও তা অল্প পরিমাণে হয়। অল্পকে তুচ্ছ মনে করে বিরত না থাকা।
১২/৩০. গোপনে সদাকাহ করার ফাযীলাত।
১২/৩২. উপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত হল দানকারী এবং নিচের হাত যাচঞ্চাকারী।
১২/৩৩. ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ হওয়া।
১২/৩৪. প্রকৃত মিসকীন সেই ব্যক্তি যার এতটুকু সম্পদ নেই যাতে প্রয়োজন মিটতে পারে আর তার অবস্থা দেখে বোঝাও যায় না যে তাকে সদাকাহ করা যাবে।
১২/৩৫. মানুষের নিকট যাচঞ্চা করা অপছন্দনীয়।
১২/৩৭. যাচঞ্চা বা লোভ করা ব্যতীত যা দেয়া হয় তা গ্রহণ করা বৈধ।
১২/৩৮. দুনিয়ার [সম্পদের] প্রতি লোভ-লালসা অপছন্দনীয়।
১২/৩৯. বানী আদামের যদি দুটি উপত্যকা থাকে তাহলে সে তৃতীয়টি চাইবে।
১২/৪০. অধিক ধন-সম্পদ থাকলেই ধনী নয়।
১২/৪১. দুনিয়ার চাকচিক্য থেকে যা বেরিয়ে আসবে সে ব্যাপারে ভয় করা।
১২/৪২. যাচঞ্চা থেকে বিরত থাকা ও ধৈর্য ধারণের ফাযীলাত।
১২/৪৩. অল্পে তুষ্ট থাকা।
১২/৪৪. ঐ ব্যক্তিকে প্রদান যে চায় অশ্লীল ও কঠোরভাবে।
১২/৪৫. ঐ ব্যক্তিকে প্রদান যার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবার ভয় রয়েছে।
১২/৪৬. ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য প্রদান এবং যাদের ঈমান শক্ত তাহাদের ধৈর্য ধারণ করা।
১২/৪৭. খারিজীদের বর্ণনা ও তাহাদের বৈশিষ্ট্য।
১২/৪৮. খারেজীদেরকে হত্যার ব্যাপারে উৎসাহিত করা।
১২/৪৯. খারিজীরা সৃষ্টি ও স্বভাবের দিক দিয়ে নিকৃষ্ট।
১২/৫০. রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর বংশধরদের জন্য যাকাত [গ্রহণ] হারাম। তারা হচ্ছে বানু হাশিম ও বানু মুত্তালিব। এছাড়া অন্যরা নয়।
১২/৫২. নাবী [সাঃআঃ] বানী হাশিম ও বানী মুত্তালিবের জন্য হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ, যদিও হাদিয়াদাতা সদাকাহর মাধ্যমে ঐ মালের মালিক হয়ে থাকে এবং ঐ জিনিসের বর্ণনা যে, সদাকাহ গ্রহীতা যখন তা গ্রহণ করে তখন সেটা সদাকাহর হুকুম হইতে মুক্ত হয়ে যায় এবং তা প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্য হালাল হয়ে যায় যাদের জন্য সদাকাহ গ্রহণ করা হারাম।
১২/৫৩. নাবী [সাঃআঃ] হাদিয়া গ্রহণ করিতেন আর সদাকাহ ফিরিয়ে দিতেন।
১২/৫৪. সদাকাহ দানকারীর জন্য দুআ করা।

০/০. যাকাত

৫৬৭. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পাঁচ উকিয়ার কম সম্পদের উপর যাকাত [ফারয] নেই এবং পাঁচটি উটের কমের উপর যাকাত নেই। পাঁচ ওয়াসাক* এর কম উৎপন্ন দ্রব্যের উপর যাকাত নেই।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৪ হাঃ ১৪০৫, মুসলিম ১২/১, হাঃ ৯৭৯] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/২. মুসলিমের উপর গোলাম এবং ঘোড়ার যাকাত নেই।

৫৬৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুসলিমের উপর তার ঘোড়া ও গোলামের কোন যাকাত নেই।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৪৫ হাঃ ১৪৬৩, মুসলিম ১২/২, হাঃ ৯৮২] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৩. অগ্রিম যাকাত আদায় করা ও যাকাত না দেয়ার বর্ণনা।

৫৬৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] যাকাত দেয়ার নির্দেশ দিলে বলা হলো, ইবনি জামীল, খালিদ ইবনি ওয়ালীদ ও আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব [রাদি.] যাকাত প্রদানে অস্বীকার করছে। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ ইবনি জামীলের যাকাত না দেয়ার কারণ এ ছাড়া কিছু নয় যে, সে দরিদ্র ছিল, পরে আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাহাঁর রসূলের বরকতে সম্পদশালী হয়েছে। আর খালিদের ব্যাপার হলো তোমরা খালিদের উপর অন্যায় করেছ, কারণ সে তার বর্ম ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র আল্লাহর পথে আবদ্ধ রেখেছে। আর আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব [রাদি.] তো আল্লাহর রসূলের চাচা। তাহাঁর যাকাত তাহাঁর জন্য সদাকাহ এবং সমপরিমাণও তার জন্য সদাকাহ। ইবনি আবুয্ যিনাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতা হইতে হাদীস বর্ণনায় শুআইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর অনুসরণ করিয়াছেন। আর ইবনি ইসহাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবুয্ যিনাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে হাদীসের শেষাংশে সদাকাহ শব্দের উল্লেখ করেননি। ইবনি জুরাইজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আরাজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে অনুরূপ হাদীস আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে।

[বোখারী পর্ব ২৪ ঃ /৪৯ হাঃ ১৪৬৮, মুসলিম ১২/২, হাঃ ৯৮৩] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৪. মুসলিমদের উপর যাকাতুল ফিত্‌র হিসাবে খেজুর ও যব প্রদান।

৫৭০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

মুসলিমদের প্রত্যেক আযাদ, গোলাম পুরুষ ও নারীর পক্ষ হইতে সদাকাতুল ফিত্র হিসেবে খেজুর অথবা যব-এর এক সাআ পরিমাণ* আদায় করা আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ফারয করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৭১ হাঃ ১৫০৪, মুসলিম ১২/২, হাঃ ৯৮৩] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৭১. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] সদাকাতুল ফিতর হিসেবে এক সাআ পরিমাণ খেজুর বা এক সাআ পরিমাণ যব দিয়ে আদায় করিতে নির্দেশ দেন। আবদুল্লাহ [রাদি.] বলেন, অতঃপর লোকেরা যবের সমপরিমাণ হিসেবে দু মুদ [অর্ধ সা] গম আদায় করিতে থাকে।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৭৪ হাঃ ১৫০৭, মুসলিম ১২/৪ হাঃ ৯৮৪] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৭২. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা এক সাআ পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সাআ পরিমাণ যব অথবা এক সাআ পরিমাণ খেজুর অথবা এক সাআ পরিমাণ পনির অথবা এক সাআ পরিমাণ কিসমিস দিয়ে সদাকাতুল ফিত্‌র আদায় করতাম।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৭৩ হাঃ ১৫০৬, মুসলিম ১২/৪ হাঃ ৯৮৫] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৭৩. আবু সাঈদ খুদ্‌রী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর যুগে এক সাআ খাদ্যদ্রব্য বা এক সাআ খেজুর বা এক সাআ যব বা এক সাআ কিসমিস দিয়ে সদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম। মুআবিয়াহ [রাদি.]-এর যুগে যখন গম আমদানী হল তখন তিনি বলিলেন, এক মুদ গম [পূর্বোক্তগুলোর] দু মুদ-এর সমপরিমাণ বলে আমার মনে হয়।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৭৫ হাঃ ১৫০৮, মুসলিম ১২/৪ হাঃ ৯৮৫] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৬. যাকাত অমান্যকারীর গুনাহ।

৫৭৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেন, ঘোড়া তিন শ্রেণীর লোকের জন্য। একজনের জন্য পুরস্কার; একজনের জন্য আবরণ এবং একজনের জন্য [পাপের] বোঝা। যার জন্য পুরস্কার, সে হলো, ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহ্‌র রাস্তায় ঘোড়া বেঁধে রাখে এবং রশি কোন চারণভূমি বা বাগানে লম্বা করে দেয়, আর ঘোড়াটি সে চারণভূমি বা বাগানে ঘাস খায়, তবে এর জন্য তার পুণ্য রয়েছে। আর ঘোড়াটি যদি রশি ছিঁড়ে এক বা দুটি টিলা অতিক্রম করে তাহলেও তার গোবর ও পদক্ষেপসমূহের বিনিময়ে তার জন্য পুণ্য রয়েছে। এমনকি ঐ ঘোড়া যদি কোন নহরে গিয়ে তা থেকে পানি পান করে, অথচ তার মালিক পানি পান করানোর ইচ্ছে করেনি, তবে এর ফলেও তার জন্য পুণ্য রয়েছে। আর যে ব্যক্তি অহংকার, লৌকিকতা প্রদর্শন এবং মুসলিমদের সঙ্গে শত্রুতা করার জন্য ঘোড়া বেঁধে রাখে তবে তার জন্য তা [পাপের] বোঝা।

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে আমার উপর আর কিছু অবতীর্ণ হয়নি, ব্যাপক অর্থপূর্ণ এই একটি আয়াত ব্যতীত। [আল্লাহ্‌র বাণীঃ] কেউ অণু পরিমাণ নেক কাজ করে থাকলে, সে তা দেখিতে পাবে; আর কেউ অণু পরিমাণ বদ কাজ করে থাকলে, সে তাও দেখিতে পাবে।। arbi

[যিলযালঃ ৭-৮][বোখারী পর্ব ৫৬ : /৪৮ হাঃ ২৮৬০, মুসলিম ১২/৬ হাঃ ৯৮৭] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৮. যে ব্যক্তি যাকাত আদায় করে না তার শাস্তির ভয়াবহতা।

৫৭৫. আবু যর গিফারী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি কাবা গৃহের ছায়ায় বসে বলেছিলেনঃ কাবাগৃহের রবের কসম! তারা ক্ষতিগ্রস্ত। কাবাগৃহের রবের কসম! তারা ক্ষতিগ্রস্ত। আমি বললাম, আমার অবস্থা কী? আমার মাঝে কি কিছু [ত্রুটি] পরিলক্ষিত হয়েছে? তিনি বলছিলেন, এমন অবস্থায় আমি তাহাঁর কাছে বসে পড়লাম। আমি তাঁকে থামাতে পারলাম না। যতক্ষণের জন্য আল্লাহ্ চাইলেন আমি চিন্তায় আচ্ছন্ন রইলাম। এরপর আমি আরয করলাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান ঐ সমস্ত লোক কারা হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! তিনি বললেনঃ এরা হল ঐ সকল লোক যারা অধিক সম্পদের অধিকারী। তবে হাঁ, ঐ সমস্ত লোক স্বতন্ত্র যারা এরূপ, এরূপ ও এরূপ [ক্ষেত্রে খরচ করে]।

[বোখারী পর্ব ৮৩ : /৮ হাঃ ৬৬৩৮, মুসলিম ১২/৮ হাঃ ৯৯০] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৭৬. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে গমন করলাম। তিনি বললেনঃ শপথ সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ [বা তিনি বলিলেন] শপথ সেই সত্তার, যিনি ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, অথবা অন্য কোন শব্দে শপথ করিলেন, উট, গরু বা বকরী থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এদের হক আদায় করেনি সেগুলো যেমন ছিল তার চেয়ে বৃহদাকার ও মোটা তাজা করে কিয়ামাতের দিন হাযির করা হইবে এবং তাকে পদপিষ্ট করিবে এবং শিং দিয়ে গুঁতো দিবে। যখনই দলের শেষটি চলে যাবে তখন পালাক্রমে আবার প্রথমটি ফিরিয়ে আনা হইবে। মানুষের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে এরূপ চলতে থাকিবে। হাদীসটি বুকায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবু সারিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর মাধ্যমে হুরাইরা [রাদি.] সূত্রে নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৪৩ হাঃ ১৪৬০, মুসলিম ১২/৮, হাঃ ৯৯০] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৯. সদাকাহ দেয়ার জন্য উৎসাহ দান।

৫৭৭. যায়দ ইবনি ওয়াহ্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহ্‌র কসম! আবু যার [রাদি.] রাবাযাহ নামক স্থানে আমাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, একদা আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে এশার সময় মাদীনায় হাররা নামক স্থান দিয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা উহুদ পাহাড়ের সম্মুখীন হলে তিনি আমাকে বললেনঃ হে আবু যার! আমি এটা পছন্দ করি না যে, আমার নিকট উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনা আসুক আর ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ব্যতীত এক দীনার পরিমাণ সোনাও এক রাত অথবা তিন রাত পর্যন্ত আমার হাতে থেকে যাক। বরং আমি পছন্দ করি যে, আমি এগুলো আল্লাহ্‌র বান্দাদের এভাবে বিলিয়ে দেই। [কিভাবে দেবেন] তা তাহাঁর হাত দিয়ে তিনি দেখালেন। অতঃপর বললেনঃ হে আবু যার! আমি বললামঃ

لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ

লাব্বাইকা ওয়া সদাইকা, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! তখন তিনি বললেনঃ দুনিয়াতে যারা অধিক সম্পদশালী, আখিরাতে তারা হইবেন অনেক কম সাওয়াবের অধিকারী। তবে যারা তাহাদের সম্পদকে এভাবে, এভাবে বিলিয়ে দেবে। তারা হইবেন এর ব্যতিক্রম। অতঃপর তিনি আমাকে বললেনঃ আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত, হে আবু যার! তুমি এ স্থানেই থাকো। এখান থেকে কোথাও যেয়ো না। এরপর তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন, এমনকি আমার চোখের আড়ালে চলে গেলেন। এমন সময় এটা শব্দ শুনলাম। এতে আমি শংকিত হয়ে পড়লাম যে, আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] কোন বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়লেন কিনা? তাই আমি সে দিকে অগ্রসর হইতে চাইলাম। কিন্তু সাথে সাথেই আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিষেধাজ্ঞা যে কোথায়ও যেয়ো না মনে পড়লো এবং আমি থেমে গেলাম। এরপর তিনি ফিরে আসলে আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আমি একটা আওয়ায শুনে শংকিত হয়ে পড়লাম যে, আপনি সেখানে গিয়ে কোন বিপদে পড়লেন কিনা। কিন্তু আপনার কথা স্মরণ করে থেমে গেলাম। তখন নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তিনি ছিলেন জিবরীল। তিনি আমার নিকট এসে সংবাদ দিলেন যে, আমার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যাবে, সে বেহেশ্তে প্রবেশ করিবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! যদিও সে ব্যক্তি ব্যভিচার করে? যদিও সে ব্যক্তি চুরি করে? তিনি বললেনঃ সে যদিও ব্যভিচার করে, যদিও চুরি করে থাকে তবুও।

[বোখারী পর্ব ৭৯ : /৩ হাঃ ৬২৬৮, মুসলিম ১২/৯ হাঃ ৯৯৪] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৭৮. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাতে আমি একবার বের হলাম। তখন নাবী [সাঃআঃ]-কে একাকী চলতে দেখলাম, তাহাঁর সঙ্গে কোন লোক ছিল না। আমি মনে করলাম, তাহাঁর সঙ্গে কেউ চলুক হয়ত তিনি তা অপছন্দ করবেন। তাই আমি চাঁদের ছায়াতে তাহাঁর পেছনে পেছনে চলতে লাগলাম। তিনি পেছনের দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখে ফেললেন। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এ কে? আমি বললাম, আমি আবু যার। আল্লাহ্ তাআলা আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গিত করুন। তিনি বললেনঃ ওহে আবু যার, এসো। আমি তাহাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ চললাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ অধিকের অধিকারীরাই ক্বিয়ামাতের দিন স্বল্পাধিকারী হইবে। অবশ্য যাদের আল্লাহ্ সম্পদ দান করেন এবং তারা তা ডানে, বামে, আগে ও পেছনে ব্যয় করে আর মঙ্গলজনক কাজে তা লাগায়, [তারা ব্যতীত]। অতঃপর আমি আরও কিছুক্ষণ তাহাঁরসঙ্গে চলার পর তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি এখানে বসে থাক। [একথা বলে] তিনি আমাকে চতুর্দিকে প্রস্তরঘেরা একটি খোলা জায়গায় বসিয়ে দিয়ে বললেনঃ আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি এখানেই বসে থেকো। তিনি বলেন, এরপর তিনি প্রস্তরময় প্রান্তরের দিকে চলে গেলেন। এমন কি তিনি আমার দৃষ্টির আগোচরে চলে গেলেন। এবং বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে গেল। অতঃপর তিনি ফিরে আসার সময় আমি তাঁকে বলিতে শুনলাম, যদিও সে চুরি করে, যদিও সে যিনা করে। অতঃপর তিনি যখন ফিরে এলেন, তখন আমি আর ধৈর্য ধারণ করিতে না পেরে তাঁকে জিজ্ঞেস করিতে বাধ্য হলাম যে, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আল্লাহ্ আমাকে আপনার প্রতি কুরবান করুন। আপনি এই প্রস্তর প্রান্তরে কার সাথে কথা বলিলেন? কাউকে তো আপনার কথার উত্তর দিতে শুনলাম না। তখন তিনি বললেনঃ তিনি ছিলেন জিব্রীল [আ.]। তিনি এই কংকরময় প্রান্তরে আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি বলিলেন, আপনার উম্মাতদের সুসংবাদ দেবেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সঙ্গে কাউকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ওহে জিব্রীল! যদিও সে চুরি করে, আর যদিও সে যিনা করে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমি বললামঃ যদিও সে চুরি করে আর যিনা করে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আবার আমি বললামঃ যদিও সে চুরি করে আর যিনা করে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। যদি সে শরাবও পান করে। নযর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]….আবুদ্ দারদা [রাদি.] থেকে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আবুদ্ দারদা থেকে আবু সালিহের বর্ণনা মুরসাল, যা সহীহ নয়। আমরা পরিচয়ের জন্য এনেছি। ঈমাম বোখারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, তবে এ সুসংবাদ এ অবস্থায় দেয়া হয়েছে, যদি সে তাওবাহ করে আর মৃত্যুকালে লা-ইল্লাল্লাহ্ বলে।

[বোখারী পর্ব ৮১ : /১৩ হাঃ ৬৪৪৩, মুসলিম ১২/৯ হাঃ ৯৯৬] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/১০. যারা ধন-সম্পদ কুক্ষিগত করে তাহাদের শাস্তির ভয়াবহতা।

৫৭৯. আহনাফ ইবনি কায়স [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি কুরাইশ গোত্রীয় একদল লোকের সাথে বসেছিলাম, এমন সময় রুক্ষ্ম চুল, মোটা কাপড় ও খসখসে শরীর বিশিষ্ট এক ব্যক্তি তাহাদের নিকট এসে সালাম দিয়ে বললো, যারা সম্পদ জমা করে রাখে তাহাদেরকে এমন গরম পাথরের সংবাদ দাও, যা তাহাদেরকে শাস্তি প্রদানের জন্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হইবে। তা তাহাদের স্তনের বোঁটার উপর স্থাপন করা হইবে আর তা কাঁধের পেশী ভেদ করে বের হইবে এবং কাঁধের চিকন হাড্ডির ওপর স্থাপন করা হইবে, তা নড়াচড়া করে সজোরে স্তনের বোঁটা ছেদ করে বের হইবে। এরপর লোকটি ফিরে গিয়ে একটি স্তম্ভের পাশে বসল। আমিও তাহাঁর অনুগমন করলাম ও তাহাঁর কাছে বসলাম। অথচ আমি জানতাম না সে কে। আমি তাকে বললাম, আমার মনে হয় যে, আপনার বক্তব্য লোকেরা পছন্দ করেনি। তিনি বলিলেন, তারা কিছুই বুঝে না।

কথাটি আমাকে আমার বন্ধু বলেছেন। রাবী বলেন, আমি বললাম, আপনার বন্ধু কে? সে বলিল, তিনি হলেন নাবী [সাঃআঃ]। তিনি আমাকে বলেন, হে আবু যার! তুমি কি উহুদ পাহাড় দেখেছ? তিনি বলেন, তখন আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দিনের কতটুকু অংশ বাকি রয়েছে। আমার ধারণা আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] তাহাঁর কোন প্রয়োজনে আমাকে পাঠাবেন। আমি জবাবে বললাম, জী-হাঁ। তিনি বললেনঃ আমি পছন্দ করি না যে আমার জন্য উহুদ পর্বত পরিমাণ স্বর্ণ হোক আর তা সমুদয় আমি নিজের জন্য ব্যয় করি তিনটি দীনার ব্যতীত। {আবু যার [রাদি.] বলেন} তারা তো বুঝে না, তারা শুধু দুনিয়ার সম্পদই একত্রিত করছে। আল্লাহর কসম, না! না! আমি তাহাদের নিকট দুনিয়ার কোন সম্পদ চাই না এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত দ্বীন সম্পর্কেও তাহাদের নিকট কিছু জিজ্ঞেস করবো না।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৪ হাঃ ১৪০৭-১৪০৮, মুসলিম ১২/১০, হাঃ ৯৯২] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/১১. দান করার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও গোপনে দানকারীর জন্য সুসংবাদ।

৫৮০. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, তুমি খরচ কর। আমি তোমাকে দান করব এবং {আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]} বলিলেন, আল্লাহ তাআলার হাত পরিপূর্ণ। [তোমার] রাতদিন অবিরাম খরচেও তা কমবে না। তিনি বলেন, তোমরা কি দেখ না, যখন থেকে [আল্লাহ] আসমান ও যমীন সৃষ্টি করিয়াছেন, তখন থেকে কী পরিমাণ খরচ করিয়াছেন? কিন্তু এত খরচ করার পরও তাহাঁর হাতের সম্পদে কোন কমতি হয়নি। আর আল্লাহ তাআলার আরশ পানির উপর ছিল। তাহাঁর হাতেই রয়েছে পাল্লা। তিনি ঝুঁকান, তিনি উপরে উঠান।

[বোখারী পর্ব ৬৫ : /১১ হাঃ ৪৬৮৪, মুসলিম ১২/১১ হাঃ ৯৯৩]

জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস ১২/১৩. প্রথমে নিজের জন্য ব্যয় করা, অতঃপর পরিবার-পরিজনের জন্য, অতঃপর নিকটাত্মীয়ের জন্য।

৫৮১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে সংবাদ পৌঁছল যে, তাহাঁর সাহাবীদের একজন তার গোলামকে মৃত্যুর পরে কার্যকর হইবে এই শর্তে আযাদ করিলেন। অথচ তাহাঁর এছাড়া আর কোন মাল ছিল না। নাবী [সাঃআঃ] সে গোলামটিকে আটশ দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন এবং প্রাপ্তমূল্য তার নিকট পাঠিয়ে দেন।

[বোখারী পর্ব ৯৩ : /৩২ হাঃ ৭১৮৬, মুসলিম ১২/১৩ হাঃ ৯৯৭] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/১৪. নিকটাত্মীয়, পরিবার, সন্তান-সন্ততির উপর খরচ করা ও সদাকাহ করার মর্যাদা যদিও তারা মুশরিক হয়।

৫৮২. আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মাদীনার আনসারীগণের মধ্যে আবু তালহা [রাদি.] সবচাইতে বেশী খেজুর বাগানের মালিক ছিলেন। মাসজিদে নাববীর নিকটবর্তী বায়রুহা নামক বাগানটি তাহাঁর কাছে অধিক প্রিয় ছিল। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] তাহাঁর বাগানে প্রবেশ করে এর সুপেয় পানি পান করিতেন। আনাস [রাদি.] বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ

لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ

“তোমরা যা ভালবাস তা হইতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করিবে না”- [আল ইমরানঃ ৯২] তখন আবু তালহা [রাদি.] আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর কাছে গিয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল ! আল্লাহ বলেছেনঃ

لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ

“তোমরা যা ভালবাস তা হইতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করিবে না”- [আলু ইমরানঃ ৯২] আর বায়রুহা বাগানটি আমার কাছে অধিক প্রিয়। এটি আল্লাহর নামে সদাকাহ করা হলো, আমি এর কল্যাণ কামনা করি এবং তা আল্লাহর নিকট আমার জন্য সঞ্চয়রূপে থাকিবে। কাজেই আপনি যাকে দান করা ভাল মনে করেন তাকে দান করুন। তখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমাকে ধন্যবাদ, এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ, এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ তা শুনলাম। আমি মনে করি, তোমার আপন জনদের মধ্যে তা বণ্টন করে দাও। আবু তালহা [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমি তাই করব। অতঃপর তিনি তাহাঁর আত্মীয়-স্বজন, আপন চাচার বংশধরের মধ্যে তা বণ্টন করে দিলেন। রাবী রাওহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] . . . . . শব্দে আবদুল্লাহ ইবনি ইউসুফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর অনুসরণ করিয়াছেন। আর রাবী ইয়াহইয়া ইবনি ইয়াহইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ও ইসমাঈল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে .. . . . শব্দ বলেছেন।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৪৪ হাঃ ১৪৬১, মুসলিম ১২/১৪, হাঃ ৯৯৮] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৮৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর আযাদকৃত গোলাম কুরায়ব হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী মায়মূনাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিত। তিনি তার এক বাঁদীকে মুক্ত করে দিলেন। রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তখন তাকে বলিলেন, তুমি যদি একে তোমার মামাদের কাউকে দিয়ে দিতে তবে তোমার অধিক পুণ্য হত।

[বোখারী পর্ব ৫১ : /১৬ হাঃ ২৫৯৪, মুসলিম ১২/১৪ হাঃ ৯৯৯] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৮৪. আবদুল্লাহ [ইবনি মাসউদ] [রাদি.]-এর স্ত্রী যায়নাব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

{রাবী আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন,} আমি ইবরাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সাথে এ হাদীসের আলোচনা করলে তিনি আবু উবায়দাহ সূত্রে আমর ইবনি হারিস [রাদি.]-এর মাধ্যমে আবদুল্লাহ [রাদি.]-এর স্ত্রী যায়নাব [রাদি.] হইতে হুবহু বর্ণনা করেন। তিনি {যায়নাব [রাদি.]} বলেন, আমি মাসজিদে ছিলাম। তখন নাবী [সাঃআঃ]-কে দেখলাম তিনি বলছেনঃ তোমরা সদাকাহ দাও যদিও তোমাদের অলংকার হইতে হয়। যায়নাব [রাদি.] আবদুল্লাহ [রাদি.] ও তাহাঁর পোষ্য ইয়াতীমের প্রতি খরচ করিতেন। তখন তিনি আবদুল্লাহকে বলিলেন, তুমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকট জেনে এসো যে, তোমার প্রতি এবং আমার পোষ্য ইয়াতীমদের প্রতি খরচ করলে আমার পক্ষ হইতে সদাকাহ আদায় হইবে কি? তিনি {ইবনি মাসউদ [রাদি.]} বলিলেন, বরং তুমিই আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর কাছে জেনে এসো। এরপর আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর নিকট গেলাম। তাহাঁর দরজায় আরো একজন আনসারী মহিলাকে দেখলাম, তার প্রয়োজনও আমার প্রয়োজনের অনুরূপ। তখন বিলাল [রাদি.]-কে আমাদের পাশ দিয়ে যেতে দেখে বললাম, আপনি নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে জিজ্ঞেস করুন, স্বামী ও আপন [পোষ্য] ইয়াতীমের প্রতি সদাকাহ করলে কি আমার পক্ষ হইতে তা যথেষ্ট হইবে? এবং এ কথাও বলেছিলাম যে, আমাদের কথা জানাবেন না। তিনি প্রবেশ করে তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বললেনঃ তারা কে? বিলাল [রাদি.] বলিলেন, যায়নাব। তিনি আবার জিজ্ঞেস করিলেন, কোন্ যায়নাব? তিনি উত্তর দিলেন, আবদুল্লাহর স্ত্রী। নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তার জন্য দুটি সওয়াব* রয়েছে, আত্মীয়কে দেয়ার সওয়াব আর সদাকাহ দেয়ার সওয়াব

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৪৮ হাঃ ১৪৬৬, মুসলিম ১২/১৪, হাঃ ১০০০] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৮৫. উম্মু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আবু সালামাহর সন্তানদের জন্য ব্যয় করলে তাতে আমার কোন সওয়াব হইবে কি? আমি তাহাদের এ [অভাবী] অবস্থায় ত্যাগ করিতে পারি না। তারা তো আমারই সন্তান। তিনি বললেনঃ হাঁ, তাহাদের জন্য খরচ করলে তুমি সওয়াব পাবে

[বোখারী পর্ব ৬৯ : /১৪ হাঃ ৫৩৬৯, মুসলিম ১২/১৪ হাঃ ১০০১] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৮৬. আবু মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাবী বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলামঃ এ কি নাবী [সাঃআঃ] থেকে? তিনি বলিলেন, [হাঁ] নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ সওয়াবের আশায় কোন মুসলমান যখন তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করে, তা তার সদাকাহ্য় পরিগণিত হয়।

[বোখারী পর্ব ৬৯ : /১ হাঃ ৫৩৫১, মুসলিম ১২/১৪ হাঃ ১০০২] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৮৭. আসমা বিনতে আবু বকর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর যুগে আমার আম্মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট এলেন। আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট ফাতওয়া চেয়ে বললাম, তিনি আমার প্রতি খুবই আকৃষ্ট, এমতাবস্থায় আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করব? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে সদাচরণ কর।

[বোখারী পর্ব ৫১ : /২৯ হাঃ ২৬২০, মুসলিম ১২/১৪ হাঃ ১০০৩] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/১৫. মৃত ব্যক্তির নামে খরচ করলে তার নিকট সওয়াব পৌঁছা।

৫৮৮. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিলেন, আমার মায়ের আকস্মিক মৃত্যু ঘটে, কিন্তু আমার বিশ্বাস তিনি [মৃত্যুর পূর্বে] কথা বলিতে সক্ষম হলে কিছু সদাকাহ করে যেতেন। এখন আমি তাহাঁর পক্ষ হইতে সদাকাহ করলে তিনি এর প্রতিফল পাবেন কি? তিনি {নাবী [সাঃআঃ]} বলিলেন, হ্যাঁ।

[বোখারী পর্ব ২৩ : /৯৫ হাঃ ১৩৮৮, মুসলিম ১২/১৫, হাঃ ১০০৪] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/১৬. প্রত্যেক সৎ কাজকে সদাকাহ নামে অভিহিত করার বর্ণনা।

৫৮৯. আবু মূসা আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলিমেরই সদাকাহ করা আবশ্যক। উপস্থিত লোকজন বললঃ যদি সে সদাকাহ করার মত কিছু না পায়। তিনি বললেনঃ তাহলে সে নিজের হাতে কাজ করিবে। এতে সে নিজেও উপকৃত হইবে এবং সদাকাহ করিবে। তারা বললঃ যদি সে সক্ষম না হয় অথবা বলেছেনঃ যদি সে না করে? তিনি বললেনঃ তাহলে সে যেন বিপদগ্রস্ত মাযলূমের সাহায্য করে। লোকেরা বললঃ সে যদি তা না করে? তিনি বললেনঃ তা হলে সে সৎ কাজের নির্দেশ দিবে, অথবা বলেছেন, সাওয়াবের কাজের আদেশ দিবে। তারা বললঃ তাও যদি সে না করে? তিনি বললেনঃ তা হলে সে মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকিবে । কারণ, এটাই তার জন্য সদাকাহ।

[বোখারী পর্ব ৭৮ : /৩৩ হাঃ ৬০২২, মুসলিম ১২/১৭ হাঃ ১০০৮] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৯০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেন যে, মানুষের প্রত্যেক জোড়ার প্রতি সদাকাহ রয়েছে, প্রতি দিন যাতে সূর্য উদিত হয় দুজন লোকের মধ্যে সুবিচার করাও সদাকাহ, কাউকে সাহায্য করে সওয়ারীতে আরোহণ করিয়ে দেয়া বা তার উপরে তার মালপত্র তুলে দেয়াও সদাকাহ, ভাল কথাও সদাকাহ, সলাত আদায়ের উদ্দেশ্যে পথ চলায় প্রতিটি কদমেও সদাকাহ, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাও সদাকাহ।

[বোখারী পর্ব ৫৬ : /১২৮ হাঃ ২৯৮৯, মুসলিম ১২/১৭ হাঃ ১০০৯] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/১৭. দানকারী ও কৃপণতাকারী।

৫৯১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /২৭ হাঃ ১৪৪২, মুসলিম ১২/১৭, হাঃ ১০১০] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/১৮. সদাকাহ করার প্রতি উৎসাহ ঐ সময় আসার পূর্বে যখন সদাকাহ গ্রহীতা পাওয়া যাবে না।

৫৯২. হারিসাহ্ ইবনি অহ্‌ব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা সদাকাহ কর, কেননা তোমাদের ওপর এমন যুগ আসবে যখন মানুষ আপন সদাকাহ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা গ্রহণ করার মত কাউকে পাবে না। [যাকে দাতা দেয়ার ইচ্ছে করিবে সে] লোকটি বলবে, গতকাল পর্যন্ত নিয়ে আসলে আমি গ্রহণ করতাম। আজ আমার আর কোন প্রয়োজন নেই।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৯ হাঃ ১৪১১, মুসলিম ১২/১৭, হাঃ ১০১১] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৯৩. আবু মূসা [আশআরী] [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মানুষের উপর অবশ্যই এমন এক সময় আসবে যখন লোকেরা সদাকাহর সোনা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু একজন গ্রহীতাও পাবে না। পুরুষের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় এবং নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চল্লিশজন নারী একজন পুরুষের অধীনে থাকিবে এবং তার আশ্রয় গ্রহণ করিবে।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৯ হাঃ ১৪১৪, মুসলিম ১২/১৮, হাঃ ১০১২] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৯৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামাত সংঘটিত হইবে না যতক্ষণ না তোমাদের মধ্যে সম্পদ বৃদ্ধি পেয়ে উপচে না পড়বে, এমনকি সম্পদের মালিকগণ তার সদাকাহ কে গ্রহণ করিবে তা নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। যাকেই দান করিতে চাইবে সে-ই বলবে, প্রয়োজন নেই।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৯ হাঃ ১৪১২, মুসলিম ১২/১৮, হাঃ ১৫৭] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/১৯. সৎ উপায়ে অর্জিত সম্পদ থেকে সদাকাহ গৃহীত হওয়া এবং তার বৃদ্ধি সাধন।

৫৯৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদাকাহ করিবে, [আল্লাহ তা কবূল করবেন] এবং আল্লাহ কেবল পবিত্র মাল কবূল করেন আর আল্লাহ তাহাঁর ডান হাত দিয়ে তা কবূল করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদাকাহ পাহাড় বরাবর হয়ে যায়।

[বোখারী পর্ব ৯৭ : /২৩ হাঃ ১৪১০, মুসলিম ১২/১৯ হাঃ ১০১৪] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/২০. সদাকাহ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান যদিও তা খেজুরের একটু অংশ অথবা উত্তম কথা হয় এবং এটা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষাকারী ঢাল।

৫৯৬. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা জাহান্নাম হইতে আত্মরক্ষা কর এক টুকরা খেজুর সদাকাহ করে হলেও।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /১০ হাঃ ১৪১৭, মুসলিম ১২/২০ হাঃ ১০১৬] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৯৭. আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গেই আল্লাহ্ তাআলা কথা বলবেন। আর সেদিন বান্দা ও আল্লাহ্‌র মাঝে কোন দোভাষী থাকিবে না। এরপর বান্দা নযর করে তার সামনে কিছুই দেখিতে পাবে না। সে পুনরায় তার সামনের দিকে নযর ফেরাবে তখন তার সামনে পড়বে জাহান্নাম। তোমাদের মাঝে যে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেতে চায়, সে যেন এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও নিজেকে রক্ষা করে।

রাবী বলেন, নাবী [সাঃআঃ]বললেনঃ তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আবার বললেনঃ তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তিনবার এরূপ করিলেন। এমন কি আমরা ভাবছিলাম যে তিনি বুঝি জাহান্নাম  দেখছেন। তিনি আবার বললেনঃ তোমরা এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। আর যদি কেউ সেটাও না পাও তাহলে উত্তম কথার দ্বারা হলেও [আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা কর]।

[বোখারী পর্ব ৮১ : /৪৯ হাঃ ৬৫৩৯-৬৫৪০, {১৪১৩}, মুসলিম ১২/২০ হাঃ ১০১৬] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/২১. মুটে মজুর সদাকাহ করিতে পারে এবং অল্প পরিমাণ সদাকাহ্কারীকে দোষারোপ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

৫৯৮. আবু মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন আমাদের সদাকাহ প্রদানের নির্দেশ দেয়া হল, তখন আমরা পরিশ্রমিকের বিনিময়ে বোঝা বহন করতাম। একদা আবু আকীল [রাদি.] অর্ধ সা খেজুর [দান করার উদ্দেশে] নিয়ে আসলেন এবং অন্য এক ব্যক্তি [আবদুর রহমান ইবনি আউফ] তার চেয়ে অধিক মালামাল [একই উদ্দেশে] নিয়ে উপস্থিত হলেন। [এগুলো দেখে] মুনাফিকরা সমালোচনা করিতে লাগল, আল্লাহ এ ব্যক্তির সদাকাহ্‌র মুখাপেক্ষী নন। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি {আবদুর রহমান ইবন আউফ [রাদি.]} শুধু মানুষ দেখানোর জন্য অধিক মালামাল দান করেছে। এ সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়- “মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদাকাহ দেয় এবং যারা নিজেদের পরিশ্রমলব্ধ বস্তু ছাড়া ব্যয় করার কিছুই পায় না, তাহাদেরকে যারা দোষারোপ করে ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, আল্লাহ তাহাদের বিদ্রুপ করেন। তাহাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি”- [সূরাহ বারাআত ৯/৭৯]।

[বোখারী পর্ব ৬৫ : /৯ হাঃ ৪৬৬৮, মুসলিম ১২/২১ হাঃ ১০১৮] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/২২. মানীহা এর ফাযীলাত [দুগ্ধপানের জন্য দুগ্ধবতী উট-ছাগল-ভেড়া সাময়িকভাবে দান]

৫৯৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, মানীহা হিসাবে অধিক দুগ্ধবতী উটনী ও অধিক দুগ্ধবতী বকরী কতই না উত্তম, যা সকাল বিকাল পাত্র ভর্তি দুধ দেয়।

[বোখারী পর্ব ৫১ : /৩৫ হাঃ ২৬২৯, মুসলিম ১২/২২ হাঃ ১০১৯] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/২৩. দানকারী ও কৃপণতাকারীর দৃষ্টান্ত।

৬০০. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] একবার কৃপণ ও দানশীল ব্যক্তিকে এমন দুব্যক্তির সাথে তুলনা করেন, যাদের পরিধানে লোহার দুটি বর্ম আছে। তাহাদের দুটি হাতই বুক ও ঘাড় পর্যন্ত পৌঁছে আছে। দানশীল ব্যক্তি যখন দান করে তখন তার বর্মটি এমনভাবে প্রশস্ত হয় যে, তার পায়ের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত ঢেকে ফেলে এবং [শরীরের চেয়ে লম্বা হবার জন্য চলার সময়] পদচিহ্ন মুছে ফেলে। আর কৃপণ লোকটি যখন দান করিতে ইচ্ছে করে, তখন তার বর্মটি শক্ত হয়ে যায় ও এক অংশ অন্য অংশের সাথে মিলে থাকে এবং প্রতিটি অংশ স্ব স্ব স্থানে থেকে যায়। আবু হুরায়রাহ [রাদি.] বলেনঃ আমি আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] কে তাহাঁর আঙ্গুল এভাবে বুকের দিক দিয়ে খোলা অংশের মধ্যে রেখে বলিতে দেখেছি, তুমি যদি তা দেখিতে [তাহলে দেখিতে] যে, তিনি তা প্রশস্ত করিতে চাইলেন কিন্তু প্রশস্ত হল না।

[বোখারী পর্ব ৭৭ : /৯ হাঃ ৫৭৯৭, মুসলিম ১২/২৩ হাঃ ১০২১] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/২৪. সদাকাহ প্রদানকারীর সওয়াব বহাল থাকিবে যদিও তা অযোগ্য লোকের হাতে পড়ে যায়।

৬০১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [পূর্ববর্তী উম্মাতের মধ্যে] এক ব্যক্তি বলিল, আমি কিছু সদাকাহ করব। সদাকাহ নিয়ে বের হয়ে [ভুলে] সে এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিলো। সকালে লোকেরা বলাবলি করিতে লাগলো, চোরকে সদাকাহ দেয়া হয়েছে। এতে সে বললো, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, আমি অবশ্যই সদাকাহ করবো। সদাকাহ নিয়ে বের হয়ে তা এক ব্যভিচারিণীর হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করিতে লাগলো, রাতে এক ব্যভিচারিণীকে সদাকাহ দেয়া হয়েছে। লোকটি বললো, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, [আমার সদাকাহ] ব্যভিচারিণীর হাতে পৌঁছল! আমি অবশ্যই সদাকাহ করব। এরপর সে সদাকাহ নিয়ে বের হয়ে কোন এক ধনী ব্যক্তির হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলিতে লাগলো, ধনী ব্যক্তিকে সদাকাহ দেয়া হয়েছে। লোকটি বলিল, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, [আমার সদাকাহ] চোর, ব্যভিচারিণী ও ধনী ব্যক্তির হাতে গিয়ে পড়লো! পরে স্বপ্নযোগে তাকে বলা হলো, তোমার সদাকাহ চোর পেয়েছে, সম্ভবত সে চুরি করা হইতে বিরত থাকিবে, তোমার সদাকাহ ব্যভিচারিণী পেয়েছে, সম্ভবত সে তার ব্যভিচার হইতে পবিত্র থাকিবে আর ধনী ব্যক্তি তোমার সদাকাহ পেয়েছে, সম্ভবত সে শিক্ষা গ্রহণ করিবে এবং আল্লাহর দেয়া সম্পদ হইতে সদাকাহ করিবে

। [বোখারী পর্ব ২৪ : /১৪ হাঃ ১৪২১, মুসলিম ১২/২৪, হাঃ ২২] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/২৫. বিশ্বস্ত খাজাঞ্চীর এবং ঐ মহিলা যে সৎ উদ্দেশে তার স্বামীর গৃহ হইতে স্পষ্ট বা অস্পষ্ট অনুমতি সাপেক্ষে সদাকাহ করে, বিনষ্ট করার উদ্দেশে নয় তার প্রতিদান।

৬০২. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ যে বিশ্বস্ত মুসলিম খাজাঞ্চী [আপন মালিক কর্তৃক] নির্দেশিত পরিমাণ সদাকাহর সবটুকুই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সানন্দচিত্তে আদায় করে, কোন কোন সময় তিনি …………..[বাস্তবায়িত করে] শব্দের স্থলে …………. [আদায় করে] শব্দ বলেছেন, সে খাজাঞ্চীও নির্দেশদাতার ন্যায় সদাকাহ দানকারী হিসেবে গণ্য।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /২৫ হাঃ ১৪৩৮, মুসলিম ১২/২৫, হাঃ ১০২৩] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬০৩. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন স্ত্রী যদি তার ঘর হইতে বিপর্যয় সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া খাদ্যদ্রব্য সদাকাহ করে তবে এ জন্যে সে সওয়াব লাভ করিবে আর উপার্জন করার কারণে স্বামীও সওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চীও অনুরূপ সওয়াব পাবে। তাহাদের একজনের কারণে অন্য জনের সওয়াবে কোন কমতি হইবে না।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /১৭ হাঃ ১৪২৫, মুসলিম ১২/২৫, হাঃ ১০২৪] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬০৪. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন, কোন স্ত্রী স্বামীর উপস্থিতিতে তাহাঁর অনুমতি ব্যতীত নফল রোযা রাখবে না।

[বোখারী পর্ব ৬৭ : /৮৪ হাঃ ৫১৯২, মুসলিম ১২/২৫ হাঃ ১০২৫] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬০৫. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি কোন মহিলা স্বামীর উপার্জন থেকে বিনা হুকুমে দান করে, তবে সে তার অর্ধেক সওয়াব পাবে।

[বোখারী পর্ব ৬৯ : /৫ হাঃ ৫৩৬০, মুসলিম ১২/২৫ হাঃ ১০২৬] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/২৭. যে ব্যক্তি এক সঙ্গে সদাকাহ ও উত্তম আমালসমূহ করিল।

৬০৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করিবে তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ হইতে ডাকা হইবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব যে সলাত আদায়কারী, তাকে সলাতের দরজা হইতে ডাকা হইবে। যে মুজাহিদ, তাকে জিহাদের দরজা হইতে ডাকা হইবে। যে সিয়াম পালনকারী, তাকে রাইয়্যান দরজা হইতে ডাকা হইবে। যে সদাকাহ দানকারী, তাকে সদাকাহর দরজা হইতে ডাকা হইবে। এরপর আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক, সকল দরজা হইতে কাউকে ডাকার কোন প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা হইতে ডাকা হইবে? আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বললেনঃ হাঁ। আমি আশা করি তুমি তাহাদের মধ্যে হইবে।

[বোখারী পর্ব ৩০ : /৪ হাঃ ১৮৯৭, মুসলিম ১২/২৭, হাঃ ১০২৭] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬০৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় দুটি করে কোন জিনিস ব্যয় করিবে, জান্নাতের প্রত্যেক দরজায় প্রহরী তাকে ডাক দিবে। [তারা বলবে], হে অমুক। এদিকে আস। আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে তো তার জন্য কোন ক্ষতি নেই। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি আশা করি যে, তুমি তাহাদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।

[বোখারী পর্ব ৫৬ : /৩৭ হাঃ ২৮৪১, মুসলিম ১২/২৭ হাঃ ১০২৭] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/২৮. দান করার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও [সম্পদ] গণনা করা অপছন্দনীয় হওয়া।

৬০৮. আসমা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ খরচ কর, আর হিসাব করিতে যেওনা, তাহলে আল্লাহ তোমার বেলায় হিসাব করে দিবেন। লুকিয়ে রেখ না, নইলে আল্লাহও তোমার ব্যাপারে লুকিয়ে রাখবেন।

[বোখারী পর্ব ৫১ : /১৫ হাঃ ২৫৯১, মুসলিম ১২/২৮ হাঃ ১০২৯] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/২৯. সদাকাহর প্রতি উৎসাহ প্রদান যদিও তা অল্প পরিমাণে হয়। অল্পকে তুচ্ছ মনে করে বিরত না থাকা।

৬০৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, হে মুসলিম নারীগণ! কোন মহিলা প্রতিবেশিনী যেন অপর মহিলা প্রতিবেশিনীর হাদিয়া তুচ্ছ মনে না করে, এমনকি তা ছাগলের সামান্য গোশতযুক্ত হাড় হলেও।

[বোখারী পর্ব ৫১ : /১ হাঃ ২৫৬৬, মুসলিম ১২/২৯ হাঃ ১০৩০] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৩০. গোপনে সদাকাহ করার ফাযীলাত।

৬১০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে দিন আল্লাহর [আরশের] ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকিবে না সে দিন আল্লাহ তাআলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। [১] ন্যায়পরায়ণ শাসক। [২] যে যুবক আল্লাহর ইবাদতের ভিতর গড়ে উঠেছে। [৩] যার অন্তরের সম্পর্ক সর্বদা মাসজিদের সাথে থাকে। [৪] আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে যে দুব্যক্তি পরস্পর মহব্বত রাখে, উভয়ে একত্রিত হয় সেই মহব্বতের উপর আর পৃথক হয় সেই মহব্বতের উপর। [৫] এমন ব্যক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী [অবৈধ মিলনের জন্য] আহ্বান জানিয়েছে তখন সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। [৬] যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে সদাকাহ করে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানতে পারে না। [৭] যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাতে আল্লাহর ভয়ে তার চোখ হইতে অশ্রু বের হয়ে পড়ে।

[বোখারী পর্ব ১০ : /৩৬ হাঃ ১৪২৩, মুসলিম ১২/৩০ হাঃ ১০৩১]

জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস ১২/৩১. সুস্থাবস্থায় সম্পদের প্রতি আকর্ষণ থাকাকালীন সদাকাহ্ই উত্তম সদাকাহ।

৬১১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক সাহাবী আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ সদাকাহর সওয়াব বেশি পাওয়া যায়? তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ সুস্থ ও কৃপণ অবস্থায় তোমার সদাকাহ করা যখন তুমি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করিবে ও ধনী হওয়ার আশা রাখবে। সদাকাহ করিতে এ পর্যন্ত দেরী করিবে না যখন প্রাণবায়ু কণ্ঠাগত হইবে, আর তুমি বলিতে থাকিবে, অমুকের জন্য এতটুকু, অমুকের জন্য এতটুকু, অথচ তা অমুকের জন্য হয়ে গেছে।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /১১ হাঃ ১৪১৯, মুসলিম ১২/৩১, হাঃ ১০৩২] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৩২. উপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত হল দানকারী এবং নিচের হাত যাচঞ্চাকারী।

৬১২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] একদা মিম্বারের উপর থাকা অবস্থায় সদাকাহ করা ও ভিক্ষা করা হইতে বেঁচে থাকা ও ভিক্ষা করা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেনঃ উপরের হাত নীচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত দাতার, আর নীচের হাত হলো ভিক্ষুকের।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /১৮ হাঃ ১৪২৯, মুসলিম ১২/৩২, হাঃ ১০৩৩] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬১৩. ওহায়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা [রাদি.] সূত্রে নাবী [সাঃআঃ] হইতে অনুরূপ বর্ণিত আছে

। [বোখারী পর্ব ২৪ : /১৮ হাঃ ১৪২৮, মুসলিম ১২/৩২, হাঃ ১০৩৪] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬১৪. হাকিম ইবনি হিযাম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট কিছু চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। অতঃপর বললেনঃ হে হাকিম! এই সম্পদ শ্যামল সুস্বাদু। যে ব্যক্তি প্রশস্ত অন্তরে [লোভ ব্যতীত] তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় হয়। আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় করা হয় না। যেন সে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না। উপরের হাত নিচের হাত হইতে উত্তম। হাকীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি বললাম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, তাহাঁর কসম! হে আল্লাহর রসূল! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত [সওয়াল করে] আমি কাউকে সামান্যতমও ক্ষতিগ্রস্ত করবো না। এরপর আবু বকর [রাদি.] হাকীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন, কিন্তু তিনি তাহাঁর কাছ হইতে তা গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিতেন। অতঃপর উমার [রাদি.] [তাহাঁর যুগে] তাঁকে কিছু দেয়ার জন্য ডাকলেন। তিনি তাহাঁর কাছ হইতেও কিছু গ্রহণ করিতে অস্বীকার করেন। উমার [রাদি.] বলিলেন, মুসলিমগণ! হাকিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর ব্যাপারে আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি। আমি তাহাঁর এই গনীমত হইতে তাহাঁর প্রাপ্য পেশ করেছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করিতে অস্বীকার করেছে। [সত্য সত্যই] আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর পর হাকীম [রাদি.] মৃত্যু অবধি কারো নিকট কিছু চেয়ে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করেননি।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৫০ হাঃ ১৪৭২, মুসলিম ১২/৩২, হাঃ ১০৩৫] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৩৩. ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ হওয়া।

৬১৫. হুমায়দ ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি মুআবিয়াহ [রাদি.]-কে খুৎবায় বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ইলম দান করেন। আমি তো বিতরণকারী মাত্র, আল্লাহ্ই [জ্ঞান] দাতা। সর্বদাই এ উম্মাত কিয়ামাত পর্যন্ত আল্লাহ্‌র হুকুমের উপর কায়েম থাকিবে, বিরোধিতাকারীরা তাহাদের কোন ক্ষতি করিতে পারবে না।

[বোখারী পর্ব ৩ : /১৩ হাঃ ৭১, মুসলিম ১২/৩৩ হাঃ ১০৩৭] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৩৪. প্রকৃত মিসকীন সেই ব্যক্তি যার এতটুকু সম্পদ নেই যাতে প্রয়োজন মিটতে পারে আর তার অবস্থা দেখে বোঝাও যায় না যে তাকে সদাকাহ করা যাবে।

৬১৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, প্রকৃত মিসকীন সে নয় যে মানুষের কাছে ভিক্ষার জন্য ঘুরে বেড়ায় এবং এক-দু লোকমা অথবা এক-দুটি খেজুর পেলে ফিরে যায় বরং প্রকৃত মিসকীন সেই ব্যক্তি, যার এতটুকু সম্পদ নেই যাতে তার প্রয়োজন মিটতে পারে এবং তার অবস্থা সেরূপ বোঝা যায় না যে, তাকে দান খয়রাত করা যাবে আর সে মানুষের কাছে যাচঞ্চা করে বেড়ায় না

। [বোখারী পর্ব ২৪ : /৩৫ হাঃ ১৪৭৯, মুসলিম ১২/৩৪ হাঃ ১০৩৯] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৩৫. মানুষের নিকট যাচঞ্চা করা অপছন্দনীয়।

৬১৭. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সব সময় মানুষের কাছে চেয়ে থাকে, সে কিয়ামাতের দিন এমনভাবে উপস্থিত হইবে যে, তার মুখমণ্ডলে কোন গোশ্ত থাকিবে না।

[বোখারী পর্ব ৩৪ : /৫২ হাঃ ১৪৭৫, মুসলিম ১২/৩৫ হাঃ ১০৪০] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬১৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের কারো পক্ষে এক বোঝা লাকড়ী সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে নেয়া কারো নিকট চাওয়ার চেয়ে উত্তম। কেউ দিতেও পারে, নাও দিতে পারে।

[বোখারী পর্ব ৩৪ : /১৫ হাঃ ২০৭৪, মুসলিম ১২/৩৫, হাঃ ১০৪২] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৩৭. যাচঞ্চা বা লোভ করা ব্যতীত যা দেয়া হয় তা গ্রহণ করা বৈধ।

৬১৯. উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আমাকে কিছু দান করিতেন, তখন আমি বলতাম, যে আমার চেয়ে বেশি অভাবগ্রস্ত, তাকে দিন। তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিতেনঃ তা গ্রহণ কর। যখন তোমার কাছে এসব মালের কিছু আসে অথচ তার প্রতি তোমার অন্তরে লোভ নেই এবং তার জন্য তুমি প্রার্থী নও, তখন তা তুমি গ্রহণ করিবে। এরূপ না হলে তুমি তার প্রতি অন্তর ধাবিত করিবে না।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৫১ হাঃ ১৪৭৩, মুসলিম ১২/৩৬, হাঃ ১০৪৫] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৩৮. দুনিয়ার [সম্পদের] প্রতি লোভ-লালসা অপছন্দনীয়।

৬২০. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, বৃদ্ধ লোকের অন্তর দুটি ব্যাপারে সর্বদা যুবক থাকে। এর একটি হল দুনিয়ার মুহাব্বাত, আরেকটি হল উচ্চাকাঙক্ষা।

[বোখারী পর্ব ৮১ : /৫ হাঃ ৬৪২০, মুসলিম ১২/৩৮ হাঃ ১০৪৬] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬২১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আদাম সন্তানের বয়স বাড়ে আর তার সাথে দুটি জিনিসও বৃদ্ধি পায়; ধন-সম্পদের মহব্বত ও দীর্ঘায়ুর আকাঙক্ষা

। [বোখারী পর্ব ৮১ : /৫ হাঃ ৬৪২১, মুসলিম ১২/৩৮ হাঃ ১০৪৭] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৩৯. বানী আদামের যদি দুটি উপত্যকা থাকে তাহলে সে তৃতীয়টি চাইবে।

৬২২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেনঃ যদি আদাম সন্তানের স্বর্ণ পরিপূর্ণ একটা উপত্যকা থাকে, তথাপি সে তার জন্য দুটি উপত্যকার কামনা করিবে। তার মুখ একমাত্র মাটি ব্যতীত অন্য কিছুই ভরতে পারবে না। অবশ্য যে ব্যক্তি তাওবাহ করে, আল্লাহ্ তাআলা তার তাওবাহ কবূল করেন।

[বোখারী পর্ব ৮১ : /১০ হাঃ ৬৪৩৯, মুসলিম ১২/৩৯ হাঃ ১০৪৮] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬২৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, তিনি বলেনঃ বানী আদমের জন্য যদি এক উপত্যকা পরিমাণ ধনসম্পদ থাকে, তাহলে সে আরও ধন অর্জনের জন্য লালায়িত থাকিবে। বানী আদামের লোভী চোখ মাটি ব্যতীত আর কিছুই তৃপ্ত করিতে পারবে না। তবে যে তাওবাহ করিবে আল্লাহ্ তাআলা তার তাওবাহ কবূল করবেন।

[বোখারী পর্ব ৮১ : /১০ হাঃ ৬৪৩৭, মুসলিম ১২/৩৯ হাঃ ১০৪৯] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৪০. অধিক ধন-সম্পদ থাকলেই ধনী নয়।

৬২৪. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বৈষয়িক প্রাচুর্য ঐশ্বর্য নয় বরং প্রকৃত ঐশ্বর্য হল অন্তরের ঐশ্বর্য।

[বোখারী পর্ব ৮১ : /১৫ হাঃ ৬৪৪৬, মুসলিম হাঃ] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৪১. দুনিয়ার চাকচিক্য থেকে যা বেরিয়ে আসবে সে ব্যাপারে ভয় করা।

৬২৫. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের জন্য যমীনের বরকতসমূহ প্রকাশিত করে দেবেন, আমি তোমাদের জন্য এ ব্যাপারেই সর্বাধিক আশংকা করছি। জিজ্ঞেস করা হলো, যমীনের বরকতসমূহ কী? তিনি বললেনঃ দুনিয়ার জাঁকজমক। তখন এক ব্যক্তি তাহাঁর কাছে বলিলেন, ভাল কি মন্দ নিয়ে আসবে? তখন নাবী [সাঃআঃ] কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন, যদ্দরুন আমরা ধারণা করলাম যে, এখন তাহাঁর উপর [ওয়াহয়ী] নাযিল হচ্ছে। এরপর তিনি তাহাঁর কপাল থেকে ঘাম মুছে জিজ্ঞেস করিলেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলিল, আমি। আবু সাঈদ [রাদি.] বলেন, যখন এটি প্রকাশ পেল, তখন আমরা প্রশ্নকারীর প্রশংসা করলাম। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ ভাল একমাত্র ভালকেই বয়ে আনে। নিশ্চয়ই এ ধনদৌলত সবুজ শ্যামল সুমিষ্টি। অবশ্যি বসন্ত যে সবজি উৎপাদন করে, তা ভক্ষণকারী পশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় অথবা নিকটে করে দেয়, তবে যে প্রাণী পেট ভরে খেয়ে সূর্যমুখী হয়ে জাবর কাটে, মল-মূত্র ত্যাগ করে এবং পুনঃ খায় [এর অবস্থা ভিন্ন]। এ পৃথিবীর ধনদৌলত তদ্রƒপ সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি তা সৎভাবে গ্রহণ করিবে এবং সৎকাজে ব্যয় করিবে, তা তার খুবই সাহায্যকারী হইবে। আর যে তা অন্যায়ভাবে গ্রহণ করিবে, তার অবস্থা হইবে ঐ ব্যক্তির মত যে খেতে থাকে আর পরিতৃপ্ত হয় না।

[বোখারী পর্ব ৮১ : /৭ হাঃ ৬৪২৭, মুসলিম ১২/৪১ হাঃ ১০৫২] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬২৬. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা নাবী [সাঃআঃ] মিম্বরে বসলেন এবং আমরা তাহাঁর আশেপাশে বসলাম। তিনি বললেনঃ আমার পরে তোমাদের ব্যাপারে আমি যা আশঙ্কা করছি তা হলো এই যে দুনিয়ার চাকচিক্য ও সৌন্দর্য [ধন-সম্পদ] তোমাদের সামনে খুলে দেয়া হইবে। এক সহাবী বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! কল্যাণ কি কখনো অকল্যাণ বয়ে আনে? এতে নাবী [সাঃআঃ] নীরব হলেন। প্রশ্নকারীকে বলা হলো, তোমার কী হয়েছে? তুমি নাবী [সাঃআঃ]-এর সাথে কথা বলছ, কিন্তু তিনি তোমাকে জওয়াব দিচ্ছেন না? তখন আমরা অনুভব করলাম যে, নাবী [সাঃআঃ]-এর উপর ওয়াহী নাযিল হচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তাহাঁর ঘাম মুছলেন এবং বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? যেন তার প্রশ্নকে প্রশংসা করে বলিলেন, কল্যাণ কখনো অকল্যাণ বয়ে আনে না। অবশ্য বসন্ত মৌসুম যে ঘাস উৎপন্ন করে তা [সবটুকুই সুস্বাদু ও কল্যাণকর বটে তবে] অনেক সময় হয়ত [ভোজনকারী প্রাণীর] জীবন নাশ করে অথবা তাকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়। তবে ঐ তৃণভোজী জন্তু, যে পেট ভরে খাওয়ার পর সূর্যের তাপ গ্রহণ করে এবং মল ত্যাগ করে, প্রস্রাব করে এবং পুনরায় চলে [সেই মৃত্যু থেকে রক্ষা পায় তেমনি] এই সম্পদ হলো আকর্ষণীয় সুস্বাদু। কাজেই সে-ই ভাগ্যবান মুসলিম, যে এই সম্পদ থেকে মিসকীন, ইয়াতীম ও মুসাফিরকে দান করে অথবা নাবী [সাঃআঃ] যেরূপ বলেছেন, আর যে ব্যক্তি এই সম্পদ অন্যায়ভাবে উপার্জন করে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে খেতে থাকে এবং তার পেট ভরে না। ক্বিয়ামাত দিবসে ঐ সম্পদ তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৪৭ হাঃ ১৪৬৫, মুসলিম ১২/৪১ হাঃ ১০৫২] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৪২. যাচঞ্চা থেকে বিরত থাকা ও ধৈর্য ধারণের ফাযীলাত।

৬২৭. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

কিছু সংখ্যক আনসারী সহাবী আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট কিছু চাইলে তিনি তাঁদের দিলেন, পুনরায় তাঁরা চাইলে তিনি তাঁদের দিলেন। এমনকি তাহাঁর নিকট যা ছিল সবই শেষ হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেনঃ আমার নিকট যে মাল থাকে তা তোমাদের না দিয়ে আমার নিকট জমা রাখি না। তবে যে চাওয়া হইতে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন আর যে পরমুখাপেক্ষী না হয়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাকে সবর দান করেন। সবরের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোন নিআমত কাউকে দেয়া হয়নি।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৫০ হাঃ ১৪৬৯, মুসলিম ১২/৪২, হাঃ ১০৫৩] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৪৩. অল্পে তুষ্ট থাকা।

৬২৮. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] দুআ করিতেনঃ arbi

اللهُمَّ ارْزُقْ آلَ مُحَمَّدٍ قُوتًا

হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর পরিবারকে প্রয়োজনীয় জীবিকা দান করুন।

[বোখারী পর্ব ৮১ : /১৭ হাঃ ৬৪৬০, মুসলিম ১২/৪৩ হাঃ ১০৫৫] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৪৪. ঐ ব্যক্তিকে প্রদান যে চায় অশ্লীল ও কঠোরভাবে।

৬২৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে চলছিলাম। এ সময় তাহাঁর পরিধানে চওড়া পাড় বিশিষ্ট একটি নাজরানী ডোরাদার চাদর ছিল। একজন বেদুঈন তাহাঁর কাছে এলো। সে তাহাঁর চাদর ধরে খুব জোরে টান দিল। এমন কি আমি দেখিতে পেলাম আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]-এর কাঁধে চাদরের পাড়ের দাগ পড়ে গেছে। অতঃপর সে বললঃ হে মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]! আপনার নিকট আল্লাহ্‌র যে সম্পদ আছে, তা থেকে আমাকে কিছু দিতে বলুন। আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ] তার দিকে ফিরে তাকিয়ে হাসলেন এবং তাকে কিছু দান করার নির্দেশ দিলেন।

[বোখারী পর্ব ৫৭ : /১৯ হাঃ ৫৮০৯, মুসলিম ১২/৪৪ হাঃ ১০৫৭] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৩০. মিসওয়ার ইবনি মাখরামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] একবার কিছু কবা [পোশাক বিশেষ] বণ্টন করিলেন। কিন্তু মাখরামাহকে তা হইতে একটিও দিলেন না। মাখরামাহ [রাদি.] তখন [ছেলেকে] বলিলেন, প্রিয় বৎস! আমাকে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর খিদমতে নিয়ে চল। {মিসওয়ার [রাদি.] বলেন} আমি তার সঙ্গে গেলাম, তখন তিনি আমাকে বলিলেন, যাও, ভেতরে গিয়ে তাঁকে আমার জন্য আহ্বান জানাও। {মিসওয়ার [রাদি.]} বলেন, অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে আহ্বান জানালাম। তিনি বেরিয়ে এলেন। তখন তাহাঁর নিকট একটি কবা ছিল। তিনি বলিলেন, এটা আমি তোমার জন্য হিফাযত করে রেখে দিয়েছিলাম। মাখরামাহ [রাদি.] সেটি তাকিয়ে দেখলেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, মাখরামাহ খুশী হয়ে গেছে।

[বোখারী পর্ব ৫১ : /১৯ হাঃ ২৫৯৯, মুসলিম ১২/৪৪ হাঃ ১০৫৮] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৪৫. ঐ ব্যক্তিকে প্রদান যার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবার ভয় রয়েছে।

৬৩১. সাদ ইবনি আবু ওক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] একদল লোককে কিছু দান করিলেন। আমি তাহাদের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলাম। নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের মধ্য হইতে এক ব্যক্তিকে কিছুই দিলেন না। অথচ সে ছিল আমার বিবেচনায় তাহাদের মধ্যে সবচাইতে উত্তম। আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর কাছে গিয়ে চুপে চুপে বললাম, অমুক সম্পর্কে আপনার কী হলো? আমি তো তাকে অবশ্য মুমিন বলে মনে করি। তিনি বললেনঃ বরং মুসলিম [বল]। সাদ [রাদি.] বলেন, এরপর আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। আবার তার সম্পর্কে আমার ধারণা প্রবল হয়ে উঠলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! অমুক সম্পর্কে আপনার কী হলো? আল্লাহর কসম! আমি তো তাকে মুমিন বলে মনে করি। তিনি বললেনঃ বরং মুসলিম। এবারও কিছুক্ষণ নীরব রইলাম। আবার তার সম্পর্কে আমার ধারণা প্রবল হয়ে উঠলে আমি বললাম, অমুক সম্পর্কে আপনার কী হলো? আল্লাহর কসম! আমি তো তাকে মুমিন বলে মনি করি। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ অথবা মুসলিম! এভাবে তিনবার বলিলেন। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বললেনঃ অন্য ব্যক্তি আমার নিকট অধিক প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আমি আরেকজনকে দিয়ে থাকি এই আশঙ্কায় যে, তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৫৩ হাঃ ১৪৭৮, মুসলিম ১২/৫৪ হাঃ ১৫০] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৪৬. ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য প্রদান এবং যাদের ঈমান শক্ত তাহাদের ধৈর্য ধারণ করা।

৬৩২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

যখন আল্লাহ্ তাআলা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে হাওয়াযিন গোত্রের মাল থেকে যা দান করার তা দান করিলেন। আর তিনি কুরাইশ গোত্রের লোকদের একশ করে উট দিতে লাগলেন। তখন আনসারদের হইতে কিছু সংখ্যক লোক বলিতে লাগল, আল্লাহ আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে ক্ষমা করুন। তিনি কুরাইশদেরকে দিচ্ছেন, আমাদেরকে দিচ্ছেন না। অথচ আমাদের তলোয়ার থেকে এখনও তাহাদের রক্ত ঝরছে। আনাস [রাদি.] বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট তাহাদের কথা পৌঁছান হল। তখন তিনি আনসারদের ডেকে পাঠালেন এবং চর্ম নির্মিত একটি তাঁবুতে তাহাদের একত্রিত করিলেন আর তাঁদের সঙ্গে তাঁদের ব্যতীত আর কাউকে ডাকলেন না। যখন তাঁরা সকলে একত্রিত হলেন, তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তাঁদের নিকট এলেন এবং বলিলেন, আমার নিকট তোমাদের ব্যাপারে যে কথা পৌঁছেছে তা কী? তাঁদের মধ্যে বয়স্ক লোকেরা তাঁকে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্য থেকে বয়স্করা কিছুই বলেননি। আমাদের কতিপয় তরুণরা বলেছেঃ আল্লাহ আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে ক্ষমা করুন। তিনি আনসারদের না দিয়ে কুরায়শদের দিচ্ছেন; অথচ আমাদের তরবারি হইতে এখনও তাহাদের রক্ত ঝরছে। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি এমন লোকদের দিচ্ছি, যাদের কুফরীর যুগ মাত্র শেষ হয়েছে। তোমরা কি এতে খুশী নও যে, লোকেরা দুনিয়াবী সম্পদ নিয়ে ফিরবে, আর তোমরা আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]-কে নিয়ে মনযিলে ফিরবে আর আল্লাহ্‌র কসম, তোমরা যা নিয়ে মনযিলে ফিরবে, তা তারা যা নিয়ে ফিরবে, তার চেয়ে উত্তম। তখন আনসারগণ বলিলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা এতেই সন্তুষ্ট। অতঃপর আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, আমার পরে তোমরা তোমাদের উপর অন্যদের খুব প্রাধান্য দেখিতে পাবে। তখন তোমরা ধৈর্য অবলম্বন করিবে, যে পর্যন্ত না তোমরা আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে হাউযে কাওসারে মিলিত হইবে। আনাস [রাদি.] বলেন, কিন্তু আমরা ধৈর্যধারণ করিতে পারিনি

[বোখারী পর্ব ৫৭ : /১৯ হাঃ ৩১৪৭, মুসলিম হাঃ] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৩৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আনসারদের বলিলেন, তোমাদের মধ্যে অপর গোত্রের কেউ আছে কি? তারা বলিলেন না, অন্য কেউ নেই। তবে আমাদের এক ভাগিনা আছে। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন কোন গোত্রের ভাগ্নে সে গোত্রেরই অন্তর্ভুক্ত।

[বোখারী পর্ব ৬১ : /১৪ হাঃ ৩৫২৮, মুসলিম হাঃ] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৩৪. আবু তাইয়্যাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি, মাক্কাহ বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কুরাইশদেরকে মালে গনীমত দিলে কিছু সংখ্যক আনসার বলেছিলেন যে, এ বড় আশ্চর্যের বিষয় যে, তিনি কুরাইশদের মাল দিলেন অথচ আমাদের তলোয়ার হইতে তাহাদের রক্ত এখনও ঝরছে। নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এ কথা পৌঁছলে তিনি আনসারদেরকে ডেকে বলিলেন, আমি তোমাদের হইতে যে কথাটি শুনতে পেলাম, সে কথাটি কী? যেহেতু তাঁরা মিথ্যা কথা বলিতেন না, সেহেতু তাঁরা বলিলেন, আপনার নিকট যা পৌঁছেছে তা সত্যই। তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকজন গনীমতের মাল নিয়ে তাহাদের ঘরে ফিরে যাবে আর তোমরা আল্লাহ্‌র রসূলকে নিয়ে নিজ ঘরে ফিরবে। যদি আনসারগণ উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়ে চলে তবে আমি আনসারদের উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়েই চলব।

[বোখারী পর্ব ৬৩ : /১ হাঃ ৩৭৭৮, মুসলিম হাঃ] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৩৫. আনাস [ইবনি মালিক] [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুনাইনের দিন নাবী [সাঃআঃ] হাওয়াযিন গোত্রের মুখোমুখী হলেন। তাহাঁর সঙ্গে ছিল দশ হাজার [মুহাজির ও আনসার সৈনিক] এবং [মাক্কাহ্র] নও-মুসলিম। যুদ্ধে এরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিল। এ মুহূর্তে তিনি {নাবী [সাঃআঃ]} বলিলেন, ওহে আনসার সকল! তাঁরা জওয়াব দিলেন, আমরা হাযির, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার সাহায্য করিতে আমরা প্রস্তুত এবং আপনার সামনেই আমরা উপস্থিত। নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর সাওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন। তিনি বলিলেন, আমি আল্লাহ্‌র বান্দা এবং তাহাঁর রসূল। মুশরিকরা পরাজিত হল। তিনি নও-মুসলিম এবং মুহাজিরদেরকে [গনীমত] বণ্টন করে দিলেন। আর আনসারদেরকে কিছুই দিলেন না। [এতে তারা নিজেদের মধ্যে সে কথা বলাবলি করছিল।] তখন তিনি তাহাদেরকে ডেকে এনে একটি তাঁবুর ভিতর জমায়েত করিলেন এবং বলিলেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট থাকিবে না যে, লোকজন বকরী ও উট নিয়ে যাবে আর তোমরা যাবে আল্লাহ্‌র রসূলকে নিয়ে। এরপর নাবী [সাঃআঃ] আরো বলিলেন, যদি লোকজন উপত্যকা দিয়ে চলে আর আনসাররা গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের গিরিপথকেই বেছে নেব।

[বোখারী পর্ব ৬৪ : /৫৬ হাঃ ৪৩৩৩, মুসলিম হাঃ] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৩৬. আবদুল্লাহ ইবনি যাইদ ইবনি আসিম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুনাইনের দিবসে আল্লাহ যখন আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]-কে গনীমতের সম্পদ দান করিলেন তখন তিনি ঐগুলো সেসব মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন যাদের হৃদয়কে ঈমানের উপর সুদৃঢ় করার প্রয়োজন তিনি অনুভব করেছিলেন। আর আনসারগণকে কিছুই দিলেন না। ফলে তাঁরা যেন নাখোশ হয়ে গেলেন। কেননা অন্যেরা যা পেয়েছে তাঁরা তা পাননি। অথবা তিনি বলেছেনঃ তাঁরা যেন দুঃখিত হয়ে গেলেন। কেননা অন্যেরা যা পেয়েছে তারা তা পাননি। কাজেই নাবী [সাঃআঃ] তাহাদেরকে সম্বোধন করে বলিলেন, হে আনসারগণ! আমি কি তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট পাইনি, অতঃপর আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদেরকে হিদায়াত দান করিয়াছেন? তোমরা ছিলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরকে জুড়ে দিয়েছেন। তোমরা ছিলে দরিদ্র, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করিয়াছেন। এভাবে যখনই তিনি কোন কথা বলেছেন তখন আনসারগণ জবাবে বলেছেন, আল্লাহ এবং তাহাঁর রসূলই আমাদের উপর অধিক ইহ্সানকারী। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র রসূলের জবাব দিতে তোমাদেরকে বাধা দিচ্ছে কিসে? তাঁরা তখনও তিনি যা কিছু বলছেন তার উত্তরে বলে যাচ্ছেন, আল্লাহ এবং তাহাঁর রসূলই আমাদের উপর অধিক ইহ্সানকারী। তিনি বলিলেন, তোমরা ইচ্ছে করলে বলিতে পার যে, আপনি আমাদের কাছে এমন এমন [সংকটময়] সময়ে এসেছিলেন কিন্তু তোমরা কি এ কথায় সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক বকরী ও উট নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের বাড়ি ফিরে যাবে আল্লাহ্‌র নাবীকে সাথে নিয়ে। যদি আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে আমাকে হিজরত করানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত না থাকত তা হলে আমি আনসারদের মধ্যকারই একজন থাকতাম। যদি লোকজন কোন উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়েই চলব। আনসারগণ হচ্ছে [নববী] ভিতরের পোশাক আর অন্যান্য লোক হচ্ছে উপরের পোশাক। আমার বিদায়ের পর অচিরেই তোমরা দেখিতে পাবে অন্যদের অগ্রাধিকার। তখন ধৈর্য ধারণ করিবে [দ্বীনের উপর টিকে থাকিবে] যে পর্যন্ত না তোমরা হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ কর।

[বোখারী পর্ব ৬৪ : /৫৬ হাঃ ৪৩৩০, মুসলিম ১২/৪৬, হাঃ ১০৬১] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৩৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ[রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুনাইনের দিনে নাবী [সাঃআঃ] কোন কোন লোককে বণ্টনে অন্যদের উপর অগ্রাধিকার দেন। তিনি আকরা ইবনি হাবিছকে একশ উট দিলেন। উয়াইনাকেও এ পরিমাণ দেন। উচ্চবংশীয় আরব ব্যক্তিদের দিলেন এবং বণ্টনে তাহাদের অতিরিক্ত দিলেন। এক ব্যক্তি বলিল, আল্লাহ্‌র কসম! এতে সুবিচার করা হয়নি। অথবা সে বলিল, এতে আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির প্রতি খেয়াল রাখা হয়নি। [রাবী বলেন] তখন আমি বললাম, আল্লাহ্‌র কসম! আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে অবশ্যই এ কথা জানিয়ে দিব। তখন আমি তাহাঁর নিকট এলাম এবং তাঁকে একথা জানিয়ে দিলাম। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ] যদি সুবিচার না করেন, তবে কে সুবিচার করিবে? আল্লাহ তাআলা মূসা [আ.]-এর প্রতি রহম করুন, তাঁকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি সবর করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৫৭ : /১৯ হাঃ ৩১৫০, মুসলিম ১২/৩৯ হাঃ ১০৬৮] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৪৭. খারিজীদের বর্ণনা ও তাহাদের বৈশিষ্ট্য।

৬৩৮. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] জিয়রানা নামক জায়গায় গানীমাতের মাল বণ্টন করছিলেন, তখন এক ব্যক্তি বলিল, ইনসাফ করুন। তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি যদি ইনসাফ না করি, তবে তুমি হইবে হতভাগা।

[বোখারী পর্ব ৫৭ : /১৫ হাঃ ৩১৩৭, মুসলিম ১২/৪৭ হাঃ ১০৬৩] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৩৯. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আলী [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট কিছু স্বর্ণের টুকরো পাঠালেন। তিনি তা চার ব্যক্তির মাঝে বণ্টন করে দিলেন। [১] আল-আকরা ইবনি হানযালী যিনি মাজাশেয়ী গোত্রের ছিলেন। [২] উইয়াইনাহ ইবনি বাদার ফাযারী। [৩] যায়দ ত্বায়ী, যিনি পরে বনী নাবহান গোত্রের ছিলেন। [৪] আলকামাহ ইবনি উলাসা আমিরী, যিনি বনী কিলাব গোত্রের ছিলেন। এতে কুরাইশ ও আনসারগণ অসন্তুষ্ট হলেন এবং বলিতে লাগলেন, নাবী [সাঃআঃ] নাজদবাসী নেতৃবৃন্দকে দিচ্ছেন আর আমাদেরকে দিচ্ছেন না। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি তো তাহাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য এমন মনোরঞ্জন করছি। তখন এক ব্যক্তি সামনে এগিয়ে আসল, যার চোখ দুটি কোটরাগত, গণ্ডদ্বয় ঝুলে পড়া; কপাল উঁচু, ঘন দাড়ি এবং মাথা মোড়ানো ছিল। সে বলিল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় করুন। তখন তিনি বলিলেন, আমিই যদি নাফরমানী করি তাহলে আল্লাহর আনুগত্য করিবে কে? আল্লাহ আমাকে পৃথিবীবাসীর উপর আমানতদার বানিয়েছেন আর তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করছ না। তখন এক ব্যক্তি তাহাঁর নিকট তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইল। {আবু সাঈদ [রাদি.] বলেন} আমি তাকে খালিদ ইবনি ওয়ালীদ [রাদি.] বলে ধারণা করছি। কিন্তু নাবী [সাঃআঃ] তাকে নিষেধ করিলেন। অতঃপর অভিযোগকারী লোকটি যখন ফিরে গেল, তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, এ ব্যক্তির বংশ হইতে বা এ ব্যক্তির পরে এমন কিছু সংখ্যক লোক হইবে তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাহাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করিবে না। দ্বীন হইতে তারা এমনভাবে বেরিয়ে পড়বে যেমনি ধনুক হইতে তীর বেরিয়ে যায়। তারা ইসলামের অনুসারীদেরকে [মুসলিমদেরকে] হত্যা করিবে আর মূর্তি পূজারীদেরকে হত্যা করা হইতে বাদ দেবে। আমি যদি তাহাদের পেতাম তাহলে তাহাদেরকে আদ জাতির মত অবশ্যই হত্যা করতাম।

[বোখারী পর্ব ৬ : /৬ হাঃ ৩৩৪৪, মুসলিম ১২/৪৭ হাঃ ১০৬৪] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৪০. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আলী ইবনি আবু ত্বলিব [রাদি.] ইয়ামান থেকে আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]-এর কাছে এক প্রকার [রঙিন] চামড়ার থলে করে সামান্য কিছু স্বর্ণ পাঠিয়েছিলেন। তখনও এগুলো থেকে সংযুক্ত মাটি পরিষ্কার করা হয়নি। আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] বলেন, রসূল [সাঃআঃ] চার জনের মাঝে স্বর্ণখণ্ডটি বণ্টন করে দিলেন। তারা হলেন, উয়াইনাহ ইবনি বাদ্র, আকরা ইবনি হারিস, যাইদ আল-খায়ল এবং চতুর্থ জন আলকামা কিংবা আমির ইবনি তুফাইল [রাদি.]। তখন সহাবীগণের মধ্য থেকে একজন বলিলেন, এটা পাওয়ার ব্যাপারে তাঁদের অপেক্ষা আমরাই অধিক হকদার ছিলাম। [রাবী] বলেন, কথাটি নাবী [সাঃআঃ] পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল। তাই নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা কি আমার উপর আস্থা রাখ না অথচ আমি আসমানের অধিবাসীদের আস্থাভাজন, সকাল-বিকাল আমার কাছে আসমানের সংবাদ আসছে। রাবী বলেন, এমন সময়ে এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল। লোকটির চোখ দুটি ছিল কোটরাগত, চোয়ালের হাড় যেন বেরিয়ে পড়ছে, উঁচু কপাল বিশিষ্ট, দাড়ি অতি ঘন, মাথাটি ন্যাড়া, পরনের লুঙ্গী উপরে উত্থিত। সে বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহ্কে ভয় করুন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমার জন্য আফসোস! আল্লাহ্কে ভয় করার ব্যাপারে দুনিয়াবাসীদের মধ্যে আমি কি অধিক হকদার নই? রাবী আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] বলেন, লোকটি চলে গেলে খালিদ বিন ওয়ালীদ [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি কি লোকটির গর্দান উড়িয়ে দেব না? আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ] বললেনঃ না, হইতে পারে সে সলাত আদায় করে। খালিদ [রাদি.] বলিলেন, অনেক সলাত আদায়কারী এমন আছে যারা মুখে এমন এমন কথা উচ্চারণ করে যা তাহাদের অন্তরে নেই। আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, আমাকে মানুষের দিল ছিদ্র করে, পেট চিরে দেখার জন্য বলা হয়নি। অতঃপর তিনি লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখলেন। তখন লোকটি পিঠ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। তিনি বলিলেন, এ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন এক জাতির উদ্ভব হইবে যারা শ্র“তিমধুর কণ্ঠে আল্লাহ্‌র কিতাব তিলাওয়াত করিবে অথচ আল্লাহ্‌র বাণী তাহাদের গলদেশের নিচে নামবে না। তারা দ্বীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে লক্ষ্যবস্তুর দেহ ভেদ করে তীর বেরিয়ে যায়। [বর্ণনাকারী বলেন] আমার মনে হয় তিনি এ কথাও বলেছেন, যদি আমি তাহাদেরকে পাই তাহলে অবশ্যই আমি তাহাদেরকে সামূদ জাতির মতো হত্যা করে দেব

। [বোখারী পর্ব ৬৪ : /৬১ হাঃ ৪৩৫১, মুসলিম ১২/৪৭, হাঃ ১০৬৪] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৪১. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ ভবিষ্যতে এমন সব লোকের আগমন ঘটবে, যাদের সলাতের তুলনায় তোমাদের সলাতকে, তাহাদের রোযার তুলনায় তোমাদের রোযাকে এবং তাহাদের আমলের তুলনায় তোমাদের আমালকে তুচ্ছ মনে করিবে। তারা কুরআন পাঠ করিবে; কিন্তু তা তাহাদের কন্ঠনালীর নিচে প্রবেশ করিবে না [অর্থাৎ অন্তরে প্রবেশ করিবে না এবং তা লোক দেখানো হইবে]। এরা দ্বীন [ইসলাম] থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনভাবে নিক্ষিপ্ত তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। আর অন্য শিকারী সেই তীরের অগ্রভাগ পরীক্ষা করে দেখিতে পায়, তাতে কোন চিহ্ন নেই। সে তীরের ফলার পার্শ্বদেশদ্বয়েও নজর করে; অথচ সেখানে কিছু দেখিতে পায় না। অবশেষে ঐ ব্যক্তি কোন কিছু পাওয়ার জন্য তীরের নিম্নভাগে সন্দেহ পোষণ করে।

[বোখারী পর্ব ৬৬ : /৩৬ হাঃ ৫০৫৮, মুসলিম হাঃ] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৪২. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি কিছু গনীমতের মাল বণ্টন করছিলেন। তখন বানু তামীম গোত্রের জুলখোয়াইসিরাহ্ নামে এক ব্যক্তি এসে হাযির হল এবং বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি ইন্সাফ করুন। তিনি বলিলেন তোমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি ইনসাফ না করি, তবে ইনসাফ করিবে কে? আমি তো নিষ্ফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হব যদি আমি ইনসাফ না করি। উমার [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে অনুমতি দিন আমি এর গর্দান উড়িয়ে দিই। তিনি বলিলেন, একে ছেড়ে দাও। তার এমন কিছু সঙ্গী সাথী রয়েছে তোমাদের কেউ তাহাদের সলাতের তুলনায় নিজের সলাত এবং সিয়াম নগণ্য বলে মনে করিবে। এরা কুরআন পাঠ করে, কিন্তু কুরআন তাহাদের কন্ঠনালীর নীচে প্রবেশ করে না। তারা দ্বীন হইতে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক হইতে বেরিয়ে যায়। তীরের অগ্রভাগের লোহা দেখা যাবে কিন্তু কোন চিহ্ন পাওয়া যাবে না। কাঠের অংশ দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। মাঝের অংশ দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তার পালক দেখলে তাতেও কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। অথচ তীরটি শিকারী জন্তুর নাড়িভুঁড়ি ভেদ করে রক্তমাংস পার হয়ে বেরিয়ে গেছে। এদের নিদর্শন হল এমন একটি কাল মানুষ যার একটি বাহু নারীর স্তনের মত অথবা মাংস খণ্ডের মত নড়াচড়া করিবে। তারা লোকদের মধ্যে বিরোধ কালে আত্মপ্রকাশ করিবে।

আবু সাঈদ [রাদি.] বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি স্বয়ং আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে এ কথা শুনিয়াছি। আমি এ-ও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] এদের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়াছেন। আমিও তার সঙ্গে ছিলাম। তখন আলী [রাদি.] ঐ লোককে খুঁজে বের করিতে আদেশ দিলেন। খোঁজ করে যখন আনা হল আমি মনোযোগের সঙ্গে তাকিয়ে তার মধ্যে ঐ সব চিহ্নগুলি দেখিতে পেলাম, যা নাবী [সাঃআঃ] বলেছিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬১ : /২৫ হাঃ ৩৬১০, মুসলিম ১২/৪৭ হাঃ ১০৬৪] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৪৮. খারেজীদেরকে হত্যার ব্যাপারে উৎসাহিত করা।

৬৪৩. আলী [রাযিঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি যখন তোমাদের নিকট আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর কোন হাদীস বর্ণনা করি, তখন আমার এমন অবস্থা হয় যে, তাহাঁর উপর মিথ্যারোপ করার চেয়ে আকাশ হইতে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া আমার নিকট বেশি পছন্দনীয় এবং আমরা নিজেরা যখন আলোচনা করি তখন কথা হল এই যে, যুদ্ধ ছল-চাতুরী মাত্র। আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, শেষ যুগে একদল যুবকের আবির্ভাব ঘটবে যারা হইবে স্বল্পবুদ্ধি সম্পন্ন। তারা মুখে খুব ভাল কথা বলবে। তারা ইসলাম হইতে বেরিয়ে যাবে যেভাবে তীর ধনুক হইতে বেরিয়ে যায়। তাহাদের ঈমান গলদেশ পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করিবে না। যেখানেই এদের সঙ্গে তোমাদের দেখা মিলবে, এদেরকে তোমরা হত্যা করে ফেলবে। যারা তাহাদের হত্যা করিবে তাহাদের এই হত্যার পুরস্কার আছে ক্বিয়ামাতের দিন।

[বোখারী পর্ব ৬১ : /২৫, হাঃ ৩৬১১, মুসলিম ১২/৪৮ হাঃ ১০৬৬, আহমাদ ৬১৬] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৪৯. খারিজীরা সৃষ্টি ও স্বভাবের দিক দিয়ে নিকৃষ্ট।

৬৪৪. ইউসায়র ইবনি আমর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি সাহ্ল ইবনি হুনায়ফ [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি নাবী [সাঃআঃ]-কে খারিজীদের সম্পর্কে কিছু বলিতে শুনেছেন কি? তিনি বলিলেন, আমি তাকে বলিতে শুনিয়াছি, আর তখন তিনি তাহাঁর হাত ইরাকের দিকে বাড়িয়েছিলেন যে, সেখান থেকে এমন একটি কওম বের হইবে যারা কুরআন পড়বে সত্য, কিন্তু তা তাহাদের গলদেশ অতিক্রম করিবে না, তারা ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়।

[বোখারী পর্ব ৮৮ : /৭ হাঃ ৬৯৩৪, মুসলিম হাঃ] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৫০. রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর বংশধরদের জন্য যাকাত [গ্রহণ] হারাম। তারা হচ্ছে বানু হাশিম ও বানু মুত্তালিব। এছাড়া অন্যরা নয়।

৬৪৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, খেজুর কাটার মৌসুমে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে [সদাকাহর] খেজুর আনা হতো। অমুকে তার খেজুর নিয়ে আসতো, অমুকে এর খেজুর নিয়ে আসতো। এভাবে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর কাছে খেজুর স্তূপ হয়ে গেলো। হাসান ও হুসাইন [রাদি.] সে খেজুর নিয়ে খেলতে লাগলেন, তাহাদের একজন একটি খেজুর নিয়ে তা মুখে দিলেন। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তার দিকে তাকালেন এবং তার মুখ হইতে খেজুর বের করে বলিলেন, তুমি কি জান না যে, মুহাম্মাদের বংশধর [বনূ হাশিম] সদাকাহ ভক্ষণ করে না।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৫৭ হাঃ ১৪৮৫, মুসলিম ১২/৫০, হাঃ ১০৬৯] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৪৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, আমি আমার ঘরে ফিরে যাই, আমার বিছানায় খেজুর পড়ে থাকতে দেখি। খাওয়ার জন্য আমি তা তুলে নেই। পরে আমার ভয় হয় যে, হয়ত তা সদাকাহর খেজুর হইবে, তাই আমি তা রেখে দেই।

[বোখারী পর্ব ৪৫ : /৪৫ হাঃ ২৪৩২, মুসলিম ১২/৫০, হাঃ ১০৭১] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৪৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, [একদা] পথ অতিক্রমকালে নাবী [সাঃআঃ] পড়ে থাকা একটি খেজুর দেখে বলিলেন, এটা যদি সদাকাহর খেজুর বলে সংশয় না থাকতো, তবে আমি তা খেতাম। আবু হুরাইরা [রাদি.] সূত্রে হাম্মাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমার বিছানায় পড়ে থাকা খেজুর আমি খাই

। [বোখারী পর্ব ৩৪ : /৪ হাঃ ২০৫৫, মুসলিম ১২/৫০, হাঃ ১০৭১] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৫২. নাবী [সাঃআঃ] বানী হাশিম ও বানী মুত্তালিবের জন্য হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ, যদিও হাদিয়াদাতা সদাকাহর মাধ্যমে ঐ মালের মালিক হয়ে থাকে এবং ঐ জিনিসের বর্ণনা যে, সদাকাহ গ্রহীতা যখন তা গ্রহণ করে তখন সেটা সদাকাহর হুকুম হইতে মুক্ত হয়ে যায় এবং তা প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্য হালাল হয়ে যায় যাদের জন্য সদাকাহ গ্রহণ করা হারাম।

৬৪৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

বারীরাহ [রাদি.]-কে সদাকাহকৃত গোশতের কিছু আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে দেয়া হল। তিনি বলিলেন, তা বারীরাহর জন্য সদাকাহ এবং আমাদের জন্য হাদিয়া।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৬২ হাঃ ১৪৯৫, মুসলিম ১২/৫২, হাঃ ১০৭৪] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৪৯. উম্মু আতিয়্যাহ আনসারীয়াহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আয়িশাহ্ [রাদি.]-এর নিকট গিয়ে বললেনঃ তোমাদের কাছে [খাবার] কিছু আছে কি? আয়িশাহ্ [রাদি.] বললেনঃ না, তবে আপনি সদাকাহস্বরূপ নুসাইবাহকে বকরীর যে গোশত পাঠিয়েছিলেন, সে তার কিছু পাঠিয়ে দিয়েছিল [তাছাড়া কিছু নেই। তখন নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ সদাকাহ তার যথাস্থানে পৌঁছেছে।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৬২ হাঃ ১৪৯৪, মুসলিম হাঃ] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৫৩. নাবী [সাঃআঃ] হাদিয়া গ্রহণ করিতেন আর সদাকাহ ফিরিয়ে দিতেন।

৬৫০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর খিদমতে কোন খাবার আনা হলে তিনি জানতে চাইতেন, এটা হাদিয়া, না সদাকাহ? যদি বলা হত সদাকাহ, তাহলে সহাবীদের তিনি বলিতেন, তোমরা খাও। কিন্তু তিনি খেতেন না। আর যদি বলা হত হাদিয়া, তাহলে তিনিও হাত বাড়াতেন এবং তাহাদের সঙ্গে খাওয়ায় শরীক হইতেন।

[বোখারী পর্ব ৫১ : /৭ হাঃ ২৫৭৬, মুসলিম ১২/৫৩ হাঃ ১০৭৭] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১২/৫৪. সদাকাহ দানকারীর জন্য দুআ করা।

৬৫১. আবদুল্লাহ বিন আবু আওফা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট কোন গোত্র থেকে সদাকাহ আসত তখন তিনি দুআ করে বলিতেন,

اللهُمَّ صَلِّ عَلَى آلِ فُلاَنٍ

হে আল্লাহ তুমি রহমত বর্ষণ কর, আর যখন আমার পিতা সদাকাহ নিয়ে আসতেন, তখন দুআ করে বলিতেন,

اللهُمَّ صَلِّ عَلَى آلِ أَبِي أَوْفَى

হে আল্লাহ তুমি আবু আওফার বংশের উপর রহমত বর্ষণ কর।

[বোখারী পর্ব ২৪ : /৬৪ হাঃ ১৪৯৮, মুসলিম ১২/৫৩, হাঃ ১০৭৮] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

One response to “যাকাত অধ্যায় ও খারিজিদের পরিচয় হাদিস থেকে”

Leave a Reply