ঈদের সলাত । মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার হুকুম

ঈদের সলাত । মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার হুকুম

ঈদের সলাত । মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার হুকুম , এই পর্বের হাদীস =১০ টি (৫০৫ – ৫১৪) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-৮ঃ ঈদাইন বা দু ঈদের সলাত

০/০. ঈদাইন বা দু ঈদের সলাত
৮/১. দু ঈদে ঈদের মাঠে মহিলাদের গমন এবং পুরুষ থেকে দূরে থেকে খুত্‌বাহ শ্রবণ করার বর্ণনা।
৮/৪. ঈদের দিনে খেলাধূলার ব্যাপারে ছাড় দেয়া হয়েছে যেগুলোতে অপরাধ নেই।

০/০. ঈদাইন বা দু ঈদের সলাত

৫০৫. ইবনি জুরাইজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

হাসান ইবনি মুসলিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এর মাধ্যমে ইবনি আববাস [রাদি.]বর্ণনা করিয়াছেন, আমি নাবী [সাঃআঃ], আবু বাক্র, উমার ও উসমান [রাদি.]-এর সঙ্গে ঈদুল ফিত্‌রে উপস্থিত ছিলাম। তাঁরা খুত্‌বাহ্‌র পূর্বে সলাত আদায় করিতেন, পরে খুত্‌বাহ দিতেন। নাবী [সাঃআঃ] বের হলেন, আমি যেন দেখিতে পাচ্ছি তিনি হাতের ইঙ্গিতে [লোকদের] বসিয়ে দিচ্ছেন। তখন নাবী [সাঃআঃ] কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেনঃ

يَأَيُّهَا النَّبيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ

………….. “হে নাবী! যখন ঈমানদার মহিলাগণ আপনার নিকট এ শর্তে বায়আত করিতে আসেন….. -[মুমতাহিনাঃ ১২]। এ আয়াত শেষ করে নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের জিজ্ঞেস করিলেন, তোমরা এ বায়আতের উপর আছ? তাঁদের মধ্যে একজন মহিলা বলিল, হাঁ, সে ছাড়া আর কেউ এর জবাব দিল না। হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] জানেন না, সে মহিলা কে? অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা সাদাকাহ কর। সে সময় বিলাল [রাদি.] তাহাঁর কাপড় প্রসারিত করে বলিলেন, আমার মা-বাপ আপনাদের জন্য কুরবান হোক, আসুন, আপনারা দান করুন। তখন নারীগণ তাঁদের ছোট-বড় আংটিগুলো বিলাল [রাদি.]-এর কাপড়ের মধ্যে ফেলতে লাগলেন। আবদুর রায্যাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ………….. হলো বড় আংটি যা জাহিলী যুগে ব্যবহৃত হতো।

[বোখারী পর্ব ১৩ : /১৯ হাঃ ৯৭৯, মুসলিম ৮/১, হাঃ ৮৮৪] ঈদের সলাত ও মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার হুকুম-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫০৬. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী ঈদুল ফিত্‌রের দিন দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করিলেন, পরে খুত্‌বাহ দিলেন। খুত্‌বাহ শেষে নেমে নারীদের নিকট আসলেন এবং তাঁদের নসীহত করিলেন। তখন তিনি বিলাল [রাদি.]-এর হাতের উপর ভর দিয়ে ছিলেন এবং বিলাল [রাদি.] তাহাঁর কাপড় প্রসারিত করে ধরলেন। এতে নারীগণ দান সামগ্রী ফেলতে লাগলেন

[বোখারী পর্ব ১৩ : /১৯ হাঃ ৯৭৮, মুসলিম পর্ব ৮ হাঃ ৮৮৫] ঈদের সলাত ও মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার হুকুম-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫০৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] ও জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

ঈদুল ফিতরের সলাতে কিংবা ঈদুল আযহার সলাতে আযান দেয়া হত না।

[বোখারী পর্ব ১৩ : /৭ হাঃ ৯৬০, মুসলিম হাঃ ,] ঈদের সলাত ও মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার হুকুম-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫০৮. রাবী হইতে বর্ণিতঃ

আমাকে আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন যে, ইবনি যুবায়র [রাদি.] এর বায়আত গ্রহণের প্রথম দিকে ইবনি আব্বাস [রাদি.] এ বলে লোক পাঠালেন যে, ঈদুল ফিত্‌রের সলাতে আযান দেয়া হতো না। এবং খুত্‌বাহ দেয়া হতো সলাতের পরে।

[বোখারী পর্ব ১৩ : /৭ হাঃ ৯৫৯, মুসলিম হাঃ ,] ঈদের সলাত ও মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার হুকুম-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫০৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আবু বকর এবং উমার [রাদি.] উভয় ঈদের সলাত খুত্‌বাহর পূর্বে আদায় করিতেন।

[বোখারী পর্ব ১৩ : /৮ হাঃ ৯৬৩, মুসলিম হাঃ ,] ঈদের সলাত ও মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার হুকুম-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১০. আবু সাঈদ খুদ্রী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] ঈদুল ফিত্‌র ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে যেতেন এবং সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করিতেন তা হল সলাত। আর সলাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তাঁরা তাঁদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাঁদের নসীহত করিতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করিতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছে করিতেন, তবে তাহাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছে করিতেন তবে তা জারি করিতেন। অতঃপর তিনি ফিরে যেতেন। আবু সাঈদ [রাদি.] বলেন, লোকেরা বরাবর এ নিয়মই অনুসরণ করে আসছিল। অবশেষে যখন মারওয়ান মাদীনার আমীর হলেন, তখন ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিত্‌রের উদ্দেশ্যে আমি তাহাঁর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ঈদগাহে পৌঁছলাম তখন সেখানে একটি মিম্বার দেখিতে পেলাম, সেটি কাসীর ইবনি সাল্ত [রাদি.] তৈরি করেছিলেন। মারওয়ান সলাত আদায়ের পূর্বেই এর উপর আরোহণ করিতে উদ্যত হলেন। আমি তাহাঁর কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু তিনি কাপড় ছাড়িয়ে খুত্‌বাহ দিলেন। আমি তাকে বললাম, আল্লাহ্‌র কসম! তোমরা [রাসূলের সুন্নাত] পরিবর্তন করে ফেলেছ। সে বলিল, হে আবু সাঈদ! তোমরা যা জানতে, তা গত হয়ে গেছে। আমি বললাম, আল্লাহ্‌র কসম! আমি যা জানি, তা তার চেয়ে ভাল, যা আমি জানি না। সে তখন বলিল, লোকজন সলাতের পর আমাদের জন্য বসে থাকে না, তাই আমি খুত্‌বাহ সলাতের পূর্বেই দিয়েছি।

[বোখারী পর্ব ১৩ : /৬ হাঃ ৯৫৬, মুসলিম হাঃ ৮৮৯] ঈদের সলাত ও মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার হুকুম-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৮/১. দু ঈদে ঈদের মাঠে মহিলাদের গমন এবং পুরুষ থেকে দূরে থেকে খুত্‌বাহ শ্রবণ করার বর্ণনা।

৫১১. উম্মু আতিয়্যাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ] ঈদের দিবসে ঋতুবতী এবং পর্দানশীন নারীদের বের করে আনার আদেশ দিলেন, যাতে তারা মুসলমানদের জামাআত ও দুআয় অংশ গ্রহণ করিতে পারে। অবশ্য ঋতুবতী নারীগণ সলাতের জায়গা হইতে দূরে অবস্থান করিবে। এক মহিলা বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আমাদের কারো কারো ওড়না নেই। তিনি বললেনঃ তার সাথীর উচিত তাকে নিজের ওড়না পরিয়ে দেয়া।

[বোখারী পর্ব ৮ : /২ হাঃ ৩৫১, মুসলিম ৮/১ হাঃ ৮৯০] ঈদের সলাত ও মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার হুকুম-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৮/৪. ঈদের দিনে খেলাধূলার ব্যাপারে ছাড় দেয়া হয়েছে যেগুলোতে অপরাধ নেই।

৫১২. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, [একদিন আমার ঘরে] আবু বকর [রাদি.] এলেন তখন আমার নিকট আনসারী দুটি মেয়ে বুআস যুদ্ধের দিন আনসারীগণ পরস্পর যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে গান গাইছিল। তিনি বলেন, তারা কোন পেশাধারী গায়িকা ছিল না। আবু বাকর [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর ঘরে শয়তানী বাদ্যযন্ত্র। আর এটি ছিল ঈদের দিন। তখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বললেনঃ হে আবু বাক্র! প্রত্যেক জাতির জন্যই আনন্দ উৎসব রয়েছে আর এ হলো আমাদের আনন্দ।

[বোখারী পর্ব ১৩ : /৩ হাঃ ৯৫২, মুসলিম ৮/৪ হাঃ ৮৯২] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১৩. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আমার নিকট এলেন তখন আমার নিকট দুটি মেয়ে বুআস যুদ্ধ সংক্রান্ত গান গাইছিল। তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলেন। এ সময় আবু বাকর [রাদি.] এসে আমাকে ধমক দিয়ে বলিলেন, শয়তানী বাদ্যযন্ত্র [দফ] বাজানো হচ্ছে [তাও আবার] নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট! তখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] তাহাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে বলিলেন, ওকে ছেড়ে দাও। অতঃপর তিনি যখন অন্য দিকে ফিরলেন তখন আমি তাহাদের ইঙ্গিত দিলাম এবং তারা বের হয়ে গেল।

আর ঈদের দিন সুদানীরা বর্শা ও ঢালের দ্বারা খেলা করত। আমি নিজে [একবার] আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম অথবা তিনি নিজেই বলেছিলেন, তুমি কি তাহাদের খেলা দেখিতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ, অতঃপর তিনি আমাকে তাহাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গাল ছিল তাহাঁর গালের সাথে লাগান। তিনি তাহাদের বলিলেন, তোমরা যা করছিলে তা করিতে থাক, হে বনূ আরফিদা। পরিশেষে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তখন তিনি আমাকে বলিলেন, তোমার কি [দেখা] শেষ হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বলিলেন, তা হলে চলে যাও।

[বোখারী পর্ব ১৩ : /২ হাঃ ৯৪৯, ৯৫০, মুসলিম ৮/৪, হাঃ ৮৯২] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার একদল হাব্‌শী নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট বর্শা নিয়ে খেলা করছিলেন। এমন সময় উমার [রাদি.] সেখানে এলেন এবং হাতে কংকর তুলে নিয়ে তাহাদের দিকে নিক্ষেপ করিলেন। তখন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলিলেন, হে উমার! তাহাদের করিতে দাও। আলী……মামার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন, [এ ঘটনা] মাসজিদে ঘটেছিল।

[বোখারী পর্ব ৫৬ : /৮৯ হাঃ ২৯০১, মুসলিম ৮/৪ হাঃ ৮৯৩] ঈদের সলাত ও মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার হুকুম-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

One response to “ঈদের সলাত । মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার হুকুম”

Leave a Reply