মুসাফির ব্যক্তির নামাজ ও তা ক্বসর করার বর্ণনা

মুসাফির ব্যক্তির নামাজ ও তা ক্বসর করার বর্ণনা

মুসাফির ব্যক্তির নামাজ ও তা ক্বসর করার বর্ণনা , এই পর্বের হাদীস =৮৭ টি (৩৯৮ – ৪৮৪) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-৬ঃ মুসাফির ব্যক্তির সলাত ও তা ক্বসর করার বর্ণনা

৬/১. মুসাফির ব্যক্তির সলাত ও তা ক্বসর করা।
৬/২. মিনায় সলাত ক্বসর করা।
৬/৩. বৃষ্টির কারণে আবাসস্থলে সলাত আদায় করা।
৬/৪. সফরে যানবাহনের উপর নফল সলাত বৈধ মুখ যে দিকেই থাক।
৬/৫. সফরে দু সলাত একত্রে আদায় বৈধ।
৬/৬. বাড়িতে অবস্থানকালে দু সলাত একত্রে আদায়।
৬/৭. সলাত শেষে ডান ও বাম উভয় দিক দিয়েই মুখ ফিরিয়ে বসা বৈধ।
৬/৯. ইক্বামাত আরম্ভ হওয়ার পর নফল সলাত আরম্ভ করা অপছন্দনীয়।
৬/১১. তাহিয়াতুল মাসজিদ দু রাকআত আদায় করা বাঞ্ছনীয় এবং তা আদায়ের পূর্বে বসা অপছন্দনীয় এবং যে কোন সময় তা পড়া বৈধ।
৬/১২. সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে মাসজিদে দু রাকআত সলাত আদায় করা মুস্তাহাব।
৬/১৩. চাশতের সলাত মুস্তাহাব এবং তার সর্বনিম্ন পরিমাণ দু রাকআত। সর্বোচ্চ পরিমাণ আট রাকআত, মধ্যম পরিমাণ চার বা ছয় রাকআত এবং এই সলাত সংরক্ষণের প্রতি উৎসাহ প্রদান।
৬/১৪. ফাজ্‌রের দু রাকআত সলাত মুস্তাহাব এবং তার প্রতি উৎসাহ প্রদান।
৬/১৫. ফার্‌জ সলাতের আগে ও পরে সুন্নাতে রাতেবা বা নিয়মিত সুন্নাতের ফাযীলাত ও তার সংখ্যা।
৬/১৬. নফল সলাত দাঁড়িয়ে, বসে এবং একই সলাতের কিছু দাঁড়িয়ে ও বসে পড়া বৈধ।
৬/১৭. রাতের সলাত, নাবী [সাঃআঃ]-এর রাতের সলাতের সংখ্যা এবং বিত্‌রের সলাত এক রাকআত ও এক রাকআত সলাত সহীহ।
৬/২০. রাতের সলাত দু রাকআত দু রাকআত এবং বিত্‌র শেষ রাতে এক রাকআত।
৬/২৪. শেষ রাতে দুআ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং সে সময় কবূল হওয়া।
৬/২৫. রমাযানের রাতের ক্বিয়ামের বা ইবাদাতের প্রতি উৎসাহ প্রদান আর তা হচ্ছে [কিয়ামু রমাযান] তারাবীহ।
৬/২৬. রাতের সলাতে দুআ এবং রাতে সলাতে দণ্ডায়মান হওয়া।
৬/২৭. রাতের সলাতে কিরাআত লম্বা করা মুস্তাহাব।
৬/২৮. ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে যে সকাল পর্যন্ত সমস্ত রাত্রি ঘুমাল।
৬/২৯. নফল সলাত বাড়িতে আদায় করা মুস্তাহাব এবং তা মাসজিদে জায়িয।
৬/৩১. কোন ব্যক্তি সলাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে অথবা কুরআন পাঠ ও যিক্‌র আযকার এলোমেলো হলে তার প্রতি শুয়ে যাওয়া অথবা বসে যাওয়ার নির্দেশ যে পর্যন্ত না ঐ অবস্থা কেটে যায়।
৬/৩৩. কুরআন বার বার পাঠ করার নির্দেশ আর এ কথা বলা অপছন্দনীয় যে আমি অমুক অমুক সূরাহ ভুলে গেছি কিন্তু এ কথা বলা জায়িয যে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
৬/৩৪. সুমধুর কণ্ঠে কুরআন পাঠ করা বাঞ্ছনীয়।
৬/৩৫. মাক্কাহ বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূরাহ ফাতহ্ পড়ার বর্ণনা।
৬/৩৬. কুরআন পাঠের সময় প্রশান্তি অবতীর্ণ হওয়া।
৬/৩৭. কুরআনের হাফিযের ফাযীলাত।
৬/৩৮. কুরআনের যে অভিজ্ঞ এবং এটা শিক্ষার জন্য যে লেগে থাকে তার মর্যাদা।
৬/৩৯. নৈপুণ্য ও মর্যাদাবান ব্যক্তির নিকট কুরআন পাঠ উত্তম যদিও পাঠক শ্রোতার চেয়ে উত্তম।
৬/৪০. কুরআন পাঠ শ্রবণের মর্যাদা এবং হাফিযদের নিকট থেকে পড়া শুনতে চাওয়া এবং তিলাওয়াতের সময় ক্রন্দন করা ও গবেষণা করার মর্যাদা।
৬/৪৩. সূরাহ ফাতিহা ও সূরাহ আল-বাক্বারাহ্‌র শেষ অংশের মর্যাদা এবং সূরা আল-বাক্বারাহ্ শেষ দু আয়াত পড়ার প্রতি উৎসাহ দান।
৬/৪৭. কুরআন নিজে চর্চাকারী ও অন্যকে শিক্ষাদানকারীর মর্যাদা এবং ঐ ব্যক্তির মর্যাদা যে কুরআনের হিকমাত, যেমন ফিক্‌হ ইত্যাদি শিক্ষা করে এবং তদনুযায়ী আমাল করে ও তা শিক্ষা দেয়।
৬/৪৮. কুরআন সাত রকম পঠনে নাযিল হয়েছে এবং এর অর্থের বর্ণনা।
৬/৪৯. কুরআন তারতিল সহ [ধীরে ধীরে স্পষ্ট করে] পাঠ করা এবং হায্‌যা থেকে বিরত থাকা, হায্‌যা হচ্ছে তাড়াহুড়া করে পড়া এবং এক রাকআতে একাধিক সূরাহ পড়া বৈধ।
৬/৫০. কিরাআত সম্পর্কিত।
৬/৫১. যে সমস্ত সময়ে সলাত আদায় নিষিদ্ধ।
৬/৫৪. ঐ দু রাকআতের পরিচয় যা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আসরের পর আদায় করিতেন।
৬/৫৫. মাগরিব সলাতের পূর্বে দু রাকআত সলাত মুস্তাহাব।
৬/৫৬. প্রত্যেক আযান ও ইক্বামাতের মধ্যে সলাত।
৬/৫৭. সলাতুল খাউফ বা ভয়ের সলাত।

৬/১. মুসাফির ব্যক্তির সলাত ও তা ক্বসর করা।

৩৯৮. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাআলা মুকীম অবস্থায় ও সফরে দু রাকআত করে সলাত র্ফায করেছিলেন। পরে সফরের সলাত আগের মত রাখা হয় আর মুকীম অবস্থার সলাত বাড়িয়ে দেয়া হয়।

[বোখারী পর্ব ৮ : /১ হাঃ ৩৫০, মুসলিম ৬/১, হাঃ ৬৮৫] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩৯৯. হাফ্‌স ইবনি আসিম [রাযি] হইতে বর্ণিতঃ

ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, কোন এক সফরে আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহচর্যে থেকেছি, সফরে তাঁকে নফল সলাত আদায় করিতে দেখিনি এবং আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

“নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহ্‌র রসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।”

[আহযাবঃ ২১১] [বোখারী পর্ব ১৮ : /১১ হাঃ ১১০১] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪০০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে মাদীনায় যুহরের সলাত চার রাকআত আদায় করেছি এবং যুল-হুলাইসলামিক ফাউন্ডেশনয় আসরের সলাত দু রাকআত আদায় করেছি।

[বোখারী পর্ব ১৮ : /৫ হাঃ ১০৮৯, মুসলিম ৬/১ হাঃ ৬৯০] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪০১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সাথে মাদীনাহ ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি দুরাকআত, দুরাকআত সলাত আদায় করিয়াছেন। [রাবী বলেন] আমি [আনাস [রাদি.]-কে বললাম, আপনারা মাক্কাহ্য় কত দিন ছিলেন? তিনি বলিলেন, আমরা সেখানে দশ দিন ছিলাম।

[বোখারী পর্ব ১৮ : /১ হাঃ ১০৮১, মুসলিম ৬/১ হাঃ ৬৯৩] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/২. মিনায় সলাত ক্বসর করা।

৪০২. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] আবু বাক্র এবং উমার [রাদি.]-এর সঙ্গে মিনায় দুরাকআত সলাত আদায় করেছি। উসমান [রাদি.]-এর সঙ্গেও তাহাঁর খিলাফতের প্রথম দিকে দুরাকআত আদায় করেছি। অতঃপর তিনি পূর্ণ সলাত আদায় করিতে লাগলেন।

[বোখারী পর্ব ১৮ : /২ হাঃ ১০৮২, মুসলিম ৬/২ হাঃ ৬৯৪] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪০৩. হারিসাহ ইবনি ওয়াহ্‌ব খুযায়ী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আমাদের নিয়ে মিনাতে দু রাকআত সলাত আদায় করিয়াছেন। এ সময় আমরা আগের তুলনায় সংখ্যায় বেশি ছিলাম এবং অতি নিরাপদে ছিলাম।

[বোখারী পর্ব ২৫ : /৮৪ হাঃ ১৬৫৬, মুসলিম ৬/২ হাঃ ৬৯৬] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৩. বৃষ্টির কারণে আবাসস্থলে সলাত আদায় করা।

৪০৪. নাফি [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনি উমার [রাদি.] একদা তীব্র শীত ও বাতাসের রাতে সলাতের আযান দিলেন। অতঃপর ঘোষণা করিলেন, أَلاَ صَلُّوا فِي الرِّحَالِ প্রত্যেকেই নিজ নিজ আবাসস্থলে সলাত আদায় করে নাও, অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] প্রচণ্ড শীত ও বৃষ্টির রাত হলে মুআয্‌যিনকে এ কথা বলার নির্দেশ দিতেন-

أَلاَ صَلُّوا فِي الرِّحَالِ

“প্রত্যেকে নিজ নিজ আবাসস্থলে সলাত আদায় করে নাও।”

[বোখারী পর্ব ১০ : /৪০ হাঃ ৬৬৬, মুসলিম ৬/৩ হাঃ ৬৯৭] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪০৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

বর্ণিত। তিনি তাহাঁর মুয়ায্‌যিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বলিলেন, যখন তুমি [আযানে] আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ বলবে,

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ

তখন

حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ

হাইয়া আলাস্ সালাহ্ বলবে না, বলবে,

صَلُّوا فِي بُيوتِكُمْ

“সাল্লু ফী বুয়ুতিকুম” তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সলাত আদায় কর। তা লোকেরা অপছন্দ করিল। তখন তিনি বললেনঃ আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিই [রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]] তা করিয়াছেন। জুমুআহ নিঃসন্দেহে জরুরী। আমি অপছন্দ করি, তোমাদেরকে মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলতে।

[বোখারী পর্ব ১১ : /১৪ হাঃ ৯০১, মুসলিম ৬/৩ হাঃ ৬৯৯] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৪. সফরে যানবাহনের উপর নফল সলাত বৈধ মুখ যে দিকেই থাক।

৪০৬, ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] সফরে ফার্‌য সলাত ব্যতীত তাহাঁর সওয়ারী হইতেই ইঙ্গিতে রাতের সলাত আদায় করিতেন। সওয়ারী যে দিকেই ফিরুক না কেন, আর তিনি বাহনের উপরেই বিত্‌র আদায় করিতেন।

[বোখারী পর্ব ১৪ : /৬ হাঃ ১০০০ মুসলিম ৬/৪ হাঃ ৭০০] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪০৭. আমির [ইবনি রাবীআহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি [সাঃআঃ]-কে রাতের বেলা সফরে বাহনের পিঠে বাহনের গতিমুখী হয়ে নফল সলাত আদায় করিতে দেখেছেন।

[বোখারী পর্ব ১৮ : /১২ হাঃ ১১০৪ মুসলিম ৬/৪ হাঃ ৭০০] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪০৮. আনাস ইবনি সীরীন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] যখন শাম [সিরিয়া] হইতে ফিরে আসছিলেন, তখন আমরা তাঁকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করার জন্য এগিয়ে এসেছিলাম। আইনুত্ তাম্‌র [নামক] স্থানে আমরা তাহাঁর সাক্ষাৎ পেলাম। তখন আমি তাঁকে দেখলাম গাধার পিঠে [আরোহী অবস্থায়] সামনের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করছেন। অর্থাৎ কিব্‌লার বাম দিকে মুখ করে। তখন তাঁকে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনাকে তো দেখলাম কিব্‌লা ছাড়া অন্য দিকে মুখ করে সলাত আদায় করছেন? তিনি বলিলেন, যদি আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে এরূপ করিতে না দেখতাম, তবে আমিও তা করতাম না।

[বোখারী পর্ব ১৮ : /৬ হাঃ ১০৯১ মুসলিম ৬/৪ হাঃ ৭০৩] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৫. সফরে দু সলাত একত্রে আদায় বৈধ।

৪০৯. আব্দুল্লাহ্‌ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসুল [সাঃআঃ]কে দেখেছি সফরে ব্যস্ততার কারণে তিনি মাগরিবের সলাত বিলম্বিত করিয়াছেন, এমনকি মাগরিব ও ইশার সলাত একত্রে আদায় করিয়াছেন। অপর এক সূত্রে সালিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি উমার [রাদি.] মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করিতেন। সালিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আরও বলেন, ইবনি উমার [রাদি.] তাহাঁর স্ত্রী সাফীয়্যাহ বিন্ত আবু উবাইদ-এর দুঃসংবাদ পেয়ে মাদীনা প্রত্যাবর্তনকালে মাগরিবের সলাত বিলম্বিত করেন। আমি তাঁকে বললাম, সলাতের সময় হয়ে গেছে। তিনি বলিলেন, চলতে থাক। আমি আবার বললাম, সলাত? তিনি বলিলেন, চলতে থাক। এমনকি [এভাবে] দুই বা তিন মাইল অগ্রসর হলেন। অতঃপর নেমে সলাত আদায় করিলেন। পরে বলিলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে সফরের ব্যস্ততার সময় এরূপভাবে সলাত আদায় করিতে দেখেছি। আবদুল্লাহ্ [রাদি.] আরো বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে দেখেছি, সফরে যখনই তাহাঁর ব্যস্ততার কারণ ঘটেছে, তখন তিনি মাগরিবের সলাত [দেরী করে] আদায় করিয়াছেন এবং তা তিন রাকআতই আদায় করিয়াছেন। মাগরিবের সালাম ফিরিয়ে কিছু বিলম্ব করেই ইশার ইকামাত দেয়া হত এবং দুরাকআত আদায় করে সালাম ফিরাতেন। কিন্তু ইশার পরে গভীর রাত না হওয়া পর্যন্ত [নফল] সলাত আদায় করিতেন না।

[বোখারী পর্ব ১৮ : /৬ হাঃ ১০৯২ মুসলিম ৬/৫ হাঃ ৭০৩] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪১০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] সূর্য ঢলে পড়ার পূর্বে সফর শুরু করলে আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত যুহ্‌রের সলাত বিলম্বিত করিতেন। অতঃপর অবতরণ করে দু সলাত একসাথে আদায় করিতেন। আর যদি সফর শুরু করার পূর্বেই সূর্য ঢলে পড়তো তাহলে যুহ্‌রের সলাত আদায় করে নিতেন। অতঃপর সওয়ারীতে চড়তেন।

[বোখারী পর্ব ১৮ : /১৬ হাঃ ১১১২, মুসলিম ৬/৫, হাঃ ৭০২] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৬. বাড়িতে অবস্থানকালে দু সলাত একত্রে আদায়।

৪১১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে আট রাকআত একত্রে [যুহ্‌র ও আসরের] এবং সাত রাকআত একত্রে [মাগরিব-ইশার] সলাত আদায় করেছি। [তাই সে ক্ষেত্রে যুহ্‌র ও মাগরিবের পর সুন্নাত আদায় করা হয়নি।] আমর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি বললাম, হে আবুশ্ শাসা! আমার ধারণা, তিনি যুহ্র শেষ ওয়াক্তে এবং আসর প্রথম ওয়াক্তে আর ইশা প্রথম ওয়াক্তে ও মাগরিব শেষ ওয়াক্তে আদায় করেছিলেন। তিনি বলেছেন, আমিও তাই মনে করি।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /৩০ হাঃ ১১৭৪, মুসলিম ৬/৬, হাঃ ৭০৫] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৭. সলাত শেষে ডান ও বাম উভয় দিক দিয়েই মুখ ফিরিয়ে বসা বৈধ।

৪১২. আসওয়াদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ্ [ইবনি মাসউদ] [রাদি.] বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন স্বীয় সলাতের কোন কিছু শয়তানের জন্য না করে। তা হল, শুধুমাত্র ডান দিকে ফিরা আবশ্যক মনে করা। আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে অধিকাংশ সময়ই বাম দিকে ফিরতে দেখেছি।

*ইকামত হয়ে গেলে কোন নাফল সলাত আদায় করা যাবেনা, এ সংক্রান্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় অনেকে ইকামত হয়ে যাবার পরও নফল সলাত আদায় করিতে থাকেন। বিশেষ করে ফাজরের সলাত চলাকালীন সময়ে অনেককেই দেখা যায় সুন্নাত দুরাকাত সলাত আদায় করিতে। ফাজরের জামাআত চলতে থাকলে ঐ জামাআতে শামীল না হয়ে তাড়াহুড়ো করে সুন্নাত পড়ে জামাআতে শামিল হয়া হাদীসের বিরোধিতা করার সামিল।

প্রমাণ নিম্নের হাদীসগুলোঃ

আব্দুল্লাহ ইবনি সারজাস বলেন, এক ব্যক্তি এল। তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]ফজরের সলাতে ছিলেন। ফলে লোকটি দুরাকআত আদায় করে জামাআতে প্রবেশ করিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]সলাত শেষ করে তাকে বলিলেন, ওহো অমুক! সলাত কোনটি! যেটি আমাদের সঙ্গে আদায় করলে সেটি না যেটি তুমি একা আদায় করলে? [নাসায়ী মাবসুত ১ম খণ্ড ১০১ পৃষ্ঠা লাহোরী ছাপা] নাবী বলেছেন, যখন ফারয সলাতে তাকবীর দেয়া হয়ে যায় তখন ফারয সলাত ব্যতীত অন্য কোন [নাফল বা সুন্নাত] সলাত হইবে না। [মুসলীম, মিশকাত ৯৬ পৃষ্ঠা]

হানাফী ঈমাম মুহাম্মাদ বলেন, সুন্নাত না আদায় করে জামাআতেই ধুকতে হইবে। [মাসবুত ১ম খণ্ড ১৬৭ পৃষ্ঠা] ফাজরের সুন্নাত সলাত ছুটে গেলে ফারয সলাত আদায়ের পর পরই পড়ে নিবে অথবা কোন জরুরী প্রয়োজন থাকলে এ দুরাকআত সলাত সুর্যোদয়ের পরেও পড়তে পারবেন। [তিরমিজি ১ম খণ্ড]

[বোখারী পর্ব ১০ : /১৯৫ হাঃ ৮৫২, মুসলিম ৬/৭, হাঃ ৭০৭] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৯. ইক্বামাত আরম্ভ হওয়ার পর নফল সলাত আরম্ভ করা অপছন্দনীয়।

৪১৩. আবদুল্লাহ্ ইবনি মালিক ইবনি বুহাইনাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে গেলেন। অন্য সূত্রে ঈমাম বোখারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]….হাফ্‌স ইবনি আসিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মালিক ইবনি বুহাইনা নামক আয্‌দ গোত্রীয় এক ব্যক্তিকে বলিতে শুনিয়াছি যে, রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে দু রাকআত সলাত আদায় করিতে দেখলেন। তখন ইক্বামাত হয়ে গেছে। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] যখন সলাত শেষ করিলেন, লোকেরা সে লোকটিকে ঘিরে ফেলল। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ ফাজর কি চার রাকআত? ফাজর কি চার রাকআত?*

[বোখারী পর্ব ১০ : /৩৮ হাঃ ৬৬৩, মুসলিম ৬/৯, হাঃ ৭১১] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/১১. তাহিয়াতুল মাসজিদ দু রাকআত আদায় করা বাঞ্ছনীয় এবং তা আদায়ের পূর্বে বসা অপছন্দনীয় এবং যে কোন সময় তা পড়া বৈধ।

৪১৪. আবু কাতাদাহ্ সালামী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মাসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার পূর্বে দুরাকআত সলাত আদায় করে নেয়।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৬০ হাঃ ৪৪৪, মুসলিম ৬/১০, হাঃ ৭১৪] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/১২. সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে মাসজিদে দু রাকআত সলাত আদায় করা মুস্তাহাব।

৪১৫. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি. হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ছিলাম। আমার উটটি অত্যন্ত ধীরে চলছিল বরং চলতে অক্ষম হয়ে পড়েছিল। এমতাবস্থায় নাবী [সাঃআঃ] আমার কাছে এলেন এবং বলিলেন, জাবির? আমি বললাম, জী। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার অবস্থা কী? আমি বললাম, আমার উট আমাকে নিয়ে অত্যন্ত ধীরে চলছে এবং অক্ষম হয়ে পড়ছে। আমি পরের দিন মাসজিদে নাববীতে গিয়ে তাঁকে দরজার সামনে পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এখন এলে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তোমার উটটি রাখ এবং মাসজিদে প্রবেশ করে দুরাকআত সলাত আদায় কর। আমি মাসজিদে প্রবেশ করে সলাত আদায় করলাম।

[বোখারী পর্ব ৩৪ : /৩৪ হাঃ ২০৯৭, মুসলিম ৬/১১, হাঃ ৭১৫] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/১৩. চাশতের সলাত মুস্তাহাব এবং তার সর্বনিম্ন পরিমাণ দু রাকআত। সর্বোচ্চ পরিমাণ আট রাকআত, মধ্যম পরিমাণ চার বা ছয় রাকআত এবং এই সলাত সংরক্ষণের প্রতি উৎসাহ প্রদান।

৪১৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] যে আমাল করা পছন্দ করিতেন, সে আমাল কোন কোন সময় এ আশঙ্কায় ছেড়েও দিতেন যে, সে আমাল করিতে থাকিবে, ফলে তাহাদের উপর তা ফার্‌য হয়ে যাবে। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] চাশ্‌তের সলাত আদায় করেননি। আমি সে সলাত আদায় করি

। [বোখারী পর্ব ১৯ : /৫ হাঃ ১১২৮, মুসলিম ৬/১৩, হাঃ ৭১৮] * আয়েশা [রাদি.] এ কথা তাহাঁর জানা অনুসারে বলেছেন। উম্মু হানী [রাদি.]-এর রিওয়ায়াতে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] -এর চাশ্ত আদায় প্রমাণিত আছে। মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪১৭. ইবনি আবু লায়লা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

উম্মু হানী [রাদি.] ব্যতীত অন্য কেউ নাবী [সাঃআঃ]-কে সলাতুয্ যুহা [পূর্বাহ্নের সলাত] আদায় করিতে দেখেছেন বলে আমাদের জানাননি। তিনি {উম্মে হানী [রাদি.]} বলেন, নাবী [সাঃআঃ] মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন তাহাঁর ঘরে গোসল করার পর আট রাকআত সলাত আদায় করিয়াছেন। আমি তাঁকে এর থেকে সংক্ষিপ্ত কোন সলাত আদায় করিতে দেখিনি, তবে তিনি রুকূ ও সাজদাহ্ পূর্ণভাবে আদায় করেছিলেন।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /৩৩ হাঃ ৩৫৭, মুসলিম ৬/১৬, হাঃ ৩৩৬] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪১৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার খলীল ও বন্ধু [নাবী [সাঃআঃ]] আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যাত [বিশেষ আদেশ] করিয়াছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করব না। [তা হল] [১] প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম [পালন করা], [২] সলাতুয্-যোহা [চাশ্‌ত এর সলাত আদায় করা] এবং [৩] বিত্‌র [সলাত] আদায় করে শয়ন করা।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /৩৩, হাঃ ১১৭৮, মুসলিম ৬/১৩, হাঃ ৭২১] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/১৪. ফাজ্‌রের দু রাকআত সলাত মুস্তাহাব এবং তার প্রতি উৎসাহ প্রদান।

৪১৯. হাফসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন মুআয্‌যিন সুব্‌হে সাদিকের প্রতীক্ষায় থাকত [ও আযান দিত] এবং ভোর স্পষ্ট হতোথ- জামাআত দাঁড়ানোর পূর্বে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] সংক্ষেপে দুরাকআত সলাত আদায় করে নিতেন।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১২ হাঃ ৬১৮, মুসলিম ৬/১৪, হাঃ ৭২৩] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪২০. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ফাজরের আযান ও ইকামতের মাঝে দু রাকআত সলাত সংক্ষেপে আদায় করিতেন।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১২ হাঃ ৬১৯, মুসলিম ৬/১৪, হাঃ ৭২৪] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪২১. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ফাজরের আযান ও ইকামতের মাঝে দু রাকআত সলাত এতো সংক্ষেপে আদায় করিতেন যে আমি মনে মনে বলতাম, তিনি কি সুরাহ ফাতিহা পাঠ করিয়াছেন? আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ফাজরের আযান ও ইকামতের মাঝে দু রাকআত সলাত সংক্ষেপে আদায় করিতেন।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /২৮ হাঃ ১১৬৫, মুসলিম পর্ব ৬/১৪ হাঃ ৭২৪] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪২২. আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]কোন নফল সলাতকে ফাজরের দুরাকআত সুন্নাতের চেয়ে অধিক গুরুত্ব প্রদান করিতেন না। [বোখারী পর্ব ১৯ :/২৭ হাঃ ১১৬৩, মুসলিম পর্ব ৬ :/১৪, হাঃ ৬২৪] আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

বোখারী পর্ব ১৯ : /২৭ হাঃ ১১৬৩, মুসলিম হাঃ ,] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/১৫. ফার্‌জ সলাতের আগে ও পরে সুন্নাতে রাতেবা বা নিয়মিত সুন্নাতের ফাযীলাত ও তার সংখ্যা।

৪২৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] এর সঙ্গে যুহরের পুর্বে দু রাকআত, যুহরের পর দুরাকআত, মাগরিবের পর দুরাকআত, ইশার পর দুরাকআত এবং জুমুআহ্‌র পর দুরাকআত সলাত আদায় করছি। তবে মাগরিব ও ইশার পরের সলাত তিনি তাহাঁর ঘরে আদায় করিতেন। ইবনি উমার [রাদি.] আরও বলেন, আমার বোন [উম্মুল মুমিনীন] হাফসাহ [রাদি.] আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন যে, নাবী [সাঃআঃ] ফাযর হবার পর সংক্ষিপ্ত দুরাকআত সলাত আদায় করিতেন। [ইবনি উমার [রাদি.] বলেন,] এটি ছিল এমন একটি সময়, যখন আমরা কেউ নাবী -এর খিদমতে হাযির হতাম না। ইবনি আবু যিনাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, মূসা ইবনি উক্বা [রাদি.] নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে ইশার পরে তাহাঁর পরিজনের মধ্যে কথাটি বর্ণনা করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /২৯ হাঃ ১১৭৩, মুসলিম ৬/১৫, হাঃ ৭২৯] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/১৬. নফল সলাত দাঁড়িয়ে, বসে এবং একই সলাতের কিছু দাঁড়িয়ে ও বসে পড়া বৈধ।

৪২৪. মুমিনদের মা আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাতের কোন সলাতে আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে বসে কিরাআত পড়তে দেখিনি। অবশ্য শেষ দিকে বার্ধক্যে উপনীত হলে তিনি বসে কিরাআত পড়তেন। যখন [আরম্ভকৃত] সূরার ত্রিশ চল্লিশ আয়াত অবশিষ্ট থাকত, তখন দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সে পরিমাণ কিরাআত পড়ার পর রুকূ করিতেন।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /১৬ হাঃ ১১৪৮, মুসলিম ৬/১৬, হাঃ ৭৩১] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪২৫. উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ্ [রাদি. হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বসে সলাত আদায় করিতেন। বসেই তিনি কিরাআত পাঠ করিতেন। যখন তাহাঁর কিরাআতের প্রায় ত্রিশ বা চল্লিশ আয়াত বাকী থাকত, তখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং দাঁড়িয়ে তা তিলাওয়াত করিতেন, অতঃপর রুকূ করিতেন; পরে সাজদাহ্ করিতেন। দ্বিতীয় রাকাআতেও অনুরূপ করিতেন। সলাত শেষ করে তিনি লক্ষ্য করিতেন, আমি জাগ্রত থাকলে আমার সাথে বাক্যালাপ করিতেন আর ঘুমিয়ে থাকলে তিনিও শুয়ে পড়তেন

। [বোখারী পর্ব ১৮ : /২০ হাঃ ১১১৯, মুসলিম ৬/১৬, হাঃ ৭৩১] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/১৭. রাতের সলাত, নাবী [সাঃআঃ]-এর রাতের সলাতের সংখ্যা এবং বিত্‌রের সলাত এক রাকআত ও এক রাকআত সলাত সহীহ।

৪২৬. আবু সালামাহ ইবনি আবদুর রহমান [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আয়িশাহ্ [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করেন, রমাযান মাসে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর সলাত কেমন ছিল? তিনি বলিলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] রমাযান মাসে এবং অন্যান্য সময় [রাতের বেলা] এগার রাকআতের অধিক সলাত আদায় করিতেন না। তিনি চার রাকআত সলাত আদায় করিতেন। তুমি সেই সলাতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর চার রাকআত সলাত আদায় করিতেন, এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। অতঃপর তিনি তিন রাকআত [বিত্‌র] সলাত আদায় করিতেন। আয়িশাহ্ [রাদি.] বলেন, [একদিন] আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আপনি কি বিত্‌রের পূর্বে ঘুমিয়ে থাকেন? তিনি ইরশাদ করলেনঃ আমার চোখ দুটি ঘুমায়, কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমায় না।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /১৬ হাঃ ১১৪৭, মুসলিম ৬/১৭, হাঃ ৭৩৮] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪২৭. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] রাতের বেলা তের রাকআত সলাত আদায় করিতেন, বিত্‌র এবং ফাজরের দু রাকআত [সুন্নাত]ও এর অন্তর্ভুক্ত।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /১০ হাঃ ১১৪০, মুসলিম ৬/১৭, হাঃ ৭৩৮] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪২৮. আসওয়াদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আয়িশাহ্ [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাতে নাবী [সাঃআঃ]-এর সলাত কেমন ছিল? তিনি বলেন, তিনি প্রথমাংশে ঘুমাতেন, শেষাংশে জেগে সলাত আদায় করিতেন। অতঃপর তাহাঁর শয্যায় ফিরে যেতেন, মুআয্‌যিন আযান দিলে দ্রুত উঠে পড়তেন, তখন তাহাঁর প্রয়োজন থাকলে গোসল করিতেন, অন্যথায় উযূ করে [মসজিদের দিকে] বেরিয়ে যেতেন।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /১৫ হাঃ ১১৪৬, মুসলিম ৬/১৭, হাঃ ৭৩৯] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪২৯. মাসরূক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ্ [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট কোন্ আমলটি সর্বাধিক পছন্দনীয় ছিল? তিনি বলিলেন, নিয়মিত আমল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কখন তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন? তিনি বলিলেন, যখন মোরগের ডাক শুনতে পেতেন।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /৭ হাঃ ১১৩২, মুসলিম ৬/১৭, হাঃ ৭৪১] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩০. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তিনি আমার নিকট ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায়ই সাহ্‌রীর সময় হতো। তিনি নাবী [সাঃআঃ] সম্পর্কে এ কথা বলেছেন।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /৭ হাঃ ১১৩৩, মুসলিম ৬/১৭, হাঃ ৭৪২] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩১. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] রাতের সকল অংশে [অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন রাতে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে] বিত্‌র আদায় করিতেন আর [জীবনের] শেষ দিকে সাহ্‌রীর সময় তিনি বিত্‌র আদায় করিতেন।

[বোখারী পর্ব ১৪ : /২ হাঃ ৯৯৬, মুসলিম ৬/১৭, হাঃ ৭৪৫] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/২০. রাতের সলাত দু রাকআত দু রাকআত এবং বিত্‌র শেষ রাতে এক রাকআত।

৪৩২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট রাতের সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিল। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বললেনঃ রাতের সলাত দু দু [রাকআত] করে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ফাজর হবার আশঙ্কা করে, সে যেন এক রাকআত সলাত আদায় করে নেয়। আর সে যে সলাত আদায় করিল, তা তার জন্য বিত্‌র হয়ে যাবে।

[বোখারী পর্ব ১৪ : /১ হাঃ ৯৯১, মুসলিম ৬/২০, হাঃ ৭৪৯] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৩. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বিত্‌রকে তোমাদের রাতের শেষ সলাত করিবে।

[বোখারী পর্ব ১৪ : /৪ হাঃ ৯৯৮, মুসলিম ৬/২০, হাঃ ৭৫১] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/২৪. শেষ রাতে দুআ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং সে সময় কবূল হওয়া।

৪৩৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ্ তাআলা প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকা কালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করিতে থাকেনঃ কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব

। [বোখারী পর্ব ১৯ : /১৪ হাঃ ১১৪৫, মুসলিম ৬/২৩, হাঃ ৭৫৮] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/২৫. রমাযানের রাতের ক্বিয়ামের বা ইবাদাতের প্রতি উৎসাহ প্রদান আর তা হচ্ছে [কিয়ামু রমাযান] তারাবীহ।

৪৩৫, আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়

[বোখারী পর্ব ২৭ : /২৭ হাঃ ৩৭, মুসলিম ৬/২৫, হাঃ ৭৬০] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] কোন একরাতের মধ্যভাগে বের হলেন এবং মাসজিদে গিয়ে সলাত আদায় করিলেন। তাহাঁর সঙ্গে সাহাবীগণও সলাত আদায় করিলেন, সকালে তাঁরা এ নিয়ে আলোচনা করিলেন। ফলে [দ্বিতীয় রাতে] এর চেয়ে অধিক সংখ্যক সহাবী একত্রিত হলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করিলেন। পরের দিন সকালেও তাঁরা এ সম্পর্কে আলোচনা করিলেন। ফলে তৃতীয় রাতে মাসজিদে লোকসংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পেল। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বের হলেন এবং সহাবীগণ তাহাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করিলেন। চতুর্থ রাতে মাসজিদে মুসুল্লীগণের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। অবশেষে তিনি ফাজরের সলাতের জন্য বের হলেন এবং ফাজরের সলাত শেষ করে লোকদের দিকে ফিরলেন। অতঃপর আল্লাহ্‌র হামদ ও সানা বর্ণনা করেন। অতঃপর বললেনঃ আম্‌মা বাদ [তারপর বক্তব্য এই যে] এখানে তোমাদের উপস্থিতি আমার নিকট গোপন ছিল না, কিন্তু আমার আশংকা ছিল, তা তোমাদের জন্য ফার্‌য করে দেয়া হয় আর তোমরা তা আদায় করিতে অপারগ হয়ে পড়।

[বোখারী পর্ব ১১ : /২৯ হাঃ ৯২৪, মুসলিম ৬/২৫, হাঃ ৭৬১] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/২৬. রাতের সলাতে দুআ এবং রাতে সলাতে দণ্ডায়মান হওয়া।

৪৩৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমি মাইমূনাহ [রাদি.]-এর ঘরে রাত কাটালাম। তখন নাবী [সাঃআঃ] উঠে তাহাঁর প্রয়োজনাদি সেরে মুখ-হাত ধুয়ে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবার জেগে উঠে পানির মশকের নিকট গিয়ে এর মুখ খুললেন। এরপর মাঝারি রকমের এমন অযূ করিলেন যে, তাতে অধিক পানি লাগালেন না। অথচ পুরা উযূই করিলেন। অতঃপর তিনি সলাত আদায় করিতে লাগলেন। তখন আমিও জেগে উঠলাম। তবে আমি কিছু দেরী করে উঠলাম। এজন্য যে, আমি এটা পছন্দ করলাম না যে, তিনি আমার অনুসরণকে দেখে ফেলেন। যা হোক আমি অযূ করলাম। তখনও তিনি দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করছিলেন। সুতরাং আমি গিয়ে তাহাঁর বাম দিকে দাঁড়িয়ে গেলাম। তখন তিনি আমার কান ধরে তাহাঁর ডান দিকে আমাকে ঘুরিয়ে নিলেন। এরপর তাহাঁর তেরো রাকআত সলাত পূর্ণ হলো। অতঃপর তিনি আবার কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি নাক ডাকাতেও লাগলেন। তাহাঁর অভ্যাস ছিল যে, তিনি ঘুমালে নাক ডাকাতেন। এরপর বিলাল [রাদি.] এসে তাঁকে জাগালেন। তখন তিনি নতুন অযূ না করেই সলাত আদায় করিলেন। তাহাঁর দুআর মধ্যে এ দুআও ছিলঃ

اللهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا، وَفِي بَصَرِي نُورًا، وَفِي سَمْعِي نُورًا، وَعَنْ يَمِينِي نُورًا

“হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে, আমার চোখে, আমার কানে, আমার ডানে-বামে, আমার উপর-নীচে, আমার সামনে-পেছনে, আমার জন্য নূর দান করুন।

কুরায়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ সাতটি আমার তাবূতের মত। এরপর আমি আব্বাসের পুত্রদের একজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম, তিনি আমাকে এ সাতটি অঙ্গের কথা বর্ণনা করিলেন এবং রগ, গোশ্‌ত, চুল ও চামড়ার উল্লেখ করিলেন এবং আরো দুটির কথা উল্লেখ করেন।

[বোখারী পর্ব ৮০ : /১০ হাঃ ৬৩১৬, মুসলিম ৬/২৬, হাঃ ৭৬৩] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৮. আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি একদা নাবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী মায়মূনাহ [রাদি.]-এর ঘরে রাত কাটান। তিনি ছিলেন ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর খালা। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেনঃ অতঃপর আমি বিছানার প্রশস্ত দিকে শুলাম এবং আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-ও তাহাঁর স্ত্রী বিছানার লম্বা দিকে শুলেন; আর আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনিভাবে রাত যখন অর্ধেক হয়ে গেল তার কিছু পূর্বে কিংবা কিছু পরে আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] জাগলেন। তিনি বসে হাত দিয়ে তাহাঁর মুখমণ্ডল থেকে ঘুমের আবেশ মুছতে লাগলেন। অতঃপর সূরা আলু-ইমরানের শেষ দশটি আয়াত তিলাওয়াত করিলেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে একটি ঝুলন্ত মশক হইতে সুন্দরভাবে উযূ করিলেন। অতঃপর সলাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, আমিও উঠে তিনি যেরূপ করিয়াছেন তদ্রুপ করলাম। তারপর গিয়ে তাহাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি তাহাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং আমার ডান কান ধরে একটু নাড়া দিয়ে ডান পাশে এনে দাঁড় করালেন। অতঃপর তিনি দুরাকআত সলাত আদায় করিলেন। তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর বিতর আদায় করিলেন। তারপর শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তাহাঁর নিকট মুয়ায্‌যিন এলে তিনি দাঁড়িয়ে হাল্কাভাবে দুরাকআত সলাত আদায় করিলেন। তারপর বেরিয়ে গিয়ে ফাজরের সলাত আদায় করিলেন।

[বোখারী পর্ব ৪ : /৩৬ হাঃ ১৮৩, মুসলিম ৬/২৬, হাঃ ৭৬৩] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর সলাত ছিল তের রাকআত অর্থাৎ রাতে। [তাহাজ্জুদ ও বিত্‌রসহ]।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /১০ হাঃ ১১৩৮, মুসলিম ৬/২৬, হাঃ ৭৬৪] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] রাতে যখন তাহাজ্জুদের সলাত আদায় করিতেন, তখন বলিতেনঃ হে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্! সব প্রশংসা একমাত্র আপনারই, আসমান ও যমীনের তত্ত্বাবধায়ক আপনিই এবং আপনারই জন্য সব স্তুতি। আসমান ও যমীন এবং এসবের মধ্যকার সবকিছুর প্রতিপালক আপনিই এবং আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আসমান যমীন ও এগুলোর মধ্যকার সব কিছুর নূর আপনিই। আপনি হক, আপনার বাণী হক, আপনার ওয়াদা হক, আপনার সাক্ষাৎ হক, জান্নাত হক, জাহান্নাম হক এবং ক্বিয়ামাত হক। ইয়া আল্লাহ্! আপনারই উদ্দেশে আমি ইসলাম কবূল করেছি এবং আপনারই প্রতি ঈমান এনেছি, তাওয়াক্কুল করেছি আপনারই ওপর, আপনারই কাছে বিবাদ হাওয়ালা করেছি, আপনারই কাছে ফায়সালা চেয়েছি। তাই আপনি আমার পূর্বের ও পরের গুপ্ত ও প্রকাশদ্য এর্ব যা আপনি আমার চেয়ে অধিকজ্ঞাত তাই সবই মাফ করে দিন। আপনি ব্যতীত সত্যিকার কোন ইলাহ্ নেই।

[বোখারী পর্ব ৯৭ : /৩৫ হাঃ ৭৪৪২, মুসলিম ৬/২৬, হাঃ ৭৬৯] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/২৭. রাতের সলাতে কিরাআত লম্বা করা মুস্তাহাব।

৪৪১. আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাতে আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। তিনি এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন যে, আমি একটি মন্দ কাজের ইচ্ছে করে ফেলেছিলাম। [আবু ওয়াইল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন] আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি ইচ্ছে করেছিলেন? তিনি বলিলেন, ইচ্ছে করেছিলাম, বসে পড়ি এবং নাবী [সাঃআঃ]-এর ইক্‌তিদা ছেড়ে দেই।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /৯ হাঃ ১১৩৫, মুসলিম ৬/২৭, হাঃ ৭৭৩] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/২৮. ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে যে সকাল পর্যন্ত সমস্ত রাত্রি ঘুমাল।

৪৪২. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এমন এক লোকের ব্যাপারে উল্লেখ করা হল, যে সারা রাত এমনকি ভোর পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিল। তখন তিনি বলিলেন, সে এমন লোক যার উভয় কানে অথবা তিনি বলিলেন, তার কানে শয়তান পেশাব করেছে

। [বোখারী পর্ব ৫৯ : /১১ হাঃ ৩২৭০, মুসলিম ৬/২৮, হাঃ ৭৭৪] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৩. আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] এক রাতে তাহাঁর কন্যা ফাতিমাহ [রাদি.]-এর নিকট এসে বললেনঃ তোমরা কি সলাত আদায় করছ না? আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আমাদের আত্মাগুলো তো আল্লাহ্ তাআলার হাতে রয়েছে। তিনি যখন আমাদের জাগাতে মরযী করবেন, জাগিয়ে দিবেন। আমরা যখন একথা বললাম, তখন তিনি চলে গেলেন। আমার কথার কোন প্রত্যুত্তর করিলেন না। পরে আমি শুনতে পেলাম যে, তিনি ফিরে যেতে যেতে আপন উরুতে করাঘাত করছিলেন এবং কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করছিলেনঃ ………….. “মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্ক প্রিয়”-

[আল-কাহাফঃ ৫৪] [বোখারী পর্ব ১৯ : /৫ হাঃ ১১২৭, মুসলিম ৬/২৮, হাঃ ৭৭৫] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাক। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহ্‌কে স্মরণ করে একটি গিঁট খুলে যায়, পরে উযূ করলে আর একটি গিঁট খুলে যায়, অতঃপর সলাত আদায় করলে আর একটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয়, প্রফুল্ল মনে ও নির্মল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /১২ হাঃ ১১৪২, মুসলিম ৬/২৮, হাঃ ৭৭৬] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/২৯. নফল সলাত বাড়িতে আদায় করা মুস্তাহাব এবং তা মাসজিদে জায়িয।

৪৪৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের ঘরেও কিছু সলাত আদায় করিবে এবং ঘরকে তোমরা কবর বানিয়ে নিবে না।

[বোখারী পর্ব ৮ : /৫২ হাঃ ৪৩২, মুসলিম ৬/২৯, হাঃ ৭৭৭] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৬. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার রবের যিক্‌র করে, আর যে ব্যক্তি যিক্‌র করে না, তাহাদের দুজনের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতের।

[বোখারী পর্ব ৮০ : /৬৬ হাঃ ৬৪০৭, মুসলিম ৬/২৯, হাঃ ৭৭৯] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৭. যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] রমাযান মাসে একটি ছোট কামরা বানালেন। তিনি [বুস্‌র ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মনে হয়, [যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] কামরাটি চাটাই তৈরি ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি সেখানে কয়েক রাত সলাত আদায় করেন। আর তাহাঁর সাহাবীগণের মধ্যে কিছু সাহাবীও তাহাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করেন। তিনি যখন তাঁদের সম্বন্ধে জানতে পারলেন, তখন তিনি বসে থাকলেন। পরে তিনি তাঁদের নিকট এসে বলিলেন, তোমাদের কার্যকলাপ দেখে আমি বুঝতে পেরেছি। হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের ঘরেই সলাত আদায় কর। কেননা, ফার্‌য সলাত ব্যতীত লোকেরা ঘরে যে সলাত আদায় করে তা-ই উত্তম।

[বোখারী পর্ব ১০ : /৮১ হাঃ ৭৩১, মুসলিম ৬/২৯, ৭৮১] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৩১. কোন ব্যক্তি সলাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে অথবা কুরআন পাঠ ও যিক্‌র আযকার এলোমেলো হলে তার প্রতি শুয়ে যাওয়া অথবা বসে যাওয়ার নির্দেশ যে পর্যন্ত না ঐ অবস্থা কেটে যায়।

৪৪৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] [মাসজিদে] প্রবেশ করে দেখিতে পেলেন যে, দুটি স্তম্ভের মাঝে একটি রশি টাঙানো রয়েছে। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এ রশিটি কী কাজের জন্য? লোকেরা বললো, এটি যায়নাবের রশি, তিনি [ইবাদাত করিতে করিতে] অবসন্ন হয়ে পড়লে এটির সাথে নিজেকে বেঁধে দেন। নাবী [সাঃআঃ] ইরশাদ করলেনঃ না, ওটা খুলে ফেল। তোমাদের যে কোন ব্যক্তির প্রফুল্লতা ও সজীবতা থাকা পর্যন্ত ইবাদাত করা উচিত। যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন যেন সে বসে পড়ে।

[বোখারী পর্ব ১৯ : /১৮ হাঃ ১১৫০, মুসলিম ৬/৩১, হাঃ ৭৮৪] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪৯. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] একবার তাহাঁর নিকট আসেন, তাহাঁর নিকট তখন এক মহিলা ছিলেন। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করলেনঃ ইনি কে? আয়েশা [রাদি.] উত্তর দিলেন, অমুক মহিলা, এ বলে তিনি তাহাঁর সলাতের উল্লেখ করিলেন। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বললেনঃ থাম, তোমরা যতটুকু সামর্থ্য রাখ, ততটুকুই তোমাদের করা উচিত। আল্লাহ্‌র শপথ! আল্লাহ্ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত [সওয়াব দিতে] বিরত হন না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়।

আল্লাহ্‌র নিকট অধিক পছন্দনীয় আমল সেটাই, যা আমলকারী নিয়মিত করে থাকে

[বোখারী পর্ব ২ : /৩২ হাঃ ৪৩, মুসলিম ৬/৩১ হাঃ ৭৮৫] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৫০. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সলাতরত অবস্থায় তোমাদের কেউ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে সে যেন ঘুমের আমেজ চলে না যাওয়া পর্যন্ত ঘুমিয়ে নেয়। কারণ, যে তন্দ্রাবস্থায় সলাত আদায় করে সে জানে না যে, সে কি ইসতিগফার করছে নাকি নিজেকে গালি দিচ্ছে

। [বোখারী পর্ব ৪ : /৫৩ হাঃ ২১২, মুসলিম ৬/৩১, হাঃ ৭৮৬] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৩৩. কুরআন বার বার পাঠ করার নির্দেশ আর এ কথা বলা অপছন্দনীয় যে আমি অমুক অমুক সূরাহ ভুলে গেছি কিন্তু এ কথা বলা জায়িয যে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে।

৪৫১. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এক ক্বারীকে রাতে মসজিদে কুরআন মাজীদ পাঠ করিতে শুনলেন। এরপর তিনি বলিলেন, আল্লাহ্ তার প্রতি রহম করুন। সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা অমুক অমুক সূরাহ থেকে ভুলতে বসেছিলাম

[বোখারী পর্ব ৬৬: /২৭ হাঃ ৫০৪২, মুসলিম ৬/৩৩, হাঃ ৭৮৮] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৫২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্তরে কুরআন গেঁথে [মুখস্থ] রাখে তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে, তবে সে উট তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যদি সে বন্ধন খুলে দেয়, তবে তা আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।

[বোখারী পর্ব ৬৬ : /২৩ হাঃ ৫০৩১, মুসলিম ৬/৩৩, হাঃ ৭৮৯] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৫৩. আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, এটা খুবই খারাপ কথা যে, তোমাদের মধ্যে কেউ বলবে, আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং, তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করিতে থাক, কেননা, তা মানুষের অন্তর থেকে উটের চেয়েও দ্রুতবেগে চলে যায়।

[বোখারী পর্ব ৬৬: /২৩ হাঃ ৫০৩২, মুসলিম ৬/৩৩, হাঃ ৭৯০] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৫৪. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা কুরআনের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। আল্লাহ্‌র কসম! যার কবজায় আমার জীবন! কুরআন বন্ধনমুক্ত উটের চেয়েও দ্রুত বেগে দৌড়ে যায়।

[বোখারী পর্ব ৬৬: /২৩ হাঃ ৫০৩৩, মুসলিম ৬/৩৩, হাঃ ৭৯১] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৩৪. সুমধুর কণ্ঠে কুরআন পাঠ করা বাঞ্ছনীয়।

৪৫৫. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহ্ কোন নাবীকে ঐ অনুমতি দেননি, যা আমাকে দিয়েছেন, আর তা কুরআন তিলাওয়াত যথেষ্ট। রাবী বলেন, এর অর্থ সুস্পষ্ট করে আওয়াজের সাথে কুরআন পাঠ করা

[বোখারী পর্ব ৬৬ : /১৯ হাঃ ৫০২৩, মুসলিম ৬/৩৪, হাঃ ৭৯৬] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৫৬. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] তাকে লক্ষ্য করে বলিলেন, হে আবু মূসা! তোমাকে দাউদ [আ.]-এর সুমধুর কন্ঠ দান করা হয়েছে।

[বোখারী পর্ব ৬৬ : /৩১ হাঃ ৫০৪৮, মুসলিম ৬/৩৪, হাঃ ৭৯৩] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৩৫. মাক্কাহ বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূরাহ ফাতহ্ পড়ার বর্ণনা।

৪৫৭. আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফ্‌ফাল [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের দিন আমি আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর উটনীর উপর দেখেছি, তিনি তারজী* করে সূরাহ ফাত্‌হ তিলাওয়াত করছেন। বর্ণনাকারী মুআবিয়া ইবনি কুররা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, যদি আমার চারপাশে লোকজন জমায়েত হওয়ার আশঙ্কা না থাকত, তা হলে উবাইদুল্লাহ ইবনি মুগাফ্‌ফাল [রাদি.] আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]-এর তিলাওয়াত বর্ণনা করিতে যেভাবে তারজী করেছিলেন আমিও ঠিক সে রকমে তারজী করে তিলাওয়াত করতাম।

[বোখারী পর্ব ৬৪ : /৪৮ হাঃ ৪২৮১, মুসলিম ৬/৩৫ হাঃ ৭৯৪] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৩৬. কুরআন পাঠের সময় প্রশান্তি অবতীর্ণ হওয়া।

৪৫৮. বারআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক সাহাবী সূরা কাহ্‌ফ তিলাওয়াত করছিলেন। তাহাঁর বাড়িতে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ঘোড়াটি তখন লাফালাফি করিতে লাগল। তখন ঐ সাহাবী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আল্লাহ্‌র দরবারে দুআ করিলেন। তখন তিনি দেখলেন, একখণ্ড মেঘ এসে তাকে ঢেকে দিয়েছে। তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করিলেন। তখন তিনি বলিলেন, হে অমুক! তুমি এভাবে তিলাওয়াত করিবে। এটা তো প্রশান্তি ছিল, যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে নাযিল হয়েছিল।

[বোখারী পর্ব ৬১ : /২৫ হাঃ ৩৬১৪, মুসলিম ৬/৩৬ হাঃ ৭৯৫] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৫৯. উসাইদ ইবনি হুযাইর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

একদা রাত্রে তিনি সুরা আল-বাকারাহ পাঠ করছিলেন। তখন তাহাঁর ঘোড়াটি তারই পাশে বাঁধা ছিল। হঠাৎ ঘোড়াটি ভীত হয়ে লাফ দিয়ে উঠল এবং ছুটাছুটি শুরু করিল। যখন পাঠ বন্ধ করিলেন তখনই ঘোড়াটি শান্ত হল। আবার পাঠ শুরু করিলেন। ঘোড়াটি আগের মত করিল। যখন পাঠ বন্ধ করিলেন ঘোড়াটি শান্ত হল। আবার পাঠ আরম্ভ করলে ঘোড়াটি আগের মত করিতে লাগল। এ সময় তার পুত্র ইয়াহইয়া ঘোড়াটির নিকটে ছিল। তার ভয় হচ্ছিল যে, ঘোড়াটি তার পুত্রকে পদদলিত করিবে। তখন তিনি পুত্রকে টেনে আনলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখিতে পেলেন। পরদিন সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে উক্ত ঘটনা বলিলেন। ঘটনা শুনে নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ হে ইবনি হুযইর [রাদি.]! তুমি যদি পাঠ করিতে, হে ইবনি হুযইর [রাদি.]! তুমি যদি পাঠ করিতে। ইবনি হুযয়র আরয করিলেন, আমার ছেলেটি ঘোড়ার নিকট থাকায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম হয়ত বা ঘোড়াটি তাকে পদদলিত করিবে, সুতরাং আমি আমার মাথা উপরে উঠাতেই মেঘের মত কিছু দেখলাম, যা আলোর মত ছিল। আমি যখন বাইরে এলাম তখন আর কিছু দেখ্লাম না। তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি কি জান, ওটা কী ছিল? বলিলেন, না। তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তারা ছিল মালাইকাহ। তোমার তিলাওয়াত শুনে তোমার কাছে এসেছিল। তুমি যদি সকাল পর্যন্ত তিলাওয়াত করিতে তারাও ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে অবস্থান করত এবং লোকেরা তাহাদেরকে দেখিতে পেত।

[বোখারী পর্ব ৬৬ : /১৫ হাঃ ৫০১৮, মুসলিম ৬/৩৬, হাঃ ৭৯৬] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৩৭. কুরআনের হাফিযের ফাযীলাত।

৪৬০. আবু মূসা আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কুরআন পাঠকারী মুমিনের দৃষ্টান্ত কমলালেবুর ন্যায়, যার ঘ্রাণও উত্তম স্বাদও উত্তম। যে মুমিন কুরআন পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত খেজুরের ন্যায়, যার কোন সুঘ্রাণ নেই তবে এর স্বাদ মিষ্টি। আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠ করে তার দৃষ্টান্ত রায়হানার ন্যায়, যার সুঘ্রাণ আছে তবে স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠ করে না তার দৃষ্টান্ত হন্‌যালাহ্ ফলের ন্যায়, যার সুঘ্রাণও নাই, স্বাদও তিক্ত।

[বোখারী পর্ব ৭০ : /৩০ হাঃ ৫৪২৭, মুসলিম ৬/৩৭ হাঃ ৭৯৭] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৩৮. কুরআনের যে অভিজ্ঞ এবং এটা শিক্ষার জন্য যে লেগে থাকে তার মর্যাদা।

৪৬১.আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, কুরআনের হাফেয পাঠক, লিপিকর সম্মানিত ফেরেশতার মত। অতি কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও যে বারবার কুরআন মাজীদ পাঠ করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার লাভ করিবে।

[বোখারী পর্ব ৬৫: /৮০ হাঃ ৪৯৩৭, মুসলিম ৬/৩৮ হাঃ ৭৯৮] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৩৯. নৈপুণ্য ও মর্যাদাবান ব্যক্তির নিকট কুরআন পাঠ উত্তম যদিও পাঠক শ্রোতার চেয়ে উত্তম।

৪৬২.আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-কে বলিলেন, আল্লাহ “সূরাيَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَمْ তোমাকে পড়ে শুনানোর জন্য আমাকে আদেশ করিয়াছেন। উবাই ইবনি কাব [রাদি.] জিজ্ঞেস করিলেন আল্লাহ কি আমার নাম করিয়াছেন? নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, হাঁ। তখন তিনি কেঁদে ফেললেন।

[বোখারী পর্ব ৬৩ : /১৬ হাঃ ৩৮০৯, মুসলিম ৬/৩৯, হাঃ নং ৭৯৯] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৪০. কুরআন পাঠ শ্রবণের মর্যাদা এবং হাফিযদের নিকট থেকে পড়া শুনতে চাওয়া এবং তিলাওয়াতের সময় ক্রন্দন করা ও গবেষণা করার মর্যাদা।

৪৬৩. আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, তুমি আমার সামনে কুরআন পাঠ করো। আমি উত্তরে বললাম, আমি আপনার সামনে কুরআন পাঠ করবো; অথচ আপনারই ওপর কুরআন নাযিল হয়েছে। তিনি বলিলেন, আমি অন্যের কাছ থেকে কুরআন পাঠ শোনা পছন্দ করি। আমি তখন সূরাহ নিসা পাঠ করলাম, এমনকি যখন আমি এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলামঃ “অতঃপর চিন্তা করো, আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যে একজন করে সাক্ষী হাযির করব এবং এ সকলের ওপরে তোমাকে সাক্ষী হিসাবে হাযির করব তখন তারা কী করিবে।” তখন তিনি আমাকে বলিলেন, “থাম!” আমি লক্ষ্য করলাম, তাহাঁর [নাবী [সাঃআঃ]-এর] দুচোখ থেকে অশ্রু ঝরছে

[বোখারী পর্ব ৬৬ : /৩৫ হাঃ ৫০৫৫, মুসলিম ৬/৪০ হাঃ ৮০০] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৬৪. আলক্বামাহ [রহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা হিম্‌স শহরে ছিলাম। এ সময় ইবনি মাসউদ [রাদি.] সূরাহ ইউসুফ তিলাওয়াত করিলেন। তখন এক ব্যক্তি বলিলেন, এ সূরাহ এভাবে নাযিল হয়নি। এ কথা শুনে ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলিলেন, আমি রসূল  [সাঃআঃ]-এর সামনে এ সূরাহ্ তিলাওয়াত করেছি। তিনি বলেছেন, তুমি সুন্দরভাবে পাঠ করেছ। এ সময় তিনি ঐ লোকটির মুখ থেকে মদের গন্ধ পেলেন। তাই তিনি তাকে বলিলেন, তুমি আল্লাহ্‌র কিতাব সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলা এবং মদ পান করার মত জঘন্যতম অপরাধ এক সাথে করছ? এরপর তিনি তার ওপর হদ [অপরাধের নির্ধারিত শাস্তি] জারি করিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬৬ : /৮ হাঃ ৫০০১, মুসলিম ৬/৪০ হাঃ ৮০১] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৪৩. সূরাহ ফাতিহা ও সূরাহ আল-বাক্বারাহ্‌র শেষ অংশের মর্যাদা এবং সূরা আল-বাক্বারাহ্ শেষ দু আয়াত পড়ার প্রতি উৎসাহ দান।

৪৬৫. বাদরী সাহাবী আবু মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, সূরাহ্ বাকারাহ্‌র শেষে এমন দুটি আয়াত রয়েছে যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত দুটি তিলাওয়াত করিবে তার জন্য এ আয়াত দুটোই যথেষ্ট। অর্থাৎ রাত্রে কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করার যে হক রয়েছে, কমপক্ষে সূরাহ্ বাকারার শেষ দুটি আয়াত তেলাওয়াত করলে তার জন্য তা যথেষ্ট। আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, পরে আমি আবু মাসউদের সাথে দেখা করলাম। তখন তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিলেন। এ হাদীসটির ব্যাপারে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সেটা আমার নিকট বর্ণনা করিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ : /১২ হাঃ ৪০০৮, মুসলিম ৬/৪৩, হাঃ ৮০৭] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৪৭. কুরআন নিজে চর্চাকারী ও অন্যকে শিক্ষাদানকারীর মর্যাদা এবং ঐ ব্যক্তির মর্যাদা যে কুরআনের হিকমাত, যেমন ফিক্‌হ ইত্যাদি শিক্ষা করে এবং তদনুযায়ী আমাল করে ও তা শিক্ষা দেয়।

৪৬৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, দুটি বিষয় ছাড়া অন্য কোন ব্যাপারে ঈর্ষা করা যায় না। প্রথমত, যাকে আল্লাহ্ তাআলা কিতাবের জ্ঞান দান করিয়াছেন এবং তিনি তার থেকে গভীর রাতে তিলাওয়াত করেন। দ্বিতীয়ত, যাকে আল্লাহ্ তাআলা সম্পদ দান করিয়াছেন এবং তিনি সেই সম্পদ দিন-রাত দান-খায়রাত করিতে থাকেন।

[বোখারী পর্ব ৯৭ : /৪৫ হাঃ ৫০২৫, মুসলিম ৬/৪৭ হাঃ ৮১৫] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৬৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেবল দুটি বিষয়ে ঈর্ষা করা বৈধ; [১] সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ্ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে বৈধ পন্থায় অকাতরে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন; [২] সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ্ তাআলা প্রজ্ঞা দান করিয়াছেন, অতঃপর সে তার মাধ্যমে বিচার ফায়সালা করে ও তা অন্যকে শিক্ষা দেয়।

[বোখারী পর্ব ৩ : /১৫ হাঃ ৭৩, মুসলিম ৬/৪৭ হাঃ ৮১৬] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৪৮. কুরআন সাত রকম পঠনে নাযিল হয়েছে এবং এর অর্থের বর্ণনা।

৪৬৮. উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি হিশাম ইবনি হাকীম [রাদি.]-কে রসূল  [সাঃআঃ]-এর জীবদ্দশায় সূরাহ্ ফুরক্বান তিলাওয়াত করিতে শুনিয়াছি এবং গভীর মনোযোগ সহকারে আমি তাহাঁর কিরাআত শুনিয়াছি। তিনি বিভিন্নভাবে কিরাআত পাঠ করিয়াছেন; অথচ রসূল  [সাঃআঃ] আমাকে এভাবে শিক্ষা দেননি। এ কারণে সলাতের মাঝে আমি তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদ্যত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু বড় কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। অতঃপর সে সালাম ফিরালে আমি চাদর দিয়ে তার গলা পেঁচিয়ে ধরলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, তোমাকে এ সূরাহ্ যেভাবে পাঠ করিতে শুনলাম, এভাবে তোমাকে কে শিক্ষা দিয়েছে? সে বলিল, রসূল  [সাঃআঃ]-ই আমাকে এভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি বললাম, তুমি মিথ্যা বলছ। কারণ, তুমি যে পদ্ধতিতে পাঠ করেছ, এর থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে রসূল  [সাঃআঃ] আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আমি তাকে জোর করে টেনে রসূল  [সাঃআঃ]-এর কাছে নিয়ে গেলাম এবং বললাম, আপনি আমাকে সূরাহ্ ফুরকান যে পদ্ধতিতে পাঠ করিতে শিখিয়েছেন এ লোককে আমি এর থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে তা পাঠ করিতে শুনিয়াছি। এ কথা শুনে রসূল  [সাঃআঃ] বলিলেন, তাকে ছেড়ে দাও। হিশাম, তুমি পাঠ করে শোনাও। অতঃপর সে সেভাবেই পাঠ করে শোনাল, যেভাবে আমি তাকে পাঠ করিতে শুনিয়াছি। তখন আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ] বলিলেন, এভাবেই নাযিল করা হয়েছে। এরপর বলিলেন, হে উমার! তুমিও পড়। সুতরাং আমাকে তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবেই আমি পাঠ করলাম। এবারও রসূল  [সাঃআঃ] বলিলেন, এভাবেও কুরআন নাযিল করা হয়েছে। এ কুরআন সাত উপ [আঞ্চলিক] ভাষায় নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের জন্য যা সহজতর, সে পদ্ধতিতেই তোমরা পাঠ কর।

[বোখারী পর্ব ৪৪ : /৪ হাঃ ৪৯৯২, মুসলিম ৬/৪৮ হাঃ ৮১৮] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৬৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, জিব্‌রীল [আ.] আমাকে এক আঞ্চলিক ভাষায় কুরআন পাঠ করে শুনিয়েছেন। কিন্তু আমি সব সময় তাহাঁর নিকট বেশি ভাষায় পাঠ শুনতে চাইতাম। শেষতক তা সাতটি আঞ্চলিক ভাষায় সমাপ্ত হয়।

[বোখারী পর্ব ৫৯ : /৬ হাঃ ৩২১৯, মুসলিম ৬/৪৮ হাঃ ৮১৯] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৪৯. কুরআন তারতিল সহ [ধীরে ধীরে স্পষ্ট করে] পাঠ করা এবং হায্‌যা থেকে বিরত থাকা, হায্‌যা হচ্ছে তাড়াহুড়া করে পড়া এবং এক রাকআতে একাধিক সূরাহ পড়া বৈধ।

৪৭০. আবু ওয়াইল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর নিকট এসে বলিল, গতরাতে আমি মুফাস্‌সাল সূরাগুলো এক রাকআতেই তিলাওয়াত করেছি। তিনি বলিলেন, তাহলে নিশ্চয়ই কবিতার ন্যায় দ্রুত পড়েছ। নাবী [সাঃআঃ] পরস্পর সমতুল্য যে সব সূরা মিলিয়ে পড়তেন, সেগুলো সম্পর্কে আমি জানি। এ বলে তিনি মুফাস্‌সাল সূরাসমূহের বিশটি সূরার কথা উল্লেখ করে বলেন, নাবী [সাঃআঃ] প্রতি রাকআতে এর দুটি করে সূরা পড়তেন।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১০৬ হাঃ ৭৭৫, মুসলিম ৬/৪৯ হাঃ ৮২২] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৫০. কিরাআত সম্পর্কিত।

৪৭১. আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়তেন।

[বোখারী পর্ব ৬৫ : /৫৪ হাঃ ৪৮৭০, মুসলিম ৬/৫০ হাঃ ৮২৩] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৭২. ইব্‌রাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর কতিপয় সাথী আবু দ্দারদা [রাদি.]-এর কাছে আগমন করিলেন। তিনিও তাহাদেরকে তালাশ করে পেয়ে গেলেন। তিনি তাহাদেরকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর কিরাআত অনুযায়ী কে কুরআন পাঠ করিতে পারে। আলক্বামাহ [রহ] বলিলেন, আমরা সকলেই। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস কররেন, তোমাদের মধ্যে সবচাইতে ভাল হাফিয কে? সকলেই আলকামার প্রতি ইঙ্গিত করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদকে == কীভাবে পড়তে শুনেছেন? আলকামাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিলেন, আমি তাকে == [ব্যতীত] পড়তে শুনিয়াছি। এ কথা শুনে আবুদ্‌দারদা [রাদি.] বলিলেন, তোমরা সাক্ষী থাক, আমিও নাবী [সাঃআঃ]-কে এভাবেই পড়তে শুনিয়াছি। অথচ এসব [সিরিয়াবাসী] লোকেরা চাচ্ছে, আমি যেন আয়াতটি {وَمَا خَلَقَ الذَّكَرَ وَالْأُنْثَى} পড়ি। আল্লাহ্‌র কসম! আমি তাহাদের কথা মানবো না।

[বোখারী পর্ব ৬৫ : ৯২ হাঃ ৪৯৪৪, মুসলিম ৬/৫০ হাঃ ৮২৪] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৫১. যে সমস্ত সময়ে সলাত আদায় নিষিদ্ধ।

৪৭৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কয়েকজন আস্থাভাজন ব্যক্তি-আমার নিকট যাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন উমার [রাদি.]-আমাকে বলেছেন যে, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] ফাজরের পর সূর্য উজ্জ্বল হয়ে না উঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৯ : /৩০ হাঃ ৫৮১, মুসলিম ৬/৫১, হাঃ ৮২৬]মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৭৪. আবু সাঈদ খুদ্‌রী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, ফাজরের পর সূর্য উদিত হয়ে [একটু] উপরে না উঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত কোন সলাত নেই।

[বোখারী পর্ব ৯ : /৩১ হাঃ ৫৮৬, মুসলিম ৬/৫১, হাঃ ৮২৭] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৭৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সলাত আদায়ের ইচ্ছা করো না।

[বোখারী পর্ব ৯ : /৩০ হাঃ ৫৮৩, মুসলিম ৬/৫১, হাঃ ৮২৮] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৭৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন সূর্যের এক কিনারা উদিত হইবে, তখন তা পরিস্কারভাবে উদিত না হওয়া পর্যন্ত সলাত আদায় বন্ধ রাখো। আবার যখন সূর্যের এক কিনারা অস্ত যাবে, তখন তা সম্পূর্ন অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা সলাত আদায় বন্ধ রাখ।

[বোখারী পর্ব ৫৯ : /১১ হাঃ ৩২৭২, মুসলিম ৬/৫১ হাঃ ৮২৮] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৫৪. ঐ দু রাকআতের পরিচয় যা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আসরের পর আদায় করিতেন।

৪৭৭. কুরাইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

ইবনি আব্বাস, মিসওয়ার ইবনি মাখরামা এবং আবদুর রহমান ইবনি আযহার [রাদি.] তাঁকে আয়িশাহ্ [রাদি.]-এর নিকট পাঠালেন এবং বলে দিলেন, তাঁকে আমাদের সকলের তরফ হইতে সালাম পৌঁছিয়ে আসরের পরের দুরাকআত সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিবে। তাঁকে একথাও বলবে যে, আমরা খবর পেয়েছি যে, আপনি সে দুরাকআত আদায় করেন, অথচ আমাদের নিকট পৌঁছেছে যে, নাবী [সাঃআঃ] সে দুরাকআত আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। ইবনি আব্বাস [রাদি.] সংবাদে আরও বলিলেন যে, আমি উমার ইবনি খাত্তাব[রাদি.]-এর সাথে এ সলাতের কারণে লোকদের মারধোর করতাম।

কুরাইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি আয়িশাহ্ [রাদি.]-এর নিকট গিয়ে তাঁকে তাঁদের পয়গাম পৌঁছিয়ে দিলাম। তিনি বলিলেন, উম্মু সালামাহ [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস কর। {কুরাইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন} আমি সেখান হইতে বের হয়ে তাঁদের নিকট গেলাম এবং তাঁদেরকে আয়িশাহ্ [রাদি.]-এর কথা জানালাম। তখন তাঁরা আমাকে আয়িশাহ্ [রাদি.]-এর নিকট যে বিষয় নিয়ে পাঠিয়েছিলেন, তা নিয়ে পুনরায় উম্মু সালামাহ [রাদি.]-এর নিকট পাঠালেন। উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] বলিলেন, আমিও নাবী করীম [সাঃআঃ]-কে তা নিষেধ করিতে শুনিয়াছি। অথচ অতঃপর তাঁকে আসরের সলাতের পর তা আদায় করিতেও দেখেছি। একদা তিনি আসরের সলাতের পর আমার ঘরে তাশরীফ আনলেন। তখন আমার নিকট বনূ হারাম গোত্রের আনসারী কয়েকজন মহিলা উপস্থিত ছিলেন। আমি বাঁদীকে এ বলে তাহাঁর নিকট পাঠালাম যে, তাহাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে বলবে, উম্মে সালামাহ [রাদি.] আপনার নিকট জানতে চেয়েছেন, আপনাকে [আসরের পর সলাতের] দুরাকআত নিষেধ করিতে শুনিয়াছি; অথচ দেখছি, আপনি তা আদায় করছেন? যদি তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করেন, তাহলে পিছনে সরে থাকিবে, বাঁদী তা-ই করিল। তিনি ইঙ্গিত করিলেন, সে পিছনে সরে থাকল। সলাত শেষ করে তিনি বলিলেন, হে আবু উমায়্যাহ্‌র কন্যা! আসরের পরের দুরাকআত সলাত সম্পর্কে তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করেছ। আবদুল কায়স গোত্রের কিছু লোক আমার নিকট এসেছিল। তাহাদের কারণে যুহ্‌রের পরের দুরাকাআত আদায় করা হইতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। এ দুরাকআত সে দুরাকআত।

[বোখারী পর্ব ২২ : /৮ হাঃ ১২৩৩, মুসলিম ৬/৫৪, হাঃ ৮৩৪] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৭৮. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, দুরাকআত সলাত আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো অবস্থাতেই ছাড়তেন না। তাহলো ফাজরের সলাতের পূর্বের দুরাকআত ও আসরের পরের দুরাকআত।

[বোখারী পর্ব ৯: /৩৩ হাঃ ৫৯২, মুসলিম ৬/৫৪ হাঃ ৮৩৫] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৫৫. মাগরিব সলাতের পূর্বে দু রাকআত সলাত মুস্তাহাব।

৪৭৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুআযযিন যখন আযান দিতো, তখন নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবীগণের মধ্যে কয়েকজন নাবী [সাঃআঃ]-এর বের হওয়া পর্যন্ত [মসজিদের] খুঁটির নিকট গিয়ে দাঁড়াতেন এবং এ অবস্থায় মাগিরবের পূর্বে দু রাকআত সলাত আদায় করিতেন। অথচ মাগরিবের আযান ও ইকামাতের মধ্যে কিছু [সময়] থাকত না। উসমান ইবনি জাবালাহ ও আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] শুবা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণনা করেন যে, এ দুয়ের মধ্যবর্তী ব্যবধান খুবই সামান্য হত।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১৪ হাঃ ৬২৫, মুসলিম ৬/৫৫, হাঃ ৮৩৭] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৫৬. প্রত্যেক আযান ও ইক্বামাতের মধ্যে সলাত।

৪৮০. আবদুল্লাহ্ ইবনি মুগাফফাল মুযানী [রাযি হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যে সলাত রয়েছে। একথা তিনি তিনবার বলেন, [তারপর বলেন] যে চায় তার জন্য।

[বোখারী পর্ব ১০ : /১৬ হাঃ ৬২৪, মুসলিম ৬/৫৬, হাঃ ৮৩৮] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬/৫৭. সলাতুল খাউফ বা ভয়ের সলাত।

৪৮১. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] একদলকে সাথে নিয়ে সলাত আদায় করিয়াছেন। অন্যদরকে রেখেছেন শত্রুর মুকাবিলায়। তারপর সলাতরত দলটি এক রাকআত আদায় করে শত্রুর মুকাবিলায় নিজ সাথীদের স্থানে চলে গেলেন। অতঃপর অন্য দলটি আসলেন। রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে নিয়ে এক রাকআত সলাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। এরপর তাঁরা তাহাদের বাকী আরেক রাকআত আদায় করিলেন এবং শত্রুর মুকাবিলায় গিয়ে দাঁড়ালেন। এবার আগের দলটি এসে তাহাদের বাকী রাকআতটি পূর্ণ করিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ : /৩১ হাঃ ৪১৩৩, মুসলিম ৬/ ৫৭ হাঃ ৮৩৯] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৮২. সাহল ইবনি আবু হাসমাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, [সলাতুল খাওফে] ঈমাম কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াবেন। একদল থাকিবেন তাহাঁর সাথে এবং অন্যদল শত্রুদের মুখোমুখী হয়ে তাহাদের মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে থাকিবেন। তখন ঈমাম তাহাঁর পেছনের একদল নিয়ে এক রাকআত সলাত আদায় করবেন। এরপর সলাতরত দলটি নিজ স্থানে দাঁড়িয়ে রুকূ ও দু সাজদাসহ আরো এক রাকআত সলাত আদায় করে ঐ দলের স্থানে গিয়ে দাঁড়াবেন। এরপর তারা এলে ঈমাম তাহাদের নিয়ে এক রাকআত সলাত আদায় করবেন। এভাবে ইমামের দুরাকআত সলাত পূর্ণ হয়ে যাবে। আর পিছনের লোকেরা রুকূ সাজদাসহ আরো এক রাকআত সলাত আদায় করবেন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ : /৩১ হাঃ ৪১৩১, মুসলিম ৬/ ৫৭ হাঃ ৮৪১] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৮৩. সলিহ ইবনি খাওয়াত [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রায়ী এমন একজন সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন যিনি যাতুর রিকার যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর সাথে সলাতুল খাওফ আদায় করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, একদল লোক রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর সাথে কাতারে দাঁড়ালেন এবং অপর দলটি থাকলেন শত্রুর সম্মুখীন। এরপর তিনি তার সাথে দাঁড়ানো দলটি নিয়ে এক রাকআত সলাত আদায় করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। মুক্তাদীগণ তাহাদের সলাত পূর্ণ করে ফিরে গেলেন এবং শত্রুর সম্মুখে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালেন। এরপর দ্বিতীয় দলটি এলে তিনি তাহাদেরকে নিয়ে অবশিষ্ট রাকআত আদায় করে স্থির হয়ে বসে থাকলেন। এরপর মুক্তাদীগণ তাহাদের নিজেদের সলাত সম্পূর্ণ করলে তিনি তাহাদেরকে নিয়ে সালাম ফিরালেন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ : /৩১ হাঃ ৪১২৯, মুসলিম ৬/৫৭, হাঃ ৮৪২] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৮৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, যাতুর রিকার যুদ্ধে আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা একটি ছায়াদার বৃক্ষের কাছে গিয়ে পৌঁছলে নাবী [সাঃআঃ]-এর জন্য আমরা তা ছেড়ে দিলাম। এমন সময় এক মুশরিক ব্যক্তি এসে গাছের সাথে লটকানো নাবী [সাঃআঃ]-এর তরবারীখানা হাতে নিয়ে তা তাহাঁর উপর উঁচিয়ে ধরে বলিল, তুমি আমাকে ভয় পাও কি? তিনি বলিলেন, না। এরপর সে বলিল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করিবে কে? তিনি বলিলেন, আল্লাহ। এরপর নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবীগণ তাকে ধমক দিলেন। এরপর সলাত আরম্ভ হলে তিনি সাহাবীদের একটি দলকে নিয়ে দুরাকআত সলাত আদায় করিলেন। তারা এখান থেকে সরে গেলে অপর দলটি নিয়ে তিনি আরো দুরাকআত নামায আদায় করিলেন। এভাবে নাবী [সাঃআঃ]-এর হল চার রাকআত এবং সাহাবীদের হল দুরাকআত সলাত।

[বোখারী পর্ব ৬৪ : /৩১ হাঃ ৪১৩৬, মুসলিম ৬/ ৫৭ হাঃ ৮৪৩] মুসাফির ব্যক্তির নামাজ-এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

One response to “মুসাফির ব্যক্তির নামাজ ও তা ক্বসর করার বর্ণনা”

Leave a Reply