মুয়াত্তা হাদিস বই। সৎস্বভাব বিষয়ক অধ্যায়
মুয়াত্তা হাদিস বই। সৎস্বভাব বিষয়ক অধ্যায়, এই অধ্যায়ে হাদীস =১৮ টি ( ১৬৬৯-১৬৮৬ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ৪৭ঃ সৎস্বভাব বিষয়ক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১ -সৎস্বভাব প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদঃ ২ -শরম ও লজ্জা সম্বন্ধীয় বর্ণনা
পরিচ্ছেদঃ ৩ -ক্রোধ প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদঃ ৪ -কাউকে ত্যাগ করা প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদঃ ১ -সৎস্বভাব প্রসঙ্গ
১৬১২ মুআয ইব্নু জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সর্বশেষ ওসীয়্যত নবী করীম সাঃআঃ আমাকে করিয়াছেন যখন আমি ঘোড়ার রেকাবে পা রাখছিলাম। তা এই যে, হে মুআয! মানুষের সাথে সৎ ব্যবহার করিবে।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৬১৩ উম্মুল মুমিনীন আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, যখনই রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে দুইটি কাজের মধ্যে একটি গ্রহণের অনুমতি দেয়া হত তিনি সহজটি গ্রহণ করিতেন, যদি উহা গুনাহর কাজ না হত। যদি উহা গুনাহর কাজ হত, তবে তিনিই সর্বাধিক উহা বর্জন করে চলতেন। তিনি নিজের জন্য কারো উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। কিন্তু যখন আল্লাহ্র হারামের মর্যাদা বিনষ্ট করা হত তখন তিনি প্রতিশোধ নিতেন।
[বুখারি ৩৫৬০, মুসলিম ২৩২৭]মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬১৪ আলী ইব্নু হুসাইন হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, ইসলামের সৌন্দর্যের মধ্যে এটাও রয়েছে যে, মানুষ অপ্রয়োজনীয় কথা ও কাজ ত্যাগ করিবে।
[সহীহ, তিরমিজি ২৩১৭, ২৩১৮, ইবনি মাজাহ ৩৯৭৬, আবু হুরায়রা [রাদি.] থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন {সহীহ আল-জামে} ৫৯১১, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৬১৫ উম্মুল মুমিনীন আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
কেউ রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে সাক্ষাৎ করিতে অনুমতি চাইল। আমি তখন রসূলুল্লাহ্র ঘরে ছিলাম। তিনি বলিলেন, এই লোকটি মন্দ। অতঃপর তিনি তাকে আসতে অনুমতি দান করলেন। আয়িশা [রাদি.] বলেন, বেশিক্ষণ না যেতেই আমি ঐ লোকটির সাথে রসূলুল্লাহ্কে হাসতে শুনতে পেলাম। তার প্রস্থানের পর আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! এইমাত্র আপনি তাকে মন্দ বলিলেন, আর এখনই আপনি তার সাথে হাসতেছিলেন। তখন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, সকলের চাইতে মন্দ ঐ ব্যক্তি, যার অনিষ্টকারিতার জন্য লোকে তাকে ভয় করে।
{১} [বুখারি ৬০৩২, ঈমাম মুসলিম মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করিয়াছেন ২৫৯১, আর ঈমাম মালিকের নিকট হাদীসটি পৌছেছে মর্মে বর্ণনা করিয়াছেন]{১} অর্থাৎ লোকেরা এই ভয়ে থাকে যে, সে যে কোন সময় কষ্ট দিতে পারে। লোকটি সম্পর্কে নবী করীম সাঃআঃ-এর মন্তব্য গীবত ছিল না, বরং এক ব্যক্তির অবস্থা বর্ণনা করার উদ্দেশ্য ছিল যাতে লোকেরা তার সম্পর্কে সতর্ক হয়ে যায়।মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৬১৬ কাব আহবার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, কোন বান্দার মর্যাদা তার প্রভুর কাছে কিরূপ তা জানতে ইচ্ছা করলে দেখ, অন্যান্য লোক তার সম্বন্ধে কি ধারণা পোষণ করে
মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৬১৭ ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আমার কাছে এই রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, মানুষ তার সৎ চরিত্রের জন্য সারা রাত্রি ইবাদতকারী ও সর্বদা রোযা রাখে, এমন ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করে থাকে।
{১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]{১} অর্থাৎ যদি লোকে তার প্রশংসা করে তবে বুঝবে যে, এই ব্যক্তি আল্লাহ্র কাছেও ভাল, আর যদি লোকে তাকে মন্দ ধারণা করে থাকে, তবে বুঝবে আল্লাহ্র কাছেও এই ব্যক্তি মন্দ।মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৬১৮ সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বয়েছেন, আমি কি তোমাদের এমন কাজের সন্ধান দিব, যা বহু নামাজ ও অনেক সাদকা হইতেও উৎকৃষ্ট ? লোকেরা বলল, নিশ্চয়ই, বলুন। তিনি বলিলেন, পরস্পর আপস করিয়ে দেয়া। আর তোমরা শত্রুতা ও দুশমনী হইতে দূরে থাক। কারণ এই স্বভাব নেকীকে বিনষ্ট করে।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৬১৯ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁর কাছে এই খবর পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, আমি নৈতিকতাকে পূর্ণতা দান করবার জন্য নবী হয়ে আগমন করেছি।
{১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]{১} এই হাদীসটি আহমাদ, হাকিম ও তিবরানী আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ২ -শরম ও লজ্জা সম্বন্ধীয় বর্ণনা
১৬২০ যায়েদ ইব্নু তালহা ইব্নু রুকানা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, প্রতিটি ধর্মেরই একটা স্বভাব রয়েছে, আর ইসলামের স্বভাব হল লজ্জা।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৬২১ আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে তার ভাইকে বেশি লজ্জা না করার জন্য নসীহত করছিল। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, এই বিষয়ে তাকে নসীহত করা হইতে বিরত থাক। কেননা এই লজ্জা ঈমানের অঙ্গস্বরূপ।
{১} [বুখারি ২৪, মুসলিম ৩৬]{১} যাকে নসীহত করা হচ্ছিল, সে ব্যক্তি ছিল খুবই লাজুক। ঐ ব্যক্তি তাকে তার লজ্জার জন্য তিরস্কার করছিল। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, এইরূপ নসীহত বন্ধ কর। তুমি তাকে লজ্জা হইতে বিরত থাকতে বলছ, অথচ উহা ঈমানের অঙ্গস্বরূপ।মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদঃ ৩ -ক্রোধ প্রসঙ্গ
১৬২২ হুমাইদ ইব্নু আবদুর রহমান ইব্নু আউফ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ্! আমাকে এমন কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিন, যা দ্বারা উপকার লাভ করিতে পারি। আর অনেক কথা বলবেন না, আমি ভুলে যাব। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, রাগ করো না।
[সহীহ, ঈমাম বুখারি ৬১১১৬, আবু সালেহ আবু হুরায়রা [রাদি.] থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, আর ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৬২৩ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, ঐ ব্যক্তি বীর নয় যে অন্যকে ধরাশায়ী করে দেয়, বরং বীর ঐ ব্যক্তি যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
[বুখারি ৬১১৪, মুসলিম ২৬০৯]মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদঃ ৪ -কাউকে ত্যাগ করা প্রসঙ্গে
১৬২৪ আবু আয়্যুব আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, কোন মুসলমানের পক্ষে তার ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তিন দিনের বেশি ত্যাগ করা বৈধ নয়। এটা এইরূপে যে, তাদের একজন মিলতে আসে, তো অন্যজন তাকিয়ে দেখে না বা একজন মিলতে আসে তো অন্যজন লক্ষ্য করে না; এই উভয়ের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই উত্তম, যে প্রথমে সালাম করে।
[বুখারি ৬০৭৭, মুসলিম ২৫৬০]মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬২৫ আনাস ইবনি মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ করো না এবং একে অন্যের দিকে পিঠ ফিরাইয়া থেক না, বরং তোমরা আল্লাহ্র বান্দা ভাই ভাই হয়ে থাক; কোন মুসলমানের জন্য তার কোন মুসলমান ভাইকে তিন রাতের অধিক ত্যাগ করা বৈধ নয়। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মুসলিম ভাই হইতে মুখ ফিরায়ে নেওয়াকেই তাদাবুর বলা হয়।
[বুখারি ৬০৭৬, মুসিলম ২৫৫৯]মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬২৬ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, তোমরা অনুমান করা হইতে বেঁচে থাকে। নিশ্চয়ই অনুমান বড় মিথ্যা। কারো ছিদ্রান্বেষণ করো না, কারো সম্বন্ধে অনুমানভিত্তিক কথা বলো না। দুনিয়ার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতা করো না। একে অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না এবং অন্যের প্রতি পিঠ ফিরিয়ে থেকো না। আল্লাহ্র বান্দা সকলে ভাই ভাই হয়ে যাও।
[বুখারি ৬০৬৬, মুসলিম ২৫৬৩]মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬২৭ আতা ইবনি আবদুল্লাহ্ খুরাসানী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, তোমরা পরস্পর মুসাফাহা [কর মর্দন] কর, তা হলে তোমাদের মধ্যকার শত্রুতা দূর হয়ে যাবে। পরস্পর হাদিয়া তোহ্ফা আদান-প্রদান কর, তা হলে পরস্পর ভালবাসা সৃষ্টি হইবে এবং বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৬২৮ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার বেহেশতের দ্বার খুলে দেয়া হয় এবং যে মুসলমান বান্দা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে না, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, তবে এ ব্যক্তি ব্যতীত, যে নিজ ভাইয়ের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে। বলা হইতে থাকে, তাদের পরস্পর মেলামেশা না হওয়ার পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে অপেক্ষা কর অর্থাৎ যতক্ষণ তারা আপস না করে তাদেরকে ক্ষমা করা হইবে না।
[সহীহ, মুসলিম ২৫৬৫]মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬২৯ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিলেন, সপ্তাহে দুইবার অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ও সোমবার বান্দাদের আমল লেখা হয়ে থাকে। তখন প্রত্যেক মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করা হয়ে থাকে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে স্বীয় ভাই-এর সাথে শত্রুতা পোষণ করে। বলা হয়, এই উভয়কে তাদের আপস না হওয়া পর্যন্ত ত্যাগ কর [ক্ষমা করো না]।
[সহীহ, মুসলিম ২৫৬৫]মুয়াত্তা হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply