তকদীর অধ্যায় । তকদীরের ব্যাপারে বিতর্ক করা নিষেধ

তকদীর অধ্যায় । তকদীরের ব্যাপারে বিতর্ক করা নিষেধ

তকদীর অধ্যায় । তকদীরের ব্যাপারে বিতর্ক করা নিষেধ, এই অধ্যায়ে হাদীস =১০ টি ( ১৬৫৯-১৬৬৮ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ৪৬ঃ তকদীর অধ্যায়

পরিচ্ছেদঃ ১ – তকদীরের ব্যাপারে বিতর্ক করা নিষেধ
পরিচ্ছেদঃ ২ – তকদীর সম্বন্ধে বিভিন্ন রেওয়ায়ত

পরিচ্ছেদঃ ১ – তকদীরের ব্যাপারে বিতর্ক করা নিষেধ

১৬০২ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, আদম ও মূসা [আ]-এর মধ্যে তর্ক হয়েছিল। অবশেষে আদম [আ] মূসা [আ]-এর উপর তর্কে জয়ী হয়েছিলেন। মূসা [আ] বলেছিলেন, আপনি ঐ আদম যিনি বহু লোককে পথভ্রষ্ট করিয়াছেন। আর তাদেরকে বেহেশত হইতে বের করিয়াছেন। আদম [আ] বলিলেন, তুমি তো ঐ মূসা যাকে আল্লাহ্ সর্বপ্রকার ইলম দান করেছিলেন, এবং লোকদের মাঝ থেকে তাকে চয়ন করে নবী বানিয়ে ছিলেন। মূসা [আ] বলিলেন, হ্যাঁ। অতঃপর আদম [আ] বলিলেন, তা সত্ত্বেও তুমি আমাকে এমন কাজের ব্যাপারে দোষারোপ করছ, যা আমার সৃষ্টির পূর্বেই আমার তকদীরে লেখা ছিল।

[বুখারি ৩৪০৯, মুসলিম ২৬৫২]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০৩ মুসলিম ইব্নু ইয়াসার জুহানী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার [রাদি.]-এর নিকট وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ আয়াত সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হল। তিনি বলিলেন, আমি শুনিয়াছি, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ্ তাআলা আদম [আ]-কে সৃষ্টি করলেন এবং তাঁর পৃষ্ঠে স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা মাসেহ করলেন, অতঃপর আদমের পৃষ্ঠদেশ হইতে তাঁর সন্তানদেরকে বের করলেন এবং বলিলেন, আমি এদেরকে বেহেশ্তের জন্য সৃষ্টি করেছি। এরা বেহেশতের কাজ করিবে। অতঃপর পুনরায় তাঁর পৃষ্ঠদেশে স্বীয় হাত বুলালেন এবং তাঁর আর কিছু সংখ্যক সন্তান বের করলেন এবং বলিলেন, আমি এদেরকে দোযখের জন্য সৃষ্টি করেছি। এরা দোযখের কাজ করিবে। এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! তা হলে আমল করায় লাভ কি ? রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, আল্লাহ্ তাআলা যখন কোন বান্দাকে বেহেশ্তের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তার দ্বারা বেহেশতীদের কাজ করান আর মৃত্যুর সময় পর্যন্ত সে নেক কাজ করে মৃত্যুবরণ করে, ফলে আল্লাহ্ তাআলা তাকে বেহেশ্তে প্রবেশ করিয়ে থাকেন। আর যখন কোন বান্দাকে দোযখের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তার দ্বারা দোযখীদের কাজ করিয়ে থাকেন। অতঃপর মৃত্যুর সময়েও তাকে খারাপ কাজ করিয়েই মৃত্যুবরণ করান। আর আল্লাহ্ তখন তাকে দোযখে প্রবেশ করিয়ে থাকেন।

[সহীহ, আবু দাঊদ ৪৭০৩, তিরমিজি ৩০৭৫, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন ====== শব্দটুকু ব্যতীত, সহীহ ওযয়ীফ সুনানে আবু দাঊদ]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০৪ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, আমি তোমাদের কাছে দুইটি বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি। তোমরা যতক্ষণ উহাকে ধরে থাকিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হইবে না। উহা হল আল্লাহ্‌র কিতাব ও তাঁর নাবীর সুন্নাত। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৬০৫ তাউস ইয়ামানী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কয়েকজন সাহাবীকে পেয়েছি যাঁরা বলিতেন, প্রতিটি বস্তুই তকদীরের লিখন অনুসারে হয়ে থাকে। তাউস বলেন, আর আমি ইব্নু উমার [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলিতেন, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, প্রতিটি ব্যাপারই তকদীর অনুযায়ী হয়ে থাকে, এমন কি মানুষের দুর্বল হওয়া এবং বুদ্ধিমান হওয়াও।

[সহীহ, মুসলিম ২৬৫৫]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০৬ আমর ইব্নু দীনার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আব্দুল্লাহ ইব্নু যুবাইর [রাহিমাহুল্লাহ]-এর কাছে শুনিয়াছি, তিনি স্বীয় খুৎবা দেয়ার সময় বলিতেন, আল্লাহ্ তাআলাই মানুষকে সৎপথ প্রদর্শনকারী, আর তিনিই পথভ্রষ্টকারী। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

[কুরআন মাজীদেও বলা হয়েছে, আল্লাহ্ তাআলা যাকে ইচ্ছা হিদায়ত দান করেন, যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন। সুতরাং ভাল-মন্দ সমস্ত কাজ আল্লাহ্ই সৃষ্টি করে থাকেন, কিন্তু মানুষকে ভাল-মন্দ কাজ বলে দেয়া হয়েছে এবং উহা হইতে বেছে নেয়ার ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে। এই স্বাধীনতার উপরই তার সওয়াব ও আযাব হইবে। কদরীয়া {১} ও শীয়া দলের মতে মানুষ নিজের কাজের নিজেই সৃষ্টিকর্তা। এই মতবাদ কুরআন ও হাদীসের বিপরীত]

{১} কদরীয়া একটি ভ্রষ্ট দল। তারা মানুষকে সর্বকাজের সৃষ্টিকর্তা এবং পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী মনে করে থাকে।এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৬০৭ আবু সুহাইল ইব্নু মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি উমার আবদুল আযীয [রাহিমাহুল্লাহ]-এর সাথে কোথাও যাচ্ছিলেন। তিনি আবু সুহাইলকে বলিলেন, কদরিয়া সম্বন্ধে তোমার মত কি ? আমি বললাম, আমার মত এই যে, তাদেরকে তাওবা করানো উচিত। যদি তারা তাওবা করে ফেলে, তবে তো ভাল, না হয় তাদেরকে হত্যা করা যেতে পারে। উমার [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, তাদের সম্বন্ধে আমার মতও ইহাই। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, তাদের সম্বন্ধে আমারও মত এটাই।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ২ – তকদীর সম্বন্ধে বিভিন্ন রেওয়ায়ত

১৬০৮ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, কোন স্ত্রীলোক যেন তার বোনের তালাক কামনা না করে এই উদ্দেশ্যে যে, তার পাত্র খালি করে দিবে, এবং তাকে বিবাহ করিবে। কারণ যা তার ভাগ্যে রয়েছে উহাই সে পাবে।

[সহীহ, বুখারি ৬৬০১]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০৯ মুহম্মাদ ইব্নু কাব কুরাযী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

মুয়াবিয়া [রাদি.] মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেছেন, হে মানুষ! তোমরা জেনে রাখ, যা আল্লাহ্ তাআলা তোমাদেরকে দান করিবেন কেউই তা বাধা দিতে পারবে না। আর তিনি যা দান না করিবেন, তা কেউই দান করিতে পারবে না। আর কোন মালদারকে তার মাল আল্লাহর আযাব হইতে রক্ষা করিতে পারবে না। আল্লাহ্ তাআলা যার ভাল চান তিনি তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। অতঃপর বলিলেন, আমি এই কথাগুলো এই কাঠের [মিম্বর] উপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে বলিতে শুনিয়াছি। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৬১০ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমার কাছে এই মর্মে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, সাহাবীদের যুগে বলা হত, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি প্রতিটি বস্তু যেভাবে ইচ্ছা সৃষ্টি করিয়াছেন, তা দ্বারা যে সময় নির্দিষ্ট হয়েছে উহার পূর্বে কিছুই হইতে পারে না। আল্লাহ্ই আমার জন্য যথেষ্ট। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ডাকে, আল্লাহ্ তার কথা শুনে থাকেন। আল্লাহ্ ব্যতীত এমন কেউ নেই যার নিকট দুআ করা যেতে পারে, যার কাছে কিছু আশা করা যেতে পারে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৬১১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

সাহাবীদের যুগে বলা হত, স্বীয় রিযিক পূর্ণ করার পূর্বে কোন ব্যক্তির মৃত্যু হইতে পারে না। অতএব ধৈর্য সহকারে জীবিকা অন্বেষণ কর অর্থাৎ এই ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না।

[জীবিকা অন্বেষণে এত লেগে যেও না, যাতে আল্লাহকেও ভুলে যেতে হয়, হালাল হারামের পার্থক্য থাকে না। যা নির্দিষ্ট আছে তাই পাবে]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

Comments

One response to “তকদীর অধ্যায় । তকদীরের ব্যাপারে বিতর্ক করা নিষেধ”

Leave a Reply