দিয়াত অধ্যায় । দিয়াত সম্পর্কিত আলোচনা – মুয়াত্তা হাদিস

দিয়াত অধ্যায় । দিয়াত সম্পর্কিত আলোচনা – মুয়াত্তা হাদিস

দিয়াত অধ্যায় । দিয়াত সম্পর্কিত আলোচনা – মুয়াত্তা হাদিস , এই অধ্যায়ে হাদীস =২৯ টি ( ১৫৯৮-১৬২৬ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ৪৩ঃ দিয়াত

পরিচ্ছেদঃ ১ -দিয়াত সম্পর্কিত আলোচনা

১৫৫৮ আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবু বাকর ইব্নু মুহাম্মাদ ইব্নু আমর ইব্নু হাযম [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ

দিয়াতের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যে পত্র তাকে লিখেছিলেন উহাতে উল্লেখ ছিল, জীবনের দিয়াত বা বিনিময় এক শত উট। যখন পূর্ণ নাক কাটা যায় এবং স্থানটি সম্পূর্ণ সমান হয়ে যায় তখন উহার দিয়াত একশত উট। যখম মাথার মগজ পর্যন্ত পৌঁছেছে উহাতে ১/৩ দিয়াত, পেটের যখমেও দিয়াতের ১/৩। চক্ষুর দিয়াত পঞ্চাশ উট, হাত এবং পায়েরও পঞ্চাশ উট করে দিয়াত রয়েছে। প্রতিটি অঙ্গুলির দিয়াত দশ উট। প্রতিটি দাঁতের পাঁচ উট। হাড় বাহির করে দিয়েছে এমন যখমের দিয়াত পাঁচ উট।

[সহীহ, নাসাঈ ৪৮৫১, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন {ইরওয়া} ২২৮৯]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদঃ ২ -দিয়াত কিভাবে গ্রহণ করা হইবে ?

১৫৫৯ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার [রাদি.] যখন ঐ সমস্ত গ্রাম্য লোকের উপর দিয়াতের মূল্য লাগাতেন, যাদের নিকট স্বর্ণ হত তখন স্বর্ণওয়ালাদের উপর এক হাজার দীনার এবং রৌপ্যওয়ালাদের উপর বার হাজার দিরহাম নির্দিষ্ট করে দিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, শাম ও মিসরের অধিবাসিগণ স্বর্ণওয়ালা, আর ইরাকের অধিবাসিগণ রৌপ্যওয়ালা।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] পর্যন্ত খবর পৌঁছেছে যে, লোকের নিকট হইতে তিন অথবা চার চৎসরের মধ্যে দিয়াত উশুল করা হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমার মতে তিন বৎসরে দিয়াত উশুল করা পছন্দনীয়।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের কাছে ইহা একটি সর্বসম্মত বিষয় যে, দিয়াতে গ্রামবাসীদের নিকট হইতে উট নেয়া হইবে না। আর তাবুওয়ালাদের নিকট হইতে সোনা চান্দি নেয়া হইবে না। আর স্বর্ণওয়ালাদের নিকট হইতে রৌপ্য এবং রৌপ্যওয়ালাদের নিকট হইতে স্বর্ণ নেয়া হইবে না।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৩ -ইচ্ছাকৃত হত্যার দিয়াত , যখন নিহত ব্যক্তির ওয়ারিস দিয়াতের উপর সম্মত হয় এবং পাগলের দিয়াত

১৫৫৯ ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

যখন ইচ্ছাকৃত হত্যায় নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ দিয়াতের উপর সম্মত হয়ে যায় তখন দিয়াত পঁচিশটি বিনত মাখায়, পঁচিশটি বিনত লবুন, পঁচিশটিই হিক্কা ও পঁচিশটি জায্আ হইবে।

বিনত মাখায়, বিনত লবুন, হিককা ও জায্আ এদের সম্পর্কে যাকাত অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৫৬০ য়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

মারওয়ান মুআবিয়াকে লিখলেন, আমার নিকট এক উন্মাদকে আনা হয়েছে, সে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। মুআবিয়া উত্তরে লিখলেন, তাকে বন্দী করে রাখ, তা হইতে কিসাস নিয়ো না। কেননা উন্মাদের কিসাস নেই। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কোন বালেগ ও নাবালেগ মিলিত হয়ে কাউকেও ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে, তবে বালেগ হইতে কিসাস নিয়ে হইবে আর নাবালেগের উপর অর্ধদিয়াত ওয়াজিব হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কোন স্বাধীন ও দাস মিলিত হয়ে কোন দাসকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে, তবে গোলামকে তো কিসাসে হত্যা করা হইবে, আর স্বাধীন ব্যক্তির উপর ঐ গোলামের অর্ধেক মূল্য ওয়াজিব হইবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৪ -ভুলে হত্যা করার দিয়াত প্রসঙ্গে

১৫৬১ ইরাক ইব্নু মালিক ও সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

বানি সাদের এক ব্যক্তি ঘোড়া দৌড়াল যাতে জুহায়নাহ্ গোত্রের এক ব্যক্তির অঙ্গুলি নষ্ট করে দিল; অঙ্গুলি হইতে এত রক্ত ঝরল যে, তাতে ঐ ব্যক্তি মারা গেল। উমার [রাদি.] প্রথমে তো বনী সাদকে বলিলেন, তোমরা এই কথার উপর পঞ্চাশ বার কসম করিতে পার যে, এই ব্যক্তি অঙ্গুলি নষ্ট হওয়ার দরুন মরেনি; তারা এতে সম্মত হল না। যখন তারা কসম করিল না তিনি বানী সাদ গোত্রের লোকদের বলিলেন, তোমরা কসম করিবে কি? তারাও এতে সম্মত হল না। অতঃপর তিনি বানী সাদ হইতে অর্ধেক দিয়াত দিতে ফয়সালা দিলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এই হাদীসের উপর আমল করা হইবে না। ইব্নু শিহাব, সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার ও রবীআ ইবনি আবী আবদুর রহমান বলেন, ভুলবশত হত্যার দিয়াতে কুড়িটি বিনত মাখায, কুড়িটি বিনত লবুন, কুড়িটি ইব্নু লাবুনের, কুড়িটি হিক্কা এবং কুড়িটি জাযআ দেয়া হয়ে থাকে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের কাছে এটা একটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত যে, নাবালেগদের কাছে থেকে কিসাস নেয়া হইবে না, যদিও সে স্বেচ্ছায় হত্যা করে। এই ধরনের হত্যা ভুলবশত হত্যার পর্যায়ে পড়বে। বালেগ না হওয়া পর্যন্ত এই হুকুম অর্থাৎ তার উপর শাস্তি বর্তাবে না তার বালেগ হওয়া পর্যন্ত।

এজন্যই যদি কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে কাউকেও হত্যা করে, তবে ইহা ভুলক্রমে হত্যা হয়েছে মনে করিতে হইবে। যদি নাবালেগ ও বালেগ মিলিতভাবে কাউকেও হত্যা করে, প্রত্যেকের জন্য অর্ধেক দিয়াত নির্ধারিত হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যে ব্যক্তি ভুলক্রমে নিহত হয়, তাতে দিয়াত হইবে, এতে কিসাস হইবে না, যা দ্বারা তার ঋণ আদায় করা হইবে, তার ওসীয়ত আদায় করা হইবে। যদি তার নিকট দিয়াতের ১/৩ পরিমাণ মাল থাকে আর দিয়াত ক্ষমা করে দেয়া হয় তবে তা বৈধ। যদি এত মাল না থাকে তবে ১/৩-এর পরিমাণ ক্ষমা করিতে পারে। অবশিষ্ট যা থাকে, উহা ওয়ারিসদের হক। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৫ -ভুলে কাউকে আহত করার দিয়াত

১৫৬২ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমাদের মতে, ভুলের একটি সর্বসম্মত বিধান রয়েছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আঘাতের ক্ষত ভাল না হয়ে যায় ততক্ষণ ঐ আঘাতজনিত ক্ষতের দিয়াত আদায় করা হইবে না। যদি হাত অথবা পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায়, অতঃপর পুনঃ জোড়া লেগে পূর্বের মতো ভাল হয়ে যায়, তবে উহাতে দিয়াত নেই। যদি কোন প্রকার ত্রুটি থেকে যায় তবে ত্রুটির পরিমাণ দিয়াত হইবে। যদি ঐ হাড় এইরূপ হয় যে, যার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ হইতে দিয়াত সাব্যস্ত হয়েছে, তবে ঐ পরিমাণ দিয়াত অনিবার্যভাবে নির্ধারিত হইবে। অন্যথায় বিবেচনান্তে উপযুক্ত দিয়াত গ্রহণ করা হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ভুলক্রমে শরীরে যে আঘাতজনিত ক্ষত হয়েছে যদি তা এমনভাবে ভাল হয়ে যায় যে, আঘাতের কোন চিহ্নও না থাকে, তবে দিয়াত নেই। যদি কোন ত্রুটি বা কোন ক্ষতের চিহ্ন থেকে যায়, তবে তার উপযুক্ত দিয়াত দিতে হইবে। পেটের ক্ষতে ১/৩ দিয়াত অনিবার্য দেয়া হইবে। আর যে আঘাত লাগার দরুন জোড়া খুলে যায়, হাড় স্থানচ্যুত হয়ে যায়, উহাতে দিয়াত নেই। যেমন ঐ আঘাতে দিয়াত নেই, যাতে হাড় বের হয়ে যায়।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এটা আমাদের কাছে একটি সর্বসম্মত বিধান যে, যদি হাজ্জাম খতনা করবার সময় ভুলে অতিরিক্ত জায়গা কেটে ফেলে তবে তার দিয়াত দিতে হইবে। এইরূপে যদি চিকিৎসক ভুলে কোন ত্রুটি করে ফেলে, তবে তাতে দিয়াত দিতে হইবে [যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এইরূপ করে, তবে কিসাস হইবে] ।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৬ -স্ত্রীলোকের দিয়াত

১৫৬৩ সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব [ হইতে বর্ণিতঃ

১/৩ পর্যন্ত পুরুষ স্ত্রী উভয়ের দিয়াত সমান। যেমন দিয়াত সাব্যস্ত করার ব্যাপারে স্ত্রীলোকের অঙ্গুলি পুরুষের অঙ্গুলির মতো, স্ত্রীলোকের দাঁত পুরুষের দাঁতের মতো। স্ত্রীদের মোওযেহা [ঐ যখম যাতে হাড় দেখা যায়] পুরুষদের মোওযেহার মতো, অনুরূপভাবে স্ত্রীলোকের মুনকিলাহ [ঐ যখম যাতে হাড় স্থানচ্যুত হয়ে যায়] পুরুষের মুনকিলাহ্র মতো। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইব্নু শিহাব ও উরওয়া ইব্নু যুবাইর [রাহিমাহুল্লাহ] স্ত্রীদের ব্যাপারে সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাবের মতো বলিতেন যে, স্ত্রীগণ ১/৩ দিয়াত পর্যন্ত পুরুষদের মতো হইবে, অতঃপর পুরুষদের অর্ধ দিয়াতের সমপরিমাণ হইবে। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর ব্যাখ্যা এই যে, মোযিহাহ্ এবং মুনাক্কিলাতে মহিলাদের দিয়াত পুরুষের অনুরূপ। কিন্তু মুযিহাহ এবং জারিফাহ্ যার দিয়াত ১/৩ অথবা তার বেশী এ ক্ষেত্রে মহিলার দিয়াত পুরুষের অর্ধেক।

ইব্নু শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলিতেন, এই নিয়ম চলে এসেছে যে, যদি পুরুষ নিজের স্ত্রীকে আঘাত দ্বারা ক্ষতি করে দেয়, তবে তা হইতে দিয়াত নেয়া হইবে, কিন্তু কিসাস হইবে না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এই ব্যবস্থা তখনই হইবে যখন পুরুষ ভুলে আঘাত করে। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এইরূপ করে তবে কিসাস অনিবার্য হইবে। যেমন স্ত্রীকে বেত দ্বারা আঘাত করাতে তার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যে স্ত্রীলোকের স্বামী বা সন্তান তার সম্প্রদায়ের না হয়ে অন্য সম্প্রদায়ের হয়, সেই স্ত্রীলোকদের অপরাধের দিয়াতে স্বামী শরীক হইবে না। এইরূপে তার বাচ্চা ও বৈমাত্রেয় ভাই যখন ভিন্ন গোত্রের হইবে, সেও দিয়াতে শরীক হইবে না। কেননা রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর সময় হইতে আজ পর্যন্ত সমগোত্রের উপরই দিয়াত হয়ে থাকে। কিন্তু মীরাসে সন্তান ও বৈমাত্রের ভাই মালিক হইবে। যেমন স্ত্রীলোকের মুক্ত দাসের মীরাস তার সন্তানকে দেয়া হইবে, যদিও তার গোত্রের না হয়। কিন্তু তাদের অপরাধের দিয়াত স্ত্রীর স্বগোত্রের উপর বর্তাবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৭ -গর্ভস্থ সন্তানের দিয়াত

১৫৬২ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

হুযাইলের দুই স্ত্রীলোক পরস্পর মারামারি করিতে যেয়ে একে অপরের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করিল, যাতে তার পেটের বাচ্চা বাহির হয়ে গেল। এতে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ একটি দাস বা একটি দাসী দিয়াত দেয়ালেন।

[বুখারি ৫৭৫৯, মুসলিম ১৬৮১]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৬৩ সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ গর্ভস্থ সন্তান হত্যার ব্যাপারে একটি দাস অথবা দাসী দিয়াত দেয়ার আদেশ করিয়াছেন। যার উপর দিয়াতের আদেশ হয়েছে, সে বলল আমি এই সন্তানের রক্তপণ কেন আদায় করব, যে খায়নি, পান করেনি, কথা বলেনি, ক্রন্দনও করেনি। এইরূপ সন্তান হত্যার অপরাধ তো ক্ষমাযোগ্য। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন লোকটি তো [কাহিন] যাদুকরের ভাই। [বুখারি ৫৭৫৮, ৫৭৬০, ঈমাম মুসলিম হাদীসটি আবু হুরায়রা [রাদি.] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, মুসলিম ১৬৮১, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]

রবীআ ইব্নু আবী আব্দুর রহমান বলিতেন, দাস বা দাসীর মূল্য যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য দেয়া হয় পঞ্চাশ দীনার অথবা ছয় শত দিরহাম হওয়া উচিত। আর স্বাধীন মুসলমানের স্ত্রীর দিয়াত পাঁচ শত দীনার বা ছয় হাজার দিরহাম। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, স্বাধীনা রমণীর গর্ভস্থ বাচ্চার দিয়াত স্ত্রীলোকের দিয়াতের দশমাংশ আর উহা পঞ্চাশ দীনার বা ছয় শত দিরহাম। গর্ভস্থ বাচ্চার দিয়াত ঐ সময় দেয়া অনিবার্য হয় যখন বাচ্চা মরে পেট হইতে বের হয়ে পড়ে। আমি এতে কাউকেও ইখতিলাফ করিতে দেখিনি। যদি বাচ্চা পেট হইতে জীবিত বের হয়ে মারা যায় তবে পূর্ণ দিয়াত দিতে হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, সন্তানের ক্রন্দন দ্বারা বুঝা যাবে যে, সে জীবিত না মৃত। যদি ক্রন্দন করে মারা যায় তবে পূর্ণ দিয়াত দেয়া অনিবার্য হইবে। দাসীর পেটের সন্তানের বেলায় দাসীর মূল্যের দশমাংশ দিয়াত দিতে হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি গর্ভবতী স্ত্রী কোন পুরুষ অথবা স্ত্রীলোককে হত্যা করে, তবে তার সন্তান প্রসবের পূর্বে তার হইতে কিসাস নেয়া হইবে না। যদি গর্ভবতী স্ত্রীলোককে কেউ হত্যা করে, ইচ্ছাকৃতই হোক বা ভুলক্রমেই হোক, তার গর্ভস্থ সন্তানের দিয়াত অনিবার্য হইবে না, বরং যদি তাকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করা হয়ে থাকে, তবে হত্যাকারীকে হত্যা করা হইবে আর যদি ভুলক্রমে হত্যা করা হয়ে থাকে, তবে দিয়াত দিতে হইবে। হত্যা ভুল ক্রমে হলে তার দিয়াত নিকটাত্মীয়দের উপর বর্তাবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যদি কেউ ইহুদী বা খৃস্টান স্ত্রীলোকের গর্ভস্থ বাচ্চাকে হত্যা করে বের করে দেয় উহার হুকুম কি ? তিনি উত্তর দিলেন, তার মাতার দিয়াতের ১/১০ অংশ দিতে হইবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৮ -যাতে পূর্ণ দিয়াত দেয়া জরুরী হয়

১৫৬৪ সাঈদ ইব্নু মুসায়্যিব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলিতেন, উভয় ঠোঁটে পূর্ণ দিয়াত রয়েছে। যদি নিচের ঠোঁট কেটে ফেলা হয়ে থাকে তবে উহাতে দুই-তৃতীয়াংশ দিয়াত দিতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি ইব্নু শিহাব যুহরীর কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যদি কোন কানা লোক কোন চক্ষুবিশিষ্ট লোকের চক্ষু উপড়িয়ে ফেলে, তবে কি হুকুম ? তিনি বলিলেন, যদি ইচ্ছা করে, তবে তার চক্ষু উপড়িয়ে ফেলতে পারে। আর যদি ইচ্ছা করে তবে এক হাজার দীনার বা বার হাজার দিরহাম নিবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, যে অঙ্গ শরীরে দুই দুইটি রয়েছে, যদি কেউ উভয়টি নষ্ট করে দেয়, তবে পূর্ণ দিয়াত দিতে হইবে, আর জিহ্বাতে পূর্ণ দিয়াত হয়। যদি দুই কানে এইরূপ চোট লাগে যাতে শ্রবণশক্তি বিলুপ্ত হয়ে যায় যদিও কান কাটা না যায় তবুও পূর্ণ দিয়াত দিতে হয়। এইরূপে পুরুষের লজ্জাস্থান ও অণ্ডকোষের পূর্ণ দিয়াত রয়েছে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমার কাছে রেওয়ায়েত পৌঁছেছে যে, যদি কোন মহিলার স্তনদ্বয় কেটে ফেলা হয়, তবে উহাতে হইবে পূর্ণ দিয়াত । আর যদি ভ্রু কামিয়ে ফেলে এবং পুরুষের উভয় স্তন কেটে ফেলে, তবে পূর্ণ দিয়াত হইবে না।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কোন ব্যক্তির উভয় হাত, উভয় পা এবং উভয় চক্ষু নষ্ট করে দেয়, তবে ভিন্ন ভিন্নভাবে পূর্ণ দিয়াত দিতে হইবে, পায়ের ভিন্ন, হাতের ভিন্ন এবং চক্ষুর ভিন্ন ভিন্ন দিয়াত দিতে হইবে অর্থাৎ তিন দিয়াতে অথবা তিন হাজার দীনার বা ৩৬ হাজার দিরহাম দিতে হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কেউ এক চোখ কানা ব্যক্তির ভাল চক্ষু ভুলে নষ্ট করে ফেলে, তবে পূর্ণ দিয়াত দিতে হইবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৯ -চক্ষু ঠিক রেখে যদি চক্ষুর দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে উহার দিয়াত সম্বন্ধে হুকুম

১৫৬৫ যায়দ ইব্নু সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

যদি চক্ষু ঠিক থাকে কিন্তু দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায় তবে এক শত দীনার দিয়াত দিতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কেউ কারো চক্ষুর উপরের চামড়া কেটে ফেলে অথবা চক্ষুর চতুষ্পার্শ্বের গোল হাড় ভেঙ্গে ফেলে তবে উহা চিন্তা করে উপযুক্ত পরিমাণ দিয়াত দিতে হইবে। যদি দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে তবে ক্ষতির পরিমাণ দিয়াত দিতে হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কেউ করো ঐ চক্ষু নষ্ট করে ফেলে যা বাহ্য দৃষ্টিতে ঠিক থাকলেও উহাতে দৃষ্টিশক্তি ছিল না অথবা ঐরূপ একটি হাত কেটে ফেলে যা অক্ষম ছিল, তবে দিয়াত দেয়া অনিবার্য হইবে না। হ্যাঁ, বিচারকের [মতে] বিচারে যা স্থির হয় সেইরূপ দিয়াত দিতে হইবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১০ -ক্ষত করার দিয়াত

১৫৬৬ ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার হইতে শ্রবণ করিয়াছেন, তিনি বলিতেন, চেহারার ক্ষত যাতে হাড় দেখা যায়, মাথার হাড় দেখা যাওয়া অবস্থায় যখমের মতো, কিন্তু তার জন্য যদি চেহারা দেখিতে বিকৃত হয়ে যায়, তবে দিয়াত বাড়িয়ে দেয়া হইবে। মাথার অর্ধেক পর্যন্ত যে ক্ষত হইবে উহার জন্য ৭৫ দীনার দেয়া জরুরী হয়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের মতে ইহা একটি সর্বসম্মত বিধান যে, মুনাক্কিলা হলে ১৫ উট দিতে হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মুনাক্কিলা ঐ ক্ষতকে বলে যাতে হাড় স্থানচ্যুত হয়ে যায়, আর এই আঘাত মাথার মগজ পর্যন্ত না পৌঁছে। এই আঘাত মাথা ও চেহারায় সীমিত থাকে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের নিকট এই বিধান সর্বসম্মত যে, মামুমা ও জায়িফাতে কিসাস নেই, যুহরীও এইরূপ বলেছেন।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মামুমা ঐ ক্ষতকে বলা হয় যাতে হাড় ভেঙ্গে মাথার মগজ পর্যন্ত পৌঁছে আর এই ক্ষত মাথায়ই হয়ে থাকে। অবশ্য এই আঘাতে হাড় ভাঙ্গলেও উহা মগজের ক্ষতি করে না।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের নিকট ইহা সর্বসম্মত বিধান যে, মুযিহা হইতে অল্প ক্ষতে দিয়াত নেই যতক্ষণ উহা মুযিহা পর্যন্ত না পৌঁছে। মুযিহা বা তদূর্ধ্ব ক্ষতে দিয়াত দিতে হইবে। কেননা আমর ইব্নু হাযমের হাদীসে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, মুযিহায় পাঁচ উট; এর নিম্নের পরিমাণ বর্ণনা করেননি। আর কোন ঈমামও বর্তমানে বা অতীতে মুযিহার নিম্ন পরিমাণ দিয়াতের আদেশ করেননি।

সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব বলেন, শরীরের কোন অঙ্গে আঘাত লেগে ছিদ্র হলে তাতে ঐ অঙ্গের দিয়াতে এক তৃতীয়াংশ দিয়াত দিতে হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইব্নু শিহাব যুহরীর এমনটি মনে করেন না। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমার নিকটও এমন ক্ষতের কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট নেই, বরং ইহা বিচারকের বিচারের উপর নির্ভর করিবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের নিকট এটা সর্বসম্মত বিধান যে, মামুমা, মুনাফিক ও মুযিহা শুধু মাথা ও চেহারায় হয়ে থাকে। যদি অন্য কোন স্থানে হয় তবে বিচারকের রায়ের উপর আমল করা হইবে

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, নিচের চোয়াল ও নাক মাথায় ধরা হইবে না, বরং এই দুইটি পৃথক অঙ্গ। এদের অতিরিক্ত মাথা আর একটি পৃথক হাড়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইব্নু যুবাইর মুনাক্কিলার কিসাস নিয়েছেন।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১১ -অঙ্গুলির দিয়াত

১৫৬৭ বর্ণণাকারী হইতে বর্ণিতঃ

রবীআ ইব্নু আবদির রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, মহিলাদের আঙ্গুলির দিয়াত কি ? তিনি বলিলেন, দশটি উট। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, দুই আঙ্গুলিতে ? তিনি বলিলেন, কুড়িটি উট। আমি আবার বললাম, তিন অঙ্গুলিতে ? তিনি বলিলেন, ত্রিশটি উট। আমি জিজ্ঞেস করলাম, চারটি অঙ্গুলিতে ? তিনি বলিলেন, কুড়িটি উট। আমি বললাম, যখন ক্ষত বর্ধিত হল, কষ্ট বেড়ে গেল, তখন দিয়াত কমে গেল ? সাঈদ ইব্নু মুসায়্যিব [রাদি.] বলিলেন, তুমি ইরাকের অধিবাসী? {১} আমি বললাম, না, আমি যতটুকু জানি, তাতে স্থির থাকি। আর যা জানি না, তা জিজ্ঞেস করে নেই। সাঈদ বলিলেন, ভাতিজা, সুন্নত এটাই। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের কাছে ইহা একটি সর্বসম্মত বিধান যে, যখন পূর্ণ এক হাতের সমস্ত আঙ্গুলি কেটে ফেলা হয়, তবে প্রতিটি আঙ্গুলি দশ উটের হিসাবে দিয়াত দিতে হইবে। তা হলে পঞ্চাশ উট দিতে হইবে। যদি সমস্ত আঙ্গুলিই কাটা হয়, তখনও এর দিয়াত পূর্ণ হাতের তথা ৫০ উট হইবে। যদি হাতসহ কাটা যায় তবে দীনারের হিসাবে তত দীনার হইবে। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আঙ্গুলের অগ্রভাগের দিয়াত তেত্রিশ দীনার ও এক দীনারের এক তৃতীয়াংশ। উটের হিসাবে তিন উট এবং এক উটের এক তৃতীয়াংশ।

{১} ইরাকের লোকের বদনাম ছিল যে, তাঁরা হাদীস ছেড়ে প্রতিটি বিষয়ে যুক্তি অনুসন্ধান করিতেন। তাই সাঈদ জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমিও কি ইরাকী লোক যে, হাদীসের কথা শুনেও প্রশ্ন করছ? এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১২ -দাঁতের দিয়াত

১৫৬৪ উমার ইব্নুল খাত্তাব [রাদি.]-এর গোলাম আসলাম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইব্নুল খাত্তাব একটি দাঁতে এক উট, হাঁসুলির হাড়ের জন্য এক উট এবং পাঁজরের জন্য এক উট দিয়াতের ফায়সালা দিয়েছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ [রাদি.], সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব [রাদি.]-কে বলিতেন শুনেছেন, উমার ইব্নুল খাত্তাব [রাদি.] প্রতি দাঁতে এক উটের ফায়সালা দিয়েছেন। মুআবিয়া ইব্নু আবী সুফিয়ান [রাদি.] প্রতি দাঁতে পাঁচ উটের আদেশ করিতেন। উমার [রাদি.] কমিয়ে দিয়েছেন আর মুআবিয়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমি হলে প্রতি দাঁতে দুই দুই উট ধার্য করতাম যেন দিয়াত পূর্ণ হয়ে যায়। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব [রাদি.] বলিতেন, যখন দাঁতে আঘাত লাগে আর উহা কালো হয়ে যায়, তবে পূর্ণ দিয়াত দিতে হইবে। যদি কালো হয়ে পড়ে যায় তবুও পূর্ণ দিয়াত দিতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} উপরের বারটি বড় দাঁত প্রতিটি দাঁতে ৫ উট হইবে ১২ * ৫ = ৬০ উট এবং দুই দিকের ২০ টি দাঁতে ২টি করে ২০ * ২ = ৪০ উট হল। ৬০ + ৪০ = ১০০ উটের দিয়াত পূর্ণ হয়ে যাবে।এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১৩ -দাঁতের দিয়াত কার্যকর সম্পর্কে

১৫৬৫ আবু গাতফান ইব্নু তারীফ মুরবী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

মারওয়ান ইব্নু হাকাম তাহাকে আবদুল্লাহ ইব্নু আব্বাস [রাদি.]-এর নিকট জিজ্ঞেস করিতে পাঠালেন যে, মাঢ়ীর দাঁতের দিয়াত কি ? আবদুল্লাহ্ ইব্নু আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, পাঁচ উট। তিনি আবার জিজ্ঞেস করিতে পাঠালেন যে, সম্মুখের দাঁত ও মাঢ়ীর দাঁতের দিয়াত কি সমান হইবে? ইব্নু আব্বাস বলিলেন, যদি তোমরা দাঁতের ব্যাপারে অঙ্গুলির সাথে সমঞ্জস্য করে নিতে, তবে ভাল ছিল। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

হিশাম ইব্নু উরওয়া [রাহিমাহুল্লাহ] তার পিতা উরওয়া ইব্নু যুবাইর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণনা করেন, তিনি সমস্ত দাঁতের দিয়াত সমান ধার্য করিতেন, কোন দাঁতের বেশি কোন দাঁতের কম ধার্য করিতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের কাছে মাঢ়ীর দাঁত, সম্মুখের বড় দাঁত ও পাশের ছোট দাঁত সমস্তই এক সমান। কেননা রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ প্রতি দাঁতে পাঁচ উট দিয়াতের আদেশ করিয়াছেন। মাঢ়ীর দাঁত বা অন্য কোন দাঁতেরই কোন দাঁতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই।

{১} হাতের অঙ্গুলির ছোট বড় হওয়া সত্ত্বেও এবং কোনটি বেশি উপকারী, কোনটি কম উপকারী হওয়া সত্ত্বেও উহাদের দিয়াত সমান। অতএব দাঁতও কোনটি বেশি দরকারী, কোনটি কম দরকারী হওয়া সত্ত্বেও তাদের দিয়াত সমান হইবে।এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১৪ -দাসদের যখমের দিয়াত

১ সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] ও সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা উভয়ে বলিতেন, দাসের ক্ষতে তার মূল্যের ১/২০ অংশ হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মারওয়ান ইব্নু হাকাম ঐ ব্যক্তিকে, যে কোন দাসকে ক্ষত করে দিত, আদেশ করিতেন যে, এই ক্ষতের দরুন তার মূল্যের যতটুকু কমে গেল তাকে ততটুকু জরিমানা দিতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের কাছে সিদ্ধান্ত এই যে, দাসের ক্ষেত্রে হাড় দেখা যায়, এমন আঘাতে তার মূল্যের ১/২০ আর যে ক্ষতের দরুন হাড় স্থানচ্যুত হয় উহাতে তার মূল্যের ১/১০ ও ১/২ আর মামুমায় {১} ও জাইফার প্রতিটার জন্য তার মূল্যের ১/৩০ দিতে হইবে। উহা ব্যতীত প্রত্যেক আঘাতের জন্য তার মূল্যের যে ক্ষতি হইবে তা আদায় করিতে হইবে। যখন দাস সুস্থ হয়ে যাবে, তখন দেখিতে হইবে আঘাতের পূর্বে কি মূল্য ছিল এবং আঘাতের জন্য কত কম হল, উহা দিতে হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কেউ দাসের হাত-পা ভেঙ্গে ফেলে, পরে সে ভাল হয়ে যায়, তবে কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে না। হ্যাঁ, যদি কোন ত্রুটি থেকে যায় এবং এতে তার মূল্য কমে যায়, তবে ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, দাস ও দাসীর ব্যাপারে স্বাধীনদের মতো কিসাস দিতে হইবে। যদি দাস ইচ্ছাকৃতভাবে কোন দাসীকে হত্যা করে, তবে দাসকেও কিসাসে হত্যা করিতে হইবে। যদি আঘাত করে তাহলে তাকেও অনুরূপ আঘাত করা হইবে। যদি এক দাস অন্য কোন দাসকে ইচ্ছাকৃতভাবে মেরে ফেলে, তবে নিহইতের মালিকের ইচ্ছার উপর নির্ভর করিবে, হয় হত্যাকারীকে হত্যা করিবে অথবা দিয়াত অর্থাৎ গোলামের মূল্য নিয়ে নিবে। অনুরূপভাবে হত্যাকারীর মালিকের ইচ্ছার উপর নির্ভর করিবে, হয় নিহত ব্যক্তির মূল্য আদায় করিবে এবং হত্যাকারীকে নিজের নিকট থাকতে দিবে অথবা নিহইতের মালিক দিয়াতের উপর রাযী হয়ে হত্যাকারীকে নিয়ে নিবে, তা হলে তাকে হত্যা করিবে না।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কোন মুসলমান দাস কোন ইহুদী অথবা খ্রিস্টানকে যখম করে ফেলে তবে দাসের মালিক ইচ্ছা করলে দিয়াত দিয়ে দিবে বা ঐ দাস বিনিময়ে দিয়ে দিবে এবং দাসকে বিক্রয় করে তার ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করিবে। কিন্তু ঐ মুসলমান গোলামকে অমুসলমানের নিকট থাকতে দেয়া হইবে না।

{১} মস্তকে আঘাত পেলে মামুমা বলা হয়।এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১৫ -যিম্মী কাফিরের দিয়াত

১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উমার ইবনি আবদুল আযীয [রাহিমাহুল্লাহ] বলিতেন, ইহুদী ও খ্রিস্টানদের দিয়াত যখন তারা একে অন্যকে হত্যা করে, স্বাধীন মুসলমানের দিয়াতের অর্ধেক। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের কাছে বিধান এই যে, কোন মুসলমানকে কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা হইবে না। হ্যাঁ, যদি ধোঁকা দিয়ে সে যিম্মীকে হত্যা করে তবে তাকে হত্যা করা হইবে।

সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] বলিতেন, অগ্নিউপাসকদের দিয়াত আট শত দিরহাম। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এটাই আমাদের নিকট বিধান। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইহুদী খ্রিস্টানদের ক্ষত করার দিয়াত মুসলমানদের ক্ষত করার দিয়াতের হিসাবে মুযিহার ১/২০ এবং মামুমা ও জাইফায় ১/৩। এর উপর অন্যগুলোর অনুমান করা যায়।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১৬ -যে সমস্ত কাজের দিয়াত হত্যাকারীর স্বীয় মাল হইতে দিতে হয়

১ হিশাম ইব্নু উরওয়া [রাহিমাহুল্লাহ] তদীয় পিতা উরওয়া ইব্নু যুবায়র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলিতেন, ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার দিয়াত উত্তরাধিকারীদের উপর বর্তাবে না [হত্যাকারীর নিজের উপর বর্তাবে]। ভুলক্রমে হত্যার দিয়াত উত্তরাধিকারীদের উপর বর্তাবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, নিয়ম হল যে, উত্তরাধিকারীদের উপর ইচ্ছাকৃত হত্যার বোঝা চাপানো যাবে না। হ্যাঁ, যখন তারা স্বেচ্ছায় দিতে ইচ্ছা করে তবে দিতে পারবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ]-ও এরূপ বলিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইব্নু শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলিতেন, সুন্নত এটাই যে, যখন নিহত ব্যক্তির ওয়ারিস ইচ্ছাকৃত হত্যার কিসাস মাফ করে দেয় এবং দিয়াত নিতে ইচ্ছা করে, তখন ঐ দিয়াত হত্যাকারীর মাল হইতে নেয়া হইবে। উত্তরাধিকারীদের উপর পড়বে না, তবে যদি তারা স্বেচ্ছায় দিতে রাযী হ্‌ তাহলে পারবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের নিকট এই বিধান রয়েছে যে, যদি দিয়াত ১/৩ হয় বা তদূর্ধ্বে হয়, তবে উত্তরাধিকারীদের হইতে নেয়া হইবে, আর যদি দিয়াত ১/৩ হইতে কম হয়, তবে হত্যাকারীর মাল হইতে নেয়া হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের কাছে এই বিধান সর্বসম্মত যে, ইচ্ছাকৃত হত্যার বা অন্য কোন ক্ষত করায় যাতে কিসাস অনিবার্য হয়, যদি দিয়াত নিতে স্বীকার করে নেয়া হয়, তবে উহা হত্যাকারীর বা ক্ষমাকারীর উপরই বর্তাবে, ওয়ারিসদের উপর বর্তাবে না। যদি তার কাছে মাল থাকে, তা না হলে তার উপর কিসাস থেকে যাবে। হ্যাঁ, যদি ওয়ারিসগণ স্বেচ্ছায় দিতে রাযী হয় তবে দিতে পারে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কেউ ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে ক্ষত করে দেয়, তবে তার দিয়াত ওয়ারিসকে দিতে হইবে না। আমি কাউকেও ইচ্ছাকৃত হত্যার দিয়াত ওয়ারিসদের দ্বারা দেয়াতে শুনিনি। কেননা আল্লাহ তাআলা ইচ্ছাকৃত হত্যার ব্যাপারে বলেছেন

فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ

এর তফসীর আমাদের মতে এই- আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাত, যার ভাই কিছু ক্ষমা করে দেয় [কিসাস না নেয়] তবে নিয়ম মতো তার অনুসরণ করা উচিত। আর দিয়াত ভালভাবে আদায় করা উচিত [বোঝা গেল, হত্যাকারীর উচিত উত্তম ভাবে আদায় করা]।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যে শিশু ও মহিলার কাছে কোন মাল নেই, সে যদি এমন কোন অপরাধ করে বসে যাতে এক-তৃতীয়াংশের কম দিয়াত ওয়াজিব হয়, তবে দিয়াত তাদের মালের উপর হইবে এবং তাদের উপর উহা ফরয থেকে যাবে। এমতাবস্থায় কোন ওয়ারিস বা পিতার উপর দিয়াত আসবে না।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের নিকট সর্বসম্মত বিধান এই যে, গোলামকে যখন হত্যা করা হয়, তখন হত্যার দিনে তার যে মূল্য তা দিতে হইবে। হত্যাকারীর ওয়ারিসদের উপর কিছু হইবে না। হত্যাকারীর নিজস্ব মাল হইতে দিয়াত আদায় করিতে হইবে, যদিও ঐ দাসের মূল্য দিয়াত হইতে অধিক হয়। কেননা দাস পণ্য সমূহের মধ্যে একটি পণ্য।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১৭ -দিয়াত হইতে মীরাস দেয়া এবং উহাতে কাঠিন্য করা

১৫৬৬ ইব্নু শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইব্নু খাত্তার [রাদি.] মিনার দিন লোকদেরকে ডেকে বলিলেন দিয়াতের ব্যাপারে যার যা কিছু জানা আছে, সে যেন আমাকে তা বলে। ইত্যবসরে যাহহাকে ইব্নু সুফিয়ান [রাদি.] দাঁড়িয়ে বলিলেন, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ আমাকে লিখেছেন যে, আমি যেন আশইয়াম যবাবীর স্ত্রীকে তার স্বামীর দিয়াত হইতে মীরাস দেই। উমার [রাদি.] বলিলেন, তুমি আমার আসা পর্যন্ত তাঁবুতে অপেক্ষা কর। উমার [রাদি.] এলে যাহহাক তাই বলিলেন। অতঃপর উমার [রাদি.] এই আদেশই জারি করলেন। ইব্নু শিহাব বলেন, আশইয়াম ভুলে নিহত হয়েছিল। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৫৬৭ আমর ইব্নু শুআয়েব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

বনী মুদলজের এক ব্যক্তি, যার নাম ছিল কাতাদা, নিজের ছেলেকে তলোয়ারে আঘাত করিল, যাতে ঐ ছেলের পায়ে আঘাত লাগল। ক্ষতস্থান হইতে রক্ত বন্ধ না হয়ে ছেলেটি মারা গেল। সুরাকা ইব্নু জুশুম উমার [রাদি.]-এর কাছে এসে ঘটনা বর্ণনা করিল। উমার [রাদি.] তাকে বলিলেন, আমার আগমনের পূর্বেই তুমি কাদীদের কূপের কাছে ১২০টি উট যোগাড় করে রাখ। যখন তিনি তথায় এলেন ঐ উটের ৩০ হক্কা, ২০টি জাযআ, ৪০টি গর্ভবতী উটনী নিলেন এবং বলিলেন, নিহত ব্যক্তির ভাই কোথায় ? সে বলল, আমি উপস্থিত আছি। তিনি বলিলেন, তুমি এই উট নিয়ে যাও। কেননা রসূল সাঃআঃ বলেছেন, হত্যাকারী কোন মীরাস পাবে না। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] ও সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হল, যদি কেউ হারাম মাসসমূহে কাউকেও হত্যা করে, তবে তার দিয়াতের ব্যাপারে কি কঠোরতা অবলম্বন করা হইবে? তিনি বলিলেন, না, বরং ঐ সকল মাস হারাম মাস হওয়ার দরুন দিয়াত বাড়িয়ে নিয়ে হইবে। অতঃপর সাঈদের কাছে জিজ্ঞেস করা হল, যদি কেউ এই মাসে কাউকেও আহত করে দেয়, তবু সেই হত্যার মতো উহার দিয়াতও বৃদ্ধি পাবে? সাঈদ বলিলেন, হ্যাঁ। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমার মনে হয় বাড়িয়ে দেয়ারও উহাই উদ্দেশ্য যেমন মুদলজীর দিয়াত উমার [রাদি.] করিয়াছেন, যখন সে তার ছেলেকে মেরেছিল। {২}

{১} তার পিতা উপস্থিত থাকলেও যেহেতু সে-ই হত্যা করেছে সেইজন্য মীরাস হইতে বঞ্চিত রইল, শুধু ভাই-ই পেল।{২} অর্থাৎ দিয়াতের একশত উট ঠিকই রইল, কিন্তু তিন প্রকারের উট নিয়ে তাতে কাঠিন্য করা হল।এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৫৬৮ উরওয়া ইব্নু যুবাইর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

এক আনসার ব্যক্তি ছিলেন। তার নাম ছিল উহায়হা ইব্নু জুলাহ। তার একজন চাচা ছিল। সে উহায়হা হইতে বয়সে ছোট ছিল। সে তার নানা বাড়িতে বাস করত। উহায়হা তাকে ধরে মেরে ফেলল [হত্যা করিল]। তার মামারা বলল, আমরা তাকে লালন-পালন করেছি, যখন সে জওয়ান হল, তখন তার চাচারা আমাদের উপর বিজয়ী হল এবং সে দিয়াত নিয়ে ফেলল। উরওয়া বলেন, এজন্য হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির ওয়ারিস হয় না। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের কাছে এটা একটি সর্বসম্মত বিধান যে, ইচ্ছাকৃত হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির ওয়ারিস হয়নি। দিয়াত হোক বা অন্য কোন মাল হোক, এমন কি সে কোন ওয়ারিসকে বঞ্চিতও করিতে পারে। ভুলবশত হত্যায়ও হত্যাকারী নিহইতের দিয়াতের ওয়ারিস হয় না। নিহইতের অন্যান্য মালে ভুলে হত্যাকারী হওয়া সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে তবে আমার মতে অন্যান্য মালের ওয়ারিস হয়।

{১} উহায়হা তাকে হত্যা করা সত্ত্বেও তার দিয়াতের ওয়ারিস হল, আর যারা লালন-পালন করেছে তার দিয়াত হইতে বঞ্চিত রইল। জাহিলী যুগে হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির ওয়ারিস হত। কিন্তু ইসলামে হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির ওয়ারিস হয় না। এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১৮ -দিয়াতের বিভিন্ন বিধান

১৫৬৯ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, পশুর যখম করার বদলা নেই। কূপে পড়ে মৃত্যুবরণ করার বদলা নেই। খনিতে পড়ে মৃত্যুবরণ করলে বদলা নেই আর মাটির নিচে প্রোথিত মালের পঞ্চমাংশ রয়েছে। [বুখারি ১৪৯৯, মুসলিম ১৭১০]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, জবার শব্দের ব্যাখ্যা হল যে, উহাতে দিয়াত নেই।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যে ব্যক্তি কোন পশুকে সম্মুখ দিক হইতে টেনে নেয় বা পিছন দিক হইতে ধাওয়া করে নিয়ে যায় বা উহার উপর আরোহণ অবস্থায় থাকে, সেই জন্তু কাউকে যখম করলে ঐ ব্যক্তিকে উহার দিয়াত দিতে হইবে। উক্ত জন্তু নিজেই কাউকে লাথি মারে বা শিং দিয়ে আঘাত করে, তবে ঐ জন্তুর মালিকের ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে না। যে ব্যক্তি ঘোড়ায় চড়ে দৌড়িয়ে যাবার কালে কাউকে পদদলিত করে, তাকে দিয়াত দিতে হইবে। উমার [রাদি.] উহার দিয়াত দেওয়ার ফায়সালা দিয়েছিলেন।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যখন ঘোড়া দৌড়ানেওয়ালার দিয়াত দিতে হল, তখন সম্মুখ ও পিছনের দিক হইতে হাঁকিয়ে নিয়ে গেলে তো তাকে দিয়াত দিতে হইবেই।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের কাছে এটা একটি সর্বসম্মত বিধান যে, যদি কেউ রাস্তায় কূপ খনন করে বা পশু বেঁধে রাখে বা কেউ এমন কাজ করে যা রাস্তায় করা অন্যায় মনে করা হয়। আর উহার কারণে কারো কোন কষ্ট হয় তবে এই ব্যক্তি দায়ী হইবে, ১/৩ পর্যন্ত দিয়াত সে নিজের মাল হইতে দিবে। আর দিয়াতের পরিমাণ এক তৃতীয়াংশের বেশি হলে তার নিকটাত্মীয়দের সম্পদ হইতে দেয়া হইবে। কিন্তু যদি এমন কোন কাজ করে, যা সাধারণত অন্যায় মনে করা হয় না, তবে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে না, যেমন বৃষ্টির জন্য গর্ত করিল বা পশু হইতে নেমে পশুটিকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখল।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কোন ব্যক্তি কূপে অবতরণ করিল, পরে আর এক ব্যক্তি অবতরণ করিল, অতঃপর নিচের ব্যক্তি উপরের ব্যক্তিকে টানল। এতে উভয়ে পড়ে মারা গেল। এখন যে টেনেছিল, তার ওয়ারিসদের উপর দিয়াত দেয়া অনিবার্য হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কেউ বাচ্চাকে কূপে নামায় কিংবা গাছে উঠায় এবং এতে বাচ্চাটি মারা যায় তবে তাকে দিয়াত দিতে হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের নিকট সর্বসম্মত বিধান এই যে, দিয়াতদাতা স্ত্রীলোক এবং বাচ্চা হইবে না। শুধুমাত্র বালেগ পুরুষ হইতে দিয়াত উশুল করা হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মুক্ত দাসের দিয়াত তার ওয়ারিসদের উপর বর্তাবে যদিও সে সরকারী দফতরে বেতনভোগী হোক না কেন, যেমন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ ও আবু বাকর [রাদি.]-এর সময়ে ছিল। কেননা দফতর উমার [রাদি.]-এর আবিষ্কার। অতএব প্রত্যেকের দিয়াত তাদের মালিক এবং সম্প্রদায় আদায় করিবে। কেননা এদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিও তারাই পেয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, দাসের পরিত্যক্ত মাল তার মালিকই পাবে, যে তাকে মুক্ত করেছে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কারো পশু কারো কোনরূপ অনিষ্ট সাধন করে, তবে এই অনিষ্ট সাধনের দ্বারা ঐ বস্তুর মূল্যে যে স্বল্পতা আসবে তা তাকে আদায় করিতে হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কোন ব্যক্তি কিসাসে অভিযুক্ত হয়, পরে সে আবার কোন এমন কাজ করে বসে যাতে তার উপর নির্দিষ্ট শাস্তি ওয়াজিব হয়, তবে তার জন্য মৃত্যুই যথেষ্ট, আর শাস্তি ভোগ করিতে হইবে না। তবে অপবাদের শাস্তি তাকে ভোগ করিতে হইবে। অতঃপর হত্যা করা হইবে। যদি সে কাউকে ক্ষত করে দেয়, তবে ক্ষতের কিসাস নেয়া আবশ্যকীয় নয়, হত্যা করাই যথেষ্ট।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত এই যে, যদি কোন মৃতদেহ কোন গ্রামে পাওয়া যায় অথবা কারো দরজায় পাওয়া যায়, তবে ইহা আবশ্যকীয় নয় যে, ঐ লাশের আশেপাশের লোককে গ্রেফতার করিতে হইবে। কেননা প্রায়ই এরূপ হয়ে থাকে, কোন লোক কাউকে মেরে অন্যের দরজায় রেখে যায়, যেন সে গ্রেফতার হয়।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কয়েকজন লোক পরস্পর ঝগড়া করিল। পরে যখন ঝগড়া থেমে গেল, তখন তাদের মধ্যে একজনকে মৃত অথবা আহত অবস্থায় পাওয়া গেল। কিন্তু গোলমালের দরুন কে মেরেছে বা ক্ষত করেছে তা জানা গেল না। তবে দ্বিতীয় পক্ষের লোকের উপর উহার দিয়াত ওয়াজিব হইবে। যদি এমন হয় যে, ঐ ব্যক্তি তৃতীয় পক্ষের লোক হয়, তবে উভয় পক্ষের উপর দিয়াত ওয়াজিব হইবে। {১}

{১} দ্বিতীয় পক্ষ বলিতে ঐ দলকে বুঝাবে ঐ লোকটি যে দলের নয়।এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯১৯ – بَاب مَا جَاءَ فِي الْغِيلَةِ وَالسِّحْرِ প

ধোঁকা দিয়ে বা যাদু করে কাউকে হত্যা করা

১৫৭০ সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] এক ব্যক্তির হত্যার দায়ে পাঁচ অথবা সাত জনের এক দলকে হত্যা করেছিল, যারা ধোঁকা দিয়ে সেই ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। অতঃপর তিনি বলিলেন, যদি এই ব্যক্তির হত্যা কার্যে সমস্ত সানআবাসীও শরীক হত, তবে আমি সকলকেই হত্যা করতাম। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৫৭১ মুহাম্মাদ ইব্নু আবদির রহমান ইব্নু সাদ ইব্নু যুরারাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তাঁর কাছে রেওয়ায়াত পৌঁছেছে যে, উম্মুল মুমিনীন হাফসা [রাদি.] এক দাসীকে হত্যা করেছিলেন, যে দাসী তাঁর উপর জাদু করেছিল। এর পূর্বে তিনি উহাকে মুদাব্বার করে ছিলেন। পরে তাকে হত্যা করলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যে জাদু জানে এবং জাদু করে, তাকে হত্যা করাই উচিত।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ২০ -ইচ্ছাকৃত হত্যায় যা ওয়াজিব হয়

১৫৭২ আয়িশা বিনতি মুদামার আযাদকৃত দাস উমার ইব্নু হুসাইন [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তিকে একটি কাঠের আঘাতে হত্যা করিল। আবদুল মালিক ইব্নু মারওয়ান [রাহিমাহুল্লাহ] তাকে নিহত ব্যক্তির ওলীর [অভিভাবকের] কাছে সোপর্দ করলেন। সেও তাকে কাঠের আঘাতে হত্যা করিল। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের কাছে এটা একটি সর্বসম্মত বিধান যে, যদি কোন ব্যক্তি কাউকেও কাঠ অথবা পাথর দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করে আর ঐ ব্যক্তি তাতে নিহত হয়, তবে কিসাস নেওয়া হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের কাছে ইচ্ছাকৃত হত্যা এই যে, কেউ কাউকে ইচ্ছা করে এত মারে যে, তাতে তার প্রাণ বের হয়ে যায়। আর ইচ্ছাকৃত হত্যার এক প্রকার ইহাও যে কারো সাথে শত্রুতাবশত তাকে একটা আঘাত লাগাল, ফলে ঐ ব্যক্তি তখনকার মতো জীবিত থাকলেও পরে দেখা গেল ঐ আঘাতেই তার প্রাণ বের হয়ে গিয়েছে। এতে কাসামা নেওয়া ওয়াজিব হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইচ্ছাকৃত একজন স্বাধীন ব্যক্তি হত্যার দায়ে একাধিক স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে, যদি তারা সকলেই এ আঘাতে শরীক থাকে। স্ত্রীদের ও দাসদেরও এই একই হুকুম।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ২১ -হত্যার কিসাস প্রসঙ্গে

১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]- হইতে বর্ণিতঃ

মারওয়ান ইব্নু হাকাম [রাহিমাহুল্লাহ] মুয়াবিয়া ইব্নু আবি সুফয়ান [রাদি.]-এর কাছে লিখলেন, এক ব্যক্তি মাতাল অবস্থায় কাউকে হত্যা করিল। মুয়াবিয়া [রাদি.] তাকে লিখলেন, তুমিও তাকে হত্যা কর। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আল্লাহ্ তাআলা বলেন,

الْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْأُنْثَى بِالْأُنْثَى

এই আয়াতের তফসীরে আমি যা শুনিয়াছি তা এই, এই আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন, স্বাধীনের পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তিকে, দাসের পরিবর্তে দাসকে স্ত্রীলোকের পরিবর্তে স্ত্রীলোককে হত্যা করা হইবে। অতএব স্ত্রীদের মধ্যেও পুরুষদের মতো কিসাস নেওয়া হইবে। কেননা আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন,

وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْأَنْفَ بِالْأَنْفِ وَالْأُذُنَ بِالْأُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوحَ قِصَاصٌ

অর্থাৎ প্রাণের পরিবর্তে প্রাণ, চক্ষুর পরিবর্তে চক্ষু, নাকের পরিবর্তে নাক, কানের পরিবর্তে কান, দাঁতের পরিবর্তে দাঁত, ক্ষতের পরিবর্তে ক্ষত।

অতএব, পুরুষের পরিবর্তে স্ত্রী এবং স্ত্রীর পরিবর্তে পুরুষ হত্যা করা হইবে। এইরূপ যখন একে অন্যকে যখম করে তখনও কিসাস নেওয়া হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কেউ কাউকে ধরে রাখে আর দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে তাকে হত্যা করে আর যদি সাব্যস্ত হয় যে, ঐ ব্যক্তিও তাকে হত্যা করার জন্য ধরেছিল, তবে এ নিহত ব্যক্তির পরিবর্তে উভয়কে হত্যা করিতে হইবে। যদি ঐ ব্যক্তি তাকে মেরে ফেলার জন্য না ধরে থাকে, বরং তার ইচ্ছা ছিল দ্বিতীয় ব্যক্তি যাকে সে ধরেছে তাকে সাধারণভাবে প্রহার করিবে, তবে এই অবস্থায় এই ব্যক্তি হত্যার পরিবর্তে কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হইবে। আর শাস্তির পর এক বৎসর বন্দী থাকিবে। আর হত্যাকারীকে হত্যা করা হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে ইচ্ছা করে হত্যা করিল অথবা তার চক্ষু নষ্ট করে ফেলল। এখন হত্যাকারী হইতে কিসাস নেয়ার পূর্বেই তাকে অন্য এক ব্যক্তি হত্যা করে বসল বা তার চক্ষু নষ্ট করে দিল; এই অবস্থায় তার উপর দিয়াত বা কিসাস কিছুই বর্তাবে না। কেননা যাকে হত্যা করা হয়েছিল তার হক ছিল হত্যাকারীর প্রাণে বা চক্ষুতে। এখন হত্যাকারী ব্যক্তিও নেই, তার চক্ষুও নেই।

এর উপমা এইরূপ, যেমন যদি এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে ইচ্ছা করে হত্যা করে আর হত্যাকারী নিজেই মরে যায় এখন হত্যাকাণ্ডে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসদের কিছুই মিলবে না। কেননা যখন হত্যাকারীই মরে গেল, এখন না কিসাস রইল, না দিয়াত।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কোন দাস স্বেচ্ছায় স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করে সেই দাসকে হত্যা করা হইবে। যদি স্বাধীন ব্যক্তি কোন দাসকে স্বেচ্ছায় হত্যা করে, তবে স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করা হইবে না। {১}

{১} ঈমাম আবু হানীফা [রাহিমাহুল্লাহ]-এর মতে স্বাধীন ব্যক্তি দাসকে হত্যা করলে সেই স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করা হইবে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ২২ -ইচ্ছাকৃত হত্যায় ক্ষমা করা

১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

কয়েকজন বিশিষ্ট আলিম হইতে শ্রবণ করিয়াছেন, তাঁরা বলিতেন, যদি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেয়, তবে এটা ইচ্ছাকৃত হত্যায় বৈধ হইবে। কেননা ওয়ারিসদের চেয়ে নিহত ব্যক্তির নিজের রক্তের উপর অধিক অধিকার রয়েছে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কোন ব্যক্তি হত্যাকারীকে তার ইচ্ছাকৃত হত্যা ক্ষমা করে দেয়, তবে হত্যাকারীর উপর দিয়াতের বোঝা থাকিবে না। হ্যাঁ, যদি কিসাস ক্ষমা করে দিয়াত সাব্যস্ত করে নেয়, তবে তা ভিন্ন কথা।

ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] আরো বলেন, ইচ্ছাকৃত হত্যাকারীকে যদি নিহত ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে ক্ষমা করে দেয় তাহলে হত্যাকারীকে একশত বেত্রাঘাত করা হইবে এবং এক বৎসর জেলখানায় বন্দি করে রাখা হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কোন ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়, আর সাক্ষীদের দ্বারা হত্যা সাব্যস্তও হয় এবং নিহইতের ছেলে ও মেয়ে থাকে, ছেলেরা তো ক্ষমা করে দেয়, কিন্তু মেয়েরা ক্ষমা না করে, তবে কোন অসুবিধা থাকিবে না। খুন মাফ হয়ে যাবে। কেননা ছেলেরা থাকতে মেয়েরা ধর্তব্য নয়।

২৩২৩ – بَاب الْقِصَاصِ فِي الْجِرَاحِ

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ২৩ -ক্ষত করার কিসাস

১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমাদের কাছে সর্বসম্মত বিধান রয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি কারো হাত অথবা পা ভেঙ্গে ফেলে, তবে তার উপর কিসাস ওয়াজিব হইবে, দিয়াত নয়।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কিসাস নেয়া হইবে না। এখন যদি ক্ষতকারীর যখমও ভাল হয়ে যাকে ক্ষত করা হয়েছে, তার মতো হয়ে যায় তবে ভালই, আর যদি যে ক্ষত করেছে তার ক্ষত বেড়ে যায় আর এই ক্ষতের কারণে তার মৃত্যু ঘটে, তবে যাকে যখম করা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে না। যদি ক্ষতকারীর ক্ষত একেবারে ভাল হয়ে যায় আর যাকে ক্ষত করা হয়েছে তার হাত একেবারে বেকার হয়ে যায় বা উহাতে অন্য কোন ত্রুটি থেকে যায়, তবে ক্ষত যে করেছে তার নিকট হইতে দ্বিতীয়বার কিসাস নেয়া হইবে না। হ্যাঁ, ক্ষতি অনুসারে দিয়াত নেয়া যেতে পারে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে স্বীয় স্ত্রীর চক্ষু নষ্ট করে ফেলে বা হাত ভেঙ্গে ফেলে বা অঙ্গুলি কেটে ফেলে তবে তার নিকট হইতে কিসাস নেয়া হইবে। যদি তাকে সতর্ক করার জন্য রশি অথবা কোড়া দ্বারা প্রহার করা হয় এবং অনিচ্ছায় কোন স্থানে লেগে ক্ষত কিংবা অন্য কোন ক্ষতি হল তবে দিয়াত ওয়াজিব হইবে, কিসাস ওয়াজিব হইবে না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ২৪ -সায়িবার {১} অপরাধ ও তার দিয়াত

{১} সায়িবা ঐ দাসকে বলা হয় যাকে মুক্ত করার সময় তার মালিক এই শর্ত করে। তোমার উত্তরাধিকারী হব না। এইরূপ দাসের প্রভুর উপর দিয়াত অনিবার্য হয় না

১৫৭৩ সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

এক সায়িবা যাকে কোন হাজী মুক্ত করে দিয়েছিল- অতঃপর সে বনী আয়েযের এক ব্যক্তিকে হত্যা করিল। নিহইতের পিতা স্বীয় সন্তানের দিয়াত চাইবার জন্য উমার [রাদি.]-এর কাছে এল। তিনি বলিলেন, উহার দিয়াত নেই। সে ব্যক্তি বলল, যদি আমার ছেলে ঐ সায়িবাকে হত্যা করত, তবে কি হত ? উমার [রাদি.] বলিলেন, তা হলে তোমাকে তার দিয়াত আদায় করিতে হত। সে ব্যক্তি বলল, এক বিষধর সর্প, যদি ছেড়ে দাও, তবে দংশন করিবে আর যদি মেরে ফেল তবে বদলা দিতে হইবে। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} জাহিলিয়া যুগে মানুষের আকীদা ছিল, যে সমস্ত সাপের বদলা নেয়া হয় যদি কেউ সেই ধরনের সাপকে মেরে ফেলে সেও মরে যায়। এই সায়িবাকে সাপের সাথে তুলনা করা হয়েছে। দিয়াত – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়


by

Comments

One response to “দিয়াত অধ্যায় । দিয়াত সম্পর্কিত আলোচনা – মুয়াত্তা হাদিস”

Leave a Reply