শরীকী কারবার করা অধ্যায় । কারবারের অবৈধ শর্তসমূহ

শরীকী কারবার করা অধ্যায় । কারবারের অবৈধ শর্তসমূহ

শরীকী কারবার করা অধ্যায় । কারবারের অবৈধ শর্তসমূহ, এই অধ্যায়ে হাদীস =১৬ টি ( ১৩৮৭-১৪০২ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ৩২ শরীকী কারবার করা অধ্যায়

পরিচ্ছেদ ১ : কিরায {১} সম্পর্কে রেওয়ায়ত
পরিচ্ছেদ ২ : কোন্ কোন্ মুযারাবা বৈধ
পরিচ্ছেদ ৩ : অবৈধ মুযারাবা
পরিচ্ছেদ ৪ : শরীকী কারবারের বৈধ শর্তসমূহ
পরিচ্ছেদ ৫ : শরীকী কারবারের অবৈধ শর্তসমূহ
পরিচ্ছেদ ৬ : পণ্যদ্রব্য ইত্যাদিতে শরীকী কারবার
পরিচ্ছেদ ৭ : শরীকী ব্যবসার মালের ভাড়া
পরিচ্ছেদ ৮ : শরীকী কারবারের মালে সীমালংঘন
পরিচ্ছেদ ৯ : শরীকী কারবারে যা ব্যয় করা বৈধ
পরিচ্ছেদ ১০: শরীকী কারবারে যা ব্যয় করা অবৈধ
পরিচ্ছেদ ১১ : ধারে বা বাকীতে মাল বিক্রয় করার বিধান
পরিচ্ছেদ ১২ : শরীকী কারবারে ব্যবসা
পরিচ্ছেদ ১৩ : শরীকী কারবারে কর্জ
পরিচ্ছেদ ১৪ : শরীকী কারবারের হিসাব
পরিচ্ছেদ ১৫ : শরীকী কারবারের বিভিন্ন বিধান

পরিচ্ছেদ ১ : কিরায {১} সম্পর্কে রেওয়ায়ত

{১} কিরায ও মুযারাবা একই অর্থে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ শরীকী কারবার করা। একজনের শ্রম অন্যজনের টাকা। মুনাফা উভয়ে ভাগ করে নিবে।

১৩৬৯ যায়দ ইবন আসলাম [রহঃ] তাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবন খাত্তাব [রাদি.]-এর দুই পুত্র আবদুল্লাহ্ ও উবায়দুল্লাহ্ জিহাদের উদ্দেশ্যে এক কাফেলার সাথে ইরাক যাত্রা করলেন। ফিরবার সময় তাঁরা আবু মূসা আশআরী [রাদি.]-এর নিকট গেলেন। তিনি তখন বসরার আমীর ছিলেন। তিনি তাঁদের স্বাগতম জানিয়ে বলিলেন, যদি আমি তোমাদের কোন উপকার করিতে পারতাম তা হলে নিশ্চয়ই তা করতাম। ঠিক আছে আমার নিকট আল্লাহর কিছু সম্পদ রয়েছে, আমি তা আমীরুল মুমিনীনের নিকট পাঠাতে ইচ্ছা করেছি। আমি উহা তোমাদেরকে দিয়ে দিচ্ছি। তোমরা উহা দ্বারা ইরাক হইতে কিছু বস্তু খরিদ করে নাও, পরে উহা মদীনায় বিক্রয় করে কিছু মুনাফা অর্জন করিতে পার। তারা বলিলেন, আমরাও তাই চাচ্ছি। পরে আবু মূসা তাই করলেন এবং উমার ইবন খাত্তাব [রাদি.]-কে লিখে পাঠালেন যে, তাঁদের নিকট হইতে মূলধন নিয়ে নিবেন। তাঁরা মদীনায় পৌঁছে ঐ বস্তু বিক্রয় করে অনেক মুনাফা অর্জন করলেন। মূল অর্থ নিয়ে উমার ইবন খাত্তাব [রাদি.]-এর নিকট উপস্থিত হলেন। উমার ইবন খাত্তাব [রাদি.] জিজ্ঞেস করলেন, আবু মূসা কি প্রত্যেক সৈনিককে এত অর্থ ঋণ দিয়েছেন? তাঁরা বলিলেন, না। উমার ইবন খাত্তার [রাদি.] বলিলেন, তিনি তোমাদেরকে আমীরুল মুমিনীনের পুত্র হিসেবে এই অর্থ দিয়েছেন। তোমরা মূল অর্থ এবং মুনাফা উভয়টাই আদায় কর। শুনে আবদুল্লাহ্ তো চুপ করে রইলেন। কিন্তু উবায়দুল্লাহ্ বলিলেন, আমীরুল মুমিনীন, আপনার এইরূপ করা উচিত হইবে না। কারণ যদি এই অর্থ নষ্ট হয়ে যেত বা ক্ষতি হত, তবে আমরা উহার জন্য জিম্মাদার হতাম। উমার [রাদি.] বলিলেন, না তোমরা সমস্তই দিয়ে দাও। আবদুল্লাহ্ চুপই রইলেন কিন্তু উবায়দুল্লাহ্ তার উক্তির পুনরাবৃত্তি করলেন। তখন উমার [রাদি.]-এর উপদেষ্টা [আবদুর রহমান ইবন আউফ রা] বলিলেন, আমীরুল মুমিনীন! এই ব্যাপারকে বায়ই-মুযারাবা সাব্যস্ত করিতে পারেন, এটাই উত্তম হইবে। উমার [রাদি.] বলিলেন, উহাই সাব্যস্ত করলাম। পরে তিনি মূলধন এবং অর্ধেক মুনাফা গ্রহণ করলেন আর অর্ধেক মুনাফা গ্রহণ করলেন আবদুল্লাহ্ ও উবায়দুল্লাহ্

। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন] এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৩৭০ আলা ইবন আবদির রহমান তার পিতার মধ্যস্থতায় তার দাদা হইতে বর্ণিতঃ

উসমান ইবন আফফান [রাদি.] তাকে কিয়ায বা মুযারাবার উপর মাল দিয়েছিলেন যে, সে পরিশ্রম করিবে আর মুনাফা উভয়ে ভাগ করে নিবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ২ : কোন্ কোন্ মুযারাবা বৈধ

১৩৭১ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

মুযারাবাত বা শরীকী কারবার এইভাবে বৈধ যে, কেউ কারো নিকট হইতে এই শর্তে টাকা নেয় যে, সে শ্রম ও মেহনত করিবে। ক্ষতি হলে সে দায়ী থাকিবে না। সফরে খাওয়া-দাওয়া এবং বহন খরচ ও অন্যান্য বৈধ খরচ ঐ মাল হইতে নিয়ম মাফিক ব্যয় করা হইবে মূলধন অনুযায়ী। অবশ্য অর্থ গ্রহণকারী আবাসে থাকলে মূলধন হইতে ব্যয় করিতে পারবে না।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি অর্থ গ্রহণকারী অর্থদাতাকে, অর্থদাতা অর্থ গ্রহণকারীকে তার শ্রমের পরিমাণ মতো কোন শর্ত ব্যতীত সাহায্য করে তবে তাতে কোন ক্ষতি নেই। যদি অর্থদাতা অর্থ গ্রহণকারী হইতে শর্ত ব্যতীত কোন বস্তু খরিদ করে তবে এতেও কোন ক্ষতি নেই।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে এবং স্বীয় দাসকে শরীকী কারবারের জন্য অর্থ দেয় এবং এই শর্ত করে যে, উভয়ই ইহাতে কাজ করিবে, তবে তা জায়েয আছে। কারণ নির্ধারিত লভ্যাংশের মালিক ক্রীতদাস হইবে, তার প্রভু উহা ছিনিয়ে নিতে পারবে না, এই মালের স্বত্বাধিকারী ক্রীতদাসই থাকিবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ৩ : অবৈধ মুযারাবা

১৩৭২ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

যদি কেউ কারো নিকট করযের টাকা পাওনা থাকে আর যার নিকট টাকা পাওনা রয়েছে সে বলল, তোমার যে টাকা আমার নিকট রয়েছে, তা আমার নিকট শরীকী কারবারে থাকতে দাও ইহা অবৈধ বরং প্রথমে টাকা উশুল করে নেয়া উচিত, পরে তার ইচ্ছা হলে শরীকী কারবারে ঐ টাকা দিতেও পারে, নাও দিতে পারে। কেননা টাকা উশুল করার পূর্বে উহাকে শরীকী কারবারে দিলে উহাতে সুদ হওয়ার আশংকা রয়েছে, যেমন দাতা তাকে সময় দেয়ার পরিবর্তে ঋণ বাড়িয়ে দিল।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি কেউ কাউকেও শরীকী কারবারের জন্য টাকা দেয় এবং ব্যবসা আরম্ভ করবার পূর্বেই কিছু টাকা নষ্ট হয়ে যায়, অতঃপর বাকী টাকা দ্বারা ব্যবসা করে ঐ অবশিষ্ট টাকাকেই মূলধন ধরে লভ্যাংশের আধা-আধি ভাগ করে নেয়, তবে ইহা অবৈধ বরং প্রথমে সম্পূর্ণ মূলধন তার পরিশোধ করিতে হইবে, পরে যদি কিছু টাকা অবশিষ্ট থাকে উহাকে মুনাফা ধরে ভাগ করে নিবে।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ শরীকী কারবার স্বর্ণ, রৌপ্য ইত্যাদিতে জায়েয, অন্য আসবাব বৈধ নয়, কিন্তু যদি কারবারে বা ক্রয়-বিক্রয়ে কিছু অসুবিধা দেখা দেয় যা শোধরান কষ্টকর হয়, তবে বৈধ হইবে, কিন্তু সুদ এর ব্যতিক্রম, কেননা উহার কম-বেশি সবই হারাম, কোন প্রকারেই জায়েয নয় আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেনঃ

অর্থাৎ যদি তোমরা সুদের কারবার হইতে তওবা কর, তবে তোমাদের জন্য মূলধন রয়েছে। না তোমরা কারো উপর জুলুম করিবে, আর না কেউ তোমাদের উপর জুলুম করিবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ৪ : শরীকী কারবারের বৈধ শর্তসমূহ

১৩৭৩ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

যদি এই শর্ত আরোপ করে যে, এই প্রকার মালেরই ব্যবসায় করিবে তবে উহা মাকরূহ্। হ্যাঁ, যদি সেই মাল প্রত্যেক মৌসুমে বাজারে পর্যাপ্ত পাওয়া যায় তবে তা মাকরূহ নয়।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি মূলধন বিনিয়োগকারী নিজের জন্য শরীকী কারবারে কোন নির্দিষ্ট অঙ্ক নির্ধারিত করে, যাতে অপর শরীকের কোন অধিকার থাকিবে না তা এক দিরহামই হোক না কেন তবুও ইহা জায়েয নয়। কেননা এতে পারে উহার ঊর্ধ্বে লাভ হইবে না। হ্যাঁ, যদি ব্যবসায়ীর জন্য লাভের অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ বা চতুর্থাংশ বা ইহা হইতে কম-বেশি নির্দিষ্ট করে অবশিষ্ট নিজের জন্য তবে তা জায়েয। ইহা হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত কিরায পদ্ধতি।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি লভ্যাংশের এক দিরহাম পুঁজি বিনিয়োগকারী নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে যাতে অপর শরীকের কোন অধিকার থাকিবে না, অবশিষ্ট লাভ উভয়ের মধ্যে অর্ধেক হারে ভাগ হইবে। তবে শরীকী কারবার অবৈধ হইবে। ইহা মুসলমানদের কিরায-নীতি নয়।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ৫ : শরীকী কারবারের অবৈধ শর্তসমূহ

১৩৭৪ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

শরীকী কারবারে যে অর্থ দেয় সে যদি লভ্যাংশের কিছু অংশ নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে বা যে ব্যবসা করিবে সে নিজের জন্য কিছু নির্দিষ্ট করে নেয় তবে এটা অবৈধ। শরীকী কারবারের সহিত কোন বস্তু ক্রয়ের, ভাড়া দেওয়ার, করযের অথবা অন্য কোন উপকারের শর্ত করা অবৈধ। তবে কোন শর্ত ব্যতীত নিয়ম মাফিক একে অন্যের সাহায্য করা বৈধ। নিয়ম মুতাবিক লাভ কর্তন ছাড়া একে অন্যের উপর কিছু অতিরিক্ত ধার্য করা অবৈধ, সেই অতিরিক্ত ধার্য করা সোনায়, চাঁদিতে, খাদ্য-সামগ্রীতে বা অন্য কোন কিছুতে হলেও যদি এইরূপে কোন শর্ত করা হয়, তবে তা ইজারা হয়ে যাবে। আর ইজারা শুধু নির্দিষ্ট ভাড়ার পরিবর্তে বৈধ হইবে। শরীকী কারবারে অর্থ গ্রহীতার পক্ষে কাউকেও কোন উপকারের পরিবর্তে কিছু দান করা বা ক্রয়কৃত মাল তাওলিয়াতে বিক্রয় করা বা নিজে নির্দিষ্ট কোন বস্তুর অধিকারী হওয়া বৈধ নয়। যদি ব্যবসায়ে লাভ হয় তবে মূলধন পৃথক করার পর উভয়ে শর্ত অনুযায়ী ভাগ করে নিবে। যদি লাভ না হয় বা ক্ষতি হয় তবে ব্যবসায়ী দায়ী হইবে না। নিজের খরচের জন্যও নয়, ক্ষতির জন্যও নয়, বরং ক্ষতি হইবে অর্থ প্রদানকারীর। যদি ব্যবসায়ী এবং অর্থ প্রদানকারী উভয়ে লভ্যাংশের আধা-আধি অথবা প্রথম ব্যক্তি ১/৪ দ্বিতীয় ব্যক্তি ১/৪ বা এই ধরনের আর কিছুতে বেশি বা কমের উপর উভয়ে সম্মত হয়ে যায়, তবে শরীকী কারবার বৈধ হইবে।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ শরীকী কারবারে অর্থগ্রহণকারী বণিকা যদি শর্ত করে যে, এত দিনের মধ্যে আমার নিকট হইতে মূলধন উঠিয়ে নেয়া চলবে না বা শর্ত করে যে, সে এতদিন মূলধন ফিরিয়ে দিতে পারবে না, তবে ইহা অবৈধ হইবে। কেননা শরীকী কারবারে সময়ের শর্ত হইতে পারে না। যদি পুঁজি বিনিয়োগকারী নিজের অর্থ বণিককে দিয়ে দেয় আর বণিকের উহা দ্বারা ব্যবসা করা ভাল না লাগে এমতাবস্থায় যদি অর্থ জমা থাকে তবে মূলধনের মালিক উহা ফেরত নিয়ে নিবে। আর যদি উহা দ্বারা কোন সামগ্রী ইত্যাদি ক্রয় করা হয়ে থাকে তবে পুঁজি বিনিয়োগকারী ঐ সামগ্রী নিবে না এবং বণিকও তাকে উহা নিতে বাধ্য করিবে না, বরং এ সামগ্রী বিক্রয় করে নগদ অর্থ যোগাড় করিবে ও উহা ফেরত দিবে।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি পুঁজি বিনিয়োগকারী শর্ত করে যে, উহার যাকাত লভ্যাংশ হইতে দিবে তবে ইহা অবৈধ হইবে। আর পুঁজি বিনিয়োগকারীর পক্ষে এই শর্ত করাও বৈধ হইবে না যে, অমুক ব্যক্তি হইতেই মাল খরিদ করিতে হইবে।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি পুঁজি বিনিয়োগকারী তার শরীক ব্যবসায়ীর উপর মালের জন্য দায়ী হবার শর্ত করে ইহা জায়েয হইবে না। এই অবস্থায় যদি লাভ হয় তা হলে এই দায়িত্বের জন্য অতিরিক্ত কিছুও দেয়া হইবে না। যদি মাল নষ্ট হয়ে যায় তবে ব্যবসায়ীর উপর দায়িত্বও অর্পিত হইবে না।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি পুঁজি বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীর নিকট এই শর্ত আরোপ করে যে, এই মূলধন দ্বারা কিছু খেজুর গাছ বা কোন জন্তু খরিদ করে নিবে আর উহার ফল ও বাচ্চা বিক্রয় করিতে থাকিবে, ঐ গাছ বা জন্তু বিক্রয় করিবে না, তবে তা বৈধ হইবে না, আর ইহা শরীকী কারবারের নিয়ম নয়। হ্যাঁ, যদি ঐ গাছ বা জন্তু খরিদ করে অন্যান্য সামগ্রীর মতো বিক্রয় করে দেয় তবে তা বৈধ।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি ব্যবসায়ী অর্থ বিনিয়োগকারীর প্রতি শর্ত আরোপ করে যে, আমি মূলধন হইতে একটি দাস খরিদ করে নিব নিজের সাহায্যের জন্য, তবে ইহা বৈধ হইবে। যদি পুঁজি বিনিয়োগকারী এইরূপ অঙ্গীকার না নেয় যে, এই দাস কেবল পণ্যের রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করিবে, অন্য কোন কার্যে সাহায্য করিবে না।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ৬ : পণ্যদ্রব্য ইত্যাদিতে শরীকী কারবার

১৩৭৫ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

শরীকী কারবার শুধু সোনা চাঁদিতে হইবে, পণ্যদ্রব্যে হইবে না, কেননা পণ্য সামগ্রীতে শরীকী কারবার দুই প্রকারে হইতে পারে; প্রথমত পুঁজি বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীকে পণ্য সামগ্রী দিয়ে বলবে, ইহা বিক্রয় করে ঐ টাকা দিয়ে কারবার কর- ইহা বৈধ নয়। কেননা এতে অর্থ বিনিয়োগকারীর এক বিশেষ উপকার এই রয়েছে যে, তার মাল নির্বিঘ্নে বিক্রয় হয়ে গেল; দ্বিতীয়ত, অর্থ বিনিয়োগকারী পণ্যসামগ্রী দিয়ে বলে দিল এর বিনিময়ে অন্য সামগ্রী ক্রয় করে নাও এবং ব্যবসা করিতে থাক, যখন লেনদেন শেষ করিতে ইচ্ছা কর তখন এই সামগ্রী আমাকে বাজার হইতে খরিদ করে দিও। আর যা অতিরিক্ত থাকে তা আমরা ভাগ করে নিব, তবে এটাও অবৈধ হইবে। কেননা এতে ধোঁকার আশংকা রয়েছে, হয়তো তখন এই মাল অধিক মূল্যে ক্রয় করিতে হইবে। আর সামগ্রী দেওয়ার সময় যে দাম ছিল সেই দাম হইতে যদি এখন সস্তা হয়ে গিয়ে থাকে, তবে ব্যবসায়ীর সামগ্রীর মূল্যের হ্রাস অনুসারে লাভ করে যাবে বা আসল ও লাভ সমস্তই তা খরিদ করিতে ব্যয় হয়ে যাবে, আর ব্যবসায়ীর মেহনত বৃথা যাবে। তবুও যদি কেউ এইরূপ লেনদেন করেই ফেলে তবে ব্যবসায়ীকে প্রথমে সামগ্রী বিক্রয়ের নিয়ম মতো পারিশ্রমিক দিতে হইবে। আর যে দিন হইতে মূলধন নগদ টাকা হল সেদিন হইতে শরীকী কারবার শুরু হইবে। অতঃপর কারবার শেষ হওয়ার সময় এই পরিমাণ মূলধনই ধরা হইবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ৭ : শরীকী ব্যবসার মালের ভাড়া

১৩৭৬ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

যদি ব্যবসায়ী কিছু সামগ্রী খরিদ করে কোন শহরে নিয়ে যায় কিন্তু তথায় বিক্রয় করিতে পারল না, পরে ক্ষতি মনে করে অন্য এক শহরে নিয়ে গেল। তথায় লোকসান দিয়ে ঐ মাল বিক্রয় করিল আর মূলধন ভাড়া বাবদ খরচ হয়ে গেল, তবে ভাড়া পরিশোধ করার পর পুঁজি বিনিয়োগকারীও কিছু পাবে না এবং ব্যবসায়ীও ক্ষতি বহন করিবে না। আর যদি উহার পরও কিছু ভাড়া বাকী থেকে গেল, তবে উহা ব্যবসায়ী নিজের পক্ষ হইতে দিবে, অর্থ বিনিয়োগকারী থেকে নিতে পারবে না। কারণ অর্থ বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীকে তার দেয় অর্থে ব্যবসা করিতে বলেছে, উহার বাইরে নয়। অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের দায়িত্ব তার উপর চাপানো যায় না।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ৮ : শরীকী কারবারের মালে সীমালংঘন

১৩৭৭ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

যদি শরীকী কারবারে ব্যবসায়ী ব্যবসা করে মুনাফা করিল। অতঃপর মূলধন বা লভ্যাংশ দ্বারা একটি দাসী ক্রয় করে তার সাথে সহবাস করিল। এতে সে গর্ভবতী হল, আর পরবর্তীতে ব্যবসায়ে ক্ষতি হল তা হলে ব্যবসায়ীর নিজস্ব মাল হইতে ঐ দাসীর মূল্য নিয়ে ক্ষতিপূরণ করা হইবে। তারপর অতিরিক্ত মাল দুইজনের মধ্যে বণ্টিত হইবে। আর যদি ক্ষতিপূরণ না হয় [ক্ষতিপূরণ করার মতো মাল তার না থাকে], তবে ঐ দাসী বিক্রয় করে ক্ষতিপূরণ করা হইবে।

মালিক [রহঃ] বলেন, যদি ব্যবসায়ী মাল খরিদ কারার সময় নিজের পক্ষ হইতে বিনা কারণে উহার মূল্য বাড়িয়ে দেয় তবে অর্থ বিনিয়োগকারীর ইচ্ছার উপর নির্ভর করিবে। সে হয় পণ্য সামগ্রী ঐভাবে থাকতে দিবে না মূলধন হইতে যা অতিরিক্ত দেয়া হয়েছে, উহা আদায় করে দিবে অথবা ঐ মালে ব্যবসায়ীকে শরীক করে নিবে।

মালিক [রহঃ] বলেন, যদি ব্যবসায়ী অন্য কাউকেও শরীকী কারবারে মাল দিয়ে দেয় এবং অর্থ বিনিয়োগকারীর নিকট জিজ্ঞেস না করে থাকে, তবে সে মালের জন্য দায়ী হইবে। যদি উহাতে ক্ষতি হয়, তবে প্রথমে ব্যবসায়ী নিজের পক্ষ হইতে এই ক্ষতিপূরণ করিবে আর যদি লাভ হয় তবে অর্থ বিনিয়োগকারী লভ্যাংশ শর্ত মতো আদায় করিবে। অতঃপর বাড়তি মালে প্রথম ব্যবসায়ী ও দ্বিতীয় ব্যবসায়ী উভয়ে শরীক হইবে।

মালিক [রহঃ] বলেন, যদি ব্যবসায়ী শরীকী কারবারের মালের দ্বারা নিজের জন্য কোন কিছু খরিদ করে, তবে অর্থ বিনিয়োগকারী ইচ্ছা করলে উহাতে নিজেও শরীক হইতে পারে বা উহা ছেড়ে দিতে পারে এবং নিজের মূলধন ব্যবসায়ী হইতে ফিরিয়ে নিতে পারে। ব্যবসায়ী এই ধরনের যেকোনো সীমালংঘন করলে অর্থ বিনিয়োগকারীর মূলধন ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার থাকিবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ৯ : শরীকী কারবারে যা ব্যয় করা বৈধ

১৩৭৮ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

যদি শরীকী কারবারের মাল এত অধিক হয় যে, খরচের বোঝা উঠাতে সক্ষম তবে ব্যবসায়ী তা হইতে সফরে স্বীয় খোরাক-পোশাক নিয়ম মতো নিতে পারে। যদি তার একজনের পক্ষে সেই ব্যবসার কাজ আঞ্জাম দেওয়া সম্ভব না হয়, তবে সে অন্য কাউকেও শ্রমিক নিযুক্ত করিতে পারে। কোন কোন কাজ এমন রয়েছে যা ব্যবসায়ী নিজে একা করিতে পারে না, যেমন অর্থ আদায়ের জন্য তাগাদা করা মাল আসবাব বেঁধে নেয়া, উহা উঠিয়ে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি এমতাবস্থায় ব্যবসায়ের মাল থেকে শ্রমিকের মুজুরী দিতে পারবে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যবসায়ী নিজের শহরে থাকে ততক্ষণ শরীকী মাল হইতে খাদ্য ও পোশাক নিবে না। আর নিজ শহরে বিক্রয়ের যোগ্য পণ্য হলে মেহনতকারী উহা হইতে কোন প্রকার খোরপোষ গ্রহণ করিতে পারবে না।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি সফরে ব্যবসায়ী নিজের মালও নিয়ে যায় তবে সফরের খরচ উভয় মালে বর্তিবে অংশ অনুযায়ী।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ১০: শরীকী কারবারে যা ব্যয় করা অবৈধ

১৩৭৯ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

ব্যবসায়ী শরীকী কারবারের মাল হইতে হেবা করিতে পারবে না; কোন ফকীরকে কিছু দিতে পারবে না এবং কারো ইহসানের বদলা দিতে পারবে না। যদি অন্যান্য লোক নিজেদের খাবার নিয়ে আসে তবে ব্যবসায়ীও নিজের খাবার তার সাথে মিশিয়ে খেতে পারে, তবে অধিক নিতে পারবে না। যদি অধিক নিতে ইচ্ছা করে, তবে অর্থ বিনিয়োগকারী হইতে অনুমতি না মিললে তবে উহার ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ১১ : ধারে বা বাকীতে মাল বিক্রয় করার বিধান

১৩৮০ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এই ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত এই যে, এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তিকে অর্থ যোগান দিল। সে উহা দ্বারা পণ্য খরিদ করিল, অতঃপর উহা লাভের উপর ধারে বিক্রয় করিল এবং টাকা উশুল করার পূর্বেই ব্যবসায়ী মারা গেল। তবে ব্যবসায়ীর ওয়ারিসদের ইখতিয়ার থাকিবে যে, হয় ব্যবসায়ীর স্থলাভিষিক্ত হয়ে মাল উশুল করিবে বা ঐ কর্যের টাকা পুঁজি বিনিয়োগকারীকে উশুল করিতে দিয়ে নিজেরা সরে পড়বে, সেই অবস্থায় তাদের কিছুই মিলবে না, যদি ওয়ারিসগণ তাগাদা করে তার কর্য আদায় করে নিয়ে থাকে। তবে ব্যবসায়ী খরচ ও লভ্যাংশ শর্ত মুতাবিক যা পাইত ওয়ারিসগণও তা পাবে যদি তারা সত্যিকারের ওয়ারিস হয়ে থাকে। যদি এমন হয় যে, তাদের উপর বিশ্বাস করা যায় না, তবে কোন বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করে কর্য উশুল করে দেবে। যদি উহা উশুল হয়ে যায় তবে উহাদেরও ব্যবসায়ীর মতো হক মিলবে।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি পুঁজি বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীর সাথে এই শর্ত করে থাকে যে, ধারে মাল বিক্রয় করিবে না, করলে সে তার জন্য দায়ী হইবে। এর পর যদি ব্যবসায়ী ধারে বিক্রয় করে থাকে তবে সে নিজেই দায়ী হইবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ১২ : শরীকী কারবারে ব্যবসা

১৩৮১ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

পুঁজি বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ী হইতে বা ব্যবসায়ী পুঁজি বিনিয়োগকারী হইতে কিছু কর্জ নিল বা পুঁজি বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীকে কিছু মাল বিক্রয় করিতে দিল যে, ইহা বিক্রয় করে দাও বা কিছু দীনার দিল যে, ইহা দ্বারা কিছু মাল খরিদ করে লও। যদি এই লেনদেন বন্ধুত্বের নিয়মানুযায়ী হয়ে থাকে বা সাধারণ কাজ বিধায় শরীকী কারবারের মতো উহা না হয়ে থাকে।

অর্থাৎ শরীকী কারবারের ব্যাপারে না হলেও এই কাজ তারা একে অন্যের জন্য করে দিত, তবে তা বৈধ হইবে, অন্যথায় নয়। আর যদি এতে কোন শর্ত প্রবেশ করে অথবা ব্যবসায়ী এইরূপ করেছে এজন্য যাতে অর্থ বিনিয়োগকারী অর্থ তার নিকট রেখে দেয়, অথবা অর্থ বিনিয়োগকারী এইরূপ করিল যাতে ব্যবসায়ী অর্থ ফেরত দিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে না দেয়, আহল-ই ইলম এইরূপ করিতে নিষেধ করেন।এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ১৩ : শরীকী কারবারে কর্জ

১৩৮২মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

কেউ কারো নিকট কর্জ পাওনা হয় আর যে কর্জ নিয়েছে সে দাতাকে বলে, যে অর্থ আমি কর্জ হিসেবে নিয়েছিলাম উহা শরীকী কারবারে আমার নিকট থাকতে দাও। তবে এইরূপ কারবার বৈধ হইবে না। হ্যাঁ, যদি প্রথমে কর্জের অর্থ উশুল হয়ে যায় আর পরে ইচ্ছা হলে শরীকী কারবারে দিয়ে দেয় তবে বৈধ হইবে।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি ব্যবসায়ী পুঁজি বিনিয়োগকারীকে বলে, আমার নিকট যে কারবারের অর্থ জমা আছে উহা আমাকে কর্জ হিসেবে দিয়ে দাও, তবে উহা অবৈধ হইবে। কর্জ শোধ হলে পরে যদি ইচ্ছা হয় কর্জ দেবে, ইচ্ছা না হলে দেবে না। কারণ হয়তো ব্যবসায়ীর নিকট মূলধনে কিছু ঘাটতি হয়েছে। সে সময় বৃদ্ধি করিয়ে উক্ত ঘাটতি পূরণ করিতে চায়, এটা অবৈধ।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ১৪ : শরীকী কারবারের হিসাব

১৩৮৩ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

যদি ব্যবসায়ী ব্যবসা করে লাভ করিল আর পুঁজি বিনিয়োগকারীর অনুপস্থিতিতে নিজের লভ্যাংশ নিতে ইচ্ছা করলে তবে ইহা বৈধ হইবে না, যতক্ষণ না অর্থ বিনিয়োগকারী উপস্থিত হয়। যদি তার অনুপস্থিতিতেই নিয়ে নেয়, তবে সে এর জন্য দায়ী হইবে, উভয়ের মধ্যে বণ্টনের সময় উক্ত মাল একত্রিত করা পর্যন্ত।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ পুঁজি বিনিয়োগকারীর জন্য ইহা বৈধ হইবে না যে, মাল না দেখে লভ্যাংশের হিসাব করিবে, বরং মাল উপস্থাপন প্রয়োজন হইবে। প্রথমে পুঁজি বিনিয়োগকারী মূলধন নিয়ে নিবে। পরে শর্তানুযায়ী লভ্যাংশ ভাগ করিবে।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি ব্যবসায়ী কোন সামগ্রী ক্রয় করে আর ব্যবসায়ীর ঋণদাতাগণ তা আটকিয়ে বলে, এই মাল বিক্রয় করে যে লাভ হইবে তোমার অংশে উহা হইতে আমরা আমাদের পাওনা নিয়ে নিব। যদি পুঁজি বিনিয়োগকারীর অনুপস্থিতিতে এইরূপ করে তবে ইহা অবৈধ হইবে। পুঁজি বিনিয়োগকারী তার মূলধন বের করে লওয়ার পর লভ্যাংশ ভাগ করা হইবে।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি ব্যবসায়ী ব্যবসা করে লাভ করে এবং পুঁজি বিনিয়োগকারীর অবর্তমানে মূলধন পৃথক করে লভ্যাংশ সাক্ষীদের সম্মুখে ভাগ করে নেয় ইহা অবৈধ হইবে। যদি পুঁজি বিনিয়োগকারী আসার পূর্বে এইরূপ করেও ফেলে, তবে উহা ফেরত দিতে হইবে, পুঁজি বিনিয়োগকারী এসে প্রথমে তার মূলধন পৃথক করে নিবে, তারপর অবশিষ্ট লভ্যাংশ ভাগ করা হইবে।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ ব্যবসায়ী ব্যবসা করে লাভ করিল এবং সে পুঁজি বিনিয়োগকারীর লভ্যাংশ নিয়ে উপস্থিত হল এবং বলিতে লাগল, ইহা তোমার লাভের অংশ। আমিও এইটুকু নিয়েছি। আর তোমার মূলধন আমার নিকট জমা রয়েছে, তবে এইরূপ করা অবৈধ হইবে, বরং সে সমস্ত মূলধন ও লাভ নিয়ে পুঁজি বিনিয়োগকারীর সম্মুখে উপস্থিত করিবে। অতঃপর পুঁজির মালিকের ইখতিয়ার রয়েছে, হয় মূলধন নিয়ে নিজে রেখে দিবে বা পুনরায় ব্যবসায়ীকে দিবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদ ১৫ : শরীকী কারবারের বিভিন্ন বিধান

১৩৮৪ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ

ব্যবসায়ী কিছু মাল খরিদ করলে পুঁজি বিনিয়োগকারী বলল, উহা বিক্রয় করে দাও, কিন্তু ব্যবসায়ী বলল, এখন বিক্রয় করা ঠিক হইবে না, তবে এ ব্যাপারে অন্যান্য বিচক্ষণ ব্যবসায়ীর কাছে জিজ্ঞেস করা হইবে। যদি তারা বিক্রয় করার পরামর্শ দেয়, তবে বিক্রয় করা হইবে, না হয় রেখে দেয়া হইবে।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ ব্যবসায়ী শরীকী কারবারের মালে ব্যবসা আরম্ভ করার পর পুঁজি বিনিয়োগকারী তার পূর্ণ মাল মুনাফাসহ তলব করিল। উত্তরে ব্যবসায়ী বলল, আমার নিকট পূর্ণ মালই জমা রয়েছে। অতঃপর যখন মাল ফেরত নেয়া আরম্ভ হল তখন ব্যবসায়ী বলল, আমার নিকট কিছু মাল নষ্ট হয়ে গিয়েছে, আমি প্রথমে এজন্য বলেছিলাম যেন মাল আমার কাছে থাকতে দেয়া হয় তবে কোন প্রমাণ ব্যতীত ব্যবসায়ীর এই কথা বিশ্বাস করা হইবে না। বরং তার পূর্ব স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ফায়সালা দেয়া হইবে।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ অনুরূপভাবে ব্যবসায়ী পুঁজি বিনিয়োগকারীকে বলল, সে এত লাভ করেছে। অতঃপর যখন পুঁজি বিনিয়োগকারী মূলধন ও লভ্যাংশ চাইল তখন বলিতে লাগল লাভ হয়নি, মূলধন আমার হাতে রেখে দেয়ার উদ্দেশ্যে লাভের কথা বলেছি, তবে প্রমাণ ব্যতীত তার কথা বিশ্বাস করা হইবে না। বরং পূর্ব স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ফায়সালা দেয়া হইবে।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যদি ব্যবসায়ী ব্যবসায়ে লাভ করে তখন পুঁজি বিনিয়োগকারী বলল, লাভের এত-তৃতীয়াংশ তোমার এবং দুই-তৃতীয়াংশ আমার নির্ধারিত ছিল। ব্যবসায়ী বলল, না বরং দুই-তৃতীয়াংশ আমার আর এক-তৃতীয়াংশ তোমার নির্ধারিত করা হয়েছিল। তবে ব্যবসায়ীর কথা কসম সহকারে মেনে নেয়া হইবে। কিন্তু এটা যদি দেশ প্রথার বিরুদ্ধে হয় তবে প্রথানুযায়ী লাভ বন্টনের ব্যবস্থা করা হইবে।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে একশত দীনার শরীকী কারবারের জন্য দিল। সে উহা দ্বারা মাল খরিদ করিল। যখন বিক্রেতাকে মালের মূল্য দিতে লাগল তখন বুঝা গেল ঐ দীনার চুরি হয়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় অর্থ বিনিয়োগকারী বলল, এই মাল বিক্রয় করে ফেল। যদি উহাতে লাভ হয়, তবে উহা আমার আর যদি ক্ষতি হয়, তবে সে জন্য তুমি দায়ী, কেননা তুমি আমার অর্থ নষ্ট করেছ। কিন্তু ব্যবসায়ী বলল, তুমি এই মালের মূল্য আদায় করে দাও, কেননা আমি এই মাল তোমার অর্থ দ্বারা খরিদ করেছি।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ এই অবস্থায় ক্রেতা ব্যবসায়ীকে বলা হইবে তুমি এই মালের মূল্য বিক্রেতাকে আদায় করে দাও এবং অর্থ বিনিয়োগকারীকে বলা হইবে যদি তোমার সম্মতি হয় তবে ব্যবসায়ীকে একশত দীনার আরও প্রদান কর যেন শরীকী কারবার বহাল থাকে, না হয় এই মালের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। যদি পুঁজি বা বিনিয়োগকারী একশত দীনার দেয়, তবে কারবার বহাল থাকিবে, না হয় ঐ মাল ব্যবসায়ীর হয়ে যাবে। চুরি যাওয়ার কারণে অর্থ বিনিয়োগকারীর একশত দীনার বিনষ্ট হয়ে গেল।

মালিক [রহঃ] বলেনঃ যখন পুঁজি বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ী পৃথক হয়ে যায় [শরীকী কারবার বন্ধ হয়ে যায়], কিন্তু ব্যবসায়ীর নিকট ব্যবসায়ে মাল হইতে কোন মাল যেমন পুরাতন মশক বা পুরাতন কাপড় ইত্যাদি থেকে যায়, যদি এ দ্রব্যগুলো নিতান্ত স্বল্প মূল্যের হয়ে থাকে তবে উহা ব্যবসায়ীরই থাকিবে। এটা ফেরত দিতে হইবে না। যদি এই দ্রব্যগুলো মূল্যবান হয় যেমন কোন জন্তু, উট বা ইয়ামনী মোটা কাপড়, তবে যদি পুঁজি বিনিয়োগকারী হইতে মাফ করিয়ে নিয়া থাকে তবে তো ভাল, না হয় এটাও ফেরত দিতে হইবে।

{১} ঈমাম আবু হানীফা [রাহিমাহুল্লাহ] এবং শাফিঈ [রাহিমাহুল্লাহ]-এর মতে, ছোট-বড় যাই হোক না কেন, তা ফেরত দিতে হইবে।এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

Comments

One response to “শরীকী কারবার করা অধ্যায় । কারবারের অবৈধ শর্তসমূহ”

Leave a Reply