সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান এর হাদিস
সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান এর হাদিস, এই অধ্যায়ে হাদীস =১৭ টি ( ১২৬৮-১২৮৪ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ৩০ঃ সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান
পরিচ্ছেদ ১ -শিশুদের দুধ পান করানো
পরিচ্ছেদ ২ -বয়স্ক হওয়ার পর দুধ পান করা
পরিচ্ছেদ ৩ -দুধ পান করানোর বিবিধ বিষয়
পরিচ্ছেদ ১ -শিশুদের দুধ পান করানো
১২৪৯ আমর ইবনি আবদির রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উম্মুল মুমিনীন আয়িশা [রাদি.] তার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তার নিকট ছিলেন। [এমন সময়] তিনি জনৈক ব্যক্তির আওয়ায শুনলেন। সে ব্যক্তিটি হাফসা [রাদি.]-এর গৃহে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করছিল। আয়িশা [রাদি.] বলিলেন : আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইহা [অপরিচিত] ব্যক্তির আওয়ায, আপনার গৃহে অনুমতি চাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন : আমি মনে করি সে ব্যক্তি অমুক, হাফসা [রাদি.]-এর দুধ চাচা হইবে। আয়িশা [রাদি.] বলিলেন : ইয়া রসূলুল্লাহ্! যদি অমুক তার দুধ চাচা জীবিত থাকতেন, তিনি আমার নিকট প্রবেশ করিতে পারতেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন হ্যাঁ জন্মসূত্রে আত্মীয়তার ফলে যেসব [সম্পর্ক ও বিবাহ] হারাম হয় দুগ্ধপান করার ফলেও সেসব হারাম হয়ে যায়। [বুখারি ২৬৪৬, মুসলিম ১৪৪৪]
সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২৫০ উরওয়া ইবনি যুবাইর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আয়িশা উম্মুল মুমিনীন [রাদি.] বলেন : পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পর আমার দুধ চাচা আবুল কুআয়সের ভাই আফলাহ্ [রাদি.] আমার নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। আয়িশা [রাদি.] বলেন : তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাশরীফ আনলেন এবং আমি এই বিষয়টি তাকে অভিহিত করলাম। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাকে আমার নিকট আসার অনুমতি দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন।
আয়িশা [রাদি.] বলিলেন : ইয়া রসূলাল্লাহ! আমাকে স্ত্রীলোক দুধ পান করিয়েছে, পুরুষ আমাকে পান করায়নি। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন : তিনি তোমার চাচা, তোমার নিকট সে প্রবেশ করিতে পারবে, আয়িশা [রাদি.] বলেন, এই ঘটনা পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পরে সংঘটিত হয়েছে। {১} আয়িশা [রাদি.] বলেছেন : জন্মের [সম্পর্কের] দ্বারা যা হারাম হয় দুধ পানের [সম্পর্কের] দ্বারাও তা হারাম হইবে।
[বুখারি ৫২৩৯, মুসলিম ১৪৪৫]{১} হিজরী পঞ্চম সনের যিলকদ মাসে পর্দার বিধান অবতীর্ণ হয়।সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২৫১ উরওয়া ইবনি যুবাইর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উম্মুল মুমিনীন আয়িশা [রাদি.] তার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, তার দুধ চাচা আবু কুআয়স-এর ভাই আফলাহ্ [রাদি.] পর্দার হুকুম আবর্তীণ হওয়ার পর তার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। আয়িশা [রাদি.] বলেন : আমি আমার নিকট প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়াহি ওয়া সাল্লঅম তাশরীফ আনিলে পর আমি যাহা করিয়াছি উহা তাহাকে অবহিত করলাম। অতঃপর তাকে [দুধ চাচাকে] আমার নিকট প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাকে নির্দেশ দিলেন।
[বুখারি ৫১০৩, মুসলিম ১৪৪৫]সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২৫২ সাওর ইবনি যায়দ দিলী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিতেন : দুই বৎসর সময়ের ভিতরে দুধ একবার চুষলেও উহা হারাম করিবে। অর্থাৎ জন্মসূত্রে বিবাহ যেমন অবৈধ হয় তদ্রƒপ এতেও হয়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১২৫৩ আমর ইবনি শারীদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর নিকট প্রশ্ন করা হল এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে, যার স্ত্রীর রয়েছে দুজন। তাদের মধ্যে এক স্ত্রী এক ছেলেকে, আর এক স্ত্রী এক কন্যাকে দুধ পান করিয়েছে। এই ছেলে সেই কন্যাকে বিবাহ করিতে পারবে কি? তিনি বলিলেন : না কারণ [উভয়ে পিতার দিক দিয়ে] বীর্য এক।
[সহীহ, তিরমিজি ১১৪৯, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন {সহীহ ও যয়ীফ সুনানে তিরমিজি}]সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২৫৪ নাফি [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন : ছোট বেলায় যাকে দুধ খাওয়ান হয় উহাই গ্রহণযোগ্য, বড়দের দুধ পান করান ধর্তব্য নয়, অর্থাৎ উহাতে দুধ পান-এর ফলে যে হুকুম হয় তা হইবে না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১২৫৫ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
সালিম ইবনি আবদিল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি যখন দুগ্ধপোষ্য ছিলেন, তখন আয়িশা উম্মুল মুমিনীন [রাদি.] তাকে পাঠালেন তার ভগ্নী উম্মে কুলসুম বিন্ত আবী বাকর [রাদি.]-এর নিকট এবং বলে দিলেন একে [সালিমকে] দশবার দুধ চোষায়ে দিন, যেন সে আমার নিকট প্রবেশ করিতে পারে। সালিম বলেন : উম্মে কুলসুম আমাকে তিনবার দুধ চোষায়েছেন। তারপর আমি পীড়িত হই, তাই আমাকে তিনবার ছাড়া আর দুধ পান করাননি, যেহেতু উম্মে কুলসুম আমাকে দশবার দুধ পান করাননি তাই আমি আয়িশা [রাদি.]-এর নিকট প্রবেশ করতাম না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১২৫৬ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
সফিয়্যা বিন্ত আবী উবায়দ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, উম্মুল মুমিনীন হাফসা [রাদি.] আসিম ইবনি আবদিল্লাহ ইবনি সাদ [রাহিমাহুল্লাহ]-কে তার ভগ্নী ফাতিমা বিন্ত উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর নিকট পাঠালেন। তখন আসিম ছোট এবং দুগ্ধপোষ্য [উদ্দেশ্য] যেন তিনি আসিমকে দশবার দুধ পান করিয়ে দেন যাতে সে হাফসা [রাদি.]-এর নিকট প্রবেশ করিতে পারে। তিনি [ফাতেমা] উহা করলেন, তাই আসিম তার {হাফসা [রাদি.]-এর নিকট যাতায়াত করিতেন}। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১২৫৭ আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
ভগ্নীগণ অথবা তাঁর ভাতিজীগণ যাদেরকে দুধ পান করিয়েছেন তারা আয়িশা [রাদি.]-এর নিকট প্রবেশ করিতে পারতেন। আর যাদেরকে তাঁর ভাবীগণ দুধ পান করিয়েছেন {১} তাঁরা তাঁর নিকট প্রবেশ করিতে পারতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
{১} অর্থাৎ ভাইয়ের স্ত্রী হওয়ার পূর্বে যাদেরকে দুধ পান করিয়েছেন তাদেরকে তিনি প্রবেশের অনুমতি দিতেন না।সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১২৫৮ ইবরাহীম ইবনি উকরা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ]-কে রাযাআত {সন্তানকে দুগ্ধ পান করানো}। সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। সাঈদ বলিলেন : দুই বৎসরের মধ্যে পান করানো হলে যদিও এক ফোটা হয় উহা বিবাহ সম্পর্ক হারাম করিবে, আর যা দুই বৎসরের পর বাহিরে হয় তা খাদ্যদ্রব্য বলে গণ্য হইবে, যা আহার করেছে। উহাতে বিবাহ সম্পর্ক হারাম হইবে না} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
ইবরাহীম ইবনি উকবা [রাহিমাহুল্লাহ] বলে : অতঃপর আমি উরওয়াহ্ ইবনি যুবায়র [রাদি.]-এর নিকট প্রশ্ন করি। তিনি সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব-এর মতোই বলিলেন।
সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১২৫৯ ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আমি সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনিয়াছি স্ত্রীলোকদের সন্তানদের দুধ পান করানো তখন গ্রহণযোগ্য হইবে যখন তারা দোলনাতে থাকে এবং যা গোশত ও রক্ত সৃষ্টি করে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] বলিতেন : রাযাআত {দুধ পান করান} অল্প হোক বেশি হোক উহা হারাম করিবে। আর রাযাআত পুরুষের পক্ষের আত্মীয়তাও হারাম করিবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
ইয়াহ্ইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : আমি মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনিয়াছি সন্তানদের দুধ পান অল্প হোক বা বেশি হোক, যদি উহা দুই বৎসরের মধ্যে হয় তবে হারাম করিবে। তিনি বলেন, দুই বৎসরের পরে হলে অল্প হোক বা বেশি হোক উহা কিছুই হারাম করিবে না। উহা হচ্ছে খাদ্যদ্রব্যের মতো।
সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ২ -বয়স্ক হওয়ার পর দুধ পান করা
১২৬০ ইবন শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
কে প্রশ্ন করা হল বয়স্কের দুধ পান করা সম্বন্ধে। তিনি [উত্তরে] বলিলেন : উরওয়াহ্ ইবন যুবায়র [রাহিমাহুল্লাহ] আমাকে বলেছেন : আবু হুযায়ফা ইবন উতবা ইবন রবিআ [রাদি.] রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর সাহাবীদের মধ্যে একজন সাহাবা ছিলেন। তিনি বদরের যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, তিনি সালিম [রাদি.]-কে পালক পুত্র করেছিলেন যাকে বলা হত সালিম মাওলা আবু হুযায়ফা। {সায়িবা নামক জনৈকা মহিলা তাকে আযাদ করেন, পরে আবু হুযায়ফা তাকে লালন-পালন করেন এবং পুত্ররূপে গ্রহণ করেন। এইজন্য সালিমকে আবু হুযায়ফার মাওলা বলা হয়েছে} যেমন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ যায়দ ইব্নু হারিসা [রাদি.]-কে পুত্র সন্তান বানিয়েছিলেন এবং আবু হুযায়ফা সালিমের নিকট তার ভাতিজী ফাতেমা বিনত ওয়ালিদ ইবন উতবা ইবন রবিআকে বিবাহ দিলেন, তিনি সালিমকে নিজের পুত্র বলে মনে করিতেন।
ফাতেমা ছিলেন প্রথম ভাগে হিজরতকারিণীদের মধ্যে একজন মহিলা এবং তিনি তখন কুরাইশদের অবিবাহিত মহিলাদের মধ্যেও ছিলেন অন্যতম । যখন আল্লাহ তাঁর কিতাবে যায়দ ইবন হারিসা সম্পর্কে এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন-
ادْعُوهُمْ لِآبَائِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ عِنْدَ اللهِ فَإِنْ لَمْ تَعْلَمُوا آبَاءَهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ وَمَوَالِيكُمْ.
[অর্থাৎ তোমরা তাদেরকে ডাক তাদের পিতৃপরিচয়ে। আল্লাহর নিকট এটাই ন্যায়সঙ্গত, যদি তোমরা তাদের পরিচয় না জান তবে তাদেরকে তোমাদের ধর্মীয় ভ্রাতা ও বন্ধুরূপে গণ্য করিবে।] যাদেরকে পোষ্যপুত্র বানিয়েছে তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ের দিকে ফিরিয়ে দাও। আর যদি পিতার পরিচয় না জান তবে তার মাওলার [মনিব বা মিত্রতা সূত্রে স্থাপিত সম্পর্কের স্বজন] দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে দাও। আর হুযায়ফার স্ত্রী সাহলা বিনত সুহায়ল যিনি ছিলেন আমির ইবন লুয়াই গোত্রের, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর নিকট এলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! সালিমকে আমরা পুত্ররূপে গ্রহণ করেছিলাম। সে আমার কক্ষে প্রবেশ করে এই অবস্থায় যে, আমি তখন একটি কাপড় পরিধান করে থাকি। আর আমার গৃহও মাত্র একটি। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? তখন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন : এ বিষয়ে আমাদের কথা হলা তাকে পাঁচবার [স্তন হইতে] দুধ পান করিয়ে দাও। তা হলে এই দুধের কারণে সে হারাম হয়ে যাবে। এবং সাহলা দুধ পান করানোর কারণে তাকে পুত্র বলে জানতেন। উম্মুল মুমিনীন আয়িশা [রাদি.] রসূলুল্লাহ্ [সা]-এর এ অভিমত গ্রহণ করিয়াছেন, অতএব সেই সকল পুরুষের তাঁর নিকট প্রবেশ করা তিনি পছন্দ করিতেন। তিনি তাঁর ভগ্নী উম্মে কুলসুম বিনত আবি বাক্র সিদ্দীক [রাদি.]-কে এবং তাঁর ভাতিজীদেরকে সেই সকল পুরুষকে দুধ পান করানোর নির্দেশ দিতেন। কিন্তু নবী করীম [সা]-এর অন্যান্য সহধর্মিণী এই প্রকার দুধ পানের দ্বারা কোন পুরুষের তাঁদের নিকট প্রবেশ করাতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। তাঁরা বলিতেন, {আয়িশা সিদ্দিকা [রাদি.]-কে উদ্দেশ্য করে} আল্লাহর কসম, আমরা মনে করি, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ সাহলা বিন্ত সুহাইলাকে যে হুকুম দিয়েছিলেন তা কেবলমাত্র সালিমের জন্য রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর পক্ষ হইতে রুখ্সত [বিশেষ অনুমতি] স্বরূপ ছিল। কসম আল্লাহ্র! এই প্রকারের দুধ পান করানো দ্বারা আমাদের নিকট কোন লোক প্রবেশ করিতে পারবে না। বয়স্কদের দুধ পান করানো সম্বন্ধে আর সকল নবী করীম সাঃআঃ-এর সহধর্মিণী এই অভিমতের উপর অটল ছিলেন।
[সহীহ, মুসলিম ১৪৫৩]সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২৬১ আবদুল্লাহ্ ইবন দীনার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন : বয়স্কদের দুধ পানের বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য “দারুল কাযা” বিচারালয় ইহা ছিল উমার ফারূক [রাদি.]-এর ঘর, তাঁর শাহাদাতের পর তাঁর ঋণ পরিশোধ করার জন্য এই ঘর বিক্রি করা হয়, তাই একে দারুল কাযা বলা হয়]-এর নিকট এক ব্যক্তি আসল। আবদুল্লাহ্ ইবন উমার [রাদি.]-এর কাছে তখন আমি উপস্থিত ছিলাম। আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] বলিলেন : এক ব্যক্তি উমার ইবন খাত্তাব [রাদি.]-এর নিকট এসে বলিলেন, আমার এক দাসী ছিল। আমি তার সাথে সঙ্গম করতাম আমার স্ত্রী ইচ্ছাপূর্বক তাকে দুধ খাওয়াইয়া দেয়, তারপর আমি সেই দাসীর নিকট [সঙ্গমের উদ্দেশ্যে] প্রবেশ করলাম। আমার স্ত্রী বলল থাম। উহার সাথে সংগত হইও না আল্লাহ্র কসম, আমি উহাকে দুধ পান করাইয়াছি। উমার [রাদি.] বলিলেন, তোমার স্ত্রীকে শাস্তি দাও, তারপর দাসীর নিকট গমন কর, দুধ পান করানো ছোটদের বেলায় গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১২৬২ ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি আবু মূসা আশআরী [রাদি.]-কে প্রশ্ন করলেন, আমি আমার স্ত্রীর স্তন চুষেছি, দুধ আমার ভিতরে প্রবেশ করেছে। আবু মূসা আশআরী [রাদি.] বলিলেন আমি মনে করি, তোমার স্ত্রী তোমার উপর হারাম হয়েছে। আবদুল্লাহ্ ইবন মাসঊদ [রাদি.] বলিলেন : ভেবে দেখুন এই ব্যক্তি কে, কি ফতোয়া দিচ্ছেন? আবু মূসা বলিলেন : তবে আপনি কি বলেন? আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাসঊদ [রাদি.] বলিলেন : দুধ খাওয়া দুই বৎসরের ভিতরেই হয়, অতঃপর আবু মূসা [রাদি.] বলিলেন : এই বিজ্ঞজন যতদিন তোমাদের মধ্যে আছেন তোমরা [কোন বিষয়ে] আমার কাছে ফতোয়া জিজ্ঞেস করো না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৩ -দুধ পান করানোর বিবিধ বিষয়
১২৬৩ উম্মুল মুমিনীন আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, হারাম হয়ে যায় দুধ পানের দ্বারা, যেমন হয় জন্মগত সম্পর্কের দ্বারা।
[সহীহ, আবু দাঊদ ২০৫৪, তিরমিজি ১১৪৭, নাসাঈ ৩৩০৩, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন {সহীহ ওযায়ীফ সুনানে তিরমিজি}]সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১২৬৪ জদামা বিনতি ওয়াহাব আসদিয়া [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
উম্মুল মুমিনীন আয়িশা [রাদি.]-কে খবর দিয়েছেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছেন, আমি সংকল্প করেছিলাম গীলা হইতে বারণ করার, কিন্তু আমার নিকট উল্লেখ করা হয় যে, রোম ও পারস্যের লোকেরা এটা করে থাকে, তাদের সন্তানদের কোন ক্ষতি হয় না। [সহীহ, মুসলিম ১৪৪২]
মালিক [রাদি.] বলেন : গীলা হইতেছে শিশুকে দুধ পান করানোকালীন সময়ে স্ত্রীর সহিত স্বামীর সঙ্গম করা।
সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১২৬৫ আমরা বিনত আবদির রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী করীম [স]-এর পত্নী আয়িশা [রাদি.] বলেছেন : কুরআনে যা অবতীর্ণ হয়েছিল তাতে দশবার দুধ চোষার কথা নির্ধারিত ছিল, যা হারাম করিবে, তারপর উহা রহিত হইয়া যায় নির্ধারিত পাঁচবার দুগ্ধ চোষার [অবতীর্ণ হুকুমের] দ্বারা। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর ওফাত হয় তখনও সেই পাঁচবার দুধ চোষার [হুকুমের অংশ] সম্মিলিত আয়াত তিলাওয়াত করা হত।
{১} [সহীহ, মুসলিম ১৪৫২]মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর উপর আমল নাই। অর্থাৎ পাঁচবারের উপর আমল নাই। দুগ্ধ পান অল্প হোক বা বেশি হোক বিবাহ সম্পর্ক হারাম করিবে।{১} রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর শেষ যুগে পাঁচবারের অংশের আয়াত তিলাওয়াত রহিত হয়ে যায়, কিন্তু কেউ কেউ উহার সংবাদ অবহিত হয়নি।সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply