জানাজার নামাজ কয় তাকবীরে পড়তে হয় । মুসল্লি কি পড়বেন?

জানাজার নামাজ কয় তাকবীরে পড়তে হয় । মুসল্লি কি পড়বেন?

জানাজার নামাজ কয় তাকবীরে পড়তে হয় । মুসল্লি কি পড়বেন?, এই অধ্যায়ে হাদীস =৫৬ টি ( ৫০৬-৫৬১ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ১৬ঃ জানাইযা

পরিচ্ছেদঃ ১ – মৃতের গোসল
পরিচ্ছেদঃ ২ – মুর্দার কাফন
পরিচ্ছেদঃ ৩ – জানাযার আগে চলা
পরিচ্ছেদঃ ৪ – জানাযার পেছনে আগুন নিয়ে চলা নিষেধ
পরিচ্ছেদঃ ৫ -জানাযার তাকবীর
পরিচ্ছেদঃ ৬ – জানাযার নামাযে মুসল্লি কি পড়বেন
পরিচ্ছেদঃ ৭ – ফজরের ও আসরের পর জানাযার নামাজ আদায় করা
পরিচ্ছেদঃ ৮ – মসজিদে জানাযার নামাজ পড়া
পরিচ্ছেদঃ ৯ – জানাযার নামাযের বিবিধ আহকাম
পরিচ্ছেদঃ ১০ – মুর্দার দাফন সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে
পরিচ্ছেদঃ ১১ – জানাযার জন্য দণ্ডায়মান হওয়া ও কবরের উপর বসা
পরিচ্ছেদঃ ১২ – মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদতে নিষেধ করা
পরিচ্ছেদঃ ১৩ – মুসিবতে ধৈর্যধারণ
পরিচ্ছেদঃ ১৪ – মুসিবতের ধৈর্যধারণ সম্পর্কে বিবিধ বর্ণনা
পরিচ্ছেদঃ ১৫ – কাফন চুরির সাজা
পরিচ্ছেদঃ ১৬ – জানাযা সংক্রান্ত বিবিধ আহকাম

পরিচ্ছেদঃ ১ – মৃতের গোসল

৫০৫। মুহাম্মদ ইবনি বাকির [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে কোর্তা পরিহিত অবস্থায় গোসল দেওয়া হয়েছে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫০৬ উম্মে আতিয়া আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর কন্যার যখন ওফাত হয় তখন আমাদের কাছে এলেন, তারপর তিনি বলিলেন, তাকে তোমরা গোসল দাও তিনবার অথবা পাঁচবার অথবা উহা অপেক্ষা অধিক পানি ও কুলপত্র [কুলপত্রসহ গরম দেওয়া পানি] দ্বারা। আর শেষে তোমরা কর্পূর দাও অথবা [তিনি বলেছেন] কিছু কর্পূর দাও। তোমরা যখন গোসল সমাপ্ত করিবে তখন আমাকে সংবাদ দেবে। অতঃপর আমরা গোসল সমাপ্ত করে তাকে খবর দিলাম। তিনি তাঁর ইযার [লঙ্গী] আমাদেরকে প্রদান করলেন এবং বলিলেন, এটা তার দেহের সাথে লেপটে দাও। উম্মে আতিয়া [রাদি.] হাকওয়া দ্বারা তাঁর ইযার বুঝিয়েছেন।

[বুখারি ১২৫৩, মুসলিম ৯৩৯] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫০৭ আবদুল্লাহ ইবনি আবু বকর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আবু বক্‌র সিদ্দীক [রাদি.]-এর সহধর্মিণী আসমা বিন্ত উমাইস [রাদি.] আবু বক্‌র সিদ্দীককে গোসল দেন, যখন তিনি ইন্তিকাল করেন। অতঃপর তিনি বের হলেন এবং উপস্থিত মুহাজিরদের নিকট প্রশ্ন করলেন, আমি রোযাদার; আর এখন খুব শীতের দিন। আমার উপর গোসল কি জরুরী? তারা বলিলেন, না।

[যয়ীফ, হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, আলবানী হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন {তামামুল মিন্নাহ পৃ: ১২১} এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৫০৮ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আহলে ইল্‌মকে [অভিজ্ঞ উলামা] বলিতে শুনেছেন, কোন স্ত্রীলোকের মৃত্যু হলে এবং সে স্ত্রীলোকের সাথে তাকে গোসল দিতে পারে এইরূপ কোন মেয়েলোক যদি না থাকে এবং কোন মাহরম [যে সকল আত্মীয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম।] আত্মীয়ও না থাকে সে সেই স্ত্রীলোকের দায়িত্ব গ্রহণ করিতে পারে অথবা স্বামীও নেই যে তার গোসলের দায়িত্ব নিতে পারে এইরূপ অবস্থার সম্মুখীন হলে তবে সে স্ত্রীলোককে তায়াম্মুম করানো হইবে; পবিত্র মাটি দ্বারা তার মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয়কে মসেহ করে দেয়া হইবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কোন পুরুষ লোকের মৃত্যু হলে তার নিকট বেগানা কোন স্ত্রীলোক ব্যতীত অন্য কেউ না থাকলে স্ত্রীলোকেরা তাকে অনুরূপ তায়াম্মুম করাবে।

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, মৃত লোকের গোসলের ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন নির্দিষ্ট সীমা ও সংজ্ঞা নাই, অবশ্য গোসল দেওয়াতে হইবে, আর পবিত্র করাতে হইবে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ২ – মুর্দার কাফন

৫০৯ নবী-করীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর সহধর্মিনী আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে سُحُولِيَّةٍ [সাহুল {ইয়েমেনের একটি প্রসিদ্ধ স্থানের নাম}-এ তৈরি] সাদা বর্ণের তিনটি কাপড় দ্বারা কাফন দেয়া হয়েছিল। উহাতে কোর্তা এবং পাগড়ি ছিল না।

[বুখারি ১২৬৪, মুসলিম ৯৪১] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫১০ ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি অবগত হয়েছি যে, আবু বক্‌র সিদ্দীক [রাদি.] যখন পীড়িত ছিলেন, তখন আয়েশা [রাদি.]-কে বলিলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে কয়টি কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছে? আয়েশা [রাদি.] বলিলেন, সাহুলে তৈরি সাদা রঙ্গের তিনটি কাপড়ে। তারপর আবু বক্‌র [রাদি.] তাঁর পরিধানে যে কাপড় ছিল সে কাপড়ের প্রতি ইঙ্গিত করে বলিলেন, আয়েশা! এই কাপড়টি ধর এবং যাতে গেরুয়া রং অথবা জাফরান লেগেছিল, ইহাকে ধৌত কর। তারপর অন্য দুটি কাপড়ের সাথে [মিলিয়ে] এ কাপড়ে আমাকে তোমরা কাফন দিও। [এটা শুনে] আয়েশা [রাদি.] বলিলেন, এটা কি! নূতন কাপড় কি পাওয়া যাবে না? আবু বক্‌র [রাদি.] বলিলেন, মৃত ব্যক্তি অপেক্ষা জীবিত লোকেরই প্রয়োজন বেশি, আর এ কাপড় মৃতের পুঁজের জন্য। [সহীহ, বুখারি ১৩৮৭]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫১১ আব্দুল্লাহ ইবনি আমর ইবনি আস [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুর্দাকে কোর্তা এবং ইযার পরিধান করানো হইবে। অতঃপর তৃতীয় কাপড় দ্বারা তাকে আবৃত করিতে হইবে। আর যদি একটি কাপড় ব্যতীত অন্য কাপড় না থাকে তবে তাতেই কাফন দেয়া হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৩ – জানাযার আগে চলা

৫১২ ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম], আবু বক্‌র সিদ্দীক [রাদি.], উমার [রাদি.] তাঁরা সকলেই জানাযার আগে চলতেন। তাঁদের পরে খলীফাগণ [যুগে যুগে] এবং আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-ও এরূপ করিয়াছেন।

[সহীহ, আবু দাঊদ ৩১৭৯, তিরমিজি ১০০৭, নাসাঈ ১৯৪৪, ১৯৪৫, ইবনি মাজা ১৪৮৩, ১৪৮২, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন {সহীহ ও যয়ীফ, সুনানে তিরমিজি} তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক হাদীসটি মুরসাল] এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৫১৩ ইবনি রবীআ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি হুদায়র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি যায়নব বিন্ত জাহাশ [রাদি.]-এর জানাযার আগে উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-কে লোকের সম্মুখে চলতে দেখেছেন।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫১৪ হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আমার পিতাকে কখনও কোন জানাযায় উহার আগে আগে ছাড়া চলতে দেখিনি, কিন্তু বকীতে পৌঁছার পর সেখানে বসতেন। লোকজন [জানাযাসহ] তাঁর সম্মুখ দিয়ে গমন করতো। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫১৫ ইবনি শিহাব হইতে বর্ণিতঃ

জানাযার পেছনে চলা সুন্নতের খেলাফ। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৪ – জানাযার পেছনে আগুন নিয়ে চলা নিষেধ

৫১৬ আস্মা বিন্ত আবু বক্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আস্মা বিন্ত আবু বক্‌র [রাদি.] নিজের পরিবারের লোকদেরকে বলেছেন, আমার মৃত্যু হলে আমার কাপড়কে [কাফন] খোশবুমুক্ত করো, তারপর আমার দেহে হানূত [কাপূর, মিশ্কে আম্বর ইত্যাতি দ্বারা তৈরি এক প্রকারের খোশবু] লাগাবে। কিন্তু হানূত আমার কাফনে ছিটাবে না, আর আগুন সাথে নিয়ে আমার পেছনে চলবে না।

[ইবনি আসাকীর হাদীসটি তাখরীজ করেন {তারীখে দামেশক} তারীখে দামেশক ৭৩/২১, ঈমাম মাইলায়ী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, নসবুর রয়াহ ২/২৬৪] এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৫১৭ আবু সাঈদ মাকবুরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরায়রা [রাদি.] তার মৃত্যুর পর পেছনে আগুন নিয়ে চলতে নিষেধ করিয়াছেন। [সহীহ, আহমাদ ২/৪২৭, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, {আহকামুল জানায়েজ পৃঃ ৭০}]

ইয়াহ্ইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলিলেন, আমি শুনিয়াছি যে, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একে মাকরূহ জানতেন।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ৫ -জানাযার তাকবীর

৫১৮ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] লোকদেরকে নাজ্জাশীর মৃত্যুর খবর দিয়েছেন, যেদিন তাঁর মৃত্যু হয়েছে সেদিন। অতঃপর লোকজনকে নিয়ে তিনি মুসল্লায় [নামাযের স্থানে] গমন করিয়াছেন, অতঃপর তাদেরকে সারিবদ্ধ করিয়েছেন এবং চার তাকবীর বলেছেন।

[বুখারি ১২৪৫, মুসলিম ৯৫১] জানাজার নামাজ কয় তাকবীরে পড়তে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫১৯ আবু উমামা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

জনৈক মিসকীন স্ত্রীলোক অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে তাঁর রোগের খবর দেয়া হয়। [আবু উমামা] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর অভ্যাস ছিল, তিনি মিসকীনদের শুশ্রূষা করিতেন এবং তাদের খোঁজ-খবর রাখতেন। তাই রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, এই স্ত্রীলোকের মৃত্যু হলে তোমরা তার মৃত্যু সংবাদ আমার কাছে পৌঁছাবে। কিন্তু তার জানাযা বের করা হল রাত্রে। তাই তাঁরা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে জাগানো উচিত মনে করলেন না। যখন ফজর হল, তখন তাঁর অবস্থা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে খবর দেয়া হল। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, আমি কি তোমাদেরকে তার সংবাদ দেয়ার জন্য বলিনি ? তাঁরা বলিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার কষ্ট হইবে মনে করে আমরা সংবাদ দেয়া ভাল মনে করিনি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বের হলেন এবং তাঁর কবরে লোকজনকে নিয়ে জানাযার জন্য দাঁড়ালেন। অতঃপর চারটি তকবীর বলিলেন।

[উল্লেখিত হাদীসের অর্থে আবু হুরায়রা [রাদি.] কর্তৃক মুত্তাসিল সনদে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, নাসাঈ ১৯০৭, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, {সহীহ ও যয়ীফ সুনানে নাসাঈ}] জানাজার নামাজ কয় তাকবীরে পড়তে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৫২০ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ]-এর নিকট প্রশ্ন করলেন সে ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তি জানাযার [নামাযের] কিছু তাকবীর পেয়েছে এবং কিছু পায়নি। তিনি বলিলেন, যা পায়নি তা পূর্ণ করিতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

জানাজার নামাজ কয় তাকবীরে পড়তে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৬ – জানাযার নামাযে মুসল্লি কি পড়বেন

৫২১ আবু সাঈদ মাকবুরী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবু সাঈদ মাকবুরী [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন যে, তাঁর পিতা জানাযার নামাজ কিভাবে আদায় করিবেন তা আবু হুরায়রা [রাদি.]-এর নিকট প্রশ্ন করলেন। আবু হুরায়রা [রাদি.] বলেছেন, আল্লাহর স্থায়িত্বের কসম, আমি তোমাকে [এটার নিয়ম] শিখিয়ে দেব। আমি মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজন হইতে জানাযার সাথে চলি। জানাযা যখন রাখা হয়, আমি তখন তাকবীর বলি এবং আল্লাহর হামদ ও তাঁর নবীর উপর দরূদ পাঠ করি। তারপর বলিঃ

اَللّٰهُمَّ إِنَّهُ عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ كَانَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُولُكَ وَأَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ اللهُمَّ إِنْ كَانَ مُحْسِنًا فَزِدْ فِي إِحْسَانِهِ وَإِنْ كَانَ مُسِيئًا فَتَجَاوَزْ عَنْ سَيِّئَاتِهِ اللهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ وَلَا تَفْتِنَّا بَعْدَهُ.

Uccharon: আল্লাহুম্মা ইন্নাহু আবদুকা ওয়া ইবনু আবদিকা ওয়া ইবনু আমাতিকা কানা ইয়াসহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আন্তা ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুকা ওয়া রাসুলুকা ওয়া আন্তা আ,লামু বিহি আল্লাহুম্মা ইন কানা মুহসিনান ফাজারফিহি ইহসানিহি ঈয়া ইন কানা মুসাইয়ান ফাতাজা ওয়াজ আন সায়্যিয়াতিহি আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু ওয়া তাফতিন্না বা,দাহু

হে আল্লাহ! এ ব্যক্তি আপনার বান্দা এবং আপনার বান্দা ও বান্দীর পুত্র, সে সাক্ষ্য দিত যে, আপনি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ [সা] আপনার বান্দা ও আপনার রসূল, আপনি এই বান্দা সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। হে আল্লাহ! এই ব্যক্তি যদি প্রকৃত নেক বান্দা হন তবে তাঁর নেকী বৃদ্ধি করুন। আর যদি সে মন্দ লোক হয় তবে তাকে ক্ষমা করে দেন। হে আল্লাহ্! এর পুণ্যের সওয়াব হইতে আমাদেরকে বঞ্চিত করিবেন না এবং তার পর আমাদেরকে ফিতনায় লিপ্ত করিবেন না।

[হাদীসটি মারফু এর হুকুম বহন করে অন্যদিকে আলবানী হাদীসটি দ্বারা দলীল গ্রহণ করিয়াছেন {আহকামুল জানায়েজ পৃঃ ১২৫}] জানাজার নামাজ কয় তাকবীরে পড়তে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫২২ ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি আবু হুরায়রা [রাদি.]-এর পেছনে এমন একটি শিশুর জানাযা আদায় করেছি, যে শিশু কখনও কোন পাপ করেনি। আমি তাহাকে বলিতে শুনিয়াছি,

اَللّٰهُمَّ أَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ

আল্লাহুম্মা আয়িজহু মিন আজাবিল কবর

“হে আল্লাহ্! একে কবর আযাব হইতে বাঁচান”। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] এককভাবে বর্ণনা করেন, পূর্বে এর সমর্থনে হাদীস রয়েছে]

জানাজার নামাজ কয় তাকবীরে পড়তে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫২৩ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] জানাযার সালাতে কোন কিরাআত পড়তেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

জানাজার নামাজ কয় তাকবীরে পড়তে হয় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৭ – ফজরের ও আসরের পর জানাযার নামাজ আদায় করা

৫২৪ মুহাম্মদ ইবনি আবি হারমালা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

যায়নব বিনতে আবি সালমা [রাদি.]-এর যখন ওফাত হয়, তখন তারিক [রাহিমাহুল্লাহ] মদীনার আমীর ছিলেন। তাঁর জানাযা আনা হল ফজরের পর, জানাযা বাকীতে রাখা হল, আর তারিক [রাহিমাহুল্লাহ] খুব ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করিতেন। ইবনি আবি হারমালা [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-কে [তখন] যায়নবের লোকদেরকে বলিতে শুনিয়াছি তোমরা তোমাদের জানাযার নামাজ এখন আদায় করে নাও অথবা রেখে যাও সূর্য ঊর্ধ্বে ওঠা পর্যন্ত। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫২৫ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, আসরের পর ও ফজরের পর জানাযার নামাজ পড়া যেতে পারে, যদি উভয় নামাজ যথাসময়ে পড়া হয়ে থাকে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৮ – মসজিদে জানাযার নামাজ পড়া

৫২৬ আবুন নাযর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

সাদ ইবনি আবি ওয়াক্কাস [রাদি.]-এর যখন মৃত্যু হয়, নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিনী আয়েশা [রাদি.] তাঁর জানাযা মসজিদের ভেতর আয়েশা [রাদি.]-এর সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেন তিনি তাঁর [সাদ ইবনি আবি ওয়াককাসের] জন্য দুআ করিতে পারেন। লোকে তাঁর এ কাজের সমালোচনা করলেন। তখন আয়েশা [রাদি.] বলিলেন, লোক কত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সুহায়ল ইবনি বয়যা [রাদি.]-এর জানাযার নামাজ মসজিদেই আদায় করেছিলেন। [সহীহ, মুসলিম ৯৭৩, ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত সনদের মধ্যে إنقطاع রয়েছে]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৫২৭ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, তিনি উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর জানাযার নামাজ মসজিদের ভেতর আদায় করিয়াছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৯ – জানাযার নামাযের বিবিধ আহকাম

৫২৮ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর কাছে খবর পৌঁছেছে যে, উসমান ইবনি আফ্ফান [রাদি.], আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] এবং আবু হুরায়রা [রাদি.] মদীনায় পুরুষ ও স্ত্রীলোকের জানাযার নামাজ [একত্রে] আদায় করিতেন। তখন তাঁরা পুরুষদেরকে [লাশ] ইমামের নিকট, স্ত্রীলোকদেরকে [লাশ] কিবলার কাছে রাখতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫২৯ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] যখন জানাযার নামাজ আদায় করিতেন, তখন [নামাযান্তে] পার্শ্ববর্তী লোকে শুনে এভাবে উচ্চৈঃস্বরে সালাম ফিরাতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫৩০ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন, ওযূ ছাড়া কোন লোক যেন জানাযার নামাজ না পড়ে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

ইয়াহ্ইয়া [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলিতেন, আমি আহলে ইল্মের মধ্যে কাউকেও জারজ সন্তান ও তার মাতার জানাযার নামাজ পড়াকে মাকরূহ মনে করিতে দেখিনি।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১০ – মুর্দার দাফন সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে

৫৩১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ওফাত পেয়েছেন সোমবার এবং তাহাকে দাফন করা হয়েছে মঙ্গলবার, আর লোকে তাঁর [জানাযার] নামাজ আদায় করিয়াছেন পৃথক পৃথকভাবে; কেউ তাঁদের ঈমামতি করছিলেন না। অতঃপর কিছু লোক বলেন, তাহাকে মিম্বরের নিকট দাফন করা হোক; পরে কেউ বলেন, বকীতে দাফন করা হোক। ইতিমধ্যে আবু বক্‌র সিদ্দীক [রাদি.] উপস্থিত হন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে বলিতে শুনিয়াছি, কখনও কোন নবীকে দাফন করা হয়নি যে জায়গায় তিনি ওফাত পেয়েছেন সে জায়গায় ব্যতীত। অতঃপর সে জায়গায় [অর্থাৎ তাঁর হুজরা শরীফে] তাঁর কবরের স্থান নির্ধারণ করা হয়। যখন তাহাকে গোসল দেয়ার সময় হয় এবং লোকে তাঁর কোর্তা খোলার জন্য ইচ্ছা করেন, তখন তাঁরা আওয়ায শুনতে পেলেন কেউ বলিতেছেন, কোর্তা খুলো না। তারপর কোর্তা খোলা হয়নি। ফলে কোর্তা তাঁর [পবিত্র] দেহেই ছিল। সে অবস্থায়ই গোসল দেয়া হয়েছে।

[ঈমাম তিরমিজি অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন ২/১২৯, এবং আলবানী ঈমাম তিরমিজি কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের শেষে বলেন এই হাদীসের অনেক সনদ শাহেদ রয়েছে {আহকামুল জানায়েজ পৃঃ ১৩৭}] এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫৩২ হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পিতা উরওয়াহ্ ইবনি যুবায়র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পিতা উরওয়াহ্ ইবনি যুবায়র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণনা করেন মদীনায় দুজন লোক ছিলেন, একজন বোগলী কবর তৈয়ার করিতেন, অন্যজন বোগলী করিতেন না। তাঁরা [সাহাবীগণ] বলিলেন, দুজনের মধ্যে যিনি প্রথমে আসবেন তিনিই কাজ শুরু করিবেন। তারপর যিনি বোগলী করিতেন তিনি প্রথমে এলেন। পরে তিনি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর জন্য বোগলী কবর প্রস্তুত করলেন।

[যয়ীফ, ঈমাম ইবনি মাজা আনাস [রাদি.] থেকে বর্ণনা করেন ১৫৫৭, আলবানী হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন {সহীহ ও যয়ীফ সুনানে ইবনি মাজাহ}, ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল] এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৫৩৩ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, নাবী সাঃআঃ-এর পত্নী উম্মে সালমা [রাদি.] বলিতেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর মৃত্যু সংবাদ বিশ্বাস করিনি, যতক্ষণ কোদাল চালনার শব্দ শুনতে পাইনি। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫৩৪ নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিনী আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমি স্বপ্নে দেখলাম, তিনটি চাঁদ আমার হুজরায় পতিত হয়েছে। অতঃপর আবু বক্‌র সিদ্দীক [রাদি.]-এর কাছে আমার স্বপ্ন বর্ণনা করলাম। আয়েশা [রাদি.] বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ওফাত প্রাপ্ত হলেন এবং আমার গৃহে তাহাকে দাফন করা হল, তখন তিনি [আবু বক্‌র সিদ্দীক রা] তাহাকে [আয়েশা রা] বলিলেন, [রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর স্বপ্নের দেখা] চাঁদসমূহের একটি এবং তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁদের মধ্যে উত্তম। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫৩৫ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বর্ণনা করেন সাদ ইবনি আবি ওয়াক্কাস [রাদি.] এবং সাঈদ ইবনি যায়দ ইবনি আমর ইবনি নুফাইল [রাদি.] আকিক নামক স্থানে ওফাত পান। তাদেরকে মদীনায় আনা হয় এবং সেখানে দাফন করা হয়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫৩৬ হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি [যুবায়র রা] বলেছেন, বাকীতে আমাকে দাফন করা হোক. তা আমি পছন্দ করি না, কারণ আমাকে বাকীতে দাফন করা অপেক্ষা অন্যত্র দাফন করা আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। [কারণ সে কবরওয়ালা] অবশ্য দুই ব্যক্তির এক ব্যক্তি বটে, হয়ত সে জালিম, তাই সে ব্যক্তির সাথে আমাকে দাফন করা হোক তা আমি পছন্দ করি না অথবা তিনি সৎ ব্যক্তি, তাই আমার জন্য তাঁর হাড় [কবর] খোলা হোক, তা আমি পছন্দ করি না। [বাকী কবরস্থানে নূতন কবরেরও জায়গা না থাকায় পুরাতন কবর খুলে তাতে কবর দেয়া হত।] [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১১ – জানাযার জন্য দণ্ডায়মান হওয়া ও কবরের উপর বসা

৫৩৭ আলী ইবনি আবি তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] জানাযার সম্মানার্থে দাঁড়াতেন, পরবর্তী সময়ে তিনি দাঁড়াতেন না বরং বসে থাকতেন।

[সহীহ, মুসলিম ৯৬২, তবে মুসলিম শরীফে رأينا رسول الله صلى الله عليه وسلم قامفقعدنا শব্দে এসেছে] এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৫৩৮ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আলী ইবনি আবি তালিব [রাদি.] কবরকে তাকিয়া বানাতেন আর উহার উপর শুইতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমরা যা জানি তা হল, মলমূত্র ত্যাগের জন্য কবরের উপর বসতে নিষেধ করা হয়েছে।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫৩৯ আবু বক্‌র ইবনি উসমান ইবনি সাহল ইবনি হুনায়ফ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আবু উমামা ইবনি সাহল ইবনি হুনায়ফকে বলিতে শুনেছেন, আমরা জানাযায় শরীক হতাম, তবে লোকদের মধ্যে শেষ ব্যক্তিও বসতেন না, যতক্ষণ না তাকে সকলে অনুমতি দিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১২ – মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদতে নিষেধ করা

৫৪০ জাবির ইবনি আতিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আবদুল্লাহ ইবনি সাবিত [রাদি.]-কে রোগশয্যায় দেখিতে এলেন। তাহাকে রোগে কাহিল অবস্থায় পেলেন। তিনি তাহাকে ডাকলেন, কিন্তু তিনি কোন উত্তর দিলেন না। তখন রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ইন্নালিল্লাহি পাঠ করলেন এবং বলিলেন, হে আবু রাবী! আমরা তোমার ব্যাপারে পরাস্ত হলাম। স্ত্রীলোকেরা তখন চিৎকার করে উঠল এবং কাঁদতে লাগল। জাবির ইবনি আতিক [রাদি.] তাদেরকে বারণ করিতে লাগলেন। তখন রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তাদেরকে ছাড়, যখন সময় আসবে তখন কোন ক্রন্দনকারীণী ক্রন্দন করিবে না। তাঁরা বলিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সময় আসার অর্থ কি? রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, যখন মৃত্যু হইবে। এটা শুনে তাঁর কন্যা মৃত পিতাকে বলিলেন, আল্লাহ্‌র কসম, আমি আশা করেছিলাম আপনি শহীদ হইবেন। কারণ আপনি [জিহাদের] আসবাব প্রস্তুত করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তাঁর নিয়ত অনুযায়ী আল্লাহ্ তাআলা তাঁর জন্য সওয়াব নির্ধারণ করিয়াছেন। তোমরা শাহাদত কাকে গণ্য করে থাক? তাঁরা বলিলেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়াকে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, আল্লাহর পথে নিহত হওয়া ছাড়াও শহীদ সাত প্রকারের: [ক] তাউনে [মহামারীতে] মৃত ব্যক্তি শহীদ, [খ] যে ডুবে মারা যায় সে শহীদ, [গ] নিউমোনিয়া রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ, [ঘ] পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, [ঙ] যে পুড়ে মারা যায় সে শহীদ, [চ] কোন কিছু চাপা পড়ে যে মারা গেছে সে শহীদ, [ছ] আন্তঃসত্ত্বায় মৃত মহিলা শহীদ।

[সহীহ, আবু দাঊদ ৩১১১, নাসাঈ ১৮৪৬, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন {আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ১৩৯৮}] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৪১ আম্রা বিন্ত আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেন, তাঁর নিকট উল্লেখ করা হয় যে, আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, জীবিত ব্যক্তির ক্রন্দনের কারণে মৃত ব্যক্তিকে আযাব দেয়া হয়। তা শুনে আয়েশা [রাদি.] বলিলেন, আবু আবদূর রহমানকে আল্লাহ্ ক্ষমা করুন। এটি সত্য যে, তিনি মিথ্যা বলেন নি। অবশ্য তিনি ভুলে গিয়েছেন অথবা ভুল করিয়াছেন।

ঘটনা এই যে, এক ইহুদী মহিলার [কবরের] পাশ দিয়ে একদা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যাচ্ছিলেন, তার পরিবারের লোকেরা তার জন্য কাঁদছিল, তখন রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তারা এর জন্য কাঁদছে অথচ তাকে আযাব দেয়া হচ্ছে।

[বুখারি ১২৮৯, মুসলিম ৯৩১] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদঃ ১৩ – মুসিবতে ধৈর্যধারণ

৫৪২ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, মুসলমানদের কারো তিনটি সন্তানের মৃত্যু হলে তাকে [জাহান্নামের] আগুন স্পর্শ করিবে না। তবে কসম হালাল হওয়া পরিমাণ সময় অর্থাৎ অতি অল্প সময় অথবা জাহান্নামের উপর দিয়ে [পুলসিরাত] অতিক্রম করাকালীন।

[বুখারি ১২৫১, মুসলিম ২৬৩২] ই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৪৩ আবু নাযর {১} সালামী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, মুসলমানদের কারো যদি তিনটি সন্তান মারা যায়, অতঃপর সে যদি তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে, তবে সন্তান তার জন্য [জাহান্নামের] আগুন হইতে [রক্ষার] ঢালস্বরূপ হইবে। তারপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট জনৈকা মহিলা বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! দুটি সন্তানের মৃত্যু হলেও কি ? তিনি বলিলেন, দুটি সন্তানের [মৃত্যু হলে]-ও।

[বুখারি ১০২, মুসলিম ২৬৩৩] * অধিকাংশ উলামার মতে আবুন নাযর-এর স্থলে ইবনিন নাযর হইবে। [আউজাযুল মাসালিক]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৪৪ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, সর্বদা মুমিনের উপর মুসিবত পৌঁছে থাকে, তার সন্তান ও আত্মীয়দের [মৃত্যু ও রোগের] কারণে। এমন কি এভাবে সে আল্লাহর সাথে মিলিত হয় নিষ্পাপ অবস্থায়।

[সহীহ, তিরমিজি ২৩৯৯, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন] {সহীহ ও যয়ীফ সুনানে তিরমিজি}] এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদঃ ১৪ – মুসিবতের ধৈর্যধারণ সম্পর্কে বিবিধ বর্ণনা

৫৪৫ আবদুর রহমান ইবনি কাসিম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, মুসলমানগণ তাদের মুসিবতে সান্ত্বনা লাভ করিবে আমার মুসিবত দ্বারা অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর মুসিবত দেখে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫৪৬ নাবী সাঃআঃ-এর পত্নী উম্মে সালমা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, যার [উপর] কোন মুসিবত পৌঁছে, অতঃপর আল্লাহ্ তাকে যেরূপ নির্দেশ দিয়েছেন সেরূপ বলে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাযিউন

اللهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي وَأَعْقِبْنِي خَيْرًا مِنْهَا

আল্লা-হুম্মা আজুরনী ফী মুসীবাতী ওয়া কিবনি খাইরাম মিনহা

হে আল্লাহ্! আমার মুসিবতে [উহার বিনিময়ে] আমাকে সওয়াব দান করুন এবং উহার পশ্চাতে আমাকে উহা অপেক্ষা উত্তম বস্তু দান করুন।

তবে আল্লাহ্ তার সাথে সেরূপ করিবেন। উম্মে সালমা [রাদি.] বলেন, আবু সালমা [রাদি.]-এর ওফাতের পর আমি উক্ত দুআ পাঠ করলাম, আর বললাম, আবু সালমা [রাদি.] হইতে ভাল কে হইবেন? ফলে তার পরিবর্তে আল্লাহ্ আমাকে তাঁর রসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে প্রদান করলেন, অতঃপর তিনি আমাকে বিবাহ করেন।

[সহীহ, মুসলিম ৯১৮] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৪৭ কাসিম ইবনি মুহাম্মদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমার এক স্ত্রীর ইন্তিকাল হয়। মুহাম্মদ ইবনি কাব কুরাজী [রাহিমাহুল্লাহ] আমাকে তাঁর [মৃত্যু] উপলক্ষে সান্ত্বনা দিতে এলেন। তিনি বলিলেন, বনি ইসরাঈলের এক ব্যক্তি ছিলেন আলিম, ইবাদতগুযার, মুজতাহিদ, শরীয়তের মাসায়েলে পারদর্শী। তাঁর এক স্ত্রী ছিল, তাঁদের দুজনের মধ্যে গভীর ভালবাসা ছিল। [ঘটনাক্রমে] সে স্ত্রীর মৃত্যু হয়। এতে তিনি খুব মর্মাহত ও ব্যথিত হলেন। এমন কি তিনি নিজেকে একটি গৃহে অন্তরীণ করে ফেললেন এবং লোকের সংশ্রব বর্জন করলেন, অতঃপর কেউ তাঁর কাছে যেত না। জনৈকা মহিলা এই বৃত্তান্ত শুনে তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন।

তিনি বলিলেন, তাঁর কাছে আমার একটি আবশ্যক রয়েছে, যে বিষয়ে আমি তাহাকে জিজ্ঞেস করব। তার সাথে সামনাসামনি না হলে আমার আবশ্যক পূর্ণ হইবে না। [তাঁর গৃহদ্বার ত্যাগ করে] সব লোক চলে গেল, কিন্তু উক্ত মহিলা তাঁর দ্বারে রয়ে গেলেন এবং বলিলেন, তাঁর নিকট আমার প্রয়োজন রয়েছে। একজন লোক সে ব্যক্তির নিকট বলল, এখানে একজন মহিলা আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করিতে ইচ্ছুক। তিনি বলিতেছেন আমি তাঁর সাক্ষাতপ্রার্থী মাত্র। সকল লোক চলে গিয়েছে কিন্তু তিনি দরজা ছাড়েন না। তিনি বলিলেন, তোমরা তাকে আসতে অনুমতি দাও। [অনুমতি পেয়ে সেই মহিলা] প্রবেশ করলেন এবং বলিলেন, আমি আপনার নিকট একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করিতে এসেছি। তিনি বলিলেন, সে বিষয়টি কি ? [উক্ত মহিলা] বলিলেন, আমার প্রতিবেশিনীর নিকট হইতে আমি একটি গহনা ধার নিলাম। অতঃপর আমি উহা পরিধান করতাম এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উহা লোককে ধারস্বরূপ দিতাম। অতঃপর তারা উহার [ফেরত দেওয়ার] জন্য আমার নিকট লোক পাঠালেন। আমি তা ফেরত দেব কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম। মহিলা বলিলেন, সে গহনাটি যে বেশ কিছুদিন আমার কাছে ছিল। তিনি বলিলেন, এজন্য আরও বেশি উচিত যে, তুমি উহা তাদের নিকট ফেরত দাও, তাঁরা এতকাল পর্যন্ত তোমাকে ধার দিয়েছেন। তখন উক্ত মহিলা বলিলেন, ওহে! আপনার প্রতি আল্লাহ্ দয়া করুন, আপনি আফসোস করিতেছেন এমন বস্তুর উপর যা আল্লাহ্ আপনাকে ধার দিয়েছেন, অতঃপর তিনি উহা গ্রহণ করিয়াছেন আপনার নিকট হইতে। অথচ তিনি উহার হকদার বেশি আপনি অপেক্ষা। তবে ভেবে দেখুন আপনি কোন্ হালতে আছেন। আল্লাহ্ এই মহিলার উপদেশ দ্বারা তাহাকে উপকৃত করলেন। [ইসরাঈলী বর্ণনা এবং ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। আর উল্লেখিত ঘটনা শরীয়তে মুহাম্মাদী এর সাথে। বিপরীত মুখিও নয়।]

এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ১৫ – কাফন চুরির সাজা

৫৪৮ আবু রিজাল মুহাম্মদ ইবনি আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর মাতা আমরা বিনতে আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তাহাকে বলিতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কাফন-চোর পুরুষ এবং নারীকে লানত করিয়াছেন।

[সহীহ, বাইহাকী ৮/২৭০. আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন {সিলসিলাতুস সহীহা ২১৪৭}] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৪৯ নাবী সাঃআঃ-এর পত্নী আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

মৃতাবস্থায় মুসলমানদের হাড় ভেঙে দেয়া জীবিতাবস্থায় হাড় ভেঙে দেয়ার মত। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, অর্থাৎ পাপের দিক দিয়ে সমান।

[সহীহ, মারফু, আবু দাঊদ ৩২০৭, ইবনি মাজাহ ১৬১৬, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন {ইরওয়া ৭৬৩}] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদঃ ১৬ – জানাযা সংক্রান্ত বিবিধ আহকাম

৫৫০ আব্বাস ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি যুবায়র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী সাঃআঃ-এর পত্নী আয়েশা [রাদি.] তাহাকে খবর দিয়াছেন যে, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর ওফাতের পূর্বে যখন আয়েশা [রাদি.]-এর বুকে মাথা রেখে শায়িত ছিলেন তখন আয়েশা [রাদি.] তাঁর দিকে ঝুঁকে রয়েছিলেন। [বুখারি ৪৪৪০, মুসলিম ২৪৪৪]

তখন তিনি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে বলিতে শুনেছেন

اللهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَأَلْحِقْنِي بِالرَّفِيقِ الْأَعْلَى

আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়া আলহিক্বনী বির রফীক্বিল আ‘লা

নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিনী আয়েশা [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, এখতিয়ার দেয়ার পূর্বে কোন নাবীর ওফাত হয় না। তিনি [আয়েশা রা.] বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে বলিতে শুনিয়াছি اَللّٰهُمَّ الرَّفِيْقَ الْأَعْلَى তখন আমি জানতে পারলাম, তিনি পরলোকগমন করিতেছেন। [বুখারি ৪৪৩৫, মুসলিম ২৪৪৪, আর ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত সনদটি মুনকাতে]

{১} হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করুন এবং দয়া করুন, আর আমাকে === -এর সঙ্গে মিলিয়ে দিন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৫১ আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন সকাল-সন্ধা তার নিকট তার অবস্থানের জায়গা পেশ করা হয়। যদি সে বেহেশতী হয় তবে বেহেশতীদের [ঠিকানার] মধ্যে তাঁর ঠিকানা দেখান হইবে। আর যদি দোযখী হয় তবে দোযখীদের [ঠিকানার] মধ্যে তার ঠিকানা দেখান হইবে। তাকে বলা হইবে ইহাই তোমার ঠিকানা, কিয়ামত দিবসে উক্ত ঠিকানায় তোমাকে পৌঁছান পর্যন্ত।

[বুখারি ১৩৭৯, মুসলিম ২৭৬৬]এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৫২ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, বনি আদমের মেরুদণ্ডের নিম্নাংশের ক্ষুদ্র হাড়টি ব্যতীত সবকিছুই মাটি খেয়ে ফেলবে, উহা হইতেই সৃষ্টি করা হয়েছে এবং উহা হইতেই পুনরায় সৃষ্টি করা হইবে।

[সহীহ, মুসলিম ২৯৫৫] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৫৩ কাব ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, মুমিনের আত্মা পাখির মত বেহেশতের বৃক্ষে লটকানো থাকে, পুনরুত্থান দিবসে তাঁর দেহে ফিরে পাঠান পর্যন্ত।

[সহীহ, নাসাঈ ২০৭৩, তিরমিজি ১৬১৪, ইবনি মাজাহ ১৪৪৯, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন {সহীহ আল জামে ২৩৭৩}] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৫৪ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করিয়াছেন আমার বান্দা আমার সাক্ষাতকে ভালবাসিলে আমিও তার সাক্ষাতকে ভালবাসি। আর সে আমার সাক্ষাতকে অপছন্দ করলে, আমিও তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করি।

[সহীহ, বুখারি ৭৫০৪] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৫৫ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, এক ব্যক্তি কোন সময় নেকী করেনি, তার পরিজনকে বলল, সে মারা গেলে তাকে যেন জ্বালিয়ে ফেলে, অতঃপর উহার অর্ধেক শুকনায় ছড়িয়ে দেয়, আর অর্ধেক সাগরে ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহর কসম, যদি আল্লাহ্ তার জন্য শাস্তি নির্ধারণ করেন তবে তাকে এরূপ শাস্তি দিবেন জগৎবাসীদের কাউকেও সেরূপ শাস্তি তিনি দিবেন না। সে ব্যক্তির যখন মৃত্যু হল, তার পরিজন তার নির্দেশানুযায়ী কাজ করিল।

অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা শুষ্ক ভূমিকে হুকুম করলেন, সে ব্যক্তির অংশসমূহকে যা তার মধ্যে ছিল একত্র করে দিতে, আর সাগরকে হুকুম দিলেন, যা তোমার মধ্যে ছিল একত্র করে দিতে। ভূমি সে ব্যক্তির অংশকে একত্র করে দিল, সাগরও উহাকে একত্র করে দিল। তারপর আল্লাহ্ বলিলেন, তুমি এই কাজ কেন করলে ? সে বলল, আপনার ভয়ে, হে প্রভু! আর আপনি অধিক জ্ঞাত। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, অতঃপর তাকে ক্ষমা করে দেয়া হল।

[সহীহ, বুখারি ৭৫০৬, মুসলিম ২৪৫৬] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৫৬ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, [বনি আদমের] প্রতিটি নবাগত সন্তান স্বভাব-এর فِطْرَةِ উপর জন্মায়। অতঃপর তার মাতাপিতা তাকে ইহুদী বানায়, অথবা খৃষ্টান বানায়, যেমন উট জন্ম নেয় সুস্থ-পূর্ণ দেহের উট হইতে। তোমরা কি উহাকে কান কাটা অবস্থায় দেখিতে পাও ? তারা বলিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যে শিশু শৈশবে মারা যায় সে শিশু সম্পর্কে আপনার মতামত কি ? তিনি বলিলেন, তারা প্রাপ্তবয়স্ক হলে কিরূপ কাজ করত তা আল্লাহ্ অধিক অবগত।

[বুখারি ১৩৫৮, মুসলিম ২৬৫৮] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৫৭ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, কিয়ামত কায়েম হইবে না যতক্ষণ না এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির কবরের পাশ দিয়ে চলবে এবং বলবে আহা যদি আমি এই [কবরবাসী] লোকের জায়গায় হতাম।

[বুখারি ৭১১৫, মুসলিম ১৫৭] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৫৮ আবু কাতাদা ইবনি রিবয়ী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি বলিলেন,

مُسْتَرِيحٌ وَمُسْتَرَاحٌ مِنْهُ

মুসতারিহু ওয়া মুসতারাহু মিনহু

অর্থাৎ সে নিজেও শান্তিপ্রাপ্ত এবং অন্য লোকও তা হইতে শান্তি লাভ করিয়াছেন। তাঁরা [উপস্থিত সাহাবীগণ] বলিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! মুসতারীহ্ এবং মুসতারাহ্ মিনহ্-এর তাৎপর্য কি ? তিনি বলিলেন, মুমিন বান্দা [মৃত্যুর মাধ্যমে] দুনিয়ার দুঃখ-ক্লেশ হইতে [মুক্তি লাভ করে] আল্লাহর রহমতের দিকে গমন করে এবং শান্তি লাভ করে। আর পাপী বান্দা হইতে আল্লাহর বান্দাগণ শহর, নগর, বৃক্ষরাজি ও জীব-জন্তু সবকিছুই শান্তি লাভ করে অর্থাৎ তার কষ্ট হইতে মুক্তি পায়। [বুখারি ৬৫১২, ৬৫১৩, মুসলিম ৯৫০]

আবুন নাযর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিত; যখন উসমান ইবনি মযউন [রাদি.] ইন্তিকাল করলেন এবং তাঁর জানাযা নিয়ে যাওয়া হল, তখন রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তুমি [দুনিয়া হইতে] চলে গেলে [এমন অবস্থায় যে] দুনিয়ার সাথে কোন সম্পর্ক গড়লে না। [ইবনি সাদ বর্ণনা করেন {তাবাকাত ৩/৩৯৭}]

ই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৫৫৯ আলকামা ইবনি আবি আলকামা [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁর মাতা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, আমি নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিনী আয়েশা [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছে, এক রাত্রে রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] উঠলেন এবং কাপড় পরিধান করলেন। অতঃপর প্রস্থান করলেন। আয়েশা [রাদি.] বলেন, আমি আমার দাসী বরীরাহ [রাদি.]-কে তার অনুসরণ করিতে নির্দেশ দিলাম। সে অনুসরণ করিল। [যেতে যেতে] তিনি [হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বাকী পর্যন্ত পৌঁছালেন এবং বাকীতে দাঁড়ালেন, যতক্ষণ আল্লাহ্ ইচ্ছা করলেন। অতঃপর প্রত্যাবর্তন করলেন। বরীরাহ তাঁর আগেই চলে আসল এবং আমাকে ঘটনার খবর বলল, ভোর হওয়া পর্যন্ত আমি আর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর কাছে কিছুই উল্লেখ করলাম না। ফজরে এই ঘটনা আমি তাঁর কাছে ব্যক্ত করলাম। তখন তিনি বলিলেন, বাকীর বাসিন্দাদের নিকট আমি প্রেরিত হয়েছিলাম তাঁদের জন্য দুআ করার উদ্দেশ্যে।

[সহীহ, নাসাঈ ২০৩৮, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন {সহীহ আল-জামে ২৮২৮}] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৬০ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরায়রা [রাদি.] বলেছেন, তোমরা জানাযা [নেওয়ার ব্যাপারে] খুব তাড়াতাড়ি করো। কারণ [সে জানাযা] হয়তো ভাল লোক যাকে তারা আল্লাহর কাছে পেশ করিতেছে অথবা মন্দ লোক যাকে তোমরা নিজেদের ঘাড় হইতে খালাশ করিতেছ।

[বুখারি ১৩১৫, মুসলিম ৯৪৪] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

Leave a Reply