সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ বা সালাতুল কুসূফ পড়ার নিয়ম
সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ বা সালাতুল কুসূফ পড়ার নিয়ম, এই অধ্যায়ে হাদীস =৪ টি ( ৪৩১-৪৩৪ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ১২ঃ সালাতুল-কুসূফ
পরিচ্ছেদ ০১. সালাতুল কুসূফ-এর [সূর্যগ্রহণের নামাজ] বিবরণ
পরিচ্ছেদ ০২. সালাতুল-কুসূফ-এর বিশেষ বর্ণনা
পরিচ্ছেদ ০১. সালাতুল কুসূফ-এর [সূর্যগ্রহণের নামাজ] বিবরণ
৪৩০ আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর সময়ে একবার সূর্যগ্রহণ হল। তখন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ লোকদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন, তিনি নামাযে দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন। অতঃপর রুকূ করলেন অনেক দীর্ঘ রুকূ। তারপর দাঁড়ালেন দীর্ঘক্ষণ; কিন্তু প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষা কম, তারপর রুকূ করলেন; রুকূকে দীর্ঘ করলেন; তবে এটা ছিল পূর্বের রুকূ অপেক্ষা কম। তারপর পবিত্র শির উঠালেন এবং সিজদা করলেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাকআতেও প্রথম রাকআতের মত কার্যাদি সম্পন্ন করলেন; তারপর নামাজ সমাপ্ত করলেন। অতক্ষণে সূর্য দীপ্যমান ও উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান করলেন। তিনি [খুতবার প্রথমে] আল্লাহর প্রশংসা ও হামদ বর্ণনা করলেন এবং বলিলেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কোন ব্যক্তির মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে উহাদের গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা উহা দেখিতে পাও, তখন আল্লাহর কাছে দুআ করিবে এবং আল্লাহর তাকবীর উচ্চারণ করিবে আর সদকা প্রদান করিবে। অতঃপর ফরমালেন হে উম্মতে মুহাম্মদী! আল্লাহর কসম, তিনি অপেক্ষা অধিক অভিমানী বা ঘৃণাকারী আর কেউ নেই। মুহাম্মদী! আল্লাহর কসম, যদি তোমরা অবগত হইতে, যা আমি অবগত আছি, তা হলে নিশ্চয় তোমরা কম হাসতে ও অধিক কাঁদতে।
[বুখারি ১০৪৪, মুসলিম ৯০১] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৩১ আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
একবার সূর্যগ্রহণ হল, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ নামাজ আদায় করলেন এবং তিনি তাঁর নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন। রাবী বলেন, সূরা বাকারা পাঠ করার কাছাকাছি সময় [দাঁড়ালেন]। তিনি বলেন, অতঃপর লম্বা রুকূ করলেন। তারপর মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন কিন্তু প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষা কম। তারপর লম্বা রুকূ করলেন, প্রথম রুকূ অপেক্ষা কম। অতঃপর তিনি সিজদা করলেন। তারপর দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন। কিন্তু পূর্বের দাঁড়ানো অপেক্ষা কম। তারপর রুকূ করলেন, দীর্ঘ রুকূ কিন্তু পূর্বের রুকূ অপেক্ষা কম। আবার মাথা তুললেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন, কিন্তু পূর্বের দাঁড়ানো অপেক্ষা কম, তারপর দীর্ঘ রুকূ করলেন, তবে পূর্বের রুকূ অপেক্ষা কম, তারপর সিজদা করলেন। এর পর নামাজ সমাপ্ত করলেন। আর ততক্ষণে সূর্য দীপ্যমান ও উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছে। তারপর তিনি বলিলেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন, কোন লোকের মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে এর গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা উহা দেখিতে পাও, তখন সকলে আল্লাহকে স্মরণ করো। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! এই জায়গায় আপনাকে আমরা কোন কিছু গ্রহণ করিতে দেখিতে পেলাম, আবার আপনাকে পেছনে সরিতে দেখলাম [এর তাৎপর্য বুঝিয়ে দিন]। উত্তরে তিনি বলিলেন, আমি বেহেশত দেখিতে পেলাম এবং সেখান হইতে একটি আঙ্গুরের ছড়া গ্রহণ করিতে চেয়েছিলাম, আমি উহা গ্রহণ করলে পৃথিবী কায়েম থাকা পর্যন্ত তোমরা উহা হইতে আহার করিতে পারতে। আর আমি দোযখকেও দেখিতে পেলাম, যার মত ভয়ঙ্কর দৃশ্য আমি কখনও দেখিনি। আর আমি দেখিতে পেলাম যে, উহার অধিকাংশ অধিবাসীই নারী। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন এর কারণ কি? হে আল্লাহর রসূল! াতিনি বলিলেন, তাদের কুফরীর কারণে। প্রশ্ন করা হল তারা কি আল্লাহ তাআলার সাথে কুফরী করে থাকে? তিনি বলিলেন, [না, বরং] স্বামীর অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে বসে। তুমি যদি তাদের কারো সাথে যুগ যুগ ধরে ইহসান করিতে থাক, অতঃপর সে যদি কোন একদিন তোমার নিকট হইতে তার অপছন্দনীয় কিছু দেখে, তবে বলবে, আমি কোন মঙ্গল তোমার কাছ থেকে লাভ করিনি।
[বুখারি ১০৫২, মুসলিম ৯০৭] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৩২ আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
একজন ইহুদী রমণী তাঁর কাছে ভিক্ষা করিতে এলে এবং তাহাকে أَعَاذَكِ اللهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ [আল্লাহ আপনাকে কবরের আযাব হইতে রক্ষা করুন] বলে দুআ করিল। তারপর আয়েশা [রাদি.] রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে প্রশ্ন করলেন কবরে লোকদেরকে আযাব দেওয়া হইবে কি? [উত্তরে] রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, আমি উহা হইতে আল্লাহর শরণ নিচ্ছি। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ একদিন সওয়ারীর পৃষ্ঠে আরোহণ করলেন। তারপর সূর্যগ্রহণ লেগেছে; তিনি চাশতের সময় প্রত্যাবর্তন করলেন এবং উম্মাহাতুল মুমিনীনের হুজরাসমূহের পেছন দিকে গাঁড়ালেন, তারপর তিনি নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন, লোকজনও তাঁর পেছনে দাড়িয়ে গেল। তারপর তিনি নামাযে দীর্ঘ সময় দাঁড়ালেন, অতঃপর রুকূ করলেন, দীর্ঘ রুকূ, তারপর মাথা তুললেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন, কিন্তু ইহা ছিল প্রথমবার দাঁড়ানো হইতে কম দীর্ঘ। অতঃপর দীর্ঘ রুকূ করলেন অনেক দীর্ঘ, কিন্তু প্রথম রুকূ অপেক্ষা কম। তারপর রুকূ হইতে মাথা তুললেন এবং সিজদা করলেন, তারপর দীর্ঘসময় দাঁড়ালেন; কিন্তু ইহা ছিল পূর্বের দাঁড়ানো অপেক্ষা কম দীর্ঘ। অতঃপর দীর্ঘ রুকূ করলেন, কিন্তু সাবেক রুকূ অপেক্ষা কম। তারপর মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন, কিন্তু প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষা কম। তারপর লম্বা রুকূ করলেন, আর এটা ছিল পূর্বের রুকূ অপেক্ষা কম। তারপর মাথা তুললেন এবং সিজদা করলেন, তারপর নামাজ সমাপ্ত করলেন। তারপর যা ইচ্ছা নসীহত করলেন। অতঃপর সকলকে কবর আযাব হইতে আল্লাহর শরণ নেবার নির্দেশ দিলেন।
[বুখারি ১০৫০, মুসলিম ৯০৩] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ ০২. সালাতুল-কুসূফ-এর বিশেষ বর্ণনা
৪৩৩ আসমা বিনত আবু বাকর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আমি নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিণী আয়েশা [রাদি.]-এর কাছে গেলাম, তখন সূর্যগ্রহণ লেগেছে এবং লোকজন দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। আয়েশা [রাদি.]-ও তখন নামাযে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন আমি প্রশ্ন করলাম লোকের কি হল? [উত্তরে] তিনি আসমানের দিকে ইশারা করলেন এবং سُبْحَانَ اللهِ বলিলেন। আমি বললাম এটা কি একটি নিদর্শন? তিনি শির দ্বারা ইঙ্গিতে বলিলেন, হ্যাঁ। আসমা বলেন, অতঃপর আমি দাঁড়ালাম এমন অবস্থায় যে, সংজ্ঞাহীনতা আমাকে আবৃত করে ফেলেছে এবং আমি মাথায় পানি ঢালতে শুরু করলাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ আল্লাহর সানা ও হামদ আদায় করলেন। তারপর বলিলেন, এমন কোন বস্তু নাই যা আমি এই মুহূর্তে এই স্থানে দেখিনি। এমন কি জান্নাত ও জাহান্নামও এখন দেখেছি। ওহী মারফত আমাকে জানানো হয়েছে তোমরা কবরে পরীক্ষার সম্মুখীন হইবে দাজ্জালের ফেতনার সদৃশ কিংবা উহার ফেতনার কাছাকাছি। [রাবীর এই বিষয়ে সন্দেহ হয়েছে] আসমা বলেন, তিনি কোনটি বলেছেন তা আমার স্মরণ নাই। তোমাদের একজনের কাছে ফেরেশতা আসবেন এবং তাকে বলা হইবে এই ব্যক্তি {অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ}-এর ব্যাপারে তোমার কি জানা আছে? অতঃপর মুমিন অথবা মুকিন [ইয়াকীনওয়ালা] {আসমা [রাদি.] বলেন} কোনটি বলেছেন সদৃশ বলেছেন, না কাছাকাছি বলেছেন তা আমার স্মরণ নাই ফেরেশতার [প্রশ্নের উত্তরে] বলবেন ইনি মুহাম্মদ সাঃআঃ। তিনি আমাদের কাছে হিদায়েত ও নিদর্শনসমূহ নিয়ে আগমন করেন, তখন আমরা তাঁর হিদায়েত ও নিদর্শনসমূহকে মেনে নিয়েছি এবং তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর পায়রবী করেছি। তখন তাহাকে বলা হইবে তুমি সৎলোক, তুমি ভালভাবে ঘুমাও। আমাদের জানা ছিল যে, তুমি ঈমানদার। আর মুনাফিক অথবা মুরতাব [সন্দেহ পোষণকারী] ব্যক্তি। আসমা [রাদি.] বলেন, কোনটি বলেছেন তা আমার স্মরণ নাই। সে বলবে আমি কিছু জানি না, লোকজনকে যা বলিতে শুনিয়াছি তাই বলেছি।
[বুখারি ১৮৪, মুসলিম ৯০৫]সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply