সূরা মুনাফিকুন তাফসীর । তাফসীর উল কুরান

সূরা মুনাফিকুন তাফসীর । তাফসীর উল কুরান

সূরা মুনাফিকুন তাফসীর । তাফসীর উল কুরান >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা মুনাফিক্বুন আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-৬৪ঃ সূরা মুনাফিকুন তাফসীর

৩৩১২. যাইদ ইবনি আরক্বাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার চাচার সঙ্গে ছিলাম। আবদুল্লাহ ইবনি উবাই ইবনি সালূলকে আমি তার সঙ্গীদের উদ্দেশে বলিতে শুনলাম, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গীদের জন্য তোমরা আর অর্থ খরচ করিবে না, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত না [তার হইতে] আলাদা হয়ে যায়। আমরা মাদীনায় ফিরে গেলে তখন অবশ্যই সেখানে প্রবলরা হীনদেরকে বহিষ্কার করিবে। এ কথা আমি আমার চাচাকে জানালে তা তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে জানান। আমাকে নাবী [সাঃআঃ] ডাকেন এবং তাহাঁর নিকট আমি ঘটনাটি ব্যক্ত করি। অতঃপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আবদুল্লাহ ইবনি উবাই ও তার সঙ্গীদেরকে ডেকে পাঠান। শপথ করে তারা বলে যে, তারা [এ কথা] বলেনি। সে সময় রাসূলু্ল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে মিথ্যাবাদী ও তাকে সত্যবাদী ধারণা করিলেন। এতে আমার এত কষ্ট লাগল যে, আগে কখনও এ রকম কষ্ট হয়নি। আমি ভারাক্রান্ত মনে ঘরে বসে রইলাম। আমার চাচা বলিলেন, তুমি এমন ব্যাপারে কেন জড়িত হইতে গেলে যার কারণে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট তুমি মিথ্যাবাদী হলে ও তাহাঁর অসন্তুষ্টির কারণ হলে? এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা যখন “মুনাফিক্বরা যখন তোমার নিকট আসে” [অর্থাৎ সূরা আল-মুনাফিকূন] অবতীর্ণ করেন। তখন আমাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ডেকে পাঠান এবং তিনি উক্ত সূরা তিলাওয়াত করেন, তারপর বলেনঃ আল্লাহ তাআলা তোমার সত্যবাদিতার সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছেন।

সহীহঃ বোখারি [হাঃ ৪৯০০, ৪৯০৪], মুসলিম [হাঃ৮/১১৯]। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা মুনাফিকুন তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৩১৩. যাইদ ইবনি আরক্বাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে যুদ্ধে গেলাম। কিছু সংখ্যক বেদুঈনও আমাদের সঙ্গে ছিল। আমরা পানির উৎসের দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমাদের পূর্বেই বেদুঈনরা পানির উৎসে গিয়ে পৌঁছায়। এক বেদুঈন তার সঙ্গীদের পূর্বে পৌঁছে। সে হাউয [চৌবাচ্চা] সম্পূর্ণ করে তার চতুর্দিকে পাথর রেখে দিত এবং তার উপর চামড়া বিছিয়ে দিয়ে তা ঢেকে দিত, যাতে তার সাথী এসে যায় [এবং অন্যরা পানি নিতে না পারে]। উক্ত বেদুঈনের কাছে এসে এক আনসারী লোক তার উটকে পানি পান করানোর জন্য এর লাগাম [নাসারন্দ্রের দড়ি] হালকা করে ছেড়ে দিল, কিন্তু বেদুঈন তার উটকে পানি পান করিতে বাধা দেয়। এতে আনসারী ব্যক্তি [ক্রুদ্ধ হয়ে] পানির উৎসগুলো সরিয়ে ফেলে। সে সময় একটি কাষ্ঠ খণ্ড তুলে নিয়ে বেদুঈন আনসারীর মাথায় জোড়ে আঘাত করে এবং এর ফলে তার মাথা ফেটে যায়। উক্ত আনসারী মুনাফিক্ব সরদার আবদুল্লাহ ইবনি উবাইর নিকট গিয়ে তাকে ঘটনা সম্পর্কে জানায়। আনসারী তার দলেরই লোক ছিল। আবদুল্লাহ ইবনি উবাই ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, যে বেদুঈনরা আল্লাহ তাআলার রাসূলের সঙ্গে রয়েছে তাহাদেরকে সহায়তাদান বন্ধ করে দাও। তবেই তাহাঁর চারপাশ হইতে তারা আলাদা হয়ে যাবে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আহার করার সময় তাহাঁর নিকট বেদুঈনরা হাযির হত [এবং তাহাঁর সঙ্গে আহার করত]। তাই আবদুল্লাহ বলল, যে সময় বেদুঈনরা মুহাম্মাদের নিকট হইতে অন্যত্র চলে যাবে তাহাঁর নিকট তখন খাবার উপস্থিত করিবে; যাতে তিনি ও তাহাঁর নিকট উপস্থিত [অন্যরা] তা আহার করেন। তারপর আবদুল্লাহ তার সাথীদেরকে আরো বলল, আমরা যদি মাদীনায় ফিরে যেতে পারি তবে সম্মানিতরা তোমাদের মাঝের হীনদেরকে তাড়িয়ে দিবে। যাইদ ইবনি আরক্বাম [রাদি.] বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পিছনে একই সওয়ারীতে ছিলাম। আবদুল্লাহর কথা আমি শুনে ফেললাম এবং আমার চাচাকে জানালাম। তিনি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে গিয়ে তা অবহিত করিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে [আবদুল্লাহ ইবনি উবাই-কে] ডেকে পাঠান। সে শপথ করে এবং অস্বীকার করে। বর্ণনাকারী বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বিশ্বাস করিলেন এবং আমাকে অবিশ্বাস করিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার চাচা আমার নিকট এসে বলিলেন, এটাই তো তুমি চেয়েছিলে যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হোন এবং তিনি ও মুসলমানগণ তোমাকে মিথ্যুক বলে আখ্যায়িত করুন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি এতটাই ভারাক্রান্ত হলাম যতটা কখনো কেউ হয়নি। তিনি আরো বলেন, তারপর আমি ভারাক্রান্ত হয়ে মাথা নত করে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গেই সফর অব্যাহত রাখলাম। এ পরিস্থিতিতে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট এসে আমার কান মললেন এবং আমার সম্মুখে হেসে দিলেন। যদি আমি চিরস্থায়ী জীবন [বা জান্নাত] লাভ করতাম তবুও এতটা খুশী হতাম না। তারপর আবু বকর [রাদি.] এসে আমার সঙ্গে দেখা করে প্রশ্ন করিলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমাকে কি বলেছেন? আমি বললাম, আমাকে তিনি কিছুই বলেননি; তিনি কেবল আমার কান মলেছেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে হেসেছেন। আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, তোমার জন্য সুখবর। অতঃপর আমার সঙ্গে উমার [রাদি.] এসে দেখা করেন। যে কথা আমি আবু বকর [রাদি.]-কে বলেছিলাম তাঁকেও তাই বললাম। অতঃপর আমরা ভোরে উপনিত হলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূরা আল-মুনাফিকূন পাঠ করিলেন।

হাদীসটির সানাদ সহীহ।আবু ঈসা বলেন, এটি হাসান সহীহ হাদীস। সূরা মুনাফিকুন তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৩১৪. আল-হাকাম ইবনি উতাইবাহ্ [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনি কাব আল-কুরাযীকে আমি চল্লিশ বছর আগে যাইদ ইবনি আরক্বাম [রাদি.]-এর মাধ্যমে রিওয়ায়াত করিতে শুনিয়াছি যে, তাবূক যু্দ্ধ চলাকালীন সময়ে আবদুল্লাহ ইবনি উবাই বলল, আমরা মাদীনায় ফিরে যেতে পারলে সেখান হইতে সম্মানিতরা অবশ্যই হীন লোকদেরকে বের করে দিবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে তাঁকে বিষয়টি জানালাম। কিন্তু সে এ কথা বলেনি বলে শপথ করে। এতে আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে দোষারোপ করে এবং বলে, তুমি কি এটাই চেয়েছিলে? আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় বাড়ীতে ফিরে এসে অসার হয়ে শুয়ে রইলাম। আমার নিকট রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসে বলেন বা আমি তাহাঁর নিকট গেলে তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাআলা তোমাকে সত্যবাদী ঘোষনা করিয়াছেন। বর্ণনাকারী বলেন, [এই পরিপ্রেক্ষিতে] এ আয়াত অবতীর্ণ হয়[অনুবাদ]ঃ “এরা সেই লোক যারা বলে, রাসূলের সঙ্গী-সাথীদের জন্য তোমরা অর্থব্যয় বন্ধ করে দাও, যার ফলে তারা আলাদা হয়ে যায়”-[সূরা মুনাফিকুন ৭]।

সহীহঃ বোখারি [হাঃ ৪৯০২]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা মুনাফিকুন তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৩১৫. আম্‌র ইবনি দীনার [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেন, একটি যুদ্ধে আমরা উপস্থিত ছিলাম। সুফ্ইয়ান বলেন, তা বনী মুসতালিক্বের যুদ্ধ ছিল। এক মুহাজির এক আনসারীর নিতম্বে আঘাত করলে মুহাজির লোক ডাকেন, হে মুহাজির ভাইয়েরা। আনসারী লোকটিও ডাকেন, হে আনসার ভাইয়েরা। তা শুনতে পেয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ জাহিলী যুগের ডাকাডাকি হচ্ছে কেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এক মুহাজির এক আনসারীর নিতম্বে আঘাত করেছে। তিনি [রসুলুল্লাহ সাঃআঃ] বলেনঃ এ ডাকাডাকি বন্ধ কর, কারণ এটা ঘৃনিত ডাক। বিষয়টি আবদুল্লাহ ইবনি উবাই ইবনি সালূলের কানে পৌঁছলে সে বলল, এত বড় সাহস! এ কাজ তারা করেছে? আল্লাহ্‌র ক্বসম! যদি আমরা মাদীনায় ফিরে যেতে পারি তাহলে অবশ্যই সেখান হইতে সম্মানিতরা হীনদেরকে বিতাড়িত করিবে। উমার [রাদি.] বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাকে অনুমতি দিন, এই মুনাফিক্বের ঘাড় আমি উড়িয়ে দেই। মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] বলেনঃ তাকে এড়িয়ে চল। লোকেরা যেন বলিতে না পারে যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার সঙ্গীদের খুন করেন। আম্‌র ইবনি দীনার [রঃ]ছাড়া অপর এক বর্ণনাকারী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি উবাইর ছেলে আবদুল্লাহ [রাদি.] [তার বাবাকে] বলেন, আল্লাহ্‌র ক্বসম! আপনি এ কথা যতক্ষণ স্বীকার না করবেন যে, “আপনিই হীন আর রাসূলু্ল্লাহ [সাঃআঃ] হলেন মহাসম্মানিত”, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি মাদীনায় ফিরে যেতে পারবেন না। তারপর সে তা স্বীকার করে।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা মুনাফিকুন তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৩১৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

যার নিকটে তার রবের [প্রতিপালকের] ঘর [কাবা] যিয়ারাতের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ আছে অথচ হাজ্জ করে না, অথবা এতটা সম্পদ আছে যাতে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হয় কিন্তু যাকাত আদায় করে না, সে মৃত্যুর সময় দুনিয়াতে আবার ফিরে আসার আরজ করিবে। তখন এক ব্যক্তি বলিলেন, হে ইবনি আব্বস! আল্লাহ তাআলাকে ভয় করুন, দুনিয়াতে ফিরে আসার আর্জি তো শুধু কাফিররাই করিবে। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, আমি এখনই তোমাকে কুরাআন পাঠ করে শুনাচ্ছিঃ “ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি যেন তোমাদেরকে আল্লাহ তাআলার স্মরণ থেকে গাফিল না করে, যারা গাফিল হইবে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আমি তোমাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি, তা হইতে খরচ কর তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে। অন্যথায় [মৃত্যু আসলে] সে বলবে, হে আমার রব! আমাকে তুমি আরো কিছুকালের জন্য ছাড় দিলে আমি দান-খাইরাত করতাম এবং সৎকর্মপরায়ণ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। কিন্তু যখন কারো নির্ধারিতকাল [মৃত্যু] চলে আসবে, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে কিছুই ছাড় দিবেন না। তোমরা যা কর আল্লাহ তাআলা সে প্রসঙ্গে পূর্ণ অবগত [ সূরাঃ আল-মুনাফিকুন-৯-১১]। লোকটি বলল, কি পরিমাণ সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হয়? তিনি বলিলেন, দুই শত দিরহাম বা ততোধিক মালে। সে বলল, কিসে হাজ্জ ওয়াজিব হয়? তিনি বললেনঃ পাথেয় ও যানবাহন থাকলে।

সনদ দুর্বল। আবদু ইবনি হুমাইদ- আবদুর রায্‌যাক হইতে তিনি সুফিয়ান সাওরী হইতে তিনি ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি আবু হাইয়্যা হইতে তিনি দাহ্‌হাক হইতে তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনি উয়াইনা প্রমুখ এ হাদীস আবু জানাব হইতে তিনি দাহ্‌হাক হইতে তিনি ইবনি আব্বাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে তার বিবৃতরূপে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন এবং মারফূ হিসেবে বর্ণনা করেননি। আবদুর রায্‌যাকের রিওয়ায়াতের তুলনায় এটি [ মাওকূফ বর্ণনাটি] অনেক বেশি সহীহ। আবু জানাবের নাম ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি আবু হাইয়্যা এবং তিনি হাদীসশাস্ত্রে তেমন মজবুত নন। সূরা মুনাফিকুন তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply