সূরা আহযাবের তাফসীর – তাফসিরুল কোরআন
সূরা আহযাবের তাফসীর – তাফসিরুল কোরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা আহযাব আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-৩৪ঃ সূরা আহযাবের তাফসীর
৩১৯৯. কাবূস ইবনি আবু যাব্ইয়ান [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তার পিতা তাকে বলেছেন, আমরা ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে প্রশ্ন করলামঃ আপনি কি বলেন, আল্লাহ্ তাআলার বাণী “আল্লাহ্ তাআলা কোন ব্যক্তির বক্ষে দুটি হৃদয় তৈরী করেননি” [সুরাঃ আল-আহযাব- ৪], এর অর্থ কি? তিনি বলিলেন, একদিন আল্লাহ্র রাসূল [সাঃআঃ] উঠে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করিলেন। নামাযে তাহাঁর কিছু [ওয়াসওয়াসা জাতীয়] ত্রুটি হয়। যেসব মুনাফিক তাহাঁর সাথে নামায আদায় করে তারা একে অপরকে বলল, তোমরা কি দেখিতে পাচ্ছ না যে, তাহাঁর দুটি হৃদয় আছে? একটি হৃদয় তোমাদের সাথে, অন্যটি হৃদয় তাহাদের সাথে থাকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তাআলা অবতীর্ণ করেনঃ “কোন ব্যক্তির বক্ষে আল্লাহ্ তাআলা দুটি হৃদয় তৈরী করেননি”।
সনদ দুর্বল, আব্দ ইবনি হুমাইদ-আহ্মাদ ইবনি ইউনুস হইতে তিনি যুহাইর [রঃ]সূত্রে উপরের হাদীসের মতই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান। এ সনদটিও দুর্বল। সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩২০০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার চাচা আনাস ইবনি নাযর- যার নামানুসারে আমার নাম রাখা হয়েছে- বলেন যে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিতে পারেননি। ব্যাপারটি তার নিকট অসহনীয় লাগছিল। তিনি বলেন, মুশরিকদের সাথে প্রথম যে যুদ্ধে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] উপস্থিত ছিলেন আমি তাতে অনুপস্থিত রইলাম। আল্লাহর কসম! যদি তিনি আমাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেন তবে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই দেখবেন আমি কি করি। এ কথা বলার সাথে সাথে তার ভয় হল যে, তিনি বিপরীতের কিছু বলেন কি না। পরবর্তী বছর তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে উহুদের যুদ্ধে শরীক হন। উহুদে যেতে পথিমধ্যে সাদ ইবনি মুআয [রাদি.]-এর সাথে তার দেখা হয়। তিনি প্রশ্ন করেন, হে আবু আমর! কোথায় যাচ্ছ? তিনি বলিলেন, আহা! জান্নাতের ঘ্রাণের দিকে। আমি উহুদের দিকে তা অনুভব করছি। [বর্ণনাকারী বলেন], তিনি যুদ্ধ করিতে করিতে শহীদ হন। তার শরীরে আশিরও বেশি জখম ছিল। এর মধ্যে কিছু ছিল তরবারির আঘাত, কিছু বর্শার আঘাত এবং কিছু তীরের আঘাত। আমার ফুফু রুবাই বিনতু নাযর [রাদি.] বলেন, জখমের কারণে আমি আমার ভাইকে চিনতে পারছিলাম না। শুধু তার আঙ্গুলের গোছা দেখেই তাকে চিনতে পেরেছি। তার সম্পর্কেই এ আয়াত অবতীর্ণ হল [অনুবাদ]ঃ “ঈমানদার ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু লোক আল্লাহ তাআলার সাথে তাহাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে, তাহাদের কেউ কেউ নিজের ইচ্ছা পূর্ণ করেছে [শহীদ হয়েছে] এবং কেউ অপেক্ষায় রহিয়াছে। তারা নিজেদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি”- [সূরা আহ্যাব ২৩]।
সহীহঃ মুসলিম [৬/৪৫-৪৬] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২০১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তার চাচা বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি [চাচা] বলেন, এটাই ছিল প্রথম যুদ্ধ যা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুশরিকদের বিরুদ্ধে পরিচালনা করেন। অথচ এই প্রথম যুদ্ধেই আমি অংশগ্রহণ করিতে পারলাম না। আল্লাহ তাআলা যদি ভবিষ্যতে মুশরিকদের বিরুদ্ধে আমাকে কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ দেন, তবে তিনি দেখবেন আমি কি করি। তারপর উহুদের যুদ্ধে মুসলিমরা পরাজয়ের সম্মুখীন হলে তিনি বলেন, “হে আল্লাহ! মুশরিকরা যে বিপদ নিয়ে এসেছে আমি তা হইতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর মুসলিমরা যা করেছে সে প্রসঙ্গে তোমার নিকট ওজরখাহি করছি।” তারপর তিনি সামনে আগালেন। তার সঙ্গে সাদ [রাদি.]-এর সাক্ষাৎ হলে তিনি বলেন, হে ভাই! তুমি কি করছ, আমি তোমার সাথে আছি। [সাদ বলেন] কিন্তু সে যা করিল আমি তা করিতে ব্যর্থ হলাম। তার দেহে আশির বেশি জখম পাওয়া গেল। এর কতগুলো ছিল তরবারির আঘাত, কতগুলো বর্শার আঘাত এবং কতগুলো তীরের আঘাত। আমরা বলাবলি করতাম যে, তার ও তার বন্ধুদের বিষয়ে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে [অনুবাদ]ঃ “তাহাদের ভিতর কেউ কেউ ইচ্ছা পূর্ণ করেছে এবং কেউ সময় আসার অপেক্ষায় রহিয়াছে”- [সূরা আহযাব ২৩]।
সহীহঃ বোখারি [২৮০৫] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-এর চাচার নাম আনাস ইবনি নাযর । সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২০২. মূসা ইবনি ত্বালহা [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি মুআবিয়াহ [রাদি.]-এর নিকট প্রবেশ করলে তিনি বলিলেন, আমি কি তোমাকে একটি সুসংবাদ শুনাব না? আমি বললাম, হ্যা অবশ্যই। তিনি বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যারা নিজেদের ইচ্ছা পূর্ণ করেছে, ত্বালহা [রাদি.] তাহাদের দলে।
হাসানঃ ইবনি মাজাহ [১২৬] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারব। আমরা শুধু উল্লেখিত সনদসূত্রে মুআবিয়াহ [রাদি.] হইতে এ হাদীস জেনেছি এবং এটি মূসা ইবনি ত্বালহা হইতে তার বাবার সনদে বর্ণিত হয়েছে। সূরা আহযাবের তাফসীর -এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩২০৩. তালহা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবীগণ এক মূৰ্খ বেদুঈনকে বলল, তুমি গিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন কর, “যারা নিজেদের মানৎ পূর্ণ করেছে” দ্বারা কাদের বুঝানো হয়েছে? সাহাবীগণ তার নিকট এ কথা প্রশ্ন করিতে সাহস পাননি। তারা তাঁকে সম্মান ও সমীহ করিতেন। বিদুঈন তাহাঁর নিকট ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করলে তিনি মুখ ফিরিয়ে নেন। সে আবারো তাকে প্রশ্ন করলে তিনি এবারও মুখ ফিরিয়ে নেন। সে আবারো তাকে প্রশ্ন করলে তিনি এবারও মুখ ফিরিয়ে নেন। তারপর আমি মাসজিদের দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। আমার পরনে ছিল সবুজ কাপড়। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দেখে বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়, যে মানৎ পূর্ণকারীদের বিষয়ে প্রশ্ন করেছে? বেদুঈন বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এই আমি। রাসূলুল্লাহঃ বললেনঃ যারা নিজেদের মানৎ পূর্ণ করেছে এ লোক [ত্বালহা] তাহাদের একজন।
হাসান সহীহঃ সহীহাহ [১/৩৬] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু ইউনুস ইবনি বুকাইরের সনদে এ হাদীস জেনেছি। সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৩২০৪. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুল [সাঃআঃ] কে তার সহধর্মিণীগনকে [তার স্ত্রীত্বে থাকার বা পার্থিব ভোগবিলাস প্রহন করার] এখতিয়ার দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলে তিনি প্রথমে আমাকেই প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, হে আয়িশাহ! তোমাকে একটি কথা বলিতে চাচ্ছি। তুমি ধীরস্থীরভাবে উত্তর দিবে, তাড়াহুড়া করিবে না এবং প্রয়োজনে তোমার বাবা মার সাথেও শলা পরামর্শ করিবে। আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, তিনি ভালো করেই জানতেন যে, আমার পিতামাতা কখনো আমাকে তাহাঁর হইতে পৃথক হওয়ার অনুমতি দিবেন না। আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, তারপর তিনি বলিলেন যে, আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “হে নাবী! তোমার স্ত্রীদের বল, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা কর তবে এসো, আমি তোমাদের কিছু ভোগসামগ্রী দিয়ে ভদ্রভাবে বিদায় করে দেই। আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাহাঁর রাসুল ও আখিরাতের সুখ স্বাচ্ছন্দ লাভ করিতে চাও, তবে তোমাদের ভিতর যারা সৎকর্মশীল তাহাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা মহান পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন” – [সূরা আহযাব ২৮-২৯]। আমি বললাম, আমি কী বিষয়ে আমার পিতা মাতার সাথে পরামর্শ করব! আমি তো আল্লাহ, তাহাঁর রাসুল ও আখিরাতের জীবনই কামনা করি। আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, আমি যে উত্তর দিয়েছি, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর অপর স্ত্রীগণও একই রকম উত্তর দেন।
সহিহঃ বুখারি [৪৭৮৬], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান সাহিহ । ইমাম জুহরি [রঃ]উরয়াহ [রঃ]হইতে এবং তিনি আয়িশা [রঃ]হইতে এই সুত্রেও এ হাদিস বর্ণিত আছে । সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২০৫. উমার ইবনি আবি সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
যিনি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর আশ্রয়ে লালিত-পালিত হন। তিনি বলেন, উম্মু সালামাহ [রাদি.] এর ঘরে রাসুল [সাঃআঃ] এর উপর যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল [অনুবাদ] “আল্লাহ তাআলা তো চান আহ্লে বাইত হইতে অপবিত্রতা দূর করিতে এবং তোমাদের কে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করিতে”– [সূরা আহযাবঃ ৩৩], তখন তিনি ফাতিমাহ, হাসান ও হুসাইন [রাদি.] কে ডাকলেন এবং তাহাদেরকে একটি কম্বলের ভিতর ঢেকে নিলেন। আলি [রাদি.] তাহাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাকেও কম্বলের ভিতরে নিয়ে নিলেন। তারপর তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত [পরিবার সদস্য]। তুমি তাহাদের ভিতর হইতে অপরিছন্নতা দূর করে দাও এবং সম্পূর্ণরূপে পরিচ্ছন্ন করে দাও”। উম্মু সালামাহ [রাদি.] বলেন, হে আল্লাহর নাবী! আমিও কি তাহাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেনঃ তুমি স্ব-স্থানে থাক এবং তুমি কল্যাণের মধ্যেই আছ।
সহিহঃ রাওযুন নাযির [৯৭৬, ১১৯০], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, আমর ইবনি আবু সালামাহ হইতে আতার রিওয়ায়াত হিসেবে এ হাদিসটি গারিব । সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২০৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর ছয় মাস পর্যন্ত এই চর্চা ছিল যে, তিনি ফজরের নামাযের জন্য ফাতিমা [রাদি.]-এর ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বলিতেনঃ “হে আহ্লে বাইত! তোমরা নামায কায়িম কর। আল্লাহ্ তাআলা ইচ্ছা করেন, তোমাদের নাবীর ঘরের লোকদের মধ্য হইতে ময়লা দূর করিতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করিতে”।
জঈফ, প্রাগুক্ত। আবু ঈসা বলেনঃ উল্লেখিত সনদসূত্রে এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধুমাত্র হাম্মাদ ইবনি সালামার সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। এ অনুচ্ছেদে আবুল হামরাআ, মাকিল ইবনি ইয়াসার ও উম্মু সালামা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩২০৭. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যদি ওয়াহীর কোন অংশ গোপন করিতেন তাহলে এই অংশ গোপন করিতেনঃ “স্মরণ কর, যার প্রতি আল্লাহ্ তাআলা [ইসলাম গ্রহণ করার] অনুগ্রহ করিয়াছেন এবং আপনিও যার উপর [দাসত্বমুক্ত করে] অনুগ্রহ করিয়াছেন আপনি তাকে বলেছেন, তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখ এবং আল্লাহ্ তাআলাকে ভয় কর। আপনি আপনার মনের মধ্যে যে কথা লুকিয়েছেন, তা আল্লাহ্ তাআলা প্রকাশ করে দিচ্ছেন। আপনি লোকভয় করছিলেন, অথচ আল্লাহ্ তাআলাকে ভয় করা আপনার পক্ষে অধিকতর সংগত। পরে যাইদ যখন তার [যাইনাবের] সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করিল, তখন আমি তাকে [যাইনাবকে] আপনার নিকট বিয়ে দিলাম, যেন মুমিনদের পালিত ছেলেরা নিজ স্ত্রীর সাথে বিবাহ সূত্র ছিন্ন করলে সেই সব নারীদের বিবাহ করায় মুমিন লোকদের কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশ কার্যকারী হয়েই থাকে” [সূরাঃ আল-আহযাব- ৩৭]।
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন তাকে [যাইনাবকে] বিয়ে করিলেন তখন লোকেরা বলিতে লাগল, তিনি নিজের ছেলের বিবিকে বিয়ে করিয়াছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তাআলা আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “মুহাম্মাদ তোমাদের পুরুষ লোকদের মধ্যে কারো পিতা নন, বরং আল্লাহ্র রাসূল ও সর্বশেষ নাবী” [সূরাঃ আল-আহযাব- ৪০]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে পালিত পুত্র বানিয়েছিলেন। তিনি [যাইদ] তখন বালক ছিলেন। তিনি তাহাঁর কাছে থাকলেন এবং ধীরে ধীরে বেড়ে উঠলেন। তাকে যাইদ ইবনি মুহাম্মাদ বলে ডাকা হত। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তাআলা আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “পালিত ছেলেদেরকে তোমরা তাহাদের পিতার সাথে সম্পর্ক সূত্রে ডাকো, এটা আল্লাহ্ তাআলার নিকটে বেশি ন্যায়সংগত।
আর তোমরা যদি তাহাদের পিতার পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের দীনী ভাই এবং সাথী” [সূরাঃ আল-আহযাব- ৫] অর্থাৎ অমুক অমুকের বন্ধু এবং অমুক অমুকের ভাই। এটাই আল্লাহ্ তাআলার নিকট বেশি ন্যায়সংগত কথা অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলার নিকটে বেশি ন্যায়ানুগ কথা।
সনদ অত্যন্ত দুর্বল। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। অন্য এক সূত্রে এ হাদীস দাঊদ ইবনি আবু হিন্দ হইতে, তিনি শাবী হইতে, তিনি মাসরূক হইতে, তিনি আইশা [রাদি.] হইতে সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করিয়াছেন। আইশা [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যদি ওয়াহীর কোন অংশ গোপন করিতেন, তবে এই আয়াত গোপন করিতেনঃ যখন তুমি সেই ব্যক্তিকে বলেছিলে, যার প্রতি আল্লাহ্ তাআলা এবং তুমি অনুগ্রহ করেছিলে….” আয়াতের শেষ পর্যন্ত। এ সূত্রে হাদীসটি বিস্তারিত আকারে বর্ণিত হয়নি। এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন আব্দুল্লাহ ইবনি ওয়ায্যাহ আলকূফী, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনি ইদরীস হইতে, তিনি দাঊদ ইবনি আবী হিন্দ হইতে। সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল
৩২০৮. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যদি ওয়াহীর কোন অংশ গোপনকারী হইতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি এ আয়াত গোপন করিতেন [অনুবাদ]ঃ “যখন তুমি সে লোককে বলেছিলে যার প্রতি আল্লাহ তাআলা এবং তুমি দয়া করেছিলে……”- [সূরা আহ্যাব ৩৭] শেষ পর্যন্ত।
সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২০৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা যাইদ ইবনি হারিসাহ্ না ডেকে বরং যাইদ ইবনি মুহাম্মাদ ডাকতাম। অবশেষে নাযিল হলঃ “তোমরা তাহাদেরকে তাহাদের পিতার পরিচয়ে ডাকো। এটাই আল্লাহ্ তাআলার নিকট বেশি ন্যায়সঙ্গত”- [সূরা আহ্যাব ৫]।
সহীহঃ বোখারি [৪৭৮২], মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আহযাবের তাফসীর- এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২১০. আমির আশ-শাবী [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি আল্লাহ্র বাণীঃ “মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন” [সূরাঃ আল-আহ্যাব- ৪০] প্রসঙ্গে বলেনঃ এ আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছেঃ তোমাদের মাঝে তাহাঁর কোন ছেলে সন্তান জীবিত থাকিবে না।
জঈফ, সনদ বিচ্ছিন্ন। সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩২১১. উম্মু উমারাহ্ আল-আনসারিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললেনঃ আমি [কুরআনে] প্রতিটি প্রসঙ্গ পুরুষদের জন্যই উল্লেখিত দেখিতে পাচ্ছি। অথচ মহিলাদের প্রসঙ্গে কোন বিষয়ে আলোচনা দেখছি না। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ]ঃ “নিশ্চয় যেসব পুরুষ ও স্ত্রীলোক মুসলিম, মুমিন, আল্লাহ্ তাআলার অনুগত, সত্য পথের পথিক, ধৈর্যশীল, আল্লাহ্ তাআলাকে ভয়কারী, দান-খাইরাতকারী রোযা পালনকারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযাতকারী এবং বেশি পরিমাণে আল্লাহ্ তাআলাকে মনে করে, আল্লাহ্ তাআলা তাহাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপুরস্কার রেখেছেন”- [সূরা আহ্যাব ৩৫]।
সনদ সহীহ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। উল্লেখিত সনদেই শুধু আমরা এ হাদীস জেনেছি। সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২১২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [অনুবাদ]ঃ “তুমি [নাবী] নিজের মনে সে কথা লুকিয়ে রেখেছিলে, যা আল্লাহ্ তাআলা প্রকাশ করবেন”- [সূরা আহ্যাব ৩৭], এ আয়াত তখন অবতীর্ণ হয় যাইদ [রাদি.] যখন যাইনাব বিনতু জাহ্শ [রাদি.] প্রসঙ্গে অভিযোগ করিতে এলেন। তিনি যাইনাবকে ত্বালাক্ব দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট অনুমতি চান। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ “তোমার স্ত্রীকে স্বীয় বিবাহধীনে রাখ এবং আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর”- [সূরা আহ্যাব ৩৭]।
সহীহঃ বোখারি [৭৪২০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ। সূরা আহযাবের তাফসীর- এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২১৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যাইনাব বিনতু জাহশ সম্পর্কে যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল [অনুবাদ]ঃ “তারপর যাইদ যখন তার [যাইনাবের] সাথে বিয়ের সম্পর্ক শেষ করিল তখন আমরা তাকে [যাইনাবকে] তোমার কাছে বিয়ে দিলাম,” তখন যাইনাব বিনতু জাহ্শ [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রীদের সামনে গর্ব ভরে বলিতেন, তোমাদেরকে তোমাদের পরিবারের লোকেরা বিয়ে দিয়েছেন, আর আমাকে বিয়ে দিয়েছেন সাত আসমানের উপর হইতে আল্লাহ তাআলা।
সহীহঃ মুখাতাসার আল-ঊলুয়ি [৮৪/৬], বোখারি। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২১৪. আবু তালিব-কন্যা উম্মু হানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বিয়ে করার পয়গাম পাঠান। আমি তাঁকে নিজের অক্ষমতা জানালাম। তিনি আমার আপত্তি গ্রহণ করিলেন। তারপর আল্লাহ্ তাআলা আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “হে নাবী! আমরা তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার সেই স্ত্রীদের, যাদের মোহরানা তুমি আদায় করেছ এবং সেই মহিলাদেরকেও [বৈধ করেছি], যারা আল্লাহ্ তাআলার দেয়া দাসীদের মধ্য হইতে তোমার মালিকানাভুক্ত হয়েছে, তোমার সেই চাচাতো, ফুফাতো ও মামাতো বোনদেরকেও [বৈধ করেছি], যারা তোমার সাথে হিযরাত করে এসেছে, সেই মুমিন মহিলাকেও, যে নিজেকে নাবীর জন্য হেবা করে, যদি নাবী তাকে বিয়ে করিতে চায়। এই সুবিধাদান বিশেষভাবে তোমার জন্য, অন্যান্য ইমানদার লোকদের জন্য নয়” [সূরাঃ আল-আহ্যাব- ৫০]। রাবী [উম্মু হানী] বলেনঃ এ কারণেই আমি তাহাঁর জন্য বৈধ ছিলাম না। কেননা আমি তাহাঁর সাথে হিযরাত করিনি, আমি ছিলাম তুলাকাভুক্ত।
সনদ অত্যন্ত দুর্বল। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আমরা শুধু উল্লেখিত সূত্রেই সুদ্দীর হাদীস হিসেবে জেনেছি। সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল
৩২১৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে হিযরাতকারিনী মুমিন স্ত্রীলোকদের ছাড়া অন্য স্ত্রীলোকদেরকে বিয়ে করিতে মানা করা হয়েছে। অতএব আল্লাহ্ তাআলা বলেছেনঃ “এরপর তোমার জন্য কোন নারী হালাল নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করারও অনুমতি নেই, যদিও তাহাদের রূপ সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে। তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপার স্বতন্ত্র” [সূরাঃ আল-আহ্যাব- ৫২]। আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের মুমিন দাসীদের বৈধ করিয়াছেন। “এবং সেই মুমিন নারীকেও [বৈধ করা হয়েছে] যে নিজেকে নাবীর জন্য হেবা করে” [সূরাঃ আল-আহ্যাব- ৫০]। মুসলমান স্ত্রীলোক ব্যতীত অন্যান্য ধর্মের স্ত্রীলোকদের বিয়ে করা তাহাঁর জন্য অবৈধ করা হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ “কেউ ঈমান অস্বীকার করলে তার সকল কর্মফল নিষ্ফল হইবে এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হইবে” [সূরাঃ আল-মায়িদাহ- ৫]। আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেছেনঃ “হে নাবী! আমরা তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার সেই স্ত্রীদের যাদের মোহরানা তুমি পরিশোধ করেছ, সেই মহিলাদেরকেও যারা আল্লাহ্ তাআলার দেয়া দাসীদের মধ্য হইতে তোমার মালিকানাভুক্ত হয়…. এই বিশেষ সুবিধা শুধু তোমাকেই দেয়া হয়েছে, মুমিনদেরকে নয়” [সূরাঃ আল-আহ্যাব- ৫০]। এ ছাড়া অন্য সব ধরনের মহিলাদের অবৈধ করা হয়েছে।
সনদ দুর্বল, আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। আমরা শুধু আব্দুল হামীদ ইবনি বাহরামির রিওয়ায়াত হিসেবেই এ হাদীস জেনেছি। আমি আহমাদ ইবনিল হাসানকে বলিতে শুনিয়াছি, ইমাম আহমদ ইবনি হাম্বল [রঃ]বলেন, শাহ্র ইবনি হাওশাবের সূত্রে আবদুল হামীদ ইবনি বাহরামের বর্ণিত হাদীসে আপত্তির কিছু নেই। সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩২১৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ইন্তিকালের পূর্বেই এ সব স্ত্রীলোক তাহাঁর জন্য হালাল করা হয়।
সনদ সহীহ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২১৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তাহাঁর সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীর ঘরের দরজায় এসে দেখেন যে, তার ঘরে কিছু সংখ্যক লোক কথাবার্তায় ব্যস্ত। তিনি ফিরে গেলেন এবং নিজের কিছু কাজ করিলেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তিনি আবার ফিরে এলেন। তখনো তার ঘরে লোকেরা আলাপে লিপ্ত ছিল। তিনি এবারও ফিরে গেলেন এবং নিজের কিছু কাজ করিলেন। তিনি আবার তার ঘরের দিকে রাওয়ানা হলেন। এ সময়ের মধ্যে তারা সেখান হইতে চলে গেছে। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি ঘরের মধ্যে ঢুকে আমার ও তাহাঁর মধ্যে একটি একটি পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি এ ঘটনা আবু ত্বালহা [রাদি.]-এর নিকট বর্ণনা করলাম। তিনি বলিলেন, তুমি যা বলেছ তা যদি ঠিক হয়, তবে এ বিষয়ে নিশ্চয়ই কোন আয়াত অবতীর্ণ হইবে। বর্ণনাকারী বলেন, এই প্রেক্ষিতেই পর্দা সম্পর্কিত আয়াত [সূরা আহ্যাব ৫৩-৫৫] অবতীর্ণ হয়।
সহীহঃ বোখারি [৫১৬৬, ৫৪৬৬, ৬২৩৮] অনুরূপ। আবু ঈসা বলেন, উল্লেখিত সনদসূত্রে এ হাদীসটি হাসান গারীব । সূরা আহযাবের তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২১৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিয়ে করিলেন এবং নিজের ঘরে গেলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মা উম্মু সুলাইম [রাদি.] হাইস [খেজুর, ঘি ও ছাতু সহযোগে এক প্রকার মিষ্টান্ন] বানালেন। তিনি একটি ছোট পাত্রে তা রেখে বলিলেন, হে আনাস! এটা নিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট যাও। তাঁকে বল, এটা আমার মা আপনার জন্য পাঠিয়েছেন, আর তিনি আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটা আমাদের দিক হইতে আপনার জন্য একটি নগণ্য উপহার। বর্ণনাকারী বলেন, আমি এই হাইস নিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট গেলাম এবং বললাম, আমার মা আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, এটা আমাদের দিক হইতে আপনার জন্য খুব সামান্য উপহার। তিনি বললেনঃ এটা রাখ। তারপর তিনি বললেনঃ তুমি গিয়ে অমুক, অমুক ও অমুক লোককে এবং পথিমধ্যে যাদের সঙ্গে তোমার কথা হইবে তাহাদেরকেও দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আস। তিনি কয়েক লোকের নামও বলে দিলেন।
আনাস [রাদি.] বলেন, তিনি যাদের নাম উল্লেখ করে বলে দিয়েছেন এবং পথিমধ্যে আমার সঙ্গে যাদের দেখা হয়েছে আমি তাহাদের সবাইকে দাওয়াত করে নিয়ে এলাম। অধঃস্তন বর্ণনাকারী [জাদ আবু উসমান] বলেন, আমি আনাস [রাদি.]-কে প্রশ্ন করলাম, তাহাদের মোট সংখ্যা কত ছিল? তিনি বলিলেন, প্রায় তিন শত। আনাস [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ হে আনাস! ছোট পাত্রটি নিয়ে এসো। আনাস [রাদি.] বলেন, দাওয়াতকৃত ব্যক্তিরা এলে তাহাদের ভীড়ে চত্বর ও হুজরাহ্ ভরে গেল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ দশ দশজন করে গোলাকারে বসে যাও এবং প্রতিটি লোক যেন নিজের নিকটের দিকে থেকে খায়। বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা পরিতৃপ্তি সহকারে খেল। একদল খেয়ে চলে গেলে অপর দল খেতে বসত। এভাবে সবাই আহার করিল। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আমাকে বললেনঃ হে আনাস! পাত্রটি তুলে নিয়ে যাও। আনাস [রাদি.] বলেন, আমি তা উঠিয়ে নিলাম, কিন্তু বলিতে পারব না, যখন আমি হাইসের পাত্র রেখেছিলাম তখন কি তাতে অনেক হাইস ছিল না যখন তুলে নিলাম তখন বেশী ছিল!
আনাস [রাদি.] বলেন, দাওয়াতকৃতদের গল্পে রত কিছু লোক রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ঘরে বসে আলাপে রত রইল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের বিদায় হওয়ার অপেক্ষায় বসে রইলেন। তাহাঁর স্ত্রী দেয়ালের দিকে মুখ করে বসে রইলেন। তারা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জন্য একটি বিরক্তিকর বোঝা হল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] উঠে গিয়ে তাহাঁর স্ত্রীদের সালাম করিলেন, তারপর আবার ফিরে এলেন। তারা যখন দেখল যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফিরে আসছেন, তখন তারা অনুভব করিল যে, তারা তাহাঁর জন্য বিরক্তির বিষয় হয়ে পড়েছে। অতএব তারা সকলে উঠে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসে পর্দা ছেড়ে দিয়ে হুজরায় প্রবেশ করিলেন। আমি হুজরার মধ্যে [পর্দার এ পাশে] বসে থাকলাম। কিছু সময় পর তিনি বের হয়ে আমার নিকট এলেন। তখন নিম্নের আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বাইরে বের হয়ে গিয়ে লোকদের সামনে তা পড়লেন [অনুবাদ]ঃ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা বিনা অনুমতিতে নাবীর ঘরের মধ্যে প্রবেশ করো না এবং আহারের জন্য এসে অপেক্ষায় বসে থেকো না। যদি তোমাদের আহারের জন্য দাওয়াত দেয়া হয় তবে অবশ্যই আসবে, কিন্তু খাওয়া-দাওয়া শেষ করার সাথে সাথে সরে পড়বে এবং কথাবার্তায় মাশগুল হইবে না। তোমাদের এ ধরনের আচরণ নাবী [সাঃআঃ]-কে দুঃখ দেয় কিন্তু সে লজ্জায় কিছুই বলে না। আর আল্লাহ তাআলা সত্য কথা বলিতে লজ্জা বোধ করেন না। নাবীর স্ত্রীদের নিকট তোমাদের কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে পর্দার আড়াল হইতেই তাহাদের নিকট তা চাও। তোমাদের এবং তাহাদের অন্তরের পবিত্রতা রক্ষার জন্য এটাই ভাল কাজ। আল্লাহ তাআলার রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তার ইন্তিকালের পর তার স্ত্রীদের বিয়ে করা তোমাদের জন্য কখনো জায়িয নয়। এটা আল্লাহ তাআলার নিকট অতি বড় গুনাহ।”[সূরা আহ্যাব ৫৩]
জাদ [রঃ]বলেন, আনাস [রাদি.] বলেছেন, আমিই সকলের আগে এ আয়াত প্রসঙ্গে অবগত হই এবং সেদিন হইতেই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর স্ত্রীগণ পর্দা করেন।
সহীহঃ বোখারি, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। জাদ হলেন উসমানের পুত্র। তাকে দীনারের ছেলেও বলা হয়। তার উপনাম আবু উসমান আল-বসরী। হাদীস বিশারদদের মতে তিনি সিক্বাহ বর্ণনাকারী। ইউনুস ইবনি উবাইদ, শুবাহ্ ও হাম্মাদ ইবনি যাইদ [রঃ]তার সনদে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২১৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর এক স্ত্রীর সাথে বাসর যাপন করিলেন। তিনি লোকদেরকে বিয়ের অনুষ্ঠানের দাওয়াত দেয়ার জন্য আমাকে পাঠান। আমি লোকদের খাবারের দাওয়াত দিলাম। লোকেরা আহার করে বেরিয়ে চলে গেলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আয়িশা [রাদি.]-এর ঘরের দিকে গেলেন। তিনি দুই ব্যক্তিকে বসা দেখে আবার ফিরে এলেন। তারপর লোক দুটি উঠে চলে গেল। অতঃপর আল্লাহ তাআলা আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা বিনা অনুমতিতে নাবীর ঘরে ঢুকো না এবং আহারের অপেক্ষায়ও বসে থেকো না। তবে তোমাদের খাওয়ার দাওয়াত করা হলে তোমরা অবশ্যই আসবে, কিন্তু আহার শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরে পড়বে এবং কথাবার্তায় মাশগুল হইবে না” – [সূরা আহ্যাব ৫৩]।
সহীহঃ বোখারি [৪৭৯১, ৬২৩৯, ৬২৭১] অনুরূপ। এ হাদীসে দীর্ঘ ঘটনা রয়েছে। আবু ঈসা বলেন, বাইয়ানের রিওয়াওয়াত হিসেবে এটা হাসান গারীব হাদীস। সাবিত [রঃ]আনাস [রাদি.] হইতে এ হাদীস দীর্ঘাকারে বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২২০. আবু মাসঊদ আল-আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নিকট আসলেন। আমরা এ সময় সাদ ইবনি উবাইদাহ্র মাজলিসে হাযির ছিলাম। বাশীর ইবনি সাদ [রাদি.] তাঁকে বলিলেন, আল্লাহ তাআলা আপনার উপর দরূদ পড়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা কিভাবে আপনার উপর দরূদ পড়ব? বর্ণনাকারী বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিশ্চুপ রইলেন। এমনকি আমাদের মনে হল, আমরা যদি তাঁকে জিজ্ঞেস না করতাম। তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা বল- “আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা আলা ইবরাহীম, ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ফিল আলামীন। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।” আর সালাম তো সেভাবেই যেভাবে তোমাদেরকে শেখানো হয়েছে।
সহীহঃ সিফাতুস্ সালাত, সহীহ্ আবু দাঊদ [৯০১], মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে আলী, আবু হুমাইদ, কাব ইবনি উজরাহ্, ত্বালহা ইবনি উবাইদুল্লাহ, আবু সাঈদ, যাইদ ইবনি খারিজাহ্ বা জারিয়াহ্ এবং বুরাইদাহ্ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে । আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান সহীহ । এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২২১. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করেনঃ মূসা [আঃ] খুবই লজ্জাশীল লোক ছিলেন। তিনি নিজের শরীর ভালভাবেই ঢেকে রাখতেন। লজ্জার কারণে তাহাঁর গায়ের কোন অংশই প্রকাশ পেত না। বানী ইসরাঈলের মন্দ প্রকৃতির কয়েক লোক তাকে বিভিন্নভাবে দুঃখ দিত। এরা বলত, তাহাঁর এভাবে দেহ ঢেকে রাখার কারণ তাহাঁর গায়ের কোন সমস্যা আছে অথবা তাহাঁর গায়ে ধবল রোগ আছে অথবা তাহাঁর অণ্ডকোষ খুব বড় অথবা অন্য কোন সমস্যা আছে। আল্লাহ তাআলা তাহাদের এসব অপবাদ হইতে তাঁকে মুক্ত করার ইচ্ছা করিলেন। মূসা [আঃ] এক দিন একাকী নিজের পোশাক খুলে তা একটি পাথরের উপর রেখে গোসল করিতে নামলেন। গোসল শেষে তিনি কাপড় নেয়ার জন্য উঠে এলে পাথরটি তাহাঁর কাপড়সহ দৌড়াতে থাকে। মূসা [আঃ] নিজের লাঠি তুলে নিয়ে পাথরের পিছে পিছে ছোটেন এবং বলিতে থাকেনঃ হে পাথর! আমার কাপড় [ফিরিয়ে দাও], হে পাথর! আমার কাপড় [ফিরিয়ে দাও]। এই বলে পাথরের পিছু ধাওয়া করিতে করিতে তিনি বানী ইসরাঈলের একটি দলের নিকট পৌছে গেলেন। তারা তাঁকে বস্ত্রহীন অবস্থায় দেখিতে পেল। তারা তাহাঁর সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ সুষ্ঠ সুন্দর দেখল। আল্লাহ তাকে তাহাদের অপবাদ হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত করিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ পাথর থেমে গেল এবং তিনি তাহাঁর বস্ত্র নিয়ে পরিধান করিলেন। তিনি নিজের লাঠি দিয়ে পাথরটিকে আঘাত করিতে লাগলেন। আল্লাহর ক্বসম! পাথরের উপর তাহাঁর লাঠির আঘাতের তিন, চার অথবা পাঁচটি দাগ পড়ে গেল। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তাআলা ফরমানঃ “হে ঈমানদারগণ! যেসব ব্যক্তি মূসাকে দুঃখ দিয়েছিল তোমরা তাহাদের মত হয়ো না। আল্লাহ তাআলা তাহাদের বানানো কথাবার্তা হইতে তার নির্দোষিতা প্রমাণ করিয়াছেন। তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট সম্মানের পাত্র ছিলেন” – [সূরা আহ্যাব ৬৯]।
সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি আবু হুরাইরাহ [রাদি.]-এর বরাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। সূরা আহযাবের তাফসীর এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply