সূরা রুম তাফসীর – তাফসিরুল কোরআন
সূরা রুম তাফসীর – তাফসিরুল কোরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা রূম আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-৩১ঃ সূরা রুম তাফসীর
৩১৯১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] “আলিফ, লাম, মীম, গুলিবাতির রূম” শীর্ষক আয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট আবু বকর [রাদি.]-এর বাজি প্রসঙ্গে বলেছেনঃ আবু বাক্র! তুমি সাবধানতা গ্রহণ করলে না কেন? কেননা …. শব্দটি তো তিন হইতে নয় পর্যন্ত সংখ্যা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়।
জঈফ, যঈফা [৩৩৫৪] আবু ঈসা বলেনঃ উল্লেখিত সনদসূত্রে অর্থাৎ যুহরীর সনদে এ হাদীস হাসান ও গারীব। তিনি উবাইদুল্লাহ হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে তা বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা রুম তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩১৯২. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যখন বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়, ঠিক এই সময়ে রূমের এশিয়া মাইনরে খৃষ্টান বাহিনী পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করে। এ বিষয়টি মুসলিমদেরকে খুবই আনন্দিত করে। এ প্রেক্ষিতে আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ]ঃ “আলিফ, লাম, মীম। রোমকগণ নিকটবর্তী ভূখণ্ডে পরাজিত হয়েছে। তাহাদের এই পরাজয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই তারা আবার বিজয়ী হইবে। আগের ও পরের ফাইসালা আল্লাহ তাআলারই। সেদিন আল্লাহ তাআলার সাহায্যে মুমিনগণ আনন্দিত হইবে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন। তিনি মহা পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু”- [সূরা আর-রূম ১-৫]। বর্ণনাকারী বলেন, পারস্য শক্তির বিরুদ্ধে রোমান শক্তির জয়ে মুসলিমরা আনন্দিত হয়েছিলেন।
পরবর্তী হাদীসের সহায়তায় এ হাদীসটি সহীহ। আবু ঈসা বলেন, উল্লেখিত সনদসূত্রে এ হাদীসটি হাসান গারীব। নাসর ইবনি আলী [গলাবাতির রূম] পাঠ করিয়াছেন। সূরা রুম তাফসীর -এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৯৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ [অনুবাদ] আলিফ, লাম, মীম। রোমকগণ নিকটবর্তী ভূখণ্ডে পরাজিত হয়েছে” এ আয়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতে দুই রকমের ক্বিরাআত আছে, “গুলিবাত” [পরাজিত হল] এবং “গালাবাত” [বিজয়ী হল]। তিনি আরো বলেন, মুশরিকরা চাইত যে, পারস্য শক্তি রোমান শক্তির উপরে জয়ী হোক। কেননা [মক্কার] মুশরিকরা এবং পারস্যের অধিবাসীরা উভয়ে ছিল পৌত্তলিক। আর মুসলিমরা আকাঙ্ক্ষা করত যে, রোমান শক্তি পারস্য শক্তির বিরুদ্ধে বিজয়ী হোক। কেননা তারা ছিল আহলে কিতাব। তারা ব্যাপারটি আবু বাকর [রাদি.]-এর সামনে উল্লেখ করলে তিনি তা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জানান। তিনি বললেনঃ অচিরেই রোমান শক্তি পারস্য শক্তির উপরে বিজয়ী হইবে। আবু বাকর [রাদি.] এ কথা তাহাদের নিকট উল্লেখ করলে তারা বলল, আপনি আমাদের ও আপনার মাঝে এর একটি সময়সীমা নির্দিষ্ট করুন। এ সময়সীমার মধ্যে আমরা যদি বিজয়ী হই তবে [এত এত মাল আমাদেরকে] দিতে হইবে। আর যদি আপনারা বিজয়ী হন তবে আমরা আপনাদেরকে এই এই [পরিমাণ মাল] দিব। তিনি পাঁচ বছরের সময়সীমা নির্দিষ্ট করেন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কোন বিজয় সূচিত হল না। লোকেরা তা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ [হে আবু বাকর!], তুমি কেন আর কিছু বেশি সময়সীমা ধার্য করলে না? বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় তিনি দশ বছরের কাছাকাছি সময়ের কথা বলেছেন।
সাঈদ [রঃ]বলেন, বিযউ শব্দের অর্থ দশের চেয়ে কম। বর্ণনাকারী বলেন, পরবর্তীকালে রোমান শক্তি বিজয়ী হল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ এটাই আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “আলিফ, লাম, মীম…ইয়াফরাহুল মুমিনুন বিনাসরিল্লাহ” এর তাৎপর্য। সুফইয়ান বলেন, আমি শুনিয়াছি, রোমান শক্তি ঠিক বদরের যুদ্ধের দিন পারস্য শক্তির উপরে বিজয়ী হয়।
সহীহঃ যঈফাহ [২২৫৪] নং হাদীসের অধীনে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান, সহীহ গারীব। আমরা শুধু সুফইয়ানের রিওয়ায়াত হিসেবে এ হাদীস জেনেছি। তিনি হাবীব ইবনি আবী আমরার সনদে এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা রুম তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৯৪. নিয়ার ইবনি মুকরাম আল-আসলামী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যখন অবতীর্ণ হলঃ [অনুবাদ] “আলিফ, লাম, মীম; রোমকরা নিকটবর্তী ভূখণ্ডে পরাজিত হয়েছে; তাহাদের এই পরাজয়ের পর অচিরেই কয়েক বছরের মধ্যে তারা বিজয়ী হইবে”, তখন পারস্য শক্তি রোমকদের উপর প্রভুত্ব করছিল। মুসলিমরা আকাঙ্ক্ষা করত যে, রোমক শক্তি পারস্য শক্তির বিরুদ্ধে বিজয়ী হোক। কেননা মুসলিমরা ছিল আহ্লে কিতাব এবং রোমান খৃষ্টানরাও ছিল আহলে কিতাব। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “সেদিন আল্লাহ্র দেয়া বিজয়ে মুমিনগণ আনন্দিত হইবে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন। তিনি মহা পরাক্রমশালী পরম দয়াময়।” কুরাইশরা চাইতো যে, পারস্যশক্তি বিজয়ী হোক। কেননা এ দুই গোত্রের কেউই আহলে কিতাব ছিল না, তারা আখিরাতের প্রতিও বিশ্বাসী ছিল না। আল্লাহ তাআলা এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ করলে আবু বাকর সিদ্দীক্ব [রাদি.] মক্কার অলিতে গলিতে ঘুরে ঘুরে উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা করেনঃ আলিফ, লা-ম, মী-ম। রোমান শক্তি নিকটবর্তী অঞ্চলে পরাজিত হয়েছে। তাহাদের এ পরাজয়ের পর অচিরেই কয়েক বছরের মধ্যে তারা বিজয়ী হইবে।” কুরাইশদের একদল লোক আবু বকর [রাদি.]-কে বলল, আমাদের ও তোমাদের মাঝে একটি চুক্তি হোক। তোমার সাথী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন যে, রোমানরা কয়েক বছরের মধ্যেই পারস্য শক্তির উপরে বিজয়ী হইবে। আমরা এ বিষয়ে তোমাদের সাথে বাজি রেখে মাল বন্ধক রাখি না কেন? আবু বাকর [রাদি.] বলেন, ঠিক আছে। বর্ণনাকারী বলেন, বাজি হারাম ঘোষিত হওয়ার পূর্বে এই চুক্তি হয়েছিল। আবু বাকর [রাদি.] এবং মুশরিকরা বাজি ধরে বাজির মাল আলাদা করে রেখে আবু বাকর [রাদি.]-কে বলল, আপনি বিযউ-কে কত নির্ধারণ করিতে চান? এ তো তিন হইতে নয় বছর পর্যন্ত বুঝা যায়। আপনি আমাদের এবং আপনার মধ্যে একটি মধ্যবর্তী সময় নির্দিষ্ট করুন। আমরা উভয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করব। বর্ণনাকারী বলেন, তারা নিজেদের মধ্যে ছয় বছরের সময়সীমা নির্ধারণ করে। বর্ণনাকারী বলেন, ছয় বছর পার হয়ে গেলেও কিন্তু রোমানরা পারসিকদের উপর বিজয়ী হয়নি। অতএব মুশরিকরা আবু বাকর [রাদি.]-এর অর্থ নিয়ে নিল। কিন্তু সপ্তম বছরে রোমানরা পারসিকদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে। মুসলিমরা আবু বকর [রাদি.]-এর ছয় বছর বরাদ্ধ করাটাকে দোষারোপ করিল। কেননা আল্লাহ তাআলা “কয়েক বছরের মধ্যেই” বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় [ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হলে] অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে।
হাসানঃ যঈফাহ [৩৩৫৪] নং হাদীসের অধীনে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ, নিয়ার ইবনি মুকরামের হাদীস হিসেবে গরীব। আবদুর রহমান ইবনি আবুয ফিনাদের সনদেই শুধু আমরা এ হাদীস জেনেছি। সূরা রুম তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
Leave a Reply