সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর উল কুরআন

সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর উল কুরআন

সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর উল কুরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা বনী ইসরাঈল আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-১৮ঃ সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর

৩১৩০. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে রাতে আমাকে [ঊর্ধ্বজগতে] ভ্রমণ করানো হয় সে রাতে আমি মূসা [আঃ]-এর সাথে সাক্ষাৎ করি। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মূসা [আঃ]-এর দৈহিক গঠনাকৃতির বর্ণনা দেন। [তিনি বলেনঃ ] তিনি এমন এক ব্যক্তি যাঁর দেহ মধ্যমাকৃতির, তাহাঁর চুল মধ্যম গোছেন, খুব কোঁকড়ানোও নয়, আবার একেবারে সোজাও নয়। মনে হয় তিনি শানূআহ বংশের লোক। তিনি আরো বলেনঃ ঈসা [আঃ]-এর সাথেও আমি সাক্ষাৎ করলাম। বর্ণনাকারী বলেন, তাহাঁর চেহারারও বর্ণনা দিলেন তিনি। তাহাঁর দেহের গড়ন মধ্যম, শরীরের রং লাল এবং মনে হয় তিনি এইমাত্র গোসলখানা হইতে বের হয়েছেন। ইব্রাহীম [আঃ]-কেও আমি দেখেছি। তাহাঁর বংশধরের মধ্যে আমিই তাহাঁর দৈহিক আকৃতিতে সর্বাধিক সদৃশ। আমার সামনে দুটি পানপাত্র পেশ করা হয় : একটি দুধের এবং অন্যটি মদের। আমাকে বলা হল, আপনি এ দুটির মধ্যে যেটা পান করিতে চান সেটা নিন। আমি দুধের পাত্রটি নিয়ে তা পান করলাম। তারপর আমাকে বলা হল, আপনাকে ফিতরাতের [ইসলামের] পথ দেখানো হয়েছে বা আপনি ফিতরাতকে পেয়ে গেছেন। আপনি যদি মদের পাত্র নিতেন তবে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।

সহীহ : বোখারি [৪৭০৯], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।  সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১৩১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

যে রাতে নাবী [সাঃআঃ] -কে [মিরাজে] ভ্রমণ করানো হয় সে রাতে তাহাঁর সামনে জিনপোষ আঁটা ও লাগাম বাঁধা একটি বোরাক আনা হয়। বোরাক তার পিঠে সাওয়ার হওয়াটা তাহাঁর জন্য অসম্ভব করে তুললে জিবরীল [আঃ] তাকে বলিলেন, তুমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে কেন এ রকম আচরণ করছ? অথচ আল্লাহ তাআলার সমীপে তাহাঁর চেয়ে বেশি সম্মানিত কেউ তোমর পিঠে সওয়ার হয়নি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ এতে বোরাক ঘর্মাক্ত হয়ে যায়।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। এটিকে আমরা শুধুমাত্র আবদুর রাজ্জাকের বর্ণিত হাদীস হিসেবেই জানি।  সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১৩২. আবদুল্লাহ ইবনি বুরাইদাহ্ [রঃ]হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমরা যখন বাইতুল মাক্বদিসে পৌঁছলাম, তখন জিবরীল [আঃ] তাহাঁর আঙ্গুল দিয়ে পাথর ফাটান এবং তার সাথে বোরাক বাঁধেন।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১৩৩. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কুরাইশরা যখন আমাকে মিথ্যা মনে করিল [এবং বলল, আপনার মিরাজে যাওয়ার দাবি সত্য হলে বাইতুল মাক্বদিসের একটি বর্ণনা দিন]। আমি হাজারে [হাতীমে] দাঁড়ালাম এবং আল্লাহ তাআলা আমার সামনে বাইতুল মাক্বদিসের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরলেন। আমি তাহাদের সামনে এর নিদর্শনসমূহের বর্ননা দিলাম। মনে হল আমি যেন বাইতুল মাক্বদিসকেই দেখছি।

সহীহ : তাখরীজু ফিকহিস্ সীরাহ্ [১৪৫], বোখারি, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। মালিক ইবনি সাসাহ্, আবু সাঈদ ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।  সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১৩৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আল্লাহ তাআলার বানী : “তোমাকে আমরা চাক্ষুষভাবে যা দেখালাম তা এই লোকদের জন্য একটি পরীক্ষার বস্তু বানিয়ে রেখেছি”- [সূরা বানী ইসরাঈল ৬০]। আয়াতে উল্লেখিত “রুইয়া” প্রসঙ্গে ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, এটা ছিল চাক্ষুস দর্শন। নাবী [সাঃআঃ] কে রাতের বেলা [মিরাজের সময়] বাইতুল মাক্বদিসে নিয়ে গিয়ে তা [যাবতীয় নিদর্শন] দেখানো হয়েছিল। বর্ণনাকারী বলেন, “কুরআনে উল্লেখিত অভিশপ্ত গাছটি”- [সূরা বানী ইসরাঈল ৬০] হল যাক্কুম গাছ।

সহীহ : বোখারি [৪৭১০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।  সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১৩৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আল্লাহ তাআলার বানী : আর ফজরে কুরআন পাঠের স্থায়ী নীতি অবলম্বন কর। কেননা ফজরের কুরআন পাঠে উপস্থিত থাকা হয়”- [সূরা বানী ইসরাঈল ৭৮]। এ আয়াত প্রসঙ্গে নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ এ সময় রাতের ফেরেশতারা এবং দিনের ফেরেশতারা উপস্থিত হয়।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীরটি আলী ইবনি মুসহির আমাশ হইতে, তিনি আবু সালিহ হইতে তিনি আবু হুরাইরাহ্ ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে তারা নাবী [সাঃআঃ] হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। এটি আলী ইবনি হুজ্র আলী ইবনি মুস্হির হইতে, তিনি আমাশ হইতে …… অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১৩৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ “সেদিন আমরা সব মানুষকে তাহাদের নেতাসহ আহ্বান করব” [সূরাঃ বাণী ইসরাঈল- ৭১], এ আয়াত প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ [মুসলিম নেতাহাদের] একজনকে ডাকা হইবে। তার কিতাব [আমলনামা বা কার্যবিবরণী] তার ডান হাতে দেয়া হইবে। তার দেহ ষাট গজ লম্বা করা হইবে। তার মুখমন্ডল সাদা [আকর্ষণীয়] করা হইবে। তার মাথায় মণিমুক্তার টুপি পরানো হইবে এবং তা ঝিলকাতে থাকিবে। সে তার সঙ্গীদের কাছে আসবে। তারা দূর হইতেই তাকে দেখিতে পাবে। তারা বলবে, “হে আল্লাহ্! আমাদেরকেও এরূপ দান কর এবং এর মাধ্যমে বারকাত দান কর।” ইতিমধ্যে সে তাহাদের নিকটে পৌঁছে যাবে এবং তাহাদেরকে বলবে, তোমাদের জন্য সুসংবাদ। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য এরূপ পুরস্কার আছে। অপর দিকে কাফিরদের নেতার শরীরের রং কালো হইবে। তার দেহ আদম আলাইহিস সালাম-এর মতই ষাট গজ লম্বা করা হইবে। তাকেও একটি টুপি পরানো হইবে। তার সঙ্গীরা দূর হইতে তাকে দেখে বলবে, “আমরা এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহ্‌ তাআলার নিকটে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ্! তাকে আমাদের নিকট ফিরিয়ে দিও না। এমতাবস্থায় সে তাহাদের নিকট এসে যাবে, আর তারা বলিতে থাকিবে, তুমি তাকে লাঞ্ছিত কর।” তারপর সে বলবে, আল্লাহ্ তাআলা তোমাদেরকে অপমান করুন। কেননা তোমাদের প্রত্যেককে এভাবেই লাঞ্ছিত করা হইবে।

সনদ দুর্বল। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। সুদ্দীর নাম ইসমাঈল ইবনি আবদুর রহমান। সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩১৩৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে আল্লাহ তাআলার বানী [অনুবাদ] “আশা করা যায় যে, তোমার প্রতিপালন কোমাকে মাক্বামে মাহমূদে পৌঁছে দিবেন”- [সূরা বানী ইসরাঈল ৭৯] প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হল। তিনি বললেনঃ এটা শাফাআত।

সহীহ : সহীহাহ্ [২৬৩৯, ২৩৭০], আয্ যিলা-ল [৭৮৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। দাঊদ আয-যাআফিরী হলেন দাঊদ আল-আওদী, ইবনি ইয়াযীদ ইবনি আবদুল্লাহ। তিনি আবদুল্লাহ ইবনি ইদরীসের চাচা। সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১৩৮. ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কা বিজয়ের বছর মক্কায় প্রবেশ করিলেন। তখন কাবার চারপশে তিন শত ষাটটি মূর্তি স্থাপিত ছিল। নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর হাতের লাঠি বা কাঠ দিয়ে মূতিগুলোর গায়ে আঘাত করে সেগুলোকে ভূপাতিত করছিলেন আর বলছিলেন : সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত। আর বাতিলের বিলুপ্তি অবশ্যম্ভাবী”- [সূরা বানী ইসরাঈল ৮১]। “সত্য সমাগত এবং অসত্য কিছুই সৃজন করিতে পারে না এবং তা পুনরাবৃত্তিও করিতে পারে না”- [সূরা সাবা ৪৯]।

সহীহ : বোখারি [৪৭২০], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১৩৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কায় অবস্থান করছিলেন। তারপর তাঁকে [মাদীনায়] হিজরাতের হুকুম দেয়া হয়। তখন তাহাঁর উপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ “আর বলুনঃ হে আমার রব! আমাকে দাখিল করাও কল্যাণের সাথে এবং আমাকে বের করাও কল্যাণের সাথে এবং তোমার পক্ষ হইতে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি” [সূরাঃ বাণী ইসরাঈল- ৮০]।

সনদ দুর্বল। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩১৪০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কুরাইশরা ইয়াহূদীদের বলল, তোমরা আমাদেরকে এমন কিছু শিখিয়ে দাও যে প্রসঙ্গে আমরা এই ব্যক্তিকে [রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে] প্রশ্ন করিতে পারি। ইয়াহূদীরা বলল, তোমরা রূহ প্রসঙ্গে তাঁকে প্রশ্ন কর। বর্ণনাকারী বলেনঃ তারা রূহ [বা প্রাণ] বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করিল। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন : “লোকেরা রূহ প্রসঙ্গে তোমরা নিকট প্রশ্ন করে। বল, রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশ ঘটিত। জ্ঞানের খুব সামান্যই তোমাদেরকে প্রদান করা হয়েছে”- [সূরা বানী ইসরাঈল ৮৫]। ইয়াহূদীরা বলল, আমাদের বিরাট বা প্রচুর জ্ঞান দান করা হয়েছে। আমাদেরকে তাওরাত কিতাব দেয়া হয়েছে। আর যাদেরকে তাওরাত গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাহাদেরকে প্রভূত কল্যাণ দেয়া হয়েছে। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “বল, আমার প্রতিপালকের কথাগুলো লেখার জন্য সমুদ্রের সমস্তু পানি যদি কালি হয়ে যায় তবুও তা আমার প্রভুর কথাগুলো লিখে শেষ করার পূর্বেই নিঃশেষ হয়ে যাবে। আমরা যদি আবার একই রকম কালি নিয়ে আসি তবুও তা যথেষ্ট হইবে না”- [সূরা বানী ইসরাঈল ১০৯]।

সহীহ : আত্তালীকাত আস-হাস্সান [৯৯]। আবু ঈসা বলেন, উল্লেখিত সনদসূত্রে এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১৪১. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] -এর সাথে মাদীনায় একটি কৃষি খামারে যাচ্ছিলাম। তিনি খেজুর গাছের ডালে ভর দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে তিনি একদল ইয়াহূদীদেরকে অতিক্রম করিলেন। তাহাদের কিছু লোক বলল, তোমরা যদি তাঁকে প্রশ্ন করিতে? তাহাদের অপর কতক বলল, তাঁকে প্রশ্ন করো না। অন্যথায় তিনি এমন কিছু শুনিয়ে দিবেন যা তোমাদের মনোপূত হইবে না। তারা বলল, হে আবুল কাসিম! আমাদেরকে রূহ [প্রাণ] প্রসঙ্গে বলুন। নাবী [সাঃআঃ] কিছুক্ষণ দাঁড়ালেন। তিনি তাহাঁর মাথা আসমানের দিকে উঠালেন। আমি বুঝে ফেললাম যে, তাহাঁর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ হচ্ছে। ওয়াহী অবতরণ শেষে তিনি বললেনঃ “রূহ আমার প্রতিপালকের হুকুম মাত্র। তোমাদেরকে জ্ঞানের খুব অল্পই প্রদান করা হয়েছে”।

সহীহ : বোখারি [৪৭২১], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১৪২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন লোকদেরকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করে উঠানো হইবে। একদল লোক পায়ে হেঁটে, দ্বিতীয় দল সাওয়ারী অবস্থায় এবং তৃতীয় দল অধঃমুখে [এবং পা উপরে তুলে] হাযির হইবে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এরা মুখমন্ডলে ভর করে চলবে কিভাবে? তিনি বললেনঃ যে মহান সত্তা তাহাদেরকে পায়ের সাহায্যে হাঁটিয়ে ছিলেন, তিনি তাহাদেরকে মুখমন্ডলে ভর করে হাঁটাতেও সক্ষম। এরা নিজেদের মুখের দ্বারা প্রতিটি উচু-নীচু ও কাটা উপেক্ষা করে রাস্তা পার হইবে।

জঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৫৫৪৬], তালীকুর রাগীব [৪/১৯৪], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। উহাইব [রঃ]ইবনি তাঊসের সূত্রে, তিনি তার পিতা হইতে আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে একই রকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩১৪৩. বাহ্‌য ইবনি হাকীম [রঃ]হইতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [দাদা] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাত দিবসে তোমাদেরকে পদব্রজে ও সওয়ারী অবস্থায় সমবেত করা হইবে এবং কতককে মুখের উপর [উপুড় করে] হেঁচড়িয়ে হাযির করা হইবে।

হাসান : আলীকুর রাগীব। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩১৪৪. সাফওয়ান ইবনি আসসাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ কোন এক সময় দুই ইয়াহূদীর একজন অপরজনকে বলল, চল আমরা এই নাবীর কাছে গিয়ে তাঁকে কিছু প্রশ্ন করি। অপরজন বললঃ তাঁকে নাবী বল না। কেননা সে যদি এটা শুনে ফেলে যে, তুমি [ইয়াহূদীরাও] তাঁকে নাবী বলছ, তার চার চোখ হয়ে যাবে। তারা উভয়ে তাহাঁর নিকটে এসে তাঁকে আল্লাহ্ তাআলার নিম্নোক্ত বাণী প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেঃ “আমরা মূসাকে নয়টি নিদর্শন দান করেছিলাম” [সূরাঃ বাণী ইসরাঈল- ১০১]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ সেই নয়টি নিদর্শন [নির্দেশ] হচ্ছেঃ [১] তোমরা আল্লাহ্‌ তাআলার সাথে কোন কিছু অংশীদার করো না, [২] যেনা-ব্যভিচার করো না, [৩] যাকে হত্যা করা আল্লাহ্ তাআলা নিষিদ্ধ করিয়াছেন ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া তার জীবন সংহার করো না, [৪] চুরি করো না, [৫] যাদুটোনা করো না, [৬] কোন নিরপরাধ লোককে সরকারের কাছে অপরাধী বানিয়ে খুন করিতে নিয়ে যেও না, [৭] সুদ খেও না, [৮]কোন সতী-সাধ্বী মহিলার বিরুদ্ধে যেনার মিথ্যা অপবাদ দিও না এবং [৯] যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পালিয়ে যেও না। হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়! বিশেষ করে তোমরা শনিবারের বাধ্যবাধকতা অতিক্রম করো না। তারপর ইয়াহূদী শ্রোতা দুজন তাহাঁর পা দুটিতে ও হাত দুটিতে চুমা দিয়ে বললঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিঃসন্দেহে আপনি নাবী। তিনি বললেনঃ তাহলে তোমাদের দুজনকে ইসলাম গ্রহনে কিসে বাধা দিচ্ছে? তারা উভয়ে বললঃ দাঊদ আলাইহিস সালাম আল্লাহ্‌ তাআলার নিকটে দুআ করেছিলেন তিনি যেন বারবার তাহাঁর বংশধরদের মধ্য হইতেই নাবী পাঠান। অনন্তর আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে, আমরা যদি ইসলাম ক্ববূল করি তাহলে ইয়াহূদীরা আমাদেরকে মেরে ফেলবে।

জঈফ, ইবনি মাজাহ [৩৭০৫] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ।  সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩১৪৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলার বাণী : “তোমরা নামাযে স্বর [ক্বিরাআত] উচ্চ করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না”- [সূরা বানী ইসরাঈল ১১০] মক্কায় অবতীর্ণ হয়। রাসূলুল্রাহ [সাঃআঃ] উচ্চ স্বরে কুরআন তিলাওয়াত করলে মুশরিকরা কুরআনকে গালি দিত এবং এর অবতীর্ণকারী [আল্লাহ তাআলা] ও এর বাহককেও [জিবরীলকে] গালি দিত। তারপর আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন : “তোমরা নামাযের ক্বিরাআত উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করো না” অর্থাৎ আপনি উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করবেন না, অন্যথায় কুরআন, এর অবতরণকারী ও এর বাহককে গালি দেয়া হইবে। “এবং তা ক্ষীণস্বরেও পড়বে না”, তাহলে আপনার সাথীরা শুনতে পাবে না, [বরং মধ্যম আওয়াজে তা পাঠ করুন] যাতে তারা আপনার নিকট হইতে কুরআন শিখতে পারে।

সহীহ : বোখারি [৪৭২২], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১৪৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলার বাণী : “তোমার নামাযের ক্বিরাআত না উচ্চৈঃস্বরে পড়বে, আন না নিম্ন স্বরে, এ দুইয়ের মধ্যবর্তী মাত্রার আওয়াজ অবলম্বন কর”- [সূরা বানী ইসরাঈল ১১০] অবতীর্ণ হওয়ার সময় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্বায় আত্মগোপন করে ছিলেন। তিনি তার সাহাবীদের নিয়ে নামায আদায়ের সময় উচ্চস্বরে কিরাআত পাঠ করিতেন। মুশরিকরা তা শুনতে পেয়ে কুরআনকে এর অবতরণকারীকে এবং এর বাহককে গালি দিত। অতএব আল্লাহ তাআলা তাহাঁর নাবীকে বললেনঃ “তোমারা নামাযে উচ্চৈঃস্বরে ক্বিরাআত পাঠ করো না”, কারণ মুশরিকরা তা শুন কুরআনকে গালি দেয়। “আবার এত নীচু স্বরেও পড়বে না”, যাতে তোমরা সাহাবীদেরকে শুনতে অসুবিধা হয় বরং “এই দুইয়ের মদ্যবর্তী মাত্রার আওয়ারজ অবলম্বন কর”।

সহীহ : বোখারি [৪৭২২], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১৪৭. যির ইবনি হুবাইশ [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি হুজাইফা ইবনিল ইয়ামান [রাদি.]- কে প্রশ্ন করলাম, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি বাইতুল মাক্বদিসে নামায আদায় করিয়াছেন? তিনি বলেলেন, না। আমি বললাম, হ্যাঁ তিনি নামায আদায় করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, হে টেকো! তুমি এ ধরনের কথা বলছ, তা কিসের ভিত্তিতে বলছ? আমি বললাম, কুরআনের ভিত্তিতে। কুরআন আমার ও আপনার মাঝে ফাইসালা করিবে। হুজাইফা [রাদি.] বলিলেন, কুরআন হইতে যে ব্যক্তি দলীল গ্রহণ করিল যে কৃতকার্য হল। সুফইয়ান [রঃ]বলেন, তিনি [মিসআর] কখনো “কাদ ইহতাজ্জা” আবার কখনো “কাদ ফালাজা” বলেছেন। তারপর তিনি [যির] এই আয়াত তিলাওয়াত করেন : “পবিত্র মহান সেই সত্তা, যিনি এক রাতে তাহাঁর বান্দাকে মাসজিদুল হারাম হইতে দূরবর্তী মাসজিদে নিয়ে গেলেন”- [বানী ইসরাঈল ১]। হুযাইফাহ [রাদি.] বলেন, এ আয়াতের মাধ্যমে কি তুমি প্রমাণ করিতে চাও, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেখানে নামায আদায় করিয়াছেন? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, সেখানে যদি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামায আদায় করিতেন, তাহলে তোমাদের উপরও সেখানে নামায আদায় করা বাধ্যতামূলক হত, যেমন মাসজিদুল হারামে নামায আদায় করা তোমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। হুজাইফাহ [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর নিকট একটি পশু আনা হল। এর পিঠ ছিল দীর্ঘ এবং [চলার সময়] এর পা দৃষ্টির সীমায় পতিত হয়। তাঁরা দুজন [মহানাবী ও জিবরীল] জান্নাত, জাহান্নাম এবং আখিরাতের প্রতিশ্রুত বিষয়সমূহ দেখার পূর্ব পর্যন্ত বোরাকের পিঠ হইতে নামেননি। তারপর তাঁরা দুজন প্রত্যাবর্তন করেন। তারা যেভাবে গিয়েছিলেন অনুরূপভাবেই ফিরে আসেন [অর্থাৎ সওয়ারী অবস্থায়ই ফিরে আসেন]। হুজাইফাহ [রাদি.] বলেন, লোকেরা বলাবলি করে, তিনি বোরাককে বেঁধেছিলেন। কেন এটি তার নিকট হইতে পালিয়ে যাবে। অথচ গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু জানার মালিক [আল্লাহ তাআলা] বোরাককে তাহাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছিলেন।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩১৪৮. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আহাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আমি ক্বিয়ামাতের দিবসে সকল আদম সন্তানের নেতা হব। এতে গর্বের কিছু নেই। আমার হাতেই হামদের [প্রশংসার] পতাকা থাকিবে। এতেও গর্বের কিছু নেই। সেদিন আমার পতাকার নিচেই আদম [আঃ] এবং অন্য সকল নাবী একত্রিত হইবেন। আমিই প্রথম ব্যক্তি যার জন্য যামীন বিদীর্ণ করা হইবে [অর্থাৎ আমাকেই সর্বপ্রথম উত্থিত করা হইবে]। এতেও গর্বের কিছু নেই। লোকেরা তিনবার ভীতসন্ত্রস্ত হইবে। তারপর আদম [আঃ]- এর নিকট এসে তারা বলবে, আপনি আমাদের পিতা আদম। আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করুন। তিনি বলবেন, আমি এমন এক অপরাধ করেছিলাম যার পরিণতিতে আমাকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তোমরা বরং নূহ [আঃ]- নিকট যাও। তারা নূহ [আঃ]- নিকট এলে তিনি বলবেন, পৃথিবীর অধিবাসীদেরকে আমি এমন বদ দুআ করেছিলাম, যার কারণে তারা ধ্বংস হয়েছে [আমি এর কারণে লজ্জিত]। অতএব তোমরা ইবরাহীম [আঃ]-এর নিকট যাও। তারা ইবরাহীম [আঃ]-এর নিকট এলে তিনি বলবেন, আমি তিনটি মিথ্যা বলেছিলাম। [বর্ণনাকারী বলেন] তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তিনি প্রতিটি মিথ্যাকে কৌশল হিসেবে গ্রহণ করে আল্লাহ তাআলার দীনকে হিফাজাত করিয়াছেন। {ইবরাহীম [আঃ] বলবেন} তোমরা বরং মূসা [আঃ]-এর নিকট যাও। তারা মূসা [আঃ]- এর নিকট এলে তিনি বলবেন, আমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছি। অতএব তোমরা ঈসা [আঃ]- এর নিকট যাও। তারা ঈসা [আঃ]- এর নিকট এলে তিনি বলবেন, আল্লাহ তাআলাকে বাদ দিয়ে আমার ইবাদাত করা হয়েছে। আমাকে মাবূদ বানানো হয়েছে। তোমরা মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর নিকট যাও। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তারা আমার নিকট আসবে এবং আমি তাহাদের সাথে যাব। ইবনি জুদআন বলেন, আনাস [রাদি.] বলেছেন, আমি যেন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর প্রতি তাকিয়ে আছি, আর তিনি বলেছেনঃ আমি জান্নাতের দরজার শিকল ধরে তাতে খটখট আওয়াজ করব। ভেতর হইতে বলা হইবে, কে? বলা হইবে, মুহাম্মদ [সাঃআঃ]। ভেতরের অধিবাসীরা সাথে সাথে আমার সৌজন্যে দরজা খুলে দিবে এবং আমাকে মারহাবা মারহাবা বলে অভিনন্দন জানাবে। তখন আমি সিজদায় পতিত হব। এ অবস্থায় আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি বিশেষ হামদ ও সানা [প্রশংসা ও স্তুতিবাক্য] ইলহাম করবেন [গোপনে শিখিয়ে দিবেন এবং আমি তা পাঠ করিতে থাকব]। আমাকে বলা হইবে, মাথা তোল, প্রার্থনা কর দেয়া হইবে, সুপারিশ কর ক্ববূল করা হইবে এবং বল, তোমার কথা শুনা হইবে। [রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন] এটাই হল সেই মাক্বামে মাহমূদ [উচ্চ প্রশংসিত মর্যাদা], যার কথা আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “আশা করা যায় তোমার প্রভূ তোমাকে মাক্বামে মাহমূদে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন- [সূরা বানী ইসরাঈল ৭৯]। সুফইয়ান [রঃ]বলেন, শুধু মাত্র এই কথাটুকুই আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণনা করা হয়েছে : “আমি জান্নাতের দরজার শিকল ধরে খটখট আওয়াজ করব”।

সহীহ : ইবনি মাজাহ [৪৩০৮]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এ হাদীসটি কয়েকজন বর্ণনাকারী আবু নাযরাহ হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে এই সূত্রে দীর্ঘাকারে বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা বনী ইসরাঈল তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply