সূরা মায়েদা তাফসীর । তাফসীরুল কুরআন

সূরা মায়েদা তাফসীর । তাফসীরুল কুরআন

সূরা মায়েদা তাফসীর । তাফসীরুল কুরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন >> সুরা মায়েদা আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ

অধ্যায়ঃ ৪৪, অনুচ্ছেদ-৬ঃ সূরা মায়েদা তাফসীর

৩০৪৩. তারিক্ব ইবনি শিহাব [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ইয়াহূদী উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] কে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম” – [সূরা আল –মায়িদাহ্‌ : ৩] আয়াতটি যদি আমাদের উপর অবতীর্ণ হত তাহলে আমরা উক্ত দিনকে ঈদের [উৎসবের] দিন হিসেবে নির্দ্ধারণ করতাম। উমার [রাদি.] বলিলেন, নিশ্চয়ই আমি জানি কোন দিন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। এটি [বিদায় হাজ্জে] আরাফার দিন শুক্রবারে অবতীর্ণ হয়েছিল।

সহীহ : বোখারি [৪৬০৬], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৪৪. আম্মার ইবনি আবী আম্মার [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করিলেন [অনুবাদ] : “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম” – [সূরা আল –মায়িদাহ ৩]। তাহাঁর নিকট এক ইয়াহূদী উপস্থিত ছিল। সে বলল, আমাদের উপর এরূপ একটি আয়াত অবতীর্ণ হলে সেই দিনকে আমরা অবশ্যই ঈদের দিন হিসেবে পালন করতাম। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, এটি তো [আমাদের] ঈদের দিনেই অবতীর্ণ হয়েছে : জুমুআর দিন ও আরাফার দিন।

সনদ সহীহ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি ইবনি আব্বাস [রাদি.] এর রিওয়ায়াত হিসেবে হাসান গারীব। হাদীসটি সহীহ। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৪৫. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দয়াময় আল্লাহ তাআলা ডান হাত পূর্ণ। সর্বদা তা অনুগ্রহ ঢালছে। রাত দিনের অবিরাম দান তাতে কখনো কমতি ঘটাতে পারে না। তিনি আরো বলেন, তোমরা লক্ষ্য করেছ কি যেদিন থেকে তিনি আসমান-যামীন সৃষ্টি করিয়াছেন সেদিন হইতে কত না দান করে আসছেন, অথচ তাহাঁর ডান হাতে যা আছে তাতে কিছুই কমতি হয়নি। [সৃষ্টির পূর্বে] তাহাঁর আরশ ছিল পানির উপর। তাহাঁর অপর হাতে রয়েছে মীযান [দাড়ি-পাল্লা]। তিনি তা নীচু করেন ও উত্তোলন করেন [সৃষ্টির রিযিক নির্ধারণ করেন]।

সহীহ : ইবনি মাজাহ [১৯৭]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি হল নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যাস্বরূপ : “ইয়াহূদীরা বলে, আল্লাহ তাআলার হাত রুদ্ধ। ওরাই আসলে রুদ্ধহস্ত এবং ওরা যা বলে তজ্জন্য ওরা অভিশপ্ত। বরং আল্লাহ তাআলার উভয় হাতই প্রসারিত, যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন” – [সূরা আল –মায়িদাহ : ৬৪] ।

ইমামগণ বলেন, এ হাদীস যেরূপে [আমাদের নিকট] এসেছে, কোনরূপ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও সন্দেহ-সংশয় ব্যতীতই তার উপর সেভাবেই ঈমান আনতে হইবে। একাধিক ইমাম এ কথা বলেছেন। তাহাদের মধ্যে রয়েছেন সুফইয়ান সাওরী, মালিক ইবনি আনাস, ইবনি উয়াইনাহ, ইবনিল মুবারাক [রঃ]প্রমুখ। তাহাদের মতে এরূপ বিষয় বর্ণনা করা যাবে, এগুলোর উপর ঈমান রাখতে হইবে, কিন্তু তা কেমন এ কথা বলা যাবে না। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৪৬.আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] কে [নিরাপত্তামূলক] পাহারা দেয়া হত। তারপর আয়াত অবতীর্ণ হল [অনুবাদ] : “আল্লাহ তাআলা তোমাকে মানুষ হইতে তাহাঁর রক্ষা করবেন” – [সূরা আল –মায়িদাহ ৬৭]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজের ঘর হইতে মাথা বের করে পাহারাদারগণকে বলিলেন, হে লোকজন! তোমরা [আমার পাহারা হইতে] চলে যাও। কারণ আল্লাহ তাআলাই আমার হিফাজাতের দায়িত্ব নিয়েছেন।

নাসর ইবনি আলী মুসলিম ইবনি ইবরাহীম হইতে উক্ত সনদ অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। এ হাদীসটি কেউ কেউ জুরাইরী হইতে আবদুল্লাহ ইবনি শাক্বীক্বের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, “নাবী [সাঃআঃ] কে পাহারা দেয়া হত”। তাতে তারা আয়িশাহ্‌ [রাদি.] এর উল্লেখ করেননি। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩০৪৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বানূ ইসরাঈল গর্হিত কাজে জড়িত হলে তাহাদের বিজ্ঞ আলিমগণ তাহাদেরকে বাধা দেন। কিন্তু তারা [পাপাচার থেকে] ক্ষান্ত হয়নি। এতদসত্ত্বেও তাহাদের আলিমগণ তাহাদের সাথে তাহাদের সভা সমিতিতে উঠাবসা ঠিক রাখে এবং তাহাদের সাথে এক সঙ্গে ভোজসভায় যোগদান করে। ফলে আল্লাহ্ তাআলা তাহাদের কারো হৃদয়সমূহ অন্য কারো [পাপীদের] হৃদয়ের সাথে একাকার করে দিলেন এবং দাঊদ [আঃ] ও ঈসা ইবনি মারইয়াম [আঃ]-এর যবানীতে তাহাদেরকে অভিসম্পাত করিলেন। কেননা, তারা বিরুদ্ধাচারী হয়ে গিয়েছিল এবং সীমালংঘন করেছিল। রাবী বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি এবার সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেনঃ কসম সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার জান! ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা মুক্তি পাবে না যতক্ষণ না তোমরা পথভ্রষ্ট লোকদের [শক্তভাবে] বাধা দিচ্ছ।

জঈফ, ইবনি মাজাহ [৪০০৬] আবু ঈসা বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনি আবদুর রহমান বলেন, ইয়াযীদ বলেছেন, সুফিয়ান সাওরী [রঃ]উক্ত হাদীসের সনদে আবদুল্লাহ [রাদি.]-এর উল্লেখ করেননি। এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীসটি মুহাম্মাদ ইবনি মুসলিম ইবনি আবুল ওয়ায্যাহ-আলী ইবনি বাযীমা হইতে তিনি আবু উবাইদা হইতে তিনি আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এরকমই বর্ণনা করিয়াছেন। কেউ কেউ এ হাদীস আবু উবাইদার সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩০৪৮. আবু উবাইদা [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বানী ইসরাঈলের মধ্যে যখন দোষ পদ-স্খলন ছড়িয়ে পড়তে লাগলো তখন তাহাদের একজন অন্যজনকে পাপে নিমজ্জিত দেখলে তাকে তা থেকে নিষেধ করত। কিন্তু সে তাকে যা করিতে দেখেছে তা পরদিন তাকে তার সাথে পানাহার ও এক সাথে মাজলিসে উঠাবাসা হইতে নিবৃত্ত রাখল না। অবশেষে আল্লাহ্ তাআলা তাহাদের হৃদয়সমূহকে পরস্পর একাকার করে দিলেন। তাহাদের প্রসঙ্গেই কুরআন অবতীর্ণ হয়। তিনি পাঠ করেনঃ “বানী ইসরাঈলের মধ্যে যেসব লোক কুফরী করেছিল তাহাদের প্রতি দাঊদ ও মারইয়ামের পুত্র ঈসার যবানে অভিশাপ করা হয়েছে। কেননা, তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী”। তিনি তিলাওয়াত করিতে করিতে “তারা আল্লাহ্ তাআলাতে, নাবীতে ও তার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ঈমান আনলে ওদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না, কিন্তু তাহাদের অনেকেই ফাসিক” [সূরাঃ আল-মায়িদাহ- ৭৯-৮১] পর্যন্ত পৌঁছলেন। রাবী বলেন, আল্লাহ্ তাআলার নাবী হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। তিনি সোজা হয়ে বসে বলেনঃ না, তোমরা যালিমের হাত ধরে তাকে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত রক্ষা পাবে না।

জঈফ, দেখুন পূর্বের হাদীস। বুনদার আবু দাঊদ-আত-তাইয়া লিসী হইতে তিনি মুহাম্মদ ইবনি মুসলিম ইবনি আবুল ওয়ায্যাহ হইতে তিনি আলী ইবনি বাযীমা হইতে তিনি আবু উবাইদা হইতে তিনি আবদুল্লাহ [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩০৪৯. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হে আল্লাহ! শরাবের ব্যাপারে আমাদের জন্য পরিপূর্ণ ও সুষ্পষ্ট বর্ণনা দিন। এ প্রসঙ্গেই সূরা আল –বাক্বারার নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “লোকে তোমাকে মদ ও জুয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করে। বল, উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও। কিন্তু এগুলোর পাপ এগুলোর উপকার অপেক্ষা বেশী” [সূরা আল –বাক্বারাহ ২১৯]।

উমার [রাদি.] কে ডেকে এনে তাকে উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করে শুনানো হল। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! শরাবের ব্যাপারে আমাদের আরও সুস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিন। তখন সূরা আন –নিসার নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের নিকটেও যেও না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার” – [সূরা আন –নিসা ৪৩]। উমার [রাদি.] কে ডেকে এনে তাকে উক্ত আয়াত পাঠ করে শুনানো হল। উমার [রাদি.] আবারো বলিলেন, হে আল্লাহ! শরাবের ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্ট ও পূর্ণ বিবরণ দিন। তারপর সূরা আল –মাইদার এ আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “শাইতান তো শরাব ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহ তাআলার স্মরণে ও নামাযে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হইবে না?” [সূরা আল –মায়িদাহ ৯১] উমার [রাদি.] কে ডেকে এনে তাকে এ আয়াত পাঠ করে শুনানো হল। তিনি বলিলেন, আমরা নিবৃত হলাম, আমরা নিবৃত হলাম।

সহীহ : সহীহাহ [২৩৪৮] । আবু ঈসা বলেন, ইসরাঈলের সূত্রে এটি মুরসালরূপে বর্ণিত হয়েছে। মুহাম্মদ ইবনিল আলা –ওয়াকী হইতে, তিনি ইসরাঈল হইতে, তিনি আবু ইসহাক হইতে, তিনি আবু মাইসারাহ [রঃ]হইতে এই সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ! শরাব ও মাদকদ্রব্য প্রসঙ্গে আমাদের জন্য সুস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্হ বিবরণ দিন… তারপর তিনি পূর্বোক্ত হাদীসের একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। এটি মুহাম্মদ ইবনি ইউসুফের হাদীসের চাইতে অনেক বেশী সহীহ। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৫০. আল–বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, শরাব হারাম হওয়ার পূর্বেই নাবী [সাঃআঃ] এর সাহাবীদের বেশ কয়েকজন মারা যান। শরাব হারাম হওয়ার পর লোকেরা বলাবলি করিতে লাগল, আমাদের ঐ সকল সাথীদের কি হইবে, যারা শরাব পানে অভ্যস্ত থাকা অবস্থায় মারা গেছেন! তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “যারা ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে, তারা পূর্বে যা ভক্ষণ করেছে সেজন্য তাহাদের কোনরূপ গুনাহ নেই, যদি তারা সাবধান হয় এবং ঈমান আনে ও উত্তম কাজ করে, সাবধান হয় ও ঈমান আনে, আবার সাবধান হয় ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন” – [সূরা আল –মায়িদাহ ৯৩]।

পরবর্তী হাদীসের সহায়তায় সহীহ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। শুবাহ্‌ [রঃ]আবু ইসহাক [রঃ]এর বরাতে এটি আল –বারাআ [রাদি.] সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। বুন্‌দার এটি আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৫১. আবু ইসহাক [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আল –বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] বলেছেন, নাবী [সাঃআঃ] এর বেশ কিছু সাহাবী শরাব নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্বে মদ্যপানে অভ্যস্ত অবস্থায় মারা যান। শরাব হারাম হওয়া সম্পর্কিত আয়াত অবতীর্ণ হলে নাবী [সাঃআঃ] এর সাথীদের কেউ কেউ বলেন, আমাদের ঐসব সাথীদের কি হইবে, যারা শরাব পানে অভ্যস্ত থাকাকালে মারা গেছেন! তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “যারা ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে তারা পূর্বে যা ভক্ষণ করেছে, সেজন্য তাহাদের কোন গুনাহ নেই…..” – [সূরা আল –মায়িদাহ ৯৩]।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৫২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মদ্যপান হারাম হওয়ার পর লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল “মদ্যপান হারাম হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যারা শরাবপানে অভ্যস্ত থাকাকালে মারা গেছে তাহাদের সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তখন নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “যারা ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে তারা পূর্বে যা ভক্ষণ করেছে সেজন্য তাহাদের কোনরূপ গুনাহ নেই, যদি তারা সাবধান হয় এবং ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে” – [সূরা আল –মায়িদাহ ৯৩]।

পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ।. আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৫৩. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, “যারা ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে তারা পূর্বে যা ভক্ষণ করেছে সেজন্য তাহাদের কোন গুনাহ নেই…” [সূরা আল –মায়িদাহ ৯৩] , এই আয়াত অবতীর্ণ হলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলেন, তুমিও তাহাদের অন্তর্ভূক্ত।

সহীহ : মুসলিম [১/১৪৭]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।  সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৫৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ রাসূল! আমি গোশ্‌ত খেলে স্ত্রীসহবাসের জন্য অস্থির হয়ে পড়ি এবং যৌনাবেগ আমাকে ব্যাকুল করে তোলে। তাই আমি নিজের জন্য গোশত খাওয়া হারাম করে নিয়েছি। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট ও পবিত্র যেসব বস্তু হালাল করিয়াছেন, তোমরা সেগুলোকে হারাম করে নিও না এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যা কিছু হালাল ও উৎকৃষ্ট রিযিক দান করিয়াছেন তোমরা তা হইতে খাও এবং আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর, যার প্রতি তোমরা ঈমান এনেছ” – [সূরা আল –মায়িদাহ্‌ ৮৭, ৮৮]।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। উসমান ইবনি সাদ হইতে কেউ কেউ এটিকে মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে ইবনি আব্বাস [রাদি.] এর উল্লেখ নেই। খালিদ এ হাদীসটি ইকরিমাহ [রঃ]হইতে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৫৫. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, “লোকদের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার ক্ষমতা আছে, আল্লাহ্ তাআলার উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হাজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য” [সূরাঃ আলে-ইমরান- ৯৭], এই আয়াত অবতীর্ণ হলে সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! প্রতি বছর [কি হাজ্জ করিতে হইবে]? তিনি নিরব থাকলেন। তারা আবার বলিলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! প্রতি বছর কি? তিনি বলিলেন, না। তবে আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তাই ওয়াজিব হত। তখন পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা এমন কোন বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা তোমাদের জন্য প্রকাশ করা হলে তোমাদের মন্দ লাগবে” [সূরাঃ আল-মায়িদাহ- ১০১]।

জঈফ, পূর্বেও [৮১১] নং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ আলী [রাদি.]-এর হাদীস হিসেবে এটি হাসান গারীব। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে।  সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩০৫৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার বাবা কে? তিনি বললেনঃ তোমার বাবা অমুক। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা এমন কোন বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা তোমাদের নিকট প্রকাশিত হলে তা তোমাদের কষ্ট দিবে” – [সূরা আল –মায়িদাহ ১০১]।

সহীহ : বোখারি [২৬২১], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৫৭. আবু বাক্‌র সিদ্দীক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হে লোকসকল! তোমরা এ আয়াত পাঠ করে থাক [অনুবাদ] : “হে ইমানদারগণ! তোমাদের দায়িত্ব তোমাদেরই উপর। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করিতে পারবে না [সূরা আল-মায়িদাহ্‌ ১০৫]। অথচ আমি রাসুলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] কে বলিতে শুনিয়াছি : মানুষ কোন যালিমকে যুলুম ও অত্যাচার করিতে দেখেও তার হাত ধরে তাকে নিবৃত্ত না করলে অচিরেই আলাহ তাআলা তাহাদেরকে ব্যপকভাবে শাস্তি দিবেন।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ । ইসমাইল ইবনি আবী খালিদের সুত্রে অপরাপর বর্ণনাকারীও এটিকে মারফুরুপে একি রকম বর্ণনা করিয়াছেন । কেউ কেউ ইস্মাঈল হইতে কাইস [রঃ]এর সুত্রে এটিকে আবু বাকর [রাদি.] এর বক্তব্য হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন । তারা এটিকে মারফুরুপে বর্ণনা করেননি । সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৫৮. আবু উমাইয়্যা আশ-শাবানী [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আবু সালাবা আল-খুশানী [রাদি.]-এর নিকট এসে তাকে বললাম, এ আয়াত প্রসঙ্গে আপনি কি করণীয় বলে ঠিক করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ কোন্ আয়াত? আমি বললাম, আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের দায়িত্ব তোমাদেরই উপর। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও তবে যে বিপথগামী হয়েছে সে তোমাদের কোন লোকসান করিতে পারবে না” [সূরাঃ আল-মায়িদাহ- ১০৫]। আবু সালাবা [রাদি.] বললেনঃ আল্লাহ্‌র কসম! তুমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ জেনেছে এমন একজনকে প্রশ্ন করেছ। আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছি। তিনি বলেছেনঃ বরং তোমরা সৎ কাজের আদেশ দিতে থাক এবং খারাপ কাজ হইতে বিরত করিতে থাক। অবশেষে যখন দেখবে কৃপণতার বশ্যতী করা হচ্ছে, নাফসের অনুসরণ করা হচ্ছে, দুনিয়াকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে এবং প্রত্যেকে নিজের মতকে সর্বোত্তম মনে করছে, তখন তুমি শুধুমাত্র নিজেকে রক্ষায় নিয়োজিত থেকো এবং সাধারণের ভাবনা ছেড়ে দিও। কারণ তোমাদের পর এমন যুগ আসবে, যখন [দ্বীনের উপর] সবর করে থাকা জ্বলন্ত অঙ্গার হাতের মুঠোয় ধারণ করে রাখার মত [যন্ত্রণাদায়ক] হইবে। ঐ সময় দ্বীনের উপর আমলকারীর প্রতিদান হইবে তোমাদের মত পঞ্চাশজন আমলকারীর প্রতিদানের সমান। আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক [রঃ]বলেনঃ উতবা ছাড়া অপরাপর রাবীর রিওয়ায়াত আরো আছে, প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাদের মধ্যকার পঞ্চাশজন না তাহাদের মধ্যকার পঞ্চাশজন আমলকারীর সমান? তিনি বললেনঃ না, বরং তোমাদের মধ্যকার পঞ্চাশজনের সমান তার সাওয়াব হইবে।

জঈফ, নাকদুল কাত্তানী [২৭/২৭], মিশকাত [৫১৪৪] কিন্তু হাদীসের কিছু অংশ সহীহ, দেখুন হাদীস নং [২৩৬১]। সহীহা [৫৯৪], আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩০৫৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, তামীম আদ-দারী [রাদি.] নিম্নোক্ত আয়াত প্রসঙ্গে বলেছেন, আমি ও আদী ইবনি বাদ্দা ব্যতীত অপর কারো সাথে তা সম্পর্কিত নয়ঃ “হে ঈমানদারগণ! যখন তোমাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হাযির হয় তখন ওসিয়াত করার সময় তোমাদের মধ্য হইতে ন্যায়নিষ্ঠ দুজনকে সাক্ষী রাখবে” [সূরাঃ আল-মাইদা- ১০৬]। তারা দুজনই ছিলেন নাসারা।

ইসলাম ক্ববূলের পূর্বে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে তাহাদের সিরিয়ায় আসা যাওয়া ছিল। কোন এক সময় তারা ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়া যান। বানূ সাহ্‌মের গোলাম বুদাইল ইবনি আবু মারইয়ামও ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে তাহাদের নিকট আসলো। তার নিকট একটি রূপার পানপাত্র ছিল। তিনি এটি বাদশার নিকট বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে এনেছিলেন। তার ব্যবসায় পণ্যের মধ্যে এটিই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট। হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি তাহাদের [তামীমুদ দারী ও আদী ইবনি বাদ্দা] উভয়কে ওসিয়াত করেন যে, [তার মারা যাবার পর] তার রেখে যাওয়া মালামালা যেন তারা তার পরিজনকে পৌঁছে দেয়। তামীম [রাদি.] বলেনঃ তিনি মারা গেলে আমরা পানপাত্রটি নিয়ে গিয়ে এক হাজার দিরহামে বিক্রয় করি এবং বিক্রয়লব্ধ টাকা আমি ও আদী ইবনি বাদ্দা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেই। আমরা তার পরিবার-পরিজনের নিকট পৌছে, আমাদের নিকট যা কিছু সঞ্চিত ছিল তা তাহাদের ফিরিয়ে দিলাম। কিন্তু তারা পানপাত্রটি না পেয়ে আমাদেরকে সেটি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করে। আমরা বললাম, সে তো আমাদের নিকট ইহা ব্যতীত আর কিছু রেখে যায়নি। তামীম [রাদি.] বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মাদীনায় পদাপর্ণের পর যখন আমি ইসলাম ক্ববূল করি, তখন আমি আমার এ অপকর্মের জন্য নিজেকে দোষী মনে করলাম [এবং এ হইতে মুক্ত হইতে চাইলাম]। তাই আমি তার পরিজনের নিকট এসে তাহাদের আসল ঘটনা খুলে বললাম এবং তাহাদের পাঁচ শত দিরহাম দিয়ে দিলাম। আমি তাহাদের এও বললাম, আমার সংগীর [আদী ইবনি বাদ্দা] নিকটও সমপরিমাণ [দিরহাম] রয়েছে। তারা তখন বিষয়টি নিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এলো। তিনি তাহাদের নিকট প্রমাণ চাইলে তারা তা পেশ করিতে অক্ষম হয়। তিনি তাহাদের নির্দেশ দিলেন যে, তারা আদী ইবনি বাদ্দাকে এমনভাবে কসম করিতে বলবে যেভাবে কসম করলে তার ধর্মের দৃষ্টিতে তা গুরুত্বপূর্ণ হয়। তারপর আদী শপথ করিল [নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য]। তখন আল্লাহ্ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ হে মুমিনগণ! তোমাদের কারও যখন মৃত্যু হাযির হয় তখন ওসিয়াত করার সময় তোমাদের মধ্য হইতে দুজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে… আল্লাহ্ তাআলা সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না” [সূরাঃ আল-মায়িদাহ- ১০৬-১০৮]। তারপর আমর ইবনিল আস [রাদি.] ও অপর এক ব্যক্তি সাক্ষ্য দিতে উঠলেন এবং শপথ করিলেন। অবশেষে আদী ইবনি বাদ্দার নিকট হইতে পাঁচশত দিরহাম আদায় করা হয়।

সনদ অত্যন্ত দুর্বল, আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। এটির সনদ সহীহ নয়। আর যে আবুন নাযরের নিকট হইতে মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাক এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন, আমার মতে তিনি হচ্ছেন মুহাম্মাদ ইবনিস সাইব আল-কালবী। আবুন নাদর হল তার ডাকনাম। মুহাদ্দিসগণ তাকে বর্জন করিয়াছেন। তিনি একজন তাফসীরকারও। আমি মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈলকে বলিতে শুনিয়াছি যে, মুহাম্মাদ ইবনিস সাইব আল-কালবীর ডাকনাম আবুন নাযর। উম্মু হানী [রাদি.]-এর মুক্তগোলাম আবু সালিহ হইতে সালিম আবুন নাযর আল-মাদীনীর কোন বর্ণনা আছে বলে আমাদের জানা নেই। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ বিষয়ে সংক্ষেপিত আকারে ভিন্নরূপে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

৩০৬০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, বানু সাহ্‌মের এক লোক তামীমুদ দারী [রাদি.] ও আদী ইবনি বাদ্দার সাথে [সফরে] বের হয়। বানু সাহমের লোকটি এমন এক এলাকায় মারা গেল, যেখানে কোন মুসলিম ছিল না। ঐ দুই ব্যক্তি তার পরিত্যক্ত সম্পদ নিয়ে তার পরিজনের নিকট ফিরে এলে তারা তার মধ্যে স্বর্নখচিত রুপার পানপাত্রটি খুঁজে পেল না। রাসুলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাদের উভয়কে শপথ করালেন। তার ওয়ারিশরা পরে মক্কায় ঐ পানপাত্রটি দেখিতে পায়। তাহাদের বলা হয়, আমরা এটি তামীম ও আদীর নিকট হইতে কিনেছি। সাহমীর ওয়ারিশদের মধ্য হইতে দুইজন লোক দাবি নিয়ে উঠে এবং আল্লাহর শপথ করে বলে, আমাদের সাক্ষ্য উক্ত দুইজনের সাক্ষ্যর চাইতে অনেক বেশি সত্য ও গ্রহণযোগ্য। নিঃসন্দেহে এ পানপাত্রটি তাহাদের সাথীরই। এদের সম্পর্কেই এ আয়াত অবতীর্ণ [অনুবাদ] : “ হে মমিনগণ! তোমাদের কারও যখন মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন ওয়াসিয়াত করার সময় তোমাদের মধ্য হইতে দুজন ন্যায়পরায়ন লোককে সাক্ষী রাখবে… [সূরা আল-মায়েদাহ্‌ ১০৬]।

সহীহ : বোখারি [২৭৮০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান গারীব । এটি হল ইবনি আবী বারিদার রিওয়ায়াত । সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৬১. আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আকাশ হইতে [ঈসা [আঃ]-এর উম্মাতের জন্য] খাঞ্চাভর্তি রুটি ও মাংস পাঠানো হয়। তাহাদের প্রতি হুকুম ছিল তারা যেন খিয়ানাত না করে এবং আগামী কালের জন্য তা সঞ্চয় করে না রাখে। কিন্তু তারা এতে খিয়ানাত করিল ও তা থেকে জমা করিল এবং আগামীকালের জন্য তুলে রাখল। ফলে তাহাদেরকে বানর ও শুকরে পরিনত করা হল।

সনদ দুর্বল। সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস। ব্যাখ্যা

৩০৬২. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ঈসা [আঃ] কে তাহাঁর যুক্তি –প্রমান শিখিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তাআলাই তাঁকে তা শিখিয়ে দেন। যেমন নিম্নোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন [অনুবাদ] : “আল্লাহ তাআলা যখন বললেনঃ হে ঈসা ইবনি মারিয়াম! তুমি কি লোকদের বলেছিলে, তোমরা আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আমাকে এবং আমার মাকে ইলাহরুপে গ্রহন কর –[সূরা আল-মায়িদাহ ১১৬]? আবু হুরায়রা্‌ [রাদি.] নাবী [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে বর্ণনা করেন : তখন আল্লাহ তাআলাই ঈসা [আঃ] কে উত্তর শিক্ষা দিলেন : “ তিনি বলিলেন , তুমি মহিহান্বিত! যা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভনীয় নয় —-তবে তুমি তো পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়”—[সূরা আল-মায়েদাহ্‌ ১১৬-১১৮]।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান সহীহ । সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০৬৩. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সর্বশেষ অবতীর্ণ সূরা হল সূরা আল –মায়িদাহ্‌।

সনদ হাসান [সহীহ আত-তিরমিযি অনুযায়ী] / সনদ দুর্বল [জয়ীফ আত-তিরমিযি অনুযায়ী]। , হাকিম এটিকে সহীহ বলেছেন এবং এর একটি শাহিদ বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম যাহাবী তাকে সমর্থন করিয়াছেন।আবু ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান গারীব । এ ছাড়া ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও একটি বর্ণনা করিয়াছেন । তাতে তিনি বলেছেন, সবশেষে অবতীর্ণ সূরা হচ্ছে “ ইয়া জা-য়া নাস্‌রুল্লাহ –হ —[সূরা নাস্‌র] ।  সূরা মায়েদা তাফসীর – এই হাদিসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply