সূরা আন নিসা তাফসির । তাফসির উল কুরআন
সূরা আন নিসা তাফসির । তাফসির উল কুরআন >> তিরমিজি শরিফের তাফসিরুল কোরআন অধ্যায়ের অন্যান্য সুরার তাফসীর পড়ুন
সুরা নিসা আরবি তে পড়ুন বাংলা অনুবাদ সহ
অনুচ্ছেদ-৫ঃ সূরা আন নিসা তাফসির
৩০১৫. মুহাম্মদ ইবনিল মুনকাদির [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি অসুস্থ হলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দেখিতে আসেন। আমি অজ্ঞান অবস্থায় ছিলাম। আমার চেতনা ফিরে পাওয়ার পর আমি বললাম, আমি আমার ধন-সম্পদ প্রসঙ্গে কিভাবে সিদ্ধান্ত করব? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার বিষয়ে নীরব থাকলেন। তারপর আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “আল্লাহ তাআলা তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেনঃ এক পুরুষের [পুত্রের] অংশ দুজন মহিলার [কন্যার] সমান” – [সূরা আন –নিসা ১১]।
সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [২৭২৮], বোখারি [৪৫৭৭], মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি মুহাম্মদ ইবনিল মুনকাদির হইতে একাধিক বর্ণনাকারী বর্ণনা করিয়াছেন। আল –ফাযল ইবনিস সাব্বাহ আল –বাগদাদী-সুফইয়ান ইবনি উয়াইনাহ হইতে, তিনি মুহাম্মদ ইবনিল মুনকাদির হইতে, তিনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আল –ফাযল ইবনিস সাব্বাহর হাদীসে এ হাদীসের চেয়ে আরো বেশী বর্ণনা আছে। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০১৬. আবু সাঈদ আল –খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কয়েকজন মহিলা আওতাস যুদ্ধের দিন আমাদের হস্তগত হয়, যাদের স্বামীরা মুশরিকদের মধ্যে বর্তমান ছিল। তাই ঐ সব মহিলাকে আমাদের কিছু সংখ্যক লোক অপছন্দ করিল। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন : “এবং নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ” – [সূরা আন –নিসা ২৪]।
সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [১৮৭১], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০১৭. আবু সাঈদ আল –খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আওতাস যুদ্ধের দিন কয়েকজন বন্দী মহিলা আমাদের হাতে আসে যাদের স্বামীরা তাহাদের সম্প্রদায়ে বর্তমান ছিল। সাহাবীগণ বিষয়টি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে অবহিত করেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় : “এবং নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত সকল সধবা নারী তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ” – [সূরা আন –নিসা ২৪]।
সহীহ : দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। সুফইয়ান সাওরী [রঃ]এভাবে উসমান আল –বাত্তী হইতে, তিনি আবুল খালীল হইতে, তিনি আবু সাঈদ আল –খুদরী [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের মত বর্ণনা করিয়াছেন। অবশ্য এ হাদীসে আবু আলক্বামার উল্লেখ নেই। ক্বাতাদাহ [রঃ]এর সূত্রে হাম্মাম ব্যতীত অপর কেউ এ হাদীসের সনদে আবু আলক্বামার উল্লেখ করিয়াছেন বলে আমার জানা নেই। আবুল খালীলের নাম সালিহ ইবনি আবু মারইয়াম। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০১৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] কাবীরা গুনাহ প্রসঙ্গে বলেনঃ তা হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সাথে শারীক করা, বাবা-মার অবাধ্য হওয়া, নরহত্যা করা ও মিথ্যা বলা।
সহীহ : গাইয়াতুল মারাম [২৭৭], বোখারি ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব সহীহ। রাওহ ইবনি উবাদাহ [রঃ]শুবাহ [রঃ]হইতে এটি বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি সনদে [বর্ণনাকারীর নাম উবাইদুল্লাহ ইবনি আবু বাকর -এর পরিবর্তে] আবদুল্লাহ ইবনি আবু বাকর বলেছেন, তা সঠিক নয়। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০১৯. আবদুর রাহমান ইবনি আবু বাকরাহ [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তাহাঁর বাবার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেলেন : আমি কি সবচাইতে মারাত্মক কবীরা গুনাহগুলো প্রসঙ্গে তোমাদেরকে অবহিত করবো না? সাহাবীগণ বলিলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলার সাথে অংশীদার স্থাপন, বাবা-মার অবাধ্য হওয়া। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন, এবার উঠে সোজা হয়ে বসে বললেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, অথবা বলেছেনঃ মিথ্যা কথা বলা। আবু বাকর [রাদি.] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ কথাটি বারবার বলে যাচ্ছিলেন। এমনকি আমরা বললাম, আহা! তিনি যদি চুপ হইতেন।
সহীহ : প্রাগুক্ত, বোখারি, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০২০. আবদুল্লাহ ইবনি উনাইস আল –জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মারাত্মক মারাত্মক কাবীরা গুনাহ হল –আল্লাহ তাআলার সাথে অংশীদার স্থাপন করা, বাবা-মার নাফারমানী করা এবং মিথ্যা শপথ করা। কেউ আল্লাহ তাআলার নামে অপরিবর্তনীয় ও অবশ্যম্ভাবীরূপে প্রযুক্ত হওয়ার মত শপথ করলে এবং তাতে মশার পাখা বরাবর নগণ্য মিথ্যাও যোগ করলে তা তার অন্তরে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত একটি কলংকময় দাগ হয়ে বিরাজিত থাকিবে।
হাসান : মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [৩৭৭৭]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবু উমামা আল –আনসারী [রাদি.] হলেন সালাবার ছেলে। তার নাম আমাদের জানা নেই। তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে বেশ কিছু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩০২১. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কাবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ তাআলার সাথে অংশীদার স্থাপন করা, বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া, অথবা বলেছেনঃ মিথ্যা শপথ করা। বর্ণনাকারী শুবাহর সন্দেহ যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] শেষোক্ত দুটি কথার কোনটি বলেছেন।
সহীহ : বোখারি। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০২২. মুজাহিদ [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
উম্মু সালামাহ [রাদি.] বলেন, পুরুষরা জিহাদ করে কিন্তু মহিলারা জিহাদ করে না। মীরাসের [উত্তরাধিকার] ক্ষেত্রেও মহিলারা [পুরুষের তুলনায়] অর্ধেক পায়। এ প্রসঙ্গেই কল্যাণময় আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “আল্লাহ তাআলা যদ্দারা তোমাদের কাউকে অপর কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন, তোমরা তার লোভ করো না। যা পুরুষ অর্জন করেছে তা তার প্রাপ্য অংশ আর নারী যা অর্জন করিয়াছেন তা তার প্রাপ্য অংশ। তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট তার অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। আল্লাহ তাআলা নিশ্চয়ই সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ” – [সূরা আন –নিসা ৩২]। মুজাহিদ [রঃ]বলেন, একই প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত আয়াতও অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ ও ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, লজ্জাস্থান হিফাযাতকারী পুরুষ ও লজ্জাস্থান হিফাযাতকারী নারী, আল্লাহ তাআলাকে বেশী স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহ তাআলাকে বেশী স্মরণকারী নারী এদের জন্য আল্লাহ তাআলা রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান” – [সূরা আল –আহযাব ৩৫]। উম্মু সালামাহ [রাদি.]-ই ছিলেন মাদীনায় হিজরতকারিনী প্রথম মহিলা।
সনদ সহীহ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি মুরসাল। কেউ কেউ ইবনি আবু নাজীহ কর্তৃক মুজাহিদ [রঃ]সূত্রে এটি মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন যে, উম্ম সালামা [রাদি.] একই কথা বলেছেন। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০২৩. উম্মু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তাআলা স্ত্রীলোকদের হিজরাত প্রসঙ্গে উল্লেখ করিয়াছেন বলে আমি শুনিনি। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “আমি তোমাদের মধ্যে কর্মে নিষ্ঠ কোন নর বা নারীর কাজকে বিফল করি না। তোমরা একে অপরের অংশ। অতএব যারা হিজরাত করেছে, নিজেদের আবাস হইতে উৎখাৎ হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে …..” – [সূরা আ-লি ইমরান ১৯৫]।
পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০২৪. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে হুকুম দিলেন তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত করে শুনানোর জন্য। তখন তিনি মিম্বরে বসা ছিলেন। আমি তাঁকে সূরা আন –নিসা হইতে তিলাওয়াত করে শুনালাম। আমি যখন এ আয়াত পর্যন্ত পৌছলাম [অনুবাদ] : “আমি যখন প্রত্যেক উম্মাত হইতে একজন করে সাক্ষী হাযির করব এবং তোমাকে তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব, তখন কি অবস্থা হইবে?” [সূরা আন –নিসা ৪১], তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে তাহাঁর হাত দিয়ে চাপ দেন। আমি তাহাঁর প্রতি তাকিয়ে দেখলাম, তাহাঁর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে।
সনদ সহীহ। আবু ঈসা বলেন, আবুল আহওয়াস [রঃ]আমাশ হইতে, তিনি ইবরাহীম হইতে, তিনি আলক্বামাহ হইতে, তিনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে এই সূত্রে এরূপই বর্ণনা করিয়াছেন। মূলত তা হবেঃ ইবরাহীম-উবাইহাদ হইতে, তিনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০২৫. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমাকে কুরআন হইতে তিলাওয়াত করে শুনাও। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উপরই তো কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, আর আমি আপনাকে তা তিলাওয়াত করে শুনাব! তিনি বললেনঃ অন্যের তিলাওয়াত শুনতে আমি পছন্দ করি। অতএব আমি সূরা আন –নিসা তিলাওয়াত করিতে শুরু করলাম। আমি পাঠ করিতে করিতে যখন [অনুবাদ] : “এবং আমি তোমাকে তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরুপে উপস্থিত করব”, তখন নাবী [সাঃআঃ] এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাহাঁর দুই চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
সহীহ : বোখারি [৪৫৮২], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ রিওয়ায়াতটি আবুল আহওয়াসের হাদীসের তুলনায় অনেক বেশী সহীহ। সুওয়াইদ ইবনি নাসর-ইবনিল মুবারাক হইতে, তিনি সুফইয়ান হইতে, তিনি আমাশ [রঃ]হইতে মুআবিয়াহ ইবনি হিশামের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০২৬. আলী ইবনি আবী তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.] আমাদের জন্য খাবারের আয়োজন করিলেন এবং আমাদেরকে দাওয়াত করে শরাব পান করান। আমাদেরকে এই শরাবের নেশায় ধরে। ইতোমধ্যে নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যায়। লোকজন আমাকেই ইমামতি করিতে এগিয়ে দেয়। আমি পাঠ করলাম : “কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন। লা আবুদু মা তাবুদূন। ওয়া নাহনু নাবুদু মা তাবুদূন”। অর্থাৎ “ওয়ালা নাবুদু” [তোমরা যাদের ইবাদাত কর আমরা তাহাদের ইবাদাত করি না]-এর স্থলে আমি “ওয়া নাহনু নাবুদু মা তাবুদূন” [তোমরা যাদের ইবাদাত কর, আমরাও তাহাদের ইবাদাত করি] পড়ে ফেললাম। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের নিকটেও যেয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার” [সূরা আন –নিসা ৪৩]।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব সহীহ। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০২৭. আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন যে, কংকরময় হাররা এলাকার একটি [পানিসেচের] নালা নিয়ে এক আনসারীর সাথে তার ঝগড়া বাধে। উক্ত নালার মাধ্যমে তারা খেজুর বাগানে পানি দিতেন। আনসারী বলিলেন, পানি আসতে নালাটি আপনি ছেড়ে দিন। যুবাইর [রাদি.] তা মানলেন না। দুজনেই বিষয়টি নিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত হলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুবাইর [রাদি.] কে বললেনঃ হে যুবাইর! তোমার বাগানে পানি দিয়ে তোমার প্রতিবেশীর জন্য পানি ছেড়ে দিও। এতে আনসারী ব্যক্তি রাগান্বিত হয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইনি আপনার ফুফাতো ভাই বলেই [এরূপ ফাইসালা করছেন]। এ কথায় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেনঃ হে যুবাইর! তুমি তোমার বাগানের পানি প্রবাহিত করে আলগুলো পর্যন্ত পানি জমা না হওয়া পর্যন্ত নালা অন্যত্র প্রবাহিত হইতে দিবে না। যুবাইর [রাদি.] বলেন, আল্লাহর শপথ! আমার মনে হয় এ ঘটনা প্রসঙ্গেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “কিন্তু না, তোমার প্রভুর শপথ! তারা ঈমানদার হইতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাহাদের পারস্পরিক মতভেদের ব্যাপারসমূহের বিচারভার তোমার উপর অর্পন না করে….” [সূরা আন –নিসা ৬৫]।
সহীহ : বোখারি [৪৫৮৫], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, আমি মুহাম্মদ [বোখারি]- কে বলিতে শুনিয়াছি, ইবনি ওয়াহব [রঃ]এ হাদীসটি লাইস ইবনি সাদ হইতে এবং ইউনুস [রঃ]যুহরী হইতে, তিনি উরওয়া হইতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.] হইতে, এই সূত্রে উক্ত হাদীসের একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন। অপর দিকে শুআইব ইবনি আবী হামযাহ [রঃ]যুহরী হইতে, তিনি উরওয়াহ হইতে, তিনি যুবাইর [রাদি.] হইতে, এই সূত্রে এ হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন, কিন্তু তাতে আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.] এর উল্লেখ করেননি। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০২৮. যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
“তোমাদের কি হল যে, মুনাফিক্বদের প্রসঙ্গে তোমরা দুই দল হয়ে গেলে…..” – [সূরা আন –নিসা ৮৮] আয়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উহূদ যুদ্ধের দিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাহাবীদের [মুসলিম বাহিনীর] মধ্য হইতে কিছু সংখ্যক লোক [যুদ্ধক্ষেত্র হইতে] ফিরে আসে। তাহাদের প্রসঙ্গে সাহাবীগণ দুই দলে বিভক্ত হয়ে যান। এক দলের বক্তব্য ছিল, তাহাদেরকে হত্যা কর। অন্য দলের মত ছিল, তাহাদেরকে হত্যার প্রয়োজন নেই। এ প্রসঙ্গে এ আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “তোমাদের কি হল যে, মুনাফিক্বদের ব্যাপারে তোমরা দুই দল হয়ে গেলে….” -[সূরা আন –নিসা ৮৮]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ মাদীনা হল তাইবাহ-পবিত্র নগরী। তা ময়লা আবর্জনা [অপবিত্রতা মুনাফিক্বী] এমনভাবে দূর করে দেয় যেভাবে আগুন লোহার ময়লা দূর করে দেয়।
সহীহ : বোখারি [৪৫৮৯], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবদুল্লাহ ইবনি ইয়াযীদ হলেন একজন আনসারী আল –খাত্বমী, তিনি নাবী [সাঃআঃ] এর সাহচার্য পেয়েছেন। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০২৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন নিহত ব্যক্তি নিজ হাতে তার হত্যাকারীকে তার কপালের চুল ও মাথা ধরে নিয়ে আসবে। তার ঘাড়ের কর্তিত রগসমূহ হইতে রক্ত বের হইতে থাকিবে। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! এ লোক আমাকে হত্যা করেছে। এমনকি সে তার হত্যাকারীকে নিয়ে আরশের নিকট পৌছে যাবে। আমর ইবনি দীনার বলেন, লোকেরা ইবনি আব্বাস [রাদি.] এর নিকট [হত্যাকারীর] তাওবার বিষয়ে আলোচনা করলে তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন [অনুবাদ] : “কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে স্থায়ী হইবে এবং আল্লাহ তাআলা তার প্রতি রুষ্ট হইবেন, তাকে অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন” – [সূরা আন –নিসা ৯৩]। তিনি বলেন, এ আয়াত মানসূখও হয়নি বা তার বিধান পরিবর্তিতও হয়নি। অতএব তার আর তাওবা কিসের।
সহীহ : মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী [৩৪৬৫], তালীকুর রাগীব [৩/২০৩]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান [গারীব]। কেউ কেউ এ হাদীসটি আমর ইবনি দীনার হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে এই সূত্রে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তা মারফূ হিসেবে নয়। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৩০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সুলাইম বংশের এক লোক তার এক পাল ছাগল নিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর এক দল সাহাবীর সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। সে তাহাদেরকে সালাম দিল। তারা [পরস্পর] বলল, এ লোক তোমাদের হাত হইতে বাঁচার জন্যই তোমাদেরকে সালাম দিয়েছে। এই বলে তারা উঠে গিয়ে লোকটিতে হত্যা করিল এবং তার ছাগলগুলো নিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে হাযির হল। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহ তাআলার পথে [জিহাদের জন্যে] বের হইবে, তখন অবশ্যই পরীক্ষা করে নিবে এবং কেউ তোমাদের সালাম দিলে [পার্থিব জীবনের সম্পদের আকাঙ্খায়] তাকে বলবে না যে, তুমি মুমিন নও” – [সূরা আন –নিসা ৯৪]।
হাসান সহীহ : তালীক আলাল ইহসান [৭/১২২], বোখারি [২৫৯১] সংক্ষেপে, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। উসামাহ ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৩০৩১. আল–বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, “মুমিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে তারা সমান নয়” – [সূরা আন –নিসা ৯৫] আয়াত অবতীর্ণ হলে আম্র ইবনি উম্মি মাকতূম [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]- এর নিকট আসলেন। তিনি ছিলেন দৃষ্টিশক্তিহীন [অন্ধ]। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ রাসূল! আমি তো দৃষ্টিশক্তিহীন। আমাকে আপনি কি নির্দেশ দেন? তখন আল্লাহ তাআলা নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন [অনুবাদ] : “তবে যারা অক্ষম তাহাদের কথা স্বতন্ত্র” – [সূরা আন –নিসা ৯৫]। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ [আয়াতটি লিপিবদ্ধ করিতে] তোমরা আমার জন্য কাঁধের হাড় ও দোয়াত অথবা [বলিলেন] তখতি ও দোয়াত নিয়ে এসো।
সহীহ : বোখারি [৪৫৯৩-৪৫৯৪], মুসলিম, ১৬৭০ নং পূর্বে উল্লেখ হয়েছে। আমর ইবনি উম্মি মাকতূম [রাদি.] আবদুল্লাহ ইবনি উম্মি মাক্তূম বলেও কথিত। তিনি হলেন আবদুল্লাহ ইবনি যায়িদাহ্ এবং উম্মি মাকতূম তাহাঁর মা। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৩২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
“মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে” – [সূরা আন –নিসা ৯৫] আয়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা অক্ষম হয়েও ঘরে বসে ছিল তারা এবং যারা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে তারা [মর্যাদায়] এক সমান নয়। এখানে তাহাদের কথাই বলা হয়েছে। বদর যুদ্ধের নির্দেশ সম্বলিত আয়াত অবতীর্ণ হলে আবদুল্লাহ ইবনি জাহশ ও ইবনি উম্মি মাকতূম [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো উভয়েই অন্ধ! এক্ষেত্রে আমাদের দুজনের জন্য কি কোনরূপ সুযোগ আছে? তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় [অনুবাদ] : “মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে তারা সমান নয় এবং যারা জিহাদ করে তাহাদেরকে আল্লাহ তাআলা মহাপুরষ্কারের ক্ষেত্রে যারা ঘরে বসে থাকে তাহাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন” – [সূরা আন –নিসা ৯৫]। যারা অক্ষম না হওয়া স্বত্বেও ঘরে বসে থাকে, এখানে তাহাদের কথা বলা হয়েছে।
সহীহ : বোখারি [৪৫৯৫]। আবু ঈসা বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] এর হাদীস হিসেবে উক্ত সূত্রে এই হাদীসটি হাসান সহীহ। মিক্বসাম প্রসঙ্গে বলা হয় যে, ইনি আবদুল্লাহ ইবনিল হারিসের মুক্তদাস। তিনি আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] এর মুক্তদাস বলেও কথিত। তার উপনাম আবুল কাসিম। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৩৩. সাহল ইবনি সাদ আস্ –সাঈদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মারওয়ান ইবনিল হাকামকে মাসজিদে বসা দেখে আমি তাহাঁর নিকট এগিয়ে গিয়ে তার পাশে বসলাম। তিনি আমাদের বলিলেন, যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] আমাকে জানিয়েছেন যে, নাবী, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার দ্বারা লেখাচ্ছিলেন : “লা ইয়াসতাবিল কাইদূনা মিনাল মুমিনীনা ওয়াল মুজাহিদূনা ফী সাবীলিল্লাহ”। তখন তাহাঁর নিকট ইবনি উম্মি মাকতূম [রাদি.] এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ! আমি যদি জিহাদ করিতে পারতাম, তাহলে অবশ্যই জিহাদ করতাম। তিনি ছিলেন অন্ধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রাসূলের উপর ওয়াহী অবতীর্ণ করিলেন, তখন তাহাঁর উরু আমার উরুর উপর ছিল। তা এত ভারী লাগছিল যে, এতে আমার উরু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। কিছুক্ষণ পর তাহাঁর এ অবস্থা দূরীভূত হয়। আল্লাহ তাআলা তাহাঁর উপর অবতীর্ণ করেন : “গাইরু উলিয যারারি”।
সহীহ : বোখারি [৪৫৯২]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। একাধিক বর্ণনাকারী এ হাদীসটি যুহরী হইতে সাহল ইবনি সাদের বরাতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। মামার এটি বর্ণনা করিয়াছেন যুহরী হইতে, তিনি কাবীসাহ্ ইবনি যুয়াইব হইতে, তিনি যাইদ ইবনি সাবিত হইতে এই সূত্রে। তিনি আরো বলেন, এ হাদীসটি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর একজন সাহাবী কর্তৃক একজন তাবিঈ হইতে বর্ণিত অর্থাৎ সাহল ইবনি সাদ আস –সাঈদী আল –আনসারী [রাদি.] রিওয়ায়াত করিয়াছেন মারওয়ান ইবনিল হাকাম হইতে। মারওয়ান রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে হাদীস শুনেননি। তিনি তাবিঈদের অন্তর্ভূক্ত। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৩৪. ইয়ালা ইবনি উমাইয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি উমার [রাদি.] কে বললাম, আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তোমরা যখন শত্রুর আশংকা করিবে তখন নামায কসর করিবে” – [সূরা আন –নিসা ১০১]। এখন তো মানুষ নিরাপদ ও ভীতিমুক্ত হয়ে গেছে [এখন নামা কসর করার কি প্রয়োজন]। উমার [রাদি.] বলিলেন, তুমি যে বিষয়ে বিস্ময়বোধ করছ, আমিও একই বিষয়ে বিস্ময়বোধ করেছি এবং বিষয়টি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট উত্থাপন করেছি। তিনি বলেছেনঃ এটা তো তোমাদের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ হইতে সাদাক্বাহ্। অতএব তোমরা তাহাঁর সাদাক্বাহ্ [অনুগ্রহ] গ্রহণ কর।
সহীহ : ইবনি মাজাহ [১০৬৫], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৩৫. আবদুল্লাহ ইবনি শাক্বীক্ব [রঃ]হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু হুরায়রা্ [রাদি.] আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুজনান ও উসফান নামক জায়গার মাঝে যাত্রাবিরতি করিলেন। মুশরিকরা বলল, তাহাদের নিকট একটি নামায আছে যা তাহাদের বাপ-দাদা ও সন্তান-সন্ততির চাইতেও বেশি প্রিয়। সেটি হচ্ছে, আসরের নামায। কাজেই তোমরা নিজেদের যাবতীয় সাজ সরঞ্জাম প্রস্তুত করে সংকল্পব্ধ হয়ে থাক এবং তাহাদের উপর [নামাযরত অবস্থায়] ঝটিকা আক্রমণ চালাও। এদিকে জিবরীল [আঃ] নাবী [সাঃআঃ] কে নির্দেশ দিলেন, আপনার সংগীদের দুভাগে বিভক্ত করুন। এক অংশকে নিয়ে আপনি নামায আদায় করুন। অন্য দল নামাযরতদের পেছনে তাহাদের ঢাল ও অস্ত্র নিয়ে সতর্কাবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকিবে। এরপর দ্বিতীয় দল [যারা নামায আদায় করেনি] আসবে। তারা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে এক রাকআত নামায আদায় করিবে। তারপর তারা তাহাদের অস্ত্রশস্ত্রসহ সতর্কাবস্থায় থাকিবে। ফলে তাহাদের [উভয় দলের] এক এক রাকআত হইবে। আর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর হইবে দুই রাকআত।
সনদ সহীহ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ, আবু হুরাইরাহ্র বরাতে আবদুল্লাহ ইবনি শাক্বীক্বের হাদীস হিসেবে গারীব। আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ, যাইদ ইবনি সাবিত, ইবনি আব্বাস, জাবির, আবু আইয়্যাশ আয –যুরাকী, ইবনি উমার, হুযাইফাহ, আবু বাকরাহ ও সাহল ইবনি আবী হাসমা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু আইয়্যাশ আয –যুরাকীর নাম যাইদ ইবনি সামিত। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৩৬. ক্বাতাদাহ্ ইবনিন নুমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে বানূ উবাইরিক্ব নামে একটি পরিবার ছিল। ঐ পরিবারে বিশ্র, বুশাইর ও মুবাশশির নামে তিনজন লোক ছিল। বুশাইর ছিল মুনাফিক্ব। সে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সঙ্গী সাথীদের কুৎসা বর্ণনামূলক কবিতা রচনা করত, তারপর অপরাপর আরবদের প্রতি সেগুলো আরোপ করে বলত, অমুকে এরূপ এরূপ কথা বলেছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাহাবীগণ যখন তা শুনতেন তখন বলিতেন, আল্লাহর শপথ! ঐ অপদার্থ [খবীস] লোকটি ব্যতীত আর কেউ এ কবিতা রচনা করেনি বা একই রকম কোন মন্তব্য করিতেন। যাই হোক তারা বলিতেন, এটা ইবনিল উবাইরক্বেই [বুশাইর] কবিতা। বর্ণনাকারী বলেন, জাহিলী ও ইসলামী উভয় যুগে এ পরিবারটি ছিল অভাবগ্রস্ত ও দুর্ভিক্ষ পীড়িত। মাদীনায় লোকদের প্রধান খাদ্য ছিল খেজুর ও আটা। কেউ সম্পদশালী হলে সিরিয়া হইতে কোন খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসায়ী সাদা আটা বা ময়দা নিয়ে এলে সে ঐ [ব্যবসায়ী] কাফিলা হইতে ময়দা কিনে নিয়ে সঞ্চয় করে রাখত নিজের ব্যবহারের জন্য। অবশিষ্ট পরিবার-পরিজনের জন্য থাকতো খেজুর ও গম।
একবারের ঘটনা, সিরিয়া হইতে একটি খাদ্য ব্যবসায়ী কাফিলা এলো। আমার চাচা রিফাআহ্ ইবনি যাইদ [তাহাদের হইতে] এক বস্তা ময়দা কিনলেন এবং ভাঁড়ার ঘরে রেখে দিলেন। একই জায়গায় অস্ত্রশস্ত্র, বর্ম ও তলোয়ারও ছিল। এদিকে ঘরের নিচ দিয়ে তার মাল আসবাব চুরি হয়ে গেল। গোপনে সিঁদ কেটে উক্ত ঘরে রক্ষিত ময়দা ও অস্ত্রশস্ত্র লাপাত্তা হয়ে গেল। ভোরবেলা আমার চাচা রিফাআহ আমার নিকট আসলেন এবং বলিলেন, হে ভাতিজা! আমার উপর তো এরাতে যুলুম হয়ে গেল। আমার ভাঁড়ারের ঘরে সিঁদ কেটে খাবার [ময়দা] ও অস্ত্রশস্ত্র চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মহল্লায় অনুসন্ধান চালিয়ে দেখলাম ও জিজ্ঞাসাবাদ করলাম। আমাদের বলা হল, আমরা আজ রাতে বানূ উবাইরিক্বদের ঘরে আলো জ্বালাতে দেখেছি। আমাদের ধারণা মতে তারা তোমাদের খাদ্যাদির তালাশেই আলো জ্বালিয়েছিল। রিফাআহ্ বলিলেন, আমরা যখন এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলাম তখন উবাইরিক্বের লোকেরা বলল, আল্লাহর শপথ! আমরা মনে করি তোমাদের এই চোর লাবীদ ইবনি সাহল ব্যতীত আর কেউ নয়। আমরা আগেই মহল্লাবাসীর এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। লাবীদ ছিলেন আমাদেরই মধ্যকার একজন সৎ ও ভালো মুসলিম। লাবীদ এ কথা শুনামাত্র খাপ হইতে তলোয়ার বের করে বলিলেন, আমি চুরি করি? আল্লাহর কসম! হয় আমার এ তলোয়ারের সাথে তোমার সাক্ষাত হইবে অথবা তোমরা এ চুরির সাক্ষ্য-প্রমাণ হাযির করিবে। তখন লোকেরা বলল, যাও তুমি আমাদের সামনে থেকে সরে দাঁড়াও। তুমি এ কাজ করোনি। এরপরও আমরা এ ব্যাপারে মহল্লায় জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হলাম যে, বানূ উবাইরিক্বই এ কান্ড ঘটিয়েছে। অবশেষে আমার চাচা আমাকে বলিলেন, হে ভাতিজা! তুমি ঘটনার বৃত্তান্ত রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট জানালে ভালো হত। ক্বাতাদাহ [রাদি.] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে তাঁকে বললাম, আমাদের মহল্লায় একটি যালিম পরিবার আছে এবং তারা আমার চাচা রিফাআহ ইবনি যাইদের ভান্ডার কক্ষে সিঁদ কেটে তাহাঁর অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্যাদি চুরি করে নিয়ে গেছে। আমাদের অস্ত্রশস্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করুন, খাদ্যদ্রব্যাদির প্রয়োজন নেই। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি শীঘ্রই এ ব্যাপারে একটিা ফাইসালা করে দিচ্ছি। বনূ উবাইরিক্ব এ কথা শুনার পর তাহাদের নিজেদের এক লোকের নিকট এলো, যার নাম ছিল উসাইর ইবনি উরওয়াহ। তারা তার সাথে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিল। এ বাড়ির কিছু লোক একত্র হয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ক্বাতাদাহ ইবনিন নুমান ও তার চাচা আমাদের এক সৎ ও মুসলিম পরিবারের পেছনে লেগেছে এবং কোন প্রমাণ ব্যতীতই তারা তাহাদের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করছে। ক্বতাদাহ [রাদি.] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে [বিষয়টি নিয়ে] তাহাঁর সাথে কথা বললাম। তিনি বললেনঃ তুমি এমন এক পরিবারের বিরুদ্ধে বিনা প্রমাণে চুরির অপবাদ দিচ্ছ, যাদের সততা ও ইসলাম সম্পর্কে সুনাম আছে। ক্বাতাদাহ [রাদি.] বলেন, আমি ফিরে আসলাম। আমি মনে মনে বললাম, আমার এ সামান্য মাল হাতছাড়া হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আমি যদি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে এ বিষয়ে আলাপ না করতাম! এরপর আমার চাচা রিফাআহ আমার নিকট এসে বলিলেন, হে ভাতিজা! [আমার ব্যাপারে] কি করেছ? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে যা কিছু বলেছেন, আমি তাকে তা জানালাম। তিনি বলিলেন, আল্লাহ তাআলাই প্রকৃত সাহায্যকারী। এরপর কিছু সময় না যেতেই কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয় [ব্যাখ্যাসহ অনুবাদ] : “নিশ্চয়ই আমি এ কিতাব সত্য সহকারে তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যেন আল্লাহ তাআলা তোমাকে যা জ্ঞাত করিয়াছেন তদনুসারে লোকদের মধ্যে মীমাংসা করিতে পার। তুমি খিয়ানাতকারীদের পক্ষে [যেমন বনূ উবাইরিক্বের সমর্থনে] বিতর্ককারী হয়ো না। আর তুমি আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর [ক্বাতাদাহকে যা বলেছ তার জন্য]। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াবান। যারা নিজেদেরকে প্রতারিত করে তুমি তাহাদের সাহায্য করো না। আল্লাহ তাআলা খিয়ানাতকারী পাপিষ্ঠদেরকে পছন্দ করেন না। এরা মানুষের হইতে লুকাতে পারে, কিন্তু আল্লাহ তাআলা হইতে গোপন হইতে পারে না, কেননা তিনি তাহাদের সঙ্গেই থাকেন, যখন তারা রাতের বেলা গোপনে গোপনে তাহাঁর মর্জি বিরুদ্ধ পরামর্শ করে। এদের সমস্ত কাজই আল্লাহ তাআলা জ্ঞাত। আহা! তোমরাই এসব অপরাধীর পক্ষ সমর্থনে পার্থিব জীবনে বিতর্ক করছ, কিন্তু ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলার সামনে এদের পক্ষে কে ঝগড়া করিবে অথবা কে তাহাদের উকিল হইবে? কেউ কোন পাপকর্ম করলে বা নিজের উপর যুলুম করলে তারপর আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থণা করলে সে আল্লাহ তাআলাকে ক্ষমাকারী ও অনুগ্রহশীল পাবে [অর্থাৎ তারা আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থণা করলে আল্লাহ তাআলা তাহাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন]। কেউ গুনাহের কাজ করলে সে তা নিজের ক্ষতির জন্যই করে। আল্লাহ তাআলা সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। কেউ কোন সমস্যা বা পাপকর্ম করে তারপর তা কোন নির্দোষ ব্যক্তির প্রতি আরোপ করলে [যেমন লাবীদ প্রসঙ্গে তাহাদের বক্তব্য] সে তো সাংঘাতিক মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। তোমার প্রতি আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তাহাদের একটি দল তোমাকে পথভ্রষ্ট করিতে চাইত। কিন্তু তারা নিজেদের ব্যতীত অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট করিতে পারে না এবং তোমার কোন ক্ষতিও করিতে পারে না। আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতি কিতাব ও হিকমাত অবতীর্ণ করিয়াছেন এবং তোমাকে এমন জ্ঞান জানিয়ে দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। তোমার প্রতি আল্লাহ তাআলার বিরাট অনুগ্রহ আছে। তাহাদের বেশির ভাগ গোপন সলা-পরামর্শে কোন কল্যাণ নেই। অবশ্য কেউ কাউকে দান-খাইরাতের কিংবা কোন ভালো কাজের জন্য অথবা লোকদের মাঝে শান্তি স্থাপনের উপদেশ দিলে তাতে কল্যাণ আছে। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে কেউ এরূপ করলে তাকে অবশ্যই আমি মহাপুরষ্কার দিব”।
[সূরা আন – নিসাঃ ১০৫-১১৪] কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট অপহৃত অস্ত্র ফেরত আনা হল। তিনি তা রিফাআহ [রাদি.] কে ফিরিয়ে দিলেন। ক্বাতাদাহ্ [রাদি.] বলেন, আমার চাচা ছিলেন বৃদ্ধ। জাহিলিয়াতের যুগে তার রাতকানা রোগ হয়েছিল, অথবা বলেছেন, জাহিলিয়াতের আমলেই বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন [আবু ঈসার সন্দেহ]। আমার ধারণা ছিল যে, তিনি ইসলামে দাখিল ছিলেন। আমি তার নিকট অস্ত্র ফেরত নিয়ে আসলে তিনি বলিলেন, হে ভাতিজা! এটা আমি আল্লাহ তাআলার রাস্তায় দান করে দিলাম। এবার আমার প্রত্যয় জন্মালো যে, নিঃসন্দেহে তিনি একজন খাঁটি মুসলিম। কুরআনের উক্ত আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হওয়ার পর বুশাইর মুশরিকদের সাথে গিয়ে মিলিত হয় এবং সাদ ইবনি সুমাইয়্যার কন্যা সুলাফার নিকট অবস্থান গ্রহণ করে। তখন আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন : “কারো নিকট সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথের অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় আমরা সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর তা কত মন্দ আবাস। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাহাঁর সাথে শারীক করাকে ক্ষমা করেন না, তা ব্যতীত সবকিছু যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং কেউ আল্লাহ তাআলার সাথে শারীক করলে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়”- [সূরা আন –নিসা ১১৫-১১৬]।
বুশাইর যখন সুলাফার নিকট আশ্রয় নিল, তখন হাসসান ইবনি সাবিত [রাদি.] কিছু কবিতার চরণ দ্বারা সুলাফার নিন্দাবাদ করেন। এতে সুলাফা বুশাইরের মালপত্র নিজ মাথায় তুলে নিয়ে তা আবতাহ নামক স্থানে গিয়ে ফেলে দিল। সে আরো বলল, তুমি আমার জন্য হাসসানের [নিন্দাসূচক] কবিতা উপহার নিয়ে এলে, আমার জন্য উত্তম কিছু নিয়ে আসতে পারলে না।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। মুহাম্মদ ইবনি সালামাহ্ আল –হাররানী ব্যতীত আর কেউ এটিকে মুসনাদরূপে রিওয়ায়াত করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই। এ হাদীসটি মুহাম্মদ ইবনি ইসহাক্ব – আসিম ইবনি উমার ইবনি ক্বাতাদাহ সূত্রে ইউনুস ইবনি বুকাইর প্রমুখ মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে “তাহাঁর বাবা-তার দাদা” সূত্রের উল্লেখ নেই। ক্বাতাদাহ ইবনিন নুমান মাতার দিক হইতে আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] এর ভাই। আবু সাঈদ [রাদি.] এর নাম সাদ ইবনি মালিক ইবনি সিনান। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩০৩৭. আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ আমার কাছে কুরআনের এ আয়াত হইতে পছন্দনীয় আয়াত আর কোনটি নেইঃ “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাহাঁর সাথে অংশীদার করাকে মাফ করেন না; তা ছাড়া সব কিছু যাকে ইচ্ছা মাফ করেন”।
আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবু ফাখিতার নাম সাঈদ ইবনি ইলাকা। সুআইরের উপনাম আবু জাহম। ইনি কূফার বাসিন্দা তাবেঈ। তিনি ইবনি উমার [রাদি.], ইবনি যুবাইর [রাদি.] হইতে হাদীস শুনেছেন। ইবনি মাহদী তাকে কিছুটা দোষারোপ করিতেন। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০৩৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, “কেউ মন্দ কাজ করলে তার প্রতিফল সে পাবে”- [সূরা আন –নিসা ১২৩] আয়াত অবতীর্ণ হলে মুসলিমদের নিকট বিষয়টি খুবই গুরুতর মনে হয়। তাই তারা নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন। তিনি বললেনঃ তোমরা সত্যের নিকটবর্তী থাক এবং সরল সোজা পথ তালাশ কর। মুমিনের প্রতিটি বিপদ-মুসীবত ও কষ্ট-ক্লেশ, এমনকি তার দেহে কোন কাঁটা বিদ্ধ হলে বা তার উপর কোন আকস্মিক বিপদ এলে তার দ্বারাও তার গুনাহ্র কাফ্ফারা [ক্ষতিপূরণ] হয়ে যায়।
সহীহ : তাখরীজুত তাহবীয়া [৩৯০], যঈফাহ [২৯২৪] নং হাদীসের অধীনে, মুসলিম। ইবনি মুহাইসিনের নাম আম্র ইবনি আবদুর রাহমান ইবনি মুহাইসিন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৩৯. আবু বাক্র সিদ্দীক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে হাজির থাকাবস্থায় তাহাঁর উপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ “যে কেউ খারাপ কাজ করিবে সে তার প্রতিফল পাবেই এবং সে নিজের জন্য আল্লাহ্ তাআলা ছাড়া কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না” [সূরাঃ আন-নিসা- ১২৩]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ হে আবু বাক্র! আমি কি আপনাকে ঐ আয়াত পাঠ করে শুনাব না যা আমার উপর অবতীর্ণ হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! অবশ্যই। তিনি আমাকে আয়াতটি পাঠ করে শুনান। আমি আর কিছুই জানি না, তবে তখন আমার মনে হল যে, আমার শিরদাঁড়া ভেঙ্গে গেছে। তাই আমি পিঠমোড় দিলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলেনঃ হে আবু বাক্র! আপনার কি হল? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনার প্রতি আমার পিতামাতা উৎসর্গীত হোক। আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে খারাপ কাজ করে না? আমাদের প্রতিটি কাজের জন্যই কি প্রতিফল ভোগ করিতে হইবে? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ হে আবু বাক্র! আপনি এবং মুমিনগণ এ দুনিয়াতেই তার প্রতিফল পেয়ে যাবেন। অবশেষে আপনারা আল্লাহ্ তাআলা এর সাথে পাপমুক্ত অবস্থায় মিলিত হইবেন। পক্ষান্তরে অপরাপর লোকদের খারাপ কাজগুলো তাহাদের জন্য সঞ্চিত করে রাখা হইবে। অবশেষে হাশরের দিন তাহাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হইবে।
আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। এটির সনদসূত্র সমালোচিত। এ হাদীসের রাবী মূসা ইবনি উবাইদা হাদীসশাস্ত্রে দুর্বল। ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ ও আহমাদ ইবনি হাম্বল [রাদি.] তাকে জঈফ বলেছেন। ইবনি সিবার মুক্তগোলাম অখ্যাত ও অজ্ঞাত। হাদীসটি ভিন্নরূপে আবু বাক্র [রাদি.] হইতে বর্ণিত হয়েছে, এর সনদও সহীহ নয়। এ অনুচ্ছেদে আইশা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০৪০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সাওদা [রাদি.] এর আশংকা হল যে, নাবী [সাঃআঃ] তাকে তালাক দিবেন। তাই তিনি বলিলেন, আপনি আমাকে তালাক না দিয়ে আপনার বিবাহবন্ধনে স্থির রাখুন। আমার জন্য নির্দ্ধারিত দিনটি আপনি আয়িশাহ্র নিকটই থাকুন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাই করিলেন। এ প্রসঙ্গেই অবতীর্ণ হয় : তবে তারা [স্বামী-স্ত্রী] আপোষ-নিষ্পত্তি করিতে চাইলে তাহাদের কোন গুনাহ নেই এবং আপোষ-নিষ্পত্তিই শ্রেয়” – [সূরা আন –নিসা ১২৮]। যে বিষয়ের উপর তারা আপোষ করিবে তা জায়িয। শেষের বক্তব্যটুকু ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর।
সহীহ : ইরওয়াহ [২০২০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৪১. আল –বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে] সবশেষে যে আয়াত অবতীর্ণ হয় তা হল : “লোকেরা তোমার নিকট বিধান জানতে চায়। বল, পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে বিধান দিচ্ছেন…..” [সূরা আন –নিসা ১৭৬]।
সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [২৫৭০], বোখারি [৪৬০৫], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আবুস সাফারের নাম সাঈদ ইবনি আহমাদ আস্ –সাওরী। তিনি ইবনি ইউহ্মিদ আস –সাওরী বলেও কথিত। সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০৪২. আল বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! “লোকেরা আপনার নিকট বিধান জানতে চায়। বলুন, পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা তোমাদের বিধান দিচ্ছেন……” – [সূরা আন্ –নিসা ১৭৬]। নাবী [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ তোমার জন্য এ ব্যাপারে গ্রীষ্মকালীন ঐ আয়াতটিই [সূরা আন্ –নিসা ১৭৬] যথেষ্ট।
সহীহ : সহীহ আবু দাঊদ [২৫৭১], মুসলিম উমার [রাদি.] হইতে। ইমাম বাগাবী বলেন, এ আয়াত [সূরা আন্–নিসা ১৭৬] , বিদায় হাজ্জের সময় গ্রীষ্মকালে অবতীর্ণ হয়, তাই একে গ্রীষ্মকালীন আয়াত বলা হয়। [অনুবাদক] সূরা আন নিসা তাফসির – এই হাদিসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply